গল্প-আত্মা_নাকি_সে

0
3052

গল্প-আত্মা_নাকি_সে <সিজন-০২(পর্ব-০১) লেখক-- Riaz Hossain imran < রাস্তার মধ্যে মানুষের ভিড়ে মাঝে,একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ইচ্ছে মতো মারধর করছে।সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওর প্রেমিক তার প্রেমিকাকে এমনভাবে মারছে, যেন তারা বিয়ে করা কোন স্বামী-স্ত্রী। হ্যাঁ অবশ্য কোনো স্বামী তার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলাটা অন্যায়। কিন্তু এই যুগে অনেক স্বামী আছে, তাদের স্ত্রীদের প্রতিদিন রাতে, প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে শারীরিক নির্যাতন করে তাকে। শারীরিক নির্যাতন বলতে আমরা কি বুঝি? শুধু মেয়েদেরকে মারধর করা? মেয়েদেরকে গালি দেওয়া? না, তা নয়। বিয়ের পর দেখা যায়, অনেক মেয়েদের অনেক ভাবে নির্যাতন হতে হয়। কখনো শ্বাশুড়ির কাছে, কখনো স্বামীর কাছে, কখনো দেবরের কাছে,কখনো কখনো পাড়া- প্রতিবেশীদের কাছে। শুধু বিয়ের পরে নয়, বিয়ের আগেও মেয়েদের অনেক ভাবে নির্যাতন হতে হয়। কখনো প্রেমিকের কাছে, কখনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু বখাটে ছেলেদের কাছে, কখনো কখনো স্কুল বা কলেজে পড়া অবস্থায় তাদের শিক্ষকদের কাছে। এভাবে যদি মেয়েদের নির্যাতনের উদাহরণ দিতে থাকি, তাহলে হয়তো আমার পুরো গল্প এখানেই শেষ হয়ে যাবে। সেজন্য আর না বাড়িয়ে চলে আসি রাস্তায় প্রেমিকার উপর নির্যাতন করার ঘটনায়। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। কেউ এগিয়ে এসে মেয়েটিকে বাঁচাতে চাচ্ছেনা। অনেকে তো ভিডিও করাও শুরু করে দিয়েছে। হয়তো তাদের স্ট্যাটাসে লেখা থাকবে," দেখুন কিভাবে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে রাস্তায় সবার সামনে মারধর করল"। সেই স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে অনেকে কমেন্ট করবে,"আমাদের দেশের মানুষ গুলো এরকম জানোয়ার, তাদের চোখের সামনে এরকম অন্যায় কাজ হয়, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না"। হয়তো সে কমেন্ট করার মধ্যে একজন লোক আছে, যে সেই ঘটনাস্থলে ছিল। কিন্তু নারীবাদী বা প্রতিবাদী হওয়ার জন্য, সে কমেন্ট বক্সে এসে একেক কথা বলে যায়, যেগুলো দেখে অনেক মেয়েরা ইনবক্সে গিয়ে লুতুপুতু করতেও সময় নেয় না। তারা ভাবে, "এই ছেলের মধ্যে যদি নারীদেরকে নিয়ে এত চিন্তাধারা থাকে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি সে এত বড় কথা বলতে পারে, তাহলে তো এই ছেলের মনের মধ্যে অন্যায়ের কোন জায়গা নেই,এর সাথে লুতুপুতু করার জন্য সময় নিয়ে ভাবতে হবেনা। যে সময়টা নিব, সে সময়টাই বৃথা, মানে নষ্ট করার কোন মানেই হয়না। এদিকে রাস্তার মাঝে সবাই ভিডিওর মধ্যে ব্যস্ত, অনেকে ভিডিও না পারলেও, মেয়েটিকে যখন মারছে, তখন মেয়েটির জামা ছিড়ে ব্রা এর ফিতাটার দিকে তাকিয়ে উপভোগ করছে মেয়েটির সম্পূর্ণ দেহ। এমন সময় মানুষের ভিড় কেটে ভিতরে প্রবেশ করলো রিভা এবং মারিয়া। ও হে, এদের পরিচয়টা জেনে নিন। এরা হচ্ছে নুপুরের বান্ধবী। মানে যে মেয়েটিকে রাস্তার মধ্যে মারা হচ্ছে, সেই মেয়েটির নাম নুপুর এবং রিভা আর মারিয়া হচ্ছে নুপুরের বান্ধবী। যখন তারা স্কুল লাইফ শেষ করে কলেজে পা ফেলে, তখন থেকেই একসঙ্গে পড়াশোনা করে আসছে। আজ তিন বছর তাদের কলেজ লাইফে কেটে দিয়েছে। ওরাও কলেজের দিকে যাচ্ছিল, হঠাৎ রাস্তায় মানুষের ভিড় দেখে ভিড়ের ভিতর আসে। আর এসে যখন নুপুরকে দেখে, তখন তো ওরা দুজনেই অবাক হয়ে যায়। এরপর রিভা ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাস্তার। মারিয়া রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকা নূপুরের ওড়নাটা তুলে নূপুরের গায়ে পড়িয়ে দেয়। এরপর রিভা সে প্রেমিককে বলল, --তোর সমস্যা কি? ওকে মারছিস কেন? --আমার প্রেমিকাকে আমি মারব নাতো, তোর চাচা মারবে?? --দেখ, সাবধানে কথাবার্তা বল। না হলে জুতা পিটা করব তোকে। -- তুই আমাকে জুতা পিটা করবি মানে? চিনিস আমাকে? খুন করে ফেলবো তোকে। -- আমাকে খুন করবি না? আমাকে খুন করবি?দেখাচ্ছি মজা। এবার রিভা পায়ের স্যান্ডেলটা খুলে ইচ্ছামত সে ছেলেটাকে কয়েকটা মেরে দিল। যখন রিভা ছেলেটিকে মারছিল, তখন পাশে দাড়িয়া থাকা কয়েকটি ছেলে এসে,রিভার সাথে ওই ছেলেটিকে মারতে শুরু করে। এখন সবাই প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। এতক্ষণ কেও এগিয়ে আসছিল না, যখন মেয়েটি ছেলেটির গায়ে হাত দিল, তখন দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোর ভিতর পুরুষত্ব জেগে উঠল। তাদের মনোভাব "একটি মেয়ে ছেলেটিকে হয়তো ঠিকমতো মারতে পারছে না, আমরাও গিয়ে মেয়েটিকে হেল্প করি, যদি মেয়েটি আমাদের দিকে ভালোবাসার নজরে তাকায় আরকি"। সবাই রিভার সাথে ছেলেটিকে গণধোলাই দিতে লাগলো। আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন? ছেলেটি রাস্তার মাঝে কেন প্রেমিকাকে মেরেছে? কারণ হচ্ছে, গতকাল রাতে ছেলেটি নূপুরের থেকে 5000 টাকা চেয়েছিল। নুপুরের কাছে টাকা ছিল না বলে, তাকে বলেছিল যে "আমার কাছে আপাতত নেই, পরে হাতে টাকা হলে দিব "।কিন্তু ছেলেটি কিছুতেই মানছে না, সে শুধু এখন না, এইটা অনেকদিন ধরে করে আসছিল। নুপুরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারপর ইয়াবা ট্যাবলেট খেতে বসতো। প্রতি 5-6 দিন পর পরই নুপুরের কাছ থেকে টাকা চাইতো ওর প্রেমিক। নুপুরের হাতে টাকা ছিল না, টিউশনি করে যা টাকা পেত, সেগুলো সে প্রেমিককে দিয়ে দিত। অন্যদিকে নুপুরের কাছে টাকা না থাকলে, সে বাসা থেকে টাকা নিতো বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে। কখনো বই কিনার নাম করে, কখনো জামা কিনার নাম করে, কখনো নিজের পার্সোনাল জিনিসপত্র কিনার নাম করে। সেই টাকা এনে দিয়ে দিত প্রেমিককে। ছেলেটিকে নূপুর অনেক ভালবাসত। সেজন্য হয়তো ছেলেটির জন্য সব করত রাজি হয়ে যেতো।কিন্তু গতকাল নুপুর টাকা দিতে পারেনি। ওর কাছে টাকা ছিল না। কিভাবে দিবে, টিউশনির টাকা তো কিছুদিন আগে নিয়েছে। এখনো মাস শেষ হয়নি। অন্যদিকে বাসা থেকেও টাকা নিয়েছিল দুইদিন আগে। টাকাগুলো সে প্রেমিককে দিয়ে দিয়েছে। এখন সে কিভাবে টাকা আনবে। সেজন্য বলেছিল "আমার কাছে এখন টাকা নাই, কিছুদিন পরে দিব"। সকাল বেলা নুপুর কলেজে আসার সময় বাসা থেকে 50 টাকা নিয়েছিল টিফিনের জন্য। রাস্তার পাশে ঝাল মুড়ির দোকান দেখে ওর ইচ্ছে হয়েছিল ঝাল মুড়ি খাওয়ার। ঝাল মুড়ি খাওয়ার সময়, হঠাৎ প্রেমিকের সাথে দেখা। তখনই প্রেমিক বলল" আমাকে টাকা দেওয়ার সময় তোর কাছে টাকা থাকেনা, ঝাল মুড়ি খাওয়ার সময় টাকা ঠিকই থাকে তাই না? "।এই বলে প্রেমিকাকে মারধোর করতে লাগলো ছেলেটি। হয়তো নূপুরও বাচার জন্য রাগের মাথায় প্রেমিকের গায়ে হাত তুলে ফেলেছিল। কিন্তু সেই কারণে প্রেমিকের মাথা আরো গরম হয়ে যায়। এমনিতেও ছেলেটি ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করত। সে হয়তো নিজের সেন্স ঠিক রাখতে পারিনি। ডাক্তারদের পরামর্শে জানা যায়, যারা এসব নোংরা ছাইপাশ সেবন করে, তারা কখনো ভালোর দিকগুলো ভাবে না। নিজের দিক গুলো সব সময় ভাবে। আর সেটা ভালো হোক, কিংবা খারাপ হোক, সেটার দিকে তাকাবে না। তাকাবে নিজের দিকে, আর ভাববে "আমি এইটা করব, আমি এইটা করেই ছাড়বো "। তাদের মনোবল থাকে এরকম। হয়তো ওই প্রেমিকের মনোবলও তখন এরকম ছিল। সেজন্য সে নুপুরকে সবার সামনে মারধর করছে।এই হচ্ছে ঘটনা। এরপর রাস্তার মাঝেই ওদের ব্রেকআপ হয়ে যায়। নুপুর বলেছিল, ওর সাথে আজ থেকে যেন কোন কন্টাক না করে..। রিভা, মারিয়া এবং নুপুর আর কলেজে না গিয়ে, সোজা নুপুরের বাসায় চলে যায়। এতক্ষণে নুপুরের বাসায় ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেছে। নুপুরের ভাই যখন ফেসবুকে ঢুকেছে, তখনই দেখতে পায় নুপুরকে নির্যাতন করার ভিডিও। রাস্তার মাঝে একটা ছেলে ওর বোনকে মারছে। ভিডিওতে ফেসবুকে দেখতে পারছে ওরা।কতটা কষ্টদায়ক হলে হতে পারে ব্যাপারটা। নুপুরের আব্বু-আম্মু রেগে পুরো আগুন।নূপুর বাসায় গিয়ে সব কথা স্বীকার করে। ওরা শুধু এটুকুই বলেছে, নেক্সটাইম যাতে ওই ছেলের সাথে নুপুর কোনো দেখা না করে।সারারাত নুপুর কান্না করতে করতে কাটিয়ে দেয়, ছেলেটি যত কিছুই করত , ছেলেটিকে তো সে ভালোবাসতো। কিন্তু এভাবে যে তাকে ছেড়ে দিতে হবে, কখনও ভাবেনি নূপুর। পরেরদিন সকালে নূপুর কলেজে আসতেই দেখলো রিভা এবং মারিয়া কলেজের সামনে, একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। নুপুর গিয়ে তাদের সাথে বসল। এরপর মারিয়া আগে থেকে বলল, --কিরে, এখন শরীর কি রকম। -- এইতো আছি কোনরকম। তোরা ভালো আছিস? -- হ্যাঁ, আমরা ভালো আছি। তো তোর প্রেমিককে ভুলতে পেরেছিস? নাকি এখনো তার সাথে রিলেশন করবি ভাবছিস। --না, এরকম করবো না আর।আজকালকার ছেলে গুলো অনেক খারাপ। ওরা সবসময় উপরে থাকতে চায়। সব ছেলেরাই এক রকম। তখনই রিভা বলল, --আজকালকার ছেলে গুলো অনেক খারাপ, আর এই সব কিছুর পিছনে কিন্তু ওরা নিজেরাই দায়। কিছুদিন আগে আমি ফেসবুকে গল্প পড়ার জন্য একজন লেখক এর আইডিতে যাই। ছিহহ, কি অশ্লীল ব্যবহার, কি অশ্লীল ভাষায় লিখেছে,ছিহ আমার তো আর ফেসবুকে যেতেই ইচ্ছে করছে না। --কেন, কি রকম গল্প?আর কি রকম ভাষা? --আরে দেখিস নি? কিছুদিন আগে রিয়াজ হোসেন ইমরান নামের একজন লেখক একটা গল্প লিখেছিল।আত্মা নাকি সে। আমি ভাবছিলাম হয়তো কোনো ভালো গল্প হবে। সেজন্য পড়া শুরু করেছি। কিন্তু 2 পর্ব পড়ে আমার, গল্পের উপর থেকে সব রুচি চলে যায়। এত খারাপ ভাষা? এত খারাপ মন-মানসিকতার হতে পারে ওরা,আমি আগে ভাবিনি। লেখাগুলো পড়ে কিন্তু আজকাল ছেলেগুলো এসব করে বেড়াচ্ছে। এসব লেখকদেরকে জেলে আটকে রাখা দরকার। -- ও,হে সেই গল্পটা? হ্যাঁ আমিও পড়েছি গল্পটা। তিনি নাকি বলছেন বাস্তবতা নিয়ে লিখেছে। বাস্তবতা নিয়ে কি এতো খারাপ ভাষায় লিখতে হয়? বাস্তবতা নিয়ে লিখতে গিয়ে এসব লিখ বেড়ায় ওরা ছিহহ। এসব খারাপ খারাপ শব্দ ব্যবহার করে তিনি নিজেকে ফেমাস করতে চাচ্ছেন।আবার পাঠকও অনেক।আমরা প্রতিদিন ওয়েবসাইট থেকে যে চটি গল্প পড়ি,সে গল্পের থেকে একটুও কম না।ছিহহ, এসব চিন্তাধারা এদের আসে কোথা থেকে। এসব লেখকদেরকে আমি সামনে পেলে, জুতা পিটা করতাম। -- হ্যাঁ ঠিক বলছিস। --আচ্ছা যাইহোক, এসব ফালতু লেখকদের কথা বলে লাভ নাই.. ওদের কথা বলে এখন আমাদের আড্ডাটা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। --চল আজকে কোথাও ঘুরে আসি। --কেন, ক্লাস করবিনা? --ক্লাস আর ভালো লাগেনা চুল। প্রতিদিন এভাবে ক্লাসে কার মন বসে। একদিন না হয় ঘুরে আসি চল।অনেক ছেলেরা ঘুরে বেড়ায় পার্কে।তাদেরকে একটু দেখিয়ে আসি আমাদের রূপ-যৌবন। --তুইও না? পারিস বটে। ঠিক আছে চল একটু ঘুরে আসি। আজকে অনেকদিন তো হলো, তিনজন মিলে একসাথে কোথাও বের হয়নি। --ঠিক আছে চল। ওরা কলেজের সামনে থেকে একটা রিক্সা নিয়ে, তিনজনই উপরে উঠেছে। অবশ্য জায়গায় হচ্ছিল না, তবে তারা যে জায়গার উদ্দেশ্য যাচ্ছিলো, সেটা বেশি দূরে নয়। সেজন্য একজনের কোলে আরেকজন বসে । কিছু দূর যেতেই রিক্সাওয়ালা মারিয়াকে বলল, -- আপা, আপনার ওড়নাটা উপরে ওঠান।নাইলে চাকার সাথে পেচ লাগলে, সাথে সাথে পড়ে যেতে পারেন। -- ও হে,ধন্যবাদ। আমি খেয়ালই করিনি। অবশেষে তারা তাদের গন্তব্যে পৌছালো। যাওয়ার পর মারিয়া পার্স থেকে 20 টাকা রিক্সাওয়ালার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। 20 টাকা দেখে রিক্সাওয়ালা বলল, --আপা, ওখান থেইকা এহানে 25 টাকা ভাড়া।5 টাকা কম দিতাছেন কেন। -- আরে কথা বলবেন নাতো? আমরা ঠিক করে বসেই আসতে পারিনি।আমার কোলে ও বসে আমার হাঁটুর ব্যথা তুলে দিয়েছে। সেজন্য তো আরো ৫০ টাকা জরিমানা হওয়া দরকার। -- কিন্তু আমি আপনাদের সাথে মিথ্যা কথা কইতাছিনা। কলেজ থেইকা পার্কে আসতে 25 টাকা ভাড়া। আমি আপনাদের থেকে 5 টাকা খাইয়া তো বড়লোক হবো না। আর আপনারা তো পাঁচ টাকা অনেক সময়, অনেক কাজে নষ্ট করে ফেলেন। আমাকে 25 টাকাই দেন আপা। -- এই ভাই , তুমি কি 20 টাকা নিবা? নাকি 15 টাকা দিবো। রিক্সাওয়ালা বাধ্য হয়েই টাকা নিলো। এদিকে বিশ টাকা দিয়ে রিভা,নূপুর আর মারিয়া হাসতে হাসতে চলে যায় পার্কের ভিতর। রিক্সাওয়ালা চলে যায় অন্য এক আশার আলোর জন্য। হয়তো তাদের এক একটা প্যাসেঞ্জার, তাদের কাছে অনেক কিছু। প্যাসেঞ্জার থেকে টাকা নিয়েই, তাদের জীবন নির্বাহ করে।ওদের টাকায় তারা জীবিত থাকে। কিন্তু কেউ এইটা ভাবেনা, তাদের জন্যই আমাদের সকল সুযোগ সুবিধা নিজের হাতের মুঠোয় পাচ্ছি।আজকে যদি সেই গরিব মানুষগুলো না থাকতো,যদি আজ এই রিকশাওয়ালা না থাকতো, তাহলে সেখান থেকে এখানে হেটে হেটেই আসতে হতো। এখন তো শুধু হাটু ব্যাথা হয়েছে ওর, তখন তো পুরো শরীর ব্যথা হতো। মারিয়া হাসতে হাসতে বলেছিল, "অনেকদিন পর একটা মানুষকে মফিজ বানিয়েছি, আহা কি খুশি "। কিন্তু এরা বুঝতে পারেনি, সবচেয়ে বড় ওরা নিজেই। একটা গরীব লোককে ঠকানো হয়েছে এখানে,আমার হিসেবে গরিব কিন্তু সেই লোকটা না, উনি তো মারিয়াকে ৫ টাকা দান করেছে। কম টাকা দেওয়ায় উনি গলার আওয়াজ তোলে কিছু বলেও যায়নি। এই ৫ টাকায় হয়তো তিনি ২ ঘন্টার জন্য পেট ভরে একটা রুটি খেতো। আমাদের মতো লোকদের কাছে ৫০০ টাকার সমান তাদের কাছে ৫ টাকা। তবে গরিব কারা? আমরা? নাকি " দিন এনে দিনে খাওয়া মানুষগুলো"?। রিভা, মারিয়া এবং নুপুর সারাদিন পার্কের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়, কিছুক্ষণ বাদাম খায়, কিছুক্ষন কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে, কিছুক্ষণ কোন ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে কথাবার্তা বলে আড্ডায় মেতে যায়। তাদের সারাদিন আড্ডা দিতে দিতে প্রায় বিকাল ঘনিয়ে এসেছে, মানে বাসায় যাওয়ার সময় হয়েছে। এরপর তারা সেই পার্ক থেকে বের হয়ে। রাস্তায় এসে যে যার পথে চলে যায়। মারিয়া ওর বাসার দিকে, রিভা তার বাসার দিকে, আর নুপুর নুপুরের বাসার দিকে। মারিয়া যখন ওর বাসার সামনে এসে নেমেছে, তখন একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে, নাম্বারটা অপরিচিত নাম্বার না।ওটা রিভার নাম্বার।মারিয়া ভাবলো, হয়তো কোনো জরুরী কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছে। তাই মারিয়া ফোনটা রিসিভ করে। -- হ্যালো মারিয়া, কোথায় তুই? -- মাত্র বাসার সামনে এসে নামলাম।কেনো? তোকে অস্থির মনে হচ্ছে? -- শুন দোস্ত,আমার ভাইয়াকে কয়েকটা হিজলা( অর্ধ পুরুষ) রেপ করেছে। -- কি বলছিস এসব। রেপ করেছে মানে? -- হ্যা রে... ৮ নাম্বার গলি দিয়ে বাসায় আসার সময়, কয়েকটা হিজলা আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর রেপ করার পর,বাসায় পাঠিয়ে দেয়। -- না, এ হতে পারেনা। তুই জানলি কিভাবে। -- মাত্র বাসায় এসেই জানতে পারলাম। -- কেমন আজব মানুষ তোর আব্বু আম্মু।একটিবার কল দিয়েও বলেনি? ( এই বলেই মারিয়া কান্না করতে লাগলো।) -- আচ্ছা শুন,কান্না করিস না।জলদি আমাদের বাসায় চলে আয়। -- ঠিক আছে,আমি আসছি। মারিয়া কান্না করছে এজন্যই,আর কিছুদিন পর ওদের বিয়ে হতে যাচ্ছে। রিভার সাথে মারিয়া রিভার বাসায় যেতো।আর সেই যাওয়া আসার মাঝেই,রিভার ভাইয়ের সাথে মারিয়ার প্রেম প্রেম ভাবটা জমে যায়। মারিয়া যে রিক্সায় এসেছিলো,ঠিক সেই রিক্সা করে আসতে প্রস্তুত হয়েছে।কিন্তু রিক্সাওয়ালা আসতে রাজি হচ্ছেনা।রিক্সাওয়ালার কথা হচ্ছে " আপা, আমি ওই গলি দিয়া যামুনা।এতো রাইতে কেও যাইবোনা।আপনে আমার ভাড়াটা দেন,আমি চইলা যাই"। রিক্সাওয়ালা না যাওয়ার কারণ হচ্ছে, সেই রাস্তা নাকি অনেক খারাপ।রাত করে কেও সেই রাস্তা দিয়ে গেলে, তার সাথে অস্বাভাবিক ঘঠনা ঘটে।মারিয়া রিক্সাওয়ালার উপর রেগে যায়।এরপর হুমকি দেয়,যে ভাড়া দিবেনা সে।যদি মারিয়াকে নিয়ে যায়,তবেই ভাড়া দিবে।রিক্সাওয়ালা মারিয়ার কথা শুনে ২ ফোটা চোখের পানি ফেলে চলে যায়। ভাড়া আর নেয়নি মারিয়ার থেকে। মারিয়া আর না ভেবে হেটে হেটেই আসতে লাগলো রিভাদের বাসার দিকে। ৩০ মিনিট পর রিভার বাসার কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পায় রিভা।বুঝতে পেরেছে মারিয়া এসেছে।রিভা দরজা খুলতেই দেখে, সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে মারিয়া।পুরো শরীরে নখের আচড়।মারিয়ার দেহে একটা সুতো পর্যন্ত নেই। মারিয়ার ভাইও দৌড়ে এসে দেখে এই অবস্থা। তখনি রিভা বলল, -- আরে ভাইয়া! মারিয়ার এই অবস্থা কেন?( বলেই কান্না করতে লাগলো রিভা।কান্না করতে করতে দরজার সামনে বসে পড়ে রিভা) তখনি নূপুর কল দেয় রিভাকে। -- কিরে রিভা, মারিয়া কই।ওর ফোন অফ কেন। --মারিয়া মারা গেছে দোস্ত( বলেই ভ্যাবলার মতো কান্না করতে লাগলো রিভা) -- কেন কি হয়েছিলো? --আমি মারিয়াকে এস এম এস করে বলেছি,আজকে আমার ভাইয়ের জন্মদিন। সেটাই জানিয়েছি। -- কি বলছিস এসব।মারিয়া তো আমাকে কল দিয়ে বলল,যে তোর ভাইকে নাকি হিজলারা রেপ করেছে।আর তুই তাকে এইটা কল দিয়ে বলেছিস। -- আরে নাহহ, আমি তো মারিয়াকে কল করিই নি। -- তো মারিয়া যে বলল..? আতঙ্কিত হয়ে যায় দুই জনেই।রিভার ভাই মারিয়ার লাশের উপর একটা চাদর দিয়ে ঢাকিয়ে দেয়,আর পাশে বসে বসে কান্না করছে। কিন্তু রহস্য তো রয়েই গেলো।মারিয়াকে কল কে করেছে।সে কি রিভা? কিন্তু রিভা তো কল করনি,তবে কে করেছে? আর মারিয়াকে খুন করে,তার লাশ এভাবে উলঙ্গ করে,বাড়ির সামনে কে রেখেছে।তাও কলিং বেল বাজিয়ে চলে গেছে।কে হতে পারে, কে....? চলবে..........? [ পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।আর অবশ্যই যদি আপনার কারো উপর সন্দেহ হয়ে থাকে,তবে উদাহরণ দিয়ে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।] গল্প-- #আত্মা_নাকি_সে <সিজন --০২-->( পর্ব –০১)

লেখক– Riaz Hossain imran <

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে