#pyar_tho_hona_hi_tha❤
লেখা- পূজা
পর্ব- ৬
।
।
সেই কখন থেকে আরশি এই রুমের থালাটা খুলার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যার্থ হচ্ছে। একটা ক্লিপ থালার ভেতর ডুকিয়ে মুচরাচ্ছে বাট খুলছে না। রুমে অনেক খুজেছে চাবিটা পায় নি। তাই এই আইডিয়াটা মাথায় এলো। কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। নিলয় একটা মিটিং এ আছে তাই আরশি কি করছে তা দেখতে পারছে না। আর সার্ভেন্ট নিচে কাজ করতে ব্যাস্ত। এই জন্য আরশি এই সুযোগটা পেলো।
আরশি:উপপপপ। এই থালা কি দিয়ে তৈরি। খুলছে না কেনো? ধুর! এইভাবে তো অনেকদিন থালা খুলেছি। আর একদিন তো বাসা থেকেও পালিয়েছিলাম।
পালানোর কথা মনে হতেই ওর নিরব এর কথা মনে পরে গেলো। নিরব এর জন্যই তো পালিয়েছিলো কিন্তু ওর বাবার লোকেরা ওকে ধরে নিয়ে আসে আর জোর করে নিলয় এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। আর থালার পিছনে টাইম উয়েষ্ট না করে রুমে চলে গেলো আরশি। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে। নিরব এর সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো খুব মনে পরছে। নিরব এর সাথে ভার্সিটি
ফাকি দিয়ে ঘুরা ফুসকা খাওয়া। আরশিই হয়ত প্রথম মেয়ে যার ফুসকা পছন্দ ছিলো না। বাট নিরব এর খুব পছন্দ ছিলো। নিরব এর জন্য আরশিকে ফুসকা খেতে হতো। নদীর পাড়ে নিরব এর কাধে মাথা রেখে কতো গল্প করেছে। এসব মনে হচ্ছে আর কাদছে আরশি। খুব ভালোবাসতো আরশি নিরবকে। এখনো বাসে। আগে ১দিন নিরবকে না দেখে থাকতে পারতো না। আর এখন পুরো ৩মাস ধরে নিরবকে দেখে না।
আরশি বালিশে মুখ গুজে কাদছে। সামনে তাকাতেই বেডসাইড টেবিলে নিলয় এর একটা ছোট ছবি দেখতে পেলো। চোখে সানগ্লাস পরা। পকেটে হাত দিয়ে দারিয়ে আছে। চাপ দারিতে নিলয়কে একটু বেশিই কিউট লাগছে। আরশি এখনো নিলয়কে ভালো করে দেখে নি। কখনো তাকায় নি ভালো করে। তাকানোর প্রয়োজন ও মনে করে নি। আরশি চোখ মুখে বিছানা থেকে উঠে ছবিটা হাতে নিলো। আর ছবির দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকলো। নিলয়কে দেখে ওর কেনো জানি আজ খুব চেনা চেনা লাগছে। এর আগে ও দেখেছে এমন মনে হচ্ছে।
আরশি:নিলয় নামে তো আমি
কখনো কাউকে চিনতাম না। তাহলে উনাকে আমার এত পরিচিতো কেনো মনে হচ্ছে।
আরশি ছবিটা হাতে নিয়েই বিছানায় বসে পরে। আর ভাবতে থাকে সত্যিই নিলয়কে কখনো দেখেছে কিনা। কিন্তু কিছুতেই কিছু মনে করতে পারছে না।
নিলি বাসায় এসেই তীব্রর কথাগুলো ভাবতে থাকে। এসব কি বলেছে তীব্র? সত্যিই কি ও তীব্রর থেকে দুরে থাকার জন্য যেথে চাইছিলো না? তাহলে কি তীব্রর কথাই ঠিক? এসব ভাবতে ভাবতে নিলি ফোন হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ডুকলো। তীব্র নিলিকে অনেক আগেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাটিয়েছে। বাট নিলি তীব্রর আইডি ছোয়ে ও দেখে নি। আজ নিলির তীব্রর আইডিতে ডুকতে ইচ্ছে করছে। এতকিছু না ভেবে তীব্রর টাইমলাইনে ডুকে পরলো। প্রথমেই তীব্রর একটা হাস্যজ্জল ছবি সামনে এলো। তীব্র হাসলে এক গালে ছোট্ট একটা টুল পরে যার জন্য হাসিটা আরো বেশি মিষ্টি দেখায়। নিলি তীব্রর ছবিটা জোম করলো। তীব্রর ঠোটের ডান দিকে একটু উপরে ছোট্ট একটা তিল। এতে একটু বেশিই কিউট লাগছে। এইভাবে তীব্রকে কখনো দেখা হয়নি নিলির। ছবিতেই তীব্রকে দেখতে নিলির কেমন জানি একটা লজ্জা লাগছে। সরাসরি কখনই এভাবে দেখতে পারবে না। কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিলি বেরিয়ে আসলো এফবি থেকে।
নিলি:ওহো নিলি। তুই উনার কথা এত ভাবছিস কেনো? উনি কি বললো না বললো এটা নিয়ে এত ভাবার কি আছে। এসব ভাবা বাদ দে আর পরতে বস। তুই একদম ভালোবাসিস না উনাকে। ডোন্ট ওরি। আর তুই উনার ছবির দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েছিলি কেনো? ছিঃ ছিঃ একটু ও লজ্জা করলো না তর একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কি নির্লজ্ব😒।
একা একাই এসব কথা বলছে আর বই এর পাতা উল্টাচ্ছে নিলি। যে কেউ এখন ওকে দেখলে পাগল বলবে।
হঠাৎ কোথা থেকে নিলয় এসে আরশিকে বিছানা থেকে টেনে উঠিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। হঠাৎ এমন হওয়ার আরশি ভয় পেয়ে যায়। কিছুই বুঝতে পারে না নিলয় এরকম বিহেভ কেনো করলো। আরশি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে নিলয় এর মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখ ও লাল।
আরশি ভয়ে তুতলিয়ে বললো,”এএএটা কককি করছেন?”
নিলয়:তোমার সাহস কি করে হয় থালা খুলার চেষ্টা করার। আমি তোমাকে বলেছিলাম না ঐ রুমের আশে পাশে ও না যেথে।😡(চিল্লিয়ে)
আরশি নিলয়ের ফেইস দেখে আর ভয়েস শুনে ভয়ে কাপছে কোনো কথাই গলা দিয়ে বের হচ্ছে না। নিলয় আবার চিৎকার করে বললো,”কি হলো বলো। বলেছিলাম কিনা।”
আরশি শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
নিলয়:তাহলে কেনো এই দুঃসাহস দেখিয়েছো। স্পিক আপ। আমার কথা অমান্য করার সাহস কি করে হলো তোমার😡।
আরশি ভয়ে শুধু কাপছে। কিছু বলতে পারছে না। নিলয় আবার বললো,”খুব সাহস হয়েগেছে না তোমার। কিছু বলি না বলে। আমার কথা অমান্য করার জন্য তো তোমাকে শাস্ত্রি পেতেই হবে। সেকেন্ড বার এত সাহস দেখানোর আগে ২বার ভাববে।”
আরশি:সরি আর হবে না। আমার লাগছে ছারুন প্লিজ।(তুতলিয়েবললো)
নিলয় আরশির হাত রেগে একটু বেশিই জোরে চেপে রেখেছে। আরশি ব্যাথা পেয়ে কেদে দেয়। কখনো কেউ এভাবে ওকে হার্ট করেনি। আরশির চোখের জল দেখে নিলয় আরশিকে ছেড়ে দেয়। হাতে ৫আঙ্গুল এর দাগ বসে গেছে। আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পরে নিলয়। আরশি হাত ধরে নিচে বসেই কাদতে থাকে।
আরশি:উনি আমার সাথে এত খারাপ বিহেভ করতে পারলেন😭ভালোভাবে বললেই হতো আমি আর যেথাম না। কিন্তু….. বাপি আমার সাথে কেনো এমন করলে? কেনো আলাদা করলে নিরব এর কাছ থেকে। আমার সুখের জন্য করেছিলে। তাইনা? দেখে যাও তোমার মেয়ে কত সুখে আছে।
আরশি এসব বলছে আর নিচে বসেই কাদছে। নিলয় ঐ রুমের থালা খুলে রুমে ডুকলো। নিলয় এর চোখ থেকে ও এক ফোটা পানি পরলো।
আরশি ওয়াশরুম থেকে চোখ মুখ ধুয়ে এলো। কাদতে কাদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আরশি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নিলয় কোথায় আছে দেখতে। হঠাৎ এমন বিহেভ কেনো করছে তা জানতেই হবে। আরশি আবার নিলয়কে সেই রুমের ভেতরেই পেলো। কারন রুমে থালা নেই। এখন আরশির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। নিজে রুমে সারাদিন বসে থাকতে পারবে। আর আরশি গেলেই দোষ। কি এমন আছে এইরুমে। যা আরশি দেখতে পারবে না।
আরশি:আজ না হয় কাল জেনেই ছারবো। এই রুমে কি আছে। আমার জেদ সম্পর্কে আপনার কোনো আইডিয়া নেই মি.নিলয় চৌধুরি।আপনি আজ আমাকে হার্ট করে আমার আরো জেদ বারিয়ে দিয়েছেন।
তীব্র বিছানায় বসে বসে ল্যাপটপে টিকিট বুক করছে। ৪টা বড় বড় বাস নিয়েছে তাদের জন্য। আর একটা বাস নিয়েছে টিচার্স এর জন্য। কে কোন সিটে বসবে সেটাই ঠিক করছে তীব্র। ৪টা বাসে ৮জন গাইড। প্রত্যেক বাসে ২জন করে। টিকিটের মাঝে নাম ও লিখে রাখছে। যাতে কেউ পাল্টাপাল্টি করতে না পারে। তীব্র কাজ করছিলো তখনি তীব্রর মা রুমে ডুকেন। একবার মাথা তুলে ওর মায়ের দিকে তাকায় তারপর আবার কাজে মন দেয়। তীব্রর মা তীব্রর এই আচরনে খুবই বিরক্ত হন। তিনি গিয়ে তীব্রর পাশে বসেন।
তীব্রর মা:তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।
তীব্র:বলো। শুনছি।
তীব্রর মা:আমি জানি তোমার এখনো বয়স হয় নি। তুমি পড়াশুনা করছো। পড়াশুনা কমপ্লিট করতে আরো অনেক টাইম লাগবে।
তীব্র:এত পেচিয়ে কথা বলছো কেনো? যা বলার ডিরেক্ট বলো।
তীব্রর মা:নেহা আর তোমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।
তীব্র:উয়াটটট?
তীব্রর মা:নেহার বাবা ফোন দিয়েছিলেন। উনি এই দেশ ছেড়ে ইউএস চলে যাবেন। বাট নেহা যেথে চাচ্ছে না। ও তোমাকে ভালোবাসে। তাই নেহার বাবা চাচ্ছেন নেহাকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে ইউএস যেথে। কারন ২/৩বছর এর মধ্যে উনি এখানে আসতে পারবেন না। আর নেহাকে ও এইভাবে একা রেখে যেথে পারবেন না। কারন ও বলেছে তোমাকে ছেড়ে যাবে না।
তীব্র অবাক হয়ে বললো,”নেহা আমায় ভালোবাসে? কোথায় ও তো আমাকে কখনো বলে নি।”
তীব্রর মা:আমাকে বলেছে। তোমাকে বলার সুযোগ পায় নি। যাই হোক আমরা সবাই চাই ওর বাবা চলে যাওয়ার আগে তোমার আর নেহার বিয়েটা দিয়ে যেথে।
তীব্র:ইমপসিবল। আমি নেহাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না। তাও এত তারাতারি।
তীব্রর মা:আমি তোমার অপিনিওন নিতে আসি নি। শুধু বলতে এসেছি।
তীব্র:কিন্তু মা……
তীব্রর মা:আমি যা বলেছি তাই হবে। নো এক্সকিউজ।
এটা বলেই তীব্রর মা চলে যান। তীব্র শুধু অবাক হয়ে ওর মার যাওয়া দেখছে। ও জানে,, না বললেও ওর মা শুনবেন না। উনি একবার যা ঠিক করেন তা করেই ছারেন। কারো কথা শুনেন না। তীব্র এখন কি করবে বুঝতেছে না। কিভাবে নেহাকে বিয়ে করবে। ও তো নিলিকে ভালোবাসে। কিন্তু এদিকে নিলি তো হ্যা বলেনি।
তীব্র:নো নো। আমাকে নেহার সাথে কথা বলতে হবে। এটা কিভাবে পসিবল।
তীব্র এত কিছু না ভেবে ল্যাপটপটা অফ করে নেহাকে ফোন দিলো। একবার ফোন দিতেই নেহা ফোন রিসিভ করলত।
তীব্র:হ্যালো নেহা।
নেহা:হ্যা বলো।
তীব্র:তুই এসব কি বলেছিস মা আর আংকেলকে।
নেহা:কি বলেছি?
তীব্র:তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস।
ওদিক থেকে কোনো কথা আসছে না। তীব্র আবার বললো,”কি হলো বল।”
নেহা:হ্যা তীব্র আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না তাই বাপিকে বলেছি সব। আমি পারবো না ইউএস যেথে।
তীব্র:এনাফ নেহা। আমি কি তকে কখনো বলেছি ভালোবাসি। আমি শুধু তকে খুব ভালো ফ্রেন্ড ভেবে এসেছি। আর তুই….. আমি তকে বিয়ে করতে পারবো না। মা আমার কথা শুনবে না। তকেই এই বিয়েটা আটকাতে হবে।
নেহা:এটা কি বলছো তীব্র। আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
তীব্র:আমি তকে ভালোবাসি না। নিলিকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে পসিবল না।
নেহা:উয়াটটটট!! নিলি কে?
তীব্র:চিনবি না তুই। তুই প্লিজ বিয়েটা আটকা। আমি পারবো না তকে বিয়ে করতে। কোনোভাবেই না।
নেহা:তীব্র তুমি আমার সাথে এটা করতে পারো না। কে এই নিলি যার জন্য আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো। ও কি আমার থেকে ও বেশি সুন্দর?
তীব্র:জাস্ট স্টপ নেহা। আমি নিলির রুপ দেখে ওকে ভালোবাসি নি। তর সাথে এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তুই শুধু বিয়িটা বন্ধ কর তাতেই হবে।
এটা বলেই তীব্র ফোন কেটে দেয়। আর ভাবে নেহা বিয়েটা বন্ধ করবে কিনা। তীব্রর এখন নিলির সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। তীব্র ল্যাপটপটা অন করলো। ওর পাশেই নিলির সিটটা রাখলো। এক সপ্তাহের জন্য ওরা সিলেট যাচ্ছে। তীব্রর কাছে ৭দিনই সময় আছে। এর মধ্যেই নিলির মুখ থেকে হ্যা বের করতে হবে। নয়ত ওর মা জোর করে হলে ও বিয়ে দিয়ে দেবেন। নেহার উপর তীব্র পুরোপুরি বিশ্বাস রাখতে পারছে না। আর তীব্রর মা যা রাগি আর জেদি নেহার কথা শুনবেন বলেও মনে হয় না। হঠাৎ যে এমন কিছু হবে তীব্র ভাবতে ও পারে নি। তীব্র তো ভাবতেছিলো সিলেট গিয়ে কিভাবে নিলির আশেপাশে থাকা যায়। কিভাবে ওকে মানানো যায়। নিলি ও ওর মায়ের মতই ঘাড় তেড়া জেদি। তীব্র মাঝে মাঝে ভাবে ২জন জেদি মানুষকে এক সাথে সামলাবে কিভাবে ও।
।
।
চলবে?🙄