চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৭

0
2133

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৭
লেখা আশিকা জামান

নির্ঘুম রাত কাটিয়ে খুব ভোরের দিকে দু’চোখের পাতা এক হয়ে এসেছিল অনন্যার। চোখে নেমেছিল রাজ্যের ঘুম! তবে কাঁদতে কাদঁতে ঠিক কখন ঘুমিয়েছে এই হিসেব সে রাখে নি।

ঠিক দুপুর বারোটায় তার ঘুম ভাঙ্গে। প্রতিদিনের অভ্যাসবশতই চোখ না খুলে আজও মাকে ডাকতে থাকে। প্রতিদিন সকালে আয়েশার ঘুম জাগানিয়া ফ্যাঁচফ্যাঁচানি শুনে তার ঘুম ভাঙ্গে। আজকে সেই তীক্ষ্ণ কঠোর বুলি আওড়ে যাওয়া মমতাময়ী নারীর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সে ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে। গোলাপ আর রজনীগন্ধার মাতাল করা গন্ধে তার সম্বতি ফিরে। মনে পড়ে যায় গতকাল জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টা সে পার করে ফেলেছে। একা একাই!
অঙ্কনের কথা মনে পড়ে যায়।
এদিক সেদিক তাকিয়ে সে অঙ্কনের উপস্থিত খুঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু সে ঘরে নেই। হয়তো অন্য কোন ঘরে। কাল রাতেই তাকে একা ছেড়ে দিয়ে অন্য ঘরে সে ঘুমিয়েছে। সত্যি বলতে বাধ্য হয়েছে।
সে না হয় অন্য ঘরেই ঘুমিয়েছে। তাই বলে এত বেলা হয়ে গেল একবার ডাকবেও না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


অনন্যা উঠে দাঁড়ায়। বুকের উপর ভালো করে আচঁল টেনে দেয়। কুচির দিকটা হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে। হঠাৎ বেডসাইড টেবিলে ফ্লাওয়ার ভাস এর নিচে একটা সাদা কাগজ দেখতে পায়। কাগজটা হাতে তুলে নেয়। ভাজ খুলে পড়তে থাকে।

প্রিয় অনন্যা,
তুমি হয়তো খুব ক্লান্ত ছিলে! কখন ঘুমিয়েছো জানি না। সকালে অঘোরে ঘুমাচ্ছিলে। তাই তোমাকে ডাকি নি। তোমার ঘুম ভালো হয়েছে তো?

আমি জানি তুমি আমার উপর অভিমানে করে আছো! তবে এই অভিমানের মেঘ কেটে একদিন ভালোবাসার জোৎস্না ঠিক উঁকি দিবে। ঠিক সেদিন জোৎস্না রাতে আমার হাত ধরে চাঁদের আলো গায়ে মেখে তুমি হেসে কুটিকুটি হবে! আর আমি মুগ্ধ চিত্তে তুলনায় বসব! নীল আকাশের চাঁদ বেশী সুন্দর না-কি আমার বুকের উষ্ণ আদরে সোহাগি চাঁদটাই বেশি সুন্দর। সেদিন হয়তো দূর আকাশের চাঁদ লজ্জায় মুখ লুকাবে, হার মানবে তোমার রুপের আলোক ছটায়। এই দৃশ্য যে আমার পরম আকাক্ষিত! পরম আরাধ্য।
থাক তোমায় নিয়ে দেখা হাজারো স্বপ্নের ভীড়ে না হয় এই একটুকরো স্বপ্নের কথাই তুমি জানলে বাকিটা বরং আমার একান্ত আপন হয়েই তোলা থাক।

কাজের কথায় আসি। আমাকে আউটডোর শ্যুটিং এর জন্য নেপাল যেতে হচ্ছে সব মিলিয়ে দেড় মাসের মতো লাগবে। দুপুর ১টায় ফ্লাইট। যদিও এটা আগে থেকেই ফিক্স করা আমার সব গোছগাছ ও হয়ে গিয়েছিল। তবে তোমাকে জানাতে পারলাম না তার জন্য সরি। বাসায় নিতু আর নাসির থাকবে ওদের যা যা দরকার হয় নিজের মনে করে বলো। তুমি ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে বাসায় চলে যেও। নাসির তোমাকে ড্রপ করে দিবে। আর হ্যাঁ তোমার বালিশের নীচে ফ্ল্যাটের চাবি। যাওয়ার আগে ফ্ল্যাটটা লক করে চাবিটা তোমার কাছে রেখ।
নিজের খেয়াল রেখ! আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
রগচটা, খামখেয়ালি, ঝগড়ুটে অঙ্কন ।

অনন্যার দু’চোখের নীচে সাত সাগরের কান্না জমা হয়। অঙ্কনকে দেড় মাসের মতো দেখতে পাবে না এটা ভেবেই অসম্ভব দুঃখ দুঃখ অনুভব হচ্ছে।সেই সাথে আফসোস হলো কেন অঙ্কনকে কাল এত কাছে পেয়েও ওভাবে দূরে সরিয়ে দিল। শেষ মুহুর্তে অঙ্কনের সাথে খুব দূর্ব্যবহার করেছে অন্যরুমে যেতে বাধ্য করেছে। একসাথে ঘুমোলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত!
নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারল না। মন কেমন করা উদাসী পাগল পাগল অনুভবটাকে সঙ্গী করে অনন্যা এই দমবন্ধকর অবস্থা থেকে বের হতে চাইল।
ফ্রেস হয়ে শাড়ি গয়না খুলে ক্লোজেটে রাখে। নিজের ব্যাগ, জামা কাপড় পরে ঘর থেকে বের হতে উদ্যত হয়।
নিতু আর নাসির লিভিংরুমে বসে ছিল। অনন্যাকে এরকম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যেতে দেখে ওরা ভীষণ অবাক।
” ম্যাডাম এভাবে তাড়াহুড়ো করে কোথায় ছুটছেন?”

অনন্যা কিছুক্ষণ থেমে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
” আমাকে এয়ারপোর্টে যেতে হবে!”
নাসির বিষয় খেয়ে বলে,
” ফ্লাইট তো ১ টায় হওয়ার কথা। এখন অলমোস্ট সাড়ে ১২ বাজতেছে। আপনি এয়ারপোর্টে যেতে যেতে প্রবাবলি প্লেন ফ্লাই করবে। তাহলে তো গিয়ে কোন লাভ হচ্ছেনা!”
অনন্যা ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকে। সত্যিই তো গিয়ে কি হবে? অঙ্কনকে তো আর দেখতে পাবে না! মনে হচ্ছে হৃৎপিন্ডের একটা অংশ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। বিষাদ বেলার ঘন্টা বাজছে। এই বিষাদ তাকে বরণ করে নিতে হবে স্বেচ্ছায় এবং একাকী। চোখ মুখ কুঞ্চিত আকার ধারণ করে। শুষ্ক ঠোঁট জিহবা দিয়ে ভেজাতে ভেজাতে বলে,
” আপনারা নিজেদের মতো যান। আমি একাই বাসায় যাব।”
” কিন্তু আপনি এখনো ব্রেকফাস্ট করেননি। অঙ্কন ভাই এই দায়িত্ব টা আমার উপর দিয়েছিল। প্লিজ কিছু খেয়ে যান। নাহলে উনি আমার আর নাসিরের উপর রেগে যেতে পারে!” নিতু কাকুতিমিনতি করে উঠে।
অনন্যা নির্লিপ্তভাবে বলে, ” আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আর অঙ্কনকে এই সামান্য বিষয় ইনফর্ম করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ”

” আচ্ছা, চলুন একসাথেই বের হয়। দ্যান আমি আপনাকে ড্রপ করে দিব কেমন!”
” নো! থ্যাংকস। আমি একাই যাব। আর এই ব্যাপারে আমি একটাও কথা শুনবো না।”
অনন্যা গটগট করে বের হয়ে যায়। পেছন পেছন নাসির নিতুও আসে।
” ম্যাম, প্লিজ আমরা আপনাকে একা ছাড়তে পারি না। একটু বুঝার চেষ্টা করুন।”
” দেখুন, আপনাদের স্যারের একদিনের বউ হওয়ার আগে না আমি আমার বাবা মায়ের অনন্যা৷ যে একা একাই চলেতে পারে। এতোদিন চলছে এবং এখনো চলবে। ক্লিয়ার! আশা করি আমি বুঝাতে পেরেছি যে আমার উপর অহেতুক কনসার্ন না দেখালেও চলবে!”
” কিন্তু আমরা স্যারকে কি জবাব দেব!”
” সেটা আপনাদের ব্যাপার!”
নিতু আর নাসির এরপর আর অনন্যাকে ঘাটায় নি। তবে নিতু একবার ফিসফিসিয়ে বলে,
” যেমন বউ তার তেমন জামাই! বাপরে বাপ, কেউ কম যায় না।”

*********************

অনন্যা বাসায় ফিরে থমথমে মুখ করে। মুখ চোখের অবস্থা দেখে বুঝাই যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। আয়েশা মেয়ের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন কিন্তু সে মাথাব্যথার অজুহাত দিয়ে শুয়ে থেকেছে। পরক্ষণেই আয়েশা যখন মেয়ের মাথা টিপে দিতে এসেছিলেন অনন্যা অঝোর ধারায় কেঁদেছিল। তবে আয়েশা মেয়েকে কিছু প্রশ্ন করেননি। অস্বাভাবিক শান্ত থেকেছেন। হয়তো ঠিক সময়ে মেয়ে নিজেই জানাবে। তিনি সেই সময়ের অপেক্ষায়।

********************

কাটায় কাটায় বেলা ২ টা ১০ মিনিটে বিমান নেপালে ল্যান্ড করে। এয়ারপোর্টে থেকে পুরো টিম সহ সকলেই থামেল এসে পৌছায়। । থামেল হলো কাঠমুন্ডুতে পর্যটকদের থাকার জন্য একটি এরিয়া। চাইনিজ, জাপানিজ, ইউরোপিয়ান, আমরিকান ট্যুরিস্টদের দিয়ে ভরপুর এই এলাকাটি।হোটেলে চেক ইন করে অঙ্কন ভেবেছিল অনন্যাকে ফোন করবে। কিন্তু ফ্রেস হয়ে বিছানায় সে গা এলিয়ে দেয়। দু’চোখে রাজ্যের ঘুম। পুরো একরাত নির্ঘুম ছিলো। তাই খুব ক্লান্ত ছিল। যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সন্ধ্যে নামার প্রাক্কাল। ধরফর করে, বিছানায় উঠে বসে। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। অনন্যাকে ফোন করা হয়নি।

প্রথমবার ফোন বেজে কেটে যায়। দ্বিতীয়বার রিসিভ হয়। চেনা নিঃশ্বাস! চেনা গলার স্বর। প্রিয় কিছু মুহূর্ত যোগ হতে যাচ্ছে স্মৃতির পাতায়।

” অনন্যা! চুপ করে আছো কেন! কথা বলবে না।”

অনন্যা কেদেঁই চলেছে। কিন্তু কি দূর্ভাগ্য সেই জল অঙ্কন মুছেও দিতে পারছে না। কিন্তু কথা দিয়েছিল নিজেই নিজেকে বিয়ের পর অনন্যাকে একদম কাঁদতে দিবে না। কিন্তু প্রথমদিনই সে কথা রাখতে পারে নি। আচ্ছা মানুষ কথা দেয় কেন, কথা না রাখার জন্য!

আঁচমকা এই উদ্ভট প্রশ্নটা মাথাটা চেপে বসে। অঙ্কন নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আবার বলে,

” য়া’ম সরি অনন্যা! তোমাকে আমি খুব কষ্ট
ট দিচ্ছি। আগেও দিয়েছি এখনো দিচ্ছি। আমার হাতে অন্য কোন অপশন নেই।”

” কেন সরি বলছো! সরি তো আমার হওয়ার কথা। আমি সরি। খুব করে সরি। আমি না হয় তোমাকে অন্য ঘরে যেতে বলেছি সামান্য একটু দূরে সরে যেতে বলেছি। তার প্রতিদানে তুমি আমাকে অনেক অনেক দূরে সরিয়ে দিলে। দেশ ছেড়ে চলে গেলে।”
” একদম সরি বলবে না। যা করেছে ঠিক করেছো। তোমার কোন ভুল নেই অনন্যা। আর আমি তোমাকে দূরে সরাই নি। এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো।”
তার কিছুক্ষণ পর কেউ কোন কথা বলতে পারলো না। অনন্যাই শেষমেশ আধভাঙ্গা গলায় বলল,
” তোমাকে এতদিন না দেখে আমি থাকব কি করে?”
অঙ্কনের বুকের ভেতরের চিনচিনে ব্যাথাটা আবার বেড়ে গেল। ভালোবাসলে বোধ হয় এমনি কষ্ট হয়।
অঙ্কন কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু অনন্যা ফোন কেটে দেয়।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে