Wednesday, August 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1596



রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৪
নুহাশ ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে আজ প্রায় ৪ মাস পরে নিজের বাসায় পা রেখেছে মাইশা।খালামণি, আরিয়াপু , খালুজান, আয়াত সবাই এসেছে।পুরো বাড়িতেই খুশির আমেজে ভরপুর। আগামীকাল গায়ে হলুদ হবে তাই আজই সবাই এখানে এসেছে।মাইশার আম্মু বাড়ির একাজ ওকাজ করতে ব্যাস্ত।মাইশার আব্বুর সাহায্য করার জন্য আনান আর সামাদও এসেছে।মাইশা ওর আব্বুর কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে,
.
”কেমন আছো আব্বু?”
.
মাইশার আব্বুর চোখে জল থাকলেও মুখে এক তৃপ্তির হাসি। তার কাছে এখনো মনে হচ্ছে এইতো কিছুদিন আগেই মাইশার ছোট ছোট হাতগুলো আকড়ে বিকেলে অসীম পথে ঘুরে বেড়িয়েছিলো দুজনে। আর আজ সেই মেয়েই কত বড় হয়ে গিয়েছে।মাইশার মাথায় নিজের হাত বুলিয়ে বলে,
.
”ভালো আছি মামণি? তুমি ভালো আছো তো?”
.
”মাইশাকে নিজের মেয়ের মতো রেখেছি রহমান।চিন্তা করো না ও অনেক ভালো আছে।”(খালু)
.
”দেখেছো…..বাবার কাছে গিয়ে সব ভুলে গেছে মেয়েটা।আমিও তো আছি”
অভিমানি গলায় বলে ওঠে মাইশার আম্মু।একথা শুনে মাইশা মুখে হাসি ফুটিয়ে তাকেও জরিয়ে ধরে।
সবার সাথে দেখাসাক্ষাৎ শেষ করে নিজের ঘরে আসে মাইশা। এই ঘরে নাকি প্রতিদিনই ওর আব্বু আসে একথা ভেবেই মনে এক অজানা প্রশান্তি ছেয়ে যায় তার। একপাশে সুন্দর করে বুকশেল্ফে নানা ধরনের বই সাজানো আছে; পাশেই রয়েছে পরিত্যাক্ত পড়ার টেবিল।মাইশা আসবে বলে হয়তো কলাপাতা রঙের একটি বিছানার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে আম্মু।এসব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতে হঠাৎ পেছন থেকে একটি সুর ভেসে আসে ,
.
”বাড়িতে মা-বাবা-ভাইকে পেয়ে মনে হয় জামাইকে ভুলে গিয়েছো…..তাই না?”
.
আয়াত দরজায় দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে একথা বলে ওঠে। মাইশার দিকে চোখের দৃষ্টি তার প্রখর।মাইশা কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে আয়াতের দিকে। এই বাসায় এসেছে সর্বোজোড় আধঘন্টা হয়েছে আর আয়াত তাকে এই কথা বলে দিলো।ব্যাগ থেকে আলমারিতে কাপড় রাখতে রাখতে সে বলে ওঠে,
.
”আয়াত , সত্যি তুমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছো।তোমাকে ভুলে যাবো কেন? দেখো….তোমার কথা অলয়েজ আমার মাথার উপর দিয়ে যায় তাই কথার অর্থ আমি জানিও না আর জানার চেষ্টা করবো না।”
.
আয়াত মাইশার কথা শুনে কোনো react করে না।ওর দিকে তাকিয়ে চুইংগাম চাবাতে চাবাতে বলে……
.
”তোমার ইঁদুরে মাথায় তা ঢুকবেও না। বাই দ্য ওয়ে ইন্জয় ইউরসেল্ফ এলোন। আই উইল কাম ব্যাক সুন।”
.
আয়াতের কথাগুলো বুঝতে তার পুরো দুই মিনিট লাগলো।এই ছেলেটা আসলেই তার এক্সপেক্টেশনের বাইরে। যখনই সে ভাবে আয়াত এখন এমন করবে তখনই আয়াত তার পরিকল্পনাকে আগুনের সাথে ধুলিস্যাৎ করে অন্য কিছু করে বসে যা মাইশার ধারনার বাইরে।
.
************
.
কনেপক্ষের কিছু লোকজন আজ বাজার করে নিয়ে এসেছে মাইশাদের বাসায়।মাইশা ভিন্নগ্রহের প্রাণীর মতো সোফায় বসে ইনায়া আর পৃথার সাথে এমন দৃশ্য উপভোগ করছে। বিয়ে বাড়িতে যে এত নিয়মকানুন থাকে তা মাইশার মোটামুটি ধারনাতে ছিলো কিন্ত অজানা কারনে এসব কিছু অনেক অদহভুদ লাগছে ওর কাছে। যদিও নুহাশদের পক্ষ থেকে বাজার আনার ক্ষেত্রে একটু দ্বিমত করেছিলো কিন্ত কনেপক্ষদের এমন নিয়ম থাকার কারনে তারা বিনিময়ে কিছু বলেনি।
আয়াতও নুহাশের সাথে দাঁড়িয়ে মেহমানদের সাথে কথা বলছে ; কখনো আবার একাজ-ওকাজ করতে ব্যাস্ত। মাইশা হঠাৎ খেয়াল করে একটি মেয়ে আয়াতের কাছে এসে কথা বলছে।মেয়েটির কথায় কখনো কখনো আয়াত হেসে উঠছে তো কখনো আয়াতের কথায় মেয়েটি হেসে পাড়লে আয়াতের গায়ের ওপর পড়ে যাচ্ছে।ইনায়া এবার মাইশার কানে কানে বলে……
.
”মাইশু দেখছিস ……ওই শাকচুন্নিটা মনে হয় আয়াত ভাইকে পটানোর চেষ্টা করছে।”
.
মাইশা ইনায়ার কথার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
.
”মেয়ে মানেই কোনো সুন্দর ছেলে পেলে তাকে পটাবে? এখন আমার জামাই সুন্দর হলে আমি কি করবো? অন্য মেয়েদের মতো গলা ফাটিয়ে বলবো যে ; এজন্যই সুন্দর ছেলে আমি বিয়ে করতে চাই না ; কি বলবো?”
.
মাইশার এ কথা শুনে ইনায়া আর পৃথা দুজনেই চোখ বড় বড় করে ফেলে।মাইশার কপালে গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
”এই তুই ঠিকাছিস? এমন আজব আজব কথা বলছিস কেন?”
.
”কেন কি হয়েছে?”(মাইশা)
.
”আরে গাধাআআআ ! তোর জামাইকে ওই মেয়েটা পটাতে চাইছে আর তুই দিব্যি বসে আছিস? ছেলেমানুষ এত ভালো হয় না।এদেরকে যতই সুযোগ দিবি ততই এরা ছাড় পেয়ে যায়।”
.
ইনায়ার এ কথাটা মনে ধরে মাইশার।আয়াতকে সে অবিশ্বাস করছে এমন না ; শুধু ওই মেয়েটার জন্য insecure feel হচ্ছে। এতক্ষণ কিভাবে আরামসে বসে চিপস খাচ্ছিলো সে?
.
কিছু একটা ভেবে আয়াতের কাছে যায় সে। তারপর ন্যাকা সুরে বলে ওঠে….
.
”আয়াত বেবি ! কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি আর তুমি এখানে কথা বলছো?”
.
মাইশার এরকম কথা শুনে রীতিমতো বিস্ময়ের ধাপে পৌছে যায় আয়াত।মাইশার কপালে-গলায় হাত বুলিয়ে বলে…
.
”আর ইউ ওকে মাইশা?নেশা-টেশা করেছো নাকি?”
.
আয়াতের হাত ধরে বলে ওঠে,
”একটুও না বেবি ! (মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাইশা বলে) তুমি কে আপু?”
.
”আমি কনের বোন।তুমি বোধহয় জিজুর বোন তাই না?”
.
”হুম। আর এটা আমার লাভলি হাজবেন্ট।”
.
মাইশার একথা শুনে মেয়েটি একটু অবাকচোখে আয়াতের দিকে তাকায়।বোধহয় তার ক্রাশকে একমুহূর্তেই শুকনো বাঁশ বানিয়ে ফেলেছে মাইশা।একটু মলিন কন্ঠে বলে ওঠে…
.
”ওহ্, তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো না।”
.
”বলো কি আপু? আমাদের তো লাভ ম্যারেজ।”
.
আয়াত যেন ধাপে ধাপে অবাকের নতুন সিড়িতে পা রাখছে।মাইশার এবার আয়াতের হাত টেনে তাকে ড্রইংরুমের এককোণে নিয়ে আসে।তারপর আয়াতের সবুজ পাঞ্জাবীর কলার চেপে কড়া গলায় বলে ওঠে….
.
”বিয়ে হয়ে গিয়েছে ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আর এখনো অন্য মেয়েদের সাথে লুতুপুতু না করলে ভাল্লাগেনা ?”
.
”কার ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আমিতো এখনো কিছুই করিনি?”
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-২৯+৩০+৩১

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২৯
.
চোখটা পিটপিট করে খুলতেই প্রথমে চোখ যায় সিলিয়ে আস্তে করে চলমান ফ্যানটার দিকে। মাথাটা তার এখনো ঝিম ধরে আছে।কাঁপাকাপা হাতে নিজের হাতটি নাড়াতে চাইলেই নাড়াতে পারেনা আয়াত।পাশে তাকিয়ে দেখে তার হাতে স্যালাইন এর সরু পাইপটি লাগানো।আয়াত মনে করার চেষ্টা করছে সে এখানে এলো কি করে।পরক্ষণেই হাইওয়েতে সেই দুর্ঘটনার কথাটি মনে পড়ে যায়।
.
আয়াত বুঝতে পেরেছে এখন কোনো হসপিটালে আছে সে।হঠাৎই তার চোখ যায় পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা আরিয়াপুর দিকে।সে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।বোঝাই যাচ্ছে অনেক ক্লান্ত সে।আয়াত মিহি কন্ঠে ডাক দেয়…..
.
”আরিয়াপু?”
.
পাতলা ঘুম দেওয়ার কারনে আয়াতের মিহি কন্ঠ শুনেই ঘুম কেটে যায় আরিয়ার।তারপর সোফা থেকে উঠে আয়াতের কাছে গিয়ে বলতে থাকে….
.
”আয়াত?…তুই ঠিকাছিস…?”
.
আয়াতকে ধরিয়ে আস্তে করে উঠিয়ে বসায় সে।আরিয়া উদ্বিগ্ন গলায় বলতে থাকে…
.
”নুহাশ……আম্মু….খালামণি-আঙ্কেল,,,, তাড়াতাড়ি আসো ,আয়াতের জ্ঞান ফিরেছে।”
,
একথা শুনেই আস্তে আস্তে সবাই ভিতরে আসতে থাকে।আয়াতের চোখ তখনও মাইশাকে একপলক দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে।তখনই আয়াত খেয়াল করে আয়াতের আব্বু মাইশাকে আস্তে করে নিয়ে আসছে।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে মাইশা।আয়াতের আম্মু ছেলেকে ধরে ব্যাকুল কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
”বাবা….তুই ঠিকাছিস?এখন কেমন লাগছে তোর?”
.
”আরে…..আম্মু , কি হবে আমার?দেখোনা আমি ঠিকাছি।”
.
”থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফালায় দিবো ব্যাটা….তোর জন্য সবাই কত চিন্তা করতেসে আর তুই এখনো মশকরা করছিস?”(নুহাশ)
.
মলিন হাসে আয়াত। আয়াত জানে আল্লাহর করুনাতেই এখন সে ঠিক আছে।নইলে যেভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো ; বাঁচার চান্স খুবই কম ছিল।আয়াত আবার মাইশার দিকে তাকায় মাইশা নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে।পারলে তো সে এখনই আয়াতের বুকে ঝাঁপিয়ে হুহু করে কেদে দিবে কিন্ত কোনো এক কারনে সে এগোতে পারছে না।
.
ডাক্তার আসলেই সবাই আয়াতকে ছেড়ে ডাক্তারের দিকে দৃষ্টি দেয়।ডাক্তার কিছুক্ষণ তার কন্ডিশন দেখে আর চেকাপের ভিত্তিতে বলে ওঠে……
.
”He is absolutely fine now, মাথায় আর বুকের কাছে সামান্য একটু ইন্জুরি হয়েছে ইনশাল্লাহ দু’তিনদিনের মধ্যেই ব্যাথাটি সেরে যাবে।তবে উনার এখন সম্পূর্ন বেড রেস্টের প্রয়োজন। তার সুস্থতার ওপর ডিপেন্ড করে তা একদিনও হতে পারে আবার এক সপ্তাহও হতে পারে।আজ উনাকে রিলিজ করে নিন।টেক কেয়ার অফ ইউরসেল্ফ ইয়াং ম্যান (আয়াতকে উদ্দেশ্য করে)
.
.ডাক্তার চলে যাওয়ার পরেই সবাই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে আয়াতকে রিলিজ করানোর জন্য।তাই কেবিনে এখন শুধু বসে আছে মাইশা আর আয়াত।যেই না সবাই কেবিন থেকে চলে গেল অমনি মাইশা দরজাটা লাগিয়ে আয়াতের কাছে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে আয়াতের বুকে।বাচ্চাদের মতো হু হু করে কাঁদতে থাকে সে।
.
এদিকে আয়াতের তো নাজেহাল অবস্থা।এমনিতেও বুকে অনেক ব্যাথার কারনে ব্যান্ডেজ করা অংশটি অনুভব করতে পারছে সে।আবার মাইশার এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়াতে ব্যাথার জন্য মুখ থেকে ”উহ” করে একটা প্রতিধ্ধনি বের হয়।
.
মাইশা তবুও নড়াচড়া করে না।আয়াতের বুকে লেপ্টে থাকে।আয়াতের ব্যাথা করলেও বুকের খালি জায়গাটাতে মাইশাকে অনুভব করতেই ব্যাথাটাকে নিমিষেই আনন্দে পরিণত করে ফেলে সে।মুখে এখনো রয়েছে একরাশ বিস্ময়।
.
” এভাবে কাঁদছো কেন….মাইশা? আমি তো আর মরে যাইনি…”
.
”মরার তাহলে খুব ইচ্ছা ছিল না?আমি বারবার বলেছি আয়াত হাইস্পীডে গাড়ি চালিয়ো না।কিন্ত আমার একটা কথাও তুমি শুনো?আমি তোমায় ভালোবাসিনা বলে আমায় শাস্তি দিতে চাচ্ছো তাই না?এজন্যই আদ্রাফের মতো তুমিও আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলে….”
.
”আমি……”
,
”খবরদার…..আর একটা কথাও না।অনেক রাগ না আমার উপর?এক কাজ করো মেরে ফেলো আমায় । তবুও আদ্রাফের মতো হারিয়ে যেয়ো না প্লিজ….আয়াত আমি তাহলে আর বাঁচতে পারবো না।”
.
একথা বলে আয়াতের সারামুখে নিজের ঠোঁটের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে সে।আয়াত এখনো বিস্ময়ে বসে আছে।মেয়েটিকে এতটা পাগলামি করতে কখনোই দেখেনি সে।মাইশার এই ম্যাচুরিটির ভীড়েও কখনো যে বাচ্চাদের মতো পাগলামি লুকিয়ে ছিলো আয়াত তা কখনোই জানতো না।
.
.
ব্যাস্ত সড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়িটি।সামনের সিটে নুহাশ ড্রাইভ করছে আর পাশে বসে আছে মাইশা।পেছনেই বসে আছে আয়াত আর আরিয়াপু।আয়াত আরিয়াপুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে…
.
”আপু…মাইশা কি এমনই ছিলো চুপচাপ ছিলো?”
,
আরিয়া বড় বড় চোখ করে তাকায় আয়াতের দিকে।যেনো বড় কোনো ভুল কথা বলে ফেলেছে সে।আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”আগে আমি জানতাম শুধু তুই পাগল…কিন্ত তোর সঙ্গে যে তোর বউকেও পাগল বানিয়ে ফেলবি তাকি জানতাম?মাইশা যখন থেকে জানছে যে তোর এক্সিডেন্ট হইসে হসপিটাল পুরা মাথায় তুলে ফেলসিলো।তুই বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা….পুরাই হাইপার হয়ে গিয়েছিলো সে।পরে আব্বু না পেরে ওকে কষে দুইটা থাপ্পড় মারে।”
.
”শ্বশুড় হয়ে নিজের ছেলের বউকে মারলো?”
.
”ছেলের বউ হয়ার আগে মাইশা খালামণির মেয়ে।আর তাছাড়া মাইশাকে কেউ থামাতে পারছিলো না।আব্বু থাপ্পড় দেয়ার পরপরই একেবারে শান্ত হয়ে এককোণায় বসে থাকে ও।পুরাই অবস্থা খারাপ ছিলো।পরে আব্বুই ওর কাছে গিয়ে আগলে নেয় ওকে।”
.
আয়াত এই সবকিছু নীরবে শুনতে থাকে।কারন সে জানে মাইশার এরকম করার কারন।আদ্রাফের মতো ওকেও হারানোর ভয় জেঁকে বসেছিলো মাইশার মনে।তবে এখন সেও কি তার অব্যাক্ত অনুভূতি আয়াতের সামনে প্রকাশ করতে চলছে?
.
.
*****
”খালামণি আজ থেকে আমি আয়াতের সাথেই থাকবো।”
.
একথা শুনে খাবার ছেড়ে সবাই নজর দেয় মাইশার দিকে। আর আয়াত তো কাশতে কাশতে খাবার মাথায় তুলে ফেলেছে।
.
”কিন্ত বাবা….তোমাদের তো হঠাৎ করে বিয়ে হয়েছিলো।আমরা বলছিলাম কি বড় করে অনুষ্ঠানটি….”
.
”না খালামণি….বিয়ে তো বিয়েই।একজন মানুষকে কয়বার বিয়ে করতে বলো তুমি?আমার পরীক্ষাও শেষ তাছাড়া অনুষ্ঠান হলে হবে কিন্ত এখন আমি আয়াতকে কিছুতেই একা ছাড়বো না।প্লিজ খালামণি।”
.
দুষ্টু হাসি হাসে আয়াত। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে গেলো।মাইশাকে চোখ টিপ মারতেই মাইশা চোখ ঘুরিয়ে নেয়।বিড়বিড় করে বলে ওঠে….
.
”লুচুবাঘ কোথাকার।মরে গেলেও এর লুচ্চামি কমবো না।”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন
পর্ব:৩০
.
জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আছড়ে পড়ছে সকালের মিষ্টি রৌদ্দুর।রৌদ্দুরের অগোছালো রশ্মিটা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেলে মাইশা।আড়মুড়িয়ে অন্যদিকে কাঁত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করে সে।কিন্ত আফসোস ! আয়াত এতো জোড়ে তাকে জরিয়ে ধরে আছে যে ঠিকমতো নড়াচড়াও করতে পারছে না সে।কেউই বলবে না যে এই ছেলে অসুস্থ, শরীরের জোর যেন এখনো মাইশার থেকে বহুগুনে বেশি।
.
মাইশা এবার আয়াতের কাছ থেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিতে চায় নিজেকে।কিন্ত আয়াত যেন আরও নিবিড়ভাবে মিশে যায় তার সাথে।মাইশা চোখ তুলে তাকায় আয়াতের ঘুমন্ত চেহারার দিকে।তার ফর্সা মুখে বড় বড় চোখের পাপড়িগুলো যেন তার কাছে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ লাগছে।তার ভাবতেই এখন অবাক লাগে যেই ছেলেটাকে তার সবচেয়ে অসহ্য লাগতো….যে সারাদিন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলতো সেই এখন তার স্বামী ; যার ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই।
.
মাইশা আয়াতের কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট বুলিয়ে নেয়।আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতেই আয়াত তার একহাত নিয়ে আরও কাছে নিয়ে আসে মাইশাকে।চোখটা বন্ধ থাকলেও মুখে এক মুচকি হাসি।
.
”আমার মতো মাসুম বাচ্চাকে একা পেয়ে তুমি আমার সুযোগ নিতে চাচ্ছো। This is not fair মাইশুপাখি !”
.
ভ্রু কুচকে ফেলে মাইশা।আয়াত যে জাগনা ছিল তার এটা ধারনাই ছিলো না।কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়ে গিয়েছে যে।কেননা সে জানে….আয়াতের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে এখন ; আয়াত এবার যেই কথাগুলো বলবে সেগুলো ভাবতেই নুইয়ে যাচ্ছে সে।
.
”তুমি? আর মাসুম বাচ্চা? আমি তোমার সুযোগ নিচ্ছি…তো কিভাবে?”
.
চোখটা খুলে মাইশার দিকে তাকায়।মাইশার ভ্রু কুচকানো আর বিব্রতকর চেহারা দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে….
.
”এইযে আমার কপালে কিস করে…..কিস করসো তো করসোই শুধু কপালে করলে কেন?ঠোঁটেও করতে…..”
,
এবার তড়িঘড়ি করে আয়াতের ওপর থেকে উঠে পড়ে সে।এই ছেলে চরম মাত্রার অসভ্য।এখন এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে মাইশাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে সে।মাইশা ওয়াশরুমে যেতেই আয়াত বলে ওঠে……
.
”মাইশা?”
,
মাইশা পেছনে ঘুরে আয়াতের দিকে তাকায়।খাটে হেলান দিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলে ওঠে….
”আজকে হলুদ রঙের ড্রেস পড়বে।তোমায় এই রঙে দেখতে অনেক ভালোলাগে…..”
.
আয়াতের এই ছোট ছোট মিষ্টি আবদারের মুখে কখনোই পড়েনি সে। এটাই হয়তো কবুল বলার ক্ষমতা।প্রিয় মানুষের মুখে ছোট ছোট ভালোলাগার কথা শুনে অজান্তেই ভালোলাগে সবার মনে।মাইশাও তার ব্যাতিক্রম কোনো কিছু না।মাইশা হয়তো এখনো আয়াতকে মুখ ফুটে বলেনি। কিন্ত সে যে আয়াতকে নিজের মনে জায়াগা দিয়েছে এটা আয়াত আর মাইশা দুজনেই জানে।আর এটাই মাইশার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
.
.
আয়াতের ধমক খেয়ে দুপুরের দিকে ড্রইংরুমে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মাইশা।আয়াত একপাশে পায়ের ওপর পা তুলে আপেল খাচ্ছে।ডানহাতের জয়েন্টে হাল্কা ব্যাথা থাকার কারনে আয়াত এখনো হাতটা ঠিকমতো নাড়াতে পারেনা।এদিকে মাইশা রান্নাঘরে খালামণির সাথে রান্না করতে গিয়েছিলো বলে আয়াতের কড়া ধমক খেয়ে এখন চুপচাপ বসে আছে।আয়াত সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে টিভি ছেড়ে ”Chennai Express” মুভি দেখছে।
.
ওই তামিল ছেলেগুলোর হাতের ওই ভয়াবহ রূপের তলোয়ারগুলো দেখে মাইশারও মনে চাচ্ছে শাহরুখ খানের রিপ্লেসমেন্টে এই আরহাম আয়াতকে রাখতে।কিন্ত কিছুক্ষণ পরে নিজের মাথায় গাটি মেরে বলে এসব কি আবোল-তাবোল ভাবছে সে….।
.
”আমায় মার্ডার করার কথা ভাবা বন্ধ করে আমার সেবার কথা ভাবো।কি মনে করো রান্নাঘরে যাইতে দেইনাই দেখে কোনো কাজ করতে দিবো না?এখন লক্ষী মেয়ের মতো আমার রুমটা গুছিয়ে আসো।You no what অগোছালো রুম আমি মোটেও পছন্দ করি না।”
,
মাইশা অসহায় চোখে আয়াতের দিকে তাকায়।আয়াত ওর দিকে না তাকিয়ে দীপিকার শাহরুখ খানকে লাথ্থি মারার সিন দেখে হাসতে হাসতে বলে ওঠে…..
.
”তোমায় অসহায় ফেস এখন আমার কিছুই করতে পারবে না।জলদি যাও মাইশু,…..আরও কাজ করতে হবে।”
.
একরাশ বিরক্তি নিয়ে মাইশা উঠে সোফা থেকে রুমে যেতে যেতে বলে ওঠে….
.
”শাহরুখ খানের লাথ্থি খাওয়ার সিন দেখে হাসি উড়াচ্ছিস ব্যাটা? মনটাতো চাচ্ছে তোরেও উষ্টা মাইরা ফালায় দেই।”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩১
.
আয়াতের চড়ের ভয়ে টানা এক ঘন্টা ঘর পরিষ্কার করে নিজেকে এখন বেঁদের মেয়ে জোছনা মনে হচ্ছে মাইশার।আয়াত যতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক না কেন ; কোনো কিছুই সে গুছিয়ে রাখে না।আর এই সুযোগে মাইশাকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নিলো বলে মাইশার মন চাচ্ছে আয়াতকে উষ্টা মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিতে। কিন্ত মন যা বলে সবসময় তা করা যায় না।তাই ক্লান্তির কারনে এক লাফে বিছানায় শুয়ে পড়লো সে।
.
.
হাল্কা হাল্কা ঘুম ভর করতেই মাইশা তার ঠান্ডা শরীরে উষ্ণ কোনো কিছু অনুভব করতে পারতেই।কিন্ত চোখ খুলতে তার মোটেও মন চাচ্ছে না।যখন দেখলো সে তার দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা বিরক্তি নিয়ে চোখ খোলে সে।কিন্ত চোখ খোলতেই যখন সে আয়াতকে দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
.
আয়াত কোলবালিশের মতো তাকে জরিয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে আছে।মাইশা আস্তে করে সরে আস্তে নিলেই আয়াত ধমকের স্বরে বলে ওঠে…..
.
”সবসময় পালাই পালাই না করলে ভালোলাগে না তোমার।কই একটু বউকে আদর করবো কিন্ত যেই দারোগা বউ আমার কপালে জুটেছে জীবনেও আদর করতে পারবো না?”
.
”হুহ…যখন কাজ করাইসো তখন মনে ছিলো না?”
.
”কেন?কাজ না করালে আদর করতে দিতে?”(ভ্রু নাচিয়ে)
.
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মাইশা।হুটহাট আয়াতের এমন কাজকর্মে আর কথাবার্তায় কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত মাইশার তা অজানা।আয়াত তা দেখে লম্বা একটা শ্বাস নেয়।মাইশার কোমড় জরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে…..
.
”ভালোবাসো আমায়?”
.
মাইশা মিহি কন্ঠে বলে, ”হুম।”
.
”তো? এত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ো কেন? আমি কখনোই তোমায় বলবো না আমায় জোর করে মেনে নাও….”
.
”এমন কিছুই না আয়াত।”
.
বিনিময়ে মুচকি হাসে আয়াত। আয়াতের মুচকি হাসিটা বরাবরই মাইশার প্রিয়। আয়াত যখন হাসে ডান গালে সুন্দর একটি ভাঁজ পড়ে যা আয়াতের ছোট ছোট চাপ দাঁড়ির ভীড়ে আরও মারাত্নক লাগে।পড়ন্ত দুপুরে আয়াতের এই হাসিটা দেখে ক্লান্তির বিন্দুমাত্র রেশ এখন দেখা যাচ্ছে না মাইশার মনে।আয়াত হঠাৎ দুষ্টু হেসে বলে ওঠে…..
.
”আল্লাহর কসম মাইশা…আমি যদি বড় কোনো ভুল করে ফেলি না তার দায়ী শুধুমাত্র তুমি হবে।”
.
আয়াতের কথা শুনে বোকার মতো ভাবতে থাকে ওর কথার মানেগুলো।আয়াত তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”পেটের কাছে কামিজটা ঠিক করো।”
.
সাথে সাথে আয়াতকে সরিয়ে নিজের জামা ঠিক করে নেয়।আয়াত বামহাতে ভর দিয়ে মাইশাকে দেখে যাচ্ছে।মাইশা রাগী চোখে তাকাতেই আয়াত উঠে আলমারি থেকে একটা রেড চেক শার্ট আর গ্রে জিন্স বের করে।
.
”শার্ট-প্যান্ট বের করলে কেন?”
.
”বাইরে যাবো তাই……”
.
”আয়াত , এখন না। তুমি এখনো ঠিক হওনি।হঠাৎ বাইরে যাচ্ছো কেন?”
.
”যেতেই হবে। ইমপর্টেন্ট কাজ আছে।তাছাড়া সমস্যা হবে না।নুহাশ ভাইয়ার সাথেই যাচ্ছি। ক্যাফেতে ওয়েট করবে আমার জন্য।”
.
মাইশা পরে আর কিছু বলে না। তারকাছে এখনো সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।আয়াতের কাজকর্ম বরাবরই তার মাথার উপর দিয়ে যায়।তাই এ ব্যাপারে বৃথা মাথা ঘামলো না সে।
,
,
সন্ধ্যের দিকে আরিয়াপুর সাথে বসে মাইশা গল্প করতে ব্যাস্ত।খালামণি রান্নাঘর থেকে চা বানিয়ে সবেমাত্র এদিকে এসেছে।খালামণিদের সাথে ড্রইংরুমের পাশের ছোট বাগানটি থেকে ঠান্ডা হাওয়া এসে পরিবেশটা মোহময় করে তুলেছে।সাথে রয়েছে গরম গরম দুধ চা।রাত এখনো সম্পূর্ণ নামেনি দেখে আকাশের লালচে আভাটা এখনো জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ মাইশার মোবাইলে একটা কল আসে।মাইশা দেখে আয়াতের কল। আগের দুইবারের মতো এবার আয়াতের নাম্বার সেভ করতে ভুলেনি সে।ফোন রিসিভ করতেই ভেসে আসে আয়াতের একরোখা কন্ঠ….
.
” মাইশা ! একটু রেডি হয়ে বাহিরে আসো তো।আমি তোমার জন্য বাইরে ওয়েট করছি…..জলদি।”
.
”আচ্ছা…..কিন্ত………..”
.
কল কেটে দেয় আয়াত। মাইশা বুঝতে পারছে না এই সন্ধ্যার সময় এমন কি কাজের জন্য রেডি হয়ে বাইরে যেতে বলছে আয়াত?
.
.
সন্ধ্যে নেমে রাত হয়েছে।গাড়িটি আয়াতের বাসার সীমান্ত থেকে অনেক দূরে।গাড়ি ড্রাইভ করছে নুহাশ।আয়াতের ডান হাতে এখনো ব্যাথা আছে বলে সে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে না।মাইশা রাস্তাটা চিনতে পারছে । উত্তরার রাস্তা এটি। সেই চিরচেনা জায়গার কথা স্মরণ হতেই বুকটা ধক করে ওঠে মাইশার।তার চোখের সামনে আদ্রাফের প্রতিটা স্মৃতির কথা ভেসে উঠছে।
কাঁপাকাঁপা গলায় মাইশা নুহাশের কাধে হাত দিয়ে বলে ওঠে…..
.
”ভা-ভাইয়া____আ-আমরা ওদিকে যাচ্ছি কেন? তুমি জানো না ওখানে আমি যেতে চাই না ?”
.
”relax মাইশা…..কেন যাচ্ছি আস্তে আস্তে সবই জানতে পারবে।”(আয়াত বলে)
আদ্রাফের কথা ভাবতেই চোখযুগল চিকচিক করে ওঠে তার।তাই আস্তে করে আয়াতের কাঁধে নিজের মাথা এলিয়ে দেয়।আয়াত তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।মাইশাকে এতটা দুর্বল কখনোই দেখতে চায় না তাই সাহস করেই তার অতীতের সম্মুখীন তাকে নিয়ে যাচ্ছে আয়াত।
.
মাইশাদের উত্তরার সেই বাড়িটির সামনেই গাড়ি থামায় নুহাশ।সবাই গাড়ি থেকে নেমে আসে।আজ প্রায় ৪ বছর পরে মাইশা এই বাড়ির সামনে দাঁড়ালো মাইশা।দোতলায় আদ্রাফের বারান্দার সাথে কাছাকাছি থাকা নিজের ঘরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। আগে তো কত রাত আদ্রাফের গান শুনে নির্ঘুমে রাত কাটিয়েছে তা অগণিত।কিন্ত এখন এসব কিছু শুধু অতীতের তুচ্ছ স্মৃতি।
.
”এখানে এসেছি কেন আমরা?”
.
”চলো আমার সাথে।”
.
আদ্রাফরা আগে যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতো এর সামনে আসতে খনিকটা অবাক হয় মাইশা। মনে চলছে তার অবাধ প্রশ্নের খেলা।দরজায় কলিংবেল বাজাতেই যে দরজা খুলে তাকে দেখে বিস্ময়ের আরও এক ধাপ উপরে উঠে যায় সে।মিহির আপু দাঁড়িয়ে আছে।
আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে সে। উজ্জলতাটাও অনেকাংশে কমে গিয়েছে। মিহির বলে ওঠে…….
.
”কেমন আছো মাইশা?”
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-২৬+২৭+২৮

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২৬+২৭+২৮
.
আচমকা আয়াত নিজের ঠোঁট মাইশার ঠোঁট জোড়ায় মিলিয়ে দিতেই চোখ খুলে মাইশা।আয়াত চোখ বন্ধ করে তার সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে দিচ্ছে ওর ঠোঁটে।
.
হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাইশার।আয়াতের এমন স্পর্শে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেশেও পারছে না।যতই হোক আয়াত তাকে ভালোবাসে কিন্তু সে এই জায়গাটিতে সবসময় আদ্রাফকে চাইতো;আদ্রাফকে কল্পনা করতো।তাই আয়াতের এরকম স্পর্শ মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
.
নিজেকে ভারসাম্যে রাখতে আয়াতের কাধে আস্তে করে নিজের হাত ছেড়ে দেয় সে।আয়াত এতে মাইশাকে আস্তে করে ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়ায়। তারপর আবার মাইশার কপালে নিজের কপাল মিশিয়ে বলতে থাকে….
.
“আমি জানি আমার এমন কাজে কষ্ট পেয়েছো তুমি ; অনেক কষ্ট পেয়েছো। কিন্ত এটা তোমার শাস্তি ছিলো।কি করবো বলো আমার রাগ উঠে গিয়েছে তোমার ওপর। আমি জানতাম অনিক একা পেলে তোমায় কিছু না কিছু বলবে।তাই তোমাকে একা ছাড়তে চাইছিলাম না।কিন্ত তুমি তো শুনলে না আমার কথা”
.
মাইশা আয়াতের বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। অজস্র ধারে জল গড়িয়ে পড়ছে তার।
.
”দূর হও তুমি আমার চোখের সামনে থেকে। এটাই তোমার ভালোবাসা?এটাই তোমার চাওয়া ছিলো তাই না?আদ্রাফের সাথে ৩ বছর সম্পর্ক থাকার পরেও ও কখনো এমন করেনি।আর তুমি এটা করতে পারলে?”
.
”মাইশা ,,,,,,”
.
”আয়াত প্লিজ আমায় যেতে দাও। আমি আর পারছি না।তোমায় ভালো না বাসতে পারলেও বিশ্বাস করা শুরু করেছিলাম।আর নিমিষেই তা তুমি ভেঙ্গে দিলে?”
.
আয়াত আর কিছু বলে না মাইশাকে।মাইশা নিজেকে সামলিয়ে ওর আম্মু-আব্বু আর নুহাশকে নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।আয়াতের দিকে একবারেও ফিরে তাকায় না।আয়াতের কাছে এখনও সবকিছু ঝাপসা লাগছে।খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে আগামী দিনের।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে বাহিরে বের হতেই পার্কিং সাইটে আয়াতকে দেখে খানিকটা অবাক হয় মাইশা।আয়াত গাড়িতে হেলান দিয়ে মাইশার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। চোখে আছে এক চাপা অভিমান যা মাইশার বোধগম্যে এখনো আসেনি।
.
আয়াতের তো এখন অফিসে থাকার কথা কিন্ত এখন এসময়ে এখানে কি করছে তা-ই মাইশা বুঝে উঠতে পারছে না।আয়াত একটা সবুজ শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট পড়েছে যা ফর্সা চামড়ায় মারাত্নকভাবে ফুটে উঠেছে।মাইশার গতরাতের কথা মনে পড়তেই কেমন যেন একটা সংকোচ কাজ করছে আয়াতের কাছে যেতে কিন্ত যখন সে আশেপাশে তাকায় তার মুখ আপনাআপনি লাল হতে থাকে।
.
কেননা অনেক মেয়েরাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে আয়াতের দিকে।একবার না ; বারবার।এখানে মাইশা সেই গুটিকয়েক মেয়েদের ওপর খামোখা রাগ করার মতো চিন্তাভাবনা নেই ; কেননা আয়াত এমন একজন মানুষ যাকে সকল মেয়েরাই পছন্দ করতে বাধ্য।কিন্ত এটা ভেবে তার রাগ হচ্ছে যে আয়াত এখানে এসেছে কেন?
.
মাইশা আয়াতের কাছে গিয়ে প্রশ্নবোধক চোখে বলে ওঠে……
.
”এখন তো তোমার অফিসে থাকার কথা?এখানে কি করছো?”
.
আয়াত কিছু না বলে হেসে ওঠে তারপর গহীন দৃষ্টি নিয়ে তাকায় মাইশার দিকে।মাইশা আয়াতের এ দৃষ্টিটা উপেক্ষা করার জন্য অন্যদিকে তাকায়।কেননা গতরাতের কথা মনে হয় তার বারবার।মাইশা সেই অনুভূতিটা স্মৃতিতে আনতে চাচ্ছে না।
.
”গাড়িতে ওঠো?”(আয়াত)
.
”কেন?”(মাইশা)
.
”আমি দিয়ে আসি…..”(আয়াত)
.
”থাক্…লাগবে না…..আমি যেতে পারবো…..”
.
”ভেবে নিও…….আমি কিন্ত এখন এখানে ঘুরতে চাচ্ছি…..তোমাকে বাসায় দিয়ে আসলে আর এখানে না ঘুরে সরাসরি বাসায় যাবো । আজ মিটিং করেই অফিস থেকে এসে পড়েছি।”
.
মাইশা আয়াতের কোনো কথার উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে উল্টোপথে চলে যেতে থাকে। আয়াত আর কিছু না বলে পকেট থেকে হাত বের করে চলে যায় তার গন্তব্যে।
.
দুকদম এগোতে না এগোতেই মাইশা যখন পিছে ঘুরে আয়াতকে না দেখে তার অনেক খারাপ লাগে । সে নাহয় রাগ করেই একথা বলে ফেলেছে তাই বলে কি আয়াত একটুও তাকে মানাবে না? আর কিছু না ভেবে সে রিক্সা নিয়ে চলে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
.
একটি সমান্তরাল রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিক্সা।দুপাশে সারি সারি কচি দেবদারু গাছ আর লাইটের স্ট্যান্ড।আবাসিক এলাকার রাস্তাদিয়ে রিক্সাটি এগিয়ে যাচ্ছে বলে এখানে জনসামাগমও যেমন কম ; যানবাহনও তেমন কম।মাইশার মন এখনো আয়াতের কাছে পড়ে আছে। গতকালের জন্য আয়াতের উপর তার রাগ এখনো কমে নি বরং আজকের কাজের জন্য তার উপর সেই রাগটাসহ অভিমানও চাড়া দিয়ে উঠেছে।
.
রিক্সার পাশ দিয়ে একটি কালো গাড়ি ওভারটেক করতেই ধ্যান ভাঙ্গে মাইশার।গাড়িটা হঠাৎ রিক্সার সামনে ব্রেক মারতেই রিক্সাটাও তড়িঘড়ি করে ব্রেক মারে আর মাইশাও নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে রাস্তায় পড়ে ।
.
বুকটা এখন ধুকধুক করছে মাইশার।তার কনুইয়ে ভিজা কিছু অনুভব করতেই বুঝতে পারে ছিলে রক্ত বের হচ্ছে ওখানে। আদ্রাফের সেই ঘটনার পর থেকে ছোট-বড় সব সড়ক দুর্ঘটনাকে ভয় পায় মাইশা।আবারও তার চোখের সামনে ভেসে আসছে আদ্রাফের রক্তমাখা মুখশ্রী।হাজারো প্রিয় মানুষকে হারানোর আর্তনাদ।
এদিকে রিক্সাওয়ালা দাদুও চিল্লিয়ে গাড়ির লোকটিকে বলে ওঠে…..
.
”কি করলেন ভাইজান এইটা?”
.
মাইশা সেদিকে তাকাতেই দেখে আয়াত গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে তার দিকে এগিয়ে আসে।মাইশা আস্তে করে উঠে চিল্লিয়ে বলতে থাকে…..
.
”এসব ফালতু কাজ করার মানে কি আয়াত? তুমি কি ছোট বাচ্চা?আমি তোমায়বারবার সাবধান করেছি হাইস্পিডে গাড়ি চালাতে না।আর এভাবে ওভারটেক করে রিক্সার সামনে আসলে কেন?”
.
একথাগুলো বলার সময় মাইশা বারবার দমবন্ধ হয়ে আসছিলো , চোখযুগল জলে টলমল করেছিলো । আয়াত কিছু না বলে কোলে তুলে নেয় মাইশাকে।
.
”চলো আমার সাথে…..আর দাদু? এভাবে ব্রেক দেয়ার জন্য দুঃখিত !”
.
মাইশা এবার ছুটাছুটি করছে আয়াতের কোল থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য।কিন্ত আয়াতও নাছোড়বান্দা ; মাইশা এবার উচ্চস্বরে বলতে থাকো….
.
”আয়াত ছাড়ো……..রাস্তার মধ্যে এগুলো কি ধরনের অসভ্যতা?”
.
”অসভ্য না ! আমার অসভ্যতা গাড়িতে তোমায় দেখাচ্ছি।”
.
মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে মাইশার। আয়াত শান্ত কন্ঠে এক ভয়ঙ্কর রাগ অনুভব করতে পারছে সে। গাড়িতে আয়াত মাইশাকে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে থাকে।রাগে আয়াতের মুখ থেকে ফোস ফোস শব্দ বের হচ্ছে।
.
মাইশা ভেবে কূল পাচ্ছে না আয়াত রেগে আছে কেন ? যেদিকে মাইশার রাগ বা অভিমান যা-ই বলুক; এটা আয়াতের ভাঙগানোর কথা। দুনিয়াটা আসলেই অদ্ভুদ !
.
কিছুক্ষণ পর আয়াত একপাশে গাড়িটা পার্ক করে চেপে আসে মাইশার কাছে।মাইশা তা দেখে গাড়ির দরজার সাথে মিশে যায়। আয়াত অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো তার মুখমণ্ডলে।তারপর মিহি কন্ঠে বলে ওঠে….
.
”আচ্ছা মাইশা আমায় প্লিজ একটু বলো গতকাল আমি যা করেছিলাম কোন দিক দিয়ে তা তোমার ভুল মনে হলো? ”
.
মাইশা নিশ্চুপ
.
”বিয়ের আগে তোমায় কষ্ট দিয়েছি অনেক….কিন্ত কখনো বলতে পারবে তোমায় বাজেভাবে ছুয়েছি….বাজে কথা বলেছি.? আর এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী না?তবুও আমরা একসাথে থাকতে পারিনা…কেন? আমাদের বিয়ে বড় করে হয়নি বলে…..থার্ডক্লাস একটা লজিকের জন্য”
.
মাইশার গলায় আস্তে করে মুখ ডুবিয়ে দেয় আয়াত। মাইশা খনিকটা কেঁপে উঠলেও কিছু বলে না আয়াতকে।
.
”আমি যে কিভাবে এই সময়গুলো পার করছে; কেউ জানে না। আই লাভ ইউ মাইশা। তোমায় ছাড়া আমার এখন সময় পার করাটা অনেক কষ্টের মনে হয় আমার কাছে।আর একটু আগে আমায় অসভ্য বললে তাই না…(তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে) ….তোমায় একটু দেখার জন্য যদি আমায় অসভ্য হতে হয় তবুও আমি রাজি।……তবুও প্লিজ আমায় ইগ্নোর করো না….আই হেট ইউর ইগনোরেন্স।”
.
”আ-আ-আমি বাসায় যাবো।”
.
আয়াত মুখ তুসে মাইশার দিকে তাকায়। মাইশা চোখ বন্ধ করে আছে।কিছু না বলে আবার গাড়ি স্টার্ট করে সে।
.
বাড়ির কাছে আসতেই আয়াত গাড়ি থামায় আর মাইশাও গাড়ি নামতে নিলেই আয়াত তার হাত চেপে ধরে।
.
”মাইশা যেই জিনিসটাকে তুমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাও এমন যে নাহয় এটাই আমার হারানোর কারন হয়ে দাঁড়ায়।”
.
খনিকটা বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় মাইশা আয়াতের এমন কথা শুনে।আয়াত মাইশার দিকে না তাকিয়েই একথাগুলো মিহি কন্ঠে বলে ওঠে।বুকে জমে ওঠেছে তার একরাশ হাহাকার যা মাইশার কাছে অপ্রক্যাশিত।মাইশার হাতটি আলগা করে দিতেই মাইশা হাত ছাড়িয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায় । তা দেখে আয়াত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
নিস্তব্ধ রাত।ক্ষণে ক্ষণে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসছে ক্ষীণ গাড়ির শব্দ।অদূরেই হাইওয়ে থেকে এ শব্দগুলো আসছে।গাড়ির সামনে বসে একধ্যানে সুগভীর দীঘির দিকে তাকিয়ে আছে আয়াত।তার মনে হচ্ছে এই দীঘি তাকে খুব করে টানছে।দীঘির টলোমলো পানিতে চাদের আলো প্রতিফলিত হয়ে আয়াতের নজরকাড়া গহীন চোখে পড়ছে।তার কালচে বাদামী চোখজোড়া এতে আরও মারাত্নক লাগছে ।
.
আজ আয়াতের নিজেকে শূণ্য শূণ্য মনে হচ্ছে।বারবার মনে হচ্ছে কিছু পেয়েও সে পেলো না।কিছুক্ষণ আগে ওই অনিককে মেরে এলো সে।সাহস কি কলে হলো ওর মাইশাকে এভাবে নোংরা কথা শুনানোর?
.
এখন আয়াতের নিজের ওপরই বেশ রাগ লাগছে।সে জানে একবার রাগ তার মাথায় চাড়া দিয়ে উঠলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না সে।তাই মাইশাকে কষ্ট দেয়ার জন্যই মাইশার ঠোঁটে জোর করে স্পর্শ দিয়েছিলো সে।সে জানতো মাইশা এতে কষ্ট পাবে। আদ্রাফের জায়গাটা এত সহজে সে আয়াতকে দিতে পারবে না এটাও আয়াত জানে।
.
কিন্ত এখন নিজের উপরই তার রাগ হচ্ছে।মন চাচ্ছে এই টলোমলো দীঘির ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষণ নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে।
.
ইদানীং আদ্রাফের কথা ভাবলে তার অনেক হিংসে হয়…..কি আছে আদ্রাফের মধ্যে যা ওর মধ্যে নেই।আদ্রাফ মাইশাকে ভালোবাসতো এটা আয়াত জানে কিন্ত সেওতো মাইশাকে ভালোবাসে ; হ্যাঁ ওর ভালোবাসাটা আদ্রাফের মতো না….তবুওতো ভালোবাসা নামক এক অনুভূতিতো আছে?
.
আয়াত আর কিছু না ভেবে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়।যতই গতরাতে রাগের বশে নিজের করা ভুলগুলোর কথা ভাবছে ততই ওর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে।হাইওয়েতে হাইস্পীডে ড্রাইভ করতে থাকে সে।বারবার তার মনে হচ্ছে মাইশার কান্না করে বলা কথাগুলো…অনিকের মাইশার উদ্দেশ্যে সেই নোংরা কথাগুলো।
.
আচমকাই একটা ট্রাক ওভারটেক করে যাওয়াতে আয়াত গাড়ির ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে। গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় রপ্ত সে।কিন্ত ভাগ্য মনে হয় তার সঙ্গ দেয়নি।তাই ব্রেকে চাপ দিতেই তা সজোরে ট্রাকটির সাথে বারি খায় আর এতে গাড়ির সামনের কাচটি ঝনঝন করে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।পরিবেশটা এখন এই ঝনঝন শব্দের জন্য ভয়ঙ্কর এক তান্ডব সৃষ্টি করেছে ।
.
আয়াতের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে।তার মাথাটি এখন স্টেয়ারিংয়ে ভর দিয়ে রেখেছে সে। এই বিকট শব্দের পরপরই আস্তে আস্তে সব কিছু শান্ত হয়ে যায়।শুধু ভেসে আসছে আয়াতের নিঃশ্বাস আর কপাল বেয়ে টুপটুপ করে রক্ত পড়ার শব্দ।আচ্ছা তারতো এখন অনেক কষ্ট হচ্ছে।আদ্রাফেরও কি এমন কষ্ট হয়েছিলো? সেও কি তবে চলে যাবে না ফেরার দেশে?
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-২৪+২৫

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২৪
.
ঢাকায় এসেছে চাঁদপুর থেকে সবাই আজ ৪ দিন হলো। আয়াত অফিসে জয়েন হয়েছে তাই সারাদিন কাজের মধ্যেই দিন যাচ্ছে। আবার মাইশার এবার অনার্সের লাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে।মাইশার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই দুজনের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে। ততদিন ওরা দুজনই আলাদা থাকবে।
.
এখন রাত ১২:০০টা বাজে। সব পড়া রিভাইস করে মাইশা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমানোর।হঠাৎ টেবিলের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করে কেমন যেন একটি শব্দ উৎপন্ন হলো।মাইশা দেখে তার ফোন বাজছে। ভাইব্রেট করার কারনে এমন শব্দ উৎপন্ন হচ্ছিলো।মাইশা দেখে আননোন নম্বর থেকে একটা কল।একটু অবাক হয় সে।
ভাবতে থাকে ফোন তুলবে না-কি তুলবে না।এর মধ্যে ফোনে পরপর তিনবার মিসকল উঠলো।এবার কল তুলে সে।
,
কল তোলার সাথে সাথে মোবাইলের ওপাশ থেকে একটা উচ্চস্বর ভেসে আসে তার কানে…..
.
”বার বার কল করছি রিসিভ করছো না কেন?”
.
চোখ বড় বড় করে ফেলে মাইশা। এটাতো আয়াতের গলা। একটু বললে ভুল হবে অনেকটাই রেগে আছে সে।আমতা আমতা করে বলে…
.
”আ-আ-আয়াত মা-মানে তুমি? স-সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।”
.
”সিরিয়াসলি মাইশা? আজ ৬ মাস হয়ে এলো আমি বাংলাদেশে এন্ড ইভেন নাও আমি তোমার হাজবেন্ট ! তুমি এখনো আমার নাম্বার সেভ করোনি?”
.
মাইশা চুপ হয়ে থাকে। এখন কোনো কিছু বললে আয়াত আবার রেগে যাবে।
.
”নিচে আসো রাইট নাও….!”
.
”এত রাতে আমি আসবো না। কাল আমার এক্সাম আছে।”
.
” তোমায় কিডন্যাপ করে নিচ্ছি না…..লিসেন মাইশা,আমি আজ সারাদিন ল্যাবে কাজ করেছি। বলতে গেলে অনেক টায়ার্ড……প্লিজ তুমি নিচে আসো।”
.
আয়াতের প্রতিউত্তর শুনে মাইশা আর কথা বাড়ায় না। একটি সোয়েটার গায়ে পড়ে নিচে চলে যায় সে।
.
কলোনির আশেপাশে মানুষজন কম।ফ্ল্যাটের ওয়্যাচম্যান চেয়ারে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।মাইশা একটা সিম্পল স্যান্ডেল পড়ে পা টিপে টিপে যাচ্ছে গেটের বাইরে।বুকের ধুকধুকানিটা ক্রমশ তার বেড়েই চলছে। আগে আদ্রাফের সাথেও কখোনো এভাবে দেখা করেনি সে। তবে তখনকার অনুভূতি আর এ অনুভূতি অনেক ভিন্ন। তখন মনে একটা ভয় থাকতো তবে এখন সেই ভয়টা আর নেই।
.
রাস্তার ছিমছিমে লাইটের আলোতে গাড়িতে বসে থাকা ক্লান্ত আয়াতকে আবছাভাবে দেখতে পারছে মাইশা।গাঢ় নীল রঙের শার্ট পড়েছে সে।মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও মুখে রয়েছে এক চিলতে হাসি।চুলগুলোও এলোমেলো।শার্টের উপরের দুটি বোতাম খুলে রেখেছে যাতে কম খারাপ লাগছে না তাকে।
.
মাইশা এসবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতে এগিয়ে যায় আয়াতের দিকে।মাইশা চোখযুগল ছোট ছোট করে বলে….
.
” এত রাতে কাজ শেষ করে কষ্ট করে এখানে আসলে কেন? এখন রেস্ট নেওয়া উচিত না তোমার?”
.
আয়াত কিছু না বলে ইশারায় গাড়িতে বসতে বলে তাকে।মাইশা একটু সংকোচবোধ করলেও পরে গাড়িতে বসে পড়ে।আয়াত আর কিছু না বলে টুপ করে মাইশার গালে চুমু খেয়ে মাইশার কাধে মাথা রেখে চোখ বুজে থাকে।মাইশা আয়াতের এহেন কাজে একটু অবাক হয় সে।তার হাতটা আপনাআপনি গালে নিয়ে যায় সে।
.
”আমি কিস করেছি তোমায়…..এত রিয়্যাক্ট করার কি হলো?”
মাইশার কাধে মাথা রেখে চোখ বুজে আয়াত বলে ওঠে।
.
আয়াতের ক্লান্তিমাখা গলা শুনে মাইশা কিছু না বলে চোখটা ঘুরিয়ে আয়াতের দিকে তাকায়।আয়াত আবারও ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
”মাইশুপাখি….জানো আজ কাজ করার সময় তোমার কথা খুব মনে পড়েছে। তোমার সাথে কতদিন ধরে দেখা করতে পারছি না তাই আজ দেখা না করে পারলাম না। আগে তো সিঙ্গেল ছিলাম তাই কষ্ট হতো না কিন্ত এখন তো আর আগের মতো আমি নাই…..(মাইশার বাহু জরিয়ে),,,,,বউ থাকতেও একা ঘুমাতে হয় ; এর থেকে কষ্টের আর কি আছে?”
.
মাইশা কিছু না বলে মুচকি হাসে। আয়াতের কাজকর্ম দেখে তার যেমন হাসি পাচ্ছে তেমনি অজানা এক ভালোলাগা কাজ করছে।তবুও মুখটাতে একটু রাগী ভাব নিয়ে বলার চেষ্টা করে…..
.
”একটু আগে কেন করলে ওটা’?”
.
আয়াত মাথাটা উঠিয়ে মাইশার গালে আবার চুমু খায়।তারপর মাইশার কোলে মাথা রেখে বলতে থাকে……
.
”একবার না একশবার করবো ! আমার বউকে আমি কিস করেছি তোমার কি? আর আমার বউয়ের যেই গাল না…পুরাই পাকা টমেটো ! মন টা তো চায় টুস করে কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলি।”(মুখে দুষ্টু হাসি রেখে)
.
আয়াতের লাগামহীন কথা শুনে লজ্জায় মিহিয়ে যায় মাইশা।আয়াত তা দেখে মুখে বাকা হাসি রেখে বলে….
.
”মাইশা ! তুমি কি always আমায় পাগল বানানোর ধান্দায় থাকো?”
.
”মানে….?”
.
আয়াত নেশাক্ত চোখে তাকায় মাইশার দিকে।মাইশা আয়াতের এরকম দৃষ্টি দেখে বড়সড় একটা ঢোক গিলে।আয়াত আবার চোখ বন্ধ করে বলে….
.
”উহ্……মাইশা তোমার অগোছালো চুল , কথায় কথায় ঠোঁট কামড়ানো , চোখ ছোট ছোট করা…ট্রাস্ট মি… পাগল করে দেয় আমায় । মন চায় বড়সড় কোনো একটা ভুল করে ফেলি।”
.
মাইশাও যেনো আয়াতের কথার গোলকধাধায় পড়ে গিয়েছে। একরাশ অন্যরকম মাদকতা আছে আয়াতের কন্ঠে।আয়াত আবার বলে উঠে……
.
”আগামীকাল না আরিয়াপুর জন্মদিন ! আসছো তো?”
.
”হুম।”
.
আয়াত মাইশার কোল থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে আসে।মাইশাও গাড়ি থেকে নেমে ঘরে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।
.
”মাইশু?”
.
মাইশা পেছনে ঘুরতেই আয়াত তাকে জাপ্টে নিজের আবদ্ধে নিয়ে নেয়।মাইশার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করছে আয়াতের এমন করাতে।হ্যাঁ , ভালোবাসতে শুরু করেছে সে আয়াতকে। আয়াত সবসময় মাইশাকে বিরক্ত করতে চাইলেও অজান্তেই মাইশার মনে তার জন্য অনুভূতি তৈরি করেছে যা অনুভব করতে পারছে মাইশা।
মাইশাও আলতো হাতে আয়াতের পিঠে নিজের হাত নিয়ে যায়।
.
”অনেক রাত হয়েছে আয়াত। কাল সকালে তোমার আবার অফিস যেতে হবে। বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
.
মাইশার চুলে মুখ ডুবিয়ে আয়াত মিহি কন্ঠে বলে ওঠে…
.
”হুম….আজ ছেড়ে যাচ্ছি।তবে যখন সুযোগ পাবো না তবে কিন্তু আর ছাড়বো না। Love you মাইশুপাখি !”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব:২৫
পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে মানুষের ভীড়ে যখন কেউ কোনো মেয়ের কোমড় আকড়ে ধরে ঘুরতে থাকে তখন কোন মেয়েরই না অসস্তি লাগে?মাইশাও তার ব্যতিক্রম কোনো কিছু নয়। আরিয়াপুর জন্মদিনের জন্য খালামণিদের বাসায় আসছে পর থেকেই আয়াতও তার সাথে চুম্বকের মতো ঘুরছে।
.
এ দৃশ্য দেখে সবাই মিটমিট করে হাসলেও কেউ কিছুই বলে না।মাইশা এবার বিনয়ী কন্ঠে আয়াতকে বলে,
” আয়াত….সবার সামনে এভাবে আমার কোমড় ধরে ঘুরছো কেন?সবাই কি ভাবছে বলো তো?”
.
মাইশার দিকে না তাকিয়েই আয়াত মিহি কন্ঠে বলে….
.
” ভাবছে যে made for each other❤️”
.
কিঞ্চিত নিজের ভ্রুযুগল কুচকে ফেলে মাইশা। এই ছেলেটা সবসময় নিজের মনমর্জিতে চলে যা মাইশার মোটেও পছন্দ না।তবুও আয়াতকে মানামোর জন্য সে innocent face করে বলে….
.
“তোমার made for each other তোমার কাছেই রাখো।ভাবছিলাম…exam শেষ করে আরিয়াপুর জন্মদিনে সেই মজা করবো কিন্ত তা কি আর করতে পারবো?আমারও তো করতে ইচ্ছে করে তাই না আয়াত…..🥺”
.
আয়াত সন্দিহান চোখে তাকায় মাইশার দিকে।কিছু একটা ভেবে নাকা হাসি দিয়ে মাইশার কানে ফিসফিসিয়ে বলে…..
.
“আপতত এখন তোমার এই cute puppy face এ আমি গলছি না মাইশুপাখি।আমার সাথে থাকবে মানে আমার সাথেই থাকবে।একটু উল্টোপাল্টা হলে তার reaction তোমার ঠোঁটে পড়বে।এখন তুমি যদি চাও….😁”
.
মাইশা বড়সড় একটা ঢোক গিলে। এ তো হাসিমুখে সাক্ষাৎ warning দিয়ে দিলো।
.
.
আরিয়াপুর জন্মদিনের জন্য ডার্ক চকলেট কেক নিয়ে এসেছে নুহাশ ভাইয়া।সেই কেক কাটার পর এখন বাগানে বসে বারবিকিউ করার আয়োজন চলছে।এতক্ষণ বাহিরের অতিথিরা থাকলেও এখন পরিবারের মানুষরাই এই বারবিকিউ পার্টি করছে।আয়াতের কিছু বন্ধুবান্ধব আর ওর চাচ্চুর পরিবারও আছে এখানে।তবে আয়াতের চাচাতো ভাই অনিককে মাইশার কেন যেন ভালো ঠেকাচ্ছে না।বিষয় টা ওর খালামণি একাধিকবার বলেছেও যে ও অনেকটা বখাটে টাইপের ; শুরু পরিবারের মানিষ বলেই তাকে আসতে বলা হয়েছিল।
.
আর আয়াত বোধহয় তার জন্য ই মাইশাকে একা ছাড়ছে না।মাইশাকে সে ভরসা করে কিন্ত ওই অনিককে মোটেই ভরসা করে না।
.
এদিকে বারবিকিউ করার জন্য আয়াত আর ওর বন্ধুরা সব আয়োজন করছে।মাইশা আর আরিয়াপু আর আয়াতের দুজন মেয়ে বন্ধু বসেছে একসাথে।
.
“মাইশা এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেন?” (আরিয়াপু)
.
“এভাবেই আপু…..”(মাইশা)
.
“আরে সত্যি কথা টাই বলো না মাইশা মে আয়াত তোমায় কি বলেছিল? আমি কিন্তু সব শুনেছি।”
বলেই আয়াতের এক বান্ধবী দুষ্টু হাসি হাসলো।
লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে মাইশার। আয়াতের ওই ভয়ংকর কথাগুলোর কথা ভাবতেই অদ্ভুত অনুভূতি জেগে উঠেছে তার মনে।
.
“থাক্ ! আর লজ্জা পেয়ে কোনো লাভ নেই।যতদিন এই আয়াতের পাল্লায় তুমি আছো ততদিন ওর লাগামহীন কথার মুখে পড়তে হবে…. বুঝতে পেরেছো?”
.
.
খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই এখন ক্লান্ত। কেউ মোবাইল চালাচ্ছে তো কেউ নীরবে এককোণে বসে আছে।মাইশা এখন একটু রান্নাঘরে গিয়েছে পানি খেতে। হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো
“এই শীতে পানি খাওয়া ধরেছে তোমার?…..যদিও স্বাভাবিক! তুমি যা গরম জিনিস ! তোমায় দেখে আমারই তো তেষ্টা পেয়েছে।”
.
এমন বিশ্রী ধরনের কথা শুনে অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে মাইশা।দেখে অনিক তার দুই হাত ভাঁজ করে দেয়ালে দাঁড়িয়ে মাইশা কে পর্যবেক্ষন করতে মগ্ন। একটা মানুষ যে কতটা জঘন্য হতে পারে তা সেই মানুষ টার চোখ দেখেই বোঝা যায়। তবুও ভদ্রতার খাতিরে কিছুই বলতে চাচ্ছে না মাইশা।
.
” এ কেমন কথা অনিক ভাই?”
.
“কেমন কথা আবার…..যা সত্যি তাই বললাম।আমি আবার কথা চেপে রাখতে পারিনা।”
.
“তাই নাকি অনিক ? আগে তো তা জানতাম না!”
.
আয়াতের কন্ঠ শুনে সেদিকে তাকায় দুজনে। আয়াত স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু মুখে রয়েছে এক চিলতে ক্রুদ্ধ হাসি। আয়াত আস্তে করে অনিকের কাছে এগিয়ে ওর শার্টের কলার ঠিক করতে থাকে। তারপর বলে ওঠে;
.
” দেখ ভাই অনিক…..অর্ডারকৃত জিনিসে নজর দিতে হয় না। আর জিনিসটা যদি ডেলিভারি হয়ে যায় তবে তো কোনো প্রশ্নই উঠে না।এখন চুপচাপ ভদ্র ছেলের মত এখান থেকে কেটে পড়। আর না হলে আমি যে কি করতে পারি তা ভালোমতোই তুই জানিস।”
.
বড়সড় একটা ঢোক গিলে মাইশা। আয়াত এর কথার ধরন এই বোঝা যাচ্ছে ঠিক কতটা রেগে আছে সে।অনিক আয়াতের কাছ থেকে কলারটা ছাড়িয়ে আস্তে করে চলে যায়।অনিক যাওয়ার পর সাথে সাথেই মাইশার এক হাত চেপে রান্নাঘরের থেকে বাগানের এক খালি পাশে নিয়ে মাইশা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
.
রাগে আয়াতের চোখগুলো টগবগ করছে। আর নাকটাও অস্বাভাবিক ভাবে লাল হয়ে আছে।মাইশা রং হাত দুটো আরও জোরে চেপে বলে ওঠে;
.
“একা ওদিকে গিয়েছো কেন?আমি কি মরে গিয়েছিলাম?”
মাইশা আয়াতের একম করাতে একটু ভয় পাচ্ছে।
.
“আমি বুঝতে পারলাম না যে আমার কথাটা শুনলে তোমার কি এত প্রবলেম হয়?কি …..ওই rascalঅনিকের কথা শুনে এখন ভাল্লাগছে?”
.
মাইশা এখন কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা তার অজানা। কেননা সে তার ভুলটা একটু হলেও বুঝতে পেরেছে।
.
“কেউ তখন তোমায় নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে না আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনা মাইশা। তবু ও তুমি তো আবার আমার কথা শুনবে না।ওই অনিক আমার জিনিসটা ছুঁতে চেয়েছিলো তাই না?ওর ব্যবস্থা করার আগে আমি তোমার ব্যবস্থা করছি।”
.
আয়াত একথা বলে মাইশার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট জোড়ার দিকে এগিয়ে যেতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় মাইশা।
.
.
চলবে!

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-২১+২২+২৩

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে
#কায়ানাত_আফরিন
পর্ব:২১
আয়াতের মাতালকন্ঠের প্রতিটা শব্দ মাইশার বুকের ধুকধুকানিটার পরিমাণ যেন আরও বারিয়ে দিয়েছে। উত্তরের জানালা খোলা থাকার কারনে ঘরে ছেয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়া। আর তার সাথে সমানতালে মাইশার ঘাড়ে-গলায় আছড়ে পড়ছে মাইশার উষ্ণ নিঃশ্বাস।আয়াতের এতটা কাছে আসা তার মনে এক অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে। আয়াত মাইশার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বলে….
.
” উহু…মাইশুপাখি ! খুব কষ্ট হচ্ছে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা। তোমাকে আমি বারবার সাবধান করেছি এভাবে আমায় পাগল না করতে। আগে একটা বাধাঁ কাজ করতো কিন্ত এখন আর না…..”
.
একথা বলেই আয়াত গভীরভাবে ওই তিলটাতে চুমু দেয়। আবেশে কম্বলটি খামচে ধরে সে। এই আয়াত মনে হয় পাগলই হয়ে গেছে। আয়াত এবার মাথাটা হালকা উঠিয়ে মাইশার দিকে তাকায়। জানালা দিয়ে মিষ্টি রৌদ্দুর আছড়ে পড়ছে ওর তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট দিয়ে। আয়াত আবার ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। আস্তে করে নিজের ঠোঁটের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে।
.
” গতকাল তো আমাদের বাসর টা হলো না; আজ নাহয় রৌদ্দুরের সাথে তা করেই ফেলি।”
.
মাইশা এবার একটা একটা জোরে চিৎকার দেয় :” আয়াত? পাগল হয়েছো?”
.
কিঞ্চিত ভ্রুযুগল কুচকে ফেলে আয়াত। এমনিতেও কত সুন্দর একটা সময় পার করতে চেয়েছিলো সে কিন্তু মাইশা তার ১২ টা বাজিয়ে দিলো।মাইশাকে কম্বলের রাজত্ব থেকে মুক্ত করে ফেলে সে।
.
”কাজটা ঠিক করলে না কিন্তু।”
একথা বলেই আয়াত ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।মাইশা এখনো পাথরের মতো শুয়ে আছে চোখ বুজে। নিঃশ্বাস ত্যাগের ফলে বারবার বুক ওঠানামা করছে তার। আয়াতের এহেন কাণ্ডে তার বুকে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আচ্ছা আয়াত কি তবে তাকে স্ত্রীরূপে অধিকার দেওয়ার কারনে এমন করছে নাকি নিজের মনের ভালোবাসা থেকে?
.
.
ডাইনিং টেবিলে সবাই একত্রে নাস্তা করছে।এ বাড়ির কড়া নিয়মের মধ্যে এটি একটি…ঘূর্ণিঝড় হোক বা কিয়ামত হোক! কেউ মারা গেলে চল্লিশা খেতে হলেও সবাইকে একসঙ্গে এই বড় টেবিলে খেতে হবে। এই বিষয়ে কোনো গাফলতি চলবে না।
খাওয়ার সময় আয়াতকে দেখে এখন মনে হচ্ছে ওর মতো innocent , ভদ্র, শিষ্টাচারি ছেলে এই জাহানে আর নেই। পুরাই শেন একটা ভদ্রের গুদাম। আর মাইশা আয়াতের এই রূপ দেখেই বারবার বিষমে পড়ছে। কেউ শুনে বলবে এই ছেলে সকালে ওর সাথে এত বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে বসলো?
.
” মাইশা আয়াতকে দেখার জন্য তোর কাছে অনেক সময় আছে এখন খাবারটা ঠিকমতো শেষ করো…..”
.
নানিজানের কথা শুনে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে সে।এখন তার নিজের মাথায় একটা বারি মারতে মন চাচ্ছে।
.
খাওয়া শেষে মাইশা আর ওর খালামণি(আয়াতের আম্মু) টেবিল গুছাচ্ছে তখন খালামণি বললো….
.
” মাইশা…..একটা কথা ছিলো রে….!”
,
মাইশা খালামণির দিকে তাকায়। আবার কাজ করতে করতে মিহি কন্ঠে বলে,
” কি কথা?”
,
”আয়াত আর তোর মধ্যে হলো কীভাবে?”
,
কাজ রেখে হতবিধ্ধস্ত হয়ে তাকিয়ে আছে খালামণির দিকে।
”হলো কীভাবে মানে?”
.
বিরক্ত হয়ে সাথী বেগম। কপাল ভাঁজ করে বলে,
”তোর মা আসেই ঠিক বলে ; তোরে ভেঙ্গে ভেঙ্গে না বোঝালে তুই কিছুই বুঝোস মা। আমি বলতে চাইছি আমার ছেলে দেখতে সুন্দর হলে কি হবে ; আস্তো যে একটা হুতুমপেঁচা আমি জানি….এখন প্রশ্ন হলো তোর সাথে ওর প্রেম হলো কীভাবে?”
.
ওর খালামণি যে একটু ফ্রি মাইন্ডেড এটা মাইশা জানে; কিন্ত শ্বাশুড়ি হিসেব করলেও যে এমন প্রশ্ন করে বসবে তা মাইশার অজানা ছিলো।
.
” হঠাৎ……..এই প্রশ্ন?”
.
”বলে কি মেয়েটা; এই প্রশ্ন করবো না? আমি তোদের কখনো একসাথে দুদন্ড কথাও বলতে দেখিনি। আর যতটুকু কথা বলতো ,আয়াত তোকে ধমকের উপর রাখতো আর নয়লে তুই ওর উপর একটু-আধটু চিল্লাতি। এখন বল্ না…… কেমনে কি হলো?”
.
” খালামণি গো ;তোমার ছেলে মানুষের সামনে আমারে ঝাড়লে কি হইবো….পুরাই একটা লুইচ্চার বদনা!(মনে মনে)না….মানে…..খালামণি তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছুই না,,,,,”
.
” আহারে ! লজ্জা পেয়েছে মেয়ে টা। থাক তোকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। তবে আয়াতের মতো রাগী ছেলে তোকে ভালোবেসেছে বুঝে নিস …..মা হিসেবে এতটুকু বলি….তোকে আজীবন আগলে রাখবে !”
বিনিময়ে একটা মুচকি হেসে আবার কাজ করতে থাকে সে।
.
.
এখন প্রায় ভরদুপুর। দুপুরে তপ্ত রোদ থাকলেও শীতে তার রেশ অনেক কম। বেডরুমে বসে বসে আড্ডা দিতে ব্যস্ত মাইশা,সামাদ,ইনায়া,আনান আর পৃথা। হঠাৎ আয়াত কোথা থেকে এসে কোলে তুলে নেয় মাইশাকে। আয়াতের এহেন কান্ডে ওরা রীতিমতো হকচকিয়ে যায়।
.
”আরে ভাইয়া মাইশাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”(ইনায়া)
.
”আরে বোন…..নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে ; এখন কি বউকে নিয়ে ঘুরতেও পারবো না?”(চোখ টিপে)
বলেই মাইশাকে ওর রুমে নিয়ে যায় সে।মাইশা চেচাঁমেচি করতে চাইলেও তা সম্ভব না । কেননা বাড়ির বাকিরা ওদের এভাবে দেখলে অন্যকিছু ভাববে।
মাইশাকে খাটে শুয়িয়ে ওকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে চোখ বুজে থাকে আয়াত।
.
” আর একটা কথাও বলবা না।এখন আমি ঘুমাবো।আর একটু নড়াচড়া করলে ডাইরেক্ট কিস্। যদি রাজি থাকো দ্যান মুভ।”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২২
আর একটা কথাও বলবা না।এখন আমি ঘুমাবো।আর একটু নড়াচড়া করলে ডাইরেক্ট কিস্। যদি রাজি থাকো দ্যান মুভ। Always তো শুধু threat ই দিলাম; এবার কিন্ত যা বলবো তা করেই ঠাড়বো।”
আয়াত ঘুমুঘুমু কন্ঠে মাইশার গলায় মুখ ডুবিয়ে কথাগুলো বলছে। তার প্রতিটা কথা বলার সময় ঠোঁট ছুয়ে যাচ্ছে মাইশার গলায়। যার দরুন মাইশা একটু কেপেকেপে উঠছে। নিজের শুষ্ক ঠোঁটজোড়া জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
.
” আয়াত প্লিজ এমন করো না। আমার খুব আনইজি হচ্ছে।”
,
”কেন? আমি তোমায় কোন দিক দিয়ে অস্বস্তিতে ফেলছি?”[মাইশাকে আরও জোরে আকড়ে ধরে]
.
মাইশার রাগে ক্ষোভে মন চাচ্ছে একটা আড়াই কেজির পাথর দিয়ে আয়াতের মাথাটা ফাটিয়ে ফেলতে। মনে মনে ইচ্ছেমতো গালাগাল করছে সে। একটা শুকনো ঢোক গিলে সে বলে…..
.
” আয়াত সবসময় দুষ্টুমি ভালো লাগে না ! আর আমি এসবে অভ্যস্তও না। প্লিজ লিভ মি…..”
.
” তোমার রসকষহীন কপালে দ্যা লেজেন্ড আয়াত পড়েছে মাইশুপাখি। আর রইলো দুষ্টুমির কথা ! তা তো আজীবনই তোমায় বইতে হবে। নাও লেট মি স্লিপ বেবি ! এমনিতেও শেষ রাতে উঠবো।”
,
” কেন?”[ ভ্রু কুচকে ]
.
” তোমার সাথে বাসর করবো বলে। হ্যাপি? let me sleep baby….”
.
কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের রাজত্বে তলিয়ে যায় আয়াত। তার ঘন কালচে খয়েরী চুলগুলো কপালের উপর পড়ে আছে।
,
মাইশা আস্তে করে আয়াতের হাতের বাধঁন থেকে মুক্ত করে নেয় নিজেক। সে উঠে আসতে নিবে তখনই তার চোখ যায় আয়াতের বাম গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট তিলটির দিকে। আয়াতের মুখে হাল্কা চাপ দাড়ি। আগে সে ক্লিন সেভ করতো কিন্ত ইদানীং তার চাপ দাড়ি রাখার শখ ভর করেছে। প্রবাদটা আসলেই সত্যি যে,” ছেলেদের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে দাড়ির মধ্যে।”
.
(কে জানে ? কোরিয়ান ছেলেগুলোর তো দাঁড়ির ছিটেফোটাও নেই। দাঁড়ির অস্তিত্ব যেন বিলীন হয়ে গিয়েছে ওদের দেখলে এমন মনে হয়। তবুও এত্ত কিউট কেন ওরা? )
.
আয়াতের ফর্সা গালে কালো তিলটি বেশ নজরকাড়া লাগছে মাইশার কাছে। তার ঠোঁটযুগল অনেকটাই লালচে কালো। মাইশার এই সময় আবার আদ্রাফের কথা মনে পড়ে গেলো। একসময় আদ্রাফ বলেছিলো তাদের বিয়ে হয়ে গেলে সেও মাইশাকে কোলবালিশ বানিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মাইশা। আদ্রাফের স্মৃতি চাড়া দিয়ে উঠলেই হাহাকার করে ওঠে তার হৃদয়।যদিও আয়াতের কার্যকলাপ আদ্রাফ থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। তবুও মাইশার কাছে ব্যাপারটা অজানা যে কেন সে আয়াতকে দেখে বারবার আদ্রাফের স্মৃতিতে হারিয়ে যায়?
,
,
বসার ঘরে কেমন যেন একটা উৎসবমুখর ভাব। একপাশে পৃথা , ইনায়া আর আরিয়াপু পিঠা বানাতে ব্যাস্ত তো অন্যপাশে আনান,সামাদ, নুহাশ ভাইয়া মাছের ছিপ বানাতে মগ্ন।মাইশার নানি আলতো হাতে মাইশার মাথায় খাটি সরিষার তেল দিয়ে দিচ্ছে। মাইশার কাছে তেল জিনিসটা খুবই বিদঘুটে লাগে। তাই ঠোঁট উল্টিয়ে বসে আছে সে।
.
” কেমন মাইয়্যা দেখো ! আরে তোমাগো বয়সে আমার চুল এত কালো আর ঘন ছিলো যে মাথার তালু দেখা যাইতো না। আর তোমরা তেল না দিয়া দিয়া চুলের আগা ফাটাইয়া ফেলসো, কেমন লাল হয়ে আছে দেখো। কাল তো তোরা চলে যাবি। তাই মাথায় সরিষা তেল দিয়ে দিলাম , চুল মজবুত থাকবো।”
.
”আর বইলো না মা ! তুমিই বোঝাও তোমার আদরের নাতনি কে। আমার কথা তো জীবনেও শুনে না এবার নাহয় তোমার কথাই শুনবো।”(মাইশার আম্মু)
.
”আহারে নানি থাক এবার ছেড়ে দেও ওরে। চোখ দিয়ে যেকোনো সময়ই পানির জলোচ্ছ্বাস উপচে পড়বে।”(আয়াত)
.
মাইশা কপাল কুচকে আয়াতের দিকে তাকায়। কিন্ত সে তো দিব্যি পিঠা খেতে ব্যাস্ত। ইদানীং আয়াতের ব্যবহার তার কাছে অজান্তেই ভালোলাগা শুরু করেছে। কিন্ত সে জানে না এই ভালোলাগার অনুভূতি কবে ভালোবাসায় রূপ নিবে…কখনোই কি এটা ভালোবাসায় রূপ নেবে?
.
.
খাওয়া দাওয়া শেষে। পেছনের খোলা বারান্দায় চাদর পেচিয়ে আয়েশ করে দাঁড়িয়ে মাইশা। টিনের চালা বাতাসের শো শো শব্দে অনেকটাই উন্মাদিত।জানালার কপাট খুলে দেয়ার কারনে একটি মিষ্টি ফুলের সুবাস তার নাকে ভেসে আসছে। ফুলটির ঘ্রাণ আর নাম কিছুই তার জানা না। তবে এটুকু নিশণচিত যে রাতের ফুল এটা। অর্থাৎ যে ফুল রাতে ফোটে। কেননা এর সুবাস অত্যন্ত তীব্র হয়।
.
” একা একা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ভূত তোমায় নিয়ে চলে যাবে।”
.
কানের কাছে আয়াতের মিহি গলা শুনে পেছনে ফিরে মাইশা। আয়াত সাথে সাথেই তার কোমল হালকা করে চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। মুখে আছে মুচকি হাসি। মাইশা আয়াতের বুকে হাত দিয়ে সরে আসতে নিলে আয়াত তাকে বাধাঁ দেয়।মাইশা করুন চোখে আয়াতের দিকে তাকায়।
.
” আয়াত এমন করছো কেন?”
.
” কি করছি আমি? তোমার সাথে রুড বিহেব করেছি? তোমায় অপমান করেছি নাকি তোমার উপর আমার অধিকার ফলিয়েছি।”
.
”মাইশা নিশ্চুপ।”
.
” আমাকে একটু বলবে যে আমায় মেনে নিতে তোমার কি প্রবলেম হয়?”[কড়া গলায়]
.
টুপ করে একফোটা জল গড়িয়ে পড়ে মাইশার। আয়াত আস্তে আস্তে নরম হয়ে যায়। একটা শুকনো ঢোক গিলে মাইশা বলে……
.
”নিজের প্রথম অনুভূতি ভুলিয়ে নতুন করে কাউকে জায়গা দেয়া কি এতই সহজ আয়াত? তুমি কি পারতে যে তোমাকে মনে-প্রাণে ভালোবাসতো তাকে এককোণে আবদ্ধ করে পুনরায় অনুভূতি করতে?…..বলো পারতে?”
.
আয়াত নিশ্চুপ। শুধু পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।
.
” আদ্রাফ আমার জীবনে অনেক বড় কিছু ছিলো। হয়তো আল্লাহ আমাদের ভাগ্য একসাথে দেয়নি তাই তো আমায় ছেড়ে সে চলে গেলো না ফেরার দেশে।আমাকে তো তুমি এমনিতেও দেখতে পারতে না। হঠাৎ কি এমন হলো যে আমার উপর মায়া দেখাতে লাগলে?”
.
মাইশাকে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে আয়াত।এতে মাইশা একটু ভড়কে যায়। আয়াতের উষ্ণ নিঃশ্বাস এতে বরাবরই বারি খাচ্ছে ওর মুখমন্ডলে।
.
”আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন। ভালোবাসাটা প্রকাশ করলেই ভালোবাসা হয় আর না প্রকাশ করলে তা শুধু মায়া….এটা কেন একটু বলতে পারবে? কিছু কিছু ভালোবাসা মুখে প্রকাশ না করলেও চলবে না?”
.
মাইশা নিশ্চুপ।
.
”ইউ নো হোয়াট…..তোমার জন্য শুরু থেকেই আমার মনে অনুভূতি কাজ করতো। বাট আমার তা প্রকাশ করতে ভালোলাগতো না। আজকাল তো একটু ভালোলাগাকেই মানুষ ভালোবাসায় প্রকাশ করে দেয় যা আমার পছন্দ না। তার মানে কি এই আমি কাউকে ভালোবাসতে পারি না?”
.
”আমি এটা বলতে চাই নি…..”
.
”তাহলে কি বলতে চেয়েছো তুমি?[উচ্চস্বরে] আমি তোমার সাথে বাজে বিহেব করতাম এটা তোমার গায়ে লাগে…..আর তুমি যে আদ্রাফের কথা মনে না করার জন্য জাস্ট টাইমপাসের জন্য বয়ফ্রেন্ড বানাতে এটা আমার লাগতো না?
রাগের বশে তোমায় থাপ্পড় দিয়েছি বলে তুমি বৃষ্টিতে ভিজে অজ্ঞান হয়ে জ্বর বাধিয়েছিলে একবার ভেবেছো আমাদের তখন কেমন লাগতো? আমি এত সেন্টিমেন্টাল না মাইশা যে তুমি বারবার ভুল করবে আর তোমায় ভালোবাসি বলে কিছু বলতে পারবো না।”
.
মাইশা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে।
.
” আমি হয়তো আমার ভালোবাসা অন্যদের মতো আমি প্রকাশ করতে পারি না মাইশা ; এক মানে এই না আমি কাউকে ভালোবাসবো না। আমি জাস্ট এতটুকু জানি বাঁচার জন্য আমার তোমাকে দরকার! আর আমি কি একবারও বলেছি যে আদ্রাফকে তুমি ভুলে যাও?
আদ্রাফ আদ্রাফের জায়গাই থাকুক। ওর জায়গা আমি চাই না। আমি আমার জায়গা চাই…….তোমার মনে আমার জন্য অনুভূতি চাই। চাই তোমার রৌদ্দুর হয়ে থাকতে। সেই সুযোগটা আমায় দেবে না?”
.
আদ্রাফকে হারানোর পর মাইশা যে আবারও অজান্তেই মনে নবঅনুভূতির ফুল ফোটাবে তা ছিল ওর কল্পনার বাহিরে। আয়াত কি পারবে ওর আধাঁরময় জীবনে রৌদ্দুর হয়ে আসতে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২৩
রাত প্রায় শেষ।কিছুক্ষণ পরেই ভোরের আলো ফুটবে।মাইশা ঘুমঘুমু চোখে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াত এই শীতে তাকে কোলে তুলে কই নিয়ে যাচ্ছে এই প্রশ্নটা তার মনে জাগলেও তার চোখে এত ঘুম আছে যে এই প্রশ্নটা করার মতো মনমানসিকতা তার এখন নেই।ঘরের সদর দরজাটা আস্তে করে পেরিয়ে বাইরে গেলেই একরাশ ঠান্ডা হাওয়া ছুঁয়ে দেয় মাইশাকে। একটু উষ্ণতা পাওয়ার জন্য মাইশা আয়াতের বুকে একেবারে মিশে ঘুমানোর চেষ্টা করে । আলতো হাসে আয়াত।
.
”আয়াত বলোনা এই শীতের সকালে আমার সুন্দর ঘুমটা কেড়ে নিয়ে এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”
.
আয়াত কিছু না বলে কোল থেকে নামিয়ে দেয় মাইশাকে।স্বাভাবিক গলায় বলে….
”উঠোনের পাশে কল আছে ; ওখান থেকে মুখ ধুয়ে নাও।”
.
”এত ঠান্ডায় ওই ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুবো?”(অবাক গলায়)
.
”তাহলে তুমি কি এভাবেই আমার সাথে বাইরে যেতে চাও? I’ve no problem….আমি তো তোমার….”
.
মুখ থেকে বিরক্তের একটা প্রতিধ্ধনি বের করে মাইশা। একে তো এই শীতে এই লুচুবাঘটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা ওর অজানা আবার এই ঠান্ডা পানিতে এখন ওর মুখ ধুতে হবে ; এটা ভেবেই পশম খাড়া হয়ে উঠেছে তার।
.
”দাঁড়াও আমি মুখ ধুয়ে আসছি।”
.
.
গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন। কুয়াশার অস্পষ্টতার কারনে আশেপাশের সকল দৃশ্যপট অস্পষ্ট।কানে ভেসে আসছে পাখিদের মৃদু কলকাকলির আওয়াজ। শীতের সকালে চাঁদপুরের এই প্রত্যন্ত গ্র্রামে খালে-বিলে দেখা যায় নানা রকমের অতিথি পাখি। এসব দেখে মাইশার ঘুম আস্তে আস্তে কেটে যায়। আয়াতের উষ্ণ হাত ধরে পরনে হলদেটে চাদরটা আরও ভালোভাবে জরিয়ে নেয় মাইশা।
.
অদূরেই গৃহস্থ নারীদের কাঠ-খড় সংগ্রহ করতে দেয়া যাচ্ছে। নাকে ভেসে আসছে কুয়াশার মৃদু ঘ্রাণ। কুয়াশার মধ্যেও অন্যরকম একটি ঘ্রাণ আছে যা অনেকটা মাদকের মতো।মাইশা বিস্মিত কন্ঠে বলে…..
.
”আয়াত তুমি কি আমায় এগুলো দেখাতে চেয়েছো?”
.
মাইশার দিকে না তাকিয়ে কিঞ্চিত হাসে আয়াত। মাইশা এতে নিজের কপাল ভাজ করে ফেলে। আয়াতকে যতই সময়ের সাথে সে জানার চেষ্টা করে ঠিক ততটাই অপরিচিত মনে হয় তাকে। তার কথাবার্তার সাথে তার প্রতিক্রিয়া কোনোকিছুরই কোনো মিল নেই।
.
”কি হলো….এভাবে হাসছো কেন?”(মাইশা)
.
”বড্ড অধৈর্যশীল তুমি।আমারা এখানে আছি সর্বোজোড় আধঘন্টা হলো আর এতেই তোমার কৌতূহলের শেষ নেই।,,,,[একটা শ্বাস নিয়ে]…..আজকে তোমায় নিয়ে সারাদিন চাঁদপুর ঘুরবো তারপর সন্ধ্যায় ঢাকা ব্যাক করবো। এখন এ বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন করবা না ঠিকাছে?”
.
আর কোনো উত্তর দেয় না মাইশা। এতদিনে একটুকু হলেও আয়াতের এই বৈশিষ্ট সম্বন্ধে অবগত হয়েছে সে। ছেলেটা হুটহাট করেই সব সিদ্ধান্ত নেয় আর বড্ড ভ্রমনপিপাসু ।
.
ধীরে ধীরে কুয়াশার আবরণ সরে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে সবকিছু। মুখের মধ্যে পড়ছে পূব আকাশের হাল্কা মিষ্টি রৌদ্দুর।একপাশে বয়ে যাচ্ছে সরু একটি খাল যার কলকলে পানির প্রতিধ্ধনি যা বারবার ওদের কানে সুর তুলছে।আর অন্যপাশে রয়েছে দিগন্তজোড়া বিস্তৃত একটি সবুজ ক্ষেত।নীল আকাশের বুক চিরে বেরিয়ে আসছে রৌদ্দুরের সুবিন্যস্ত রশ্নি যা সরাসরি মাইশার গায়ে পড়ে অবর্ণণীয় রূপ ধারন করেছে। কিছুক্ষণ পরে আয়াত একটি ভ্যান ভাড়া করে। ভ্যানে চড়ে দুজন চলে তাদের নবগন্তব্যে।
.
তেতুঁলগাছের নিচে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছে দুজন। ক্ষণে ক্ষণে শীতল হাওয়া স্পর্শ করছে তাদের গায়ে। গাছ থেকে ছোট ছোট পাতাগুলো ঝরে তাদের গায়ে পড়ছে। এত গভীরভাবে কখনো প্রকৃতি উপভোগ করেনি মাইশা। আগে আদ্রাফের সাথে উত্তরা আর বারিধারার আশেপাশেই ঘুরতো । তাই প্রকৃতিটাকে গভীরভাবে উপভোগ করতে পারেনি সে।
.
”তো কেমন লাগছে আমার সাথে ঘুরে?”
আয়াতের প্রশ্ন শুনে মাইশা আয়াতের দিকে তাকায়।আয়াত শান্তদৃষ্টিতে তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে।
.
”সত্যি বলতে তুমি যখন থেকেই আমার লাইফে এসেছো তখন থেকেই জীবনটা অন্যভাবে উপভোগ করতে শুরু করেছি আমি। কখনো ভালো তো কখনো খারাপ।তাই তোমার উত্তরটি এই দুটির মধ্যেই একটা যা আমার কাছেও অজানা।”
.
আয়াত একটা আলতো হাসে। নিজের কপালে আছড়ে পড়া কালচে বাদামী চুলগুলো বামহাত দিয়ে পেছনে ঠেলে একদৃষ্টে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে সে। চোখের ইশারায় মাইশাকেও বলে সেদিকে তাকাতে।
.
.
সময় কখনো কারও জন্য থেমে থাকে না। আপনগতিতে তা চলে যায় অজানা পথে। এভাবে প্রত্যন্ত পল্লী ঘুরতে ঘুরতে কখন যে আয়াত আর মাইশার সময় কেটে গেল তা তারা বুঝতেই পারেনি।আজ প্রকৃতিকে অন্যভাবে অনুভব করেছে দুজন। নিজের অস্তিত্ব অজান্তেই এই গ্রাম্য পরিবেশে মিশিয়ে ফেলেছিলো তারা।
পড়ন্ত বিকেল।দুজনের গন্তব্য এখন চাঁদপুরের সদরঘাটে।অটোরিক্সাতে চড়ে দুজনে সেদিকে যাচ্ছে। তাদের ব্যাগপত্র সব বাকিরা নিয়ে প্রায় লঞ্চে চড়ে গিয়েছে।আজ আয়াত মাইশার সাথে কোনোপ্রকার কোনো বিরক্ত করেনি..তাকে বিরক্ত করে অতিষ্ঠ করে তোলেনি।আজ আয়াতের ব্যাবহার দেখে মনে হচ্ছে যে তারা সদ্য কিশোর বয়সের প্রেমিক-প্রেমিকা যেখানে কোনো অশ্লীলতা নেই……আছে শুধু অবিরাম ভালোবাসা।
.
আয়াত জানে মাইশার তাকে মেনে নিতে সময় লাগবে তাই সে সময়কেই নিজের ভরসা বানিয়ে চেষ্টা করছে মাইশার মনে নিজের জায়গা করার।
.
”আয়াত?”
.
”বলো………”
.
”ধন্যবাদ……আজ আমি যে আনন্দটা পেয়েছি জানিনা কখনো সে অনুভূতির সম্মুখীন হবো কি-না তবে আজকের এই সময়টা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না….”
.
”সময়টার সাথে আমাকেও মনে রেখো কেমন?”
,
জীবনটা সত্যিই অনেক অদ্ভুদ। একেক অধ্যায়ে রয়েছে সুবিন্যস্ত আগ্রহ; কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউই তা জানেনা।অনুভূতিটাও তার সাথে পাল্লি দিয়ে এগোতে চায় নতুন উচ্ছ্বাসে।মাইশাও মনে প্রাণে চাচ্ছে আয়াতকে তার অনুভূতিক শিকলে আবদ্ধ করতে কিন্ত আদ্রাফকে যে সে ঠকাতে চায় না।হ্যাঁ আদ্রাফ আর নেই কিন্ত আদ্রাফ মৃত্যুর আগেও তার ভালোবাসাটা প্রকাশ করে গিয়েছিলো তাই মাইশা অনেকটাই অসহায়…তার হৃদয়ের কাছে…তার মনের কাছে।
আয়াতের কাধে আলতো করে নিজের মাথা রাখে সে। অশ্রুসিক্ত চোখে অপেক্ষা করতে সাথে এই পথ শেষ হওয়ার সাথে অন্য এক নতুন অধ্যায়ের।
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-১৮+১৯+২০

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১৮+১৯ [আদ্রাফের অন্তিম অধ্যায়]
.
মাইশার ঘনঘন নিঃশ্বাসের শব্দটি আয়াতের বুকে তোলপাড় শুরু করছে। সারাঘরে পিনপন নিস্তব্ধতা। আয়াতের হৃদয়ের ধুকধুক শব্দ আর মাইশার ঘনঘন নিঃশ্বাসে ছেয়ে যাচ্ছে পুরোনো প্রেমের অধ্যায়ের অব্যক্ত আভাস।
আয়াতের কানে মাইশার একটা কথাই শুধু ভেসে আসছে,
.
”আদ্রাফ আর নেই ! ”
আয়াতের মনে খেলা করছে একরাশ প্রশ্নের সমাহার। এমন কি হয়েছে আদ্রাফের ; যার জন্য আজও মাইশার মনে আজও অনুভূতি রয়েছে। নিজের শুষ্ক ঠোঁটটি একটু জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নেয় আয়াত। কাঁপাকাঁপা গলায় সে বলে ওঠে ,
.
” আ-আদ্রাফ কো-কোথায়? মাইশা !”
.
মাইশা ঠোঁটচেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। চোখ-নাক তার টুকটুকে লাল হয়ে আছে। মাইশার এরূপ দেখে আয়াতের হৃদয়ে যেনো বড় কোনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কোনোমতে কান্না চেপে মাইশা বলে ওঠে…
.
” একটু বাহিরে যাই না? ওখানে গিয়ে বলি…আ-আমার না দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ! ”
” আচ্ছা। ”
.
.
সন্ধ্যা নেমেছে। পশ্চিম আকাশে হালকা লাল আভা দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে ঠান্ডা হাওয়া বহমান।কলকলে নদীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত আর মাইশা। মাইশা হাত ভাঁজ করে গোধূলী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আয়াতের কালচে বাদামী চোখের দৃষ্টি সরাসরি মাইশার দিকে। মাইশার মুখে কিঞ্চিত হাসি থাকলেও চোখ দিয়ে অশ্রুর ধারা বয়ে যাচ্ছে।
.
” শুনতে চাও না আয়াত আদ্রাফের কি হয়েছিলো?”
.
” হুম….”
.
একটা লম্বা শ্বাস নেয় মাইশা।আবার হারিয়ে যায় অতীতের স্মৃতিতে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
অতীত
.
সময় যে কত দ্রুত পেরিয়ে যায় তা ধারনার বাইরে। আমার আর আদ্রাফের সম্পর্কটাও ঠিক তেমন হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের প্রমে ছিলো যেমন খুঁনসুটি; তেমনি ছিলো পরিপূর্ণ ভালোবাসা। এইতো কদিন আগে আমার এইচ.এস.সির রেজাল্ট দেওয়ার সাথে সাথে আমাদের সম্পর্কের তিন বছর পূর্ণ হলো।
আমাদের ভালোবাসা না নব্বই দশকের ভালোবাসার মতো ছিলো যেখানে কোনো অশ্লীলতা ছিল না ; যেখানে নিজের অনুভূতির প্রমান দেওয়ার জন্য শরীর বিলিয়ে দিতে হতো না। আদ্রাফ অনেকবার পাগলামি করে রাতে আমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করেছে , কখনো বারান্দায় মিহি কন্ঠে আমার জন্য গিটারের সুর তুলে গান গেয়েছে। আমি তার কান্ড দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যেতাম।
,
আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আদ্রাফের সাথে এই রাতের শহর ঘোরার..কিন্ত আদ্রাফ সাফ মানা করে দিতো। সে বলতো…” তুমি এখনো অনেক ছোট। আমি চাই না আবেগের বশে আমরা কোনো ভূল করে ফেলি।” এভাবেই চলছিলো আমাদের ভালোবাসা।
.
আদ্রাফ অনার্স কমপ্লিট করে যেদিন চাকরি পেয়েছিলো না সেদিন বোধহয় আমার থেকে খুশি কেউ ছিলো না। আমি তখন তোরজোর করে ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
একদিন আদ্রাফ আমায় কল দেয়। সে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছে তার বাবা-মা কে নিয়ে আসতে। আমি জানি সে তার বাবা-মাকে কেন নিয়ে আসতে চাচ্ছে। তাই আমি বিনিময়ে চুপ থাকি।কিন্ত আমার সেই সিদ্ধান্ত যে আমার ভাগ্যের চক্র পাল্টে দিবে তা আমার ধারনাই ছিলো না।
,
সেদিন ছিলো বৃষ্টির রাত। বাইরে অঝোরে ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। আব্বু-আম্মু এক দাওয়াতে গিয়েছিলো। বাড়িতে ছিলাম আমি আর নুহাশ ভাইয়া। আমি আমার রুমে পড়ছি তখন আমার ফোনে একটি কল এলো। আমি দেখি স্ক্রিনে আদ্রাফের নাম্বার ভেসে উঠছে। রাত বাজে সাড়ে আটটা এখন তো ওর বাসে থাকার কথা। আমি কলটি ধরলেই কানে অপরিচিত এক পুরুষের কণ্ঠ ভেসে আসে….
.
” আসসালামু আলাইকুম…”(অপরপাশে)
.
” ওয়ালাইকুম আসসালাম…জ্বী কে আপনি?”
.
”আপু ঢাকা টু ময়মনসিংহ রোডে একটা বাস এক্সিডেন্ট হয়েছে। এই মোবাইলের মালিকের অবস্থা অনেক খারাপ। আপনি ইমিডিয়েটলি উত্তরা এয়ারপোর্টের সামনে হাসপাতালে আসুন।লাস্ট নম্বর আপনার ছিলো তাই আপনাকে কল করলাম”
.
সাথে সাথে আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। ফোন থেকে হ্যালো হ্যালো শব্দ এসেই যাচ্ছে কিন্ত আমি নিস্তব্ধ। এই পরিস্থিততে আমার স্নায়ু কাজ করা যেন বন্ধ করে দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে আমি নুহাশ ভাইয়ের কাছে যাই। আমার অবস্থা দেখে সেও একটু ঘাবড়ে গিয়েছে। আতঙ্কিত কন্ঠে বলতে থাকে….
.
” কি হয়েছে মাইশা? তোমার এ অবস্থা কেন?”
ভাইয়া আমার আর আদ্রাফের সম্পর্কের কথা জানে না। কোনোমতে ভাইয়াকে বলি…
” ভা-ভাইয়া প্লিজ আমাকে ……হাসপাতালে নিয়ে চলো; প্লিজ ! আস্তে আস্তে সব তুমি জানতে পারবে।”
.
ভাইয়া আমাকে আর কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় উত্তরার উদ্দেশ্যে।
হাসপাতালের সামনে আসতেই এম্বুলেন্স আর নিউজ রিপোর্টারদের সমাগম দেখতে পারছি। আশেপাশে শুনতে পারছি হাজারো প্রিয় মানুষদেরকে হারানোর আর্তনাদ।নুহাশ ভাইয়াও তেমন কিছু বুঝতে পারছে না। এদিকে আমার অবস্থা করুন। বুকের ধুকধুকানির গতিটাও যেন চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়েই চলছে। পা দুটোও দুর্বল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
হসপিটালের করিডোরে অসংখ্য রক্তাক্ত দেহ দেখতে পারছি । জানিনা এদের মধ্যে কয়জন না ফেরার দেশে চলে গেছে। হাজারো মানুষের হাহাকার আর আর্তনাদের শব্দে বারবার কেঁপে উঠছি আমি। ভয় হচ্ছে আমার আদ্রাফের জন্য। করুন চোখে নুহাশ ভাইয়ার দিকে তাকাই। দেখেই বুঝতে পারছি তার কাছে সবকিছু অস্পষ্ট লাগছে।
,
একবুক সাহস নিয়ে আবার কল দেই আদ্রাফের ফোনে। একবার রিং হতেই অচেনা ব্যাক্তিটি কল রিসিভ করে।
.
”হ্যালো আপু এসে পড়েছেন? প্লিজ চারতলার ওটির সামনে আসেন।”
আমি ভাইয়াকে নিয়ে সাথে সাথে সেখানে যাই। ওটির দরজা বন্ধ করা। দরজার গ্লাস দিয়ে আদ্রাফকে দেখতেই ভাইয়ার কাছে সবকিছু স্পষ্ট হতে শুরু করে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সেই ভাইয়া যে আমায় কল করেছিলো।ডাক্তার এখনো বের হয়নি।
.
” লাইফ সাপোর্টে আছে আপু। বাঁচার চান্স কম।”
.
আমি অশ্রুসিক্ত চোখে তাকাই ওই ভাইয়াটার দিকে। মনে একরাশ ভয় বিরাজ করেছে আমার। আমার চোখে বারবার আদ্রাফের মিষ্টি হাসিটা ভেসে উঠেছে। মনে মনে আল্লাহ তায়ালাকে ডেকে চলছি আমি। এভাবে আশা হারালে চলবে না আমার।
.
প্রায় ১ ঘন্টা পর একজন নার্স বেরিয়ে আসে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে থাকি….
.
” ম্যাম…আ-আদ্রাফের কি অবস্থা? এ-এখন কেমন আছে? প্লিজ ব-বলেন।”
.
নার্স তেমন কিছু বললো না। শুধু মিহি কন্ঠে ঠোঁট নাড়িয়ে চেষ্টা করে বলে…
”আপু , পেশেন্ট এর সময় বেশি নেই। আপনাদেরকে ডাক্তার ভিতরে আসতে বলেছে।”
,
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি নার্স এর কথা শুনে । ভয়ে নুহাশ ভাইয়ার হাত খামচে ধরি। কাদতে কাদতে ভাইয়াকে বলি…
” ভাইয়া দেখো না এই নার্স কি আবোল-তাবোল বলছে। আদ্রাফ বলেছে ও আমাকে ছেড়ে যাবে না…..ও ঠিক হয়ে যাবে না?”
.
নুহাশ ভাইয়া নিস্তব্ধ। সে না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে। এক পা এক পা করে এগোতে থাকি ভেতরের দিকে। বুকে কেউ যেন আমার হাতুড়ি পেটাচ্ছে। আমি আদ্রাফকে এ অবস্থায় দেখে থমকে যাই। ওর বুক-কপাল-নাকে রক্ত যেন লেপ্টে আছে। ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। কিছুক্ষণ আগেই তার জ্ঞান ফিরেছিলো। হয়তো ওর কাছে সময় আর বেশি নেই।
আমি কাপাঁকাপাঁ কন্ঠে বলে উঠি…
” আ-আদ্রাফ !”
পিটপিট করে চোখ খুলে আদ্রাফ। আমাকে দেখে ঠোঁটটা মলিনভাবে প্রসারিত করে ফেলে সে। চোখে খেলা করছে অনুভূতির মৃত্যু খেলা।দুর্বল কন্ঠে বলে উঠে,
.
” মা-মাইশা?”
.
আমি এবার সশব্দে কেঁদে দেই। আর পারছি না আমি এ বিষাক্ত সময়টাকে অতিবাহিত করতে। আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আদ্রাফের চোখের থেকেও জলের ধারা বেরিয়ে আসতে থাকে। ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে আমি বলে উঠি,
,
” আদ্রাফ তুমি না বলেছিলে আমার ছেড়ে যাবে না ; নিয়তি কেন আমাদের সাথে এমন করলো?”(কাদতে কাদতে)
.
আদ্রাফের চোখেও দেখতে পারছি একরাশ হাহাকার। মলিন কন্ঠে সে বলে ওঠে…..
.
” আল্লাহ তায়ালা চায়নি মাইশা যে আমরা এক হই। হয়তো সে তোমার জন্য অন্য কাউকে রেখেছে।”
,
” আমার চাই না কাউকে…..আমার শুধু তুমি হলেই চলবে। আমাদের টোনাটুনির সংসার তবে কি আর করা হবে না?”
.
আদ্রাফ চোখের কোণ দিয়ে একফোটা অশ্রু বেরিয়ে আসে। ঘনঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার চেস্টা করছে সে। তার নজরকাড়া কালো চোখযুগল মলিন হয়ে গেছে। ঠোঁটের ম্লান হাসিটাও তোলপাড় করে তুলছে আমার বুক। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে সে,
.
” আল্লাহর কসম করো মাইশা ভুলেও নিজের কোনো ক্ষতি করবে না। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম ; কিন্ত আল্লাহ বোধহয় তা চান না। যদি এমন কাউকে পাও যে তোমায় সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসবে তাকে তুমি সবসময় আগলে লাগবে।(শ্বাস নিয়ে) আমার মিহির আপুকেও সামলে নিও। ভা-ভালোবাসি মাইশা ! অ-অনেক ভা-ভালোবাসি !”
.
আস্তে করে চোখ বুজে ফেলে আদ্রাফ। তার ভারী নিঃশ্বাসও এখন মিলিয়ে যায় হাওয়ার তালে। ডাক্তার একপাশে করুন কন্ঠে বলে ওঠে…
.
”He is Dead ! ”
,
বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আদ্রাফের বুকে মাথা দিয়ে নিঃশব্দে কেদে উঠি। ডাক্তার নার্সরাও এ দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলছেন।আমি সেসব কিছু পরোয়া না করে আদ্রাফের ঠোঁটে গভীরভাবে একটা চুমু খাই। আমাদের অসীম ভালোবাসার এতটুকু হলেও সে প্রাপ্য ছিলো।
.
বাহিরে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আজ বৃষ্টির সাথে আমার ভালোবাসাটাও শুধু অতীতের এক অধ্যায় হয়ে গেলো। রয়ে গেলো হৃদয়ের এক বদ্ধ কোণায়।আদ্রাফ আমার জীবনের এক মধুময় স্মৃতি যাকে নিয়তি আমার কাছে আগলে রাখতে দেয়নি। কিন্ত এর মানে এই নয় আদ্রাফের প্রতি আমার ভালোবাসা কমে গিয়েছিলো। আর এটাই ছিলো আমার আর আদ্রাফের অন্তিম পরিণতি। আমাদের অসমাপ্ত গল্প।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
টুপ করে এক ফোটা জল গরিয়ে পড়ে আয়াতের। এতক্ষণ অতীতে ডুবে গিয়েছিলো সে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে। জোছনা আকাশ অপরূপ রূপ ধারন করেছে। আর আয়াত সেই আলোতে দেখতে পারছে মাইশার অশ্রুসিক্ত চোখ।
মাইশা বলে ওঠে…..
.
” আজ চারবছর হয়ে গেলো আদ্রাফের স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে যাচ্ছি আমি।”
.
একথাটা বলে আয়াতের কাছে এসে ওর বুকে আস্তে করে মাথাটা নেতিয়ে দেয় সে। আয়াত নিশ্চুপ। আদ্রাফের এই পরিণতি যেখানে সে নিজেই মানতে পারছে না সেখানে মাইশা কিভাবে ছিলো চার বছর ধরে?
.
” এই কে এখানে?”
.
আয়াত আর মাইশা সেদিকে তাকায়। তিন-চারজন সুঠামদেহী গ্রাম্য পুরুষ টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে একজন বলে উঠে।
.
” তোমরা ইকবাল হোসেনের নাতি-নাতনি না? এতরাতে এখানে কি করছো?”
,
‘আয়াত আর মাইশা দুজনেই নিশ্চুপ।
.
” কি মনে করো তোমরা আমরা কিছু বুঝি না? এটা তোমাদের শহর না গ্রাম। তোমরা অবিবাহিত ছেলেমেয়ে রাত-বিরাতে আকাম কুকাম করে বেড়াবা তা কি হবে? খুব শীঘ্রই তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করবো।”
.
আয়াত আর মাইশা দুজনেই উচ্চস্বরে বলে ওঠে….
.
” বিয়ে? ”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২০
বড় ঘরটিতে পিনপন নীরবতা। মাইশা আর আয়াতকে কেন্দ্র করে রুমটিতে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। কেউ ওদের দিকে ক্ষীপ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো কেউ তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে।
.
মাইশার খুব অস্বস্তি হচ্ছে সবার এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে। কিন্ত আয়াতের মধ্যে অস্বস্তির বিন্দুমাত্র রেশ দেখা যাচ্ছে না। যেন বিষয়টা ভালোভাবেই উপভোগ করছে সে। নীরবতা কাটিয়ে গ্রামের একজন মাইশার নানুকে বলে ওঠেন….
.
” আম্মা আমাদের ক্ষমা করবেন আপনাদের না জানিয়ে ওদের এভাবে বিয়ে দেওয়ার কারনে। আসলে মোড়ল সাহেব ওদের অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলেছিলো। আর উনি এসব প্রেম-ভালোবাসা পছন্দ না করার কারনে এভাবে বিয়ে দিতে হলো।”
.
মাইশা এবার চেঁচিয়ে বলে ওঠে…
.
” কারো বুকে হালকা করে মাথা লাগানো কি আপনাদের কাছে অপ্রীতিকর মনে হয়? ”
.
” একটা চড় দিবো বেয়াদপ কোথাকার….একে তো ঝামেলা পাকিয়ে এসেছো আবার বড়দের মাঝখানে চেঁচিয়ে কথা বলছো ।” [ মাইশার আম্মু]
.
মাইশা আবার নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। নায়িকা সাবানার মতো কাদঁতে মন চাচ্ছে তার। কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে এরা। কি না কি বুঝেছিলো তার উপর ভিত্তি করে আয়াতের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো। মাইশার নানি এবার বলে ওঠে……
.
” থাক যা হবার হয়েছে। ওরা শহরের ছেলেমেয়ে তো ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। আর তোমরাও কাজটা ঠিক করো নাই। কত ইচ্ছা ছিলো আমার,ধুমধাম করে আমার নাতি-নাতনিদের বিয়ে দেবো কিন্ত ওরা যে নিজেরাই প্রেম-পিরিত করে বসবে তা কি আমি জানতাম?”
.
মাইশা আবারও চেঁচিয়ে ওঠে…..
.
” নানু এমন কিছুই না !”
.
” তোকে না মাত্র চুপ থাকতে বললাম? আর একটা কথাও বলবি না !”
মাইশার আম্মু রাগী কন্ঠে মাইশাকে এ কথা বলতেই সে আবার চুপ হয়ে যায়। এই কোন জ্বালায় পড়েছে সে?
.
” আচ্ছা তোমরা এখন যাও। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে…..” [ নানু]
.
” ঠিক আছে আম্মা।”[বলেই চলে যায় তারা]
.
.
এবার পরিবারের সবাই ওদের দিকে কড়া চোখে তাকায়।
.
” আয়াত ? তুই বল্….কবে থেকে তোদের চলছিলো?”[ আরিয়াপু]
মাইশা গোল গোল চোখ করে কিছুক্ষণ আরিয়াপুর দিকে তাকিয়ে আয়াতের উত্তর জানার জন্য সেদিকে দৃষ্টি দেয়। আয়াত নিষ্পাপ শিশুর মতো বলে ওঠে….
.
” নাউযুবিল্লাহ আপু ! তোমার আদরের ভাই কি কখনো এমন করতে পারে? এইসব প্রেম-ট্রেম যদি আমারে দিয়ে হতো তবে কবে বিয়ে করে তোমারে ফুপির ডাক শুনিয়ে ফেলতাম।”
.
” আস্ত একটা বেশশরম হইছস তুই ! আমি জানি তোরে দিয়ে সব কিছুই সম্ভব।”
.
আয়াত বিনিময়ে কিছু বলে না। মাইশার এবার রাগে দুঃখে আয়াতের মাথা ফাটাতে মন চাচ্ছে। সবাই তো এটাই মনে করছে যে ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে। কিন্ত আসলেই কি তাই?
.
”আচ্ছা এখন এসব কথা বাদ দাও। যেহেতু আনএক্সপেকটেডলি হোক ; ওদের বিয়ে হয়েই গিয়েছে। তাই এসব কথা বাদ দিয়ে ওদের রাতের ব্যবস্থা করো।”[ আয়াতের বাবা]
.
মাইশা ওর খালুর কথার মানে বুঝতে পেরে আবার চিল্লিয়ে ওঠে…..
.
” না ! আমি আয়াতের সাথে শুবো না।”
.
” কেন গো? প্রেম তো করেছিস ঠিকই তবে ওর সাথে শুবি না কেন?” [আরিয়াপু]
মাইশা এবার আয়াতের দিকে তাকায় । আয়াত সাথে সাথেই ওকে বাকা হাসি দিয়ে চোখ টিপ মারে। মাইশার তো বুক ধকধক করছে। এই ছেলে এক নাম্বার লুচুবাঘ। আর এই লুচুবাঘটাই ওর কপালে জুটলো। কোনোমতে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে…..
.
” আ-আসলে…আ-আপু। আমি এখনো মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড না। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো। আই নিড সাম টাইম !”
.
মাইশার এ কথাটি সবার কাছেই যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে। তারপর নুহাশ ভাইয়া বলে ওঠে……
.
” মাইশা ঠিক বলেছে। বিয়েটা তো ওদের ওই পাগলা মোড়লে হুট করেই করিয়ে দিলো। ওদের কিছু টাইম দেয়া উচিত। মাইশা ! তুমি পৃথার সাথে শুয়ে পড়ো।”
.
পৃথার কথা মনে হতেই মাইশা ওর দিকে তাকায়। পৃথা ঠোঁট উল্টে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। মাইশার খুব খারাপ লাগছে ওর জন্য। কেননা পৃথা আয়াতকে পছন্দ করতো। মাইশা সেদিকে যাবে তখনই আয়াত মাইশার কানে ফিসফিসিয়ে বলে দিলো ,
.
” মাইশুপাখি যা হয়েছে মেনে নাও। অতীতকে এককোণে বদ্ধ করে আমাকে জায়গা দিও কেমন? আজ বাসর হলো না তো কি হয়েছে……পরবর্তীতে তোমায় ছাড়ছি না।”
মাইশা জমে পাথর হয়ে গিয়েছে। আয়াত সেদিকে পরোয়া না করে সিটি বাজাতে বাজাতে আস্তে করে চলে যায়। মাইশার মনে চলছে প্রশ্নের খেলা। আয়াত কি তবে তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে শুরু করেছে?
.
মাইশা আর তেমন কিছু না ভেবে পৃথা আর ওর বন্ধুদের নিয়ে নিজের ঘরে যায়। পৃথাকে খাটে বসিয়ে মাইশা ওর মুখোমুখি হয়ে বসে। ধীরকন্ঠে বলে
.
” পৃথা?”
.
পৃথা এবার ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদা শুরু করে দেয়। হেঁচকি তুলতে তুলতে বলতে থাকে….
.
” দোস্তোওওও…..তুই এটা করতে পারলি? আয়াত ভাইয়াকে আমি তোর দুলাভাই বানাতে চেয়াছিলাম আর তুই তাকে আমার দুলাভাই বানিয়ে দিলি😭😭😭….”
.
পৃথার কথা শুনে ইনায়া, আনান , সামাদ সবাই কপালে হাত দিয়ে বসে আছে । পৃথা আবার বলতে থাকে……..
.
” আয়াত ভাইয়া আমার ১০২ নম্বর ক্রাশ ছিলো। ভেবেছিলাম তাকেই আমার লাস্ট ক্রাশ বানাবো…….তবে আমি এত খারাপ না যে নিজের কলিজার থেকে তার জামাই কেড়ে নিবো। আমি আয়াতকে দুলাভাই বলেই ডাকবো।”
.
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই। বন্ধুত্ব বিষয়টাই এমন যেখানে ট্রেজেডি , কমেডি , লাভ , ইউনিটি সবই থাকে। এটাই বন্ধুত্বের সারমর্ম যার গুরুত্ব হয়তো সবাই বুঝে না।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
সকালের মিষ্টি রোদ উঠোনে বসে উপভোগ করছে মাইশা। এলোমেলো রশ্মিগুলোর সাথে অবাধে খেলতে ব্যাস্ত মাইশার খোলা চুল। শীতের সকালে এক কাপ দুধ চা খুব ইচ্ছে করছিলো তার খেতে। কিন্ত বড্ড আরামপ্রিয় মানুষ সে। দরকার পড়লে সে চা খাওয়া বন্ধ করবে কিন্ত রান্নাঘরে সে কিয়ামত হলেও চা বানাতে যাবে না। তখনই তার কানে ভেসে আসলো কিছু উচ্চধ্ধনি…..
.
” মাইশা……তাড়াতাড়ি এদিকে আয় !”
.
আম্মু কন্ঠ এখন মাইশার কাছে বাজখাই গলার মতো লাগছে। কত আরামসে উঠোনে বসে আরাম করছিলো সে। আম্মু বকবে বলে সে উঠে রান্নাঘরের দিকে গেলো….
.
” কি হয়েছে?”
.
[মাইশার হাতে এককাপ কফি দিয়ে] ” যা এই কফিটা আয়াতকে দিয়ে আয় ….এখনো ঘুমাচ্ছে ও ।”
.
” আমাকে তো জীবনে এমনে কফি দাও নাই তাহলে ওই হুতুমপেচাঁরে দিতাসো কেন? আর আমি ছাড়া আর কোনো মানুষ নাই ওকে কফি দিয়ে আসবে?”
.
বিরক্তি ভাব নিয়ে কপালে হাত দেয় রাহেলা বেগম।
.
” হায় ! হায় ! কি করবো এই মেয়েকে নিয়ে আমি? নামেই বিয়ে হয়ে গেছে এই মেয়ের ; হাতে-পায়ে বিন্দুমাত্র বড় হয়নি। আ্যই ; তুই কি আজীবনই এমন থাকবি? বিয়ের পরেও যদি মায়ের হাতে মাইর খেতে না চাস তবে এক্ষুনি এই কফি নিয়ে দূর হো।”
.
মাইশা তড়িঘড়ি করে কফি নিয়ে চলে যায় ওর মায়ের চোখের সামনে থেকে। এখন ওর উদ্দেশ্য হলো আয়াতের রুম।
আয়াতের রুমের দরজার সামনে ১ মিনিট প্রায় হয়ে এলো মাইশা দাঁড়িয়ে আছে। কেন যেন বেশ লজ্জা আর ভয় বিরাজ করছে তার মনে। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে সে বিড়বিড়িয়ে বলে…
.
” কূল মাইশু….আয়াতকে এত ভয় পেলে চলবে না !”এই বলে আস্তে করে দরজা খুলে রুমে ঢুকে যায়।
.
রুমটা মোটামুটি পরিপাটি। কারন বেশিরভাগ ছেলেরাই অগোছালো থাকে; তবে আয়াত তেমন না। উত্তরের জানালাটি খুলে থাকার কারনে রুমটি বেশ ঠান্ডা হয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে হাওয়ার তালে উড়ে বেড়াচ্ছে জানালার লালচে কমলা পর্দা। আর আয়াত তার খাটে আপাদমস্তক কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন।
.
একপাশে কফির কাপটি রেখে কাপাঁকাপাঁ হাত দিয়ে ডাকতে থাকে,
” আয়াত ?”
.
আয়াত কোনো সাড়া দেয় না । আড়মুড়িয়ে মাইশার দিকে ফিরে কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
” আয়াত? উঠো । আম্মু তোমায় উঠতে বলেছে।”
আয়াতের আবারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাইশা বিরক্তি নিয়ে চলে যেতে নিলেই আচমকা তার হাত টান দিয়ে আয়াত মাইশাকে কম্বলের মধ্যে নিজের সাথে আবদ্ধ করে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।
উত্তুরে হাওয়ায় ঘরের পর্দাগুলো খেলা করছে। সাথে ধুকধুকানিটাও ক্রমশ বেড়ে উঠেছে মাইশার।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো তা বুঝে উঠতে বেশ সময় লেগেছে তার। আয়াত আস্তে করে তার নাক দিয়ে মাইশার গলায় ও ঘাড়ে স্লাইড করে যাচ্ছে।
.
খাটের পাশে থাকা জানালাটি দিয়ে তীর্যকভাবে রৌদ্দুর আছড়ে পড়ছে আয়াত আর মাইশার শরীরে। আয়াত ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠে……
.
” মাইশুপাখি ! তোমার গলার নিচে এই লাল তিলটা সত্যি আমার পাগল করে দেয়। তুমি তো এখন আমার অর্ধাঙ্গীনি ; তোমার তিলটাতে নিজের ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দিলে খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে?”
.
এই ঠান্ডা পরিবেশে আয়াতের উষ্ণ নিঃশ্বাস আর নেশামাখানো কন্ঠে অদ্ভুদ অনুভূতি জেগে উঠছে মাইশার। আচ্ছা আগে তো তার বেশ অস্বস্তি লাগতো কিন্ত এখন এমন কেন অনুভূত হচ্ছে তার? এটাই কি তবে কবুল বলার ক্ষমতা?❤
.
মাইশার লাল তিলটার আশেপাশে আস্তে করে ঠোঁট স্লাইড করতে থাকে সে। তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো বারবার মাইশার গলায় ঘাড়ে বিধছে।আয়াত মিহি কন্ঠে বলে ওঠে….
.
” আদ্রাফের জায়গা আমি চাই না মাইশা ; আমি আমার জায়গাটা চাই। আমি বলবো না তোমায় আদ্রাফকে ভুলে যেতে ; আমি বলবো তোমার হৃদয়ে আমার জায়গা দিতে। আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর তোমার জীবনে যে আঁধার নেমে এসেছিলো আমি চাই সেখানে তোমার রৌদ্দুর হয়ে থাকতে।রৌদ্দুরটা কি আমার নামে দিবে মাইশুপাখি🍂?”
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-১৬+১৭

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১৬
.
দুপুরের তপ্ত রোদ পেরিয়ে বিকেলের আভাস জানাচ্ছে বাইরের মিষ্টি হাওয়া। নিজেদের বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আয়াতের জন্য অপেক্ষা করছে মাইশা। এত সুন্দর আবহাওয়াতেও মুখে তার বিরক্তির ছাপ। হবেই না কেন;আজ সকালে হুট করে তার পরিবার মাইশাদের নানুবাড়ি চাঁদপুর যাচ্ছে বলে জানালো। মাইশার আম্মু-আব্বু , খালামণি-খালুজান , আরিয়াপু আর নুহাশ ভাইয়া এক গাড়িতে করে হুট করে চলে গেলো আর মাইশাকে জানালোও না।
.
এমনিতেও গতকাল আয়াতের সাথে সারারাত ঘুরে ঘুমোতে পারেনি আবার যখন দুপুরে ঘুম থেকে উঠলো তখন দেখলো তারা অলরেডি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। আর মাইশাকে বলে ওই লুুচুবাঘ আয়াত আসবে তাকে নিতে।
.
এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো কিন্তু আয়াতের আসার কোনো নামগন্ধ নেই। মাইশা এবার বিড়বিড় করে বলে উঠে….
.
” লুচুবাঘটা এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। কইসে কে তোরে রাত জাইগা ঘুরতে? এখন কেমনটা লাগে?”
.
”Miss me মাইশুপাখি?”
.
পেছন থেকে কারও ফিসফিসানি কন্ঠ শুনতেই দূরে সরে যায় সে। আয়াত ঠোঁটযুগলে হাসির রেখা টেনে দাড়িয়ে আছে। গায়ে অফ হোয়াইট টিশার্ট তার উপরে জিন্স জ্যাকেট আর চোখে কালো সানগ্লাসের জন্য আয়াতকে দেখতে মারাত্নক লাগছে।
মাইশা ঠোঁটটি হালকা নাড়িয়ে বলে উঠে,
.
” এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমার?”
.
” কি করবো মাইশুপাখি বলো…..গতকাল রাতে এক ঘুমকাতুরে সুন্দরী পাখিকে নিয়ে ঘুরছিলাম। তাকে বাসায় কোলে করে নিয়ে যেতেই আমার হাতের ১৩ তা বেজে গেলো। এখনও অনেক ব্যাথা করছে !”
,
কপাল কুচকে তাকায় আয়াতের দিকে। ব্যাটায় আসলেই অনেক খারাপ……….চরম মাত্রায় খারাপ।
.
” তুমি কিন্ত indirectly আমাকে বলছো তাই না?”
.
” না তো? আমি তো এক সুন্দরী পাখিকে বলছিলাম….যে অনেক ঘুমকাতুরে….তুমি কি ঘুমকাতুরে?”
.
আয়াত এ কথাটা বলার সময় মাইশার মুখের কাছে নিজের মাথাটা হাল্কা নামিয়ে দেয়। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। মাইশা একটু আনইজি হয়ে যায়। কেননা আয়াতের কথাগুলো মাঝে মাঝে তার ঘোরের মতো কাজ করে।
.
” না….মানে…..এত কথার তো প্রয়োজন মনে করছি না। চলো তাড়াতাড়ি। নাহলে দেরি হয়ে যাবে।…আ..আয়াত?”
,
আয়াত আলতো হাসে। তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে ,
” চলো তবে? ”
.
.
আজ ১৪ই জানুয়ারি। পুরান ঢাকায় আজ জমজমাট করে হচ্ছে সাকরাইন উৎসব। পুরান ঢাকায় মাইশা তেমন আসে না। শুধু নানুবাড়িতে চাঁদপুর যাওয়ার সময় যখন লঞ্চ দিয়ে যায় তখনই এর অব্যক্ত সৌন্দর্যের সম্মুখীন হয় সে।
গাড়ি দিয়ে এই জমজমাট পুরোনো ঢাকার উৎসব উপভোগ করছে সে। সদরঘাটের কাছে আসতেই গাড়ি থেকে নেমে চাদঁপুরের লঞ্চের কাছে যায়। আয়াত আর মাইশা লঞ্চে কেবিনের সামনে যেতেই কয়েকজন হঠাৎ করে পেছন থেকে ” মাইশু” বলে এক বড়সড় চিৎকার দেয়।
,
পেছনে ফিরতেই মুচকি হাসে মাইশা। ইনায়া,সামাদ,পৃথা,আনান সবগুলো দাঁত কেলিয়ে হাসি দিচ্ছে।
.
” দোস্তোওওও…..তুই ডাকবি আর আমরা আসবো না তা-কি হয়? দেখ…তোর দস্যুদল এসে পড়েছে !”(পৃথা বলে ওঠে)
.
” এবার তো চাঁদপুরে জমপেশ ঘুরবো আর খাবো….আমার এই প্রথম চাঁদপুর ট্রিপ ঘুরাবি কিন্তু!”(সামাদ)
.
” অবশ্যই ঘুরাবো সামাদ ! তুমি হলে আমাদের গ্রুপের handsome boy, তোমার জন্য মেয়েও দেখে রাখবো নে কেমন?”(মাইশা)
.
” আমি ছেলে অনেক ভালো তাই মেয়েদের বিষয়ে কোনো কম্প্রমাইজ করি না….”(গর্বের সুরে বলে ওঠে সামাদ)
,
আয়াত চুপচাপ শুধু ওদের দেখে যাচ্ছে।ওরাও যে আসবে আয়াত তা জানতো না। বোঝাই যাচ্ছে ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে সবচেয়ে mature হলো সামাদ আর মাইশা….বাকিরা immature ঠিক তা-না…কিন্ত তারা জগৎটাকে রঙিন চশমার মতো ভাবে। পৃথা আয়াতকে দেখে যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খায়।
আয়াত সানগ্লাস খুলে টিশার্টে ঝুলিয়ে রেখেছে বলে আয়াতের চোখগুলো বেশ নজরকাড়া লাগছে। পৃথা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে….
.
” আরে ভাইয়া…আপনিও কি যাচ্ছেন আমাদের সাথে?”
,
” তা নয় কি? মাইশার মতো আমারও নানুবাড়ি ওটা। তাছাড়া একটা কথা আছে; ” সুন্দরী মেয়েদের কখনো একা ছাড়তে নেই…আর যেখানে তোমাদের মতো সুন্দরী আছে সেখানে তো একেবারেই না..”( চোখ টিপ দেয় আয়াত)
.
পৃথার খুশি আর দেখে কে ! একে তো আয়াত তার ক্রাশ আবার আয়াত তার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে এটা ভেবেই খুশিতে আটখানা হয়ে যায় সে।
.
” পৃথা শান্ত হও ! এত খুশি হয়ে লাভ নেই….ভাইয়া নিজেকে দেখায় একরকম আর হয়ে যায় অন্যরকম….so please vacation mood এ থাকো।(সামাদ)
.
”okay…okay ! chill দোস্তো….”
.
.
সনধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে। অদূরেই আকাশে চলছে আতশবাজির খেলা। মাইশা আর তার বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে এ দৃশ্য উপভোগ করছে। সামাদ এসব কিছু ক্যামেরায় বন্দী করতে ব্যস্ত।লঞ্চ ইতিমধ্যেই ছেড়েছে। এখন এসব কিছু ছেড়ে এগোতে হবে তাদের চাঁদপুরের দিকে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂
অতীত
.
কোচিং শেষ করে আদ্রাফের জন্য অপেক্ষা করছি আমি। এমনিতেও higher math এর ক্লাস করে মাথায় অঙ্কগুলো disco dance করছে। আবার আদ্রাফেরও আসতে লেট হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে আদ্রাফ আসে। হাপাচ্ছে সে। বুঝাই যাচ্ছে তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করেছিলো সে। পরনে শার্টটা ঘামে একটু ভিজে আছে। কানে হাত দিয়ে ফেসটা innocent করে আমাকে বলে
”Sorry ! ”
তার এহেন কান্ডে আমি হেসে দেই। আদ্রাফও মুচকি হাসে। তারপর আমাকে বলে” চলো তাহলে।”
.
সরু রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি পাশাপাশি আমরা। ক্ষণে ক্ষণে মিহি বাতাসের আনাগোনা। রাস্তায় মানুষজনও অনেক কম। আদ্রাফ নীরবে আমার হাত আগলে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
ছেলেটা আসলেই অনেক অদ্ভুদ। অন্য চার-পাঁচজন হলে আমার একার সুযোগ নিতো। প্রেমের সম্পর্ক দাবি করে নানারকম অশালীন কাজ করতো। কিন্ত আজ দু’মাস ধরে আমাদের এ সম্পর্কে আদ্রাফ এমন কাজকর্মের ধারেও যায় নি। খুনসুটিময় কথা পর্যন্তই যা ছিলো। হয়তো ওকে আমি একারনেই এতো বেশি ভালোবাসি।
.
” মাইশা ! ”
.
” বলো……..”
.
” তোমার মা-বাবা কি আমাদের ভালোবাসা মেনে নিবে?”
আমি একটু চমকে যাই। তবে কি আদ্রাফ আমাকে হারানোর ভয় পাচ্ছে।
.
” তোমাকে আমি হারাতে চাই না…শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত উজাড় করে তোমায় ভালোবাসতে চাই। আমাদের ভালোবাসাটি টোনাটুনির সংসারে রূপ নেবে?”
.
আমি আশ্বাস দিয়ে বলি…
” আল্লাহ ভরসা….দুশ্চিন্তার কারন নেই। এমন না তুমি বেকার থাকবে। আগে পড়াশুনা শেষ করো। আর আমি এখনও স্কুলে পড়ি। এত তাড়াতাড়ি সবকিছু হবে না।”
আলতো হাসে সে। আদ্রাফের এই হাসিটা আমার মনে তোলপাড় শুরু করে দেয়। তার প্রতিটা কাজেই যেন আমি ডুবে যাই। আদ্রাফ খুব চুপচাপ ছেলে । নীরবে ওর ভালোবাসার প্রকাশ করতেই যেন বেশি ভালোবাসে সে।
আমাদের গল্পটা অন্য চার-পাঁচটা গল্পের মতো না। অতি সাধারনের ভীড়েও অসাধারনত্ব আছে আমাদের ভালোবাসায় যা অনেকটা স্নিগ্ধ ; অনেকটা প্রানবন্ত।
.
🍂🍂🍂🍂
.
বর্তমান
.
শহরের আলোর খেলা ক্রমশ কমে আসছে। লঞ্চের পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে এসব কিছু উপভোগ করছে মাইশা। ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি।
.
” এভাবে একা বসে আছো কেন?”
,
পেছনে ঘুরে মাইশা দেখে আয়াত দাড়িঁয়ে আছে। মাইশা কিছু বলে না আয়াতকে…..
” কিছু জিজ্ঞেস করছি , মাইশা?”
,
মাইশা এবারও নীরব। বেশ কিছুক্ষণ পর মাইশা বুঝতে পারছে আয়াত এখনও যায়নি। তার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে; তার 6th সেন্স তাই বলছে। একটু অস্বস্তিতে পড়ে পিছনে ফিরে সে।
” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
,
” মন টা চাচ্ছে ঠেসে তোমায় একটা চুমু খাই।”
.
মাইশা চোখ বড় বড় করে ফেলে।আবারও অসভ্যের পেত্নী ভর করেছে আয়াতের শরীরে।
.
”মানে..?”
.
” এতক্ষণ কথা বললে না কেন ?”(ভ্রু কুচকে)
.
”না…মানে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না।”
.
মাইশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে আয়াত। ঘটনক্রমে মাইশার ছোট চুলগুলো মুখে এসে পড়েছে। মাইশার চুলগুলো আস্তে করে কানে গুঁজে দেয় আয়াত। মাতাল করা চাহিনী দিয়ে বলতে থাকে…
.
” আমার সামনে তোমার ইচ্ছাগুলো প্যাকেটে মুড়ে থাকবে…..I hate you’r ignorance…..জানিনা কেন?”
মাইশা তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে। আয়াতের চোখে সে নিজের জন্য একরাশ মায়া দেখতে পারছে। কিন্ত এটা কি আদৌ তার অধিকার?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১৭[আদ্রাফের আংশিক রহস্য উন্মোচন]
.
পা মচকানোর কারনে এখন আয়াতের কোলে করে নানুবাড়ির দিকে এগোচ্ছে মাইশা। আশেপাশের মানুষজন এমনভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে যেন কোনো বলিউডের রোম্যান্টিক মুভির সিন চলছে এখানে। অবশ্য অন্য কেউ হলে মাইশা তো হাসিতে গড়াগড়ি করতো কিন্ত এখন ব্যাপারটা তার নিজের সাথে হচ্ছে বিধায় বেশ লজ্জা লাগছে তার। পেছন পেছন সামাদ, পৃথা , ইনায়া , আনানও কোনোরকম হাসি চেপে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
লঞ্চ থেকে নেমে কয়েক পথ পাড়ি দিতেই পা পিছলে পড়ে যায় সে। আর তারা যেখানে আছে সেখানে যাতায়াত ব্যাবস্থা খুব একটা ভালো না। কপাল খুললে ঘন্টায় একটা-দুইটা অটোরিকশা পাওয়া যেতে পারে। তাই এই বেচারী মাইশাকে আয়াতই কোলে তুলে এগিয়ে যেতে লাগলো।
.
” খুব তো বলছিলে…..মরলেও আমার কোলে তুমি উঠবে না। কই গেলো সেই কথাগুলো?”
.
আয়াতের কথা শুনে ওরা চারজন আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারে না। হো হো করে হেসে উঠে চারজন। মাইশা একনজর ওই বদমাশ চারজনের দিকে চোখ রাঙিয়ে আয়াতকে বলে উঠে…..
.
” আসলেই চরম মাত্রার অসভ্য তুমি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগে সাহায্য করে আবার আমাকেই কথা শুনাচ্ছো।উঠবো না আমি তোমার কোলে। নামআও আমাকে।”
,
আয়াত ওকে ছেড়ে দিতে গেলেই চিৎকার দেয় মাইশা। চোখ দুটো খিচে আয়াতের গলা জড়িয়ে বুকের সাথে মিশে থাকে। এবার বাকি সবার সাথে আয়াতও হেসে উঠে। মাইশার এখন নিজেকে হাসির পাত্র থেকে কম কিছু মনে হচ্ছেনা। মুখ ফুলিয়ে মিশে থাকে আয়াতের বুকে।
.
গ্রামের মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে আরও গহীনে ঢুকছে তারা। আয়াতের জীবনের বড় একটা সময় আ্যমেরিকায় থাকায় এই সৌন্দর্যের গভীরত্বটা কখনো নিবইড়ভাবে উপভোগ করতে পারেনি সে। কিন্ত আজ সে উপভোগ করছে সাথে আছে এমন একজন যে তার মনের একজন অস্তিত্ব। হয়তো সে তাকে এতটা গভীরভাবে আগলে নিতে পারেনি কিন্ত তাকে ছাড়া সে যে অসম্পূর্ণ থাকবে এতটুকু অনুভব করতে পেরেছে।
.
অবশেষে এসে পড়লো তারা তাদের গন্তব্যস্থলে। গাছপালায় ঘেরা ছোট্ট একটি পুরোনো ধাঁচের বাড়ি। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই তারা সবাই দেখে বড় রুমটাতে….মাইশার আব্বু-আম্মু , খালামণি-খালু, আরিয়াপু , নুহাশ ভাইয়া আর নানুজান।
.
.****
” আহারে….আমার সোনামাণিকটা কত বড় হইয়া গেসে…ক’দিন পরতো তোর বিয়া দিতে হইবো…”
.
মাইশা আর তার বন্ধুবান্ধবরা এককোণে আয়াতের যত্নাদি চুপচাপ দেখছে। তার পা মচকানোর কারনে সে ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারছে না। সে শুধু মনে মনেই হাসফাস করছে।
.
” আমি এতটাই পর হয়ে গেলাম ওদের কাছে যে আমার পা মচকানোর পরেও ওই খাটাশ আয়াতটার কাছে সবাই পড়ে আছে।”(মাইশা)
.
”সবাই কই তোর নানুজানই তো আয়াত ভাইকে আলালের ঘরে দুলাল বানিয়ে রাখছে….”(আনান)
.
” ইসসস…আয়াত ভাইকে কত্ত কিউট রাখছে….!”(পৃথা)
ওরা সবাই পৃথার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সে চুপসে যায়।হঠাৎ আরিয়াপু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
” আরে তোমরা যাও ফ্রেস হয়ে আসো…অনেক journey করে আসছো একটু রেস্ট নাও।”
,
” জ্বী আপু ঠিক বলেছো….ওই সামাদ আমাকে একটু রুমে দিয়ে আয়। এই পা নিয়ে চলাফেরা এখন আমার জন্য impossible…”(মাইশা)
আয়াত সামাদকে সময় না দিয়েই কোলে তুলে নেয় মাইশাকে। আয়াতের হঠাৎ করে এভাবে কোলে নেওয়াতে হকচকিয়ে যায় মাইশা। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।
,
রুমে ওকে রেখে ফিরে আসতেই মাইশা আয়াতকে বলে….
” আয়াত আমি জানি না তোমার মনে এখন আমাকে নিয়ে কি চলছে। আমি জানি না এটা আদৌ কি তোমার ঘৃণা নাকি শুধু কেয়ার…..so I request you এমন কিছু করো না যার জন্য তোমায় আর আমায় পস্তাতে হয়?”
.
পেছনে ঘুরে আয়াত।মাইশার অনেক কাছে গিয়ে কানে মিহি গলায় বলতে থাকে…
” আমারটা আমি বুঝে নেবো। I don’t want your advice….তবে একটা কথা বলি…it’s true that তোমার আমার সম্পর্ক অনেকটাই অন্যরকম। হয়তো আমার জন্য ! কেননা হাজারেও আমার মতো কাউকে খুজেঁ পাবে না তুমি। I’m too much mysterious….”
একথা বলেই চলে যায় আয়াত। মাইশা বরাবরের মতোই নিশ্চুপ হয়ে আছে।
.
.
দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। পা ব্যাথার জন্য একটা ব্যাথার ঔষধ খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে সে।এদিকে সবাই উঠোনে আড্ডা দিচ্ছে আর মাইশা অনুপস্থিত। বিষয়টা একটু হলেও ভাবাচ্ছে আয়াতকে।তাই সেচুপচাপ সেখান থেকে কেটে পড়ে ওর রুমে যায়।
.
মাইশা কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আয়াত ফিরে আসতে নিলেই তার চোখ যায় খাটের কোণে এক নীল ডায়েরীটার উপর। অনেক কৌতূহল জাগছে আয়াতের মনে। কিন্ত পরে ভাবে…না থাক ! কারও personal জিনিস ধরা উচিত না।
কিন্ত কৌতুহল না দমিয়ে আয়াত সেই ডায়েরীটা তুলে নেয়। ডায়েরীটা খুলতেই প্রথমে ভেসে আসে হালকা সবুজ রঙের শার্ট পরিহিত এক ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। আয়াত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। মনে জাগছে তার হাজারো প্রশ্ন….” কে ছেলেটা?”,” মাইশার কাছে ওর ছবি কেন?”
ছবিটার কোণে লেখা আছে ” আদ্রাফ”। আয়াতের মনে হচ্ছে এই নামটা যেন কোথায় শুনেছে। তখনই তার মনে পড়লো সে রাতে মাইশা অজ্ঞান হওয়ার আগে আদ্রাফের নাম উচ্চারন করেছিলো।
,
আয়াত ডায়েরীর পাতা উল্টোয়। সেখানে সব লেখা আছে তার স্কুলজীবনের প্রথম অনুভূতি , আদ্রাফের সাথে তার পরিচয় , আদ্রাফের জন্য ওর অনুভূতি , তাদের ভালোবাসার পথচলা সব। আয়াত এক এক করে সব পড়তে থাকে:
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
আজ স্কুল ফাঁকি দিয়ে যাবো আদ্রাফের সাথে ঘুরতে। আদ্রাফকে মিথ্যে বলেছি যে আজ হাফ টাইম ক্লাস হবে। নাহলে তো আমায় নিয়েই যেত না। যাই হোক বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রাফ আসতেই ওর বাইকে উঠে ছুটি চলি আমাদের অজানা গন্তব্যে।
আমার পরনে স্কুল ড্রেস। দুপাশে দুটো বেণী ,আর আদ্রাফ নীল রঙের একটা শার্ট পড়েছে। আমাদের দুজনকে কোনো দিক থেকেই প্রেমিক-প্রেমিকা লাগছে না। কিন্ত কথা আছে না…” মনের বিষয়টাই বড় বিষয় ”
তার উপর ভিত্তি করেই আমাদের অব্যক্ত প্রেম চলছে।
.
বাইকটা শহরের বড় বড় দালান ছাড়িয়ে দূরে যেতে থাকলো। আদ্রাফের পিঠে মাথাটা হেলান দিয়ে আমি সে দৃশ্য উপভোগ করছি। সময়টা শরৎকাল। একটি সরু পাকা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমারা। আশেপাশে সবুজ ঘাস আর কাশফুলের বাহার। ক্ষণে ক্ষণেই বিল দেখতে পাচ্ছি আমি।
.
” আদ্রাফ কোথায় নিয়ে আসলে আমায়?”
,
” কেন…..পছন্দ হয়নি?”(মুচকি হেসে)
.
” উহু……..অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে।”
আদ্রাফ মুচকি হাসে। বাইক একপাশে রেখে একটু দূরে গিয়ে নরম ঘাসের গালিচায় শুয়ে নীল আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি। চোখে মুখে মাঝে মাঝে কাশফুল এসে পড়ছে। আদ্রাফ তা আবার হালকা ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেয়।
,
” আদ্রাফ?”
,
”হুম….”
.
”একটা গান শুনাবে?”
আদ্রাফ আমার দিকে তাকায়। তার কালো চোখ জানান দিচ্ছে সম্মতি। চোখ বন্ধ করে সে গেয়ে উঠে,
” মন আকাশে বৃষ্টি আসে রৌদ্র মেঘের জুটি❤
আজ নতুন আলোয় আঁধার কালো খুনসুটি
ঝড়ের বেশে এলো কেশে কাজল সে চোখদুটি
দিলো কঠিন কথার ভীষন্নতার ছুটি
গোপন করে আপন তোরে; বুকের পাঁজরে রাখি🍂
ঘুমের বড়ি দিয়ে আড়ি হৃদয় বাড়িতে থাকি
.
চলনা সুজন করি কূজন সুখপাখি হয়ে ডাকি🍂
দেখুক লোকে কেমন তোকে ; প্রেমে জরিয়ে রাখি
চলনা সুজন পালাই দুজন; ওদেরকে দিয়ে ফাঁকি
কোনো সমান্তরাল পথের বাঁকে; বাসা বাধিয়ে রাখি…❤❤”
(আমার প্রিয় নায়ক সিয়ামের ”বখাটে” মুভির পছন্দের একটি গান। এখন থেকে এই গানটা শুনলে আদ্রাফের জন্য আমার মন কাদবে🥺)
.
আদ্রাফের গানের প্রতিটা ছন্দে তলিয়ে যাচ্ছি আমি। তার প্রতিটা শব্দই আমাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া। একটা মানুষ কিভাবে কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে? আকাশের মেঘের সাথে তাল কেটে সময়ও অতিবাহিত হচ্ছে। কাশফুলের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে কতক্ষণ যে সময় পার করলাম তা আমার অজানা। আদ্রাফকে আমি পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলতে থাকি….
” অনেক ধন্যবাদ আদ্রাফ এত সুনদর একটি সময় আমায় উপহার দেওয়ার জন্য।”
,
আদ্রাফ মুচকি হেসে আমার দিকে ঘুরে। তারপর গভীরভাবে আমার কপালে ঠোঁট বুলায়। কপালে ভালোবাসার পরশে অজানা এক শুদ্ধতা বিরাজ করে যাতে কোনো অশ্লীলতা নেই। আদ্রাফ মিহি কন্ঠে বলে ওঠে…
” ভালোবাসি।”
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
এর পরের পৃষ্ঠা খালি। আয়াত বাস্তবে ফিরে। এতক্ষন একটা ভালোবাসা নামক বেড়াজালের আবদ্ধ ছিলো সে। মাইশাকে যে কেউ এত ভালোবাসতো এই ডায়েরী না পড়লে জানতেই পারতো না সে। তবে এটাই আদ্রাফ…..কিন্ত এখন সে কোথায়?
,
খপ করে আয়াতের কাছে থেকে কেউ ডায়েরী ছিনিয়ে নেয়। মাইশা রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
.
” এতটা লাজলজ্জাহীন কীভাবে হতে পারো তুমি? আমার Personal জিনিসে তোমার দখলের কারন আমার অজানা। সমস্যাটা কি?”
,
কথাগুলো মাইশা বেশ উচ্চস্বরে বলছে । নাক তার টুকটুকে লাল হয়ে আছে। আয়াত সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মাইশাকে কড়া গলায় প্রশ্ন করে….
” আদ্রাফ কোথায়?”
.
চুপ হয়ে যায় মাইশা। আবারও অতীতের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না সে।
.
” আদ্রাফ কোথায়? Tell me dam!”(উচ্চস্বরে)
.
কেঁদে দেয় মাইশা। আদ্রাফের ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা ভাবতেই হাহাকার করে ওঠে তার মন।
”আদ্রাফ আর নেই !”
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-১৩+১৪+১৫

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১৩
মাঝরাতে যখন কোনো ছেলে কোলে তুলে নিয়ে যাওয়ার ওয়ার্নিং দেয় তখন একটি মেয়ে ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। আর মাইশাও তার ব্যাতিক্রম কিছু না। কম্বল মুড়িয়ে যে আরামের ঘুমটিতে সে বিচরণ করছিলো মোবাইলে আয়াতের কথা শুনে এখন তার বিন্দুমাত্র রেশ নেই। মাইশা কপাল কুচকে আবার বলে উঠে….
.
” শ্বশুড়বাড়ির আবদার পেয়েছো….আমাকে এত রাতে আসতে বলছো কেন…আমি যাবো না। দেখি, ৯ তলা থেকে তুমি কীভাবে আমায় নিয়ে যেতে পারো !.”
.
” ওহ্…তাহলে তুমি আসবা না…Is it your final decission?”
,
আয়াত দাঁতে দাঁত চেপে এ কথাগুলো বলছে। বুঝাই যাচ্ছে মাইশার কথায় ভয়ঙ্করভাবে রেগে আছে। মাইশাও এবার অটল।সবসময় সব জায়গায় তো নিজের জেদ দেখালে চলে না।এত রাতে কিছুতেই সে আয়াতের সাথে যাবে না। মাইশা একটু ঢোক গিলে বলে…….
” Yeah, It is my Final decission, আমি যাবো না মানে যাবো না।”
.
আয়াত হেসে উঠে। ফোনে স্পষ্ট তার দীর্ঘনিঃশ্বাস শুনতে পেয়েছে মাইশা।
.
” ওকে ফাইন…..মনে রেখো আমিও আরহাম আয়াত।আমার কথার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করিনা আমি…See you soon…”
বলেই আয়াত ফোন কেটে দেয়। মাইশা অবাকপানে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। মাইশা ভেবেছিলো একথা শুনে আয়াত রেগে যাবে, চিল্লাচিল্লি করবে এমন তো কিছুই হলো না। তবে এখন সে ভাবছে যে আয়াত এত রাতে তাকে বাইরে আসতে বললো কেন?
.
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে। মাইশা আবার ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্ত আয়াতের কথা ভেবেই তার ঘুম আসছে না। পরে সে ভাবে আয়াতের কথা এতো ভাবছে কেনো সে। আয়াত শুধুমাত্র ওর খালাতো ভাই যে ওকে পছন্দ করে না। তবে মানতে হবে ওর মধ্যে কিছু একটা আছে যেটা বারবার মাইশাকে আকর্ষণ করছে। মাইশা হঠাৎ এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দেয়। কি সব আবোল-তাবোল ভাবছে সে…..এসব ভেবে কোনো লাভ নেই। উল্টো তার মনের কাছে এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে।
.
ঘুমের দোরগোড়ায় একপা দিতেই মাইশার মনে হলো কেউ আচমকা তাকে ঘুমের রাজ্য থেকে টেনে-হিচড়ে নিয়ে আসলো। চোখটা পিটপিট করে খুলতে সে যেই না আয়াতকে দেখলো তার চোখ আপনাআপনি কুমিল্লার রসগোল্লার মতো হয়ে যায়। আয়াত তাকে কোলে তুলে ওর রুম থেকে বাইর হচ্ছে।
আধাঘুম থেকে সবেমাত্র চোখ খুলে কেউই এ পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারেনা। আর মাইশাও আয়াতের গলায় ঝুলে যেন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেণ্ড পর যখন ওর ধ্যান ফিরে শুরু হয়ে যায় নড়াচড়া। আয়াতের বুকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি মারছে সে।আয়াত এবার কড়া গলায় বলে থাকে…..
.
” এভাবে আমার বুকে কিল-ঘুষি না দিয়ে….একটা চিৎকার দাও। আর খালুজান যদি এতরাতে তোমাদের বাসায় তোমাকে আমি কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এটা দেখে ভাবতে পারছো কি হবে……ঠাস করে কবুল বলে ঠুস করে তোমায় নিয়ে বাসরঘরে যেতে হবে। Now choice is your……(কানের কাছে ফিসফিসিয়ে)আমার সাথে বাসর করতে চাও ? Than shout….”
.
একথা শুনে মাইশা শামুকের মতো আয়াতের শরীরের সাথে মিশে যায়। গলা দিয়ে একটা সাউন্ডও বের হচ্ছে না তার।আয়াত তারপর ফ্যাট থেকে বের হয়ে ওয়াচম্যানকে ফাকিঁ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। মাইশা বুঝতে পারছে না এই ছেলটার মনে কি চলছে।
.
মাইশাকে গাড়িতে বসিয়ে আয়াত ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। মাইশা এবার প্রশ্ন করে…
”এবার তো বলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?”
.
”চুপ করে বসো….আস্তে আস্তে জানতে পারবে…..”
.
.
ঢাকা-মাওয়া Highway দিয়ে গাড়িটা এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তাটা আসলেই চমৎকার। বাতাসের ঝাপ্টায় মাইশা বাইরেও ঠিকমতো তাকাতে পারছে না।হাইওয়েতে সে অনেকবার আসা-যাওয়া করেছে কিন্তু নিঝুম রাতে এমন কৃত্তিম সৌন্দর্য কখনোই উপভোগ করেনি সে। বেশ সময় পর মাইশা রাস্তায় সারি-সারি দোকান দেখতে পারছে। বেশিরভাগই খাবারের দোকান…..এই মাঝরাতেও দোকানগুলো মানুষের সমাহারে যেন গমগম করছে। নাকে ভেসে আসছে ভাজা ইলিশ মাছের ঘ্রাণ।
.
অনেকটা অস্বাভাবিকভাবেই মাইশা তাকিয়ে আছে সেপানে। এটাই তবে মাওয়াঘাট। ফেসবুকে বা ইউটিউবের অনেক ব্লগেই এই জায়গাটির নামে কম-বেশি শুনেছে কিন্ত কখনো আসা হয়নি। আর এখন বাজে প্রায় সাড়ে তিনটা। এ সময় যে এখানে ট্যুরিস্ট দিয়ে গমগম করবে তা মাইশার ভাবনার বাইরে ছিলো।
মাইশা এবার কৌতূহল নিয়ে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত বরাবরের মতোই তার নিজের কাজে ব্যস্ত। মাইশা একটা স্বতস্ফূর্ত হাসি দিয়ে আয়াতকে প্রশ্ন করে….
” এখানে কেন এসেছি আমরা? ”
.
আয়াত একপাশে গাড়ি পার্ক করতে করতে বলে….
” মিডনাইটে তোমার মতো ভূতনির সাথে ঘুরবো তাই…..একা আসতে ইচ্ছে করছিলো না।”
.
আয়াত মাইশাকে ভূতনি বলায় একটু চোখ কুচকে ফেলে সে। কিন্ত এখন রাগারাগি করার মতো মনমেজাজ নেই ওর। আয়াতের কথাগুলো কিছুক্ষণের জন্য এককোণায় বন্দী করে এখানে ঘুরবে বলে স্থির করলো।
.
” পানসী রেস্তোরা ” এখানকার খুব জনপ্রিয় একটি রেস্তোরা। মানুষও এখানে অনেক গমগম করছে। আবার অনেক বিদেশি পর্যটকেরাও এখানকার ফুড রিভিউ দিচ্ছে। কিন্ত আয়াত এই রেস্টুরেন্টে ঢুকবে না। ভিড় আয়াতের কাছে বরাবরই অপছন্দের এক জিনিস। ৫ মিনিট হেটে ওরা হাইওয়ে থেকে অনেকটা দূরে একটা রেস্তোরা পায়। এখানে মানুষ একটু কম।
আর পরিবেশটাও অসাধারণ। রেস্তোরাটির পেছনে মাওয়াঘাটটি স্পষ্ট দেখা যায়। ক্ষণে ক্ষণে কানে ভেসে আসে ঢেউয়ের সুর। আয়াত মাইশার কানে মৃদু কণ্ঠে বলে…..
” ভালোলেগেছে.?”
.
”হুম্ অনেক ।”
জানুয়ারির প্রথম সময়ে শেষরাতে ঠান্ডার তীব্রতা একটু বেশিই থাকে। তাই এখন একটু একটু শীত করছে । মাইশা নিজের পরনে চাদরটি নিজের গায়ে ভালোমতো পেচিয়ে নেয় কিন্ত অদ্ভুদ ব্যাপার আয়াত শুধু একটা হাফ হাতা গ্রে টিশার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার ছাড়া কিছুই পড়ে নি।
.
” আয়াত…..! ”
.
” বলো…”
.
” তুমি জ্যাকেট আনো নি ? এই শীতের মধ্যে জ্যাকেট ছাড়া ঘুরে বেড়াও কিভাবে…..?”
.
” তুমি যা শুরু করেছিলা ! তাড়াহুড়োর মধ্যে জ্যাকেট আনতে ভুলে গিয়েছি…….বাই দ্য ওয়ে ! প্রবলেম নাই । (মাইশার কানের কাছে ফিসফিসিয়) আমার পাশে তুমি আছো না? পুরাই তো এটম বোম্ব। তোমার মেজাজে গরমে তো আমি ভষ্ম হয়ে যাবো।(দুষ্টু হেসে)
.
মাইশা বিনিময়ে কিছু বলে না। আয়াতের এমন কথা শুনলে তার কান কেমন যেন গরম হয়ে যায়। তখন তার হার্টবিটের সাউন্ডও স্পষ্ট শুনতে পায় সে। আয়াত তার এমন রিয়্যাক্ট দেখে যেনো আরও মজা পেয়ে যায়। মাইশাকে এভাবে জ্বালাতে তার অনেক ভালোলাগে।
.
শীতের রাতে নদীর পাড়ে ভাজা ইলিশ মাছের সাথে গরম গরম ভাত আর হরেক রকমের ভর্তার মধ্যে এক আলাদাই আমেজ আছে , অন্যরকম এক আনন্দ আছে যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। ক্ষণে ক্ষণে উত্তুরে হাওয়া বইছে আর তারই সাথে তাল মিলিয়ে খেলা করছে নদীর ঢেউ। পদ্মার তাজা ইলিশ মাছের স্বাদে তা আরও সমৃদ্ধ লাগছে দুজনের কাছে।
.
অন্যান্য রেস্তোরাগুলো বেশ জনবহুল আর এটা একটু দূরে হওয়াতে এই নিশিসৌন্দর্য আরও নিরিড়ভাবে অনুভব করতে পারছে মাইশা। আয়াত তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে । মাইশার মুখে এক অন্যরকম ঝলক। খাওয়া-দাওয়া শেষে দুজনেই সেখান থেকে বেরিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে।
আয়াতের গন্তব্য মাইশার কাছে অজানা। মাইশার একহাত আগলে সে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
” আয়াত , আমরা কোথায় যাচ্ছি ?”
.
আয়াত নিশ্চুপ।
.
”কি হলো….চুপ করে আছো যে?”
.
আয়াত আলতো হাসে। তারপর একরাশ আগ্রহ নিয়ে সে তাকায় মাইশার দিকে। মাইশা আয়াতের দৃষ্টি বুঝতে পারছে না।
.
” বাংলাদেশে আসার পর খুব ইচ্ছে ছিলো কাউকে সাথে নিয়ে ঘোরার। কিন্ত ভাবতে পারিনি ভাগ্য তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে। যা-ই হোক আমার সাথে চলো…..গভীর রাতে তুমি আর আমি আজ যা দেখবো হয়তো সারাজীবন চাইলেও দেখতে পারবো না। তাই বলছি সময়টাকে অনুভব করো।”
.
আয়াতের প্রতিটি কথা মাইশার কাছে ধাঁধার মতো লাগছে। এটা সত্যি যে ছেলেটা অদ্ভুদ। অনেকটাই অদ্ভুদ। হয়তো খুজে হাজারেও এমন একটা আয়াতকে পাওয়া যাবে না যে মাইশার জন্য অনুভব করে ঠিকই ; কিন্ত হয়তো তা প্রকাশ করে না। এটাই হয়তো তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১৪+১৫
নিস্তব্ধ এই রাতে সরু রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন যুবক-যুবতী।তাদের মাঝে যে কিসের সম্পর্ক হয়তো তার উত্তর তারা নিজেরাই জানেনা। ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়া দুজনের গায়েই স্পর্শ দিয়ে চলে যাচ্ছে। মাইশার এতে ভালোলাগলেও আয়াত হাফহাতা টিশার্ট পড়ায় তা আরও নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারছে সে।আয়াত এবার মাইশার পরনে চাদরের মধ্যে ঢুকে যায়। পা এগোনো থামিয়ে দেয় মাইশা। আয়াতের ঠান্ডা শরীর মাইশার উষ্ণ গায়ের সাথে অনেকটাই মিশে আছে।
.
আয়াত তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মাইশার হাতের তালুতে নিজের হাত আলতো করে স্পর্শ করে এগিয়ে যেতে ব্যাস্ত। দুজনেই এক চাদরে নিজেদের আবৃত করে গন্তব্যহীনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। মাইশার কানে পানির ঢেউয়ের আওয়াজ প্রবেশ করতেই এক অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করে মনে। উত্তজনার বশে আয়াতের হাত আঁকড়ে ধরে সে।
.
মুচকি হাসে আয়াত। মাইশা আনমনে বলতে থাকে……
” সামনে কিসের আওয়াজ শুনতে পারছি আয়াত?”
.
”আমি হয়তো আন্দাজ করতে পারছি কিন্ত সম্পূর্ণ নিশ্চিত না…..এগিয়েই নাহয় দেখি……”
.
কিছুদূর এগিয়ে দুজনেই পা থামিয়ে দেয়। কেননা এর পর আর কোনো পথ নেই। অবাক দৃষ্টিতে দুজনেই তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। এটাই বাংলাদেশের বৃহত্তম নদীগুলোর একটি…..পদ্মা নদী। নিশিরাতে এখান দিয়ে কোনো যান চলাচল করে না বলে এটা এখন নীরব নদী…তা কিন্ত ঠিক নয় ! উত্তাল নদীর সুমধুর গর্জন , আছড়ে পড়া ঢেউগুলো খেলা করছে নদীর পাড়ে। অদূরেই কাজ চলছে বাংলাদেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতুর। কুয়াশার আবরণে সেই কাজগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
.
আয়াত আর মাইশা এখন যেদিকে দাঁড়িয়ে আছে বোঝাই যাচ্ছে এখানে মানুষজন আসে না। আশেপাশে চলছে জোনাকির খেলা। শেষরাতের আবছা অন্ধকারে হলুদ জোনাকিগুলো সবুজের সাথে মিশে হলদেটে সবুজ রং ধারণ করেছে। মাইশা একটা লম্বা নিঃশ্বাস নেয়। তারপর আয়াতের দিকে তাকায়…..
.
আয়াত এখনো সেদিকে তাকিয়ে আছে জোনাকির আলো প্রতিফলন ঘটিয়ে তার কালচে বাদামী চোখে খেলা করছে রঙের খেলা। ঠোঁটে ফুটে আছে এক চিলতে হাসি…..যে হাসি হয়তো তার মুখে পাওয়া দুষ্কর। আয়াত মন থেকে আসলেই অনেক স্বচ্ছ কিন্ত সে তা প্রকাশ করতে চায় না। মাইশা আদৌ জানে না আয়াত এমন অস্পষ্ট কেন। অজানা এক কারনে এই অস্পষ্ট আয়াতের জন্য হয়তো কোনো অনুভূতি জন্মে গিয়েছে মাইশার।
মাইশা আবার পদ্মা নদীর সৌন্দর্যে নিজের দৃষ্টি দেয়। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,
.
” আয়াত? ”
.
”বলো…..”
,
” এই জায়গাটি আসলেই অনেক সুন্দর……তুমি আমাকেই কেন নিয়ে এলে এখানে…….”
.
”তখন বললামই তো ! একা আসতে ভালোলাগছিলো না তাই তোমার মতো পেত্নিকে নিয়ে এলাম।”
.
বিরক্ত হয় মাইশা। প্রত্যেকবার আয়াতকে ভালো মুডে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে আয়াত তখন সবকিছু বিগড়িয়ে দেয়। আর এই জিনসটাই মাইশার বরাবর অপছন্দ। আয়াতের হাত ছেড়ে মাইশা সামনে গিয়ে দাড়ায়। অনেকটা পাড়ের কাছে। আয়াতের কথা নিয়ে এখন বিরক্ত হতে চাচ্ছে না সে।
.
নদীর হাওয়াগুলো মাইশার গায়ে মিশে যাচ্ছে। চোখ বুঁজে তা অনুভব করছে সে। আচমকা আয়াত পেছন থেকে তার হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মাইশার টলটলে কালো চোখযুগল আয়াতের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়াতের চোখেমুখে আছে অদ্ভুদ এক আকর্ষণ যাতে যেকোনো সময়ই মাইশা তলিয়ে যেতে বাধ্য। আয়াত তার ঠোঁট কিঞ্চিত প্রসারিত করে রাখলেও তার তীক্ষ্ন চোখজোড়া প্রমাণ করে দিয়ে যে ঠিক কতটা সে মাইশার জন্য অনুভব করে যার উত্তর হয়তো দুজনের কাছেই অজানা।
.
মাইশা গায়ে কোনো ওড়না না পড়ে শুধু চাদর পড়ে ছিলো ; আর বাতাসের তালে তা এখন গায়ের থেকে সরে নিচে পড়ে গিয়েছে। মাইশা তা বুঝতেও পারেনি। মাইশার কোমড় চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে আয়াত। মাইশা আয়াতের কাছে থেকে সরে আসতে নিলেই আরও জোরে মাইশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে…আয়াতের কাজকর্ম সবকিছুই মাইশার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আয়াত এবার মাইশার কানে ফিসফিসিয়ে বলে…….
.
” আই এম সরি মাইশা…..”
.
মাইশা নিস্তব্ধ। আয়াতের অনেকগুলো কাজই মাইশার কাছে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ; কিন্ত আয়াত যে ঠিক কোন কারনে সরি বলছে মাইশার কাছে তা অজানা।
.
” সেদিন তোমাকে হসপিটালে এভাবে থাপ্পড় মারা আমার উচিত হয়নি। কিন্ত থাপ্পড় না মেরেও আমি পারি নাই,….কারন আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে হারানোর। আর তোমার যে কোনো ট্রমা আছে তা তুমি কখনোই কাউকে জানাওনি এই ভেবেই রাগের বশে আমি…….”
থেমে যায় আয়াত। আয়াত বেশ স্বাভাবিকভাবেই একথাগুলো বলছে।
.
”এটা ভেবো না এর জন্য তোমায় আমি তুলে নিয়ে এসেছি…..রাগের বশে আমি ভুল করে ফেলেছিলাম & that’s why তোমায় সরি বলেছি…..”
.
মাইশা আনমনে হাসে…..সে ভেবেছিলো আয়াত তার সব ভুলের জন্য অনুতপ্ত ; কিন্ত না। আয়াতের বুকে হাত দিয়ে সরে আসতে নিলেই আয়াত নিজের বাঁধন আরও গাঢ় করে। মাইশা চোখ কুচকে তাকালেই আয়াত দুষ্টু হেসে বলে…..
” আমি কি একবারও বলেছি আমার কথা শেষ হয়েছে মাইশুপাখি ?”
.
আয়াতের দৃষ্টি নিচের দিকে। মাইশা সেই দৃষ্টি অনুসরন করে নিচে তাকাতেই তার চোখ ছানাবড়া। গলার নিচে সে লাল তিলটি রাতের আধারে স্পষ্ট না দেখা গেলেও অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মাইশা এবার ছোটাছুটি করছে। কিন্ত আয়াতও কম না; ঠোঁট কামড়ে মাইশার দিকে তাকিয়ে হাসছে সে। এবার না পেরে আস্তে করে মাইশার চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
.
এতক্ষণ চাতক পাখির মতো ছটফট করা মাইশা নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়। পাথর হয়ে গিয়েছে সে। আয়াতের উষ্ণ নিঃশ্বাস তার চুল ভেদ করে ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে। আয়াত নেশাকাতুরের মতো করে বলছে….
.
”তোমার ওই লাল তিলটা দেখলে আমি কিছুতেই ঠিক থাকতে পারি না মাইশা ! ড্রাগের মতো ওই জিনিসটা আমায় টেনে তোমার কাছে নিয়ে যায়। মনটা তো চায় কোনো বড়সড় একটা ভুল করে ফেলি……কিন্ত এমন কিছু করলে আমাদের দুজনকেই যে পস্তাতে হবে ! তাই তো তোমার সাথে খারাপ বিহেব করে ফেলি। Trust me মাইশা ! তোমার ওই লাল তিলটা এখনো আমায় খুব করে টানছে।”
.
মাইশার ইতিমধ্যে কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছে। আয়াতের বিহেব তার অন্যরকম লাগছে।
.
” আমি….আমি জানি না মাইশা…..তুমি আমার কাছে কি? বাট আমি কিছুতেই তোমাকে হারাতে চাই না। আমি জানি না…এটা আমার ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু কিন্তু তোমাকে আমি আমার কাছে রাখতে চাই। তোমার রৌদ্দুর হয়ে থাকতে চাই।”
.
আজ এই রাতটি হয়তো ওদের দুজনের কাছেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই সৌন্দর্য যেমন ওরা স্মৃতি থেকে মুছতে পারবে না তেমনি এই প্রকাশ্য অনুভূতিগুলোও অগ্রাহ্য করতে পারবে না। গাড়ি দিয়ে পুনরায় ঢাকায় ফিরছে তারা। মাইশার চোখে এবার ঘুম ভর করেছে । কখন যে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো তা সে বুঝতেই পারে নি।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
অতীত
আজ একসপ্তাহ ধরে আদ্রাফ ভাইয়ের সাথে দেখা হয় না। সেরাতে মিহির আপুর জন্মদিন করে যখন তার বাইকে করে বাড়িতে ফিরলাম তখনই ছিলো আমাদের শেষ দেখা। তাই আজ রাত লুকিয়ে আস্তে করে ছাদে গেলাম একনজর হলেও তাকে দেখার জন্য।
ছাদের দরজা খুলতেই গিটারের সুর বেজে উঠলো আমার কানে…..আমি একটা মুচকি হাসি দেই। কেননা আদ্রাফ ভাই ছাড়া এতরাতে ছাদে আর কেউ গিটার বাজাবে না। পাশের ছাদে উকি মেরে দেখি…..সে গিটারে একটু আধটু করে টুং টাং সুর তুলছে।
,
আদ্রাফকে দেখলেই আমার মনে কেমন যেন ঝড় শুরু হয়ে যায়। তার প্রতিটা কাজেই এক ভালোলাগা কাজ করে। আজ এতদিন পর তাকে দেখাতে বেশ ভালোলাগছে আমার। আমি আস্তে করে তাদের ছাদে চলে যাই। সে হয়তো আমার উপস্থিতি বুঝতে পারেনি তাই এখনো রেলিয়ে বসে ব্যাস্ত শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করে গিটারে সুর তুলছে।
.
আমি বুকে একরাশ সাহস আর আশা নিয়ে তাকে ডাকি.
” আদ্রাফ ভাই…..!”
.
সাথে সাথে পেছনে ঘুরে আদ্রাফ। তার চোখে-মুখে কেমন যেন উদ্বিগ্নতা। যেন এতক্ষণ মলিন সুর তুলে আমার অপেক্ষারই জানান দিচ্ছিলো সে।সে রেলিং থেকে নেমে সাথে সাথে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি কৌতুহল নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে তার শুকনো ঠোঁটযুগল একটু ভিজিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে…..
.
” আমি খুবই সাধারন একটা ছেলে। সাধারন মানুষদের মতোই আমার ভাবনা। তাই হয়তো অন্যভাবে নিজের প্রিয়জনকে মনের ভাব ব্যক্ত করতে পারবো না। তাই সাধারনভাবেই বলছি….. আমি তোমাকে ভালোবাসি মাইশা ! তোমার কালো চোখ আমার মন কেড়ে নিয়েছে…..তোমার ঠোঁট কামড়ে হাসি তোলপাড় করেছে আমার হৃদয়। আমি চাই সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখতে….হবে আমার সঙ্গী? ”
.
আমি এবার পাথর হয়ে গিয়েছি। ঠোঁটে আপনা-আপনি এক মুচকি হাসি চলে আসে আমার। জানিনা কেন।হয়তো আদ্রাফের মুখে ভালোবাসি কথাটি শুনে। তার জন্য আমারও এক অনুভূতি ছিলো। আমি এবার তাকে জরিয়ে ধরি….তার বুকে মুখ গুঁজে বলতে থাকি….
.
” আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি আদ্রাফ ভাই। অনেক ভালোবাসি….আপনার প্রতিটা কাজের প্রেমে পড়েছি…..আপনার টোলপড়া হাসিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি…..কখনো আপনাকে আমি হারাতে পারবো না আদ্রাফ ভাই ! ”
.
আদ্রাফের মুখে প্রশান্তির হাসি দেখছি আমি। হয়তো আজ থেকেই শুরু হবে আমাদের প্রেমের পথচলা !”
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
বর্তমান
,
সকালে মুখে মিষ্টি রোদের প্রতিফলন পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুলে মাইশা। তার ঘরের লালচে কমলা পর্দাগুলো হাওয়ার ধাক্কায় উড়ে বেড়াচ্ছে। আবারও আদ্রাফকে স্বপ্নে দেখেছে সে। অতীতের সেই কথাগুলো ভাবতেই মুখে যেমন এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে তেমনি বের হয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।
কিন্ত এখন সে ভাবছে এখানে এলো কি করে? সে তো আয়াতের সাথে গাড়িতে ছিলো। তবে কি ওটাও স্বপ্ন ছিলো?
.
আশেপাশে তাকাতেই সে একটা সাদা চিরকুট খুজে পায়। চোখ ছোট ছোট করে ফেলে মাইশা। চিরকুটটা খুলে সে পড়তে থাকে….
.
” Good Morning মাইশুপাখি !
ভেবোনা গতরাতে যা দেখেছিলে তা স্বপ্ন ছিলো বরং মনে করবে জীবনের
একটা সুন্দর সময় পার করেছিলে। তুমি যে এতো ঘুমকাতুরে গতকাল না
দেখলে জানতেই পারতাম না। এতবার করে ডাকলাম কিন্ত না ; তুমি তো
আমার বডিকে নিজের বেড বানায় ফেলেছিলে। যাই হোক , আমিই
তোমায় কোলে করে তোমার রুমে এনেছি। ভয়ের কারন নেই… খালু-
খালামণি দেখেনি। আর ওজন কমাইও। আমার হাতগুলো এখনো ব্যাথা
করছে।
আজ আমি সারাদিন ঘুমাবো ; তাই একা বাইরে গেলেও সাবধানে যাবা।
উল্টাপাল্টা কিছু শুনলে ঠ্যাং ভেঙে দিবো। তখন নাহয় আমার কোলে
করেই ঘুরো….তার আগে প্লিজ ওজন কমিয়ে নিয়ো। Have a good day!
.
ইতি
তোমার handsome cousin আরহাম আয়াত😎”
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-১০+১১+১২

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব: ১০
.
যেই না আয়াত মাইশার এক হাত টান দিয়ে মাইশাকে নিজের কাছে আনলো সাথে সাথেই মাইশা আয়াতের উন্মুক্ত বুকে মিশে যায়। মাইশার এখন প্রচণ্ড পরিমাণে অস্বস্তি হচ্ছে। আয়াতের উন্মুক্ত বুক থেকে সে নিজের হাত সরিয়ে দিতেই আয়াত মাইশাকে আরও নিজের সাথে চেপে ধরে । মুখে বাঁকা হাসি থাকলেও চোখ দিয়ে তার আগুন ঝড়ছে।
.
”এভাবে আড়চোখে দেখছো কেন মাইশুপাখি….look at me babe ! আমি তোমার সামনে শার্টলেস অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।আমাকে কিস করতে মন চাচ্ছে….তাই না ?”
.
” নাউযুবিল্লাহ …বলো কি তুমি ? listen , আমার খেয়ে-দেয়ে আর কাজ নাই যে এইসব ফালতু কাজ আমি করে বেড়াবো? তুমি দরজা লক করো নাই কেন। আমার তো মনে হয় তুমি ইচ্ছা করেই সবাইকে তোমার বডি দেখাতে চাচ্ছো !”
মাইশা এ কথা বলে আয়াত থেকে দূরে সরে আসে। ক্রমাগত নিঃশ্বাস ফেলছে সে। ২৪ বছরের এই জীবনে এতটা অস্বস্তিতে সে কখনোই পড়েনি যতটা আয়াত তাকে ফেলছে এই কয়েক মাসে। আয়াত একগালে হেসে একপা একপা করে মাইশার দিকে এগোয়। মাইশা একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে। আয়াতের হাব-ভাব ঠিক দেখাচ্ছে না। আয়াত চিকন কণ্ঠে বলে…..
.
” আমি ইচ্ছা করে সবাইকে আমার বডি দেখিয়ে বেরাই , তা-ই না ?”
.
লও ঠেলা ! আয়াতকে আবারো ক্ষেপিয়ে ফেলেছে সে। মাইশার এখন মন চাচ্ছে নিজের গালে ঠাডিয়ে দুইটা থাপ্পড় মারতে।মাইশা আমতা আমতা করে বলতে থাকে…
.
” আয়াত….আ..আসলে….”
.
দরজার সাথে মিশে গিয়েছে মাইশা। মাইশা পেছনে ঘুরে দরজা খুলতে যাবে আয়াত সামনে ফেকে ডানহাত দিয়ে দরজা আটকে দেয়। মাইশা এবার শুকনো ঢোক গিলছে।আয়াত মাইশার অনেকটাই কাছে।মাইশার চোখ আয়াতের চোখে পড়তেই থমকে যায় মাইশা। আয়াতের চোখে কোনো কামুকতার দৃষ্টি ফুটে উঠে নি। মাইশার মনে হচ্ছে আয়াতের চোখে এক অদ্ভুদ মায়া আছে যা শুধু সে নিজের জন্য অনুভব করতে পারছে ঠিক যেমনটা আদ্রাফের চোখে ছিলো।
আদ্রাফ তাকে ভালোবাসতো বলেই আদ্রাফের চোখে তার জন্য ভালোবাসা দেখেছে ; কিন্তু আয়াত কি তাকে ভালোবাসে যে সে তার দৃষ্টি দিয়ে মায়া প্রকাশ করছে ?
.
” আ-আয়াত……”
.
” হুসসসসস…………”[মাইশার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে] কোনো কথা বলবা না । তোমার কথা শুনে অটোমেটিক্যালি আমার মাথায় রক্ত চড়ে উঠেছে………..এখন যদি আর একটা কথা বলো না তার পরিণামে যে আমি তোমার সাথে কি করবো I don’t know about that….so close your lips and let me scan you….”
.
মাইশার এবার কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছে। আয়াতের শীতল কণ্ঠে এক অন্য রকম মাদকতা আছে যা কিছুতেই সে ignore করতে পারবে না। আয়াতের গায়ের থেকে এক মিষ্টি সুবাস বারবার তার নাকে এসে ধরা দিচ্ছে। আয়াত আবারো মিহি কণ্ঠে বলে,
.
” Next time আমি যদি তোমাকে আর কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলতে দেখি I swear মাইশা তোমার যে আমি কি অবস্থা করবো ভাবতেও পারবানা তুমি……….এখন কেটে পড়ো এখান থেকে। তোমার গলার নিচে already ওই লাল তিলটা দেখে আমার আবার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে…….[মাইশার বাহু ঝাঁকিয়ে ] কি proof করতে চাও তোমার শরীর দেখিয়ে……now get out from here ! ” (চিল্লিয়ে)
.
মাইশার চোখ টলমল করছে জ্বলে আয়াতের কথা শুনে। তৎক্ষণাৎ সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এই নিয়ে ৪ বার আয়াত তার character নিয়ে আঙ্গুল তুললো। নিজেকে গলা টিপে শেষ করে দিতে মন চাচ্ছে মাইশার।
.
” আয়াত ! তুমি সত্যি অনেক খারাপ…….আমারই ভুল হয় তোমাকে ভালো মনে করার…….”[মনে মন]
.
.
সময়টা যে কিভাবে খালামণিদের বাসায় মাইশা অতিক্রম করেছে তা শুধু মাইশাই জানে। আয়াতের সাথে টু শব্দও করেনি সে। কিন্ত বিপত্তি ঘটে বাড়িতে যাওয়ার সময়। আয়াতের সাথেই ফিরতে হচ্ছে তাকে। মাইশা অনেক্ষণ জোরাজুরি করছিলো নুহাশ ভাইকে যাতে তাদের সাথে যায়। কিন্ত ওই গাড়িতে জায়গা না থাকার কারণে নুহাশ তাকে নিয়ে যেতে পারলো না। এখন মাইশার আয়াত ছাড়া বাড়িতে যাওয়ার আর কোনো গতি নেই।
.
গাড়ি জ্যামবিহীন সড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বেইলী রোডের দিকে। যেতে এখনো অনেকসময় বাকি। মাইশা চুপচাপ ব্যাস্ত নগরীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে মগ্ন। তাকে দেখলে মনে হয় গাড়িতে সে একাই বসে আছে।আয়াত ড্রাইভিং এ ধ্যান দিয়েই বলতে থাকে….
.
”এমন শুকনো আপেলের মতো মুখ করে আছো কেন ? দেখে মনে হচ্ছে খালামণিদের বাসার থেকে নির্যাতিত হয়ে এসেছো….”
.
” তার থেকেও বেশি হয়ে এসেছি ……তোমার সমস্যা? ”
.
বিরক্তির প্রকাশ ঘটাচ্ছে আয়াত। মুখ দিয়ে একটি বিরক্তির sound দেখিয়ে বলে…..
” বাঁকা করে কথা না বললে ভাল্লাগে না ?রিডিকিউলাস !”
.
ক্ষেপে যায় মাইশা। আয়াত তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিচ্ছে। বারবার ও চাচ্ছে আয়াতের কাছে থেকে ১০ হাত দূরে থাকতে। বাট না।
.
” What did you say? আমি রিডিকিউলাস….! ইউ আর দ্যা **** . ”
রাগের বশে মাইশা কি বলছে সেই হুশ ওর নেই। আয়াত এবার জোরে ড্রাইভ করতে থাকে……….মাইশা এবার একটু ভয় পেয়ে যায়। আয়াত নিজের রাগ প্রকাশ করতে চাচ্ছে না মাইশার কাছে বাট মাইশার এভাবে স্ল্যাং ইউজ করাতে ভয়ঙ্কর থেকেও ভয়ঙ্করভাবে রেগে আছে।
.
” আয়াত ! Stop the car !”
.
আয়াত তা শুনে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয়। মাইশার ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। আদ্রাফের সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের কথা বারবার তার চোখের সামনে ভেসে আসছে। নিজের ঠোঁটটা একটু ভিজিয়ে মাইশা আবারও বলতে থাকে….
.
” আয়াত,…..please stop the car!”
.
আয়াত একই বেগে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। মাইশা আর পারছে না নিজের ট্রমাটাকে এভাবে আড়াল করে রাখতে। বারবার আদ্রাফের অপূর্ণ চোখযুগল ভেসে আসছে তার সামনে। কানে বারবার আদ্রাফের সেই অপূর্ণ কথগুলো ভাসছে। মাথায় চিনচিন ব্যাথা শুরু হয় তার। পারছে না সে অতীতের স্মৃতিগুলোকে সহ্য করতে। মাইশা এবার একটা জোরে চিংকার দিয়ে বলে…….
” আয়াত, I beg you,for God sake please stop the car ! ”
.
আয়াত মাইশার চিৎকার শুনে নিজের রাগকে একপাশে রেখে গাড়ি থামিয়ে দেয়। মাইশার সামনে সবকিছু ঘোলাটে লাগছে । চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে তার। আয়াত মাইশার কাছে এসে আকুলকণ্ঠে বলতে থাকে……
” মাইশা ! কি হলো? please try to open your eyes !”
.
মাইশা নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দেয় আমাতের বুকে।নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে আকুলকণ্ঠে বলতে থাকে…..
.
”আদ্রাফ ! ”
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১১
রাতের আবছা অন্ধকারে সড়কের লাইটের মিহি আলো তীর্যকভাবে গাড়ির ভেতর আয়াত আর মাইশার মুখে পড়ছে।মাইশা এখনো ট্রমা থেকে বের হতে পারছে না। আয়াতের বুকে মুখ ডুবিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে সে। আয়াতের বুকে এখন কেউ যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে। মাইশার এমন পরিস্থিতিতে সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের বুক থেকে মাইশাকে উঠিয়ে আলতো করে মাইশার গালে নিজের দুহাত রাখে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলতে থাকে,
“ মাইশা…..দেখো শান্ত হও।কি হচ্ছে তোমার ? “
.
“আ আদ্রাফ!”
আর কিছু বলতে পারেনি মাইশা। আয়াতের বুকে ঢলে পড়ে সে।মাইশাকে অজ্ঞান হতে দেখেই আর কোনো কিছুর হুঁশ থাকে না আয়াতের। এমনকি মাইশার বলা শেষ কথাটিতেও পরোয়া করে নি সে।মাইশাকে চিৎকার করে ডাকছে সে……
.
“মাইশুপাখি ! প্লিজ চোখ খুলো……আই এম সরি পাখি ; প্লিজ ওপেন ইউর আইস”
মাইশা আয়াতের প্রতিটি কথাই শুনতে পারছে কিন্ত আয়াতের কথায় প্রতিক্রিয়া করার মতো নূন্যতম ক্ষমতা নেই ওর কাছে। স্নায়ুতন্ত্র যেনকাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আয়াতের গায়ের ঘ্রাণ তার কাছে আ্যলকোহলের মতো লাগছে। ধীরে ধীরে সে মিলিয়ে যায় আয়াতের বুকে…..
.
🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿
.
অতীত
আজ মিহির আপুর জন্মদিন।আপু আজ তার জন্মদিন বাইরে সেলিব্রেট করতে চাইছে। আমিও আজ আপুর সাথে যাবো বলে পণ করেছি। কিন্ত বাঁধ সাজে আমার আম্মু । তার মতে…’ ক্লাস টেনে পড়ুয়া আমার মতো মেয়ের কি তাদের সাথে যাওয়া মানাবে? ‘ পরে ভাইয়া আম্মুকে মানায়। সেই সুবাদে এখন তৈরি হচ্ছি আমি।
.
একটি হাল্কা আকাশী সেলোয়ার কামিজ পড়ে আমি আপুর জন্য আমাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি। বাইরে ফুরফুরে বাতাস। ক্ষণেক্ষণে বাড়ির পাশে থাকা বকুল গাছটার তীব্র ঘ্রাণ আমার নাকে আসছে।
.
হঠাৎ দেখি আদ্রাফ তার বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। আমাকে দেখেই একটু অবাক হয় সে। বাইকটা সেদিকে রেখেই আমার দিকে এগিয়ে হাসে। পরনে হোয়াইট টি শার্ট, ব্ল্যাক প্যান্ট, হাতে সিম্পল একটা ঘড়ি , গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি সবমিলিয়ে আমার তাকে খুব ভালোলাগছে। আদ্রাফ আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে..
.
“ কারও জন্য wait করছো তুমি!”
.
“ জ্বী , আজ না আপুর জন্মদিন ! আপু বলেছে আজ আমাকে নিয়ে ঢাকা ঘুরবে….কেন? আপনি আসছেন না?”
.
“ ইচ্ছা ছিলো….কিন্তু আমার আপুর জন্য গিফট কিনতে হবে…. আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম”
কাতর কন্ঠে বলে সে। তার কথা শুনে আমি হাসি না থামিয়ে রাখতে পারলাম না। আদ্রাফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর অবাক হয়ে বলে…..
“এত হাসার কি আছে মাইশা?”
.
আমি এবার হাসি থামিয়ে তাকে বলি…
” একজন বোনের কাছে তার ভাই বেশি important আদ্রাফ ভাই ; গিফ্ট না । আমাকে আর নুহাশ ভাইয়াকেই দেখেন…”
.
“ কিন্তু”
.
আমি তার হাত আমার দুহাত দিয়ে আগলে বলি…
” আর কোনো কথা বলবেন না এ ব্যাপারে… এখন চলেন।”
.
“ কোথায়?”
.
“ আপুকে উইশ করতে”
….
….
আপুর সাথে ঘুরাঘুরি করে আদ্রাফের বাইকে বসে বাড়িতে আসছি। একটি সরু রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। রাতের আধারে আর বায়ুপ্রবাহের তীব্র গতির জন্য ওর সাথে মিশে বসেছি আমি। আমি খুবই উপভোগ করছি সময়টা। আদ্রাফও বোধহয় উপভোগ করছে।হঠাৎ আদ্রাফ মিহি কন্ঠে গান গাওয়া শুরু করে
.
“ তুমি তো সেই যাকে আমি চাই
কেন এভাবে তোমার হতে চাই
তুমি এভাবে হেসো না”
আমি এবার আনমনেই তার সাথে তাল মিলিয়ে গান গাওয়া শুরু করি,
.
“হৃদয়ের পাতায় তোর নাম লিখেছি
মনের শহরে রঙধনু একেঁছি
মন বলে তাকে ডেকোনা”
আদ্রাফ এবার আবার সুর তুলে বলে,
.
“ এই স্বপ্নের শহরে হাঁটবো তোর সাথে
আয়না ছুয়ে দে একবার আমাকে
সব বাঁধা পেরিয়ে থাকবো তোর সাথে
আয়না ছুয়ে দে একবার আমাকে….
(স্বপ্নের শহরে-Me&you last chapter)
.
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। নিশিপথের হিমশীতল বায়ু প্রেমের আবরণে আকড়ে ধরেছে আমাকে। কেননা আদ্রাফের প্রতিটি সুর ইঙ্গিত করেছে আমাকেই। আচ্ছা তবে কি সেও আমাকে ভালোবাসে?
.
🌿🌿🌿🌿🌿🌿
.
নাকে মেডিসিনের কিছু তীব্র গন্ধ ভেসে আসতেই পিটপিট করে চোখ খুলে মাইশা । কানে ভেসে আসে একটি পুরুষালি কন্ঠ
.
“ মিঃ আয়াত ! উনার mentally condition খুবই খারাপ। কোনো একটি ট্রমার মধ্য দিয়ে উনি অনেকবছর ছিলেন & that’s why অই জিনিসটা recall হওয়াতে উনার নিউরন সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেয়।এখন আমি কিছু মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে দিয়েছি।Take care herself…excuse me”

মাইশা এবার আয়াতের দিকে তাকাতেই তার দুর্বল চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে যায়। আয়াতের চুল উষ্কোখুষ্ক , শার্টের উপরে কয়েকটা বোতাম খোলা, ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে; দেখলেই মনে হয়ে সারারাত ঘুমায়নি সে।
মাইশাকে উঠতে দেখে আয়াত সাথে সাথে মাইশার কাছে গিয়ে কষিয়ে চড়ে মেরে দেয়।
(কি ভাবছিলেন জরিয়ে ধরবো?😐)
মাইশা গালে হাত দিয়ে বোকার মতো বসে আছে।এরপরে আয়াত যা করলো তা মাইশার ধারনার বাহিরে ছিল। মাইশাকে নিজের কাছে এনে কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট বুলায়।মাইশা আবেশে নিজের চোখ বুজে নেয়।আয়াত তারপর ওর কানের কাছে বলতে থাকে..
.
“ Sorry মাইশুপাখি। এখনকার জন্য না…আমার কারনে তোমার এ অবস্থা তার জন্য”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১২
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে আপনগতিতে।মাইশা আড়চোখে বারবার আয়াতকে দেখে যায়। আয়াত একধ্যানে গাড়ি চালাতে মগ্ন। তার ফেস দেখে মাইশা কিছুই বুঝতে পারছে না। মাইশা ঠিক করেছে এই ছেলেটার সাথে আর একটাও কথা বলবে না। সমস্যা কি ওর ? বারবার ওকে অপমান করে , খারাপ বিহেব করে আবার মাঝেমাঝে এমন ভাব করে ওর মনেপ্রাণে যেন শুধু মাইশারই বিচরণ। আবার ভার্সিটিতে সবার সামনে থাপ্পড় মারলো ; ইভেন হসপিটালেও থাপ্পড় মেরেছে…..দু দুবার আয়াতের চড় খেতে হয়েছে তাকে। কেন যে মারলো তা মাইশার অজানা। উত্তর জানার জন্য তার মনে কৌতুহল আছে বটে কিন্তু এখন আয়াতকে একটা প্রশ্নও সে জিজ্ঞেস করবে না।
.
মাইশার চোখ না চাইতেও বারবার আয়াতের দিকে যাচ্ছে। আয়াত উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে গাড়ি চালাচ্ছে। হাওয়ার দোলায় খেলা করছে তার এলোমেলো চুল। শার্টটাও ভীষন অগোছালো লাগছে কিন্ত আয়াতকে এতেও খারাপ লাগছে তা নয়। উল্টো এতে তার লুকোনো সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । মাইশার মতো আয়াতেরও বাম কানে একটি তিল আছে । মাইশা কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে আয়াত আচমকা বলে ওঠে…..
.
”এভাবে তাকিয়ে থাকলে কোনো লাভ নেই ! মনে করো না যে-ই গালে থাপ্পড় দিছি ওই গালে চুমু দেবো। ”
মাইশা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। কি ভয়ঙ্কর ছেলেরে বাবা ! কিন্ত একটু আগের করা পণের কথা ভুলে মাইশা অবাক কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
” এত বেশি বুঝো কেন তুমি? আমি কি একবারও বলছি যে তুমি ওইটা করবা?”
.
”কি করবো?”
.
”ওইযে কিস !”(গলার স্বর নিচু করে ফেলে সে)
.
”তো ওভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন ? আমার মতো অবলা ছেলের দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিলা…..নাউযুবিল্লাহ ! আমি তা কল্পনাও করতে চাচ্ছি না।”
.
” তুমি……অবলা ! ”
.
”অবশ্যই , নাহলে এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেনো ! তাকিয়ে থেকে লাভ নেই….আমি তোমার প্রেমে পড়ছি না…”
.
”হুহ, প্রেম আর তু্মি…..! খালি তো পারো আমার মতো নিরীহ মেয়েকে থাপড়াইতে”(বিড়বিড়িয়ে বলে)
.
”কিছু বললা?”
.
নাহ ! কিছু না।(মেকি হেসে)
.
.
বাড়িতে আসতেই সবার প্রশ্নের জোয়ার বয়ে যায়।গতকাল রাতে মাইশার কি হয়েছিলো..কিভাবে হয়েছিলো…নানা কিছু।কিন্ত আয়াত এখানে যেন নীরব দর্শক। কারও প্রশ্নেরই কোনো উত্তর দেয়নি সে। শেষে মাইশাকেই সবকিছু ম্যানেজ করতে হয়েছে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂
.
রাত মোটামুটি গভীর। মাইশা এখন ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করছে। এই মিহিশীতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্যান ছেড়ে কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। বড্ড আরাম লাগছে তার।হঠাৎ তার আরামের ঘুম হারাম করে দেয়….তার মোবাইল। অনবরত বেজেই চলছে ফোনটি। মাইশা একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটির দিকে মিহি চোখে তাকায়। আবার ঘুমিয়ে যায় সে।
,
কিন্ত মোবাইল আবার বেজে উঠলে সে। কম্বল থেকে হাত বের করে ফোন ধরে। দেখে আননোন নম্বরের কল। মাইশার একটু সন্দেহ জাগলেও ঘুমের ঘোরে থাকায় তুলে নেয় কলটি।
.
” আসসালামু আলাইকুম….এত রাতে একটি মেয়েকে এভাবে কল করেছেন কেন..?”
.
” সিরিয়াসলি মাইশা ? তুমি এখনো আমার নাম্বার সেভ করো নি”
.
টর্নেডোর মতো মাইশার ঘুম হাওয়ায় মিলিয়ে যায় আয়াতের রাগী কন্ঠ শুনে।
.
” আ..আয়াত! এভাবে এত রাতে কল করেছো কেন?”
.
”নিচে আসো…Right now…এই ব্যাপারে কোনো হেলফেল হলে কোলে তুলে নিয়ে যাবো..”
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৯

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৯
.
আয়াতের চুমুথেরাপির ভয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে বদ্ধ পাগল মনে হচ্ছে মাইশার। আয়াত সরাসরি বলে দিয়েছে ,”চোখ একটু এদিক সেদিক হবে তার প্রভাব তোমার গালে আর ঠোঁটে পড়বে ; সেটা চুমুথেরাপিও হতে পারে আবার থাপ্পড় থেরাপিও হতে পারে। ”মাইশাতো বুঝেই নিয়েছে এই ছেলে যেই ছ্যাচড়া ওরে নির্ঘাত চুমুথেরাপিতো দিবেই আবার ওর দুই গাল লাল করতেও দুইবার ভাবে না। অনার্সের ছাত্রী এগুলোর ভয়ে গদগদ করে পড়ছে । ভাবা যায় ?
আবার পড়া শেষ করার পর আয়াত মাইশাকে ফ্লাইং কিস দিয়ে বলে…
”Goodbye babe….আমি আজকে পুরোনো ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা দিতে যাবো। খবরদার উড়াউড়ি করার চিন্তা মাথায় আনবা না। আমার একটা চোখ কিন্ত তোমার উপরে….”
.
মাইশা আয়াতের এই নির্মম অত্যাচারগুলোর জন্য শুধু পারছে না ফ্লোরে গলা ছেড়ে ভ্যা ভ্যা করে কাদতে। ওর আব্বু আম্মুকেও কিছু বলছে না এই খবিশটার ব্যাপারে। কেননা তাদের ভাষ্যমতে আয়াত হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভদ্র বাচ্চা। মাইশা মনে মনে আয়াতকে গালাগাল করে যাচ্ছে।
.
” আরহাম আয়াত আমার লিচুপাতার লাইফটা তু্মি কচুপাতা বানাইয়া ফেলসো।কি মনে করো এমনেই তুমি আমার লাইফটারে কচুপাতা বানাবা। এক একটার রিভেঞ্জ আমি নেবোই নেবো !”
.
.
আজ বড় খালামণিদের বাসায় যাচ্ছে মাইশা। বড় খালামণিদের বাসায় যাওয়া মানেই আয়াতের ইউজলেস কথা শোনা এন্ড ফ্ল্যাটিং এর খপ্পরে পড়া। আয়াতের প্রত্যেকটা বিষয়কে সে টাইম পাস আর ফ্লাটিং ছাড়া অন্যকিছুই মনে করে না। মনে করবেই বা কেন ? আয়াত কখনোই এমন কিছু করেনি যাতে মাইশার মনে হয় এটা মাইশার প্রতি ভালোবাসার জন্য করেছে। ওদিকে মন দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তার। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে বনশ্রী এর দিকে।
বড় খালামণিদের এই বাসাটাতে প্রথম এলো মাইশা । অ্যামেরিকা থেকে আসার পরপরই এই বাড়িটা কিনেছে তারা। প্রথমেই চোখ পড়ে সাজানো গুছানো ছোট্ট এই বাংলোবাড়িটির দিকে । তার ডানপাশে ছোট একটি সবজির বাগান। বাড়িটাতে কেমন যেন একটা ছিমছাম ভাব। তবে সূর্যের আলোটা তীর্যকভাবে ড্রইংরুম আর ডাইনিংরুমে পড়ছে বলে এই ছিমছামভাবটাও কেমন যেন সজীব লাগছে।
..
ড্রইংরুমে বসেই খালামণি আর আরিয়া আপুর সাথে কথপোকথন চালিয়ে যাচ্ছে সবাই। মাইশার খালুজান ব্যাবসায়িক কিছু কাজের জন্য ভিয়েতনাম গিয়েছে। মাইশা কোনো কথাই বলছে না শুধু চুপচাপ তাদের কথপোকথন শুনে যাচ্ছে।
.
”এই বুঝি ভাবির ছোট মেয়ে?”
.
মাইশা সেই আগন্তুকটির দিকে তাকায়। মধ্যবয়সী মহিলাটা দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইনি বোধহয় খালামণিদের প্রতিবেশী।
”মাশাল্লাহ ভাবি , আপনার মেয়ে তো দেখতে অনেক সুন্দর। কেম মিষ্টি মুখ , ভাসা ভাসা চোখ ,শুধু আপনার ছেলের তুলনায় গায়ের রংটা একটু চাপা ”
মাইশা তার থেকে চোখ ফিরিয়ে আবার বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন কথা শুনার অনেক experience আছে মাইশার।
.
.
” গায়ের রং দিয়ে কিছুই হয় না আণ্টি ; যার মন সুন্দর সেই সুন্দর।এই যে আমার আরিয়া আপুকেই দেখো। সেও তো শ্যামলা। তাই বলে কি তার জন্য যোগ্য পাত্র ঠিক করেছি না? এমন একজন যে তাকে মন দিয়ে আগলে রাখবে?”
.
সেই মহিলাটি আর কিছুই বলে না। আয়াত সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে একথা বলে ডাইনিং টেবিল থেকে এক বোতল পানি নিয়ে তাদের কাছে গিয়ে দাড়ায়।
,
” খালামণি , নুহাশ ভাইয়া আজ কিন্ত এখানে থাকবা। এ নিয়ে please কোনো বাহানা দেখাবা না , বুঝছো?”(আয়াত)
.
” বলে কি ছেলেটা ? না বাবা ; তোমার খালুর কাজ আছে….নুহাশের অফিস আছে…..এটা সম্ভব না।অন্য একদিন অবশ্যই থাকবো।”
আয়াত মুচকি হেসে বলে ওঠে…
” তা দেখা যাবে খালামণি ! ”
.
মাইশা গোল গোল চোখ করে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে । তার ব্যবহার দেখে এখন মনে হচ্ছে পুরাই ভদ্রের গুদাম নিয়া বসে আছে । আয়াত তারপর বলে উঠে,
.
” আম্মু আমি এখন রুমে যাচ্ছি । প্লিজ আমাকে ডাকবা না ।”
মাইশা চুপচাপ ঘরের এ দৃশ্যগুলো উপভোগ করে যাচ্ছে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
একপা এগোচ্ছি তো দু’পা পিছাচ্ছি আমি। মিহি আপুর কাছে এসেছিলাম। আদ্রাফের বড় আপু সে। এবার আদ্রাফকে দেখার উদ্দেশ্য না ; আমার কাজের জন্যই এসেছি। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে দরজার বেল বাজাই। আমাকে দোরগোড়ায় দেখে একটু অবাক হয় মিহি আপু।
.
” মাইশা …ভিতরে আসো ! ”
.
আদ্রাফ ভাইদের বাড়িটা ছোট হলেও বেশ পরিপাটি। মাত্র ২টা বেডরুম , ডাইনিংরুম-ড্রইংরুম একসাথে আর কিচেন রুম। ডাইনিং টেবিলে আমাকে আপু বসতে দেয়। আপু চা দিয়ে আমাকে বলে….
” তো বলো….কী সাহায্য করতে পারি তোমার ?”
.
”আপু আমাকে পড়াতে পারবেন? আমি তো science এর student…..physics এ একটু প্রবলেম হচ্ছে আমার। আপনি তো Physics student তাই…..”
.
আপু একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
” ও এই ব্যাপার ? আচ্ছা ঠিকাছে। আমি দেখি time manage করে তোমাকে পড়াবো নে।”
.
আমি একটু আমতা আমতা করে বলি,
”আদ্রাফ ভাই কোথায় আপু ?”
,
”আদ্রাফ তো ভার্সিটিতে ক্লাস করতে গেছে। সামনে ওর exam তো …..প্রচুর চাপ। এখন বাদ দাও তো এসব…..একটা জিনিস দেখাবো তোমায়….”

”কি আপু ?”
.
আমি আপুর পিছে পিছে ছাদে যাই। মনে আমার অনেক কৌতুহল যে আপু আমাকে কি দেখাতে চাচ্ছে। ছাদের দরজা খুলে পশ্চিম দিকের পাশটিতে গিয়ে আমি অবাক। নানারকম সবজি গাছ , ফুলের গাছের বাহার। এপাশটি আমাদের ছাদ থেকে দেখা যায় না। যেই করেছে বোঝা যাচ্ছে বেশ সৌখিন মানুষ সে। আমি অবাক কণ্ঠে বলে উঠি..
” আপু এত সুন্দর করে কে বুনেছে এগুলো?”
.
”আদ্রাফ ! ”
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
মুচকি হাসে মাইশা। আদ্রাফের নামটা মনে পড়তেই এক ভালোলাগা কাজ করে মনে।২ বছর প্রায় হয়ে উঠেছে কোনো যোগাযোগ নেই মিহির আপুর সাথে। খালামণিদের সবজি বাগানটি দেখে হঠাৎ এগুলো মনে পড়ে যায় ওর। তারপর আস্তে আস্তে খালামণিদের বাসাটা ঘুরতে থাকে সে।
.
একটা বেডরুমের দরজা খুলতেই সে অবাক। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনোই পরেনি সে। আয়াতের রুম ছিলো এটা। সবেমাত্র আয়াত ওয়াশরুম থেকে বের হলো তাও কোয়াটার প্যান্ট পড়ে। শাওয়ার নিয়েছিলো সে। আয়াতও মাইশাকে এভাবে আশা করেনি। মাইশা একটা চিৎকার দিতে যাবে আয়াত তার হাত টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে মুখ চেপে ধরে।
মাইশা শুধু উম্ উম্ করে যাচ্ছে। আয়াত ভ্রু কুচকে আয়াত বলতে থাকে,
.
”আমাকে তুমি বলো যে কারও রুমে permission ছাড়া ঢুকতে না আর তুমি আমার রুমে permission ছাড়া ঢুকলা? নাকি আমাকে শার্টলেস দেখতে চেয়েছিলে তুমি?”
.এটা বলেই মুখ ছেড়ে দেয় মাইশার। মাইশার আয়াতের শার্টলেস বডি দেখে প্রচুর অকওয়ার্ড লাগছে। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে সে বলে….
.
” আমার তো আর কাজ নেই না? তোমার বডি দেখার জন্য আমি এখানে আসি নাই। দরজা লক করো নাই কেন? নিজে তো একটা লুচুবাঘ আবার আমারে বলতেছে।”
আমতা আমতা করে একথা বলে মাইশা। আয়াতের দিকে একবারও তাকায়নি সে। কেননা আয়াতের শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে যা খুবই attractive লাগছে ওর কাছে। আয়াত তা বুঝে বাকা হেসে বলে…..
.
”আমায় কিস করতে মন চাচ্ছে , মাইশুপাখি ?”
.
.
#চলবে