#the_unlimited_love❤️
#last_part
#writer_nusrat
“মে আই কাম ইন স্যার৷”
“ইয়েস কাম৷ ”
আদিলের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িঁয়ে আছি আমি৷ মুখ তুলে এখনো উনার দিকে তাকাইনি৷ বেশ ভালো বুঝতে পারছি উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন৷ আমি ইতস্তত করে বললাম,,
“স্যার আপনি আমায় ডাকছিলেন??
“হুম৷ কেমন আছো তুমি আরুহি৷???
“ভালো”
“তুমি আমায় জিজ্ঞেস করবেনা আমি কেমন আছি?
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,,,
“আপনি তো আমার চেয়ে আরও বেশি ভালো আছেন নিজের স্ত্রী আর সংসার নিয়ে৷”
“আমি সোহানিকে বিয়ে করিনি৷”
“দেখুন স্যার এটা অফিস তাই পারসোনাল বিষয় এখানে এক্সপ্লেইন করতে চাইছিনা৷ আর যদি কোনো কাজ থাকে তাহলে আমায় বলুন আমি করে দিবো৷ আমি তো আপনার দাসি মাত্র৷ ”
“প্লিজ আরুহি এভাবে বলো না৷ আমি জানি আমি তোমার সাথে যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য৷ তাই আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো না৷ তোমার যদি মনে হয় আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ তাহলে ক্ষমা কইরো৷ কিন্তু আমি যে ভুল করেছি সেটার জন্যে ও তুমি আমায় যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো৷ ”
“আপনি কী চান???
“আমি চাই তুমি আবার আমার সাথে ফিরে চলো৷ আমি আর তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিনা আরুহি৷ধুকে ধুকে মরে যাচ্ছি৷ এই দুইবছর আমি কীভাবে কাটিয়েছি সেটা আমিই জানি৷ ঢাকা শহরে রাত দিন হন্য হন্য খুঁজে চলেছি বাট কোথাও পাইনি৷ আর চট্টগ্রামে এসে তোমাকে এভাবে পেয়ে যাবো কখনও ভাবিনি৷ তাই আমি আর তোমাকে হারাতে চাইনা আরুহি৷ তুমি আমার সাথে ফিরে চলো আমরা আবার সব নতুন করে শুরু করবো৷ ”
“বাহ্ মিস্টার আদিল৷ এসব কথা বার্তা আপনার কাছ থেকেই আশা করা যায়৷ প্রথমে আমার কথা বিশ্বাস না করে ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছিলেন৷ আর এখন আবার ফিরিয়ে নিতে আসছেন৷ তা সোহনিকে কী বিয়ে করে আমার মতোই ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছেন৷”
উনি চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন,,,
“নাহ্ সোহানিকে আমি বিয়ে করিনি৷ সোহানি এখন কোমায় আছে৷ তুমি চলে আসার কিছুদিন পরই সোহানি কারের নিচে চাপা পরে যায়৷ তাতে আমি একটুও কষ্ট পাইনি৷ কারণ এই শাস্তিটা ওর পাওনা ছিলো তোমাকে আর আমাকে আলাদা করে দেওয়ার জন্য৷ ”
“শুধুই কী ও অন্যায় করেছে আপনি করেননি???
“হ্যা আমিও অন্যায় করেছি৷ আর এর জন্য এতদিন ধরে শাস্তিও ভোগ করে যাচ্ছি৷তোমাকে হারানোর যন্ত্রনাটা যে কতটা ভয়ানক সেটা যদি তোমাকে না হারাতাম তাহলে বুঝতেই পারতাম না৷ প্লিজ আরুহি এবারের মতো আমায় মাফ করে দাও৷ আমি সব জেনে গিয়েছি৷ তোমার কোনো দোষ ছিলোনা সেদিন৷ তুমি তো ফুলের মতো নিষ্পাপ৷ আমাকে ক্ষমা করে দাও নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবোনা৷ ”
“আমাকে কেনো ফিরিয়ে নিতে চান আপনি???
উনি এগিয়ে এসে আমার দুই কাধে হাত রেখে বললেন,,,,
” কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ হ্যা ভালোবাসি দেড়িতে হলেও আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি সোহানির প্রতি নই তোমার প্রতি দূর্বল৷ আমার তোমাকে যেভাবেই হোক চাই৷ তুমি চলে আাসাতে আমার যতটা কষ্ট হয়েছে সোহানির কোমায় চলে গেছে কথাটা শুনেও তেমন কষ্ট হয়নি,একদমই কষ্ট হয়নি৷তুমি স্বপ্ন দেখতেনা রাজকুমারের সাথে তোমার বিয়ে হবে তারপর তার কাছ থেকে ভালোবাসা আদর পাবে৷ এই রাজকুমার এখন তোমাকে সব ভালোবাসা,আদর দিতে প্রস্তুত”
আমি উনার কথা শুনে উনার হাত আমার কাধ থেকে চট করে সরিয়ে ফেললাম,,,,,,
“কী মনে করেছেন আপনি যখন ইচ্ছে হবে কাছে টেনে নিবেন আবার যখন ইচ্ছে হবে তখন দুরে ঠেলে দিবেন৷ এই ভুল আমি আর করছিনা৷ বেশ ভালোইতো ছিলাম এই দুইবছর৷ তাহলে কেনো আবার আমার জীবনে অশান্তি নিয়ে এসেছেন৷ আপনি কী আমায় ভালো থাকতে দিবেননা৷””কথাটা বলে বেরিয়ে আসলাম উনার কেবিন থেকে৷ কান্না আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা আমার পক্ষে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে এলাম আমি৷ তারপর ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে পরলাম৷
“কিচ্ছুক্ষন পর রিংকি এসে আমায় টেনে তুললো৷”
“কী হয়েছে তোর এভাবে টানছিস কেনো???
“আগে আমার সাথে চল৷”
রিংকি আমাকে টেনে সোফার রুমে নিয়ে গেলো৷ সেখানে৷ গিয়ে আমার চক্ষু চরক গাছ৷ আদিল সোফায় আসে আছেন আর আমার দিকে অপরাধী ভংগীতে তাকিয়ে আছেন৷ বেশ ভালো বুঝতে পারছি উনার অনেক অনুশোচনা হচ্ছে কিন্তু আমি এতো সহজে গলবোনা৷ উনার কারনেই এই দুইবছর আমি আমার সংসার থেকে দুরে থেকেছি আমার মা বাবার থেকে দুরে থেকেছি৷
“রিংকি উনি এখানে কী করছেন৷”
“আসলে জীজু তোকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন”৷
“উনি ভাবলেন কী করে যে আমি উনার সাথে যাবো৷ আমি উনার সাথে কক্ষনো যাবোনা৷”””” আমার কথা শুনে আদিল আমার দিকে এগিয়ে এলেন তারপর আমার পায়ের কাছে বসে হাত জোর করে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন৷ আমি উনার এরকম অবস্থা মেনে নিতে পারছিনা৷ তাই চোখ সরিয়ে নিলাম৷
আংকেল আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,,,
“দেখো মা সংসারে এমন অশান্তি প্রায়ই হয়৷ আর তোমরা তো একে ওপরের থেকে দুইবছর দুরে থেকেছো৷ তোমরা কেউ ওই নতুন করে সংসার শুরু করুনি৷ তাই এখন তোমরা তোমরাই আবার নতুন করে সংসার শুরু করো৷ কেউ যদি ক্ষমা চায় তাহলে তাকে একবার ক্ষমা করে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত৷ গুরুজন হিসেবে এটুকুই বলতে পারি৷ এখন যদি তোমার মনে হয় আমার কথা মানা উচিত তাহলে মানো আর না হলে নেই৷ ”
রিংকির আম্মু এসেও আমায় অনেক বুঝালেন৷ উনাদের কথা ফেলতে পারিনি তাই আদিলের সাথে আবার ঢাকায় রওনা দিলাম৷
🍀🍀🍀
গাড়িতে বসে আছি আমি আর আদিল৷ উনি বারবার আমার দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছেন৷ আমি মুখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রাইলাম৷
দুইবছর পর ঢাকায় এলাম অনেকটা পাল্টে গেছে৷ বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপতেই মা এসে দরজা খুলে দিলেন৷ আমাকে দেখে উনি তারাতাড়ি এসে জরিয়ে ধরে চুমুতে বড়িয়ে দিচ্ছেন৷
“কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি রে মা তুই৷ এতদিন পর আমাদের কথা স্মরন হলো তোর৷ আমার ছেলেটা যে তোকে খুজতে খুজতে পাগল হয়ে গিয়েছিলো৷ খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে রাত দিন তোকে খুজা খুজি করতো৷ দেখ এবার চট্টগ্রাম গিয়ে তোকে খুঁজেও পেলো আর নিয়েও আসলো৷ আজ আমার ঘর আবার আলোকিত হয়েছে তুই আসাতে৷ আমার সংসার এবার পুর্নতা পাবে৷
“মা আহিল আর রুবা কোথায়???
“ওরা রুমে আছে জানেনা বোধহয় তুই এসেছিস৷ নাহলে সারা বাড়ি উরিয়ে ফেলতো৷ তুই যাওয়ার পর থেকে তোর বাবা আর আহিল আদিলের সাথে তেমন কথা বলতো না৷ কিন্তু এবার তুই এসেগেছিস তাই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ ”
রাতে,,,,,,,,🍀🍀🍀🍀🍀
ব্যালকনিতে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছি আমি৷ আজ আম্মু আব্বুও এসেছিলেন৷ তারাও আমায় অনেক বুঝিয়েছেন৷ তাই সব গুরুজনদের কথা একবার শুনে উনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি৷ হঠাৎ পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পাওয়াতে শিউরে উঠলাম আমি৷ আমি আমার পেট থেকে উনার হাত সরানোর চেষ্টা করছি বাট উনি ছাড়ছেননা আরও শক্ত করে ধরে রেখেছেন৷ উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুজে বললেন,,,
“অনেক দুরে রেখেছি তোমায় আর না৷ ”
আমি উনার দিকে ঘুরে বললাম,,,,
“আপনিতো বলেছিলেন যা শাস্তি দিবো মাথা পেতে নিবেন৷ তা শাস্তি ভোগ করার জন্য প্রস্তুত আছেন তো৷ ”
উনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,,,
“হুম আমি প্রস্তুত আছি৷ কী শাস্তি দিবে দাও৷”
আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,,৷
“বেশি কিছুনা জাস্ট আমাকে ভালোবেসে আগলে রাখতে হবে আর বিশ্বাস করতে হবে৷”
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,,
“এমন শাস্তি আমি হাজারো বার পেতে রাজী৷ আর কখনো তোমায় কষ্ট দিবোনা কখনো না৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি আরুহি খুব খুব ভালোবাসি৷ আর এখন থেকে দেখবে আদিলের #the_unlimited_love. আর কখনো আমায় ছেড়ে চলে যেওনা তাহলে যে আমি মরে যাবো৷ তোমাকে হারানোর ব্যথা বার বার পেতে চাইনা৷
“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি আদিল৷ আই প্রমিসড্ আমি আর কক্ষনো আপনাকে ছেড়ে যাবোনা৷”
উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,”আজ আমি আমার অধিকার পেতে চাই৷ যে অধিকার থেকে দুইবছর বঞ্চিত ছিলাম৷ তুমি কী আমাকে আমার অধিকার দিবে৷ ছোট্ট আরেকটা আরুহি গিফ্ট করবে৷ আমি কিছু না বলে উনার বুকে মুখ লুকালাম৷ আমিও চাইনা উনি উনার অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকুক৷ উনি আমায় সোজা করে কোলে তুলে নিলেন তারপর আস্তে আস্তে খাটের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন৷ আজ দুইবছর পর আমরা একে অপরের মাঝে হারিয়ে যেতে চলেছি৷ হয়তো আমাদের নতুন জীবনের সাথে শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়৷
————————সমাপ্ত ———————–