#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৬
” খবরদার আমার কাছ থেকে আর এককদম দূরে সরার চেষ্টা করবা ; এমন কিছু করলে I swear তোমাকে আমার সাথে বেঁধে রাখবো ”
মাইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে । এ কোন আয়াতকে দেখছে সে?
মাইশা এখন পুতুলের ন্যায় চুপ হয়ে আছে। কেন তা সে জানে না। আয়াতের warning এর জন্য নাকি তার শরীরের দুর্বলতার জন্য। আয়াতের হার্টবিট স্পষ্ট শুনতে পারছে সে। তার মনে হয় আয়াতের হৃদয়ের ছন্দ শুধুমাত্র তার জন্য এভাবে বাজছে । কিন্তু কেন বাজবে ? মাইশা এই সমীকরণটি মিলাতে পারছে না।
.
” এখন শরীর কেমন লাগছে….?”
মিহি কণ্ঠে মাইশাকে জিজ্ঞেস করে সে। মাইশা বুঝতে পারছে না ওর কি হয়েছিলো , আর আয়াতই বা এখানে কেন?
.
”আমার আবার কি হয়েছিলো?”
ছোট ছোট চোখ করে প্রশ্ন করে আয়াতকে। আয়াতের নরম চোখ ক্রমশই কঠোর হয়ে যায় এ কণ্ঠ শুনে । কড়া গলায় বলে উঠে….
.
”এত careless কিভাবে হতে পারো তুমি ? তুমি জানো তোমার sinusitis এর সমস্যা তারপরও কি হিসেব করে বৃষ্টিতে ভিচ্ছিলে? তোমার যদি রাস্তায় কিছু হতো তাহলে কি হতো আমা…..”
এ কথা বলেই থেমে যায় আয়াত । চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ । ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে সে । মাইশা এখনো আয়াতের বুকে। আড়চোখে আয়াতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । আয়াত কি তবে ওর কাজের জন্য অনুতপ্ত ? মনে তো হচ্ছে না ।
.
ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আয়াত বলে….
”আমি এখনই আসছি ! তুমি একটু ওর খেয়াল রেখো।”
.
”জ্বী ভাইয়া…..”
আয়াত চলে যেতেই ইনায়া মাইশার কাছে বসে। চোখে মুখে তার ভয়ের ছাপ।
‘
”’ দেখ ইনা! এবার তুই বল , হয়েছেটা কী ? ওই আয়াত তো রেগেমেগে কতকিছুই বললো সবকিছু তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে !”
মাইশা মিনমিন করে বলে।
,
ইনায়া অবাকে আপ্লুত হয়ে বললো ………
”পুরো ১ ঘণ্টা তুই দরজা লাগিয়ে রেখেছিলি। আমি অনেকক্ষণ নক করছিলাম কিন্ত তুই দরজা খুলছিলি না। আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে তোর ভাইকে কল দিলে সে আয়াত ভাইয়াকে পাঠিয়ে দেয়। সেও অনেকক্ষণ নক করলো বাট তোর তো কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই ভাইয়া দরজা ভেঙ্গে দেয় । তুই কম্বল মুড়িয়ে অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে ছিলি……
আমি আর ভাইয়া দুজনেই তোর এ অবস্থা দেখে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাইরে তখন বৃষ্টিও পড়ছিলো অনেক ,তাই তোকে ডাক্তারের কাছে নিতে পারেনি। পরে আমি তোকে জলপট্টি দিয়ে দেই আর ভাইয়া তো তোর জ্ঞান ফেরার আগ পর্যন্ত তোকে তার বুকে আগলে রেখেছিলো।”
.
মাইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ইনায়ার দিকে । আয়াত কি সত্যি এসব করছিলো ? ভাবছে মাইশা ।
ওর ভাবনায় ছেদ ঘটে যখন আয়াত আসে। ওদের কাউকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে কোলে তুলে নেয় মাইশাকে। মাইশা বিস্ফোরিত চোখ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
.
” গাড়ি গ্যারেজ থেকে বাইর করতে গিয়েছিলাম …..তাই সময় লাগলো…”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই আয়াত বলে।
.
” আমি এখন এতটাও weak না যে হাটঁতে পারবো না। প্লিজ আমাকে নামাও…..”
.
”সিরিয়াসলি মাইশা ? একে তো বৃষ্টিতে ভিজে এখন আমার কোলে করে ঘুরছো। তুমি এখন চাও যে আমি তোমাকে নামাই আর তুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে হাসপাতালে ঘুরাঘুরি করি ?”
‘
মাইশা এখন আর কিছু বলে না। এই ছেলের সাথে কথা বলা মানেই নিজের মান-সম্মান puncher করা !
.
গাড়িতে মাইশাকে বসিয়ে আয়াত নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে । আর মাইশার কোমড় চেপে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আচমকা আয়াতের এমন টান দেয়ার ফলে মাইশা মিশে গিয়েছে আয়াতের সাথে। আয়াতের চোখে-মুখে একধরনের রাগ দেখতে পারছে সে।
” ভার্সিটি থেকে সরাসরি বাড়ি যাও নি কেন?”
.
মাইশা নিশ্চুপ
.
” I ask you something Maisha …..tell me dam…”(চিল্লিয়ে)
,
মাইশা এখনো কিছু বলে না। কি বলবে সে , বারবার যে আয়াত তাকে আদ্রাফের কথা মনে করিয়ে নাজেহাল করে দেয়।
.
” ওওওও…I think আমি তোমার BF এর সাথে তোমার ব্রেকআপ করিয়েছিলাম না ? তার জন্য দেবদাসী হয়ে ঘুরে বেড়ানোর plan করছিলে?”(দাঁতে দাঁত চেপে)
মাইশার আয়াতের এ কথা শুনে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত আরও জোরে মাইশাকে নিজের সাথে চেপে ধরে।
.
বৃষ্টি অনেকখানি কমে গিয়েছে। আকাশটাও পরিষ্কার হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে রৌদ্দুরের আভাস দিবে । এমন এক পরিবেশে গাড়িতে আয়াত মাইশাকে এভাবে ধরায় অনেক অস্বস্তি হচ্ছে মাইশার। তার বুকের ধুকধুকানিটা স্পষ্ট শুনতে পারছে সে । আয়াত মাইশার চোখে চোখ রেখে নেশাক্ত কণ্ঠে বলে,
.
” এত কিসের রাগ তোমার মাইশা ? বারবার এভাবে দূরে সরে আসতে চাও। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত ভাবতে পারছো কি অবস্থাটা হতো…..”
,
আয়াতের চোখের সাগরে হারিয়ে যাচ্ছে মাইশা। তার চোখের দৃষ্টি আর আদ্রাফের দৃষ্টির ভাষা এক ; তাৎপর্য এক । আয়াত তো তাকে পছন্দইকরে না । তাহলে কেন এভাবে নিজের মায়ার জালে ফেলছে মাইশাকে?
.
” কি হতো আমার ? কিছুই হতো না…..আর কেন এত চিন্তা আমার জন্য ….আমি তো playgirl , পতিতালয়….”
মাইশাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আয়াত মাইশার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।
” হুসসসস . next time এই কথাগুলো মুখে আনবা না মাইশুপাখি।”
আয়াতের এমন ফিসফিসিয়ে মাইশুপাখি ডাক দেয়ার ধরন দেখে থমকে গিয়েছে মাইশা। মনে এক অদ্ভুদ শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আয়াত ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে মাইশার ঠোঁটের দিকে । আয়াত আবার বলতে থাকে..
.
” তোমার রোদ্দুর হতে চাই মাইশুপাখি ….যেখানে কোনো বাঁধা থাকবে না ; কোনো পিছুটান থাকবে না ”
বলেই আয়াত এগোতে থাকে মাইশার ঠোঁটযুগলের দিকে । মাইশা এবার একটা চিল্লানি দেয় …..
.
” আয়াত ! ”
.
সাথে সাথেই আয়াত দূরে সরে যায় মাইশার কাছ থেকে। এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সে। দুজনেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেছে এবার। মাইশাও ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে । কপালে আছড়ে পড়া চুলগুলো আয়াত বামহাত দিয়ে পেছনে ঠেলে গাড়ি স্টার্ট দেয় ।
গাড়িতে দুজনেই একেবারে নিশ্চুপ ছিলো।
.
আয়াত তারপর মাইশাকে কোলে নিয়ে মাইশাদের বাড়িতে ঢোকে। মাইশার আম্মু তড়িঘড়ি করে সেদিকে যায়।
.
” মাইশা….এখন ঠিকাছিস মা ? কতবার করে বলেছি এভাবে বৃষ্টিতে ভিজিস না….”
.
” খালমণি ওকে এখন এ কথা বলে লাভ নাই । তুমি একটু ওর জন্য ক্লিয়ার স্যুপ করে নিয়ে আসো আমি ওকে ওর বেডরুমে দিয়ে আসি। আঙ্কেল আর ভাইয়াকেও কল করে বলো সব ঠিক আছে ”
এটা বলেই আয়াত মাইশাকে বেডরুমে নিয়ে যায়। এই কয়েক মিনিটে আয়াত একবারও মাইশার দিকে তাকায়নি। কিন্ত মাইশা তাকিয়েছে। বারবার। কেন তা মাইশার অজানা।
.
কিছুক্ষণ পর মাইশার আম্মু soup নিয়ে আসে। আয়াত এতক্ষণ এখানেই ছিলো। আয়াত চলে যাওয়ার আগে মাইশাকে মিহি কণ্ঠে বলে যায়…
.
” Next Time এমন পাগলামি করো না please , দুদিন ভার্সিটি যাবে না তুমি ….take care….”
.
আয়াত চলে যাওয়ার সাথে সাথেই দরজা লাগিয়ে দেয় মাইশা। কাবার্ডের এক ছোট্ট কোণা থেকে বের করে নীল রঙের একটি ডায়েরী। ডায়েরীটা নিয়ে খাটে বসে পড়ে সে ।
রৌদ্দুরটা ডায়েরীর উপরের আবরণে সমান্তরালভাবে আছড়ে পড়ছে। ডায়েরীটা খুলতেই বের হয়ে আসে হালকা সবুজ শার্ট পড়া একটা ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি । মাইশা নিজের হাতটি আলতো করে বুলায় ছবিটার দিকে। চোখ দুটো তার ছলছল করছে।কাপাঁকাপা কণ্ঠে বলে ওঠে,
.
”আদ্রাফ ! ”
.
ছেলেটা আর কেউ না ; আদ্রাফ । মাইশার সোনালী অতীত । যাকে সে নিজের স্মৃতির কোঠায় গুছিয়ে যত্নে রেখেছে । আলতো কন্ঠে বলে ওঠে….
.
” আদ্রাফ তোমায় আমি মনে করতে চাই না..খুব কষ্ট হয় আমার । কিন্ত তোমায় আমি ভুলতেও চাই না । আর চাই না তোমার জায়গাটা অন্য কাউকে দিতে । আয়াত ! আয়াত ! বারবার বাধ্য করে তোমায় মনে করাতে। ওর মতো mysterious character আমি কখনোই দেখিনি….অপমান করে সে , আঘাত করে সে , আমার care ও করে সে ,
এককথায় আমায় তার মায়ায় ফেলে দিয়েছে। ”
.
ডায়েরীটা পাশে রেখে দেয় মাইশা। মনে তার ঘুরছে হাজারো অনুভূতির খেলা । আয়াত নামক character এ হারিয়ে যাচ্ছে সে। বারবার তার মনে পড়ছে গাড়িতে থাকাকালীন ঘটনাগুলো।
.
” সত্যিই অনেক অদ্ভুদ তুমি আয়াত !”
.
.
#চলবে
রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৬
রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৫
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৫
আকাশে মেঘের স্পষ্ট গর্জনের শব্দে মাইশা বাস্তবে ফিরে। বারবার না চাইতেও অতীতের সেই পাতায় হারিয়ে ফেলছে নিজেকে। বৃষ্টিও পড়ছে টুপটুপ করে।তার উজ্জল শ্যামলা মুখে সেই বিন্দুগুলো একে বারে মিশে গিয়েছে।মনে আছে তার চাপা আর্তনাদ। আয়াতের অপমান , আদ্রাফের স্মৃতি সবকিছু মিলিয়ে হাহাকারে ভুগছে তার হৃদয়।
.
বৃষ্টির গতি বাড়ছে ধীরে ধীরে। আশেপাশে মানুষের পরিমাণ কমে আসছে। হেঁটে হেঁটেই মাইশা চলে যাচ্ছে বাড়ির দিকে। হঠাৎ তার মনে হচ্ছে তার শরীর বেশ দুর্বল। অনেকটাই দুর্বল । মাথা তার ঝিম ধরে যাচ্ছে। বাড়িতে যেতেও এখন আরও ৩০ মিনিটের মতো বাকি। রাস্তায় কোনো প্রকার কোনো রিক্সা নাই।আর দু’কদম এগোলেই ইনায়ার বাসা । এখন মাইশা ওর বাসাতেই যাবে।
.
***
.
দরজা খুলে ইনায়া মাইশাকে এমন ভিজা অবস্থায় দেখে অনেক অবাক হয়। তারপর ব্যস্ত স্বরে বলতে থাকে…..
‘
”দোস্ত …..তুই এখনো বাসায় যাস নি? তুই তো ভার্সিটি থেকে অনেক আগেই চলে গিয়েছিলি । আর এমন কাকভেঁজা অবস্থায় কেন ?”
.
ইনায়ার কথার উত্তর দেয়ার মতো নুন্যতম ক্ষমতা নেই মাইশার। দুর্বল কন্ঠে সে বলে উঠে ,
”আঙ্কেল-আন্টি কোথায় ?”
.
”বাসায় নেই….তুই আগে ভিতরে আয়…..ফ্রেস হ।”
মাইশা বাধ্য মেয়ের মতো ইনায়া থেকে একজোড়া ড্রেস নিয়ে গেস্টরুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। তবে ইনায়াকে মিহি কণ্ঠে বলে ;
.
”আমি একটু একা থাকতে চাই ইনা…..বৃষ্টি কমলে আমি বাসায় চলে যাবো। প্লিজ ডিস্ট্রাব করিস না।”
,
জামাকাপড় পাল্টে খাটে শুয়ে পড়ে মাইশা। মাথাটা তার ভোঁ ভোঁ করছে। কম্বল পেচিয়ে থাকা সত্বেও অনবরত কাপছে সে । শরীর তার অনেক দুর্বল।চুলগুলো এখনো ভালোমতো না মুছার ফলে বালিশ একটু ভিজে গিয়েছে।তার ঠাণ্ডা দেহটা যেন কিছুতেই কোনো উষ্ণ পরশ পাচ্ছে না। মাইশা শুধু মনে মনে ভাবছে…….
.
”কেন এতটা ঘৃণা করো আমায় আয়াত ? যে সবার সামনে আমাকে প্রস্টিটিউট বানাতেও দুবার ভাবলে না? এখন থেকে আমাকে অপমান করার আর কোনো সুযোগ পাবে না তুমি…..”
.
মাইশা আর কিছু ভাবতে পারলো না। চোখ দুটো তার হারিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
কাধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে স্কুলের সামনে দাড়িঁয়ে আছি আমি। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আজ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতে গিয়েই লেট হয়ে গেলো। বাইরে তুমুল বেগে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বাসাতেও যেতে পারছি না । আমার আবার sinusitis এর প্রবলেম আছে। একটু ঠাণ্ডার সংস্পর্শে এলে সেদিন আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।তাই কি আর করার ? দাঁড়িয়েই আছি……..
.
হঠাৎ আমি দেখি আদ্রাফ ওপাড় থেকে এপাড়ে আসছে।পরনে নেভি ব্লু শার্ট , হোয়াইট জিন্স , হাতে ওয়াটার প্রুফ ফাইল আর ছাতা । আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা থাকার সত্বেও কাকভেঁজা হয়ে ঘুরছে ; এমন মানুষকে নির্ঘাত সবাই পাগলই ভাববে। তার চোখ আমার চোখে পড়তেই চোখ সরিয়ে নেই আমি। আদ্রাফ আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে…
.
”এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন?”
,
আমি তাজ্জব হয়ে যাই,
” কিভাবে তাকিয়ে ছিলাম?”
.
”ভ্রু কুচকে…..”
.
”না ….আসলে আমি দেখলাম যে ছাতার জন্য আমি বাসায় যেতে পারছি না আর আপনি এভাবে ছাতা থাকতেও কাকভেঁজা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন?”
.
আমার কথা শুনে আদ্রাফ আলতো হাসে । তারপর আমার দিকে ছাতা এগিয়ে দিয়ে বলে ,
” এই ছাতাটা নাও । বৃষ্টিতে ভিজতে বরাবরই আমি পছন্দ করি। আর এই ছাতাটা আপু আমার সবসময় দিয়ে দেয় । এখন এটা তোমার দরকার তাই তোমাকে দিলাম।”
আমি বুঝতে পারছি না ছাতাটা কি নেব না-কি নেবো না।কিছুক্ষণ পর ছাতাটা আমি নিয়ে নেই। আদ্রাফ চলে যাবে এখন তাহলে? জানি না কেন তবুও আদ্রাফ আমার আশেপাশে থাকলে আমার অনেক ভালোলাগে।হঠাৎ আমি বলি ;
”আদ্রাফ ভাই আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে পারবেন?”
.
আদ্রাফ কপাল ভাঁজ করে তাকায় আমার দিকে। এই রে! আমার চিন্তাটা আন্দাজ করতে পারলো নাকি। আমি একটু আমতা আমতা করে বলি…
”না , মানে ; এখন তো রাস্তাটা অনেক ফাঁকা । আমার insecure ফীল হচ্ছে। তাই বলছিলাম আরকি ; আপনি দিয়ে দিয়ে আসতে পারবেন?”
‘
মুচকি হেসে সে আমার কানের কাছে মিহি কণ্ঠে বলে;
”আমার সাথে গেলে insecure ফীল হবে না ?”
তার কথার ধরণ দেখে আমার মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে।আদ্রাফ আমার এ অবস্থা দেখে দূরে সরে গিয়ে বলে….
”Relax , Relax মাইশা ! আমি তো জাস্ট মজা করছি । চলো তাহলে….?”
.
****
.
তুমুলবেগে মুষলধারের বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তরার ৭ নং সেক্টরের এক সরু গলিতে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা । আশেপাশে সবুজ গাছগুলো বাতাসের বেগে অপরূপ শব্দের সৃষ্টি করছে।আদ্রাফ আমার সামন হেঁটে যাচ্ছে আর আমি আদ্রাফের পিছে ।
বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা আদ্রাফের গায়ের সাথে লেপ্টে আছে । নীলাভ শার্টটা একেবারে মিশে আছে তার গায়ের সাথে। আমি তার প্রতিটা জিনিস মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করছি । তার প্রতিটা কাজকর্মই আমার কাছে নিখুঁত মনে হয় । আচ্ছা এটাই কি তবে ভালোবাসা ?
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
ঘুমের মধ্যে মাইশা অনুভব করতে পারছে ও কারও সাথে মিশে আছে । কপালে বারবার কারও ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া পাচ্ছে । কিন্ত চোখ খোলার মতো শক্তি তার মধ্যে নেই । মাথাটা এখনো ঝিম ধরে আছে ওর ।
.
পিটপিট করে চোখ খুলতেই সে নিজেকে আয়াতের বুকে আবিষ্কার করে। ওর পায়ের কাছে ইনায়া বসে আছে। আয়াতের চোখ-মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ। নিজেকে আয়াতের বুকে পেয়ে সে সরে আসতে যাবে আয়াত কড়া গলায় বলে উঠে…..
” খবরদার আমার কাছ থেকে আর এককদম দূরে সরার চেষ্টা করবা ; এমন কিছু করলে I swear তোমাকে আমার সাথে বেঁধে রাখবো ”
মাইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে । এ কোন আয়াতকে দেখছে সে?
.
.
#চলবে
রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৪
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
#পর্ব:৪
” কি হয়েছে জান…..এত প্যারা নিচ্ছো কেনো?”
.
মাইশা এবার চোখ গরম করে ইশানের দিকে তাকায়।
” তোমারে না আমি বলছি এভাবে জান জান বইল্লা ডাকবা না। আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের জান বাঁচাতে চাইলে এখান থেকে কেটে পড়ো। আমি আছি আমার প্যারা নিয়া আর এই পোলা জান জান কইরা আমার মাথা শেষ করতেছে ।”
.
ইশান তো মহাবিরক্ত। ২ মাস হলো তাদের রিলেশনের বাট মাইশা ওকে কোনো পাত্তাই দেয় না।
.
ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে ইশানের সাথে মিট করতে এসেছে মাইশা।এমনিতেও আয়াতের প্যারায় ওর মাথা আউট অফ কন্টো্রলে আছে আবার ইশান ওর মাথা একেবারেই গরম করে দিলো।
কিছুক্ষণ পর মাইশা ওকে সরি বলতে যাবে কোথেকে ঝড়ের গতিতে আয়াত ওদের সামনে এসে পড়লো। আয়াতের চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ দেখতে পারছে মাইশা। মাইশা মনে মনে ভাবছে….
” এরে…..যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এবার কি হবে?”
.
আয়াত ইশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
”Hello man, তুমি তো দেখছি বেশ হ্যান্ডসাম বাট কি হিসেব করে এই lady ghost কে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানালা ? দেখলা না এখনই তোমার তামা তামা বানানোর প্ল্যান এ আছে এই ভূতনি টা। একজন ফ্রেন্ড হিসেবে তোমাকে advice দিচ্ছি….নিজের ভালো চাও তো এই lady ghost এর কাছ থেকে কেটে পড়ো।”
বেচারা ইশানতো পড়েছে মহাফ্যাসাদে। এদিকে আয়াতের কথাও ঠিক আবার মাইশা যে তার কি হাল করবে তা ভেবেই কাঁপাকাপি করছে সে।কিছু একটা ভেবে সে বলে উঠে….
”sorry মাইশা ,আমি অনেক ভেবেই বলছি এই রিলেশন কিছুতেই আমার continue করা সম্ভব না।”
একথা বলেই চলে যায় ইশান।মাইশা এবার আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াততো হো হো করে হাসছে।
” কি করলা তুমি ?”
.
”দেখলা না একটা মহৎ কাজ করলাম। প্রবাদটা আসলেই সত্যি ;কোনো মহৎ কাজ করলে মনটা অনেক ভালো হয়ে যায় !”
বেশ কিছুক্ষণ পর আয়াত স্বাভাবিক হয়। তারপর মাইশার কাছে দাঁড়িয়ে বলে….
”ভালোবাসলে সত্যি কাউকে ভালোবাসো …এইরকম রিলেশন করে কি লাভ? তাই বলছি এসব useless জিনিসে টাইম ওয়েস্ট করো না।আর এতই যখন এসবের শখ ডাইরেক্ট পতিতালয়ে যেয়ো কেমন ?”
.
মাইশার চোখ এবার জলে টলমল করছে। কি স্বাভাবিকভাবেই আয়াত তার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলে গেলো।দূরে মাইশার ফ্রেন্ডরা সব কিছুই দেখছিলো। আয়াত যে মাইশাকে এতটা ঘৃণা করে তা কেউই এতটা ভাবতে পারেনি ।
ব্যাগটি নিয়ে মাইশা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায়। আয়াতকে আর ওর অপমানকে দুদণ্ড দেখতে ইচ্ছে করছে না মাইশার। রাস্তায় হাটছে আর বারবার চোখ মুছার ব্যর্থ প্রচেস্টা চালাচ্ছে ।বেশ কিছুদূর এগিয়েই তার কানে ভেসে এলো গিটারের সুর। সম্ভবত রাস্তার চায়ের দোকানে কিছু ছেলেমেয়ে আড্ডা দিচ্ছে। রাস্তার কাছে যে পার্কটি আছে সেখানে বসে চোখ বন্ধ করলো সে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
”এখনও ঘুমাওনি তুমি?”
.
আদ্রাফের মিহি কণ্ঠ শুনে আমার দম যায় যায় অবস্থা। আমি একটু অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলি,
.
”ইয়ে মানে…..আমার আসলে ঘুম আসছিলো না তাই বারান্দায় বসে ছিলাম। আমি আসলে বুঝতে পারিনি যে আপনি এখানে গান গাচ্ছিলেন।Sorry….”
.
আদ্রাফ আলতো হাসে। পাশের বারান্দায় থাকা সত্বেও রাস্তার লাইটের আলোয় আদ্রাফকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি। ছেলেটাকে যেভাবেই দেখি সেভাবেই অনেক ভালোলাগছে আমার।
.
গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে সে হঠাৎ আমার দিকে তাকায়। আমি এতে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।তার চাহিনীতে আমার মন চাচ্ছে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে। কিন্ত তা তো আর সম্ভব না !
.
” বয়সে তুমি আমার ছোট তাই তুমি করেই বলছি…..জানিনা কেন আমার মনে হয় তোমার আর আমার মধ্যে অনেক মিল।”
.
তার প্রতিটা কথা আমার বড্ড আজব লাগছে।
” মাত্র দু’বার দেখা করেই এত মিল পেয়ে গেলেন।কই আমি তো কোনো মিল পেলাম না”
.
আদ্রাফ এবার হো হো করে হেসে উঠে।আমি বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে। এমন কি বললাম যে এত হাসছে সে।
.
” আস্তে আস্তে বুঝে যাবে । আজ আমাদের প্রথম দেখা হলো । দিন তো সামনে পড়েই আছে। তখন নাহয় মিল খুঁজে নিও।”
.
তার কথা শুনে আমি বিনিময়ে কিছুই বলি না। কিছু বলার মতো ভাষা আপাতত আমার কাছে নেই। মনে বিচরণ করছে নানা অনুভূতি যার মর্ম হয়তো আমি জানি না।আমি একটু আগ বাড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি ,
” ভাইয়া আমি না আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।”
.
ভাইয়া নাম শুনলেই আদ্রাফ মুখ কুঁচকে ফেলে।তারপর অনুনয় করে বলে,
”প্লিজ আমায় ভাইয়া বলোনা , আপু এত সুন্দর নাম রেখেছে আমার ”আদ্রাফ” এই নামেই ডাকো বা আদ্রাফ ভাই ডাকো।”
.
” আচ্ছা ,আদ্রাফ ভাই ”(মুচকি হেসে)
.
আদ্রাফ একটু থেমে বলে,
”আমি আদ্রাফ এহসান। এক ভাই এক বোন । জন্ম কিশোরগঞ্জ ।১ বছর প্রায় হলে এলো ঢাকায় এসেছি পড়াশোনা করতে। এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।আর কিছু জানতে চাও….”
.
আমি কিঞ্চিত হেসে বলি,
” না ভাই, আপাদত এটুকুই থাক।”
রাত পাল্লাক্রমে গভীর হচ্ছে। আমার চোখে-মুখে এখন ঘুম বিচরণ করছে। কিন্ত আমার কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছে না।হঠাৎ আদ্রাফ বলে উঠলো……
” ভালোবাসি এই নিঃসঙ্গতার মাঝে নিজেকে হারাতে
ভালোবাসি এই নিশিরাতের জোছনাকে…
জানি না কেউ থাকবে কি-না আশেপাশে
তব হারাবো নিজের হৃদয়ের ভালোবাসাতে…….”
.
আমি যেনো তার ছন্দের ভীড়ে নিজের অনুভূতিগুলোকে মিলিয়ে ফেলেছি। আদ্রাফ আবার বলে,
”আমার সম্পর্কে তো সবই জেনে নিলা;তবে তোমার সম্পর্কে কিছু আমার না জানলেও চলবে। তবুও একটা জিনিস জানতে চাই…..নাম কি তোমার?”
.
আমি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলে উঠি…”মাইশা জামান নূর”
.
.
#চলবে
রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৩
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
#পর্ব:৩
“তোমাকে দরকার , মাইশা !”
মাইশা একরাশ আগ্রহ নিয়ে পেছনে ঘোরে । সে যা ভেবেছিলো ঠিক তাই । আয়াত দাঁড়িয়ে আছে । পরনে ধূসর রঙের ট্রাউজার , হলুদ টি-শার্ট। গোধূলির আলোতে আয়াতের খয়েরী চোখগুলো বেশ নজরকাড়া রাখছে মাইশার কাছে । আয়াতের চোখগুলোতে তাকিয়ে থাকলে যেন সারাদিন তাকিয়ে থাকতে মন চায়। মুখে কেমন যেন গাম্ভীর্যতা ফুটে উঠেছে যা সচরাচর আয়াতের থাকে না । এই গাম্ভীর্যতাকে একসময় হৃদয়ে ধারণ করে নিয়েছিলো মাইশা । যা এখন অতীতের এক বদ্ধ স্মৃতি।
মাইশা এবার আয়াতের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় । তারপর চোখ ছোট ছোট করে বলে …..
” আমাকে দরকার মানে….তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছো?”
.
আয়াত স্মিথ হাসে । তারপর তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে;
” তোমার কি মনে হয় , তোমাকে দরকার বলতে তোমাকে ভালোবাসি বুঝিয়েছি ? আমার চয়েজ এত খারাপ না যে তোমাকে আমি চুজ করবো । বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে চাই বলতে এখন আমার তোমাকে দরকার । খালামণি ডাকছে তোমাকে আর বলছে যে না আসলে চুল ধরে টেনে নিয়ে আসতে ….”
মাইশার মাথা গরম করার জন্য এতটুকু কথাই যথেষ্ট । কিন্ত এখন চিল্লানোর মনমানসিকতা তার মধ্যে নেই । যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত করে আয়াতকে বলে ,
” আমি এখন একটু একা টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছি আয়াত প্লিজ আমাকে distrub করো না আর আম্মুকেও বলো পরে আসবো। ”
.
এ কথা বলে মাইশা পিছে ঘুরে আবার রেলিংয়ের উপর বসে কোলাহলপূর্ণ ঢাকা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । পেছনে অনেকক্ষণ শব্দ না পাওয়ার ফলে মাইশা ভাবে যে আয়াত হয়তো চলে গেছে । ওর কাছে ব্যাপারটি অনেক আজবও লাগে আবার শান্তিও লাগে যে এখন আয়াত আর তাকে বিরক্ত করবে না ।
বেশ কিছুক্ষণ পর আচমকা নিজেকে শূণ্যে অনুভব করতেই চিংকার দিয়ে উঠে। আর আয়াতকে দেখেই তার চোখ ছানাবড়া ।
” ছাড়ো আয়াত…আজব তো এভাবে আমাকে কোলে তুললে কেন । ”
.
আয়াত কোনো সাড়াশব্দ না করে মাইশাকে কোলে করে লিফ্টে ঢুকে । আয়াতের বুকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি মারতে আয়াত কড়া গলায় বলে ওঠে….
” আর যদি একটা কথা বলো দ্যান আমি কিস করে তোমার মুখ বন্ধ করতে দুই মিনিটও ভাববো না । আফটার অল লিফটে কেউ নাই জাস্ট ইউ অ্যান্ড মি হোয়াট অ্যা রোম্যান্টিক ওয়েদার !”
.
মাইশা শুধু পারছে না আয়াতকে ঠাডিয়ে দুইটা চড় মারতে । এমনেও এই ছেলে যা একটা কথা বললে সত্যি সত্যি না আবার কিস করে বসে ,
”তোর রোম্যান্টিকের গুষ্টি কিলাই।লুইচ্চা কোথাকার !তোর কিস তুই খা !”
আফসোস এই কথাগুলো মাইশা আর মুখে আনতে পারলো না ।
.
ফ্ল্যাটের সামনে আসতেই মাইশাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় আয়াত । শুরু হয়ে যাবে এই ছেলের ভদ্র হওয়ার ড্রামা । মাইশা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ,
” আমারে কোলে তুললা কেন ?”.
.
আয়াত ভ্রু কুচকে বলে ….
” খালামণি তোমাকে চুল টেনে নিয়ে আসতে বলছে । আর আমি তোমায় কোলে করে নিয়ে আসলাম । আমাকে তো তোমার thank you বলা উচিত। আর তুমি?……shame on you!”
বলেই আয়াত ভিতরে চলে যায়। মাইশা এখন হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে । কিসের সাথে আয়াত কিসের লজিক দিলো কিছুই বুঝলো না সে।
..
..
ড্রয়িংরুমে বসে খালামণি ,খালু ,আরিয়াপু , মাইশার আব্বু-আম্মু কথা বলছে । আজ তারা চলে যাবে । আয়াত ডাইনিংরুমে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। আর মাইশা ড্রইংরুমের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে। এই ড্রইংরুমে সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওর । এই ২৪ বছরের লাইফে এত অপমান অপদস্ত কখনোই হয়নি যতটা আয়াতের কাছে হয়েছে। প্রথমে ভার্সিটির সবার সামনে থাপ্পড় , তারপর একের পর এক ওর ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলা , এতকিছুর পর কোনো মানুষের স্বাভাবিক থাকাটাই হবে বড় অস্বাভাবিক ; মাইশাও তার ব্যাতিক্রম কিছু না।
.
” কি ব্যাপার মাইশা , এত চুপচাপ বসে আছো যে ?”(খালু)
.
” এভাবেই , তেমন কিছু না…..”
.
” এবার মাইশার বিয়ে দিয়ে দেন ! ২মাসের মাথায় অনার্স কমপ্লিট করবে…তেমন তো সমস্যা হবে না । ওর জন্য আমার কাছে অনেক ভালো ভালো পাত্র আছে।”
মাইশা গোল গোল চোখ করে তার খালামণির দিকে তাকায় । খালামণির মুখে খুশির ঝলক। হঠাৎ আয়াত বলে উঠে,
” ওর বিয়ে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না আম্মু , যেই রাগ ;পাত্র তো ওকে দেখতে এসে লুঙ্গি মাথায় তুলে নিয়ে পালাবে !”
.
মাইশা এবার আয়াতের দিকে তাকায়। ও মুখের এক্সপ্রেশন মাইশা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে ওর খালামণির মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠেছে আয়াতের তিক্ত কথায়। তবে কিছু একটা ভেবে খালামণি হাসি দিয়ে বলে,
.
” সমস্যা নেই ব্যাটা ; তোর সাথে বিয়ে করিয়ে দেবো নে পাত্র পালিয়ে গেলে , জানো সুমি (মাইশার মা ) আয়াত যখন ছোটবেলায় মাইশার ছবি দেখতো না তখন আয়াত বলতো বড়ো হলে ও এই পাখিকে বিয়ে করবে । আবার অ্যামেরিকায় যখন ও কিন্ডারগার্ডেনে পড়তো তখন ও সব ফ্রেন্ডদের ছবি দেখিয়ে বলতো এটা নাকি ওর বউ”
.
খালামণির কথা শুনে বাকি সবাই হেসে দিলেও বিভ্রান্তিতে পড়েছে মাইশা আর আয়াত। আয়াতও ভাবেনি যে ওর মা একথা বলে দিবে । মাইশা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বিড়বিড়িয়ে বলে,
” আয়াত তো আমাকে দেখতেই পারেনা….আবার বিয়ে….”
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
রাত মোটামুটি হয়েছে। কিন্ত এখনো ঘুম আসছেনা আমার। গ্রিলের বারান্দা ঘেষেঁ চাদর পেচিয়ে নিচে বসে আছি আমি। কাল আমি আমার নতুন স্কুলে যাবো দশম শ্রেণীর ছাত্রী হিসেবে। তাই হয়তো উত্তজনার বশে ঘুম আসছে না।
রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোর খেলায় বেশ আনন্দেই আছি আমি । হঠাৎ আমার কানে একটি মধুর কণ্ঠ বেজে এলো। খুবই মিহি কণ্ঠ। গিটারের তালে তা যেনো আরও মধুর লাগছে আমার কাছে। কিন্ত এত রাতে গান গাচ্ছে কে? শব্দর উৎস খুঁজে পাই আমার বারান্দার ঠিক দক্ষিণ পাশের বারান্দার দিকে .,
.
”রাতের সব তারা আছে দিনের গভীরে
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে…..
তুই কি আমার হবি রে !
মন বাড়িয়ে আছি দাঁড়িয়ে
তোর হৃদয়ে গেছি হারিয়ে
তুই জীবন-মরণ সবি রে
তুই কি আমার হবি রে !”
.
আমি একধ্যানে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছি। সোডিয়াম লাইটের আলোয় তার কালো চোখে দেখতে পাচ্ছি কিছু অনুভূতির খেলা। তার সিল্কি চুলগুলো কপালে খেলা করছে বাতাসের ঝাপ্টায়। তার গিটারের প্রতিটা সুর আমার হৃদয়ে টান দিচ্ছে। গিটারের তালের সাথে কোনো ছেলেকে যে এতটা সুন্দর লাগতে পারে আদ্রাফকে না দেখলে আমি জানতেই পারতাম না । কিশোর জীবনে এই প্রথম কোনো ছেলের জন্য মনে কিছু অনুভব করলাম।
হঠাৎ দেখলাম আদ্রাফ গিটার রেখে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুজতে লাগলো। আমার দিকে তাকাতেই থমকে যাই আমি। আদ্রাফ আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে ,
” এখনও ঘুমাওনি তুমি?”
.
.
#চলবে
রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০২
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
#পর্ব:২
”আমাকে পাগল বানানোর ধান্দায় আছো নাকি, মাইশা?”
মাইশা চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায় । তাকিয়েই ওর চোখ ছানাবড়া । আয়াত দরজার সামনে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে । মাইশা এবার নিজের দিকে তাকায় । গায়ে কোনো ওড়না নেই। তৎক্ষণাৎ মাইশা মোবাইল রেখে উঠে সোফা থেকে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে নেয় । তারপর চিল্লিয়ে বলতে থাকে ,
” আজব পাবলিক তো তুমি? এভাবে কোনো মেয়ের রুমে হুট করে কেউ ঢুকে পড়ে । আর ১ মিনিট……..রাত বাজে ১০ টা। তুমি এখন এখানে কি করছো?” (ভ্রু কুচকে)
.
” Excuse me babe….এটা আমার খালামণির বাড়ি । আমার যখন মন চায় তখন আসবো । আর তোমার amazon জঙ্গলের মতো রুমে আমার আসার একটুও ইচ্ছা ছিল না । খালামণিই পাঠিয়েছে তোমায় ডাকতে। কিন্ত ভাবতে পারিনি এখানে কোনো জংলিবিড়াল পেয়ে যাবো। রিডিকিউলাস,….”
.
মাইশা ছোট ছোট চোখ করে বলতে থাকে,
” আমার রুম কোন অ্যাঙগেল থেকে তোমার amazon forest মনে হচ্ছে?”
.
আয়াত মাইশার ওড়নার দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলে….
”তা পরে বলি আগে ওড়নাটাতো ঠিক করে পড়ো। ”
মাইশা এবার খুবই অসস্তিতে পড়েছে। আয়াতের এরকম লাগামহীন কথা শুনে মন চাচ্ছে এই লুইচ্চা পোলার মাথা ফাটায়ে দিতে । এই আমেরিকান বান্দরগুলা সব এমনই থাকে।
”By the way , বয়ফ্রেণ্ডের সাথে কি একটু আগে ভিডিও কলে কথা বলছিলে ? ভার্চুয়ালি দেখিয়ে লাভ নাই । রুম ডেট করলেই তো হইসে….!”
.
আয়াতের এ কথাটা বলতেই দেরি মাইশার আয়াতের কলার ধরতে এক সেকেণ্ডও টাইম লাগলো না। রাগে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ।
.
” প্রবলেমটা কি তোমার? এত নিম্ন মনমানসিকতা নিয়ে চলো কিভাবে । মানছি আমার বিএফ আছে কিন্ত তোমাদের আমেরিকানদের মতো এত সস্তা না যে কিছু হলেই নিজের শরীর বিলিয়ে দেবো । আর আমি আমার boyfriend এর সাথে যা-ই করি না কেন তোমার কি? Do you love me?”
.
আয়াত হাসে । যেনো খুব মজার কথা বলেছে মাইশা । মাইশার কোমড় চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে আয়াত । এতে মাইশা আয়াতের কলার আস্তে আস্তে ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
.
” সেটা তোমার না জানলেও চলবে। আমি জানি তুমি আর তোমার বয়ফ্রণ্ডসমাহার(ব্যাঙ্গ করে) ;সবার কাছে এগুলো জাস্ট টাইম পাস ছাড়া কিছুই না । তবে তোমার টাইম পাসের সময় ওভার; পাখি। ভেবো না তোমার প্রতি আমার কোনো interest আছে । এখন নিচে চলো।”
‘
বলেই মাইশার কোমড় ছেড়ে দিতেই মাইশা সরে যায় আয়াতের কাছ থেকে। আয়াত একগালে হাসে।
”এখন নিচে চলবে নাকি আমার কোলে করে নিচে নামতে চাইছো?এতো ড্রামা না দেখিয়ে সরাসরি বললেই তো পারো?”
মাইশা ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে ব্যস্ত। এতটুকু বুঝতে বাকি নেই যে এই ছেলে যেকোনো টাইম জলসা সিরিয়ালের মতো কাহিনী শুরু করে দিতে পারে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাইশা নিচে গেলো। লিভিংরুমে খালামণি , খালুজান আর আয়াতের বড় আপু আরিয়া আছে । খালামণি মাইশাকে দেখেই খুশিতে গদগদ করে ওঠে ।
” আরে মাইশা তো দেখি অনেক ব্যস্ত মানুষ হয়ে গেছে । ৩মাস ধরে খালামণি আসল আমেরিকা থেকে আর মেয়েটি দেখতেই গেলো না ; তাই খালামণিই আসলো মেয়েকে দেখতে । ”
,
”ভালো আছো খালামণি?”
,
”আলহামদুলিল্লাহ,মা অনেক ভালো আছি…..”
.
”খালুজান কেমন আছেন?”
.
” হ্যাঁ মামণি আমিও অনেক ভালো আছি। পড়াশোনা কেমন চলছে?”
,
”বয়ফ্রেণ্ডকে টাইম দিয়েই কূল পায় না আবার পড়াশুনা ! ”
আয়াত এ কথাটা বিড়বিড় করে বললেও মাইশা ঠিকই একথাটা শুনেছে । রক্তচক্ষু নিয়ে আয়াতের দিয়ে তাকায় সে। পারছে না আয়াতকে শুধু চোখ দিয়ে গিলে ফেলতে । আয়াত তা দেখে এক চোখ টিপ মারে মাইশাকে। মাইশা ভেবে কূল পায় না ওকে বিরক্ত করে এই ছেলেটা কি আনন্দ পায়।
‘
‘
ভার্সিটির দিকে মাইশা হেঁটে যাচ্ছে। আর মনে মনে বারবার আয়াতকে গালাগাল করছে । আজকে ভার্সিটিতে আসার সময়ও আম্মু আয়াতকে ওর সাথে পাঠিয়েছে। আয়াত গাড়ি পার্কিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়লে মাইশা যেন বেজির মতো গাড়ি ছেড়ে ভার্সিটির দিকে ছুটে গেলো।
এগিয়ে দেখে অরি , আনান ,পৃথা, সামাদ আর ইনায়া । মাইশার দিকে ড্যাবড্যাব চোখ করে তাকিয়ে আছে ৫ জন। মাইশা ওদের কাছে গিয়ে বলে,
” আমি কি কোনো এলিয়েন এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?”
.
”দোস্ত তুই বাইচ্চা আছোস…..”(অবাক চোখ করে আনাফ)
.
” কেন আমার চল্লিশা খাওয়ার প্ল্যান করছিলি তুই?”
.
”না আসলে গতকাল ছেলেটা যেভাবে তোকে থাপ্পড় মারলো……কে ছিলো রে…..আমি তো তোরে থাপ্পড় দেওয়ার টাইমই ক্রাশ খাইছি ছেলেটার উপর…..(পৃথা দাঁত কেলিয়ে)
.
মাইশা এখন শুধু পারছে না মাটিতে বসে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে। কপালে কেমন দস্যু দোস্তগুলা জুটলো যেগুলা ওর কষ্ট না দেখে ক্রাশ নিয়া পড়ে আছে ; তাও আবার এমন টাইমে যখন ওকে থাপ্পড় মারলো ।
মাইশা ভ্রু কুচকে বলে,
”লাইক সিরিয়াসলি ! ওই অসভ্য আয়াতটা ভার্সিটির টপার স্টুডেন্ট মাইশাকে থাপ্পড় মারলো আর তুই ক্রাশ নিয়া বসে আছিস । আমার খালামণি পোড়া কপাল নিয়ে এই অধমটারে পয়দা করছিলো আর এই অধমটা এবার আমার পোড়া কপাল বানাতে চলে এসেছে। ”
.
” তাই মাইশা ? ”
,
মাইশা পিছে ঘুরে । আয়াত দাড়াঁনো । মাইশা এখন ভাবছে যে ভুল সময়ে ভুল কথা বলে ফেললো। কেননা আয়াতের চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে । আর রাগলেও ছেলেটাকে যেন মাত্রতরিক্ত সুন্দর লাগে।
.
” কি জানি বলছিলে? তোমার খালামণি পোড়া কপাল নিয়ে……something like that…..আর কি কি জানি বললা বাট আমি ভুলে গেলাম । ইসসসস্”
.
মাইশা বুঝে গেছে সব শুনেছে আয়াত। মাইশা মেকি হাসি দিয়ে বলার চেস্টা করে ….
”তেমন কিছু না আয়াত । আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। আমারা তাহলে যাই…..”
একথাটা বলেই মাইশা চলে কেটে পড়তে নিলেই আয়াত ওর বাহু ধরে কাছে গিয়ে দাঁড়ায় । মাইশা এহেন কাণ্ডে একটু অবাক হয়েছে ।
” একা বাসায় যেওনা কেমন ? তোমার গুণধর বয়ফ্রেণ্ডকে আজকে বলো তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও মন দিতে । আমিই কিন্ত নিতে আসবো । ”
আয়াত আর এক মিনিটও দেরি না করে চলে যায় ।
,
”OMG , পোলা তো না যেন আগুনের গোলা । আজকে তার angry face দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম রে। ”(পৃথা)
.
”তুই ক্রাশই খাইতে থাক । এদিকে তো মাইশার বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে । ”(সামাদ)
মাইশা বিরক্তি চোখে সামদের দিকে তাকায় । যদিও ওর মন পড়ে আছে আয়াতের দিকে । ছেলেটার কাজকর্ম অনেক অদ্ভুদ। আয়াত নামের এই character কে বুঝে উঠতে পারছে না সে !
.
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
.
ড্যাবড্যাব চোখ করে তাকিয়ে আছি আমার ঠিক উপরে থাকা ছেলেটার দিকে। কে এই ছেলেটা ?
” আদ্রাফ ?”
সাথে সাথেই ছেলেটা আমার উপর থেকে উঠে যায় । হঠাৎ এই সিচুয়েশনটা আমার খুব অকওয়ার্ড মনে হচ্ছে। আদ্রাফ নামের ছেলেটারও ঠিক এমন মনে হচ্ছে । আমি শব্দের উৎস খুজতে গিয়ে দেখি পাশের ছাদে একটি অপরূপ সুন্দরী মেয়ে দাঁড়ানো। আমাদের এ বাড়িটার সব দিক থেকে ফাঁকা শুধুমাত্র দক্ষিণ দিক দিয়ে অন্য একটি বাড়ির সাথে প্রায় লাগালাগি অবস্থায় রয়েছে।
সে ছাদেই মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। হলুদ কামিজ পড়া অবস্থায় মেয়েকে কোনো হলদে পাখি থেকে কম লাগছে না । মেয়েটি আবারও বলে ওঠে ,
” আদ্রাফ ওকে সব বল । নাহলে তো তোকে চোর মনে করে উড়াধুরা পিটানি লাগানো শুরু করবে ।”
.
আমি এবার অবাক চোখে আদ্রাফের দিকে তাকাই । আসলেই তো ! আমাদের বাসায় ছাদে একজন অপরিচিত ছেলে আছে আর আমি কোনো রিয়েক্ট করছি না কেন ?
আমি কিছু বলতে যাবো তখনই ছেলেটা বলে ওঠে ……
” প্লিজ মিস কোনো চিল্লানি দিয়ো না । আমি সব বলছি । আসলে ১ বছর আগে যখন আমি আর আপু যখন পাশের বাসাটাতে উঠি তখন দেখি এ বাড়িতে কাজ চলছে । আর আমার প্রতিদিন বিকেলের রুটিন ছিলো এ ছাদে বসে একটু একা টাইম স্পেণ্ড করা। আজও নিয়মমাফিকভাবেই এখানে এসেছি । কিন্ত আমি জানতাম না যে আজ এখানে আপনার থাকা শুরু করবেন । আজকেই হয়তো আমার এখানে শেষ আসা…..”
.
আমি হ্যাবলাকান্তের মতো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি । তার কথাগুলো আমার বুঝে উঠতে পাক্কা ২ মিনিট লাগলো ।
”ইটস ওকে । এটা এক্সিডেণ্ট ছাড়া কিছুই না”
আমি এবার আবার ওই সুন্দরি আপুটির দিকে তাকাই । এটাই হয়তো আদ্রাফের বোন । আপুটাও ইশারায় আমাকে সরি বললো। আমি বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি দেই ।
এবার আমি ছেলেটার দিকে তাকাই । আদ্রাফ ততক্ষণে এ ছাদ পেরিয়ে চলে গেছে । আমার দিকে একটাবারও তাকায় নি। আমি বুঝতে পারছি না আমার মনে এ কেমন অনুভূতির খেলা চলছে….?
.
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
মাইশা বিকেলে ছাদে একদৃষ্টে পশ্চিমদিকে তাকিয়ে আছে । মনে যে তার কি চলছে তা ওর নিজেরই অজানা । শীতের আমেজে বেইলী রোডের কোলাহলপূর্ণ এলাকাটি বড্ড ভালো লাগে ওর। তবে ও এখন আয়াত নামক mysterious মানুষটিকে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে । আয়াতের character দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে।
,
” রাগাও তুমি , কাদাও তুমি , অতীতের স্মৃতি আমার সামনে তুলে ধরো তুমি….কি চাও তুমি আরহাম আয়াত?”
.
”তোমাকে”
.
.#চলবে
রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০১
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন
সূচনা পর্ব
গালে হাত দিয়ে একপাশে নিজের এক্স বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইশা।সামনেই নীরবে দাঁড়িয়ে আছে তার ক্রাশবয় আরহাম আয়াত।সম্পর্কে ওর কাজিন।এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন কোনো কিছুই হয়নি। নিজেরই ভার্সিটির ক্যাম্পাসে কেউ তাকে থাপ্পড় দিবে এটা সে কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি। তার বন্ধু-বান্ধবীরাও এ দেখে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে।
মাইশা এবার গর্জে ওঠে বলে ,
‘
”সাহস কি করে হয় তোমার মাইশা জামান নূরের গায়ে হাত তুলো তুমি ?”
,
আয়াত নীরব চাহিনী দিয়ে এক বাঁকা হাসি হাসে।তারপর এক হাত পকেটে গুঁজে বলতে থাকে,
”সাহস আছে বলেই থাপ্পড় মারলাম..(চোখ গরম করে) ভার্সিটিতে কি প্রেম করতে আসো?”
”ও হ্যালো ও আমার ex-boyfriend। কিছু কাজ ছিল তাই দেখা করতে এসেছে । তোমার কি ? খালাতো ভাই তুমি সেটার মতো থাকো। লিমিট ক্রস…….”
মাইশাকে আর কোনোকিছু বলতে না দিয়ে আয়াত ওর একহাত চেপে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। এবার ওর ভয় হচ্ছে। মাইশা মনে মনে ভাবছে,
”শান্ত হলেও এর যা ভয়ঙ্কর রাগ ; আমাকে মেরে ফেলতেও তো দুবার ভাববেনা । ”
গাড়িতে মাইশাকে বসিয়েই আয়াত মাইশার সিটবেল্ট লাগাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। মাইশা এবার তাকে বাঁকা চোখে দেখতে থাকে।
রাগের জন্য আয়াতের নাকটা কেমন টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে।মাইশার এখন মন চাচ্ছে আয়াতের নাকে টুস করে একটা কামড় দিতে । আয়াতের angry face টাতে আবারও ক্রাশ খেলো সে ।
.
”আবার যদি কোনো ছেলের পিছন ঘুরঘুর করতে দেখি না একেবারে ঠ্যং ভেঙ্গে ফেলবো । তারপর ঘুরবে আমার কোলে করে।”
নিমিষেই মাইশার ক্রাশ এবার বাঁশে পরিণত হলো । রাগে-দুঃখে কাদতে মন চাচ্ছে তার । তবুও চোখ পাকিয়ে সে বলতে থাকে ….
”এক্ষেত্রে আমাকে তোমার advice নিতে হবে না । ১৫ বছর আমেরিকাতে ছিলে ভালো ছিলে। আমার লাইফটাতো আমার মতো থাকতো!”
.
আয়াত এবার মাইশার খুব কাছে এসে পড়ে । মাইশা এতে একেবারে গাড়ির দরজার সাথে মিশে বসে। হার্ট ওর অনেক দ্রুত বিট হচ্ছে। কেননা আয়াত বেশ অদ্ভুদভাবেই তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাইশা আয়াতের এই চাহিনীর সাথে বেশ অপরিচিত।
.
আয়াত ধীরে ধীরে মাইশার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো হাল্কা ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেয়। মাইশার শরীরে এক অদ্ভূুদ শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আয়াত মিহি কন্ঠে বলে,
” মন টা চাচ্ছে তোমাকে ঠেঁসে ধরে একটা চুমু খাই । কিন্ত last একটা সুযোগ দিলাম। উল্টাপাল্টা কোনো কথা বললে ডাইরেক্ট কিস । Is it perfect punishment for you?”
.
মাইশার কুচকে থাকা চোখদুটো নিমিষেই গোল গোল চোখে পরিণত হয়।ছেলেটা মানুষের সামনে যতটা ভদ্র সাথে ঠিক ততটাই অসভ্য সে।
,
,
গাড়ি চলছে আপনগতিতে। মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মাইশা। বাসায় যেতে এখনো আরও ১৫ মিনিট বাকি। মাইশা আড়চোখে তাকিয়ে দেখে একধ্যানে গাড়ি চালাতে মগ্ন আয়াত। চোখে-মুখে কেমন একটা ক্লান্তির ছাপ । ব্যাস্ত নগরে মানুষের হাক-ডাকের মাঝ দিয়ে আয়াতের চেহারাতেও কেন যেন বাঙালিত্বের ছাপ খুঁজে পাচ্ছে না মাইশা। হয়তো আমেরিকান কালচারকেই আগলে নিয়েছে সে। বাতাসের ঝাপ্টায় বারবার তার চুল কপালে পড়ছে আর বারবার সে তার বামহাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।
আয়াতের এ দৃশ্যদেখে মাইশা চোখ ফিরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। অতীতের স্মৃতি না চাইতেও তার মাথায় চারা দিয়ে উঠছে।
.
********** *************
.
রিক্সা থেকে নেমে সবেমাত্র দাড়ালাম আমাদের নতুন বাড়ির সামনে। বাবার ২ বছরের কষ্টের ফসল উত্তরার এ বাড়িটি। মনে আছে আমার একরাশ নবঅনুভূতি। বাড়িটিতে মার সাথে সব গোছগাছের কাজ শেষ করে গেলাম ছাদে। এ বাড়ির ছাদটা এককথায় চমৎকার। ঢাকা শহর এক নতুন আঙ্গিকে দেখা যায় এ বাড়ির ছাদ থেকে।
.
চোখ বুঁজে এক লম্বা নিঃশ্বাস নেই আমি। রাস্তার পাশে বকুল গাছে থাকে বকুলের ঘ্রাণে সারাছাদ মৌ মৌ করছে। দুতলবিশিষ্ট এই বাড়িটা বেশ ভালো লেগেছে আমার । কেমন যেন একটা ছিমছামভাব।
পাশে একটা শব্দ পেতেই চট করে মাথা ঘুরিয়ে নেই আমি। কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ আছে এখানে। এ কিকরে সম্ভব? কেননা মা-বাবা নিচে আর ভাই তো …..মনে হচ্ছে চোর আছে।
আমি একটু এগিয়ে চিলেকোঠার ওদিকে যাই। আচমকা কারও সাথে ধাক্কা লাগাতে নিচে পড়ে যাই আমি। ব্যাথা লেগেছে অনেক। আগন্তুকটার ভারের চাপে আমি চ্যাপ্টা হয়ে গেছি। ভয়ে এতক্ষণ চোখ খিঁচে ছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলি।
.
কপালে ছেলেটির চুল আছড়ে পড়ছে। তার মায়াবী চোখযুগল আমার চোখের দিকে। মুখে এক মুচকি হাসি। আমার চোখ খোলার সাথে সাথেই ছেলেটি বলে ওঠে,
” মাশাল্লাহ্……”
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে। শ্যামলা মুখটাতে অদ্ভদ এক মায়া কাজ করছে আমার। কিন্ত কে এই ছেলেটা।
.
” আদ্রাফ”
.
********* **********
.
গাড়িটা বাড়ির সামনে পৌছে গিয়েছে। মাইশা আস্তে করে নিজের চোখ খুলে। এবার ক্ষীপ্ত চোখে তাকায় আয়াতের দিকে। আয়াতের সেদিকে খেয়াল নেই।
” আমাকে থাপ্পড় মারার revenge আমি নিবোই আরহাম আয়াত !”
আয়াত কিঞ্চিত হাসে । তারপর মাইশার দিকে এগোতে এগোতে বলে……
” এখনই নিয়ে নাও babe আমি প্রস্তুত…..”
.
মাইশা মুখ শুকনো করে বের হতে নিলেই আয়াত মাইশার হাত চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
” মনে করো না আমার নজর থেকে এক সেকণ্ডের জন্যও ছাড় পাবে তুমি । এটা তো সবেমাত্র শুরু ! তোমার আঁধারময় জীবনে রৌদ্দুর হয়ে আসবো। Be ready for it…..মাইশুপাখি !”
তোমাতে আসক্ত পর্ব-৩৩ এবং শেষ পর্ব
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩৩ (অন্তিম পর্ব)
অভ্র পিছনে তাকিয়ে মিহি বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পরে যায়। কিন্তু এই অবস্থায় এভাবে পড়ে গেলে তো চলবে না, নিজেকে একটু শক্ত করে উঠে মিহির কাছে যায়। কোলে নিয়ে পাগলের মতো মিহিকে ডাকতে থাকা আর গাড়ি নিয়ে বসে। বার বার ডাকে কিন্তু কোনো কথা বলে না। রক্তে অভ্রের শরির মাখামাখি অবস্থা। কী করবে ভাবতে পারছে না।মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে।
অভ্র হসপিটালের গেইটের সামনে যেতে ই দেখে অপু। মিহিকে দ্রুত ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়।অভ্র পাগলের মতো করছে। এতোটা শকড নিতে পারতেছেনা। অপুকে ড্রাইভার কল দিয়ে বলেছে। পলা কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর ডক্টর বের হয়। জানায় দ্রুত আইসিইউতে নিতে হবে। মাথায় আর বুকে আঘাত পেয়েছে যার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে চোখে সমস্যা হতে পারে। চব্বিশ ঘণ্টার আগে জ্ঞান ফিরবে নাকি পারবেনা। প্রচুর রক্তক্ষরণ এর ফলে রক্ত লাগবে। আর উনার বাচ্চাটা বাচানো সম্ভব না। উনি বাচবে কিনা সন্দেহ উনার বাচ্চাকে বাচানো তো আরো আগে সম্ভব না।
–কী বলছেন ডক্টর। মিহি প্রেগন্যান্ট ছিলো।
–হে, আপনারা জানেন নাহ্।
কথাটা শোনে অভ্রের দুচোখ দিয়ে না চাইতে ও পানি পড়তে থাকে। ভাগ্যের কী পরিহাস, বাবা হওয়ার অনুভূতিটা যে কতো মধুময় তা একটা বাবা ই ভালো জানে আর বাবা হয়েও তা জানতে পারলো না। মিহি কেনো বলেনি তাহলে তো কখনো সিলেট নিয়ে যেতো না।আল্লাহ আমাকে শক্তি দাও।
–ডক্টর আমি কী একটু দেখতে পারবো?
–এখন না। আইসিইউতে দেওয়ার পর।আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করুন।
পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখে, দাদিমা সহ বাসার সবাই চলে এসেছে। মিনতি অনবরত কান্না করতেছে। মিহির বাবা মা ও চলে এসেছে।
–ভাইয়া মিহি কোথায়।
অভ্র কোনো কথা বলছে না। শুধু চুপ করে আছে। অভ্রের অবস্থা অপু বুঝতে পেরে বললো,
–আইসিইউতে সিফট করবে এখন। তোমার আর মিহির রক্তের গ্রুপ কী একই। বা তোমার পরিবারের কারো সাথে কী মিহির রক্তের গ্রুপ মিলে।
–হে, আমাদের দুইবোনের রক্তের গ্রুপ একই।।
তাহলে চলো আমার সাথে বলে ই মিনতিকে নিয়ে ডক্টরের কেবিনের দিকে চলে যায়। অভ্রে ফ্লোরে বসে আছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। মুখটা মলিন হয়ে আছে। শুধু আইসিইউর দিকে তাকিয়ে আছে।
অভ্রের এমন অবস্থা দেখে কেউ ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে না৷
বেশকিছুক্ষনপর,
অভ্রের হঠাৎ উঠে আইসিইউর দিকে যাওয়া শুরু করলো, সাথে সাথে রেনু বেগন ও যায়। অভ্র ডক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সকল ফর্মালিটি মেনে অভ্র ভেতরে ডুকতে ই দেখে অক্সিজেন মাক্স খোলা। মিহি নিশ্বাস নিতে পারতেছেনা। অভ্র ডক্টর বলে জোড়ে চিৎকার দিয়ে পিছনে তাকাতে ই এককোনে পলাকে দেখতে পেলো। পলার হাত পা কাপছে ডক্টর এসে মিহিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
অভ্র পলাকে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলো,পলাকে এমন মারতে দেখে মিনতি, অপু এসে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,
–আরে ভাই তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। পলাকে এভাবে মারছিস কেন। উনি তোর কী করেছে।
—অপু ভালোই ভালোই বলতে বল, এই মহিলাকে কে পাঠিয়েছে।
ভয়ে পলা বলতে শুরু করলো,
–মীরা ম্যাডাম আমাকে টাকা দিতো অভ্র ভাই আর মিহির খবর নিয়ে দিতে পারলে। আমি অনেক দিন আগে থেকে ই মীরা ম্যাডামকে এসব বলি। এবাড়িতে কাজ নেওয়ার মূল কারণ ই ছিলো অভ্র ভাই আর মিহির খবর মীরা ম্যাডামকে দেওয়া।
–এইগুলো বাদ দিয়ে বল মিহিকে এক্সিডেন্ট করিয়েছিস কীভাবে।
—মীরা ম্যাডামের কথায়, মীরা ম্যাডাম সব প্রি প্লানিং করে রেখেছিলো। আমি ই বার বার বলি মিহিকে আইসক্রিম নিজে আনতে যেতে। আইসক্রিম আনার কথা বলে গাড়ি থেকে নামাই তারপর সুযোগ বুঝে আমি ইচ্ছে করে মিহিকে গাড়ি আসার সাথে সাথে ধাক্কা দেই।
অভ্র উঠে আবার মারতে গেলে। সবাই আটকিয়ে রাখে। পলাকে পুলিশের হাতে দিয়ে দেয়। কিন্তু মীরাকে খুজে পাওয়া যায়নি।
___________________
দুইমাস পর,
–এই তোমাকে আর কতো বলবো কম খেতে। মনে হচ্ছে কোলে একটা আটার বস্তা নিয়েছি।
মিহি রাগি চোখে তাকাতে ই অভ্র বললো,
–তুমি খাবে না কে খাবে টিয়াপাখি। আমি যা আছে সব তোমার জন্য। আজকে রাতে ই তোমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো টিয়াপাখি। রাগ করো না।
–শাস্তি আরো বাড়িয়ে দিলাম, যাও আমাকে কোলে নিয়ে বাগানে যাও।
–আজকে কোমরটা ভেঙ্গে ছাড়বা টিয়াপাখি।
–ভাঙ্গলে তো ভালো ই হবে। সারাক্ষণ আমার সামনে বসে থাকবে আর আমাকে ভালোবাসবে।
–কোমর ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবে কেনো। তুমি বললে অনন্তকাল আমি তোমার নয়নে নয়ন রাখিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি প্রয়সী।
মিহি মেকি হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।
অভ্রের শাস্তি চলতেছে।দুইটা বাজার আগে অভ্রকে অফিস থেকে চলে আসতেছে বলেছে। আর এখন চারটা বাজে। লেইট করার শাস্তি স্বরুপ এখন মিহিকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে।
বাসায় কেউ নাই সবাই মিহিদের বাসায় গিয়েছে, শুধু মিহি আর অভ্র বাদে। ডক্টর মিহিকে কোথাও যেতে নিষেধ করেছে। পুরোপুরি রেস্টে থাকতে বলেছে তাও মিহি যথেষ্ট অনিময় করে। অবশ্য অভ্র সামনে থাকলে তা করে না।বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে শোনে মিহি অনেক কান্না করেছিলো, কিন্তু অভ্র সামলে নিয়েছে। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই সন্তানের মুখ দেখা হবে। হয়তো এই সন্তানটা ভাগ্যে ছিলো না।২৬
সন্ধ্যা বেলা, বেলকনিতে বসে আছে মিহি, মিহি একটা বইয়ে মন আসক্ত হয়ে আছে। আর অভ্র মিহিতে আসক্ত হয়ে আছে। হাজার বার দেখলে ও মন ভরে না চোখের আড়াল হলে ই মনে হয় কেউ হয়তো আবার কলিজাটা নিয়ে যাবে। আগলে রাখবো টিয়াপাখি আমার সবকিছু দিয়ে। অনেক ভালোবাসি টিয়াপাখি।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, অভ্র মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতে ই লাফিয়ে উঠলো।
মিহি ভয় পেয়ে বার বার জিজ্ঞেস করে কী হইছে। কিন্তু অভ্র মিহিকে বার বার থামতে বলেছ।
কথা বলা শেষ করে অভ্র বললো,
—মীরাকে পুলিশ ধরতে পেরেছে। আল্লাহ আমার মনের আশা পূরণ করেছে। এতো দিনে মীরার উচিত শাস্তি হয়েছে।
–হুম, এগুলো নিয়ে ভাববে না, তুমি।
–তাহলে কী নিয়ে ভাববো টিয়াপাখি।
–কেনো আমি আছি না।
–হুম, তোমাকে নিয়ে তো আমার ভাবনা সর্বক্ষণ ই।
–তা ছয় মাসের বেশি তো হলো, এখন ও ডিভোর্স দিলে না যে। উল্টো আমাকে ছাড়া তো এক মুহুর্ত ও থাকতে পারো না।
–ছয় মাস কি। ছয়জনম বলে যদি কিছু থাকে তাহলে সেই ছয়জন্মে ও তোমাকে চাই।
মিহি হাসিমাখা মুখে উওর দিলো,
“ভালোবাসি অভ্র”
হুম আমি ও, প্রত্যেকটা মুহুর্ত তুমিময় কাটাতে চাই, প্রত্যেকটা মুহুর্ত তোমাতে আসক্ত হতে চাই। এভাবে ই সারাজীবন তোমাতে আসক্ত হয়ে কাটাতে চাই। বলে ই কপালে ঠোঁট দুটো ছুয়ে দিলো।
———–সমাপ্ত ——-
তোমাতে আসক্ত পর্ব-৩২
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩২
লজ্জা শব্দটা আকড়ে ধরে আছে মিহিকে। অভ্রের সামনে যেতে ই দুচোখ বন্ধ হয়ে আসে।কালকে রাতের কথা মনে হলে নিজেকে এই চার দেওয়ালের ভিতরে ই লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়। ভালোবাসাময় রাতটা পাড়ি দিয়েছে। খুব ভালো লাগার মুহূর্ত ছিলো। অনেক্ষন যাবৎ মুখ ডেকে বসে আছে। অভ্র বার বার অনেক কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কোনো উওর ই মিহি দিচ্ছে না।
–স্যরি, মুখ ডেকে বসে আছো কেনো। কথা না বললে আবার রোমাঞ্চ করা শুরু করে দিবো কিন্তু। অনেক হয়েছে আর ভালো লাগছে না।
কথাটা শোনার সাথে সাথে মিহি মুখ খুলে জিজ্ঞেস করে,,,
—কী হয়েছে।
–কথা বলছো না কেনো।
–এমনি।
–নিচে চলো ডাকছে।
–আমি যাবো না।
–কোলে করে নিয়ে যেতে হবে ঐটা বলো
–এই না, না আমি যাচ্ছি।
আমি নিচে যাওয়ার জন্য শাড়ি ঠিক করছি, আয়নায় নিজেকে আবার দেখে নিলাম। বেডে বসে বসে অভ্র আমাকে দেখছে।।আমার কাছে এসে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
–গলার দাগটা দেখা যাচ্ছে টিয়াপাখি।
–তোর জন্য ই তো এই দাগ, আবার আদিক্ষেতা করতে এসেছিস।
–আমার পিঠে যে দাগগুলো আছে ঐগুলো কী হে।
–আমার সামনে থেকে সরে যা।
–রাগ করো না টিয়াপাখি, স্যরি।যেমন কষ্ট দিয়েছি তেমন ভালোবাসা দিয়ে সব পূর্ণ করে দিবো।
সকল লজ লজ্জা ভেঙ্গে নিচে গেলাম, দেখলাম সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।আমাকে দেখে ই মিনতি এগিয়ে।
–খাবার খেয়েছিস।
–না, ক্ষুধা লাগছে। খাইয়ে দে না।
মিহিকে সোফায় বসিয়ে মিনতি খাবার নিয়ে আসে। খাবার খাইয়ে দেয়।
রেনু বেগম দুই ছেলের বউকে ডেকেছে। মিহি মিনতি দুজন ই রেনু বেগমের সামনে বসে আছে,
–আম্মু কেনো ডেকেছো।
–আমার দিন শেষ হয়েছে, তোদের কে সব বুঝিয়ে দিতে পারলে ই আমি শান্তিতে মরতে ও পারবো।
–আম্মু এমন করে কেনো বলছো।
–মানুষ কে কদিন বাচবে তার কোনো ঠিক নাই। তাই তো আমার দায়িত্ব শেষ করতে চাচ্ছি।
বলে ই একটা বাক্স বের করলো, দুই ছেলের বউ আর মেয়েকে নিজের যা গহনা ছিলো সব ভাগ করে দিলো।
মিহি বললো,
–মা আমি এগুলো নিতে পারবো না। তোমার গহনা আপনার কাছে ই থাক।
–মিহি একটা কথা ও বলবা না, এগুলো আমার শাশুড়ী আমাকে দিয়েছিলো। আর আমি আমার দুই ছেলের বউ আর মেয়েকে দিয়ে যাচ্ছি। তোমরা তোমাদের ছেলের বউকে বা মেয়েকে দিয়ে বলো আমার কথা। আর আমার সংসারটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখো এতো ই আমার শান্তি।
________________________
দুই মাস পর,
মিহি আজকে খুব খুশি প্রেগ্যান্সি টেষ্ট করেছে, টেষ্ট এর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ভেবেছে অভ্রকে বলবে না। সারপ্রাইজ দিবে পরে।
অভ্র অফিস থেকে এসে মিহিকে খুজতেছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না, মিহিকে খুজে না পেয়ে পাগলের মতো লাগছো। মিনতির রুমে খুজলো, মায়ের রুমে খুজলো, দাদিমার রুমে খুজলো। পুরো বাড়ি খুজে শেষ করলো, এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে মিহিকে হারিয়ে ফেলেছে। কান্না পাচ্ছে খুব। তাও দৌড়ে ছাদে গেলো।
ছাদে গিয়ে দেখলো এককোণে চুপটি করে বসে আছে আর আমের আচার খাচ্ছে।
অভ্র দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো, জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।
–আরে কী হয়েছে।
–তুমি এখানে আর আমি সারা বাড়ি খুজতেছি।
–ছাদে, আচারগুলো রোদে দিলো তো তাই এইখানে ই বসে বসে খাচ্ছি, বেশ ভালো লাগছে।
–আরো ভালো লাগার খবর আছে টিয়াপাখি।
মিহি খুশি হয়ে অভ্রকে জিজ্ঞেস করলো,
–কী..
–সিলেট যাবো।
–কী, সত্যি।
–হুম।তুমি চেয়েছিলে সবার সাথে সিলেট যেতে কিন্তু আমি দেইনি। এখন সবাই বাসায় থাকবে, আমি তোমাকে নিয়ে সিলেট যাবো। এবং কালকে সকালে। তোমার কোনো চাওয়া আমি কখনো অপূর্ণ রাখবো না টিয়াপাখি। আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সব ইচ্ছে পূরণ করতে।
–হইছে, এবার একটু দূরে সরে বসো।
–অনি তুই যেকোনো সময় এন্ট্রি নেওয়া বন্ধ কর।
–এটা আমার ইচ্ছে, তা বউকে পেলে। নিজেও পাগল হইছো সারাবাসার সবাইকে পাগল বানিয়েছো। ডাকছে নিচে যাও এখন।
মিহি, অভ্র দুজনে ই নিচে নেমে এলো,সবাই সোফায় বসে আছে তাই অভ্র সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–আমি মিহিকে নিয়ে কালকে সকালে সিলেট যাচ্ছি।
দাদিমা বললো,
–একা ই যাবে।
–হে।
–একা যাওয়া যাবে না। মিহি কোনো কাজ করতে পারে না। পলা মানে কাজের মেয়েকে নিয়ে যাও।
–হে তা ঠিক বলেছেন, দাদিমা মিহি তো কোনো কাজ ই ভালো করে করতে পারে না। পলাকে নিয়ে গেলে, আমার জন্য ভালো হবে।
–হে, এজন্য ই বললাম।
–তাহলে ঐ কথা থাকলো, যাচ্ছি তাহলে কালকে সকালে।
___________
সকাল ছয়টা,
মিহি খুব এক্সাইটেড, এই প্রথম অভ্রের সাথে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে।
সামনে অভ্র আর কাজের মেয়েটা বসেছে, পিছনে অভ্র মিহি।
মিহি অভ্রের বাম হাতটা জড়িয়ে ধরেছে। অভ্র এ হাত দিয়ে মিহি আঙ্গুলের ফাকে অভ্রের আঙ্গুলগুলো দিয়ে রেখেছি। অভ্র আলতো করে কপালে চুমু খেয়ে নিলো।
পলা মেয়েটা কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। অভ্র পেছন থেকে তা লক্ষ করছে। বেশি দিন হয়নি কাজ করে মেয়েটা তাদের বাসায়। ছোট্ট একটা মেয়ে কী আর করবে তাই অভ্র ওর দিকে মন না দিয়ে মিহিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
———————–
পরের দিন সকালে,
মিহিরা সিলেট পৌঁছেতে প্রায় দশ ঘন্টা মতো সময় লাগে। তাই মিহি এসে ই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অভ্র সকাল সকাল উঠে, ফ্রেশ হয়। মিহিকে ডেকে তোলে।জাফলং এর পাশে একটা হোটেল এ উঠেছে তারা। দুইটা রুম নিয়েছে, একটাতে অভ্র মিহি অন্যটাতে পলা। আর ড্রাইভার গাড়িতে ই থাকে।অনেক বলা শর্তে ও উনি রুম নিতে রাজি হননি।
–রেডি হওয়া শেষ, চলেন।
মিহির দিকে কতোক্ষন তাকিয়ে থেকে অভ্র কানের কাছে ঠোট ছুয়ো বললো,
–টিয়াপাখি, এভাবে কেনো সাজুগুজু করো নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়।
মিহি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো, চলুন।
অভ্র মিহি দুজন ই গাড়িতে গিয়ে বসে, হোটেল থেকে কিছুটা দূরে জাফলং। গাড়ি যত এগোচ্ছে মিহির ততভালো লাগছে। রাস্তা পাশ দিয়ে কতো সুন্দর সবুজের সমারোহ। ঐযে দূরে দেখা যাচ্ছি পাহাড়।পাহাড় দেখতে তো বেশ ভালো লাগে।
–টিয়াপাখি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে আবার আমাকে ভুলে যেয়ো না।
মিহি কোনো কথা বলে না শুধু দেখতে থাকে।
জাফলং এসে গাড়ি পার্ক করে, গাড়ি থেকে নামে অভ্র মিহি।
মিহি দেখতে পায়, কিছুটা দূরে নীল একটু পানি। খুব বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। নীল পানিটা দেখিয়ে অভ্রকে বলে আমাকে নিয়ে যান, ঐখানে।
অভ্র হাসি মুখে উওর দিলো, চলো।
এমা এটা কী এতোগুলো সিড়ি কেনো নিচে নামার জন্য। গাড়ি থেকে নামার পর তো দেখা গিয়েছিলো একটু সামনে গেলেই বুঝি, পানিগুলোতে পা ভিজিয়ে রাখতে পারবো।
দুজন খুব আনন্দ নিয়ে নিচে নামলো। মিহি পাথরে বসে, দাড়িয়ে, নৌকায় বসে বিভিন্ন এঙ্গেলের পিক তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো, অভ্র শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।এই যে মিহির হাসিটা এটা দেখে মনে শান্তি লাগছে। ইচ্ছে করছে সময়টাকে এখানে থামিয়ে দিতে। এই হাসিটা সব সময় দেখার জন্য। দুঃখগুলোকে কারবদ্ধ করে রাখতে যেনো কখনো সুখটাকে মেরে ফেলতে না পারে।
দুজন ই ক্লান্ত হয়ে যায়। অনেকক্ষন ঘুরেছে ছবি তুলেছে, নৌকায় বসে পানিতে পা ডুবিয়ে রেখেছি। এখন চলে যাওয়ার পালা। কিন্তু এতোগুলো সিঁড়ি দিয়ে উঠবে কী করে।
পলা ও সাথে এসেছে, মিহির প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পলার কাছে দিয়ে রেখেছে।
সিড়িরগুলোর সামনে এসে মিহি দাড়িয়ে পড়ে।
–কী হয়েছে।
–কিছু না, তাহলে চলো।
মিহি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে হাঁপিয়ে গেলো, পরক্ষণেই মনে হলো অভ্রকে শাস্তি দেওয়া যাক।
–এই যে শোনছেন।
–হে বলো,
–আমাকে কোলে নিন। আর কয়েকটা সিড়ি ই আছে উপরে উঠার। এটা আপনার শাস্তি গতবার আমাকে আসতে না দেওয়ার জন্য।
অভ্র হাসি মুখে মিহিকে কোলে নিয়ে নিলো, চারপাশের মানুষজন তাকিয়ে আছে। কিছু ছেলে তো সিটি বাজাতে থাকে।
–এই তুমি এবার থেকে ডায়েট করবা।
উপরে উঠে কোল থেকে নামিয়ে অভ্র এই কথা বললো, মিহি রাগি চোখ দিয়ে তাকাতে ই অভ্র অন্য দিকে তাকিয়ে গেলো।ঘুরাঘুরি শেষ করে রাতে বাসায় ফিরলো। ক্লান্ত শরির নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো মিহি অভ্র দুজন ই।
_________________________
দুদিন পর সব ঘুরা শেষ করে বাসায় ফিরছে মিহি অভ্র। ছয় ঘন্টা যাবৎ গাড়িতে বসে আছে দুজন। হঠাৎ পলা বললো,
–ভাইজান আইসক্রিম কিনে দেন।
মিহি ও বলা শুরু করে , হে যান আমি ও খাবো।
অভ্র কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো,
–ড্রাইভার গাড়ি সাইড করেন তো, আমি না আসা পর্যন্ত গাড়ি থেকে কেউ নামবে না।
এটা বলে ই অভ্র আইসক্রিম আনতে গেলো,
অভ্রর কথা উপেক্ষা করে মিহি ও পিছন পিছন যেতে নিলে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মিহিকে ধাক্কা দেয়।
অভ্র পিছনে তাকিয়ে দেখে মিহির রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পড়ে আছে
চলবে,
তোমাতে আসক্ত পর্ব-৩০+৩১
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩০
মিহি রুম থেকে বের হয়ে কাউকে ই পায়নি। চারদিকে খুজলো কিন্তু কোনো কিছু ই খুজে পেলো না। মিহিকে এভাবে চলে আসতে দেখে অভ্র ও পিছনে পিছন আসতে থাকে।
–কী খুজতেছো।
–তা আপনার জানার প্রয়োজন না বলে ই আমি মনে করি।
–মিহি তোমার সাথে আমার কথা আছে প্লিজ একটু শোনো।
–না, আমি আপনার মুখ থেকে কোনো কথা ই শোনতে চাইনা।
বলে ই মিহি নিচে চলে গেলো। কিন্তু নিচে কাউকে ই পেলো না। সবাই সবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে তারউপর এতো টেনশন নিতে পারছে না মিহি। অভ্রের পাশে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো মিহি। কান্না করতে করতে মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে দুচোখ যদি কথা বলতে পারতো তাহলে হয়তো চিৎকার করে বলতো এবার আমাদের একটু বিশ্রাম দেও।
বেলকনিতে গিয়ে বাহিরে তাকাতে ই দেখলো আকাশে অনেক মেঘ জমেছে। আজকে আর চাঁদ নাই। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঠিক মিহির মনের আকাশের মতো
মিহির মনের আকাশে ও বড্ড মেঘ জমেছে, সুযোগ পেলে ই বৃষ্টি নামে।
হঠাৎ ডাকার শব্দ পায় মিহি, বাহির থেকে অভ্র ডাকছে। অভ্রের ডাকে সাড়া না দিয়ে বাহিরের দিকে আবার দৃষ্টি দিলো। দুমিনিট পর দরজায় কেউ ভেঙ্গে ফেলছে এমন মনে হতে ই মিহি দৌড়ে গিয় দরজা খুলে দেয়।
–রুমে আসো।
–আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না।
–মিহি আমার কথা শোনো। তারপর তুমি যে শাস্তি দিবা আমি মাথা পেতে নিবো।
–ঠিক তো। সব শাস্তি মাথা পেতে নিবেন
–হে,
–তাহলে বলেন।
–ঠান্ডা মাথায় শোনো।
অভ্র প্রথম থেকে মীরার সম্পর্কে সব বললো। সব কিছু শোনে মিহি অভ্রের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না। অভ্র আবার বললো,
–মিহি যা হয়েছে আমি ভুলে গিয়েছি। আমি তোমাতে এতোটা আসক্ত হবো তা ভাবতে পারিনি।তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি তোমাতে আসক্ত মিহি অন্য কারো কাছে নাহ্।
মিহি ও অভ্রকে অনেক ভালোবাসে। অতীত সম্পর্কে ছেড়ে যদি চলে যায় তাহলে মিহির ভালোবাসাটা টা ভালোবাসা ছিলো না ক্ষনিকের মোহ ছিলো। আর অতীত ভুলে যখন মিহিকে অভ্র মন থেকে মেনে নিয়েছে তাই মিহি ও অভ্রের অতীত ভুলে যেতে চায়।
মিহি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
–মীরা আমাকে বলেছে, আপনার সাথে বেশি মেলামেশা করলে আপনাকে মেরে ফেলবে।
–মীরার এসব কথায় তুমি ভয় পাচ্ছো।
–এমন কথা বললে কী ভয় পাবো না নাকি।
—এসব নিয়ে ভয় পেতে হবে না, অনেক হয়েছে এখন ঘুমাবে চলো।
অভ্র মিহিকে বেডে বসিয়ে, খাবার খাইয়ে দিলো, ওষুধ খাওয়ানো শেষে হলে মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মিহি ঘুৃমের রাজ্যে ডুবে যায়।
——————————
সকালে মিহির ঘুম ভাঙ্গতে ই চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে অভ্র মিহির দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে আছে। হালকা বাতাসে অবাধ্য চুলগুলো মুখে এসে পড়লে অভ্র চুলগুলো সরিয়ে আবার আগের মতো দৃষ্টি স্থাপন করে। অভ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহি কাথা টেনে মুখ ডেকে নেয়। অভ্র সাথে সাথে কাঁথা সরিয়ে নেয়। মিহি আবার কাঁথা টেনে মুখে দেয়। অভ্র এবার মিহির উপর থেকে কাঁথা নিচে ফেলে দেয়। হালকা শীত অনুভব হতে ই মিহি অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।
–আবার ঘুমাবে নাকি।দশটা বাজে।
–কিহ্
মিহি বিছানা ছেড়ে দৌড়ে ওয়াশরুম চলে যায়। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে অভ্রকে বলে,
–আপনি আমাকে আগে ডাকেননি কেনো।
–আমি যে আমার ঘুমন্ত টিয়াপখিটাকে মন ভরে দেখছিলাম। ঐ মায়ায় পরিপূর্ণ মুখখানা দেখে আর ডাকতে ইচ্ছে করেনি।
–এখন নিচে গেলে সবাই কী ভাববে। আর আপনি অফিসে যাননি কেনো।
–সবাই জানে আমার টিয়াপাখি অসুস্থ তাই কেউ কিছু মনে করবে না। আর অফিসে যাবো তোমাকে নিয়ে।
–আমাকে কেনো নিয়ে যাবেন।
–কখনো যেনো কোনো সন্দেহ না করতে পারো তাই সাথে সাথে রাখবো। সন্দেহ জিনিসটা খুব খারাপ। যে সম্পর্কে সন্দেহ থাকে তা ক্ষনস্থায়ী হয়। সন্দেহ মনের অসুখ যা কোনো ওষুধ ধারা ই সুস্থ করা সম্ভব না।
মিহি মেকি হাসি দিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তখন ই অভ্র পেছন থেকে ডাকলো,
–টিয়াপাখি
মিহি ঘুরে তাকাতে ই একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললো,
–এইখানে শাড়ি জুয়েলারি আছে, দাদিমার কাছ থেকে পড়ে আসো।
মিহি ব্যাগটা দাদিমার রুমে নিয়ে রেখে দিয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে যেতে ই অপু বললো,
–কী ভাবি এখন কেমন আছেন।
–জ্বি দুলাভাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
–আমি দেবর আপনার, দুলাভাই নাহ্।
–তাহলে আমি ও শালিকা আপনার ভাবি না।
–সে কী আমার ভাইয়ের বউকে ভাবি ডাকবো না নাকি।
–তাহলে আমার বোনের বিয়ে করা জামাইকে দুলাভাই ডাকবো না নাকি।
রেনু বেগম খাবার নিয়ে এসেছে, মিহির মুখে খাবার পুরে দিয়ে রেনু বেগম কথাটা বললো,
–তোরা কী বাচ্চা নাকি এভাবে ঝগড়া করছিস যে।
অভ্র নিচে নামতে নামতে বললো,
–আমাকে কবে খাইয়ে দিয়েছো তা ভুলে গিয়েছি, ছেলের বউকে তো দেখছি প্রতি বার ই মুখল তুলে খাইয়ে দিচ্ছো।
–অপু ওরা আমার ছেলের বউ না। মিহি, মিনতি আমার মেয়ে।আর মিহি এ বাসার সবার ছোট , মিহি আদর করবো না তো তোদের মতো দামড়া(ষাড়) গুলোকে আদর করবো নাকি।
মিহি হাসতে হাসতে শেষ। মিহির হাসি দেখে অপু রেগে বলে,
–ছোট বলে তো মিহিকে, বিয়ে তো হয়েছি ই সামনের বছর ই দেখবা কোলে বাচ্চা নিয়ে বসে আছে।
রেনু রাগান্বিত কন্ঠ বললো,
–থাপ্পড় খাবি অপু। মিহি এখন ও খুব ছোট যতই অভ্র বড় হতে পারে, মিহি এখন ও ছোট। আগে মিনতি আর তোর ঘর আলো করে আমার নাতিনাতনি আসবে তারপর মিহি, অভ্রের ঘরে।
মিহি বাচ্চার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে দাদিমার রুমে শাড়ি পড়তে চলে গেলো।
দাদিমা শাড়ি পড়ানো শেষে বললো,
–মান অভিমান মিটেছে।
মিহি হেসে মাথা নাড়ালো।
–তোরা দুজন কী নিয়ে যে এতো অভিমান করিস তা ই বুঝতে পারি না।
–আমি করি নাকি আপনার নাতি করে।
–হে এখন করলে ও আমার দোষ হবে, না করলে ও আমার দোষ হবে। নারির ক্ষমতায়ন তো।
অভ্রকে দেখে মিহি রাগ দেখিয়ে বললো,
–আমি যেখানে যাই সেখানে ই আপনার যেতে হবে।
–তোমাকে ছাড়া একমুহূর্ত ও আমার চলে না টিয়াপাখি।
–কী হচ্ছে কী। গুরুজনদের সম্মান দিতে শিখেন।
অভ্র হাসি দিয়ে বললো,
–দাদিমা তুমি কিছু শুনেছো।
–নাহ্ তো।
–হে যেমন নাতি, তেমন দাদিমা।
–হে এখন চলো অনেক আর সময় নষ্ট না করা ই শ্রেয়।
মিহি অভ্র দুজনে ই রেডি হয়ে নিচে নেমে বের হয়ে দরজার সামনে যেতে ই দেখলো মীরা।
মীরাকে দেখে মিহি চমকে যায়। আবার কী অশান্তিময় বার্তা নিয়ে এসেছো…..
চলবে,
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩১
মীরাকে দেখেও অভ্র না দেখার ভাব করে অভ্র মিহিকে নিয়ে চলে গেলো। মীরা অভ্রের এমন কান্ড দেখে অবাক হচ্ছে। যে অভ্র মীরাকে এতো ভালোবাসতো সে কিনা বউ পেয়ে মীরাকে ভুলে গিয়েছে। ভুলে যাওয়াটা ও স্বাভাবিক কারণ মীরা যে ব্যবহারটা অভ্রের সাথে করেছে এতো মীরার উপর ঘৃণ্য দৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মীরা তো এভাবে হার মেনে নেবে না। অভ্রের পিছন পিছন দৌড়ে গেলো মীরা কিন্তু এর আগে ই মিহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে অভ্র। মীরার ডাকে অনেকবার কিন্তু এই ডাকে সারা দেয়নি অভ্র।
মীরা গাড়ি নিয়ে অভ্রের গাড়িকে ফলো করে।
অভ্র মিহির এক হাত ধরে আছে অন্য হাতে ড্রাইভ করছে। মিহি অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
–এভাবে তাকিয়ে থেকো না টিয়াপাখি, গাড়ি এক্সিডেন্ট করবে।
–এমন কথা কখনো বলতে হয় না। আমি আপনার দিকে তাকাবো না আর কখনো। আমি যখন মরে যাবো তখন বুঝবেন আমি না থাকলে কতোটা কষ্ট হয়।
–মিহি…
জোড়ে চিৎকার করে ডাকটা দিয়ে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দেয়। অভ্র মিহির হাত ধরে কাছে টেনে আনে। কপালে চুমু খেয়ে মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে।
–আমি দুষ্টুমি করছিলাম টিয়াপাখি। তুমি এটা কী বললে, তোমার কিছু হলে কী আমি বাচবো নাকি। আল্লাহ এর কাছে একটা ই চাওয়া মৃত্যু আসলে যেনো দুজনের একসাথে হয়।
–ছাড়ুন, লেইট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে এভাবে গাড়ি থামিয়ে রেখেছে অন্য গাড়ি যেতে ও প্রবলেম হচ্ছে।
অভ্র মিহিকে ছেড়ে আবার ড্রাইভ করতে শুরু করে। পাশ থেকে গাড়ির গ্লাস দিয়ে সব দেখে মীরা। ভেতরের রাগটা আরো বেড়ে উঠে।সহ্য হচ্ছে না মিহিকে অভ্রের পাশে দেখে। হয়তো অভ্রকে কষ্ট দিয়ে মীরা ভুল করেছে তাই বলে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত এতোটা কষ্ট পেয়ে করতে হয়ে তা জানা ছিলো না।
অভ্র মিহি মধ্যে পুরোপুরি ডুবে আছে হাজার চাইলে মীরা এখন অভ্রকে নিজের দিকে ফিরাতে পারবে না। তাই মিহিকে ই নিজের বশে আনতে হবে।
মীরা অভ্রের অফিসে ডুকলো।
অভ্র মিহিকে কেবিনে বসিয়ে একটা মিটিংয়ে এ চলে যায়। মিহি কেবিনে বসে বসে ফোনে ভিডিও দেখছে হঠাৎ মীরা প্রবেশ করে,
–কারো কেবিনে ডুকতে হলে অনুমতি নিয়ে ডুকতে হয় সামান্য ভদ্রতাটুকু ও দেখি আপনার মধ্যে নাই।
–এই মেয়ে তুই কী আমাকে ভদ্রতা শিখাবি, তোর মতো অনেক মেয়ে আমি শায়েস্তা করেছি আর এই পুচকি মেয়ে আমাকে ভদ্রতার কথা বলছে।
–জানেন তো শিক্ষা নিতে বা দিতে বড় ছোট নাই।
–তোর কাছ থেকে শিক্ষা নিতে আসেনি তুই আর কী দেখলে অভ্রের জীবন থেকে সরে যাবি বল।
— এটা অভ্রকে ই জিজ্ঞেস করুন।
–অভ্রকে কী জিজ্ঞেস করবো, তোর মতো মেয়েরা এগুলো ই করে বড়লোক ছেলেদের বিয়ে করে টাকার লোভে। লোভি চরিত্রহীন মেয়ে তুই।
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি মীরা গালে থাপ্পড় মারে।
–অনেক বলেছিস এখন যা। আমি বা আমার হাসবেন্ড এর আশেপাশে তোকে দেখলে খুন করবো।
থাপ্পড় এর ধাক্কা সামলাতে বা পেরে মীরা নিচে পড়ে যায়। এর মধ্যে অভ্র ভিতরে ডুকে, সাথে একজন মধ্যে বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলা।অভ্র মিহির কাছে যায়। হাতটা ধরে বলে,
–স্যরি মিহি আমার জন্য তোমার আজকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। উনারা মীরার মা বাবা । আমি কল দিয়ে আসতে বলেছি। আশা করবো আপনারা আমার কথা এবং আপনার মেয়ের কাজ কর্ম দেখে সব বুঝতে পেড়েছেন। মেয়েকে নিয়ে যান, আর যেনো আমাকে বা আমার স্ত্রীকে বিরক্ত না করে তা একটু খেয়াল রাখবেন।
–আমাদের মেয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি বাবা, আমরা বুঝতে পারিনি মীরা এমন কান্ড করবে।
–ঠিক আছে আপনারা এখন আসতে পারেন।
যাওয়ার আগে বলে যাই এই মীরাকে থাপ্পড় মারা আর মা বাবা ডেকে অপমান করা সব কিছু জন্য তোমার বউকে কষ্ট পেতে হবে। আমি এখন যতটুকু কষ্ট পেলাম তার ডাবল আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবো, প্রতিজ্ঞা করে এখান থেকে বের হলাম।
কথাটা বলে ই মীরা বের হয়ে গেলো। ওরা বের হতে ই অভ্র মিহিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
–ভয় পেয়ো না টিয়াপাখি সব ঠিক হয়ে যাবে।সব কিছুর পর এটা ই বলবো আই লাভ ইউ টিয়াপাখি। ভালোবাসি অনেক বেশি ভালোবাসি। যতটা ভালোবাসলে তোমাতে আসক্ত হওয়া যায় ঠিক ততটাই ভালোবাসি।
__________________
মিহি অভ্র বাসায় ডুকার পরপর ই মিনতি আর অনি এসে মিহিকে নিয়ে যায়। অপু এসে অভ্রকে নিয়ে যায়।
–কী হয়েছি বলবি তো।
–তোরা দুইজন কী অপরাধ করেছিস কে জানে। দাদিমা আবার বলেছে তোদের আলাদা করতে।
কথাটা শুনে মিহি গিয়ে বেডে বসে পরে। এই বুড়ি কী শান্তিতে থাকতে দিবে না নাকি।আবার কী ভুল করলাম তা ই তো বুঝলাম না।
–বিরবির করে কী বলছিস। যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
–যাবো না। ভালো লাগছে না।
–যে হবে ভাবি এটা দাদিমার আদেশ।
বলে ই অনি টেনে ওয়াশেরুমে দিয়ে আসে। মিহি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে। দেখে বেডের উপর সাজিয়ে রাখা অনেকগুলো শাড়ি আর জুয়েলারি। মিহি মিনতির দিকে তাকিয়ে বলে
–কীরে আমার কী আবার বিয়ে নাকি।
–হলে হতে ও পারে এতো কথা কেনো বলিস।
–কী পড়বো।
–শাড়ি।
–আমি শাড়ি পড়তে পারি না।
কথাটা বলার সাথে সাথে মিনতি বললো, শাড়ির বাকি জিনিসগুলো পড়েনে। আমি পড়ে দিচ্ছে।
মিনতি আমাকে রেড কালারের শাড়ি পড়িয়ে দিলো,শাড়িটা অবশ্যই বাঙ্গালী স্টাইলে পড়িয়েছে। হাতে কাঁচের চুড়ি। মাথা খোপা করা, খোপায় সাদা রঙের ফুল। পায়ে আলতা, হাতে ও আলতা দিয়ে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে।
কেমন যেনো একটা ফিল হচ্ছে। এমন করে কেনো সাজিয়ে দিচ্ছে বুঝলাম না।
–আচ্ছা অনি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান আছে নাকি।
–ভাবি তুমি কী অন্য কারো বিয়েতে এভাবে শাড়ি পড়ে যাবে।
–তাহলে কী আমার বিয়ে।
–তা জানি না।
–নিশ্চয় জানো কিন্তু আমাকে বলবা না।
–আমাদের দাদিমা বলেছে তোমাকে সাজিয়ে দিতে তাই দিচ্ছি, আর বাকি টুকু জানি না।
মিহি হাতে ফোন নিলো, অভ্রকে কল দিবে। এমন টাইমে মিনতি টান দিয়ে ফোন নিয়ে নিলো,
–আরে সমস্যা কী কল দিতে দিবি তো।
–দাদিমার নিষেধ আছে, কারো সাথে কথা বলা যাবে না।
হইছে বোন আর একটু শান্তিতে কাজ করতে দে তারপর তুই যেখানে ইচ্ছে যা। যাকে খুশি কল দে তা জানি।
রাত প্রায় দশটার মতো বাজে হঠাৎ মিনতি আর অনি আমাকে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটা দেখে আমার চোখ বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এতো সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখছি খুব সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিলো।
–পনেরো হাজার টাকা না দিলে রুমে ডুকতে পারবেন না অভ্র ভাইয়া।
হঠাৎ এমন কথায় পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখি মিনতি অপু অনি সবাই রুমে ডুকে দরজা লক করে দিয়ে। অভ্রকে এই কথা বলছে।
–এই আপনি একদম টাকা দিবেন না। মনে হয় শপিং এর টাকা কম পড়ছি ওদের তাই এমন করছে।
–মিহি চুপ কর। টাকা না দিলে আজকে অভ্র ভাইয়া রুমে ডুকতে পারবে না।
অভ্র দরজার ঐপাশ থেকে বললো,
–দরজা না খুললে টাকা দিবো কিভাবে।
ওরা দরজা খুলে অভ্র কয়েকটা টাকাট দূরে ফেলে দেয়। সবাই যখন টাকা নিতে যায় অভ্র রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভ্রের এমন কান্ড দেখে আমি হাসতেছি।
–ভাইয়া চিটিং করেছেন এইখানে মাত্র পাঁচহাজার।
–তোরা এই টাকা না নিলে দরজার নিচে দিয়ে আমাকে দিয়ে চলে যা।
এটা বলার সাথে সাথে সবাই চলে যায় টাকা নিয়ে। আমি দাড়িয়ে হাসতেছি, অভ্র পাঞ্জাবি পায়জামা পড়া।
–এভাবে তাকিয়ো না টিয়াপাখি হার্টবিট বেড়ে যায়।
বলে ই আমার দিকে এগোতে থাকে…..
চলবে,
[ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]
তোমাতে আসক্ত পর্ব-২৮+২৯
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৮
সবার সামনে দুজন বসে আছে, মিহি বড্ড ভয় পাচ্ছে। মিহি অভ্রর হাত চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। রুমে বিস্তার নিরবতা। সবাই শুধু দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, খুব গম্ভীর করে রেখেছে সবার মুখ। হঠাৎ দাদিমা অট্টহাসি দেয়। এতে মিহি চমকে উঠে উপরের দিকে তাকায়।
–এতো ভয় পেতে হবে না নাতবৌ। আমি তো চেয়েছিলাম তুই নিজের মুখে এসে আমাকে বল, এই বাসা ছেড়ে তুই কখনো বাহিরে পা বাড়াবি না। আমার নাতিকে ভালোবেসে আগলিয়ে রাখবি। তুই মুখে না বললে ও উওর গুলো আমরা পেয়ে গিয়েছি। এখন থেকে তুই আর অভ্র এক সাথে ই থাকবি।
এই রাতের বেলা আমরা সবাই জেগে আছি কেন জানিস, কারণ আজ আমার জন্মদিন। সবাই ঘুম থেকে উঠিয়ে কেক কাটালো। এর তোদের দুই চোরকে ধরতে পারলাম।
উফফ মিহি কী ভয়টা ই না পেয়েছিস, যা ই হক এসব লুকোচুরি থেকে মুক্তি পেলাম।
অভ্র মুখে হাসি রেখে বললো,
–আমার কিন্তু দাদিমা এভাবে লুকোচুরি করতে ভালো ই লাগছিলো, মিহি শুধু ভয় পেতো।
অভ্ররে এমন কথা শোনে মিহি অভ্ররে দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো,
এভাবে তাকাতে দেখে অভ্র মিহিকে বললো,
–চলো, রুমে যাই।
অভ্র রুমে যেতে ই মিহি দরজা লক করে দেয়।
–আরে এতো তাড়া কিসের বউ, আমি তো চলে যাচ্ছি না। সারা রাত ই পড়েছে আছে ভালোবাসার জন্য।
এটা বলার সাথে সাথে মিহি ধাক্কা দিয়ে অভ্রকে বেডের উপর ফেলে দেয়। অভ্রের উপরে বসে, অভ্রে মুখ চেপে ধরে বলে,
–এভাবে লুকোচুরি করতে তোর ভালো লাগতো। আর এতো ভেটকি (হাসি) দিয়েছিলি কেনো আমি যখন ভয় পাচ্ছিলাম।খুব ভালো লাগছিলো তোর।
–কী খাও, তুমি বলো তো এতো ওজন কিভাবে বানালে। মনে হচ্ছে আমার পেটের উপর দশ মন একটা আটার বস্তা পড়েছে। মিহিকে ইচ্ছে করে অভ্র রাগাচ্ছে।
মিহি রাগান্বিত হয়ে অভ্রের উপর কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো।
মিহিকে নিচে ফেলে দিয়ে অভ্র উপরে চড়ে বসলো,
–খুব রাগ হচ্ছে টিয়া পাখি। রাগলে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে এমনি তো চোখ সরাতে পারিনা।
বলে ই অভ্র ওষ্ঠদ্বয় আবদ্ধ করে নিলো।
দুইমিনিট পর
হঠাৎ অভ্রের ফোন বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিতে ই দেখে মীরা কল দিয়েছে। মীরার কল দেখে অভ্র ফোন অফ করে রাখে।
–এতো রাতে কে কল দিয়েছে।
মিহি প্রশ্ন করতে ই অভ্র উওর দিলো,
–ফোন না এলার্ম বাজলো।
মিহি আর কিছু বললো না, ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।
___________________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে, কিচেনে গেলো মিহি। কিচেনে যেতে ই দেখলো মিনতি দাড়িয়ে দাড়িয়ে রেনু বেগমের সাথে গল্পজুড়ে দিয়েছে। মিহিকে দেখে ই বললো,
–শপিং এ নিয়ে যাবি কবে।
–কিসের শপিং।
–আমি যে ঐ দিন জেগে জেগে তোকে আর অভ্র ভাইকে পাহাড়া দিয়েছি।
–ওহ্ কিছু সময়ের জন্য তোকে দারোয়ানকে বানিয়ে দেখলাম, কেমন লাগে।
–ঐসব কিছু জানি না। আমাকে শপিং এ নিয়ে যাবি মিহি।
— লজ্জা শরম না থাকলে যা হয় মিনতি। আমি তোর ছোট।
বলে ই রুমে চলে যায়, মিহি। মিনতিকে এরকম ধোকা আরো অনেকবার দিয়েছে মিহি। মিনতি অনেক শপিং এর পাগল তাই যা বলা হয় তাই ই করে।
মিহি রুমে গিয়ে ই এক গ্লাস পানি নিয়ে অভ্রের উপরে ঢেলে দেয়।
মুখের উপর পানি পড়তে ই অভ্র দ্রুত উঠে বসে। মিহি অভ্রের দিকে তাকিয়ে জোরে হাসতেছে।
–কী করলে এটা??
–আমি জেগে আছি, আপনি ঘুমাবেন কেনো।
–তুমি জেগে থাকলে আমি ঘুমাতে পারবো না নাকি??
–নাহ্।
–এ কেমন অদ্ভুত নিয়ম।
–অদ্ভুত ই।
মিহির সাথে আর কোনো কথা না বলে অভ্র ওয়াশরুম চলে গেলো।
_________________
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে অভ্র, মিহি ও রেডি হয়ে অভ্রের সামনে দাড়ালো,মিহি এভাবে রেডি হয়ে আসায় অভ্র অবাক হেয় জিজ্ঞেস করলো
–কোথায় যাবে তুমি?
–আপনার সাথে অফিসে যাবো।
–অফিসে কোনো কাজ নাই তোমার।
–আমি যাবো বলছি তো যাবো ই।
–বায়না করো না মিহি, আজকে অফিসে যেতে লেইট হবে। অফিসের বাহিরে একটা মিটিং আছে। মিটিংটা অনেক ইম্পরট্যান্ট।
–আমি যদি না যেতে পারি তাহলে আপনি ও যেতে পারবে না।
–আমার মিষ্টি বউকে বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাবো, এখন বাসায় থাকো।
এটা বলার সাথে সাথে মিহি বেলকনিতে চলে যায়। অভ্র টাইটা বেধে হাতে ওয়াচটা পড়ে নিলো।
মিহি রাগ করেছে, অভ্র বেলকনিতে গিয়ে দেখে মিহি দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখন ই দুচোখে বর্ষা নামবে।
অভ্র কোনো কথা না বলে মিহিকে কোলে তুলে নিলো। মিহি ও কোনো কথা বলছে না। রাগ করে ঠিক করেছে অভ্রের সাথে কথা বলবে না। অভ্র বিনাবাক্যে নিচের দিকে যাচ্ছে। নিচে সবাই বসা এভাবে অভ্রের কোলে দেখলে মানসম্মান নিয়ে আর রুমে যেতে পারবে না। তাই মিহি বললো,
–নামান আমাকে।
–রাগ না ভাঙ্গলে নামাবো না। মাফ করে দেও আমাকে
–আপনার মতো নির্লজ্জ আমি হতে পারবো না। নামন আমাকে।
–তুমি মাফ না করলে আমি তোমাকে এভাবে নিচে নিয়ে যাবো ই এখন তুমি যতই নির্লজ্জ বলো।
মিহি কোনো উপায় না পেয়ে বললো,
–হে মাফ করেছি এখন নামান।
অভ্র হাসি মুখে নামিয়ে দিলো, মিহি আঙুল এর ফাকে অভ্রের আঙ্গুলগুলো রেখে আলতো করে হাতে একটা চুমু খেলো।
দুজন হাটতে হাটতে গাড়িতে চলে গেলো। বারাবরের মতো এক হাতে ড্রাইভ করছে আর অন্য হাতে মিহির হাত ধরে আছে।
কিছুক্ষন পর একটা বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে এ গাড়ি থামালো অভ্র। মূলত আজকের মিটিংটা এখানে ই।
মিটিং শেষ করার সাথে সাথে একটা ছেলে এসে অভ্রকে বললো,
—আপনার সাথে কথা ছিলো।
অভ্র দেখে নিলো ছেলেটাকে চিনে নাকি।
কিন্তু দেখলো ভালো করে চিনতে পারলো না।তাও বললো,
–জ্বি বলুন।
–আমি সোজা কথা বলতে ভালোবাসি। আপনার পাশে যে মেয়েটা বসা উনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে আপনি চাইলে আপনার বাসায় আমি বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারি।
কথাটা শোনের অভ্রের বেশ রাগ হচ্ছে। কত বার বলেছে বাহিরে বের হলে শাড়ি পড়ে বের হতে কিন্তু এই মেয়ে তো কথা শোনে না পড়েছে কী, লং গোল জামা। দেখতে তো বাচ্চাদের মতো লাগতেছে। তাও রাগ কন্ট্রোল করে বললো,
–পাশে বসা মেয়েটা আমার স্ত্রী।
ছেলেটা কথাটা শোনে কিছু একটা ভেবে স্যরি বলে চলে গেলো। অভ্র ও মিহিকে নিয়ে গাড়িতে বসলো উদ্দেশ্য অফিসে যাবে।
মীরার নম্বর থেকে কল আসছে তাই ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। সিম বন্ধ ও করতে পারছে না কারন সব জায়গায় এই নম্বর দেওয়া। অভ্রের টেনশনে হচ্ছে খুব মিহি জানতে পারলে কী হবে। কেবিনে মাথা নিচু করে এসব ভাবছে অভ্র। মিহি ওয়াশরুম গিয়েছে।
–অভ্র
হঠাৎ ডাকটা শোনে সামনের দিকে তাকাতে ই দেখলো মীরা।
মীরাকে দেখে অভ্র কী বলবে বুঝতেছেনা। বাসা থেকে উঠে দাড়ায়। অভ্র উঠে দাড়াতে ই মীরা দ্রুত গিয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।
ঠিক তখন ই মিহি কেবিনে প্রবেশ করে।
চলবে,
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৯
মিহি অভ্রকে এমন অবস্থা দেখে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। অভ্র মীরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত এসে মিহিকে ধরে। মিহিকে এভাবে অজ্ঞান হারাতে দেখে অভ্র ভয় পেয়ে যায়।কোলে তিলে নেয়, ড্রাইভারকে ডাকে। অভ্র মিহিকে নিয়ে গাড়ির পেছনে বসে। বোতল থেকে পানি নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দেয়।মিহিকে অনেক ডাকে। কিন্তু কোনো কিছুতে ই কোনো কাজ হয়নি।
অভ্রের গাড়ির পেছনে মীরা ও গাড়ি নিয়ে আসছে। অভ্রকে মেয়েটার সাথে দেখে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে মীরা। মীরা এইটুকু বেশ ভালো ই বুঝেছে মেয়েটা অভ্রের বউ। বউ হক আর যা ই হক অভ্রকে মীরা ভালোবাসে। রাগের বশে যা ই বলুক দিন শেষে মীরার সব ভালোবাসা অভ্রের জন্য ই।
একটা হসপিটালের সামনে অভ্র গাড়ি থামাতে বললো, মিহিকে নিয়ে সোজা ইমারজেন্সি কক্ষে চলে গেলো। অভ্র এতোটা উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারদের ডাকতে যায়, সব নার্সরা চলে আসে। সাথে ডাক্তার ও আসে।
মীরা পেছনে দাড়িয়ে আছে। মিহির জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু কোনো কথা বলছে না।হঠাৎ মেন্টালি শকড থেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো।
— মিস্টার অভ্র আপনি একটু আমার কেবিনে আসুন।
অভ্র মিহির হাত ছেড়ে ডক্টরের সাথে যেতে লাগলো। কিন্তু মীরা যে এই কক্ষে ছিলো তা দেখেনি। অভ্রের চার পাশে কী হচ্ছে তা মাথায় ডুকছে না। শুধু একটা ই টেনশন মিহি কী ভুল বুঝলো।
অভ্র চলে যাওয়ার সাথে সাথে মীরা মিহির পাশে গিয়ে বসে। অভ্রের দিকে হাত বাড়ালে হাত ভেঙ্গে দিবো।অভ্র আমার ছিলো, আমার আছে আর আমার ই থাকবে। আর যদি অভ্রের সাথে বেশি মেলামেশা করার চেষ্টা করো তাহলে তোমাকে কিছু করবো না সোজা অভ্রকে মেরে ফেলবো। আমি অভ্রকে পাবো না তো কেউ পাবে না। তুমি বলতে পারোএটা কেমন ভালোবাসা। আমার ভালোবাসা এমন ই। তোমাদের বাড়িতে আমার লোক আছে যে তোমাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখবে। তাই অভ্রর থেকে দূরে থাকবা। ফোন থেকে অভ্র আর মীরার কয়েকটা পিক দেখলো। যেগুলোতে পাশাপাশি বসা ছিলো অভ্র মীরা।
মিহি কোনো কথা বলছে না। শুধু চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে। ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য মেয়েকে কথা বলতে দেখলে ই সহ্য হয় না। আর মিহি পাশাপাশি বাসা ছবি দেখেছে। তারউপর একটু আগে এভাবে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দেখছে। খুব বিশ্বাস করতো অভ্রকে। সব বিশ্বাস ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।৫৬
মীরা মিহির কাছ থেকে চলে আসার কিছুক্ষনের মধ্যে ই অভ্র ওষুধ নিয়ে প্রবেশ করলো, অভ্রকে দেখে মিহির চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। এখন যদি মরে যেতো পারতো তাহলে সব থেকে খুশি হতো মিহি। কষ্ট মাত্রাটা এতো ই বেশি যে নিজের মৃত্যু কামানা করতে ও দুবার ভাবছে না মিহি।
–টিয়াপাখি কষ্ট হচ্ছে খুব।
মিহি কান্না বন্ধ করে অন্য দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, আমার সামনে এতো নাটক না করলে ও পারেন। আমি তো সব জেনে ই গিয়েছি।
মিহি অভ্রকে মুখফুটে কিছু বললো না। টিয়াপাখি অন্যদিন ডাকটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতো। আর আজকে ঘৃনা হচ্ছে।
অভ্র মিহিকে এতো ভাবতে দেখে কোলে তোলে নিলো। কোলে নেওয়ার সাথে সাথে মিহি বললো,
–আমি হেটে যেতে পারবো।
–তুমি অসুস্থ
–আমি অসুস্থ তা আমি বুঝে নিবো। আপনাকে বুঝতে হবে না।
–ভুল বুঝো না টিয়াপাখি। বিশ্বাস রাখো আমার উপর।
–আমাকে নামান, আমি হেটে যাবো।
–একদম চুপ, আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবো।
মিহি আর কিছু বলো না জানে এখন হাজার বললে ও অভ্র কথা শোনবে না।
গাড়িতে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে মিহি। চারদিকে এতো সুন্দর তাও মিহির অসহ্য লাগছে। এই সময়টা খুব ভালো কাটতো যদি ঐ মেয়েটার সাথে দেখা না হতো।
অভ্র কয়েকবার মিহিকে ডাকছে কিন্তু মিহি কোনো সাড়া দেয়নি। শুধু একবার বলেছে আমাকে একা থাকতে দেন। অভ্র ও চাচ্ছে মিহিকে মীরার ব্যাপারে সব বলতে , অনেক সময় লাগবে তাই বাসায় গিয়ে সব বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু মিহি তো কোনো কথা ই বলতে চাচ্ছে না। মিহি যতটা অভ্রকে ভালোবাসে তার থেকে বেশি অভ্র মিহিকে ভালোবাসে। কখনো চায়নি কষ্ট দিতে, কিন্তু আজকে মীরার জন্য মিহি কষ্ট পেলো। মীরা অতীত কিন্তু মিহি বর্তমান। বর্তমানকে ই আকড়ে ধরে অভ্র ভবিষ্যত পাড়ি দিতে চায়।
__________________
বিছানায় শুয়ে আছে, বাসায় আসার পর অবশ্য সবাই এসে দেখে গেছে। কারো কোনো কথা ই মিহির কানে যাচ্ছে না। শুধু বার বার মেয়েটার কথা কানে বাজতেছে। অভ্রর সাথে মেলামেশা করলে অভ্রকে মেরে ফেলবে। অভ্রের সাথে মেয়েটার সম্পর্ক ছিলো যার প্রমাণ ঐ ছবিগুলো। তাহলে কী এই জন্য ই বিয়েটা ছয়মাসের জন্য। হে হতে পারে বিয়েটা ছয় মাসের। অভ্র তো বলে ই দিয়েছিলো ছয় মাস পর ডিভোর্স। এই কয়েকদিনে মিহি অভ্রের প্রতি যে অনুভূতিগুলো মনের কোনে উকি দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিহি দোষ।
মিহি যেমন অভ্রকে ভালোবাসে হয়তো ঐ মেয়েটা ও অভ্রকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসে।
হঠাৎ অভ্র রুমে ডুকলো, এতোক্ষণ অভ্র বাহিরে ছিলো।
–টিয়াপাখি খাবারটা খেয়ে নেও।
–খাবো না।
–না খেলে আবার শরীর খারাপ করবে।
–আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলে ও চলবে।
— আমার বউ আমি ভাববো না তো কে ভাববে।
–ঐটা আপনার টেনশন করতে হবে না। আপনার ভাবনার মানুষ তো আছে ই তাকে নিয়ে আপনি ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন।
–প্লিজ টিয়াপাখি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে সব বলতে চাই ঐ সুযোগটা আমাকে দেও।
–আর কী সুযোগ দিবো আমি সব বুঝে ফেলেছি।৩৬
এর মধ্যে ই দাদিমা রুমে ডুকে যায়। তাই দুজন ই কথা বলা অফ করে দিয়ে সামনে তাকায়,
–তোরা কী আবার ঝগড়া শুরু করেছিস। তাহলে কিন্তু তোদের আবার আলাদা করে দিবো।
–দাদিমা আমি আপনার সাথে ই ঘুমাবো। এতোদিন আপনি আলাদা করে দিয়েছিলেন এখন আমি নিজে আলাদা হতে চাচ্ছি।
দাদিমা হেসে উওর দিলল স্বামীর সাথে অভিমান করে বুঝি এই কথা। স্বামী স্ত্রী মধ্যে মান অভিমান, রাগারাগি যা ই বলিস তা রাতের ঘুমের আগে শেষ করে ফেলতে হয়। তাই তোদেরকে সময় দিচ্ছি তোরা দুজন ঠিক হয়ে নেয়।
দাদিমা রুম থেকে চলে যায়।
–অভ্র মিহির কাছে গিয়ে মুখ চেপে ধরে।
–এই কী বলিস তুই কান খুলে শোনে রাখ, আমি তোকে ভালোবাসি। আর আমাকে তুই ভুল বুঝবি না একদম।
মিহি অভ্রকে সরিয়ে বললো,
–নিজের চোখে দেখার পর ও বিশ্বাস করতে নিষেধ করছে।
–সব সময় নিজের চোখের দেখা ঠিক হয়না মিহি।
–প্রতিদিন অফিসে মনে হয় এগুলো ই করেন তাই তো।
এবার মিহিকে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারে অভ্র।
থাপ্পড় মেরে জড়িয়ে ধরে অভ্র। মিহির চোখের পানি মুছে দিয়ে। কপালে চুমু খায়।
–প্লিজ টিয়াপাখি ভুল বুঝো না। অনেক ভালোবাসি তোমাকো এটা বিশ্বাস করো। আমি চাইনা তুমি কষ্ট পাও।
মিহি সামনে তাকাতে ই দেখে দরজায় কারো ছায়া দেখে যাচ্ছে।
তাহলে কী সত্যি ই ঐ মেয়েটার লোক এই বাড়িতে আছে যে আমাকে চোখে চোখে রাখে। মিহি অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে নেমে দরজার দিকে যাচ্ছে, দেখতে হবে মানুষটা কে। কার ছায়া দেখতে পেলাম….
চলবে,
[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধৈর্য সহকারে পড়ুন]