একটুখানি সুখ পর্ব-১৯+২০

0
1059

#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৯

অন্ধকার ঘর। আশপাশটাতে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা ও ভয়াবহতা বিরাজ করছে। ল্যাম্পশিট শুধু জ্বলছে আর নিভছে। ঘরে থাকা বড় লাইটটাও এমনভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে যেন সেটা আর কোনোদিন জ্বলতেই পারে। ল্যাম্পশিটের আলোর সুইচে বারংবার কেউ জ্বালিয়ে দিচ্ছে আবার নিভিয়ে দিচ্ছে। বড় ঘরের আধুনিক সব জিনিসপত্রের একটি জিনিসও ঠিক নেই। কোনোটা ভেঙে ফেলা আবার কোনোটা অগোছালো। ল্যাম্পশিটের পাশে বসে আছে এক যুবক। হাতের পিঠ থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ে যাচ্ছে তার সেদিকে কোনো হুঁশই নেই। যুবকটির মুখ থেকে গুনগুনিয়ে গানের আওয়াজ আসছে।
“O lekhdi tera nam
jindari zaaniye
Bas rehna
tere naal ve zuriye
rehna tu…”

পুরোটা বলতে বলতে কন্ঠে হিংস্রতা চলে আসে সেই যুবকের মাঝে। কাঁপতে থাকে সে। রক্তাক্ত হাত দ্বারা আঘাত করে ল্যাম্পশিট ছুঁড়ে ফেলে দিতেই ঘরটা আরো অন্ধকারে পরিণত হয়। ওপরে শুধু জ্বলছে লাগিয়ে রাখা লাল রঙের সফট লাইট। দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় সে। হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে,
“মরতে না চাইলে কেউ ঘরে আসবি না।”

সেখানেই দরজা থেমে যায়। বাহিরে থরথর করে কাঁপতে থাকে ডক্টর আর নার্স। ভেতরে ঢোকা মানে মৃত্যুকে আহ্বান করা। যেটা তারা করতে চায় না।
ঘরের ভেতরে থাকা যুবকটি বেশ মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে তার হাত থেকে রক্ত পড়ছে টপটপ করে। তারপর অদ্ভুত হাসি দিয়ে আয়নার ভাঙা কাঁচের টুকরা হাতে নেয় সে। সেখানে রক্ত দিয়ে একটা একটা করে অক্ষর লিখতে থাকে। তৎক্ষনাৎ খুলে যায় বাহিরে থেকে দরজা। অতিরিক্ত আলো পেয়ে বড্ড রেগে যায় যুবকটি। আশেপাশে কিছু খুঁজতে থাকে সেদিকে ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পায় না। সব ভেঙে একাকার করে ফেলেছে সে। বেশ রেগেমেগে তাকায় সে। একটা কড়া কন্ঠ ভেসে আসে কানে।
“এসব কি করছিস সৌমিত্র?”

দরজা দিয়ে তড়িৎ গতিতে ভেতরে ঢুকে আসে আরেকজন যুবক। গায়ে চকলেট কালার শার্ট তার। সেই চেনা ধূসর বর্ণের চোখের মনিতে ভীতিকর ছাপ। যেই ভীতিটা কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে রাগের ছাপ স্পষ্ট দেখা গেল। রাগ দমাতে না পেরে এগিয়ে এসে হালকা নিচু হয়ে এক কষিয়ে এক থাপ্পড় মেরে বসে সৌমিত্র নামক যুবকটিকে। সৌমিত্র ছিটকে গিয়ে পড়ে টি টেবিলের কাছাকাছি। ধূসর বর্ণের চোখজোড়ার মালিক এগিয়ে এসে সৌমিত্রের টিশার্টের কলার ধরে টেনে তুলে তাকে ঝাঁকিয়ে বলে,
“পাগল তুই পাগল। অসুস্থ মস্তিষ্কের ছেলে তুই। তোকে বলেছিলাম ঘরে এসব জিনিসপত্র রাখতে দেব না। একপ্রকার জেদ করে রাখিয়েছিস। এখন ভাঙচোর করে নিজের এই অবস্থা করে খুব শান্তি পাচ্ছিস?”

বলে আবারও একটা থাপ্পড় পড়ল সৌমিত্রের গালে। ফর্সা গালটাতে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ পড়ে গেল সহজেই। আরো মারতে চাইলো সৌমিত্রকে আঘাত করা ব্যক্তিটি। কিন্তু তড়িঘড়ি করে দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকে এসে একজন মহিলা তার হাত চেপে ধরে বলে,
“তুইও পাগল হয়ে গেছিস স্বচ্ছ? নিজের ছোট ভাইয়ের গায়ে হাত তুলছিস? এই নিয়ে দুইবার ওর গায়ে হাত তুললি তুই।”

সৌমিত্রকে আলতো ধাক্কা ছেড়ে দেয় স্বচ্ছ। বড় শ্বাস নিয়ে সে নিজেকে শান্ত করে। পাশেই তার মা মিসেস. রেবা বেশ অস্থির ভঙ্গিতে সৌমিত্রের কাছে গিয়ে তার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“খুব লেগেছে বাবা?”

“মম, তোমার বড় ছেলে আজকাল তার ছোট ভাইয়ের গায়ে হাত তুলতে শিখেছে। কার জন্য? আমি জানি সেটা। কারণটা মোহ তাই না ভাইয়া?”

স্বচ্ছ রেগে তাকায়। কিছু বলতে গিয়েও বলেনা সে। মিসেস. রেবা স্বচ্ছের দিকে দৃষ্টিপাত করে কাঠকাঠ গলায় বলে,
“ঠিকই তো স্বচ্ছ। কেন মারছিস ওকে? তুই তো জানিস তোর ভাইকে। ও কেমন তোর জানা।”

“জানা তাতে কি মা? তোমার ছোট ছেলে নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলছে। আর শুধু আমি ওকে মেরেছি না নয়। সেও আমাকে মেরেছে। এমন মার আমি মারিনি ওকে সেটা ওর ভাগ্য।”

“কারণ তু…তুমি মোহকে চাও। নাহলে মোহের ঘরে ওতো রাতে সেদিন কি করতে গিয়েছিলে? তুমি খবর পেয়েছিলে আমি বেরিয়ে গেছি এই চারদেয়াল থেকে। তুমি সবার আগে মোহের কাছে ছুটে গিয়েছিলে। একটা কথা শুনে রাখো ভাইয়া আমি ওকে অনেক অনেক পছন্দ করে ফেলেছি। আর এসব আসবাবপত্র তো ওর জন্যই। বিয়ের পর আমার ঘরে আসবে। মেয়েদের এসব না হলে তো চলে না।”

স্বচ্ছ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সৌমিত্রের প্রতিত্তোরে বলে,
“নিজেকে আমার কাছে চেনাতে আসিস না ভাই। তোকে আমি রগে রগে চিনি। যখন তোর পছন্দ ফুরিয়ে যাবে তার সঙ্গে তুই ঠিক কি কি করতে পারিস সেটা আমি জানি।”

“তো? সেটা তো ওর দোষ যে আমার ওর ওপর থেকে নিজের পছন্দ উঠে গেছে। আমার তো দোষ না। আমার দোষ কোথায় এখানে?”

স্বচ্ছ হতাশায় বড় নিশ্বাস ফেলে। এটাই হচ্ছে সৌমিত্রের সমস্যা। নিজের ভুল কখনো দেখে না সে। সে জানে সে কখনো ভুল করতে পারে না। যা করে সেটা ঠিক আর বাকি সকলের প্রাপ্য। ফ্লাশ লাইট অন করে ফ্লোরে তাকায় সে। সব জিনিস ভেঙেচুরে নিচে পড়ে আছে। তার দৃষ্টি আঁটকায় একটা কাঁচের টুকরাতে। সেখানে রক্ত দিয়ে লিখা ‘মোহ’ নামটি। হৃদয়ে ক্ষীণ যন্ত্রণা সৃষ্টি হয় তার। মনটাও অদ্ভুত। আজব আজব পাগলামিতে মাতে। এই মূহুর্তে স্বচ্ছের মনটা ভাবছে, ‘কেন থাকবে সৌমিত্রের ঘরে এই নাম? এই নামে যেন শুধু স্বচ্ছেরই অধিকার।’
এমন আজগুবি প্রশ্ন করে এই মন। স্বচ্ছ জানে সৌমিত্রের এই পাগলামি ক্ষণিকের। প্রতিবারই এমন করে সে। অতঃপর…! তার ঘোর কাটে সৌমিত্রের প্রশ্নে।

“মম শুনেছি ভাইয়ার সাথে মোহের বিয়ে হবে? মোহ রাজি হয়েছে? তাহলে কিন্তু আমি কিন্তু সবটা ধ্বংস করে দেব। তুমি কেন ভাইয়ার সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক করেছো বলো?”

“এটা নামেই তোর ভাইয়ার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছি। কিন্তু মোহকে তোর কাছেই এনে দেব। এটা বিশ্বাস রাখ।”

“এর অন্যথা হলে ইউ উইল অলসো পানিশড মাই ডিয়ার মম।”
বলে একটা হিংস্র হাসি দেয় মৌমিত্র। মিসেস. রেবা ফ্যাকাশে মুখে ছেলেকে দেখে। স্বচ্ছের কপালের রগ দপদপ করছে। কিন্তু কেন? রাগে? তার মন হয়ত চাইছে না মোহকে অন্যকারো কাছে দিতে। কোনোদিন চাইবেও না। সে দেরি না করে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা ডক্টরকে ইশারা করে ভেতরে আসতে বলে। ডক্টর গুটিগুটি পায়ে ভেতরে আসে। বাহিরে চলে আসে স্বচ্ছ। ভেতরে থাকলে কি করে ফেলত সেটা সে নিজেই জানে না। কি হবে এসবের পরিণাম?

রাত হয়েছে বেশ। খোলা জানালা দিয়ে শাঁ শাঁ করে বাতাস ভেতরে প্রবেশ করছে। বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে কলম কামড়াচ্ছে মোহ। মাথায় তার খোঁপা। তবুও কিছু কিছু চুল বেরিয়ে আসাতে বেশ বিরক্তবোধ করছে সে। সামনে খাতা আর বই। পড়াশোনা করার মন নেই তার। তবুও জোর করে পড়ছে। একসময় সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল সে। মুখটা চুপসে গেল তার। কারণ সেই আগন্তুকের দেওয়া চিঠিটা সে হারিয়ে ফেলেছে। আর পাচ্ছে না। পুলিশ অফিসারের কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল চিঠিটা। কিন্তু সেটা যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে। চিঠিটা কি চুরি হয়ে গেল? মোহ তন্নতন্ন করে পুরো ঘর খুঁজেও পায়নি চিঠিটা।

“আচ্ছা চিঠিটা কে নিতে পারে? আমার ঘরে কি কেউ এসেছিল? কে আসবে আমার ঘরে? কেউ না। যারা এসেছে তারা তো আমার বিশ্বস্ত। আর…”

বলেই থামল সে। চোখজোড়া সরু হয়ে এলো তার। হঠাৎ করে মাথা এলো স্বচ্ছের কথা। স্বচ্ছ তো এসেছিল। ও আসার পরেপরেই তো চিঠির কথা ভুলেই গিয়েছিল মোহ। সে ফট করে বলে ওঠে,
“তাহলে উনি?”
বলে থমকায় সে। কেন স্বচ্ছ হবে? স্বচ্ছ কেন তাকে এসব লিখবে। মাথায় আর কিছু আসছে না তার।

“আপু আসব?”
কন্ঠস্বর উল্টো হয়ে শুয়ে দরজার দিকে তাকায় মোহ। তৃণা কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস. নিরাকে আজকেই ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছিল হসপিটাল থেকে। তারপর থেকে তৃণা আর তিহান দুজনেই এই বাড়িতে আছে। আর কয়েকদিন থাকবেও তারা। তৃণাকে দেখে বালিশ নিয়ে উঠে বসে মোহ। আর একটা হাসি দিয়ে বলে,
“আরে তৃণা এসো!”

তৃণা ধীর পায়ে মোহের ঘরে প্রবেশ করে। আর ধীর গলায় বলে,
“পড়ছিলে? ডিস্টার্ব করলাম বুঝি?”

“উঁহু, না। আমার পড়া আর না পড়া সমান। পড়তে ইচ্ছে করছিল না। এতো রাত হয়েছে ঘুমাওনি?”

“মায়ের কাছে ছিলাম। ঘুম আসছিল না। ভাবলাম তুমি ঘুমিয়েছো কিনা দেখে আসি।”

“না। আমি আরো দেরিতে ঘুমাবো।”
তৃণা জোর করে হাসে। বেডের একপ্রান্তে বসে পড়ে সে। তারপর নিশ্চুপ হয়ে যায়। মোহ কিছুটা সন্দেহের সাথে তাকায় তৃণার দিকে। প্রশ্নাত্মক কন্ঠে বলে,
“কি হয়েছে? কিছু বলবে মনে হচ্ছে?”

তৃণা থতমত খায়। অতঃপর নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,
“না তেমন কিছু না। শুনলাম তোমার আর স্বচ্ছ ভাইয়ার বিয়ে কথা।”

বেশ কিছুটা লজ্জা পায় মোহ। ও কি করে শুনল? সকালের কথা ভাবতেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে সে। কিসব আজেবাজে লিখেছিল স্বচ্ছ নামক লোকটাকে। লোকটা কি সবাইকে সব জানিয়ে দিল নাকি? কন্ঠে গম্ভীরতা টেনে বলে,
“কোথায় শুনলে?”

“মাকে তো মামা ফোন করেছিল। তোমার আর স্বচ্ছ ভাইয়ার বিয়ের কথা বলল। বলল যে মিথ্যে হক বদনাম যখন হয়েই গিয়েছে আর মামি তো তোমায় নাকি প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছিল বিয়ের। তুমি হয়ত তখন রাজি হওনি। এখন চাপে পড়ে হলেও যখন রাজি হচ্ছো তখন নাকি বিয়েটা ফেলে রাখতে চাইছে না কেউ।”

শ্বাস আঁটকে যায় মোহের। শ্বাস ফেললেও যেন লজ্জায় মরে যাওয়ার সম্ভবনা আছে তার। তার মানে যাকে সে জীবনে কখনো নিজের প্রিয়মানুষের তালিকায় রাখেনি তাকে নিজের জীবনসঙ্গী বানাতে যাচ্ছে? কেমন হবে তার সঙ্গে পথচলা? ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যায় মোহ। আবারও তার মাথায় আসে আয়মানের কথা। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে কালো মেঘ হানা দেয়। সেই কালো মেঘে আছে অসংখ্য মন খারাে। তৃণা কিছুটা ভার কন্ঠে বলল,
“কাল বোধহয় তোমার সঙ্গে ভাইয়ার বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে আসবে।”

“আচ্ছা তৃণা আমার না ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমোতে চাই। কাল সকালে তোমার সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। হ্যাঁ?”

তৃণা যেন কিছু বলতে চাইলো। তবুও কেন যেন পারল না। তার গলাতেই কথা আঁটকে থাকল। কিছুটা অসহায় দৃষ্টিতে মোহের দিকে তাকালো সে। কিন্তু মোহ এখন নিজে কোথায় মুখ লুকাবে তার জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তৃণা। তার ছোট মনে রাজ্যের কথা কাউকে বলতে পারছে না।

তৃণা চলে যেতেই বালিশ জড়িয়ে শুয়ে পড়ে মোহ। আসলে তার কেমন রিয়েক্ট করা উচিত বুঝছে না সে। স্বচ্ছকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কি ঠিক নাকি ভুল? আর আয়মান? যাকে নিয়ে সে নিজের জীবন সাজাতে চেয়েছিল? আয়মান কি তার একটুও খোঁজ নিবেনা? একবারও জানতে চাইবে না আসল ঘটনা? সব মিলিয়ে লজ্জা আর বিষণ্ণ দুটো সংমিশ্রণ মনে নিদ্রায় তলিয়ে গেল মোহ।

চলবে….

#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২০

সকাল গড়িয়ে দুপুর প্রায়। রৌদ্রময় দিন। আশেপাশে ভ্যাপসা গরম। সূর্য একবার মেঘে ঢেকে যাচ্ছে আবার মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে নিজের তাপ ছড়িয়ে পরিবেশ আরো উত্তপ্ত করে তুলছে। হাতে একগাদা বই নিয়ে ভার মুখে লাইব্রেরিতে রেখে সবে বের হচ্ছে মোহ। এতো বইয়ের ভারে একপ্রকার ঘেমে একাকার সে। কিছু সাইন্সল্যাবের পরিক্ষার জন্য এসব প্রয়োজন ছিল তার। সাইন্সল্যাবে এখন কেউ নেই। একটা স্যার ছিল তিনিও মোহকে কাজ করতে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন ফোনে কথা বলতে বলতে। সে একাই পরিক্ষা সম্পূর্ণ করছে কারণ বিগত যে কদিন মা-বাবা মারা যাওয়ার কারণে আসেনি ভার্সিটিতে তার মধ্যে একদিন প্র্যাকটিকাল ছিল মোহের ক্লাসে। যেটা পরিক্ষা করে পর্যবেক্ষণ করে তবেই লিখতে হবে। তাই আজ মোহ একা কাজটা করছে।

সাইন্স ল্যাবের রুমের দরজায় থাই লাগানো। সেটা খুলে ঢুকে এলো মোহ। তার গায়ে সাদা এপ্রন জড়িয়ে নিল সাথে সাথে। সঙ্গে সতর্কতার জন্য চশমা চোখে পড়তে নিলেই দরজাই থাই এ চোখ পড়ল তার। সেখানেই স্থির হলো দৃষ্টি। আস্তে আস্তে হরিণীর ন্যায় চোখ দুটো বড় বড় হলো। সেখানে সিগনেচার পেন দিয়ে কিছু লিখা। লিখার ধরণ একেবারে সেই চিঠির মতো হুবহু।

“আমি জানি তোমার মনে জমেছে কালো রঙের মেঘ। কেউবা ধোঁকা দিয়েছে তোমায়? হারিয়েছে তোমার প্রতি বিশ্বাস? তাহলে তাকে বিশ্বাস হারাতে দাও। যে এতো সুন্দর মনের মেয়ের ওপর থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে ফেলতে পারে সে তোমার যোগ্য কখনোই ছিল না।”

আরেক পাশেরই দরজাতেও কিছু লিখা।
“প্রাণের চেয়ে প্রিয়, তোমার মনের কালো মেঘ কাটিয়ে দিতে চাই মোহময়ী নারী। তোমার মোহে সারাজীবনের জন্য ডুবে যেতে চাই। এ মোহ কাটবার নয়। এই মোহ এক ভয়াবহ নেশা, প্রেমময় নেশা। যা আমাকে বার বার মাতাল করে তোলে। তুমি যখন রেগেমেগে তাকাও ইচ্ছে করে গভীরভাবে ছুঁয়ে সেই রাগ মোমের ন্যায় গলিয়ে ভালোবাসার এক অপার সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে। ইচ্ছে করে তোমার ওই হরিণী চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থেকে এক লাজুক দৃষ্টিতে রূপান্তরিত করতে। সেই সুযোগ কি দেবে তোমাতে পাগল হতে চাওয়া মানুষটাকে? আর শেষ কথা! আমার চিঠি খুঁজছো? সেটা তো পাবেনা। আমায় ধরার প্ল্যানিং-এ এতো সহজে সফল হতে দিচ্ছি না সুইটগার্ল!”

বড়সড় ঢক গিলে নেয় মোহ। চোখজোড়া সরু করে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
“চোর কোথাকার! মনে মনে তো অনেক ভয় ধরা না পড়ার ভয়ে চিঠিটাও গুম করে দিয়ে এন বড় বড় কথা বলছে। ইচ্ছে তো করছে খুঁজে বের করে কয়েকদিন কিল-ঘুষি দিয়ে দিই। আমার ভাগ্যটা তো আগে থেকেই খারাপ। তাই আমার এই ইচ্ছেটাও পূরণ হবেনা। কিন্তু যেদিন ধরব না। ছাড়ব না মি. চোর।”

কথাগুলো বলে থামে মোহ। কিছু ক্ষীণ চিন্তাধারা মস্তিষ্কে হানা দিচ্ছে তার। খানিকটা থমকে সে বলে,
“এক মিনিট, এক মিনিট! এখানে এই মি. চোর আমার রাগি চোখমুখের কথা তুলে ধরেছেন। আমার যতদূর মনে পড়ছে বিগত কয়েকদিনে আমি স্বচ্ছ ভাই ছাড়া কাউকে তেমন রাগ দেখাইনি। তার প্রয়োজন পড়েনি। আর কাকতালীয়ভাবে স্বচ্ছ ভাইয়ের সাথে একের পর এক ঝগড়া করার পরই আমার সাথে এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তাহলে কি আমি যা ভাবছি তাই।”

ঠোঁট কামড়ে বিষয়গুলো ভাবতে থাকে মোহ। এসব চিন্তাতে হঠাৎ করেই দরজা হালকা খোলা থাকাতে স্যারকে আসতে দেখতে পায় মোহ। চোখজোড়া বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তার। একবার স্যার আরেকবার লিখাগুলোর দিকে তাকায়। এটা যদি তার স্যার দেখে তাহলে আজকে তার ওপর দিয়ে সুনামি বয়ে যাবে সেটা নিশ্চিত। দ্রুত দৌড়ে গিয়ে আশেপাশে লিখা মোছার জন্য কিছু খুঁজতে থাকে সে। কিছুই না পেয়ে হাত লাগিয়ে ঘষে ঘষে তুলতে থাকে লিখাগুলো। সিগনেচার পেন হওয়ায় সহজেই লিখা উঠে যেতে থাকে। একপ্রকার দৌড়াদৌড়ি করে লিখাগুলো মুছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই তার স্যার রুমের প্রবেশ করে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অসাময়িক হাসি দেয় মোহ। স্যার ভ্রু কুঁচকে মোহের দিকে তাকান। তাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন,
“এখানে তুমি? তোমায় যেই কাজটা করতে বলছি সেটা করেছো?”

“স্যার একটা জিনিস বুঝতে পারছি না সেটার জন্য লাইব্রেরি গেছিলাম সেখান থেকে কেবলই এলাম।”

“তোমার হাতে এতো লাল দাগ কেন? মনে হচ্ছে রঙ নিয়ে খেলাধুলা করেছো!”
নিজের হাতের দিকে তাকায় মোহ। হাতটা কলমের কালিতে ভরে গেছে। মাথা নিচু হয়ে যায় তার। এখন কি বাহানা দেবে সে? কিছু একটা বলতে উদ্যত হতেই স্যার তাকে থামিয়ে কড়া সুরে আদেশ করেন,
“লাইব্রেরিতে গেছিলে নাকি রঙ নিয়ে খেলতে? যাও হাত ধুয়ে এসো।”

এমন কড়া কথা ঠোঁট উল্টে বেরিয়ে আসে মোহ হাত ধুতে। মনে মনে কয়েকশত খানিক গালি দিয়ে সেই আগন্তুককে কল্পনাতেই গালির মাধ্যমে আহত করে দেয় সে।
“এভাবে কোনোদিন আমায় স্যার ধমক দেয়নি। এই মি. চোরের জন্য শুধুই সমস্যায় পড়তে হয়। আজকে আবার পুলিশের কাছে যাবই যাব। ওই রাতে আমার ঘরে রক্ত দিয়ে লিখা আর অদ্ভুত ঘটনা। এসব দেখেও তো এমনি বসে থাকা যায় না। পুলিশকে জানাতে হবে।”

দোতালায় খোলা কাঁচের বারান্দা। সেখানে সবুজের সমারোহ। আশেপাশে লতাপাতা ঝুলিয়ে রাখা। কোথাও পাতাবাহারের গাছ আবার কোথায় রঙবেরঙের গোলাপের গাছ। গোলাপের গাছগুলো বিদেশী। তাই বিভিন্ন রঙের। তারই ঠিক ডান দিকে একটা বেডের মতো জায়গা তৈরি করে রাখা। বিভিন্নরকম কুশন রাখা। অনায়াসে রাত পার করে দেওয়া যায় সেখানে। দুপুরের রোদ সেখানে পড়ছে না। সেখানে বসে আছে স্বচ্ছ। হাতের দুই আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট জ্বলছে। এটা তার বাড়িতে পছন্দের জায়গা। এটা স্বচ্ছ দেশে ফেরার পর আলাদা করে তৈরি করিয়েছে। কারণ গাছপালা তার খুব কাছের কারোর প্রিয়। তাই সে এই বারান্দাকে এভাবে সাজিয়ে তুলেছে। এখান থেকে দৈনন্দিন চাঁদ দেখা যায়। কখনো অর্ধচাঁদ, কখনো পূর্ণচাঁদ। পরিবেশটা বড্ড অদ্ভুত সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। সেই সুন্দর পরিবেশে স্বচ্ছের হাতে সিগারেট বড্ড বেমানান লাগছে। কিন্তু তাতে কোনো হেলদোল নেই তার।

“আসব?”
চট করে পিছন ফিরে তাকায় স্বচ্ছ। তৃণাকে দেখে বেশ হতবাক হয় সে। আর বলে ওঠে,
“তৃণা তুমি এখানে?”

তৃণা কিছুটা কেঁপে উঠে বলে,
“ভুল সময় এলাম?”

“না সেটা নয়। কিন্তু এখান থেকে তো মা-বাবা গেছে মোহের বাড়িতে। কিন্তু তুমি এইসময় একা!”

“ডিস্টার্ব করলাম আপনাকে?”

স্বচ্ছ উঠে দাঁড়ায়। সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে দিয়ে বলে,
“না কিন্তু একটু অবাক হয়েছি তোমায় দেখে। কি হয়েছে? কোনো বিশেষ কারণে আমার কাছে আসা? না মানে আমার মা-বাবা তো গেছে ওই বাড়িতে। তুমি হঠাৎ একা বুঝতে পারছি না আসলে।”

“আসলে একটা স্পেশাল রিজনেই এসেছি আপনার কাছে।”
শুকনো ঢক গিলে বলে তৃণা। চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে তার। তৃণার এমন হাবভাব দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে স্বচ্ছের।
“কি কারণ?”

“আপনি মোহ আপুকে বিয়ে করবেন না প্লিজ।”
এক বিশ্বাস জোরে জোরে কথাটা বলে ফেলল তৃণা। বলেই হাঁপাতে লাগল সে। যেন কতক্ষণ দম বন্ধ করে বসে ছিল। কথাটি শুনে স্বচ্ছের ভ্রুকুটি আরো কুঞ্চিত হয়ে গেল। গম্ভীর সুরে জিজ্ঞেস করল,
“কেন? কি হয়েছে? কি সমস্যা? ওর সাথে বিয়ে করলে কি সমস্যা? এনি প্রবলেম?”

“আপনাদেরই তো সমস্যা হবে। যতটা শুনেছি আপনারা কেউ কাউকে তেমন পছন্দ করেন না। আর যারা একে ওপরকে পছন্দ করে না তাদের বিয়ে হলে কি করে মিলবে বলুন তো? সেজন্য…”

“তোমায় কে বলল আমি মোহকে পছন্দ করি না?”

তৃণা থামল। কান্না পেল তার। ঢক গিলে বলল,
“মানে? ”

“মানেটা খুব সহজ। মোহ মেয়েটা পছন্দ না করার কোনো কি রিজন আছে? তার রাগ দেখেও মানুষ পছন্দ করতে বাধ্য। সে সুন্দর, স্মার্ট, আমার চেনা, ওর সম্পর্কে সব জানি। তাহলে আপত্তি কোথায়?”

“আমি কি মোহ আপুর থেকে খারাপ দেখতে? জানি মোহ আপুর মতো ওতো সুন্দরী আমি নই। কিন্তু খুব খারাপ কি দেখতে? আমার সঙ্গে এডজাস্ট হবে না? আমিও মোহ আপুর থেকে ওর মতো রাগ, অভিমান, স্মার্ট হওয়া শিখবো বিশ্বাস করুন।”
দুর্বল সুরে বলে তৃণা। এবার স্বচ্ছের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হয়। তৃণার বয়স খুব বেশি হলে ১৬ হবে। আবেগপ্রবণ বয়স এটা। কার প্রতি কখন এসব আবেগে গা ভাসিয়ে দেয় এরা নিজেও বুঝতে পারে না। সেটাই হয়েছে তৃণার ক্ষেত্রেও। স্বচ্ছ হালকা কেশে বলে,
“হোয়াট ডু ইউ মিন?”

“আমি ফিল ক…করি আপনার প্রতি আ…আমি দুর্বল। আ…আপনার কথা আমি সবসময় ভাবি বিশ্বাস ক…করুন। একমিনিটও আপনাকে না ভে…ভেবে থাকতে পারি না। আমি মনে করি আপনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।”

তৃণা আটকা আটকা কন্ঠে বলেই ফেলে নিজের কথা। স্বচ্ছ পড়েছে দোটানায়। সে হাসবে না রাগবো বুঝে উঠতে পারছে না। হাসতে গিয়েও চোখেমুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে বলে,
“বয়স কত তোমার?”

স্বচ্ছের কড়া কন্ঠে কেঁপে ওঠে তৃণা। চোখে প্রায় পানি চলে এসেছে মেয়েটার। স্বচ্ছ আবারও কিছুটা ধমকে জিজ্ঞেস করে,
“বলো কত বয়স তোমার?”

“১৭ তে পড়বে। কয়েকদিন পর।”

“আমার বয়স জানো?”

তৃণা মাথা নাড়ায়। স্বচ্ছ বলে,
“কয়েকদিন পর ২৯ বছরে পড়বে আমার। ১০ বছরেরও বড় আমি তোমার। আমার মতো একজন সিনিয়রের সাথে প্রেম-ভালোবাসা করতে চাইছো? তার ওপর তুমি আমার সম্পর্কে বোন হও।”

বোন শুনে এবার নিঃশব্দে কান্নাই করে দেয় তৃণা। কান্নাসুরে বলে,
“মোহ আপুও তো বোন হয় না?”

“ওকে বোন টোন বলে মানি না। ওর সাথে বোন শব্দটা যায় না। ওর আমার মধ্যে মিল নেই। ভাই-বোনের মধ্যে মিল থাকে। সে যাই হোক এটা পড়াশোনা করার বয়স। কলেজে উঠবে চুটিয়ে প্রেম করবে। হোয়াট ইজ দিস? ইডিয়ট!”

কান্নার বেগ বাড়তেই মোহের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হয় তাদের।
“কি করছেন আপনি? ওকে এভাবে ধমকাচ্ছেন কেন রাক্ষসের মতো?”

স্বচ্ছ দরজার দিকে তাকায়। মোহ দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে তৃণার পাশে দাঁড়ায়। আশকারা পেয়ে তৃণা কেঁদে মোহকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ও আপু বিয়েটা ক্যান্সেল করে দাও।”

বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মোহ। স্বচ্ছের দিকে তাকায় সে। স্বচ্ছ তাকে ইশারা করে বারণ করে কিছু বলতে। মোহ কিছু বলেনা। তৃণা আর স্বচ্ছের বেশ কিছু কথা শুনেছে তাই মূল ঘটনাটা সম্পর্কে সে অবগত। কাল রাতেই কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল তার। কিন্তু পাত্তা দেয়নি। মেয়েটা যে স্বচ্ছের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে কে জানত। মোহও বুঝছে না কি রিয়েকশন দিবে। তৃণা আবারও বলে,
“আপু? বিয়ে ক্যান্সেল করবে না?”

“এভাবে কিভাবে হয় তৃণা? একটু বুঝো। আর উনি তোমার কর বড়। এই বয়সে এসব…”

বড্ড রাগ হয় তৃণার। মোহে পাশ থেকে সরে আসে। চেঁচিয়ে বলে,
“বুঝেছি। তুমিও একই কথা বলবে। তোমাদের কারো কথায় ভুলব না আমি। সবাই সেলফিশ! আমার কথা কেউ ভাবেনা।”
কারো কথা আর শোনে না সে। ছুটে বেরিয়ে আসে। তার পিছু যেতে নিলে স্বচ্ছ আচমকা মোহের হাত ধরে তার দিকে টেনে নিয়ে বলে,

“মিস. মোহ কোথায় যাচ্ছো? যাওয়ার দরকার নেই। দেখো তোমাদের বাড়ির গাড়ি নিয়ে এসেছে। তাতে করেই চলে যাবে। ছোট মানুষ। কতই বা সাহস?”

“কিন্তু যদি তা না হয়?”

“দেখোই না কি হয়!”
বারান্দা দিয়ে সবটা দেখা যায় সামনের দৃশ্য। তৃণা নিচে নেমে সোজা দৌড়ে গাড়িতেই উঠল। বেশ স্বস্তি পেলো মোহ। স্বচ্ছের দিকে চোখমুখ কুঁচকে তাকিয়ে সরে এলো সে। তারপর কিছুটা ঘাঁটিয়ে দেখার জন্য বলল,
“কেন পিচ্চি মেয়েটাকে রিজেক্ট করে তার মন ভেঙে দিলেন?”

“তা না হলে কি করতে বলছো?”

“মন না ভাঙলেই পারতেন। আমাকে বলতে পারতেন। আমি অন্তত ওর মনটা ভাঙতে দিতাম না। আর ছোট-বড় এর ব্যাপার? এটা তো আজকাল অহরহ দেখা যায়।”

কথাটুকু শেষ হতে না হতেই স্বচ্ছ হেঁচকা টেনে মোহের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। স্বচ্ছের সঙ্গে মিশে যায় মোহ। ভেতরটা কেঁপে ওঠে তার। এই প্রথম কারোর এতো গভীর ছোঁয়া। স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওই পুচকে মেয়ের মন রাখতে গিয়ে আমার মন যে চুরমার হয়ে যাবে তার কি হবে? আমার প্রতিটা বিশ্বাসে যে ব্যাঘাত ঘটবে তার কি হবে? আমার ভেতরের আগুন যে দাবানলে পরিণত হবে তার কি হবে? এসবের দায়ভার কি তুমি নেবে হবু মিসেস. আহিয়ান স্বচ্ছ?”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে