গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-১২
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
বহ্নিকে ওভাবে বিরসমুখে বসে থাকতে দেখে
অতল বলল,’কি রে আগুন মনি , তোর মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?’
বহ্নি নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়াল । পড়ন্ত বিকেল। সূর্য অস্ত যাবে। আর তার সাথে সাথে তার হৃদয়ের আশাগুলোও হয়ে যাবে স্তিমিত । বহ্নি কয়েকবার লম্বা লম্বা শ্বাস নিল। অতল বহ্নির এমন অবস্থা দেখে অসহায় বোধ করল। সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করল,’বহ্নি, তোর কি খারাপ লাগছে?’
বহ্নি এবার স্বাভাবিক অথচ খুব শান্ত স্বরে বলল,’হ্যাঁ, ভাইয়া । আমি ঠিক আছি। তুমি যেন কি বলছিলে?’
অতলকে খানিক বিব্রত মনে হলো। সে বিবশ গলায় বলল,’চিঠি লিখে দেবার কথা বলছিলাম।’
‘ছোঁয়া নামের মেয়েটাকে দেবার জন্য?’ বহ্নির সহজ স্বাভাবিক অভিব্যক্তি ।
অতল বিষম খেলো। সে কাঁচুমাচু হয় বলল,’হুম।’
‘তোমার কাজ হয়ে যাবে। কাল স্কুলে যাওয়ার আগে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেও।’ বহ্নি দৃঢ়তার সাথে বলল ।
অতল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। উল্লসিত কণ্ঠে বলল,’অনেক ধন্যবাদ আগুনমণি। আমি জানতাম তুই কখনো না করবি না।’
বহ্নি ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল,’এত বিশ্বাস কর আমায়?’
অতল বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল,’নিজের চাইতেও বেশি।’
অতল যাবার সময় বহ্নির চিবুক ধরে বলল,’আগুনমনি, ভাবছি তোর নামটা চেইঞ্জ করব।’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
বহ্নির কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তারপরেও বিরস মুখে প্রশ্ন করল,’ আগুনমণি বাদ দিয়ে এবার কি নাম রাখবে ?’
অতল বহ্নির চুলগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে বলল,’এটা বকেয়া রইল। তোর বিয়েতে এই নামটা তোকে গিফ্ট করব।’
বহ্নি মৃদু অথচ দীপ্ত কণ্ঠে বলল,’তবে জেনে রাখো, ওটাই হবে তোমার কাছ থেকে আমার পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।’
অতল এবার বহ্নির মুখোমুখি দাঁড়াল । তারপর পূর্ণব্যাদিত চোখে তার দিকে দৃষ্টি রেখে প্রশ্ন করল,’তুই এত গম্ভীর টাইপ কথা বলিস কেন? তোর বয়সের বাচ্চাদের মতো কথা বলতে পারিস না?’
‘আমার বয়সী বাচ্চাদের মতো কথা বললে তুমি কি আমার কাছে আসতে? তোমার ভাবনার ক্ষুদ্র অংশটাও কি আমি জানতে পারতাম?’
বহ্নি মৃদু হাসার চেষ্টা করল।
বিষাদগ্রস্ত কোনো মানুষ নিজের কষ্টকে ছাপিয়ে আনন্দ পাওয়ার অভিনয় করলে যেমন দেখায় ঠিক তেমন মনে হলো বহ্নিকে অতলের। কেন এমন দেখাচ্ছে বহ্নিকে? অতলের মনে প্রশ্নের দাপাদাপি । তবে অতলের ভাবনার জগতের গভীর থেকে গভীরে গেলেও হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। অতল ভাবে এই পিচ্চির আবার কিসের কষ্ট ! যে এখনো ভালো করে দুনিয়াই দেখল না-তার কি এমন গভীর কোনো কষ্ট থাকতে পারে? অতলকে বিভ্রান্ত দেখাল। সে সন্দিগ্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন করল,’ তুই কি কোনো কারণে আপসেট?’
চকিতে বহ্নির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জাগ্রত হয়ে গেল । সে বুঝে গেল তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে । মুহূর্তেই সে নিজের প্রাণোচ্ছল রূপে ফিরে এলো। সে হাসতে হাসতে বলল,’তোমাকে বোকা বানোনো কত্ত সোজা! আমি আর আপসেট? আমরা দুজন দু’মেরুর। কোনোভাবেই আমাদের সাক্ষাত হবার নয়।’
অতল এবার আশ্বস্ত হলো। সে কৌতুহলী চোখে বলল,’আগুনমনি রে! তুই এত প্রাণোচ্ছল যে-তোকে একটু মনমরা দেখলেই কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।’
বহ্নি আর কথা বাড়াল না। তার ভালো লাগছে না কিছুই। অতল কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বারান্দা থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল । অতল যাওয়ার সাথে সাথেই বহ্নি ধপ করে বসে পড়ল চেয়ারে।
কিছু অব্যক্ত কথন,
দিয়ে যায় বেদন।
মনের গভীরে,
খুব গভীরে ;
করে দেয় রক্তক্ষরণ ।
তাতেই হয় না ক্ষান্ত;
বিধ্বংসী কষ্টের ভেলা।
খুঁড়ে খুঁড়ে সতেজ করে
নিস্তেজ করে দেয়;
সমস্ত আকাঙ্ক্ষা,
আর সমস্ত চাওয়া পাওয়া!
যারা সদ্য ডানা মেলেছিল
সম্ভাব্য ঝড়ে তা যেন ;
কোথায় গুটিয়ে গেল!
শত খুঁজেও মেলেনি দেখা
এ যেন এক আরাধ্য
ভালোবাসা!!!
বহ্নি আনমনেই নিজের লেখা কবিতার কিছু লাইন আবৃত্তি করল। সত্যিই মানুষ বড় অদ্ভুত! সুখ- দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় একেক জন একেকরকম প্রতিক্রিয়া করে থাকে। কেউ হয়তো ঘুমায়, কেউ কান্না করে, কেউ ইচ্ছেমতো খাবার খায় তো কেউ কবিতা আবৃত্তি করে আবার কেউ গান গায় বা শুনে। বহ্নি তার লেখা কবিতার চরণে নিজের মনের অব্যক্ত কথন যেন আওড়ালো! বিচিত্র মানুষের বিচিত্র প্রকাশভঙ্গি! অভিজ্ঞতার ঝুলিতে সঞ্চয় হয় নানান অভিজ্ঞতা জীবনের নানান মোড়ে নানান মানুষের সংস্পর্শে এসে।
বিকালের দিকে বহ্নি এক বসাতেই লিখে ফেলল একখানা চিঠি। নিজের পছন্দের মানুষের জন্য অন্যকে প্রকাশ করার নিমিত্তে! সময় মানুষকে দিয়ে কত কিছু করায়! একটা সময় যা অসম্ভব বলে মনে হয়, মনে হয় অসহ্য ও বিরক্তিকর। সময়ের পরিক্রমায় সেই সব অসম্ভব জিনিসগুলো সম্ভব হয়ে যায়, অসহ্য আর বিরক্তিকর বিষয়গুলোই হয়ে উঠে সহনীয় ও ভালোবাসার।
বহ্নির চোখে নেই কোনো অশ্রুবিন্দু। সে ছিচকাঁদুনে তো নয়’ই; সহজে কান্না করা তার স্বভাবের একেবারে পরিপন্থী । তার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে পারে, হতে পারে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ । তবে কোনোভাবেই তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চোখের জল আসবে না। কিছু মানুষ খুব সহজে কাঁদতে পারে; আর কিছু মানুষের জন্য কান্না করাটা যেন পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন। বহ্নি দ্বিতীয় স্তরের।
চিঠি লেখা শেষ করেই বহ্নি চিঠিটা তার ডায়েরির ভাজের মধ্যে রেখে দিল। তারপর কানে হেডফোন গুঁজে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখতে লাগল। আর শুনতে লাগল তার প্রিয় শিল্পীর গাওয়া তার প্রিয় গানটি।
ছোঁয়া খুব ভোরে উঠল ঘুম থেকে। আজ স্কুলে যেতেই হবে। অসুস্থতার কারণে ছুটিতে ছিল সে। আজ বেশ ভালোই লাগছে তার। যদিও দুর্বলতা পুরোপুরি কাটেনি। তারপরেও স্কুলে যেতে তো হবেই। বাসার সব কাজ শেষ করে ছোঁয়া সবার জন্য নাশতা তৈরী করে স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুলের জন্য যেই বেরুতে যাবে ফাহমিদা বেগম পেছন থেকে ডেকে বললেন তাকে টেবিলে নাশতা সার্ভ করে দিতে। এই কথা শুনে ছোঁয়ার মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেল। সে ভাবছে সামান্য নাশতাটা নিয়েও যদি খেতে না পারে! সব তো সে নিজের হাতে রেডিই করে রেখেছি। তারপরেও এত ভং ধরার কি আছে! কিন্তু মুখে কিছুই বলল না। চুপচাপ সব কিছু ফাহমিদা বেগমের সামনে দিলো। তারপর স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। আজো তার কিছুই খাওয়া হয়নি। কাজ করতে করতেই সময় শেষ। তাই না খেয়েই স্কুলে যেতে হচ্ছে। ছোঁয়া ভাবলো ক্যান্টিন থেকে না হয় কিছু একটা কিনে খেয়ে নেবে ।
অতলের আজ খুশির সীমা নেই। সে খুব সকালে উঠে শিহরণের বাসায় গেল। তারপর বহ্নির কাছ থেকে চিঠিটা নিল। চিঠি নিয়ে তাকে বলল,’অনেক অনেক ধন্যবাদ, আগুনমণি।’
‘কাজ হলে তবেই না হয় ধন্যবাদ দিও!’ বহ্নি নির্বিকারভাবে বলল।
‘তুই লিখেছিস বলে কথা । কাজ তো হতেই হবে।’ অতল সহাস্যে বলল।
‘আমার প্রতি এত বিশ্বাস কেন তোমার? যদি কাজ না হয় তবে কি আমার প্রতি তোমার সমস্ত বিশ্বাস শেষ হয়ে যাবে?’ বহ্নি প্রশ্ন করল ।
অতল তৎক্ষনাত কী বলতে হবে ভেবে পেল না। সে নীরব থাকল। অতলকে নীরব থাকতে দেখে বহ্নি বলল,’বেস্ট অব লাক, অতল ভাইয়া ।’
অতল উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল,’কাজ হলেই তোকে বিশাল একটা ট্রিট দেব।’
‘কাজ না হলে বুঝি আমাকে কখনো কোনো ট্রিট দেবে না?’
‘এভাবে বলিস না মণি। এবার যেন অন্ততপক্ষে ছোঁয়া একটু তাকায় আমার দিকে।’ অতলের কণ্ঠে হতাশা।
বহ্নি আবারো হোঁচট খেলো মনে মনে। ভাবলো মানুষ কেন সবসময় যে মানুষটা তাকে পাত্তাই দেয় না তার পিছনে ঘুরে। কেন মানুষ কথায় আর কাজে ভিন্ন!
কথায় বলে,
তুমি তাকে বেছে নিয়ো যে তোমাকে ভালোবাসে ।
তাকে বেছে নিয়েও না যাকে তুমি ভালোবাসো।
অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। মানুষ নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কত্ত বিচিত্র পন্থা অবলম্বন করে। অথচ যে মানুষটি তাকে সমস্ত উজাড় করে ভালোবাসে তাকে তার নজরেই পড়ে না!
চলবে….ইন শা আল্লাহ্