গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব -১৫

0
1972

গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব -১৫
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

ফাহমিদা বেগম সমব্যথী নয়নে তাকালেন একবার হিয়ার দিকে। তারপর মুহূর্তেই তার দৃষ্টির রং পরিবর্তন করে সেখানে ভর করলো এক পৈশাচিক শিকারীর ভয়ার্ত দৃষ্টি। যে দৃষ্টি দেখলেই পশুরা হন্যে হয়ে ছুটে পালিয়ে যায় কোনো এক নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । কিন্তু বেচারি ছোঁয়া! তার তো বনের সেই পশুগুলোর মতো ছুটে পালিয়ে যাবার স্বাধীনতা টুকুও নেই। সে যাবে কোথায়? যাবার তো কোনো জায়গা নেই!

ফাহমিদা বেগম এবার ব্যগ্র কণ্ঠে বললেন, ‘তুই কি ভুলে গেছিস স্কুলে পড়ার জন্য আমার দেয়া শর্তের কথা?’

ছোঁয়া ফাহমিদা বেগমের কণ্ঠের ব্যগ্রতায় কেঁপে উঠল। মনে মনে সে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। যদি এই জল্লাদ মহিলা তার পড়ালেখা বন্ধ করে দেয় তো! তখন কি হবে? ছোঁয়ার স্বপ্নগুলো তো অধরাই থেকে যাবে। নাহ্! এটা কিছুতেই হতে পারে না। কক্ষণো না। ছোঁয়া মিনমিনিয়ে বলল,’মনে আছে। সব শর্তই মনে আছে আমার। কিন্তু আজ কীভাবে যে দেরি হয়ে গেল! আমি তা বুঝতেই পারিনি। দয়া করে আমাকে এবারের মত মাফ করে দেন।’

ফাহমিদা বেগমকে খানিক দমেছেন বলে মনে হলো । তবে তার রাগ এখনো আছে। মাঝখান থেকে অহনা বলল,’আম্মু , তুমি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর কথা শুনছ। ও একটা মিথ্যাবাদী আম্মু । আমি নিশ্চিত ছোঁয়া মিথ্যা কথা বলছে। আম্মু আজ ওর জন্য আমাদের দুই বোনকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। তুমি ওকে এর শাস্তি দাও। পারলে ওর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দাও। এটাই হবে উচিত শিক্ষা । আর ও স্কুলে পড়ে নাকি । সারাদিন ছেলেদের পেছনে পড়ে থাকে। বড় লোকের ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় শুধু । তুমি আজকে ওকে শাস্তি না দিলে আমি কিন্তু খুব বড় কিছু করে ফেলব আম্মু। আমি ওর শাস্তি চাই। এটা বলেই অহনা ধপাস করে ক্লান্ত হওয়ার ভান করে বসে পড়ল সোফার উপর।’

ফাহমিদা বেগম বললেন,’কি হয়েছে অহনা , আমার সোনামণি? খুব খারাপ লাগছে নাকি তোমার?’

অহনা কাতর চোখে তার মায়ের দিকে তাকাল।তারপর বলল,’আম্মু আমার খুব পেট ব্যথা করছে। স্কুল থেকে আসার পর কিচ্ছু খাইনি। তাছাড়া আজকের নাশতাটাও কি বাজে বানিয়েছে খেতে পারি নাই। তাই হয়তো খুব খারাপ লাগছে আম্মু।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


ফাহমিদা বেগম অহনার কথা শুনে চরম রাগ করলেন। তিনি ভাবছেন ছোঁয়ার এত্ত বড় স্পর্ধা হয় কি করে? এত্ত সাহস এই মেয়ে পায় কোথা থেকে? তিনি ভাবলেন তিনি আজ কোনোভাবেই এই মেয়েটাকে মাফ করবেন না। কোনোভাবেই না । যেই ভাবা সেই কাজ। খারাপ কাজগুলো বোধহয় সম্পাদন করা অতি সহজ! তিনি সোফা থেকে দুম করে উঠে দাঁড়ালেন । তারপর তার হাতের বেত দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করছেন একের পর এক ছোঁয়ার সেই ক্লিষ্ট শরীরের উপর । ছোঁয়া আর্তনাদ করছে । কিন্তু সেই আর্তনাদ শুনতে হলে তো এক জোড়া সচেতন কান দরকার, দরকার সমব্যথী হওয়ার জন্য একটি হৃদয়ের। যদি এইসব না থাকে তবে তা শুনবে কীভাবে? আর কীভাবেই বা সমব্যথী হবে?

ছোঁয়া চিৎকার করেই যাচ্ছে । এই চিৎকার থামবার নয়, আর তার উপর চলমান মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সেটাও বোধহয় থামবার নয়। কিছু মানুষ অত্যাচার করে তৃপ্তি পায় । মুখ দিয়ে তুলে তৃপ্তির ঢেকুর। ফাহমিদা বেগমের দুই মেয়ে অহনা ও হিয়াও সেই পর্যায়ের । কথায় আছে না, আগ নাংলা যেদিকে যায় পাছ নাংলা সেদিকে যায় । ফাহমিদা বেগম যেমন ঠিক তেমনি হয়েছে তার কন্যা দুটো। যাদের মানুষের কষ্টে নেই কোনো অনুশোচনা, নেই কোনো অনুতাপ!

নিজের গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছোঁয়াকে আঘাত করার পর ফাহমিদা বেগম হাঁপিয়ে উঠেছেন। বন্য প্রাণীর মতো একইসাথে রাগে ফুঁসছেন আর হাপাচ্ছেন। আর এদিকে তার দু’মেয়ে মিটিমিটি হাসছে । ছোঁয়া পড়ে রইলো ঘরের মেঝেতে তাদের ঠিক সামনে নির্জীব, নিষ্প্রভ একজন মানুষ নিসেবে। ঠিক যেন শুকুনের দলেরা টেনে হিচরে খাওয়া কোনো প্রাণহীন প্রাণীর মতো। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। বেতের আঘাতে তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছোপ দেখা যাচ্ছে । যেখানে যেখানে বেতের আঘাত পড়েছে সেখানে সেখানে ফুলে গেছে। দলা পাকানো মাংসের মতো মনে হচ্ছে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা। যতটুকু দৃষ্টিতে পরখ করা যায় ততটুকুতেই হৃদয় কাঁপানো আঘাতের চিহ্ন।

একটু পরেই আবার ফাহমিদা বেগম গগণবীদারী এক চিৎকার দিলেন। গলা উঁচিয়ে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বললেন ছোঁয়াকে তাদের সকলের জন্য নাশতা আর রাতের খাবার রেডি করতে। ছোঁয়া জানে এখন যদি সে এই মহিলার সামনে থেকে চটজলদি না উঠে তবে তার ম কপালে আরো দুঃখ আছে । তাই সে শরীরে যতটুকু শক্তি অবশিষ্ট আছে তার সমস্ত দিয়ে চেষ্টা করলো উঠে দাঁড়াবার । শেষমেশ উঠে দাঁড়িয়ে ঢলতে ঢলতে কিচেনে গেল। স্কুল ইউনিফর্ম খোলা হয়নি তার, হয়নি খোলা ক্যাডস জোড়া। যেমন ছিল তেমন অবস্থাতেই কাজে লেগে গেল। তবে চোখের দেয়াল ফেটে উপচে পড়ছে অনিরুদ্ধ অশ্রুধারা। আর কতক সময় পর পর ফুঁপিয়ে উঠছে সে।আর সেই ফুঁপিয়ে উঠার শব্দ জুড়ে বিরাজ করছে এক অন্য রকম কষ্টের ঘনঘটা। যার তীব্রতা ঘন কালো মেঘকেও হার মানাবে।
________

শিহরণ বাসায় এসে মাত্র দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়ল বিছানার উপর ধপাস করে। দুহাতে তার মাথার চুলগুলো খামচে ধরেছে। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে তার। সব থেকে বড় কথা সে তার কারণটা জানে না। এক কথায় এমন অদ্ভুত ও বিচিত্র অনুভূতির কারণটা তার নিকট অস্পষ্ট ও অজানা। তার হালকা সবুজাভ চোখ দুটোতে সবুজাভ রঙের সাথে মিশ্রণ ঘটেছে লাল বর্ণের । দেখতে কেমন যেন লাগছে তাকে। এভাবেই সে চুল খামছে বসেছিল অনেক্ষণ। কতক সময় এভাবেই পার হয়ে গেল তা সে জানে না। খোলা হয়নি স্কুল ইউনিফর্ম, খোলা হয়নি জুতো জোড়া, মোজাও আছে । বাইরে আযানের ধ্বনি কানে আসছে ভেসে। একটার পর একটা মসজিদে আযান দিচ্ছে ।

তারপরেও শিহরণের কোনো নড়চড় নেই। তার বুকটা শুধু উঠানামা করছে। জানান দিচ্ছে তার শ্বাস প্রশ্বাসের । বহ্নি কয়েকবার এসে দরজায় করাঘাত করে গেলো। ডাকল কতক সময় ।
শিহরণ তারপরেও উঠেনি। পরে তার মা সাবিহা সাবরিন আসলেন। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বললেন,’ শিহরণ, ইজ দেয়ার এনিথিং রং , মাই চাইল্ড?’

শিহরণ মায়ের ডাককে ইগনোর করতে পারল না। মায়ের ডাককে ইগনোর করা সব থেকে কঠিন কাজ। সে তৎক্ষনাত জবাব দিল,’নো মম, এভরিথিং ইজ ফাইন। আই ওয়াজ জাস্ট টু টায়ার্ড টুডে।।সো আই থট টু টেক সাম রেস্ট ফার্স্ট।’

‘ওকে ডিয়ার। বাট কাম ফাস্ট। আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। নাশতা খেতে দ্রুত আসো।’ সাবিহা সাবরিন শান্ত কণ্ঠে বললেন।

শিহরণের কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সে তার মাম্মিকে না ও বলতে পারবে না। যদি না বলে তবে তার মাম্মি নির্ঘাত বুঝতে পারবে যে সে কোনোকিছু লুকোচ্ছে বা কোনোকিছু হয়েছে তার।তাই সে বলল, ‘মম, আই এম জাস্ট কামিং উয়িদিন ফাইফ মিনিটস।

‘ওকে ডিয়ার, ডোন্ট বি লেইট। ইওর ড্যাডি ইজ ওয়েটিং ফর ইউ।’

শিহরণ বলল,’ওকে মম।’

চলবে…..ইন শা আল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে