Friday, August 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2366



ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

0

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

“লেখা- অনামিকা ইসলাম।

টানা তিনঘন্টা মিটিং শেষে ক্লান্ত দেহটাকে ইজি চেয়ারে এলিয়ে দিয়েছিলাম। চোখে তন্দ্রা ভাব এসেছিল। এমন সময় পাশে রাখা মোবাইল ফোন বেজে উঠল। মায়ার মায়ের নাম্বার। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করল, শুভ্র?
কন্ঠ শুনে হবু শাশুড়িকে চিনতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি। বিণয়ের সহিত সালাম দিতে গিয়ে টের পেলাম, ওপাশে যেন কান্নার রুল পড়ে গেছে।
তন্দ্রা ভাবটা চোখ থেকে চলে গেল। চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে আন্টি?
মায়া হসপিটালে, বলেই কান্নায় ভেঙে পরলেন।
ঠিকানা নিয়ে ছুটে গেলাম সিটি হসপিটালে। আমাকে দেখেই কান্না করে দিলেন মায়ার মা।
আমার মেয়েটা বোধ হয় বাঁচবে না আর।
কিছু না বলে ছুটে গেলাম হসপিটালের কেবিনে, যেখানে নিথর হয়ে পরে আছে আমার মায়া। আমাকে দেখে কিছুটা নড়ে উঠল সে। ভেঁজা গলায় বলল, আমাকে ভুলে যেও শুভ্র। আমাদের বিয়েটা আর হওয়ার নয়।
মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। মায়ার পুরো মুখ ঝলসে গেছে। প্রিয়তমার এ অবস্থা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।
হাঁটুগেড়ে বসে পরলাম ফ্লোরে।

অতীতে ফিরে গেলাম আমি।
২০০৬ সালে মায়ার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। সে আমার এক আত্মীয়ের দুর সম্পর্কের আত্মীয়। পরিচয় থেকে শুরু থেকে ওর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। মিতভাষী মায়া সেসময় আমার সঙ্গে তেমন কথা বলত না। খুব সংক্ষেপে ওর সঙ্গে আমার মাঝে মধ্যে কথা হতো। সে ছিল তখন আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে।
প্রথম দেখাতেই মায়াকে আমার ভালো লেগেছিল। দেখতাম ও বান্ধবীদের সঙ্গে হাসছে। মজা করছে। সাহস পেতাম না তার কাছে গিয়ে মনের কথা খুলে বলতে। ভয় হতো, যদি ফিরিয়ে দেয়। মনের কথা মনেই চেপে রাখতাম। কিন্তু হৃদয় তরীরে যে ঢেউ শুরু হয়েছিল, তা তো শান্ত হচ্ছিল না।
একদিন বীরপুরুষের মতো সাহস দেখিয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। তুমি কি কাল একটু সময় দেবে?
মায়া কিছু বলল না। তবে ওর চোখে-মুখে সম্মতির ভাব দেখলাম।

মিয়াবাড়ির ভেতরের রাস্তা দিয়ে আমি আর মায়া হাটছিলাম।
চোখে- মুখে দ্বিধা- দ্বন্দ্বের স্পষ্ট ছাপ। ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম অজানা ভয়ে। মায়া নিরবতা ভেঙে বলল, কি যেন বলতে চেয়েছিলেন, বললেন না তো।
থাক, আরেক দিন বলব। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম কথাটি।
পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ওর মুখটি বিষণ্ন লাগছিল। কিছু সময় নিরব থেকে বলল, আমি যাই। আপনাকে আর বলতে হবে না।
ওর চোখে মুখে হতাশার চিত্র ফুটে উঠল।
ও আমার উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করল। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। বুকটা শূন্য শূন্য লাগছিল। আমিও একপা দু’পা করে সামনে এগুতে লাগলাম। চিৎকার করে বলতে চাইলাম, মায়া, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দই বের হলো না।
বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদলাম। যে করেই হোক, মায়াকে ভালোবাসার কথা জানাতে হবে। আবার সাহস সঞ্চয় করলাম।

পরদিন সকাল বেলা লাল গোলাপ হাতে হাজির হলাম মায়ার সম্মুখে। লাল গোলাপ ধরে রাখা ক্রমেই শ্লথ হয়ে আসছিল। আমাকে পাশ কাটিয়ে মায়া চলে যাচ্ছিলো সুদূরের শহরে। সুযোগ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় দ্রুত পথ আগলে দাঁড়ালাম ওর। চমকে গিয়েছিল মায়া। কিন্তু অস্বাভাবিক হয়নি। মনে হলো এমন পরিস্থিতির জন্য ও প্রস্তুত ছিলে। লাল গোলাপের কলিটি মায়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নির্দ্বিধায় বলেছিলাম সেদিন আই লাভ ইউ মায়া।
সেই মুহূর্তটা কেমন কেটেছিল, মন দিয়ে অনুভব করা ছাড়া লিখে বুঝানো সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ কারো মুখেই কোনো কথা সরছিল না। মন্ত্রমুগ্ধের মতো একে অপরের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। মনে হয় দুজনের বুকের ভেতর ধুকপুক শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। যা ছিল একান্ত নিরব ও গোপন। আর সেটা প্রমাণ করছিল সেই শীতের সকালেও মায়ার নাকে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামের কণাগুলো। ডান হাত দিয়ে মায়া গোলাপটি নিয়েছিল।
মৃদু কন্ঠে বলেছিল, এত দেরি করলে কেন তুমি? তুমি কি জানো না আমিও যে তোমাকে নিয়েই কল্পনার প্রাসাদ গড়েছি? কিন্তু আমি নারী। আমি লজ্জার দেয়ালে আবদ্ধ। এ কারণে তোমাকে বলতে পারিনি। কিন্তু তুমিও কি আমার মনের কথাটি বুঝতে পারো নি? কেন এত দেরি করলে তুমি? জানো না, অপেক্ষা করা কত কষ্টের?
আমাদের প্রেমের শুরুটা এখান থেকেই। তারপর বিরামহীনভাবে চলছিল দুজনের মন দেয়া-নেয়া। হাসি-ঠাট্টা আর মান-অভিমানে ভরপুর আমাদের সে সম্পর্কটা ছিল অনেকের চোখেই ইর্ষার।
মায়া ছিল পরিবারের বড় মেয়ে। ওর বাবা ছোট বেলায় মারা গেছেন। অনেক কষ্টে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী নিয়েছে মায়া।
সেই চাকুরীর টাকা দিয়েই মায়া ওর গরীব মায়ের চিকিৎসা এবং ছোট ভাই বোনদের লেখাপড়া করায়।
এদিকে বয়স তো আর থেমে থাকে না। এত বয়স হয়ে গেছে, এখনো অমুকের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না ব্যাপারটা মায়ার অসুস্থ মায়ের কানে যায়। ওনি মেয়ের বিয়ের জন্য উঠে পরে লাগেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি মায়ার বাসায় খালাতো বোনকে পাঠাই। ত্রিভুবনে আমার কেউ ছিল না বিধায়, খালাতো বোনের মাধ্যমে মায়ার বাসায় বিয়ের পয়গাম পাঠাই। মায়ার মা, খালারা রাজি হয়ে যায়। আসছে নভেম্বরের ১৩তারিখ বিয়ে। হাতে আছে আরো অনেক সময়।

সেদিন রাত্রে অফিস থেকে ফিরছিল মায়া।
হঠাৎ একটা আর্তনাদ শুনে থমকে দাঁড়ায় সে। হ্যাঁ, আর্তনাদ’ই তো। একটা কিশোরীর আর্তনাদ। গলির মোড়ে উঁকি দিতেই দেখে স্কুল ড্রেস পরোয়া একটি মেয়েকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে দু’যুবক। একজন কিশোরীর জামা ছিড়ছে, আরেকজন মুখ চেপে ধরে আছে। ঘৃণায় পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে একটা যুবককে থাপ্পর দেয় মায়া। কিশোরীকে ছেড়ে দিয়ে ওরা মায়ার দিকে তেড়ে আছে। জামা ধরে টানাটানি করতে থাকতে। দিগ্বিদিক শূন্য মায়া আচমকা একজন বখাটের তলপেটে লাথি মারে। ‘উহ্’ স্বরে আর্তনাদ করতে করতে ওরা চলে যায়। যাওয়ার আগে শাসিয়ে যায়-
” দেখে নিব তোকে….”
ঐ কিশোরীর থেকে ঠিকানা নিয়ে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরে মায়া।
পরের দিন এসব ঘটনা শুনে আমি রীতিমতো উদ্ভিগ্ন হয়ে উঠি। আমার চিন্তা বেড়ে গেল। মায়াকে চোখে চোখে রাখতাম। আজ জরুরী একটা মিটিংয়ে আটকা পরে যাওয়ার কারনে ওকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারিনি। কে জানতে আজকেই এমন একটা ঘটনা ঘটবে?
সেদিন রাতে মায়া অফিস থেকে বাসায় ফিরছিল। তখনই ঘটে যায় মায়ার জীবনে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি। বাইকে চড়ে আসা ৪জন ছেলে মায়ার দিকে বোতল থেকে পানি জাতীয় কিছু ছুঁড়ে মারে। মুহূর্তেই ঝলসে যায় মায়ার একটা চোখ সহ পুরো মুখ। একটা আর্তনাদ দিয়ে লুটিয়ে পড়ে রাস্তায়। মায়ার আর্তনাদে মানুষজন ছুটে আসে। কিন্তু সেটা সাহায্য করতে নয়। ওরা মায়ার দিকে এগিয়ে না গিয়ে মায়ার ঝলসে যাওয়া মুখের ছবি তুলতে, ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। এক বয়স্ক দয়ালু লোক সেই সময় উপস্থিত হয়। এম্বুলেন্সে খবর দিলে সে রাতেই ভর্তি করে হসপিটালে।
মাসখানেক পর মায়ার মুখের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয়। হাসপাতালে মায়ার পাশে বসলে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। ক্ষাণিক ক্ষণ চুপ থাকার পর বলে, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমায় ক্ষমা করে দাও। কথাটা বলেই চোখের জল ছেড়ে দেয় মায়া।
ওর মুখটা ঘুরিয়ে জানতে চাই, কেন মায়া?
যে মায়াকে দেখে তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে, আমি আর সে মায়া নেই।
আমি শেষ হয়ে গেছি। আমি চাই না আমায় বিয়ে করে তোমার জীবনটাও শেষ হয়ে যাক। লোকে সারাজীবন তোমায় নিয়ে হাসাহাসি করবে। একটা সুন্দরী মেয়ে খুঁজে নিও, ভুলে যেও আমায়। কান্না লুকাতে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় মায়া।
চোখ থেকে অজান্তেই জল গড়িয়ে পরছিল। বহু কষ্টে নিজেকে সংবরন করে মায়ার হাতটা মুঠোয় পুরে বলি, “তুমি আমার সেই আগের মায়ায় আছো। সেই আগের মতই সুন্দরী। ওরা তোমার মুখ বিকৃত করলেও হাসিটা বিকৃত করতে পারেনি। এই হাসি দেখেই প্রেমে পরেছিলাম কি না।”
দুঃখের মধ্যেও মায়া হেসে দিল।

এসিড ছুঁড়ে মারা ছেলেগুলো ৬বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হয়েছিল। অপরাধের তুলনায় শাস্তি অনেকটা কম হলেও আমি প্রতিশোধের বদলে মায়ার জীবন বদলে দিতে চেয়েছিলাম নতুন আঙ্গিকে। মায়ার মতো হাজারো মেয়ে প্রতিদিন প্রতিহিংসার এসিডে দগ্ধ হচ্ছে, বর্বাদ করে দিচ্ছে গোটা জীবন। আমি মায়াকে সুখী করে তাদেরকে বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, প্রতিশোধ নয়, ভালোবাসা’ই পারে সবকিছু বদলে দিতে।

মায়াকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। হাতে সময় আছে ২মাস। এই ২মাসে মায়া অনেকটা সুস্থ হলেও স্বাভাবিক হতে পারেনি। অনেকবার চেষ্টা করেছে আত্মহননের কিন্তু প্রতিবার’ই কেউ না কেউ টের পেয়ে পাওয়াতে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিয়ের ৭দিন বাকি ছিল। একে তো খালা খালু এ বিয়ে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে, তারউপর মায়ার এমন মানসিক অবস্থা। রিস্ক নিতে পারিনি। রিলেটিভদের অমতে গিয়ে খুব সাদামাটাভাবেই আমি আমার মায়াকে আমার বউ করে আনি।
বিয়ের ১বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও আমি আমার মায়াকে গুমড়ে কাঁদতে দেখতাম। মাঝরাত্রিতে আমার মায়া ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠত, কখনো বা বালিশ মুখ লুকিয়ে গুমড়ে কাঁদত।
প্রতিটা রাত আমি ওকে বুকে নিয়ে ঘুমাতাম কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রায়’ই আমি আমার মায়াকে আমার পা জড়িয়ে পায়ের নিচে পরে থাকতে দেখতাম। আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসত, মাঝে মাঝে খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে হতো, কিন্তু কাঁদতাম না। কারণ, আমি কাঁদলে কে দিবে আমার মায়াকে শান্তনা।

বিয়ের ৫বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। মায়া পেরেছে ওর ভয়ংকর অতীত ভুলে সম্মুখে এগিয়ে যেতে। আমি কখনো বুঝতে দেইনি ও সবার থেকে আলাদা। আমাদের ভালোবাসা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আমাদের একটা ৪বছরের ছোট্ট মেয়ে আছে। লাবণ্য……
ওকে ঘিরেই আমাদের যত স্বপ্ন।
পড়ন্ত বিকেলে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে আমরা দুজন বের হয়ে যায়, পাশাপাশি আঙ্গুল ধরে হাঁটা, একসাথে বৃষ্টিতে ভেঁজা, জোৎস্না বিলাস সব, সব পেরেছি আমরা। সর্বোপরি ঐ বখাটেগুলোর চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি, তোরা ব্যর্থ হয়ে গেলি। আমরা সুখে আছি, অনেক সুখে। হেরে গেলি তোরা, ভিষণ রকম ভাবে হেরে গেলি।

তবে লাবণ্য একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, আব্বু! আম্মু সবার থেকে আলাদা কেন? আমি আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে শুধু এটুকু বললাম, “তোমার মা সবার থেকে আলাদা, কারণ সবার মত তোমার মা অন্যায় মুখ বোজে সহ্য করে নি। প্রতিবাদ করেছিল।”

# ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
লেখা- অনামিকা ইসলাম “অন্তরা”

দহন

0

দহন

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

সেদিন খালার জ্ঞান ফিরার পর আমাকে দেখে খুশি হলেন। মায়ার ছোট ভাই বোনরা বাসায় ছিল। ওরা ভয় পাবে। তাই মায়াকে নিয়ে বাসায় যেতে বলল।
একটা রিক্সা ভাড়া করে রওয়ানা দিলাম। দুজন রিক্সার পাশাপাশি বসে। মনে মনে খুব খুশি হলাম। কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা ছিল না।
এভাবে চলল প্রায় ১০মিনিট। হঠাৎ রিক্সা ব্রেক করায় প্রচন্ড ঝাকুনি খেলাম। মায়া পরে যাচ্ছিল বলে ওকে জাপটে ধরলাম। হয়তো রিক্সা থেকে পড়েই যেত। হঠাৎ প্রশ্ন, আমাকে জড়িয়ে ধরলে কেন?
প্রশ্নটা ছিল অনেকটা আবেগপ্রবণ।
বান্ধবীরা তোমাকে নিয়ে অনেক কথা বলে। কিন্তু তুমি তো আমাকে পছন্দ করো না।
হাসলাম, মুখে কিছু বলার সাহস পেলাম না। মনে মনে বললাম, সেটা হয়তো ওরা জানে না। আমি তোমাকে কতটা পছন্দ করি সেটা ঐ বিধাতা জানেন। ইচ্ছে হচ্ছে তোমার হাত ছুঁয়ে বলতে। কিন্তু পারছি না। খুব ভয় করছে। যে বিশ্বাস করে তোমার ভাই মানে আমার বন্ধু আমাকে তোমাদের বাসায় তোমাকে, তোমার ভাইকে পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছে, সে বিশ্বাস আমি কি করে ভাঙি?
মা বাবার আদর কি জিনিস সেটা কখনো বুঝতাম’ই না যদি না তোমাদের বাসায় আসতাম। কি করে সেই মানুষগুলোর সাথে প্রতারণা করি? আমি যে বড্ড নিরুপায় মায়া।
মায়া অনর্গল বলতে শুরু করে, ভাইয়া!
আজকাল আমার যেন কি হয়েছে? খাওয়া দাওয়া করতে পারি না। শুধু তোমার স্বপ্ন দেখে দিন কাটছে। বললে না, কেন?
এবারো হাসলাম।
মনে মনে বললাম, বোকা মেয়ে! তুমি পারবে আমাকে তোমার মাঝে ধরে রাখতে?
ততক্ষণে মায়ার হাতদুটো আমার হাতের উপর এসে ভর করল। ওর চোখের দিকে তাকালাম। কেমন জল ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। মনে হচ্ছে অশ্রু ভেঁজা চোখ দুটো বলছে, অবশ্যই পারব। হয়তো মরতেও পারি তোমার জন্য।

সেদিন বাসায় ফিরতে রাত ১টা বেজে গেল। বাসায় এসে কারো খাওয়া দাওয়া হলো না। প্রিয়তমা কাছে থাকলে এমনই হয় বুঝি? সে আমার বেড যত্ন করে গুছিয়ে দিল। আমার পাশে এসে বসল। জানিনা কেন যেন ইচ্ছে হচ্ছিল, জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা কিস করি। জড়িয়েও ধরেছিলাম। কিন্তু পরমুহূর্তে ছেড়ে দিলাম।
নিজেকে নিজেই শান্তনা দিলাম, এগুলো কি না করলে কি হয় না? সে তো আমার’ই আছে।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, তাই হবে। আমাদের ভালোবাসা হবে একদম পবিত্র, পরিচ্ছন্ন। দুজনে জ্বলে জ্বলে দগ্ধ হব কিন্তু এতটা কাছে আসব না।

এভাবেই আমাদের চোখে চোখে প্রণয় চলছিল। পূর্ণ হলো আমাদের ভালোবাসার ৪বছর। ক্লাস নাইনের সেই ছোট্ট মেয়েটি কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হলো। আমি তখন ঢাকায় মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে। দুর থেকে আমার উৎসাহ পেয়ে মায়া মন দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল।
পরীক্ষার মাত্র ১মাস বাকি। বন্ধুকে দেখার ছলে মায়াকে দেখতে এলাম। এসেই প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হলাম। সাত দিন জ্বর ছিল। তার যে কি টেনশন। পাশে বসে মাথায় পানি দেয়া। ঔষধ খাওয়ানো। সব দায়িত্ব যেন তার। একদিন দোকান থেকে রেজার কিনে এনে শেভ পর্যন্ত করে দিল। নেইল কাটার দিয়ে নখগুলো কেটে দিত। এ কাজগুলো সবার সামনে করত। কাউকে ভয় পেত না।
সাত দিন পর গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিল। নিজের ওড়না দিয়ে আমার শরীর মুছে দিল। তার সেবায় খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলাম। আমার অসুস্থতায় আমি যেন তার আরো কাছে চলে গেলাম। একেই হয়তো বলে ভালোবাসার গভীরতা।

সেবার মায়া অনেক কথা বলল। যেমন, আচ্ছা, তুমি আমাকে বউ করে নিচ্ছ না কেন? আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে তোমার বউ হতে। ভাইয়া, তুমি আমাকে কষ্ট দিও না। ভুলে যেও না।
বার বার এই প্রলাপগুলো শুনছিলাম আর হাসছিলাম।
এর ছাড়া যে আমি আর কিছুই বলতে পারছিলাম না। কারণ, আমার যে হাত পা বাঁধা। বন্ধুত্বের কাছে আমি যে নতজানু। আমি জানি, ওরা কখনো আমার সাথে মায়াকে বিয়ে দিবে না। উল্টো বন্ধুত্বটাকেও চিরকালের জন্য হারাতে হবে।
যে হারে লোক লেগেছে মায়ার বিয়ের জন্য, এবার মনে হয় বিয়েটা হয়েই যাবে। যায় হোক চেষ্টা তো করতে পারি?
খালা মানে মায়ার মায়ের সাথে বিষয়টা শেয়ার করলাম। জানালাম, মায়াকে বিয়ে করতে চাই। যে ভয়ের জন্য আমি আমার পাগলীটাকে কখনো চার অক্ষরের একটি ছোট্ট শব্দ বলতে পারিনি, সেটাই হলো।
আমার দুর্বলতার খবর প্রকাশ হওয়ায় সবাই গর্জে উঠল। জনমের মত বন্ধুত্ব হারালাম। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলো।
মাস্টার্স পাস করে একটা চাকরির চেষ্টা করতে লাগলাম। তাহলে কিছু একটা করা যাবে।
চেষ্টা চলছিল অবিরাম। মায়াকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে এসেও অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। কিন্তু কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা বলিনি।

ঢাকায় চলে আসলাম। আমি ঢাকায় আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ফার্স্ট ক্লাস অফিসারের সঙ্গে একরকম জোর করেই মায়াকে বিয়ে দেয়া হলো।
বিয়ের খবর শুনার পর অনেক কেঁদেছিলাম। ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। পড়তে গেলেই কান্না আসত। কেন এমন হলো? হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজারে গিয়েও ২দিন কান্নাকাটি করেছিলাম।
কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গেলাম। খাওয়া দাওয়া কেনোকিছুই ভালো লাগত না। বাড়িতে চলে এলাম। কাকিমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। কাকিমার আদরে খুব কান্না পেল।
আমার স্বাভাবিক হতে প্রায় চার মাস চলে গেল। এর মধ্যে চাকরি পেলাম। পোস্টিং নিয়ে সিরাজগঞ্জ চলে এলাম। বিয়েটা আর করা হলো না। ভাবলাম, এভাবেই না হয় বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেব।

জানতে পারলাম, স্বামীর সঙ্গে মায়ার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। স্বামীকে সহ্য করতে পারছিল না। বিয়ের প্রথম রাতেই স্বামীকে বলেছিল, আমার সবকিছুর মালিক আমার জান। তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না।
বেচারা মায়ার মন পাওয়া অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কিছুই হলো না।
ওদের বিবাহিত জীবনের পাঁচ বছর পার হলো। কিন্তু কোনো বাচ্চা- কাচ্চা হয়নি।
একদিন ব্যাংকের বার্ষিক বনভোজনে কক্সবাজার বেড়াতে গেলাম। সেখানে গিয়ে হঠাৎ ওর দেখা পেলাম। ওরা বেড়াতে এসেছিল। আমাকে দেখে মায়া দৌঁড়ে কাছে এলো। এসেই জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কেমন আছ? আমি কিন্তু একদম ভালো নেই। তুমি আমাকে কেন তোমার কাছে নিয়ে যাও না?
মায়া, তা কি হয়?
কিছুক্ষণ পর তার স্বামী এলো। বলল, এই দেখো, কাকে নিয়ে এসেছি। আমার বাঁধন ভাই।
স্বামী বলল, শুধু ভাইয়া নয়, তোমার জান। তোমরা কথা বলো, আমি ওদিকে যাচ্ছি।
বাঁধন ভাইয়া, সবাই বলেছে তোমার মনে খুব কষ্ট দিয়েছি। আমার বিয়ের পর তুমি খুব কেঁদেছ। এই জন্য আমি অসুখী। তোমার অভিশাপ আমার জীবনে জড়িয়ে আছে। তোমার কান্নার জন্যই আমি অসুখী। সবাই বলে, এটা ভালোবাসার অভিশাপ।

আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে মায়া মানসিক রোগী। একদিন খবর এলো, হসপিটালে দেখতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি গেলাম না। কাছে গেলে হয়তো আরো জ্বালা বাড়ত। নতুবা দুটি প্রাণীকে আজীবন জ্বলতে উঠো। কিন্তু সুখ তো হলো না কারো।
ভালোবাসার অভিশাপে মায়ার ক্ষতিটা বেশী হলো।

 

আনন্দ অশ্রু

0

 আনন্দ অশ্রু

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

০৫.০৭.২০০৬
আরেকটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে শুনলাম। প্রথমটা যৌতুক এত বেশি চেয়েছিল যে, হলো না। ছেলেটা দেখতে ছিল সালমান শাহ্’র মতো। আমি আরেকটু সুশ্রী হলে হয়তো ওরা এ দিকটাতে একটু ছাড় দিত।
জন্মান্তরে বিশ্বাসী না আমি, তথাপি কেন যেন মনে হচ্ছে গত জন্মে বোধ হয় বড়লোক বাবার অহংকারী, সুন্দরী মেয়ে ছিলাম। মানুষকে মানুষ বলে গণ্যই করতাম না। যার শাস্তি সরূপ এ জন্মে হয়েছি গরীবের কালো মেয়ে। একে তো কালো, তারউপর ভিষণ রকম কুশ্রী। আবার নাম রেখেছে মায়া।
ধূর! আর লিখব না। ভালো লাগছে না। কাল আবার শিমু আপুর বিয়ে। সকাল সকাল উঠতে হবে।

০৭.০৭.২০০৬
শিমু আপু চলে গেল। কাল রাতে ও বাড়িতেই ছিলাম। অনেক মজা হলো বিয়েতে। ছেলে বাড়ির লোকেরা তো রাজিই ছিল না এ বিয়েতে। ছেলে আবার শিমু আপুকে না পেলে আত্মহত্যা করবে, তাই বাধ্য হয়েই ওদেরকে রাজি হতে হলো।
কত বড়লোক ওরা!
কোনো যৌতুক দিতে হয়নি। অবশ্য প্রেমের বিয়েতে ওসব লাগেও না।
সবার কপাল কি আর ওরকম হয়? বাবা নেই, মা শয্যাশায়ী। মামার সংসারে কড়াকড়ির মধ্যে মানুষ। যেখানে পান থেকে চুন খসলে রটে যায়, সেখানে ওসব ভাবাও যায় না।
কিন্তু বয়সের দোষ বলে একটা কথা আছে। খালাতো ভাই চোখের ভাষায়, ঠাট্টার ছলে অনেক বার আমায় বুঝানোর চেষ্টা করত, সে আমায় ভালোবাসে। আমি সায় না দিলেও হৃদয়টা তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখত।
টনক নড়ে সেদিন, যেদিন সে খালার পছন্দের ফর্সা মেয়েকে নিয়ে ঘরে এলো। আর আনবেই বা কেন? আমি তো আর সেই কপাল নিয়ে জন্মাইনি যে আমার জন্য কেউ শিমু আপুর বর যা করল তাই করবে!
যাক নিয়তিকে মেনে নিতেই হবে। কাল নাকি পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।

০৮.০৭.২০০৬
আমার বিয়ে মোটামুটি ঠিক। সকালে দেখতে এসেছিল। কথাবার্তা সবই মিলেছে। মামা ছেলের প্রশংসায় যতই পঞ্চমুখ হোক না কেন, আমার জন্য যে কোনো রাজপুত্র আসবে না, সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। তবে সকাল থেকে কেমন যেন মনের মধ্যে অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করছিল।
ইস! মশা খুব বিরক্ত করছে। আজ আর লিখতে পারছি না।

১৩.০৭.২০০৬
অনেকদিন পর ডায়েরীটা হাতে নিলাম। আমার বিয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল। বাড়িতে অনেক লোক। নিকটাত্মীয়রা মোটামুটি সবাই চলে এসেছে। নিরিবিলি জায়গার অভাবে ডায়েরী লেখা হচ্ছিল না। আমিই যে পাত্রী!
খালাতো বোন লিমা এসেছিল বরকে নিয়ে। গয়নায় গা-ভর্তি ছিল ওর। দুলাভাই ওর সব আবদার পূরণ করত।
করবেই বা না কেন? প্রেমের বিয়েতে এমনই হয়। আর আমারটা তো একটা চুক্তি মাত্র। ঐ ছেলে কি আমার সুখ দুঃখের কথা ভাববে? লিমাকে দেখার পর নতুন করে নিজেকে অসুখী মনে হচ্ছিল।
১৬তারিখে আমার বিয়ে। পাত্র বাঁধন মাহমুদ। সেনাবাহিনীতে চাকরী করত। ছেলের মা- বাবা ছিল না। চাচার কাছে মানুষ। সেই চাচা অসুস্থ থাকায় বিয়েতে এত তাড়াহুড়া। তিনি ভাতিজার বউ দেখে মরতে চান।
ভাবি ডাকছে। কাল- পরশুর মধ্যেই সব আত্মীয় স্বজন এসে যাবে। আর বোধ হয় লেখা হবে না।

১৮.০৭.২০০৬
না, আমি শ্বশুর বাড়িতে না, এ বাড়িতেই। এমন অবস্থায় লিখতে পারার কথা নয়। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল, কাউকে কিচ্ছু বলতে পাচ্ছিলাম না।
তবুও লিখছি। লিখে যদি কষ্টটা একটু হালকা হয়।
একটু দেরীতে পাত্রপক্ষ আসল, তাও মাত্র হাতে গুনা ১৫জন। চিরাচরিত নিয়মে আয়নার দৃষ্টি বিনিময়ের সময় তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে। যেন কেউ তাকে জোর করে বন্দুক ধরে বিয়ে করাতে নিয়ে এসেছে। বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতেই মামাকে বলল, তার অতি দরকারি কাজ আছে, যেতে হবে। না গেলে চাকরী থাকবে না।
সবার সব কথা না শুনেই চলে গেল। যাওয়ার বেলায় আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বলল, আসি।
মামাকে বলল, আমাকে খুব তাড়াতাড়ি একদিন এসে নিয়ে যাবে।
জীবন খুব প্রেমময় হবে না, সেটা জানতাম। তাই বলে এতটা অবহেলা? আর লিখতে পারছি না। মাথাটা ঘুরছে।

১৯.০৭.২০০৬
চোখের পানি সামলাতে পারছিলাম না আমি। এও কি সম্ভব? সকালে দুটি চিঠি এলো। একটা আমার, আরেকটা মামার নামে। প্রেরক বাঁধন। চিঠিটা নিয়ে আমার ঘরে রেখে দিলাম। পড়তে ইচ্ছে করছিল না।
একটু পর দেখলাম, মামা তৈরি হচ্ছে আমার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য। মামি আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল, বড় ভালো কপাল নিয়ে জন্মেছিস।
আমি কিছু বুঝলাম না। ঘরে এসে চিঠিটা খুললাম।

মায়া,
জানি তোমার মন ভালো নেই। সে দায় আমার। কিন্তু কি করব বলো? বরযাত্রী নিয়ে রওনা হব, এমন সময় বাড়িওয়ালার বাসায় টেলিফোনে খবর এলো চাচা মারা গেছেন। তুমি তো জানো, আমি এতিম। চাচার কাছেই মানুষ। ওনার বড় সাধ ছিল আমার বউ দেখার। সে কথা ভাবতেই তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। তখন যদি আমি না যেতাম তবে তুমি হতে অপয়া। আর আমাদের মা- চাচীরা এখনো সব দায় মেয়েদের কাধেই দেন। আমার জন্য তোমার এই কখনোই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই আত্মীয়দের মৃত্যু সংবাদ না দিয়ে বেশি সংকটাপন্ন অবস্থার কথা বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। পরে আমি কয়েকজন পড়শি আর বন্ধুদের নিয়ে তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
সেখানে হয়তো মামাকে সত্যটা বলতে পারতাম। কিন্তু কথাটা একবার আত্মীয় মহলে ফাস হলে তোমায় অলক্ষ্মী অপবাদ দিতে কেউ থামত না। এর চেয়েও বড় কথা, চাচা নেই- এ কথা একবার মুখ দিয়ে বের করলে আমি আর স্থির থাকতে পারতাম না।
আমি বোধ হয় এলোমেলো কি সব লিখছি। আসলে সব দায়িত্ব আমার কাধে, তাই তাড়াহুড়া করে শেষ করতে হচ্ছে। আর হ্যা, আমি আমার লক্ষ্মী বউটাকে খুব তাড়াতাড়ি নিতে আসব। ভালো থেকো।
তোমার বাঁধন।

 

হৃদয়ের রক্তক্ষরণ

0

হৃদয়ের রক্তক্ষরণ

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

২০১০সালে ঢাকা ইউনিভার্সিতে ভর্তি হয়েছিলাম অনেক আশা নিয়ে।
শিক্ষক, বাবা মায়ের কারণে, অনেকটা রক্ষণশীল পরিবেশে বড় হবার কারণে হল জীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম।
একদিন পরিচয় হয় মারুফের সাথে। মারুফের সাথে পরিচয়টা মূলত বান্ধবী শিখার মাধ্যমেই হয়। শিখার খুব ভালো বন্ধ মারুফ। মারুফ ছিল একজন সুন্দর ও সুদর্শন যুবক। যাকে দেখলে যেকোনো মেয়ে প্রেমে পরার স্বপ্ন দেখবে। একদিন সেই মারুফ একটু সময় চাইল আমার কাছে। সময় দিলাম। এরপর থেকে দেখা হতো প্রতিদিন।
মারুফের পরিবর্তিত আচরণ আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিল আমাদের সম্পর্কের অনিবার্য পরিণতি। কিন্তু প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারে আমার সাহসটা বরাবরই একটু কম ছিল। যার কারণে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত, যদি না মারুফ ভালোবাসার প্রস্তাব দিত।
শুরু হলো এক নতুন জীবন, যেখানে সম্ভব সুন্দর আগামীর স্বপ্ন, সীমাহীন প্রত্যাশা, বর্ণিল আনন্দময় প্রতিটি দিন। খুব বেশী স্বপ্ন দেখতাম আমি। আমাদের থাকবে একটা ছোট্ট সংসার, দুটি ছোট কচি হাত।
আমি মাস্টার্সে উঠে গেলাম। কিন্তু তখনো জানতাম না আমার জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে।

একদিন আমার সেই স্বপ্নের ইতি ঘটল, আমি তাকে বিয়ের কথা বললাম। “বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি আর পারছি না। এবার তো কিছু একটা করো।”
মারুফের স্পষ্ট জবাব, আমায় তুমি ভুলে যাও অন্তরা। আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমি এনগেজড।
সাজানো স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠলাম, সবকিছু মিথ্যে হয়ে গেল আমার। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে কয়েক মাস মনোরোগ বিভাগে থাকতে হয়েছিল। অন্য দিকে মারুফ বিয়ে করে বউ নিয়ে বিদেশ চলে গেল।

খুব কষ্ট পেলাম, অথচ আমি তার অযোগ্য ছিলাম না।
প্রবাদ আছে, যে বেশী ঠেকে, সে বেশী শেখে। আমিও শিখলাম আমাকে দিয়ে ভালোবাসা হবে না। তখন উল্টো চিন্তা করলাম, তার দেওয়া কষ্টগুলো চার্লস ডিকেন্সের মত ব্যবহার করব।
চার্লস ডিকেন্সের প্রথম ভালোবাসার দুঃখজনক পরিণতি ঘটেছিল। তখন তিনি তার ভালোবাসাকে লেখার মধ্যে সঞ্চার করলেন। ফলে তার ভাঙা হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা ডেভিড কপারফিল্ড উপন্যাসটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
আমি তখন আমার লেখালেখি আর পড়াশুনাতে মন দিলাম। প্রচুর বই পড়তে শুরু করলাম। ইদুর যেমন সামনে যা পায় তাতেই মুখ দেয়, আমিও সামনে যে বই পেতাম তাই পড়তাম। তার জায়গা দখল করল বই।
শিক্ষকতা শুরু করলাম। আমার সময় কাটত শিক্ষকতা আর লেখালেখি করে। অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে দেশের সাহিত্যের পাতায় নাম উঠল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হাজারো পাঠক/পাঠিকার মন জয় করে নিলাম। সাহিত্য সম্মাননার মুকুট উঠল আমার মাথায়।

জীবন বহতা নদীর মতো। কারো জন্য থেমে থাকে না। সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে এ নিয়মই চলছে বিরামহীনভাবে। ভালোই আছি। মাঝে মধ্যে মনে হয় কি যেন নেই।
তখন ডেল কার্নেগীর কথা মনে হয়। তিনি লিখেছেন, একজন বিশেষ লোকের ভালোবাসা হয়তো তুমি হারিয়ে ফেলতে পারো কিন্তু মন থেকে ভালোবাসা নামক বস্তুটি কখনো হারায় না। সেটা আরেকজনকে খুঁজে নেয়। একজনের প্রতি ভালোবাসা আরেকজনে সঞ্চার হয়ে যায়। জেনে রেখো- আরেকজন আছে।
তাই নষ্ট হলাম না, ধ্বংস করলাম না নিজেকে।

# হৃদয়ের রক্তক্ষরণ
লেখা- অনামিকা ইসলাম “অন্তরা”

একটি পানকৌড়ির গল্প ৮

0
একটি পানকৌড়ির গল্প......  ৮
একটি পানকৌড়ির গল্প......  ৮
একটি পানকৌড়ির গল্প…… ৮.
রাতের খাওয়াটা আজকে বেশ মজার হয়েছে। অনেক দিন পরে আফতাব হোসেন বেশ আরাম করে খেয়েছেন! মুগ ডালের স্বাদ অমায়িক হতে পারে তার জানা ছিলোনা। ঘরের খাবার খেতে খেতে জিহবাটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। রশীদ আলমের স্ত্রীর রান্না এতো ভালো কিন্তু তার স্ত্রীর রান্না দিন দিন খারাপ হচ্ছে। রাত ১০ টা বাজে একবারও রেহানা তাকে ফোন করেনি। অন্যদিন তো ৯ টা বাজার সাথে সাথেই ফোন করতে শুরু করে। যেন সে একজন অবুঝ শিশু! স্ত্রীর এরকম কাজ তিনি মোটেও পছন্দ করেননা। রাত ১০ টা বাজুক না ১২ টা বাজুক সে পুরুষ মানুষ বাহিরে থাকতেই পারেন। এতে এতো বিচলিত হবার কিছুই নেই। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলেন আর ভাবছিলেন আফতাব হোসেন, আজকে বাড়ি না গেলে কেমন হয়? মেয়ে মানুষ দের একটু শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন আছে।
না, বাড়িতে যাওয়াই ভালো। একসময় এই স্ত্রীর জন্য তিনি পাগল ছিলেন। অনেকেই তাকে বউ পাগলা বলতেন। সেগুলো বিয়ের প্রথম প্রথমে রেহানা দেখতে অনেক আকর্ষণীয় ছিলো। এখন তো পেটে চর্বি জমেছে, গায়ের রঙটা নষ্ট হয়ে গেছে। চুলের অবস্থা তো খুবই বিশ্রী। এখন রেহানাকে তার ভালোই লাগেনা। আরেকটা বিয়ে করার চিন্তায় আছেন আফতাব হোসেন। যদি অল্পবয়সী কাউকে পেয়ে যান তাহলে রেহানাকে তালাক দিয়ে দিবেন। তালাক দেয়ার পর অবশ্য ওর যাওয়ার জায়গা নেই। না থাক, তার দেখার বিষয় না।
রেহানা রাত ৯ টা থেকে স্বামীর অপেক্ষা করছেন। আজ তার জন্মদিন, আফতাবের ভুলে যাওয়ার কথা না। ইচ্ছাকৃতভাবে আফতাব হোসেন দেরি করছেন। তাকে রাগানোর জন্য, কিন্তু সে রাগবে না। রেহানা শেষ কবে সেজেছিলো তার মনে পড়ছেনা। জন্মদিন উপলক্ষে সাজুগুজু করলেন। আফতাব হোসেন জাম রঙের একটা কাতান গিফট করেছিলেন বিয়ের দ্বিতীয় বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে। সেই জাম রঙের কাতান টাই পড়েছেন। ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে, ছেলেদের সামনে তার সাজতে লজ্জা লাগে।
অপেক্ষা করতে রেহানার খুব কষ্ট হচ্ছিলো।আফতাব মনে হয় ভুলে গেছে। আবার একটু পরেই ভাবছেন গতবারও মনে ছিলো, এবারও আছে। তার সাথে দুষ্টিমি করছে।
রেহানা কাঁদতে শুরু করলেন, এখন আফতাব আর তাকে আগের মতো ভালোবাসে না। কথাও বলতে চায়না, জোর করে কথা বলেন। ছেলেদের খোঁজও তেমন রাখেন না। রাত কতো হচ্ছে কিন্তু আফতাব আসছেনা। বাধ্য হয়ে রেহানা আফতাব হোসেন কে ফোন দিলেন। রিসিভ করে আফতাব হোসেন বললেন
– কী সমস্যা?
রেহানা কান্না অনেক কষ্টে থামিয়ে রেখেছিলেন। ডুকরে কেঁদে উঠলেন। আফতাব হোসেন চুপচাপ সেই কান্না শুনতে লাগলেন। তার ভেতরের সেই ভালোবাসাটা আবার জেগে উঠছে, যার উপর মরিচা ধরেছিলো। রেহানার কান্না মরিচা সরিয়ে ফেলছে। আফতাব হোসেন ফোন কেটে দিয়ে হোটেল রুম থেকে বের হয়ে ম্যানেজারের কাছে গেলেন।
ম্যানেজার বললেন
– কিছু লাগবে স্যার?
– আমি এখন চলে যাচ্ছি, রুমের চাবি রাখুন। আর টাকা তো আগেই দিয়েছি।
– কোনো সমস্যা হয়েছে আমাদের হোটেলে?
– না। আমার স্ত্রীর সাথে মান অভিমান টা বহুদিন পর ভাঙলো। আমি এখন বাসায় না গেলে ও খুব কষ্ট পাবে।
ম্যানেজার কী বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।
আফতাব হোসেন রাস্তায় নেমে জোরে হাঁটতে শুরু করলেন। আশেপাশে কোনো বা কোথাও পেস্ট্রি শপ খোলা পেলে বেশ ভালো হতো। রাত তো অনেক হয়েছে এখন খোলা থাকার কথা না। রেহানার জন্মদিন টা এভাবে মাটি করে দেয়া যাবেনা। রেহানা খুব কষ্ট পাবে। এই মেয়ে তাকে খুব বেশি ভালোবাসে। আফতাব হোসেন নিজের চোখের কোণে ভিজে উঠেছে বুঝতে পেরেও হাত দিয়ে মুছলেন না। থাক, মানুষ দেখুক। এখন তার একটাই কাজ রেহানার জন্য কিছু একটা নিয়ে যাওয়া।
অঅল্পবয়সী, হুর-পরী, বিশ্বসুন্দরী যেই আসুক না কেন তিনি আর বিবাহ করবেন না। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন। রেহানা আধা পাগলী টাই থাকুক জীবনে! আর রেহানা খাঁটি ভালোবাসা দিয়ে তাকে মুড়িয়ে রাখুক শেষ নিশ্বাস অবদি।
রেহানা বসার ঘরে ঝিমুচ্ছেন আর কিছুক্ষণ পর পর ঘড়ির দিকে উদাসীন ভাবে তাকিয়ে সময় দেখছেন। এই মনে হচ্ছে আফতাব চলে আসবে কিন্তু না আসছেনা।
১১ টা ১৫ তে কলিং বেল টুং করে বেজে উঠলো! রেহানা প্রায় পাগলের মতো দরজা খুলে দিলো। আফতাব হোসেন স্মিত হেসে স্ত্রীকে বললেন
– My Dear পাগলা বউ, Happy birthday to you!
স্বামীর মুখে পুরোনো কথা শুনে আবারও কাঁদতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। আফতাব হোসেন বললেন
– কাঁদবেন না। আপনার জন্য কি এনেছি জানেন?
রেহানা ঘাড় নাড়িয়ে না বোঝালো। আফতাব হোসেন তার পিছনে লুকিয়ে রাখা পাখির খাঁচাটা বের করে স্ত্রীকে বললেন
– টিয়াপাখি এনেছি। সারাক্ষণ এ চিল্লাবে আর তুমি ভাববা আমি তোমাকে ভালোবাসি বলছি। বুঝতে পারছো?
– আস্তে বলো, ছেলেরা শুনবে তো।
– আগে আমাকে ঘরের মধ্যে ঢুকতে তো দিবা!
রাত ৩ টা রেহানার ছোট্ট বারান্দায় টিয়াপাখি টা তার খাঁচায় ঘুমানোর চেষ্টায় আছে। নতুন পরিবেশে সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছেনা। বারবার ভেতরের ঘর থেকে খিলখিল হাসির শব্দ আসছে। যাও একটু ঘুম আসছে তাও ওই মহিলার হাসিতে দফারফা হয়ে যাচ্ছে।
ফজরের আজান দিবে ঠিক তার আগে ফারিয়া আবারও সেই স্বপ্নটা দেখলো। ঠিক প্র‍থমদিন যেমন দেখেছিলো ঠিক তেমনই। কোনো পরিবর্তন আসেনা। ফারিয়ার ঘুম ভাঙলো ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে। পুরো শরীরে ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নাকের কাছের গন্ধটা গতকাল রাতেও তেমন ছিলোনা। ব্যথাটাও কম ছিলো। বেশ ভালো লাগছিলো ফারিয়ার। মায়ের টুকটাক কাজ করে দেয়াতে মা বেশ বিরক্ত হয়েছিলো। ফারিয়া বুঝতে পেরে বলেছিল
– আবারো তো অসুস্থ হয়ে যাবো। তখন তো আর পারবো না।
ডাক্তার লোকটার সাথে তার মায়ের খুব ইম্পরট্যান্ট কথা হয়েছে। তাকে শুনতে দেয়া হয়নি। মাকে জিজ্ঞেস করেও জানা সম্ভব হয়নি।
ফারিয়ার পেট গুলিয়ে বমি আসছে। অনেক কষ্টে বমি চাপিয়ে রেখেছে। স্বপ্নের ঘোর এখনো কাটেনি। এখনো ফারিয়ার মনে হচ্ছে তার মাথা ভারি গাড়ির চাক্কায় পিষে রাস্তার পিচের সাথে একদম মিশে গেছে! ভোর হচ্ছে, লোকজন আসছে তাকে মর্গে নেয়ার জন্য। না না, সে তো এক্সিডেন্টে মারা গেছে তাকে নিয়ে যাবে লাশ কাটা ঘরে। তারপর এই শরীর কে যাচ্ছেতাই ভাবে কাটা হবে। কী অসহ্য স্বপ্ন! ফারিয়ার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে! ভেতরের ফারিয়া প্রতিনিয়ত একটু একটু করে মারা যাচ্ছে। কেউই খেয়াল করছেনা। তার মাও বুঝতে পারছেনা। বুঝবেই বা কীভাবে ফারিয়া তো তাকে কিছুই জানতে দেয়নি।
আফতাব হোসেনের ঘুম ভাঙলো তার ছেলেদের ডাকে। চোখ মুছতে মুছতে মোবাইলে সময় দেখে প্রায় আঁতকে উঠলেন। ৯ টা বাজে কিন্তু এখনো তার ঘ ভাঙেনি কেনো? প্রতিদিন ঠিক ৬ টায় তার ঘুম ভেঙে যায়। তাহলে আজকে এমন কেনো হলো? রাতের কথা তার মনে পড়লো। রাত ৩ টা পর্যন্ত রেহানা আর সে গল্প করেছে। সে গল্প করেছে ব্যাপারটা ওরকম না। রেহানা গল্প করেছে আর সে আদর্শ লিসেনারের মতো শুনেছে। অন্যদিন রেহানার সাথে ২ মিনিট কথা বললেই মেজাজ খারাপ হয়ে যেতো। কিন্তু গতরাতে একটুও বিরক্ত আসেনি তার মধ্যে। বরং তার ইচ্ছা করছিলো রেহানা আরো গল্প করুক। গল্প গুলো যে খুব জরুরি কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা না। পাশের বাসার ভাবী শুকনা মরিচ ধার নিয়ে আর দেননি। চাল ধার নিয়েছিলো আগে তাও দেয়নি ফেরত। এবার কিছু চাইতে আসলে সে কিছুই দিবেনা।
মেয়ে জাত বড্ড অদ্ভুত। সামান্য ব্যাপার গুলোকে অসামান্য করে তুলতে এদের জুরি নেই। এসব বিষয় গুলো যে গল্প হতে পারে এটা নারী ছাড়া কারও বের করা সম্ভব না।
দেরি হওয়াতে মেজাজ খারাপ ছিলো কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন
– কী ব্যাপার বাপ জানেরা, আজকে আপনারা ডাকতে আসছেন?
ছোটো ছেলেটা চোখ বড় বড় করে বললো
– জানো বাবা, আম্মু আজকে খুব মজার খাবার রান্না করেছে। আর বলেছে আজকে সবাই সকালে একসাথে খাবো। তুমি তো উঠছো না আর এদিকে আমাদেরও খিদে পেয়েছে। উঠো না বাবা।
আফতাব হোসেন বললেন
– আচ্ছা আমি উঠছি। তোমাদের মাকে বলো খাবার টেবিলে দিতে।
ছেলেরা হুড়োহুড়ি করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
আফতাব হোসেন নিজের অজান্তেই হাসলেন। ছোটো ছেলেটা পুরো মায়ের ফটোকপি। মায়ের মতোই গল্প করতে পটু।
এতো সুন্দর সুখ থেকে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। আহাম্মকের মতো কাজ করেছেন। এখন আর না।
চলবে……
© Maria Kabir

সত্যিকারের ভালোবাসা

1

সত্যিকারের ভালোবাসা

লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় কিছু বই কিনতে গিয়েছিল অন্তরা,সঙ্গে বান্ধবি মিতু। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছিলনা। অদূরে দাঁড়িয়ে এক জোড়া চোখ অপলক ভাবে যে তাকেই অনুসরণ করছে বেশ বুঝতে পারছে সে। অন্তরা আদর্শ রূপবতী বলতে যেমনটি বোঝায় ঠিক তেমন। গায়ের রং কাঁচা হলুদের মতই, উচ্চতা ৫ফিট ৩। কোমর ছাড়ানো চুলে ঢাকা পিঠ। অসম্ভব সুন্দর শারীরিক গড়ন যে কোন মেয়ের হিংসার কারণ। এমনকি তার হেঁটে চলার ধরণটাও দৃঢ় অথচ নমনীয়। এমন মেয়েকে কার না পছন্দ?!!!
কোনরকমে কাজ মিটিয়ে বাসায় ফিরে এলো দু’বান্ধবি।
পরদিন কলেজে যাওয়ার সময় বাস থেকে নেমে চোখ আটকে গেলো অন্তরার। হ্যাঁ, গত কালকের সেই ছেলেটাই তো দাঁড়িয়ে।
দেখে তো মনে হচ্ছে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। কিন্তু আমি যদি ওকে কিছু বলতেও যায় আর সেটা যদি ঐ জল্লাদ স্যারটার কানে যায় তাহলে কপালে নির্ঘাত শনি আছে।
না, না! এখানে এক মুহূর্তও দাঁড়ানো যাবে না। ছেলেটাকে কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে অন্তরা দৌঁড়ে সে স্থান ছেড়ে পালায়। কলেজ ছুটির পর বান্ধবি মিতুর অনুরোধে নাইনটি নাইনে গিয়েছিল অন্তরা।
দোকানের কাচের গ্লাসের দিকে চোখ যায় অন্তরার। মনে হচ্ছে সানগ্লাসের আড়ালে একজোড়া চোখ যেন ওর দিকেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বান্ধবীকে একা রেখেই চটজলদি সে স্থান ত্যাগ করতে চাচ্ছিল অন্তরা, কিন্তু পারে নি।
ছেলেটি সামনে এসে দাঁড়ালো-
“একটি মাত্র কথা বলবো প্লিজ….”

অন্তরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো, ভালোবাসি…..
– এত সহজে? কতটা চেনেন আমাকে??? —–জবাব আসে, ঘুম হয়নি সারারাত।
– এটা জবাব হলো?
——অপছন্দের অধিকার আপনার আছে। তবে না করবেন না প্লিজ, যদি না অন্য কোথাও এনগেজড থাকেন। খুব ভালোবাসবো ,বললো বাঁধন।
কিন্তু অন্তরা চায়না প্রেম করতে। সৌন্দর্য দেখে তার ভালবাসা, সান্নিধ্য পেতে চায় হাজারো যুবক। এটা তার পছন্দ না, তাকে জেনে বুঝে কেউ ভালবাসুক সেটাই চায় সে।
ছেলেটার একটাই প্রশ্ন ছিলো, “আপনি কি কোথাও এনগেজড?”
জবাবে অন্তরা বিরক্তিভাব নিয়ে ‘না’ বলে চলে গেলো। কিন্তু ভেবে পেলনা, ছেলেটি তার কলেজ চিনলো কি করে?
পরদিন ভয়ে ভয়ে কলেজ গেলো, না সে আসেনি। খুশী হলো অন্তরা।
সন্ধ্যায় মা এলো দু’মগ কফি নিয়ে। কফিতে চুমুক দিতে দিতে একটি বায়োডাটা হাতে দিয়ে বললো, দেখতো ছেলেটা কেমন??? কথা বলা যাবে? তোর বাবার বেশ পছন্দ হয়েছে।
– পর করে দিতে চাও?
—– নারে পাগলী তুই তো নিজে পছন্দ করবিনা পণ করে বসে আছিস। তাই তো আমাদের ভাবতে হচ্ছে।
– আমাকে কেন বলছো মা? তোমরা যেটা ভালো বুঝবে। তবে পরীক্ষার আগে এ বিষয়ে কিছু ভেবো না। ছয় মাস পর ।
কথা এগুলো দুই পরিবারের মধ্যে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ভাল জব করে, ফ্যামিলিও ভালো। যদি উভয় পক্ষের পছন্দ হয় তবে অন্তরার পরীক্ষার পর বিয়ে। এখন এনগেজমেন্ট করে রাখা হবে। দেখাদেখির দিন নির্ধারণ হলো। অন্তরা গোলাপী শাঁড়িতে হালকা সেজে সামনে এলো। কিন্তু একি?!
এ যে সেই ছেলে যাকে দেখেছিল সে বাসস্টপের সামনে কলেজ গেটে।
ছেলে মেয়েকে কথা বলবার সুযোগ করে দিয়ে অন্যরা পাশের ঘরে যেতেই অন্তরা বললো, আপনি???
—- হ্যাঁ, আমি বাঁধন। জানি প্রশ্ন করবেন , আমার কলেজ চিনলেন কি করে ???
ফলো করে। লাইব্রেরি থেকে বাসা, পরদিন বাসা থেকে কলেজ। সেখান থেকে বাসায় ফিরে মাকে বলা। এরপর সব ব্যবস্থা মা’ই করছেন।

সকলের সম্মতিতে বিয়ে ঠিক হলো,
পরের সপ্তাহে এনগেজমেন্টও হয়ে গেলো। শুরু হলো ফোনালাপ, মাঝে মাঝে কফিসপে দেখা। বাঁধন ভীষণ ভালো ছেলে, ভীষণ কেয়ার করে। অন্তরা খুশী হলো। বাঁধন তো হাতে চাঁদ পাওয়ার মত খুশী।
পরীক্ষা শেষ।
বিয়ের কেনাকাটা শুরু।
এলো হলুদ লগ্ন।
একদিন পর বিয়ে।
সন্ধ্যায় অন্তরার ফোন-
“মিতুদের বাসাতে একবার আসবে?”
অন্তরার গলাটা কাঁপছে কেন?
বাঁধন ধরে নিলো বিয়ের উত্তেজনাতে হয়তো। কিন্তু আজ দেখা কেন করতে চাইলো অন্তরা? বাঁধন ভাবে মনে হয়,
বিয়ের আগে শেষ বারের মত দেখা করতে । খুশী মনে অন্তরার প্রিয় চিপস ও একটা বেলির মালা নিয়ে বাঁধন হাজির হলো মিতুদের বাসায়। মিতু তাকে ছাদে নিয়ে গেলো, আঙুল ইশারা দিয়ে অন্তরাকে দেখিয়ে দিয়ে নীচে নেমে গেলো মিতু।
অন্তরা ছাদের গ্রিল ধরে বাঁধনের বিপরীতমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। বাঁধন কাছে গিয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে, লক্ষ্মী! বাঁধন অন্তরাকে লক্ষ্মী বলেই ডাকে। দু’হাত দিয়ে ধরে অন্তরাকে সামনে ফেরাতে ফেরাতে ভাবে আজ অন্তরাকে সে প্রথমবার ভালোবাসার উষ্ণ আদরে অধর ছুঁয়ে বুকে টেনে নিবে। ভাবতে গিয়ে প্রবল উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে বাঁধন। মনে মনে ভাবে অন্তরা কিছু ভাববে নাতো? কিন্তু অন্তরা মুখ ফেরাতেই চমকে ওঠে বাঁধন।
একি???
অন্তরার পুরো মুখ কেটে ছিড়ে একাকার। মুখের এক দিকে ব্যান্ডেজ করা।
কি করে হলো?
অন্তরার শান্ত জবাব এক্সিডেন্ট…..
প্রায় বিশটার মত সেলাই লেগেছে।
বাঁধন শোকে যেন পাথর, চোখ জ্বালা করছে ওর। কখন হলো?
জবাব না দিয়ে অন্তরা বললো বিয়েটা ভেঙে দিন, যে অন্তরাকে আপনি পছন্দ করেছিলেন সে তো অন্যকেউ। আমার এ দাগ চিরদিনের। বাঁধন আঙুল দিয়ে অন্তরার ঠোঁট চেপে ধরে বলে, তুমি একথা বলতে পারোনা লক্ষ্মী। আমার কিছু হলে তুমি কি ছেড়ে যেতে বা যদি বিয়ের পর হতো??? বিয়ে হবে এবং তা কালই কথাটা বলেই অন্তরাকে দু’হাতে বুকে জড়িয়ে নেয় বাঁধন। অন্তরার তখন চোখে জল।
ইয়া বড় ঘোমটা পরে বিয়ের আসরে আসে বৌ বেশে অন্তরা। বিয়ের আচার অনুযায়ী আসে আয়নাতে মুখ দেখা পর্ব। মিতু বলে, দেখুন কে বেশী সুন্দরী? আমার বান্ধবী না চাঁদ? বাঁধন আয়নাতে তাকিয়ে পাগলের মত চিৎকার দিয়ে ওঠে,
এ আমি কি দেখছি? আমাকে…..(…..)…??আর বলতে দেয় না অন্তরা। আচলের নীচ দিয়ে বাঁধনের হাত চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে, যা বলার পরে বলো। সুসম্পন্ন হলো শুভ কাজ। পুণ্য চোখের জলে বিদায় নিলো অন্তরা। এলো বাসর লগ্ন।
— তুমি এমন কেন করলে???
এত পরীক্ষা নিতে হয়? আমার ভালবাসার উপর বিশ্বাস ছিল না বৌ?
আমি শুধুই দেখতে চেয়েছিলাম, আমার রূপকে না আমাকে ভালোবাসো তুমি? ক্ষমা করে দাও, তুমি জিতে গেছো।
মেকাপটা কেমন ছিল বলো তো???
বাঁধন বললো, নিখুঁত। কে সাজিয়েছিল?
মিতুদের ভাড়াটিয়া, টিভির মেকআপ আর্টিস্ট। হাসতে হাসতে বাঁধন বললো, তার তো এ্যওয়ার্ড পাওয়া উচিত।

অন্তরার মুখ এতক্ষণে বাঁধনের হাতের তালুতে বন্দী। অন্তরার কপাল ভিঁজে যাচ্ছে আনন্দ অশ্রুতে বাঁধনের অপলক চাহনির সামনে। অন্তরার কথা বলবার ক্ষমতা চুষে নিলো বাঁধন। অন্তরা এখন বাকরুদ্ধ ।।

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

কতো দিন ভুলে গেছি ঘুম

0

কতো দিন ভুলে গেছি ঘুম !!

জানো প্রিয়তম__
মনে পড়ে না,
শেষ কবে বালিশে মাথা রেখে
তলিয়ে গেছি গভীর ভারী
মৌগন্ধী কোনো ঘুমের অতলে !!

যখনই চোখ বন্ধ করি,
বন্ধ চোখের পাতায় অন্ধকার নামে না,
কেমন যেন আলোয় আলোময় হয়ে ওঠে চারিদিক। জানো,
বুক থেকে উঠে আসা একটা
তিরতিরে ব্যথা গলা বেয়ে
উঠে এসে একটা মস্তো বড়ো
পুকুর হয়ে টলটল করতে
থাকে চোখের কোলে !!!
সেই আলোর মধ্যে আঁতিপাতি
করে করে খুঁজি,
একটা চেনা মুখ,
একটা চেনা হাসি,
দুটো চেনা চোখ….
ব্লটিং কাগজর মতো মনটা
তৃষ্ণার্ত হয়ে খালি শুনতে চায়
একটি চেনা স্বর…
লক্ষ্মী কী করছো ?
ভালো আছো ?
খেয়েছো ? কী খেলে???

হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাই ঐ
স্বর,
প্রাণপণে সব আলোকে
তাড়িয়ে আঁকড়ে ধরতে চাই
অন্ধকার,
যে অন্ধকারে স্বপ্নরা
নেমে আসবে হাত ধরাধরি করে;
যে স্বপ্নের মধ্যে থাকবে তুমি,
যে স্বপ্নের মধ্যে খেলে বেড়াবে
তোমার শব্দেরা….

কিন্তু অন্ধকার আসে না!! স্বপ্নেরা আসে না !!!
স্বপ্নের বাইরে দাঁড়িয়ে চুপি চুপি
হাসো তুমি,
তোমার ছায়া,
টলটল করে কাঁপে
চোখের পুকুরে ………..

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

বিশ্বাস

0

 বিশ্বাস

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

একবার ; হ্যাঁ একবার যখন তোমায় ভালোবেসেই
ফেলেছি-
তুমি আমাকে চাইলেই এখন একটি ট্রাকের নীচে
ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারো মজা করতে করতে,
আমি তোমার মজাতেও বিশ্বাস রাখি যে!
হয়তো একটু খেলাচ্ছলে আমাকে ফেলে দিতে
পারো পাহাড় থেকে,
আমি গড়িয়ে পড়তে পড়তে তোমাকে দেখার চেষ্টা
করতে পারি,
তখন মনে হবে তুমি নও, আমিই বোধহয় পা ফসকে
পড়ে গেছি।
আমি তোমাতে এত বিশ্বাস রাখি যে!
আমি তোমাকে একবার ভালবেসেছি,
মাত্র একবার-
তারপর থেকে অবিরাম বিশ্বাস করে যাই।
আর তাই তুমি চাইলেই আমার হৃৎপিন্ডকে একটা
ব্লেন্ডারে ফেলে কুচিকুচি করে ফেলতে পারো উল্লাসে!
তোমার ইশারায় আমার চোখ পাথর হতে পারে
এখন,
তোমার ইশারায় আমি থমকে যেতে পারি ক্যান্সারের
খবর পাওয়া সাতাশ বছরের যুবকটির মত।
তোমার ইশারাকে যদিও আমি খুব বিশ্বাস করি-
এবং তোমার একটি মাত্র ইশারায় ভেঙে যেতে পারে সাতআসমান!
আমি মাত্র একবার তোমার প্রেমে পড়েছিলাম,
তারপর বহুবার কেঁদে ভাসার মত ভালোবেসেছি!
মাত্র একবার বুঝতে পেরেছিলাম তোমাকে আমি
ভালোবাসি,
তারপর বহুবার মাঝরাতে কেঁপে উঠেছি দুঃস্বপ্নে!
কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করি-
আর তুমি চাইলেই চুমু খেতে খেতে বুকে ঢুকিয়ে দিতে পারো তীব্র ছুড়িকা!
একটা একটা করে কেটে দিতে পারো রক্তনালী,
ফিনকি দিয়ে বের হবে বিশ্বাস,
বিশ্বাসের রঙ লাল!
আমি তোমাকে একবার ভালোবেসেছি, তখন থেকেই আমার ভালো থাকা মন্দ থাকার কারণ হয়ে উঠেছো তুমি।
তুমি চাইলেই আমি দেবদূতের মত জ্যোতির্ময়,
তুমি চাইলেই আমি পঁচা গলা এক মরা মাংসপিন্ড!
তবে আমি তোমাকে বিশ্বাস করি-
বিশ্বাস করি বলেই তুমি আমার কাছ থেকে চুমু
খেয়েও অন্যকারো সাথে শুতে পারো!
তুমি কারো সাথে ফোনালাপে জমজমাট প্রেম
করতে পারো,
তুমি চাইলেই হঠাৎ করে কেড়ে নিতে পারো আমার
সুস্থতা।
তুমি চাইলেই আমাকে নিখোঁজ করে দিতে পারো,
আর আমি তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই-
তুমি বিষকে অমৃত বলে খাওয়াতে পারো!
আমি তোমাকে একবার ভালোবেসেছিলাম,
সেই থেকে নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে আমি
তোমাকে বিশ্বাস করছি।
 

যে মেয়েটা তোমাকে প্রতিঘন্টায় মেসেজ পাঠাতো

0

– যে মেয়েটা তোমাকে প্রতিঘন্টায় মেসেজ পাঠাতো,

 

যার পৃথিবী ছিলো তুমিময়, যে খাওয়ার আগে জেনে নিতো তুমি খেয়েছো কিনা? জবাবে তুমি রিপ্লাই না দিয়ে নিয়ম করে তাকে অবহেলা করতে । সে মেয়েটাও একদিন তোমাকে মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিবে । বোকা মেয়েটা বুঝে যাবে ভুল জায়গায় মেসেজ পাঠালে রিপ্লাই আসে না!

– যে মেয়েটার রাত জেগে কান্না করার উপলক্ষ্য তুমি, যাকে তুমি প্রতিরাতে ঘুমের বদলে কান্না করতে বাধ্য করেছো, সে মেয়েটাও একদিন রাতে স্বামীর কাধে মাথা রেখে ভুলে যাবে তোমার কথা । স্বামীর কাধে মাথা রেখে সে মুচকি হেসে নিজে নিজেই ভাববে ‘আমি কি বোকা ছিলাম!’

– যে মেয়েটাকে ভালোবাসার কথা বলে তাকে দিয়ে নিজের একাকিত্ব দূর করেছো, সেও একদিন তোমাকে কল দিয়ে বলবে ‘তুমি আমাকে খেলনা পুতুল ভেবে খেলেছো, এখন একজন আমাকে পুতুলের মতো যত্নো করে । সে আমাকে নিয়ে খেলেনা, জানো? পুতুল কে কিভাবে রাখতে হয় তুমি জানোনা ।’

– যে তোমাকে ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার কাছে এসেছিলো, তুমি তাকে ‘সস্তা মেয়ে’ ভেবে পাত্তা দাওনি, সেও একদিন কারো ভালোবাসায় আবদ্ধ হবে এবং তুমি সেটা দেখে ভিতরে ভিতরে জ্বলে যাবে । নিশ্চিত!

প্রকৃতি একটা নিয়ম করে রেখেছে! যে অবহেলা করবে, সে অবহেলা পাবেই! কেউ হয়তো খুব ভালোবাসে বলে বদদোয়া দিতে চায় না, প্রকৃতি ‘মানুষ’ না বলেই হয়তো এই দোয়া-বদদোয়া’র ধার ধারে না । সে একটা জিনিস ই বুঝে, ‘তুমি যা করবে, সেটা ফেরত পাবেই! আজ কাউকে কষ্ট দিলে, কাল অন্যজন তোমাকে কষ্ট দিবেই ।’ এই শাস্তি থেকে অতীতে কেউ পার পায়নি, আজ ও পাচ্ছে না, আগামীতেও পাবেনা!

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

সে খুব আস্তে করে বললো আমাদের আর কথা হবে না

0

সে খুব আস্তে করে বললো “আমাদের আর কথা হবে না!”

তার এই আস্তে বলা কথা টাই আমার বুকে প্রচন্ড জোরে আঘাত করলো!

আমি নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । নিজেই নিজেকে আবার জিজ্ঞেস করলাম “না মানে সিরিয়াসলি আমাদের আর কথা হবে না? একদম ই না?”

সে চুপ করে রইলো আর আমি চুপ মেরে গেলাম । যার সাথে কথা না বললে অস্থির লাগে, যার কাছে সারাদিনের কথা না বললে শান্তি লাগে না, তার সাথে কথা না বলে থাকতে হবে??

প্রথম বার ‘ভালোবাসি’ শুনে যেভাবে কেঁপে উঠেছিলাম, আজ আবার ‘কথা হবে না’ শুনে সেভাবেই কেঁপে উঠলাম । আমার মাথায় বারবার ঘুরছিলো “আমাদের আর কথা হবে না । কখনো না!”

সম্পর্ক কিছুতেই আটকাতে না পারলে মানুষ শেষে ‘বেহায়া’ হয়ে যায় । আমিও সেই পথে হাঁটলাম । খুব অনুরোধ এর সুরে বললাম “দেখো, সারাদিন কথা বলতে হবে না । তুমি যখন ভালো লাগে, তখন ই কথা বইলো । তবুও একটু কথা বইলো প্লিজ! তোমার সাথে কথা না বললে আমি বোধহয় দম আটকেই মরে যাবো!”

সে বোধহয় বিরক্ত হলো! আমার আকুতি কিংবা মৃত্যুর খবর কোনোটাই তাকে ছুঁয়ে গেলো না! মানুষ কি ভীষণ করে বদলায়!

সে নীরবতা ভেঙে বললো “ভালো থেকো!”
আমি কোথাও ভাঙনের শব্দ পেলাম । মন ভাঙার শব্দ । বিদায় বেলায় নিষ্ঠুরতার সাথে কারো ভালো চাওয়ার মত বাজে দৃশ্যের অভিনেতা হতে চাইনি, অথচ আমার কপালে সেটাই ছিলো!

তাকে আর কোনভাবেই আটকানো
গেলো না । মানুষ একবার যেটা ঠিক করে ফেলে, সেটা থেকে তাকে সরানো যায় না । জোর করলে হয়তো সে করুনা করে আমার সাথে কথা বলবে । কারো করুনার পাত্র হওয়ার মতো বাজে আর কিছুই নেই । তার চেয়ে মেনে নেওয়া ভালো “আমাদের আর কথা হবে না ।”

লেখা- অনামিকা ইসলাম।