#the_unlimited_love❤️
#part_11
#writer_nusrat
“আসার সময় কোথাও লেগে গিয়েছিলো মনে হয়৷”
মহিলাটি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো আমার কথা উনার বিশ্বাস হয়নি৷ আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে বললেন,,,
“মানলাম আসার সময় কোথাও চোট পেয়েছো৷ কিন্তু তোমার গালে যে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ দেখা যাচ্ছে সেটাতো অন্য কথা বলছে৷”
আমি উনার কথা শুনে কেদে দিলাম৷ আর যে কান্না চেপে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা আমার পক্ষে৷ কাঁদতে কাঁদতেই উনাকে বললাম,,,
“প্লীজ আন্টি আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না৷ আমি কিচ্ছু বলতে পারবোনা৷আপনার বাড়িতে কী খাওয়ার মতো কিছু আছে৷ আমাকে কী একটু খাবার দিবেন৷ আমার খুব খিদে পেয়েছে৷ দুপুর থেকে কিচ্ছু খাইনি৷”
আমার কথা শুনে মহিলাটিরও চোখে পানি এসে গেছে৷ উনি তারাতাড়ি উনার চোখের পানি মুছে বললেন,,,
“হ্যা মা আমি তোমার জন্য এখুনি খাবার নিয়ে আসছি৷ তার আগে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও৷”
আমিও আন্টির কথা মতো ফ্রেশ হয়ে নিলাম৷ উনি আমাকে এক প্লেট ভাত এনে দিলেন৷ আমি কয়েক লোকমা মুখে দিয়ে আর খেতে পারছিনা৷ যেন গলা দিয়ে খাবার নামছেই না৷ তারপরও কোনরকমে খাবারটা খেয়ে নিলাম৷
বিছানায় শুয়ে আছি আমি কিন্তু কিছুতেই আমার ঘুম আসছেনা৷ শুধু আদিলের কথা মনে পরছে৷ আচ্ছা উনি খেয়েছেনতো৷ কেমন আছেন উনি৷ এসব কী ভাবছি আমি উনারতো দিব্যি ভালো থাকার কথা৷
_____________________
সোফায় এলোমেলো হয়ে পরে আছে আদিল৷ কিছুই ভালো লাগছেনা তার৷ কেমন যেন এক অদ্ভুত কষ্ট অনুভব করছে৷ হঠাৎ আদিলের চোখ পরলো আরুহির ফ্লোরে পরে থাকা ফোনের দিকে৷আদিল জলদি করে ফোনটা হাতে নিলো তারপর ব্যাটারি, সিম সেটিংস করে ফোন ওপেন করলো৷ কল লিস্ট, গ্যালারী সব খুজলো বাট প্রমানের মতো কিছুই পেলোনা৷ আদিল ফোনটা সোফায় রেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো৷
🏜️🏜️🏜️🏜️
সকালে রোদ আমার চোখে এসে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো৷ আমি লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম৷ কিচেনে উকি দিতেই দেখলাম আন্টি রান্না করছে৷ আমি জলদি করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম তারপর আন্টি কে গিয়ে বললাম,,
“আন্টি আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন”৷
“একি মা তুমি সকালের নাস্তা না করেই চলে যাবে নাকি৷ বসো বসো আমি এক্ষুনি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি৷”
আমি নাস্তা করে উনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম৷উনি এই একদিনেই আমায় অনেক ভালোবেসেছেন যত্ন করেছেন৷ উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এতো কিছু করতো না৷ সারাজীবন উনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো আমি৷
রাস্তায় এক ঘন্টা যাবত দাড়িয়ে আছি৷ সকাল ৬টা বেজে ৭টা হয়ে গেছে৷ একটা কানাকড়িও নেই আমার কাছে যাবো কী করে সেটাই ভাবছি৷ হঠাৎই চোখ গেলো আমার হাতের দুটো বালার দিকে৷ কিন্তু এগুলোতো আমার শাশুড়ী মা আমায় দিয়েছিলেন৷ তাছাড়াও এই বালা ছাড়াতো আমার কাছে আর কিছু নেই৷ আর কিছু না ভেবে আমি বালা দুটো বন্ধক দিয়ে দিলাম৷ আর যা টাকা পেলাম সেটা দিয়েই চট্টগ্রাম রওনা দিলাম৷
__________________
“আরুহি,আরুহি কোথায় তুই?? দেখ আমি এসে গেছি৷ একি এই মেয়ের কোনো সাড়াশব্দ নেই কেনো”৷
মায়ের ডাক শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো আদিল,,
“একি আদিল তুমি একা কেনো??আরুহি কোথায়”??
“আরুহি এই বাড়িতে নেই মা৷ ওকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছি৷”
“আদিল!!!এসব কী বলছো কী তুমি৷ আরুহিকে কেনো বের করে দিয়েছে৷ কী করেছে কী ও??৷(চিৎকার করে)
“ও আমায় ঠকিয়েছে মা৷ তাই ওকে আমি বিদায় করে দিয়েছি৷ আর খুব শীগ্রই ডিভোর্স দিয়ে দিবো৷ তারপর সোহাকে বিয়ে করবো৷”
আদিলের মা আদিলের কথা শুনে রেগে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন গালে,,,
“বিয়ে কী তোমার কাছে ছেলে খেলা মনে হয় নাকি৷ যে যখন তখন ডিভোর্স দিয়ে দিবে৷ শুনো আর যদি তোমার মুখে ওই সোহানি মেয়েটার কথা শুনি তাহলে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে৷আর তুমি যা করেছো সেটার জন্য অনেক পস্তাতে হবে তোমাকে অনেক৷” কথাটা বলে মা নিজের রুমে চলে গেলেন৷
________________
ট্রেনে জানালার পাশে বসে একমনে বাইরে তাকিয়ে আছি৷ আচমকাই মনে পরলো রিংকির কথা একি আমিতে রিংকিকে জানাইনি আমি যে চট্টগ্রাম যাচ্ছি৷ ও যদি স্টেশনে না থাকে তাহলে আমি আমার গন্তব্যে পোঁছাবো কী করে৷ ফোন ওতো আনিনি৷পাশে তাকাতেই দেখলাম একটা লোক উনার ফোন ঘাঁটছে৷ আমি উনার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বললাম,,
“ভাইয়া আপনার ফোনটা একটু দিবেন প্লিজ৷ আমি একজনকে ফোন করবো”
লোকটা আমায় সাথে সাথেই ফোনটা দিয়ে দিলো৷
আমি রিংকির নাম্বার ডায়াল করলাম৷রিং হচ্ছে বাট কল রিসিভ করছেনা৷ দুবার কল কেটে গেলো৷ আরেকবার দেওয়ার সাথে সাথেই রিংকি কল রিসিভ করলো৷ ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি বললাম,,
“শুন রিংকি আমি আরুহি বলছি৷ আমি চট্টগ্রাম আসছি৷ তুই একটু স্টেশনে থাকিস প্লিজ৷”
“ওকে রাখছি আমি৷”
আার কয়েক মিনিট পরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে৷ আর আমিও এই ঢাকা শহর ছেড়ে অনেক দুরে চলে যাবো৷ সেখানে গিয়েই নতুন করে জীবন শুরু করবো৷ মনকে তো শক্ত করে নিলাম তবুও কেনো জানিনা খুব কষ্ট হচ্ছে৷ হয়তো কাছের মানুষদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি সেই জন্যে৷কিন্তু এতে আমার কাছের মানুষরা খুশি থাকেলেই আমি খুশি৷ আর আমার স্বামী তো নিজেই বলে দিয়েছে আমি যাতে উনার সামনে না যাই৷ আমি আপনার কথা রাখবো আদিল৷ আর কোনোদিন আপনার সামনে যাবোনা৷ আপনাকে ডিস্টার্ব করবোনা৷ আমার নিজেরই এখন খুব লজ্জা লাগছে আমি আপনার সাথে ঝগড়া করেছি,স্ত্রীর অধিকার নিয়ে সামনে গিয়েছি৷ হয়তো এখন আপনি আপনার সোহানিকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন,আর আমি ব্যস্ত আছি এই ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যাবার৷আমি যে আমার মুখও আপনাকে দেখাতে চাইনা আদিল,আর না কোনোদিন দেখাবো৷আমি আর কান্না আঁটকে রাখতে পারলাম না৷ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম৷ এতে ট্রেনের অনেক যাত্রীরাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷আমি চোখ মুছে জানালার পাশে প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পরলাম৷ কত সুন্দর এই প্রকৃতি৷ সুন্দর সবই সুন্দর, শুধু সুন্দর না আমার এই জীবনটা৷
🍀🍀🍀🍀🍀
আহিলও ফিরে এসেছে৷ তার কাজ শেষ তাই৷ মায়ের মুখ থেকে আদিলের কথা শুনে ভীষণ রেগে আছে সে৷ তাই এখন যাচ্ছে আদিলের সাথে বুঝাপড়া করতে৷ আদিলের রুমে এসে চিৎকার দিয়ে উঠলো আহিল,,,
“ভাইয়া”!!!!!!!
“কী হয়েছে এভাবে চিৎকার করছিস কেনো??
“তুমি রুহিকে কেনো বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো বলো৷”
“আমি তোকে বলতে বাধ্য নই৷”
“কেনো বাধ্য নও তুমি৷বলো কেনো রুহিকে বের করে দিয়েছো৷ কী অন্যায় করেছে ও৷”
“ও আমায় ঠকিয়েছে৷ও রাতে ক্লাবে গিয়ে ছেলেদের সাথে টাইম স্পেন্ড করে৷ ছেলেদের জরিয়ে ধরে৷”
“তা এসব তোমায় কে বলেছে৷??
“কে আবার আরুহির প্রাক্তন প্রেমিক বলেছে৷ আর আরুহি এখন ওর কাছেই আছে৷”
“প্রেমিক,কী বলছো তুমি ভাইয়া ওর তো কোনো প্রেমিক টেমিক নেই৷ আর প্রাক্তন ওই বা আসলো কোথায় থেকে৷ লিসেন ভাইয়া,আমি জানিনা কে তোমাকে কী বলেছে বা কী প্রমান দেখিয়েছে বাট আই ড্যাম শিওর এটা কোনো ষড়যন্ত ছিলো৷ রুহিকে তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য৷ টোটাল সাত বছর আমি রুহির সাথে লেখা পড়া করেছি৷ শুধু তাই নয় বেস্ট ফ্রেন্ড আমি ওর৷ তাই ওর সব কিছু জানি আমি৷ ও কিছুতেই এমন নিচ কাজ করতে পারেনা”৷
“এনাফ ইজ এনাফ আহিল,তোকে কে বলেছে আরুহিকে নিয়ে মাথা ঘামাতে৷ চলে যা এখান থেকে৷ কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার৷ ”
আহিল চলে যেতে নিবে এমনি ওর চোখ গেলো সোফার নিচে পরে থাকা মেমোরি কার্ডের দিকে৷আহিল এগিয়ে এসে মেমোরিটা হাতে নিলো৷
“ভাইয়া এই মেমোরি কী তোমার৷”
আদিল একটু ভালো করে দেখে বললো,,,
“নাতো”
“তোমার না তাহলে কার৷ ওয়েট দেখছি”৷ আহিল মেমোরি কার্ড ওর ফোনে ঢুকালো৷ তারপর গ্যালারীতে গেলো৷গ্যালারীর একটা ফটোতে চোখ আটকে গেলো আহিলের৷ একি এটাতো সোহানি আপু৷ছবিটা দেখে আদিলের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো৷
“হ্যা এটাতো সোহানি,বাট এই ছেলেটা কে??
আহিল ছেলেটাকে দেখে খাটে ফোনটা ছুঁড়ে মারলো৷
“কী হলো আহিল তুই এভাবে ফোনটা ছুড়ে মারলি কেনো??
“ভাইয়া এই ছেলেটা আমার ফ্রেন্ড রেহান৷ বাট রেহান সোহানি আপুর সাথে এতো ক্লোজ হয়ে কী করছে???
“এই ছেলে তোর ফ্রেন্ড কী বলছিস এসব৷ ওতো আরুহির বয়ফ্রেন্ড”
“ওহ সেটআপ ভাইয়া৷ আমি আগেও বলেছি আর এখনও বলছি রুহির কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই৷ যদি হতো তাহলে দুজনের মধ্যে একজনে হলেও বলতো৷ বাই দ্যা ওয়ে তোমায় কে বলেছে রেহান রুহির বয়ফ্রেন্ড৷”
“কেনো রেহান নিজে বলেছে৷”
“কী বলেছে”???
আদিল আহিলকে সব খুলে বললো৷ প্রমাণের কথাও বললো৷
“আচ্ছা আমি যতদুর জানি রেহান ক্লু দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে৷ ওকি তোমায় কোনো ক্লু দিয়েছে”??
“না ওতো আমায় কোনো ক্লু দেয়নি৷ তাছাড়াও রেহান কী বলেছে সবইতো তোকে খুলে বললাম”৷
“ভাবো ভাইয়া ভাবো৷ রেহানের সাথে চলা ফেরা করেছি আমি৷ তাই খুব ভালোভাবেই চিনি ওকে৷ ও এতো বড় মিথ্যা বলতে পারেনা৷ আই এম ড্যাম শিওর ওকে কেই বাধ্য করেছে মিথ্যা বলার জন্য৷”
আদিল কিছুক্ষণ ভেবে বললো,,,,
“রেহান আমায় যাবার সময় বলে গিয়েছিলো,,সব সময় আমরা যা দেখি তা সত্য হয়না৷ তাই যা করিই না কেনো ভেবেচিন্তে যেনো করি৷”
“বাহ্ ভাইয়া বাহ্ এই ছোট্ট কথাটি তোমার মাথায় ঢুকলো না৷ ভাইয়া তুমি রাগকে সব সময় প্রাধান্য দাও৷ তোমার উচিৎ ছিলো রুহির কথা শুনা৷ তুমিতো ওর কথা না শুনে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছো৷ আচ্চা ভাইয়া তুমি ওর গায়ে হাত তুলনিতো?৷(ভ্রু কুচকে)
“কেনো??
“না মানে রুহি আমায় সব সময় বলতো ওর নাকি মেয়েদের উপরে হাত তোলা একদমই পছন্দ নয়৷ ”
আহিলের কথা শুনে আদিল মাথা নিচু করে আছে৷ অনেক অনুশোচনা হচ্ছে তার৷
আদিলের মাথা নিচু করা দেখে আহিল যা বুঝার বুঝে গেলো৷ তারপর আদিলের কাধে হাত রেখে বললো,,
“ভাইয়া যা হওয়ার হয়ে গেছে৷ এখন আমাদের আরও ক্লিয়ার করে সব জানতে হবে৷ আমি রেহানকে কফি শপে ডাকছি তুমি রেডি হয়ে নাও৷”
চলবে,,,,,,,
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)