#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৭+১৮
“”পিঠ বের করে ব্লাউজ না পরলে কি হয়? শরীর দেখালেই সবাই প্রেমে পরে না। “”
কথা শুনে ইভা চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে কথাটা আয়ান বলেছে তাই সাথে সাথে শাড়ির আঁচলটা পিঠের ওপর দিলো।
” দু মিনিটের মধ্যে উপরে যাও আমি আসতে আছি ”
”এখন কিভাবে যাবো, অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে তো”
“এতো কথা না বলে যা বলেছি তা করো ”
“আচ্ছা ”
ইভা বসা ছেড়ে উঠতে সানভির মা বললো,
-তুই এখন কোথায় যাচ্ছি? তুলিকে হলুদ লাগাবি না?
-হ্যাঁ, ওয়াস রুম যাবো তারপর এসে হলুদ লাগাবো।
-তাড়াতাড়ি আসিস।
ইভা উপরে গিয়ে আয়ানকে খুঁজতে লাগলো কোন রুমে কোথায় আছে?
আয়ান ইভার হাতটা টেনে নিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো।
-আয়ান এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? রুমে দরজা লক করেছো কেনো?
-তুমি যে শরীর বের করে সবাইকে দেখাও এটা বুঝি আমার খুব ভালো লেগেছে?
-চুলগুলো খোলা রেখেছি পিঠ দেখা যাচ্ছে না তো।
-মুখে মুখে তর্ক করবে না, আমি স্পষ্ট দেখেছি তোমার শরীর দেখা যাচ্ছে।
—
-এখক্ষনি শাড়ী চেঞ্জ করো আসো।
-না
আয়ান ইভাকে দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে দু হাত চেপে ধরে বললো,
-আমি যতোটা তোমার ভালো চাই ঠিক ততোটাই খারাপ করতে পারি
-আমার হাতে ব্যাথা লাগছে ছাড়ো
-আগে বলো শাড়ি চেঞ্জ করবে কি না?
-হুম করবো।
-যাও
-তুমি বাইরে যাও
-তুমি ওয়াস রুমে গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে আসো আমি রুমে বসে আছি
-অসহ্য
ইভা কিছুক্ষন পর শাড়ি চেঞ্জ করে গাউন করে পরে এসেছে।
-শান্তি হয়েছে, এখন চলো
-দাঁড়াও ভালো করে দেখি
-আবার ভালো করে দেখার কি আছে?
-ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক মুছে এসো
– না
আয়ান ইভার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নিলো। ইভা আয়ানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আয়ানের সেদিকে খেয়াল নেই কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলো।
-সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে হয় ।দেখো এখন লিপস্টিক নেই।
ইভা আয়ানের গলা চেপে ধরে বললো,
-তোকে আজকে মেরে ফেলবো
-হ্যাঁ মেরে ফেলো তাতেও আমার শান্তি অন্তত তোমার এসব দেখতে হবে না
আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ইভা কান্না করে দিলো।
– তোমার শরীর দেখে কেউ মজা নিবে এটা আমি চাই না।
আয়ান ইভার চোখের পানি মুছে দিয়ে, জড়িয়ে ধরে বললো,
-তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি তা বলে বোঝাতে পারবো না। তোমাকে নিয়ে কেউ কিছু বলবে তা আমি মানতে পারি না৷ বিয়ে বাড়ি কতো লোকজন থাকে তাদের মধ্যে খারাপ লোকের অভাব থাকে না। তোমাকে সব সময় চোখে চোখে দেখে রাখা সম্ভব হয় না। আর এখন তোমার বিয়েও করতে পারবো না তোমার নিজের তো ভালো মন্দ বুঝা উচিৎ।
-হুম
-হুম টা কি মাথায় কিছু কি ঠুকছে
-হুম সরি আমি বুঝতে পারি নি।
-এবারের মতো মাফ করে দিলাম
-এবার যাও
-হুম
ইভা হলুদের অনুষ্ঠানে গেলে সবাই একে একে প্রশ্ন করছে কেনো শাড়ি চেঞ্জ করে গাউন পরলো? সবার জন্য একটা উওর রেডি করে রেখেছে যে, শাড়িতে কম্ফোর্টাবেল ফিল করে না তাই চেঞ্জ করে আসছে ।
হলুদের অনুষ্ঠানে ভালো ভাবে কেটেছে। বিয়ের দিন ইভা পিংক কালারের লেহেঙ্গা পরেছে।
তুলি ইভাকে বলছে,
-তোকে আজকে পরীর মতো লাগছে রে ইভু
-তোকেও আজকে খুব সুন্দর লাগছে, ভাইয়া তো তোর দিক থেকে চোখ সরাতে পারবে না।
-তোর শুধু বাজে কথা
-উম্হ সত্যি কথা বলেছি
ইভার মা এসে বললো,
-তোদের দুবোনের বকবক এখন শেষ কর, ইভা তুই আমার সাথে আয়।
-কেনো? কোথায় যাবো?
-বরের বাড়ির লোকজন এসেছে সেখানে যেতে হবে
-হুম, আপু তুই বস আমি আসছি।
আজকে আয়ানের মা,বাবা,বোন এসেছে। আয়ানের মায়ের সাথে ইভাকে পরিচয় করিয়ে দিবে সে জন্য আয়ান ইভাকে ডাক দিলো,
-ইভা এদিকে আসো
-হুম বলো
-এই আমার মা আর আমার একমাত্র বোন আয়েশা
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি
-ওয়ালাইকুম সালাম। মাশাল্লাহ দেখতে
-ভাইয়া তোর চয়েজ আছে ভাবি আমার খুব পছন্দ হয়েছে
ইভা খুব লজ্জা পাচ্ছে তাই বললো,
-আমার একটু কাজ আছে এখন আসি
আয়েশার ইভার হাত ধরে বললো, আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও দেখি তোমার কি কাছ আছে
-আচ্ছা চলো
ইভা তিয়াশের সাথে দেখা করে তুলির কাছে তখন একটা ছেলে এসে বললো,
-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে
-জানি, পাম দেওয়া লাগবে না
-সত্যি বলছি, এই গোলাপ টা তোমার জন্য
-ধন্যবাদ তবে গোলাপ টা আমার লাগবে না।
ওদের কথার মধ্যে আয়ান এসে বললো,
-উহুম উহুম, ভাইয়া ওর পিছে লাইন মেরে লাভ নেই ওর বয়ফ্রেন্ড আছে
-ওহ আচ্ছা
-ইভা তোকে তুলি ডাকছে তুই যা
-হুম
তুলি বিয়ের অনুষ্ঠানে ভালো ভাবে হয়েছে। ইভারা নিজেদের বাড়ি ফিরে গেছে। কয়েকদিন পরে আয়ান ইভাকে জানিয়ে দিলো যে আয়ান বিদেশে চলে যাবে।
চলবে,
#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৮
নদীর পারে আয়ান ইভা বসে আছে। দু’জনে আসার পর থেকে চুপ হয়ে রয়েছে। বেশ কিছুক্ষন পর আয়ান বললো,
-আমাকে কি মিস করবে?
-হুম, তুমি আমাকে ভুলে যাবে না তো?
-তোরে ভুলে যাওয়ার লাগি আমি ভালোবাসি নি,
সব ভেঙ্গে যাবে এভাবে ভাবতে পারি নি।
-তুমি মজা করছো? আমার কষ্ট হবে তা একটা বারও ভাবলে না?
-মজা করছি না তো।
-তো কি? তুমি ইচ্ছে করে বিদেশে চলে যেতে চাইছো তাই না?
-না বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি যে যাবো না কিন্তু সে আমার কথা শুনলো না। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমারও কষ্ট হবে।
-কতো দিন থাকবে?
-তিন মাস।
-এতোদিন না থাকলে কি হয় না?
– না গো অনেক কাজ আছে।
–
-তুমি নিজের খেয়াল রেখো, ভালো করে পড়াশোনা করো।
-হুম
-আমার দিকে তাকাও না, ঠিক করে কথা বলছো না কেনো কি হয়েছে?
-বলো তোমার কথা আমি শুনছি
এবার আয়ান ইভার গালে হাত দিয়ে দেখে ইভা কান্না করছে।
-তুমি যদি এমন করো তাহলে আমার তো বেশি কষ্ট হবে। তুমি সবার মাঝে থাকবে আর আমি একা থাকবো তাতে আমার কতো কষ্ট হবে তা কি বুঝো?
-তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো? আমার সবকিছু জুড়ে শুধু তুমি ছিলে।
-প্লিজ সোনা পাখিটা কান্না করো না। আমি সবসময় তোমার সাথে কথা বলবো, ভিডিও কল দিবো।
-হুম,
-আর একটুও চোখের পানি দেখতে চাই না, হাসো।
আয়ান ইভার চোখের পানি মুছে দিলো।
-তোমার জন্য পায়েস রান্না করে এনেছি বলে ইভা ব্যাগ থেকে পায়েসের বাটি বের করে
-খাইয়ে দেও
-হুম দিচ্ছি
দুজনে কিছুটা সময় এক সাথে কাটিয়ে বাসায় রওনা দিলো। রাস্তার কাছে ফুসকা দেখে আয়ান বাইক থামিয়ে বললো,
– নামো, আজকে তুমি যতো ইচ্ছে ফুসকা খাও, আমি বারন করবো না।
-না খাবো না
-আমি বলছি তো, চলো খেয়ে আসি
ইভার মন খুব খারাপ তাও প্রিয়জনের সাথে ফুসকা খাওয়া একটা ভালো লাগা আছে। ফুসকা খেয়ে ইভাকে বাসায় পৌঁছে দিলো।
রাতে আয়ান নিজের জিনিসপত্র প্যাক করে রাখলো৷ সকালের ফ্লাইটে চলে গেলো। ইভার সারা দিন মন খারাপ ছিলো। পরের দিন আয়ান দিলো,
-আসসালামু আলাইকুম, সোনা পাখিটা
-ওয়ালাইকুম সালাম, কেমন আছো?
-ভালো, তুমি?
-ভালো কিন্তু তোমার জন্য মন খারাপ।
-আহারে্ আমার সোনা পাখিটা মন খারাপ তাহলে মন ভালো করার জন্য কিছু একটা তো করতে হয়। যাও বারান্দায় গিয়ে দেখো যে একটা দড়ি বাধা আছে ওটা উপরে টান দেও।
-কেনো? কি আছে?
-তুমি আগে গিয়ে দেখো তো আমি লাইনে আছি
-আচ্ছা ।
ইভার রুমের বারান্দায় একটা দড়ি বাধা থাকতো যেটা দিয়ে আয়ান মাঝে মাঝে ইভাকে খাবার আর গিফ্ট দিতো।
ইভা দড়ি টেনে দেখলো এক বক্স কিটক্যাট।
– থ্যাংকউই এ লট। ভিডিও কল দেই
-হুম
ইভা আয়ানকে ভিডিও কল দিলো,
-তুমি বক্সটা কখন রেখে গেছো?
-তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে এসেছিলাম তখন রেখে গেছি। তোমার কিটক্যাট ফেভারিট আর চলে যাওয়ার পর মন খারাপ থাকবে সেটা ভালো করতে এসব করেছি।
-সত্যি খুব খুশি হয়েছি। তুমি এতো কিছু যে কিভাবে পারো বুঝি না।
-তোমার বুঝতেও হবে না।
-সারাজীবন আমাকে এভাবে ভালোবাসবে তো?
-হুম
দু’জন কিছু সময় কথা বলে, ইভা বই পড়তে বসলো। কিছুদিন পরে ইভার ফাইনাল পরীক্ষা।
প্রতিদিন ইভা আয়ানের কথা হয়। ইভা রাত জেগে বই পড়লে আয়ানও ভিডিও কলে বসে থাকে। দূরে থাকলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে ঠিক ওদের ভালোবাসাও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ইভার পরীক্ষার মাঝে বার্থডে ছিলো, রাতে ইভা বই পড়ছে তখন আয়ান বললো,
-Happy Birthday to U Sona Pakhi
-থ্যাংকউই
-যাও বাসার মেইন দরজাটা খুলো।
-এতো রাতে দরজা খুলবে, কেউ যদি দেখে ফেলে।
-কেউ দেখবে না তুমি যাও
-আচ্ছা
ইভা দরজা খুলে দেখে একটা ফুলেরতোরা আর এতো বড়ো একটা গিফ্ট বক্স। চুপিচুপি রুমে এসে দরজা লক করে গিফ্ট বক্স খুলে দেখে ড্রেস, হিজাব, পারফিউম, মেকআপ, আর অনেক চকলেট, চিপস।
-তোমাকে যতো দেখছি ততো অবাক হচ্ছি। আমি অনেক ভাগ্যবতী তোমার মতো একজন লাইফ পার্টনার পেয়ে।
-আমিও তোমাকে পেয়ে খুব খুশি, তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে তাইতো এতোকিছু করি, এতো ভালোবাসি।
-কিন্তু তুমি তো বিদেশে তাহলে কে দিলো?
-আমি এগুলো কিনে সানভির কাছে দিয়েছিলাম ও এসে দিয়ে গেছে।
-সানভি ভাইয়া আমাদের জন্য অনেক করেছে। ওর মতো ভাই সবার যেনো হয়।
-হুম, ও আমার জন্য যা কিছু করেছে তার ঋন কোনো দিন শোধ করা যাবে না।
-হ্যাঁ, ও অনেক বেশি ভালো।
-ভাইয়ের প্রশংসা অনেক হয়েছে এখন বই পরেন।
-হ্যাঁ পরতে আছি।
-তোমার আরও পাঁচ টা পরীক্ষা আছে আর আমিও একমাসের মধ্যে চলে আসবো।
-হুম তোমার অপেক্ষায় আছি
কথা কোপন শেষ করে বই পড়তে শুরু করলো। দেখতে দেখতে ইভার পরীক্ষা শেষ হলো, আয়ানের সময় হয়েছে দেশে ফিরে আসা।
সাইফুল চৌধুরী মানে ইভার বাবা ওর মাকে বলছে,
-ইভার পরীক্ষা তো শেষ হলো এর মধ্যে আমার পরিচিত একজনের সাথে দেখা হয়েছে তখন সে বললো ভালো ছেলে আছে মেয়ের বিয়ে দিবেন কি না?
-তা তুমি কি বললে?
-বলেছি যদি ভালো ছেলে হয় আমার মেয়ে জন্য পার্ফেক্ট তাহলে বিয়ে দিবো
-আচ্ছা তাহলে তার সাথে কথা বলে দেখো।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে সাইফুল চৌধুরী দরজা খুলে দেখে তার পরিচিত একজন এসেছে যে ইভার বিয়ের কথা বলেছে।
ইভা ড্রইং রুমে টিভি দেখতে যাবে বলে, এইসব কথা শুনে ফেলেছে।
টিভি দেখতে না গিয়ে আয়ানকে কল দিলো।।।
চলবে,,