Wednesday, June 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 110



জীবনের ডাকবাক্স পর্ব-০৩

0

#জীবনের_ডাকবাক্স
[তৃতীয় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আসিফের চোখ হঠাৎ করে একটা যায়গায় আঁটকে যায়। সে দেখতে পায় কেউ একজন দূরে দাঁড়িয়ে আছে। গণ চুলে ঢাকা তার মুখ। চুলের ফাঁকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা পরিচিত হাসি। আসিফ সেদিকে তাকিয়ে আছে। তখনই নিলয় বলল,

— কিরে কি হইছে? ঐ দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?

আসিফ নিশ্চুপ। আনমনে তাকিয়ে আছে হাসিটার দিকে। পরিস্থিতি বুঝার জন্য নিলয় আসিফকে একটা ধাক্কা দিতেই আসিফ নড়েচড়ে উঠে।

— কি দেখছিস ঐ দিকে? কখন থেকে প্রশ্ন করছি।

— আমি ওখানে কাকে যেনো দেখেছি। আমি মুখ দেখতে পাইনি কিন্তু হাসিটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। এই হাসি আমি আগেও দেখেছি।

— আমি তো কাওকে দেখলাম না। ভাই তোর কি হইছে একটু বলবি? তোর কোনো কিছুই আমার ভালো লাগছেনা।

— আমিও জানিনা, আমার সাথে কি হচ্ছে এসব? এতো বড় একটা এক্সিডেন্টের হাত থেকে কে আমাকে রক্ষা করছে? তাকে একটা ধন্যবাদ ও দিতে পারিনি। সব কিছুই অদ্ভুত লাগছে ভাই।

— আচ্ছা ভাই এসব বাদ দে, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার গার্লফ্রেন্ড রিয়া হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

— আচ্ছা চল।

তারা একটা রিকশা দেখে রিকশার মধ্যে উঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা রিয়ার বাসায় সামনে গিয়ে নামে। নিলয় আর আসিফ রিকশা থেকে নেমে দেখে রিয়া তাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। নিলয় গিয়ে রিয়ার সাথে আসিফের পরিচয় করিয়ে দেয়। তার সবাই এক সাথে বাসার ভিতরে যায়। সবাই এক সাথে বসে আড্ডা দিতে থাকে। কিন্তু সেই প্রথম থেকে আসিফ চুপচাপ হয়ে আছে। সে যেনো কোনো গভীর চিন্তায় মগ্ন। আসিফের এমন অবস্থা দেখে রিয়া বলল।

— ভাইয়া আপনি এমন চুপচাপ হয়ে বসে আছেন কেন? কোনো কথা বলছেন না। আমাদের সাথে আড্ডা দিতে আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?

— আরে তেমন কিছুই না। আপনারা আড্ডা দেন আমি শুনছি।

এখানে অনেকেই এক সাথে আড্ডা দিচ্ছে। রিয়ার অনেক গুলো বান্ধুবী আছে এখানে। আবার কয়েকটা ছেলে ফ্রেন্ড ও আছে। একটা মেয়ে আসিফের পাশে বসে।

— হাই, আমি প্রিয়া। রিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।

— আমি আসিফ, নিলয়ের বন্ধু।

— সেটা তো জানি। আপনি কি এমন চুপচাপ স্বভাবের?

— দেখতেই তো পারছেন। আমি আসলেই এমন।

— প্রেম করেন?

— প্রেম! সেটা আমার জন্য না।

— কেন?

— অনেক বড় ইতিহাস। থাক সেসব কথা। আপনারা আড্ডা দেন। আমি একটু আসছি।

এই কথা বলে আসিফ উঠে চলে যায়। সে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরের মনরোর পরিবেশ দেখতে থাকে। কোনো এক অজানা কারণে আসিফের চোখ দিয়ে দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সে নিজের হাত দিয়ে পানি মুছে নেয়। হঠাৎ করে তার কোন এক অজানা অতীত মনে পড়ে। কারোর আশার শব্দ শুনে আসিফ নিজের চোখ ভালো করে মুছে নেয়। আসিফ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায় প্রিয়া।

— কি ব্যাপার মন খারাপ নাকি আপনার? ওভাবে উঠে চলে আসলেন যে!

— মন খারাপ নই। এমনিতেই ভালো লাগছেনা। তাই এদিকে আসলাম। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। আর কতো সুন্দর ফুল ফুটে আছে।

— আপনি ফুল পছন্দ করেন?

— হ্যাঁ খুব।

— বাহ! আমারও ফুল খুব পছন্দের। আমি শুনেছি যারা ফুলকে ভালোবাসে তাদের মন নাকি ফুলের মতো সুন্দর।

মেয়েটার কথা শুনে আসিফ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

— হতে পারে, তবে জানা নেই।

— ওহ, আচ্ছা বাসায় কে কে আছে?

— আমি আর আম্মু।

— বাবা নেই?

— নাহ, বাবা অনেক আগেই গত হয়েছেন।

— ওহ! সো সেড। সরি আপনার বাবার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

— আরে কোনো ব্যবহার না। আমি কিছু মনে করিনি।

— ধন্যবাদ।

— আবার ধন্যবাদ কেন?

— কিছু মনে না করার জন্য। হিহিহি।

দু’জনেই হেসে উঠে। হঠাৎ করে তাদের পিছনে এসে দাঁড়ায় নিলয়।

— কিরে তোরা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? ওখানে আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি।

— দুলাভাই আপনার বন্ধুর মন খারাপ তাই একটু ভালো করার চেষ্টা করছি।

— ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে? ওকে ক্যারিওন।

এই কথা বলে নিলয় চলে গেলো। নিলয় বুঝতে পারে আসিফের মনের অবস্থা। তাই সে চলে গেলো৷ এদিকে আসিফ প্রিয়ার বলা কথা গুলো শুনে কিছুটা লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে থাকে।

— এই-যে মশাই আপনি আবার চুপচাপ হয়ে গেলেন কেন?

— কই না তো।

— জানেন আমার ইচ্ছে করছে একটা গান শুনতে।

— তো শুনেন।

— কে শোনাবে? আপনি একটা শুনান প্লিজ।

— আমি গান পারিনা, সরি মাপ করবেন।

— এই-যে মিস্টার আমাকে কি আপনার ভিক্ষুক মনে হয়?

কোমরে দুই হাত দিয়ে আসিফের দিকের তাকিয়ে কথাটা বলল প্রিয়া।

আসিফ একটা হাসি দিয়ে বলল — ভিক্ষুক কেনো মনে হবে?

— তাহলে মাপ করতে বললেন কেন?

— আমি গান পারিনা সেই জন্য বলছি।

— দূর আপনার সাথে আর কোথায় বলব না।

— আচ্ছা।

— আবার আচ্ছা কি? একদম চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো।

— আমি আবার কি করলাম?

— আপনি কেন কিছু করবেন। আপনি তো একটা কুচি খোকা। আপনার ফোন নাম্বার টা দেন তো।

— আমার ফোন নাম্বার দিয়ে কি করবেন?

— প্রেম করব দিতে বলছি দেন।

কথাটা শুনে আসিফ চুপ হয়ে যায়। তখন প্রিয়া খিলখিল করে হেসে দেয়। এই মেয়ের কাহিনি বুঝতে পারেনা আসিফ। একটু পর পর রং পাল্টে যায়। একটু আগে রাগ দেখাল এখন আবার খিলখিল করে হাসছে।

— ভয় পাবেন না। প্রেম করব না, আপনার নাম্বার এমনিতেই দেন। মাঝেমধ্যে খোঁজ খবর নেবো আরকি।

আসিফ নাম্বার দিতে কিছুটা নার্ভাস ফিল করে। একটা সময় সে প্রিয়াকে নাম্বার দিয়ে দেয়। তারপর দুজনে দাঁড়িয়ে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে। তাদের কথার মাঝে রিয়া চলে আসে।

— আর কতক্ষণ খালি পেটে থাকবেন। খেতে আসেন সবাই অপেক্ষা করছে। প্রিয়া তুইও আয়।

এই কথা বলে রিয়া চলে গেলো। আসিফ আর প্রিয়া খাবার খাওয়ার জন্য চলে গেলো। সবাই এক সাথে খেতে বসে।কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই খাওয়া দাওয়া শুরু করে। আসিফ আনমনে খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রিয়া বার বার আসিফের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে যায়। এবার যে যার বাসার দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। সবাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রিয়া আসিফের কাছে এসে বলল,

— সাবধানে যাবেন। আর হ্যাঁ বাসায় গিয়ে কিন্তু কল দেবো।

আসিফ কিছুই বলল না। এবার মেয়েটা চলে গেলো। আসিফ নিলয় রিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। রাত অনেক হয়ে যাওয়াতে রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই।

— আসিফ মনে হচ্ছে আমাদের হেঁটেই বাসায় যেতে হবে। এতো রাতে গাড়ি পাওয়া সম্ভব নই।

— হেঁটে গেলেই ভালো হবে। রাতের শহর উপভোগ করা যাবে। জনমানব শুন্য শহর।

— তা ঠিক বলছিস। আচ্ছা আসিফ প্রিয়া মেয়েটাকে কেমন লেগেছে?

— ভালোই তো, কিন্তু বকবক একটু বেশি করে।

নিলয় একটা হাসি দিয়ে বলল — মেয়েরা একটু বেশিই কথা বলে।

— তাহলে,,

— তাহলে কি?

— কিছুনা বাদ দে। তোর কথা বল।

আসিফ নিলয়ের থেকে কিছু একটা লুকিয়ে রাখে। নিলয় বুঝতে না পেরে বলল,

— আমার আর কি বলব,

— তোদের সম্পর্কের বয়স তো অনেক হয়েছে বিয়ে কেন করছিস না?

— বিয়ে করে খাওয়াবো কি? আমি তো এখনও পড়াশোনা করছি। পড়াশোনা শেষ হোক, ভালো একটা চাকরি নিয়ে তারপর বিয়ে করব।

— লক্ষ্য রাখিস মানুষটা যেনো হারিয়ে না যায়। প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা মানুষকে ভালো ভাবে ঘুমতে দেয়না।

— তুই এসব কীভাবে জানিস? তুই তো কখনও প্রেম ও করিসনি। তাহলে তোর মুখ থেকে এসব কথা কীভাবে আসে?

নিলয়ের প্রশ্ন শুনে আসিফ কি বলবে বুঝতে পারেনা। তখনই নিলয়ের ফোন বেজে উঠে। নিলয় ফোন বের করে দেখে রিয়া কল দিয়েছে। তাই সে দেরি না করে ফোন রিসিভ করে। ফোনের ওপাশ থেকে রিয়া নিলয়কে কিছু একটা বলে যেটা শুনে নিলয়ের হাসি মুখ কালো হয়ে যায়। আর সে স্তব্ধ হয়ে যায়।

চলবে?

জীবনের ডাকবাক্স পর্ব-০২

0

#জীবনের_ডাকবাক্স
[দ্বিতীয় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আসিফ ছাত্রীর বাসায় এসে ভিতরে ঢুকতেই সে স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ কাল যে ছবিটা ছিলো সেই ছবিটা আর সেখানে নেই। ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। সে গিয়ে সোফায় বসে অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণ পরে নিঝুম সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করে। নিঝুম একা সাদা জামা পড়েছে। আসিফ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। আসিফ মেয়েটাকে দেখলেই কেন জানি হারিয়ে যায়। এতো সুন্দর একটা মেয়ে, আজকে তাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। সাদা ড্রেসটা যেনো মেয়েটাকে গিলে খাচ্ছে। আর মেয়েটার মুখে সেই পাগল করা মিষ্টি হাসি। নিঝুমযে কখন আসিফের সামনে এসে বসেছে আসিফ খেয়াল করেনি।

–স্যার!

অবশেষে নিঝুমের ডাকে নিজের মধ্যে ফিরে আসে আসিফ।

— স্যার এভাবে কি দেখছেন আপনি?

— কিছুনা, বই বের করো।

এবার নিঝুম বই বের করে। আসিফ কিছুক্ষণ নিঝুমকে পড়া বুঝিয়ে দিতে থাকে। একটু পরে নিঝুমের আম্মু চা নিয়ে আসে আসিফের জন্য। আসিফ হাতে চা নিয়ে ধন্যবাদ বলে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। চায়ে চুমুক দিতেই নিজের অজান্তে একটা শব্দ বের হয়ে আসে আসিফের মুখ থেকে।

— অসাধারণ।

— বাবা চা কি ভালো হইছে?

— এতো ভালো চা আমি মনে হয় জীবনে প্রথম খেয়েছি। আপনার চা তো খুব ভালো হইছে আন্টি।

— ধন্যবাদ বাবা।

— আচ্ছা আন্টি একটা কথা বলার ছিলো।

— হ্যাঁ বলো।

— এতো বড় বাড়িতে কি আপনারা দু’জন থাকেন? আর কেউ নাই? মানে আংকেল কি আপনাদের সাথে থাকেনা?

মা-মেয়ে দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আন্টি বলল,

— আসলে বাবা কীভাবে যে বলি। আসলে একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় তোমার আংকেল গত হয়েছে।

— সরি আন্টি।

— সমস্যা নেই। আমি যাই রান্না বাকি আছে। আর এই খাম টা রাখো।

— কীসের খাম এটা?

— বাসায় গিয়ে দেখো।

এই কথা বলে ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। আসিফ আবার নিঝুমের পাড়ায় মনোযোগ দেয়। পড়ানোর মাঝে আসিফ বলল,

— আচ্ছা নিঝুম তোমাদের কলেজের নাম যেনো কি?

— কথাটা শুনে নিঝুম একটু চুপচাপ হয়ে যায়।

— কি হলো? তুমি কোন কলেজে পড়ো?

— স্যার আমার ওয়াশরুমে যেতে হবে। এসে সব বলছি। পেটে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হইছে।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর নিঝুম উঠে চলে যায় ওয়াশরুমের ভিতরে। আর আসিফ একাই বসে থাকে। আর সে পুরো বাড়িটা ভালো করে দেখছে। বাড়িটা খুব সুন্দর ভাবেই গুছিয়ে রাখা সব কিছুই। এতো বড় বাড়ি মাত্র দু’জন থাকে। কিছুক্ষণ পরে নিঝুম ফিরে আসে।

— স্যার আজকে আর পড়তে পারবোনা আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে।

আসিফ নিঝুমের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বাড়ির দরজা থেকে একটু বাহিরে আসতেই তার মনে পড়ে আন্টি কে তো কিছু একটা জিজ্ঞেস করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা সে জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গিয়েছে। (মানে সেই ছবিটার কথা) কাল মনে করে জিজ্ঞেস করবে বলে সে তার বাসার দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ বাসায় পৌছে যায়।

নিলয় আসিফের কাছে এসে বলল,

— কিরে জিজ্ঞেস করছিস নাকি?

— না ভুলে গেছিলাম।

— হঠাৎ করে তোর এতো ভুলে যাওয়ার রোগ কীভাবে হলো? গ্রামে থাকতে তো তুই এমন ছিলি না।

— বাদ দে তো। হয়তো একটু বেশিই প্রেশার পড়ছে, সেই জন্য এমন হচ্ছে।

— হতে পারে, আচ্ছা তুই থাক আমি আজ আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে মিট করব।

— কেন?

— আজ ওর জন্মদিন। আর জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করছে, তুই যাবি নাকি?

— না,এসব পার্টি আমার ভালো লাগেনা।

— গেলে ভালো হবে আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতাম।

— আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।

এবার দু’জন বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। হঠাৎ করে গাড়ি সব কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো? হঠাৎ তাদের সামনে একটা প্রাইভেট কার এসে দাঁড়িয়ে যায়। গাড়ির গ্লাস খুলতেই আসিফ দেখে যে নিঝুম।

— স্যার আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

— আসলে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। আমি আর আমার বন্ধু একটা পার্টিতে যাচ্ছি। কিন্তু এখন গাড়ি পাচ্ছিনা।

— আপনাদের যদি কোনো সমস্যা না হয় তাহলে আমি আপনাদের নামিয়ে দিয়ে আসতে পারি।

— তুমি কেন কষ্ট করবে?

— আরে উঠন তো।

— নিলয় ও আমার ছাত্রী নিঝুম।

— কে?

— এই-যে ও!

এই কথা বলে আসিফ হতবাক হয়ে যায়। এখানে তো কেউ নেই। তাহলে এতক্ষণ এখানে কে ছিলো? আসিফ তো স্পষ্ট নিঝুমকে এখানে দেখলো। তার সাথেও কথা হলো।

— ভাই তোর শরীর ঠিক আছে তো? রাস্তায় একটা কাকপক্ষী ও নেই। আমি টেনশনে আছি গাড়ি পাবো নাকি সেটা নিয়ে, আর তুই মজা করতে শুরু করলি।

— আমি মজা করছিনা। একটু আগে নিঝুম গাড়ি নিয়ে আমার সামনে এলো আর আমি ওর সাথে কথা বলছি। ও আমাদের লিভ দেওয়ার কথাও আমাকে বলছে।

— আমি কেনো কোনো গাড়ি এখানে দেখলাম না। আমি তো তোর সাথেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিস।

— আরে ভাই এমন কিছুই না।

— আচ্ছা বাদ দে। তুই মেয়েটার একটা ছবি তুলে এনে দিস আমাকে।

— ঠিক আছে।

–এখন আর এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে একটু হেঁটে যাই, যদি সামনে কোনো গাড়ি পাই উঠে যাবো।

দু’জনে হাঁটতে শুরু করে। আসিফ শুধুই নিঝুমের কথা চিন্তা করছে। নিঝুম বার বার তার ভাবনায় কেন আসে? এটা আদোও ভাবনা নাকি অন্য কিছু? এই মেয়ের মুখ কেন বার বার আসিফের সামনে ভেসে উঠে? এসব ভাবছে আর আনমনে হেঁটে চেয়ে চলছে আসিফ। নিলয় যে তার সাথে নেই সেটাও খেয়াল করেনি সে। নিলয় তাড়াহুড়ো করে হেঁটে আসিফের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আর এদিকে আসিফ আনমনে হেঁটে চলছে। সে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে আসছে সে বুঝতেও পারেনি। অনেক গতিতে একটা ট্রাক তার দিকে এগিয়ে আসছে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। ট্রাক জোরে জোরে হর্ণ দিতে থাকে। হর্ণেটের শব্দ আসিফের কানে আসছেনা। নিলয় হর্ণেটের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখে আসিফ রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে। এটা দেখে নিলয় ও চিৎকার দিয়ে আসিফ আসিফ বলে ডাকে। কিন্তু কোনো শব্দ আসিফের কানে আসছেনা। সে-তো হারিয়ে গিয়েছে নিঝুমের ভাবনায়। এদিকে নিলয় দৌড়ে আসতে থাকে। কিন্তু সে অনেক টা দূরে চলে গেছে হেঁটে। ট্রাক প্রচন্ড গতিতে আসছে। ট্রাক যখন আসিফের খুব কাছে চলে আসে তখন আসিফ খেয়াল করে। আসিফ এই সময় কী করবে বুঝতে পারছেনা। সে যে সরে যাবে সেই অবস্থায় ও নেই। নিলয় ও দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সে বুঝতে আরে তার আর কিছুই করার নেই। তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।

এদিকে ট্রাক যখনই আসিফের সামনে চলে এলো তখন আসিফ নিজের চোখে বন্ধ করে ফেলে। আচমকা কিছু একটা আসিফকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে আসিফ রাস্তায় এক সাইডে পড়ে যায়। আর খুব গতিতে ট্রাক চলে যায়। নিলয় ভয়ে কান্না করতে শুরু করে। ট্রাক চলে যাওয়ার পরে নিলয় খেয়াল করে আসিফ রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখে নিলয় এক দৌড়ে আসিফের কাছে চলে আসে।

— আসিফ তুই ঠিক আছিস তো? তোর কোথাও লাগেনি তো? আমি তো খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।

— আমি ঠিক আছি কিন্তু আমাকে কে বাঁচিয়েছে? তাকে তো দেখতে পারছিনা।

— আমি তো সব আশা ছেড়েই দিছিলাম। তুই ঠিক আছিস এটাই অনেক।

— নিলয় কেউ তো এখানে আছে। যে আমাকে সব সময় সাহায্য করছে।

এই কথা বলতেই আসিফের চোখ একটা যায়গায় আঁটকে যায়।

চলবে?

জীবনের ডাকবাক্স পর্ব-০১

0

#জীবনের_ডাকবাক্স
[সূচনা পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

ছাত্রীকে পড়াতে এসে নিজের ছবি ছাত্রীর বাসার দেওয়ালে ঝুলতে দেখে আমি অনেকটাই ঘাবড়ে গেলাম। এই বাড়িতে আজ আমার প্রথম দিন। মনে হয়না ওনারা এর আগে কখনও আমাকে দেখেছে। তাহলে আমার ছবি এই বাড়ির দেওয়ালে কীভাবে এসেছে? ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগছে খুব। অনেক্ক্ষণ হলো আমি এসে বসে আছি। কিন্তু আমার ছাত্রী অথবা বাসার কাওকে এখন পর্যন্ত দেখলাম না! আচ্ছা আমি কি ভুল ঠিকানায় চলে আসছি? মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

এই শহরে নতুন এসেছে আসিফ। শহরের তেমন কিছু ভালো ভাবে চীনেও না সে। একটা বন্ধুর মাধ্যমে একটা টিউশনের ব্যবস্থা করলো। যাতে করে নিজের পড়াশোনার খরচ অন্তত বহন করতে পারে। কিন্তু এখানে এসে তার সাথে ঘটে গেলো অবাক কান্ড। এই বাসায় প্রথম এসেছে সে। একজন ভদ্রমহিলার সাথে ফোনে কথা হয়েছিলো। ঠিকানা তো এটাই ছিলো। তাহলে সবাই কোথায় হারিয়ে গেলো?

আসিফ সোফায় বসে আছে প্রায় অনেক্ক্ষণ হয়েছে। এই বাড়িটাও খুব অদ্ভুত লাগছে। সব থেকে বেশি ভাবাচ্ছে তার ছবি এই বাড়িতে কীভাবে এসেছে? এটা আদোও তার ছবি নাকি তার মতো হুবহু দেখতে অন্য কেউ? এসব প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে আসিফের মনে তখনই একজন মহিলার আগমন ঘটে আসিফের সামনে। আসিফ মহিলাকে লক্ষ্য করতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন। মহিলা সালাম গ্রহণ করে আসিফকে বসতে বলে।

— তুমি কখন আসলে বাবা?

— জি আন্টি অনেক্ক্ষণ হলো। বাসায় কাওকে দেখলাম না। আমি তো ভেবেছি আপনারা কেউ নেই।

— আসলে আমি একটা কাজ করছিলাম। আচ্ছা তুমি বসো আমি গিয়ে নিঝুমকে নিয়ে আসছি।

এই কথা বলে ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। অদ্ভুত লাগছে আসিফের কাছে। এই মহিলা আসিফকে দেখে তো তেমন কোনো রিয়াক্ট করেনি। অথচ এই বাড়িতে আসিফের ছবি! এখানে হচ্ছেটা কি? এর মধ্যে কি কোনো অজানা রহস্য লুকিয়ে আছ?

কিছুক্ষণ পরে ভদ্রমহিলা সাথে করে একটা মেয়েকে নিয়ে আসেন। মেয়েটাকে দেখে আসিফ দাঁড়িয়ে যায়। এতো সুন্দর মেয়ে! আসিফ যেনো কিছুতেই নিজের চোখ সরাতে পারছেনা।

— বাবা ও আমার এক মাত্র মেয়ে নিঝুম। এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে। তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।

আসিফ বসে পড়ে। ভদ্রমহিলা আর নিঝুম ও বসে।

— আরে তোমার সাথে সেই কখন থেকে কথা বলছি অথচ তোমার নাম জানা হলোনা। নাম কি তোমার?

— জি আন্টি আমার নাম আসিফ।

আসিফ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটার মুখে একটা মুচকি হাসি লেগে আছে। এই হাসির জন্য মেয়েটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।

— তা বাবা আজকে কি পড়াবে নাকি?

— না আন্টি আমি তো দেখতে এসেছি, আর ঠিকানা ঠিক আছে কিনা। আচ্ছা আন্টি আজ তাহলে উঠি আমি। কাল আসবো।

— চা খেয়ে যাও!

— আজ না। আজ আর আপনাদের কষ্ট দেবোনা। আজ তাহলে উঠি! কাল দেখা হবে।

— ঠিক আছে সাবধানে যাও।

আসিফ এবার সামনে দিকে যখন পা বাড়াবে তখনই তাঁর মনে পড়ে সেই ছবিটার কথা। এতক্ষণ সে ছবিটির কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গিয়েছে। যখন যে ছবির কথা জিজ্ঞেস করার জন্য পিছনে তাকায় তখন যে দেখতে পায় সেখানে কেউ নেই। ভাবুক হয়ে উঠে আসিফ। সামান্য সময়ের মধ্যে এরা নিজেদের রুমে চলে গেলো? মনে মনে ঠিক করে আগামীকাল এসে জিজ্ঞেস করবে। তাই সে ছবিটার দিকে এক পলক তাকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসার দিকে রওয়ানা হয়। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে হঠাৎ করে একটা কান্নার শব্দ ভেসে আসে তার কানে। সে চারদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে নেয়। কিন্তু সে আশেপাশে তেমন কোনো কিছুই খেয়াল করেনা। তাই আবার সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ আসিফের ফোন বেজে উঠার শব্দ শুনে পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করে। আর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আসিফের বন্ধু নিলয় ফোন দিয়েছে।

— হ্যাঁ নিলয় বল।

— কিরে তোর ফোন এতক্ষণ বন্ধ ছিলো কেনো?

— কই ফোন তো অফ ছিলনা। মনে হয় নেটওয়ার্ক প্রব্লেম ছিলো।

— ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। তো ওখানে গিয়েছিস?

— হ্যাঁ, এখন বাসায় ফিরছি। তুই তাড়াতাড়ি করে বাসায় আয় তোকে কিছু কথা বলার ছিলো জরুরী।

— আমি বাসায় আছি, তুই চলে আয়।

তারপর আসিফ ফোন কেটে বাসার দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ বাসায় পৌছে যায়। আসিফ নিজের রুমে গিয়ে দেখে নিলয় বসে আছে। আসিফ গিয়ে নিলয়ের পাশে বসলো। এতক্ষণ হেঁটে আসার কারণে সে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আসিফের ক্লান্ত মুখ দেখে নিলয় আসিফের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে খেতে বলে। আসিফ কোনো কথা না বলে এক গ্লাস পানি একবারে খেয়ে শেষ করে।

— কিরে আসিফ কি হইছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

— আসলে রোদের মধ্যে হেঁটে আসার কারণে অস্থির লাগছে। আচ্ছা শোন তোকে একটা কথা বলতে চাই।

— হ্যাঁ বল।

এবার আসিফ ওখানে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলল। আসিফের কথা শুনে নিলয় কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বলল,

— শুনেছি পৃথিবীতে নাকি একি রকম চেহারার ৭ জন করে মানুষ থাকে। হয়তো সেটাই।

— কিন্তু তার মধ্যে একটা জিনিস আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। ওনারা আমাকে দেখে যেভাবে রিয়াক্ট করার কথা তেমন কিছুই আমি তাদের মধ্যে দেখেনি। আমি যেভাবে অবাক হয়েছি সেভাবে তো তাদের ও অবাক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তাদের মাঝে আমি তেমন কোনো কিছুই লক্ষ্য করলাম না। তাঁরা আমার সাথে খুব শান্ত ভাবেই কথা বলছিল। আর একটা জিনিস খেয়াল করলাম।

আসিফের বন্ধু খুব আগ্রহ নিয়ে কথা গুলো শুনছে। আসিফের কথা শুনে সে আগ্রহ নিয়ে বলল,

— কি জিনিস?

— আমি মেয়েটার মুখে একটা অদ্ভুত হাসি দেখলাম। কিন্তু মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দরী। আমি প্রথম দেখাতেই কেমন যেনো হয়ে গেছিলাম।

— আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। তুই কাল ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করিস তাদের এই ছবির কথা। তাহলেই হয়তো উত্তর খুঁজে পাবি।

–ঠিক আছে।

তারপর নিলয় উঠে চলে গেলো। আসিফ খাটের উপরে বসা থেকে শুয়ে পড়ে। তখনই বাড়ি থেকে কল আসে তার।

— হ্যালো, মা কেমন আছো তুমি?

— এই তো ভালো আছি বাবা, তুই কেমন আছিস?

— আমিও ভালো আছি।

মা ছেলের মাঝে কিছুক্ষণ কথা হয়। কথা শেষ করে কল কেটে দেয় আসিফ। দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। আসিফ রাতের খাবার খেয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে আসিফ। হঠাৎ মাঝ রাতে বুকের উপরে ভারী কিছু অনুভব করতেই ঘুম ভেঙে যায় আসিফের। আসিফ চোখ খুলে দেখে পুরো বাসা ঘুটঘুটে অন্ধকার। সে চোখের সামনে কিছুই দেখতে পায়না। তখন সে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো কারণে সে উঠতে পারছেনা। আসিফ খুব ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ একটা চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে।

— কিরে কি হইছে তোর?

আসিফ পাসে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু নিলয়। আসিফ বুঝতে পারে সে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। তার সাথে হঠাৎ করে এসব কেন ঘটছে কোনো উত্তর জানা নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আসিফ ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে। ভার্সিটি বেশি একটা দূরে না তাই সে হেঁটেই চলে যায়। ভার্সিটির গেট দিয়ে ভিতরে যাবে এমন সময় তার চোখ আঁটকে যায় একটা মেয়ের দিকে। মেয়েটা আর কেউ না, এটা নিঝুম। নিঝুমকে এখনে দেখে অবাক হয় আসিফ। আসিফ দেখে যে নিঝুম একা দাঁড়িয়ে আছে। তাই আসিফ নিঝুমের কাছে চলে যায়।

— আরে নিঝুম আপনি এখানে?

— আমার ও সেইম প্রশ্ন স্যার! আপনি এখনে?

— আমি তো এই ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি। কিন্তু তুমি কলেজে না গিয়ে এখনে কি করছ?

— এখনে একটা কাজে এসেছি। আর স্যার আপনি আমাকে তুমি করে বলুন।

— আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই।

হঠাৎ করে আসিফের কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পড়তেই আসিফ পিছনে ফিরে তাকায়। আসিফ দেখতে পায় তার বন্ধু নিলয়। নিলয় আসিফকে বলল,

— কিরে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?

— তোকে কাল বলছিলাম না আমার ছাত্রীর কথা? ওর সাথে কথা বলছি।

— কিহ? তুই কি পাগল হয়ে গেলি?

— পাগল হবো কেন? আয় পরিচয় করিয়ে দেই ওর না,,,

হঠাৎ করে এই মেয়েটা কোথায় চলে গেলো? এতক্ষণ তো এখানেই ছিলো? অদ্ভুত!

— কিরে কি হইছে?

— কিছুই বুঝতে পারছিনা, নিঝুম তো এতক্ষণ এখানেই ছিলো। হঠাৎ করে এই মেয়ে কোথায় উধাও হয়ে গেলো?

— বুঝতে পেরেছি বন্ধু, তুমি তোমার ছাত্রীর প্রেমে পড়েছ। তাই তাকে যেখানে সেখানে দেখতে পাচ্ছো। এখন চল নাহলে ক্লাসে ঢুকতে দিবে না।

এই কথা বলে নিলয় আসিফকে নিয়ে যেতে থাকে। আসিফ তো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। এতো বড় ভুল সে কীভাবে দেখে? নিঝুম তার সাথে কথা বলেছে। এটা কি আসলেই তার মনের ভুল! নাকি অন্য কিছু?

কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাসে চলে যায় দু’জন। আজকের মতো ক্লাস শেষ করে আসিফ সেই বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই বাসায় পৌছে যায়। বাসার ভিতরে গিয়েই আসিফ স্তব্ধ হয়ে যায়।

চলবে?

আমার প্রেয়সী পর্ব-২২ এবং শেষ পর্ব

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_অন্তিম পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

আষাঢ় দুই হাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে বসে আছে রুমে।আজ তাসফিয়ার গায়ে হলুদ। আগে মেহদী তারপর হলুদ। আষাঢ়’র গায়ে সবুজ শাড়ী লাল টকটকে ব্লাউজ। ফুলের গহনা গায়ে দারুণ লাগছে মেয়ে টাকে দেখতে। আর্শিয়ান আস্তে করে দরজা বন্ধ করে। হাতে তার খাবার প্লেট। আর্শিয়ান কে দেখে আষাঢ় বলে উঠলো,

-“কখন থেকে বসে আছি।
হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে তো।”

আর্শিয়ান কোনো কথা বলে না। তাকায় না মেয়ে টার মুখের দিকে। আষাঢ়’র ডান পাশে সোফায় বসে। মুখের সামনে খাবার ধরে বলে,

-“বারো টা বাজে খাবার খেয়েছ।সারাদিন কিছু খাও নি।এখন রাত আটটা বাজে।হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হলে আর খাবেও না আমি ভালো করে জানি।”

আষাঢ় বিনাবাক্যে খাবার মুখে নেয়।সত্যি বলতে পেটে ওর ক্ষুধা সেই দুপুর থেকে। কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় বা সুযোগ কোনো টাই হয় নি।আর্শিয়ান খাবার সব টা খাওয়াল আষাঢ় কে।খাবার শেষ আর্শিয়ান ওর মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো,

-“বেশি তিড়িংবিড়িং করবে না আষাঢ় মাস।
আমি ডাকলে সাথে সাথে রুমে আসবে।”

পরপরই আষাঢ় থুঁতনিতে চুমু খায়।আষাঢ় চোখ বন্ধ করে নেয়।আর্শিয়ান মেয়ে টার মুখের দিকে তাকিয়ে ধৈর্য হারা হয়।বউয়ের লাল টকটকে অধর জোড়ার দিকে তাকিয়ে সে মাতাল হয়।তৎক্ষনাৎ আর দেরী করে না। নিজের অধর জোড়া দিয়ে মেয়ে টার অধর চেপে ধরে। আষাঢ় নিজের হাতে মেহেদী থাকায় কিছু করতেও পারে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে থাকে।আর্শিয়ান সময় নিয়ে নিজের রাজত্ব চালালো বউয়ের অধরে।অতঃপর ছেড়ে দিয়ে সেকেন্ড সময় চুপ করে থাকে।আষাঢ় তখন জোরে জোরে শ্বাস নিতে ব্যাস্ত।আর্শিয়ান বললো,

-“এখন যাও।”

আষাঢ় বেরিয়ে এলো।আর্শিয়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজেও পেছন পেছন বেরিয়ে এলো।

——–

মোহনার শরীর টা ভালো না।খাবার টা ঠিকঠাক খেতে পারে না। কোনো কিছুর গন্ধ সহ্য করতে পারে না। নাসির যখন অফিস যাওয়ার সময় গায়ে পারফিউম মাখে। মেয়ে টা তখন হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।নাসির’র এতে মনঃক্ষুণ্ন হয়।ভেবেছিল হয়তো পারফিউম এর গন্ধ টা মোহনার পছন্দ নয়।তাই তো কাল পারফিউম চেঞ্জ করেছে। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয় নি।মোহনা আগের মতোই দূরে দূরে থাকে।কিন্তু আজ মেহেদী লাগাতে গিয়ে দৌড়ে চলে এলো রুমে। নাসির পেছন পেছন এসে দেখলো মোহনা ওয়াশ রুমে গিয়ে বেসিনে গড়গড় করে বমি করছে। চোখে মুখে পানি দিয়ে রুমে বিছানায় নিয়ে এলো।আপাতত মোহনা চুপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
নাসির মোহনার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিতেই মোহনা চোখ মেলে তাকালো।
হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,

-“যদি আমাদের একটা রাজকুমার আসে। তাহলে আপনি কি রাগ করবেন?”

নাসির বাকহারা। মেয়ে টা কি বলে?নাসরি এর কথা টা বুঝতে কিঞ্চিৎ পরিমাণ সময় লাগলো।বুঝতে পেরে মোহনা কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো ।বিছানা থেকে অনেক টা উপরে তুলে জড়িয়ে রাখলো কত সময় কাটলো মোহনার বুঝতে পারলো না। তবে কাঁধে তরল কিছুর স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো। ত্বরিত নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো।নাসির ততক্ষণে নিজের চোখের জল মুছে নিতে ব্যাস্ত হলো।মোহনা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মোহনা বসে রইলো। এভাবে চলে গেলো কেনো? খুশি হয় নি মানুষ টা?মোহনা আকাশপাতাল ভাবতে যখন ব্যাস্ত তক্ষুণি রুমে হুড়মুড়িয়ে কেউ প্রবেশ করলো। মোহনা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো শর্মিলা বেগম। ওনার পেছন পেছন বাড়ির সবাই এলো। মূহুর্তের মাঝে রুমে মানুষ দিয়ে ভরে গেলো।শর্মিলা বেগম এসেই বলে উঠলো, ,

-“নাসির বলল,,,

-“হ্যাঁ বড়ো আপা।”

মোহনা লাজুক হেঁসে মাথা নেড়ে জবাব দিলো। অনেক্ক্ষণ সবাই মোহনার সাথে বসে রইলো। আষাঢ় তো কাছ থেকে নড়ছেই না।তায়েফ তায়ুশ প্রথমে কিছু বুঝতে পারছিলো না।কিন্তু যখন তাসফিয়া ওদের বললো ওদের আরেকটা ভাই আসছে তক্ষুণি দু’জন খুশিতে লাফালাফি করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।সবাই কে জানাতে হবে তো।হঠাৎ বাইরে থেকে নাসির এর ডাক এলো শিউলি বেগম বেরিয়ে গেলো। এর একটু পর শিউলি বেগম অনেক গুলো মিষ্টি নিয়ে এলো বুয়া ট্রে রেখে চলে যেতেই সবাই কে মিষ্টি দিলো হাফসা বেগম আর শিউলি বেগম মিলে।বাহিরে পুরুষদের দিলো।বাড়িতে সবাই খুশি।মোহনা কে আয়াত ধরে ধরে হলুদের অনুষ্ঠানে নিলো।একটা চেয়ারে বসিয়ে নিজেও বসে রইলো।

——-

-“আমরা কেনো বউ সাজিতেছি আপু?”

আষাঢ়’র প্রশ্ন করে আয়াত কে।আয়াত হাতের চুড়ি ঠিকঠাক করতে করতে জবাব দেয়,

-“আমিও জানি না।
চুপ চাপ দেখতে থাক।”

আষাঢ় আর কিছু বলে না।চুপ করে বসে থাকে।আজ সকাল থেকে একবারও আর্শিয়ান এর দেখা পায় নি আষাঢ়। ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে ছিলো।গতকাল অনেক রাত করে ঘুমিয়ে ছিলো সেইজন্য। মেহদী হলুদের অনুষ্ঠান সব শেষ করতে করতে তো রাত দুই টার মতো বেজে ছিলো।
সময় গড়ালো তাসফিয়া কে নিয়ে যাওয়া হলো বিয়ের জন্য। বিয়ে হলো।কিছু সময় পর আয়াত আষাঢ় কে নিতে এলো দু’জন মেয়ে। আষাঢ়’র বুক ধুকপুক করছে। নিচে যেতেই আষাঢ় থমকে গেলো। আর্শিয়ান সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। তামাটে বর্ণের পুরুষ টার গায়ে কি দারুণ মানিয়েছে পাঞ্জাবি টা।আষাঢ় মুগ্ধ হলো।তবে আশে-পাশে মানুষ ওর দিকে তাকিয়ে আছে তাই বেশি সময় ওইদিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না। দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।তাসফিয়া কে তাসরিফ কে একসাথে বসানো হয়েছে সাঈদ আয়াত কে এক সাথে বসে আছে। আষাঢ় পিটপিট করে যখন এসব পর্যবেক্ষণ করছিলো তক্ষুণি নিজের পাশে কারোর অস্তিত্ব টের পেলো।ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে থমকে রইলো।চোখ ফিরানো দায় হলো।মানুষ টাকে হাজার বছর ধরে দেখলেও আষাঢ়’র তৃষ্ণা মিটবে না।এই পুরুষ টা ওর একান্তই ব্যক্তিগত। ভাবলেই প্রশান্তি আসে মনে।
আর্শিয়ান সামনে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে ঠোঁট জোড়ায় অল্প হাসির রেখে টেনে হাত নাড়ছে তো কখনো বা দুই ঠোঁট নেড়ে কথা বলছে। আবার ফটো তুলছে অনেকে।
আর্শিয়ান মুখে অল্প হাসির ঝলক রেখেই সামনে তাকিয়ে থেকে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“এখন যত ইচ্ছে জ্বালিয়ে নেয়।আমার টা রাতের জন্য তোলা রইলো।”

আষাঢ় ঝটপট ঘাড় সোজা করে বসলো।মনে মনে ভাবলো আর্শিয়ান ভাই কি করে বুঝতে পারলো আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে?আষাঢ় উত্তর খোঁজে পায় না। তিন জোরা কাঁপল একটা স্টেজে বসে আছে সব গুলো পারফেক্ট কাঁপল। ভালো মনের মানুষ দেখলে মন ভালো হবে আর যাদের অন্যের ভালো সহ্য হয় না তাদের জ্বলবে।
কতশত ফটো ক্যামেরা বন্দী করা হলো আষাঢ় জানে না।পরিবার পরিজন এর সাথে কত মূহুর্ত ক্যামেরার মধ্যে স্মৃতি হয়ে সেখানে গেঁথে গেলো।
সবাই এলো দো’আ করলো উপহার দিলো।আস্তে আস্তে সময় গড়ালো।আষাঢ়, আয়াত, তাসফিয়া কে নিয়ে যাওয়া হলো।বিয়ের ভারী ভারী সাজ ছাড়িয়ে নরমাল শাড়ী পড়ানো হলো।আষাঢ় নিজের রুমে এসে শান্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। সেই কুট্টি কাল থেকে স্বপ্ন দেখে এসছিলো ধুমধাম করে ওর বিয়ে হবে সবাই আসবে বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হবে।আজ সে-সব ইচ্ছে পূর্ণ হলো।তারজন্য তো তালুকদার সাহেব কে একটা ধন্যবাদ দেওয়া যায়। কিন্তু এখন আর্শিয়ান ভাই এর রুমে যেতে বারণ করেছে সবাই তাই নিজের রুমে বসে রইলো।

——

রাত সাড়ে ন’টার দিকে তাসফিয়ার জন্য খাবার হাতে তাসরিফ রুমে এলো।তাসফিয়া তখন ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো।গায়ে পাতলা একটা শাড়ী। হাতে একটা কমলা রঙের টাওয়াল।তাসরিফ বউ কে একপলক দেখে নিজে গিয়ে বিছানায় বসলো।
তাসফিয়া কে ডেকে বললো,

-“খাবার খেতে এসো।”

তাসফিয়া টাওয়াল কেদারার গায়ে জড়িয়ে এসে তাসরিফ এর মুখোমুখি বসে। জিগ্যেস করলো,

-“আপনি খেয়েছেন?”

-“প্লিজ বইন তুই আপনি বলিস না।আগের মতো তুমি বল।নয়তো কেমন পর পর একটা অনুভূতি হয়।কি লাভ প্রেম করে চাচাতো বোন বিয়ে করে যদি বাসর রাতে আপনি ডাকে আমার সব অনুভূতির বারোটা বাজিয়ে দিস?”

তাসফিয়া শব্দ করে হাসলো।তাসরিফ ধমক দিতেই হাসি থামালো।তাও সম্পূর্ণ নয়।খাবার শেষ করে তাসরিফ প্লেট টেবিলের উপর রাখলো।নিজে হাত ধুয়ে এসে গায়ের শার্ট খুলতে খুলতে তাসফিয়ার দিকে এগিয়ে এলো।তাসফিয়া কিছু টা ঘাবড়ে গিয়ে পিছিয়ে যেতে যেতে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি সরি সরি তুমি খাবার খেলে না যে?”

-“হ্যাঁ এখন খাবো।”

তাসফিয়া আর কিছু বলার আগেই তাসরিফ বিছানায় চলে এলো।তাসফিয়া বিষয় টা বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে শুধু বললো,

-“প্লিজ লাইট অফ করুন।”

তাসরিফ বউয়ের লজ্জা রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেই দিশেহারা হলো।বেডের পাশে দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অফ করলো।পুরো রুম জুড়ে অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।শুধু দু’টো মানব-মানবীর রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে ভারী নিঃশ্বাস এর শব্দ এই চার দেওয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ রইলো।

——

সাঈদ আয়াত এর মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়াত অনেক্ক্ষণ যাবত বসে আছে এভাবে। মেঝেতে কতক্ষণ বসে থাকা যায় এভাবে?
তাই বিরক্তিতে বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। ব্যালকনি থেকে রুমে চলে এলো।সাঈদ এর টনক নড়তেই দৌড়ে রুমে এলো।এসেই প্রশ্ন করলো,

-“এই বউ এভাবে চলে এলে কেনো?
আমি দেখছিলাম তোমায়!”

-“আপনি বসে থাকুন গিয়ে ওখানে।
আমার ঘুম পাচ্ছে।”

আয়াত সাঈদ এর দিকে বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করে বললো।আয়াত বিছানায় বসতেই সাঈদ ধুপধাপ পা ফেলে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে ফিরে এসে দুষ্ট হেঁসে বলে উঠলো,

-“তা তো হচ্ছে না বউপাখি।
এতো সুন্দর একটা রাত তুমি ঘুমিয়ে পাড় করবে? আমি যে এতো সুন্দর করে সব সাজালাম তার কি হবে?”

-“কিচ্ছু হবে না।
চলুন দূরে যান।একদম কাছে আস,,,

সাঈদ পুরো কথা শুনে না।তার আগেই বউয়ের অধর চেপে ধরে। অনেক্ক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো,

-‘এতো ঢং করার কি প্রয়োজন ছিলো?বলতে পারতে তোমার আদর চাই।”

-“অসভ্য কথা।”

-“সত্যি কথা।”

আয়াত লজ্জায় মুখ লুকালো সাঈদ এর বুকে সাঈদ শব্দ করে হেঁসে বলে উঠলো,

-“এভাবে আমার বুকে লেপটে থেকো সারাজীবন আমার প্রেয়সী।”

——

আষাঢ় রুমে এসে আরো একদফা অবাক হলো।হা করে চারদিকে ঘুরে-ঘুরে দেখতে লাগলো।এটা আর্শিয়ান ভাই এর রুম বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। বেলি ফুল গোলাপ ফুল দিয়ে বিছানা ফুলের রাজ্যে বানিয়ে ফেলেছে আষাঢ়’র মনে হলো।রুমে চারপাশে সুগন্ধিযুক্ত হরেকরকমের ক্যান্ডেল ঘরটাকে দারুণ সুন্দর লাগছে। অদ্ভুত সেই সৌন্দর্যে আষাঢ় এতো টাই বিভোর যে রুমে আরো একজন মানুষ এসছে উপস্থিতি টের পেতে একটু সময় লাগলো।তবে চিরপরিচিত মানুষ টার উপস্থিতি পেয়ে সে সব ভুলে আর্শিয়ান এর কাছে ছুটে এলো।আর্শিয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরে উৎফুল্লতা নিয়ে বলে উঠলো,

-“ধন্যবাদ তালুকদার সাহেব।”

আর্শিয়ান আষাঢ়’র কোমড়ে দুই হাত রেখে শুন্যে তুলে নিলো ওকে।কপালে কপাল ঠেকিয় শান্ত কণ্ঠে বললো,

-“শুধু ধন্যবাদে হবে না।”

-“আর কি চাই আপনার?”

আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো। আর্শিয়ান ওকে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জানালো,

-“তুমি লেখা পড়া করবে অনেক বড়ো হবে। আর আপাতত আমার অত্যাচার সহ্য করবে।”

আষাঢ় আর্শিয়ান এর বুকে নাক ঘষে। লাজুক হেঁসে জানান দিলো,

-“আমি প্রস্তুত।”

~সমাপ্ত~

আমার প্রেয়সী পর্ব-২১

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

আর্শিয়ান এর রাগের প্রভাব মেয়ে টার উপর ভালোই পড়েছে।রাগের মাথায় অনেক টাই হিংস্র হয়ে পড়েছিলো।তখন সেটা আষাঢ় বুঝতে না পারলেও সকাল হতেই টের পেলো।বিছানা ছেড়ে দাঁড়াতে গিয়ে শরীরের অসহ্য যন্ত্রণায় আবার বিছানায় বসে পড়লো।
আর্শিয়ান হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে রুমে মাত্র প্রবেশ করেছে। আষাঢ় কে এভাবে বসে পড়তে দেখে ত্বরিত হাতের প্লেট টেবিলে রেখে দ্রুত এগিয়ে এলো।আষাঢ় ঘুমানোর পরই আর্শিয়ান টের পেয়েছিল মেয়ে টার শরীরে জ্বর এসছে। তাই তো সকাল হতেই বুয়া কে বলে আষাঢ়’র জন্য নাস্তা বানিয়ে এনেছে। আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,

-“আপনার ভালোবাসার স্পর্শে প্রথম দিনেও এতো টা কাবু করতে পারে নি আমাকে।আজ আপনার হিংস্রতা যতটা করেছে।”

আর্শিয়ান কিছু বললো না। মেয়ে টা কি ভেবেছে সে প্রথম দিন তাকে ভালোবেসে স্পর্শ করেছে? আর করলেও এতো টা শক্ত সেদিন থাকতে পারতো?উঁহু। কখনো না আজকের চেয়েও দিগুণ খারাপ অবস্থা হতো মেয়ে টার।যেটা ওর ধারণাতীত।
আর্শিয়ান ওয়াশ রুম থেকে টাওয়াল ভিজিয়ে এনে মুখ মুছিয়ে দিলো।মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললো,

-“এটা কিছুই না।তোমার এরচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা করার ক্ষমতা আর্শিয়ান রাখে।শুধু তোমার দিক টা ভেবে আমি এতোদিন সেটার প্রখরতা তোমায় দেখায় নি।”

আষাঢ় খাবার টা মুখে নাড়াচাড়া করতেও সমস্যা হচ্ছে। কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না। তাই চুপ করে কোনো রকম খাবার টা খেলো।খাবার শেষ আর্শিয়ান ওকে পানি খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। ঔষধ খাইয়ে দিয়ে প্লেটে সব গুছিয়ে নিতে নিতে বললো,

-“এখন ঘুমিয়ে থাকো।ঘুম থেকে উঠলে পেইন হবে না আর।বিকেলে মার্কেট যেতে হবে। তাসফির বিয়ের জন্য আজই শপিং করতে যাচ্ছে সবাই।”

আর্শিয়ান আষাঢ় কে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলো।এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে নিজে রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো।অবশ্য যাওয়ার আগে প্রেয়সীর কপালে নিজের রক্ষ ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়াতে ভুলে না।আষাঢ়’র ঘুমে বিভোর ততক্ষণে।

——-

-“আপনি ঘুমের ঔষধ কেনো দিতে গেলন আমায় তালুকদার সাহেব?”

আর্শিয়ান কথা বলে না।এখন বিকেল।দুপুরে খাবার সবার জোরাজুরিতে খেতে গিয়েছে আষাঢ়। খাওয়া হতে আবার এসে সে-ই যে ঘুমিয়েছে আর উঠে নি।সবাই অনেক ডাকার পরেও না।শেষমেশ ওকে রেখেই যেতে হয়েছে।বুয়া আছে বাড়িতে দু’জন সেইজন্য আর তেমন চিন্তা নেই।আর্শিয়ান অফিস থেকে সোজা সবার সাথে জয়েন করেছিলো।কিন্তু সব জানার পর দ্রুত বাড়ি চলে এসছে।
এসে টেনেটুনে ঘুম থেকে তুলেছে। আষাঢ় এখনো ঝিমিয়ে যাচ্ছে। আর্শিয়ান প্রচন্ড অসহায় বোধ করে। কি জ্বালা!বউ এর ভালোর জন্য ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলো।কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হয়েছে।

আর্শিয়ান ওকে টেনে ওয়াশ রুম নিয়ে গেলো।চাইলে কোলে তুলে নিতে পারতো।কিন্তু এতে কি হবে? এতে আষাঢ় কোলেও গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়বে।
আর্শিয়ান চোখে মুখে ওকে পানি দিয়ে দিলো।ঘুম কিছু টা কাটলো।তবে পুরাপুরি নয়।আর্শিয়ান এবার বিরক্ত হলো।গায়ের শার্ট খুলে ওয়াশ রুমের দরজায় রেখে আষাঢ়’র গলা থেকে ওড়না কেড়ে নিয়ে ওয়াশ রুমের মেঝেতে ফেলে দিলো। আষাঢ় ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকাল। আর্শিয়ান এর নেশাতুর দৃষ্টি আষাঢ় পিটপিট করা চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। শরীরে পানির ঝাপটা লাগতে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো।চিড়চিড় করে উপর থেকে পানি পড়ে দু’জন কে কিছু সময় ব্যবধানে ভিজিয়ে জুবুথুবু করে দিলো।আর্শিয়ান ঝর্ণা ছেড়ে ক্ষান্ত হলো না। নিজের শরীর এর উষ্ণতা মেয়ে টার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হলো। আষাঢ় মুচড়াল।সাপের ন্যায় আঁকাবাঁকা করলো শরীর। হাত আর্শিয়ান এর অধীনে শরীর টার উপর সম্পূর্ণ রাজত্ব চালাচ্ছে পুরুষ টা। আষাঢ় কোনো উপয়ান্তর না পেয়ে নিজেও আর্শিয়ান এর সাথে তাল মেলাল।

—–

-“কিরে বউ কোথায় তোর?
সুস্থ আছে তো?নাকি নিজের রূপ দেখিয়ে দিয়েছিস?”

সাঈদ এতো দ্রুত কথা গুলো বললো যে আর্শিয়ান কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তবে সাঈদ এর দিকে রাগী চোখে তাকাল।দাঁত কটমট করে কিছু বলবে তার আগেই শর্মিলা বেগম খাবার প্লেট নিয়ে হাজির হলো।মেয়ে টা হঠাৎ এতো কেনো ঘুমোচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না। এই নিয়ে টেনশনে রয়েছে সবাই।আর্শিয়ান মায়ের হাত থেকে খাবার প্লেট নিয়ে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে এলো।সবাই সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে।
আর্শিয়ান রুমে এসে দেখলো আষাঢ় বসে আছে বিছানায়। ঘুম নেই এখন আর।তবে শরীর টা কেমন ঝিমঝিম করছে। বিছানা থেকে উঠার সাহস পায় না।আর্শিয়ান নিজে ওকে খাবার খাইয়ে দিলো। সাথে নিজেও খেলো।খাবার শেষ বই নিয়ে বসলো আর্শিয়ান। আষাঢ় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাতেই আর্শিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,

-“পড়তে হবে।
না পড়লে আমার মনে, ঘরে, বাড়িতে কোথাও যায়গা পাবে না।”

আষাঢ়’র মন কিছু টা খারাপ হলো।তবে পরক্ষণেই আর্শিয়ান এর বলা রাতের কথা মনে পড়লো।কোনো রকম উক্তি ছাড়া পড়তে বসে গেলো।

—-

-“আয়াত শোনো?”

-“হ্যাঁ বলুন।”

-“আমাদের একটা বাচ্চা এলে ভালো হবে। আমার শাশুড়ী মা তাহলে আর আমাদের উপর রাগ করে থাকতে পারবে না।”

আয়াত তৎক্ষনাৎ থমথম খেলো। কথা ঘুরাতে মিথ্যা বললো,

-“কই মা রাগ করে আছে।
আপনি ও না!

সাঈদ পুরুষ টা অদ্ভুত বলা চলে।হাসি ঠাট্টা নিজের কাজ সব দিকে দিয়ে সে এগিয়ে। তেমন বাড়িতে কি হচ্ছে সেটাও সে বুঝতে পারে। শিউলি বেগম যে আগের মতো আর মেয়েদের ভালোবাসে না কিংবা অভিমান থেকে আর আগের মতো অতো কথাও বলে না সেটা ঠিক ঠাহর করতে পেরেছে সে।কিন্তু এখন আয়াত এর কথা হাসি পেলো।হাসেও বটে।মেয়ে টা এতো চাপা স্বভাবের। মুখ ফুটে কখনো কিছু বলবে না।কিন্তু সাঈদ বুঝতে পারে। শাশুড়ী তার অভিমান করে আছে। তাছাড়া আয়াত লেখা পড়া করছে। অনার্স প্রায় শেষ এর দিকে। এখন একটা বেবি হলে অনার্স ফাইনাল এক্সাম এর আগে হয়ে যাবে। আর রেজাল্ট এলে তখন চাকরির জন্য ট্রাই করতে পারবে। সব দিক বিবেচনা করে সাঈদ এর এটাই বেস্ট মনে হচ্ছে।সেটা হচ্ছে বাচ্চা।আয়াত চুপ করে আবার কাপড় ভাজ করায় মনোযোগ দিলো।সত্যি মা কেমন বদলে গিয়েছে। সাঈদ কে জামাই আদরের কোনো কমতি রাখে না।কিন্তু আগের মতো মেয়েদের সাথে ততটা মাখো-মাখো সম্পর্ক টা আর নেই।
আয়াত চাপা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কাপড় গুলো ভাজ করে ওয়ারড্রব এর ড্রয়ারে রেখে এসে বিছানায় বসলো।পাশের দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অফ করে সাঈদ এর পাশে শুয়ে পড়ে।সাঈদ টেনে নিজের কাছে নিলো আয়াত কে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“সব ঠিক হয়ে যাবে।
মন খারাপ করো না।”

আয়াত কিছু বলে না।চুপ করে প্রিয় পুরুষের বুকে লেপটে থাকে।

—–

তাসফিয়া শপিং করে একদম অনেক টা নেতিয়ে পড়েছে।
শরীর এলিয়ে দিতেই বিছানায় চোখে এসে রাজ্যের ঘুম ভীড় করলো।ঘুমের ঘোরে গলদেশ চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।আর্তনাদ করে ওঠে মেয়ে টা ঘুমের মাঝেই।গলায় হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই নজরে এলো বলিষ্ঠ এক পুরুষের অবয়ব।
নাসারন্ধ্রে গিয়ে চিরপরিচিত একটা মাতাল করা সুবাস ঠেকল। ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরে শুয়ে তাসরিফ এর হাত জড়িয়ে ধরে তাসফিয়া ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো,

-“আর তো কিছু দিন মাত্র তাসরিফ ভাই। তখন তো আমি আপনার বউ হয়ে আপনার ঘরে থাকবো।তখন না হয় রাত জেগে বসে বসে আমায় দেখবেন। এখন ঘুম নষ্ট করে কি দরকার এসব করার?”

তাসরিফ এর শ্বাস আঁটকে আসার জোগাড়।শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে কিছু সেকেন্ড চুপ করে রইলো।মেয়ে টা বড্ড অবুঝ এভাবে কেউ কথা বলে?সামনে বসা পুরুষ টা যদি শ্বাস আঁটকে মা’রা যায় তার দায় কে নিবে?তাসরিফ ফোঁস করে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। নিচু হয়ে তাসফিয়ার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিলো।ঠোঁট জোড়া তাসফিয়ার কান ছুঁই ছুঁই করছে। তাসরিফ দুষ্ট হেঁসে বলে উঠলো,

-“আছে। কারণ রুমে থাকলে শুধু দেখাদেখিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তখন অনেক কিছু করতে হবে। যা এখন মন চাইলেও সম্ভব হবে না।তাই তোমাকে শুধু চোখ দিয়ে দেখার তৃষ্ণা না হয় এখুনি মিটিয়ে নেই।”

তাসফিয়া ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।স্বপ্ন না বাস্তব বুঝতে পারছে না মেয়ে টা।তবে ভালো লাগছে। তাই আর কোনো কথা না বলে তাসরিফ এর হাত জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে গেলো।তাসরিফ বসে রইলো। প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে।কত সময় পেরুলো তাসরিফ জানে না। তবে মনে হলো এবার যাওয়া প্রয়োজন। যেই ভাবা সেই কাজ।চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। দরজার দিকে পা বাড়িয়ে কি মনে করে আবার ফিরে এলো।নিচু হলো।তাসফিয়ার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “আমার প্রেয়সী।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

আমার প্রেয়সী পর্ব-২০

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা

[রোমান্টিক পর্ব। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

আষাঢ় কাবাড থেকে ব্যাগ টা হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি করে আবার সেটা ঠেলেঠুলে ড্রয়ারে রেখে দিলো।
ছি মানুষ টা বড্ড খারাপ হয়েছে। আগের ড্রেস খারাপ ছিলো যে এখন আবার রাতের পোষাক পরিবর্তন করতে হবে?
আষাঢ় জীবনেও পড়বে না এসব।
আর্শিয়ান ওয়াশ রুম থেকে এসে আষাঢ় কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“দেখেছিস?”

-“হ্যাঁ।
কি,,,

-“যা ওটা পড়ে আয়।”

আষাঢ়’র পুরো টা কথা শেষ করার আগেই আর্শিয়ান ওকে আদেশ করল।
আষাঢ় কিছু সময় থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। অতঃপর হঠাৎ বলে উঠলো,

-“বাজে এটা।”

ততক্ষণে আর্শিয়ান ওর একদম কাছে চলে এসছে।কাবাড বন্ধ করতে করতে বললো,

-“তোর চেয়ে বেশি না।”

-“আর্শিয়ান ভাই।”

আষাঢ় অসহায় কণ্ঠে ডেকে উঠলো।ভাই ডাক শুনে মাথা খারাপ হলো আর্শিয়ান এর।দুই হাতে মেয়ে টার বাহু খাবলে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে ধমকের স্বরে বলে উঠলো,

-“এই চুপ বেয়াদব কোথাকার।
আমি তোর ভাই? রোজ রাতে এতো আদরের পরেও তোর আমাকে ভাইয়ের মতো লাগে?”

আর্শিয়ান এর ধমকে আষাঢ় কেঁদে ফেললো।আহ্লাদী হলো।নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-“আমি কি করবো অভ্যাস বদলাতে সময় লাগবে তো।”

-“খবরদার আষাঢ় তোর মুখে আর একবার জাস্ট আর একবার ভাই ডাক যদি আমি শুনেছি তাহলে খুন করে ফেলবো বেয়াদব।”

আরো জোরে জোরে কান্না জুড়ে দিলো আষাঢ়। আর্শিয়ান রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে মাথার পেছনে এক হাত রেখে ঘাড় দু’বার কাত করতেই কিছু মনে পড়লো হঠাৎ। হাতের ব্যাগ টার দিকে তাকিয়ে ব্যাপার টা বুঝে গেলো।মেয়ে টা আস্ত একটা বজ্জাত। আর্শিয়ান কম কিসে?বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,

-“লাভ হবে না। অভিনয় করে লাভ হবে না।যা পড়ে আয় এটা।”

আষাঢ় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো।কান্না থেমে গিয়েছে। কি অদ্ভুত মানুষ টা বুঝতে কি করে পারলো সে নাইটি না পড়ার জন্য এমন মরা কান্নার অভিনয় করছিলো?

-“তুই যাবি?”

আর্শিয়ান শান্ত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো। আষাঢ়’র ইচ্ছে করলো চিৎকার করে বলতে আমি যাব না।কি করবি শ্লা আর্শিয়ান এর বাচ্চা?কিন্তু চাইলে কি আর সব সম্ভব?
উঁহু।মুখ ভোঁতা করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
আর্শিয়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ানো।কি মনে করে ড্রয়ার খুলে নাড়াচাড়া করতে লাগলো।সন্দেহ হচ্ছে আষাঢ়’র উপর মেয়ে টা বড্ড ছেলেমানুষী করে।এখন ততটা বুঝদার নয়।আর্শিয়ান একটা ঔষধ হাতে পড়তে মেজাজ বিগড়ে গেলো।গম্ভীর মুখ টা হঠাৎ কঠিন হয়ে গেলো।চোয়াল শক্ত করে কত সময় এভাবে দাঁড়িয়ে রইলো জানা নেই। কিছু দিন পর মেয়ে টার এইচএসসি ফাইনাল এক্সাম। এই মূহুর্তে কোনো অঘটন ঘটে আর্শিয়ান চাইছে না। সে চায় না তার জন্য আষাঢ় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে কোনো সমস্যায় পড়ে। কিন্তু মেয়ে টা নিজেই যেন সমস্যার একটা বস্তা।
অনেক্ক্ষণ আর্শিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আষাঢ় আসছে না।আর্শিয়ান এবার গম্ভীর স্বরে জোরে ডাকলো,

-“আষাঢ়?”

সময় গড়ালো।কিন্তু আষাঢ়’র খবর নেই।সাড়াশব্দ না পেয়ে আর্শিয়ান দিগুণ জোরে আদেশ করলো,

-“বেরিয়ে আয়!”

মেয়ে টার সাহস যেন দিনদিন বেড়ে চলেছে। আর্শিয়ান এগিয়ে গিয়ে ওয়াশ রুমের দরজায় শব্দ করলো।গম্ভীর কণ্ঠ বলে উঠলো,

-“আমি বেরিয়ে আসতে বলেছি।”

খট করে দরজা টা খুলে আষাঢ় বেরিয়ে আসতেই আষাঢ় কে খপ করে ধরলো আর্শিয়ান বাহু খাবলে ধরে মেঝে থেকে শুন্যে তুলে নিলো।
বিছানায় নিয়ে ধপাস করে ফেলে দিলো। আষাঢ় ভয়ে গুটিয়ে গেলো।বুঝতে অক্ষম দরজা খুলতে লেইট হয়েছে সেইজন্য না-কি অন্য কারণ?
মানুষ টা এভাবে রেগে আছে কেনো?আষাঢ়’র চোখে ভীতি সৃষ্টি হলো।পেছনের দিকে যেতে নিলেই আর্শিয়ান খপ করে ওকে টেনে ধরলো।হাত ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো।গাল চেপে ধরে আলগোছে। এতেই আষাঢ় ভয়ে জান বেরিয়ে আসার উপক্রম। আর্শিয়ান ভাই এমন নয়।রাগে না মানুষ টা।সব সময় গম্ভীর থাকে।কিন্তু এতো টা রাগতে দেখে নি আষাঢ় কখনো।

-“এই বেয়াদব কেনো নিস না মেডিসিন?”

আর্শিয়ান এর ধমকে পুরো ঘর যেন কেঁপে উঠল। আষাঢ় ভয়ে কান্না করে দিলো।গলা দিয়ে টুঁশব্দ বেড় করতে পারে না। আর্শিয়ান আবার ধমক দিলো,

-“কাঁদবি না। কথা বল।
কেনো নিস না মেডিসিন?”

আষাঢ় আর্শিয়ান এর হাতের উপর নিজের হাত রেখে কাঁপা অধর নেড়ে আওড়াল,

-“মমনে ছিললনা।”

-“চুপ।মিথ্যা বলতে বলি নি।
বলেছিলাম আমি কোনো বাহানা করবি না। এই তুই আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না।”

আর্শিয়ান ওকে ছেড়ে দিতেই আষাঢ় উলটো দিকে ফিরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।গায়ে নাইটি নয়তো আষাঢ় রুম থেকে চলে যেতো।নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো।কিন্তু এমন পোষাক পড়ে বাহিরে গেলে যদি কারোর নজরে পড়ে তাহলে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে।আর্শিয়ান মেঝেতে বসে রইলো। এমন নয় আষাঢ়’র শারীরিক কোনো দুর্বলতা রয়েছে। বয়স মোটামুটি যা তাতে বাচ্চাও নেয়া যাবে। কিন্তু এতে কি হবে? আঠারো বছর হতে এখনো অনেক সময় বাকি।তাছাড়া মেয়ে টার লেখাপড়ার দিক টাও চিন্তা করতে হবে। ভাই নেই।ভবিষ্যতে বাবা মায়ের জন্য নিজ থেকে কিছু করতে পারবে। এমন নয় যে আর্শিয়ান দূর্বল। কিংবা নিজের বাবা মা সহ শ্বশুর শ্বাশুড়ির দায়িত্ব নিতে পারবে না। কিন্তু মেয়ে টা নিজে কিছু করলো অন্য কারোর উপর নির্ভরশীল এটা ভেবে মাথা নিচু করে থাকতে হবে না।

আষাঢ় চোখ বন্ধ করে ছিলো।তবে বিছানায় পায়ের কাছে ওড়না আছে মনে পড়তে চট করে ওঠে বসলো।আর্শিয়ান বসে আছে নিচে। আষাঢ় খুব সাবধানে পা দিয়ে ওড়না টা কাছে আনলো।গায়ে জড়িয়ে পা টিপেটিপে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।দরজা খোলার জন্য হাত এগিয়ে দিতেই হাত কাঁপার জন্য পাশের টেবিল থেকে একটা বই নিচে পড়ে বিকট এক শব্দ হলো।আষাঢ় ভীত চোখে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে দরজা ছিটকিনি খোলার জন্য হাত বাড়াতেই আর্শিয়ান ঝড়ের বেগে এসে টেনে নিজের বক্ষের উপর নিয়ে নিলো মেয়ে টাকে।আষাঢ় ছটফট করে। আর্শিয়ান দরজা ভালো করে আঁটকে দেয়।আষাঢ় কে জড়িয়ে ধরে বিছানায় এলো।আষাঢ় কে বিছানায় ফের ফেলে দিলো ধপাস করে। তুলতুলে নরম বিছানা।
আষাঢ় ব্যাথা পায় নি।তবে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আর্শিয়ান একটা একটা করে শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগলো।রাগে পুরো শরীর যেন কাঁপছে।
সব ক’টা বোতাম খুলতেই আষাঢ় চমকে উঠলো। ভীত চোখে তাকিয়ে আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে লাগলো।
আর্শিয়ান সব গুলো বোতাম খুলে শার্ট টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো মেঝেতে। এক পা দুই পা করে এগিয়ে গিয়ে আষাঢ়’র পা ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। ভয়ে লজ্জায় কান্না গিলে খেয়েছে আষাঢ়।
আর্শিয়ান সময় নিলো না।অধরে গভীর স্পর্শ করলো।প্রথমে স্পর্শে হিংস্রতার আভাস পেলোও ধীরেধীরে সেটা ভালোবাসায় পরিণত হলো।আষাঢ় হারিয়ে গেলো।ভুলে গেলো একটু আগে কি হয়েছে। জড়িয়ে ধরে সামনের পুরুষ টার ভালোবাসার প্রখরতা অনুভব করতে লাগলো।

——

আষাঢ় আর্শিয়ান এর বুকে লেপটে আছে।যত্ন করে আগলে রেখেছে বউ কে।আষাঢ় আঁকিবুঁকি করছে আর্শিয়ান এর বুকে।আর্শিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। মেয়ে টা একদম সরল।সন্ধ্যা রাতে কত কিছু হলো।ভোর রাতে এসে সব ভুলে গেলো।অবশ্য ওর অভিমান করা সাজবে না। কারণ দোষ টা নিজের। আর্শিয়ান পরপর বউয়ের একটা হাত টেনে সেটার উল্টো পিঠে চুমু খেলো।আষাঢ় ব্যাথাতুর শব্দ করতেই আর্শিয়ান বিচলিত হলো।জিগ্যেস করলো,

-“কি হয়েছে?
ব্যাথা?”

-“হ্যাঁ।
কাঁধে।”

আষাঢ় আহ্লাদী স্বরে জানালো।আর্শিয়ান গা থেকে কম্বল সরালো।সুন্দর কাঁধ টায় কালচে দাগ হয়েছে। রোজকার ভালোবাসার চিহ্ন এটা।আর্শিয়ান সেখানে অধর চেপে ধরলো। আষাঢ় মুচড়াল।সরে যেতে চাইলো।আর্শিয়ান শক্ত করে ধরে নিজের সাথে পেঁচিয়ে রাখে।বললো,

-“লেখাপড়া করতে হবে আষাঢ় মাস।অনেক বড়ো হতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে। বাবা মাকে ভবিষ্যতে দেখতে হবে।”

আষাঢ় কি বুঝতে পারলো আর্শিয়ান এর কথার গভীরতা? কে জানে!তবে মাথা নাড়ে।অর্থাৎ সে পড়বে ক্যারিয়ার এর দিকে ফোকাস করবে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

আমার প্রেয়সী পর্ব-১৮+১৯

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

-“এটা খেয়ে নাও।
আমি ঔষধ নিয়ে এসছি।প্লিজ।”

সাঈদ এর দিকে আষাঢ় রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো।তবে ব্যাথার তোপে কঠিন মুখখানা মলিন হয়।পেট এক হাতে চেপে ধরে আরেক হাতে পাশ থেকে একটা বালিশ তুলে সাঈদ এর দিকে ছুঁড়ে ফেলে। সাঈদ কোনো রকম সেটা ধরে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।আয়াত এবার মুখ খুলে,

-“অসভ্য পুরুষ।
একটা কথা বলবেন না।”

সাঈদ বালিশ রাখে।কি কপাল বউ কে একটু আদর করেছে। এতেই বউয়ের অবস্থা কাহিল। আজ সারা দিন এই পেট ব্যাথা সহ্য করেছে মেয়ে টা।ঔষধ ও খাচ্ছে না।সাঈদ এর কি দোষ সে খুঁজে পাচ্ছে না। বউ কে ভালোবাসেছে।এতে বউ যে এভাবে মূর্ছা যাবে কে জানতো!
সাঈদ কণ্ঠে আদুরে করে ডাকলো আয়াত কে।আয়াত তাকাতেই সাঈদ সাহস সঞ্চয় করে আষাঢ়’র পাশে গিয়ে বসলো।
গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“বিয়ের আগে অনেকবার বলেছিলাম শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে। এখন কষ্ট কে পাচ্ছে?”

আয়াত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। সে তো পর্যাপ্ত খাবার খায়।কিন্তু তাও কেনো স্বাস্থ্য বাড়ে না?আয়াত বুঝতে পারে না।
আয়াত এর ভাবনার মাঝেই সাঈদ চিন্তিত স্বরে আবার বলে উঠলো,

-“আল্লাহ ভালো জানে তোমার বোনের যে কি হবে।
এই ব্যাটা আর্শিয়ান তো আস্ত একটা হাতি।বাচ্চা একটা মেয়ে ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে না মেরে ফ,,,

-“সাঈদ ভাই?
স্টপ।”

আয়াত চোখ বন্ধ করে কান চেপে ধরে দুই হাতের তালুর সাহায্যে।ছোট বোন আষাঢ় তার।বোন আর বোনের হাসবেন্ড নিয়ে এসব কথা যেমন লজ্জা পাচ্ছে তেমন রাগ হচ্ছে। সাঈদ নামক পুরুষ টা বড্ড নির্লজ্জ সেটা আয়াত জানে।বড়ো ভাই কে ছোট বোনের স্বামী রূপে এসব কথা বড়ই বেমানান।
সাঈদ একদম চুপ করে গেলো।
তবে কথা সে সত্যি বলেছে।
যদি একটু দয়ামায়া করে মেয়ে টাকে রেহাই দেয়।নয়তো কাল কেনো এক সাপ্তাহ আষাঢ় বিছানা ছেড়ে উঠা দুষ্কর হবে।

——

তাসরিফ বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। কিন্তু তাসফিয়া রিসিভ করছে না।অভিমানে মন টইটম্বুর।
কথা বলবে না। কিন্তু মন তো।শুনলো না।মন টা মানুষ টার কণ্ঠ শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
কল রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে শান্ত কণ্ঠে তাসরিফ ডাকলো,

-“তাসফি জান?”

তাসফিয়ার বুকের ভেতর হু হু করে উঠে। কণ্ঠনালী দিয়ে কোনো শব্দ বেড় করতে পারে না। চুপ করে থাকে।ঘনঘন নিঃশ্বাস শব্দ শুনতে পাচ্ছে তাসরিফ। মেয়ে টা কান্না করছে কি? হ্যাঁ। তাসরিফ অবাক হয় নাহ।এটা নতুন নয়।মেয়ে টা ওকে এক দুপুর না দেখলে পাগল হয়ে যায়। সেখানে আজ চব্বিশ ঘন্টার বেশি সময় মেয়ে টা তাকে দেখা তো দূর কথা পর্যন্ত বলতে পারে নি।
তাসরিফ মৃদু হেঁসে বলে উঠলো,

-“কথা বলবি না পাখি?”

তাসফিয়া শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
তাসরিফ একটু ঘাবড়াল না।বরং প্রাপ্তির হাসি বদন জুড়ে। ভালোবাসার মানুষ টার চোখে তার জন্য পানি। এরচেয়ে ভালো লাগা আর কি হতে পারে! সব ভালোবাসার মানুষ চায় সে যাকে ভালোবাসে তাকেও তার ভালোবাসার মানুষ ভালোবাসে।তাকে প্রায়োরিটি দিবে। ভালো খারাপ সব তারজন্য বরাদ্দ থাকবে।
তাসফিয়া কোনো রকম কান্না থামিয়ে জানালো,

-“আমার কষ্ট হচ্ছে তাসরিফ ভাই।”

তাসরিফ কথা টা সম্পূর্ণ এভয়ড করে গেলো।এখন কিছু বললেই তাসফিয়া আরো আহ্লাদী হবে।
আর তাসরিফ ইমোশনাল হয়ে যাবে। যা হয় সেটা তাসরিফ চাইছে না।
বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে জানালো,

-“সিলেক্ট করেছে আমায়।”

-“এক মাস থাকতে হবে! ওমাই গড।”

তাসফিয়া আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিলো।
তাসরিফ হাসি পেলো।তবে অন্তর জ্বলে উঠলো। রমণীর কান্না মাখা মুখ অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া দেখার জন্য লোভ হলো।কিন্তু সম্ভব নয়।কথা বলে শান্তনা দিলো তাসফিয়া কে।তাসফিয়া শুনলো।কিন্তু মন মানলো না।কান্না করতে করতে কথা বলতে বলতে এক সময় ঘুমিয়ে গেলো।তাসরিফ তাসফিয়ার সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারে তাসফিয়া ঘুমিয়ে গিয়েছে। কল কাটে না সে। প্রেয়সীর ভারী ঘনঘন নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনতে শুনতে সে নিজেও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

———-

আষাঢ় তখন থেকে চুপটি করে আর্শিয়ান এর বুকে দুই হাত ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আর্শিয়ান ওর কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই আষাঢ় তড়িৎ মাথা তুলে তাকালো পুরুষ টার মুখপানে।
কি ভয়ংকর সেই দৃষ্টি। আষাঢ় অবুঝ নয়।সতেরো বছরের কিশোরী আষাঢ় ঠিক বুঝতে পারছে এই দৃষ্টি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।

-“আর্শিয়ান ভ,,

-“হুঁশ।”

আষাঢ়’র ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো আর্শিয়ান।
আর্শিয়ান আষাঢ় কে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে না। সেই কখন থেকে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আর্শিয়ান এর গভীর দৃষ্টি আষাঢ়’র শরীরে কাঁটার ন্যায় বিঁধছে যেনো।পেটে মুচড় দিচ্ছে।আষাঢ় ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া মেলে তাকিয়ে আছে আর্শিয়ান এর দিকে।
আর্শিয়ান তাকিয়ে আছে আষাঢ়’র দিকে।মুখে নয়।লাল টকটকে লিপস্টিক রাঙানো ঠোঁটের দিকে।
রাত এখন এগারো টা। আর্শিয়ান বউয়ের মুখপানে তাকিয়ে আছে।
মেয়ে টা সামন্য ছোঁয়া নিতে পারছে না। গভীর স্পর্শ কিভাবে নিবে?তার ভালোবাসার ভার সইতে পারবে কি?না-কি মূর্ছা যাবে?কষ্ট পাবে?কিন্তু সে তো কষ্ট দিতে চায় না বউ কে।আদর করতে চায়।মন ভরে ভালোবাসতে।অন্তরে থাকা ভালোবাসা সব উজাড় করে ভালোবাসতে।মেয়েটা কে গভীর ভাবে ছুঁতে চায়।পুরুষ সত্তাও প্রেয়সী কে চাইছে। কিন্তু আষাঢ়? ফিরে আসতে চায়।সময় দিতে চায় মেয়ে টাকে।
তবে মন যেন মানতে চায় না।তার এক্ষুণি চাই আষাঢ় কে। সবরকম প্রস্তুতি সে আগে থেকে নিয়ে রেখেছে।
আষাঢ়’র শরীর কেমন করছে।নারীর শরীর পুরুষের ছোয়া পেলে গলে যায়।সবদিক ভুলতে বসে। আর যদি থাকে ভালোবাসা তাহলে তো কোনো কথা নেই।নারী শরীর বুঝতে পারে কোন টা ভালোবাসার স্পর্শ কোন টা কামনার স্পর্শ।
তবে সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টা যে নিজে থেকে একধাপ ও এগিয়ে আসবে না সেটাও জানা আছে আষাঢ়’র।
ভয় লজ্জা দূরে ঠেলে অনেক সাহস সঞ্চয় করে আষাঢ় আর্শিয়ান এর অধর আলতো করে স্পর্শ করে। আর্শিয়ান বুঝি এই হালকা স্পর্শে আশকারা পেলো!না-কি অপেক্ষায় ছিলো বউয়ের অনুমতির?
কে জানে।আষাঢ় কে সরে আসতেই দিলো না। চুলের ভাঁজে শক্ত করে হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে একদম হামলে পড়ে আষাঢ়’র ঠোঁটে।গম্ভীর আর্শিয়ান পাগলের ন্যায় স্পর্শ করে বউকে।এলোমেলো হাতের স্পর্শ আষাঢ় কাবু হলো।অনুভব করতে চায় সামনে উন্মাদ মানুষ টাকে।
এভাবে থেকেই কখন বিছানায় চলে এলো আষাঢ় টের ও পেলো না।ঠোঁটের অসহ্য যন্ত্রণা আর বক্ষদেশ শক্ত দানবীয় হাতের স্পর্শ তাকে এতোটাই কাবু করেছে আর কোনো দিকে ধ্যান নেই মেয়ে টার।শুধু মনে হলো সামনের এই পরিচিত অতিপরিচিত পুরুষ টার তার অচেনা বড্ড অচেনা আগে কখনো পুরুষ টার এমন ভয়ংকর রূপ সে দেখে নি।অবশ্য দেখবে কি করে আগে তো আর স্বামী ছিলো না।
আর্শিয়ান আষাঢ়’র বয়সের কথা মাথায় রেখেই নিজে আগে থেকে সচেতন। তবুও আষাঢ়’র কষ্ট কম হলো না।বলিষ্ঠ শরীর টা ছোট দেহখানার উপর পাথর মনে হলো।তবে সর্বাঙ্গে আর্শিয়ান ভাইয়ের ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়া কষ্ট গুলো গিলে নিয়ে আষাঢ়।শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে পুরুষ টার ভালোবাসার প্রখরতা অনুভব করতে লাগলো।
আর্শিয়ান উন্মাদ। আষাঢ় জড়িয়ে রেখেই স্বল্প আওয়াজে জানালো,

-“আপনি শান্ত হোন।
আমি আপনারই।ভালবাসি তো।”

-“জানি।”

আর কি বলবে আষাঢ় ভেবে পেলো না। মানুষ টা এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমন কিছু বলবে আষাঢ়’র ধারণা ছিলো না। তবে ভালো কিছু আশাও সে করে নি।তবে মনে মনে চাইছিল যেন জবাব টা এমন হয় যে, “আমিও ভালবাসি” কিন্তু আর্শিয়ান ভাই তো তেমন কিছু বললোই না। আর্শিয়ান আষাঢ়’র কপালে চুমু খেয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগী হলো।
আষাঢ় চোখ বন্ধ করলো। মেনে নিলো নীরব ভালোবাসার চিহ্ন। মানুষ টা তাকে ভালবাসে।এটাই চিরন্তন সত্য। মানুষ টা মুখে না বলে কিন্তু আষাঢ়’র মন জানে।

#চলবে…..
#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ়।
উঠে পড়ো।”

ভোরের আলো সেই কখন ফুটেছে। সারারাত সুন্দর মূহুর্ত শেষ আর্শিয়ান বউ কে নিয়ে শাওয়ার শেষ তাহাজ্জুদ পড়ে ফরজ পড়ে তবেই ঘুমিয়েছে। আষাঢ় এতোটাই শকট যে পুরো টা সময় শুধু আর্শিয়ান ভাই এর দিকে তাকিয়ে অপলক দেখে গিয়েছে পুরুষ টাকে।মানুষ টা এতো টা যত্নবান হবে আষাঢ়’র ধারণাতীত ছিলো। আষাঢ়’র তেমন প্রবলেম হয় নি।আর্শিয়ান অবশ্য ভয় ছিলো।বয়স কম বাই এনি চান্স যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে নিজে পাগল হয়ে যেতো আর পরিবার তো আছেই।নিশ্চয়ই তারা ইচ্ছে মতো আর্শিয়ান কে ধুয়ে দিতো।আচ্ছা আর্শিয়ান ভাই তখন কি বলতো? নিশ্চয়ই বলতো আমার বউ আমি আদর করেছি। তোমরা সেটা নিয়ে কথা বলার কে?
আষাঢ় গুটিশুটি মেরে আরো কম্বলের তলায় ঢুকছে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। সেইজন্য আরাম পেয়ে আরো ঘুমতে চাইছে। আর্শিয়ান পাশে বসে বউয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত এক মায়া এই সতেরো বছর বয়সের কিশোরীর জন্য। কেমন কিছু সময় না দেখলে নিজে কে পাগল লাগে। আর্শিয়ান আজো ভেবে পায় না কিভাবে এই ছোট একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো ভালোবাসল সে।
আর্শিয়ান নিজের অজান্তেই আষাঢ়’র চুল গুলো ঠিকঠাক করে দিতে দিতে মুচকি হাসছে।যে পুরুষ বোম ফাটালেও হাসার পাত্র নয়।আর সে কি না এই মেয়ের প্রেমে পড়ে কল্পনা করতো নিজের অজান্তেই হেঁসে ফেলতো।তখন নিশ্চয়ই আষাঢ় দেখলে বেহুঁশ হতো।জ্ঞান ফিরলে জিগ্যেস করতো, আর্শিয়ান ভাই আপনি হাসতে পারেন?” আষাঢ় আর্শিয়ান এর হাত টেনে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতেই আর্শিয়ান নড়েচড়ে বসলো। দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরিয়ে গম্ভীর স্বরে ডাকলো,

-“আষাঢ় মাস?”

আষাঢ় জবাব দিলো না।সে গভীর ঘুমে।কোনো নড়চড় নেই। আর্শিয়ান গায়ের কম্বল সরায়।গায়ে একটা আর্শিয়ান এর শার্ট। মাত্র একদিন পড়েছে আর্শিয়ান ওটা।আষাঢ়’র পছন্দ ছিলো শার্ট টা।তাই তো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো।আর নামজ শেষ সুন্দর গায়ে থ্রি-পিস ছাড়িয়ে এটা পড়িয়ে দিয়েছে। ধবধবে সাদা সুন্দর শরীরে কালো শার্ট কি দারুণ মানিয়েছে।আর্শিয়ান নিজেই আস্তে শুঁকনো ঢুক গিলে। আবার ডাকলো,

-“ন’টা বাজে উঠো আষাঢ়।”

-“উঁহু।”

আষাঢ় ঘুমঘুম কণ্ঠে চোখ বন্ধ করে উঠবে না জানায়।আর্শিয়ান আষাঢ় কে টেনে তুলে শোয়া থেকে। চুল ঠিক করে দিতে দিতে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“কোনো বাহানা নয়।
উঠতে বলেছি।”

আষাঢ় পিটপিট করে তাকায়।সামনে বসা তামাটে বর্ণের পুরুষ টা একান্তই আষাঢ়’র। মনে পড়তেই শিহরণ বয়ে যায় শরীরে।একবার ছুঁতে ইচ্ছে করছে। মনের কথাই শুনলো আষাঢ়। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আর্শিয়ান এর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে সরে আসতে নিলেই আর্শিয়ান আঁটকে দেয়।ওর ঘাড়ে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত চাহনিতে। আষাঢ়’র শরীর মৃদু কেঁপে উঠে।আর্শিয়ান বললো,

-“ভেবেছিলাম বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলে আদর করা যাবে না।কিংবা লজ্জায় সে নিজেই দূরে দূরে থাকবে।ভাবি নি আমার বউ আমার চেয়ে দিগুণ রোমান্টিক আর নির্লজ্জ হবে।কিন্তু কাল রাতে বুঝতে পারলাম আমার বউ আমার গভীর স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।”

আষাঢ় লজ্জা পেলো।তবে বারবার আর্শিয়ান এর মুখে বউ ডাকটা শুনে ভালো লাগায় মন দুলিয়ে উঠলো।
আর্শিয়ান ওকে ফ্রেশ করতে পাঠিয়ে বেডশিট চেঞ্জ করে নতুন করে বিছিয়ে নিলো।রুম গুছিয়ে নিচে থাকা এলোমেলো নিজেদের কাপড় তুলে ওয়াশ রুমের সামনে রাখা বিনে রাখলো।
আষাঢ় ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো আর্শিয়ান ফর্মাল গেটআপে অফিসের জন্য রেডি হয়ে গিয়েছে।
আষাঢ় কে আসতে দেখে গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে জিগ্যেস করলো,

-“শরীর খারাপ লাগছে?”

-“না তো।”

টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো আষাঢ়।আর্শিয়ান হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,

-“ওকে।
রেডি হয়ে নিচে এসো।কলেজ ছেড়ে দেব আমি।”

-“কিন্তু?”

-“কি?

-“সাড়ে ন’টা বেজে গেছে।
ক্লাস তো সাড়ে ন’টায় শুরু।”

-“আচ্ছা।
যেতে হবে না।”

আর্শিয়ান চলে গেলো।আষাঢ়’র মন টা খারাপ হলো।লোক টা এমন কেনো?যাওয়ার সময় একটু আদর করে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?

——-

-“তোর লজ্জা করে না?শ্লা!”

আর্শিয়ান চোখ কটমট করে তাকালো সাঈদ এর দিকে।সাঈদ হাঁটতে হাঁটতে আবার বললো,

-“কিভাবে পারছি এতো ছোট একটা মেয়ের সাথে বাসর করে সবার সামনে বীরপুরুষ এর মতো হাঁটতে?”

আর্শিয়ান সিঁড়ি তে পা রাখার আগে ফিরে তাকালো সাঈদ এর দিকে।
আর্শিয়ান বাঁকা হেঁসে বললো,

-“কি বলতো?আমার বউ তো তাই আমার মতোই স্ট্রং।তোর এতো এতো প্রশ্ন না হয় আমার বউ এলে তাকে দেখে জবাব পেয়ে যাবি।”

বলে আর্শিয়ান হাঁটা ধরে। সাঈদ ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।কত সময় এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানা নেই ওর।আয়াত এসে ডাকতেই হুঁশ এলো।
অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলো,

-“চলো,চলো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

সাঈদ আয়াত এর হাত ধরে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
কিন্তু আয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আষাঢ় আসছে। আয়াত নিজের হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলো বোনের কাছে।
সাঈদ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আষাঢ়’র দিকে।

——-

তাসফিয়া আগের মতো আর মনমরা হয়ে থাকে না।সবার সাথে মিলেমিশে থাকছে।তাসরিফ আজ পনেরো দিনের ও বেশি সময় হয়েছে বাড়ি নেই।মেয়ে টা নিজে কে কেমন শক্ত করেছে। আগে এক বেলা না দেখলে অস্থির অস্থির লাগত।এখন নিজে কে সামলেছে। তাসরিফ বুঝিয়েছে। মেনে নিয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সামলাতে হবে নিজে কে।ভেঙ্গে পড়লে হবে না।
তাসফিয়া ব্যালকনিতে বসে আছে। বাড়িতে কেমন একটা পিনপতন নীরবতা। কোনো সাড়াশব্দ নেই।ঝড় আসার পূর্বে যেমন আকাশ থম মেরে যায়। বাড়ি টাও আজ এমন থম মেরে আছে।
তাসফিয়া বোঝে পায় না সবাই এমন নিশ্চুপ কেনো।সন্ধ্যায় লিভিং রুমে এসে তাসফিয়া সোফায় বসে আছে। তায়েফ তায়ুশ কার্টুন দেখছে।ওদের জন্য টেবিলে একটু আগে নাস্তা দিয়েছে বুয়া।তাই ওরা দু’জন চলে গেলো।
তাসফিয়া রান্না ঘরের দিকে তাকালো সবাই মিলে কি এতো রান্না করছে মাথায় এলো না।রিমোট হাতে চ্যালেন চেঞ্জ করে নিলো।মিনিট দুই এক পেরুনোর পর সদর দরজায় কলিং বেল বাজলো।বুয়া গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে চলে এলো।তাসফিয়া ভেবেছে হয়তো বাবা চাচার কেউ এসছে তাই সেদিকে নজর না দিয়ে টিভির স্ক্রিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ কানে চিরপরিচিত কণ্ঠ শুনতে পেলো।মনের ভুল কি?তাসফিয়া এদিকে না তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে বসে আছে। তাসরিফ ভ্রু কুঁচকে ফের শুধালো,

-“আমার জন্য একটা কফি নিয়ে আয়।”

তাসফিয়া ত্বরিত ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তাসরিফ ভাই উলটো ঘুরে উপ-রে চলে যাচ্ছে।
তাসফিয়া থম মেরে বসে রইলো। চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনের ভুল ভেবে বসে রইলো। এরমধ্যে বুয়া কফি হাতে নিয়ে এলো।তাসফিয়া কে বলে ওর হাতে ট্রে দিয়ে আবার নিজের কাজে চলে গেলো।
তাসফিয়া আশেপাশে তাকিয়ে মিনি ট্রে টা হাতে নিয়ে উপরে এলো।দোতলায় এসে হৃৎস্পন্দন দিগুণ হলো।অনেক সাহস সঞ্চয় করে তাসরিফ এর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আর অমনি ভেতর থেকে এক জোড়া পুরুষালী হাত তাসফিয়া কে টেনে নিলো।ট্রে শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো মেয়ে টা।তাসরিফ ওর হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে স্টাডি টেবিলের উপর রাখলো।দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে সোজা করে মাথার উপর তুলে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো। তাসফিয়া চুল খোঁপা বেঁধে রেখেছিলো একদম ঢিল করে।যেটা তাসরিফ এর ধাক্কায় খুলে গেলো।তাসরিফ নেশাময় দৃষ্টিতে তাসফিয়ার অধরপানে তাকিয়ে আছে। তাসফিয়া ভয়ে চোখ তখন পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আগে অনেকবার তাসরিফ ভাই তাসফিয়া কে ছুঁয়েছে। শুধু ছুঁয়েছে বললে ভুল হবে।অধর স্পর্শও করেছে। কিন্তু আজ কে মানুষ টাকে একটু আলাদা লাগছে। মনে হচ্ছে বহুদিন এর তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো সেও কিছু পাওয়ার ছুঁয়ে দেওয়ার তৃষ্ণায় মরছে।
তাসরিফ অনেক সময় তাসফিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে দুই জোড়া অধর একত্রিত করে দিলো।সময় নিয়ে অধরসুধা পান করে তবেই ছাড়লো প্রেয়সী কে।

——

রাতে খাবার খেয়ে আষাঢ় তায়েফ তায়ুশ এর সাথে বসে আছে। আর্শিয়ান বারকয়েক দোতলায় করিডরে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু আষাঢ় পাত্তা দিচ্ছে না।
আজ এতোদিনে বিয়ের অথচ মানুষ টা ওকে কোনো গিফট দিলো না। ভেবেই আষাঢ়’র মন খারাপ হয়।
তবে নিচে আর কতক্ষণ বসে থাকবে।রাত বাড়ছে। রুমে তো যেতেই হবে। তায়েফ তায়ুশ ও চলে গিয়েছে।লিভিং রুমে কেউ নেই। আষাঢ় অল্পস্বল্প ভয় পেয়ে দ্রুত উপরে চলে এলো।রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফিরতেই আর্শিয়ান ওকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। আষাঢ় চোখ পিটপিট করে। আর্শিয়ান নিজের হাতে থাকা একটা সুন্দর চেইন ঝুঁকে আষাঢ়’র গলায় পড়িয়ে দিলো।
শান্ত কণ্ঠে জানালো,

-“এটা অর্ডার করেছিলাম একটা অনলাইন শপ থেকে। কিন্তু দেশের বাহিরে থেকে আনাতে একটু সময় লেগেছে। কিন্তু কুরিয়ার অফিসে এসছে আজ তিন দিন। আমি যাওয়ার সময় পাই নি।আর কাবাড একটা শপিং ব্যাগ আছে দেখতে বলেছিলাম সেদিন। দেখেছিস?”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

আমার প্রেয়সী পর্ব-১৬+১৭

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“আর্শিয়ান পাগল হয়েছো?
নিজের দিকে তাকাও।”

আর্শিয়ান আকরাম তালুকদার এর কথায় তাকালো পর্যন্ত না ওনার দিকে।শিউলি বেগম এর দিকে তাকিয়ে আছে আর্শিয়ান। তিনি দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে।ভোর পাঁচ টা বাজে।বাড়িতে কেউ একফোঁটা ঘুমায় নি।আর্শিয়ান বাড়িতে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার খবর টা খুব দ্রুত বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছিলো।আর সেই থেকে অপেক্ষা করে বসে ছিলো সবাই। আর্শিয়ান এই মিনিট পাঁচ এক সময় হবে ফিরেছে। গায়ের কালো রঙের শার্ট টা বৃষ্টিতে ভিজে আবার শুকিয়ে গিয়েছে। চুল গুলো এলোমেলো। চোখ জোড়া সারা রাত নিদ্রাহীন ছিলো সেটা দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে।
শর্মিলা বেগম কেঁদেকেটে নাজেহাল অবস্থা করেছে নিজের।আর্শিয়ান মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
নিজের হাত টা এগিয়ে আর্শিয়ান মায়ের একটা হাত মুঠোয় পুরে নিলো।
শান্ত কণ্ঠে বললো,

-“আমার একদিনের ছন্নছাড়া এই অবস্থা তোমার সহ্য হচ্ছে না।আর বাকি দিন গুলো কি করে সহ্য করবে মা?”

শর্মিলা বেগম কথা বলতে পারলো না। ছেলে তার ভিষণ শখের।পালিয়ে বিয়ে করে সব হারিয়ে স্বামী কে আপন করে নিয়েছিলো।আর বছর ঘুরতে যখন আর্শিয়ান এলো তখন সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেলো।আজো ছেলের জন্য তিনি সব বিসর্জন দিতে পারবে।
কিন্তু ছেলের কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না।
আর্শিয়ান মায়ের ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো,

-“আমি ওকে ভালবাসি মা।
জানি না কখন হয়েছে এই ঘৃণিত কাজ টা আমার দ্বারা। কিন্তু ভালবসায় তো কোনো অন্য নয়।ওকে ছাড়া আমার এই আঠারো ঘন্টায় আমার জীবন দূর্বিষহ লাগছে।আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো নয় এমন টা নয়।বাঁচব কিন্তু শুধু আমার ভালো করে বাঁচা আর টা হবে না।”

শর্মিলা বেগম হু হু করে কান্না করতে লাগলো। ছেলের দুর্বলতা ওনার একদম সহ্য হচ্ছে না। ছেলে তার ভিষণ শক্ত ধাঁচের মানুষ।ছেলের দুর্বল কণ্ঠ শুনতে নারাজ তিনি।
কান্না থামালো একপর্যায়ে। ছেলের গালে হাত রেখে বললো,

-“আমার সব সহ্য হবে আব্বা।
তোমার কষ্ট নয়।”

আর্শিয়ান যা বোঝার বুঝে গেলো।তৎক্ষনাৎ মায়ের কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে আগের পোশাকে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

—-

গ্রামের পরিবেশ। আষাঢ় আগে আর কখনো থাকে নি গ্রামে। এসছে ঘুরতে। নানা নানি না থাকার ফলে সারা দিন থেকে সন্ধ্যায় ফিরে যেতো সবাই। এক তলা এই বাড়ি টা আষাঢ়’র কাছে দারুণ সুন্দর লাগে। কিন্তু রাতে বা কখনো এভাবে এসে এই বাড়িতে থাকার কথা সে চিন্তাও করে নি।ওর খালা ঘুমিয়ে আছে একই ঘরে একই বিছানায় রয়েছে ওরা তিনজন।কিন্তু আষাঢ়’র চোখে ঘুম নেই।বিছানা থেকে নেমে ফ্লোরে বসে আছে হাঁটুতে মুগ গুঁজে। সে আসতে চায় নি এখানে। কিন্তু মায়ের জোড়াজুড়িতে এসছে। সে চায় না তার জন্য পরিবার আলাদা হয়।কোনো ঝামেলা হয়।সে নিজেই তো আর্শিয়ান ভাই উসকেছে।আর্শিয়ান ভাইয়ের পেছনে ঘুরেছে। আর্শিয়ান ভাই তো আজো মুখে বলে নি ভালোবাসে।আষাঢ় নিজে কে নিজে এমনও হাজার কথা বলে শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু মন মানছেই না।বারবার মনে হচ্ছে আর্শিয়ান ভাই আসবে। আবার এটাও মনে গেঁথে আছে আর্শিয়ান ভাই তাকে একবার ছুঁয়েছে।সেই স্পর্শে ভালোবাসা অনুভব করেছে আষাঢ়। যদিও স্পর্শ টা একটু হিংস্র ছিলো।তবে ভালোবাসা ছিলো বেশি।যেন বহুদিনের তৃষ্ণা মিটেয়ে ছিলো মানুষ টা।ভালোবাসা না থাকলে এমন টা সম্ভব হতো না।
একটু আগে আজান পড়েছে। হয়তো খালামনি এখন উঠবে। আষাঢ় গুটিগুটি পায়ে তাই বিছানায় ওঠে শুয়ে পড়লো।
কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না।ভাবলো নামাজ টা পড়ে ঘুমবে।তাই ওজু করতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ওজু করে এসে দেখলো ওর খালা বসে আছে বিছানায়। আষাঢ় অতিরিক্ত কান্না করেছে।যার ফলস্বরূপ চোখ মুখ অসম্ভব ভার দেখা যাচ্ছে। আষাঢ়’র খালার মায়া হলো।আষাঢ় নিজে কে যথেষ্ট আড়াল করতে চাইলো।তবে পারলো না। ওর খালা এগিয়ে এসে আষাঢ়’র কে আলগোছে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত রাখলো।
মোলায়েম কণ্ঠে বলল,

-“ভরসা রাখ।আল্লাহ তার বান্দাকে কখনো নিরাশ করে নাহ।”

আষাঢ় কিছু বললো না। নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লো।ওর খালা তখন নামাজে দাঁড়িয়ে হয়তো শেষ রাকাআত আদায় করছে।মোনাজাত নিয়ে ভদ্রমহিলা জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতেই গেইটে শব্দ হলো।কেঁচি গেইট বাড়িতে।তাতে আবার তালা মারা।তালা ধরে শব্দ করছে কেউ।টাশ টাশ শব্দে পুরো বাড়ির জেগে উঠলো।আষাঢ় শোয়া থেকে ওঠে বসে গেলো।ওর সাথে ছোট খালা তো বোন মিলিও ওঠে চোখ ডলে।ঘুমঘুম কণ্ঠে আষাঢ় কে জিগ্যেস করলো,

-“সকাল হয়েছে আপাই?”

-“হুঁ।”

আষাঢ় ছোট করে জবাব দিলো। কণ্ঠ টা বড্ড ভারি শোনালো।মিলি চিন্তিত হলো।বয়স মোটামুটি হয়েছে। ভালো খারাপ বোঝার মতো কিছু টা জ্ঞান হয়েছে।গ্রামের বাড়ি খারাপ কেউ এলো না তো আবার।মা ও কেমন থম মে’রে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে ভয়, চিন্তায় বর্তমান অবস্থা ভুলে বসেছে। মিলি মায়ের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ফের আষাঢ়’র দিকে তাকালো।
বললো,

-“অন্ধকার মনে হচ্ছে বাহিরে।
এতো সকালে কে এলো?”

-“জানি না।”

আষাঢ় সোজাসাপটা জবাব।তবে ভেতর টা কেমন করছে। বারবার মনে হচ্ছে আর্শিয়ান ভাই এসছে।কিন্তু কিভাবে সম্ভব হবে এটা?তারা কোথায় আছে এটা তো কেউ জানে না।সিলেট যাওয়ার কথা থাকলে ওর মা আর খালা মিলে এখানে আসার জন্য বললো।তবে কে এলো এতো সকালে?
গেইট খোলারও সাহস পাচ্ছে না। আষাঢ়’র খালা যথেষ্ট রাগী মানুষ। আষাঢ় ওনাকে ডিঙ্গিয়ে গেইট খোলার মতো দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারবে না।
তাই থম মেরে বসে রইলো।এভাবে কেটে গেলো কয়েক মিনিট।গেইটে কড়া নাড়ার শব্দ তীব্র হচ্ছে।
আষাঢ়’র খালা ধীরে পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। পেছন পেছন আষাঢ় মিলি এলো।দরজা খুলে বারান্দায় পেরিয়ে গেইটে আর্শিয়ান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই থমকালো।আষাঢ়’র চোখ দিয়ে আপনা-আপনি জল গড়িয়ে পড়ছে।
ওর খালা গেইট খুলতেই আর্শিয়ান কোনো দিকে তাকালো না।সোজা এসে আষাঢ় কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।বাইরে তিন টা ছেলেও আছে। বয়স অল্প দেখে বোঝা যাচ্ছে।এরা প্রায় আর্শিয়ান এর সাথে থাকে।আষাঢ় জানে।তবে এখন কোনো দিকে ধ্যান নেই ওর।শুধু অনুভব করছে জড়িয়ে রাখা মানুষ টার হৃৎস্পন্দন।কত দ্রুত ছুটছে সেটা।আষাঢ়’র মনে হলে এই বুঝি এটা বেরিয়ে আসবে।
আর্শিয়ান টপাটপ ক’টা চুমু খেলো আষাঢ়’র মাথায়। এখানে ক্ষান্ত হলো না।মুখে চোখে অজস্র চুমু খেলো।আষাঢ় লজ্জা পাচ্ছে। খালা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাহিরে ছেলে গুলো দৃষ্টি নত।আর্শিয়ান থামলো।এক হাত শক্ত করে ধরে খালার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

-“আপনি সব গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে আসুন।আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।”

-“আর্শিয়ান,,,

-“আমি জানি আপনার দোষ নেই।চাপ নিবেন না।আমি আপনাকে দোষ দেবো না।”

আর্শিয়ান আষাঢ় কে নিয়ে বেরিয়ে এলো।
ছেলে গুলো কে উদ্দেশ্য করে আদেশ করলো,

-“খালামনি কে নিয়ে আসবি।”

ছেলে গুলো মাথা নাড়ালো।আর্শিয়ান আষাঢ়’র হাতে হাত রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।বাড়ির সামনে পিচ ঢালা রাস্তা। একপাশে দু’টো গাড়ি।একটা আর্শিয়ান এর।আরেক টা কার আসার চিনে না।হয়তো আর্শিয়ান ভাই ভাড়া এনেছে।
গাড়িতে বসে আর্শিয়ান একবার তাকালো না আষাঢ় এর দিকে।
চুপচাপ নীরবতা চললো অনেক সময়। আষাঢ় হঠাৎ বলে উঠলো,

-“আপনি কি করে জানলেন আমরা এখানে?
আম্মা মারবে আমায়।”

-“নাহ।
আমি থাকবো সাথে।”

-“যদি না মানে?”

-“থাকতে পারবি না আমার মায়ের সাথে? ”

-“বড়ো মা মানবে না।”

-“মেনেছে।”

আষাঢ় থমকালো।বিস্ময় কথা বলতে ভুলে গেলো।গম্ভীর আর্শিয়ান আর কিছু বললো না।

——-

আর্শিয়ান আষাঢ় দাঁড়িয়ে আছে লিভিং রুমে।
কেউ কিছু বলছে না।সবাই চুপচাপ। অবশ্য এতোক্ষণ চুপচাপ ছিলো না।মাত্রই আর্শিয়ান এর গম্ভীর কথায় সবাই নীরবতা পালন করছে।নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছে সবাই এই গম্ভীর থেকে আর্শিয়ান হঠাৎ পাগল কি করে হয়ে গেলো।তবে তাতে আর্শিয়ান এর কিচ্ছু আসে যায় না।সে যা বলেছে সেটাই হবে।
আর কিচ্ছু শুনতে নারাজ সে।অনেক বুঝিয়েও কোনো লাভ হলো না।বরং আকরাম তালুকদার এর কথায় সবাই বিস্ময় নিয়ে চুপসে আছে।
আর্শিয়ান তাসফিয়া কে ইশারা করে আষাঢ় কে নিতে বললো।আয়াত সহ তাসফিয়া ওকে নিয়ে দোতলায় চলে গেলো।শর্মিলা বেগম এগিয়ে এলো ছেলের নিকট।
বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আব্বা বিয়েতে পড়বে টা কি আষাঢ়?”

-“তোমার শাড়ী আছে না একটা বিয়ের?ওটা পড়িয়ে দাও।”

আর্শিয়ান সোজাসাপটা বলে দিলো।শর্মিলা বেগম চিন্তিত হলেন।একবার ওটা আয়াত আষাঢ় তাসফিয়া কে দেখিয়ে ছিলো।তখন সব গুলো কেমন করে যেন তাকিয়ে ছিলো।শর্মিলা বেগম লজ্জা পেয়েছিল।ভেবেছে হয়তো মডেল পুরোনো তাই ওরা হয়তো কিছু বলে নি।
ওনি মলিন স্বরে বললো,

-“কিন্তু অনেক পুরোনো ওটা।আগের ডিজাইন। আষাঢ়’র পছন্দ হবে না।”

-“ওর স্বপ্ন।
তোমার ওই শাড়ি নিয়ে।”

আর্শিয়ান দাঁড়ালো না নিজের বক্তব্য শেষ করে।উপ-রে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। তবে যাওয়ার আগে তাগাদা দিতে ভুলে না।কাজি চলে আসবে যা করার দ্রুত করতে।
কিন্তু শর্মিলা বেগম তখন ঘোরে আছে। কি বলে গেলো আর্শিয়ান বুঝতে সময় লাগলো।বুঝতে পেরে মুচকি হেঁসে বলে উঠলো,

-“আমি তোকে আমার মন মতো করে গড়ে নেবো।আমার সব কল্পনা তোকে দিয়ে পূর্ণ করবো।”

——

লাল টকটকে একটা বেশ পুরোনো ডিজাইন এর জামদানী শাড়ি। মাথায় ফিনফিনে পাতলা একটা দোপাট্টা। সেটাও লাল।ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। চোখে কাজল নাকে জ্বলজ্বল করছে ছোট একটা নাক ফুল।মাঝে সিঁথি করে একটা টিকলি।ছোট গোলগাল মুখ খানা কি দারুণ লাগছে।এই অল্প সাজে আর্শিয়ান এর চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর্শিয়ান এর ঘোর লেগে গেলো।দৃষ্টি সংবরণ করলো সে।
বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে। আষাঢ় কাঁপছে মৃদু। কাল দুপুর থেকে সে পানি ব্যতিত আর কিছু খায় নি।পেটও জ্বলছে। অতিরিক্ত চিন্তায় অস্থিরতায় মাথা ঘুরছে।কবুল টা সে কোনো রকম কাঁপা কাঁপা অধর নেড়ে বললো।তবে বলার পর আর বসে থাকতে পারলো না। সোফায় আর্শিয়ান এর পাশে বসে আছে আষাঢ়। আষাঢ় এর দেহটা হেলে পড়তেই আর্শিয়ান দ্রুত হাতে আগলে ধরলো নিজের সাথে।
সবাই বিস্ময় কিছু বলতে ভুলে গেলো।একঘর মানুষের মাঝে এমন দৃশ্য বড়োই নজরে এলো সবার।তবে আর্শিয়ান সে-সব তোয়াক্কা করে না।সবাই কে আরো একধাপ চমকে দিয়ে ঝটপট কোলে তুলে বউ কে।কোনো দিকে না তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।সবাই অবাক সেই সাথে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আকরাম তালুকদার অবশ্য চশমা ঠেলে চোখ দিলো।বিড়বিড় করে স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“ছেলে টা এতো নির্লজ্জ কবে থেকে হলো বলো তো মিলা?”

#চলবে…..

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“আর্শিয়ান ভাই?”

আষাঢ় নিচু স্বরে ডাকলো।আর্শিয়ান ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে সোফায়। গায়ে একটা নীল রঙের টি-শার্ট আর ট্রাউজার। খুব সিরিয়াস মুডে ছিলো সে। কিন্তু আষাঢ় এর কণ্ঠ ভাই ডাক শোনে ভ্রু কুঁচকে এলো।
বিয়ে করেছে সে। এটা কি সত্যি? মনে হচ্ছে না। বউ কেনো তাকে ভাই ডাকবে? বউ হচ্ছে আদরের জিনিস। ভালোবাসার জিনিস। বউ তো স্বামী কে আদরে করবে। কত কিছু বলে আদরে করে ডাকবে।তা না করে বউ কেনো তাকে ভাই ডাকবে?হোয়াই? আর্শিয়ান ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখেই ল্যাপটপ এর দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে গম্ভীর স্বরে জবাব দিলো,

-“হুঁ।”

আষাঢ় বিছানা ছাড়ে। গতকাল দুপুরেও হয়তো ভাবে নি গতকালের সময় সময়ে আজ আর্শিয়ান ভাই এর বউ হবে সে। ভালবাসার মানুষ টাকে নিজের করে পাওয়ার মতো সুন্দর অনুভূতি আর কি হতে পারে? পা জোড়া টেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।দাঁড়ালো আর্শিয়ান এর ঠিক বরাবর। আর্শিয়ান বউয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে একপলক তাকালো বউয়ের মুখের দিকে। গায়ে এখনো বিয়ের সেই শাড়ী। চুল গুলো হাত খোঁপা করা। ওষ্ঠে এখনো সেই লাল টকটকে লিপস্টিক। কিছু চুল এলোমেলো। চোয়াল বেয়ে সামনে গলা পর্যন্ত এসেছে।
আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিলো।তবে আর্শিয়ান কে এভাবে তাকাতে দেখে লজ্জা পেলো সামন্য। কিন্তু দৃষ্টি ঘোরালো না। নিজেও তাকিয়ে রইলো তামাটে বর্ণে পুরুষ আর্শিয়ান ভাই এর দিকে।আহ,আষাঢ়’র মনে হচ্ছে সব কল্পনা। সব স্বপ্ন। ভালোবাসা কি বোঝার পর থেকে স্বপ্ন দেখে আসছে সে আর্শিয়ান ভাই এর বউ হবে। যে ঘরে আর্শিয়ান ভাই তাকে ঢুকতে নিষেধ করেছে সেই মানুষ টার ঘর সহ মানুষ টার উপর খবরদারি করবে। অধিকার ফলাবে।
আষাঢ় অস্থির হলো হঠাৎ। মনে হলো এই অস্থিরতা সে যা ভেবেছে তা না করতে পারলে ঠিক হওয়ার নয়।তাই কালবিলম্ব করে না।
মাথা নিচু মিনমিন করে আবদার করলো,

-“একটু জড়িয়ে ধরবো আর্শিয়ান ভাই!”

কি বলে এই মেয়ে? কিছু সময় আগেও কোলে উঠেছে। আর এখন কি-না ভয় পাচ্ছে! অনুমতি চাচ্ছে? আর্শিয়ান গম্ভীর।
মতিগতি বোঝার উপায় নেই। আষাঢ় ভাবলো আর্শিয়ান ভাই তাহলে সত্যি তাকে ভালোবাসে না!ভালোবাসলে বুঝি এভাবে বসে থাকতে পারতো?আষাঢ়’র মনঃক্ষুণ্ন হলো।মানুষ টা বড্ড আনরোমান্টিক।এমন হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম কি করে ডাউনলোড হবে?
আষাঢ়’র আঙ্গুলে শাড়ির কোণ পেঁচাতে পেঁচাতে কথা গুলো ভাবছিল। ঠিক তক্ষুণি হাতে শক্ত পোক্ত একটা হাতের আভাস পেলো। কিছু বোঝে উঠার আগেই আর্শিয়ান হেঁচকা টানে আষাঢ় কে নিজের একটা উরুর উপর বসিয়ে নিলো।আষাঢ় চমকাল।শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। নিজে কে সামলে আর্শিয়ান এর গলায় জড়িয়ে ধরলো।অধর কোণে লাজুক হাসি ফুটলো।ভয় লজ্জা সংকোচ সব ঠেলে আর্শিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলো।
আর্শিয়ান শক্ত হাতে বউয়ের পেট চেপে ধরে। নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
একদম তুলার বস্তা একটা। নরম তুলতুলে দেহটা এই শক্ত পোক্ত, বলিষ্ঠ তাগড়া পুরুষ টাকে কি করে সামলাতে পারবে?
আষাঢ় আর্শিয়ান এর মাঝে বয়সের গ্যাপ টা গুণে গুণে এগারো বছরের। আর্শিয়ান এর তুলনায় আষাঢ় বাচ্চা একটা মেয়ে। আর এই বাচ্চা মেয়ে টা কি করে এতো বড়ো একটা মানুষের মন টা ছিনিয়ে নিলো! আর্শিয়ান টের ও পেলো না। আর্শিয়ান লম্বা নিঃশ্বাস টানে।মাতাল করা এক ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে পৌঁছালো গিয়ে।
আর্শিয়ান মানুষ টা গম্ভীর। আর এই গম্ভীর পুরুষ টার প্রেমে আষাঢ় পড়লো। অবশ্য আষাঢ় বাদেও তো অনেকে আর্শিয়ান ভাই এর প্রেমে পড়েছে।কিন্তু পুরুষ টার গম্ভীর স্বভাবের আর রাগের জন্য কেউ সেটা সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ করার সাহস পায় নি।

এখন বিকেল।বিয়ের পরপরই আষাঢ় জ্ঞান হারানোর পর আর্শিয়ান ওকে নিজের রুমেই এনেছে। এরপর আর কেউ বের হয় নি রুম থেকে। আষাঢ় এর জ্ঞান ফিরেছিলো আধঘন্টা হতেই। শর্মিলা বেগম খবর পাওয়া মাত্র ছেলে আর ছেলের বউয়ের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।
যদিও এরপর এসে দু’বার আষাঢ় কে দেখে গিয়েছে। সবাই দেখে গিয়েছে। শুধু শিউলি বেগম আসে নি। আষাঢ়’র মন এতে অনেক টা খারাপ হয়েছে। মা কেনো একটু এলো না?

-“ছাড়।”

হঠাৎ আর্শিয়ান এর কণ্ঠ কানে পৌঁছাতেই আষাঢ় ভাবনা ছেদ ঘটে।অবস্থান কোথায় বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লাগলো।তবে বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা করে না।দ্রুত আর্শিয়ান কে ছেড়ে উঠতে গেলেই আর্শিয়ান বাঁধা দিলো।দুই হাত কোমরে রেখে চাপ প্রয়োগ করে। আষাঢ় কেঁপে উঠে।
আর্শিয়ান বললো,

-“এখন রুমে যাবি।
আমি বাহিরে যাচ্ছি। ফিরে এসে নিয়ে আসবো।”

আষাঢ় টুঁশব্দ করলো না। আর্শিয়ান ভাই মানে তার কোনো প্রশ্ন নেই। কোনো চিন্তা নেই। তাই বিনাবাক্যে রুম ত্যাগ করে।

—–

রাতের খাবার খেতে যাওয়ার জন্য তাসফিয়া এসে আষাঢ় কে নিয়ে গেলো।আষাঢ় ডাইনিং টেবিলে এসে আর্শিয়ান এর দেখা পেলো।বসে আছে খাবার নিয়ে।আষাঢ় বুঝতে পারছে না এখন এক সাথে বসা কি ঠিক হবে? কি মনে করবে সবাই? নতুন বউ সে।তারউপর বাড়ির বড়ো বউ।
আষাঢ় দাঁড়িয়ে ছিলো এক পাশে শিউলি বেগম সাঈদ কে তখন খাবার দিচ্ছে। শর্মিলা বেগম আষাঢ় কে দাঁড়িয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো মেয়ে টা দ্বিধায় ভুগছে।তিনি নিজে থেকে এগিয়ে এলো।আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
বোস।”

-“আমি পর,,,

-“নাহ এক্ষুণি বোস।”

জোর করে বসালো আষাঢ় কে।আষাঢ় আর বাড়াবাড়ি করে না।
বসে পড়ে আর্শিয়ান এর পাশের চেয়ার টায়।
আর্শিয়ান আঁড়চোখে তাকালো একবার।
আপন মানুষ। পরিচিত মুখ। জন্মের পর থেকে তাদের সাথে বাস। বুঝ হওয়ার পর থেকে সব সময় এক সাথে খাবার খাওয়া। খেলাধুলা, হাঁটাচলা। সব কিছু এই সামনে পেছনে আশেপাশে থাকা মানুষ গুলো কে ঘিরে। অথচ আজ তাদের সাথে একই টেবিলে খাবার খেতে বসে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। আষাঢ় মাথা নিচু করে খাবার মুখে নিচ্ছে। বাম হাত টা কোলের উপর রাখা।
তবে হঠাৎ অনুভব করলো সেটা একটা দানবীয় হাত মুঠোয় পুরে নিয়েছে।
আষাঢ় চমকালো।অবাক হলো।পাশে আর্শিয়ান এর দিকে তাকাতেই দেখলো আর্শিয়ান খাবার খাচ্ছে। দৃষ্টি তার প্লেটের দিকে।আর সেভাবে থেকেই আদেশের স্বরে বললো,

-“ফিনিশ।
একটা ভাত প্লেটে থাকলে সারা রাত বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখবো।”

চাপা স্বরে হুমকি আষাঢ়’র অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। মানুষ টা বড্ড খারাপ। একটু দয়ামায়া নেই মনে। এভাবে কেনো বলছে? লোক টা কি বুঝতে পারছে না আষাঢ় খেতে পারছে না। আষাঢ় মুখ ভোঁতা করে খাবার খেতে লাগলো বাধ্য হয়ে।

——

খাবার শেষ লিভিং রুমে বসেছে সবাই। আষাঢ় নেই।আয়াত তাসফিয়া ওকে নিয়ে অনেক আগেই উপরে চলে গিয়েছে।
এখন বড়রা বসে আছে। আকরাম তালুকদার ছেলের মতিগতি অবলোকন করেছে। ছেলের পাগলামো না মেয়ে টার জীবনে এখানে থমকে থাকে।হঠাৎ তিনি আর্শিয়ান কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“দেখো আর্শিয়ান কথা টা বলা আমার কত টা ঠিক হবে আমি জানি না।তবে এটা বলা জরুরি। আষাঢ় বাচ্চা মেয়ে। আঠারো বছর হয় নি এখনো। ওর রুমে থাক,,,

-“ওহ বাবা প্লিজ।
আমার বউ?আমার তো তবে আমাকে বুঝতে দাও। আষাঢ় আমার রুমে থাকবে।”

আকরাম তালুকদার নিজেই লজ্জা চোখ নিচু করে নিলো। কি বলবে? শুধু শুধু এতো মানুষের ভীড়ে সম্মান হারানোর মানে হয় না।আর্শিয়ান বসে না আর সেখানে। ফোন পকেটে পুরে লম্বা লম্বা কদম ফেলে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে এলো। বউ নিশ্চয়ই তারজন্য অপেক্ষা করছে।

আষাঢ় এখনো বিয়ের শাড়ী পড়া। মাথায় দোপাট্টা টা আবার দিয়েছে। সাজিয়েছে ওকে তাসফিয়া আয়াত।
বুকে টিপটিপ করছে। কাঙ্খিত মানুষ টা কখন আসবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আষাঢ় এর বিয়ে নিয়ে কত কল্পনা জল্পনা ছিলো। কিন্তু সে-সব কিচ্ছু হলো না। মন টা খারাপ হতে গিয়েও হয় না। যাকে স্বামী রূপে চেয়ে এসছে তাকেই পেয়েছে এই আনন্দের নিকট সব খারাপ লাগা তুচ্ছ।
দরজা খোলার কোনো শব্দ হলো না। আর্শিয়ান দক্ষ হাতে দরজা খুলে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে। দরজা বন্ধ করে গম্ভীর মানুষ টা গম্ভীর ভাব নিয়ে এগিয়ে গেলো বিছানার সামনে। গিয়ে দাঁড়াতেই আষাঢ়’র টনক নড়ে। দ্রুত পায়ে বিছানা ছেড়ে সংকোচ নিয়ে সালাম দিলো আর্শিয়ান কে।তাসফিয়া বলেছে আর্শিয়ান রুমে এলেই যেন সালাম দেয়।জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করবে।সেটা সম্পূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে যেনো শুরু করে।
আর্শিয়ান সালাম এর উত্তর করলো।
আষাঢ় দাঁড়িয়ে রইলো। আর্শিয়ান টেনে নিলো আষাঢ় কে।নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নিলো এক ইঞ্চি ফারাক রাখলো না।আষাঢ় সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে। সাপের ন্যায় মোচড়ামুচড়ি করলো। ভালোবাসার মানুষ টার গভীর স্পর্শ। এতো টা কাছ থেকে আষাঢ় ভেতর থেকে এলোমেলো হলো।
আর্শিয়ান দেখলো।সবটাই সে পর্যবেক্ষণ করলো।
নেশাময় দৃষ্টি পুরুষ টার।আষাঢ় আস্তে করে ঢুক গিলে। আর্শিয়ান বউয়ের অধরের উপর বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলো।আষাঢ় আবারও নড়েচড়ে উঠতেই আর্শিয়ান অধর বাঁকিয়ে হাসলো।বললো,

-“ব্যাস! এটুকু এতেই সহ্য হচ্ছে না।
পুরো আমি টা কে কি করে সহ্য করবি?”

#চলবে……

আমার প্রেয়সী পর্ব-১৫

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ় কোথায়?”

আর্শিয়ান এর শান্ত কণ্ঠ।তবে গম্ভীর স্বরে জানতে চাইলো।
কিন্তু কেউ কোনো রকম জবাব দিলো না। আর্শিয়ান এর রাগ এবার তরতর করে বেড়ে গেলো। অনেক কষ্টে সে নিজে কে এতো সময় ধরে কন্ট্রোল করে আসছে।কিন্তু এবার যেনো সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলো।বাড়ি ফিরেছে সে বিয়ের আগে। এয়ারপোর্ট গিয়েছিল সাঈদ এর বাবা কে রিসিভ করতে। ফিরে এসে আষাঢ় কে চোখের দেখা দেখতে পায় নি সে।অপেক্ষা করেছে বিয়ে বাড়ি কোনো ঝামেলা চায় নি সে।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।বিয়ে পড়ানো হলো।মেহমান বিদায় নিলো।কিন্তু তার আষাঢ়’র দেখা পেলো না।
আর্শিয়ান এবার যেন অন্তরে জ্বলে উঠলো।চেচিয়ে উঠলো। উচ্চস্বরে আবার জিগ্যেস করলো,

-“আমার আষাঢ় মাস কোথায়?”

-“আর্শিয়ান?
তুমি ভুলে যাচ্ছো এখানে তোমার গুরুজনেরা উপস্থিত।”

আকরাম তালুকদার বললো।
আর্শিয়ান তোয়াক্কা করে না।বরং রাগ হচ্ছে। তবে নিজে কে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করলো।আজ কিছু দিন ধরে মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করছিলো।এখন যেন সেটা দিগুণ হলো।
কোনো দিকে না তাকিয়ে উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো আর্শিয়ান।
পেছন পেছন কচ্ছপের গতিতে তায়েফ তায়ুশ তাসফিয়া সাইফ গেলো।তাসরিফ চলে গিয়েছে দুপুরে।ও থাকলে নিশ্চয়ই খবর টা আর্শিয়ান এর কানে পৌঁছে যেতো।তাসফিয়া আয়াত এর সাথে ছিলো আজ সারাক্ষণ। তাই আষাঢ়’র কোনো খোঁজ পায় নি।তায়েফ তায়ুশ ছিলো বাচ্চাদের সাথে। সাইফ ছিলো কাজে।আষাঢ় কে কেউ দেখি নি।কিংবা খেয়াল করে নি।
আর্শিয়ান রুমে বসে।গম্ভীর হয়ে রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে। একে একে সবাই রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভেতরে যাওয়ার সাহস করতে পারলো না কেউ।
তাসফিয়া তাও ভয়ে ভয়ে ডাকলো ভাইকে,

-“ভাইয়া!”

-“রুমে আয়।”

আর্শিয়ান কিঞ্চিৎ সময় পরে আদেশ করল।আর অমনি সব গুলো হুমড়ি খেয়ে রুমে ঢুকে গেলো।
আর্শিয়ান সব ক’টা কে পর্যবেক্ষণ করলো।
চোখ গোলগোল করে দেখলো সময় নিয়ে। রয়েসয়ে গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“লাস্ট বার ওকে কে দেখেছিস?”

-“আমরা।খালামনির সাথে।
মেঝো মা কিছু বলছিলো।আষআপু কে কিছু নিয়ে জোর করছিলো। আপু বারবার না করছিলো।কিন্তু আমরা খেলছিলাম তখন সেইজন্য ভালো করে খেয়াল করি নি।”

তায়েফ এর জবানবন্দি শুনে আর্শিয়ান এর মস্তিষ্ক তৎক্ষনাৎ কিছু মনে করার চেষ্টা করলো।হ্যাঁ আষাঢ় এর খালা কেও আর্শিয়ান ফিরার পর আর দেখতে পায় নি।তবে কি?আর্শিয়ান আর কিছু ভাবে না।সেন্টার টেবিলে রাখা চাবির গোছা হাতে তুলে লম্বা লম্বা কদম ফেলে বেরিয়ে এলো।রাত এখন হয়তো এগারো টার আশেপাশে। আয়াত আর সাঈদ কে কিছুক্ষণ আগে বাসর ঘরে পাঠানো হয়েছে। সাঈদ রুমে এসে আয়াত কে চেঞ্জ করে আসার জন্য বলে।নিজে আগে বরাদ্দকৃত রুম হতে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসছে। আয়াত মাত্র লেহেঙ্গা হাতে ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসছে। মন টা বিশেষ ভালো না।বোন কে আজ এমন একটা দিনে সে কাছে পায় নি।তারউপর মা তাকে কোথায় পাঠিয়েছে সেটাও কেউ জানে না। আয়াত ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর সাঈদ খাবার প্লেট হাতে যেই না খাবারে হাত দিবে তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।সাঈদ ভ্রু কুঁচকালো।ভাবলো হয়তো আবার এসছে কেউ বিরক্ত করতে। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই।আষাঢ়’র জন্য আয়াত এর মন খারাপ।সাঈদ খাবার প্লেট দড়াম করে টেবিলে রেখে দরজা খুলতে গেলো।যাওয়ার আগে অবশ্য মনে মনে ঠিক করলো দরজা খুলেই কয়েকটা গালি দিবে বিচ্ছুগুলো কে। আয়াতও পেছন পেছন এলো।কিন্তু আর্শিয়ান কে দেখে বিচলিত হলো।আয়াত এগিয়ে এসে জিগ্যেস করলো,

-“ভাইয়া ওর খোঁজ,,,

-“আয়াত খালামনি এখন সিলেট কোথায় থাকে?”

আয়াত এর কথা সম্পূর্ণ না শুনে আগে আগে নিজে গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো।
আয়াত অবশ্য অবাক হলো।তবে আর কিছু বলার সাহস জোগাতে পারে না।
তৎক্ষনাৎ সাঈদ এর থেকে ফোন নিয়ে আর্শিয়ান এর হোয়াটসঅ্যাপে লোকেশ পাঠিয়ে দিলো।
আর্শিয়ান ততক্ষণে নেমে গিয়েছে দোতলা থেকে।

——

আলতাফ তালুকদার বিছানায় শুয়ে আছে। সারাদিন বড্ড দখল গিয়েছে।শরীর টা খুব একটা ভালো নয় সাথে মন টা বড্ড খারাপ। মেয়ে দু’টো কে কত টা ভালোবাসে আলতাফ তালুকদার সেটা আর কেউ না জানুক শিউলি বেগম ঠিক জানে।তারপরও কি করে তিনি এমন কিছু করলো ভেবে পাচ্ছে না আলতাফ তালুকদার।
শিউলি বেগম এখনো রুমে আসে নি।হয়তো কিছু সময় এর মধ্যে চলে আসবে।
আলতাফ তালুকদার কোনো ভাবে রাজি ছিলো না আষাঢ় কে ওর খালার সাথে পাঠানো নিয়ে।রাজি ছিলো না বললে ভুল হবে। তিনি রাজি ছিলো তবে এখন পাঠাতে নয়।কিন্তু শিউলি বেগম শুনলো না।বাড়িতে অবশ্য কেউ জানে না। শুধু বড়রা মিলে এমন টা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর্শিয়ান এ বাড়ির বড়ো ছেলে।বয়স তার অনেক টা হয়েছে।আর্শিয়ান এর বয়সে তফাৎ আষাঢ় অনেক ছোট।
আলতাফ তালুকদার এর ভাবনার মাঝেই রুমে শিউলি বেগম প্রবেশ করলো।
এসেই বিছানায় স্বামীর পাশে বসলেন।রুম অন্ধকার।আলতাফ তালুকদার শুয়ে আছে।শিউলি বেগম মিনিট দুই এক বসে রইলো।আলতাফ তালুকদারও অপেক্ষা করলো স্ত্রীর মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য। কিন্তু শিউলি বেগম কিছু না বলেই হঠাৎ করে স্বামীর বুকে মাথা রাখলো।আলতাফ তালুকদার আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো।
শিউলি বেগম ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।অপরাধী কণ্ঠে বলতে লাগলো,

-“আমি একদম ভালো মা হতে পারি নি।খারাপ স্ত্রী খারাপ মা ঠিকই হয়েছি।কিন্তু খারাপ জা হতে পারবো না। বড়ো ভাবির কত শখ আর্শিয়ান কে নিয়ে। আমাদের আষাঢ় কে দিয়ে সে-সব কি করে পূর্ণ করবে ভাবি?”

-“ভাবি তোমায় কিছু বলেছে?”

-“নাহ।
কিন্তু আমার সাথে কতশত গল্প করেছে আর্শিয়ান এর বউ কেমন হবে কিভাবে চলতে হবে। কিন্তু আমাদের আষাঢ়?কিছুই নেই ওর মাঝে।ভাবির কল্পনা করা পুত্রবধূ আর আমাদের আষাঢ়’র আকাশপাতাল পার্থক্য। তাছাড়া বয়সে কত ছোট।এতো বড়ো বাড়ির বড়ো বউ হয়ে সবদিক সামলাতে পারবে না।বয়স কম। কিছু দিন দূরে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আলতাফ তালুকদার স্ত্রীর কথা শুনলো মন দিয়ে।মাথায় হাত বুলিয়ে হঠাৎ করে মুচকি হাসলো।তবে শিউলি বেগম সেটা দেখতে পেলো না। আলতাফ তালুকদার হঠাৎ বলে উঠলো,

-“আষাঢ় ছোট। আর্শিয়ান কিন্তু নয়।”

——–

বৃষ্টি মাথায় আর্শিয়ান রাত তিন টা বাজে এসে পৌঁছালো সিলেট।বাড়ির ঠিকানা সে পেয়েছে।গেইটের কাছে গাড়ি থামিয়ে দারোয়ান কে বারকয়েক ডাকলো।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলো না।
আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামলো।বেশ কিছু সময় ডাকার পর একজন বেরিয়ে এলো ছাতা হাতে গেইট খুলে।আর্শিয়ান তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়ার কথা জিগ্যেস করলো।
দারোয়ান জানালো তারা বিয়েতে গিয়েছে পরশু।এরপর আর ফিরে নি।আর্শিয়ান অবাক হলো।লাল চোখ জোড়া মূহুর্তে হতাশাগ্রস্ত হলো।বুঝতে সময় লাগলো না এখানে আষাঢ় কে নিয়ে আসে নি।মস্তিষ্ক সচেতন হলো।বৃষ্টির মধ্যেও চোখ জোড়া জ্বলে উঠলো।গাড়িতে বসে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো।অনেকটা পথ যাওয়ার পর একটা ব্রিজের ওপর গাড়ি থামালো।
গাড়ি থেকে নামার আগে একটা সিগারেট ধরালো। সেটা তিন চার বার ঠোঁটের ভাঁজে চেপে ধরে ধোঁয়া ছাড়লো।এটা সচারাচর খাওয়া হয় না।খুব কম মাসে কিংবা তার-ও বেশি সময় এটা কে সে ছুঁয়েও দেখে না।এটা খাওয়া শুরু করেছিলো যখন বিদেশ থেকে ফিরলো।আষাঢ় কে নিয়ে মনে মনে ভাবতো।আষাঢ়’র মতিগতি যখন বুঝতে পারে নি।নিজে কে নিজে মনে মনে শান্তনা দিতো।আষাঢ় তার বোন।কিন্তু মন মানতো না।মাথায় প্রচুর পেইন হতো এসব মন মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে সে তিক্ত বিরক্ত। এরমধ্যে আষাঢ়’র উষ্কানি।প্রায় পাগল প্রায় অবস্থা। তখন টেনশনে একদিন খেয়ে ছিলো।তবে কোনো বিশেষ লাভ হয় নি।সেই ঘুরেফিরে আষাঢ় তার মাথায় ঘুরতে থাকতো।আজ অনেকগুলো খেয়েছে।আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামার পর বৃষ্টির মাঝে সেটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে গাড়ি ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো।
চোখ জোরা লাল হয় আছে। যে-কেউ দেখলে এই মূহুর্তে ভয় পাবে পুরুষ টাকে।
বৃষ্টির পানিতে কিছু চুল কপাল বেয়ে পানি গুলো ঠোঁট ছুয়ে থুতনিতে জমে টপটপ করে নিচে পরছে।আর্শিয়ান দুই হাতে মুখ ডাকলো।হঠাৎ গাড়িতে রাখা ফোন টা বেজে উঠল। আর্শিয়ান দ্রুত ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কিছু শোনার পর মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।কিছু না বলে নিঃশব্দে ফোন কেটে বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

-“চব্বিশ ঘন্টা হওয়ার আগে আমি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো আষাঢ় মাস।অপেক্ষা কর।জানি তো ঘুমাস নি।অপেক্ষার প্রহর তবে এখন থেকে গুনতে শুরু কর কাল রাতে তুই মাহমুদ আর্শিয়ান তালুকদার এর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে এই এই বুকে এইখান টায় নিশ্চিন্তে ঘুমবি গড প্রমিস।”

#চলবে…..

আমার প্রেয়সী পর্ব-১৪

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ়?”

আষাঢ় কিছু মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে না হেঁসে কথা বলছে। পাশে কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। স্টেজে বর বউ কে হলুদ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বড়ো মানুষ এর তেমন ধ্যান নেই। তারউপর বক্সে গান বাজচ্ছে।তাই হঠাৎ এভাবে কে ডাকলো আষাঢ় অনুমান করতে পারে না। তবে কণ্ঠ শোনে খুব চিরপরিচিত মনে হচ্ছে।আবছা আলোয়ে অদূরে আর্শিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে।সাদা পাঞ্জাবিতে মানুষ টাকে একটু বেশি সুদর্শন দেখাচ্ছে কি?সুদর্শন দেখাচ্ছে কি আর্শিয়ান ভাই তো সব সময় সুদর্শন।
আষাঢ় মনে মনে কথা গুলো বিড়বিড় করে আর্শিয়ান এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই পাশে নজর পরে মেজাজ বিগড়ে গেলো।ওর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে গুলো আর্শিয়ান ভাই এর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।অবশ্য শুধু তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে রীতিমতে আষাঢ়’র আর্শিয়ান ভাই কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আষাঢ়’র ফ্রেন্ড নাদিয়াও আছে এরমধ্যে। মেয়ে টা আর্শিয়ান ভাই পছন্দ করে। শুধু পছন্দ নয়।যাকে বলে একদম মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা।তবে আর্শিয়ান ভাই আষাঢ়’র কে ভালোবাসে জানার পর থেকে একদম বদলে গেছে।আষাঢ় নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে দ্রুত পা চালিয়ে আর্শিয়ান এর কাছে চলে এলো।মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলে উঠলো,

-“ডেকেছেন আমায়?”

-“আমার সাথে আয়।”

ওর হাত ধরে আর্শিয়ান বাড়ির ভেতর এলো।সোজা ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে সেখানে প্লেটে খাবার নিলো।তারপর আবার আষাঢ়’র হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আষাঢ়’র রুমে চলে এলো।নিচে কিছু প্রতিবেশী বসে আছে। তারা অবশ্য আর্শিয়ান এর এমন কাণ্ডে একটু অবাক হলো।আবার কেউ কেউ ফুসুরফুসুর করতে লাগলো।তবে সে-সব আর্শিয়ান পাত্তা দেওয়ার সময় নেই।এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে আষাঢ় এখনো খাবার খায় নি।একে একে সবাই খাবার খেয়ে নিয়েছে। মেয়ে টা আজ একটু বেশি লাগামহীন চলাফেরা করছে।শিউলি বেগম ভীষণ ব্যাস্ত।তবে কাজের ফাঁকে আষাঢ় কে বেশ কয়েকবার বলেও খাওয়াতে পারে নি।
আর্শিয়ান রুমে এসে আষাঢ় কে বিছানায় বসিয়ে খাবার প্লেট হাতে দিলো।আষাঢ় ঘোরে আছে। আর্শিয়ান এর কণ্ঠ শোনে ঘোর কাটলো।

-“ফিনিশ ইট আষাঢ়।
আর হ্যাঁ খাবার শেষ আর বেরুবি না রুম থেকে। রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়বি।”

আষাঢ় কি বলবে খোঁজে পেলো না। আর্শিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও আবার ফিরে এলো।আষাঢ় কে একপলক পর্যবেক্ষণ করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।মেয়ে টা লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী পড়ে আছে। গায়ে বেলিফুলের অল্পস্বল্প সাজ।দেখতে দারুণ মায়াবী লাগছে।এই প্রথম আষাঢ় শাড়ী পড়েছে।দেখলে একবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। সেইজন্যই তো এখন পর্যন্ত তো একবারও ভালো করে মেয়ে টাকে দেখে নি।যদি সেদিন রাতের মতো আবার কোনো ভুল করে ফেলে।তবে মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করে আজ কিছু দিন ধরে। মনে হয় কিছু হারিয়ে যাচ্ছে আর্শিয়ান খোঁজে পাচ্ছে না নয়তো সে নিজে হারিয়ে যাচ্ছে।আষাঢ়’র এইচএসসি ফাইনাল এক্সাম আর দু’মাস পর।আর্শিয়ান ভেবে নিয়েছে এক্সাম শেষ হলেই তার আষাঢ় মাস কে সে নিজের করে নিবে।একদম নিজের।আর্শিয়ান কথা গুলো ভেবেই
ঠোঁটের উপর এক হাত রেখে বললো,

-“শাড়ী পড়তে বারণ করে ছিলাম।
আর পড়বি না।”

অতঃপর দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো।আষাঢ় তখনো অবুঝ চোখে তাকিয়ে আর্শিয়ান ভাই এর যাওয়ার পথে।
আষাঢ় বুঝতে পারছে না মানুষ টা আজ কিছু দিন ধরে কেন এতো এলোমেলো থাকছে।বড্ড চিন্তিত দেখায় মানুষ টাকে।

——

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ আয়াত রুমে এসে শাওয়ার নিলো।মেহদি লাগিয়েছিলো সেই সন্ধ্যায়। কিন্তু হাত গুলো এখনো কেমন ঝিমঝিম করছে।আয়াত হাতে একটু নারকেল তেল লাগালো।চুল আঁচড়াতে সময় লাগলো কিছু টা।ঝটপট চুল আঁচড়ে মোটা একটা বিনুনি করে নিলো।চুল খুব বেশি বড়ো নয় আয়াত এর।কোমড় সমান।চুল বড়ো আষাঢ়’র।আয়াত এর থেকে দিগুণ লম্বা আষাঢ়’র চুল।আষাঢ় কখনো চুল কাটে না।আর্শিয়ান ভাইয়ের লম্বা চুল পছন্দ। শর্মিলা বেগম এর চুল অনেক বড়ো আর্শিয়ান মায়ের চুল আঁচড়ে দেয়।যত্ন করে তেল লাগিয়ে দিতো আগে।বাড়ির মেয়েরা বড়ো হয়েছে পর থেকে আর্শিয়ান সে-সব আর করে না।শর্মিলা বেগম এর কাছ থেকে শুনেছে আয়াত। যদিও আয়াত এর কিছু কিছু মনে আছে।
তবে পুরোপুরি নয়।সেক্ষেত্রে আষাঢ়’র সে-সব মনে না থাকারই কথা।
আয়াত এর খালা এসেছে। আয়াত এর মামার বাড়ির আত্মীয় বলতে এই খালাই আছে। বর্তমানে তিনি সিলেট থাকে।স্বামী বিদেশ থাকে। আয়াত এর নানা নানি কিংবা মামা আর কেউ নেই। সেই খালার এক মেয়ে আছে। বয়স এগারো। আয়াত এর রুমে ঘুমিয়েছে মেয়ে টা।
আয়াত লাইট অফ করে শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই কেউ দরজা খুলে রুমে এলো।আয়াত চমকালো।এতোক্ষণ ঘুমে চোখ খুলে রাখা কষ্টসাধ্য হচ্ছিল। আর এখন ভয়ে আতংকে ঘুম সব পালিয়েছে।
আয়াত মুখ ফুটে কিছু বলবে তার আগেই অন্ধকারে একটা দানবীয় হাত ওর মুখ চেপে ধরলো। টেনে নিয়ে গেলো ব্যালকনির দিকে।সেখানে একটা লাইট জ্বলছে। আয়াত হাতের মালিক কে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছে। আর এখন দেখার পর চোখ কপালে।সাঈদ ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“নো ঘুম আয়াত বেবি।
চলো আজ সারারাত আমার সাথে গল্প করবে।কাম কাম।”

নিজে নিচে বসে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে আয়াত কে কাছে আসতে ইশারা করে।
আয়াত অসহায় চোখে তাকালো।কোনো একদিন প্রেম চলাকালীন এরকম বলেছিলো বিয়ের আগের রাতে সারা রাত জেগে গল্প করবে দু’জন। কে জানতো এই পুরুষ সেই কথা এখনো মনে রেখে দিয়ে আজ সত্যি সত্যি গল্প করার জন্য চলে আসবে!আয়াত চেয়েও কিছু বলতে পারলো না।

—-

-“বিয়েতে তুমি থাকবে না তাসরিফ ভাই?”

তাসফিয়ার প্রশ্নে তাসরিফ মলিন হাসলো।বোনের একটা বড্ড শখ ছিলো তাসরিফ এর।কিন্তু তায়েফ তায়ুশ হলো।এতে অবশ্য কোনো সমস্যা ছিলো না।আয়াত, আষাঢ় কে নিজের বোনের চেয়ে কম ভালোবাসে না।শুধু কেনো জানি তাসফিয়া কে ওর বোন ভাবতে পারে নি কখনো।বোনের বিয়েতে থাকার ইচ্ছে থাকলে উপায় নেই।যদিও আকরাম তালুকদার বিয়ের পর পুরোদমে চাকরির জন্য চেষ্টা করতে বলেছিলো।কিন্তু তাসরিফ? সে পরশু থেকে চাকরির জন্য দরখাস্ত করে যাচ্ছে।এরমধ্যে একটা ভালো কোম্পানিতে শনিবারে ইন্টারভিউ এর জন্য ডেকেছে।কোম্পানি টা একটু দূরে। বাড়ি থেকে গিয়ে সকালে ইন্টারভিউ দেওয়া সম্ভব হবে না। এতো পথ জার্নি করে।সেইজন্য আজ সন্ধ্যায় চলে যাবে। সেখানে গিয়ে এক ফ্রেন্ড এর বাসায় থাকবে।কিন্তু বিয়েতে থাকবে সে।
এটা অবশ্য কাউ কে বলে নি।মাত্র একটা কাঁধ ব্যাগ কে কিছু কাপড় নিচ্ছিল তাসরিফ তখন তাসফিয়া রুমে এসে উপরোক্ত প্রশ্ন টা করলো।তাসরিফ প্রেয়সীর চোখে জল দেখে একদম বরফ থেকে গলে পানি হয়ে গেলো।এগিয়ে এসে তাসফিয়ার মুখ টা দুই হাতের আঁজল নিয়ে আদুরে কণ্ঠে জানালো,

-“আল্লাহ এই মেয়ে চোখে মুখের কি অবস্থা করেছে।
এই আমি একবারে চলে যাচ্ছি না।মাত্র তিন দিন এর জন্য যাচ্ছি।”

-“আর যদি চাকরি টা হয়ে যায় তাহলে তো সব সময় সেখানে থাকতে হবে।”

তাসফিয়া বললো।
তাসরিফ তাসফিয়ার চোখের জল মুছে দিলো।চুল গুলো ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বললো,

-“তখন তোকে সাথে নিয়ে যাব।”

-“তুমি আমাদের অফিসে জয়েন করো না।
এতো দূরে যাওয়ার কি দরকার তাসরিফ ভাই?”

-“ওখানে চাকরি করবো না। শুধু তোর হিটলার বাপকে বোঝাতে হবে তাসরিফ তালুকদার এর যোগ্যতা আছে।”

শেষ এর কথা টা মনে মনে বললো।তাসফিয়া আবার প্রশ্ন করলো,

-“তাহলে কেনো যাচ্ছেন?”

-“এমনি।”

তাসরিফ এর এমন গা-ছাড়া ভাব তাসফিয়ার অসহ্য লাগলো।মেয়ে টা কষ্টে কাল রাত থেকে ঘুমুতে পারে নি।হলুদের অনুষ্ঠান খুব বড়ো করে না হলেও যথেষ্ট ঝাঁক ঝমক পূর্ণ ছিলো।সবাই কতো আনন্দ করেছে। কিন্তু ও?মন টা সারাক্ষণ ছটফট করেছে।সুযোগ হয় নি কাল কথা বলার মতো। তাই তো সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে তাসরিফ এর রুমে চলে এসছে।কিন্তু এই পুরুষ টা?তার তো কোনো ভাবান্তর নেই।
তাসফিয়ার অভিমান হলো।কোনো কিছু না বলেই তাসরিফ এর রুম ত্যাগ করলো।
তাসরিফ মেয়ে টার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো।অভিমান করেছে প্রেয়সী।কোনো ব্যাপার না সে মানিয়ে নিবে।তার আগে নিজে কে প্রমাণ করতে হবে।

—–

বিয়ে বাড়ি মানে আনন্দ তেমন কাজের চাপ।আর্শিয়ান দম ফেলার ফুরসৎ নেই।বেচারা কাল থেকে আষাঢ় ছটফট করছে একপলক স্থীর ভাবে মানুষ টাকে মন ভরে দেখার জন্য। তৃষ্ণায় বুক চৌচির হয়ে আসছে।কাল রাতে হলুদের অনুষ্ঠান বেশ রাত করেই শেষ হয়েছে তাই সকালে অনেকে এখন ঘুম থেকে ওঠে নি।আষাঢ় ঘুম চোখে তাও আর্শিয়ান ভাই কে দেখার জন্য ঘুম নিয়ে ওঠে এসছে। নিচে এসে ফ্লাক্স থেকে চা নিয়ে খেলো।ঘুম কিছু টা কাটার পর ছুটলো স্টেজের দিকে।আর্শিয়ান আকরাম তালুকদার এর সাথে কথা বলছে। আষাঢ় কে দেখে ইশারা করে বোঝালো এখন বাহিরে যাবে। ফিরে এসে কথা বলবে।আষাঢ়’র মন টা খারাপ হলো নিমেষেই। তবে চারদিকে এতো মানুষের ভীড়ে সে কিছু করতে বা বলতে পারলো না আর্শিয়ান কে।বাধ্য হয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আর্শিয়ান আষাঢ়’র মুখ দেখে মেয়ে টার মনের কথা কিছু টা হলেও ঠাহর করতে পারে। তাই তো ভাবে ফিরে এসে ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিবে।আদৌও ফিরে এসে সব ঠিক করার জন্য মানুষ টাকে খোঁজে পাবে তো?

#চলবে…..