#Shadow_in_love
Part-12
#ফাবিহা_নওশীন
“আমাদের ভালোবাসায় নজর পড়ে গেছে।কালো ছায়ারা ভীড় করেছে।আমারই ভুল।সব ভুল আমার।ঝুকের মাথায় কিছু না ভেবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই।এর পরে কি হতে পারে।এর পরিনতি সম্পর্কে আমার ভাবা উচিত ছিলো।কি করে আমি এমন বোকামি করতে পারলাম?”
আরহান এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো।
আয়েশার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।যাকে ভালোবেসে সব জেনেশুনে তার লাইফে এসেছে।বিপদে আপদে এক সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছে সে বলছে বোকামি করে ফেলেছে।এটাও শুনতে হচ্ছে?
আয়েশা নিজেকে সামলে শক্ত গলায় বললো,
—–আরহান বিয়ে করেছেন আমাকে।বিয়ে ছেলে খেলা নয়।আপনি আমাকে চলে যেতে বলতে পারেন না।এটা এখন আমার বাড়ি।আমার এখানে থাকতে কোনো সমস্যা নেই।
আরহান আয়েশার সামনে এসে বিরক্তি নিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,
—–আমার আছে।তুমি সব গুছিয়ে নেও।আমি তোমাকে বাড়িতে ছেড়ে আসবো।এ দেশে বিয়ে হয় তেমনি বিয়েও ভাংগে।বিয়ে ভাংগা বড় ব্যাপার না।বুঝেছো?
আয়েশা আরহানের কথা শুনে জোরে জোরে কাদতে লাগলো।ওর হেচকি উঠে যাচ্ছে কাদতে কাদতে।
হাত জোর করে বললো,
——প্লিজ আরহান আমার সাথে এমন করবেন না।আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন।কত পাগলামি করেছেন।কতকিছু করেছেন আমাকে বিয়ে করার জন্য তবে আজ কেন?
—–সেটা আমি বুঝে নেবো।পরিস্থিতি আগের মতো এক নেই।অনেক বদলে গেছে।
আরহান কঠিন হওয়ার চেষ্টা করছে।আয়েশার এখানে থাকা মানে যেতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দেওয়া।আয়েশার সেফটির জন্য হলেও আয়েশার সাথে রুড হতে হবে।যাতে ও চলে যায়।
আয়েশা আরহানের সামনে বসে পড়ল।
—–আমি যাবোনা।
আরহান চিতকার করে বললো,
—–আয়েশা!!!!
আরহানের চিতকারে আয়েশা কেপে উঠলো।ওর চিতকারের প্রতিধ্বনি ফিরে আসছে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে।তবে আয়েশার হৃদয়ে গিয়ে লেগেছে আরহানের আয়েশা শব্দটা।আরহান ওকে আয়শু বলে ডাকে কিন্তু আজ আয়েশা বলেছে।
আরহানের মম ছুটে আসে।আয়েশাকে ফ্লোরে বসে কাদতে দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন।আরহানের চোখ মুখ গম্ভীর লাগছে।
আরহানের মম আয়েশাকে তুলে বললো,
—–আয়েশা মা কি হয়েছে?
আরহান কি হয়েছে?আয়েশা কাদছে কেন?ওকে কি বলেছিস?
আরহান চুপ করে আছে।মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।আয়েশা কাদতে কাদতে বললো,
—–মম আপনার ছেলে আমাকে চলে যেতে বলছে।উনি আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চায়না।কি বলছে উনাকে একটু বুঝান।আমি যদি সব মেনে নিয়ে সব পরিস্থিতিতে লড়াই করে উনার সাথে থাকতে পারি তাহলে উনি কেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিবে?
আরহানের মম আরহানের দিকে চেয়ে বললো,
—–আরহান তুই এসব বলেছিস ওকে?কি করে কাউকে কিছু না জানিয়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত নিলি?এর অধিকার তোর নেই।ও এ বাড়ির বউ।ও এখানেই থাকবে কোথাও যাবেনা।
আরহান না ঘুরেই গম্ভীরমুখে বললো,
—–আমি বাড়িতে ফিরে যেনো দেখি ও চলে গেছে নয়তো আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।ফাইলান।ডিসিশন ইস ইউরস।
আরহান হনহন করে চলে গেলো।
আয়েশা আরহানের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
চোখের পানি মুছে নিলো।আরহানের মম কিছু বলতে যাবে তখনই আয়েশা বললো,
—–আমি চলে যাবো মম।
—–আয়েশা কি বলছো তুমি? আরহানের সাথে তুমিও পাগল হলে?
—–কি করবো মম আমি? কি করবো?উনি কি বললো শোনেন নি?
আরহানের মা চুপ করে রইলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো।তারপর বললো,
—– ঠিক আছে।তবে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাবে।কিছুদিন বাবার সাথে সময় কাটাও।আমি দেখছি এদিকে কি করা যায়?এখানে সব ঠিক হলে তোমাকে নিয়ে আসবো।তুমি এ বাড়ির বউ।এটাই তোমার বাড়ি।তুমি আর আরহান কোনো পরিস্থিতিতেই আলাদা হবেনা।সব সময় এক সাথে থাকবে।
.
আরহান বাড়িতে ফিরে নিজের রুমে এলো।আয়েশা চলে গিয়েছে না আছে কিছুই জানেনা।কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছেনা।
আরহান বিছানায় বসে মাথায় হাত দিয়ে কিছু ভাবছে।তখনই ওর ফোনে একটা মেসেজ এলো।
আয়েশার মেসেজ।আরহান আয়েশার মেসেজ দেখে বুঝতে পারলো আয়েশা চলে গেছে।মেসেজ ওপেন করলো।
“আমি বাড়িতে চলে এসেছি,এর মানে এই না আপনার জীবন থেকে চলে গিয়েছি।মিস করলে চলে আসবেন ফিরিয়ে দেবোনা।নিজের খেয়াল রাখবেন।বেশি টেনশন করবেন না।ভালো থাকবেন।”
আরহান আয়েশার মেসেজ পড়া শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—–সরি আয়শু।তোমাকে দূরে রাখার কথা কখনো ভাবিনি কিন্তু পরিস্থিতিই এমন।কি করবো?
আরহানের কোনো কিছুতেই মন বসছেনা।কিছুই ভালো লাগে না।আয়েশার জন্য মন কেমন করে।ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে।কিন্তু নিজের মনকে দমিয়ে রাখে।বেহায়া মন তবুও মানতে চায়না।
আয়েশা রোজ ফোন করে আরহানের মায়ের কাছ থেকে সব খবর নিচ্ছে।আরহানের সাথে কথা হয়নি আর।আরহানের পুরো ফ্যামিলি এর সমাধানের পেছনে পড়ে আছে।
কেটে গেছে ৫-৬দিন।আয়েশা আজ নিজ হাতে পায়েস রান্না করেছে।ওর বাবা বই পড়ায় ব্যস্ত।আয়েশা চুপিচুপি ওর বাবার রুমে গিয়ে ওর বাবার টেবিলের উপরে এক বাটি পায়েস রেখে চুপ করে বসে থাকে।আয়েশার বাবা বইয়ের ভিতরে এমন ভাবে ঢুকে আছে কিছুই দেখেনি।কিন্তু তার নাকে মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের ঘ্রাণ আসছে।তিনি বইয়ে থেকে মুখ সরাতে বাধ্য হলেন ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ায়।তিনি টেবিলের উপরে চোখ রাখতেই দেখলেন পায়েস রাখা আর অপর পাশে আয়েশা কালো জামদানী শাড়ি পড়ে বসে আছে।
——আরে আমার রাজকন্যাকে আজ গিন্নী গিন্নী লাগছে।আমার জন্য পায়েস রান্না করে নিয়ে এসেছে।
আয়েশা নাক ফুলিয়ে বললো,
——কখনো রান্না করিনি বুঝি?
—–করেছো তবে আজ অন্য রকম লাগছে।শাড়িতে আমার মাকে পাকা গিন্নী লাগছে।
আয়েশা মিষ্টি করে হাসি দিলো।
আয়েশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে দু’হাতে কালো কাচের চুড়ি,চুলে খোপা করে ফুল গুজে দিলো।চোখে কাজল,ঠোঁটে গাঢ় করে লিপষ্টিক।কানে কালো স্টোনের এয়ারিং।তারপর বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে নিলো।
রোদ পড়ে গেছে।সূর্য ডোবার পথে।হেলে আছে পশ্চিম দিকে। যাকে বলে গোধুলি বেলা।আয়েশা ছাদের দোলনায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল।হালকা বাতাস বইছে।আয়েশা গোধূলির আলোমাখা আকাশপটের দিকে চেয়ে আছে।
হটাৎ গাড়ির শব্দ পেলো।শব্দটা ওদের বাড়ির নিচ থেকে আসছে।আয়েশার কানে শব্দটা মধুর শব্দের মতো বাজছে।আয়েশার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।ধীর পায়ে সিড়ি থেকে নেমে গেলো।
নিজের রুমে গিয়ে জানালার পাশে দাড়ালো।
কিছুক্ষণ পর ওর ঘরে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো।তবুও ঘুরে দেখার প্রয়োজন মনে করছেনা।আয়েশা ওর ঘাড়ে গরম নিশ্বাস অনুভব করলো।
তারপর মুচকি হেসে বললো,
—–আমি জানতাম আপনি আসবেন।
আয়েশা ঘুরে দাড়ালো।আরহান আয়েশার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো।আয়েশা ঘুরতেই একে অপরের কাছাকাছি ঘেষে রইলো।আরহান কিছুটা দূরে সরে আয়েশাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে।আয়েশার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।এতো কম সাজেও যে কাউকে এতোটা সুন্দর লাগে আয়েশাকে দেখার আগে জানতোনা।
আরহান আয়েশার দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
—–এতো সাজগোজ করেছো কিসের জন্য? কোথাও যাচ্ছো?
আয়েশা মিষ্টি হেসে বললো,
—–উহু,আমার বরের জন্য।
আরহান অবিশ্বাসের ভংগীতে বললো,
—–আমি তো বলিনি আমি আজ আসবো।ইনফ্যাক্ট কাউকে বলিনি।হুট করেই এসেছি।
—–কিন্তু আমি জানতাম আপনি আসবেন।আমার মন বলছিলো আজ আপনি আসবেন।তাই আমি….
আয়েশা মাথা নিচু করে নিলো।
আরহান আয়েশার কাছে গিয়ে ওর গালে নাক ঘষছে।আয়েশা শাড়ির আচল মুঠো করে ধরে আছে।তারপর আচমকা আরহানকে দূরে সরিয়ে দিলো।আরহান এভাবে সরিয়ে দেওয়ায় কিছুটা অপমানিত বোধ করলো।আয়েশার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
আয়েশা কাচুমাচু করে বললো,
—–আসলে আপনি কাছে এলেই কোনো না কোনো সমস্যা হয় তাই….
আরহান কিছুনা বলে ঘুরে রুমের দরজার দিকে যাচ্ছে।
—–চলে যাবেন না প্লিজ।
আরহান থেমে গেলো।আয়েশা আরহানের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বললো,
—–প্লিজ যাবেন না।আমার মন বলছিলো আপনি আসবেন।আমি আপনার জন্য পায়েস রান্না করেছি।আমার পছন্দের শাড়ি পড়েছি,সাজগোজ করেছি শুধু আপনার জন্য।আপনি আসার পর আপনার সাথে সময় কাটাবো একটু গল্প করবো তাই।কতদিন পর দেখা আমাদের।প্লিজ যাবেন না।
আরহান শুকনো হেসে বললো,
—–সরি নিজেকে সামলাতে পারিনি।আসলে তোমাকে খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে।এভাবে আমাকে মোহিত না করলেই পারতে।কি দরকার ছিলো শাড়ি পড়ার,সাজগোজ করার?
—–আমার হাসব্যান্ড আমাকে ছুতে পারবেনা বলে কি দূর থেকে তৃপ্তি মতো দেখতে পারবেনা?আমি আপনার জন্য সেজেছি।
এখন বসুন আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসি।
আয়েশা গিয়ে আরহানের জন্য পায়েস ছাড়াও বিভিন্ন খাবার নিয়ে এলো।আরহানকে খাইয়ে তবেই ক্ষান্ত হলো।
আরহান আর আয়েশা ছাদে দাড়িয়ে আছে।দুজনেই বাড়ির পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে।
—–জানিনা এভাবে আর কতদিন।তোমাকে খুব মিস করছিলাম তাই চলে এলাম।রাত হয়ে গেছে এখন আমার যাওয়া উচিত।বেশিক্ষণ থাকলে না জানি কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায়।এখানে তোমাকে আমার হাত থেকে সেভ করারও কেউ নেই।তাই আমার এখন যেতে হবে।আর তুমিও সাবধানে থাকবে।চলো নিচে চলো।
আরহান ওর শ্বশুর বাবা আর আয়েশার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।
যাওয়ার সময় বলে গেলো,
আয়েশা খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে নিয়ে যাবো চিন্তা করোনা।
আরহান আয়েশার হাতের পাতার উপরে চুমু খায়।
আয়েশা হাসি মুখে আরহানকে বিদায় দেয়।
আয়েশা ঘুমিয়ে আছে কিন্তু ওর মনে হচ্ছে ওর উপর কারো গরম নিশ্বাস পড়ছে।কেউ ওর কাছে।গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ভয়ে।আয়েশা ভয়ে ভয়ে পিটপিট করে চোখ মেললো আর তখনই একটা হাত ওর গলা চেপে ধরলো।
আয়েশা নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।ওর শ্বাস আটকে যাচ্ছে আর সেই হাতের বাধন আরো জোরালো হচ্ছে।
চলবে…..
Fabiha Nowshin