বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1198



ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪৫

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল থেকেই সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। প্রাপ্তির বাপের বাড়ি থেকে সবাই সকালেই চলে এসেছে।আবিদ চৌধুরীর কড়া অর্ডার ছিলো প্রাপ্তির আর সুমির বাপের বাড়ির লোক যেনো সকালেই আসে।অরণী প্রাপ্তির রুমে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, কেমন আছিস আপু?

প্রাপ্তি -ভালো। নীরা কই?
নীরা দরজায় দাঁড়িয়ে এইতো আমি।নিচে সবাই কথা বলছে তাই তোমার কাছে আসতে দেরি হয়ে গেছে। আয়ান ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এসে অরণী আর নীরাকে দেখে, বাহ্ আমার শালিকে তো অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।অবশ্য নীরাও কম যায় না।

নীরা- আপুর থেকে তো আর বেশি না।

আয়ান মুচকি হেঁসে তা ঠিক বলেছো আমার বউয়ের থেকে বেশি না।আমার বউ সারা দুনিয়াতে এই একটাই যা শুধু এই আয়ানের।প্রাপ্তি একটা শার্ট আয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে,চুপচাপ নিচে যাও। সবার সাথে শুধু বউ বউ,তোমার লজ্জা লাগেনা সারাক্ষণ বউ বউ করো যে?

আয়ান -আমার বউ আমি যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে লজ্জা কিসের?

প্রাপ্তি-(চোখ রাঙিয়ে মুখটা গম্ভীর করে)যেতে বলছি তোমাকে!

আয়ান-যাচ্ছি তো কি রাগ দেখায়রে বাবা।
আয়ান নিছে এসে প্রাপ্তির বাবা মায়ের সাথে দেখা করে বসতেই আসিফ এসে, আয়ান একটু সাইডে আসো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।আয়ান আসিফের কথা শুনে আসিফের দিকে মুচকি হেঁসে তাকিয়ে চলুন ভাইয়া ছাদে যাই ওইখানে বসে কথা বলা যাবে।

আসিফ -ঠিক আছে চলো।
আয়ান আর আসিফ ছাদে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আসিফ নিরবতা ভেঙে আয়ান আমি এইখানে তোমাকে আলাদা ভাবে কেন ডেকে এনেছি আশা করি তুমি তা ভালো করেই জানো।

আয়ান -ভাইয়া আমি জানি আপনি জয়ের কথা বলছেন।

আসিফ -আমি জানি জয় তোমার কাছেই আছে। ওর বাবা মায়ের কাছে ওকে ফিরিয়ে দিলে মনে হয় সবার জন্য ভালো হবে ।

আয়ান – ভাইয়া আপনি এইখানে কার হয়ে কথা বলতে আসছেন?
শ্বশুর বাড়ি পক্ষ হয়ে নাকি আপনার বোনের হয়ে?

আসিফ -কি বলতে ছাইছো তুমি?
তুমি আমার বোন কে বিয়ে করেছো বলে এই না তুমিই শুধু আমরা বোন কে ভালোবাসো।আমার বোনেরা আমরা জীবনের একটা অংশ। আর সেটা নিয়ে তুমি কথা বলতে পারোনা।

আয়ান – ভাইয়া! আপনি আমাকে ভুল বুজবেন না।আমি শুধু এইটুকুই বলবো আপনাকে, প্রাপ্তির সাথে যারা অন্যায় করেছে আমি কাউকেই ছাড়বো না।যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন ওর গায়ে আমি কোনো আঁচ লাগতে দিবো না।

আসিফ -তারমানে জয় ও এর সাথে আছে।ঠিক আছে আয়ান তোমার যা ইচ্ছা করো যেনো তোমার কোনো সমস্যা না হয়।

আয়ান – ভাইয়া আপনি চিন্তা করবেন না।জয়কে পুলিশের হেপাজত করেই রেখেছি যতদিন আসল কাল পিটকে ধরতে না পারছে ততদিন কাউকে জানানো হবেনা জয় কোথায় আছে।
দুজনে কথা শেষ করে নিচে নেমে এলো। সন্ধ্যায় পার্টি শুরু হবে। সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত। অভ্র তার বাবা মাকে নিয়ে চলে আসছে । ঝিনুক তাদেরকে এনে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।প্রাপ্তি আসতেই ঝিনুক অভ্রর মাকে পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রাপ্তি তাদেরকে সালাম করে আপনারা বসুন।
ঝিনুক -প্রাপ্তি! রেশী কোথায়? ওকে ডেকে আনো।।

প্রাপ্তি -আপু রেশীকে অরণী আর নীরা রেডি করছে। অভ্র ভাইয়া আপনি কেমন আছেন? অনেকে দিন পরে দেখা।

অভ্র -সেই জন্যই অবাক হয়ে তোমাকে দেখছি। আয়ান কোথায়? ওকে তো দেখছি না।

আকাশ আর আয়ান কথা বলতে বলতে এসে অভ্রকে দেখে,
আয়ান -তোর আজকেও লেট! আজ তোর এনগেজমেন্ট আর তোরই দেখা নেই।

অভ্র- পার্টি কিন্তু শুধু তোদের জন্যই হচ্ছে।শুধু শুধু আমার দোষ দিস কেনো?আকাশ ভাইয়া আপনি বলেন এইটা কি ঠিক?
আবিদ চৌধুরী নিজের রুম থেকে বের হয়ে এসে অভ্রর বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে।অভ্রর বাবা অভ্রকে দেখিয়ে, বেয়াই সাহেব এই হচ্ছে আমার ছেলে অভ্র।
অভ্র সালাম দিয়ে আংকেল কেমন আছেন?
আবিদ চৌধুরী অভ্রর দিকে তাকিয়ে ভালো । কিন্তু আয়ান ও তো তোমার বন্ধু। এখন দেখছি ঝিনুকেরও দেবর।যাক ভালোই হয়েছে।
প্রাপ্তি সবার জন্য নাশতা নিয়ে এসেছে।আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তিকে দেখে তোমরা এখনো রেডি হওনি? একটু পর তো সব গেস্ট এসে যাবে।

ঝিনুক -প্রাপ্তি যাও তুমি রেডি হয়ে নাও। আব্বু সত্যিই বলছেন। এইতো আমরাও যাচ্ছি।আয়ান! তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আয়ান রেডি হয়ে নিচে চলে এসেছে। প্রাপ্তি নিজেই রেডি হচ্ছে।সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলেও শাড়ির কুচিটা ঠিক মতো হচ্ছেনা।বার বার চেষ্টা করছে সে।।
আয়ানের হঠাৎই মনে হলো তার ফোনটা উপরে রুমে ফেলে রেখে এসেছে। ফোন আনতে রুমে গিয়ে প্রাপ্তির শাড়ির কুচি নিয়ে ঝামেলা করছে দেখে নিজেই হাটু ভেঙে বসে কুচি ঠিক করে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, মনে মনে ভাবছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোমাকে।তোমার এই চোখ দুটোতে কোনো এক অজানা মায়া আছে। যে মায়ায় এই আয়ান বার বার তোমার প্রেমে পড়ে।ইচ্ছে করে হাজার বছর তোমাকে সামনে বসিয়ে রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে, মনে হচ্ছে কিছু একটা ভাবছ।

আয়ান -হুম ভাবছি তো।ভাবছি আমার বউটা এতো সুন্দর কেনো?
যার দিকে তাকালে আমি পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যাই। ইচ্ছে করে সারাক্ষণ তাকে কাছে পেতে।

প্রাপ্তি -হুম মাথায় আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে।তোমাকে দেখছি ডাক্তার এইবার দেখাতেই হবে।

আয়ান-বুজেছি ভালো লাগছেনা তোমার! যখন আমি থাকবোনা তখন বুজবে ঠেলা।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি আয়ানের ঠোঁটে হাত দিয়ে, আর কখনো এইরকম কথা বলোনা।তুমি না থাকলে তোমার প্রাপ্তিই যে থাকবে না।
সুমি দরজায় এসে দাঁড়িয়ে, দুজনের ভালোবাসা শেষ হলে নিচে চলেন বাবা ডাকছে।
সুমিকে দেখে প্রাপ্তি সরে গিয়ে, চলো বাবা ডাকছে।

প্রাপ্তি আর আয়ান নিচে নামতেই আবিদ চৌধুরী একগাল হাঁসি নিয়ে তাদেরকে দেখছে।পাশে দাঁড়িয়ে আয়েশা বেগম ও চোখ দুটো ছলছল নিয়ে তাকিয়ে আছে।

আবিদ চৌধুরী – আয়েশা! আজ আমার আনন্দের সিমা নেই।আমার ছেলের সাথে বাড়ির যোগ্য বউই দাঁড়িয়ে আছে।আজ আমি সবার সামনে গর্ব করে বলবো প্রাপ্তি আমার ঘরের লক্ষ্মী।
প্রাপ্তি আর আয়ান সবাইকে সালাম করলো। আবিদ চৌধুরীকে সালাম করতেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোদের পরিবার থেকে আলাদা করে।ক্ষমা করে দিস তোর এই বাবাকে।

আয়ান- আব্বু আমি জানি তুমি আমাদের কতটা ভালোবাসো।আজকের এই দিনে আমরা কেউই মন খারাপ করতে চাইনা।

আকাশ -আব্বু এককাজ করলে কেমন হয় আগে রেশীর আর অভ্রর এনগেজডটা করে পেলি।

আবিদ চৌধুরী -ভালো বলেছিস।কিন্তু রেশীকে কই তাকে তো দেখছিনা।।
অভ্র এদিক সেদিক তাকিয়ে সত্যিই তো রেশী কোথায় ওকে দেখছি না কেনো?(ঝিনুকে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে,) ভাবী ও কোথায়?

ঝিনুক – সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো।
অভ্র ঝিনুকের কথা শুনে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অরণী রেশীকে নিয়ে আসছে।অভ্র মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে, অসাধারণ ।।

ঝিনুক -কিছু বললে?
অভ্র থতমত খেয়ে, কই কিছু বলিনি তো।
আবিদ চৌধুরী -আকাশ! রেশী যখন এসেই গেছে এনগেজডটা করে ফেল।আমি জামিলকে একটা ফোন করে আসছি।ওর ফ্যামিলি নিয়ে তো এখনো আসলোনা।
ঝিনুক অভ্রকে এনে রেশীর পাশে দাঁড় করিয়ে, অভ্রর হাতে একটা আংটি দিয়ে, অভ্র! রেশীকে এইটা পরিয়ে দাও।
আয়ান -আপু তুই তো এই বাড়ির লোক হয়ে ছেলে পক্ষ নিয়ে কাজ করছিস।
ঝিনুক -চুপ কর আগে দেবর তারপর তোরা।অভ্র কথা না বাড়িয়ে আংটি পরিয়ে দাও।অভ্র রেশীকে আংটি পরিয়ে দিতেই আয়ান ও রেশীর হাতে একটা আংটি দিয়ে এইটা অভ্রকে পরিয়ে দে।
সবকিছু ভালো ভাবেই চলছিলো। জামিল সাহেব দরজা এসে দাড়াতেই আবিদ চৌধুরী এগিয়ে এসে কোলাকুলি করে তুই বিদেশ গিয়ে তো আমাদের ভুলেই গেছিস।তোর ছেলে কোথায় ও আসেনি?

জামিল -এসেছে! গাড়ি পার্কিং করে আসছে।
আবিদ চৌধুরী -আচ্ছা চল তোকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দি । অবশ্য তুই তো কম বেশী সবাইকেই চিনিস। আমাদের পরিবারের নতুন সদস্যর সাথে আগে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।প্রাপ্তি! আয়ান এইদিকে আসো।
(তারা কাছে আসতেই)ও আমার বন্ধু জামিল।জামিল! আমার ছোটো ছেলে আয়ান আর ছেলের বউ প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি জামিল সাহেবকে সালাম দিতেই,
জামিল -তোমাকে কোথাও যেন দেখেছি কিন্তু মনে করতে পারছিনা।(এমন সময় জামিল সাহেবের ছেলে আসতেই) ওইতো, আবিদ আমার ছেলে চলে এসেছে।
পিছিন ফিরে তাকিয়ে দেখে, প্রাপ্তি নিজের অজান্তেই আস্তে করে বলে উঠলো সায়মন!
প্রাপ্তির আস্তে কথাটাও আয়ানের কানে পৌঁছাতেই প্রাপ্তির দিকে তাকালো।সায়মন ও প্রাপ্তিকে দেখে
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি আস্তে আস্তে এক পা দুই পা করে পিছাতে লাগলো।আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তিকে বুজার চেষ্টা করছে। প্রাপ্তি আয়ানের দিকে খেয়েল না করে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে গেল।

আবিদ চৌধুরী -আয়ান! প্রাপ্তি এই ভাবে চলে গেল কেনো?
আয়ান কথা গুরিয়ে আব্বু ও মনে হয় রুমে কিছু রেখে আসছে ওইটা আনার জন্য গেছে। জামিল সাহেব খুব গর্ব করে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
আয়ান অরণীর দিকে তাকিয়ে দেখে সুমি সহ অন্য গেস্টদের সাথে কথা বলছে।অরণীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে, অরণী ওইদিকে তাকাও কিছু দেখতে পাও কিনা দেখো তো?

অরণী -মুচকি হেঁসে ভাইয়া তুমিও না! কথাটা বলে তাকাতেই চোখ বড়সড় করে সায়মন! ও এইখানে কি করছে? আপু কোথায়।
অরণীর কথা শুনে আয়ান এইবার পুরোপুরি ভাবে শিওর হলো এইটাই সে সায়মন।।
ভাইয়া! আপু কোথায়?

আয়ান -অরণী চুপ করো। তোমার আপু উপরে চলে গেছে।অরণী প্লিজ তুমি এমন ভাবে থাকো যেন কেউ কিছু না বুজতে পারে।
সায়মন প্রাপ্তিকে উপরে চলে যেতে দেখে বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছে।জামিল সাহেব ছেলের মুখে বিষন্নতার চাপ দেখে কি হয়েছে পার্টিতে এসেছিস এনজয় কর।এইভাবে ডাস্টবিনের ময়লার মতো মুখ করে রেখছিস কেনো?
সায়মন বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আব্বু যে মেয়েটা এইখান থেকে দৌড়ে উপরে গেলো মেয়েটা এই বাড়ির কে?
জামিল – আবিদের ছোটো ছেলের বউ। পার্টিতো ওদের জন্যই দেওয়া হয়েছে।কেন? তুই মেয়েকে চিনিস?
সায়মন কিছু না বলে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে উপরে উঠে গেলো।
প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে নিজের রুমে এসে খাটের উপর চোখ বন্ধ করে বসে আছে । তার অতীত গুলোকে যতই সে ভুলার চেষ্টা করছে ততই তার সামনে এসে থমকে দাঁড়াচ্ছে।কেনো আমার সাথেই শুধু এইরকম হয়।নাহ্ আমি আমার অতীত মনে করতে চাইনা। আমি শুধু আমার আয়ানকেই বুজি। আমি আর কিছু মাথায় আনতে চাইনা।কথা গুলো ভাবছে আর অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
সায়মন প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,সুন্দরী তুমিকি আমাকে ভাবছো।কথাটা শুনে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে তুই এইখানে?।
সায়মন -তোমাকে এতো ভালোবাসা দিয়েছি যে আজও আমায় মনে রাখছো?কিন্তু মনে তোমার এতো রাগ আমার জন্য যে তুই বলে ডাকছো?
আচ্ছা! আয়ান কি জানে তোমার সাথে আমার ভালোবাসার কথা?কতোটা ভালোবাসা দিয়েছি তোমাকে ওকে বলেছো?নাকি ওই ছেলেকে নিজের এই রুপ দেখিয়ে সব ভুলিয়ে রেখেছো?সত্যি এইটা মানতে হবে তুমি এক অপরুপ সুন্দরী। যে কেউই তোমার ভালোবাসায় ডুবে থাকতে ইচ্ছে করবে।সায়মনের কথা গুলো আর সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে প্লিজ তুই চুপ কর। আমার আর সহ্য হচ্ছেনা।আমার আয়ান আমাকে ভালোবাসে।আমি ওকে ঠকায়নি।আমি সত্যি ওকে ঠকায়নি। কথা গুলো বলতে বলতে হাঁটু ভেঙে নিচে বসে পড়লো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪৪

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_সকালে সবাই বসে নাশতা করছে।আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তি আর আয়ানকে না দেখে কি ব্যাপার সুমি আয়ান এখনো উপরের থেকে আসেনি?
সুমি -না বাবা আপনারা নাশতা করুণ আমি ডেকে আনছি।

আবিদ চৌধুরী -তোমার যেতে হবে না ওদের সময় হলে ওরাই নিছে নেমে আসবে।আকাশ! পার্টির কথা কি ভাবলে?পার্টিতে কেউ জেনো বাদ না পড়ে।প্রাপ্তিদের বাড়ির নাম্বার আছে তোমার কাছে?

আকাশ -আছে! কথা বলবে?

আবিদ চৌধুরী -তুমি ফোন করে বলো বিকেলে আমি প্রাপ্তি আর আয়ানকে নিয়ে ওদের বাড়ি যাবো।

আকাশ -আচ্ছা ঠিক আছে।আব্বু পার্টির তারিখটা দুই দিন পর দিই।

আবিদ চৌধুরী -এতো তাড়াতাড়ি দিয়ে সবকিছু সামলাতে পারবিতো?(রেশীর দিকে নজর পড়তেই) কি ব্যাপার রেশী তুমি খাচ্ছ না কেনো?এই বাড়ির কাউকে তোমার ভালো লাগেনি?
রেশী লজ্জা ভাব নিয়ে, খাচ্ছি তো আংকেল।আর এই বাড়ির সবাইকে আমার খুব ভালো লেগেছে।সবাই আমাকে কতো ভালোবাসে। কথা গুলো বলতেই রেশীর চোখের কোনে পানি আসতেই রেশী চুপ হয়ে গেলো।
আয়েশা বেগম রেশীর কাঁধে হাতরেখে মন খারাপ করো না।আমরা সবাই তোমার আপনজন।

আবিদ চৌধুরী -আকাশ কতো দিন হলো অফিসে যাচ্ছিনা। আজ না হয় গিয়ে একবার আমি ঘুরে আসি।

আকাশ-আব্বু তুমি এই শরীর নিয়ে অফিসে যাবে?আরো কয়েকদিন যাক তারপর না হয় যেও।

আবিদ চৌধুরী -কিচ্ছু হবেনা।তোরা এতো টেনশন করছিস কেনো।(টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে উঠে যেতে যেতে)আমি গিয়ে রেডি হয়ে আসি।

আয়ান ফোনের শব্দ শুনে ফোনটা বালিশের পাশ থেকে খুঁজে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে অভ্রর ফোন।আয়ান ফোন রিসিভ করে চুপ করে আছে,আর অভ্র বলেই যাচ্ছে,আয়ান! তুই এখনো অফিসে আসিস নাই কেনো।কয়টা বাজে দেখেছিস।আজ না মিটিং আছে।তুই নিজেই মিটিং ডেকে এখন তুই নেই।আয়ান টাইমের কথা মনে পড়তেই ফোনটা কান থেকে সামনে এনে টাইম দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেছে।১০.৪০ কখন রেডি হবো আর কখন অফিসে যাবো।

আয়ান -অভ্র! আমি একঘণ্টার ভিতরেই আসছি।ফোনটা রেখে রাতের কথা মনে পড়তেই প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু দিয়ে প্রাপ্তিকে কাছ থেকে সরিয়ে উঠতেই প্রাপ্তি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।আয়ানেরও ইচ্ছে করছেনা যেতে। কিন্তু সে আজ যেতেই হবে অফিসে কাল সে নিজেই আজকের জন্য মিটিং ডেকেছে।আয়ান মনে মনে ভাবছে যদি সে জানতো প্রাপ্তি তার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে আপন করে নিবে তাহলে মিটিং তো দূরের কথা অফিসের নামও মাথায় আনতো না।প্রাপ্তিকে আস্তে করে সরিয়ে আয়ান উঠে ওয়াশ রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।

সুমি, ঝিনুক, রেশী, মিনু ড্রইরুমে সোফায় বসে গল্প করছে । আয়ানকে তাড়াহুড়ো করে নিছে নামতে দেখে, সুমি উঠে একটু এগিয়ে গিয়ে, আয়ান তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছো নাশতা করবে না?

আয়ান -সুইট হার্ট হাতে একদম সময় নেই।বাহিরে পরে খেয়ে নিবো।

সুমি -প্রাপ্তি কোথায়? ও জানেনা সকালে তোমার অফিস আছে তারপর ও তোমাকে ঘুম থেকে ডাকিনি কেনো? তাহলে তো আর দেরি হতো না।
আয়ান -আয়ান মুচকি হেঁসে ও নিজেই ঘুম থেকে এখনো উঠেনি আমাকে কি ডাকবে?
কথা গুলো বলতে বলতে আয়ান বেরিয়ে গেলো। আয়ানের কথা শুনে সুমি হিসাব মিলাতে পারছেনা।প্রাপ্তি তো এতো লেট করে ঘুম থেকে উঠেনা তাহলে আজ কি হলো?প্রাপ্তি আসুক ওকে পরে জিজ্ঞাস করে নিবো।

আয়ান অফিসে গিয়ে প্রাপ্তির ফোনে কল দিচ্ছে।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আয়ানের নাম্বার। অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে আয়ানকে না দেখে মুচকি হেঁসে ফোন রিসিভ করলো।

আয়ান -আমার পাগলিটা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি?
প্রাপ্তি-কোথায় থেকে ফোন দিয়েছো? কাছে আসো তোমাকে দেখবো।
আয়ান -এখন তো আসতে পারবো না জান। আমি অফিস শেষ করেই চলে আসবো।

প্রাপ্তি-(অবাক হয়ে)তুমি অফিসে? আমাকে ডাকোনি কেনো?

আয়ান মিটমিট করে হাঁসছে প্রাপ্তির কথা শুনে কারণ প্রাপ্তির মুখে এইরকম কথা সে আগে কখনোই শুনেনি।আয়ানের মাথায় প্রাপ্তিকে খেপানোর জন্য বুদ্ধি এলো,ডাকলে কি আবার ভালোবাসা দিতে।তাহলে আমি তো মিস করে ফেলেছি আমার বউয়ের সকালের ভালোবাসাটা।

প্রাপ্তি- ধ্যাত তোমার সাথে কোনো কথা নেই।

আয়ান-এই শুনো শুনো আসলে তোমাকে ডাকতে ইচ্ছে করছিলো না।তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তোমাকে এমদম পরীর মতো লাগছিলো।মনে হয়েছে কোনো একটা পরী ভুলে আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমার এই পরীকে কতোটা ভালোবাসি আমার পরী কি জানে?
প্রাপ্তির আয়ানের কথা গুলো শুনতে ভালোই লাগছে।তাই আয়ানকে বাধা দিচ্ছেনা চুপচাপ শুনেই যাচ্ছে।

মিনু এসে প্রাপ্তিকে এখনো খাটে বসে থাকতে দেখে, প্রাপ্তি তুমি এখনো ফ্রেশ হওনি। আর আব্বু ফোন করে বলেছে তোমাকে নিয়ে শপিং এ যেতে।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দিয়ে, আপু এখন কিসের শপিং করবো?

মিনু -তোমাদের জন্য আব্বু এতো আয়োজন করে পার্টি দিচ্ছে আর তুমি বলছো কিসের শপিং? এখন উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিছে আসো বাকি কথা ওইখানেই হবে।

মিনু সুমি আর প্রাপ্তি শপিং করতে গেলো।আয়ানকে আবিদ চৌধুরী ফোন দিয়ে আসতে বলেছে তাদের সাথে শপিং এ যাওয়ার জন্য।আয়ান মিটিং শেষে তাদের সাথে যোগ দিলো শপিং করতে।শপিং শেষ করে বাহিরে খাওয়া খেয়েই সবাই বাড়িতে আসলো।সুমি বাড়িতে এসে সবাইকে সবকিছু দেখাচ্ছে।প্রাপ্তি আর আয়ান উপরে উঠতে যাবে এমন সময় আবিদ চৌধুরী এসে, আয়ান! বিকেলে তুকে আর প্রাপ্তিকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাবো।আমরা গিয়ে তাদের ইনভাইট করে আসি।কথাটা শুনে প্রাপ্তি খুশি হয়ে বাবা সত্যিই আপনি আমাদের বাড়িতে যাবেন?

আবিদ চৌধুরী -আমার মেয়ের খুশির জন্য এইটুকু করতেই পারি।
নিজের বাবার মুখে কথা গুলো শুনতে আয়ানের অনেক ভালো লাগছে।বাবার প্রতি ভালোবাসা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আয়ানের।আবিদ চৌধুরী নিজের ভুল গুলো এইভাবে বুজতে পারবে আয়ান কখনোই ভাবিনি।প্রাপ্তির মতো মেয়েরা এই সমাজের বোঝা নয় বরং ভালোবাসা একটা অংশ। আমার আব্বু এইটা বুজতে পেরেছে এতেই আমিই খুশি।
আয়ান আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো,সাথে প্রাপ্তিও।

আয়ান রুমে এসে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে মেয়েদের সাথে শপিং এ যাওয়া মানে নিজের কাঁধে নিজেই বিপদ ডেকে আনা।শুধু আব্বু ফোন করেছে বলেই এতো গুলো প্যারা সহ্য করতে হয়েছে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি রাগি ভাব নিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, আমি প্যারা?
আয়ান -এই কথা তোমাকে বলিনি।আমার লক্ষ্মী কি কখনো প্যারা হতে পারে? ওর জন্য তো পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি।প্রাপ্তি কাছে এসে বসতে বসতে, একটু আগে যে বললে?

আচ্ছা তুমিই বলো শপিং টা ওরা গিয়ে করলেই তো হয়।তুমি আর আমি আলাদা ভাবে যেতাম। কিছুটা আলাদা ভাবে সময় কাটাতাম।কথাটা বলে প্রাপ্তিকে কাছে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছে আয়ান।
প্রাপ্তিও বাধা না দিয়ে আয়ানের বুকে মাথা রেখে, বাবা এতোটা পাল্টাবে আমি ভাবতেই পারিনি।তোমাকে আমি বলেছিলাম না ওনি হয়তো গম্ভীর থাকে, তবে মনটা অনেক ভালো।
সুমি এসে রুমে ঢুকে দেখে আয়ানের বুকে প্রাপ্তি মাথা দিয়ে শুয়ে শুয়ে কথা বলছে,ভুল সময় এসে পড়লাম নাকি?
প্রাপ্তি উঠে বসে, ভাবী তুমি?

সুমি-হুম আমি! ভাবলাম তোর সাথে বসে আড্ডা দিবো।কিন্তু এখন দেখছি ভুল সময় এসে গেছি।
আয়ান মুচকি হেঁসে এইখানে ভুলের কি আছে এমনিতেই আমিও উঠে যেতাম।
আব্বু বলছে প্রাপ্তিকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাবে তাই রেডি হতে হবেনা?

সুমি-ওহ।আচ্ছা রেশীর দিয়েটা নিয়ে কি ভেবেছো?

আয়ান -অভ্র সাথে কথা বলে ওর বাবা মাকে বলবো এই বাড়িতে আসতে।প্রাপ্তি এক কাজ করলে কেমন হয়? পার্টির দিন ওর আর অভ্র engaged টা করে পেললে কেমন হয়? সেইদিন বিয়ের ডেট টাও ফাইনাল করা যাবে।

প্রাপ্তি- তাহলে তো ভালোই হবে।কি বলো ভাবী?

সুমি -আমারো তাই মনে হয়।আয়ান তুমি বাবার সাথে একবার কথা বলে নিও।

নিলিমা বেগম আর নীরা খুব ব্যস্ত, আবিদ চৌধুরী আসছে।সাথে মেয়ে আর জামাইকে নিয়ে।নানা রকমের খাবার তৈরি করেছে নিলিমা বেগম।আসিফ তাদেরকে বিভিন্ন কাজে হেল্প করছে।
কলিংবেলের শব্দ শুনে আজাদ সাহেব গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আবিদ চৌধুরী আর আজাদ সাহেব কোলাকোলি করে বাসায় ঢুকলেন।পিছন পিছন আয়ান আর প্রাপ্তিও ।নীরা প্রাপ্তিকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেমন আছো আপু?
প্রাপ্তি -আমি ভালো।নীরা! (আবিদ চৌধুরীকে দেখিয়ে)ইনি হচ্ছে আমার আরেকজন বাবা মানে তোমার ভাইয়ার বাবা।

নীরা আবিদ চৌধুরীকে সালাম করে দাঁড়াতেই আবিদ চৌধুরী কোর্টের পকেট থেকে সোনার চেইনের বাক্স বের করে আমি জানি এইবাড়িতে নতুন একজন মেম্বার আছে আর তাকে তো আমাকে কিছুনা কিছু উপহার দেওয়া উচিত। তাই চেইন টা নিয়ে আসতে ভুলিনি।আয়ান নিজের বাবাকে যতো দেখছে তোতোই ভালো লাগছে।সবাই একসাথে আড্ডা দিয়ে রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে বাড়ি ফিরলেন তারা।ফ্রেশ হয়ে এসে ইজিচেয়ারে বসতে বসতে জানো আয়েশা এখন আর নিজেকে একা মনে হয়না। সবাই একসাথে থাকাটা যে অনেক আনন্দের ব্যাপার প্রাপ্তি না থাকলে হয়তো আমি কখনোই বুজতাম না।মেয়েটা বড্ড ভালো।মেয়েটার মাঝে এমন কিছু আছে যেটা সকলের বুজার ক্ষমতা নেই।এমন কি আমারো ছিল না।

আয়েশা বেগম -তুমি যে সবকিছু বুজেছ এটাই অনেক আমাদের কাছে।আমি তো ভেবে ছিলাম আমার ছেলেকে হয়তো আমি আর কাছেই পাবোনা।

_বাবা আসবো! কথাটা শুনেই দুজনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নিহাদ আর রাহাত, সাথে ঝিনুক, মিনু, আর আকাশ।

আবিদ চৌধুরী -কি ব্যাপার জামাইদের এখন আসার সময় হলো আসো ভিতরে আসো।নিহাদ আর রাহাত দুজনকেই সালাম করে,
নিহাদ-বাবা আপনার শরীর এখন কেমন আছে?
আবিদ চৌধুরী -যেই ঘরে প্রাপ্তি আর সুমির মতো বউ থাকে সেই ঘরে শ্বশুরের অসুস্থ থাকতে নেই।মনের জোর দিয়ে হলেও সুস্থ থাকার দরকার।তোহ, তোমরা কখন এলে?

রাহাত -কাজে ছাপে তো সময় পাইনা বাবা।আকাশ ভাইয়া ফোন দিয়ে বলেছে আজকে আসতেই হবে।

রাহাত বাকি গুলো বলার আগেই আকাশ বলতে লাগলো আব্বু তুমি বলো বাড়িতে এতো বড় একটা পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে আর জামাইরা সব কাজ ফাঁকি দিয়ে বসে থাকবে।
আকাশের কথা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো।
আবিদ চৌধুরী -আকাশ সবাইকে ইনভাইট করা শেষ তো? তোকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি আমার অনেক পুরোনো ফ্রেন্ড জামিল আর ওর ছেলে নাকি দেশে আসছে ওদের ইনভাইট করতে ভুলিসনা যেনো।

আকাশ -জামিল আংকেল ওনার ছেলেকে নিয়ে তিন বছর আগে বাহিরে চলে গেছিলোনা? তবে আব্বু জামিল আংকেলের একমাত্র ছেলে।কিন্তু ছেলেটাকে মানুষ বানাতে পারিনি।

আবিদ চৌধুরী -ঠিক বলেছিস। তাহলে কাল থেকে সবাই কাজে লেগে পড়ো।

ঝিনুক- আব্বু প্রাপ্তিদের বাড়িতে আসার পর থেকে তো কিছু খাওনি।এখন খাবেনা?

আবিদ চৌধুরী -ওইটা সম্ভব না।শুধু একটা কথায় বলবো তাদের আপ্যায়নে আমি মুগ্ধ।
একটা পরিবারে শুধু টাকা থাকলেই ভালোবাসা থাকেনা।টাকা দিয়ে ভালোবাসা কিনাও যায়না।ওদের ফ্যামিলিটা না দেখলে আমি বুজতাম না।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪৩

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আবিদ চৌধুরী আয়ানের অফিসে এসে সোজা আয়ানের রুমে চলে গেলেন।নিজের বাবাকে দেখে আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে, আব্বু তুমি!

আবিদ চৌধুরী -হ্যাঁ আমি!নিজেকে কি ভাবিস তুই? অনেক মহান? সবার জন্য তোর অনেক মায়া,অনেক ভালোবাসা।শুধু আমি খারাপ তাইনা?

আয়ান -আব্বু তুমি এইসব কি বলছো আমি কিছুই ভাবছিনা।

আবিদ চৌধুরী -ঠিক আছে তাহলে এইবার চলো! আর কোথায় যাবো বা কি করবো কোনো প্রশ্ন করবেনা।এইবার চলো!

আয়ানও কোনো প্রশ্ন না করে আবিদ চৌধুরীর সাথে আসলো।বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই আয়ানের আর বুজতে বাকি নেই তাকে বাড়িতেই আনা হয়েছে।আবিদ চৌধুরী আয়ানের হাত ধরে টেনে বাড়ির ভেতরে নিচ্ছে।আয়ান চুপচাপ হাঁটছে।মনে হচ্ছে নিজের বাড়িতে নিজেরি লজ্জা লাগছে।ড্রইংরুমে এসে, আয়েশা! আয়েশা! দেখো কাকে নিয়ে আসছি।আয়েশা বেগম আসতেই,তোমার ছেলেকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনতে গেছিলাম। তোমার ছেলে একা তার বাবা মাকে ভালোবাসেনা। তার বাবা ও তাকে ভালোবাসে। (কথা গুলো বলতে বলতে আবিদ চৌধুরীর গলাটা ভারি হয়ে আসছিলো)তার বাবাও তাকে মিস করে।
কথা গুলো বলেই আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আকাশ এসে, আব্বু আমি তাহলে পর হয়ে গেলাম? ঠিক আছে তোমার ছোটো ছেলে এখন এসে গেছে এখন আমাকে আর ভালোবাসবেনা।
আয়ান কে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আজ আমার ঘর পরিপূর্ণ হলো।প্রাপ্তি! এই দিকে আসো।(প্রাপ্তি কাছে যেতেই) আয়ান! সেইদিন এইমেয়েটাকে না ছাড়ার কারণে আমি তোকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলাম আর আজ আমি বলছি তুই এই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিসনা।তোদের কি হয়েছে আমি জানিনা।আমি শুধু এইটুকুই বলবো তোরা দুজনের মধ্যে সেই গুলো মিটিয়ে নিবি।প্রাপ্তি কিছু বলতে যাবে এর আগেই আয়ান প্রাপ্তিকে থামিয়ে আব্বু তুমি যা বলবে আমি তাই মেনে নিবো।

আবিদ চৌধুরী -ঠিক আছে। আমার ছেলে আর বউ ঘরে ফিরে এসেছে সেই খুশিতে বাড়িতে পার্টি দেওয়া হবে। আর কখন পার্টি হবে না হবে সেই গুলো আকাশই ঠিক করবে।

আকাশ -ঠিক আছে আব্বু এখন আর কোনো কথা নয়।তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। আমরা সবাই তো আছিই প্রাপ্তি তুমিও যাও।
আবিদ চৌধুরী নিজের রুমে খাঠের সাথে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে।আয়েশা বেগমও পাশে গিয়ে বসতেই, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে আয়েশা জানো আজ নিজেকে অনেক হালকা লাগছে।মনে হচ্ছে আমার ঘরটা আগের মতো পরিপূর্ণ। তবে আরেকজন আসলে আর কোনো কোথায় নেই আমার সংসার টা ষোলআনাই পূর্ণ।

আয়েশা বেগম -কার কথা বলছো তুমি? কে আসবে?
আবিদ চৌধুরী -আকাশ বিয়ে করেছে অনেক গুলো বছর ফেরিয়ে গেলো।কিন্তু কোনো নাতিনাতনি এই ঘরে আসে নাই। এখন যদি আমার আয়ানের ঘরে ছোট্র আয়ান দুনিয়েতে আসে তাহলে আর কোনো কথায় নেই।
আয়েশা বেগম -কথাটা খারাপ বলোনি।

প্রাপ্তি ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ি ঠিক করছে।আয়ান পিছন থেকে এসে জড়িয়ে প্রাপ্তির কাঁধে নিজের মুখটা গুঁজে দিয়ে, thanks বললে তোমাকে ছোটো করতে চাইনা। কিন্তু তোমার এই ঋণ
আমি কিভাবে শোধ করবো বলোতো?
আমার কাছে তো তোমার কোনো ঋণ নেই উল্টো আমিই সবমসময় তোমার কাছ থেকে নিয়ে এসেছি।তুমি আমাকে যে সম্মান টা দিয়েছো পৃথিবীতে কোনো স্বামী তার ধর্ষিতা স্ত্রীকে এতো সম্মান দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই।তুমি আমাকে শিখিয়েছ কিভাবে এইসমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়।তুমি আমাকে শিখিয়েছ সমাজের সবাই আমার পক্ষ হয়ে কথা বলবেনা।যারা বলবে, যারা আমাকে ভালোবাসবে, তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী গড়ে নিতে।
আয়ান প্রাপ্তির কথা গুলো শুনে প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি -কি দেখছো ওইভাবে তাকিয়ে?

আয়ান -আমার পাগলিটাকে।আমার লক্ষ্মী বউটা কে কতো দিন হলো কাছে পাইনা।আমার অবস্থা এখন কেমন জানো? একটা তৃষ্ণাত্ব কাকা এক ফোটা পানির খোঁজ পেয়েছে ঠিক তোমাকে পেয়ে আমার অবস্থাও সেইরকম।
প্রাপ্তি -কথাটা খুব ভালো হয়েছে কবিদের ধারেকাছে দিয়ে গেছে।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসে খাওয়া খেয়ে রেস্ট নিয়ে তারপর গিয়ে রেশীকে নিয়ে আসো।

আয়ান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে,ও মাই গড! আমি একদম ভুলে গেছিলাম রেশীর কথা।পরে ফ্রেশ হবো আগে রেশীকে গিয়ে নিয়ে আসি।মা ও বলেছে সকালে চলে যাবে, মেয়েটা একা একা জানি কি করছে কি জানে।আয়ানকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে ঝিনুক বললো কিরে, তুইনা রুমে গেলি ফ্রেশ হতে? ফ্রেশ না হয়ে কোথায় যাচ্ছিস?

আয়ান -আপু! আর বলিসনা রেশী বাসায় একা আছে ওকে নিয়ে আসতে হবে।আমার একদম মনে নেই রেশীর কথা।আমি এসে তোদের সাথে কথা বলছি।বলেই আয়ান চলে গেলো।

মিনু রেশীর কথা শুনে, আপু রেশীটা কে? আয়ান কোন রেশীর জন্য এতো তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো?

ঝিনুক মিনুকে ঘাবড়িয়ে দেওয়ার জন্য বললো, আয়ানের ছোটো বোন।আয়ানের খুব আদরের বোন।আয়ান তো তার ছোটো বোনকে চোখে হারায়।

মিনু -আপু কি যা তা বকছিস। বোন মানে?

প্রাপ্তি এসে রান্নাঘরের দিকে যাবে এমন সময়,
মিনু – প্রাপ্তি এই দিকে শুনোতো! রেশী কে?

প্রাপ্তি -আপু একটু ওয়েট করো আসলেই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।
ঘন্টা দুয়েক পর আয়ান রেশীকে নিয়ে আসলো।রেশী লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে সবাইকে সালাম দিলো। আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি একে তো চিনলাম না! প্রাপ্তি রেশীর কাছে এসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে আবিদ চৌধুরীর কাছে নিয়ে বাবা তোমার পারমিশন না নিয়ে তোমার ছেলেকে বলেছি ওকে নিয়ে আসতে। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
তারপর আস্তে আস্তে প্রাপ্তি রেশীর ব্যাপারে সব বললো।আবিদ চৌধুরী সব শুনে আমার কোনো আপত্তি নেই। ও এই বাড়িতেই থাকবে এই পরিবারের একজন হয়ে।আয়েশা বেগম রেশীর কাছে এগিয়ে এসে অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে অভ্রর সাথে ওর বিয়ে এই বাড়িতেই হবে।
সুমি -প্রাপ্তি! তুই গিয়ে আয়ান আর রেশীকে খেতে দে । ওদের লেট দেখে তো সবাই খেয়ে নিয়েছে।রেশী আগে আমার সাথে আসো তোমাকে তোমার থাকার রুমটা দেখিয়ে দিই।
কথাটা শুনে রেশী প্রাপ্তির কানের কাছে এসে, ভাবী তুমি আমার সাথে চলো।
প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে চল।(আয়ানের দিকে তাকিয়ে) এইবার গিয়ে তো ফ্রেশ হয়ে নাও।

প্রাপ্তি রেশীকে নিয়ে তার রুমে গিয়ে, রেশী তুই ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।ভাবী নিছে যাই।কথাটা বলে প্রাপ্তি এগুতেই, রেশী পিছন থেকে,
রেশী-ভাবী!

প্রাপ্তি ভাবী ডাক শুনে পিছনে ফিরে, কিছু বলবি?
রেশী এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, তুমি এতো ভালো কেনো বলো তো? তোমার আমার জন্য কতো চিন্তা।আমার বোন থাকলে আমার জন্য এতো চিন্তা করতো কিনা আমি জানিনা।তুমি যে আমায় বার বার ঋণী করে দিচ্ছো।তোমার এই ঋণ আমি শোধ করবো কি দিয়ে?
প্রাপ্তি রেশীকে ছাড়িয়ে, স্ট্রং হয়ে দাঁড়া। আর শুন তুই আমার কাছে কোনো ঋণী না।ঋণী যদি হয়ে থাকিস সেটা একজনের কাছেই। শুধু তুই না, আমি যে তার কাছে ঋণী।কিন্তু সে কোনো প্রতিদান চায়না।চায় শুধু সবার একটু খানি ভালোবাসা।

রেশী -ভাইয়ার কথা বলছো তাইতো?

প্রাপ্তি-হুম আর কোনো কথা নয়। তাড়াতাড়ি নিছে আয়।আর শুন নিছে গিয়ে এইভাবে চুপচাপ থাকিসনা। কথাটা যেনো মনে থাকে।

রাতে সবাই যখন আড্ডা দিচ্ছে প্রাপ্তি আর আয়ান নিজেদের রুমের বারান্দায় বসে গল্প করছে।
প্রাপ্তি-আচ্ছা দুপুরে বাবাকে সত্যি কথাটা বলতে দিলেনা কেনো?

আয়ান -কোন সত্যি?

প্রাপ্তি -ডিভোর্সের ব্যাপারটা।বাবাকে যে আমি কথাটা মিথ্যা বলেছিলাম সেটা বাবাকে বলে দেওয়া উচিত ছিলনা?

আয়ান প্রাপ্তির কাঁধে হাত দিয়ে মিথ্যা থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তাহলে মিথ্যাই ভালো।
প্রাপ্তি কিছু না বলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।সব কিছু কতো সহজে মেনে নেয়।এইলোকটাকে কোনো মেয়েই ভালো না বেসে থাকতে পারবে না।যতো দেখি ততোই তার মায়ায় আমি নিজেকে হারাই।
আয়ান প্রাপ্তিকে এইভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রাপ্তির চোখের সামনে তুড়ি মেরে কি ব্যাপার! ওই ভাবে তাকিয়ে কি ভাবছো?

প্রাপ্তি-হুম? কই কিছুনা।
আয়ান-মুখ টিপে হাঁসি দিয়ে সত্যিই কিছুনা?
প্রাপ্তি নিছের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।
বাহিরের চাঁদের আলোই প্রাপ্তিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।চাঁদের আলোয় মানুষকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে আয়ানের এইটা জানা ছিল না।প্রাপ্তি কোনো কথা বলছেনা দেখে আয়ান বললো রুমে চলো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
আয়ানেয় কথায় রুমে এসে দাঁড়াতেই আয়ান আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে রেশীকে আনতে যাওয়ার সময় এইটা নিয়েছিলাম।আমার পরীটাকে শাড়িটা পরিয়ে আমি মন ভরে দেখতে চাই।প্রাপ্তি কিছু না বলে শাড়িটা হাতে নিলো। প্রাপ্তি শাড়ি হাতে নিতেই,আমি পরিয়ে দিই?

প্রাপ্তি-তুমি শাড়ি পরাতে পারো?
আয়ান -তেমন ভালো পারিনা।কিন্তু ইচ্ছে করছে তোমাকে নিজের হাতে শাড়ি পরাতে,ইচ্ছে করছে সাজাতে।প্রাপ্তি আবার আয়ানের হাতে শাড়িটা দিয়ে, পরিয়ে দাও।
প্রাপ্তির কথায় শাড়িটা হাতে নিয়ে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে নিলো।আগের শাড়িটা খুলে নতুন শাড়িটা পরাতে লাগলো আয়ান।আয়ানের প্রতিটা ছোঁয়া প্রাপ্তির যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।আয়ান এই প্রথম প্রাপ্তিকে এতোটা কাছ থেকে ছোঁয়ার সাহস পেয়েছে।শাড়িটা পরিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে একদম পরীর মতো লাগছে।ইচ্ছে করছে যুগের পর যুগ তোমাকে সামনে বসিয়ে তাকিয়ে দেখি।
প্রাপ্তি আয়ানকে নিজের আরো কাছে টেনে এনে আজ ভালো করে দেখো কেউ তোমায় বাধা দিবেনা। আয়ান প্রাপ্তিকে কোলে তুলে নিয়ে খাঠের উপর শুয়ে দিয়ে সত্যি কেউ বাধা দিবেনা।আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আয়ান প্রাপ্তির লজ্জার কারণ বুজতে পেরে প্রাপ্তিকে আর কিছু জিজ্ঞাস না করে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।সারারাত দুজোনে ভালোবাসায় বিভোর হয়েছিল।ভোররাতে প্রাপ্তি আয়ানের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লো।আয়ানও আর বাধা দিলোনা।আয়ানও প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪২

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_সবাই আবিদ চৌধুরীর কেবিনের সামনে পায়চারী করছে।আবিদ চৌধুরীকে ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে ডাক্তাররা ভালো করে দেখছেন।আয়েশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে সুমি। আকাশ প্রাপ্তিকে ডেকে বললো,প্রাপ্তি আয়ান কে ফোন করেছো? ওকে ফোন দিয়ে বাবার অবস্থার কথা একবার জানালে ভালো হতো না? বাবার কথা শুনে ঝিনুক আর মিনু আসতেছে আর ও আসতে পারবেনা?

প্রাপ্তি-ভাইয়া আমি ওকে ফোন দিচ্ছি ও ফোনটা ধরতেছে না।।আচ্ছা আবার ট্রায় করে দেখি।

আকাশ আর কিছু না বলে একটু হেঁটে যেতেই ঝিনুক আর মিনু এসে জড়িয়ে ধরে, ভাইয়া আব্বুর কি হয়েছে হঠাৎ করে? আব্বু এখন কোথায়? ঝিনুক কথা গুলো বলে শেষ করতেই প্রাপ্তির দিকে নজর পড়লো।
ঝিনুক -ভাইয়া প্রাপ্তি এইখনে?

আকাশ -প্রাপ্তি আমাদের সাথেই থাকে।
মিনু এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে তোমার সাথে কতো দিন পর দেখা তাও আবার আব্বুর এইরকম একটা সময়ে।আয়ান কোথায়? ওকে দেখছিনা?
ঝিনুক -ভাইয়া আব্বু ওদেরকে মেনে নিয়েছে একটা বার জানালিনা?

আকাশ -এখন এইসব বলার সময় নয়।পরে তোদের সব বলবো।ডাক্তার কেবিন থেকে বের হতেই আকাশ কাছে গিয়ে,আংকেল আব্বুর কি হয়েছে? জ্ঞান ফিরেছে?

ডাক্তার -আকাশ! তোমরা এইখানে আনতে অনেক লেট করে ফেলেছো। তবে এখনো কিছু বলতে পারছিনা।তবে তোমার আব্বু এতো টেনশন কি নিয়ে করেছে?
কথাটা শুনে আকাশ আর কিছু বললো না।
প্রাপ্তির দিকে একবার তাকিয়ে,আংকেল টেনশনের ব্যাপারটা কারো কাছে বলার দরকার নেই।আমি আপনাকে আলাদা ভাবে সব বলবো।

ডাক্তার- ওকে।

ঝিনুক আর মিনু এগিয়ে এসে ভাইয়া ডাক্তার কি বললো?

আকাশ -তেমন কিছু না।তোর বস।

অভ্র আর আয়ান থানা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় আয়ানের ফোনের কথা মনে পড়তে আয়ান ফোন বের করে প্রাপ্তির অনেক গুলা কল দেখে অবাক হয়ে আছে, অভ্র তুই গাড়িতে বস আমি প্রাপ্তিকে কল দিয়ে আসছি।আয়ান একটু সরে গিয়ে প্রাপ্তিকে কল দিতেই সাথে সাথে প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করে কোনো কথা না বাড়িয়ে, কোথায় তুমি?বাবা হসপিটালে আছে তুমি আসবেনা?
(আয়ান কোনো কথা বলছেনা দেখে প্রাপ্তি কাঁদোকাঁদো গলায় আবার বলতে লাগলো)আজ তুমি না আসলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে? আচ্ছা এইসব কিছুর জন্য আমিই দায়ী তাইনা?

আয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে,কেঁদোনা।এটার জন্য তোমাকে দায়ী করছো কেনো? তুমি কেঁদোনা কোন হসপিটাল আছে নাম বলো আমি এখুনি আসছি।প্রাপ্তি হসপিটালের নাম বলতেই আয়ান ফোন রেখে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসতে বসতে, অভ্র চল আমরা হসপিটাল যাবো।
প্রাপ্তি ফোন রাখতেই আকাশ এসে পাশে দাঁড়াতে,ভাইয়া ও আসছে।ভাইয়া এই সব কিছুর আমার জন্য হয়েছে তাইনা? (কান্না জুড়িত কন্ঠে)বাবা ভালো হয়ে যাক আমি সত্যি বলছি আমি এই বাড়ি থেকে নয় দরকার প্রয়োজনে আয়ানের জীবন থেকেও চলে যাবো।আকাশ প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে ধুর পাগলি তুই কাঁদছিস কেনো? তুই তো সবার ভালোর জন্যই সব করেছিস।এতে তোর কোনো দোষ নেই।
সুমির কাঁধে মাথা দিয়ে আয়েশা বেগেম বসে আছে।দূর থেকে আয়ান অভ্রর সাথে কথা বলতে বলতে আসছে দেখে আয়েশা বেগম মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান আসার দিকে।আয়েশা বেগমকে মাথা উঠাতে দেখে মা কি হয়ে বলে তাকাতেই আয়ানকে দেখে সুমি চুপ করে গেলো।
আয়েশা বেগম আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে ভাবছে সত্যিই কি আমার আয়ান আসছে? দুইটা বছর আমি আমার আয়ানকে দেখিনা।এইতো দুই বছর নয় শত যুগ পার হয়ে গেছে আমি আমার ছেলেকে দেখিনা।
আয়ান কাছে এসে তার মায়ের দিকে চোখ পড়তেই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে টলমল পানি নিয়ে আয়েশা বেগম হাত দুটো বাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে ইশারা করছে কাছে আসার জন্য।আয়ানও দেরি না করে তার মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কাঁধে মুখটা গুঁজে দিলো।আয়েশা বেগম কান্না করতে করতে ছেলেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে এই আয়ানকে আমি চিনিতে পারছিনা।যে আয়ান তার মাকে ছাড়া থাকবে না বলেই পড়ালেখা শেষ করে দেশে চলে এসেছিলো।যে আয়ান আমাকে ছাড়া দুটো দিন বন্ধুদের সাথে গিয়ে থাকতো না।আর সেই আয়ান দুটা বছর কাটিয়ে দিলো তার মাকে না দেখে।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে।আয়ান মাথা উঠিয়ে মায়ের চোখ মুছতে মুছতে তোমার আয়ান কখনো তোমাকে ভুলতে পারেনা।হতো তোমার ছেলে তখনকার সময়টাকে মেনে নিয়েছিল। সেই সময়টা যে বড্ড কঠিন ছিল তোমার ছেলের জন্য!
আয়েশা বেগম ছেলের কপালে চুমু দিয়ে, সত্যি আমার ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে।একদম বাবার মতো কথা বলতে শিখে গেছে।আকাশের কাছে এগিয়ে গিয়ে, ভাইয়া আব্বুর কি অবস্থা এখন?
এমন সময় সিস্টার এসে আকাশকে বললো স্যার আপনাকে ডাকছে।
আকাশ -আপনি যান আমি আসছি।আয়ান তুইও চল।

ডাক্তার- তোমার বাবার রিপোর্ট এসেছে। এবং আমি সবগুলো দেখে যা বুজলাম হার্টের প্রবলেমটাই বেশি মারাত্মক হয়ে গেছে।আর প্রেশারটাও বেশি। কয়েকদিন হসপিটালে রাখতে হবে।এইখানের ডাক্তারা দেখা শুনা করবেন।আর হ্যাঁ আশা করি এইবারের মতো আর কোনো টেনশন নেই।তবে আরেকটু দেরি করে আনলে মুশকিল হয়ে যেতো।(আয়ানের দিকে তাকিয়ে)আয়ান কেমন আছো?

আয়ান-জ্বী আংকেল ভালো।

ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আকাশ সবাইকে ডাক্তারের বলা কথা গুলো বললো।আয়ান প্রাপ্তিকে না দেখে এদিক সেদিক তাকিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে হালকা কাশি দিয়ে,এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
কথাটা বলতেই প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আয়ান খানিকটা চুপ করে থেকে,কেঁদে কেঁদে চেহারাটাকে পেত্নীর মতো করে ফেলছো। চলো বাসায় চলো।এইখানে আর থাকতে হবে না।ডাক্তার বলেছে আব্বু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

প্রাপ্তি -আমি এইখান থেকে কোথাও যাবো না।আর তুমিও যাবে না।আমার জন্য এইসব কিছু হয়েছে। আর আমি বাবাকে এইভাবে রেখে চলে যাবো?

আয়ান প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে ঠিক আছে তুমি থাকবে কিন্তু নিজেকে দায়ী করতে পারবেনা। আর আমি জানি আমার প্রাপ্তি কখনো কারো খারাপ চাইবে না।

প্রাপ্তি -দুপুরে আমার উপর তোমার অনেক রাগ হয়েছে তাইনা? বাবা যে তোমাকে এইভাবে থাপ্পড় দিয়ে ফেলবে আমি বুজতে পারিনি।

আয়ান -আমি রাগ করিনি তবে ভয় পেয়েছি। ভেবেছিলাম তোমার এই মিথ্যা গুলোর জন্য কোনো বড় বিপদ আসছে না তো?সবাইকে এক করতে গিয়ে নাকি তোমাকেই হারাতে হয়।এখন এইখান থেকে চলো সবাই ভাববে আমি এখনো বউ নিয়েই পড়ে আছি বলে একগাল হাঁসি দিলো আয়ান।

এইকয়েক দিন হসপিটালে আবিদ চৌধুরীর পাশে থেকে নিজেই সেবা যত্ন করছে প্রাপ্তি।প্রতিদিন সবাই এসে দেখে যায়,তবে আয়ান দূর থেকে দেখেই চলে যায়।সারাক্ষণ আবিদ চৌধুরীর পাশেই থেকেছে প্রাপ্তি।নিজের হাতে খাইয়ে দিতো।ঘুমহীন চোখে সারারাত আবিদ চৌধুরীর পাশে বসে থাকতো।প্রাপ্তির শ্বশুরের সেবা করতে ভালোই লাগছে।আবিদ চৌধুরীর প্রাপ্তির প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসা জন্ম নিলো।অল্প কয়েকদিনে পুরোপুরি ভাবেই সুস্থতা বোধ করেছেন আবিদ চৌধুরী। সাকালে ডাক্তার (আবিদ চৌধুরী বন্ধু)এসে চেকাপ করে দেখে, আবিদ তুই এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েছিস আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।আমি তো ভেবেছিলাম তোর যে অবস্থা হয়েছে এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া ইম্পসিবল।
আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে এক হাঁসি দিয়ে,আমার মেয়ে আমার সেবা যত্ন যে ভাবে করেছে আমাকে তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতেই হবে।

ডাক্তার -ঠিক বলেছিস কপাল করে এইরকম বউ পেয়েছিস।

প্রাপ্তি -আংকেল! বাবাকে তাহলে আমরা বাসা নিয়ে যেতে পারবো তো?
ডাক্তার -অবশ্যই পারবে।তুমি আছো না আর চিন্তা কিসের।আমি আজকেই রিলিজ দিয়ে দিচ্ছি।
আকাশ আর প্রাপ্তি আবিদ চৌধুরীকে বাসায় নিয়ে এসে ড্রইংরুমে বসালো।
সুমি এসে পাশে বসে প্রাপ্তি তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়েনে আমি বাবা কে দেখছি।এইকয়দিন তো তুই একাই সব করেছিস।এইবার যা একটু রেস্ট নে।
প্রাপ্তি -আমার জন্য চিন্তা করো না তো।
রুমকি এসে আবিদ চৌধুরীর পাশে বসতে বসতে, নানা ভাইয়া! তুমি একদম ভালো হয়ে যাবে দেইখো। জানো নানা ভাইয়া তুমি যখন অসুস্থ ছিলে সবাই তোমার জন্য কান্না করেছে।আমিও করেছি।ছোটো মামাও করেছে।মামা তো প্রতিদিন তোমায় দেখতে যেতো।কিন্তু আজ যখন তুমি আসলে তোমার সাথে নিয়ে এলে না কেনো।সবাই এইখানে আছে শুধু মামা নেই।রুমকির মুখের কথা গুলো শুনে আবিদ চৌধুরী সবার দিকে তাকাতেই সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।প্রাপ্তি না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাবে তখন আবিদ চৌধুরী বললো, প্রাপ্তি দাঁড়াও!
(প্রাপ্তি দাঁড়াতেই) আমার সামনে আসো।

প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে সামনে এসে দাঁড়াতেই রুমকি যা বলছে সব সত্যি?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে,বাবা আপনি উত্তেজিত হবেন না।আপনি এখনো ভালো ভাবে সুস্থ হননি।

আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তিকে আর কিছু না বলে, আকাশ আমি এখন পুরোই সুস্থ। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুই গাড়ি বাহির কর আমি বাহিরে যাবো।

আকাশ -আব্বু তুমি এখন কোথাও যাবেনা।তুমি এখনো পুরোপুরিভাবে সুস্থ হওনি।আর এইসময় কোথায় যাবে? অফিসে!
তোমার অফিসে যেতে হবে না।আমি সব কাজ করে রেখছি।

আবিদ চৌধুরী -আমি যা বলছি তাই কর।আমি এখন বের হব।
আবিদ চৌধুরী কারো কথাই না শুনে সত্যিই রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলেন।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪১

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪১

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান অফিস থেকে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে।রেশী এসে আয়ানের পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রেশী চুপ করে আছে দেখে আয়ান আড় চোখে রেশীর দিকে তাকিয়ে, কিরে,,,,,কিছু বলবি?
রেশী -ভাইয়া! তুমি তো কাল রাত থেকে কিছু খাওনি।এখন চলো আমি রান্না করেছি তুমি খেয়ে নাও।

আয়ান -তুই খেয়েছিস?
রেশী মাথা নাড়িয়ে না বুজিয়ে, আর বললো দুপুরে খাইনি।ভেবেছিলাম তুমি অফিস থেকে আসলে তারপর খাবো।আমার একা একা খেতে ইচ্ছে করছে না।

আয়ান -মা! কোথায় সকালেও দেখলাম না এখনো দেখছিনা।

রেশী -আন্টি সকালে বাড়িতে গেছে তখন তুমি ঘুমে ছিলে তাই বলে যায়নি।বলেছে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবে।
রেশী কথাটা শেষ করতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে, ওই তো আন্টি বোধ হয় এসে গেছে আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দি।
রেশী গিয়ে দরজা খুলতেই নিলিমা বেগম বাসায় ঢুকতে ঢুকতে, কি অকাল দিন পড়েছে রে বাবা দিনে দুপুরে মানুষ বেপাত্তা হয়ে যায়।আসিফ টাকে কতো করে বলি সাবধানে চলাফেরা করিস কে শুনে কার কথা।এতো বড় একটা ছেলে আজ দুইদিন থেকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।ছেলেটার মা না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে ছেলেটার জন্য।
নিলিমা বেগমের বকবকানি গুলো আয়ান গালে হাত দিয়ে চুপ করে শুনে যাচ্ছে।
নিলিমা বেগম আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই, আয়ান অফিস থেকে কখন এলে?
আয়ান গাল থেকে হাতটা সরিয়ে, মা আপনি এতক্ষণ কার কথা বলছেন কে বেপাত্তা হয়ে গেছে?
নিলিমা বেগম বসতে বসতে আর বলোনা, নীরার কাজিন! নাম জয় হবে হয়তো।নীরা সকালে ফোন করেছিলো ও নাকি ওদের বাড়িতে যাবে কিন্তু আসিফকে কিছুতেই রাজি করাতে পারছিলো না। তাই আমাকে ফোন দিয়ে বাসায় যেতে বললো সকাল বেলা তুমিও ঘুমে ছিলে তাই বলে যেতে পারিনি।ওইখানে গিয়ে তো এই কথা গুলো শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।

আয়ান নিলিমা বেগম কে আর কিছু না বলে , রেশী টেবিলে খাবার দে। আর তুইও খেতে আয়।
আয়ানের কথা শুনে,
নিলিমা বেগম -একি বাবা তুমি এখনো খাওনি? যাও যাও তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।

প্রাপ্তি মন খারাপ করে বসে আয়ানের কথা ভাবছে,ও এখন কি করছে? আমি ওইখান থেকে আসার পর থেকে আমাকে একটা ফোনও দিলোনা।কিভাবে পারলো এইভাবে ফোন না দিয়ে থাকতে। সবাকে মিলাতে গিয়ে কি আমি আমার আয়ান কে হারিয়ে ফেলছি না তো? কিন্তু আমি তো ওর জীবন থেকে হারাতে চাই না? আমিও এটাও চাই ও সবার সাথে থেকে ভালো থাকুক।সবাইকে ছেড়ে ওর থাকতে অনেক কষ্ট হয় আমি সেটা বুজি। আর বুজে তো আমি চুপ করে থাকতে পারিনা।কাহিনী টা যখন আমি শুরু করেছি তাহলে আমিই শেষ করবো।
না আমি বাবাকে গিয়ে সব বলবো হয়তো বাবাকে বুজিয়ে বললে ওনি সবকিছু মেনে নিবেন।কথা গুলো ভেবেই প্রাপ্তি উঠে আবিদ চৌধুরীর রুমে গেলো । পুরো রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে কিন্তু ইজিচেয়ারটা তো দুলছে,বাবা হয়তো ওখানেই বসে আছে,লাইট কি অন করবো? না থাক হয়তো বাবার দিকে তাকিয়ে আমি ভালোভাবে কথা গুলো বলতে পারবোনা, এরছেয়ে ভালো অন্ধকারেই বলে ফেলি।প্রাপ্তি কথাটা ভেবে বলতে শুরু করলো,
বাবা!আমি জানি আপনি এইখানেই আছেন আর আমি আপনার কাছে আগেই ক্ষমা ছেয়ে নিচ্ছি।বাবা আসলে আমার আর আয়ানের মধ্যে আজ যা হয়ে ছিল সব অভিনয়। বাবা আমি এই বাড়িতে আসার পর থেকে শুধু একটাই মিথ্যা কথা বলেছি আর যেটা বলেছি সেটা যে এতো ভয়ংকর রূপ নিবে আমি তা কল্পনাতেও ভাবিনি। বাবা আমি জানি এইটার জন্য আমি ক্ষমা পাবার জগ্য না। বিশ্বাস করুন বাবা আমি নিজের সার্থের জন্য কিছু করিনি।আপনার ছেলে আপনাদের ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমি জানি আপনাদের ও খুব কষ্ট হয়।আপনাদের সবাইকে এক করার জন্যই আমি এইসব করেছি।আপনাকে যদি এই মিথ্যাটা না বলতাম আপনি আমাকে এইবাড়িতে থাকতে দিতেন না।বাবা! আপনিই তো আজ বললেন আমি আপনার মেয়ে।আর মেয়ে কে কি ক্ষমা করে দেওয়া যায়না?
বাবা! আপনি কিছু বলছেন না কেনো? আপনার অনেক অভিমান আমি জানি। আমার কথা না হোক আপনার ছেলের কথা ভেবেই সব কিছু আগের মতো করে নিন।আপনি চাইলে আমি আপনার ছেলের জীবন থেকে চলে যাবো বাবা! প্লিজ একবার বলুন আপনি সব মেনে নিবেন।
আবিদ চৌধুরীর কোনো সাড়া না পেয়ে প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে গিয়ে লাইট টা অন করলো।লাইট অন করেই আবিদ চৌধুরী দিকে তাকিয়ে দেখে হাত পা গুলো কেমন জানি ছেড়ে দিয়েছে। প্রাপ্তি দৌড়ে এসে বাবা আপনার কি হয়েছে?(আবিদ চৌধুরী পাশে বসে একটু ঝাঁকিয়ে,) বাবা! বাবা! আপনি কথা বলছেননা কেনো?আবিদ চৌধুরীকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে দরজায় দাঁড়িয়ে,মা! মা! ভাইয়া! তোমরা তাড়াতাড়ি এসো।প্রাপ্তির চিৎকার চেঁচামিচি শুনে সবাই দৌড়ে এসে, কি হয়েছে প্রাপ্তি?
দেখোনা! বাবার কি হয়েছে আমি কিছু বুজতেছিনা।

আয়েশা বেগম -আকাশ! তুই তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ফোন কর! সুমি এসে, প্রাপ্তি বাবাকে আগে শোয়াতে হবে।আকাশ ডাক্তার সাথে কথা বলে এসে সবাই মিলে ধরে আবিদ চৌধুরীকে খাটে শুয়ে দিলেন।
আয়েশা বেগম তো কান্নাকাটি করছে,আকাশ হটাৎ করে তোর আব্বুর কি হয়েছে।একদম অজ্ঞান হয়ে আছে? আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।

আকাশ -আম্মু তুমি চিন্তা করোনা ডাক্তার এসে দেখে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।(ডাক্তার আসতেই) ওইতো ডাক্তার এসে গেছে, তুমি কান্না করোনা।
ডাক্তার ভালো করে দেখে আপনারা ওনাকে হসপিটাল নিয়ে চলুন আমার যতোটুকু মনে হয় ওনার হার্টের প্রবলেমটা আবার দেখা দিয়েছে।
আকাশ -আমি তাহলে হসপিটাল ফোন করে বলে দিচ্ছি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য।

ডাক্তার -হ্যাঁ সেটাই করুণ।

আয়ান রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হবে তখনি নিলিমা বেগম আয়ানকে দেখে বললো, আয়ান কোথাও যাচ্ছো নাকি?
আয়ান নিলিমা বেগমের কথা শুনে দাঁড়িয়ে,
মা আমি অভ্রর বাসায় যাচ্চি। হয়তো আজ না ও আসতে পারি।আপনারা আমার জন্য চিন্তা করবেননা।কথাটা বলেই আয়ান বেরিয়ে গেলো।আয়ান আর অভ্র দেখা করে জয়কে যেখানে আটকিয়ে রাখা হয়েছে সেখানে আসলো।আয়ান আর অভ্রকে আসতে দেখে জয় আকুতি করে বলতে লাগলো প্লিজ আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন।আমার ফ্যামিলি আমার জন্য চিন্তা করছে।আমার মা হয়তো পাগল হয়ে যাবে।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।কথাটা শুনেই আয়ান জয় কে থাপ্পড় দিয়ে, তোর ফ্যামিলি চিন্তা করছে।মা পাগল হয়ে যাবে।সেই দিন তোদের এই কথা গুলো মাথায় আসেনি একটা মেয়েকে যখন সবাই মিলে অত্যাচার করেছিস?
তোদের কে বাঁচিয়ে রাখটাই অন্যায়।এখন সত্যি করে বল সেইদিন তোদের সাথে কে কে ছিল?

জয় -আমি সব সত্যি কথা বলছি।ভাইয়া বিশ্বাস করেন সেইদিন আমরা সায়মনের কথা মতো কাজ করেছি।
জয় আস্তে আস্তে সব বলতে লাগলো।
কথা গুলো শুনে আয়ান আর সহ্য করতে না পেরে স্টপ প্লিজ স্টপ আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।অভ্র প্লিজ তুই পুলিশকে ফোন কর আর প্রাপ্তির পুরোনো কেশ টা আবার ওপেন করতে বল।

চলবে,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪০

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪০

#Rabeya Sultana Nipa

 

__ প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আয়ান অনেক গুলো কল দিয়ে রেখেছে।প্রাপ্তি ফোন দিতেই আয়ান ফোনের ওপাশ থেকে জোরেশোরে বলতে লাগলো, কতবার ফোন দিয়েছি তোমায়? সকাল থেকে কোথায় ছিলে তুমি? আমার খবর নেওয়া একবারও প্রয়োজন মনে করলেনা তুমি?এই আয়ান তোমায় ছাড়া কতটা নিষঙ্গ তুমি সেটা জানো? নাকি জেনেও না জানার ভাণ করো?কথা গুলো এক নিশ্বাস এ বলে গেলো আয়ান।প্রাপ্তি কথা গুলো শুনে দীর্ঘশ্বাস পেলে,সরি, আসলে সকাল থেকে একটু ব্যস্ত ছিলাম।

আয়ান- (তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে) প্রাপ্তি তুমি কি বলছো তুমি খেয়াল করেছো একবার? যে প্রাপ্তি হাজার টা কাজ থাকলেও আয়ানের সবকিছু ঠিক রাখে আর সেই প্রাপ্তির মুখে ব্যস্ততার কথা, আবিদ চৌধুরীর সাথে থেকে দুইদিন না যেতেই চেঞ্জ!

প্রাপ্তি-তুমি আমায় ভুল বুজতেছো।আমি জানি আমার আয়ান কখনো আমায় ভুল বুজতে পারেনা।আমার উপর তোমার যে বড্ড অভিমান হয়েছে তা আমি ঠিকি বুজিছি।আচ্ছা সকালে নাশতা করেছো?

আয়ান -তোমাকে আমার এতো কিছু খবর নিতে হবে না।সকাল থেকে তো আমিই ফোন দিচ্ছি তাহলে আমিই তোমার খবর নিবো।(আয়ান যে রাত থেকে কিছুই খায়নি এইকথা প্রাপ্তি শুনলে তার উপর রেগে যাবে।তাই কথা কাটানোর জন্যই কথাটা বলা)

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে তুমিই আমার খবর নিও।অফিসে যাবে কখন?

আয়ান -রেডি হচ্ছি।

প্রাপ্তি -এতো দেরি কেনো তোমার? (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) অল রেডি অনেক লেট করে ফেলেছো। ব্যাপার কি তোমার এতো লেট হলো কিভাবে?

আয়ান-(ঠোঁটের কোনে মুচকি একটা হাঁসি এনে)তুমি ছাড়া আয়ান সবসময় অগোছালো। প্রতি দিন তো আমার মিষ্টি বউটা আমার সবকিছু গুছিয়ে রাখে।কিন্তু আজ তো আমার বউটা কাছে নেই। তাই সবকিছু অগোছালো ভাবেই হবে।

প্রাপ্তি -আচ্ছা বুজেছি। শুনো দুপুরে আমি কিন্তু তোমার সাথে দেখা করছি।কাল থেকে তোমায় দেখছিনা আমারো ভালো লাগছেনা।আমি দুপুরবেলা ফোন দিয়ে বলে দিবো কোথায় আসতে হবে।আর হ্যাঁ আজ তোমার সাথে বাহিরেই খাবো।

আয়ান -ওকে।

আয়ান বাসা থেকে বের হতে হতে রেশীকে ইশারায় দরজা বন্ধ করতে বলে চলে গেলো।

আবিদ চৌধুরী আর আকাশ ও অফিসে চলে গেলো।
আয়েশা বেগম এসে কিরে,,, তুই কি কোথাও যাবি নাকি?

প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে হ্যাঁ মা তোমার ছেলের কাছে।কাল থেকে ওকে দেখছি না মনে হয় কতো যুগ পার হয়ে গেছে।তুমি যাবে? চলনা একসাথে যাই।

প্রাপ্তির কথা শুনে আয়েশা বেগম মুখটা মলিন করে দীর্ঘ নিশ্বাস পেলে নারে,,,যেই দিন আমার ছেলে এই বাড়িতে হাঁসি মুখে আবার ফিরে আসবে সেইদিন কলিজাটা কে আবার বুকে জড়িয়ে নিবো।(কথা গুলো বলতেই আয়েশা বেগমের গলাটা ভারী হয়ে আসছে,চোখ দুটো ছলছল করছে)জানিস প্রাপ্তি! আমার আয়ান একগুঁয়ে ছিলো নিজে যেটা বলবে সেটাই।তবে কোনো অন্যায় তার সহ্য হয়না।দেখলিনা অন্যায় জন্য নিজের বাবার সাথেও তার কোনো আপোষ নেই।

প্রাপ্তি আয়েশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে মা! সব ঠিক হয়ে যাবে।আর সেটা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তুমি দেইখো।

দুপুরের আগেই প্রাপ্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো আয়ানের সাথে দেখা করবে বলে। অনেক বার ফোন দিয়েছে আয়ানকে কিন্তু আয়ান ফোন ধরছেনা। প্রাপ্তির খুব চিন্তা হচ্ছে আয়ান তো এইরকম করেনা।প্রাপ্তি ভাবছে এইভাবে কতক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যায়।এরছেয়ে ভালো অফিসে গিয়ে দেখি।অবশ্য অফিস তো আমি চিনিও না।আচ্ছা অভ্র ভাইয়াকে একটা ফোন করে দেখি।অভ্রকে ফোন দিয়ে, ভাইয়া তোমার বন্ধু কোথায়?

অভ্র -প্রাপ্তি! ও তো মিটিং এ আছে।ফোনটা দিবো ওকে?

প্রাপ্তি -না তার দরকার নেই। আচ্ছা ভাইয়া তোমাদের অফিসে ঠিকানাটা আমায় একটু এসএমএস করে দাও।
অভ্র -ব্যস্ততার ফাঁকে প্রাপ্তির কথা গুলো এতোটা গুরুত্ব না দিয়ে এসএমএস এ ঠিকানা পাঠিয়ে দিলো।

এসএমএস টা পড়ে প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে মনে মনে ভাবছে,প্রাপ্তি তুই এমনি বউ নিজের ভালোবাসার মানুষের অফিসের ঠিকানা অন্যের কাছ থেকে নিতে হয়।নাহ্ আগে ওকে গিয়ে সারপ্রাইজটা দিই।
প্রাপ্তি অফিসে এসে অভ্রকে দেখে, ভাইয়া! ও কোথায়?
প্রাপ্তিকে দেখে অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।অভ্র মনে হচ্ছে একি প্রাপ্তির চেহারায় কোনো পেত্নী আসলো নাতো?অভ্রর তাকানো দেখে, প্রাপ্তি অভ্রর চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে ভাই আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি।আপনার বন্ধু কোথায় সেটা বলুন।
অভ্র মুখে কোনো কথা না বলে হাত দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে দিলো মিটিং এর রুমে।
প্রাপ্তি এগিয়ে যেতেই অভ্রর ঘোর কাটতেই একি আমি প্রাপ্তিকে মিটিং এর রুমে পাঠিয়ে দিলাম।প্রাপ্তিকে ডাকতে যাবে এর আগেই প্রাপ্তি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলো।প্রাপ্তি ভিতরে গিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। আবিদ চৌধুরী! তাও আবার আয়ানের সাথে! প্রাপ্তি কথাটা ভাবতে যেনো মাথাটা ঘুরঘুর করছে।প্রাপ্তিকে দেখেও সবাই অবাক।আয়ান ও কম অবাক হয়নি।প্রাপ্তি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।আবিদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে বাবা! আপনি কি ওকে বকাঝকা করতে আসছেন নাকি। তবে ভালোই করেছেন ওর মতো লোকের বকা খাওয়ারই যোগ্য।যে নিজের বউকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।আয়ান প্রাপ্তিকে কি বলবে বুজতে পারছেনা।
পিছন থেকে অভ্র এসে, সরি আয়ান! আসলে প্রাপ্তিকে দেখে আমিও অবাক হয়ে গেছিলাম। তাই ও কখন এই রুমে চলে এসেছে আমি বুজতে পারিনি।আয়ান হাত দিয়ে ইশারা করে অভ্রকে চুপ থাকতে বলে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে তোমাকে এইখানে কে আসতে বলেছে? বেরিয়ে যাও আমার অফিস থেকে।তোমাকে বলেছিনা আমার সামনেও কখনো আসবেনা।তারপর ও কেনো আমার সামনে আসছো এখুনি বের হয়ে যাও।
আয়ানের কোথায় অভ্র অবাক হয়ে,আয়ান তুই প্রাপ্তির সাথে এইভাবে কথা বলছিস কেনো?
আয়ান অভ্রর দিকে ফিরে, তোকে বললাম না চুপ থাকতে।আমাদের মধ্যে তুই কথা বলার কে?কথাটা শুনে অভ্র মন খারপ করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই কোন আয়ানকে দেখছি আমি।আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আয়ান প্রাপ্তির সাথে এইভাবে ব্যবহার করছে।নাকি ওর বাবা কে দেখে এইরকম করছে?

প্রাপ্তি-আমি তো এইখানে থাকতে আসিনি।আমি শুধু এসেছি আপনার সাথে আমার সম্পর্কটা পাকাপাকি ভাবে শেষ করতে।

কথাটা শুনেই আয়ানের মনে যেনো ধাক্কা লাগলো।প্রাপ্তির সবকিছু অভিনয় মানলাম কিন্তু প্রাপ্তি এতো সহজে কথাটা কিভাবে বলতে পারলো।আয়ান খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ডিভোর্স ছাইছো তাই তো ঠিক আছে অতি শীঘ্রই তুমি ডিভোর্স নোটিশ পেয়ে যাবে।
আবিদ চৌধুরী আর চুপকরে থাকতে না পেরে হঠাৎ বসা থেকে উঠেই আয়ানের গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে, এই থাপ্পড়টা আমার অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিলো। থাপ্পড় টা অনেক দেরি করে দিয়ে পেলেছি।যদি আগে এই থাপ্পড়টা দিতাম তাহলে আজ এই অবস্থায় এসে কাউকেই দাঁড়াতে হতো না।তোকে আমার ছেলে বলতেও ঘৃণা লাগছে।আচ্ছা এই মেয়েটার জন্যই তো তুই আমার সব কিছু ছেড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিস তাহলে কি এমন হলো যার জন্য তুই ওকে ডিভোর্স দিতে ছাইছিস। (সবাই অবাক হয়ে শুধু আবিদ চৌধুরীর দিকেই তাকিয়ে আছে।এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে এসে প্রাপ্তি পড়েছে কিছু বলতেও পারছেনা।আয়ানের দিকে করুণাময় চোখে ফেলফেল করে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।তার জন্য আয়ানকে থাপ্পড় খেতে হয়েছে,কথাটা ভাবতেই প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে আছে)আবিদ চৌধুরী আবার বলতে শুরু করলেন আয়ান তুই মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখ কতোটা মায়া ভরা এই মুখে, আমি না হয় না বুজে একটা অন্যায় করেছি সেই অন্যায় শাস্তি তুই আমাকে কম ও দিসনি। তাহলে তুই কিভাবে একি অন্যায় করতে যাচ্ছিস।আমি তো জানতাম আমার ছেলে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনা।ও আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি আয়ান চৌধুরী এই কোম্পানির এম ডি। আপনার কাছে এখন মানুষ কে মানুষ বলে মনে হয়না।(প্রাপ্তির হাত ধরে) তবে একটা কথা মনে রাখবেন মিস্টার আয়ান! আজ থেকে ও আমার মেয়ে। যে অসম্মানে আমি ওকে বাড়ি থেকে বের করেছি আজ পূর্ণ সম্মান দিয়ে আমার মেয়েকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে গেলাম।আরেকটা কথা যে বিজনেসের ডিল টা আমাদের হয়েছে সেটা বাদ দিয়ে দিন।আজ থেকে আপনার সাথে বিজনেসের সম্পর্কটাও রাখতে চাই না।কথা গুলো বলেই আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আয়ান তাদের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লো।কি থেকে কি হয়ে গেলো।প্রাপ্তি কি নিজের হাতেই কোনো বিপদ ডেকে আনলো না তো?
অভ্র আয়ানের অবস্থা দেখে আয়ান আমি তো কিছুই বুঝতেছি না?
আয়ান অভ্রকে সব বললো।অভ্র সব শুনে প্রাপ্তি যে ওই বাড়িতে তুই তো আমাকে বলিস ও নি।এখন কি হবে?

আবিদ চৌধুরী বাড়ি এসে সুমি আর আয়েশা বেগমকে ডাকতে লাগলেন।
আয়েশা বেগম আর সুমি প্রাপ্তিকে আবিদ চৌধুরীর সাথে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আয়েশা বেগম- কি হয়েছে! প্রাপ্তি তোমার সাথে?

আবিদ চৌধুরী -আজ থেকে ও আমার ছেলের বউ না মেয়ে হয়েই এই বাড়িতে থাকবে।আমি যে অন্যায় করেছি সেই অন্যায় আমি নিজেই শুধরে নিবো।প্রাপ্তি কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো আয়ানকে ফোন দিতে।অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু আয়ানের ফোন অফ করে রেখেছে।

চলবে,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৯

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আবিদ চৌধুরী ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।চশমাটা খুলে পাশের বক্সের উপরে রাখতে রাখতে,আয়েশা লাইটা অফ করে দাও।কথাটা বলতেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে,

আবিদ চৌধুরী -এতো রাতে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে?
আয়েশা বেগম -তুমি শুয়ে পড়ো আমি দেখছি।
আয়েশা বেগম উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই প্রাপ্তি আয়েশা বেগমকে দরজা থেকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে, মা! আমি এইখানে ঘুমাবো তোমাদের সাথে।ওই রুমে আমার একা একা খুব ভয় লাগছে।
আবিদ চৌধুরী উঠে বসে, এই মেয়ে! কি যা তা বকছো?তুমি আমাদের সাথে ঘুমাবে মানে? যাও নিজের রুমে যাও।

প্রাপ্তি -বাবা আপনি যদি আমাকে এইখানে না ঘুমাতে দেন আমি কিন্তু কান্না করবো বলে দিলাম।

আবিদ চৌধুরী -এইটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।আমি এইটা কিছুতেই মেনে নিবো না।তোমার সব কথা শুনতে আমি বাধ্য নয়।

প্রাপ্তি- ঠিক আছে আমি যখন এইখানে ঘুমাতে পারবোনা তাহলে মা আমার রুমে আমার সাথে ঘুমাবে।কি এইবার রাজি?

আবিদ চৌধুরী -(তোতলাতে তোতলাতে)এএএইইই মে মেয়ে! তো তো তোমার সমস্যা কি?

প্রাপ্তি -(নাক টা কুঁচকিয়ে) একি বাবা আপনার তোতলানোর ও অসুখ বিসুখ আছে নাকি? কই আপনার ছেলের মুখ থেকে কখনো শুনিনিতো।অবশ্য নিজের বাবার এইরকম একটা সমস্যা নিজের মুখে বলবেইবা কি করে।সমস্যা নেই এখনতো জেনে নিলাম।

আবিদ চৌধুরী -আয়েশা এই মেয়ে টা আমাকে পাগল করে ছাড়বে।প্লিজ ওকে এইখান থেকে যেতে বলো।

আয়েশা বেগম কিছু বলতে যাবে, তখনি প্রাপ্তি ওনাকে থামিয়ে,মা! কি বলবে শুনি।আপনার ছেলে আমার সাথে ঝগড়া করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।আমি তো ওর সাথেই এতো দিন ঘুমাতাম এখন হঠাৎ করে তো একা ঘুমানো যায়না।তাই আমি মা কে নিয়ে যাচ্ছি।যেদিন আপনার ছেলে আসবে সেইদিন থেকে মাও আপনার সাথে ঘুমাবে।

আবিদ চৌধুরী নিরুপায় হয়ে গম্ভীর গলায়, আয়েশা যাও! ওর সাথে ঘুমাও।না হলে এই মেয়ের কোনো বিশ্বাস নেই এইখানেই ঘুমিয়ে পড়বে।
কথাটা বলতেই প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে thankyou বাবা।বলে আয়েশা বেগমকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
আয়েশা বেগম খাটের উপর বসতে বসতে প্রাপ্তি তুই কি শুরু করলি বলতো?

প্রাপ্তি -মা! বাবাকে জব্দ করতেছি।তুমি আর আমি আজ সারারাত বসে গল্প করবো।

আয়েশা বেগম- এই কোন প্রাপ্তিকে দেখছি।আমি তো চিনতেই পারছিনা।যে প্রাপ্তি শান্ত চুপচাপ হয়ে থাকে সেই প্রাপ্তি চঞ্চল হয়ে উঠেছে এইটা আমি ভাবতেই পারছিনা।

প্রাপ্তি আয়েশা বেগমের কোলে মাথা রাখতে রাখতে বললো,মা! আমার জন্যই তো তোমরা মা ছেলেকে আলাদা হতে হয়েছে।তাই আমিই তোমাদের একসাথে করবো।

আয়েশা বেগম- লক্ষ্মী একটা মেয়ে।আচ্ছা তুই শুয়ে পড় আমি তোর বাবাকে একবার দেখে আসি।আজ কয়েক দিনথেকে ওনার শরীরটা ভালোনা।তবেঁ কাউকে বলেনা। নিজেকে সমসময় স্ট্রং দেখিয়ে চলে।কাউকে বুজতেই দেয়না ওনার শরীরটা যে ভালোনা।

প্রাপ্তি-মা! তুমি শুয়ে পড় আমি দেখে আসছি।
প্রাপ্তি উঠে গিয়ে আবিদ চৌধুরী রুমে গিয়ে দেখে একটা বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছে।প্রাপ্তি বইটা সরিয়ে কাঁথা টা গায়ে দিয়ে লাইট অফ করে নিজের রুমে আসলো।আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে দেখে আয় তুইও শুয়ে পড়।

আয়ান চুপচাপ হয়ে নিজের রুমে খাটের এক কোনায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।প্রাপ্তিকে ছাড়া যেনো তার সময় যাচ্ছেই না।নিজেকে খুব একা লাগছে।হঠাৎ জয়ের কথা মনে পড়তেই অভ্রকে ফোন দিলো।জয়কে আজ সকালে অভ্র এনে একটা রুমে আটকিয়ে রেখেছে।সারা দিনে প্রাপ্তির চিন্তায় খবর নেওয়া হয়নি।
__হ্যালো অভ্র তুই কোথায়? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?

অভ্র-আমি একটু আগেই বাসায় আসলাম।।
আর ছেলেটাকে এতো ভয় দেখালাম কোনো কিছুই বলছেনা।

আয়ান -এইভাবে ও কিছুই বলবে না।শুন ওর বোন একটা কলেজে পড়ে।আর যে কলেজে পড়ে সেই কলেজে আমার পরিচিত অনেকেই আছে কয়েটা ছবি তুলে তোকে সেন্ড করবো। ওকে দেখিয়ে বলবি তুই যদি সবকিছু সত্যিটা না বলিস তাহলে প্রাপ্তির সাথে যা করেছিস তোর বোনের সাথে তাই হবে।শুধু ওকে ভয় দেখানো জন্য কথা গুলো বলবি।আর ওই মেয়েটার কোনো অসম্মান হক সেটাও আমি চাইনা।

অভ্র -হুম তোর কথা আমি বুজতে পেরেছি।আমাদের শুধু এইটাই দরকার অন্য ছেলেদের নাম গুলো।

আয়ান -তোকে আমি অনেক ভরসা করি রে অভ্র! তাই সব কথাই তোকে বলেছি।

অভ্র -আয়ান তোর মতো একজনকে আমি বন্ধু হিসেবে পেয়ে নিজেকে খুব গর্ববোধ করি।তোকে না দেখে আমি জানতেই পারতাম না একটা মানুষের ধৈর্যের ক্ষমতা কতোটুকু।

আয়ান মুচকি হেঁসে হ্যাঁ আমিও তোকে না দেখলে জানতাম না বউ পালিয়ে গেলেও সহ্য করা যায়।বলেই দুজনে হা হা হা হাঁসতে লাগলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাপ্তি নিজের হাতে সবার জন্য আজ নাস্তা বানাচ্ছে। রফিক বার বার বলতে লাগলো মা মনি তুমি পারবে না। আমিও তোমায় হেল্প করছি।

প্রাপ্তি -আপনি চিন্তা করবেনা আমি পারবো।আপনি শুধু দেখেন আমার কোনো ভুল হয় কিনা।

রফিক -তাহলে আগে আমি সাহেবকে চা টা দিয়ে আসি। ওনি আবার চায়ের দেরি হলে রাগারাগি করবেন।

প্রাপ্তি-রফিক চাচা! ১ মিনিট দাঁড়ান! বাবার চা টা বাদে সবাইকে চা দিয়ে আসুন।
আজ থেকে বাবার খালিপেটে চা খাওয়া নিষেধ। প্রাপ্তি এগিয়ে গিয়ে রফিকের থেকে চায়ের একটা কাপ রেখে দিলো।

রফিক -মা মনি সাহেব কিন্তু চা না হলে চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলবেন।

প্রাপ্তি -চাচা তুমি যাওতো! চেঁচালে কিভাবে থামাতে হয় সেই ব্যবস্থা আমি করবো।

রফিক সত্যিই প্রাপ্তির কথা মতো সবাইকে চা দিয়ে আবার রান্নাঘরে আসলো।

আকাশ আর সুমি চা হাতে করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমে বসে,
সুমি-রফিক চাচা! চা টা কি আপনি বানিয়েছেন? চা টা কিন্তু দারুণ হয়েছে।
কি বলো আকাশ?

আকাশ -আমিও তাই ভাবছি।
রফিক এসে না চা টা তো আমি বানাইনি।আজ চা বানিয়েছে ছোটো মা মনি।ওই যে রান্নাঘরের দিকে দেখো সব নাস্তা নিজের হাতে বানিয়েছে।
সুমি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে এই জন্যই তো বলি চা টা কেনো এতো ভালো হয়েছে আমাদের মিষ্টি বউরের বানানো চা বলে কথা।তবে প্রাপ্তি তুমি এইসব একা করতে গেলে কেনো আমাকেও ডাকতে আমিও তোমায় হেল্প করতাম।
প্রাপ্তি নাস্তা গুলো হাতে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে ভাবী প্রতি দিন তো তোমরা বানিয়ে খাও আজকে না হয় একদিন আমি বানিয়ে তোমাদের খাওয়ালাম।
এমন সময় আবিদ চৌধুরী এসে এই বাড়িতে কি আমার কোনো গুরুত্ব নেই।এতো বেলা হয়ে গেলো আমার চা এখনো রুমে যায়নি।রফিক! তোকে আর কতো দিন বলতে হবে সকালের চা টা আমার রুমে গিয়ে দিয়ে আসতে।

প্রাপ্তি নাস্তা সবার প্লেটে রাখতে রাখতে, রফিক চাচাকে চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই।আমি বারণ করেছি সকালে আপনাকে চা না দিতে।এতো না চেঁচিয়ে এইখানে এসে চেয়ারে বসুন নাস্তা খেয়ে তারপর চা খাবেন।
আবিদ চৌধুরী বিরক্তিকর ভাবে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, আয়েশা! আয়েশা! কোথায় তুমি।আয়েশা বেগম সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে, কি হয়েছে তোমার সকাল না হতেই চেঁচামেচি শুরু করেছো?

আবিদ চৌধুরী -আমি চেঁচামেচি করবো না তো কি করবো।এই বাড়ির এতো দিনের আইন টা কি চেঞ্জ হলো নাকি? আমার কথার কি কোনো দাম নেই?
প্রাপ্তি -বাবা! এইটা কি কোনো থানা নাকি?

আবিদ চৌধুরী -আয়েশা এই মেয়ে দেখছি এই বাড়ির বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। আমি থানার কথা বললাম কখন?

প্রাপ্তি-এইযে একটু আগে যে আইনের কথা বলছিলেন তাই ভাবলাম আর কি।

আয়েশা বেগম -আচ্ছা হয়েছেটা কি সেটা তো বলবা? শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে যাচ্ছে।

আবিদ চৌধুরী -আমার সকাল বেলার চা নিয়েও এই মেয়ে আপত্তি করছে।
আবিদ চৌধুরী আর কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি বলতে লাগলো,হ্যাঁ আমার আপত্তি আছে ঘুম থেকে উঠে চা খাওয়া একদম নিষেধ। নাস্তা করে তারপর চা খাবেন।

আয়েশা বেগম -(প্রাপ্তির কথা শুনে মিটমিট করে হাঁসতে হাঁসতে) আমি এইখানে কি আর বলবো।তোমাদের বউ শ্বশুরের ব্যাপার।

আকাশ আর সুমিও কোনো কথা বলছেনা।চুপ করে নাস্তা করতে বসে গেলো।আবিদ চৌধুরীও নিরুপায় হয়ে নাস্তা করতে বসলো।প্রাপ্তি অনেক রকমের নাস্তা বানিয়েছে।তার সাথে বিরিয়ানি টা করেছে।কারণ আবিদ চৌধুরী বিরিয়ানি খেতে খুবি পছন্দ করে।আয়ানের কাছ থেকে অনেক বার শুনেছে প্রাপ্তি এই কথা।নিজের অজান্তেই আবিদ চৌধুরী খেতে খেতে বললো খাবার গুলো অসাধারণ হয়েছে।সুমি তুমি করেছো রান্নাটা?

সুমি কিছু বলার আগেই, প্রাপ্তি বলতে লাগলো,জ্বী না বাবা! আমি করছি।আজ ফাস্ট দিন বলে কিছু বলছিনা। কাল থেকে আপনাকে খাবার মেপে মেপে খেতে হবে মানে ডায়েট করতে হবে।আর সব কিছুর নিয়ম মেনেই চলতে হবে।

আয়েশা বেগম -প্রাপ্তি কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি তোমাকে।

আবিদ চৌধুরী চুপ করে শুনেই যাচ্ছে।তবে প্রাপ্তি কথা গুলো আস্তে আস্তে ভালোই লাগছে। মেয়েটা ঠিকি বলেছে আমার সবকিছু অনিয়ম ভাবেই চলছে।আবিদ চৌধুরী খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো রেডি হতে, অফিসে যাওয়ার জন্য।আকাশ প্রাপ্তির মাথায় টোকা দিয়ে, অল দ্যা বেস্ট। বলে নিজেও উঠে গেলো রেডি হতে।

প্রাপ্তি -মা! আপনার খেয়ে নিন আমি আপনার ছেলেকে একটা ফোন দিয়ে আসি। কি করছে কি জানে।

প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আয়ান অনেক গুলো কল দিয়ে রেখেছে।

চলবে,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৮

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আবিদ চৌধুরী আর আকাশ বসে চা খাচ্ছে।আয়েশা বেগম আর সুমি কোনো একটা কথা নিয়ে হাঁসা হাঁসি করছে।রফিক আকাশের রুমে গেছে অফিসের ফাইল নিয়ে আসতে।এমন সময় কলিংবেলের শব্দ শুনে আবিদ চৌধুরী আকাশকে বললো তুই বস আমি গিয়ে দেখছি।আবিদ চৌধুরী উঠে গিয়ে দরজাটা খুলতেই অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আর যার দিকে তাকিয়ে আছে সে এক গাল হাঁসি দিয়ে আবিদ চৌধুরীর পা ছুঁয়ে সালাম করে উঠে দাঁড়িয়ে আরে বাবা আপনি এই ভাবে মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলে আমি ঘরে ঢুকবো কি করে? সরেন তো সরেন! কথাটা বলেই আবিদ চৌধুরীকে হাত দিয়ে সরিয়ে ঘরে ঢুকলো।ঘরে ঢুকতেই সবাইও অবাক হয়ে তাকিয়ে, প্রাপ্তি!

প্রাপ্তি -হুম আমি! আরে আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে আমাকে বরণ করে ঘরে তুলুন।

আয়েশা বেগম আর সুমি আবিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে প্রাপ্তিকে এইভাবে হঠাৎ দেখে মাথায় কোনো কাজ করছে না আবিদ চৌধুরীর, কি করবে তাই হেবলার মতো তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে, ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন তো? যে ভাবে আমাকে দেখে হা করে আছেন মশা ডুকে যাবে। হা টা বন্ধ করুন।
প্রাপ্তির কথা শুনে আকাশও থ হয়ে গেছে।
আবিদ চৌধুরী এইবার নিজের নিরবতা ভেঙে প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে এসে, এই মেয়ে কখন থেকে যাকে যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছো ব্যাপার টা কি তোমার? এই বাড়িতে এসেছো কেনো? এতো বড় সাহস কে দিয়েছে তোমাকে আমার বাড়িতে আসার?

প্রাপ্তি -(মুখটাকে একটু গম্ভীর করে) শুনুন আমি আপনার বাড়ি আসিনি আমি এসেছি আমার শ্বশুর বাড়ি। তাই আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে আমাকে এই বাড়ি থেকে বাহির করার?

আবিদ চৌধুরী -কথাটা ভালো করে যাচাই না করে)হ্যাঁ তা ঠিক।(মনে পড়তেই) এই না কি বলছো উল্টাপাল্টা এইটা আমার বাড়ি।আর আমি তো তোমার শ্বশুর।

প্রাপ্তি -(মুচকি হেঁসে)বাবা তাহলে আপনি শিকার করছেন আমি আপনার ছোটো বউ।

প্রাপ্তির কথাটা শুনে আবিদ চৌধুরী ভ্যাবাচেকা খেয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। আর সবাই মিটমিট করে হাঁসছে।রফিক নেমে এসে প্রাপ্তিকে দেখে, মা মনি কেমন আছো?

প্রাপ্তি-রফিক চাচা আমি একদম পারফেক্ট। যার এইরকম একজন শ্বশুর আছে সে কি খারাপ থাকতে পারে?
কথাটা শুনে ফরিক ও হাঁসছে।
আবিদ চৌধুরী -এই মেয়ে! তোমার মতলবটা কি সেটা বলো? এইবাড়িতে কেনো এসেছো?

প্রাপ্তি -মাথায় এতো গোবর নিয়ে এতো বড় বিজনেসম্যান হলেন কি ভাবে?ব্যাগপত্র দেখেও বুজেন না আমি এই বাড়িতে থাকতে এসেছি।নাকি বুদ্ধিটাও মাথা থেকে গেছে।রফিক চাচা আপনাদের ছোটো ছেলে আগে যেই রুমে থাকতো আমার ব্যাগ গুলো সেই রুমে রেখে আসুন।(আবিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে)আর হে এই বাড়িতে আমি বেড়াতে আসিনি।সারাজীবনের জন্য আসছি।

আবিদ চৌধুরী -না! এই বাড়িতে তোমার কোনো জায়গা নেই।তাড়াতাড়ি আমার বাড়ি থেকে বিদায় হও।

প্রাপ্তি-বাবা আমি আপনার ছেলের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করেই এইখানে এসেছি। যদি আপনি আমাকে এখন এই বাড়ি থেকে বের করে দেন তাহলে আমার আর কোনো উপায় নেই সোজা থানায় যেতে হবে। আর থানায় গেলে সবাই জানতে পারবে বিখ্যাত বিজনেসম্যানের ছোটো ছেলের বউ তাদের নামে থানায় মামলা করেছে।তারপর কি হবে বাবা।থাক আমিই বলছি।কাল পেপারে বাহির হবে। টিভিতে দেখানো হবে,সাথে আপনার ছবিও থাকবে।এখন আপনিই বলুন বাবা এইটাকি ভালো দেখাবে?(কথা গুলো বলে প্রাপ্তি মুখ টিপে টিপে হাঁসছিলো।)

প্রাপ্তির কথা শুনে আকাশ আবিদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে ফিসফিস করে,আব্বু তুমি ওকে এই বাড়ি থেকে বাহির করো না।এই মেয়ে কি বলছে শুনেছো। যদি সত্যিই এমন কিছু করে তাহলে আমাদের কোনো মানসম্মান থাকবেনা। আমরা কাউকে মুখ দেখাতে পারবোনা।তোমার এতো দিনের সম্মান এক নিমিষেই শেষ।
আকাশের কথা শুনে আবিদ চৌধুরী হ্যাঁ সূচক বুজিয়ে,গলাটা ভালো করে কেশে,এই মেয়ে শুনো তোমার কোথাও যেতে হবে না।আজ থেকে তুমি এইবাড়িতেই থাকবে।তবে একটা শর্তে তুমি আমার সামনে বেশি আসবে না বলে দিলাম।কথা গুলো বলেই আবিদ চৌধুরী নিজের রুমে চলে গেলো।
আবিদ চৌধুরী যেতেই সবাই খুশিতে হাঁসতে লাগলো।আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে জড়িয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে কতো দিন পর তোকে দেখেছি।তুই কি সত্যিই আমার ছেলের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে এসেছিস।

প্রাপ্তি-আরে মা তুমিও না। ওর সাথে আমি ঝগড়া করবো কেনো।আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ওকে কল দিচ্ছি।

আয়ান প্রাপ্তিকে না খুঁজে পেয়ে অস্থির হয়ে আছে।আসিফ কে ফোন করে বলতেই সবাই এই বাসায় চলে এসেছে।

নিলিমা বেগম প্রাপ্তির রুমে বসে কান্না করতে করতে, আয়ান! আমার মেয়েটার কি এমন হলো কাউকে কিছু না বলে এইভাবে বাসা ছেড়ে চলে গেছে? মেয়েটা কোথায় আছে কি করছে কেউ কিছু বলতে পারছেনা।আমার মেয়েটার আবার নতুন কোনো বিপদ হলো না তো।

আয়ান- (কাঁদোকাঁদো হয়ে)মা! ও তো ফোন ও অফ করে রেখেছে।কি করবো আমার মাথায় কিছু আসছে না।

এমন সময় ফোন বাজতেই ফোন হাতে নিয়ে দেখে প্রাপ্তির নাম্বার থেকে কল।তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করেই,হ্যালো! প্রাপ্তি তুমি কোথায়? কোথায় গেছো কাউকে কিছু না বলে? তুমি জানো না তোমাকে না দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই।তুমি আমাকে এইভাবে একা রেখে কোথায় গেলে প্রাপ্তি।কথা গুলো বলেই ভেঙে পড়লো আয়ান।

প্রাপ্তি -তুমি আমার কথাটা শুনো প্লিজ,এইভাবে কান্নাকাটি করোনা।আসলে আমি তোমাকে বলে আসতাম।কিন্তু আমি জানি তোমাকে বললে তুমি কখনোই আমাকে আসতে দিতে না।তাই আমি কাউকে কিছু না বলে চলে আসছি। আর আমি অনেক ভালোও আছি।

আয়ান- (চোখ মুছতে মুছতে)কোথায় আছো তুমি?তুমি বলো আমি এখুনি আসছি।

প্রাপ্তি -না! তুমি এখন আসবে না।আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমি তোমাকে তোমার মা, বাবা সবাইকে ফিরিয়ে দিবো। আর আমি সেই কাজটা সাকসেসফুল করার জন্যই আসছি তোমাদের বাড়িতে।তুমি টেনশন করোনা প্লিজ।

আয়ান- প্রাপ্তি আমার কাউকে লাগবেনা।যদি কখনো ভাগ্যে থাকে এমনিতেই আসবে।আর আবিদ চৌধুরী তোমাকে কখনো মেনে নিবেনা।প্লিজ তুমি চলে আসো।

প্রাপ্তি -তুমি একদম চিন্তা করোনা। আমি থাকার অনুমিত পেয়ে গেছি।

আয়ান- প্রাপ্তি! তোমাকে ছাড়া আমি একা থাকবো? ইম্পসিবল আমি পারবোনা।আমি এখুনি তোমাকে নিতে আসছি।চুপচাপ এখন তুমি আমার সাথে বাসায় আসবে।

প্রাপ্তি অনেক বুজিয়ে সুজিয়ে আয়ান কে কোনোমতে রাজি করালো।
প্রাপ্তি -এইবার আম্মুকে ফোনটা দাও।(আয়ান নিলিমার কাছে ফোন দিতেই)আম্মু শুনো আমি যতো দিন না আসছি। আয়ান আর রেশীর খেয়াল রেখো।আর আমি এসেই রেশী আর অভ্রর বিয়েটা দিবো।
প্রাপ্তি কথা শেষ করে দেখে সুমি পাশে দাঁড়িয়ে আছে,ভাবী কখন এলে?

সুমি-কিছুক্ষণ হলো তুই কথা বলছিস তাই ডিস্টার্ব করিনি।তবে তুই আজ যা খেল দেখালি না।আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি।তবে তুই এই বাড়িতে আসছিস আমার এখন খুব ভালো লাগছে।আচ্ছা আয়ান পাগল টা তোকে ছাড়া থাকবে কি করে?

প্রাপ্তি-জানিনা অনেক তো বুজালাম। কখন আবার কি করে বসে আল্লাই ভালো জানে।

সুমি-আচ্ছা এখন খেতে চল।পরে তোর সাথে অনেক কথা বলবো আড্ডা দিবো।

সুমি আর প্রাপ্তি এসে দেখে আকাশ আর আবিদ চৌধুরী খেতে বসে গেছে।প্রাপ্তি এসে আবিদ চৌধুরীর পাশের চেয়ারটায় বসলো।
প্রাপ্তিকে দেখে আবিদ চৌধুরী বিরক্তিকর ভাব নিয়ে, এই বাড়িতে কি শান্তিতেও খেতে পারবো না।যখন তখন যে কেউ সামনে এসে পড়ে।
প্রাপ্তি আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে,মা! বাবা আপনাকে কি বলছে শুনেননি।যখন তখন সামনে আসেন কেনো? বাবা আপনার জন্য শান্তিতেও খেতে পারছেনা।
প্রাপ্তির কথা শুনে আবিদ চৌধুরী থতমত হয়ে, এই মেয়ে আমি কখন এই ওকে এই কথা বললাম? তুমি তো দেখছি পাজি মেয়ে।আয়েশা বেগম বুজতে পেরে লুকিয়ে লুকিয়ে হাঁসছে।আকাশ আর সুমি হাঁসি আসছে দেখে মুখে হাত দিয়ে রেখেছে।

প্রাপ্তি-বাবা আপনি মিথ্যা বলেন এইটা তো জানতাম না একটু আগেই তো আপনি কথা গুলো বলেছেন।যাইহোক বাবা খেয়ে নিন। মনে এতো চিন্তা রাখলে শান্তিতে খেতে পারবেন না।
আবিদ চৌধুরী মনে মনে ভাবছে এই মেয়েতো দেখছি পুরোই সাংঘাতিক যা বলি সবি উল্টো করে ফেলে।

চলবে,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৭

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আসিফের বিয়ের সব কিছু মিটে গেছে।আকাশ সুমিকে ডেকে বলছে সব কিছু গুছিয়ে নিতে আজ তারা বাড়ি চলে যাবে।আকাশে কথা শুনে নিহাদও একি কথা বলছে।নিলিমা বেগম তাদের চলে যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ করে, বাবা আকাশ! তোমরা সত্যিই আজ চলে যাবে? আরো দুই দিন থেকে যাও।বিয়ের ঝামেলাতে তোমাদের তেমন আদর যত্নআত্তি করতে পারিনি।নিহাদ! বাবা তুমিও অমত করোনা।

নিহাম -আন্টি আমি সব কাজ পেলে এখানে ছুটে এসেছি শুধু আপনাদের সাথে আনন্দটা ভাগাভাগি করবো বলে।আমার অফিসে কাল গিয়ে জয়েন হতে হবে।

নিলিমা -আকাশ তুমি আর সুমি না হয় আরো দুটো দিন থাকো।

আয়ান আর প্রাপ্তি এসে, কি হয়েছে মা?

নিলিমা বেগম -আকাশ আর নিহাদ বলছে চলে যাবে। তাই ওদের বলছি আরো দুই দিন থেকে যেতে।নিহাদ বলছে কাল ওর অফিসে জয়েন করতে হবে।এইজন্য আকাশকে বললাম থেকে যেতে।

আয়ান -হে রে ভাইয়া! তুই আরো দুই দিন থেকে যা পরে আমরা সহ এক সাথে চলে যাবো।
আকাশ -না আয়ান তুই তো আব্বুকে চিনিস।সত্যি কথা বলতে আমি আব্বুকে এখানে আসবো এইটা বলিনি।আমি শুধু বলেছি সুমিকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। আব্বু আর কিছু জিজ্ঞাস করেনি কোথায় যাবো বা অন্য কিছু। আমি শুধু তোদের কথা রাখার জন্যই এসেছি।(প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত রেখে)আমার এই ছোট্র বোনটার আবদার টা রাখার জন্যই আসলাম।

আয়ান -ঠিক আছে তাহলে তোদের আর আটকাবো না।তবে আবার কখন দেখা হয় কি জানে।

ঝিনুক -শীঘ্রই দেখা হবে।কারণ অভ্রর বিয়েতে আমরা বর পক্ষ হয়ে আসতে হবে না?
ঝিনুকের কথায় সবাই অট্র হাঁসি দিয়ে,
প্রাপ্তি -রাইট আপু!তবে এর আগেই হয়তো দেখা হবে তবে সেটা সারপ্রাইজ হিসেবে থাক।
নিহাদ -ওকে প্রাপ্তি! তোমার সারপ্রাইজের অপেক্ষায় রইলাম।
সন্ধ্যার আগেই আকাশ আর নিহাদরা বেরিয়ে পড়লো।আকাশ বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে।রফিক মেইন দরজা খুলে দিয়ে, ভাইয়া আপনারা চলে আসছেন? ভালোই করছেন বাড়িটা আপনাগোরে ছাড়া ভালো লাগেনা।আকাশ আর সুমি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে,
আকাশ -রফিক চাচা আব্বু কোথায়? আম্মুকেও তো দেখছিনা।
আয়েশা বেগম এসে, এইতো আকাশ তোরা চলে এলি? তবে ভালো হয়েছে।বাহিরের থেকে এসেছিস উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
সুমি আয়েশা বেগমের দিকে এগিয়ে এসে মা শরীরের কি অবস্থা? এই কয়দিন আমার এই মা কে কতো মিস করেছি তা বলে বুজাতে পারবোনা।

আয়েশা বেগম- হে আর পাম দিতে হবে না।আমার মেয়েটা যে আমায় কতো মিস করেছে সেটা আমি বুজেছি।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।

প্রাপ্তিদের বাড়ির সবাই রাতে খেতে বসেছে,আজাদ সাহেব নীরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

অরণী -আব্বু ওনি আগের দাদীদের নিয়ম পালন করছেন।কতো বার করে আমি বললাম খেতে বসো, না ওনি মায়ের সাথে এক সঙ্গে খাবেন।প্রাপ্তি এসে বসতে বসতে কি হয়ে চেঁচাচ্ছিস কেনো? আস্তে করে বললেই তো হয়।
অরণী -হুম আরেক জন এসে জুটেছে।ইনি আর কম কিসের। একি দাঁড়িপাল্লার লোক।
কথাটা শুনে রেশী ফিক করে হেঁসে দিতেই। আয়ান অরণীর দিকে তাকিয়ে,এতোদিন পর একটা কাজের কাজ করছো।

অরণী -কি বলতে চাইছো এতো দিন আমি অকাজ কুকাজ করে বেড়াতাম নাকি?
আপু তোর এই আয়ানকে সামলা বলে দিলাম পরে কিন্তু ঠেলা বুজবে এই অরণীর পিছনে লাগলে কি হয়।

আয়ান -আচ্ছা সিয়াম! তুমি এই দজ্জালটাকে সামলাও কি করে। রেশী ওর কথা শুনে হাঁসলো বলেই কথাটা বললাম।আর ও কি উল্টাপাল্টা বকবক করেই যাচ্ছে।
সিয়াম -একমাত্র আপনিই আমার কষ্টটা বুজেছেন।

অরণী -কিহ আমি দজ্জাল?ঠিক আছে দজ্জাল কাকে বলে আমি বুজিয়ে দিবো।

আসিফ -আয়ান এর সাথে আর কথা বলার দরকার নেই। না হলে সত্যি কি করে না করে এর কোনো বিশ্বাস নেই।

প্রাপ্তি -নীরা তুমি বসো। আব্বু! কাল আমরা চলে যাবো সকাল বেলা।

আজাদ সাহেব -কি বলিস তোরাও চলে যাবি?

প্রাপ্তি -তোমার দুই মেয়ে গেলে কি হয়েছে তোমার আরেক মেয়ে আসছে।এখন তার একটু আদর যত্ন খাও।কি বলিস অরণী?

অরণী -হুম আপু ঠিকি বলেছে।ভাবী তুমি আমাদের আদরে ভাগ বসিয়ে দিলে?যাক ভালোই।
সবাই খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে চলে গেলো।সকালে উঠে প্রাপ্তিরা নাস্তা করে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।অভ্র আর রেশীর বিয়েটা ঠিক হলেও রেশী আর অভ্রর তেমন কথা হয়না।
প্রাপ্তি রান্না করতে ব্যস্ত, রেশী কলেজ থেকে এসে দেখে প্রাপ্তি রান্না করা নিয়ে খুব ব্যস্ত।রেশী চেঞ্জ করে এসে ভাবী তুমি এখনো রান্না করছো।দেখি আর কি লাগবে আমাকে বলো আমি তোমাকে হেল্প করছি।

প্রাপ্তি -আর বলিস না, তোর ভাইয়া হঠাৎ ফোন করে বললো অভ্র আর নিশান ভাইয়া আসবে তাই একটু ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
কথাটা বলতে না বলতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে ওই যে ওরা মনে হয় এসে গেছে তুই গিয়ে দরজাটা খুলে দে আমি আসছি।

রেশী কথাটা শুনেই গলাটা যেনো শুকিয়ে আসছে।ভাবী আমি যাবো?

প্রাপ্তি -হ্যাঁ যাও। দরজাটা খুলে দিয়ে আসো।রেশী আর কিছু না বলে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।আয়ান মুচকি হেঁসে কিরে দরজা খুলতে এতো দেরি কেনো তোর?

প্রাপ্তি এসে আরে সে অভ্রর কথা শুনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবেছে সে দরজা খুলবে কি না তারপর আমি বলাতে এসে দরজা খুলে দিলো।

অভ্র রেশীর দিকে তাকিয়ে,আমার মনে হয় এইখানে আসাটা রেশীর কাছে ভালো লাগেনি তাই হয়তো দরজা খুলতে চায়নি।

রেশী প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে ভাবী ওনি কিন্তু আমায় মিথ্যা অপবাদ দিতেছে।আমি এইরকম কোনো কিছুই মনে আনি নি।

আয়ান -অভ্র তুই আমার বোনটা কে কেনো এই অপবাদটা দিচ্ছিস? তোর কিন্তু একদম উচিত হয়নি।বলে হাঁসতে শুরু করলো।

প্রাপ্তি -আচ্ছা তোমাদের দুজনকে দেখছি, নিশান ভাইয়া এখনো আসিনি কেনো?

আয়ান -আর বলো না।ও আসতে ছেয়েছিল নীরা ফোন করেছিলো তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাই ও এইখানে না এসে তোমাদের বাড়িতে গেছে।অভ্র তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।প্রাপ্তিকে রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে রুমে চলে গেলো।
প্রাপ্তি-আচ্ছা তোমরা বসে কথা বলো আমি আসছি।
প্রাপ্তি কথাটা বলে আয়ানের পিছুপিছু চলে গেলো।রেশীও চলে যাবে এমন সময় অভ্র বলেতে লাগলো,চলে যাচ্ছো কেনো? তুমি আমাকে দেখে এমন ভাব করো যে আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্কই নেই।রেশী! কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে। এখনো তুমি দূরে সরে থাকবে?

রেশী -(নিজের নিরবাতা ভেঙে) সেইদিনের ঘটনার জন্য সরি।আমার জন্য আপনাকে কতো অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আসলে আপনিই বলুন আমার জায়গা থাকলে আপনি কি করতেন?

অভ্র মুচকি হেঁসে বসা থেকে উঠে রেশীর কাছে এসে সামনে দাঁড়িয়ে, তোমার জায়গায় থাকলে আমি কি করতাম জানো? যে ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার সাথে দেখা করতে চাইতাম।তাকে জানতে চাইতাম।সে কি আমার ভালোবাসার যোগ্য কিনা পরিক্ষা করার চেষ্টা করতাম।

রেশী অভ্রর কথা গুলো শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে,বুজেছি আমার ভুল ছিলো।আচ্ছা আপনি আমার সাথে তাহলে দেখা করেননি কেনো? আমি না হয় দেখা করতে বলিনি কিন্তু আপনি কেনো করেননি?

অভ্র -আমি দেখা করতে অনেক বারই বলেছিলাম।কিন্তু তোমার সৎ মা বলেছিলো তুমি নাকি দেখা করতে চাওনা।তাই আমিও আর জোর করেনি।

রেশী -আচ্ছা পরে যখন এই বাসায় আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো তখন বলেননি কেনো?

অভ্র- বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে।হয়তো তখন বললে আয়ান আমায় ভুল বুজতো এই ভয়ে বলিনি।সব কিছুরই একটা সময়ের প্রয়োজন হয় রেশী।

রেশী -হুম। আপনি বসুন এখুনি ভাইয়া এসে যাবে।আপনার আর একা লাগবেনা।

অভ্র -কে বলেছে আমি এইখানে একা আছি।আমার সাথে এমন একজন আছে যাকে আমি পৃথিবীর সবছেয়ে কাছের
মানুষটাই ভাবি।আচ্ছা সেই কি সারাজীবন আমার পাশে থাকবে? নাকি মাঝ পথে আবার আমাকে ছেড়ে পালাবে?তবে এইবার সে পালাতে চাইলেও পালাতে দিবোনা বলে দিলাম।কথাটা শুনে রেশী লজ্জা পেয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

প্রাপ্তি অনেকক্ষণ আয়ানের জন্য অপেক্ষা করে, কই গো তোমার হলো?কখন সে ফ্রেশ হতে ঢুকলে এখনো বের হয়ে আসছো না কেনো?

আয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে, কথাটা আবার বলো তো।

প্রাপ্তি -কোন কথা?

আয়ান -ওইযে একটু আগে বললা না,কই গো তোমার হলো।তোমার কথাটা একদম বুকের বাম পাশে লাগছে।এখন যে আবার শুনতে ইচ্ছে করছে।

প্রাপ্তি -ফাজিল একটা। অভ্র ভাইয়া কখন থেকে একা একা বসে আছে, খাবেটা কখন?

আয়ান -(দুষ্টু একটা হাঁসি দিয়ে)কোথায় একা রেখে এলাম। সাথে তার প্রেমিকা দিয়ে আসলাম কথা বলার জন্য আর তুমি বলছো একা একা।

প্রাপ্তি-(ভ্রু গুলোকে কুঁচকে) কিহ্ তুমি না ওর ভাই। নিজের বোনকে,,,ছিঃ ছিঃ

আয়ান-এই তুমি ছিঃ ছিঃ করছো কেনো? আমি ভাই ঠিক আছে,কিন্তু আমি বন্ধুও।আর অভ্রর প্রতি আমার সেই বিশ্বাস আছে, সে এমন কোনো কাজ করবেনা যেটা আমার খারাপ লাগবে। এখন চলো অনেক ক্ষুধা লাগছে বউয়ের হাতের রান্না খাবো বলে বাহিরের থেকে খেয়ে আসিনি।

প্রাপ্তি -আচ্ছা চলো।
দুজনে গিয়ে দেখে অভ্র একা বসে বসে বই পড়ছে,
আয়ান এসে কিরে অভ্র রেশী কোথায় ওকে দেখছিনা।

অভ্র -আয়ান! ও মনে হয় ওর রুমে চলে গেছে।

আয়ান-তুই এতো আনরোমান্টিক কেনো?

অভ্র-মানে?

আয়ান -(বিরক্তিকর ভাব নিয়ে)কিছুনা এখন খেতে আয়।

কিছুদিন পর,,,,,,,,,,,,,,,,

আয়ান অফিস থেকে বাসায় এসে দেখে প্রাপ্তি রুমে নেই। ওয়াশ রুমে আছে ভেবে নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করে রেশীকে ডেকে চা দিতে বলে বারান্দায় গিয়ে বসলো।প্রাপ্তি তো ওয়াশ রুমেই আছে আমার কাছে এতোটা খারাপ লাগছে কেনো।মনে হচ্ছে প্রাপ্তি বাসায় নেই।নাহ আগে গিয়ে দেখে আসি বলে উঠতে যাবে তখনি রেশী এসে চায়ের কাপ টা হাতে দিয়ে চলে গেলো।আয়ানের কেমন জানি খটকা লাগছে, রেশী এতো গম্ভীর হয়ে আছে কেনো।অবশ্য ও তো এমনিতেই আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।অনেক মেয়ে আছে অনেক চটপটে কিন্তু রেশী শান্ত প্রকৃতির মেয়ে,চা টা খেতে খেতেই কথা গুলো ভাবছে আয়ান।কিন্তু প্রাপ্তি এতক্ষণ ওয়াশ রুমে কি করছে। আমি বাসায় এসেছি এতক্ষণ হয়ে গেলো,,, না না আমি নিজেই দেখে আসি বলেই উঠে চায়ের কাপ টা রেখে ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে দরজা খোলা কিন্তু ভিতরে কেউই নেই।প্রাপ্তিকে না দেখে আয়ানের বুকের ভেতর টা জেনো ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কোথায় গেলো প্রাপ্তি? ও তো আমাকে না বলে কোথাও যাবেনা।
নাহ্ রেশীকে জিজ্ঞাস করে দেখি। কোথায় গেছে ও।
রেশী! রেশী! ডাকতে ডাকতে ড্রইংরুমে এসে দেখে রেশী বসে চোখেরজল পেলছে।
রেশী তুই কান্না করছিস কেনো? তোর ভাবী কোথায়?

রেশী- ভাইয়া আমিও কলেজ থেকে এসে দেখি ভাবী বাসায় নেই। কোথায় গেছে আমি কিছুই জানিনা।আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে আছে কিন্তু তুমি যখন অফিস থেকে একা বাসায় এলে তখন বুজলাম তোমার সাথে নেই।ভাইয়া ভাবী কোথায় গেছে তুমিও জানো না?আমার খুব খারাপ লাগছে ভাবীর জন্য।
রেশীর কথা শুনে আয়ানের ধম বন্ধ হয়ে আসছে।ঘরের চারদিকটা যেনো ঘুরছে।প্রাপ্তির কোনো বিপদ হলো নাতো?

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৬

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

__নিহাদের কথা শুনে আয়ান অবাক হয়ে নিহাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রেশীর দিকে তাকালো।

রেশী কিছু বলছেনা চুপ হয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,আয়ান ভাইয়া কি আমায় ভুল বুজে দূরে ঠেলে দিবে? আমার সাথেই কেনো বার বার এইরকম হয়।নিহাদ ভাইয়ার সাথে আমাকে এইখানেই দেখা হতে হলো।এই পরিস্থিতি আমি কি ভাবে সামলিয়ে উঠবো?
আয়ান অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর,রেশী নিহাদ ভাইয়া কি বলছে? তোমরা কি আগে থেকেই দুজন দুজনকে চিনো?

রেশী কোনো কথা বলছে না।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ঝিনুক নিহাদের দিকে তাকিয়ে, তুমি সরাসরি কথাটা কেনো বলছোনা?আচ্ছা অভ্রকে দেখছিনা ও কোথায়?
প্রাপ্তি এসে সবাইকে থমথমে থাকতে দেখে,কি হয়েছে সবাই এইভাবে আছো কেনো?
আয়ান -প্রাপ্তি! নিহাদ ভাইয়া রেশীর ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছে।
অভ্র ফোনে কথা বলতে বলতে ড্রইংরুমে এসে সবাইকে দেখে, কি ব্যাপার সবাইকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে। কি হয়েছে সবার?
ঝিনুক অভ্রর কথা শুনে,অভ্র তুমি যে তোমার ভাইয়া আর আমাকে না চিনার ভাণ করে থাকো সেই নিয়ে কথা বলছি।

আয়ান -কি বলছো এইসব আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।প্লিজ তোমরা একটু বুজিয়ে বলবে সমস্যা টা কোন জায়গায়?

নিহাদ -অভ্র! সরি আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।আসলে আয়ান! অভ্র হচ্ছে আমার কাজিন।আমার ছোটো কাকার ছেলে।আমার কাকা চাকরীর সূত্রে ঢাকায় থাকতো।আমাদের বাড়িতেও বেশী আসা যাওয়া করতো না।ইনফেক্ট আমার বিয়ের সময় কাকা আসতে পারিনি।পরে যখন কাকা আর কাকী আসার পর তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন অভ্র তাদের সাথে আসেনি।তাই তোমাদের সাথে অভ্র আর দেখা হয়নি।কিন্তু ঝিনুকের সাথে অভ্রর ভালো একটা রিলেশন।সেই অভ্র এইখানে আসার পর থেকে আমাদের না চিনার ভাণ করে আছে।
নিহাদের কথা গুলো জেনো সবার কাছে ঘোরের মতো লাগছে। সবাই শুধু নিহাদের কথা গুলোই শুনছে।
আয়ান নিরবতা ভেঙে নিহাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে, অভ্র! নিহাদ ভাইয়া কি বলছে?তুই কি সত্যি নিহাদ ভাইয়ার কাজিন? কিন্তু তুই তো কখনোই বলিসনি।

অভ্র-আয়ান আমি নিজেই জানতাম না নিহাদ ভাইয়া তোর বোনের জামাই।যেদিন আমি নিহাদ ভাইকে এই বাড়িতে দেখলাম সেই দিন তুই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলি।আমি নিজেই অবাক হয়েছি নিহাদ ভাইয়াকে এইখানে দেখে।
কিন্তু আমি ভয়ে তোকে কিছু বলিনি।যদি তুই আমাকে ভুল বুজিস।

নিহাদ -হুম আমি তোর ব্যাপারটা বুজেছি।তাই আমিও তোকে কিছু বলিনি।

অভ্র নিহাদের কাজিন শুনে রেশী নিহাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই কি সেই ছেলে যার সাথে আমার বিয়ের হওয়ার কথা ছিলো।

আয়ান -আচ্ছা অভ্রর ব্যাপার টা না হয় বুজলাম কিন্তু রেশী কে কিভাবে চিনো? রেশী ও কি তোমার কাজিন হয় নাকি?

নিহাদ -(অট্র হাঁসি দিয়ে)আরে নাহ্। অভ্র এই কথাটা তুই বলবি না আমি বলবো।

অভ্র -ভাইয়া এইটা না হয় পরা বলা যাবে।থাকনা এখন এইসব কথা।

প্রাপ্তি -না! আমি এইটাও শুনতে চাই।নিহাদ ভাইয়া প্লিজ আপনি বলুন।

নিহাদ-রেশীর সাথে অভ্রর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু রেশী বিয়ের দিন পালিয়ে যায়।কিন্তু কেনো সেইদিন রেশী পালিয়েছে এইটা সবার অজানা হয়ে রয়ে গেলো।
রেশী অভ্রর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।অভ্র রেশীর দিকে চোখ পড়তেই, সরি রেশী আসলে আমি এতো দিন চাইনি কথা গুলো কেউ জানুক।আর আমি এটাও জানি তুমি আমাকে চিনতে না।

আয়ান কিছু বলতে যাবে তখন আয়ানকে থামিয়ে আকাশ বললো,রেশী তুমি অভ্রকে বিয়েটা কেনো করলে না?
রেশী চুপ হয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি -(কড়া গলায়) রেশী! তুমি কথা বলছো না কেনো?প্লিজ তুমি আনসার দাও।

রেশী -(কাঁদোকাঁদো হয়ে) ভাবী! বিশ্বাস করো ওনি যে সেই ছেলে আমি জানতামই না।বিয়ের দিন সকালে আমার সৎ মা আর তার ভাই মিলে আমাকে ধমকিয়ে ছিলো, যে ছেলের সাথে আমাকে তারা বিয়ে দিচ্ছে ওই ছেলে নাকি ভালো না।আমার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেই নাকি ওই ছেলের কাছে আমাকে বিয়ে দিচ্ছে।
তখন আমাকে যখন সাজিয়ে রুমে নিয়ে আসলো তখন আমার কাজিন আমাকে বললো, রেশী তুই পালিয়ে যা, এই বিয়ে করলে তোর জীবন শেষ হয়ে যাবে।তোর এই মা তোর কখনোই ভালো চায়না।তুই যদি পালাতে চাস আমি তোকে হেল্প করবো।তাই সেইদিন ওর কথাতেই আমি পালিয়ে এসেছিলাম।প্রাপ্তি উঠে এসে রেশীকে জড়িয়ে ধরে প্লিজ তুই কান্না করিস না।নিহাদ ভাইয়া! এতে রেশীর ও কোনো দোষ দেখছিনা।
সুমি -আচ্ছা বুজলাম। তো নিহাদ ভাইয়া আপনি রেশীকে কোথায় দেখেছেন?

নিহাদ -রেশীকে যেদিন অভ্রর বাবা মা দেখতে গিয়েছিলো কাকা আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে ছিলো।আর সে দিন অনেক প্রশ্ন আমি রেশীকে করেছিলাম।

আয়ান-ওকে! ওকে! এইবার সব বুজলাম।আমরা সবাই মিলে এখন আরেকটা বিয়েতে ইনজয় করতে পারি যদি সেটা অভ্র আর রেশী চায়।কি বলো সবাই।
কথাটা শুনে অভ্র অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, আয়ান তুই কি বলছিস?
বিয়ে!

আয়ান-হুম আমি ঠিকি বলছি।যদি তোরা চাস।

প্রাপ্তি -তুই কি বলিস রেশী? তুই রাজি তো?

রেশী -ভাবী তোমরা যা চাও এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
সবাই খুশি হয়ে আলহামদুলিল্লাহ্‌ তাহলে তো আর কথায় নেই।

সিয়াম -যদি কথা গুলো আরো আগে হতো তাহলে তো দুটো বিয়ে একসাথেই দেওয়া যেতো।

আকাশ -কথাটা কিন্তু ঠিক বলছো।

আয়ান -এইদিকের সব কিছু মিটমাট হয়ে যাক।পরে এদের বিয়েটার আয়োজন শুরু করবো।

নিহাদ -যাক অভ্র সব কিছু তাহলে মিটমাট হয়ে গেছে।

আয়ানের ফোন আসতেই আয়ান উঠে চলে গেলো।
প্রাপ্তি রেশীকে ডেকে বললো, রেশী রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।ভাবী, আপু তোমরাও যাও।নীরাদের বাড়ি থেকে একটুপর মেহমান আসতে শুরু করবে।

সবাই রেডি হচ্ছে,আয়ান রুমে এসে প্রাপ্তিকে বসে থাকতে দেখে,কি হলো প্রাপ্তি তুমি বসে আছো কেনো?রেডি হবে না? ওইদিকের মেহমান আসতে শুরু করেছে।

প্রাপ্তি -(আস্তে করে)এইতো যাচ্ছি।তুমি রেডি হয়ে নাও।
আয়ান রেডি হয়ে ড্রেসিংটেবিলের সমনে চুল ঠিক করতে করতে প্রাপ্তি কেমন লাগছে আমায়?
প্রাপ্তি নিছের দিক থেকে মুখ উঠিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।সেইদিন আয়ানের জন্য প্রাপ্তি এই শার্টটা নিয়েছিলো আয়ানকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।কিন্তু আয়ানের গায়ে শার্টটা দেখে সে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো। আয়ানকে অনেক সুন্দর লাগছে।প্রাপ্তি আস্তে আস্তে আয়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।

আয়ান-হ্যাঁ সুন্দর তো লাগতেই হবে শার্টটা যে আমার বউ পছন্দ করে আমার জন্য এনেছে।অবশ্য আজ নীরাদের বাড়ি থেকে অনেক মেয়ে আসতেছে তাদেরও তো পছন্দ হতে হবে তাই না?
কথাটা বলতেই প্রাপ্তি আয়ানকে নিজের কাছে টেনে এনে, যে মেয়ে তাকাবে না সে মেয়ে আগে জানতে হবে আয়ান চৌধুরী কার হ্যাজবেন্ড।আয়ান ও সুযোগ পেয়ে প্রাপ্তিকে কোমর ধরে আরো কাছে টেনে এনে, তাই! কিন্তু আমার বউকে ছাড়া যে আমি কাউকেই ভাবতেই পারবোনা।
সুমি এসে দরজায় দাঁড়িয়ে, এতো রোমান্টিকতা দেখে আমি ইমপ্রেস হয়ে গেছি।যদি আমার হাতে নোবেল প্রাইজ দেওয়ার দায়িত্ব থাকতো আমি তোমাদের নামটাই নিতাম।

আয়ান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে, এই জন্যই তুমি সে দায়িত্বে নেই।তারাও বুজে কাকে কি দায়িত্ব দিবে।
প্রাপ্তি তাদের কথা শুনে মুখ টিপেটিপে হাঁসছে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৫

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আয়ান প্রাপ্তির দিকে ফিরে নিজের থুতনিটা প্রাপ্তির মাথার উপর রেখে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, কখনো নিজেকে অবহেলা করবেনা।নিজের মাথা উঁচু করে বাঁছতে শিখো।নিজের পায়ের তলার মাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো।নিজেকে স্ট্রং ভাবে গড়ে তোলো প্রাপ্তি।তোমাকে এইটা ভুলে গেলে চলবেনা তুমি আয়ান চৌধুরীর ওয়াইফ। আয়ান এতো সহজে ভেঙে পড়েনা।তেমনি তুমিও ভেঙে পড়বেনা।আমি সারা জীবন তোমার পাশে ছায়ার মতো থাকবো না তোমাকে সামলানোর জন্য।তোমাকে পরিস্থিতির সাথে সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।কথা গুলো বলে প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে চলো ফ্রেশ হবে।কোনো ভুলভ্রান্তি মনে রাখবেনা।সারা দিনে চেহারাটার কি অবস্থা করেছো আয়নাটা একবার দেখো।কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তিকে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি দেখে আসছি বাহিরের কি অবস্থা। বিকাল থেকে সবাই তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছে।
আয়ান রুম থেকে বাহিরে গিয়ে দেখে সবাই এখনো ড্রইংরুমেই বসে আছে।আয়ান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে কি ব্যাপার সবাই এইভাবে বসে আছো।অরণী! নীরাকে এখনো বসিয়ে রেখেছো কেনো?নীরা আর ভাইয়াকে ওদের রুমে দিয়ে আসো সবাই।আয়ান এমন ভাবে কথা বলছে জেনো কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

অরণী -ভাইয়া আমি অনেক আগেই বলেছি।কিন্তু সবাই বলছে আপু আসুক তারপর।নীরা ভাবী ও তাই বলছে।আপুকে না দেখে রুমে যাবেনা। প্রাপ্তি অনেকক্ষণ পরে গোসল করে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে খাটের উপর এসে বসলো।আয়ানের কথা গুলো তার কানে বাজছে, আজ নিজেকে খুব ভাগ্যে বাণ মনে হচ্ছে আয়ানকে জীবনে পেয়ে।আয়ানের এই ভালোবাসা, বিশ্বাস আমার প্রতি সারাজীবন থাকবে তো? নাহ্ এইটা আমি কি ভাবছি ও আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারেনা। কথা গুলো ভাবতেই নীরা দরজায় এসে দাঁড়িয়ে, আপু আসবো?
প্রাপ্তি দরজায় নীরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, নীরা পারমিশন নেওয়ার কি আছে? ভিতরে আসো।এই বাড়িটা এখন থেকে তোমারও আমারা শুধু দুই দিনের অতিথি। তাই পারমিশন নিতে হবেনা।
নীরা রুমের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে, আপু তুমি তো দেখছি আমাকে এখনি পর করে দিতেছো।যাইহোক আগে এইটা বলো তোমার শরীর এখন কেমন আছে?

প্রাপ্তি -নিছের দিকে তাকিয়ে, হুম আমি ঠিক আছি।তোমাকে এখনো এতো রাত পর্যন্ত বসিয়ে কে রেখেছে?

নীরা -আপু আমি আপনাকে দেখবো বলেই রুমে যাইনি।
আয়ান এসে রুমে ঢুকেই কি ব্যাপার নীরা আপুকে দেখতে চেয়েছিলে এখন দেখে তাড়াতাড়ি রুমে যাও বলেই আয়ান তোয়ালেটা নিয়ে ওয়াশ রুমে যাবে এমন সময় নীরা প্রাপ্তির পাশে গিয়ে বসে আচ্ছা আপু তুমি জয় কে দেখে এইভাবে চিৎকার দিলে কেনো? তুমি কি ওকে আগে থেকে চিনতে? কথাটা শুনেই আয়ান থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো।প্রাপ্তি আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ান নীরার কাছে এগিয়ে এসে নীরা ওই ছেলেটা তোমার কি হয়?
নীরা উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়া ও তো আমার কাজিন হয়।
আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে।প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে গিয়ে বালিশটা ঠিক করে দিয়ে প্রাপ্তিকে শুয়ে কাঁথাটা গায়ের উপর দিতে দিতে নীরা তুমি এখন যাও।তোমার সাথে আমি সকালে কথা বলবো।

নীরা -ভাইয়া আমি কি কোনো অন্যায় করে ফেলছি?
আয়ান -নীরা! তোমার আপু একটু অসুস্থ এখন তোমার সাথে ও কোনো কথাই বলবে না।সকালে দেখবে ও তোমার সাথে ঠিক কথা বলবে।অরণী! অরণী! কোথায় তুমি?

আয়ানের ডাকে অরণী এসে ভাইয়া কিছু বলবে?
আয়ান -নীরাকে নিয়ে ওর রুমে দিয়ে আসো।যাও নীরা অরণীর সাথে যাও।
নীরাকে সুমি আর অরণী রুমে দিয়ে গেলো।
আসিফ অভ্র আর আকাশের সাথেই বসে কথা বলছে।সুমি এসে আসিফকে বললো,নীরাকে রুমে দিয়ে আসছি তুমি রুমে যাও।

আকাশ -আসিফ তাহলে শুভ কাজে আর দেরি করা ঠিক হবেনা।তুমি রুমে যাও ভাই।বলেই হাঁসতে শুরু করলো।আকাশের কথা শুনে আসিফ লাজ্জা পেয়েছে দেখে, অভ্র আসিফকে জোর করে উঠিয়ে রুমের দরজার সামনে এনে ভাই বাকী টা আপনার জন্য রেখে গেলাম।অভ্র আসিফকে দিয়েই হাঁসতে হাঁসতে এসে আকাশের পাশে বসলো।অভ্র ফোনের এসএমএস এর শব্দ শুনে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আয়ান তাকে এসএমএস করেছে ছাদে যাওয়ার জন্য, সেইখানে অভ্রর জন্য অপেক্ষা করছে।অভ্র সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ছাদে গিয়ে দেখে আয়ান ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।অভ্র এসে
পিছনে দাঁড়িয়ে,আয়ান হঠাৎ এই সময় ছাদে? অভ্রর কথা শুনে আয়ান পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।

অভ্র -প্রাপ্তির কি অবস্থা এখন? বিকেলবেলা আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ওর অবস্থা দেখে।তুই ওকে একা রেখে ছাদে আসা এখন একদম ঠিক হয়নি।তোর যদি কিছু বলার থাকে সেটা কালকেও তো বলতে পারতি।

আয়ান -আমার হাতে এতো সময় নেই।তোকে যেই কাজের জন্য ডেকেছি সেটা মন দিয়ে শুন,আজ যেই ছেলেকে দেখে প্রাপ্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো তার নাম জয়।

অভ্র ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, তুই কি করে জানলি?

আয়ান -নীরা বলেছে।ওই ছেলেটা নীরার কাজিন হয়।তুই এক কাজ কর ওই ছেলের বাড়িতে খবর নে কে কে আছে।ছেলেটা কোথায় কি করে।সব ডিটেল আমার চাই আর সেটা অল্প সময়ের মধ্যেই।

অভ্র -হুম।সময় মতো পেয়ে যাবি।আগে এই বাড়ির ভেজাল মিটে যাক।

আয়ান -ওকে।আর এই কথা গুলো শুধু তোর আর আমার ভিতরে থাকবে।চল এইবার নিছে যাই।
আয়ান এসে দেখে প্রাপ্তি ঘুমাচ্ছে।প্রাপ্তির মাথার উপরে হাত রেখে, বিড়বিড় করে বলছে,আল্লা যা করে ভালোর জন্যই করে প্রাপ্তি! ওই ছেলের তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হয়েছে।কারণ ওদের শাস্তিটা যে পাওনা রয়ে গেছে।আর সে শাস্তি দিবে তোমার আয়ান।যে তোমাকে তার ছেয়ে বেশি তোমায় ভালোবাসে,বিশ্বাস করে।ওদের সবাইকে আমি এমন শাস্তি দিবো যে কোনো মেয়ের দিকে তাকালে আগে আয়ান চৌধুরীর কথা মনে করবে।আয়ান লাইট অফ করে দিয়ে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে বুকের উপরে রেখে শুয়ে পড়লো।
প্রাপ্তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।

সকাল বেলা সুমি আর ঝিনুক ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রইংরুমে বসেছে।রুমকি এসে সুমির কোলে উঠে বসেছে দেখে ঝিনুক কড়া গলায় রুমকিকে বললো, রুমকি তোমার মা মনি মাত্র এসে বসলো আর তুমি আসতে না আসতেই কোলে উঠে গেলে? তুমি এখন বড় হয়েছো, নামো কি হলো নামো বলছি!

সুমি -আপু থাকনা! কে বলেছে রুমকি বড় হয়েছে আমার কাছেতো আমার ছোটো আম্মুটাকে এখনো ছোটোই আছে।(রুমকির গালে একটা চুমু দিয়ে)

ঝিনুক -ভাবী তুমি ওকে আশকারা দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো।আর তুলো না পরে নামাতে পারবেনা।

নিলিমা বেগম আর অরণী রান্নাঘরে সবার জন্য নাস্তা রেডি করছে।নীরা উঠে এসে ড্রইংরুমে সুমি আর ঝিনুককে দেখে মুচকি হাঁসি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।
নীরাকে দেখে অরণী বললো কি ব্যাপার ভাবী এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো?
নীরা এই কথার আনসার না দিয়ে আপু আমি তোমাদের সাথে হেল্প করি?
নিলিমা বেগম নীরা কথায় মুচকি হেঁসে একটু এগিয়ে এসে, একদম না! তুমি মাত্র কাল এই বাড়িতে এসেছো কয়েক দিন যাক তারপর না হয় আস্তে আস্তে সব শিখিয়ে দিবো।অরণী এসে চায়ের ট্রে টা হাতে দিয়ে তোমাকে আর কোনো কাজ করতে হবেনা শুধু চা টা সবাইকে দিয়ে আসো।
নীরা হাতে চায়ের ট্রে টা নিয়ে, আপু এইখানে চায়ের সাথে যে কফি ওইটা কাকে দিবো?

অরণী -ওহ তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি, ওই কফিটা আয়ান ভাইয়াকে দিও।
নীরা সবাইকে চা দিয়ে নিজের রুমে আসিফের জন্য চা নিয়ে আসলো।
আসিফ ফ্রেশ হয়ে এসে নীরার থেকে চা নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চা কি তুমি বানিয়েছ?

নীরা -না! শুধু হাতে করে আপনার জন্য নিয়ে আসলাম।চা মা বানিয়েছে।

আসিফ -সেটা আমি ভালো করেই জানি চা আমার মা বানিয়েছে,দেখলাম আর কি তুমি কি বলো।

নীরা -ওওও আচ্ছা।তোহঃ আপনার ঘুম কেমন হলো?এতো ঘুম কাতুরী মানুষ আমি জন্মেও দেখিনি।

আসিফ -হুম বেশ ভালো।কিন্তু এই প্রশ্নটা কেনো?

নীরা -কেনো সকাল হতেই ভুলে গেলেন? মানুষ বাসর রাত নিয়ে নাকি অনেক সপ্ন দেখে, কিন্তু আপনি,,,,,,,আচ্ছা আপনি সারাজীবন ঘুম সপ্ন দেখে আসছিলেন নাকি?তাই মনে হয় কাল রাতে কুমড়ো পটাশের মতো পড়ে ঘুমিয়েছেন।
নীরা কথা শুনে আসিফ অট্র হাঁসিতে গড়াগড়ি পড়তে লাগল।নিজের হাঁসিকে একটু কন্ট্রোল করে,আছা কুমড়োপটাশ টা কে? তোমার নানা না দাদা?
আসিফের কথা শুনে নীরা এক গাল অভিমান নিয়ে, আপনি হাঁসছেন?আপনি জানেন? আপনার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে আমি আপনাকে নিয়ে কতো ভেবেছি।ভেবেছিলাম সারারাত বসে আপনার সাথে গল্প করবো।কিন্তু আপনি পড়ে পড়ে ঘুমালেন।

আসিফ -সরি নীরা! ওকে তোমার সাথে আজ সারারাত বসে গল্প করবো।এইবার তো একটু হাঁসো।

আয়ান কফি হাতে করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে সবাই ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছে।নিহাদ আয়ানকে দেখে, কি শালা বাবু তোমার বউয়ের কি অবস্থা?

আয়ান বসতে বসতে একদম পারফেক্ট।

আজাদ সাহেব এসে সিয়ামকে বললো, সিয়াম! নতুন বউদের বাড়ি থেকে লোক জন কয়টার সময় আসবে খবর নিয়ে দেখো।অবশ্য যাদের আয়ান রান্নার জন্য এনেছে তাদের রান্না ঘনিয়ে আসছে।

আয়ান এদিক সেদিক তাকিয়ে রেশী কোথায়? এই বাড়িতে আশার পর দেখছি দূরে দূরে সরে থাকে। ওর কি মন খারাপ নাকি অন্য কিছু তাও তো বলছে না।রেশী! রেশী! বলে ডাকতেই রেশী ড্রইংরুমে এসে ভাইয়া আমাকে ডেকেছেন?
এইদিকে নিহাদের চোখে চোখ পড়তেই রেশী নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়ান -রেশী! কি হয়েছে তোর? এইরকম দূরে দূরে সরে থাকিস কেনো?

নিহাদ আয়ানের কথা শেষ হতেই, আয়ান! যদি বলি আমার জন্য মনে হয় ও দূরে দূরে থাকে।হয়তো আমার থেকে আড়াল হওয়ার জন্য।
নিহাদের কথা শুনে আয়ান অবাক হয়ে নিহাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রেশীর দিকে তাকালো।

চলবে,,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৪

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তিদের সবাই নীরাদের বাড়িতে পৌঁছালো।গাড়ি থেকে নেমে মেয়েরা সবাই বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো।নীরাকে আগেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।নীরার মা আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে।প্রাপ্তি নীরার রুমে আসতেই নীরা সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরে, আপু কেমন আছেন?

প্রাপ্তি -আমি তো ভালো।তোমার অবস্থা কী?
অরণী এসে, বাহ্ বড় ননদ কে পেয়ে আমার একটু খবরও নিলো না।আমি কিন্তু রাগ করতেছি।নীরা মুচকি হেঁসে না আপু আমি তো জিজ্ঞাস করতে ছিলাম বড় আপুকে এর আগেই তো আপনি চলে আসলেন।

অরণী -হুম আমাকে আর বুজাতে হবে না।তবে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।আর ক্রেডিট টা কিন্তু আয়ান ভাইয়ার।

প্রাপ্তি-চুপ করতো।নীরা! আসো তোমাকে সুমির সামনে এনে ইনি হচ্ছে তোমার আয়ান ভাইয়ার বড় ভাবী, ইনি বড় আপু ঝিনুক।এই হচ্ছে রেশী তোমার আরেকটা ছোটো বোন।প্রাপ্তি নীরাকে অনেকের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিলো।
আয়ান ভিতরে এসে রেশীকে দেখতে পেয়ে, রেশী তোর ভাবী কোথায়?

রেশী -ভাইয়া ভাবীতো নীরা আপুর রুমে আছে।
আয়ান নীরার দরজার সামনে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি সবার সাথেই কথা বলছে।আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
অরণী দরজার দিকে তাকিয়ে কেনো আসতে চাইছো তা তো বুজি।নীরাকে দেখতে এসে নিজের মানুষকে দেখে যাওয়ার আরকি।
আয়ান ভিতরে ঢুকে অরণী তুমি বলো নিজের মানুষকে না দেখলে কাকে দেখবো।তবে আমি সত্যিই নীরাকে দেখতে আসছি।নীরাদের ফ্যামিলির অনেকেই এবং তার কাজিনরা জিজ্ঞাস করতে লাগলো ইনি কে?নীরা তার কাজিনদের বিড়বিড় করে বললো,ওই যে বড় আপু দাঁড়িয়ে আছে ওনার হ্যাজবেন্ড।
নীরার কাজিন অবাক হয়ে কি বলিস দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো বিয়েই করেনি।দেখলে তো যে কোনো মেয়েই ক্রাশ খাবে।

নীরা -তুই একটু চুপ কর।আপু শুনলে না তোর বারো টা বাজাবে।

আয়ান -নীরাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে কি বলো প্রাপ্তি।আসিফ ভাইয়া তো আজ চোখ ফিরাতেই পারবে না।কথাটা বলে শেষ করতেই আকাশ, নিহাদ আরো কয়েক জন মুরব্বি নীরার রুমে এসেছে বিয়ে পড়ানোর জন্য।
বিয়ে পড়িয়ে শেষ করে সবাই বাহিরে চলে গেলো।নিহাদ আয়ানকে প্রাপ্তির সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ভাই! তুই একটা জিনিশ। বউকে তোর চোখের আড়াল হতেই দিবিনা।বউয়ের গন্ধ শুঁকে ঠিকি জায়গা মতো চলে এসেছিস।যাই আমার বউটা কোথায় একটু খুঁজে দেখি।বলেই নিহাদ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বিয়ের সব আয়োজন শেষ করে আসিফদের বাড়িতে ফিরার ফালা।নীরাকে বাসা থেকে বের হতেই প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে গেলো।
আসিফ প্রাপ্তিকে দাঁড়াতে দেখে, প্রাপ্তি! দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো? আয়ানের জন্য নাকি? আয়ান তো একটু আগেই বাহিরে গেলো।

প্রাপ্তি- ভাইয়া! আমার ফোনটা মনে হয় নীরার রুমে রেখে আসছি। তোমরা এগিয়ে যাও আমি আসছি।

প্রাপ্তি নীরার রুমে গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসতেই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।ছেলেটার মুখ দেখার আগেই ছেলেটা সরি বলে নিচের দিক থেকে ফোনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির হাতে দিতেই প্রাপ্তি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে হাঁপাতে শুরু করলো।আসিফ এগিয়ে এসে প্রাপ্তিকে ধরে, প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোর? এই রকম চিৎকার দিয়েছিস কেনো। কেউ আয়ান কে ডাকো তো।
ছেলেটা ভয়ে পেয়ে কিছু না বলেই এইখান থেকে সরে গেলো।আসিফ প্রাপ্তির অবস্থা দেখে ছেলেটার দিকে খেয়াল করেনি।আয়ান এসে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে নিয়ে ভাইয়া প্রাপ্তির কি হয়েছে?

আসিফ -আয়ান আমিও তো বুজতে পারছিনা।একটা ছেলেকে দেখেই এইরকম করছে (ছেলেটা কে দেখতে না পেয়ে)আরে এই ছেলেটা কোথায় গেলো? এখানেই তো ছিলো।

আয়ান -ভাইয়া আপনার বাড়িতে যান।আমি ওকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছি।বলেই প্রাপ্তিকে কোলে তুলে নিলো।

আসিফ -চলো আমিও যাচ্ছি।

আয়ান -না ভাইয়া আপনারা যান আমি ওকে ডাক্তার দেখিয়েই চলে আসছি।বেশীকিছু হলে আপনাদের জানাবো।

অভ্র এসে, আয়ান! চল আমি ও তোদের সাথে যাচ্ছি। সাবাই বাড়ির দিকে রওনা হলো।আয়ান প্রাপ্তি আর অভ্র হাসপাতালের দিকে গেলো।
প্রাপ্তি কোনো কথা বলছেনা চোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছেনা।
ডাক্তার প্রাপ্তিকে ভালো করে দেখে একটা ইনজেকশন দিয়ে আয়ানকে বললো,আপাদত ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি।এখন ঘুমিয়ে পড়লে ছয় ঘন্টা পর ঘুম ভাঙবে। এর মাঝে আপনারা বসে অপেক্ষা করুন।

আয়ান -কিন্তু আপনি বললেন না তো ওর কি থেকে এই প্রবলেম টা হয়েছে।

ডাক্তার বসতে বসতে আয়ান কে বললো,আপনার কথা শুনে যতোটুকু বুজলাম,ওনি এমন কিছু দেখেছে যা দেখে ওনি সহ্য করতে পারেননি।আর আপনি বলেছেন একটা ছেলেকে দেখার পর এই অবস্থা,এর থেকে আমার যতোটুকু ধারনা ওই ছেলের সাথে ওনার এমন কোনো কানেক্ট আছে তাই ওই ছেলেকে দেখে ওনার পুরোনো কিছু মনে পড়ে গেছে।তাই ওই আঘাতটা সহ্য করতে না পেরেই এই অবস্থা হয়েছে।
ডাক্তারের কথা শুনেই আয়ান চুপ করে আছে।হয়তো বুজার চেষ্টা করছে ওই ছেলেটা কে হতে পারে।
আয়ান অভ্রকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিজে হাসপাতালে বসে অপেক্ষা করছে আর ভাবছে ছেলেটা কে? এই ছেলের সাথে প্রাপ্তির কি এমন সম্পর্ক হতে পারে?নাকি এই ছেলে প্রাপ্তির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে কোনো যোগ আছে?
আমার কোনো কিছুই মাথায় ধরছেনা।প্রাপ্তি ঘুম থেকে উঠুক তার পর না হয় দেখা যাবে।
ছয় ঘন্টা পর প্রাপ্তির ঘুম ভাঙল কিন্তু কোনো কথা বলছেনা।আয়ানও কিছু জিজ্ঞাস করেনি।হাসপাতাল থেকে প্রাপ্তিকে বাড়ি নিয়ে আসল আয়ান, কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো প্রাপ্তি।সারাটা পথ আসতে আসতে চুপ হয়ে ছিলো।শুধু চোখের পানি গুলোই ঝরেছে।আয়ানও একটা কথাও জিজ্ঞাস করেনি।আয়ান ড্রইংরুমে সোফায় এসে বসলো।নীরাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত।আয়ানকে এসে বসতে দেখে আসিফ এসে, আয়ান! ডাক্তার কি বলেছে? প্রাপ্তির হঠাৎ করে কি হয়েছে?আয়ান কপালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে।

আস্তে আস্তে সবাই এসে আয়ানের চারপাশে জড়ো হলো কিন্তু আয়ান খেয়াল করিনি।সুমি আয়ানের কাঁধে হাত দিতেই আয়ান চমকে উঠে সুমির দিকে তাকালো।

সুমি-প্রাপ্তি দেখেছি কাউকে কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো।কি হয়েছে ওর? আসিফও তোমায় জিজ্ঞাস করছে কোনো আনসার দিচ্ছো না।
আয়ান সুমির থেকে চোখ ফিরিয়ে দেখে সবাই জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আসিফ -কি হলো আয়ান,কথা বলছো না কেনো?
আয়ান ভাবছে এইখানে কিছু বলা যাবেনা।সবার সামনে এইভাবে কিছু বললে আমার প্রাপ্তিকেই ছোটো করা হবে।(আসিফের দিকে তাকিয়ে)ভাইয়া!মায়ের রুমে চলুন। আপনার সাথে আমি আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই।

আসিফ -ঠিক আছে চলো।
আসিফ আর আয়ান নিলিমা বেগমের রুমে এসে বসলো।

আয়ান অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে, ভাইয়া! আজ প্রাপ্তি যে ছেলেকে দেখে চিৎকার দিয়েছিলো আপনি ছেলেটাকে দেখেছেন?

আসিফ -প্রাপ্তির অবস্থা দেখে তখন তো খেয়াল করিনি।কিন্তু পরে দেখি ছেলেটা ওইখানে নেই।কিন্ত আয়ান! কেনো ওই ছেলেকে খুঁজতেছো?

আয়ান- ওই ছেলেকে প্রাপ্তি মনে হয় ছিনে।ওই ছেলের সাথে প্রাপ্তির এমন কোনো যোগ আছে যা দেখে প্রাপ্তির সহ্য হয়নি। আমার মনে হয় প্রাপ্তির সাথে যে ঘটনা ঘটেছিলো ওই ছেলের ওই ঘনার সাথে কোনো না কোনো যোগ আছে।আপনি এখন এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।আমি খবর নিয়ে দেখছি।
বলেই আয়ান রুম থেকে বেরিয়ে এলো প্রাপ্তির কাছে যাবে বলে।প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে পুরোটা রুম অন্ধকার হয়ে আছে।আয়ান লাইট ধরিয়ে দেখে প্রাপ্তি এক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
আয়ানকে লাইট ধরাতে দেখে প্রাপ্তি চোখমুখ কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকালো।
আয়ান এসে প্রাপ্তির পাশে বসলো।প্রাপ্তির এক হাতকে নিজের হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে শক্ত করে ধরে,আমি তোমাকে জিজ্ঞাস করবো না ছেলেটা কে? বলবোনা ছেলেটাকে দেখে তুমি কেনো চিৎকার দিয়েছো।শুধু এইটুকু বলবো ছেলেটাকে কি শাস্তি হলে তুমি খুশি হবে?কথাটা শুনে প্রাপ্তি নিজের টলমল করা দুটো চোখ নিয়ে আয়ানের চোখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সারাটা পৃথিবী এক দিকে আর আমার কাছে তুমি আরেক দিকে।প্রাপ্তি তোমার অতীত তোমার সামনে আসবেই তাই বলে তুমি ভেঙে পড়বে? তুমি যতো ভেঙে পড়বে এই সমজের লোক গুলো তোমাকে দেখে মজা নিবে।কেউ তোমার ভালো চাইতে আসবে না। তারা চাইবে না তুমি এই সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁছো ।এই সমাজের সব লোক তোমাকে এক চোখে দেখবেনা।নিজের মনকে শক্ত করে এই সমাজে বাঁছতে শিখো।আমি তোমার পাশে আছি আর সারাজীবন থাকবোও। তোমার প্রতি আমার কখনো কোনো ভালবাসার কমতি হবেনা।কথা গুলো বলেই আয়ানের চোখে পানি টলমল করছে।কিন্তু প্রাপ্তির সামনে এই চোখের পানি গুলো আমায় যে লুকাতে হবে,তাই উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। প্রাপ্তি হঠাৎ করে এসে আয়ানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো তুমিই আমার জীবনের একমাত্র মানুষ যে আমাকে নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে।

চলবে,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৩

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

অভ্র -ঠিক আছে চলো আমি সহ যাচ্ছি।
রেশী আর কথা বাড়ালো না।নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

_দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে অভ্র বার বার রেশীর দিকে তাকাচ্ছে।রেশীও আড় চোখে তাকিয়ে অভ্রকে দেখছে।

অভ্র-রেশী! তুমি কি কাউকে কখনো ভালোবেসেছো?মানে তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?
রেশী নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।

অভ্র -কি বলো তোমার মতো এতো সুন্দরী একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নেই এইটা তো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
কথা বলতে বলতে আবার দুজনে হাঁটতে লাগলো।

আয়ান -কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো যেতে বলছিতো।
প্রাপ্তি আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দরজার দিকে একটু এগিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো। পিছনে ফিরে দেখে আয়ান মন খারাপ করে অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে আবার দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি চোখ দুটো বন্ধ করে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।চোখ বন্ধ করা ওই মায়াবী মুখটা দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে।ইচ্ছে করবে তাকে শত জন্মে ভালোবাসতে।ইচ্ছে করবে ওর মতো মানুষটাকেই সারাজীবন পাশে পেতে।ওকে দেখে নিজের চোখের পলক ফেলতে ইচ্ছে করেনা।একটা পলক ফেললেই মনে হবে শত যুগ এই মায়াবী মুখটা দেখা হবে না।

আয়ান -(আস্তে আস্তে নরম স্বরে)প্রাপ্তি! এই প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমার?

প্রাপ্তি আয়ানের বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে আয়ানের মুখে আঙুল দিয়ে চুপ তাকতে ইশারা করলো।
আয়ান প্রাপ্তির হাতটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে নিচে নামালো।আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট দুটো প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে আনতে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেললো।আয়ান ঠোঁট প্রাপ্তির ঠোঁটের সাথে ছোঁয়া লাগাতেই
অভ্র এসে আয়ান তুই,,,,,,,,,
কথাটা বলতেই আয়ান চমকে উঠে প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে, অভ্র!তুই এইসময়?
অভ্র-সরি সরি আমি কিছু দেখিনি।
আয়ান রেশীর দিকে তাকাতেই রেশী রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তিও লজ্জা পেয়ে কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।
অভ্রর প্রতি আয়ানের খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতেও পাচ্ছেনা।অনেক ধৈর্যের পরিক্ষা দিয়ে প্রাপ্তির এতো কাছে গেলাম আর অভ্র এসে সব ভেস্তে দিলো।

অভ্র -সরি রে,,,আমি সত্যি তোদের এইভাবে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।উপরের সবাই তোদেরকে না দেখতে পেয়ে ডাকছে।সরি বন্ধু এইরকম সময়ে ডিস্টার্ব করার জন্য।

আয়ান-(নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে)নো প্রবলেম! রেশীকে দেখে একটু খারাপ লাগছে।

অভ্র -আরে রেশীকি এখনো ছোটো নাকি? ও সব বুজে।হয়তো শান্ত ভাবখানি নিয়ে থাকে।
আয়ান -তুই বুজচ্ছিস না কেনো।ও আমার ছোটো বোনের মতোই । কখনো এইটা ভাবিনি ওকে আমি রাস্তার পাশে পেয়েছি।তাই একটু খারাপ লাগছে।

অভ্র -আচ্ছা আয়ান তুই যখন ওকে পেয়েছিস ও কি তখন বিয়ের পোষাকে ছিলো তাইনা?

আয়ান -হুম। চল ছাদে যাই।

অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই নিচে নেমে এলো।নিলিমা বেগম সবাইকে ঘুমানো ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এই বাড়িতে এতো গেস্ট সবাইকে তো আর আলাদা আলাদা রুম দেওয়া যায় না।প্রাপ্তি নিচে এসে নিলিমা বেগমকে নিজের রুমটা আকাশদের আর অরণীর রুম টা ঝিকুকদের দিতে বললো।সুমি এসে প্রাপ্তির কথা শুনে প্রাপ্তি! এক দিন না ঘুমালে কিচ্ছু হবে না এককাজ করো যে যে আড্ডা দিতে চায় তাদের সবাইকে নিয়ে ছাদে চলো আমরা সবাই আড্ডা দিবো।

অরণী -ভাবী তুমি ঠিকি বলছো।

ঠিক আছে তোমরা সবাই যাও আমি তোমাদের সবাইকে কফি বানিয়ে দিয়ে আসবো।

প্রাপ্তি-আম্মু তুমি ঘুমাতে যাও! আমি সবার জন্য কফি বানিয়ে নিবো।

সুমি -হ্যাঁ আন্টি আমিও প্রাপ্তিকে হেল্প করবো।
নিলিমা বেগম মুচকি হেঁসে আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
সবাই উপরে চলে গেলো, রেশীকে সোফায় বসে থাকতে দেখে প্রাপ্তি এসে, রেশী! তুই যাবি না।প্রাপ্তির কথাটা শুনে রেশী তখনকার ঘটনার জন্য নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে।চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তি রেশীর সাথে বসে নিচের দিক থেকে নিজের দিকে রেশীর মুখটা ফিরিয়ে, তুই তখনকার ঘটনার জন্য লজ্জা পাচ্ছিস? আমি খেয়াল করলাম এর পর থেকে তুই আমার আর তোর ভাইয়ার থেকে দূরে দূরে থাকছিস।রেশী এইখানে তো তোর কোনো দোষ নেই।মাঝে মাঝে আমরা না চাইতেও এমন ঘটনা ঘটে আমাদের সাথে।এখন চল আমাদের সাথে আড্ডা দিবি।

রেশী -ভাবী তুমি যাও আমি আসছি।

প্রাপ্তি -ওকে আমি যাচ্ছি।তুই তাড়াতাড়ি আয়।কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।
রেশী বসে বসে নিহাদের কথা ভাবছে।সেইদিন ওনি আমাকে দেখতে এসেছিলেন। অনেক কথাও বলেছিলেন আমার সাথে।কিন্তু যদি সব আয়ান ভাইয়াকে বলে ভাইয়া আমায় কি ভাববে।অবশ্য ভাইয়াকে তো আমি সবি বলেছিলাম।আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।তারপরও কি আমায় ভুল বুজবে।আমার কি তাহলে এখন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমি কোথায় যাবো?আমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
অভ্র চেঞ্জ করে ছাদে যাবে তখনি দেখে রেশী বসে আছে।রেশীর কাছে একটু এগিয়ে এসে, রেশী তুমি উপরে যাবেনা?বসে বসে কি ভাবছো?
অভ্রর কথা শুন রেশী চমকে উঠে, হ্যাঁ!

অভ্র -তুমি কি কিছু ভাবছো নাকি?
কথাটা শুনে রেশী অভ্রর দিকে তাকালো।

অভ্র-না! তুমি চুপচাপ বসে আছো দেখেই কথাটা বললাম।আচ্ছা চলো ছাদে যাই।
রেশী অভ্রর পিছন পিছন ছাদে গেলো।
আয়ান রেশীকে দেখে অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি আয়ানকে ইশারা করলো রেশীর সাথে কথা বলার জন্য।সুমি অভ্র আর রেশীকে একসাথে দেখে, আয়ান! একটা জিনিস খেয়াল করেছিস রেশী আর অভ্রকে কিন্তু খারাপ লাগছেনা।দেখ দুজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে।কথাটা শুনেই রেশী অবাক হয়ে অভ্রর দিকে তাকালো।

সুমি -রেশী তুমি কি আমার কথায় রাগ করেছো?
রেশী কিছু বলছেনা অভ্রর দিকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।অভ্রও রেশীর দিকে অসহায় মতো তাকিয়ে আছে আর ভাবছে আমি তো ছেয়েই ছিলাম তোমাকে আমার সারা জীবনের সাথী করে রাখতে।কিন্তু সেইদিন কি এমন হলো তুমি আমাকে অসহায়ের মতো ছেড়ে দিয়ে আসলে।যেইদিন আয়ানের বাসায় আমি তোমাকে দেখলাম সেইদিন আমার মতো অবাক কেউ হয়েছে কিনা কখনো আমি জানিনা।
আয়ান দুজনের দিকে তাকিয়ে, অভ্র তুই যে ভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে ভাবী তোর সাথে সত্যিই রেশীকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।

আয়ানের কথা শুনে রেশীর থেকে চোখ ফিরিয়ে অভ্র কিছু না বলেই আকাশের সাথে গিয়ে বসলো।
সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সকাল হয়ে গেলো কেউ টেরি পেলোনা।সকাল বেলা সবাই নিচে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলো।আসিফ রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই নিহাদ বললো আসিফ! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকী এর মধ্যে যা খুশি করতে পারো,পরে আর পারবেনা।তখন মৃতদের মতোই থাকতে হবে চাইলেই নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারবেনা।

ঝিনুক -(ঝাড়ি দিয়ে)এই তুমি কি বলতে চাইছো বলোতো? বিয়ের পর সবাই মৃত হয়ে যায়?

আকাশ -ঝিনুক! নিহাদ কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি।বিয়ের পর ছেলেদে সব কিছুই চেঞ্জ হয়ে যায়।নিজের ইচ্ছা মতো কিছু করা যায়না।

সুমি -আমি কিন্তু এইখানেই বসে আছি।আমি কি তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে বারণ করেছি?এই প্রাপ্তি তুই করেছিস আয়ানকে কখনো?

আয়ান -সুইট হার্ট! প্রাপ্তি কিন্তু আমায় কোনো দিন কিছু বলেনি।আমি যেই ভাবে ইচ্ছে হয়েছে সেইভাবেই চলেছি।

প্রাপ্তি -ভাবী! আমি কি বারণ করবো বলো? নিজের ইচ্ছে মতো চললেও খারাপ কিছুতো করেনা।তাই আমার কখনো বারণ করতে হয়নি।শুধু চুপচাপ দেখেই যেতাম।

সবার কথা শুনে আসিফ বললো,এইতো দেখছি পুরোই ঝামেলা। প্রাপ্তি! তোরা কি জেনে শুনে আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছিস নাকি?

প্রাপ্তি -ভাইয়া তুই কি এখনো ছোটো বাচ্ছা? আজ তোর বিয়ে এখন তো একটু সিরিয়াস হও।

সিয়াম ফোনে কথা বলতে বলতে এসে এইযে সবাই নাস্তা করতে এসেতো ভালোই আড্ডা দিচ্ছেন! মেয়ের বাড়ি থেকে নিশান ফোন করেছে আমরা কখন রওনা দিবো?
কিন্তু আপনারা সবাই যে ভাবে আড্ডা দিচ্ছেন আজকে তো রওনা দিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।

আয়ান -সিয়াম কিন্তু ঠিক কথায় বলেছে।মেয়েদের তো আবার সাজতে সাজতে একদিন কাটিয়ে দেয়।

অরণী -ভাইয়া নিজের বউ সাজেনা বলে আমাদেরকে কথা গুলো বলছো তাইতো?

আকাশ -আচ্ছা সবাই যাও রেডি হয়ে নাও।সিয়াম কিন্তু সত্যি বলছে মেয়েদের বাড়িতে যেতে অনেক লেট হয়ে যাবে।

আকাশের কথা শুনে সবাই উঠে গেলো রেডি হওয়ার জন্য।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩২

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩২

#Rabeya Sultana Nipa

 

__গাঁয়ে হলুদের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।অভ্র আর আকাশ আসিফকে রেডি করিয়ে ড্রইংরুমে নিয়ে আসলো।সবাই রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। রেশীকে দেখে অভ্র হা করে তাকিয়ে আছে।আয়ান সবাইকে ড্রইংরুমে দেখতে পেয়ে প্রাপ্তিকে না দেখে, অরণী! তোমার আপু কই তাকে তো দেখছিনা? নিলিমা বেগম এসে এই মেয়েটা যে কি করছে আল্লাই ভালো জানে।

আয়ান- তোমরা সবাই ছাদে যাও আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে আসছি বলেই আয়ান প্রাপ্তির রুমের দিকে এগুতেই প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে এলো।প্রাপ্তিকে দেখে আয়ান হা করে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।তার মনের অপ্সরী তার চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।সবাইও কম অবাক হয়নি প্রাপ্তিকে দেখে।সুমি আয়ানকে এইভাবে থাকতে দেখে আয়ানের কাছে এসে, হা বন্ধ করো, না হলে মশা ঢুকে যাবে।
আয়ান লজ্জা পেয়ে মন না চাইলেও প্রাপ্তির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

নিলিমা বেগম -কিরে,,, প্রাপ্তি! এতো দেরী হলো কেন?

প্রাপ্তি -রেডি হতেও তো সময় লাগে তাইনা।তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো!

সবাই ছাদে চলে গেলো। নিহাদ বার বার অভ্র আর রেশীর দিকে তাকাচ্ছে।রেশী চুপচাপ হয়ে অরণীর সাথে বসে আছে।অভ্র আয়ানের সাথে বিভিন্ন কাজে হেল্প করছে।সবাই একে একে আসিফকে হলুদ লাগাচ্ছে আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।আজাদ সাহেব আয়ান আর অভ্রকে ডেকে নিয়ে যা যা নিয়মনীতি আছে সব কিছু তাড়াতাড়ি শেষ করবে।রাত যেনো বেশি না হয়।

অভ্র -আংকেল আপনি চিন্তা করবেন না। আমরাতো আছিই।

ঝিনুক নিহাদের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে,ঝিনুক চুপ করে না থেকে,এই তোমার সমস্যা কোন জায়গায় বলোতো? আসার পর দেখছি গোয়েন্দাগিরি তে নাম লিখিয়েছো।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এইখানে আসিফের বিয়ের ইনজয় করতে আসোনি।এসেছো গোয়েন্দাগিরি করতে। চোখ গুলোকে একবার এই দিকে আরেকবার ওই দিকে করছো। সবাই কি ভাববে বলোতো?

নিহাদ -চুপ করবে? চোখ গুলো কোথায় নিয়ে থাকো সেটা বলো? ওইযে আয়ানের পাশের ছেলেটার দিকে তাকাও! ওকে চিনতে পারো কিনা দেখো?

ঝিনুক বিরক্তিকর ভাব নিয়ে তাকাতেই আশ্চর্য হয়ে, অভ্র!

নিহাদ -হুম অভ্র!

ঝিনুক – ও এইখানে কিভাবে? আমিতো কিছুই বুজতেছিনা।ওর সাথে তুমি কথা বলনি।দাঁড়াও আমি গিয়েই ওর সাথে কথা বলছি।কথাটা বলেই ঝিনুক উঠতেই নিহাদ হাত ধরে, বসো এই খানে।ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে কিন্তু ও আয়ানের সামনে আমাকে না চিনার ভাব করছে।কিন্তু কেনো সেটাই বুজতে পারছিনা।

ঝিনুক -কিন্তু অভ্র এইখানে কার রিলেটিভ হয়? প্রাপ্তিদের?

নিহাদ -না! তোমার ছোটো ভাইয়ের।মানে আয়ানের বেষ্ট ফ্রেন্ড। আয়ানের হয়েই সে এই বাড়িতে।

ঝিনুক -তাহলে সমস্যা নেই! একজন আরেক জনের ফ্রেন্ড হতেই পারে।জীবনে চলার পথে কত মানুষ আসে আর যায়।তবে অভ্রকে অনেক দিন পরে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।ছেলেটার সহ্য শক্তি অনেক।ওর জায়গা অন্য কেউ থাকলে সেইদিনের অপমানে ভেঙে পড়তো। কিন্তু অভ্র নিজের জীবনকে নতুন ভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলো। তবে মেয়েটা জানতেই পারলোনা মেয়েটা অভ্রকে বিয়ে না করে কত বড় ভুল করেছে।অভ্রর মতো এইরকম ছেলে কয়জনের ভাগ্যে জুটে।

নিহাদ -(একটু চুপ করে থেকে)আচ্ছা ঝিনুক আমি যদি বলি সেইদিনের মেয়েটা আজ এইখানেও আছে তুমি কি অবাক হবে?

ঝিনুক-(একটু জোর গলায়)কিহ্! অবাক হবোনা মানে?ওই মেয়েকে পেলে আমি আগে এইটা জিজ্ঞাস করতাম অভ্রর কোন দিকে কম আছে ? অভ্রকে কেনো সেইদিন সবার সামনে অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে?মানুষে সামনে হাঁসির পাত্র বানিয়েছে কেনো?সেইদিন অভ্রর মা বাবাকে কতোটা হেনস্থা হতে হয়েছে।কই মেয়েটা! আমাকে একবার দেখিয়ে দাওতো।আজকে মেয়েটা আমার সব প্রশ্নের আনসার দিতেই হবে।

নিহাদ-ঝিনুক! প্লিজ এখন চুপ করো।তুমি এখন কোনো ঝামেলা করোনা প্লিজ।ওদের বিয়েটা মিটে যাক তারপর না হয় এইসব নিয়ে কথা বলা যাবে।

ঝিনুক -তুমি আগে এইটা বলো মেয়েটা কে? আমি মেয়েটা কে দেখতে চাই।

নিহাদ -রেশী! আয়ানদের সাথে যে মেয়েটা থাকে সেই মেয়েটা।

ঝিনুক নিহাদের কথা শুনে অবাক হয়ে, কি বলো রেশী?আচ্ছা আয়ান কি এই মেয়ের ব্যাপারে সব জানে?

নিহাদ -সেটা তো জানি না।

আয়ান প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো নিচে যাওয়ার জন্য।ইশারা করে আয়ান নিচে চলে গেলো।প্রাপ্তিও নিচে নিজের রুমে আসতেই দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপতেছে।আয়ানকে দেখে নিজের কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে এখন তোমার ডাকার সময়? সবাই কি ভাববে বলো তো? সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমাকে এইখানে আসতে হয়েছে।
আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে।প্রাপ্তির কথা শেষ হতেই আয়ান প্রাপ্তিকে হেছকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে প্রাপ্তি কোমর জড়িয়ে ধরে মহারানী তুমি আমার জন্য সেজেছো কিন্তু আমার সামনেই আসছোনা।লজ্জা পাচ্ছো?

প্রাপ্তি -মোটেও না।লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

আয়ান সেটাই তো। তাহলে দূরে দূরে থাকছো কেনো?

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে আর মনে মনে ভাবছে আয়ানকে কি করে যে বুজাই।

প্রাপ্তি -চলো না উপরে যাই। সবাই হয়তো আমাদের খুঁজছে।

আয়ান -পালাতে চাইছো তাই তো। ওকে যাও।

আকাশ এইপাশ ওপাশ তাকিয়ে, সুমি! আয়ান কোথায়?

সুমি-প্রাপ্তি ও তো দেখছি এইখানে নাই।হয়তো দেখো দুই জনে লুকিয়ে প্রেম করছে।রেশী! যাওতো ওদের কে ডেকে নিয়ে আসো।

রেশী মুচকি হাঁসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে উঠে সিঁড়ির দিকে এগুতেই, অভ্র ও আসিফের কাছে যাচ্ছিলো এমন সময় রেশী অভ্রর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতেই অভ্র ধরে ফেললো।রেশী লজ্জা পেয়ে নিজেকে অভ্রর কাছ থেকে ছাড়িয়ে সরি ভাইয়া আমি দেখতে পাইনি।

অভ্র -আমার মনে হয় তুমি ইচ্ছে করেই আমার সাথে ধাক্কাটা খেয়েছো(হাঁসি চেপে রেখে)কি! ঠিক বলছিতো?

রেশী -(ভয়ে ভয়ে,) না না ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে একদম দেখতে পাইনি।আমি তো ভাইয়া আর ভাবীকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।

অভ্র-তাই! তার মানে তুমি ভালোবাসার মাঝ খানে ডিস্টার্ব করতে যাচ্ছিলে?

রেশী -না ভাইয়া সত্যি বলছি আমি ইচ্ছে করে যাচ্ছি না।সুমি ভাবী আমাকে বললো তাদের ডেকে আনতে।

অভ্র -না তুমি মিথ্যা বলছো। ছিঃ রেশী এইটা কি তুমি ঠিক করছিলে।দুজন মানুষ একান্তে সময় কাটাচ্ছে আর তুমি,,,,,,, আমি ভাতেই পাচ্ছি না।(রেশীকে খেপানোর জন্য কথা গুলো বলেই অভ্র মিটমিট করে হাঁসতে থাকলো)

রেশী অভ্রর কথা শুনে নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে।ওনি কেনো আমায় এইগুলো বলছে? আমি কি ইচ্ছে করে যাচ্ছিলাম নাকি।ওরাই তো আমাকে যেতে বললো।কেন ওনি বিশ্বাস করছেন না।কথা গুলো ভাবতেই রেশীর চোখের কোনে পানি এসে গেছে।
অভ্র -সেই দিন আমিও কান্না করেছিলাম।হয়তো এইকান্না আমি কাউকে দেখাতে পারিনি।তোমরা মেয়েরা যখন যেভাবে খুশি কাঁদতে পারে।কিন্তু আমরা ছেলেরা কখনোই কাঁদতে পারিনা।নিজেদের যন্ত্রণা গুলো নিজেদের মনের কঠোরেই রাখতে হয়। রেশী! কেনো সেইদিন আমাকে এতো কষ্ট দিলে?(সব কথা মাঝে এই কথা একটু জোরে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো)

রেশি কথাটা শুনেই মুখটা উঠিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে, ভাইয়া আপনি কিছু বলছিলেন?

অভ্র (বিব্রতভাব নিয়ে)না তোমাকে না!কোথায় যাচ্ছিলে যাও।

রেশী -না আমি যাবো না।

অভ্র -ঠিক আছে চলো আমি সহ যাচ্ছি।
রেশী আর কথা বাড়ালো না।নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩১

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩১

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তির কথা শুনে অভ্র মুচকি হেঁসে আচ্ছা আমি কোন রুমে থাকবো সেটা দেখিয়ে দাও।

আসিফ -তুমি আমার সাথে আসো আমার পাশের রুমটাই তোমার।প্রাপ্তি আগেই ঠিক করে রেখেছে।
সিয়াম বাহিরে থেকে এসে অরণীকে ডাকছে। অরণী এসে, এতক্ষণ লাগে আসতে? বাহিরে বের হলে কি তোমার বাসায় আসার কথা মনে থাকেনা তাইনা?তোমার সাথে তো আয়ান ভাইয়াও থাকে কই ওনি তো বাহিরে গিয়ে ফালতু সময় কাটায় না।

সিয়াম -আস্তে কথা বলোনা, সবাই শুনলে কি ভাববে?

অরণী -শুনুক না।সবাই শুনলে যদি তোমার একটু উন্নতি হয় আরকি।

প্রাপ্তি আর নিলিমা বেগম এসে,

নিলিমা বেগম -কিরে, তুই সিয়ামের সাথে এইরকম চিল্লাচিল্লি করছিস কেনো? বাসায় অনকে গেস্ট তারা কি ভাববে?

অরণী -আম্মু তুমি এর মাঝে কথা বলোনা।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে আমরা কথা বলবোনা।তোরা রুমে গিয়ে ঝগড়া কর মারামারি কর আমাদের কিছু যায় আসেনা।আর সিয়াম ভাইয়া! বউয়ে প্রতি একটু কেয়ার করতে শিখুন।

সিয়াম-আপু আপনি বলেন আমার কাজ থাকলে তো আমায় বাহিরে যেতেই হবে।কিন্তু অরণী শুধু শুধু আমায় বকা দিচ্ছে।

আয়ান এসে এই তোমরা সবাই পরে কথা বলো সিয়াম তুমি আমার সাথে আসো প্রাপ্তি তুমি যাবে? চল! মজার জিনিশ দেখাবো।

সবাই গিয়ে আসিফের রুমের দরজার সামনে গিয়ে,

আয়ান -চুপ করে সবাই শুনো।ভাইয়া নীরার সাথে কথা বলছে। আমরা সবাই গিয়ে একটু ডিস্টার্ব করে আসি।

সবাই রুমে ঢুকে,
আয়ান -ভাইয়া আপনি কি করছেন?
আসিফ সবাইকে দেখে, (তাড়াতাড়ি করে ফোন টা কান থেকে নামিয়ে) কই কিছু করছি না তো।

সিয়াম-ভাইয়া মনে হচ্ছে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন?

আয়ান সিয়ামের দিকে তাকিয়ে, আরে সিয়াম! তুমি কি বলছো ভাইয়া তো কিছু করছিলোনা।সমস্যা নেই ভাইয়া আমরা এখন বসে আপনার সাথে আড্ডা দিবো।
আয়ানের কথা গুলো শুনে সবাই মিটমিট করে হাঁসছে।

আসিফ -হ্যাঁ সমস্যা নেই।

অভ্র ফ্রেশ হয়ে এসে আমিও কিন্তু আড্ডা দিতে চলে এলাম তোমাদের সাথে।

অভ্র -ভাইয়া আমাদের নীরা ভাবীর সাথে ঠিকঠাক ভাবে কথা হয়তো? নাকি এখানেও আপনার লজ্জার ব্যাপার স্যাপার আছে?

আসিফ -(আমতা আমতা করে) অভ্র তুমি কিযে বলনা?

অভ্র -ভাইয়া আমি কি খারাপ কিছু বলে ফেললাম?আচ্ছা ভাবীর খবর আমরা না নিলে কে নিবে?

আসিফ -আমার কথা বাদ দাও, নিজে বিয়ে করছো না কেন? সব কিছু তো ঠিক আছে বিয়েটা করে ফেলো।

সবাই বসে আসিফের রুমে আড্ডা দিচ্ছে।নিলিমা বেগম রেশীকে বললো, রেশী! আসিফের রুমে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, একটু ডেকে আনোতো। সবাই খাবে কখন? আমি খাবার দিয়ে দিচ্ছি কষ্ট করে সবাইকে ডাকো।

রেশী -জ্বী আন্টি! আপনি খাবার রেডি করেন আমি সবাইকে ডেকে আনছি।

রেশী আসিফের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে, ভাবী! খাবার খেতে সবাইকে ডাকছে।

প্রাপ্তি-রেশী ভিতরে আসো।কিভাবে যে একা একা পড়ে থাকো বুজিনা।কোথাও যেতে বললে ও যায় না।আসো ভিতরে আসো।

অভ্র রেশীর দিকে তাকিয়ে, কেমন আছো রেশী? বিকালবেলা একঝলক দেখা দিয়ে কোথায় যে হারিয়ে গেলে?

রেশী -ভাইয়া আন্টি ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য।পরে কথা বলি।

সবাই উঠে গেলো খাবার খেতে,আজাদ সাহেব এসে বসলেন খাওয়ার জন্য,আয়ান কালকের আয়োজন কেমন চলছে? কোনো সমস্যা হবে নাতো?

আয়ান -বাবা আপনি একদম চিন্তা করবেন না?আমরা সবাই তো আছি।সিয়াম! তোমার অফিস থেকে ছুটি নিয়েছো?

সিয়াম -হ্যাঁ আজকেই ছুটি নিলাম।৩ দিনের জন্য।

সকাল থেকেই সবাই অনেক ব্যস্ত। প্রাপ্তির সকাল থেকে একবারো আয়ানের সাথে দেখা হয়নি।ডেকোরেটরের লোকের সাথে আঠার মতো লেগে থাকতে হচ্ছে। আজাদ সাহেব অনেক আশা নিয়ে সব দায়িত্ব আয়ানের উপর দিয়েছে।ঠিকঠাক ভাবে পালন করতেই হবে।
অভ্রকে আয়ান স্টেজ সাজানোর জন্য ফুল আনতে পাঠিয়েছে।সিয়াম আর অরণী গাঁয়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে নীরাদের বাড়ি গেলো।

আয়ান এসে ড্রইংরুমে বসতে বসতে রেশীকে ডেকে বললো, রেশী এক কাপ চা দাও তো।প্রাপ্তি চা হাতে করে এসে রেশী তুমি বসো আমি নিয়ে এসেছি। আমি জানতাম স্যার এখন এসে চা চাইবে।
তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি।

আয়ান মুচকি হেঁসে কিভাবে তুমি আমার মনে কথা গুলো বুজো বলো তো?
এমন সময় দরজায় দাঁড়িয়ে সুমি বললো, আয়ান এইকথাটা আগে আমাকেও বলতে তাইনা? এখন বউ পেয়ে তো সব ভুলে গেলে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি তো বিশ্বাস করতেই পারছেনা।সে সুমিকে দেখছে।একবার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার সুমির দিকে।
আয়ান প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারায় সুমিকে দেখিয়ে মিটমিট করে হাঁসতে লাগলো।

সুমি -প্রাপ্তি! আমি কি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো ভিতরে আসতে বলবে না?
প্রাপ্তি -(এগিয়ে গিয়ে) আরে না না! ভাবী আমি কি সত্যি দেখছি নাকি সপ্ন বুজতে পারছিনা তাই থমকে গেছিলাম।(জড়িয়ে ধরে) কতো দিন পর তোমাকে দেখলাম।কিন্তু ভাইয়া কোথায়? ভাইয়াকে তো দেখছিনা।
তোমার ভাইয়া গাড়ি থেকে ব্যাগ গুলো নামিয়ে আসছে।তোমাদের জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।
রুমকি দৌড়ে এসে মা মনি!
প্রাপ্তি মা মনি কথাটা শুনেই পাশের দিকে তাকিয়ে দেখে রুমকি।রুমকিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে (কান্না জুড়িত কন্ঠে) আম্মু তুমি কেমন আছো? কতো দিন পর তোমায় দেখেছি।

রুমকি -মা মনি আমি একা আসিনি আম্মু আব্বুও আসছে।

প্রাপ্তি -তাই! কোথায় ওরা? পিছনে আসছে।
আকাশ আর নিহাদ কে সালাম দিয়ে ঝিনুক কে জড়িয়ে ধরে বাসার ভিতরে ঢুকলো।

ঝিনুক কে দেখে আয়ানও অবাক হয়ে আছে।ঝিনুক এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।(সবাই এসে ড্রইংরুমে ঝোড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আয়ানদের দেখছে।)আয়ানও নিজের চোখের পানি গুলো লুকোতে পারলোনা।আকাশ ও এসে ভাইবোনকে জড়িয়ে ধরে নিজেও কাঁদতে লাগলো।

ঝিনুক -কতো দিন পর তোকে দেখেছি।কতোটা বদলে গেছিস তুই।তোর কি আমাদের কথা একবারো মনে পড়েনা।

আয়ান -তুইও তো আমাকে ফোন দিসনি।তাই আমার ও একটু অভিমান হয়েছিলো তোর উপর।ভাইয়া! তুই বাচ্চাদের মতো কেনো কান্না করছিস? দুইটা বছর পর তোদের দেখা পেয়েছি।তাই আজকের দিনে আমি কাঁদতে চাইনা আর।
রুমকি আয়ানের কাছে এসে, মামা! তুমি তোমার ছোটো আম্মুকে ভুলে গেছো?

আয়ান নিজের চোখের পানি মুছে রুমকিকে কোলে নিয়ে না আম্মু তোমায় একটুও ভুলিনি।আমার আম্মু দেখছি কতো বড় হয়ে গেছে।(নিহাদের দিকে চোখ পড়তেই)আরে ভাইয়া তুমি কেমন আছো? তুমি দেখছি কোনো কথাই বলছোনা।

নিহাদ -কি করে বলবো? তোমাদের ভাইবোনদের দেখে আমি নিজেই ইমোশনাল হয়ে গেছি।নিলিমা বেগম কাছে আসতেই সুমি জড়িয়ে ধরে আন্টি কেমন আছেন?

নিলিমা বেগম -তোমাদের দেখে এখন অনেক ভালো আছি।

প্রাপ্তি ঝিনুক, নিহাদ,আকাশকে সবার সাথে পরিচর করিয়ে দিচ্ছে।নিহাদ রেশীকে দেখে, আয়ান! এ তোমাদের কি হয়?

রেশী নিহাদকে দেখে ভয় পেয়ে আছে। নিহাদ ভাইয়া কি সব বলে দিবে? আয়ান ভাইয়া আর ভাবী যদি আমায় ভুল বুজে।

আয়ান -ভাইয়া তুমি কি ওকে চিনো নাকি?

নিহাদ -হ্যাঁ! ওকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি,,,এমনকি ও তো,,,,,,,,

নিলিমা বেগম -আচ্ছা বাবা তোমরা পরে কথা বলো।আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।প্রাপ্তি তুই ওদেরকে রুম দেখিয়ে দে সবাই ফ্রেশ হয়ে নেক।(অরণী আর সিয়াম আসতেই) ওইতো অরণী আর সিয়াম এসে গেছে।অরণীকে দেখে সবাই ওদের সাথে কথা বলেছে।কথা শেষ করেই প্রাপ্তি সবাইকে রুমে নিয়ে গেলো।
ঝিনুক নিহাদকে চুপচাপ থাকতে দেখে, নিহাদ তখন থেকে দেখছি ওই মেয়েটাকে দেখে চুপ করে আছো। কিন্তু কেনো? মেয়েটাকে তুমি কিভাবে চিনো

নিহাদ -ঝিনুক আমি ফ্রেশ হয়ে আসি পরে তোমায় বলবো।
প্রাপ্তি নিহাদের কথা গুলো কেমন জেনো মাথায় গেঁথে গেছে।রেশীকে ভাইয়া কিভাবে চিনে? আয়ান কে একবার বলে দেখি,আয়ান ফোনে কথা বলছে, প্রাপ্তিকে দেখে কিছু বলবে?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো।
আয়ান কল কেটে দিয়ে, হুম বলো? কি হয়েছে মন খারাপ? আমার লক্ষ্মী বউটার তো মন খারাপ হওয়ার কথা না।সবাইকে পেয়ে তো খুশি থাকার কথা।

প্রাপ্তি- নিহাদ ভাইয়ার কথাটা তোমার মনে আছে রেশীকে নাকি ওনি চিনে!ওনি যখন কথাটা বলছিলো রেশীর মুখের দিকে একবার দেখেছো? কেমন যেনো ভয়ে ভয়ে ছিলো।

আয়ান -(কাছে এসে প্রাপ্তির গাল দুটোকে দুই হাত দিয়ে ধরে)ঠিক আছে আমার বউটার চিন্তা করার দরকার নেই। আমি পরে নিহাদ ভাইয়ার কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিবো।এইবার একটু হাঁসো? আমার বউয়ে হাঁসি মুখটাই যে আমার কাছে সব।

প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে আয়ানের বুকে মাথা রেখে তোমাকে অনেক অনেক thanks!
আয়ানও প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
thanks কিসের জন্য মহারাণী?

প্রাপ্তি-আমার আবদার টা রাখার জন্য।

আয়ান- এর জন্য শুধুই মাত্র thanks? আর কিছু না?

প্রাপ্তি -তাহলে আরকি?

আয়ান -আর হচ্ছে,,,, আর তোমার ওই দুটো ঠোঁট আমার দুটো ঠোঁটের সাথে এক করতে চাই।

প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে, তোমাকে কাল কি বলেছি ভুলে গেছো?

আয়ান -আয়ান প্রাপ্তিকে সরিয়ে দিয়ে না ভুলিনি।কিন্তু আমার যে ইচ্ছে করে আমার বউকে একটু কাছে পেতে।প্রাপ্তি আমি মানুষ, পাথর নয়।

প্রাপ্তি -আমি জানি। এতোদিন যখন সহ্য করেছো তাহলে আরেকটু করো প্লিজ।

আয়ান- ওকে।আমার একটা কথা রাখবে?

প্রাপ্তি -বলনা কি কথা?

আয়ান -তুমি কখনো সাজো না।আজ হলুদের অনুষ্ঠানে একটু সাজবে? প্লিজ আমার জন্য না হয় এইটুকু কষ্ট করো।
কথা টা বলে আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে এনে আয়ান প্রাপ্তির হাতে দিয়ে এইগুলো তোমার জন্য।এইখানে সব কিছু আছে তুমি সেজে নিও।আয়ান বাহিরে চলে গেলো।প্রাপ্তি প্যাকেট টা হাতে নিয়ে সেইখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
অরণী প্রাপ্তিকে ডাকতে এসে দেখে প্রাপ্তি প্যাকেট হাতে নিয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

অরণী -আপু তোর কি হয়েছে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?গেস্টরা অকেই এসে গেছে আম্মু তোকে ডাকছে।আচ্ছা আপু আজকেও তুই সাজগোজ কিছুই করবিনা? আয়ান ভাইয়াও যে কি কিভাবে তোর এইসব পাগলামো সহ্য করে বুজিনা।

প্রাপ্তি প্যাকেট টা খাটের উপর রেখে দিয়ে, তোর ভাইয়ার ধৈর্য শক্তি হয়তো একটু বেশি তাই আমার মতো মেয়েকে তার কপালে জুটেছে।আচ্ছা চল আম্মু কেনো ডাকছে দেখি।

অভ্র এসে নিলিমা বেগমকে আন্টি আমার জন্য এক কাপ চা দিয়েন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।নিহাদ ও নিজের রুম থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিলো।অভ্র নিলিমা বেগমকে কথা টা বলেই নিজের রুমে যেতে নিহাদের সাথে ধাক্কা খেতেই নিহাদের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। নিহাদের মুখের দিকে না তাকিয়ে অভ্র নিচু হয়ে ফোনটা নিচ থেকে নিয়ে নিহাদের হাতে দিতেই চমকে গেলো।নিহাদ ও অভ্রকে দেখে কম অবাক হলোনা।অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে,
নিহাদ-তুমি এইখানে?

অভ্র -ভাইয়া আপনি এইখানে?

আয়ান রেডি হয়ে এসে, কিরে অভ্র তুই এখনো রেডি হয়ে আসিসনি।তোকে বলছিনা তুই রেডি হয়ে এসে আসিফ ভাইয়াকে রেডি করাতে হবে।অভ্রকে নিহাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান বললো, অভ্র তোকে তো পরিচয় করাতে তো ভুলেই গেছি, ইনি হচ্ছে আমার দুলাভাই। আমার বড় আপুর হ্যাজবেন্ড।
আর ভাইয়া এ হচ্ছে,,,,,,,,,,

আয়ান বলার আগেই নিহাদ মুচকি হেঁসে বললো মাহবুবুল রাহমান অভ্র।
আয়ান আশ্চর্য হয়ে ভাইয়া তুমি ওকে চিনো?
নিহাদ -অভ্র আমি কি তোমাকে সত্যিই চিনি?

অভ্র কিছু না বলে, আয়ান আমি রেডি হয়ে আসছি।বলেই অভ্র নিজে রুমে চলে গেলো।

চলবে,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩০

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩০

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আকাশের ফোন টা অনেকক্ষণ থেকে বেজে যাচ্ছে, আকাশ ওয়াশরুমে থাকায় ফোনটা ধরতে পারছেনা।সুমি এসে দেখে বার বার আকাশের ফোনে কল আসছে,,

সুমি -আকাশ তোমার ফোনটা অনেকক্ষণ থেকে বেজে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হও।

আকাশ তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে, রিসিভ করোনি কেনো?

সুমি -তোমার অফিসের কলও তো হতে পারে, তাই করিনি।

আকাশ ফোন নিয়ে দেখে আয়ানের নাম্বার থেকে ফোন।
আকাশ -আয়ান ফোন করছে।

সুমি -নাম্বার ওর নাম দিয়ে সেভ করোনি কেনো?আমি ভাবলাম অন্য কেউ।

আকাশ -আব্বুর চোখের সামনে কখন পড়ে যায় ঠিক আছে?দেখি কেনো ফোন করছে।
(ফোন রিসিভ করে)কেমন আছিস?

আয়ান -এইতো ভালো।কি করছিস সবাই? আমার সুইট হার্ট কোথায়?

আকাশ -সবাই ভালো।তোর ভাবী ও আছে ভালো।আমার সামনেই আছে।

আয়ান -কাল আব্বু কিছু বলেছে?

আকাশ -নাতো কেনো কি হয়েছে? তবে কাল অনেক গম্ভীর ছিলো।কারো সাথে কথা বলেনি।রাতে খাওয়া খায়নি।

আয়ান -কাল আমার সাথে দেখা হয়েছে আব্বুর। তাও এমন ভাবে দেখা হবে যা আমি কখনোই কল্পনা করিনি।যাই হোক তোকে একটা কারণে ফোন দিয়েছি ভাইয়া।

আকাশ -কি কারণ বল।

আয়ান-প্রাপ্তি একটা আবদার করেছে।ও কখনোই আমার কাছে কিছু চায়নি।এখন এমন একটা জিনিস ছেয়ে বসলো যা তুই ছাড়া মিটানো সম্ভব না।

আকাশ -তুই শুধু একবার বল প্রাপ্তি কি চায়? সাথে সাথেই দেখবি প্রাপ্তির সামনে পৌঁছে গেছে।

আয়ান -আসলে আসিফ ভাইয়ার বিয়ে সামনের মাসে ৩ তারিখ। এখন প্রাপ্তির ইচ্ছা তুই আর ভাবী এই বিয়েতে আসবি।আমি জানি বাড়িতে বললে আব্বু তোকে আসতে দিবে না তাই তোকে আলাদা ভাবে বললাম।
প্রাপ্তির এই আবদারটা তোকে পূরণ করতেই হবে ভাইয়া।তুই ছাড়া যে এইটা কেউ পারবেনা।

আকাশ -কি বলবো তোকে বুজতে পারছিনা। আচ্ছা আমি তোকে পরে জানাবো।।
আয়ান -ঠিক আছে তুই আমাকে জানাশ। তাহলে এখন রাখি।
ফোন টা রেখে আয়ান সুস্থির নিশ্বাস ফেলে ভাইয়া যখন বলেছে তাহলে ঠিকি চেষ্টা করবে।

বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে, তাই প্রাপ্তি আর আয়ান এইদিকটার সব কিছু সামলিয়ে প্রাপ্তিদের বাড়ি গেলো।বিয়ের কেনাকাটা নিয়ে সবাই অনেক ব্যস্ত।আসিফ আর নীরার মাঝেমাঝে ফোনে কথা চলতে থাকে।নীরা চৌঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে আর আসিফ সবসময় গম্ভীর থাকতেই পছন্দ করে।মেয়েদের সাথে তেমন বেশি কথা বলেনা।নিজের বোনদের নিয়েই তার ভাবনার জগত। সেই জগতে কোনো মেয়েই জায়গা করে নিতে পারিনি।এখন নীরাই হবে সেই জায়গার মালিক।

সকাল বেলা কলিংবেলের শব্দ শুনে রফিক গিয়ে দরজা খুললো।আবিদ চৌধুরী পেপার পড়তে পড়তে নিজের রুম থেকে ড্রইংরুমে বসলো।আকাশ ও নাস্তা করার জন্য নিছে নিমে এলো।কিন্তু আবিদ চৌধুরীকে পেপার পড়তে দেখে নিজেও বসে পড়লো।

রফিক -(দরজার সামনে দুইজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে)কাকে চাই?

একজন বললো,আবিদ চৌধুরী আছে?

রফিক -জ্বী! স্যার ভিতরেই আছে কিন্তু আপনারা কারা?

দ্বিতীয় লোক -আমরা কুরিয়ার থেকে এসেছি।আসলে কয়দিন আগে আবিদ চৌধুরীর নামে কয়েকটা পার্সেল এসেছে।সমস্যা থাকার কারনে দিয়ে যেতে পারিনি।

আবিদ চৌধুরী রফিক কে দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে রফিক কোনো সমস্যা?

রফিক পার্সেল গুলো নিয়ে লোক গুলোকে বিদায় দিয়ে,আবিদ চৌধুরীর কাছে আসলো।

আবিদ চৌধুরী -তোমার হাতে এইগুলো কি?

রফিক -জানি না স্যার। কুরিয়ার থেকে আসছে আপনার নামে।

আবিদ চৌধুরী -আকাশ! খুলে দেখো তো এই গুলোতে কি আছে।
সুমি আর আয়েশা বেগমও রান্নাঘর থেকে এগিয়ে এলেন।

আকাশ পার্সেল গুলো খুলতেই সবাই অবাক হয়ে আছে।সবার জন্য জামা কাপড়। কে পাঠিয়েছে এইগুলো?

সুমি আবিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে,বাবা আপনি সবার জন্য শপিং করে তো সবাইকে সারপ্রাইজ করে দিলেন।

আবিদ চৌধুরী -সুমি আমি কোনো শপিং করিনি।কিন্তু এই গুলো কে পাঠিয়েছে।

আকাশ -আব্বু দেখো? মনে হচ্ছে এইখানে দেখছি সবার থেকে রুমকির জন্যই বেশি।

আবিদ চৌধুরী -কিন্তু এই গুলো পাঠালো কে?

সুমি -মনে হচ্ছে যে শপিং করেছে সে জেনে বুজেই করেছে।

সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো কে পাঠিয়েছে এইসব?
আয়েশা বেগম আকাশের দিকে তাকিয়ে, আমার মনে হয় এইগুলো আয়ানই পাঠিয়েছে।আয়ান ছাড়া কে আর পাঠাবে বল?

সুমি -মা আপনি ঠিকি বলেছেন।এইগুলো আয়ানই পাঠিয়েছে হয়তো।
আবিদ চৌধুরী কিছু না বলেই নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন।রুমে গিয়ে ভাবছে আমি যদি এখন ওদের কিছু বলি হয়তো এতে বিপরীত হতে পারে।সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি করে করা ঠিক হবেনা।আমাকে এখন বুজে শুনে কাজ করতে হবে।

সুমি আয়েশা বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে, মা! বাবা কিছুই না বলে চলে গেলো? আমার কাছে কেমন গোলমাল লাগছে।আয়ান এইগুলো পাঠিয়েছে শুনেও বাবা কোনো রিয়েক্ট করলেন না।আপনি কি কিছু বুজতে পেরেছেন?নাকি বড় কোনো ঝড় আসতে চলেছে?

আকাশ -সুমি তুমি একটু বেশিই ভাবছ। বাবা হয়তো আয়ান কে আস্তে আস্তে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।আমরা একা আয়ান কে ভালোবাসি তা কিন্তু না বাবাও আয়ানকে অনেক ভালোবাসে।ভুল বুজাবুজি সবার মাঝেই থাকে। হয়তো বাবার অভিমান টা একটু বেশিই করেছে।

আয়েশা বেগমের চোখ গুলো ছলছল করছে। কিছু না বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।

প্রাপ্তিদের বাড়ি সাজানো শুরু হয়েছে।তার মামা, মামী, চাচা, চাচী অনেকেই চলে এসেছে। শপিং নিয়ে আয়ান প্রাপ্তি অরণী অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কাটাচ্ছে। আজাদ সাহেবের একটাই কথা সবকিছু জেনো ঠিকঠাক ভাবেই হয়।তার একটা মাত্র ছেলে কোনো কিছুতে জেনো কমতি না থাকে।আজাদ সাহেব বেশিরভাগ দায়িত্ব আয়ানের কাঁধে দিয়েছে।আয়ান ছাড়া তিনি কাউকে ভরসা করতে পারেননা। সিয়াম সবসময় নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।আয়ান অভ্রকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য। সন্ধ্যায় বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে নিলিমা বেগমের রুমে,কি কি কেনাকাটা করেছে সবাইকে দেখাছে প্রাপ্তি।আয়ান দরজায় দাঁড়িয়ে অনেক বার ইশারা করছে তার কথা শুনার জন্য।সবার সেই দিকে নজর না পড়লেও প্রাপ্তি দেখছে।প্রাপ্তি ভাবছে হাতের কাজ শেষ করে করেই তারপর যাবে।কিন্তু আয়ানকে আবার ইশারা করতে দেখে অরণী, আপু! তুই যা আমি সবাইকে দেখাচ্ছি। তুই না গেলে ভাইয়া হয়তো এইখানেই জ্ঞান হারাবে।কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো।আয়ান লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো আসলে প্রাপ্তি তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে প্লিজ শুনে যাও।

প্রাপ্তি রাগি ভাব নিয়ে আয়ানের কাছে গিয়ে, চলো জানি আমি কি কথা আছে।

প্রাপ্তি আর আয়ান চলে যেতেই,
প্রাপ্তির চাচী -মেয়েটার কপাল অনেক ভালো। না হলে এমন বর কেউ পায়? কাল আসার পর থেকে দেখছি মেয়েটাকে অনেক যত্ন করে,অনেক খেয়াল রেখে,এইটাই হচ্ছে প্রকৃত ভালোবাসা। অরণী! তোর বর তোকে এইরকম খেয়াল রাখে?

অরণী -রাখবে না কেন? হয়তো ভাইয়ার ছেয়ে কম।চাচী! এইগুলো নিয়ে পরেও কথা বলা যাবে। আগে কাজ গুলো সেরে ফেলা যাক।
প্রাপ্তি আয়ানের সাথে রুমে আসতেই আয়ান দরজা বন্ধ করে দিলো,

প্রাপ্তি-কি ব্যাপার এই সময় দরজা বন্ধ করলে কেনো?

আয়ান -তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো, তাই তোমাকে ডেকেছি কিন্তু তুমি সবার সামনে এমন ভাব করছিলে মনে হচ্ছে আমায় দেখোইনি।

প্রাপ্তি -তুমি তো দেখছিলে আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম তারপর ও কেনো তুমি আমায় ডাকছিলে?

আয়ান -প্রাপ্তি! তোমাকে না দেখলে আমার ভালো লাগেনা।(বলেই আস্তে আস্তে প্রাপ্তির কাছে আসতে থাকলো)

প্রাপ্তি আয়ানকে কাছে আসতে দেখে,(রাগিভাব দেখিয়ে) দাঁড়াও ওইখানে। একদম কাছে আসবেনা বলে দিলাম।

আয়ান সত্যিই দাঁড়িয়ে গেলো প্রাপ্তির কথা শুনে,কি ব্যাপার প্রাপ্তি তোমার কি মন খারাপ?এইভাবে কথা বলছো কেনো?

প্রাপ্তি- আমি ঠিক আছি। আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম সেটার কি করেছো? ভাইয়ারা কি আসবে?

আয়ান -প্রাপ্তি! তুমি কিন্তু কথা কাটানোর চেষ্টা করছো।

প্রাপ্তি এইবার নিজেই আয়ানের কাছে এসে, তুমি রাগ করেছো? দেখছিলাম কি করো বউয়ের মুখে এইরকম কথা শুনে।

আয়ান -তোমার উপর আমার কখনোই রাগ হয়না এইটা তুমি ভালো করেই জানো।আচ্ছা প্রাপ্তি তোমাকে কি আমি কখনোই নিজের করে পাবোনা?

প্রাপ্তি- পাবে না কেনো? পাবে! যেইদিন তোমার বাবা আমাকে মেনে নিবে। যেইদিন সব কিছু ভুলে আমরা আবার এক হবো সেইদিনই তুমি আমাকে তোমার করে পাবে।

আয়ান -যদি আব্বু কখনোই মেনে না নেয়?

প্রাপ্তি -তোমার চিন্তা করতে হবে না শুধু বিয়ে টা মিটে যেতে দাও তোমার আব্বুর অহংকার কি করে ভাঙতে হবে সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।আমার জন্য যখন তুমি পরিবার থেকে আলাদা হয়েছো তখন আমিই জোড়া লাগাবো।
আমি আর তোমাদের মা ছেলেকে কষ্ট পেতে দিবোনা।

আয়ান প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে,তোমার মতো বউ যার আছে তার আর কিছুর প্র‍য়োজন নেই।সারাটা জীবন সুখের অভাব হবেনা।
প্রাপ্তি আয়ানের নাক টেনে দিয়ে আমাকে পাম দেওয়া হচ্ছে? এইযে মিস্টার আয়ান চৌধুরী আমি কিন্তু বেলুন না আপনার কথায় আমি ফুলে যাবো বলেই হাঁসতে শুরু করলো দুজনেই।রেশী এসে দরজার ওপাশ থেকে বলে গেলো,ভাইয়া! অভ্র ভাইয়া আসছে! তোমাকে ডাকছে।
প্রাপ্তি আর আয়ান ড্রইংরুমে এসে অভ্রকে দেখে,
আয়ান- কিরে তোর আসতে এতো দেরি হলো কেনো?কাল গাঁয়ে হলুদ আর তুই আজ আসছিস।

অভ্র -কি করবো বল? অফিস শেষ করেই বাসায় গিয়ে জামা কাপড় গুছিয়েই তো রওনা দিলাম।তাই আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো।নীশান ও সকাল থেকে ফোন দিচ্ছে ওদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। আমি বলেছি আসিফ ভাইয়া সহ আমাকে ছাড়বেনা।যদি ওদের ম্যানেজ করতে পারি তাহলে পরে দেখা যাবে।
আসিফ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে, সেই কথা ভুলে যাও এই বাড়ি ছেড়ে তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা।

অভ্রও আসিফের কথা শুনে মুচকি হাঁসি দিয়ে মনে মনে ভাবছে, এই বাড়ি থেকে আমার এমনিতেই যেতে ইচ্ছে করবে না।কারন এই বাড়িতে আমার এমন একটা জিনিস আছে যেটা না দেখে আমি থাকতে পারিনা।কিন্তু যার কথা ভাবছি সে কোথায় গেলো? আসার পর এক পলক দেখা দিয়ে যে কোথায় গেলো বুজতেই তো পারছিনা।
কথাটা আয়ান কে বার বার বলতে গিয়েও আমি বলতে পারলাম না। কারণ আয়ানের সাথে আমি আমার বন্ধুত্ব কখনোই নষ্ট করতে চাইনা।

প্রাপ্তি অভ্রর চোখের সামনে তুড়ি মেরে এইযে ভাইয়া আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন।আমরা কিন্তু সবাই এইখানেই আছি তাহলে আপনি এইদিক ওদিক ফিরে কাকে খুঁজছেন?

অভ্র চমকে উঠে, কিছু বললে?

প্রাপ্তি -আমি কিন্তু কিছু কি বুজতে পারছি আপনি কি খুঁজছেন!

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৯

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো।আবিদ চৌধুরী আয়ান কে দেখেই চোখ বড় বড় করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে ও এই খানে কি করছে ওকে দেখে সবাই এই ভাবে দাঁড়িয়ে গেলো কেনো?

আয়ান সবাইকে বসতে বলে নিজের চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো।কিভাবে বসবে সে এই চেয়ারে? যেইখানে পাশের চেয়ারটায় তার বাবা বসে আছে।

আয়ান -আপনারা সবাই কেমন আছেন?

পাশের একজন বললো, স্যার আমরা তো ভালোই আছি।কিন্তু আপনাকে দেখে অবাক হয়েছি।

অভ্র এসে, স্যার আসবো?
আয়ান -ইয়েস! অভ্রর কাছ থেকে ফাইল নিয়ে বললো, আপনি কেনো অবাক হলেন বললেন না তো?

লোকটা -আপনাকে দেখেই!এতো অল্প বয়সে এতো দূর এইটা কি ভাবা যায়?

আয়ান -(মুচকি হেঁসে) আসলে আমার আব্বু বিখ্যাত বিজনেসম্যান! আমি যদি ওনার ছেলে হয়ে পিছিয়ে থাকি তাহলে তো আমার আব্বু কে অসম্মান করা হলো।এইবার আমরা কাজের কথায় আসি?

কথাটা শুনে অভ্র অবাক হয়ে আয়ানকে দেখছে, সে এতো দিন যা অনুমান করেছে তা দেখছি সত্যিই হলো।

আবিদ চৌধুরীর রাগে চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।গম্ভীর হয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আজ নিজের ছেলের জ্ঞান মুলুক কথা শুনতে হচ্ছে।কেনো জানি খারাপও লাগছে না। আমার ছেলেটা হয়তো আমাকে দেখানোর জন্যই এতো দূর পাড়ি দিয়েছে।

আয়ানকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে,
অভ্র-স্যার আপনি বসছেন না কেনো? বসে কথা বলুন।

আয়ান -অভ্র তুমি ভালো করেই জানো আমি সব জায়গায় বসিনা।এইখানে সবাই আমার মুরুব্বী আমি ওনাদের ছেলের মতো আমি এইখানে বসলে ওনাদের অসম্মান করা হবে।

আবিদ চৌধুরী বুজে গেছে আয়ান যে তাকেই শুনানোর জন্য কথা গুলো বলেছে।
আয়ান প্রেজেন্টেশন দেখে আবিদ চৌধুরী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে।
এমন সময় আয়ানের ফোন বাজতেই আয়ান বিব্রতবোধ নিয়ে সরি বলে ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখে প্রাপ্তির নাম্বার।প্রাপ্তি আমাকে কখনোই আর ফোন দেয়নি আজ এমন সময় দিলো কল টা রিসিভ না করলে হয়তো ওর মন খারাপ হয়ে যাবে, তাই একটু সরে গিয়ে কলটা রিসিভ করে, বাবু আমি মিটিং এ আছি,আর মিটিং শেষ করেই তোমাকে ফোন দিচ্ছি,প্লিজ রাগ করোনা।

প্রাপ্তি -ওকে!
কথা শেষ করে আয়ান তার কাজে মন দিলো,নাহ্ আব্বুকে দেখে এইভাবে দুর্বল হলে আমায় চলবেনা।আমাকে শক্ত হতে হবে।সবকিছু শেষ করে আয়ান আবিদ চৌধুরীর সাথে ডিল টা ফাইনাল করে নিলো।এমন ভাবে তাদের মধ্যে কথা চলতে থাকে মনে হচ্ছে আজই তাদের বিজনেসের কাজে প্রথম দেখা। আয়ান কাজ শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এলো।

অভ্র এসে আমি বললাম না তুই ছাড়া এইরকম প্রেজেন্টেশন কেউ দিতে পারেনা।আবিদ চৌধুরী খুশি হয়েই ডিলটা করে নিলো।
আয়ান চুপচাপ বসেই আছে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আজ আমার নিজের বাবার সাথেই বিজনেসের সম্পর্ক।

অভ্র আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে কিরে আমি একাই বকবক করে যাচ্ছি আর তুই চুপ করে এতো কিভাবছিস? তুই তখন মিটিং এ একটা কথা বললি,তোর বাবা নাকি বিজনেসম্যান। অবশ্য আমি আগেই বুজেছিলাম তুই আমার কাছে অনেক কিছু লুকাচ্ছিস।

আয়ান -অভ্র তুই ঠিকি বলেছিস! সত্যি কখনো লুকানো যায়না,সেটা যে কোনো সময় সামনে চলে আসে।জানিস অভ্র আজ আমি কার সাথে প্রজেক্ট এর ডিল করেছি?

অভ্র -(হাঁসি দিয়ে) কেনো জানবো না, আবিদ চৌধুরীর সাথে।

আয়ান -এর বাহিরেও ওনার সাথে আমার একটা পরিচয় আছে আর সেটা হলো ওনিই আমার বাবা!

অভ্র বিস্মিত কন্ঠে, মানে?তোর বাবা!
আমি তো কিছুই বুজতে পারছিনা।তোদের দুজনকে দেখে তো তা মনে হলো না।এমন ভাবে ছিলি মনে হলো তোদের আজকেই প্রথম দেখা।

আয়ান -সে অনেক কথা সময় করে তোকে একদিন বলবো।আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসি, তুই রাতে কিন্তু বাসায় আসবি।

সে কখন আমি ফোন দিলাম মিটিং এ আছে বলে যে রেখে দিলো তার কোনো খবর নেই।বাসায় যে দিয়ে গেলো একটা বার ফোন দিয়ে খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলোনা।আগেই ভালো ছিলো কথা বলতাম না,ফোনও দেওয়া লাগতো না।জামা কাপড় গুছাইতে গুছাইতে বিড়বিড় করছে প্রাপ্তি।
আয়ান এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কি হয়েছে আমার লক্ষ্মী বউয়ের।আমার উপর কি তার রাগ হয়েছে।

প্রাপ্তি -(আয়ানকে দেখে অবাক হয়ে,)তুমি এই সময় বাসায় চলে এলে? শরীর খারাপ নাকি? দেখি সামনে আসো।

আয়ান -(প্রাপ্তিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)এতক্ষণ আমাকে বকা দেওয়া হচ্ছে, এখন আবার ভালোবাসাও দেখানো হচ্ছে।

প্রাপ্তি -আমার যা খুশি তাই করবো তাতে তোমার কি।আমার হ্যাজবেন্ডকে আমি মারবো, আদর করবো, (হাতে একটা চিমটি কেটে)চিমটি কাটবো তাতে আয়ান চৌধুরী কি?
আয়ান- ওহ্ ব্যথা পেলাম তো,(প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে)আচ্ছা তুমি সত্যি আমাকে মারবে? ওকে তাহলে শুরু করো।

প্রাপ্তি আয়ানকে ছাড়িয়ে ফাজলামো করা হচ্ছে আমার সাথে? এখন যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।আয়ানের হাতে তোয়ালে টা ধরিয়ে দিয়ে প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসতে বসতে রেশী কোথায়?

প্রাপ্তি -ওর শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই আগেই খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে দিলাম।হয়তো শুয়ে আছে।ভাবছি ভাইয়ার বিয়েটা শেষ হলে রেশীর বিয়ের জন্য ছেলে দেখবো।

আয়ান -(খেতে খেতে)রেশী যদি বলে ও বিয়ে করবেনা। ও ওর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায় তখন?
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মন খারাপ করে হুম সেটাই, তবে একবার বলতে অসুবিধা কোথায়?

আয়ান -হুম!তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি।রাতে অভ্র আসবে।আমাদের সাথে খাওয়াদাওয়া করবে।

প্রাপ্তি -সমস্যা নেই।

আয়ান -রান্না করতে তোমার কষ্ট হবেনা? এক কাজ করলে কেমন হয় সব রান্না বাহিরের থেকে নিয়ে আসি?

প্রাপ্তি -কোনো দরকার নেই।আমিই পারবো।অভ্র আমার ভাইয়া মতো ভাইকে রান্না করে খাওয়াবো এতে কষ্ট কিসের?তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি পারবো।

আয়ান -আমি জানি তুমি পারবে।কিন্তু তোমার তো কষ্ট হবে।

প্রাপ্তি -বললাম তো তুমি চিন্তা করোনা।আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বললে রাগ করবা?

আয়ান -রাগ করবো কেন? কি বলবে বলো?

প্রাপ্তি -ভাইয়ার বিয়েতে তোমাদের বাড়ির সবাইকে ইনভাইট করলে কেমন হয়?

আয়ান -তুমি ভালো করেই জানো ওরা আসবেনা।

প্রাপ্তি -আকাশ ভাইয়া আর ভাবী তো আসতে পারে।প্লিজ বলোনা!
আয়ান -কি বলি বলো তো? তুমি আমার কাছে কোনো দিন কিছু চাওনি। এখন এমন একটা কথা বললে,,,, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।

আবিদ চৌধুরী নিজের রুম অন্ধকার করে ইজিচেয়ারটায় বসে দুলছে।কেমন জানি নিজেকে আজ একা লাগছে।সবার মাঝে থেকেও চারপাশ টা কেমন খাঁ খাঁ করছে।আয়ান যখন এই বাড়িতে ছিলো যখনি বাসায় থাকতো হৈচৈ করে বাড়িটা মাতিয়ে রাখতো।অফিসে থাকলেও নিজের কাজ গুলো মন দিয়ে করতো।কখনো কোনো কিছু বলে দিতে হয়নি।আজ একটা মেয়ের জন্য আমার ছেলে আমাকে পর্যন্ত ত্যাগ করে দিলো।আমার সম্মানের কথা একটাবার চিন্তা করলো না।এইদুইটা বছর আমি হয়তো একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম সবাইকে ওর সাথে যোগাযোগ করতে না দিয়ে।সবাই হয়তো ভাবে আমার মনে কোনো মায়া নেই কারো প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই।আমার মন পাথরের মতো। সত্যিই কি তাই?কথা গুলো ভাবতেই গলাটা কেমন জানি ভারী হয়ে আসছে।
আয়েশা বেগম রুমে ঢুকে অন্ধকার দেখে লাইটটা জ্বালিয়ে আবিদ চৌধুরীকে দেখে কি হয়েছে বাহিরের থেকে আসার পর থেকেই দেখছি মন খারাপ।কিছু হয়েছে?

আবিদ চৌধুরী চশমা টা মুছে পরতে পরতে দীর্ঘশ্বাস পেলে বললো নাহ কিছু না!

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৮

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

_বাড়ি ফিরে এসে সবাই তো নীরার প্রশংসা করছে।আজাদ সাহেব সবার কথা শুনে বললেন তোমাদের পছন্দ হয়েছে এইটাতেই আমি খুশি।আমার পরিবার খুশি মানে আমি খুশি।তবে তোমরা আসতে এতো দেরি করলে কেনো?

অরণী -আব্বু নীরার মা তো না খাইয়ে আসতেই দিলোনা।আমি কিন্তু আজ একটা জিনিশ বুজেছি।নীরার মা ও আপুকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।হয়তো ছেলের বন্ধুর বউ বলে কথা আদর তো একটু বেশি করবেই।

আয়ান -অরণী! তোমার কি হিংসে হচ্ছে?(অরণী কে খেপানোর জন্য)এই জন্যই তো বলি কেমন পোঁড়া পোঁড়া গন্ধ আসতেছে।

অরণী -আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।

সিয়াম -অরণী! তোমরা গল্প করো আমার আবার সকালে অফিস আছে।

আয়ান -বাবা আপনি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আমাদের জানিয়েন।আমরা কাল সকালে চলে যাবো।আমার অফিসে কাল যেতেই হবে।

আজাদ সাহেব -আমার মনে হয় সামনের মাসের ৩ তারিখের দিকে বিয়েটা হলে ভালো হবে।আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।

অরণী -আব্বু এই মাসেরই তো আজ ১৯ তারিখ বেশি দিন আর সময় কই।

আয়ান -আমার মনে হয় এটাই ঠিক আছে।কি বলো প্রাপ্তি?

প্রাপ্তি -আমি কি বলবো তোমরা যা ভালো মনে করো।

নিলিমা বেগম -প্রাপ্তি আর অরণী তোরা সব কিছু গুছিয়ে এই বাড়িতে চলে আয়।তারপর সব কিছু ভাবা যাবে।

আয়ান -(আয়ান হাই তুলে)প্রাপ্তি উঠো আমার ঘুম আসছে।কাল অনেক সকাল সকাল উঠতে হবে।

কথা শেষ করে সবাই সবার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।

প্রাপ্তি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে এলো,আয়ান বসে বসে অভ্রর সাথে ফোনে কথা বলছে।প্রাপ্তিকে এসে শুইতে দেখে আয়ান ফোন রেখে দিয়ে, বিকেলবেলা যেই কথাটা বলেছি মনে আছে?

প্রাপ্তি -অনেক কথাই তো বললে। কোনটা মনে রাখবো?

আয়ান -বাবু! আমি জানি তোমার মনে আছে, কারণ আমার বউ তো আমি ভালো করেই চিনি।

প্রাপ্তি -তোমার এই সব কথা বাদ দিয়ে ঘুমাও সকালে আবার বাসায় যেতে হবে।

আয়ান -না আমি ঘুমাবো না,আগে তুমি বলো তুমি আমার কথায় রাজি?প্রাপ্তি আমি তোমাকে জোর করবো না তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কিছুই করবোনা।কথা টা বলেই আয়ান অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
প্রাপ্তি চুপ করে বসেই আছে,কি বলবে আয়ানের কথায়। অনেক তো কষ্ট দিয়েছি আয়ান কে। আর কতো কষ্ট দিবো!আয়ানের মতো ছেলে আমার থেকে আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করতে পারতো। আমি তার যোগ্য না তবুও আমায় কতো ভালোবাসে, কতো কেয়ার করে।আমাকে বিয়ে না করলে এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো না।ওকে ওর পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হতোনা।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছে।আস্তে করে পিছনদিক থেকে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের পিঠে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো।আয়ান প্রাপ্তির ছোঁয়ার অনুভূতি পেয়ে, প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,কি ব্যাপার মহারাণী নিজের ইচ্ছায় জড়িয়ে ধরেছে আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা।তবে এই জড়িয়ে ধরার মাঝে একটা মায়া লুকিয়ে আছে।দুইটা বছর এতো টা কাছে থেকেও এই মায়াটা বিষণ মিস করেছি।প্রতিটা রাতে তোমার ঘুমের পরে যখন তোমার দিকে তাকাতাম ইচ্ছে করতো তোমাকে একবার ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু সাহস হতো না।

প্রাপ্তি -আমি ও মাঝে মাঝে তোমায় দেখেতাম।আমারো ইচ্ছে করতো তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। কিন্তু কেনো জানি পুরোনো সেই দিন গুলোর কথা মনে হলেই আমার কাছে সব অসহ্য লাগতো।তখন মনে হতো আমি মরে যাওয়াটাই ভালো ছিলো।
প্রাপ্তি কথাটা বলতেই আয়ান প্রাপ্তির ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে, আর কখনো এই কথা বলবেনা,আজকের জন্য ক্ষমা করে দিলাম।যদি এই কথা তোমার মুখ থেকে দ্বিতীয় বার শুনেছি আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।
এইভাবে কথা বলতে বলতে কখন দুজনে ঘুমিয়ে পড়লো মনে নেই।

সকালে প্রাপ্তি উঠেই ফ্রেশ হয়ে এসে আয়ানের পাশে বসে একটা শোলা নিয়ে কানে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। আয়ানকে সুড়সুড়ি দিতেই লাফ দিয়ে উঠে বসে দেখে প্রাপ্তি একিবারে গোসল করেই ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।

আয়ান -(দুষ্টামি করে)কি ব্যাপার মহারাণী একদম সকাল সকাল গোসল সেরে নিয়েছো।আমার জানা মতে রাতে তো আমি তোমার সাথে কিছু করেনি।

আয়ান -বাসায় যাবা না?আমাদেরকে তো বাসায় নামিয়ে দিয়ে তোমার আবার অফিসে যেতে হবে।তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।বলে প্রাপ্তি উঠতে যাবে তখনি আয়ান হাত টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে নাকের সাথে নাক লাগিয়ে এইটা কিন্তু আমার আনসার নয়।
প্রাপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে, এইটাই আনসার বলে উঠে রুম থেকে চলে গেলো।ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে রেশী রেডি হয়ে বসে আছে।
নিলিমা বেগম টেবিলে নাস্তা দিতে দিতে প্রাপ্তিকে আসতে দেখে, দেখনা প্রাপ্তি! রেশী সে সকাল থেকে রেডি হয়ে বসে আছে।কিছু খাচ্ছেও না।তোরা সত্যিই আজ চলে যাবি?

প্রাপ্তি -আম্মু এখন যেতেই হবে। দুইদিন পর তো চলেই আসবো। অরণী তো আছে এখন তোমার কাছে।আমিও থেকে যেতে পারতাম যদি তোমাদের জামাইয়ের অফিসে যেতে অসুবিধা না হতো।(রেশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে)রেশী নাস্তা করছো না কেনো?

রেশী -তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
সকালে নাস্তা করে আয়ানরা বেরিয়ে পড়িলো, রেশী আর প্রাপ্তিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আয়ান অফিসে চলে গেলো।

আয়ানকে দেখেই অভ্র এগিয়ে এসে স্যার আপনি মিষ্টি খাওয়াবেন কখন?
আয়ান নিজের রুমে যেতে যেতে তোকে কতো বার বলেছি আমাকে স্যার বলে ডাকবিনা।তারপরেও তুই স্যার বলছিস কেনো?

অভ্র -এইটা তো অফিস। ফর্মালিটি মেনে তো চলতেই হয়। তুই অফিসের এমডি মানে আমাদের স্যার তোকে যদি সাবার সামনে আমি আয়ান বলে ডাকি তাহলে আমারও খারাপ লাগবে।সবাই বলবে আমি তোকে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ব্যাবহার করছি।

আয়ান -(অভ্রর কাছ থেকে ফাইল গুলো নিয়ে বসতে বসতে)বুজলাম! এখন বল কিসের মিষ্টি তোকে খাওয়াবো?

অভ্র -ভাবীকে কাছে পেয়ে সব ভুলে গেলি?
মিষ্টি দুইটা কারণে খাওয়াবি,
১/ভাবী তোর সাথে এখন ঠিক মতো কথা বলছে।
২/ আসিফ ভাইয়ার বিয়ে।
এখন বল কখন খাওয়াবি?

আয়ান -ওকে আজ রাতেই,তুই আমার বাসায় ডিনার করবি,আর এক সাথে মিষ্টিও খাওয়া হয়ে যাবে।

অভ্র -ওহ্ঃ তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি।১২.০০টার সময় আমাদের নতুন ক্লাইন্ট আসবে আর বস বলছে মিটিং টা তুই সামলে নিতে।বস এটাও বলছে তুই ছাড়া ভালো প্রেজেন্টেশন কেউ দিতে পারেনা।
আচ্ছা আয়ান একটা সত্যি কথা বলবি?

আয়ান -তোর সাথে কখনো মিথ্যা বলেছি?

অভ্র-মিথ্যা বলিসনি ঠিকি অনেক কিছু লুকিয়েছিস।আমার মনে হয় এইখানে আসার আগে তুই বড় কোনো কোম্পানিতে চাকরী করেছিস।আমি কি ঠিক বলেছি আয়ান?
আয়ান -তোর হঠাৎ করে এইগুলো মনে হলো কেনো?

অভ্র- হঠাৎ নয় আমার সবসময় তোর কাজ দেখে, তোর লাইফ স্টেইল দেখে মনে হয়।

আয়ান অভ্রর কথা কিছু না বলে চুপচাপ ফাইল গুলো দেখছে আর ভাবছে কি বলবো অভ্রকে? আব্বুর নাম বললে অভ্র হয়তো চিনে যাবে।এতে আমার প্রাপ্তিকেও ছোটো করা হবে।

অভ্র -কিরে কিছু বলছিস না কেনো?

আয়ান -পরে একসময় বলবো।আচ্ছা যে ক্লেইন্ট আসছে ওদের কোম্পানির নাম কি?

অভ্র -চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি! আবিদ চৌধুরীকে ছিনিস ওনি নিজেই নাকি আজ আসবে।
আমাদের কোম্পানির কাজ নাকি ওনার খুব ভালো লেগেছে।সব তো তোর জন্যই বল?

আবিদ চৌধুরী! নিজের বাবার নামটা শুনেই আয়ানের সব কিছু যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।অভ্রর দিকে আশ্চর্য ভরা দুটো চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান।নিজের হাত থেকে ফাইল গুলো রেখে ঘড়ির দিকে তাকালো আয়ান!সময় আর বেশি নেই হয়তো একটু পর চলে আসবে আবিদ চৌধুরী। কারণ সময়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক তিনি।

অভ্র আয়ানের চোখমুখের অবস্থা দেখে কিরে কি হয়েছে তোর? ওনাকে ছিনিস নাকি আগে থেকে?নাম টা শুনে কেমন জানি মনে হচ্ছে তোকে।
আয়ান- অভ্র মিটিং টা তুই সামলে নিতে পারবিনা? প্রাপ্তিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।ওই বাড়ি থেকে এসেছে,হয়তো মন খারাপ করে আছে ওকে এখন একটু সময় দেওয়া উচিত।

অভ্র -(অট্ট হাঁসি দিয়ে) তুই এতো বউ পাগল কেন বলতো? মিটিং শেষ করেই বাসায় চলে যাস কেউ তোকে আটকাতে যাবেনা।

এমন সময় অফিসের স্টাফ সাইদ এসে, স্যার আবিদ চৌধুরী এসে মিটিং এ যোগ দিয়েছেন বস আপনাকে ডাকছেন।

সাইদের কথা শুনে অভ্রর দিকে তাকালো আয়ান,
অভ্র -স্যার তাহলে আপনি যান আমি ফাইল গুলো গুছিয়ে আসছি।

আয়ান -সাইদ চলো!
আব্বুর কোম্পানি হয়তো এই কোম্পানি থেকে ছোটো হতে পারে কিন্তু আমার আব্বুতো আমার কাছে ছোটো নয়।অভ্র সবসময় বলে এই কোম্পানিটা আমার জন্যই আজ এতো দূর পর্যন্ত এসেছে।কিন্তু এইভাবে আব্বুর সামনাসামনি হতে হবে আমাকে আমি কখনোই ভাবিনি।

চলবে,,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৭

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_বিকেলবেলা প্রাপ্তি অরণী,আয়ান,সিয়াম,আসিফ রেডি হয়ে পাঁচ জনে মিলে আয়ানের বন্ধুর বোনকে দেখতে বের হয়েছে। আসিফ গাড়ী নিতে চেয়েছিলো কিন্তু আয়ান নিতে দেয়নি।

আয়ান -আমার গাড়ী থাকতে আপনারা অন্য গাড়ী নিবেন কেনো? আমরা সবাই একসাথেই যাবো।

আসিফ কাল রাতের কথা মনে করে আর কিছু বললোনা।রাতে একবার রাগ করেছে এখন আর রাগাতে চাই না।
সবাই মিলে মেয়েদের বাড়ীর সামনে নামলো।আয়ানের বন্ধু নিশান (মেয়ের ভাই)এসে তাদের কে এগিয়ে নিলো।
নিশানদের পরিবারে তার মা আর বোন নীরা (যাকে দেখতে আসছে)থাকে।নীরাকে দেখতে আসাতে তার কাকা আর কাকী শহরের থেকে এসেছে।নিশান আর নীরার কয়েকজন ফ্রেন্ড ও এসেছে।নিশান সবাইকে এনে ড্রইংরুমে বসিয়েছে।নিশানের মা তাদের সামনে এসে দাঁড়াতেই নিশান বললো,মা! এই হচ্ছে আয়ান আমার ফ্রেন্ড। প্রাপ্তি ওর ওয়াইফ, (অরণী কে দেখিয়ে)এই হচ্ছে আয়ানের শালি অরণী, অরণীর হ্যাজবেন্ড,আর নীরা জন্য যেই পাত্র এই হলো আসিফ।কথাটা বলতেই আসিফ সালাম দিলো।নিশানের মা সালাম টা নিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, তোমার কথা অনেক শুনেছি নিশানের কাছ থেকে,নিশান তো দেখছি কম বলে ফেলছে তোমার ব্যাপারে।তুমি তো দেখতে এর ছেয়ে বেশি সুন্দর।

আয়ান বসে ফোন টিপতেছে আর বউয়ের প্রশংসা শুনে মুছকি মুছকি হাঁসছে।

অরণী আয়ানকে একটা চিমটি কেটে বউয়ের প্রশংসা শুনে খুব খুশি তাইনা?

আয়ান -কি করবো বলো আমার বউটা এতো বেশি সুন্দর যে কেউ প্রশংসা না করেই পারে না।
একটু পর নীরাকে তার কাজিন বিথী নিয়ে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে ড্রইংরুমে আসলো।
প্রাপ্তি আর অরণী এগিয়ে গিয়ে নীরাকে নিয়ে এসে নিজেদের পাশে বসালো।

সিয়াম সবার দিকে তাকিয়ে বললো আমি আগে আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবীকে একটা প্রশ্ন করি।
আয়ান -হুম করতেই পারো।

সিয়াম-(নীরার দিকে মুখ ফিরিয়ে) আমরা কিন্তু সবাই আপনাকে অনেক জ্বালাতন করবো আপনার কি এইগুলো সহ্য হবে?
(কথাটা শুনে নীরা হেঁসে দিলো।) আসিফ ভাইয়া! হাঁসি দেখে মনে হচ্ছে সহ্য হবে।

প্রাপ্তি -কিসে পড়ো?

নীরা -অনার্স ফাস্ট ইয়ার।

আয়ান -নিশান! এক কাজ কর ভাইয়া আর নীরা আলাদা ভাবে কথা বলুক। সেই ব্যবস্থাই কর।

নিশান -নীরা যাও আসিফ ভাইকে নিয়ে যা আয়ান ঠিকে বলেছে তোমেদের আলাদা ভাবে কথা বলা প্রয়োজন।
নীরা আর আসিফ ছাদে চলে গেলো কথা বলার জন্য।
অরণীকে চুপ থাকতে দেখে,

প্রাপ্তি-কিরে,,, পছন্দ হয়নি? এইভাবে আছিস কেনো?

অরণী -না,,,,হয়েছে।কিন্তু ভাইয়াকে কেমন চুপচাপ লাগলো না?

আয়ান -এখন দেখবা ঠিকি কথা বলবে।হয়তো আমাদের সামনে লজ্জাবোধ করছে।

প্রাপ্তি -হুম ঠিকি বলেছো।

চুপচাপ হয়ে দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে।নীরাতো নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কেমন লোক একটা কথাও বলছেনা।ইচ্ছে করছে একটা তেলাপোকা ছেড়ে দিতে।কেনো যে কয়েকটা তেলাপোকা ধরে রাখলাম না!

নীরাই আগে কাশি দিয়ে গলাটা ঝেড়ে নিয়ে এহেম,,,আপনি কি রোবটের ছোটো ভাই?

আসিফ -মানে?

নীরা -আপনি কি কানেও কম শুনেন?

আসিফ-কি বলছেন এইসব?

নীরা -ঠিকি বলছি।একটা মেয়ে মানুষ আপনার সামনে একা দাঁড়িয়ে আছে আপনি কোনো কথাই বলছেন না।নাকি আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি?

আসিফ -আরে না কি বলেন।আপনাকে পছন্দ না করার উপায় আছে?অবশ্যই পছন্দ হয়েছে।

নীরা একটু রাগি ভাব নিয়ে, উপায় নাই মানে? আমার কি নাক একটা বেশি নাকি তাই আমাকে তোর পছন্দ হয়েছে।

আসিফ -আপনি আমাকে তুইতোকারি করছেন কেনো।সোজা বললেই তো হয় আপনি এই বিয়েতে রাজি না।

নীরা -তুই বলবো নাতো কি বলবো।আমিতো তোর ৬০ বছরের বড় তাই তুই আমাকে আপনি করে বলছিস। যতক্ষণ না আমাকে তুমি করে ডাকবি ততক্ষণ আমি তুই ডাকবো।

আসিফ ঘাবড়ে গিয়ে ওকে ওকে আমি তুমি করেই ডাকছি।আচ্ছা তুমি কি সবসময় এইভাবেই কথা বলো।

নীরা -না মাঝে মাঝে।তবে সবার সাথে করিনা শুধু আপনার সাথেই করবো।(কথাটা বলেই নীরা ফিক করে হেঁসে দিলো)

আসিফ -তার মানে এই বিয়েতে তুমি রাজি। তাহলে সোজাসুজি ভাবে তোমাকে কয়েকটা কথা বলি।তুমি কি পারবে আমার পরিবারের সবাইকে নিজের পরিবার বলে ভাবতে?পারবে আমার দুই বোনকে নিজের বোন ভাবতে? আমার পৃথিবী একদিকে আর আমার বোনরা আরেক দিকে।যদি তুমি এইসব সহ্য করতে পারো তাহলে বিয়েতে আমার কোনো অমত নেই।ও হ্যাঁ তুমি এই কথা ভেবো না তোমার কোনো অযত্ন হবে, বা তোমাকে আমি ভালোবাসবো না, এইসব কখনো ভেবো না।তোমার সবকিছুই আমার দায়িত্ব। আর আমার পরিবারের দায়িত্ব তোমার।এইবার তুমি ভাবো আমাকে কি তুমি বিয়ে করবে নাকি করবেনা।যদি তোমার সময় লাগে তাও দিলাম।
কথা গুলো বলেই আসিফ হাঁটতে শুরু করলো নিচে আসবে বলে।
নীরা আসিফ একটু হাঁটতেই বললো, দাঁড়ান!
আসিফ দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকালো।

নীরা -আপনি আমাকে সময় দিয়েছিলেন না? কোনো সময়ের দরকার নেই আমি এখনি আনসারটা দিয়ে দিচ্ছি।

আসিফ -(নীরার দিকে এগিয়ে গিয়ে)জানি তুমি কি বলবে! তুমি এই বিয়েতে রাজিনা তাই তো? ওকে আমি নিচে গিয়ে বলে দিচ্ছি।সমস্যা নেই তোমার কোনো দোষ দিবোনা। আমি নিচে গিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে নিবো।

নীরা -রাখেন তো আপনার বকবক। আমি আপনাকে বিয়ে করছি বুজছেন?আমি আমার লাইফে এমন একজনকেই ছেয়েছি।যার মনে শুধু ভালোবাসা থাকবে। থাকবেনা কোনো অহংকার।আমি আপনাকে দেখে বুজেছি, যে মানুষটা পরিবারকে এতো ভালোবাসতে পারে সে মানুষের কখনোই মনে কোনো হিংসা থাকতে পারেনা।আমার আপনার মতো এইরকম একজন মানুষের দরকার।যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে।

নীরার কথা গুলো শুনে আসিফ মুছকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে নিচে নেমে এলো।

আসিফকে আসতে দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে,ভাইয়া আপনার কি পছন্দ হয়েছে?আমরা কি সামনে এগিয়ে যাবো?

আসিফ – সমস্যা নেই এগুতে পারো।
কথাটা শুনে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে একজন আরেকজন মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো।আয়ান এসে প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে মহারাণী বিয়ে হবে একটা বাসরঘর হবে দুইটা।কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, দেখা যাবে।
আয়ান -আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।আমি যেটা বলবো সেটাই।

অরণী -এই তোমরা আবার কি ফিসফিস করছো? দুজনে মিষ্টি খাও।

আয়ান -আচ্ছা তাহলে আমরা কাজের কথায় আসি।আমাদের সবার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।এখন বিয়ের ডেট তো ফাইনাল করতে হবে।আমরা তো দেখেই গেলাম।বাবা এবং মুরুব্বিরা এসে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে যাবে।কি বলেন সবাই(নীরাদের সবার দিকে তাকিয়ে)

নীরার মা- আলহামদুলিল্লাহ্‌! তোমরা যা ভালো মনে করো।

নিশান -আয়ান আমি কিন্তু একা সব সামলেতে পারবোনা।তুই ওই দিকের কাজ সেরে সময় পেলে আমাকেও একটু সময় দিস।

আয়ান -চিন্তা করিস না।বিয়ে ফাইনাল হলেই অভ্রকে তোর জন্য পাঠিয়ে দিবো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৬

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

__প্রাপ্তি আয়ানের দিকে অবাক চোখে নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।,,,,,,
মনে মনে ভাবছে আচ্ছা এইটা কি পাগল নাকি অন্য কিছু।কেউ এইভাবে কারো,, ওয়াক থুঃ,,

আয়ান -এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আর অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।ভালোবাসার মানুষের সবকিছু ভালো লাগা উচিত হকনা ঘাম তাতে কি?( কথার ফাঁকে আয়ান খাবার অর্ডার দিয়ে দিলো)

অরণী কথা শেষ করে এসে বসতে বসতে কি ব্যাপার দুজনে কথা শেষ হয়েছে? হলে খাবার তাড়াতাড়ি দিতে বলো।

প্রাপ্তি আবারো আড় চোখে পাশের টেবিলের দিকে তাকাচ্ছে।কেনো আমার এই ভদ্র লোককে এতো চেনা মনে হচ্ছে।ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে ওনি আমাদের দিকে রাগীভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কেন?

ওয়েটার এসে অনেক রকমের খাবার এনে দিয়ে গেলো।
আয়ান -প্রাপ্তি এইরকম ভাবে না থেকে খাওয়া শুরু করো।
প্রাপ্তির সেইদিকে কোনো মন নেই।আয়ান প্রাপ্তির অন্যমনস্ক দেখে, এই তুমি আমার দিকে তাকাওতো আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি খেয়ে নিচ্ছি।
আয়ান -একদম চুপ! হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তিকে জোর করে খাইয়ে দিলো।

প্রাপ্তি -এইবার আপনি খান।

আয়ান -অরণী! প্রাপ্তি আজ আমাকে একবার তুমি বলে ডেকেছে।এখন আবার আপনিতে চলে গেলো।

অরণী – কিরে? সকালে তোকে বলছিনা ভাইয়াকে তুমি বলে ডাকতে?

প্রাপ্তি -অভ্যাস হয়ে গেছে পাল্টাতে তো সময় লাগবে তাই না?

আয়ান – নো প্রবলেম।তোমার যেমনটা ভালো লাগে।
প্রাপ্তিকে পাশের টেবিলে আবার তাকাতে দেখে, কখন থেকে ওই দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?দেখিতো! কথাটা বলেই আয়ান ফিরে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আয়ানের হাঁসি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো।প্রাপ্তি আর অরণী আয়ানের অবস্থা দেখে,
অরণী _ভাইয়া কি হয়েছে? তুমি মুহূর্তের মধ্যেই চেঞ্জ হয়ে গেলা?

প্রাপ্তি -আমার থেকে লোকটাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা কোথায় দেখেছি ওনাকে।।

আয়ান গম্ভীর গলায় নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ওনি আমার আব্বু!
প্রাপ্তি -(বিস্মিত হয়ে) কিহ্।

আয়ান -হুম প্রাপ্তি!

প্রাপ্তি -এই জন্যইতো অনেকক্ষণ থেকে আমার চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু ওনি এইখানে কি করছেন?

আয়ান -হয়তো বিজনেসের কোনো কাজে আসছে।

প্রাপ্তি -ওনার সাথে গিয়ে কথা বলবানা?
তুমি এখনো বসে আছো।যাও ওনার সাথে গিয়ে কথা বলো।

আয়ান উঠে দাঁড়াতেই আবিদ চৌধুরী উঠে চলে গেলো। আয়ান তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি! ওনি হচ্ছেন বিখ্যাত বিজনেস ম্যান আবিদ চৌধুরী। ওনার সাথে আমাদের যায়না।

প্রাপ্তি -আমার হ্যাজবেন্ডও কোনো অংশে কম নয়। সেটা ওনাকে বুজতে হবে।আর সেটা আমি ওনাকে বুজাবো।শুধু ভাইয়ার বিয়েটা মিটে যেতে দাও।

অরণী আচ্ছা এখন খাওয়া শেষ করো বাসায় যেতে হবে।বিকালে আবার নাকি মেয়েও দেখতে যাবা।ভাইয়া তোমার বন্ধুকে ফোন করেছো ওদের বাসায় যে যাবা।

আয়ান বসতে বসতে, ওইটা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবেনা।

প্রাপ্তি -এককাজ করো ভাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে দেখো রেশী কে নিয়ে কলেজ থেকে আসছে কিনা।

আয়ান -ভাইয়া আমাকে এসএমএস অনেক আগেই দিয়েছে ওরা বাসায়।

অরণী খাওয়া শেষ করে পানি ঢালতে ঢালতে, তবে যাই বলিস রেশীকে আমার খুব ভালো লাগে।অনেক সহজ সরল একটা মেয়ে।বুজা যাচ্ছে মেয়েটা তোদের অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।আর ভালোবাসবে না কেনো বল তোরা তো ওকে কাজের মেয়ের মতো করে রাখিসনা।

প্রাপ্তি -অরণী! ও অনেক বড় ঘরের মেয়ে হয়তো ভাগ্যে তাকে আমাদের কাছে টেনে এনেছে।শুনেছি ওর বাবা নাকি মেয়েকে অনেক খুঁজেছে।কিন্তু পায়নি।পাবেই বা কি করে ও তো আমাদের কাছেই।জানিস ও বিয়ে থেকে পালিয়ে আসছিলো। ওর সৎ মা নাকি কোনো এক বাজে ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিতে ছেয়েছিলো।কোনোরকম ভাবে সেইখান থেকে পালিয়ে এসে রাস্তার পাশেই বসে ছিলো।তোর ভাইয়া সেই দিন রাতে কোনো একটা কাজে বাহিরে গিয়েছিলো। একা একটা মেয়ে আশেপাশে ছেলেরাও অন্য রকম ভাবে দেখছে। তোর ভাইয়া তো ওকে দেখেই বুজে ফেলেছিলো ও হয়তো পালিয়ে টালিয়ে আসছে।আর ওকে যখন তোর ভাইয়া একবার জিজ্ঞাস করলো যে ও একা কেনো বসে আছে ও সবকিছু গড়গড় করে বলে দিলো।তখন তো তোর ভাইয়া ওকে একা রেখে আসতে পারেনি। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছে।আয়ান প্রাপ্তির কথা গুলো শুনছে আর মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে।অরণী প্রাপ্তি কথা গুলো শুনছে আর বারবার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।
অরণী -ভাইয়া কথা জিজ্ঞাস করি?

আয়ান -হুম করো না!

অরণী -আপনি হাঁসছেন কেনো?
অরণীর কথা শুনে প্রাপ্তি রাগি ভাব নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)সত্যি বলছি আমি অন্য কিছু ভেবে হাঁসিনি। একটা কথা ভেবেই আমি হাঁসছি, আর সেটা হলো। তুমি যখন আমার সাথে কথা বলতেনা তখন তো আমি নিজেই বকবক করতাম।আর আমি তখন ভাবতাম আচ্ছা আমি যে এতো বকবক করছি ও কি আমার কথা গুলো শুনে নাকি শুনে না, সেটাও তো বুজতে পারিনা।তবে আজ বুজলাম তুমি আমার সব কথায় শুনতে।

প্রাপ্তি- (একটু ভেংচিয়ে) শু,,,,,,ধু শুনতাম না! ম,,,,,,ন দিয়ে শুনতাম।

আয়ান -জানো অরণী! তবে আমার একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে তোমার আপুর,সেটা হলো ও আমাকে কখনো সন্দেহ করেনি।কারন যেদিন রাতে আমি রেশীকে নিয়ে এসেছিলাম কিছু না বলে, সেইদিন রেশীকে নিয়ে আমি খুব ভয়ে ভয়ে কলিংবেল চাপলাম। যদি তোমার আপু আমাকে ভুল বুজে কিছু করে বসে।কিন্তু তোমার আপু দরজা খুলে আমাকেই অবাক করে দিয়েছে।কারণ রেশীকে দেখে তার চোখেমুখে বিষণ্ণতার কোনো চাপ নেই।উল্টো মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে রেশীকে বাসায় নিয়ে বসালো।আর রেশীর কি যে যত্ন করেছে তোমাকে বলে শেষ করা যাবেনা।আমি সেইদিন বুজলাম তোমার আপু আমাকে অনেক বিশ্বাস করে।আর আমার প্রতি ওর বিশ্বাস দেখে আমি নতুন ভাবে আবার ওর প্রেমে পড়লাম।

অরণী -আপু দেখেছিস ভাইয়া তোকে কতো ভালোবাসে।আর তুই ভাইয়াকে অনেক কষ্ট দিস।

প্রাপ্তি -অনেক কথা বলা হয়েছে এইবার বাসায় চলো।

আবিদ চৌধুরী বাসায় এসেই চিৎকার দিয়ে, আয়েশা! আয়েশা! কোথায় তুমি?

আয়েশা বেগম নিজের রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসে, এইরকম বাহিরে থেকে এসে চেঁচাচ্ছ কেনো?
সুমিও উপরের থেকে দৌড়ে নিচে নেমে এলো।

আবিদ চৌধুরী -তোমাদের কি মনে হয় আমি এতোই পাষাণ? আমার মনে কোনো দয়ামায়া নেই।আমি দয়ামায়াহীন?

আয়েশা বেগম -তোমার মনে অনেক দয়ামায়া তাই আমার কলিজা টুকরো টা বউ নিয়ে বাহিরে থাকতে হয়।অবশ্য ভালোই হয়েছে ছেলেটা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে।এইবার কি হয়েছে সেটা বলো।

আবিদ চৌধুরী আয়েশা বেগমের কথা শুনে নিমিষেই যেনো রাগ টা কমে গেলো।চুপচাপ সোফায় বসে পড়লো।

সুমি -বাবা কি হয়েছে আপনার? আপনি যে কাজে গেছেন সেটা হয়নি?

সোফায় মাথাটা হেলান দিয়ে কান্না জড়িতো কন্ঠে, আবিদ চৌধুরী কোনো কাজে হারতে শিখেনি। কিন্তু তার ছেলের কাছেই হেরে বসে আছে।(ঠাট্টা করে)জানো আয়েশা আমার ছেলে বউয়ের প্রতি কি অবিরাম ভালোবাসা দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেছি।বউয়ের ঘাম খাওয়া হচ্ছে।পাবলিক প্লেসে বউকে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কথা গুলো শুনে আয়েশা বেগম আর সুমি দুজন দুজানার দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়েশা বেগম -কার কথা বলছো তুমি?

আবিদ চৌধুরী -কেনো বুজতে পারোনি? তোমার গুণোধর ছোটো ছেলের কথা বলছি।কথাটা বলেই আবিদ চৌধুরী উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন।
সুমি আর আয়েশা বেগম দুজনে কাছাকাছি এগিয়ে এসে হাঁসতে শুরু করলো।

চলবে,,,,,,,