Shadow_in_love Part-1

0
4321

#Shadow_in_love

Part-1

#ফাবিহা_নওশীন

??
“বাচাও,ভূত!ভূত!”
মেয়েলী কন্ঠে এমন অদ্ভুৎ চিতকারে আরহান ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো।এই সন্ধ্যা বেলায় এখানে কে চিতকার করছে?তাও ভূত বলে!স্ট্রেঞ্জ!!

আরহান শব্দের দিকে কৌতুহল বশত আস্তে আস্তে এগুচ্ছে।কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা।হটাৎ ধপ করে কিছু পড়ার শব্দে ডান পাশে কিছু দূরে তাকালো।একটা মেয়ে পড়ে আছে।আরহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে আশেপাশে অন্য মানুষ আছে কিনা।আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলোনা।

“হোয়াট দ্যা হেল!কি ঝামেলায় পড়লাম?গড!”
আরহান না চাইতেও দাতে দাত চেপে মেয়েটির দিকে এগুলো।মেয়েটি উপুড় হয়ে পড়ে আছে।ফেস দেখা যাচ্ছে না।চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।সম্ভবত সেন্স হারিয়েছে।আরহান হাটু গেড়ে বসে অন্যদিকে চেয়ে হাত মেয়েটির দিকে বারবার আগাতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে।
অতঃপর মাথায় হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“এক্সকিউজ মি.হেই গেট আপ।”

বারবার ধাক্কা দিয়ে যখন কাজ হলো না তখন বুঝতে পারলো সেন্স নেই।আরহান মেয়েটিকে কোলে তুলে নিলো।তারপর নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।আরহান তখনো মেয়েটির মুখের দিকে তাকায়নি।

গাড়ির সিটে বসিয়ে দিলো।মেয়েটি হেলে পড়ে যাচ্ছিলো।আরহান তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে।মেয়েটির মাথা তুলে সিটে রাখতে গিয়ে মেয়েটির মুখের দিকে চোখ পড়ে।আর সেখানেই ওর চোখ আটকে যায়।অজান্তেই মেয়েটির মুখের উপর পড়ে থাকা চুলে হাত চলে যায়।আরহান হাত দিয়ে চুলগুলো সড়িয়ে দেয়।নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায় মাশাল্লাহ।এমন রূপবতী তরুণী এর আগে দেখেনি।সুন্দর সরু ভ্রু যুগলের মধ্যে দুটো বন্ধ চোখ।চোখের বড়বড় পাপড়িগুলো একে অপরের সাথে মিশে আছে।সরু নাক।গোলাপি ঠোঁটের নিচে কালো কুচকুচে একটা তিল।

আরহান গাড়ির বাইরে থেকে এক দৃষ্টিতে ওকে দেখে যাচ্ছে।হাতে পানির বোতল কিন্তু পানির ছিটা দিতে ইচ্ছে করছে না।যদি জেগে যায় তারপর যদি চলে যায়।
আরহান পানির বোতল নিয়ে গাড়ির বাইরে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

মনে করছে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।অফিসে নিজের কেবিনে যখন কাজ করছিলো তখন হাত লেগে হটাৎ মোবাইল পড়ে যায় ডেস্কের নিচে।আরহান মাথা নিচু করে হাত বাড়িয়ে মোবাইল তোলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই হাতরে ধরতে পারছেনা।কোনায় পড়ে আছে।তাই বিরক্ত হয়ে বললো,
—-ডেম ইট।আসছিস না কেন?

আর তখনই ফোন হুট করে ওর হাতে এসে পড়ে।আরহান এই কাহিনি দেখে বিস্ময়ে ডেস্কের নিচে থেকে উচু হতে ভুলে যায়।ওভাবেই রয়েছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।কি হলো এটা?প্যারানরমাল ঘটনা ওর চোখের সামনে।আরহান পলকহীন ভাবে মাথা তুলে ফোনের দিকে চেয়ে আছে।অতিরিক্ত কাজের প্রেশারে ভুল ভাবছে,ভুলভাল ঘটনা ঘটছে তাই গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে গাড়ি পার্ক করে নেমে যায়।তারপর একটা গাছের পাশে গিয়ে দাড়ায়।ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।আরহানের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।কিন্তু ওর মাথায় এখনো অফিসের ঘটনা ঘুরছে।কিছুদিন আগেও এসব ঘটেছে ওর সাথে।কিন্তু পাত্তা দেয়নি।বারবার এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায়না।মাগরিবের আজান পড়ছে।চারদিকে নীরবতা বিরাজ করছে।আর তখনই অদ্ভুৎ চিতকারে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।

সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত বাড়ছে।আরহানের মনে হচ্ছে এভাবে মেয়েটাকে সেন্স লেস অবস্থায় রাখা ঠিক হচ্ছে না।তাই বোতল থেকে পানি নিয়ে ছুড়ে মারে।কয়েকবার পানি ছিটানোর পর মেয়েটির চোখের পাতা নড়তে শুরু করে।তারপর কপাল কুচকে পিটপিট করে চোখ মেললো।চোখ মেলে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কোথায় আছে।নিজেকে একটা গাড়িতে আবিস্কার করে বিস্ময় নিয়ে বাইরে তাকাতেই আরহানকে দেখে।ওকে দেখেই চিতকার করে।
“বাচাও!একটা লোক আমাকে কিডন্যাপ করেছে।কে আছো?”

আরহান জোরে ধমক দিয়ে বললো,শাট আপ!ডোন্ট সাউট এনি মোর।

মেয়েটি সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলো।ঠোঁটে আংগুল রেখে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বসে রইলো।

আরহান কিছুক্ষণ অবাক চোখে দেখে বললো,
এখানে সেন্স লেস অবস্থায় পড়ে ছিলে।আমি তুলে গাড়িতে এনেছি।আমি কোনো কিডন্যাপার নই।আমি আরহান আহমেদ খান।
এভাবে স্টুপিডের মতো চিতকার করেছিলে কেন?

মেয়েটি মুখ থেকে আংগুল সরিয়ে বললো,
—-আমার নাম আয়েশা নূর।আমি এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এখানে এসেছিলাম।কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু ও আসেনি।আর তখনই গাছের ওপাশে কেমন শব্দ হচ্ছিলো আর তার উপর আজান দিচ্ছিলো।তাই ভাবলাম…

আরহান কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কি??

আয়েশা মুখে ভয়ার্ত ভাব এনে বললো,ভূত।

আরহান চোখ বড়বড় করে বললো,হোয়াট?ভূত!!

—-হ্যা ভূত।ওটা ভূত ছিলো।আমি শুনেছি আজানের সময় ভূতেরা ঘুরে বেড়ায়।

—-ইডিয়ট,ষ্টুপিড গার্ল।মাথা ভর্তি গোবর ছাড়া কিছুই নেই।আরহান তুই এই মেয়েকে দেখে ফিদা হয়েছিস?এই মেয়ে?যার মাথায় ছিটেফোঁটা বুদ্ধি নেই।শেম অফ ইউ।(মনে মনে)

—-এই মেয়ে তোমার ফালতু বকা শেষ হলে বলো তোমার বাসা কই?পৌছে দেবো।রাত হচ্ছে।

আয়েশা ভ্রু কুচকে আরহানের দিকে তাকালো।তারপর বললো,
—-আপনার সাথে কেন যাবো?আপনি ভূত তুত নয়তো?

—-হোয়াট!!

—-জ্বি আমি ভূতের মুভিতে দেখেছি ভূতেরা মানুষের রুপ নিয়ে মানুষের কাছে আসে।

আরহান বিরক্ত হয়ে বললো,
—-নামো।

—-মানে?

—-কানে শুনতে পাওনা?নামতে বলেছি।তুমি নামো আমার বাসায় যেতে হবে।তোমার সাথে ফালতু কথা বলে আমার টাইম নষ্ট করার মানে হয়না।সারাক্ষণ ভূত আর ভূত।

আয়েশা কাদো কাদো হয়ে বললো,
—-আপনি দেখছি সত্যি সত্যিই মানুষ নন।নয়তো এমন এক জায়গায় আমার মতো বাচ্চা মেয়েকে ফেলে যেতে পারতেন না।

—-কি আশ্চর্য,এই মেয়ে তুমিই তো একটু আগে বললে যাবেনা।

—-এখন বলছি যাবো।আমার অনেক ভয় লাগছে।এখানে আমাকে রেখে গেলে ভূতেরা আমায় খেয়ে ফেলবে।দেখেছেন কেমন জায়গা।গা ছমছম করছে।

আরহান মাথায় হাত দিয়ে বললো,
—-আবার ভূত?উফফ।আরেকবার ভূতের কথা বললে এখানে ফেলে রেখে চলে যাবো।

আয়েশা ভয়ে ভয়ে বললো,
—-ঠিক আছে আর বলবোনা।এই যে মুখে তালা দিচ্ছি।

আরহান কপালে বিরক্তি ফুটিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।আয়েশা আড়চোখে আরহানকে দেখছে।টল,স্মার্ট,স্পাইক করা চুল,ব্রাউন চোখ।ঠিক ব্রাউন না অদ্ভুত কালার চোখের মণির।ফর্সা গায়ের রং,চাপ দাড়ি।কিন্তু আরহানের এর আগে এমন চোখ দেখেনি।চোখের মণি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে।ভুতের গল্পে পড়েছে আর ভূতের মুভিতেও দেখেছে ভূতের চোখের মণি অন্যরকম হয়।আরহানের ভয় লাগতে শুরু করেছে।এই ছেলে ভূত নয়তো?
কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারছেনা।যদি বলার পর বড়বড় দাত বের করে ওর ঘাড়ে বসিয়ে দেয়।আর ওর সব রিক্ত চুষে নেয়।ভয়ে কেপেই চলেছে।আর মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে শুরু করলো।সব দোয়া দুরুদ এলোমেলো করে ফেলছে কিছু দোয়া ভুলেও গেছে।আয়েশার চোখে পানি চলে এসেছে।দরদর করে ঘামছে।

তখনই গাড়ি এসে থামলো ওর বাড়ির সামনে।
—-চলে এসেছি।

এই কথাটা আয়েশার কানে আসার সাথে সাথেই আয়েশা দ্রুত গাড়ির দরজা খোলে কোনোকিছু না বলে কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আরহান ওর কান্ডে অবাক হয়ে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।

—-স্ট্রেঞ্জ!!
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।

~~~~~

“এসো,এসো আরহান চলে এসো।আমার কাছে এসো।আমি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।হাত বাড়াও।আরহান হাত বাড়াও।”
সাদা পোশাক পরিহিত একটা অস্পষ্ট চেহেরার একটা মেয়েলি কন্ঠ কথাগুলো বলছে।তার হাতে সাদা কাঠি।
আরহান লাফিয়ে উঠলো।সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে।প্রায় ১বছর যাবত এ স্বপ্ন দেখছে কিন্তু এই স্বপ্নটা দেখার পর পর ই ঘুম ভেঙে যায়।আর দরদর করে ঘামে।
আরহান ঘড়ির দিকে তাকালো।৩টা বাজে।প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে ঠিক এই সময়ে ঘুম ভেঙে যায়।আর ফজরের আজানের আগে আর ঘুম আসবেনা।
এ স্বপ্ন প্রথম যখন দেখেছিলো তখন এ স্বপ্ন বিষয়ে মা-বাবাকে বলেছিলো।তাদের চেহেরায় আতংক দেখেছিলো।কারণ জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি।এর বদলে কতগুলো তাবিজ,ঝাড়ফুক নামক প্যারা পেয়েছিলো।

আরহান উঠে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো।অফিসের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে।আরহান আহমেদ খান অযথা সময় নষ্ট করে না।তার কাছে সময়ের মূল্য অনেক।

আরহান আহমেদ খান।বিশিষ্ট বিজনেসম্যান আশরাফ আহমেদ খানের একমাত্র ছেলে।বয়স ২৭বছর।পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস দেখছে।

কাজের ফাকে হটাৎ করে আয়েশার মুখ ভেসে উঠলো।ওর ষ্টুপিড কথা,কাজগুলো মনে পড়তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে।আরহান ল্যাপটপ রেখে বারান্দার রেলিঙ ধরে দাড়ালো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
“কে এই মেয়ে?কি নাম যেনো বললো আয়েশা নূর।আসলেই নূরের মতো।প্রথম দেখায় এতোটা মোহিত কেন হলাম?কি আছে ওর মধ্যে?”
ফজরের আজান কানে ভেসে আসছে।আরহান আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলো।

সকাল ৮টা।আরহান চোখ বন্ধ করা অবস্থায় হাত বাড়িয়ে এলার্ম-ঘড়ি নিয়ে
সেটা বন্ধ করে উঠে পড়লো।

~নাস্তার টেবিল~
—-গুড মর্নিং মম,গুড মর্নিং পাপা।

আশরাফ আহমেদ খান মুচকি হেসে বললো,
—–গুড মর্নিং মাই সান।

আরহানের মম সাদিয়া খানম ছেলের প্লেটে নাস্তা দিতে দিতে বললো,
—–গুড মর্নিং বাবাই।

“আয়শু,,আয়শু,,আরে নটা বাজতে চলেছে।মামনী উঠে পড়ো।”
চেচিয়ে আয়েশার বাবা ইশতিয়াক চৌধুরী বললো।
তারপর বিরবির করে বলছে,সারারাত হরর মুভি দেখবে আর বেলা পর্যন্ত ঘুমাবে।ভার্সিটি যেতে হবে সে খেয়াল মেয়ের নেই।

নটা বাজতে চলেছে এটা শুনেই আয়েশা লাফিয়ে উঠে।
“হায় আল্লাহ,নটা বেজে গেছে।আমার ক্লাস”
বাবা আমি উঠে গেছি,চেচিয়ে বাবাকে বললো।
তারপর কাবার্ড থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে দৌড়।

চলবে…

(একটু অন্যরকম ট্রাই করলাম।সম্পুর্ন কাল্পনিক।আমার কল্পনা।কেউ বাস্তবতা কিংবা লজিক দিয়ে বিচার করবেন না।ধন্যবাদ।আর হ্যা কেমন হয়েছে বলতে ভুলবেন না।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে