কে কোথায় যায়? পর্ব ২৯

0
598

কে কোথায় যায়? পর্ব ২৯

কলকাতায় আসার আগে বাসা থেকে ও কিছু বন্ধুবান্ধব শপিং লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে শুভা ও তামিমের হাতে। এই শপিংগুলো শেষ না হলে আসলে ঝামেলা মিটছে না। ট্যুরের বাজেটের সাথে শপিংয়ের টাকার হিসেব মিলে গোলমাল লাগছে। তাই দুজন ঠিক করেছে আজ সব শপিং সেরে ফেলবে।
শুভা লেডিস ট্রাউজার ও ফতুয়া পড়েছে।চুল বিনুনী বাধা।হাতে ঘড়ি ও ব্রেসলেট।চুলে পান্চ কিল্প।ঠোঁঠে লিপস্টিক।সব মিলিয়ে,পুরো এক সুন্দরী রমনী।
তামিম ফ্রেশ হয়ে এসে বলল,
———-‘আহা,কি লাগতেছে তোরে।’
শুভা হাসলো।তামিম আবারও বলে উঠল,
———–‘আই হেভ নেভার সিন সাচ এন বিউটিফুল গার্ল!’
শুভা চোখ উল্টিয়ে বলল,
———‘রিয়েলি?’
তামিম ছোট্ট করে বলল,
———‘ইয়াহ!’
ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে চলে গেল ওরা নিউ মার্কেটে। সেখানে এগ চিকেন রোল আর চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে ফেলল।শুভা সকালে কিছু না খেলে চলে না বলে ব্রেকফাস্ট করল দুজন। মেডিসিনের দোকানে বেশ কিছু সময় গেল।শুভার চাচাতো বোন কয়েকটা ঔষধের নাম দিয়েছিল,ওগুলো নিচ্ছে। ইন্ডিয়ার মেডিসিন ভালো কিনা জানে না তবে এখানে একসাথে অনেক ওষুধ কিনলে বেশ ভালো ডিসকাউন্ট দেয়। এরপর গেল “শ্রী লেদারস” এর শোরুমে। প্রথমদিন নিউ মার্কেটে এসেই সবার হাতে এই দোকানের ব্যাগ দেখেছে।শুভার অনুরোধে তামিম এখানে ঢুকল। শোরুমে ঢুকেই বুঝলাম কারণটা কি?কেন এত ভীড়?বেশ কম দামে চামড়ার জুতো, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্ট বিক্রয় করা হচ্ছে। শুভা যেন সবগুলোর উপর উপচে পড়ল।তামিম হা হয়ে বলল,
———‘এসব ভালো ব্রান্ডের জিনিস লাগতেছে না।কিনিস না।’
শুভা হাতে জুতো নিয়ে পায়ে পড়তে পড়তে বলল,
———‘চুপ থাক।সেল দিচ্ছে,এভাবেই ছেড়ে দিব?তোরে কিনে দিচ্ছি, দাড়া।’
তামিম এক জোড়া স্যান্ডেল, বেল্ট আর মানিব্যাগ কিনতে হল শুভার কারণে। শুভা আরো কিছু শপিং করলো।
দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে বের হল সল্ট লেক যাবার উদ্দেশ্যে। সেখানে Decathlon এর শোরুম আছে। এখান থেকে দুজন ব্যাকপ্যাক কিনবে আর ট্রাভেল গিয়ার কিনবে। এবারও হলুদ ট্যাক্সি নিল। উঠার আগে ওরা এই ঐতিহ্যবাহী ইয়েলো ট্যাক্সির সাথে বেশ কিছু ছবি তুলে ফেলল।
Decathlon এ যেয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ! ভ্রমণপ্রেমী হওয়ায় ট্রাভেল রিলেটেড যা দেখা যায় তাই ভালো লাগে। এখানে প্রচুর কালেকশন আর দামও বেশ কম। ৪০ লিটারের একটি ব্যাকপ্যাক নিল দুজন। আর ট্রাভেল রিলেটেড টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনল। এখান থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
কফি হাউজে যাবে এখন দুজন। গুগল ম্যাপস দেখে বুঝা গেল ওরা বেশ দূরে চলে এসেছে। ট্যাক্সি বা উবারে ভাড়া বেশি আসছে তাই ঠিক করল পাবলিক ট্র‍্যান্সপোর্টে যাবে। কলকাতার মেট্রো বা ট্রাম কোনটিই ব্যবহার করা হয়নি। মেট্রোর স্টেশন দেখল এখান থেকে বেশ দূরে। আর ট্রামের কথা নাই বলল। এই কদিনে ট্রামে কোথা থেকে যাত্রী উঠে তা কখনো দেখেনি তামিম। আর ট্রামের যে ধীর গতি এর চেয়ে হেটে হেটে দ্রুত যাওয়া যাবে। অগত্যা বাস ধরার চেষ্টা করল। মিনিট বিশেক পর মুড়ির টিন মার্কা লোকাল বাস পেয়ে উঠে পড়ল। ঢাকা শহরের বাসের মতই ভিড়, চাপাচাপি। প্রচুর জ্যাম পেড়িয়ে কফি হাউজের কাছের বড় রাস্তায় বাস থেকে নেমে পড়ল।
গুগল ম্যাপ দেখে হেটে হেটে অলিগলি দিয়ে যেতে লাগল দুজন। যেতে যেতে বুঝা গেল ম্যাপে আরেকটু কাছে মনে হলেও বেশ খানিকটা পথ বাকি। এদিকে আবার কোন রিক্সা বা টানা গাড়িও দেখল না। প্রায় চল্লিশ মিনিট হেটে পৌছালো কাক্ষিত কফি হাউজে।
কিন্তু হায়! ৯টার বেশি বেজে গিয়েছে। সবাই বের হয়ে যাচ্ছে। কফি হাউজ বন্ধ হতে চলেছে। কোন খাবার অর্ডার দেওয়া গেলো না। ভিতরে গিয়ে কিছুক্ষন ঘোরাফেরা করল। তবে পুরো কফি হাউজটিই ওরা খালি পেল। কিছু ছবি তুলে নিয়ে বের হয়ে গেল।
কফি হাউজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় ডিম টোস্ট আর শরবত খেল। এরপর হাটা দিল কলেজ স্ট্রিট ধরে। রাস্তার পাশে প্রচুর বইয়ের দোকান। তবে বেশিরভাগই বন্ধ। সকালে সময় করে বইয়ের দোকানে আসতে হবে তামিমের।শুভা বই পড়তে পছন্দ করে,এগুলো না নিলেই নয়।
অনেক শপিং করা হয়েছে আর নাহ। শুভার শপিং এখনো বাকি তাই যেতে হবে মার্কেটে কাল।তামিমের আর কিছু কেনার নেই। তাই ঠিক করল আজ একা একাই কলকাতা শহর ঘুরে বেড়াবে। একা একা ঘুরাঘুরির মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে। যখন যেদিকে ইচ্ছে যাওয়া যায়, কারো জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।কিন্তু শুভা বাধা হল।সে কেদে দিয়ে বলল,
——–‘আমারে একা রাইখা তুই একা ঘুরতে যাবি?এই ছিল তোর মনে?’
তামিম চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
——–‘না,নিয়ে যাব।প্লিজ বন্ধ কর,কান্না টান্না!’
রাতে ভালো ঘুম হয়নি। ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেল আর সাথে মাথা ব্যাথা হতে শুরু করল শুভার। বাইরে বের হয়ে চায়ের দোকান থেকে পাউরুটি, কলা, বিস্কুট আর গরম দুই কাপ চা খেয়ে নিল দুজন। এখানে চা দেয় মাটির ছোট ছোট কাপে। এক কাপ চা খেয়ে ঠিক মন ভরে না।
গুগল ম্যাপ দেখে হাটা শুরু করল দুজন। গন্তব্য ডেকারস লেন। অনেক ফুড রিভিউ ভিডিওতে এই জায়গাটি দেখে যাওয়ার আগ্রহ হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষন হাটতেই সম্মানীত কাক তামিমের ঘাড়ের উপর তার কাজ সম্পন্ন করে দিলো। সাথে নেই টিস্যু। তামিম পড়ল মহাবিপদে। কোনমতে এক দোকান থেকে টিস্যু আর পানি নিয়ে পরিষ্কার করল। আবার শুরু করল হাটা।শুভা হাসতে হাসতে শেষ।বলল,
———‘উপযুক্ত জায়গায় কাজ সেরেছে।হিহিহি!’
তামিম ভেংচি কেটে হাটা ধরলো।
ওয়েলিংটনে এল। এই এলাকাটি আমাদের ঢাকা শহরের ধোলাইখালের মত। সব ধরণের লোহা-লক্কড় আর গাড়ির পার্টস পাওয়া যায়। বেশ কিছু মশলার দোকানও দেখল। যারা মোটরবাইক চালায় তাদের জন্য এটি স্বর্গ। এখানে হেলমেটসহ অন্য সব গিয়ার পাওয়া যায়। একটি ছোট মোবাইল পার্টসের মার্কেটও পেয়ে গেল। আগ্রহ নিয়ে সবকিছু দেখতে লাগল।
আরো অনেকক্ষন হাটল। সময়ের হিসেব ঠিক রাখেনি। গুগল ম্যাপ দেখে বড় রাস্তা ছেড়ে বিভিন্ন গলিতে ঢুকে গেল যাতে ভালো করে কলকাতা এক্সপ্লোর করা যায়। সত্যি কথা বলতে ঢাকা শহরের থেকে কলকাতা শহর ওদের কাছে বেশি সেইফ মনে হয়েছে। ওরা রাতের বেলায়ও এমন সব ওলি-গলিতে হাটাহাটি করেছে যা ঢাকায় করলে নিশ্চিত ছিনতাইকারীর কবলে পড়তো। হাটতে হাটতে এসে পড়ল ডেকারস লেনে।
চলবে…..
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে