Rain Of Love Part-04

0
2823

#Rain_Of_Love ☔
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৪

রিয়া তখন ইক্ষাণে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল…….

—-” ভালোবাসা হৃদয়ের একটি অনুভূতি। ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব করা। ভালোবাসা মানে কমিটমেন্ট। একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা। কখনও প্রিয় মানুষটির প্রতি অশুভ আচরণ না করা। ক্ষতি না চাওয়া। সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকা। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ার নামই ভালোবাসা। এ ভালোবাসা কালের মতো পরিবর্তন হবে না। সব সময় একই থাকবে। তবে এ ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা দিবসের জন্য নয়। সারা জীবনের জন্য। সুখে-দুঃখে সব সময় ভালোবাসা, মায়া দেখানো, কখনও বা আদর দেখানো আবার কখনো শাসনও করা।ভালোবাসা মনের একটি অনুভূতি। এ অনুভূতিটা কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। এ ভালোবাসা শুধু মানুষে মানুষে নয়। সব জীব ও জড়ের প্রতিও হতে পারে। তবে জীব জড়ের প্রতি যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তা হলো মনুষ্যত্ব। কিন্তু একজন মানুষ অন্য মানুষকে ভালোবাসতে হবে সেই ভালোবাসা থাকতে হবে নিখুঁত। যেখানে থাকবে সম্মানবোধ। কোনো প্রতারণা থাকবে না। আমি মনে করি, ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়। একদিনে দেখানোর মতো ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। প্রতিনিয়ত ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে হয়। কিন্তু এখন ভালোবাসা প্রেম ইত্যাদি নামে অনেকে এর খারাপ প্রভাব করছে তা কিন্তু আসলে ভালোবাসা না তা হলো চাহিদা যা সমাজকে খারাপ করছে। শুভ্রা হয়তো সেই ভালোবাসার কারণে সে এখন প্রেম ভালোবাসা বিশ্বাস করে না সে এইটাকে চায়না কোম্পানি নামে বলে। কিন্তু প্রেম ভালোবাসার মাঝেও পার্থক্য আছে। ভালোবাসতে হলে কখনো রূপ দেখে ভালোবাসা ঠিক না। খাঁটি মন ও বিশ্বাসের যোগ্য এমন একজনকে জীবন সঙ্গী হিসেবে নেওয়া উচিত। ইক্ষাণ ডোন্ট মাইন্ড আমি শুভ্রাকে কিছু বলতে চাই।”

—-” জানি কি বলবে। আমাকে কেন পছন্দ করেছ আমার মাঝে এমন কিছু নেই যা একজন মেয়ের ভালোবাসা পেতে পারে। কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো। রিয়া তুমি বলতে পারো।”

ইক্ষাণের কথা শুনে শুভ্রা মাথা নিচু করে ফেললো। রিয়া তখন বলল……

—” আমি যেমন মেয়ে আমার জন্য সুন্দর, হ্যান্ডসাম, বড়লোক ছেলের অভাব পড়বে না কিন্তু ভালো একটি মনের খুব অভাব পড়বে। কিছুদিন আগে ফেসবুক জোরে ট্রোল হলো দেখলি না স্বামী তার স্ত্রীকে খুন করেছে। মনে আছে প্রথম আমি তোকে শুধু ছেলেটির ছবি দেখিয়েছিলাম তুই তো দেখার সাথে সাথে ক্রাশ খেয়ে বসে ছিলি যখন বললাম ছেলেটা খুনি তখন কি বলেছিলি মনে আছে তোর?”

শুভ্রা উত্তর দিলো…….

—” বলেছিলাম সুন্দর মুখের আড়ালেই শয়তান লুকিয়ে থাকে। কিন্তু এই বলে সব সুন্দর ছেলেরা কি খারাপ?”

—-” আরেহ গাঁধী সবাই খারাপ হতে যাবে কেন? কালো, ফর্সা, লম্বা, খাটো, চিকন ও মোটা সবার মাঝেই খারাপ ভালো আছে। কিন্তু আজকাল ছেলে মেয়ে ফর্সা বা হ্যান্ডসাম বা কিউট বা হট লকিং না হলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এইটা খুব অন্যায়। চেহারা সৌন্দর্য মহান আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন এই নিয়ে অহংকার বা কষ্ট পাওয়ার অধিকার কারো নেই। আল্লাহ তায়ালা বুঝে শুনেই সবাইকে তৈরি করেছেন।”

—” তারমানে ভালো বাসতে হলে সুন্দর কালো না দেখে ভালো মানুষ অনুযায়ী ভালোবাসতে হবে?”

—” হুম এইতো লক্ষ্মী বোন আমার কি সুন্দর বুঝে গেল।”

শুভ্রা ইক্ষাণের কাছে সরি বলল। ইক্ষিণ মজার ছলে সব উড়িয়ে দিলো।

চারজন মিলে অনেক ঘুরাঘুরি করে বিকালে বাসায় চলে গেল।

____________________

বর্ণ রাতে রিয়া আর শুভ্রার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডা করার মূল কারণ তারিন সম্পর্কে কিছু জানতে পারা তারিনের ব্যাপারে কিছু বলা। শুভ্রা খাটের মাথায় বালিশ লম্বা করে দিয়ে অর্ধেক শুয়ে থাকা অবস্থায় বই পড়ছিল। রিয়া চেয়ারের উপর পা তুলে পড়ছে। বর্ণের কথায় শুভ্রা ও রিয়া পড়া থেকে অমনোযোগী হয়ে বর্ণের কথায় মনোযোগ দিলো।

—-” শুভ্রা তারিনের কি রিলেশন আছে?”

শুভ্রা চেহারায় বিরক্ত ভাব এনে বলল…..

—” প্রতিদিন এক কথা বলতে ভালো লাগে না আমার। তারিনের রিলেশন থাকুক আর না থাকুক তোর কি হুম?”

—-” ওহ আচ্ছা তার মানে নেই। এইভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন আজব।”

—-” ফাজিল পোলা সব সময় এক কথা শুনতে কার ভালো লাগে? আচ্ছা তোর কি খারাপ লাগে না এক কথা প্রতিদিন রিপিট করা?”

রিয়ার কথায় ভাবনাহীন ভঙ্গিতে উত্তর দিলো বর্ণ……

—” বিরক্ত লাগে কি আর জিজ্ঞাসা করতাম? আচ্ছা তোরা পড়ালেখা কর আমার কাজ আছে আমি যাচ্ছি।”

বর্ণ রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে শুভ্রা দৌড়ে দরজা লাগিয়ে দিল। রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলো…….

—” এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই কখন কিভাবে চলে আসতে পারে জানতেও পারবো না।”

—” যাই বলিস শুভু ভাইয়া কিন্তু তারিনকে খুব লাভ করে।”

—” ভাইয়া শেষমেশ এই পেত্নীকে পছন্দ করলো পৃথিবীতে মেয়ের খুব অভাব ছিল বুঝলি রে আপু।”

—” ফাইজলামি বাদ দিয়ে পড়তে বোস।”

—-” হুহহহ।”

_____________________

রুমের ভেতর একা একা পায়চারী করছে রোয়ান। কিছুক্ষণ আগে বাবার অনেক গালি খেয়ে পেট ভরে গেছে তার। এই একটা মানুষ যাকে রোয়ান বাঘের মত ভয় পায়। পায়চারি করছে আর হাত কামড় দিচ্ছে। যখন খুব টেনশনে থাকে রোয়ান তখন এই কাজটা করে সে।

চিন্তার কারণ রোয়ান তার বাবাকে বলেছিল সে ঘুরতে যাবে টাকা দেওয়ার জন্য কিছু রোয়ানের বাবা টাকা দিতে নারাজ সেই জন্য টেনশনে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আছে তার। হটাৎ মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এটে নিলো রোয়ান………..

পরেরদিন………

বাড়ি থেকে পালিয়ে দৌড়ে রাস্তার মোড়ে যাচ্ছে রোয়ান। ভোর সকালে বাসায় কাউকে কিছু না বলে পালিয়েছে সে। হাতে একটা লাগেজ। রাস্তার ধারে এসেই লাগেজটা রাস্তা রেখে ওর বন্ধু আবিরকে ফোন দিলো……

—-” আব্বে হালা তাড়াতাড়ি আয়। আমার আব্বা এক্ষুনি চলে আসবে পরে আর আমার ঘুরতে যাওয়া হবে না।”

ফোনের ওপাশ থেকে ঘুম মাখা কন্ঠে আবির বলল…..

—” সরি আপনি যে নাম্বারে ফোন দিয়েছেন তা এখন বন্ধ আছে কিছুক্ষণ পর কল করুন ধন্যবাদ।”

—” আবিরের বাচ্চা একবার খালি তোরে সামনে পাই তাহলে আমার জুতা তোর গাল মনে রাখিস শালা তাড়াতাড়ি আয় বলছি। দশ মিনিটের ভিতর না আসলে তোরে খুন করবো বলে দিলাম।”

খুনের হুমকি পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে ফোন নাম্বার চেক করলো। রোয়ানের ফোন নাম্বারটা দেখে ভয়ে ঢুক গিলে বলল…….

—-” এই শোন শোন রোয়ান।”

আবির কিছু বলতে যাবে রোয়ান ফোন কেটে দিলো। এত ভোরে মানুষজন রাস্তায় কমেই পাওয়া যায়। তাই রোয়ান মেয়েদের স্কার্ফ মাথায় পেঁচিয়ে টং দোকানের সাথে বসার জায়গা গুলোতে বসে রইলো। পালিয়ে আসার সময় যখন ব্যাগ গুচাচ্ছিল তখন স্কার্ফটি চোখে পড়ে। এই স্কার্ফ শুভ্রার। বাস থেকে নামার সময় ভুলক্রমে স্কার্ফ ফেলে চলে যায়। দেখেই বুঝা যাচ্ছে স্কার্ফ একদম নতুন মাত্র কিনে এনেছে। শুভ্রার সেই স্কার্ফ এখন রোয়ান মাথায় দিয়ে বসে আছে।

—-” আবিরের বাচ্চা যদি দশ মিনিটে না আছিস তাহলে আজ জুতা পেটা করবো তোকে।”

রোয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে গজগজ করতে করতে নিজের পায়ের দিকে তাকালো……

—-“ওহ গড এইটা কি করলাম আমি? পালানোর জন্য শেষমেশ দুইটা দুই কালারের জুতা পরে আসলাম। এখন যদি রাস্তায় আমায় কেউ দেখে নির্ঘাত পাগল ভাববে। সব দোষ আমার আব্বার। বলছি ঘুরতে যাবো কিন্তু দিবে না তাইতো পালিয়ে আসছি। এখন যখন বাসা থেকে টাকা ও ছেলে কাওকেই খুঁজে পাবে না তখন দেখবো কাকে এত শাসন ও বকা দেয় আব্বু?”

আবিরের জন্য ওয়েট করছে রোয়ান। সাতাশ মিনিট পর আবিরের গাড়ি এসে হাজির। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে আবিরকে বলল ব্যাগ গাড়িতে উঠাতে…..

—-” আমি কি তোর চাকর না-কি যখনি যা বলবি সব শুনবো।”

—” দোস্ত দেখ দুই কালারের জুতো পরে আসছি প্লিজ ব্যাগ উঠিয়ে গাড়ি স্টার্ট দে। সিফাতের কাছে যাবার আগে শপিং মলে যেতে হবে। জুতো না কিনলে মান সম্মান আর কিছুই থাকবে না।”

আবির ব্যাগ পত্র গাড়িতে তুলে প্রথম শপিং মলে গেল। রোয়ান তার জুতোর মাপ ও কি ধরনের জুতো পরে ডিটেলস বলল। আবির জুতো কিনে আনলো। সিফাতের বাসা থেকে ড্রপ করে তারা ঘুরতে বের হলো……..

চলবে……………
________________________

বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে