চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪১

0
2168

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪১
লেখা আশিকা জামান

রাত বাড়ছে! বাড়ছে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা! সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিঃশ্বাসের উঠানামা। পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। যে সময়ের হিসেব রাখার প্রয়োজন কেউ বোধ করলো না৷ কিন্তু কতক্ষনঃ শত চেষ্টাতেও যে বহমান সময়কে ধরে রাখা যায় না। সময় সে তো নিরন্তর!
অনন্যা, অঙ্কনের বুকে মুখ গুঁজে রেখেছে একদম বাচ্চাদের মতন করে। তার আজ ছাড়তেই ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই বুঝি পালিয়ে যাবে।
অঙ্কন, অনন্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,
” অনন্যা, তুমি কি এরকম চুপটি করেই থাকবে! কিছু তো বলো?”

” বিরক্ত করছো কেন? আমি ঘুমোচ্ছি।” অনন্যা মুখ না তুলেই বলল।

” ওহ্, তাই বুঝি। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মানুষ তাহলে কথাও বলে। বেশ ভালো বললে তো!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” বুঝবে না তুমি! চুপ করো তো। কতদিন পর কেমন শান্তি শান্তি লাগছে।”

” আচ্ছা, তুমি এবার উঠো। ডিনার সারতে হবে। অনেক রাত হয়েছে মে বি। ফোনটাও ধরতে দিচ্ছ না। নিজেরটা তো ফেলেই রেখেছো। কতবার ফোন বেজে আবার কেটেও গেল। তুমি নির্বিকার, তুললেই না। আরে ইমার্জেন্সি তো থাকতে পারে। উঠো, কথা শুনো।”

অনন্যা হু হা করে গেল। কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
” অনন্যা, তুমি কি আমার কথা শুনছো! তুমি উঠে ফোনটা চেক করে আবার আমার কাছে এসো। যাও প্লি ইজ জ। ”
অনন্যা এক ঝটকায় সরে যায়। গলায় রাগ ঝরে পড়ে।
” আমার কাছে এইমুহুর্তে ইমার্জেন্সি বলতে তুমি, অন্য কিছু নয়। বুঝেছো তুমি! তখন থেকে দেখছি কিসব ছাড়া ছাড়া ভাব। ভালো লাগছে না। তাহলে চলে যাই।”
” আরে, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তো ঠিক কথাই বললাম। ফোনটা তোল । তোমার বন্ধুরা হয়তো টেনশন করছে। তোমার এখন ওদের কাছে যাওয়া উচিৎ। আফটার অল এই ট্যুরের প্ল্যানটা তোমার ছিল। তুমি একরকম ফোর্স করে ওদের নিয়াসছো। এখন তুমি এইভাবে নিরুদ্দেশ হলে গোটা ব্যাপারটাই ওদের মেনে নিতে কষ্ট হবে। একটু বুঝো!”

অনন্যা নিভলো। জ্বলন্ত অগ্নিশিখা যেমন হঠাৎ দমকা হাওয়ার তান্ডবে নিভে যায় ঠিক তেমনি!
কতটা আশা বুকে বেঁধে ভালোবাসার জোয়ারে ভাসবে বলে ছুটে এসেছিলো! যার জন্য এতকিছু তার মধ্যে কোন আগ্রহ সে খুঁজে পেল না। ভালোবাসা দেয়া নেয়া হল না। কিচ্ছু হলো না। আজকের রাতটা কত সুন্দর স্মরনীয় হবে ভেবেছিলো। কিচ্ছু হলো না!
কান্না পাচ্ছে গলার কাছে কান্নারা দলা পাকিয়ে উপরের দিকে উঠছে। কিন্তু উঠতে দিলে তো চলবে না। খামোকা নিজেকে আর বেহায়া প্রমাণ কিছুতেই করবে না। অসভ্য, খুব খারাপ লোকটার সাথে জন্মের মতো আড়ি।

অঙ্কন আড়চোখে অনন্যার দিকে তাকায়। নাকের পাটা ফুলে পাকা টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে। বারবার দাঁত দিয়ে ঠোঁট দিয়ে কামড়ে ধরছে। নীরবতার ভাষা আর যাই হোক তার বুঝার কথা! তবুও সে নিজের মাথায় নিজেই সুদীর্ঘ পরিপুষ্ট আঙ্গুল চালাতে চালাতে প্রশ্ন করলো,
” কি হলো অনন্যা, চুপ করে আছো কেন।”
” না আসলে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তুমিই বলো!”
অনন্যা কাটাকাটা ভাবে বলল।
” আচ্ছা ভাষা খুঁজা লাগবে না। তুমি বরং ডিনারটা সেরে, চুপটি করে ঘুমিয়ে যাও। এমনিতেই আমার এখন বেরুতে হবে। জিহাদ এই আসলে বলে।”

এতকিছু শোনার পরও অনন্যা লাজ শরমের মাথা খেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কোথায় ঘুমোবো!”
” কেন তুমি রুম বুক করেছো না! তোমার রুমে আবার কোথায়!”
অনন্যা আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলো না। মেঝেতে পড়ে থাকা ফোনটা তুলে গটগট করে সামনে দিকে এগিয়ে যায়।
অনন্যা তখন দরজার কাছাকাছি।
তাতে যেন অঙ্কন মোটেও বিচলিত বোধ করলো না বরং পেছন থেকে ডাকলো।
” অনন্যা, তুমি চাইলে আমরা একসাথে ডিনারটা সারতে পারি।”
” নো, থ্যাংকস। ”
অনন্যা আর পেছনে ফিরে নি।

******************
রাতের থামেল খুব সুন্দর! চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। গাড়ীমুক্ত পায়ে হাটা রাস্তার অলিগলিতে নাইট ক্লাব, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, স্পা আর বিভিন্ন পণ্যের দোকানে ভরপুর থামেল। তবে ক্ষণে ক্ষণে সবার অনন্যাকে মনে পড়ছে। এই একটা কারণে এই উদ্দেশ্যহীন হাটা চলায় কেউ তেমন মনোযোগ দিতে পারছে না। তবে তানভীর তেমন বিচলিত নয়।
ওরা আশেপাশের লোকাল মার্কেটে ঢুকে যায়। কিছু টুকটাক শপিং করবে বলে। তবে সেখানেও বেশীক্ষণ কেউ টিকতে পারলো না।
তানভীর আবদার করে বসল নাইট ক্লাবে যাবে। মেয়েরা এতে খুব একটা সায় দিলো না। এরমাঝেই নিনিতের ফোন বেজে উঠে।
নিনিত উত্তেজিত গলায় বলে,
” অনন্যা ফোন করেছে?”

” ধর! ফোনটা ধর।” সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠে।
নিনিত ফোনটা ধরেই প্রশ্ন করে উঠে,
” অনন্যা, তুই কই! ঠিক আছিস তো!”
” হ্যাঁ। ” অনন্যা গম্ভীর গলায় উত্তর কাটে।
” হোটেলে তোদের পেলাম না তোরা কি বের হয়ে গেছিস। আসবি কখন?”
“তুই অক্ষত অবস্থায় আছিস, কি যে নিশ্চিন্ত লাগছে। কোথায় গিয়েছিলি তুই!”
” হোটেলের আশপাশে একটু ঘুরছিলাম।”
” তোকে তো পেলাম না। তাই বলে একা একা! ফোনটাও তুললি না।”
অনন্যা কিছু বলল না নিশ্চুপ থাকল।
” আমরা ডিনার করে ফিরব। তোর জন্য খাবার নিয়াসবো। তুই এইবেলা একা একাই থাক। তোর বেশি পাকামোর ফল ভোগ কর।”
” আমি ডিনার করেছি। কিছু আনতে হবে না।”
নিনিত কিছু বলার আগেই অনন্যা ফোন কেটে দেয়।

তানভীর মুখে একগাল হাসি ফুঁটিয়ে বলল,
” এবারতো নাইট ক্লাবে যাইতে সমস্যা নাই। চল!”
সবাই বাঁকা ঠোঁটে হাসলো তানভীরের কথায়।

********************

ঘড়ির কাটা এগারো ছুঁই ছুঁই। বন্ধুরা দলবেঁধে অনন্যার ঘরে হানা দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ঘুমের ভাণ ধরে সে সবকয়টাকে বিদেয় করে।
তবে সকালে যে, কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলবে না এটা তার বুঝা হয়ে গেছে। তবে এ নিয়ে সে মোটেও বিচলিত নয়।
ভাঙ্গা হৃদয়ের দহন এতোটাই তীব্র যে এ সামান্য ব্যাপারে তার কিছু যায় আসে না। তাই এ যাত্রায় ঘুমাতে পারলেই বোধ হয় স্বস্তি পাওয়া যেত!
বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে সে। গায়ে ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে শুতে শুতে সিদ্ধান্ত নেয় কালকেই চলে যাবে। চলে যাবে অঙ্কনের সীমানার বাইরে! আর কোন দূর্বলতা এই মানুষটাকে সে দেখাবে না। আর না! সবকিছু সবার জন্য নয়!
এরকম সাতপাঁচ ভাবনায় কখন যেন ঘুম দু’চোখের পাতা এক করে দিতে চায়। চোখ দু’টো লেগে যাওয়ার ঠিক প্রাক্কালে দরজায় নক হয়। অনন্যা ধরফরিয়ে উঠে। বিরক্তিতে শরীর জ্বলতে থাকে। উঠে আসে আলু-থালু চুল আর এলোমেলো পোশাকে।
দরজা খুলেই অঙ্কনকে দেখতে পেয়ে রাগে শরীর দ্বিগুন জ্বলে উঠে।
অঙ্কন ভেতরে না ঢুকেই অনন্যার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বলল,
” তুমি কি সত্যিই ঘুমাচ্ছিলে না কি! তাহলে আমি বিরক্ত করলাম। ইনফ্যাক্ট তোমার মুখ চোখ দেখে তাই মনে হচ্ছে।”
” বিরক্ত করে আবার প্রশ্ন করছো কেন!!”
অনন্যা ঘুরে তাকায়।
এই কথায় অঙ্কনের তেমন হেলদুল হলো না।
বরং হাতে ধরা খাবারের প্যাকেট টা অনন্যার দিকে বাড়িয়ে দেয়।
” তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। অনেক রাত হয়ে গেছে।”
” তাহলে তুমি এটা দিতেই এসেছো! আমি খেয়েছি! খাবো না নিয়ে যাও।” অনন্যা মুখের উপর বলে দেয়।

অঙ্কন এযাত্রায় শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। অনন্যার চমকে উঠে। খাবারের প্যাকেটটা রেখে দিয়ে অনন্যার দিকে হাত বাড়ায়। এক টানে কাছে টেনে দেয়। এতে যেন অনন্যা আরো ফুঁস করে উঠে।
” তোমাকে খাবার নিয়ে যেতে বলেছি না। আমি খাবো না। কথা শুনতে পাও নি। ছাড়ো আমাকে।”
” মিথ্যা বলো কেন? তোমার চোখ মুখ দেখে কানার ভাই অন্ধও বলবে তুমি খাও নি।
তোমাকে আমি চিনি তো! তুমি যে খাবানা এটা আমি জানি। শুধু শুধু ভং করোনা।”
অনন্যা, অঙ্কনকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
” আমি ভং করি। হ্যাঁ আমি ভং করি যাচ্ছে তাই করি তোমার কি? যাও তোমার রুমে যাও। ঘুমাও। যাও বলছি।”
অঙ্কন বারবার হাত ধরতে আসে আর প্রতিবারই সে শক্তহাতে হাত ছাড়িয়ে নেয়। ঠিক যেন এক খেলায় মেতেছে দু’জন।
অঙ্কন এবার শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে। বুকের মাঝে চাপা পড়ে অনন্যা ছটফট করতে থাকে। অঙ্কনের ভারী মজা লাগে। ফিসফিস করে উঠে,
” এবার সরাও! খুব শক্তি হয়ে গেছে৷ সরাও। সরাও।”
দুই, একবার চেষ্টা করে অনন্যা ক্লান্ত হলেও হার মেনে নেয় না।
” তোমাকে যেতে বলছি। যাচ্ছো না কেন? কথা কানে যায় না।”
অনন্যা এবার আর জলের ফোয়ারা আটকাতে পারে না। অঙ্কনের বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠে। গভীর আবেগে হত-বিহবল হয়ে বলে উঠে,
” রাগকুমারী আর কত রাগ করে থাকবেন? এবার তো একটু এই অধমের প্রতি সদয় হোন।”
অনন্যা কিছু বলে না। নিশ্চুপ থাকে। অঙ্কন আবার বলে,
” খুব খিদে লাগছে। অন্তত খেতে দাও।”

এইবার হাতের বাঁধন আলগা হয়। সরে যায় অনন্যা। কান্না আটকায় অনেক কষ্টে। খাবারের প্যাকেট হাতে তুলে নেয়। দ্রুত হাত চালিয়ে খাবার সার্ভ করে। এরপর উঠে দাঁড়ায়।

অঙ্কন হাত ধরে আটকায়। জোর খাটিয়ে পাশে বসায়। অনন্যা কিছুতেই খাবে না। হা করতে চায় না। এইবারও অঙ্কন জোর খাটিয়ে খাইয়ে দেয়। অনন্যার চোখ দিয়ে তখন জল গড়িয়ে পড়ে। আর কান্না আটকাতে পারে না। এই মানুষটাকে কেন সে বুঝতে পারে না!

অঙ্কন টিস্যু দিয়ে জল মুছে দেয়। হুট করে গালে বেশ শব্দ করে চুমু খায়। অনন্যা চমকানো মুখটা দেখে আনন্দ পায়। ফিসফিস করে বলে,
” পাগল একটা। ”

চলবে….

আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি! ইচ্ছে করেনা লিখতে।??। কেন লিখব কেউ একটু বলে দাও??

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে