#seeing_with_you
Episode – 7
Writer – Zaira insaan
পায়ের উপর পা তুলে রিদানের সামনে বসে আছে মুরাক। রিদান চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলল,, কি হয়েছে আজ হঠাৎ এলি? মুরাক গলা ঝেড়ে বলল,, আমার দাদি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে! রিদান অস্থির হয়ে বলে,, তাহলে আবার এডমিট করাতে হবে মনে হয়। মুরাক বলে,, না, আমি চাচ্ছি একজন নার্স রাখতে সে সারাক্ষণ থেকে দাদির সেবা করবে। রিদান তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,, হুমম আমি ব্যবস্থা করছি। মুরাক নড়েচড়ে বসে। রিদান তার দিকে একগাদা ফাইল দিয়ে বলে,, এখানে সব নার্সের CV দেখতে পারস। মুরাক ফাইল গুলো ঠেলে বলে,, আমি ওই মেয়েটি কে রাখতে চাচ্ছি নাম টা কি যেন উম্ উম্ হ্যা “মুনতাহা তাসরিন মোমো”। রিদান ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,, ওকে দিতে পারবো না। মুরাক চমকে উঠে বলে,, কেন? রিদান গলা ঝেড়ে বলে,, এমনেই, এতো নার্স থাকতে তুই ওকে কেন বেছে নিলি তাও তার CV না দেখে? মুরাক চোখ উল্টে বলে,, ও দাদির ভালো সেবা করেছে তাই, তুই কেন এমন করছিস? বল, বল। রিদান মুচকি হেসে বলে,, পছন্দ করি আমি ওকে, মানে এক তরফা ভালোবাসা। মুরাকের চোখ ছানাবড় হয়ে যায় যেন চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম সে মাথায় হাত দিয়ে বলে,, একি তুই আবার ভালোবাসা টালোবাসাতে জড়িয়ে গেলি!হায় হায় আমার বন্ধুরে ভূতে ধরছে। রিদান চোখ সরিয়ে বলে,, চুপ কর বানর! আর আমি ওকে পাঠাতে পারবো না। মুরাক জোরে জোরে হাসতে হাসতে বলে,, কেন রে আমি তোর ভালোবাসা কে নিয়ে পালায় যাবো নাকি! চিল কর এমন কিছু হবে না। রিদান আশ্বাস নিয়ে বলে,, তাতো আমি জানি কিন্তু আমার তাকে প্রতিদিন দেখতে হয় যেন অভ্যাস হয়ে গেছে। মুরাক ব্রু উঁচু করে বলে,, ওহ আচ্ছা, ওয়েট! বলে মোবাইলে কি যেন একটা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর রিদানের সামনে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলল,, এটা মোমোর আইডি, ছবি ডাউনলোড করে তোকে পাঠাচ্ছি আর সে ছবি দেখে দেখে দিন পাড় করিস কেমন? রিদান মুখ ভেঙ্গ করে তারপরও কিছু বলে না হয়ত সে ভালো কাজ করছে। মুরাক কিছু বলতে যাবে এমন সময় মোমো কেবিনে ঢুকে পড়ে রিদান ও মুরাক তার দিকে ফিরে তাকায় সাথে সাথে রিদান মুচকি হাসি দেয় তাকে হাসতে দেখে মুরাক আস্তে করে বলে,, Bro, be control your feelings! তারপর রিদান নোরমাল হয় মোমো এগিয়ে এসে বলে,, স্যার ওই একটা রোগি আছে যে জাহানারা বেগম আন্টি ওনার জ্বর বেশি বেড়ে গেছে একটা পাউআর ফুল ঔষুধ লিখে দেন না! মুরাক অবাক হয়ে তাকায় এভাবে কেউ বলে নাকি আজীব মেয়ে! রিদান তাকে ঔষুধ লিখে দেয় আর কোন টাইমে খাবে সেটাও বলে দেয় মোমোকে চলে যেতে দেখে মুরাক রিদানকে কিছু বলতে যাবে এর আগেই মোমো তার দিকে ফিরে তাকায় সাথে সাথে সে চুপ করে যায় আর বিরক্ত সুরে বলে,, কি? তাড়াতাড়ি যাও নাহয় রোগি মরে যাবে। মোমো ভেংছি কেটে বলে,, যাচ্ছি আপনার বলতে হবে না হুহহ। বলে দরজা ঠেলে চলে যায় মুরাক বিরক্তিতে চোখ উল্টে ফেলে তারপর রিদানকে বলে,, তাহলে তাকে বলে দিছ। বলে উঠে দাঁড়ায় তারপর সে অফিস চলে যায়। রিদান এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে হেলান দিয়ে মোমো ছবি গুলো দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।
___________________________
দুঘন্টা পর মোমো রিদানের কেবিনে এসে বলে,, স্যার আমায় ডেকে ছিলেন? রিদান মোবাইল দেখে গম্ভীর মুখে বলে,, হুম। মোমো মনে মনে বলে,, আমি আবার কি করলাম? সে গিয়ে রিদানের সামনে দাঁড়ায় রিদান তার দিকে না তাকিয়ে বলে,, মুরাকের দাদি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মোমো মনে মনে বলে,, মানে কি আবার এখানে এডমিট করানো হবে নাকি? না না আমি আমার ঘুম আবার হারাম করতে পারবো না। রিদান আরো বলে,, তাই মুরাক এডমিট না করিয়ে পারমানেন্ট নার্স রাখতে চাচ্ছে। মোমো মনে মনে চিন্তা করতে লাগল,, মানে আমি যেটা ভাবছি সেটা হবে নাতো? প্লিজ প্লিজ আমি যেটা ভাবছি সেটা না হোক। রিদান তার দিকে তাকিয়ে বলে,, সে তোমাকে হায়ার করতে চাচ্ছে। মোমো এটা শুনার সাথে সাথে যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেটা ভাবছে সেটায় হলো সে ঢোক গিলে বলল,, না স্যার আমি পারবো না। রিদান ব্রু কুঁচকে বলল,, কেন? রোগির সেবা করা তোমার দায়িত্ব আর তুমি না বলছো এটা কেমন কথা? মোমো আর কিছু বলতে পারলো না মাথা নুয়ে শুনতে লাগল তারপর সম্মতি জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসল। তার চলে যাবার পর রিদান বিড়বিড় করে বলল,, না জানি তোমাকে না দেখে কিভাবে থাকব আমি। বলে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
মোমো রাগে গজগজ করে রাস্তায় হাঁটছে তার মোটেও ভালো লাগেনি রিদানের কথা গুলো জোরে জোরে পা ফেলে ফেলে হাটছে সাধারণত তার রাগ উঠলে এমনিই করে। তাকে এইভাবে হাটতে দেখে দূর থেকে আবির দেখে বলল,, মুন এইভাবে হাঁটছে কেন কি হলো তার সাথে? আমিতো তার সামনে যেতেও পারবো না গেলেই আস্ত গিলে ফেলবে আমায় হুহহ।
কিছুক্ষণ পর মোমো বাসায় পৌছে নিজের রুমের দরজা ঠেলে শাওয়ার নিতে চলে যায় তার এহেন কাজে ইভান ও রোকেয়া হা করে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর সে বেরিয়ে আসে রিল্যাক্স হয় সে সাথে সাথে বিছানায় লাফ মেরে এক গভীর ঘুম দেয়।
৩ ঘন্টা ঘুমানোর পর উঠে সে চিন্তা করতে লাগল,, আমার জন্য তো সুবিধা হলো এক আমার স্যালারি বাড়বে দুই সেখানে খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে পারবো তিন সেখানে পড়ালেখা করতে পারবো, তো আমি এতো রেগে যাচ্ছি কেন ওই খোচ্চরটার জন্য ধুর সে থাকবে নিজের কাজে আর আমি থাকবো আমার কাজে তো এতো কিসের চিন্তা রিল্যাক্স মোমো জাস্ট চিল! সবাইকে একবার বলে দেখা উচিত আমার। সে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায় তারপর তার বাবার রুমে যায় গিয়ে দেখে ইভান ও রোকেয়া সেখানেই বসে আছে সে গিয়ে তার বাবার পাশে বসল। আবরার হোসেন তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,, কি হয়েছে মা কিছু বলবে? মোমো এবার বলতে শুরু করল কথার শেষে আবরার হোসেন করুণ স্বরে বলেন,, ওহ আচ্ছা, তাহলে তুমিতো এখানে আসতেই পারবা না। “না আব্বু ছুটি নিলে তারা আমাকে ছুটি দিবে তো” ছোট ছোট চোখে বলে মোমো। আবরার হোসেন মুচকি হেসে সম্মতি জানালেন তারপর সবার দিকে তাকায় তার মা রোকেয়া মাথা নিচু করে সম্মতি জানায় কিন্তু ইভান মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় তার মানে এই কাজে সবার সম্মতি আছে। রাতে ঘুমানোর সময় তার মোবাইলে মেসেজ আসে চেক করতেই দেখে রিদান তাকে মুরাকের বাসার এড্রেস দিয়েছে মোমো মোবাইল অফ করে ঘুমোতে চলে যায়।
(চলবে)