অতন্দ্রিলা_আর_বৃষ্টি পর্ব-৩

0
1608

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০

লেখনীতে- সানজিদা তাসনীম রিতু

অতন্দ্রিলা_আর_বৃষ্টি পর্ব-৩

৪ঠা মে ২০০১ বিবিসি নিউজ থেকে প্রচার করা হয়েছিলো নাসা থেকে জানানো হয়েছে যে আগামি ৬ই মে মাঝরাতের পর মহাকাশ থেকে অদ্ভুৎ মহাজাগতিক রশ্মির পৃথিবীতে আগমন ঘটতে পারে যেটা সৌরজগতের নিকটবর্তী হঠাৎ উদয় হওয়া একটি ব্ল্যাকহোল থেকে নির্গত হচ্ছে আর যার লক্ষ্য মূলত বাংলাদেশ। এটি ঠিক কি ধরনের ক্ষতি করবে বিজ্ঞানীরা তা বলতে পারছেন না। তবে তারা বারবার করে সাবধান করেছেন, ওই সময়ে যেনো কেউ বাইরে না থাকে আর বাড়ির জানালা দরজাও বন্ধ রাখে, কেননা মহাজাগতিক রশ্মির ক্ষমতা অস্বাভাবিক হয়।
কিন্তু এই খবর তো অভ্ৰ আর অতন্দ্রিলা জানেই না কারণ অতন্দ্রিলার সারাটাদিন অভ্ৰকে নিয়েই কেটে যায় আর অভ্ৰও খবর শুনেনা, কি করবে খবর শুনে সে তো জড়বস্তুর মতো জীবন যাপন করে। হয়তো তাই কোনো অস্বাভাবিক ক্ষমতার শিকার হলো ওরা। আমি কিন্তু কিছু জানিনা, দেখা যাক আসলে কি ঘটেছে…

অতন্দ্রিলার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে অভ্র বললো- “কে তুমি? এখানে কি করছো? তুমি এখানে আসলে কোত্থেকে?”
আরোও অবাক হয় অতন্দ্রিলা। সে কিছু বুঝতে পারছেনা, বিস্ময়ের ধাক্কায় কথাও বলতেও পারছেনা। তার অবস্থা দেখে হাতে ধরে থাকা পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে দেয় অভ্র, অতন্দ্রিলা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে আবারও তাকায় অভ্রর দিকে তারপর আস্তে আস্তে পানি খেতে খেতে চারপাশটা দেখতে থাকে। সবই তো ঠিক আছে, এইতো তার আর অভ্রর ঘর। অভ্র তার সামনে দাড়িয়ে কিন্তু কিভাবে! কি হয়েছিলো গত রাতে! অভ্রও তার দিকে তাকিয়েছিলো, পানিটুকু শেষ করে গ্লাসটা অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দেয় অতন্দ্রিলা। অভ্র সেটা নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে একটা চেয়ার টেনে অতন্দ্রিলার সামনে বসে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে থেকে আবার কিছুক্ষন আগের করা প্রশ্নটা করে, “কে তুমি?”
অতন্দ্রিলা বলে ওঠে- “অভ্র, আমি অতন্দ্রিলা, এভাবে বলছো কেন? তুমি চিনতে পারছোনা আমাকে! আর তুমি দাড়িয়ে আছো কিভাবে! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-“এই মেয়ে তুমি আমার নাম জানো কিভাবে? আমিতো তোমায় আগে দেখিনি। আমিও তো কিছু বুঝতে পারছিনা!”
অসহায় আর দূর্বল বোধ করে অতন্দ্রিলা, কি হচ্ছে এসব, তার অভ্র তাকে চিনতে পারছেনা! সে ঠিক হলো কিভাবে? হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে মাথার ভিতর।
=”তুমি সত্যি আমাকে চিনতে পারছোনা?” বলে অতন্দ্রিলা।
=”না।” অভ্রর স্পষ্ট জবাব। “তুমি এখানে এলে কি করে তাই বলো আর অজ্ঞান হয়েছিলে কেনো?”
রাতে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা মনে হলো অতন্দ্রিলার, কি হয়েছিলো আসলে? ওই বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গটা কি ছিলো আসলে আর ওই আলো গুলোও বা কোত্থেকে এসেছিলো আর কেনো? এটা যদি অভ্র না হয় তাহলে কে? কিন্তু অভ্র না হয়েই বা যায় কিভাবে! এটাতো অবিকল অভ্র। বাড়িটাও তাদের, ঘরটাও কিন্তু তবুও কোথায় যেনো একটু অন্যরকম।
-“চুপ করে আছো কেনো? বলো?”
–“আমি আরেকটু পানি খাবো।” বলে অতন্দ্রিলা। অভ্র উঠে যায় পানি আনতে, তখন অতন্দ্রিলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় আর হতবাক হয়ে যায়। বাইরের মাঠটা ঠিকই আছে কিন্তু কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে, বুঝতে পারলো সে, রঙ। অনেক রকম রঙ। মাঠের ঘাস গুলোর মতো সকালের আলোটাও যেনো হাজার হাজার রঙের মেলা বসিয়েছে। আর রঙ গুলোও যেনো কেমন উজ্জ্বল জ্বলজ্বলে…

-“এই নাও পানি।” অভ্র এসে পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে ধরলো।
অতন্দ্রিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গ্লাসটা নিয়ে বিছানায় বসে অল্প একটু পানি খেয়ে তাকালো অভ্রর দিকে।
-“হ্যা, এবার বলো, তুমি এখানে কিভাবে আসলে? কে তুমি?”
=”আমি তো বলেছি আমি অতন্দ্রিলা। আর আমি তো আমাদের বাড়িতেই আছি। তোমার আর আমার…”
-“কিসব বলছো তুমি?” অতন্দ্রিলাকে কথা শেষ করতে দিলোনা অভ্র। এটা আমার বাড়ি, ১৬৮ বছর ধরে আমি এখানে আছি, একা।”
হাত কেঁপে ছলকে পানি পড়ে গেলো অতন্দ্রিলার হাত থেকে। কি বলছে এসব ও।অবাক হয়ে তাকালো অভ্রর দিকে। সবই তো ঠিক আছে। এইতো অভ্রই, শুধু ওর শরীর থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। কিছু একটা সমস্যা হয়েছে, চারিদিকের পরিবেশ অভ্রর কথা অদ্ভুত আলো এগুলোর কারণটা জানতে পারলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে, ভাবছে সে। অতন্দ্রিলা মাথা নিচু করে বললো- “আচ্ছা, তাহলে এটা কোন জায়গা?”
-“তুমি জানোনা?”
=”জানলে তো জিজ্ঞাসা করতাম না।”
-“তাহলে যে বললে তোমার বাড়ি এটা?” কিছুটা রেগে গিয়ে বললো অভ্র।
অতন্দ্রিলা বুঝলো সমস্যা হয়েছে, আর সমস্যার সমাধান করতে খোলসা করতে হবে সব তাই সে অভ্রর প্রতিরূপকে সবটা খুলে বললো, এমনকি গতরাতের ব্যাপারটাও।

-“তুমি কি পৃথিবী থেকে এসেছো? ওহ মাই গড!
=”পৃথিবী থেকে এসেছি মানে! আমি তো পৃথিবীতেই…”
-“না না না, তুমি বুঝতে পারছোনা। এটা পৃথিবী না, আমিও পৃথিবীর কেউ না।”
=”কি বলছো তুমি! কেঁপে ওঠে অতন্দ্রিলা।”
-“হ্যা, এটা ক্রিপটি গ্রহ। পৃথিবীর গ্যালাক্সি আর আমাদের গ্যালাক্সি সম্পূর্ণ আলাদা আর দূরত্বও অনেক অনেক বেশি। শুধুমাত্র ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমেই আসা সম্ভব। কিন্তু আমার জানামতে ব্ল্যাকহোলতো সবগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাহলে তুমি আসলে কীভাবে! নাকি কেউ তোমাকে নিয়ে এসেছে!”
চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে অভ্রর কথা শুনছিলো অতন্দ্রিলা।
-“বিস্বাস করো আমি কিছুই জানিনা, তোমাকে তো বললামই সবটা। তাছাড়া তুমি যা বলছো আমার এগুলোর ব্যাপারে কোনো ধারণাও নেই।” অতন্দ্রিলা বললো ব্যাকুল হয়ে।
-“তোমার কিছু জানার বা বোঝার কথাও না। ৪০০ বছর আগে আমার বাবা-মা আর তাদের বিজ্ঞানী বন্ধুরা মিলে আবিষ্কার করেন যে মহাকাশে আরো অনেক গ্যালাক্সি আছে। গ্যালাক্সি কি জানো?”
–“না।”
-“মহাকাশ মানে কি বুঝো সৌরজগৎ?”
–“হ্যা।”
-“সৌরজগৎ ছাড়াও পুরো একটা বিশাল আকাশ। একটি গ্যালাক্সি হলো মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ নক্ষত্র, তারার দেহাবশেষ, আন্তঃকোষীয় গ্যাস, ধূলিকণা এবং অন্ধকার পদার্থের একটি সিস্টেম। গ্যালাক্সি শব্দটি গ্রীক গ্যালাক্সিয়াস থেকে এসেছে। আক্ষরিক অর্থে ‘মিল্কি’, যা মিল্কিওয়ের একটি উল্লেখ মাত্র। গ্যালাক্সিগুলোর আকার বিশাল হয়। বামন থেকে শুরু করে বিশালাকার কয়েকশ মিলিয়ন তারা বা নক্ষত্র দিয়ে বিস্তৃত একেকটা গ্যালাক্সি। প্রতিটি গ্যালাক্সির ভর তার কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।” একটু থেমে অতন্দ্রিলার হা হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- “কিছুই বুঝলেনা তাইতো?” অতন্দ্রিলা মাথা নাড়ে।
-“হুম, এভাবে বুঝবেনা। সহজ ভাবে বলি গ্যালাক্সি একটি বিশাল বড় আকাশ যা পরিমাপ করা সম্ভব না কিন্তু এমন লক্ষ লক্ষ গ্যালাক্সি আছে আর প্রতিটা গ্যালাক্সিতেই সৌরজগৎ আছে আর সেখানে আমাদের গ্রহের মতো একটা গ্রহ আছে যেখানে আমাদের মতো প্রানের বিস্তার আছে ধারণা করা হয়েছে। কিন্তু গ্যালাক্সি ভিন্ন হওয়ার কারণে আর অনেক দূরত্ব হওয়ার জন্য সময়টা ভিন্ন, পরিবেশ, বয়সের হিসাব আর জীবন পদ্ধতিও ভিন্ন এমনকি বয়সসীমাও ভিন্ন।
হা করে তাকিয়ে থাকে অতন্দ্রিলা, কি শুনছে এসব ও!
-“কিন্তু তুমি আসলে কীভাবে এখানে! এটা তো কোনোভাবেই…কথার মাঝেই হঠাৎ চমকে অতন্দ্রিলার দিকে তাকালো অভ্র, তবে কি…”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে