#Rain_Of_Love ☔
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৭
তারিন ও শুভ্রা ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হলো। ভার্সিটিতে আসা মাত্রই আবির ও সিফাত দৌঁড়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো। শুভ্রা নাক মুখ কুচকে চোখ জোড়া সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে তাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—” কি হয়েছে সামনে আসলেন কেন?”
আবির তখন বলল…..
—” আরেহ বিয়ান সাব এখন কি দেখলেন সামনে আসার ? এখন থেকে তো আমরা আপনার সামনেই থাকবো প্রতিদিন। হাজার হোক বড় ভাইয়ের শালী বলে কথা।”
—” ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে পরে কথা বলবো।”
শুভ্রা ও তারিন যেতে নিলেই বাইক চালিয়ে তাদের সামনে আগমন ঘটে রোয়ানের। রোয়ান এসেই শুভ্রার সামনে দাঁড়িয়ে বলল……
—” সব সময় তো ক্লাস করতেই পারবে মিস শুভ্রা। আজ চলো কোথাও ঘুরে আসি।”
—” আমি কোথাও যাবো না সিনিয়র ভাইয়া অ্যান্ড বিয়াই সাহেব।”
—” তোমার জন্য সারপ্রাইজ গিফট রেখেছি শুভ্রা প্লিজ চলো।”
শুভ্রা তারিনের দিকে তাকিয়ে চোখে ইশারা করে বলল…..
—” ওকে চলুন বিয়াই সাহেব।”
রোয়ানের বাইকে তারিন ও শুভ্রা উঠেছে। সিফাতের বাইকে আবির। হাসি খুশি ভাবেই রোয়ান একটা বাসায় নিয়ে গেল। শুভ্রা ও তারিন ভয় পাওয়া সত্ত্বেও রোয়ান সিফাত ও আবিরের সাথে সেই বাড়িতে প্রবেশ করে। রুমের দরজার কাছে আসতেই রোয়ান পকেটে হাত দিয়ে বলল……
—” লেডিস ফাস্ট তাই তোমরা দুইজন দরজা খুলে ভিতরে যাও।”
তারিন ভয়ে ভয়ে ঢুক গিলে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে রইলো। শুভ্রা তারিনকে আশ্বাস দিয়ে বলল……
—” বিয়াই সাহেব এমন কিছু করবে না যার জন্য আমাদের কষ্ট করতে হবে তাই না বিয়াই সাহেব?”
—” অফকোর্স বিয়াইন।”
শুভ্রা ও তারিন দরজা খুলে ভিতরে পা রাখতেই বিভিন্ন রঙ মিলিয়ে দরজা ও উপরে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা পাত্রতে রঙ মিশানো পানি তারিন ও শুভ্রার পুরো শরীরে পরে গেলো। শুভ্রা ও তারিনের এই অবস্থা দেখে সিফাত,রোয়ান ও আবির হাসাহাসি শুরু করে দিলো। শুভ্রা ও তারিন রাগে গজগজ করতে করতে বলল….
—” এইটা কি করলেন আপনারা?”
রোয়ান তখন শুভ্রার চুল গুলো আলতো হাতে উপরে তুলে বলল……
—” রঙ খেলা হলো। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল বিয়ানদের সাথে রঙ খেলার আজ ইচ্ছা পূরণ হলো।”
আবির তখন ফোন বের করে বলল……
—” প্লিজ এইদিকে তাকাও পিক তুলি। আজ প্রচুর রিয়েক্ট হবে রে আমার আইডিতে।”
শুভ্রা ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে রোয়ানের হাত থেকে তার ব্যাগ কেড়ে নিলো। দরজা খুলার সময় রোয়ান শুভ্রা ও তারিনের ব্যাগ নিয়েছিল। শুভ্রা ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করলো। সিফাত রোয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল…….
—” বাহ বিয়াইন দেখছি আমাদের জন্য ট্রিট নিয়ে এসেছে। ওই চল খাওয়া যাক।”
সিফাত শুভ্রার হাত থেকে টিফিন বক্স কেড়ে নিয়ে বিছানায় বসলো। আবির ও রোয়ান সিফাতের পাশে বসলো। বক্স খুলার সাথে সাথে তেলাপোকা অনেকগুলো তাদের শরীরে উড়ে এসে বসলো। শুভ্রা ও তারিন কোমরে হাত রেখে হাসতে লাগলো। তারিন চিল্লিয়ে বলল……
—-” আজ সকালে শুভ্রা বেবি প্ল্যান করেছিল আপনাদের জন্য এই রকম একটি গিফট নিয়ে আসবে। আপনারা যখন বলেছিলেন আপনাদের সাথে এইখানে আসার জন্য তখন আমরা রাজি হয়ে গিয়েছিলাম এই জন্যই কিন্তু জানতাম না আপনাদের এমন বদ মতলব আছে।”
শুভ্রা তারিনকে ফ্লাই কিস দিয়ে রোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল……
—-“পরের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয় বিয়াই সাহেবরা। এখন বুঝেন মেয়েরা দুর্বল নয়।”
রোয়ান তখন শরীর ঝেড়ে শুভ্রাকে বলল……
—” ওই দেখো নিজের পায়ের দিকে।”
শুভ্রা পায়ের দিকে তাকাতেই চেঁচিয়ে উঠলো কেননা তার পা দিয়ে তেলাপোকা উপরে উঠছে…….
—-“কুত্তা বিলাই ইন্দুর রাম ছাগল অ্যানাকোন্ডা সাপের লেজ কুমিরের দাঁত হাবলা মাছ হাতির লেজ তোরা কিনা শেষমেশ আমার সাথে বেইমানি করলি ? তোদের এনেছি ওদের ভয় দেখানোর জন্য আর তোরা কি-না এই নাদান ইনোসেন্ট মেয়েটার সাথে এমন করলি, ভয় দেখাইলি দেখিস তোদের উপর খোদার গজব পড়বে টাটকা টাটকা ইন্দুর পড়বে অসভ্য তেলাপোকা। এই অসভ্য ছেলেদের গায়ে পড়ে এখন অসভ্য হয়ে গেছিস।”
শুভ্রার কথা শুনে রোয়ান হেসে দিল। শুভ্রার কাছে গিয়ে বলল…….
—” আরো কি এমন করবে মিস শুভ্রা?”
—” অবশ্যই এমন করবো। আপনি আমার সাথে এমন করলে আমি কেন করবো না হুম?”
—” ওকে তোমার যা ইচ্ছা করো। বাই দা ওয়ে তোমরা এখন কিভাবে বাড়িতে যাবে?”
শুভ্রা ও তারিন নিজেদের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গেল। চোখ নিচু করে ফ্লোরে তাকিয়ে রইলো……
—” সিফাত ফোনে এক্ষুনি ওদের দুইজনের জন্য ড্রেস অর্ডার কর। ওদের বাসায় যেতে হবে।”
সিফাত ফোনে ওদের জন্য পোশাক অর্ডার করে আবিরকে নিয়ে খাবার আনতে চলে গেলো। রোয়ান রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো। তারিন শুভ্রার কাছে বলল…….
—” ওদের যেমন খারাপ ভাবছিলাম তেমন খারাপ না ওরা।”
—” চুপ। ওরা আমাদের এমন করেছে এখন ওরাই ড্রেস কিনে আনছে। এইখানে ভালোর কি আছে?”
তারিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে বর্ণ ভাইয়া নাম দেখে শুভ্রাকে বলল……
—” তোর দেবদাস ভাইয়া ফোন দিয়েছে। ফোন কি রিসিভ করবো?”
—-” হ্যাঁ ফোন রিসিভ কর বাট বলবি না আমরা কোথায় ওকে।”
—” হুম।”
_______________________
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করা যে এতটা ঝামেলা জানা ছিলো না সাদিয়ার। ফরহাদ কে বিয়ে করে এখন জানতে ও বুঝতে পারছে খুব ভালো ভাবেই। শাশুড়ি মায়ের জন্য জোড় গলায় কিছু বলতেও পারে না সে।। আজ তিনদিন ধরে ক্রিম শেষ হয়ে গেছে কিন্তু ফরহাদকে বললে তার মনে থাকে না। রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার মনে হচ্ছে মাথায় ডিম ভাজি করলে নির্ঘাত হয়ে যাবে। সমস্ত রাগ নিজের কাছে বরণ পোষণ করে তারিনকে বলছে তার বর ও শাশুড়ি মায়ের কথা।
—” আপু তুই এখন তোর এইসব কথা বন্ধ করতো এমনিতেই অনেক ভিজে থাকার কারনে ঠান্ডা লাগছে।”
সাদিয়া ও তারিন দুই বোন। সাদিয়ার বিয়ে হয়েছে আট মাস হলো। যখনই বাড়িতে আসে তার স্বামী ও শাশুড়ির নামে বদনাম করে। এইতো কিছুদিন আগে কান্না করে বলেছে তার শাশুড়ি তাকে বলেছিল…..
—-” জানো সাদিয়া আমার বাবুটা ছোটবেলায় পাঙ্গাস মাছ খুব পছন্দ করতো এমনকি বিয়ের আগেও তার পাঙ্গাস মাছের ভাজি চাই চাই কিন্তু বিয়ের পর আমার বাবুটা পাঙ্গাস মাছ খেতে দিলে দূরে সরিয়ে রাখে কি যে কষ্ট হয় আমার । তুমি কি এমন করেছো আমার বাবুটার সাথে যার জন্য ও এখন পাঙ্গাস মাছ খায় না।”
শাশুড়ি মার আদুরে ভঙ্গিতে উনার ছেলের পাঙ্গাস মাছ নিয়ে বিশ্লেষণ করা শুরু করে দিয়েছে মাঝে মাঝে উদাহরণস্বরূপ কিছু বলছে।সাদিয়া শুধু কথায় কথায় হুম হুম করছে। কেননা সে পাঙ্গাস মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ফরহাদ পাঙ্গাস মাছ খেলেই সে ফরহাদের সাথে কথা বলে না। এই জন্য ফরহাদও পাঙ্গাস মাছ আর খায় না।
—” সাদিয়া আমার বাবুর জন্য একটা ডিম সিদ্ধ করে রেখো তো কত কাজ করে আসে আমার ছেলেটা।”
—” আপনার বাবু তো এখন ডিম খায় না মা। ওর না-কি ডিম খেলে বমি পায়।”
এইসব কথা নিয়ে সাদিয়া ও তার শাশুড়ি মায়ের প্রচুর কথার কাটাকাটি হয়। সাদিয়া এখন মনে মনে ঠিক করেছে তারিনকে সে যৌথ ফ্যামিলিতে বিয়ে দিবে। এক মায়ের এক ছেলের সাথে কিছুতেই বিয়ে দিবে না। তারিন এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে। মনে মনে দো’আ করে কবে তার বোন শ্বশুর বাড়ি যাবে। অবশ্য শুনেছে আর দুইদিন থেকে চলে যাবে।
রাতে বর্ণের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লো তারিন।
_____________
আবির, সিফাত ও রোয়ান আড্ডা দিচ্ছে। সিফাত আজ ট্রিট দিচ্ছে। সিফাত রোয়ানের সাথে বাজি রেখেছিল যদি আজকে শুভ্রাকে রঙ দিয়ে গোসল করাতে পারে তাহলে সে আজ রাতে ট্রিট দিবে।
—-” ব্রো এই বাজি তো জিতে গেলি এখন আরেকটা দেই নিবি। জানি এইটা শুনে ভয় পাবি তুই।”
—” আগে তো বলবি পরে বুঝা যাবে ভয় পাবো কি না?”
—” শুভ্রার সাথে প্রেম করতে পারবি? জানি মেয়েটা রাজি হবে না আর তুই হেরে যাবি।”
—-” শুধু প্রেম না ব্রো বিয়ে করে দেখাবো তোদের। ধরলাম বাজি।”
তিন বন্ধু আবারো খুশিতে মেতে উঠলো।
সময় যে কারো জন্য অপেক্ষা করে না এই জন্যই হয়তো রিয়া ও ইক্ষাণের বিয়ের সময় চলে আসলো। কিন্তু বিয়েতে খুব বড় সমস্যা হলো। সমস্যাটা হলো রোয়ানকে নিয়ে। রোয়ান শুভ্রাকে বিয়ে করবে বলে জেদ ধরেছে। রোয়ানের জেদের কাছে হার মেনে রোয়ানের বাবা উনার ছোট ছেলের জন্য প্রস্তাব পাঠালেন। শুভ্রার বাবা তো খুব খুশি এক বাড়িতেই তার দুই মেয়ে বউ হয়ে যাবে। উনারা রাজি হয়ে পড়লেন। প্রথম প্রথম শুভ্রা রাজি না থাকলেও বাবা মায়ের জন্য বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো।
চলবে……