জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড পর্ব-০৩

0
2201

#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ৩

আমি বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি। কারন শুভ্রর কথায় সবাই চলে গিয়েছে। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে আমার পাশে বসে বললো।”

—-” কি গো রেড রোজ বেবি। তোমার কি জন্মের শিক্ষা হয়েছে? নাকি আরো বেশী শিক্ষা লাগবে?”

শেষের কথাটা দাতে দাত চেপে বললো। আমার কাঁপা কাঁপি আবার শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনরকম আমতা আমতা করে বললাম,

—-” না আমমমার আর শিক্ষা লাগবে না!”

শুভ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

—-” গুড গার্ল আজ আসি ওকে? আজতো তোর কলেজে ক্লাস করা হলো না। কালকে আমি যেন গিয়ে তোকে কলেজে পাই।”

আমি দ্রুত মাথা নাড়লাম। শুভ্র রুম থেকে বের হতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। পাশে প্লাস্টিক বক্সটা রেখে গিয়েছে। ভেতরে কি খুলে দেখতেই হা হয়ে গেলাম। কত বড় বেদ্দপ আবার বরফ এনেছিলো। আল্লাহ গো এ কার ক্ষপড়ে পড়লাম আমি? শুভ্র যাওয়ার পর ভাইয়া এসে বললো,

—-” এই তোর কি হয়েছিলো?”

তাড়াতাড়ি বলতে গিয়ে বেফাস কথা বলে ফেললাম!”

—-” স্যার পড়া ধরেছিলো বুঝলি? তো আমার ওই পড়া হয়নি। ভয় পেয়ে আমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছি,

বলেই মুখে হাত দিলাম। ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বাট মনে হচ্ছেনা ও কথাটা বিশ্বাস করলো। কারন আমি এতটাও পচা স্টুডেন্ট নই এটা সবাই জানে। ভাইয়া আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে গেলো। ভাইয়া যাওয়ার পর আমি দরজা আটকে দিলাম। দরজা আটকে ভাবতে লাগলাম ৬মাস আগের কথা। যেদিন প্রথম শুভ্রকে দেখে আমি ক্রাশ নামক বাঁশ খাই।”

______অতীত______

আমি আর আম্মু মামনির বাসায় এসেছি। মামনি মানে হচ্ছে বড় খালামনি। জানিনা আম্মু আজকে কেন এলো এখানে? কিন্তুু এখানে আমার একটুও ভাল লাগেনা। হঠাৎ আম্মু বলে উঠলো,

—-” হ্যা রে আপু শুভ্র কোথায়?”

আমি আম্মুকে ডেকে বললাম!”

—-” আম্মু শুভ্র ভাই এলো কোথা থেকে? শুভ্র ভাই কি আমেরিকা থেকে এসেছে নাকি?”

আমার কথায় মামনি হেসে বললো,

—-” রোজ তুই জানিস না? শুভ্র এসেছে আরো ১মাস আগে। ও এখানেই থাকবে এখন থেকে। তোর কলেজে ট্রান্সফার হয়েছে এখনো যায়নি।”

আমি কিছু বললাম না। এরমাঝেই শুভ্র ভাই এসে হাজির হলো। শুভ্র ভাইকে দেখে আমি হা করে তাকিয়ে আছি। ব্লাক শার্টের উপর ব্লু কালার জ্যাকেট পড়া। ব্লাক জিন্স প্যান্ট, হাতে ব্লাক বেল্টের ঘড়ি। সিল্কি চুলগুলো কপালের সামনে পড়ে আছে। ফর্সা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম। শুভ্র ভাই জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললো,

—-” আসসালামু আলাইকুম মামনি!”

আম্মু মুচকি হেসে বললো,

—-” ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।”

এদিকে আমিতো ফিদা হয়ে গেলাম। মনে মনে পন করে ফেললাম একেই আমি পটাবো। আহা আমাদের কলেজে ইনি এসেছে গুড। এবার কলেজের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলেটি আমার বিএফ হবে। যেই ভাবা সেই কাজ কিছুদিন পর। কোন এক গধুলী লগ্নে শুভ্রকে আমি প্রপোস করে দিলাম উইথ কদম ফুল। বেচারা হয়তো হতবাক হয়েছিলো সেদিন। কেউ কাউকে কদম ফুল দিয়ে প্রপোস করে নাকি? নির্ঘাত এটাই ভেবেছিলো শুভ্র জানু হি হি। কিন্তুু ব্যাটা আমাকে বিনা নোটিশে রিজেক্ট করে দিলো। বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা অনুভব করছি। হায় আল্লাহ আমার স্বপ্নের কি হবে? আমি যে কতকিছু ভেবে ফেলেছি। আমি পিছু ছাড়ার মেয়ে নই উহু নো নেভার। শুভ্রর পিছনে সুপারগ্লু আঠার মতো লেগে থাকলাম। অতঃপর ৩মাস পর আমার প্রপোস এক্সেপ্ট করলো। বুঝতে পারলাম একটা হাবাগোবা বয়ফ্রেন্ড পেয়েছি আমি। মনে মনে খুবই তৃপ্তি পেলাম। এবার এই ক্যাবলাকে দিয়ে যা খুশি করাবো। রিলেশনের ১৫দিন পর ভাবলাম। আজকে আমি নিজের বয়ফ্রেন্ডের পরিক্ষা নেবো। পার্কে আমি আর শুভ্র বসে আছি, আমি শুভ্রকে বললাম,

—-” শুভ্র আমার কিছু কথা আছে!”

বেশ সিরিয়াস ভঙিতে বললাম। শুভ্র মুখে লজ্জা ভাব করে বললো,

—-” বলুন কি বলবেন?”

এটাই আমার বফ আমাকে আপনি করে বলে। ভাবের আর শেষ নেই আমার। আমি মনে মনে মজা পাচ্ছি খুব, হাসি চেপে বললাম।”

—-” আমার এই রিলেশন রাখা সম্ভব না। আই ওয়ান্ট টু ব্রেকআপ ইউ,

শুভ্র মুখটা কালো করে বললো!”

—-” কি বললেন আপনি?”

আমি ভাব নিয়ে বললাম,

—-” আমি তোমার সাথে ব্রেকআপ করবো।”

ওমনি গালে ঠাস, ঠাস করে চর পড়লো। থাপ্পর খেয়ে মাথা ঘুরানি দিচ্ছে প্রেগন্যান্ট মানুষের মতো। শুভ্র আমাকে থাপ্পর দিয়েছে? তালের আঠির মতো হয়ে গিয়েছে আমার চোখ। শুভ্র দাতে দাত চেপে কিড়মিড় করে বললো,

—-” আর কোনদিন যদি ব্রেকআপের কথা মুখে আনিস। তাহলে এরকম করে ঠাটিয়ে চরাবো বুঝলি?

আমি পাক্কা ৫মিনিট ভিমরি খেয়ে ছিলাম। শুভ্রর আরেক থাপ্পর খেয়ে বুঝলাম সব সত্যি। কিন্তুু দাতে খুব ব্যথা অনুভব করছি। হায় আল্লাহ দাত খুলে পড়ে যাবে না তো? তাহলে আমার কি হবে? বলেই হাউ মাউ করে কেঁদে দিলাম। পার্কের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললো,

—-” এই তুই কান্না থামাবি? নাকি ঠাটিয়ে আরেকটা দেবো?”

তবুও আমার থামার নাম নেই। শুভ্র ঠাস করে সত্যিই আরেক চর দিলো। মনে হচ্ছে আমি এই দুনিয়ায় নেই। শেষে এমন বয়ফ্রেন্ড জুটালাম কপালে? আল্লাহ গো আমার আরামের দিন শেষ। সেদিন বাড়ি এসে ভ্যা, ভ্যা করে খুব কেঁদেছিলাম!”

_____বর্তমান_____

আম্মুর ডাকে অতীত থেকে বেরিয়ে এলাম। মা গো মা কি ভয়ংকর অতীত। কতকিছু দিয়ে আমি গন্ডারটাকে পটিয়েছি। যদিও আমার দেয়া কোনকিছুই শুভ্র রাখেনি। বড়লোকের পোলা কি না হু হু ঢং। বলি কোথাকার নবাবজাদা তুই? কিছুূদিন আগে কি চুবানিটাই না দিলো আমাকে। সেটাও আবার আমাদেরই পুল থেকে। আল্লাহ এর সাথে আমি থাকবো কি করে? পাক্কা চুবানি দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দেবে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার ভাবা যায়? আমি মরে গেলে আমার ফিউচার ছেলে, মেয়ের কি হবে? এত সুন্দর বয়ফ্রেন্ড হাতছাড়াও করা যাবে না। অন্য কোন ডাইনি ড্যাং, ড্যাং করে ঘুরে বেরাবে? সেটাও আমার হ্যান্ডসাম শুভ্রর সাথে? নোওয়ে, একে আমি ছাড়বো না। অবশ্য ছাড়বোই বা কি করে? ব্রেকআপের কথা বললে যে ঠাস, ঠাস দেয়। যাইহোক এখন বরং ঘুমিয়ে পড়ি। মনের সুখে আপাতত ঘুমিয়ে নিলাম!”

পরেরদিন রেডি হয়ে কলেজে চলে এলাম। শুভ্রর ভয়তে আগেই চলে এসেছি। এত ভোরে নাকি কেউ কলেজে আসে? ক্যান্টিনে বসে আছি শুধু শুধু। এর ভেতর কলেজের কয়েকটা মেয়ে এলো। ওরা শুভ্রর সাথে ফাইনাল ইয়ারে। এদের ভেতর থেকে রিয়া বললো,

—-” তোমার বয়ফ্রেন্ড আসেনি?”

এমনিই রাগ লাগছে ভেংচি কেটে বললাম।”

—-” এলেতো দেখতেনই তাই না?”

বলে হনহন করে উপরে চলে এলাম। উপরে আসতেই দেখলাম শুভ্র আসছে। ব্যাগ থেকে রুটি আর কলা বের করলাম। খালি পেটে আপাতত এগুলোই উত্তম। পরে গিয়ে ক্যান্টিন থেকে বার্গার খেয়ে আসবো। রুটি আর কলা খেয়ে নিচে ফেলে দিয়েছি। ঠিক তখনি শুভ্র এলো আর পা পড়লো কলার খোসায়। আমি মুখে হাত দিয়ে আছি বেচারা পড়ে যাবে। হলো ও তাই শুভ্র বাঁচতে গিয়ে ব্যাঙের মতো লাফ দিলো। কিন্তুু শেষ রক্ষা হলো না উল্টো ধপাস করে পড়ে গেলো। সবাই শুভ্রকে দেখে হেসে দিলো। শুভ্র দাতে দাত চেপে উঠে দাড়িয়ে উপরে তাকালো। এখনো একটা কলা আমার হাতে। তাই শুভ্র বুঝে গেলো আমিই খোসা ফেলেছি। শুভ্র নিচে দাড়িয়ে দাত কিড়মিড় করছে। আর আমি উপরে দাড়িয়ে কাঁপা কাঁপি করছি,

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে