প্রত্যাখান_পর্ব(০৩)
রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
লাবণ্যর সঙ্গে আমার সেভাবে কখনো চোখাচোখি হয়নি। আমি যখনই ওর চোখের দিকে তাকাতাম তখনই ও চোখ ফিরিয়ে নিত। আবার আমি যখন এদিক ওদিক তাকাতাম তখন ও আমার দুই চোখে বিচরণ করত। আমি আড়চোখে দেখতাম। কখনো ধরা পড়ে যেত। কিছুক্ষণের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছালাম। নদীর পাড়ে কোলাহলমুক্ত একটি জায়গায় গিয়ে বসলাম। কাটালাম স্বপ্নময় একটা দিন। এভাবেই অতিবাহিত হলো অনেকগুলো দিন। সেদিন বিষণ্ন মনে শুয়েছিলাম বিছানায়। মা এসে পাশে বসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করেন, কিরে! এই অবেলায় শুয়ে আছিস যে? শরীর খারাপ? মাথা নেড়ে না-বোধক জবাব দিলাম। মা আমার আরো কাছে এসে হাতটা ধরলেন। প্রশ্ন করলেন, তাহলে মন খারাপ? মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। জবাব দিতে পারলাম না কোন। তথাপি মা আমার নিরবতার ভাষা বুঝে নেন। বুঝে নেন বিষণ্ণতার কারণ। পরদিন কাঁধে ব্যাগ আর লাগেজ হাতে সবার থেকে বিদায় নিয়ে লাবণ্যর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার চলে যাওয়ার কথা আগের দিন রাতেই সে শুনেছিল। এখন তাই বারান্দায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে সে। লাবণ্যর কাছে গেলাম আমি। ছোট্ট করে বললাম, আসি। লাবণ্য কথা বলল না। পলক ফেলল না। শুধু ঠোঁটটা কিঞ্চিৎ নড়ে উঠল। পড়াশুনা শেষে বাবা’র ইচ্ছেতেই দাদার ব্যবসায়ে যোগ দিয়েছিলাম। সেদিন তাই ব্যবসায়ের কাজেই আমাকে বিদেশে পাড়ি জমাতে হলো। ৬মাস পর। ব্যবসায়িক নানা কাজ সেরে যখন দেশে ফিরি আমার ভেতরটা আঁতকে ওঠে। হাসি-খুশি আর প্রাণচঞ্চল লাবণ্যর হঠাৎ বদলে যাওয়াটা ভাবিয়ে তুলে আমায়। প্রশ্ন করি ছোট বোন আশাকে। কিরে! তোর আপুর কি হয়েছে? বোন আমার চোখ বড় বড় করে পাল্টা প্রশ্ন করে, ওমা! আপুর আবার কখন কি হলো? আমতাআমতা স্বরে বললাম, না মানে এভাবে কাকতাড়ুয়ার ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে যে! আমার কথা শুনে আশা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। বোনের মাথায় হালকা আঘাত করে বললাম, প্রশ্ন’ই তো করেছি। তার জন্য এত হাসির কি আছে? গোমড়া মুখে বোনের জবাব, হাসছি কি স্বাদে? বিগত ৬মাস ধরে আপু এরকম কাকতাড়ুয়ার ন্যায় কখনো ছাদে কখনো বা ব্যলকনিতে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলেনা। কেমন যেন এড়িয়ে যা… বোনকে কথার মধ্যিখানে থামিয়ে দিলাম। ওয়েট, ওয়েট। বিগত ৬মাস ধরে মানে? ঘটনা কি? এবার কিছুটা বিরক্তিকর মুখে বোনের জবাব, ভাই তুই সামান্য বিষয়কে নিয়ে এত প্যাঁচাচ্ছিস কেন? ঘটনা কি? সম্বিত ফিরল আমার। সত্যিই তো। একটা সামান্য বিষয়কে এভাবে বড় করে কেন দেখছি? বোনের রুম থেকে চলে আসলাম আমি। ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আমি আমার কাজ নিয়ে। কেটে যায় অনেকগুলো মাস। লাবণ্যর খুঁজ সেভাবে আর নেয়া হয়নি অনেকদিন। যদিও আমাদের বসতটা ছিল একই ছাদের তলায়। মধ্য রাতে চাপা কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আমার। বিছানা থেকে উঠে ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরে এলাম। ব্যলকনির যে পাশ থেকে কান্নার আওয়াজটা আসছিল সে পাশে গেলাম। নাহ! কাউকে পাইনি সেখানে। বিষয়টাকে মনের ভ্রম ভেবে চলে আসছিলাম। পাশেই কিছু একটা ভাঙ্গার আওয়াজে চমকে উঠলাম। ফিরে তাকালাম ডানে। শব্দটা এ বাসার অতিথি লাবণ্যর রুম থেকে আসছে। জানালাটা হালকা মেশানো ছিল। ফাঁক দিয়ে চাইলেই দেখতে পারি আমি ভেতরে কি চলছে। তা সত্ত্বেও কিছুটা ক্ষণ দ্বিধায় ভোগী এই ভেবে, লুকিয়ে রুমে উঁকি দেয়া ঠিক হবে কি না…! সাতপাঁচ ভেবে একটা সময় জানালাটা আংশিক ফাঁকা করে রুমে উঁকি দিয়েই দিলাম। তারপর যা দেখলাম তাতে কিছুটা চমকে গেলেও অস্বাভাবিক হইনি। ফ্লোরে বসে খাটে মাথা ঠেকিয়ে আছে লাবণ্য। হাতে ডায়েরীর মতো কিছু একটা। আমার আন্দাজ সঠিক হলো বোধ হয়। মনে হচ্ছে মেয়েটি প্রেমে পড়েছে। চলবে….
Golpota khuv valo lagcha nice story ??