চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪০

0
2138

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪০
লেখা আশিকা জামান

একরকম শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা চলছে। উপচে উঠা নিঃশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। অঙ্কন শব্দ করে দরজা খুলে। চোখ দুটো বিস্ফোরিত! ভালো করে আপাদমস্তক তাকায়। ইয়োলো কালার টপস, জিন্স, পায়ে স্লিপার। চুলগুলো এলোমেলো কানে ফোন। ঠোঁট বাকিয়ে সেই দুষ্টু হাসি। এটাকে কি মুচকি হাসি নাহ, মুখ টিপে হাসি বলে। উফ্ শিট হ্যালুসিনেশন!
বিড়বিড় করে বললো,
” এই মেয়ের কথা ভাবতে ভাবতে আমি একদিন নির্ঘাৎ পাগল হয়ে যাব।”
অঙ্কন মুখের উপর ধড়াম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। অনন্যা বিস্ময়ে হতবাক! তার খুব কান্না পেলো। যাকে দেখার জন যাকে দেখার জন্য এতদুর ছুটে এলো আর সে কি না মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



অঙ্কনের মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। এসির ভেতরেও দরদর করে ঘাম ঝরে পড়ছে। ফোনটা আবার বেজে উঠে। অনন্যা!
কাপাঁ হাতে ফোন কানে তুলে।
” মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেওয়াটা কি ধরনের ভদ্রতা! আমকে চিনো নাই তুমি? নকশা করো আমার সাথে! এইখানে কি আরেকটা বউ পাইছো?”
অনন্যা অনবরত চেঁচাতে থাকল। অঙ্কনের কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। সে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে এটাতো আর হ্যালুসিনেশনের জানার কথা না। তার মানে অনন্যা। ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায়। দ্রুত দরজার কাছে এগিয়ে যায়। অনন্যার রাগাণ্বিত মুখটা দেখে অন্যরকম স্বস্তিতে শরীর মন ছেয়ে যায়। এক হাতে অনন্যার হাত ধরে সজোরে টান দেয়। দরজা লাগিয়ে দেয়।
” ফোন কাটছো কেন? খুব সাহস তোমার! এত সাহস পাও কই? আমার হাতে চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে নেপাল আসা। কি মনে করছো কি?”
অনন্যা দ্রুতগতিতে মুখ চালায়। অঙ্কন বুঝে উঠতে পারে না কি করবে! সত্যি মিথ্যের মাঝখানের যেন মহাশূন্যে ভাসছে। অনন্যার গলার ঝাঁঝ আরও বেড়ে যায়। দ্বিকবিদিক কূল না পেয়ে অঙ্কম অনন্যার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। সেই আশ্চর্য বন্য মাতাল করা সমুদ্র লবনের স্বাদ! ঠিক কতক্ষন অচেতন ছিল সেই হিসেব কেউ রাখলোনা।
যখন ধাতস্থ হয় তখন দুজনেরই নিঃশ্বাস পড়ে গেছে। অঙ্কন কেবল অনন্যার দিকে অপলকভাবে চেয়ে রইলো। লজ্জায় তখন তার বউএর মূর্ছা যাওয়ার মত অবস্থা। মাথা নিচু করে বলে,
” তোমাকে থামানোর জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আমার মাথায় ছিল না। সরি! এবার তাকাও।”
এই কথা শুনে অনন্যা আবারো অন্যদিকে মুখ লুকায়। তবে সে এইবার লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে রাখেনি। সরি কথাটা শোনামাত্র অপমানবোধে মূর্ছা যেতে ইচ্ছে করছে।
” বলদ, নিজের বউকে চুমু খেয়ে আবার সরি বলা হচ্ছে। অসভ্য লোক! আবার কারণ ও দেখাইতেছে।” কিছুক্ষণ মনেমনে বিড়বিড় করে ভেতরে ভেতরে সাপের মত ফোঁসে উঠলো।
অঙ্কন আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারছে না। অনন্যাকে এক হাতে টেনে ধরে বুকের মাঝে টেনে নেয়। মাঝে বেশ কয়েকবার অনন্যা সরে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে শক্তিতে কুলোতে না পেরে একদম বুকের খাঁচায় প্রাণপাখির মত চুপটি করে রইলো।
” আমার উপর খুব রাগ হয়েছে তো! নাও এবার ইচ্ছেমতো বকা দাও। আমি প্রস্তত! আর মুখ সিলগালা করে দেব না।”
অনন্যা দাঁতে দাঁত চেপে থাকল।
” কি হলো! বকা দাও। যত পঁচা পঁচা বকা আছে সব দাও। তবু চুপ করে থেকো না।”

” এভাবে ধরে রাখলে কি বকা দেওয়া যায়। তবে তুমি খুব খুব খুব খারাপ!”
” জানি আমি।”
” তোমাকে আমি মেরে ফেলব।”
” তোমার জন্যে মরতে পারলে এ আমার সুখের মরণ।”
অনন্যা বুকের কাছ থেকে হঠাৎ ছটফট করে উঠে। ঝাঁঝালো গলায় তেড়ে আসে,
” তোমার খুব সাহস হয়েছে তাই না! আমার সব কথায় তালে তাল দাও কেন? ত্যাড়ামি করো না কেন? আমি ঘাড়ত্যাড়া, রগচটা অঙ্কনকেই ভালোবাসি৷ এইরকম অঙ্কনকে আমার সহ্য হয়না।” অনন্যার দু’চোখে তখন জলের ফোয়ারা।
অঙ্কন হাত দিয়ে জল মুছতে মুছতে বলল,
” কিছু করার নাই। সারাজীবনের জন্য বাধাঁ পড়ে গেছো এই ছোট্ট বুকের খাঁচায়। না চাইলেই সহ্য করতে হবে। একমাত্রই মৃত্যুই পারে মুক্তি দিতে।” কথা বলতে বলতে অঙ্কনের দু’চোখেও জল এসে যায়। তাই দেখে অনন্যা দু’হাতে অঙ্কনকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ আকুলিবিকুলি করে উঠে,
” তোমাকে ছাড়া একমুহুর্তও থাকা কষ্টকর! আমি পারব না থাকতে।”

অনন্যাকে বুকের মাঝে পিষে ফেলে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় তাকে শক্ত হতে হবে। এতোটা দূর্বল হলে অনন্যাকে সামলাবে কি করে! কপালের চুল সরিয়ে। আলতোভাবে ঠোঁট চেপে ধরে মৃদুসুরে অঙ্কন বলল,
” পাগল একটা!”
” হ্যাঁ আমি পাগলই। এরকমই থাকতে চাই।”
” আচ্ছা, থাক। সমস্যা নাই। তাই বলে তুমি নেপাল চলে আসবে! আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।”
” আমি এমন আরো অনেক অবিশ্বাস্য কাজ করতে পারি! সবেতো শুরু মিস্টার হিরো! কেমন চমকে দিলাম!”
” আর বলোনা আকাঙ্ক্ষিত বস্তুকে হুট করে হাতের মুঠোয় পেলে মানুষ যেরকম চমকিত হয় ঠিক সেরকম।”
অনন্যা মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকল। অঙ্কন হঠাৎ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
” ভালো কথা! আজকেই এসেছো তাই তো! কিভাবে এসেছো? কার সাথে এসেছো?”
” বন্ধুদের ধরে বেধে নিয়ে আসছি।”
অঙ্কন হঠাৎ লাফিয়ে উঠে।
” মানে কি? তোমার বন্ধু মানে তানভীর ওইটা আসছে?”
” শুধু তানভীর নয় তোমার বোন অনীহাও আসছে।”
” হুয়াট! তোমার মাথা ঠিক আছে! সবাইকে কি বলেছো? আমার সাথে দেখা করতে এসেছো এটাই বলেছো তো! ওহ শিট!”
” রিলাক্স, আমি তোমার কথা কিছু বলিনি।”
” তাতে কি তানভীর বলদ না জানলেও ভেবলীটা তো ঠিক জানে!”
” আশ্চর্য তুমি এখানে আছো বলে কি অন্য কেউ বেড়াতে আসতে পারে না! আসলেই তোমার জন্য আসা হয়ে যাবে হা!”
অঙ্কন আর এ নিয়ে কিছু বলল না।
**************
” তানভীর আমি ভাল করে খুঁজেছি! অনন্যা কোথাও নেই। হোটেলের আশপাশেও খুঁজেছি।”
সাইমন হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
” মানে কি! একটা জলজ্যান্ত মানুষতো আর উধাও হতে পারে না।” নিনিত বিরক্তিতে চোখ মুখ কু্ঁচকায়।
” আমার মনে হয় এই রুমে ভুত আছে। ভুতে নিয়ে গেছে। ওই যে দেখোনা সিরিয়ালে দেখায়। উফ্ কি কপাল চাক্ষুষ ভুতের সাক্ষাৎ পেলো।”

” অনীহা শাট আপ! আবুল তাবুল কথা বলো না তো!”
তানভীরকে ক্ষেপে যেতে অনীহা চুপ করলো। তবে মনে মনে ঠিকই রেগে গেলো।
” দেখ তোরা যাই বলিস আমাদের কিন্তু হোটেল ম্যানেজারকে ইমিডিয়েট জানানো উচিৎ। ” নেহা গম্ভীর হয়ে বলল।
সবাই সম্মত হয়। তবে নিনিত কিছুক্ষণ পর বলল,
” আমার মনে হয় এখানে আসার পেছনে অনন্যার অন্য কোন প্ল্যানিং আছে?”

” তোর এরকম কেন মনে হচ্ছে? তুই কি কিছু জানিস!” দীশা বলল।

” নাহ্, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে।”

অনীহা হঠাৎ এক কাজ করে বসল মুখ হাড়ির মতো করে অন্যদিকে ছুটতে লাগল।
তানভীর বিরক্ত হয়ে অনীহার পেছন পেছন আসে।
” অনীহা! কি পাগলামো হচ্ছে? একা একা যাচ্ছ কোথায়? চিনো কিছু তুমি?”
” তোমার বেশি সাহস হয়ে গেছে না! কি ভেবেছো তুমি ছাড়া কেউ নেই এখানে আমার। আমি ভাইয়ার গত সপ্তাহ ধরে নেপালেই আছে! আমি এক্ষুণি ফোন করে বলব আমাকে নিয়ে যেতে।” অনীহা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল।
” মানে কি? তুমি এই কথাটা আগে বলবে না!” তানভীর বিষম খেয়ে বলল।
” তোমাকে বলায় না বলায় কি আসে যায়!”
” হ্যাঁ সেটাই! তুমি না সত্যিই স্থান কাল পাত্র বুঝো না। আসল কথাটা না বলে কি সব ভুত পেত্নির গল্প শুরু করে দিলে।”
অনীহা বুঝে উঠতে পারে না আসল কথাটা আবার কোনটা।
তানভীর দৌড়ে গিয়ে ওদের ধরে ফেলে। ওরা তখন হোটেল ম্যানেজারকে ফোন করায় ব্যাস্ত।
” ফোন কাট! অনন্যারে পাইছি!” তানভীর উচ্চস্বরে বলল।
” তানভীর কই পাইলা? কই আশেপাশে তো নাই।” অনীহা পেছন থেকে বলে উঠে।

” জায়গামতোই আছে এইটুকু এশিউর করতে পারি। রিলাক্স ওরে খুঁজে লাভ নাই। আমরা আমাদের কাজে নাই। তবে একটা কথা অনন্যা আমগোরে সাথে বিশাল চিট করছে রে।” তানভীর হাসতে হাসতে বলল।

সবাই অন্যদিকে হাটতে লাগল। তবে তানভীরের কথার আগা মাথা কেউ বুঝতে পারল না।

চলবে….

রেসপন্স ফার্স্ট??
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে