অনুভূতি পর্ব ২৮

0
1751

অনুভূতি
পর্ব ২৮
মিশু মনি
.
৪৩.
দুপুরের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো মেঘালয়ের। মেয়েটি দিব্যি হাসিখুশি ছিলো, বোনের কথা জিজ্ঞেস করতেই তার মুখ এমন আষাঢ়ে আকাশের মত হয়ে গেলো কেন? কোনো একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে।
মিশু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে দুপুরের মুখের দিকে। দুপুর দ্রুত চিন্তা করছে কি উত্তর দেবে সে? যদি মিথ্যে বলে তবে ব্যাপারটা বাজে হয়ে দাঁড়াবে। হতে পারে মিশু তার বোনকে কোনোভাবে চেনে। অস্বীকার করলে মিশু ওকে মিথ্যাবাদী ভাব্বে। দুপুর একটু ভেবে উত্তর দিতে যাবে এমন সময় অরণ্য বললো, “না, ওর কোনো বোন নেই।”
মিশু আর কিছু বললো না। দুজনের বিকৃত মুখ দেখেই মনেহচ্ছে ব্যাপার টা গোলমেলে। কোথাও একটা গোপন রহস্য আছে যেটা ওরা লুকাতে চাইছে। অযথা কথা বাড়িয়ে আর লাভ নেই। মেঘালয় ঠিক একই কথাই ভাবছিলো। অরণ্য হানিমুনে এসেছে, তারমানে হয়ত দুদিন আগেই অরণ্য ‘র বিয়ে হয়েছে। ঠিক সেদিন ই বিয়ের কনে পালিয়ে এসে ট্রেনে উঠেছিলো। এদের মাঝে একটা যোগসূত্র নিশ্চয়ই আছে। সেসব আর জিজ্ঞেস করে ওদেরকে বিবৃত করার কোনো মানেই হয়না। ওরা যে মিথ্যে বলছে সেটা দুপুরের গম্ভীর মুখ দেখেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
মেঘালয় কথা ঘুরানোর জন্য বললো, “কবে আসলি এখানে?”
অরণ্য হাসার চেষ্টা করে বললো, “কিছুক্ষণ হলো পৌছেছি। তোরা?”
– “আমরা আজকে সকালেই এসেছি। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার আগে আগে ফিরলাম। এখন আবার একটু বেরোবো।”
অরণ্য জানতে চাইলো, “এখন কোথায় ঘুরতে যাবি আবার? রাত তো হয়েই এসেছে প্রায়।”
মেঘালয় জবাব দিলো, “একটা কাজ আছে। চা বাগানের মালিকের সাথে মিটিং আছে একটু। ”
অরণ্য মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “ও আচ্ছা। ডিনার তো বাইরেই করবি তাইনা? আমরা একসাথে ডিনার করতে পারি?”
মেঘালয় বললো, “অবশ্যই। আমার সাথে আরো তিনজন ফ্রেন্ড আছে। সবাই একসাথে ডিনার করতে পারবো। তো তোরাও চলনা আমাদের সাথে। একটু ঘুরেফিরে একেবারে ডিনার করেই হোটেলে ফিরবো।”
অরণ্য দুপুরের দিকে তাকিয়ে বললো, “না রে। জার্নি করে এসে টায়ার্ড হয়ে গেছে দুপুর। দুপুরে রাত নেমেছে। এখন আর বাইরে যাবো না।”
দুপুর অরণ্য’র কথার মাঝখানে বলে উঠলো, “আমি একদম ঠিক আছি। রুমে বসে থাকতে বরং ভালো লাগছে না। যাই না ঘুরে আসি? আমি আর ভাবি মিলে গল্প করবো আর আপনারা কথা বলবেন।”
দুপুর নিজে থেকে যেতে চাইছে বলে অরণ্য আর না করলো না। কফি খাওয়া শেষ করে ওরা বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো। দুপুর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। মিশুর সাথে গল্প করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তবুও কেন যেন সহজ হতে পারছে না। কিন্তু মিশুর সাথে খুব গম্ভীর মানুষ ও ঠিকই গল্পে মেতে উঠতে বাধ্য। মিশু যে পরিমাণ বকবক করতে থাকে, না চাইলেও মুড আপনা আপনি চালু চলে যায়। দুপুর ও মিশুর রাতারগুলে ভ্রমণের গল্প শুনতে শুনতে উত্তেজিত হয়ে উঠতে লাগলো। দুদিন পর দুপুরকে এরকম স্বাভাবিক ভাবে হাসতে দেখে অরণ্য স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
মেঘালয় কে বললো, “তোর বউয়ের শুধু রূপ নয়,গুন ও আছে দেখছি।”
মেঘালয় হেসে হেসে বললো, “আমার বউয়ের কি দেখলি তুই??”
– “আহা! যেটুকু দর্শনীয় সেটুকুই দেখেছি। দ্যাখ আমার বউয়ের সাথে কেমন গলায় গলায় ভাব জমিয়েছে যেন ওরা মায়ের পেটের বোন।”
বলেই শব্দ করে হেসে উঠলো। মেঘালয় ওর কাঁধে হাত রেখে বললো, “ঠিকই আছে। আমরা তাহলে ভায়রা ভাই।”
অরণ্য বললো, “উহু, তোর বউ মানে আমার বউ,আর আমার বউ মানেই তো তোর বউ তাইনা?”
মেঘালয় অরণ্য’র কাঁধে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো, “উহুম না। তোর বউ মানে আমার বউ,আর আমার বউ মানে তোর ভাবি।”
দুই বন্ধু হো হো করে হেসে উঠলো। মিশু ও দুপুর ওদের ফিসফিস কথাবার্তা আর উচ্চস্বরে হাসতে দেখে ওরাও হাসলো। যাক, ঘুরতে এসে একটু আনন্দ হলে সেটাও অনেক। বাড়িতে থাকলে নিশ্চয়ই সারাক্ষণ কান্না পেত দুপুরের।
গাড়ির কাছে এসে মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, “জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। একটু চাপাচাপি করে বসতে হবে দোস্ত। কষ্ট হবে না তো?”
অরণ্য বললো, “তোর বউকে তো আমার মানুষ মনেই হয়না।”
মিশু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অরণ্য’র দিকে তাকালো। মানুষ মনেহয় না মানে? মিশু কি তাহলে?
অরণ্য বললো, “না মানে মিশুকে আমার বারবি ডল বারবি ডল লাগে। ওকে তো অনায়াসে কোলের উপর বসিয়ে নিয়ে যেতে পারিস।”
মিশু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। মেঘালয়ের বন্ধুরা অনেক দুষ্টমি করলেও এত বেশি ফাজলামি কখনো করেনা। অরণ্য একটু গভীর টাইপের কথাবার্তা বলে,শুনতে কেমন যেন লাগে। ছেলেটার মুখে কিচ্ছু আটকায় না। মেঘালয় ইয়ার্কির মোক্ষম জবাব দিতে সত্যি সত্যিই মিশুকে কোলে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। মিশুর ইচ্ছে করলো লজ্জায় মেঘালয়ের বুকের ভেতর ঢুকে যায়। চোখ মেলে তাকাতেই পারছে না ও। মেঘালয় ওকে কোলের উপর বসিয়ে পাশের সিটে অরণ্যকে বসতে বললো। অরণ্য’র পাশে দুপুর বসে পড়লো। সামনের সিটে বাকি তিনবন্ধু বসে গেলো। আরাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে। ছোট্ট একটা গাড়ি হওয়ায় বসতে কষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু মেঘালয়ের এই গাড়িটাই খুব পছন্দের।
মিশু মেঘালয়ের কোল থেকে নেমে পাশে বসলো। মেঘালয় ওর চোখের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো। মিশু চোখ রাঙাল ওকে। কিন্তু মেঘালয়ের দৃষ্টি খুব গভীর। ভেতরটা কেঁপে উঠলো মিশুর। ও দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।
গন্তব্যস্থলে পৌছে গাড়ি থেকে নেমে মিশু ও দুপুরকে একটা টেবিলে বসতে বলা হলো। ওরা দুজন সেখানে বসে কফি খেতে খেতে গল্পে মেতে উঠলো। আর মেঘালয় ও ওর বন্ধুরা তাদের জরুরি আলাপ সারতে অন্য টেবিলে মিটিং এ বসে গেছে। অরণ্য’র যদিও কোনো কাজ ছিলোনা, তবুও ও মেঘালয়ের সাথেই সেখানে বসেছে। ওরা কথা বলছিলো আর অরণ্য ফাঁকে ফাঁকে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছিলো দুপুরের দিকে। দুপুর সেটা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে রইলো। ও মিশুর সাথে মিশে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে কথা বলছে। মিশু মেয়েটা অনেক ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার বলা যায়। জগতের যত সব অদ্ভুতুড়ে কথাবার্তা ওর মগজে কিলবিল করে। সেসব বলে বলে অন্যের মাথা ধরিয়ে দেয় ও। শুনতে যে খারাপ লাগে তাও না, বরং বেশ মজা লাগে সেসব আজগুবি কথাবার্তা। সচরাচর এমনটা তো দেখা যায় না। দুপুর ও মেতে উঠলো ওর সাথে। আস্তে আস্তে মন খারাপ ভাবটা কেটে যেতে আরম্ভ করেছে।
মিটিং শেষ হলে রেস্টুরেন্ট এ চলে এলো ওরা। খাবার টেবিলে বসেও মিশু ও দুপুর গল্প করছিলো। মেঘালয় মিশুর বকবকানি শুনে হাসছে আর ভাবছে, মেয়েটা আজীবন যেন এমনি থাকে। খাবার চলে এলে ওরা খেতে আরম্ভ করলো। মিশু হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা তোমরা কেউ ব্যাঙ খেয়েছো?”
মেঘালয় কেশে উঠলো, “ব্যাঙ কেউ খায় নাকি?”
মিশু উৎসাহ নিয়ে বললো, “কেন? বর্ষাকালে আমাদের এলাকায় বাড়ির আশেপাশে কত ব্যাঙ পাওয়া যায়। আমরা সেগুলা ধরে ধরে রান্না করে খাই। এত্ত টেস্ট লাগে, ইয়াম্মি।”
সবাই হেসে উঠলো ওর কথা শুনে। পূর্ব ফাজলামি করে বললো, “মঙ্গা এলাকার লোকরা আরো কত কিছুই খাবে।”
মিশু ক্ষেপে গিয়ে বললো, “আমাকে মোটেও মঙ্গা এলাকার লোক বলবা না।”
– “মঙ্গা এলাকার লোকেদের কি বলবো তাহলে? সারাবছর খরা আর দূর্ভিক্ষ লেগেই থাকে।”
– “রংপুর সবচেয়ে শান্তির এলাকা। আমাদের এলাকার মানুষ খুব সরল আর মানুষকে খুব ভালোবাসতে পারে। সাজেক থেকে ঘুরে এসে তোমাদের সবাইকে আমি রংপুর নিয়ে যাবো। দেখে এসো আমাদের গ্রামের মানুষ গুলি কত সরল।”
পূর্ব হেসে বললো, “ব্যাঙ খেয়ে খেয়ে সরল হয়েছে তাইনা?”
মেঘালয় বললো, “মিশুকে ক্ষেপাচ্ছিস কেন তুই?”
– “ক্ষেপালাম আর কোথায়। সত্য কথাই বলেছি। দূর্ভিক্ষ এলাকার লোক। সে সবসময় বিজনেস প্লান মাথায় নিয়ে ঘোরে। রাতারগুলে গিয়েও চাটনি বেচে আর বলে এক পিছ তিন টাকা। সেটা আবার ফ্রিতে দিয়ে বলে,এমনি দিছি। এমনির আরেক নাম তিন টাকা।”
সবাই মুখ টিপে হাসলো।
সায়ান বললো, “তোর মত গুবলেট নাকি? সে সারাক্ষণ বিজনেস প্লান নিয়ে ঘোরে, তার মগজ অলটাইম সক্রিয়। তোদের মত না। তোরা শালা ইচ্ছেকৃত ভাবে আমার ব্রেকাপ ঘটালি।”
সবাই অবাক হয়ে তাকালো। মেঘালয় জিজ্ঞেস করলো, “ব্রেকাপ হয়ে গেছে সিরিয়াসলি?”
সায়ান মুখ কাচুমাচু করে বললো, “হুম। হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় কল দিয়েছিলাম, বললো তুই তোর ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়াই থাক। গালি দিয়ে আমার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করেছে। আমিও যা বলার বলেছি।”
আরাফ বলল, “আমাকে তোর থ্যাংকস জানানো উচিৎ। তোকে আমি ফকির হওয়ার হাত থেকে বাঁচাইছি।”
মেঘালয় বললো, “দোস্ত মন খারাপ করিস না। সাজেক থেকে ফিরে মিশু আমাদের রংপুর নিয়ে যাবে। সেখানকার সহজ সরল হাবাগোবা মেয়েদের মধ্যে একটাকে বেছে নিস। আজীবন তোকে মাথায় তুলে রাখবে। আমার একটা সুইট শালীকাও আছে।”
মিশু ক্ষেপে কাটা চামুচ তুলে মেঘালয়ের মুখের সামনে ধরে বললো, “তুমি বলতে চাচ্ছো আমি সহজ সরল হাবাগোবা মেয়ে?”
– “নাহ, আমি বলতে চাচ্ছি রংপুরের সব মেয়েই হাবাগোবা, শুধু আমার বউটা বাদে।”
সবাই শব্দ করে হাসলো। পূর্ব বললো, “ঠিকই বলছিস তবে উলটা করে। সঠিক উত্তর হবে, রংপুরের সব মেয়েই চতুর শুধু তোর বউটাই হাবাগোবা।”
এরপর টেবিল সুদ্ধ সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো। রেস্টুরেন্টের অন্য টেবিলে বসা লোকজনরা ওদের দিকে তাকাচ্ছে অবাক হয়ে। কত সুন্দর হাসাহাসি করতে করতে খাবার খাচ্ছে ওরা। সাথে আবার চারজন সদ্য বিবাহিত তরুণ তরুণী! আহা! কি সুখী ওরা!
সবাই যখন হাসছিলো মেঘালয় সবার অগোচরে এক হাত দিয়ে মিশুর কোমরে হাত রেখে ওকে একটু কাছে টেনে নিলো। কানের কাছে এগিয়ে ফিসফিস করে বললো, “তোমাকে আজ এত আকর্ষণীয় লাগছে কেন? আমিতো চোখ ফেরাতে পারছি না।”
মিশু মুখ বাঁকা করে ফিসফিস করেই জবাব দিলো, “আমি তো সহজ সরল হাবাগোবা মেয়ে। আমাকে আবার সুন্দর লাগে?”
– “তোমার সরলতার জন্যই তুমি পবিত্র দেখতে। কিন্তু আজকে কেন জানি খুব বেশি স্মার্ট দেখাচ্ছে তোমায়। সবার চেয়ে আকর্ষণীয় লাগছে। স্বর্গ থেকে নেমে আসা পরী মনেহচ্ছে। আমার তো মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।”
– “থাক, বাড়াবাড়ি রকমের কিছু বলতে হবেনা। গুতো মেরে সরি বলতে এসেছে। মন ভুলানো হচ্ছে?”
মেঘালয় ফিসফিস করে বললো, “সত্যিই তোমাকে একদম এত্ত বেশি সুন্দর লাগছে যে তোমার ভাষায় খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে খরছে।”
– “আমি মোটেও অতটা সুন্দরী নই।”
– “যেমন আছো, তাতেই তো আমার মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে।”
– “কই? আমিতো ঠিকই দেখতে পাচ্ছি মাথা সোজাই আছে। ঘুরছে না তো।”
মেঘালয় মিশুর কোমরে আলতো চাপ দিয়ে গভীর ভাবে ওর চোখের দিকে তাকালো। ফিসফিস করে বললো, “আজকে হোটেলে ফিরে তোমার খবর ই আছে।”
মিশুর সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে খেতে আরম্ভ করলো। কিন্তু মিশু আর একটুও খেতে পারছে না। রীতিমত পা কাঁপছে। মেঘালয়ের গভীর দৃষ্টি একদম হৃদয়ে পৌছে গেছে ওর। টেবিলের নিচে সবার আড়ালে মেঘালয় মিশুর পায়ের উপর পা রাখলো। আরো কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো মিশু। কিন্তু যখন ই পা একটু সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, মেঘালয় আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে পায়ের পাতা দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে ওর পা। মিশুকে খুব ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। লাজুক রাঙা হয়ে উঠেছে ওর মুখটা। খাবার তুলে মুখে দেয়ার মত শক্তিটাও পাচ্ছেনা। মেঘালয় এমন কেন?
দুপুর মিশুর পাশেই বসেছে। এদিকে সবাই নানান রকম ইয়ার্কি ফাজলামি করছে আর হাসছে। দুপুর একবার নিচের দিকে তাকাতেই মিশু ও মেঘালয়ের পায়ের খেলা চোখে পড়লো ওর। মিশু পা সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেও পারছে না। পায়ে পা রাখার অনুভূতি ও এত সুখকর হতে পারে সেটা ও প্রথম অনুধাবন করলো আজ। দুপুর কয়েক পলক সেদিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে উঠলো। অন্যরকম কষ্ট অনুভূত হচ্ছে ওর। মিশুর বয়স মাত্র আঠারো। একজন সদ্য বেড়ে ওঠা তরুণী হিসেবে খুব সুখী ও। একইসাথে মিশু একজন পরিপূর্ণ প্রেমিকা, একজন স্ত্রী, একজন অর্ধাঙ্গিনী। দুপুরের ও ইচ্ছে করছে মিশুর মত সুখী হতে। একজন প্রেমিকা হতে, একজন স্ত্রী হতে। আজ যদি অরণ্য’র জায়গায় নিখিল থাকতো, তবে দুপুর ও নিঃসন্দেহে মিশুর মত উচ্ছল থাকতো। এসব ভেবে একবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ও।
সায়ান মিশুর প্লেটের দিকে চেয়ে বললো, “ম্যাশ ভাবি তো কিছুই খাচ্ছেন না। ওনাকে অমন দেখাচ্ছে কেন? কোনো সমস্যা?”
মিশু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু তবুও ওকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিলো। মেঘালয় বললো, “তোমার ম্যাশ ভাবি গভীর ভাবে কিছু চিন্তা করছে।”
– “কি হইছে ওর? কিসের চিন্তা?”
মেঘালয় মুখ টিপে হেসে জবাব দিলো, “সে চিন্তা করছে টেবিলের নিচে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে কিনা।”
মিশু এই কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না। কিন্তু মেঘালয়ের বন্ধুরা সবাই আরেক দফা হেসে নিলো এটা নিয়ে। সবাই হাসছে তো হাসছে ই। কারো আর হাসি থামছে না। মিশু মনেমনে ভাবছে, সবাই খুব খারাপ। শুধু হাসাহাসি করে ওকে নিয়ে। আর খুব পঁচা পঁচা ফাজলামি করে। আজকালকার দিনের ছেলেরা খুব সাংঘাতিক। মারাত্মক রকমের ইয়ার্কি করে শুধু।
হোটেলে ফেরার সময় পর্যন্ত সবাই হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো। ফিরে এসে যে যার রুমে চলে গেলো। মিশু রুমে এসে বসে আছে, মেঘালয় ওকে রেখে একটু পূর্বদের সাথে কথা বলতে গেছে। কালকেই এই হোটেল ছেড়ে দেয়া হবে। আগামী দুদিন ওরা চা বাগানের বাংলোয় থাকবে। সেসব নিয়ে কথা বলে এসে রুমে ঢুকলো।
রুমে ঢুকতেই মিশু মেঘালয়কে জিজ্ঞেস করলো, “আমার এত ঘোর ঘোর লাগে ক্যান মেঘমনি?”
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে