Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 101



স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-২৫+২৬+২৭

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২৫

ধোয়া ওঠা এক কাপ কফি সমেত অফিস রুমের জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে মেহরাব।জানালার ওপাশে ব্যাস্ত শহরের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে।সেদিক টা চেয়ে আনমনে ভাবছে অনেক কিছু।আর একটু পর পর কফিতে চুমুক দিচ্ছে।বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে,সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাই ঘুমোট ভ্যাপসা গরম দূর হয়ে একটু ঠান্ডা আবহাওয়া বইতে শুরু করেছে।কিছু ক্ষণের মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায়।
বৃষ্টি দেখতে দেখতে মেহরাবের বৃষ্টি নিয়ে অতিতের কিছু স্মৃতি মনে পর যায়।
মায়ার সাথে বৃষ্টি ভেজা একদিনের কথা ভেবে আনমনে হেসে ফেলে।সময়টা ভালোই ছিলো ইশ যদি সময়টা ধরে রাখা যেতো কতোই না ভালো হতো।

“আজ দু দিন হলো মায়া ওর গ্রামের বাড়ি গেছে।সে রাতে মেহরাব রাগ করে আরেক রুমে চলে গেলে মায়া বেশ কান্না কাটি করে।মনে মনে পাহাড় পরিমান অভিমান জমে।খুব সকালে মেহরাব রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।আর যাওয়ার সময় ড্রাইভার কে বলে যায় মায়া আর ওর পরিবারের সবাইকে গ্রামে পৌছে দেওয়ার জন্য।মেহরাব একদমই চায় না মায়া যাওয়ার সময় ও থাকুক।কেনোনা মেহরাব চায়নি মায়া এই মুহূর্তে ওর বাবার বাড়ি যাক।তা ছারা যে সব কথা ওকে মায়া শুনিয়েছে তাতে করে ওর না থাকাটাই ভালো।
সকালে সবাই রেডি হয়ে নেয়।সিতারা আর শায়লা মেহমানদের জন্য নাস্তা বানিয়ে দেয়।সবাই নাস্তা করলেও মায়া করতে চায় না।কিন্তু সিতারার জোড়াজুড়িতে একটু খেয়ে নেয়।মেহরাবের সাথে ওর যাই হোক না কেনো যাওয়ার সময় দু চোখ মেহরাব কে দেখতে চেয়েছে।সব রুমেই খুঁজেছে না পেয়ে বুঝতে পেরেছে মানুষটা ওর সামনে আসতে চায় না তাই আগেই বেরিয়ে পরেছে।এতে করে অভিমানের পাল্লাটা বেড়ে আরো দ্বিগুন হয়।যাওয়ার সময় সিতারা ওকে খুব করে বলে দিয়েছে বেশি দিন না থাকতে।মায়া তার কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলেনি।

সেদিন দেরি করে বাসায় ফিরে মেহরাব।ক্লান্ত দেহে শূন্য বাসায় মনটা কেমন হা হা কার করে ওঠে।সারাদিন কাজে মন দিতে পারেনি।আর এখন বাসায় এসে মনে হচ্ছে না ফিরলেই ভালো হতো।কিন্তু নিজের আপন ঠিকানা এখানে ওকে ফিরতে তো হবেই।দিন গিয়ে রাত চলে আসলো একটা বার মায়া মেহরাবের খোঁজ নেয়নি কিন্তু মেহরাব ঠিকই ওর কাছে না হোক পুষ্পের কাছে কল করে খোঁজ নিয়েছে।ভালো ভাবেই পৌছেছে ওরা।রুমে ডুকে চারপাশ চোখ বুলিয়ে কিছু একটা খুব করে মিস করছে।আজ যে দিক তাকায় সেদিকটাই খালি খালি লাগছে।গলার টাই টা খুলে বুকের কাছের কয়েকটা বোতাম খুলে ওভাবেই বসে রয়।মন চাচ্ছে এ ভাবেই বিছানায় গা এলিয়ে দিতে কিন্তু ফ্রেশ হওয়াটা জরুরী।
ফ্রেশ হয়ে সে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে যায় মেহরাব।”

ফিরোজের ডাকে মেহরাবের ভাবনার ছেদ ঘটে।হাতের কফি কাপটা টেবিলে রেখে দেয়

-কিছু বলবে ফিরোজ?

-বলতে চাই তো অনেক কিছু।

-বেশি কিছু বলতে যেও না কাজের কথা বলো।

বলতে চাওয়া কথাটা চেপে গিয়ে কাজের কথা বলতে শুরু করে ফিরোজ

-আগামী কাল গাজীপুরে একটা ফ্যাক্টরিতে ভিজিট করার কথা কি করবেন ?

-কনফার্ম করে দেও

-আর বিকেলের মিটিং ওটা কি করবো?

-ওটাও ফিক্সড করে দেও।

-বলছিলাম কি বড়োভাই একসাথে দুটো কাজ সারতে পারবেন?

-কেনো কি সমস্যা?পারবো না কেনো?আগে তো অনেক বার করেছি।

-আসলে বলছিলাম কি এই দুই দিন ধরে দেখছি আপনার মনটা ভালো নেই।আনমনে থাকেন আর কি কি যেনো ভাবেন।শরির খারাপ নাকি বড়োভাই? তা হলে সব কিছু ক্যানসেল করে দিয়ে অন্য একদিনের ডেট ফিক্সড করি?

-ফিরোজ আজকাল তুমি একটু বেশিই চিন্তা করছো।আমি ঠিক আছি আর কিছু ক্যানসেল করতে হবে না।এই মুহূর্তে ক্যানসেল করলে অনেক বড়ো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।এখন তুমি যাও।

ফিরোজ চলে যায় তবে মেহরাবের মন ভালো নেই এটা ও বেশ বুঝতে পারছে।কিন্তু মেহরাবের পেট থেকে সহজে কোনো কথা বের করতে পারবে না।যতোক্ষণ না নিজেই সবটা শেয়ার করবে।এ সব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ফিরোজ।মেহরাব মুখে কিছু না বললেও এতোদিনে ফিরোজ ওকে অনেকটাই চিনতে পেরেছে।ওর আনমনে ভাবনায় থাকা চেহারার পেছনে অবশ্য ই কিছু লুকিয়ে আছে যেটার উওর এক জনেরই জানা।আর সে হলো মায়া।হা ওকেই জিজ্ঞেস করতে হবে।দুজনের মধ্যে কিছু হলো কিনা।বড়োভাই এর এ রকম নিরবতা আর মনে মনে কষ্ট পাওয়াটা ফিরোজ একদমই সহ্য করতে পারছে না।

~~~~~

গ্রামের বাড়ি আসার পর থেকে মায়ার মনেও শান্তি নেই।মনে হচ্ছে ওর সব শান্তি শহরে রেখে আসছে।অথচ অভিমান আর এক রাশ রাগ ক্ষোভ নিয়েই চলে এসেছিলো।মনে মনে এটাও ঠিক করে নিয়েছে ঐ ইট পাথরে ঘেরা শহরে আর ফিরবে না।মেহরাব তো ওকে ভালোই বাসে না,ভালোবাসলে এমন খারাপ ব্যাবহার করতেই পারতো না।তা ছাড়া ওর সাথে যা হয়েছে এটার জন্য এখন অব্দি মনে মনে মেহরাব কেই দায়ী করে আসছে।এই তিনটা দিন কারো সাথে ভালো করে কথা বলা,খাওয়া দাওয়া,ঘুম কিছুই ঠিক ঠাক করছে না।আয়মন আর পুষ্প জোড় করেই করিয়েছে সবটা।কেউ তো আর ওর মনের খবর জানে না।সবাই ভাবছে দূর্ঘটনার জন্যই মন খারাপ থাকে তাই যতোটা পারছে বাবা মা বোন সব সময় সান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু পর পর রাএি জাগার কারনে মায়ার শরির দূর্বল হতে থাকে।পুষ্প কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলে না।অন্য দিকে মেহরাব কে পুষ্প এ সব কথা বললে ও তেমন কিছু বলে না।আবার মেহরাব আর মায়াকে কখনও কলে ও কথা বলতে দেখে না।মেহরাব ওর কাছ থেকেই খবরাখবর নেয়,তাই পুষ্প কিছু একটা আন্দাজ করে নেয়।ঘটনা টা কি হতে পারে।

**গাজীপুরের একটা ফ্যাক্টরিতে মেহরাব আর ফিরোজ এসেছে।এখানে ওদের অর্ডার কৃত মালে প্রস্তুতকরণ প্রসেস দেখছে।সব কিছুই ঠিক ঠাক হচ্ছে।ঘন্টা খানেক সেখানে থেকে ওরা আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়।আজ ভিষণ জ্যাম বেশ বিরক্ত লাগছে মেহরাবের।কি আর করার জ্যাম একটা নিত্য নৈমিওিক ব্যাপার।তাই বিরক্ত হলেও সহ্য করে নিতে হবে।অবশেষে জ্যাম পেরিয়ে সময় মতো মিটিং এর স্থানে পৌছে যায়।
মিটিং চলছে কিন্তু মেহরাব ঠিক ঠাক কিছু করতে বা বলতে পারছে না।কয়েক বার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছে।মনে হচ্ছে ও এখানে আর ওর মন অন্য খানে।বিদেশি বায়ারদের সাথে মাল এক্সপোর্ট এর ব্যাপারে চুক্তি বদ্ধ হওয়ার কথা।
ফিরোজ ওর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মেহরাব কে থামতে বলে।আজ আর মেহরাব ফিরোজকে থামায়নি।বরং চুপচাপ টেবিলে হাতের কনুই ঠেকিয়ে কপাল ডলতে থাকে।সে দিনের মতো ফিরোজ মিটিংয়ের সবটা সামলিয়ে বায়ারদের সাথে মিটিং শেষ করে।

মেহরাব কে আর একা ছাড়েনি ফিরোজ।বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায় তাই সঙ্গে করে বাসা পর্যন্ত আসে।মেহরাব রুমের দিকে পা বাড়াবে এমন সময় ফিরোজ ওকে থামায়

-বড়োভাই আপনার কি হয়েছে?

-কই কিছু না একটু শরির খারাপ লাগছিলো জাস্ট এটুকুই।

-মিথ্যে কেনো বলছেন?আর আপনি তো আমাকে বলেছিলেন অফিস বাদে সব খানে আমি আপনার ছোটো ভাই তাই এই টুকু তো জানার অধিকার আছে নাকি?

-অনেক রাত হয়েছে ফিরোজ বাসায় যাও কিছু জানতে চেওনা।

-কিন্তু আজ আমি সবটা না জেনে যাবো না আর যদি না জানতে পারি তা হলে আজকের পর থেকে এই ফিরোজ কে আর আপনি দেখতে পাবেন না বলে দিলাম।

ফিরোজের এমন কথায় মেহরাব একটু ঘাবড়ে যায়।চাইছে না ব্যাক্তিগতো ব্যাপার গুলো শেয়ার করতে।আবার না করেও পারছে না..অবশেষে ফিরোজ কে সবটা খুলে বলে।ফিরোজ শুনে মনে বেশ কষ্ট পায়।এই মানুষটার মনে এতো দুঃখ কষ্ট অথচ কাউকে বুঝতে দেয় না আর মায়ার প্রতিও ওর রাগ লাগে।আবার ভাবে সেও তো একটা বড়ো আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে।কিন্তু তাই বলে এ ভাবে ভাইকে দোষারোপ করে তার কথা উপেক্ষা করে চলে যাবে?এটা মায়া আপু একদমই ঠিক করেনি।
ওর ভাবনার মাঝেই মেহরাব বলে ওঠে

-সবটা তো শুনলে আর দেরি করো না বাসায় যাও।

-বড়োভাই আজ আমি আপনার সাথে থাকি?

-না ফিরোজ আন্টি বাসায় একা,এমনিতেই তার শরির ভালো নেই।ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি তোমাকে পৌছে দিবে।

ফিরোজ আর কথা বাড়ায় না চলে যায়।মেহরাব রুমে এসে প্রতিদিনের মতো ফ্রেশ হয়ে নেয়।সারা দিনের ব্যাস্ততার পর চোখের বিশ্রাম দরকার।কিন্তু চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।অনেকক্ষণ চুপ চাপ চোখ বন্ধ করে কপালে হাত রেখে শুয়ে থাকে।কিন্তু অস্থির মন রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেনো আরো অস্থিরতা বিরাজ করে।খুব করে কাছের মানুষটিকে কাছে পেতে মন চাইছে।ঠিক কবে মায়ার সাথে বিছানায় ঘনিষ্ট হয়েছে সেটা মনে করতে পারছে না।আম্মিজানের মৃত্যুর পর থেকে মেহরাব চেন্জ হয়ে গেছে।এতোটাই মানসিক কষ্ট পেয়েছিলো যে সংসার আর সংসারের বউ এ দুটো জিনিস কে উপেক্ষা করতো।বলতে গেলে ভবঘুরে হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো।

এখন বুঝতে পারছে মায়ার সাথে সত্যিই ও অন্যায় করেছে।কিন্তু যে মানুষটা ছোটো থেকে একটার পর একটা জীবনের মূল্যবান জিনিস হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আম্মিজানের আশ্রয়ে বড়ো হয়েছে।সেই মানুষটার মৃত্যুতে ওর অবস্থা এমনটা হওয়া কি স্বাভাবিক নয়..?
যদিও টয়ার সেদিনের বেশি বেশি বলাটা মেহরাব এর মনে প্রভাব বিস্তার করেছিলো।হা সে তার মায়াবিনীকে একটু নয় অনেকটাই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।আর ধীরে ধীরে মেহরাব আবার আগের মতো স্বাভাবিক হতে লাগছিলো।কিন্তু সেটা মায়ার চোখে পরেনি।হয়তো মায়া অন্য কিছুই ভেবে নিয়েছিলো।মেয়েরা বরাবরই একটু আবেগ প্রবন,সে হিসেব করলে মায়া একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে।তাইতো সেটার ফল স্বরুপ আজ দু জন দু প্রান্তে আছে।
শোয়া অবস্থায় ফোন হাতে নিয়ে গ্যালারির ছবি গুলো স্ক্রোল করতে থাকে।একে একে ওর নিজের হাতে তোলা মায়ার ছবি গুলো দেখতে থাকে।মায়ার অজান্তে অনেক ছবি মেহরাব তুলেছে।এ সব যদি মায়া দেখতো তবে অবাক হতো।আর ভাবতো

“কখনও তাকে ছবি করার মুডে দেখিনি তা হলে এতো ছবি কখন আর কিভাবে করলো?

ভারি নিঃশ্বাস ছেরে বিরবির করে বলতে থাকে মেহরাব

“আমার মনটা কেমন তা তুমি বুঝলে না প্রিয়।বরং কখনও বোঝার চেষ্টা করোনি।অথচ আমি জানতাম তুমি আমাকে বোঝো।আমার ইশারা আমার চোখ দেখেই বুঝতে পারো আমি কি চাই।মায়াবিনী কেনো আমাকে এ ভাবে রেখে চলে গেছো? এই কয়েকটা রাত খুব কষ্টে কেটেছে তোমাকে ছাড়া।হা মানছি কষ্ট দিয়েছি তাই বলে এই শাস্তি দিবা।আর একটু সময় নিলে কি এমন ক্ষতি হতো বলো?”

কিছু একটা ভেবে বিছানা ছেরে আবার উঠে পরে।আলমারি খুলে ভেতরের সেই ড্রয়ার টি খুলতে থাকে।ব্যাস্ততায় অনেকদিন ধরে মেহরাব এই ড্রয়ারটা খোলে নি।বা খোলার প্রোয়োজন পরেনি।ড্রয়ার খুলে মায়ার ব্যাবহৃত রাখা জিনিস গুলো দেখতে থাকে।তার পাশেই একটা খামের দিকে চোখ পরে।এটা কি ভেবে হাতে নিয়ে দেখে খামের ওপর কোনো একটা ক্লিনিকের নাম লেখা।

“সেদিন মায়া ড্রয়ারে রিপোর্ট রাখার জন্য খুললে ওর জিনিস গুলো দেখতে পায়।তারপরই মেহরাবের ফোনে টয়ার কল আসলে মায়া রিসিভ করে।আর কথা বলতে বলতে বেখেয়ালি ভাবে রিপোর্ট টি ড্রয়ারে রেখেই ড্রয়ার লক করে দিয়েছিলো।কথা বলা শেষে আলমারিটা ও লক করে দেয়।ঐ সময় মায়া খামের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলো।“

মেহরাব কৌতুহল বশত খামটি খুলে পড়ে দেখে এটা মায়ার প্রেগনেন্সি রিপোর্ট।বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে ওঠে।হার্ট বিট বেড়ে যায়।চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস নিতে থাকে।এই সেই রিপোর্ট?ইশ যদি আরো আগেই ড্রয়ার খুলতো তা হলে হয়তো জীবনে এতো বড়ো ক্ষতি টা হতো না।হাত কাঁপতে থাকে ওর,একটা সময় কাগজ টা হাত থেকে পরে যায়।মেহরাব আলমারি ঘেষে ফ্লোরে বসে পরে।চোখ থেকে অজস্র ধারায় টপ টপ করে পানি পরছে।

কিছু সময়ের জন্য হলেও অনুভব করছে

“ও বাবা হতো।ছোট্ট একটা বেবি পৃথিবীর আলো দেখতো।হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটা সময় ওর সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতো।মীর ম্যানশন আরো পূর্ণতা পেতো।একটা সময় ও বাবা ডাকটা শুনতো।ওর জীবনের সকল দুঃখ কষ্টরা বিদায় নিতো।কিন্তু ওর ভাগ্যে যে এ সব নেই।তাই এটা শোনার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।প্রিয় মানুষ গুলো ওকে রেখে দূরে পাড়ি জমিয়েছে।কাগজ টা হাতে তুলে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে কান্না করে।”

“আচ্ছা আপনার জানা মতে পুরুষ মানুষ কি এমনটা করে?বা করতে পারে? হয়তো সব পুরুষ এক নয়।কিছু পুরুষ জীবনের সব কিছু হারিয়ে আবার নতুন করে জীবন শুরু করে।একটা সময় কিন্তু বউ বাচ্চা সংসার এটাই হয় তার জীবনের সুখী সুন্দর আর সুস্থ্যভাবে বাচার একমাএ অবলম্বন।কিন্তু ভেবে দেখবেন এদের মধ্যে কারো কিছু হলে সেই পুরুষটা যতোই কঠোর আর পাথর মনের হোক না কেনো,একটা সময় প্রিয় মানুষ বা জিনিসের সামান্য ক্ষতি টুকু সহজে সহ্য করতে পারে না।”

মোট কথা হারানোর ভয়টা তার ওপর ঝেকে বসে।

একটা সময় নিজেকে সংবরন করে নেয় মেহরাব।কাগজটির দিকে চেয়ে ভাবে এটা একটা সময় মুল্যবান কাগজ থাকলেও এখন আর এই কাগজ টার মুল্য নেই।তাই এটাকে ছিড়ে কয়েক টুকরো করে বাস্কেটে ফেলে দেয়।এটা আবার কখনও চোখে পরলে একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।এ জন্য এটা না রাখাই ভালো।

“সুখের স্মৃতি গুলো মানুষকে আনন্দ দেয় কিন্তু কষ্টের স্মৃতি গুলো মানুষকে পেছনের কথা গুলো মনে করিয়ে শুধু পো’ড়ায়।”

চলবে…….

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২৬

নিজের স্বামীকে বেশি বেশি আদর ভালোবাসা দিয়ে আচলে বাইন্দা রাখতে হয়।না হলে সে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।

আয়েশার মুখে এমন কথা শুনে মায়ার বুকটা ধক করে ওঠে।

মায়ার বান্ধবী আয়েশার ও বিয়ে হয়ে গেছে।ভালো ঘরেই বিয়ে হইছে।বর কোম্পানী চাকুরী করে।আয়েশা বাবার বাড়িতে কয়দিনের জন্য বেড়াতে আসলে মায়ার আসার খবর টাও শুনে।বিকেল বেলা আয়েশা মায়াদের বাড়িতে আসে।দু জন দুজনাকে পেয়ে অনেক গল্প গুজবে মেতে ওঠে।কিন্তু মায়ার মনে কি চলছে সেটা একদমই বুঝতে দেয় না আয়েশা কে।তবে মায়ার এমন একটা এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে আয়েশা খুব আফসোস করে।তারপর আবার ওকে অনেক বুঝায় শান্তনা দেয়।কথায় কথায় মায়া ওর বরের কথা জিজ্ঞেস করেলে আয়েশা খুব লজ্জা স্বরে বলে “ওর বর ওকে অনেক ভালোবাসে,ওকে ছারা নাকি কিছু বুঝে না।আর আয়েশা ও তাই বরের কথা ছাড়া উঠবস করে না।ওর মতে বর যা যা পছন্দ করে আর যেমনে থাকতে কয় তেমনি থাকতে হয় না হলে তার মন ঘুরে যেতে সময় লাগবে না।এ জন্য বরকে বেশি বেশি ভালো বাসা দিয়ে নিজের করে রাখতে হয়।
বলা যায় আয়েশা এক রকম বর পা’গল বউ।এ রকম আরো অনেক কথাই আয়েশা মায়াকে শোনায়।

মায়া শুধু নিরবে শুনে যায়।ভালো লাগে ওর বান্ধবী সুখে আছে এটা জেনে।কিন্তু ও কি সুখে আছে?মনে মনে এ সব ভাবতে থাকে।মেহরাব কে তো ও অনেক ভালোবেসেছে এখনও বাসে।আর মেহরাব সেও তো বাসে তা হলে ওদের মধ্যে এখন কেনো এতো দূরত্ব?মায়ার অন্যমনস্ক ভাব দেখে আয়েশা ওকে ডাকে।মায়ার ধ্যান ভাঙ্গলে আয়েশা জিজ্ঞেস করে

-তোর আর ভাইয়া সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে?

মায়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তবুও মুখের হাসি বজায় রেখে বললো

-খুব ভালো রে আর সে আমাকে অনেক অনেক ভালোবাসে,অনেক যত্নে রাখে।কোনো সময় চোখের আড়াল হতে দেয় না।এই যে আসার আগেও নিষেধ করেছিলো আসতে তারপরও তার কথা উপেক্ষা করে চলে আসলাম।

কথা গুলো শুনে আয়েশা খুব খুশি হয়।শুধু তাই না আয়েশা মায়াকে আরো কিছু টিপস্ শিখিয়ে দেয়।

-শোন স্বামীর চোখে নিজেকে সুন্দর রাখার জন্য সব সময় চেষ্টা করতে হবে।একা বেশি দিন স্বামীকে ছাড়া থাকা যাবে না।পুরুষ মানুষ বলা তো যায় না বউ কে যতোই বেশি ভালোবাসুক না কেনো বউ বেশি দিন চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হতে কতক্ষণ।আর তখন আরেক জনকে ভালো লাগতে শুরু করে দিবে।

এ কথা শুনে মায়ার এবার দম বের হয়ে যাবার মতো অবস্থা।কোনো মতে নিজেকে ঠিক রাখে।দুজনের গল্প গুজব শেষ হতেই আয়েশা চলে যায়।কিন্তু মায়ার মনে অন্য কিছু চলছে।এই কয়দিনে এ সব ভুলেও ভাবেনি।বরং মনে মনে রাগ পুষে ভেবেছে সে একা আছে যা মন চায় তাই করুক ও আর মেহরাবের কথা ভাববে না।কিন্তু এখন কতো কি ভেবে ফেলছে।তা হলে মেহরাব কি ওকে ভুলে গেছে?যদি ভালোবাসতো অন্তত একবার হলেও কল করতো।সরি বলতো না হয় আগের বারের মতো চলে আসতে পারতো।কিন্তু কোনোটাই করেনি মেহরাব।তারমানে সে আমাকে ভুলে গেছে।এ সব ভেবে নিরবে কান্না করে চোখের পানিতে বালিশ ভিজাচ্ছে।
এমন সময় পুষ্প মায়াকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকে।পুষ্পের কথা শুনে চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।

-বুবু এই সন্ধ্যা বেলা শুয়ে আছো শরির খারাপ নাকি কও তো?

-না আমি ঠিক আছি বোন।

-আচ্ছা বুবু তোমার আর ভাইয়ার মধ্যে কিছু হইছে নাকি কও তো?

-কই না তো কি হইবো?

-কিন্তু আমার মনে হইতাছে,কারন এই কয়েক দিনে তোমার সাথে ভাইয়ার কথা কইতে দেখি নাই।আবার বেশির ভাগ সময়ই তোমায় মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখেছি তাই জিজ্ঞেস করলাম।

-সে ব্যাস্ত মানুষ তাই কথা কম হয় আর সব সময় কি সবাইকে দেখিয়ে কথা বলতে হবে নাকি?

-আচ্ছা টিক আছে সবই মানলাম কিন্তু তুমি কান্না করছো কেনো?

মায়া এবার কি বলবে নিজেকে সামলে নিলেও পুষ্প ঠিক ধরে ফেলেছে।

-কান্না করবো কেনো আর এখন যা তো ভালো লাগছে না।

-হুম যাইতাছি আর তোমার যে কি হইছে সেটাও আমি দেখতেছি বলেই পুষ্প ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

মায়া এবার মেহরাব কে নিয়ে গভির ভাবে ভাবতে থাকে।মন চাচ্ছে এখনই শহরে ছুটে যেতে।রাগ করে চলে আসলেও ওর মনটা মীর ম্যানসনে পরে আছে।একা একা কি করছে মানুষটা মূলত এই কয়দিন ওর শোকে নাওয়া খাওয়া ঘুম কিছুই ঠিক ঠাক করতে পারেনি।যতোই ভেবেছে মেহরাব কে মনে করবে না ততোই বেশি করে মনে পরছে।কিন্তু আজ আয়েশার কথা গুলো বারবার মনের দরজায় উকি মারছে।মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠছে।মেহরাব যদি ওকে ছেরে অন্য কাউকে জীবন সঙ্গী করে নেয়?তা হলে ওর কি হবে?না ও এ সব একদমই সহ্য করতে পারবে না।এ সব ভাবতেই কান্নায় গলা জড়িয়ে আসছে।মোবাইল টা হাতে নিয়ে মেহরাব কে কয়েকবার কল করতে গিয়ে ও সাহোস হয়নি কল করার।অবশেষে চোখ নাক খিচে কলটা করেই বসে।কল ডুকতেই ওপাশ থেকে রিসিভ করে মেহরাব।হ্যালো হ্যালো কন্ঠ স্বর শুনে মায়া পাথরের ন্যায় জমে যায়।কতো দিন পর মানুষটার কন্ঠ শুনতে পেরেছে।মনে অন্যরকম ভালো লাগা অনুভূত হচ্ছে।হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে ওর শ্বাস আটকে যাচ্ছে,মেহরাবের কথার প্রেক্ষিতে ও কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।কিছু বলতে না পেরে নিজের অপরাগতা প্রকাশ করে একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়।এমন টা হওয়াতে সাথে সাথে নিজের মুখ নিজেই চেপে রেখে কল কেটে দেয়।
এর পরে মায়া অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করে ওপর প্রান্ত থেকে কোনো কল আসে কিনা তার জন্য।কিন্তু কল আর আসে না।এবার মায়া বুঝতে পারে মেহরাব এই কয়দিনে সত্যিই পরিবর্তন হয়ে গেছে।তা হলে কি সত্যিই সে ওকে ভুলে গেছে?
এবার নাকের পানি চোখের পানি এক করে খাটের ওপর বসে হাটু জড়িয়ে অতি সাবধানে কান্না করতে থাকে।
কান্নার আওয়াজ সবাই শুনলে আবার নানা ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তাই।ও চায় না ওদের এই ব্যাপার টা কেউ জানুক।নিজের মধ্যেই সবটা লুকিয়ে রেখে কষ্ট পাবে তাও কাউকে জানিয়ে তাদের চিন্তায় ফেলতে চায় না।

রাতে খাবারের আগে কয়েক বার কাশেম মিয়া আয়মন ওকে ডেকে যায়।কিন্তু ও খাবে না জানায়,কাশেম মিয়া মেয়ের মন খারাপ ভেবে পুষ্প পাঠায়।পুষ্প কয়েকবার ডাক দিলে মায়া এবার রেগে পুষ্প কে ধমক দেয়।কি আর করার পুষ্প ও ফিরে আসে বোনের ধমক খেয়ে।না খেয়েই থাকে পেটে ক্ষুদা থাকা সত্বেও না খেয়ে আছে শুধু মাএ মেহরাবের ওপর রাগ করে।পাশে জগে থাকা পানি গ্লাসে ঢেলে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।কিছুটা ভালো লাগলেও রাত তো বড়ো যদি আবার ক্ষিদে পায়? তা হলে তো ঘুমও হবে না।আবার চিন্তা করে এক রাত মা খেয়ে থাকলে কিছুই হবে না ভেবেই শুয়ে পরে।এইটা সেইটা ভাবতে ভাবতে গভির ঘুমে তলিয়ে যায় মায়া।

আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে গলার কাছে ঘনো ঘনো নিশ্বাস ফেলার শব্দে মায়ার ঘুম ভাঙ্গে।কিন্তু ও নড়তে পারছে না।প্রথমে ভাবছে স্বপ্ন দেখছে কিন্তু না চোখের পলক কয়েক বার ফেলেছে শিওর হয় ও ঘুমে নেই সজাগ আছে।রুমের হলুদ বাতির সাথে লাগানো ড্রিম লাইটি জ্বলছে।কিন্তু ও তো সব লাইট বন্ধ করেই শুয়ে পরেছিলো।এখন নড়াচড়া করতে পারছে না কেনো?ঘুম ঘুম চোখে প্রথমে রুমের কিছুই দেখতে না পারলেও আস্তে আস্তে কিছুটা দেখতে পায়।মনে হচ্ছে কেউ ওকে জোড়ে চেপে ধরে রেখেছে কিন্তু বুঝতে পারছে না।এবার অজানা ভয় মনে উকি দিয়েছে।তার মানে ওকে কি বোবা ভূতে ধরেছে?আগে এমনটা ওর সাথে হয়েছে অনেকবার।দোয়া দূরুদ পড়লে ছেরে দিতো কিন্তু আজ মনে মনে কয়েকবার পড়া শেষ করলেও ছাড়ছে না।আর সহ্য করতে না পেরে যেই না চিৎকার করতে যাবে অমনি শক্তপোক্ত একটা হাতের তালু দিয়ে ওর মুখ আটকে দেয়।মায়া বুঝতে পারে এটা ভূত না মানুষের হাত।
কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে থাকে

-উফ রোমান্টিক মুহূর্ত টা এ ভাবে ভেস্তে দিও না তো।আমাকে আমার কাজ করতে দাও।

কথাটা শুনে মায়া স্তব্ধ হয়ে গেছে।বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু কন্ঠস্বর শুনেই বুকের মধ্যে হাতুরি পেটা হচ্ছে।এর আগে কোনো কিছু না বুঝতে পারলেও এখন পুরোপুরি নিশ্চিত মানুষটা আর কেউ নয় এ তো মেহরাব।মায়া ওর মাথার চুল গাল সব কিছু স্পর্শ করতে থাকে।বুঝতে পারে চুল গুলো বাবরি টাইপের নেই আগের স্টাইলে কাটা হয়েছে।মুখেও দাড়ি নেই ক্লিন সেভ করা হয়েছে।এবার মানুষটা ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছে।অনেক দিন পর সেই আগের পরিচিতো গায়ের গন্ধ টা নাকে পেয়ে মন ভরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে মায়া।আপন মনে চোখ থেকে পানি পরতে থাকে।এটা দুঃখের নয় সুখের কান্না।আকস্মিক এমন কিছু পেলে খুশিতেও চোখের পানি ঝরে।মেহরাব বুঝতে পারছে মায়া নিরবে কান্না করছে।কান্না ভেজা চোখে চুমু খেয়ে থুতনি ধরে নিজের দিকে ফেরায়।অল্প আলোতে বুঝতে পারে মায়ার ঠোঁট কাঁপছে।
মোহমায়া ঘোরলাগা দৃষ্টিতে ধীর কন্ঠে মেহরাব বলতে থাকে “ইশ আজ মনে হয় সারা দিন ধরে আমার মায়াবিনী টা আমার শোকে কান্না করে কাটিয়েছে।সব দুঃখ কষ্ট এই রাতেই ঘুচে দিতে চাই বলেই মায়ার অধরে মেহরাবের অধরদ্বয় মিলিত করে।মায়া ওকে খামচে ধরে।প্রিয় মানুষটার এমন স্পর্শ অনেকদিন পায়না।ব্যাকুল হয়ে ছিলো মন।শুধু মাএ একটু ভালোবাসার পরশ পাওয়ার জন্য।মিনিট খানেক পরেই মেহরাব মায়ার অধর ছেড়ে দেয়।মায়া লজ্জায় ওর দিকে চাইতে পারছে না।মেহরাব উঠে হুট করেই মায়াকে পাজা কোলে নেয়।আচমকা এমন টা হওয়াতে মায়া একটু চমকে যায়।শার্টের কলার আকড়ে ধরে।মেহরাব ওকে নিয়ে দরজার সামনে এসে দাড়ায়।চোখ দিয়ে ইশারা করে দরজার খিলটা খোলার জন্য।মায়া বুঝতে পারছে না এই লোকটার মনে কি চলছে?ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে “কেনো?মেহরাব এবার একটু বিরক্ত ভাব নিয়ে বলে
-আরে আগে বের হতে দাও না বলে বুঝবে কেমনে বাইরে গিয়ে তোমাকে নিয়ে করবো।

মায়া দরজার খিল টা খুলে দিলে মেহরাব ওকে আস্তে ধীরে বের হয়।এবার মায়া মেহরাবের গলা জড়িয়ে ধরে ওর দিকে চেয়ে থাকে।আজকের রাতটা ও বরাবরের মতো চাঁদনী রাত।বাইরে জোস্নার আলোতে সামনা সামনি হলে সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়।অনেক দিন বাদে মায়া আবার আগের মেহরাব কে দেখছে।মনে মনে ভাবছে ইশ কি হ্যান্ডসাম লাগছে আমার বর টা কে।মেহরাব ওর পানে দৃষ্টিরত দেখে বলে উঠলো

-এ ভাবে গভীর নজরে দেখো না মায়াবিনী তা হলে রুমে না নিয়ে এখানের কোনো ঝোপঝাড়ে নিয়ে পরের কাজটা আগেই সেরে নিবো কিন্তু।

বলেই মুচকি হাসতে লাগে।মায়ার কথার মর্মটা বুঝতে একটু দেরি হলে এক হাতের সাহায্যে ওর বুকে আলতো কি’ল মা রে।মেহরাব একটু দুষ্টুমি স্বরে বলতে লাগে

-আরে কি করছো এমনিতেই এই বুকটা হাজারো ব্যাথায় জর্জরিত আর তার ওপর তুমি যদি ব্যাথা দাও তা হলে তো আমি শেষ।
কথাটা বলতেই মায়া ওর হাত দিয়ে মেহরাবের মুখ বন্ধ করে দেয়।মাথা নাড়িয়ে বুঝায় এমন কথা যেনো আর না বলে।মেহরাব ওকে নিয়ে মাদের বাড়ির সামনে সেই খাল পাড়ের কাঁঠ দিয়ে পাটাতন করা ঘাটলাতে আসে।ওকে কোল থেকে নামায়।প্রথম সিঁড়ির ওপর ওকে পা ঝুলিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিচের সিঁড়িতে মেহরাব নামে।
-এখানে কেনো আনলেন বলেন তো?

-প্রেম করতে শান্তি মতো এ যাবত প্রেমই করতে পারিনি তাই চুপি চুপি নিয়ে এলাম প্রেমের মজা কেমন সেটা বুঝতে।

-ইশ কি সব যে বলেন।আর এতো রাতে কেউ দেখলে কে কি ভাববে বলেন তো?

-কে কি ভাববে?আমার কবুল বলা বউকে নিয়ে আমি দিন রাত ভোররাত কখন কি করবো সেটা আমার একান্ত নিজের ব্যাপার।যাই হোক সময় নষ্ট করতে চাই না বউ।
বলেই প্যান্টের পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সেখান থেকে কিছু একটা বের করে ওর চোখের সামনে ধরে।
মায়া দেখে বুঝতে পারে এটা একটা পায়েল।
-পায়েল
-হুম
এবার মেহরাব পাটাতনের ওপর এক হাটু গেড়ে আরেক হাটু উঁচু করে বসে।ওর এক পা মেহরাবের এক পায়ের ওপর রাখে।ওর এমন কাজে মায়া একটু অপ্রস্তুত হয়।কিন্তু এতে মেহরাবের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।পা থেকে প্লাজোটা ধরি কিছুটা উপরে উঠিয়ে নেয়।ফর্সা ধবধবে পা দৃশ্যমান।মায়ার হার্ট বিট আবার বাড়তে থাকে।মেহরাব অতি সন্তুপনে পায়েলটি ওর পায়ে পরিয়ে দেয়।বেশ মানিয়েছে।যদিও চাঁদের আলোতে আর কতোটুকু দৃশ্যমান তাও ওর মনে হচ্ছে এই ফর্সা পায়ে পায়েলটি জ্বলজ্বল করছে।আকস্মিক মেহরাব ওর পায়েল পরিহিতো অংশে ঠোঁট ছুয়ে দেয়।মায়া এবার আর সহ্য করতে পারে না।মানুষটার এমন পরশে মেহরাবের চুল মুট করে চেপে ধরে।হাপসাতে থাকে ও মেহরাব ওর পা ছেরে ওকে স্বাভাবিক ভাবে বসিয়ে দেয়।উপরের সিড়িতে ওঠে ওর গা ঘেষে বসে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ লুকায়।

-এতো কষ্ট কেনো দিলে?এতোটাও না দিলে পারতে।জানো প্রতিটা দিন আর রাতের প্রহর গুলো বড্ড বেসামাল আর কষ্টে পার করেছি।
এমন কথায় মায়া চুপ থাকে মন চাচ্ছে ও কিছু মেহরাব কে শুনাতে পারতো তা হলে আগের রাগ গুলো মিটতো।কিন্তু ও তা বলতে চায় না।সত্যি লোকটা একা ছিলো কতো কষ্টই না পেয়েছে।বরং যা ভুল সব ওরই হইছে।আজ আর কোনো অভিযোগ নয় বরং নতুন করে আবার সবটা শুরু করবে।মেহরাব কে আর কষ্ট দিয়ে নিজেও কষ্ট পেতে চায় না।
মায়া ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে

-চলুন এবার ঘরে যাওয়া যাক

মেহরাব আবার ওকে কোলো তুলে নেয়।

-আমার বউটার ওজন দেখছি অনেক কমে গেছে।ভেরি ব্যাড,আজ থেকে ওজন বাড়ানোর প্রসেসিং শুরু করে দিতে হবে।

মায়া লজ্জায় আবার ওর বুকে মুখ লুকায়।
আজ আর নিজেকে একবিন্দু দূরে সরিয়ে রাখবে না।বিলিন হতে চায় মায়া মেহরাবের মাঝে।রাত বাড়তেই বিনিময় হতে থাকে দুজন মানব মানবীর প্রতি জমানো আদর ভালোবাসা গুলো।একটা সময় দুজন দুজনার মাঝে হারিয়ে যায়।রাত জাগা ঝি ঝি পোকারাও একটা সময় নিরব নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

চলবে…….

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২৭

খুব সকালে মায়ার ঘুম ভাঙ্গে।কিন্তু ঘন্টা পার হলেও মেহরাব ওকে কিছুতেই উঠতে দেয় না।ওর চওড়া বুকের সাথে মায়ার পিঠ ঠেকানো অবস্থাতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।মায়া মনে মনে ভাবছে বাড়ির কেউ তো জানে না মেহরাব আসছে।আবার দেরি করে বের হয়ে সকাল সকাল শাওয়ার নিলে কারোর না কারোর চোখে তো পরবে সেটা ভেবে কেমন লজ্জা লাগছে।কি করবে ও ভেবে পাচ্ছে না।অবশেষে আর জোড়াজুড়ি না করে স্থির হয়ে রয়।
মনে মনে ভাবে কে কি বলবে ওর নিজের স্বামীই তো আসছে।রাতে কেউ না দেখলেও বের হলে দিনের বেলা তো দেখবেই ভয় কিসের?
এ দিকে মেহরাব আবার ওর সাথে দুষ্টুমি করা শুরু করে দেয়।জড়িয়ে ধরেই গলায় ঘারে চুলে অধর ছোয়াতে থাকে।

বাহির থেকে দরজায় কড়া নারার আওয়াজে মেহরাব একটু বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে
-আরে শ্বশুর বাড়ি এসেও শান্তি নেই।বউকে ঠিকঠাক আদর করতে পারছি না।

মায়া ওর কথা শুনে ওর বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে ঘুরে বলে

-ছাড়ুন তো রাতে অনেক জ্বা’লিয়েছেন এখন উঠতে দিন।ফ্রেশ হতে হবে।তা ছাড়া আপনি আসছেন এটা তো জানাতে হবে নাকি।

-জানাতে হবে না এমনিতেই জেনে যাবে আসো একটু স্বামী সেবা করো।না হলে কিন্তু পাপ হবে।
ওর কথা শুনে মায়া ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পরে আর বলে

-হইছে রাত ভর স্বামী সেবা করে অনেক সওয়াব অর্জন করেছি আর না।
মেহরাব আর আটকায় না।ঠিক ঠাক শুয়ে পরে।মায়া গায়ে কাপড় জড়িয়ে দরজা খুলে দেখে পুষ্প দাঁড়িয়ে আছে।মায়ার দিকে চেয়ে একটু রহস্যময় ভাবে ওকে চেয়ে চেয়ে দেখে।ওর এমন চাওনি দেখে মায়ার ভ্রু কুচকে যায়।

-বুবু তোমার এই অবস্থা ক্যান?রাতে ঘুম হয় নাই?

-কি অবস্থা আবার আর ঘুম হবে না কেনো?

-নাহ এমনি বললাম তা দরজা খুলতে দেরি হলো যে?কি করছিলে বুবু এতোক্ষণ?

-কিছু না শুয়ে ছিলাম।

-ওহ আমি আরো ভাবলাম কি না কি।

-আজকাল একটু বেশি ভাবোস তুই।আচ্ছা শোন না একটা কথা কইতাম

-কি কথা বুবু?

-তোর ভাইয়া এসেছে

-আরে কি কও কখন আইছে?জানাও নি কেনো বুবু?

-এই তো অনেক রাতে,এ জন্য কাউকে ডাকিনি।বোন আমার শোন না বাজান আর মাকে একটু বল না সে এসেছে।বুঝিস তো খাবার দাবারের একটু ব্যাবস্থা করা লাগবে তো।

-হুম তা তো লাগবে।তয় আমি মায়রে কিছু কইতাম না বাজান রে গিয়া কইতাছি।

-আচ্ছা যা একজনকে বললেই হলো।
পুষ্প চলে যায়।মায়া ফ্রেশ হয়ে নেয়।মেহরাব এখন ঘুমাচ্ছে।মায়ার আর রুমে থাকতে মন চাচ্ছে না।নিশব্দে বের হয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়।আয়মন রান্না করছে ওকে দেখে কাছে ডেকে বসায়।অনেক কিছুর আয়োজন করছে।এ সব দেখে মায়া অবাক।কিছুক্ষণ আগে পুষ্প কে বলেছিলো মাকে বলতে মেহরাবের কথা।কিন্তু ও নিশ্চিত এই টুকু সময়ে পুষ্প মাকে কিছু বলেনি আর বললেও এতো আয়োজন করা টাও সম্ভব নয়।

-জামাই কি উঠেছে

-না মা ওঠেনি,তোমার জামাই এসেছে তুমি জানো?

-বা রে জানবো না কেনো?

-ওহ আচ্ছা
এটুকু বলে নিশ্চুপ হয়ে যায় মায়া।মায়ের সাথে রান্নার কাজে সাহায্যে করতে থাকে।একটা সময় মেহরাব ওঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।জামাইয়ের জন্য সকালের নাস্তায় অনেক পদ রান্না হয়েছে।সবাই একসাথে খাওয়ার জন্য বসেছে।কাশেম মিয়া পাশ থেকে জামাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে

-রাতে ভালো করে খাও নি এখন কিন্তু পেট ভরে খাবে।

কথাটা শুনে মায়া অবাক হয় কি বললো ওর বাবা?রাতে ও খাইছে তার মানে মেহরাব বেশি রাতে না তার ও আগে আসছে।এবার ও পুষ্পের দিকে চায়।পুষ্প মায়ার দিকে চেয়ে মিটি মিটি হাসে।পুষ্প ফিস ফিস করে বলে

-বুবু তোমারে কিন্তু রাতে অনেক বার ডাকছি তুমি নিজেই আসোনি এতে কিন্তু আমাগো কারোর কোনো দোষ নাই।

মায়া ভেবে দেখে হা সত্যিই সবাই ডেকেছিলো কিন্তু ও নিজেই বের হয়নি।খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসে মেহরাব।মায়া ওর সামনে এসেই বলতে লাগে

-আপনি কাল সন্ধ্যার পরেই আসছেন তা হলে আমাকে কেনো জানান নি?

-আগে যদি জানতাম আমার কথা শুনে তুমি এমন অস্থির হবে তা হলে তো সোজা তোমার কাছেই আসতাম।বাই দ্যা ওয়ে “দেরি করে কাছে আসাতে কি আদরের কমতি হয়েছে? তা হলে আসো যে টুকু সময় নষ্ট হয়েছে আদর দিয়ে সেটা পুষিয়ে দিবো।

ওর কথা শুনে মায়ার কান গরম হয়ে ওঠে।কি সব বলছে মুখে লাগাম ছারা কথা লেগে থাকে।

-কি হলো চুপ আছো যে তা হলে কি ধরে নিবো নিরবতা সম্মতির লক্ষণ”

মায়া এবার শব্দ করেই বলে ফেলে

-এই না না একদম এ সব কিছু করবেন না।

মেহরাব একটু শব্দ করেই হাসে।মায়ার হাত ধরে ওর কোলে বসিয়ে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।আর বলে

-গতো কাল তোমার কল পেয়ে শুধু মাএ কান্নার একটু শব্দ কানে ভেসে আসতেই নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি সোনা।আমি এই একটা কলের অপেক্ষায় ছিলাম।আমার বিগত দিন গুলো তোমাকে ছাড়া কি ভাবে কেটেছে তুমি জানো না মায়া।প্রতিটা মুহূর্ত নিজেকে নিঃস্ব লেগেছে।অফিস সামলিয়ে বাড়ি ফিরলে পরের সময় গুলো আর পার হতে চাইতো না শুধু মাএ তোমার স্মৃতি তোমার ছবি এ সব দেখেই সময়টা পার করতাম।তোমার পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখো রোজ সময় করে তোমার খবর নিয়েছি।আমার বিশ্বাস আমার মতো তোমার ও একই অবস্থা ছিলো।

কথা গুলো শুনে আপন মনে মায়ার চোখ থেকে পানি পরতে লাগে।ও কি ভাবে পারলো এমন একটা মানুষকে কষ্ট দিতে?হিসেব করে দেখলে যা যা হয়েছে তার বেশির ভাগ দোষ ওর নিজেরই।

-আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আমি ভুল করেছি।

মেহরাব ওর হাতের তালুতে অধর ছোয়ায়।

-নাহ তুমি কোনো ভুল করোনি এটা আমাদের ভাগ্য।তা ছাড়া আমারও ভুল ছিলো।সে সব কথা ছাড়ো আমি পিছনের কথা মনে করতে চাই না মায়া।অতিত জিনিস টা আমার কাছে বরাবরই ভয়ংকর কিছু মনে হয়।যেটার কথা ভাবলে আমি ঠিক থাকতে পারিনা।এতো টুকু রিকোয়েস্ট আমাকে কষ্ট দিও না।আমি তোমাকে আমার সর্বস্ব দিয়ে হলেও খুশি করার চেষ্টা করবো মায়া।

মাথা নেড়ে মায়া ওর কথার সম্মতি জানায়।দু দিন শ্বশুর বাড়ি কাটিয়ে মেহরাব মায়া কে নিয়ে কলিমউল্লাহ মামুর বাড়ি আসে।সেখান থেকে প্রথম বারের মতো মায়াকে ওর নামু বাড়ি নিয়ে আসে।সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখে মায়া।খুব ভালো লাগে ওর।অনেক জায়গা নিয়ে এতো সুন্দর বাড়ি অথচ থাকার মতো মানুষ নেই।
এ দিকে এতোদিনে মেহরাবের প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়ে গেছে।দুস্থ্যহীনদের আশ্রয় আবাস স্থল তৈরি করা শেষ।এমনকি সেখানে অনেক গুলো পরিবার থাকতে শুরু করেছে।ওরা ওখানে গিয়ে সবার সাথে দেখা করে।মেহরাবের এমন কাজে ওখানের সবাই খুশি।মন ভরে দোয়া করে দেয় ওদেরকে।এর পরে ওরা শহরে চলে আসে।

~~~~~

দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে যায় দুজনের। দিন কাল আগের থেকে খুব ভালো যাচ্ছে ওদের।এর মাঝে মেহরাব মায়াকে নিয়ে ইউরোপের কয়েকটা দেশে গিয়ে ট্যুর দিয়ে এসেছে।মেহরাব আবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে যায়।শতো ব্যাস্ততার মাঝেও মায়ার জন্য সব সময় মেহরাব আলাদা সময় বের করে নেয়।প্রতি সপ্তাহে মায়াকে নিয়ে লং ড্রাইভে বের হয়।মোট কথা মায়াকে সবসময় মেহরাব আনন্দে রাখার চেষ্টা করে।তা হলেই যেনো মেহরাবের শান্তি।

কয়েকদিন পরেই ওদের জীবনে একটা ভালো দিন আসতেছে।হুম বিয়ের এক বছর পূর্ণ হতে চলছে।আর এই দিনে মেহরাব ভেবে রেখেছে বাসায় বড়ো করে একটা অনুষ্ঠান করবে।বিয়ে উপলক্ষ্যে নিজের বাড়িতে তেমন বড়ো আয়োজন করতে পারেনি তাই ও এটার কথা চিন্তা করে।মায়া ও মেহরাবের পরিকল্পনা শুনে খুশি।
আজ মায়ার বাড়ির সবাই এসেছে।মায়া বাবা মা বোনকে পেয়ে খুব খুশিতে আছে।
এদিকে বাসার সব আয়েজনের অনেকাংশের দায়িত্বটা ফিরোজ পায়।আর দুদিন পর অনুষ্ঠান তাই কি কি করা লাগবে সে জন্য মীর ম্যানসনে আসে।এসেই প্রথমে একটা ঝটকা খায়।বাসায় এসে পুষ্প কে দেখেই আগের থেমে যাওয়া প্রেম টা আবার নতুন করে জেগে ওঠে।বড়ো ভাইয়ের ভয়ে এতোদিন চুপ ছিলো কিন্তু আর চুপ থাকবে না।সুযোগ মতো এই খুশির দিনেই মনের কথাটা বলে দিতে চায়।তার আগে পুষ্প কে বোঝাতে হবে ও কতোটা ভালোবাসে পুষ্পকে।কিন্তু পুষ্পের সাথে কথা বলতে গেলেই মনের সব কথা গরমিল হয়ে যায়।ইনিয়ে বিনিয়ে এই নিয়ে কয়েক বার বলতে গিয়েও বলতে পারেনি।ওর এমন কান্ডে পুষ্প বিরক্ত হয়।বেচারা ফিরোজ মনে মনে নিজের মনের ওপর ও বিরক্ত।

“সামান্য কথাটা এই পুঁচকে মেয়েটাকে বলতে পারছে না?ও কেমন পুরুষ মানুষ?আসলে ও পুরুষ মানুষ ঠিকই কিন্তু দেখবেন প্রিয় মানুষটার কাছে গেলে সাহসী পুরুষটাও ভিতু দূর্বল হয়ে যায়।হয়ত এটা অতিরিক্ত ভালেবাসার ফলে হয়ে থাকে”

চলবে….

(লেখার ভুলত্রুটি মার্জনীয়)

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-২২+২৩+২৪

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২২

মোবাইলের তীব্র রিংটোনে আনমনে ভাবনা চিন্তার রেশ কাটে মায়ার।মেহরাব কল রিসিভ করছে না।অবশেষে মায়া কলটি রিসিভ করে।আননোন নাম্বার প্রথমে চিনতে না পারলেও পরক্ষণে বুঝতে পারে এটা টয়া।বিয়ের পর পরই ওরা স্বামী স্ত্রী আবার বিদেশে পাড়ি জমায়।প্রথমে টয়া মায়ার ওপর একটু অভিমান দেখায় বিয়েতে না থাকার জন্য।পরে মায়া ওকে বুঝালে শান্ত হয়। সেটা না হয় ঠিক আছে কিন্তু মেহরাবের কি হয়েছে ওটা জিজ্ঞেস করে।আজ অনেকদিন হলো ওকে কল দিলে ধরে না আবার ধরলেও একটু কথা বলে রেখে দেয়।এ সব মায়ার কাছে টয়া জানতে চায়।

মায়া ওর কথা শুনে আস্তে আস্তে সব কিছু বলতে শুরু করে।আফিয়ার মৃত্যুর সংবাদ ওর জানা নেই মায়ার মুখ থেকে এ কথা শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছে টয়া।আর মেহরাবের কথা শুনে প্রথমে খারাপ লাগলেও মায়ার সাথে মেহরাব যা করছে এ সব শুনে ওর ওপর রেগে যায়।কেনো এ সব করছে?শোক পালন করে তাই বলে এ ভাবে?
মায়া সব কিছু বলার পর চুপ করে থাকে।টয়া বুঝতে পারে মায়ার মনের অবস্থা।মেহরাব কে কাছে পেলে দু গালে দুটো ঠাস করে লাগিয়ে দিতো।মায়াকে শান্তনা দেয় টয়া।কিন্তু মায়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।ফুপিয়ে কান্না করে দেয়।টয়া অনেক বলে কয়ে ওকে শান্ত করে আর বলে

“সব ঠিক হয়ে যাবে মায়া চিন্তা করো না।তুমি জানো না ও তোমাকে কতোটা ভালোবাসে”

মায়া ওর জীবনের বড়ো সুখবরটা ও দিয়ে দেয় টয়া কে।কিন্তু ও যে এখনই জানাতে চায় না মেহরাব সেটাও বলে।টয়া শুনে অনেক খুশি হয়।আর বলে ওর সাধ্যমতো চেষ্টা করবে মেহরাব কে বুঝানোর।মায়া যেনো একদমই মন খারাপ না করে।এ সময় হাসিখুশি থাকতে হবে।মায়া ওর কথায় একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মায়া কল কেটে দেয়।মোবাইলটা আগের জায়গায় রেখে মায়া আলমারি লক করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

অনেকক্ষণ ধরে ফিরোজ ড্রইংরুমে অপেক্ষা করছে মেহরাবের জন্য।মায়া কিছুক্ষণ ওর সাথে কথা বলে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।ফিরোজ মায়াকে দেখে বুঝতে পারে ওর মন ভালো নেই।আর মেহরাবের বর্তমান মনের অবস্থার কথা ওর সবটাই জানা।তাই মায়ার মনের অবস্থাটা কেমন হতে পারে সেটা ওকে দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মেহরাব ড্রইংরুমে আসে।ফিরোজ ওকে দেখে বড়ো করে একটা সালাম দেয়।মেহরাব আস্তে করে সালামের জবাব দেয়।হাতে করে আনা ল্যাপটপ টা অন করে বসে।ফিরোজ কিছু বলতে চায় মেহরাব বুঝতে পারে

-যা বলার বলে ফেলো

-বলছিলাম কি বড়ো ভাই রুমের আয়নাটা কি আছে নাকি ভেঙ্গে গেছে?

ওর এমন কথা শুনে মেহরাব ওর দিকে এক নজর চেয়ে আবার ল্যাপটপে মন দেয়।

-যা বলার সরাসরি বলো আর আয়না ঠিক আছে।

-তা হলে তো চেহারা দেখার কথা।বড়োভাই আগের সেই আপনি আর এখনকার আপনিতে অনেক তফাৎ

-এ সব বলার জন্য আসছো?

ফিরোজের এবার মনে মনে রাগ লাগে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না।

-নাহ একদমই না আর আজকে তো আপনার সাথে নয় আপুর সাথে দেখা করতে এসেছি।

মেহরাব আর কিছু বলে না।মায়াকে প্রথম প্রথম ফিরোজ ভাবি ডাকলেও এখন আর ডাকে না।অনেকদিন আগ থেকেই আপু ডাকা শুরু করেছে।মায়া ও অমত করেনি বরং ওর ও ভালো লাগে এই আপু ডাকটি।একমাএ বোনের মুখ থেকে বুবু ডাকটা শুনতো।এখানে এসে শুধু ভাবি ডাকটাই শুনেছে।যবে থেকে ফিরোজ মায়াকে আপু ডেকেছিলো মায়া বেশ খুশি হয়।নিজের ভাই নেই তো কি হয়েছে আজ থেকে ফিরোজ ওর ভাইয়ের মতো।
অনেকদিন পর মেহরাবের পছন্দের খাবার গুলো রান্না করা হয়েছে।তাই মায়া ফিরেজকে দুপুরের খাবারের জন্য ডেকেছে। আফিয়ার মৃত্যুর পর থেকে মেহরাব বলতে গেলে ডিপলি ডিপ্রেশন এ চলে যায়।এ সময়ে অফিস বাসা সবটাই ফিরোজ সামলিয়েছে।মেহরাব ওকে একটু আধটু শাসনে রাখে আর ফিরোজ ও সেটা জানে আর এটাও জানে মেহরাব ওকে কতোটা ভালোবাসে।তাই তো মেহরাবের সবকিছু ওর সর্বোচ্চ টা দিয়ে আগলে রাখে।বড়োভাইর ক্ষতি ও ঘুনাক্ষরেও হতে দিবে না।

দুপুরের খাবার শেষ করে ফিরোজ চলে যায়।আর মেহরাব ওর রুমে যায়।এখন মেহরাব বেশিক্ষণ সময়ই ওর রুমেই কাটায়।এ সময়টা মায়া কাছে আসে না।কপালে হাত রেখে ডিভানে চুপচাপ শুয়ে আছে মেহরাব।তখনই মোবাইলে কল আসে।রিসিভ করলে ওপাশের কন্ঠ স্বর শুনে শোয়া থেকে ওঠে বসে।অনেকক্ষণ ধরে কথা হয় এর মধ্যে ও বেশির ভাগ সময় শুধু শুনেছে।আর ওপর প্রান্তের মানুষটি শুধু বলেছে।কথা গুলো শুনে একটা সময় দীর্ঘ শ্বাস ছেরে কল কেটে দেয়।ভালো লাগছে না কিছু,মনে হচ্ছে মাথাটা ভিষণ ধরেছে।ঔষধ খেতে পারলে ভালো হতো।উঠে মেডিসিনের বক্স ঘেটে পেইন কিলার না পেয়ে বসে।নিজে নিজে কপালের সাথে আঙ্গুল ঘসতে থাকে।একটা সময় চোখ বন্ধ করে আবার শুয়ে পরে।আজ আর বের হবে না।ভালো লাগছে না শরির টা।
অনেকক্ষণ বাদে কারোর হাতের স্পর্শ পায় বুঝতে পারে কে সে।তাই আর চোখ খোলে না ও।মাথার চুল গুলো আস্তে করে টেনে দিয়ে কপালে বাম লাগিয়ে ম্যাসাজ করে দেয় মায়া।তখন আড়াল থেকে ওর অবস্থা দেখে নিয়েছিলো।অস্থির লাগছিলো ওর কাছে মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে বলে।মেডিসিন নিতে পারেনি তো কি হয়েছে একটু সেবা করতে তো দোষ নাই।এখন ও মেহরাব ট্রমার মধ্যে আছে একটা সময় ঠিক আগের মতো সব ঠিক হয়ে যাবে।এ সব ভাবতে থাকে মায়া টুপ করে এক ফোটা নোনা জল বাম চোখের কার্নিশ বেয়ে পরে।

~~~~~~

মায়া আজ অনেক খুশিতে আছে।টয়ার পক্ষ থেকে ওদের দুজনকে একটা ট্রিট দেওয়া হচ্ছে।ঢাকার বাইরে ঘুরতে যাওয়ার।যদিও টয়া চেয়েছিলে দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবার জন্য কিন্তু মেহরাব না করে দেয়।তা ছারা এই মুহূর্তে দেশের বাইরে যাবার মতো মন মানসিকতা ওর নেই।বহু কষ্টে দেশের মধ্যেই কোথাও যাওয়ার জন্য রাজি করানো হয়।মায়া ওর লাগেজ গুছিয়ে নিয়েছে সাথে মেহরাবের টাও।অনেকদিন পর মেহরাব ওর সাথে একটু স্বাভাবিক আচরন করেছে।একটু হলেও ওর কাছে এটাই অনেক।

“গতোকাল রাতে মেহরাব শুয়ে ছিলো মায়া রুমে এসে নিজের কিছু দরকারী জিনিস নিয়ে চলে যেতে লাগলে হাতে টান লাগে।পেছন ফিরে দেখে মেহরাব ওর হাত ধরে আছে।এ অবস্থা দেখে হার্ট বিট বেড়ে যায় মায়ার।আজ পনেরো দিনের বেশি হবে,এতো দিনে একটা বার ওকে ভালো করে ছুয়ে দেখেনি মেহরাব।মায়া নিরব কিছু বলে না মেহরাব ওকে টেনে সামনে দাঁড় করায়।

-কোথায় যাচ্ছো?

মায়া একটু দম ছেরে বলে

-মায়ের রুমে যাচ্ছি

মেহরাব মায়ার গালে হাত ছুয়ে দেয় মায়া শিওরে ওঠে।স্থির হয়ে যায়।মেহরাব মৃদু স্বরে বলে

-এখানেই থাকো কোথাও যেও না।

মায়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিলে মেহরাব ওকে ছেরে দেয়।মায়া বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পরে।মেহরাব দরজা লক করে এসে মায়ার পাশে শুয়ে পরে।রুমের ড্রিম লাইট জ্বলছে।মায়া ওর ওপর পাশে কাত হয়ে আছে তাই ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না।মেহরাব ওর একদম কাছে গিয়ে পেটের ওপর হাত রেখে পুরোপুরি দূরত্ব ঘুচে দেয়।মায়া সজাগ তবুও নড়াচড়া করে না।এবার মেহরাব ওর চুল গুলো সরিয়ে গলায় মুখ গুজে দেয়।মায়ার মনে আনন্দ সুখ জাগে আবার পরক্ষণে রাগ লাগে।খুব করে কিছু শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু জোড় গলায় কিছুই বলতে পারছে না।মন চাচ্ছে বিগত দিনের কষ্টের কান্না গুলো চিৎকার দিয়ে করতে।এখন মেহরাব কে বলতে পারতো

“কেনো এতো গুলো দিন আমাকে কষ্ট দিয়েছেন?কি দোষ করেছি? আমি তো আপনারই ভালোবাসার কাঙ্গাল।আপনি জানেন না?আপনার অবহেলা আমাকে কতো টা পো”ড়ায়?

এ সব ভেবে মনে হচ্ছে গলা জড়িয়ে আসছে।বহু কষ্টে নিজেকে কান্না থেকে বিরত রেখেছে।কিন্তু চোখের অবাধ্য জল ঠিকই গরিয়ে পরতে থাকে।একটা সময় খেয়াল করে মেহরাব ওভাবেই ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেছে।“

“ওদের ট্যুর চট্টগ্রামের” মূলত মেহরাবের অফিসিয়াল কিছু কাজের ডিল ওখানে হওয়ার কথা।তাই এক কাজে দু কাজ করতে পারবে ভেবে এখানে যাওয়ার প্লান করে।পরদিন মেহরাব মায়াকে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে বলে।চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা শুনে মায়া তো মহা খুশি।মনে মনে ভেবে নেয় যাক সারপ্রাইজ টা ওখানেই দিয়ে দিবো।

বড়ো বড়ো চুল আর দাড়ি কিছুটা কেটে নিজেকে একটু ফিট করে নেয় মেহরাব।মায়া ওকে আড়চোখে দেখছে অনেকদিন পর এভাবে দেখে ওর মনে অন্যরকম ভালো লাগে।যদিও ভালোবাসার মানুষ গুলো যে ভাবে যে বেশেই থাকুক না কেনো সবসময় একই রকম ভালোলাগা কাজ করে।সব কিছু গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়।
মেহরাবের ইচ্ছে ছিলো বিমানে যাওয়ার কিন্তু মায়া সেটা শুনে সাহোস করে বলে ওর খুব ইচ্ছা ট্রেনে চড়ার।আগে এই ইচ্ছা পূর্ণ করেই বিমানে উঠবে।মেহরাব এর অনিচ্ছা সত্বেও ফিরোজ কে দিয়ে ট্রেনের টিকেট করায়।ফিরোজ টিকেট বুক করে দেয়।স্টেশন পর্যন্ত ফিরোজ ওদের এগিয়ে দিয়ে যায়।

মহানগর এক্সপ্রেসের দুপুরের ট্রেনে ওদের যাএা শুরু হয়। স্নিগ্ধা এসি চেয়ার কোচে ওদের সিট।পাশাপাশি দুটো সিটের জানালার পাশের সিটে মায়াকে বসিয়ে মেহরাব পাশে বসে।মায়া খুব এক্সাইটেড এই জার্নিটার জন্য।স্মরনীয় করে রাখতে চায় মনের ডায়েরির পাতায়।প্রিয়জনের সাথে এই প্রথম দূরের যাএা ওর।নিশ্চই এই জার্নিটা ভালো হবে।ট্রেন প্রথমে আস্তে চলতে লাগলেও ধীরে ধীরে এর গতি সীমা বেড়ে যায়।শহরের বুক চিরে একটা সময় গ্রাম নদী মাঠ পেরিয়ে আপন মনে নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটে চলছে।ট্রেনের জানালা খোলা তাই পুরো বাতাস টা ওদের গায়ে লাগছে।ঘন্টা খানেক বাইরের দৃশ্য অবলোকন করে মায়া আর পারছে না তাকিয়ে থাকতে।এখন কিছুটা ঠান্ডা লাগছে তাই মেহরাব কে বলে জানালা লাগিয়ে দেয়।ধীরে ধীরে চোখে ঘুমের ভাব দেখা দেয়।মেহরাব সাথে করে কিছু বই এনেছিলো সে গুলোই বের করে পড়তেছিলো।মায়া ঘুমিয়ে গেছে মেহরাব ওর মাথাটা নিজ কাঁধে এনে রাখে।মাঝে মাঝে সামনের দিকে ঝুকে পরলে আরেক হাত দিয়ে ওকে আগলে রাখছে।নিজের গাড়ি হলে কোলে শুইয়ে দিতে পারতো কিন্তু এখন ইচ্ছে করলেও পারছে না।বাতাসে সামনের চুল গুলো একটু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।কাঁধে মাথা থাকা অবস্থাতেই অন্য হাতের সাহায্যে চুল গুলো ঠিক করে দেয়।
কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।অনেকদিন এই সুন্দর মায়া ময় স্নিগ্ধ মুখ খানা মন ভরে দর্শন করা হয় না।কষ্ট দিয়ে আসছে ওর মায়াবিনীকে।এ সব ভেবে ওর বুকের মধ্যে হা হা হা কার করে ওঠে।তখন নিজের আরেকটি সত্বা ওকে বলতে থাকে

“মেহরাব তুই অনেক বড়ো অন্যায় করেছিস ওর সাথে।এখনও সময় আছে নিজেকে শুধরে নে।না হলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে”

চলবে……

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২৩

চট্টগ্রামের বেস্ট ওয়েস্টার্ন এলাইন্স একটি বিলাস বহুল হোটেল যেটা আগ্রাবাদে অবস্থিত।মেহরাব এখানের একটি রুম বুক করে।স্টেশন থেকে হোটেলে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মেহরাব আর মায়া ওদের জিনিস পএ নিয়ে ছয় তলার একটি কক্ষে চলে যায়।রুমে ডুকেই মায়ার চোখ জুড়িয়ে যায়।কি সুন্দর সাজানো গোছানো এ সবই ভাবতে থাকে।
রিসিভশন থেকে শুনেছে এখান থেকে বিমান বন্দর আর সী বিচ একদম কাছেই।তাই মেহরাব এই হোটেল টাই পছন্দ করেছে।প্রায় ছয় থেকে সাত ঘন্টার জার্নি তার ওপর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করা হয়নি।তাই ক্লান্ত দুজনেই।মেহরাব কাপড় বের করে ওয়াশ রুমে ডুকে যায় ফ্রেশ হতে।

মায়া রুমটি দেখতে থাকে।রুমের সাথে ওয়াশ রুম আর বড়ো একটি বারান্দা।মায়া থাই গ্লাস সরিয়ে বারান্দায় প্রবেশ করে।অনেকটাই উপরে ওরা তারওপর রাতের এই শহরটা বেশ নজর কারা লাগছে।এখান থেকে সী বিচ কাছে থাকলেও এই সময়টা দেখা পাবে না।মায়া মনে মনে বেশ আনন্দ পাচ্ছে রাত পোহালেই সমুদ্রের দেখা পাবে বলে।
সেই ছোটো বেলা থেকে বই পুস্তকের পাতায় পাহাড় সমুদ্র এসবের ছবি দেখে আসছে।সব সময়ই ভাবতো ইশ যদি একবার দেখতে পেতাম।অবশেষে ওর আশা পূর্ণ হতে চলেছে।

পেছন থেকে ভারি কন্ঠের আওয়াজে ওর ভাবনা চিন্তার ছেদ ঘটে।ট্রাউজার আর টি শার্ট পরে তোয়ালেটা দু হাত দিয়ে চুল গুলো মুছে নিচ্ছে মেহরাব।ও ভাবেই মায়াকে বলতে থাকে

-অনেক ঘন্টা জার্নি করেছো আগে ফ্রেশ হও তারপরে বারান্দায় বসে যতো পারো রাতের অন্ধকার বিলাস করে নিও।

মায়ার মনে মনে রাগ লাগে।মেহরাবের কথার কোনো জবাব না দিয়ে রুমে এসে লাগেজ থেকে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।জার্নির জন্য খাওয়াটাই ঠিক মতো হয়নি তাই মেহরাব মায়াকে নিয়ে হোটেলে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট এ যায়।খাবার অর্ডার দিলেই রুমে দিতো কিন্তু মেহরাবের ইচ্ছে হলো দেখে শুনে খাবার খাবে তাই এখানে আসা।
খাবারের মেনু গুলো দেখে মেহরাব খাবার অর্ডার করে।মায়া রে জিজ্ঞেস করলে বলে

-আপনি যা খাবেন আমিও তাই খাবো

মেহরাব আর কিছু বলে না।কিছুক্ষণ পর খাবার আসলে খাবারের আইটেম দেখে মায়ার চক্ষুচরক অবস্থা।এ সব কি খাবার?ও তো এ সব খেতে পারবে না।দেখেই গা ঘিন ঘিন করছে।আসলে মেহরাব সী ফুডের অর্ডার করছে।এসব ওর অনেক প্রিয় তবে অনেকদিন খাওয়া হয় না বলে আজ অর্ডার দিলো।আর বাকি রইলো মায়ার ব্যাপার।ও জানতো মায়া এ সব খেতে পারবে না।আর সবসময় মায়াকে জিজ্ঞেস করলে ও একটা কথাই বলবে “আপনি যা খাবেন আমিও তাই খাবো।”কথা টা যাতে আর না বলে সে জন্যই ও এই কাজটা করেছে।
মেহরাব আপন মনে খাচ্ছে আর মায়া সে গুলোর দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে।চামচ দিয়ে খোচাচ্ছে কি খাবে ভাবছে।

-কি হলো খাও আমার তো শেষ প্রায়।

বোকা মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললো

-এই তো খাচ্ছি।
বলেই মুখটি বাংলার পাঁচ এর মতো করে ফেলে।ভাগ্যিস অবশেষে এর মধ্যে থেকে চিংড়ি মাছটাই ওর খাবার যোগ্য ছিলো বাকি গুলোর নাম আর মুখে নিতে চায়না।এক ধরনের খাবার গিয়ে খেয়ে ওঠা মায়া।বাকিটা ও মেহরাব কে দিয়ে দেয়।মেহরাব আড়চোখে একবার তাকায় কিছু না হলে সে গুলো ও খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষ করে একদম নিচে চলে আসে।রিসেপশনে ওরা কারোর জন্য অপেক্ষা করে।আধা ঘন্টা পরে একটা লোক আসলে তার সাথে মেহরাব কথা বলতে থাকে।এই ফাকে মায়া নিচের আশপাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখে।আগের বার এই রকম কোনো এক হোটেলে গিয়ে কি কান্ডটাই না করেছিলো সে সব কথা মনে করে মায়া আনমনে হাসে।আবার পরক্ষণে মুখটা চুপসে যায়।তখনকার মেহরাব আর এখনকার মেহরাবের মধ্যে অনেক তফাৎ তাই ভেবে।

মেহরাবের ডাকে ও পিছন ফেরে।মায়া মেহরাবের কাছে যায়

-কে ছিলো লোকটা?

-বিজনেস ক্লায়েন্ট

-এখানেও?

-হা তুমি তো জানো এখানে একটা মিটিং হওয়ার কথা আর সেটা কাল সকালেই ফিক্সড করা হয়েছে।

মায়া বুঝেছে মেহরাব এই জন্যই এসেছে আর টয়ার কথা রক্ষার জন্য শুধুমাত্র ওকে আনা।সে যদি কাজেই ব্যাস্ত থাকে তা হলে আমাকে কেনো এনেছে এ সব ভাবছে।
আবার ফিরে যায় রুমে।
মেহরাব ফোনে কথা বলছে অনেকক্ষণ ধরে।মায়ার ঘুম আসছে না।আবারও বারান্দায় যায়,গ্রীল ধরে দূর আকাশ পানে চেয়ে রয়।শুধু মাএ জ্ব’লতে থাকা তারা গুলোই দেখতে পারছে আর কিছু নয়।মন খারাপের ভিরে নিজের খুশির খবরটাই ভুলে গেছে ও।পেটে হাত দিয়ে অনুভব করে এখানে আরেকটি সত্বার বাস শুরু হয়েছে।মা হবে ও মনে চমৎকার অনুভূতি।আসলে এটার অনুভূতি প্রকাশ করা অসম্ভব।এখানে তিন দিন থাকা হবে।তিনদিনের দিনই ও মেহরাব কে এই খুশির সংবাদ টা দিবে।কারন আর দুদিন পরই মেহরাবের জন্মদিন।শুভ দিনে শুভ সংবাদ টা দিতে চায় ওকে।

মায়া আর বেশিক্ষণ থাকে না ভেতরে এসে শুয়ে পরে।শরির টা ব্যাথা করছে হয়ত লং জার্নির জন্য।
খুব সকালে মায়ার ঘুম ভাঙ্গলে চোখ খুলে দেখে মেহরাব ওকে আষ্টে পিষ্টে পেচিয়ে ধরে আছে।নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।অবশ্য মনে আনন্দ ও লাগছে তাই ঠিক করেছে এভাবেই থাকুক ও ছাড় পেতে চায় না এই বন্ধনি থেকে।মেহরাব ঠিক সময়ে ওঠে যায়।মায়া এখনও ঘুম ভেবে আর ডাকে না।রেডি হতেই মায়া ও উঠে পরে।ফ্রেশ হয়ে দুজনে বেরিয়ে পরে।মিটিং শেষ করতেই অনেক সময় লেগে যায়।মায়াকে মেহরাব কিছু স্নাক্স জাতীয় খাবার কিনে দেয়।সে গুলোই মায়া খেয়ে নিয়েছে ।কিন্তু তাতে কি কাজ হয়? মন চাচ্ছে গরম গরম ভাত দিয়ে ভর্তা মাছ মাংস খেতে।
অবশেষে ওর মন মতোই মেহরাব ওকে খাওয়ায়।মায়া মেহরাবের কাছে বলে সী বিচ নেওয়ার জন্য।মেহরাবের যেহেতু কাজের চাপ নেই তাই ও আর না করে না।চলে যায় দুজন বিচ পাড়ে।সাগর পাড়ের একদম কাছে গিয়ে মায়া অবাক।সত্যি এই সমুদ্রের কোনো কুল কিনারা নেই।কিছুক্ষণ পর পর ডেউ তেরে আসছে।লবন পানির ফেনা ভাসছে,বহু লোকজন পানিতে নেমে আনন্দের সাথে গোসল করছে।মেহরাব ওকে নিষেধ করে দেয়

-একদমই পানিতে নামবে না কিন্তু।

মায়ার মুখটা চুপসে যায়।অনেক রিকুয়েস্ট এর পর পানিতে নেমে হাঁটুর নিচ অব্দি ভেজার অনুমতি পায়।ব্যাস এটুকুতেই মায়া খুশি।কামিজ আর সালোয়ার উঁচু করে ধরে পানিতে হাটতে থাকে।কিছুক্ষণ পর পর ডেউ এসে ওকে ছুয়ে দিচ্ছে।ওর তো ইচ্ছে ছিলো মেহরাব কে সঙ্গে নিয়ে পানিতে নেমে গোসল করার কিন্তু সেটা আর হলো না।
ওখান থেকে উঠে সামনে দিকে এগিয়ে দেখে অনেক ধরনের সামুক ঝিনুক ভেসে আছে।মনের আনন্দে সে গুলো কুড়োতে লাগলে মেহরাব নিষেধ করে কিন্তু ওর নিষেধ মায়া অমান্য করে অনেক গুলো ঝিনুক তুলে নেয়।এরপরে ওরা সী বিচের দোকান গুলোতে যায়।মায়ার পছন্দ মতো অনেক কিছু কিনে নেয়।কিছু কিছু জিনিস মেহরাব পছন্দ করে দেয়।
আশপাশ অনেক এলাকা ঘুরে অবশেষে সূর্যাস্তের সময়টা উপভোগ করেই ওরা দুজন হোটেলে ফিরে আসে।

পরের দিন মেহরাব ফ্রি তাই মায়ার ইচ্ছাতে পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে।আগ্রাবাদ শহর থেকে বেশ কাছেই পাহাড়ি বনভূমির দেখা মিলে।মেইন রাস্তার পাশ দিয়ে পাহাড়ি রাস্তা একে বেকে গেছে।
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে টাইগারপাস এলাকায় বাটালি হিল অবস্থিত।এটা এখানের সর্বাধিক উঁচু পাহার।এই পাহাড়ের চূড়া থেকে নাকি বঙ্গোপসাগর আর শহরের অংশ দেখা যায়।তাই শুনে মায়া বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে।পাহাড়ের উপরে ওঠার জন্য কিন্তু মেহরাব কি উঠতে দিবে?ওদের সাথে আগে পিছনে অনেক পর্যটক রয়েছে যারা এই পাহারের চূড়ায় উঠবে বলে আসছে।তবে যাদের উচুতে হাইট ফোবিয়া আছে তারা এতো উচুতে উঠতে পারবে না।অবশ্যই প্রচুর সাহোস লাগবে এই কাজটা করতে গেলে।মেহরাব আর মায়া অনেকটা পথ হেটে একটু উচুতে ওঠে।মায়া অল্পতেই হাফসিয়ে যায়।সমান্তরাল জায়গায় বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেয়।ওর এই সময়টা নিজের শরিরের কথা মনেই থাকে না।মেহরাব ওকে নিষেধ করে আর না জাওয়ার জন্য।কিন্তু মায়ার মন চায় আরো উঠতে।

আবারও উঠে হাঁটা শুরু করে এবার ঢালু থেকে একটু উচুতে উঠতে গেলে সামনে থাকা মেহরাবের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।ঠিক ঐ সময়ে মেহরাবের ফোনে কল আসলে ও কল রিসিভ করে কথা বলতে থাকে।কিন্তু হাত সরিয়ে ফেলার কারনে মায়া পা পিছলে নিচের দিকে পরে যায়।ব্যাথা পেয়ে আহ করে চিৎকার দিলে মেহরাব মায়ার দিকে নজর দেয়।কল কেটে দৌড়ে ওকে গিয়ে ধরে।ততোক্ষণে যে জীবনে বড়ো ধরনের একটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে সেটা ওদের জানা ছিলো না।মায়া ব্যাথার যন্তনায় কাতরাচ্ছে।মেহরাব বুঝতে পারছে না কি করবে।বেশি দেরি না করে ওখানের কিছু লোকজনের সাহায্যে ওকে ওদের হোটেলের কাছাকাছি একটা হসপিটাল নেওয়া হয়।যাওয়ার পথেই ওর বিল্ডিং শুরু হয়েছিলো।মেহরাব একদমই বুঝতে পারেনি।

ডাক্তার মায়ারে চেকআপ করে ওর কন্ডিশন দেখে কিছু একটা আন্দাজ করে।আরো শিওর হওয়ার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে।ফাইনালি ডাক্তার যেটা মেহরাবকে বলে সেটা শুনে ওর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো অবস্থা হয়।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।কলিজার মোচর দিয়ে বুকের বা পাশে চিনচিন করে ব্যাথা করছে।কি শুনলো এটা ও?যেটা ওর ভাবনার বাইরে ছিলো।আর এ সবটাই ওর অসাবধানতার ফল।একটু সচেতন হলে এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না।নিজেকে আজ প্রথম বারের মতো পৃথিবীর সবচাইতে বড়ো হতোভাগা আর অপরাধী মনে হচ্ছে।

চলবে……

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২৪

“মি.মেহরাব আপনার ওয়াইফ দু মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো।দুঃখের সাথে জানাচ্ছি বেবিটা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে।কিন্তু ভালো খবর এই যে আপনার ওয়াইফ এখন বিপদ মুক্ত।তবে তার পরিপূর্ণ বিশ্রামের দরকার।

এসব শোনার পর থেকেই দুঃখ কষ্ট যন্ত্রনা বুকে ধারন করে আহত হৃদয়ে নিষ্পলক দৃষ্টিতে বসে আছে মেহরাব।
কি থেকে কি হয়ে গেলো ভেবে পাচ্ছে না।একটা শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই জীবনে আরেক টা শোক হাজির।নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে।না হলে এমন একটা খবর সুসংবাদ রূপে না শুনে বরং দুঃসংবাদ রূপেই শুনতে হলো ওকে।তাও নিজের স্ত্রীর মুখ থেকে নয় ডাক্তারের মুখ থেকেই।
আর ভাবতে পারছে না কিছু,রাগ উঠে যায় নিজের ওপর।চুল গুলো দু হাতের সাহায্যে বারং বার উল্টে পিছনের দিকে দিচ্ছে।অস্থির হয়ে যাচ্ছে ও।বাসায় ফোন করে সিতারা কে মায়ার অবস্থার কথা জানালে ওরাও মায়ার জন্য চিন্তা করতে থাকে।মেহরাব সিতারার সাথে কথা বলে মায়ার প্রেগনেন্সির বিষয়টা সিওর হয়।সবটা শুনে প্রথমে মেহরাব রাগ হয়।তবে মায়া নিজেই ওদের বলতে নিষেধ করেছিলো এটা শুনে মেজাজ গরম হলেও আপাততো নিজেকে কন্ট্রোল করে চুপচাপ বসে থাকে।

——

“বড়ো ভাই”ডাকটা শুনে মাথা উঁচু করে মেহরাব।সামনে ফিরোজ কে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।বসা থেকে উঠে ফিরোজ কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে দেয়।

“মেহরাবের মুখ থেকে মায়ার অবস্থার কথা শুনে যখন তখনই ফিরোজ বাসা থেকে বেরিয়ে পরে।গাড়ি বা ট্রেন যাএা করে আসলে অনেক সময় লাগবে ভেবে বিমানে করে চট্টগ্রাম চলে আসে।ফিরোজ জানে মেহরাব সবটা একা সামল দিচ্ছে।এই মুহূর্তে ওর পাশে ফিরোজের থাকা টা জরুরী।”

-ফিরোজ এটা কি হয়ে গেলো আমার সাথে?কি দোষ করেছিলাম আমি?সুখের সংবাদটা আমি শুনতেই পারলাম না।কতোটা হতোভাগা আমি।

-বড়োভাই আপনি শান্ত হোন।প্লিজ এভাবে ভেঙ্গে পরবেন না।

-ফিরোজ আমি যে আর পারছি না।একটা পর একটা আঘাতে জর্জরিত হতে হচ্ছে আমাকে।আমি নিজেকে কি ভাবে শান্ত করবো বলো?

-সব ঠিক হয়ে যাবে বড়োভাই আর আপু যে সুস্থ্য আছে এটাই অনেক।এর চাইতে ও খারাপ কিছু হতে পারতো কিন্তু হয়নি তাই শুকরিয়া করতে হবে।

মেহরাব এবার একটু নিজেকে সামলে নেয়।এতোক্ষণ ধরে নানা চিন্তায় মায়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলো।ওর কি অবস্থা এখন দেখতে হবে।মেহরাব মানসিক কষ্ট পেলেও মায়াতো তো শারিরিক মানিসিক দুটোর কষ্টই পেয়েছে।ফিরোজ কে সাথে করে মায়ার কেবিনের সামনে গিয়ে দাড়ায়।নার্স এর কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে।এখনও জ্ঞান ফেরেনি জ্ঞান ফিরলেই ওদের খবর দিবে।
এখনও মায়াদের বাড়ির কাউকে মেহরাব জানাতে পারেনি।একা মানুষ পরিচিতো জন কেউ নেই এখানে।যা কিছু করার ও একাই ছোটাছুটি করে করেছে।

ফিরোজ ওকে আর কি বলে শান্তনা দিবে ভেবে পাচ্ছে না।ওকে আবার বসিয়ে দিয়ে মায়াদের বাড়ি ফোন করে।পুষ্পের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে সবটা জানিয়ে কল কেটে দেয়।

“এদিকে পুষ্প সবটা শুনে কাশেম মিয়া আর আয়মন কে জানায়।মেয়ের এমন অবস্থার কথা শুনে কাশেম মিয়ার মন ছুটে যায়।পারলে এখনই ছুটে আসে মেয়ের কাছে।কিন্তু ওরা তো চট্টগ্রাম।এখান থেকে না যাওয়া পর্যন্ত মেয়ের কাছে আসাটা সম্ভব হবে না।আয়মন এই প্রথম মায়ার জন্য মন থেকে কষ্ট পাচ্ছে।আগে যাই করুক না কেনো ধীরে ধীরে তার সব ভুল গুলো বুঝে শুধরে নিচ্ছে।শতো হলেও সেও একজন মা।এমন একটা দূর্ঘটনার কথা শুনলেও পাথর মনও গলে যেতে বাধ্য।পুষ্প খুব কান্না করছে বোনের জন্য।আয়মন স্বামী আর মেয়েকে সান্তনা দেয় আর নিজের কান্না ও ধরে রাখতে পারছে না।সেও কান্না করছে খুব করে আর ভাবছে এই মুহূর্তে মেয়েটার পাশে থাকতে পারলে ভালো হতো।”

মেহরাবের নিকট একজন নার্স এসে খবর দেয় পেশেন্টের জ্ঞান ফিরছে।কথাটা শোনা মাএই মেহরাব এক সেকেন্ড ব্যায় না করে কেবিনে চলে যায়।ফিরোজ ওর পিছু যায় তবে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়।মেহরাব মায়ার কাছে গিয়ে দেখে মায়া নির্বাক চোখে চেয়ে আছে।এক হাতে স্যালাইন লাগানো অন্য হাত পেটের ওপর রাখা।দু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।খুশির মাঝেই আচমকা ঝড়ের প্রভাব বিস্তার করে মুহূর্তে সুখ টা কেড়ে নিবে কে জানতো এটা?সবটাই যে উপরওয়ালার ইচ্ছা।তবুও মনে মনে যেনো কষ্টের সাথে এক রাশ রাগ ভর করেছে।
মেহরাবের উপস্থিতি টের পেয়েও অনড় রইলো।মোটেও ফিরে তাকাচ্ছে না ওর দিকে।মেহরাব এসে ওর বেডের পাশে বসে।মায়ার পেটে থাকা হাতের ওপর ওর হাত রাখে।মায়ার হাতে ওর স্পর্শ অনুভব হতেই চোখ বন্ধ করে নেয়।ভিতর থেকে কান্না টা দমিয়ে নিজের হাতটি টান মে’রে নিয়ে নেয়।এমন টা হওয়াতে মেহরাব একটু অবাক দৃষ্টিকে তাকায়।এটা কি হলে?একটু দম ছেরে নেয়,এই মুহূর্তে কি বলবে ওকে আর কি বলার আছে ভেবে পাচ্ছে না।নিজেকে কেমন অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে।মায়ার মানসিক অবস্থার কথা ভেবে কিছু বলার ইচ্ছা জাগে না।

বসা থেকে উঠে বাইরে গিয়ে ফিরোজ কে ভেতরে পাঠায় মায়ার সাথে কথা বলার জন্য।মেহরাব ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য চেম্বারের দিকে পা বাড়ায়।
ফিরোজ কেবিনে ডুকে দেখে মায়া কান্না করছে।ফিরোজ কে দেখে মায়ার কান্নার শব্দটা বেড়ে যায়।ফিরোজ ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারছে কিন্তু ভেতরের কষ্টটা বোঝার ক্ষমতা যে কারোর নেই।তবুও সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কি বা করার আছে।

-আপু এভাবে কান্না করবেন না শরির আরো খারাপ করবে।

-ভাই আমি বাসায় যেতে চাই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এখানে।

-বড়োভাই ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেছে।দেখা যাক ডাক্তার কি বলে।

মায়া আর কিছু বলতে পারছে না।কপালে হাত রেখে শুয়ে পরে।স্যালাইন শেষ হতে এখনও অনেকটা সময় বাকি।মায়া ভাবতে থাকে পেছনের কথা গুলো।মনে কতো আনন্দ নিয়ে একটা ভালো সময় পার করছিলো।কিন্তু একটা সামান্য ভুলের জন্য নিমিষেই আনন্দ টা মিলিয়ে মনটা নিরানন্দ দায়ক হয়ে গেছে।উদাসীন চিওে মন শুধু একজনকেই দায়ি করছে।হা আজ তার অবহেলা আর বেখেয়ালির জন্য আমার
জীবনের সবচাইতে বড়ো সুখ টা থেকে বঞ্চিত হলাম।আর এর জন্য তাকে আমি কখন ও ক্ষমা করতে পারবো না।
সে দিন পার করে পরের দিন ওরা মায়াকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে বিমানে চলে আসে।কেনোনা এই শরিরে ওকে নিয়ে লং জার্নি করাটা একদমই উচিত হবে না বলে ডাক্তার জানায়।
সে দিনের পর থেকে আজ তিনদিন মায়া মেহরাবের সাথে কোনো ধরনের কথা বলছে না।মেহরাব অনেক বার চেষ্টা করেছে কিন্তু ও নিরুওর।তবুও মেহরাব ঠান্ডা মাথায় সবটা মেনে নেয়।সময় মতো ওর সবকিছু করে যাচ্ছে।নিজে যা পারছে করছে কিন্তু কিছু কিছু সময় মায়া সে গুলো ইগনোর করাতে মেহরাব সিতারা আর শায়লাকে দিয়ে করায়।তবুও ওর যত্নের ত্রুটি রাখে না।

মেয়ের আসার খবর শুনেই গ্রাম থেকে কাশেম মিয়া আয়মন আর পুষ্প শহরে চলে আসে।মেয়ের এমন মলিন আর শুকনা মুখ দেখে কাশেম মিয়া আর আয়মন কান্না করে।যদিও মেয়ের সামনে হাউমাউ করে কান্না না করাই ভালো।তাই কান্না টা কোনো মতে আটকে রেখে মেয়ের পাশে বসে।মায়া আয়মন কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।পুষ্প এসে মা আর বাবা কে শাসাতে থাকে।

-বাজান কেমন বাবা মা তোমরা?মেয়েকে শান্তনা না দিয়ে নিজেরাই কানতেছো।দেখো বুবু তোমাগো কান্না দেখলে তার ভালো লাগবো।মোটেই না বরং এখন তারে আমাগো সবাইর উচিত বুঝানো যা গেছে তা আর ফিরে আসবো না।নিজেকে ঠিক রাখতে হইবো।এইটা বুঝাতে হইবো।

কাশেম মিয়া বুঝতে পারে ছোটো মেয়ের কথাই ঠিক।আসলেই পুষ্প একটা জ্ঞানি মেয়ে।ওর কথায় যুক্তি আছে।
এ দিকে মেহরাবের ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে।এক তো অনাগত সন্তান দুনিয়াতে আসার আগেই উপর ওয়ালা নিয়ে গেলো।তারওপর বউয়ের ইগনোর করাটা ভিষণ ভাবে মনের ভিতর ক্ষতের সৃষ্টি করছে।এ ভাবে আর কতো দিন।কিছু বলে ও মায়াকে স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।তা হলে কি আরো সময় লাগবে মায়ার স্বাভাবিক হতে?

শ্বশুর শ্বাশুড়ী দুদিন থেকে আর থাকতে পারছে না।ঘর দুয়ার খালি পরে আছে।আবার মেয়ের এমন অবস্থা মন সায় দিচ্ছে না একা রেখে দিতে।কাশেম মিয়া খুব সাহোস করে মেহরাব কে বলে ফেলে মায়া কে কয়েকদিনের জন্য গ্রামে নিতে চায়।মনের একটু স্বাভাবিক পরিবর্তন হলেই মায়াকে দিয়ে যাবে।কিন্তু এ কথা শুনে মেহরাব একদমই চুপসে যায়।মায়া এই মুহূর্তে দূরে যাক এটা তো ও চায়নি।বরং ও চলে গেলে মেহরাব একা একা আরো বিভিন্ন ধরনের চিন্তায় শেষ হয়ে যাবে।
মনে মনে এ সব কিছু ভাবলেও শ্বশুড় কে মুখের ওপর না করতে পারছে না।আয়মন ও স্বামীর কথায় তাল মিলায়।তাই এখানে মেহরাবের কিছুই বলার থাকে না।মনে মনে ভাবে মায়াকে বলতে হবে যেনো না যায়।
রাতের খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়।মেহরাব ওর রুমে ডুকে মায়াকে কাপড় চোপর গোছাতে দেখে একটু অবাক হয়।

-এতো রাতে এ সব গুছাচ্ছো কেনো?দিনে ও তো করতে পারতে।

মেহরাবের কথার কোনো জবাব মায়া দেয় না।আপন মনে কাপড় গুছিয়ে ব্যাগে রাখছে।এবার মেহরাবের রাগ লাগে তবুও রাগ সংবরন করে বলে

-মায়া এ সব রাখো এখন,দিনের বেলা শায়লা এ সব করে দিবে শুধু শুধু কষ্ট করো না ঘুমিয়ে পরো।

তবুও মায়া এ সবের তোয়াক্কা না করে ওর কাজই করে যাচ্ছে।মেহরাবের রাগ বাড়তে থাকে।আজ কয়েকদিন মোটেও কথা বলছে না মায়া ওর সঙ্গে।তবুও নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে রেখেছে কিন্তু এখন আর পারছে না।এর একটা বিহিত করাই লাগবে।হুট করেই মেহরাব মায়ার এক হাতের বাহু চেপে ধরে

-কি হলো কথা কানে যায় না তখন থেকে বলছি এ সব রাখো কথা মোটেও কানে যাচ্ছে না?

মায়া এবার রাগি দৃষ্টি নিয়ে ওর পানে চায়।আজ আর কথা না বলে থাকতে পারছে না।যতো রাগ ক্ষোভ সব প্রকাশ করবে

-নাহ কানে যাচ্ছে না কারন আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই।তাছাড়া আমি কাল গ্রামে চলে যেতে চাই।
দয়া করে আমাকে আটকাবেন না।

কথাটা শুনে মেহরাবের রাগটা বেড়ে আরো দ্বিগুন হলো।

-নাহ তুমি কোথাও যাবে না।তুমি এখনও পুরোপুরি সুস্থ্য নও।

ওর কথা শুনে মায়া তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়

-আমার শরির নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।এই কয়েক মাস তো আপনার আমার দিকে এক নজর তাকানোরই সময় হয়নি।আজ আসছেন এ সব বলতে?দিনের পর দিন শুধু মানসিক ভাবে কষ্ট দিয়েছেন।আর আমি আপনাকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও আমার কষ্ট গুলো না বুঝে শুধু ইগনোর করেছেন।আরে একটা মানুষ ম’রে গেছে বলে কি দেবদাস হতে হবে?ঘরের বউকে কি পর করে দিতে হবে?

শেষের কথাটা শুনে মেহরাব রাগে হাতের আঙ্গুল গুলো মুঠ করে নেয়।

-হা সে সব ও মেনে নিয়েছি।ভেবেছিলাম আপনি মায়ের মৃত্যুতে একটু বেশি শকড্।কিন্তু শেষে কি করলেন?

এটা বলেই মায়া কান্না করে দেয়।চোখ মুছে আবার বলতে লাগে

-আমি যা হারিয়েছি সেটার জন্য একমাএ আপনি দায়ী।আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করবো না।

কথাটা শোনা মাএই মেহরাবের পা থেকে মাথা পর্যন্ত যেনো আ’গুন ধরে যায়।হাত উঁচু করে মায়াকে চড় দেওয়া জন্য।মায়া সেটা বুঝতে পেরে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিন্তু নাহ মেহরাবের হাত থেমে যায়।

“কোনো সুপুরুষ তার প্রিয় মানুষটির ওপর আঘাত করতে পারে না।আঘাত করা তো কাপুরুষের কাজ।নিজের রাগ টা দমন করে রুম থেকে প্রস্থান করে মেহরাব।ইচ্ছে করলে মেহরাব ও মায়াকে অনেক কথা শুনিয়ে দিতে পারতো,নিজের ও যে ভুল আছে সেটাও ধরিয়ে দিতে পারতো।কিন্তু সেটা ও করেনি।মায়া তখন বসে পরে।অঝোর ধারায় চোখ থেকে নোনা জল পরছে।আর ভাবছে “শেষ পর্যন্ত মেহরাব ওকে চড় দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত তুললো…?

চলবে….

(লেখার ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-১৯+২০+২১

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৯

ভোর বেলা,চারদিকে পাখিদের কিচিমিচির কলরবে মেহরাবের ঘুম ভেঙ্গে যায়।নতুন জায়গা তারমধ্যে সারারাত প্রিয়তমার যন্ত্রনায় ভালো ঘুম হয়নি।এখনও চোখে রাজ্যের ঘুম কিন্তু আর মন সায় দিচ্ছে না শুয়ে থাকতে।আবার সরতে ও পারছে না।প্রতিদিন কার মতো মেহরাবের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে মায়া।মেহরাব গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মায়ার পানে।কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে অথচ এই মেয়েটা রাতে ওর সাথে কতো কি করেছে।মুখে হাসির ঝলক বজায় রেখে ভাবতে থাকে”পা’গলী একটা,যতোই জ্বা’লাতন করুক না কেনো এসব ও হাসি মুখে সহ্য করে যাবে।

এসব ভেবে মায়ার মুখে মেহরাবের হাত দ্বারা স্পর্শ করছে।চোখ নাক গাল ঠোঁট ছুয়ে ছুয়ে দিচ্ছে।মায়া ঘুমের মধ্যে ওর স্পর্শ পেয়ে নড়াচড়া করছে।একটা সময় ওকে ছেরে দিয়ে পাশ ফিরে শোয়।মেহরাব আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মায়া ওর মাথা চেপে ধরে আছে।মেহরাব সে সব দেখেও না দেখার ভান করে নিজের কাজ করছে।তোয়ালে দিয়ে চুল মোছায় ব্যাস্ত সে।মাঝে মাঝে আর চোখে মায়ার দিকে তাকাচ্ছে।চুল মোছা শেষ করে ওর কাছে গিয়ে বসে।

-কি ব্যাপার ঘুম ভাঙ্গছে ?

মায়া কিছু বলে না,মাথাটা ভিষণ ভার ভার লাগছে কিন্তু কেনো?আর এটা কোন জায়গা?এখানে কখন আসলো কিছুই তো মনে পরেছে না।

-কি হলো কিছু বলছো না যে?

-এটা কোথায়?আর আমরা তো হোটেলে গিয়েছিলাম এখানে আসলাম কিভাবে?

মেহরাব একটু দম ছেরে বলতে লাগে

-কিছু মনে থাকবে কিভাবে থাকার কাজ করলে তো থাকবে।

-মানে কি বলছেন বুঝলাম না।

-আচ্ছা ওখানে বসে কি খেয়েছিলে বলোতো?

-কি আবার জুস আর কোক খেয়েছিলাম।

-জ্বী না ম্যাম আপনি যেটা খেয়েছেন সেটা অন্য কারোর অর্ডার করা ড্রিংকস আর সেটার মধ্যে নে’শা যাত দ্রব্য মিশানো ছিলো।
এ কথা শুনে মায়া খুবই শকড্ হয়।

-হায় আল্লার বলেন কি আমার তো অনেক বড়ো ভুল হয়ে গেছে পাপ হবে তো।

-হুম তা হবে এখন মন থেকে ক্ষমা চাও আল্লাহর কাছে আর ভবিষ্যতে না জেনে এ ভাবে খেতে যাবে না ওকে।

-হু বুঝতে পারছি।কিন্তু আমার এই অবস্থা কেনো?আমার জামা কাপড় কই?

-এখন মনে পরছে সে সব কোথায়? সব কিছু ধুয়ে শুকাতে দিয়েছি।

-ধুয়ে দিয়েছেন মানে?

-মায়া তুমি সজ্ঞানে ছিলে না।সারা রাস্তায় মা”তলামি করেছো শুধু তাই না এখানে আসার পর থেকে কি সব করেছো তা আর নাইবা শুনলে।

কিন্তু মায়া সবটা শুনতে চায়।মেহরাব আবার বলতে শুরু করে
-তোমার এমন অবস্থা দেখে প্রথমে লেবুর শরবত খাইয়ে দেই।কিন্তু তুমি কি করলে খেয়েই সবকিছু ব”মি করে দিলে।নিজের কাপড় নষ্ট করেছো সাথে আমারটাও।তোমাকে পরিষ্কার করে আমার টিশার্ট পরিয়ে দেই।সাথে নিজেও ফ্রেশ হয়ে আসি।তোমার জন্য ডিনার টা করতে পারিনি কিন্তু নিজে তো দিব্যি সারারাত ধরে আমাকে ডিনার বানিয়ে খেয়েছো।

এ সব শুনে মায়া ঢোক গিলে বলে

-মানে কি বলছেন আপনাকে ডিনার বানিয়ে..খেয়েছি?

মেহরাব ওর কাছে এসে ওর খোলা বুকের দিকে তাকাতে বলে।মায়া ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সত্যি অচেতন অবস্থায় কি সব করেছে ভাবতেই একরাশ লজ্জা ওকে গ্রাস করতে বসেছে।শুধু বুকে নয় কাঁধে গলায় পেটে এ সব জায়গায় লাল আঁচড় আর কা”মরের দাগ।অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় এসব দাগ স্পষ্ট বিদ্যমান।ছিঃ কি করলো এসব ও।

-হয়েছে আর লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে নেও।না হলে এবার আমার পালা,পেটের মধ্যে ক্ষুদায় ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।দেখা যাবে এবার আমি ব্রেকফাস্ট হিসেবে তোমাকেই বেছে নিবো।কি দিবে তো ব্রেকফাস্ট করতে?

“বেশরম ব্যাডামানুষ কি সব বলছে।আমি না হয় অজান্তে করেছি তাই বলে সে সজ্ঞানে থেকে এসব বলে খালি লজ্জায় ফেলবে?ইচ্ছে করেই এ সব বলছে।

মায়া আর শুয়ে থাকতে পারছে না।গায়ে জড়ানো চাদরটি আরো শক্ত করে জড়িয়ে কোনো রকমে উঠে ওয়াশ রুমে ছুটে যায়।শাওয়ার নিয়ে বিপাকে পরে।ড্রেস তো নেই কি পরবে।দরজা খুলে একটু ফাঁক করে মেহরাব কে ডেকে পরিধানের জন্য কিছু চায়।মেহরাব ওর লং ফুল হাতার একটি শার্ট দেয়।মায়া এটা পেয়ে বোকা বনে যায়।ভাবে শুধু এটা পরবে কিভাবে?মেহরাব ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে

-কি হলো পরে আসো নাকি আমি এসে পরিয়ে দিবো?

ওর কথা শুনে তারাতারি ভেতরে মুখ নিয়ে দরজা লক করে দেয়।অগত্যা শার্ট পরেই বেরিয়ে আসে।হাঁটুর নিচ অব্দি হওয়াতে ওর কাছে তেমন খারাপ লাগে না।আয়নার সামনে এসে চুল গুলো মুছতে থাকে।কিন্তু শুকাতে সময় লাগবে ভেবে খোলা বারান্দায় চলে যায়।সকালে ঝলমলে রোদ পুরোটাই বারান্দা জুড়ে তাই চুল গুলো শুকাতে কষ্ট হবে না ভেবে এখানে এসে দাড়িয়ে যায়।বাংলোর আশপাশ টা বেশ সুন্দর।চারপাশ টা অনেক জায়গা জুড়ে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা আর ভিতরে চারপাশ টাতে গাছ লাগানো।হরেক রকমের গাছ আছে এখানে।মনে মনে ভেবে নেয় একটু পরে বের হয়ে সবটা ঘুরবে।
মেহরাব এক কাপ কফি সমেত রুমে আসে,মায়াকে দেখতে না পেয়ে টি টেবিলের ওপর কফির মগ দুটো রেখে বারান্দায় দিকে যায়।আস্তে আস্তে এগিয়ে পেছন থেকে মায়া কে কোমর জড়িয়ে ধরে।স্যাম্পু করা ঝলমলে চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে নিশ্বাস নিতে থাকে।আর লেশালো স্বরে বলতে থাকে

-এই অবস্থায় তোমায় খুব হটি লাগছে সোনা।মাথা নষ্ট করে দিলে যে।নিজেকে ঠিক রাখি কেমনে বলো।

মায়া ওর কথা গুলো শুনে চুপ করে আছে।কি বা বলবে?প্রতিবারই প্রিয় মানুষটার পবিএ ছোয়া ওকে মুগ্ধ করে।মনে অন্যরকম শিহরন বয়ে যায়।চোখ বন্ধ করে ওর গভির ছোয়া গুলো অনুভব করে।এটাই যে ওর জীবনের আসল সুখ।একটা সময় জীবনে সুখ বলতে কিছু ছিলো না।কিন্তু এখন মেহরাব ওকে পরিমাপ ছাড়া সুখের রাজ্যে ভাসিয়ে দেয়।এই মানুষটাকে ও কখনও কষ্ট দিবে না।মেহরাবের হাতের বন্ধনির মধ্যে থেকেই ওর দিকে ঘুরে তাকায়।চোখে চোখ রাখে একটা সময় এই চোখের দিকে তাকাতে লজ্জা পেতো এখন আর সেটা লাগে না।মায়া ওর পায়ের ওপর পা রেখে একটু উঁচু হয়।মেহরাব ওর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকায়।স্নিগ্ধ সকালের মতো ওর মায়াবিনীকে স্নিগ্ধ লাগছে।আর পারছে না দৃষ্টি মেলাতে।কিছুক্ষনের জন্য অধরে অধর মিলিত করে একাকার হয়ে মিশে যায় দুজন দুজনায়।

মিনিট খানেক পর মেহরাব নিজ থেকে ওকে ছেরে দেয়।

-আপনার না ক্ষিদে পেয়েছে?আমি কিছু বানিয়ে আনছি।

-তোমার কষ্ট করার দরকার নেই তাছারা এখানে তো রান্না করার মতো তেমন কিছু নেই।খাবার অর্ডার করে দিয়েছি এক্ষুনি চলে আসবে।

মায়া ভেতরে এসে কফির মগ দেখে বুঝতে পারে মেহরাব নিজেই বানিয়ে এনেছিলো।কিন্তু এতোক্ষণে মনে হয় ঠান্ডা হয়ে গেছে।ধরে বুঝতে পারে আসলেই তাই।গরম করে নিয়ে আসবে ভেবেই মগটি নিয়ে রান্না ঘরের উদ্দেশ্য যেতে লাগলে মেহরাবের বাধা দেয়।

-দরকার নেই দাও খেয়ে নেই

-কিন্তু ঠান্ডা হয়ে গেছে তো?

-তুমি শিওর ?

-অবশ্যই

-আচ্ছা একটু খেয়ে দেখো তো

কি আর করার মায়া এক চুমুক খেয়ে দেখে হালকা গরম তবুও আরেকটু গরম করলে ভালো হতো।

-দাও এবার

-কিন্তু

-কোনো কিন্তু নয় আই হোপ এবার আগের থেকে দ্বিগুন গরম হয়েছে কফি।আমার হটি বউটার ঠোঁটের ছোঁয়া বলে কথা।গরম না হয়ে পারে?বলেই খেতে শুরু করে।

মায়া ভাবে এই মানুষটা এমন কেনো?কি সব লাগাম ছারা কথা বলে তারওপর এতো ভালোবাসা আসে কোথ থেকে?

এর মাঝেই খাবারের পার্সেল চলে আসে।দুজনে খেয়ে নেয়।মেহরাব পুরো বাড়ি আর বাড়ির চারপাশটা মায়া কে ঘুরে ঘুরে দেখায়।আসলেই বেশ মনোরম পরিবেশ।শহরের কোলাহল মুক্ত নির্জন এলাকা বলেই এতোটা সুন্দর।

-পছন্দ হয়েছে তোমার?

-হুম খুব খুব

-জানতাম পছন্দ হবে তাই তো তোমার জন্য এটা কেনা।আমি ভাবছি তুমি তোমার নিজের মতো করে সাজাবে।কিন্তু তার আগে কিছু কাজ করাতে হবে।তারপর মাঝে মধ্যেই এই নির্জন পরিবেশে হুট হাট করে হানিমুনে চলে আসবো।

-আবার শুরু করে দিলেন।

-কি করবো বলো?আমার জায়গায় তুমি হলে বুঝতে।

-বেশ বুঝেতে পারছি আর পা’গলামি একটু কম করে করবেন।

-উহুম এ বিষয়ে আমার মন যা চায় তাই করবো কোনো নিষেধ শুনবো না।

~~~~~

দুই দিন পরে

আজ ফিরোজের বাসায় ওদের ইনভাইট করা হয়েছে।মূলত ফিরোজের একমাএ বোনের বিয়ের জন্য ছেলে পক্ষ মেয়েকে দেখতে আসবে।মেহরাবের কথা মতো মায়া শাড়ি পরেছে।দুজন রেডি হয়ে ফিরোজের বাসায় যায়।
মা আর বোন কে নিয়ে ফিরোজের পরিবার।বোন অনার্সে পড়ে দেখতে শুনতে ভালো ।এখন ভালো ছেলের হাতে বোনকে তুলে দিকে পারলে ওর শান্তি মিলবে।তবে ছেলে ভালো পরিচিতো,ফিরোজ আগে থেকেই মেহরাব কে বলে রেখেছিলো।মেহরাব ছেলের বায়োডাটা নিয়ে সব খোঁজ খবর নিয়েছে।ছেলে ভালো আর্মির জব করে।পরিবারও ভালো এখন বাকি কাজটা ভালো ভালোই হলেই হয়।

ছেলে পক্ষ চলে আসে,ফিরোজের বোন ফারজানা কে মায়া সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দেয়।তবে মেকাপের ভারি আস্তরন মুখে মাখাতে দেয়নি ফারজানা।ওর কথা হলো আমি যেমন তেমনই যেনো তারা দেখতে পায়।মায়া ওর কথা মতোই হালকা সাজে সাজিয়ে দেয়।মনে মনে ভাবে আসলেই মেয়েটা বুদ্ধিমান।ফারজানা দেখতে সবমিলিয়ে সুন্দর এক দেখায় যে কেউ পছন্দ করার মতো।তাই ছেলে পক্ষের ওকে দেখেই সবার পছন্দ হয়ে যায়।সবার মতামত নিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ও ঠিক করা হয়।এক মাস পরেই বিয়ে করে ছেলের বাড়ি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফারজানাকে নিয়ে যাবে।

ফিরোজের মা মায়াকে অনেক যত্ন করে।সত্যি উনি একজন ভালো মনের মানুষ।মায়ার ও ওনাকে খুব ভালো লাগে।অনেক বার ওদের থাকতে বলে কিন্তু তাকে বুঝিয়ে মেহরাব আর মায়া বাসায় চলে আসে।

দিনকাল দুজনের ভালো চলছিলো।হঠাৎ করে একদিন আফিয়া আনজুম এর স্বামী মেহরাব কে কল করেছে। আফিয়া হসপিটালে ভর্তি কথাটা শুনেই মেহরাবের বুকের মধ্যে চিক মে”রে ওঠে,হাত থেকে মোবাইলটা পরে যায়।মায়া ওর অবস্থা দেখে ছুটে আসে।মেহরাব ফ্লোরে বসে পরে চোখ দুটো লাল হয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।কি হয়েছে মায়া জিজ্ঞেস করলে মেহরাব ওকে জড়িয়ে ধরে।মায়া ওর অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।মেহরাব কান্না সংবরন করে বলতে থাকে

-আমার আম্মিজান অনেক অসুস্থ্য মায়া।আমার আম্মিজানের অবস্থা নাকি বেশি ভালো না।

চলবে……..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২০

অচেতন অবস্থায় হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আফিয়া।মেহরাব তার ডান হাতটি নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে পাশে বসে আছে।মুখে কোনো কথা নেই শুধু শব্দহীন কান্না করে যাচ্ছে।অপেক্ষায় আছে কখন আম্মিজানের জ্ঞান ফিরবে।কেবিনে একজনের অধিক ডুকতে দেওয়া হচ্ছে না তাই বাকি সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।

তখন আফিয়ার কথা শুনে মেহরাব একটা সেকেন্ড ব্যায় না করে মায়াকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে যায়।নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে।যতোটুকু সময় লাগার কথা আজ যেনো তার দ্বিগুন সময় লাগছে পৌছাতে।বিপদের মুহূর্ত গুলো এমনই হয়।হসপিটাল পৌছে আফিয়ার স্বামীর থেকে যা শুনতে পায় তা শুনে মেহরাবের মাথা শূন্য হয়ে যায়।এতো দিন ধরে অসুস্থ্য থাকলেও খারাপ কিছু ধরা পরেনি।কিন্তু হঠাৎই ধরা পরে আফিয়ার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।এখন লাস্ট স্টেজে আছে।আর আজকে বেশি অসুস্থ্য হয়েছে বলেই ইমারজেন্সি ভর্তি করা হয়।এ সব বলে ভদ্রলোক কান্না করতে থাকে।মায়া কাকে রেখে কাকে সান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না।ওর ও ভিষণ খারাপ লাগে।আফিয়া ওকে স্বল্প সময়ে যে ভালোবাসা দিয়েছে সেটা ও কখন ও ভুলতে পারবে না।আফিয়ার ছেলে মেয়ে দূরে থাকে তারাও শুনে রওয়ানা হয়েছে।

অনেকটা সময় পরে আফিয়ার জ্ঞান ফিরলে চোখ মেলে মেহরাব কে দেখতে পায়।নিজের হাতটি ছেলের হাতের মুঠোয় দেখে মুচকি হাসেন।তিনি বেশ বুঝতে পারছেন অসুস্থ্য তার কথা শুনে মেহরাব এর মাথা মন কোনো টাই ঠিক নেই।আরেক হাতে স্যালাইন চলছে সে হাতটি এ পাশ ঘুরাতে চাইলে মেহরাব বাধা দেয়।উঠতে নিষেধ করে মেহরাব।আফিয়া আর নড়াচড়া করে না।শরিরটা খুবই দূর্বল লাগছে।ছেলের দিকে চেয়ে বুঝতে পারছে অনেকক্ষণ ধরেই কান্না করছে।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।নাক মুখে ফোলা ফোলা ভাব।ফর্সা চেহারা লাল বর্ণ ধারন করেছে।
আফিয়ার নিজের পেটের সন্তানদের যেমন ভালবাসতেন তেমনি মেহরাব কেও ভালোবাসতেন।এই ভালোবাসায় কোনো খুঁত ছিলো না।এমন কয়জন আছে যে কিনা প্রাক্তন স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর বাচ্চাকে নিজের বুকে টেনে নেয়?
আফিয়া নিয়েছিলো ঐ টুকু বাচ্চার অসহায় মুখ দেখে তার হৃদয় টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিলো।আপন ভেবে নিজের বুকে টেনে নিয়েছিলো।মেহরাব কে কখনও বুঝতে দেয়নি আফিয়া ওর নিজের মা নয় কিন্তু আফিয়া একটা সময় মেহরাবকে সবকিছু খুলে বলে।কেনোনা এ সব বলাই লাগতো।সত্য কখনও চেপে রাখতে নেই।মেহরাব সব জেনেও কখনও কোনো ধরনের রিয়েক্ট করেনি।ওর মা আফিয়া ব্যাস আর কিছু জানার নেই।

-আব্বু আর কান্না করে না দেখো আমি তো সুস্থ্য।

আফিয়ার কথা শুনে মেহরাব ওর আম্মিজানের হাতটি ওর দু চোখের পাতায় ছোয়ায়।হাতের পিঠে একটা চুমু খায়।ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে ও পারছে না এ কান্না থামাতে।আফিয়া এ সব দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না মন চাচ্ছে স্যালাইনের সুচ বের করে সব ছেরে ছুরে মেহরাব কে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু পারছে না নিচের ঠোঁট কামরে কান্না সংবরন করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।আফিয়া যদি এ সব করে তা হলে মেহরাব আরো ভেঙ্গে পরবে।এতো শক্ত সামর্থ ছেলেটা আজ বাচ্চা দের মতো কাঁদছে এ সব কোনো মা সহ্য করতে পারবে না।

-আব্বু এবার থামো না হলে আমি কিন্তু আর এখানে থাকবো না।বাসায় চলে যাবো।
এবার মেহরাব একটু নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।মুখ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে পারছে না।তবুও বলছে

-একদমই ও সব করবেন না আপনি সুস্থ্য হয়ে যাবেন আম্মিজান।আপনার ছেলে আপনাকে আর কষ্ট পেতে দিবে না।

-হুম

-আম্মিজান আপনি বিশ্রাম নিন আমার একটু বাইরে কাজ আছে।বলেই মেহরাব বের হয়ে যায়।

আফিয়া বেশ বুঝতে পারছে মেহরাব এর মনে কি চলছে।
কেবিন থেকে বের হতেই মায়া আর আফিয়ার স্বামী ওকে দেখে উঠে দাড়ায়।জ্ঞান ফেরার কথা শুনে ভদ্রলোক কেবিনে যায়।মায়া দরজা থেকে উকি দিয়ে একনজর আফিয়া কে দেখে মেহরাবের সামনে আসে।মেহরাব মায়াকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করে।ডাক্তারের থেকে জানতে পারে আফিয়ার শরিরের কন্ডিশন ভালো না যে কোনো মুহূর্তে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।মেহরাব জানতে চায় উন্নত চিকিৎসার জন্য যদি বিদেশ নেওয়া হয় তা হলে?জাক্তার জানায় শেষ স্টেজে তাই এক উপরওয়ালাই ভরসা।তবে রক্ত দিয়ে যেতে হবে নিয়মিতো।আজকেও দেওয়া হয়েছে আবারও লাগবে।
মেহরাব আগে থেকেই জানে ওর আম্মিজানের রক্তের গ্রুপ আর ওরটা একই। তাই আফিয়ার স্বামী কে বলে রেখেছে আবার যখন রক্তের দরকার হবে তখন ও দিবে।ওর কথা শুনে সে সায় দেয়।

সেদিনের মতো মায়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসে মেহরাব।যদিও মায়া থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু ততোক্ষণে আফিয়ার ছেলেমেয়েরা চলে এসেছিলো তাই আর ওকে থাকতে হয়নি।

পরদিন অফিসে থাকা কালিন হসপিটাল থেকে মেহরাবের কাছে কল আসতেই দ্রুত ছুটে যায় ও।জরুরী রক্ত লাগবে তাই,মেহরাব রক্ত দেয়।আজ আর আফিয়ার সাথে কথা বলতে পারেনি শুধু অচেতন অবস্থায় দেখেছে।মনের মধ্যে এক অজানা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।আর মনে মনে অনেক বার আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে ফেলেছে

“হে আল্লাহ আমার আম্মিজান কে তুমি সুস্থ্য করে দাও”

ক্লান্ত শরির নিয়ে বাসায় ফিরে মেহরাব।মায়া ওর এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।অস্থির মনে প্রশ্ন করে বসে।কিন্তু মেহরাব কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় না।রুমে প্রবেশ করে কাঁধের ব্যাগটা রেখে ও ভাবে খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে পরে।মায়া আর কিছু জিজ্ঞেস না করে একে একে জুতা মোজা টাই খুলে দেয়।কিছুক্ষণ পর মেহরাব মায়াকে ডাক দিলে মায়া কাছে আসে।
মেহরাব যে রক্ত দিয়েছে সেটা ওকে জানায়।মায়া এখন বুঝতে পারছে ওকে কেনো এতো ক্লান্ত লাগছিলো।এখন এই অবস্থায় রেস্ট দরকার ভালো ভালো খাবার খাওয়ানো দরকার।

ক্লান্ত শরির আর মন নিয়ে কোনো মতে ফ্রেশ হয়ে আসে।মায়া রুমেই খাবার নিয়ে আসে।মেহরাব খেতে বসলে মায়া নিজেই খাবার মেখে ওকে খাইয়ে দেয়।এতে মেহরাবের অশান্ত মনে একটু ভালো লাগার প্রশান্তি বয়ে যায়।মেহরাব বুঝতে পেরেছে এতোদিনে মায়া ওর মনটাকে খুব ভালো করেই চিনে নিয়েছে।কি করলে ওর মন ভালো হবে মায়ার অনেকটাই জানা হয়ে গেছে।
খাবার খেয়ে মেহরাব কে শুয়ে থাকতে বলে।কিন্তু মেহরাব মায়াকে পাশে চায়।ওর মনটা আম্মিজানের কাছে পরে আছে কিন্তু দেহের ও যে শান্তি দরকার।একটা ভালো ঘুমের দরকার যেটার দ্বারা ওর সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।মায়া ওর হাতের কাজ শেষ করে মেহরাবের কাছে আসে।খাটের সাথে হেলান দিয়ে ওর পাশে বসলে মেহরাব নিজ বালিশের থেকে মাথা তুলে মায়ার কোলে মাথা গুজে দু পাশ থেকে মায়াকে জড়িয়ে ধরে।

মায়া বুঝতে পারে এ অশান্ত মন সহজে শান্ত হবার নয়।পরম যত্নে মাথার চুল গুলোতে হাত বুলাতে থাকে।এখন মেহরাব অনেকটা আরাম পাচ্ছে,পরম সুখে চোখ বন্ধ করে আছে।ঘুম আসছিলো না কিন্তু এখন ঘুম ঘুম ভাব আসছে।
একটা সময় মেহরাব গভির ঘুমে আছন্ন হয়ে যায়।মায়া বুঝতে পেরে ওর মাথা কোল থেকে আলতো করে তুলে বালিশে শুইয়ে দেয়।কিন্তু ওর চোখে যে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে এপাশ ওপাশ করে অবশেষে উঠে নিঃশব্দে বারান্দায় চলে যায়।
বারান্দায় থাকা বেলি ফুলের সুবাস ওর নাকে যায়।বাগানের বড়ো লাইটের আলোতে চারপাশ টা খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে।আফিয়ার কথা খুব মনে পরছে।অল্প দিনের যে ভালোবাসাটা ও পেয়েছে সেটা ভুলে যাবার মতো নয়।অত্যান্ত ভালো মনের মানুষ যেটা মুখে বললে কম হয়ে যাবে।এতো শক্ত সামর্থ কঠিন মনের মানুষ মেহরাব,অথচ আফিয়ার অসুস্থতার কথা শোনার পর থেকে কেমন জানি মনমরা হয়ে ভেঙ্গে পরেছে।যদি আফিয়ার কিছু হয়ে যায় তা হলে মেহরাব কে ও কি ভাবে সামলাবে?

বাবা মা ছারা এতিম হয়েও এতোবছর যার ছায়া তলে থেকে বড়ো হয়েছে আজ সেই মায়ের এমন অবস্থা দেখে কোনো সন্তানই শান্ত থাকতে পারবে না।এসব ভাবতেই ওর চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরতে থাকে।একটা সময় ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে।সেই কান্নার শব্দ মেহরাবের কান অব্দি পৌছে যায়।হঠাৎ মায়া ওর কাঁধে হাতের স্পর্শ পায়।তারা হুরা করে চোখ মুছে মেহরাবের দিকে ঘুরে দাড়ায়।মেহরাব ওর দু হাত মেলে ধরে মায়া এক সেকেন্ড থেমে থাকে না।ঝাপ দিয়ে ওর প্রশস্ত বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে নিজেও জড়িয়ে ধরে মেহরাবকে।ধীর কন্ঠে প্রিয়তমাকে বলে

“যতো পারো কান্না করো।তোমার চোখের নোনা জলে এই বুকটা ভিজিয়ে দাও।তা হলে আমার অশান্ত মনটাও কিছুটা হলেও শান্ত হবে প্রিয়”

মেহরাবের কথা শুনে মায়ার কান্নার রেশ টা বাড়তে থাকে।মানুষটাকে শক্ত করে ধরে শব্দ করেই কান্না করতে থাকে।

চলবে……..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২১

আফিয়া আনজুমের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে।কবর জিয়ারত করে অনেকক্ষণ ধরে কবরের পাশে বসে থেকে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়েছে মেহরাব।একটা সপ্তাহ ধরে মেহরাব এই কাজটাই নিয়মিতো করে যাচ্ছে।

“অসুস্থ্য হওয়ার পর সর্বোচ্চ এক মাসের মতো আফিয়া বেঁচে ছিলো।পরিবারের সবাই আর মেহরাব নিজেও আফিয়ার চিকিৎসার কোনো ত্রুটি রাখেনি।ডাক্তার যেহেতু আগেই বলে দিয়েছিলো বিদেশে নিলেও তেমন ভালো কোনো ফল হবে না।রোগির কন্ডিশন এমনিতেই বেশ জটিল তাই দেশেই সব রকম চেষ্টা করা হয়।অবশেষে জীবনের ইতি টেনে আত্নীয় স্বজন ও পরিবারের মানুষজনদের ছেরে পরপারে চলে গেছেন।
এই কয়টা দিন যখন তখন মেহরাব ছুটে গেছে আম্মিজানের নিকট।প্রথম প্রথম অল্প কথা হতো কিন্তু শেষের দিনগুলোতে আর কথা বলতে পারেননি।মেহরাব কে দেখলে শুধু চোখের পানি ঝরাতো আফিয়া।মনে হতো অনেক কিছু বলতে চায়।ওকে কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি।মেহরাব ও অধির আগ্রহ ভরা নয়নে আম্মিজানের পানে অপেক্ষায় থাকতো।শুধুমাত্র মুখ থেকে আব্বু ডাকটা শোনার জন্য।
নিজের জন্ম দাতা বাবা মা নেই সেটা নিয়ে কখন ও আফসোস করেনি মেহরাব।কিন্তু আজ বুকটা ফেটে যাচ্ছে আফিয়ার কথা ভেবে।বাবা মা দুজনের মায়া মমতা দিয়ে ওকে বড়ো করেছে।একটা বারের জন্য ওকে মৃত বাবা মার জন্য আফসোস করার মতো সুযোগ দেয় নি।আর সেই আম্মিজানও সারাজীবনের জন্য ওকে একা করে চলে গেছে।ভাবতেই বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে।”

নিথর দেহ আর ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে মেহরাব।মায়াকে পাশ কাটিয়ে ওর রুমের দিকে পা বাড়ায়।মনে হচ্ছে মায়া এক অদৃশ্য আত্না ওকে মেহরাব দেখেনি।মায়ার বুকটা কষ্টে ফেটে যায়।ওর এমন আচরন মায়াকে বেশ পো’ড়ায়।আফিয়ার মৃত্যুর পর থেকে এটাই করে আসছে মেহরাব।
চুল গুলো বাবরি টাইপ মুখ ভর্তি চাপ দাড়ি।নিজের কোনো যত্ন নেই।মায়া এসব করতে গেলে উল্টো ওকে নিজের কাছে ঘেষতে বারণ করে দিয়েছে।তাই মায়া আর ওর কাছে যায় না।কাছ থেকে এ সব দেখে মনে কষ্ট নিয়ে সয়ে আসছে সবটা।

যেদিন আফিয়ার মৃত্যু হয় সে দিন মেহরাব অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ ছিলো।অনেক বার কল করার পর ফিরোজ রিসিভ করে সংবাদ টা পায়।কিন্তু সময় মতো দিতে যেয়েও পারে না।অবশেষে মিটিং শেষে মেহরাব কে বলা হয়।সবটা শুনে মেহরাব এর মাথা শূন্য হয়ে যায়।তখনই ছুটে যায় হাসপাতাল।আফিয়ার নিথর দেহ দেখে প্রথমে চুপ ছিলো।কিন্তু পর মুহূর্তে মেহরাব চিৎকার দিয়ে কান্না করতে থাকে।পুরো হাসপাতালের মানুষ জড়ো হয়ে যায়।

সময় মতো আসতে না পারায় নিজেকে দেওয়ালের সাথে বারং বার আঘাত করে।প্রথমে কপাল পরে হাত মুঠো করে।ফিরোজ সহ আরো কয়েক জন ওকে থামাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো।মায়া তো বেশ ভয় পেয়ে যায় ওর এমন পাগলের মতো আচরন দেখে।একটা ডাক্তার সেখানে এসে ওর অবস্থা দেখে সাথে সাথে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দেয়।না হলে এ সময়ে হাইপার হয়ে খারাপ কিছু একটা হতে পারে এটা ডাক্তার সবাইকে বলে।
ইনজেকশনের মেয়াদ অল্প সময়ের ছিলো বিধায় আফিয়ার দাফনের আগেই ওর জ্ঞান ফিরে।এসময় সবাই আবার ওকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে মেহরাব শান্ত থাকে।মাটি দেওয়ার আগ পর্যন্ত ও নিরব থাকে।দাফন কার্জ শেষ করে গোরস্থান থেকে বের হয় না।একে একে সবাই চলে যায় মেহরাব আর যায়না।বসে থাকে ওর আম্মিজানের কবরের পাশে।ফিরোজ ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।অনেক সময় পর মেহরাব বের হলে ফিরোজ ওকে বাসায় দিয়ে যায়।সেই দিনের পর থেকে মেহরাব কারো সাথে কথা বলে না।কেউ কথা বললেও কোনো উওর দেয় না।নিজের রুমে দিনের বেলা গেলেও রাতের বেলায় সারারাত আফিয়া এসে যে রুমে থাকতো সে রুমের ফ্লোরে শুয়ে রাত পার করে।

এ সব শুধু মায়া মেহরাবের আড়ালে দেখে যায়।আর নিরবে চোখের জল ফেলে।ভাবে অতিরিক্ত শোকে এমন করছে কিন্তু এক দিন না দু দিন না প্রতিদিনই এ সব করে যাচ্ছে।খাওয়া গদাওয়া ঠিক মতো করছে না।মাঝে মধ্যে মায়া জোড় করলে খেতো এখন তাও খায় না।মায়া এখন আর জোড় করে না।নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয়।যে মেহরাব মায়া ছারা কিছু বোঝে না সে কিভাবে এমনটা করতে পারে?ওর মাথায় কিছু ডোকে না।তাই ইচ্ছে করেই আর মেহরাবের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে না।

সংসার আর স্বামীর চিন্তায় মায়ার দিনকাল ভালো যাচ্ছে না।আজকাল ভার্সিটিতেও যাচ্ছে না।মনে সুখ শান্তি না থাকলে লেখাপড়া মাথায় ডুকবে কেমনে।মন চাচ্ছে সব ছেরে ছুরে যে দিক মন চায় সেদিকে চলে যেতে।কিন্তু চাইলেও পারছে না।আফিয়া জীবিত থাকা কালিন তাকে মায়ার কথা দেওয়া লাগছে “মেহরাব কে একা রেখে কখনও যেনো কোথাও না যায়।এমনকি রাগ করে ও না”
এ সব ভেবেই মায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

মেহরাবের এমন অবস্থার জন্য মায়া সুখে নেই এ সব শায়লা আর সিতারার চোখ এড়ায়নি।সারাদিন ওরা শ্বাশুড়ী বউ মিলে মায়াকে নানান কথা বলে মন ভালো করতে চায়।শান্তনা দিয়ে রাখে কিন্তু মায়া এ সব এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়।দিনের দু বেলা জোড় করে ওরা দুজন ওকে খাইয়ে দেয়।কিন্তু রাত হলেই আর খাবার মুখ দিয়ে পেটে যায় না ওর।
একদিন শায়লা কাজ করছে আর কথা বলছে মায়া ড্রইংরুমের সোফায় বসে ওর কথা গুলো শুনছে।পরক্ষণে শরিরটা কেমন জানি খারাপ লাগছে।ভাবে রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিবে।শায়লাকে বলে রুমের দিকে যেতে লাগলে উঠে দাড়ায়।কিন্তু সামনের দিকে আর কদম ফেলতে পারে না।মাথা ঘুরে ওখানেই পরে যায়।সিতারা শায়লার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে।সিতারা এসে এমন অবস্থা দেখে স্বামী আর ছেলেকে ডাক দেয়।ওর আসলে প্রথমে ওদের পরিচিতো ডাক্তার কে কল করে।ডাক্তার চেক আপ করে সে যেটা বুঝতে পারে তা হলে মায়া প্রেগনেট।খবরটা শুনেই উপস্থিত সবাই বেশ খুশি হয়।এখন ভয়ের কিছু নেই বলে ডাক্তার চলে যায়।কিন্তু মায়া যেনো প্রেগনেন্সি টেস্ট ল্যাব থেকে করায় এটার পরামর্শ ডাক্তার দিয়ে যায়।মায়ার জ্ঞান ফিরলে শায়লার আর তর সয় না।সাথে সাথে মায়াকে খুশির সংবাদ টা দিয়ে দেয়।মায়া তো শুনে খুশিতে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না কিন্তু মেহরাবের কথা ভেবে মুখ কালো করে ফেলে।খবরটা শুধু শায়লা আর সিতারা জানে তাই মায়া ওদের বলে

-এই খবরটা যেনো মেহরাব এখনই না জানে।আমি পরে তাকে খবরটা দিয়ে চমকে দিতে চাই।

ওরা দুজন মায়ার কথায় রাজি হয়।মায়ার মনে চাচ্ছে এখনই ছুটে যেতে মেহরাবের কাছে।আর জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে

“জানেন আমাদের পরিবারে নতুন অতিথি আসছে।আমরা দু থেকে তিন জন হচ্ছি।”

কিন্তু ওর ইচ্ছা করলেই এখন বলা যাবে না।মনে মনে পরিকল্পনা করে সামনেই মেহরাবের একটা স্পেশাল দিন।আর ঐ দিনই ওদের জীবনের সবচাইতে বড়ো খুশির সংবাদ টা ও মেহরাব কে শুনিয়ে চমকে দিবে।এ সব কথা ভাবতেই আপন মনে পেটে হাত রাখে।এক অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব হয়।ওর মাঝে বেড়ে উঠবে দুটি মানুষের ভালোবাসার ফসল।ও মা হবে ভাবতেই দু চোখ বেয়ে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পরে।কিন্তু মানুষটার এই পরিবর্ত ?এটা ও কি ভাবে ঠিক করবে?উপর ওয়ালার কাছে সর্বোচ্চ দোয়া টুকু করে যেনো এর সমাধান দ্রুত হয়।আবার আগের মতো ওরা যেনো সুন্দর হাসি খুশি খুনশুটি ময় সংসার করতে পারে।

~~~~~~

ছুটির দিন মেহরাব নিস্তেজ হয়ে ঘুমাচ্ছে।মায়া ওর ঘুমন্ত মুখ খানি দেখছে।আজ কতো দিন হয় এই মুখে হাত দিয়ে ছুতে পারছে না।ঠোঁটের স্বাদ নিতে পারছে না।বাহু বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ করতে পারছে না।এতো কাছে হয়েও কতোটা দূরত্ব ভাবতেই হুকের মধ্যে মোচর দিয়ে ওঠে।কান্না সংবরন করে উঠে পরে।

“গতোকাল রাতে কি মনে করে মেহরাব অনেক রাতে নিজের রুমে এসে ঘুমায়।মায়া শোয়া অবস্থায় কিন্তু জেগে ছিলো।মনে মনে খুব খুশি হয় ওকে এখানে আসতে দেখে।মন চাচ্ছে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু পারছে না।যাক এসেছে এটাই ওর জন্য অনেক।মনে একটু হলেও প্রশান্তির শীতল হাওয়া বয়ে যায়।কষ্ট কিছুটা লাগব করে ঘুমিয়ে যায় মায়া।”

আজ মায়া ক্লিনিকে যাবে।মেহরাব ঘুম তাই আর কিছু বলে না।থাক মানুষটা অনেকদিন শান্তিতে ঘুমায় না ছুটির দিন ঘুমাক ভেবে মায়া হাতে পার্স আর মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বের হয়।শায়লা কে সঙ্গে নিয়ে সিতারাকে বলে বাড়ি থেকে বের হয়।আজ আর গাড়ি নেয় নি।রিক্সা করে দুজন বেরিয়ে পরে।ল্যাব টেস্ট করিয়ে সেখান থেকেও মায়া নিশ্চিত হয় ও সত্যিই মা হতে চলছে।শায়লা কে আনন্দে জড়িয়ে ধরে।শায়লা ওকে বলে

-ভাবি দেখবেন এই খবর শুইন্যা ভাইজান খুশিতে পাগ’ল হয়ে যাইবো।তখন এমন আর করবো না আপনেরে ও অনেক ভালোবাসবো।

-কি যে বলো না শায়লা

-হুম সত্যি কইছি আমার যহন বা’চ্চা হইবো হেইডা শুইন্যা উনি আমারে অনেক ভালো পাইতো।

বলেই লজ্জা পাওয়া ভাল করে।ওর কথা গুলো শুনে মায়া মুখ চেপে হাসে।

-এবার চলো শায়লা যেতে হবে।

ওরা আবার বাসায় চলে আসে।এসে দেখে মেহরাব এখনও ঘুম।মেহরাবের পাশে বসে ও।আনমনে ওকে দেখতে থাকে।আগের সেই চেহারা আর বর্তমানের চেহারার মধ্যে অনেক তফাৎ।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না।ওর মুখ ভর্তি দাড়ির ওপর হাত বুলাতে থাকে।মাথার বাবরি চুল গুলোতেও হাত বুলিয়ে দেয়।আরেকটু সাহোস করে কপালে অধর ছুইয়ে দেয়।দম ছেরে ভাবে নাহ আজ এ টুকুই থাক এতেই মনে হাজার গুন শান্তি মিলেছে।বসা থেকে উঠে প্রেগনেন্সি রিপোর্ট টা আলমারি ড্রয়ারে রাখতে যায়।
আলমারির ভিতরে একটা ড্রয়ার যেটা ব্যবহার করা হয় না।আর বাকি সব ব্যাবহার করা হয়।সেটা খুলে হঠাৎ ড্রয়ারে কিছু দেখতে পায়।এই ড্রয়ারটা ও কখন ও খুলে দেখেনি।আজ ভাবলো এখানে রাখি মেহরাবের চোখে পরবে না ভেবে।ড্রয়ারটা পুরো খুলে দেখে তার মধ্যে ওর ব্যাবহৃত চুলের খোপার কাঠি,একটা ওয়ান টাইম কফি কাপ,আরো দুটো কাটা ক্লিপ।এ সব দেখে হতভম্ব হয়ে যায় ও।কি রিয়েকশন দিবে ভুলে যায়।কিছু সময়ের জন্য স্থির হয়ে রয়।চুলের কাঠিটি হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে এটাতো সেই কাঠি যেটা মেহরাবের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো।ঐ দিন হারিয়ে ফেলেছিলো,তারমানে হারায় নি?খোপাটা তা হলে মেহরাব ই খুলেছিলো…?

চলবে…..

(লেখার ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-১৬+১৭+১৮

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৬

মাথা নিচু করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছে মায়া।বুকের ভেতর হাতুরি পেটার ক্রিয়া কলাপ চলছে।সামনের মানুষটার দিকে ভয়ে তাকাতে পারছে না।আ’গুন চোখে দৃষ্টিরত মায়ার ওপর,দেখেই বুঝা যায় ঐ চোখে চোখ রাখলে নির্ঘাত ভষ্ম হয়ে যাবে যে কেউ।

কিছুক্ষণ আগের কথা”
শরিরের মোহময় ঘ্রাণে বুঝতে পারে এই শক্ত পোক্ত পুরুষটা আর কেউ নয়।এ তো মেহরাব নিজেই।যাকে মায়া খুব করে চেয়েছিলো।মায়ার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে মেহরাব।ওর দিকে এক নজর তাকিয়ে মায়া বুঝতে পারে দুনিয়ার যতো রাগ তেজ সবটুকু দিয়েই ওকে চেপে ধরছে।ব্যাথাতুর নয়নে তাকিয়ে থাকে মেহরাবের পানে।কোনো চিৎকার মুখ দিয়ে বের হয় না।শুধু অশ্রু গড়িয়ে দুচোখ দিয়ে ঝরতে থাকে।মেহরাব ওর চোখের নোনা জল দেখে একটু হুসে আসে।পরক্ষনে নিজেকে ঠিক করে কিছু না বলে এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় একটা নির্জন জায়গায়।সন্ধ্যা শেষ রাতের প্রহর শুরু।জোস্না রাত হওয়ায় কাছের সবকিছুই স্পষ্ট দৃশ্যমান।

মেহরাব আর চুপ থাকতে পারে না।মায়াকে দেখেই বুঝতে পারছে নিশ্চিত কোনো বিপদে পরতে যাচ্ছিলো।তবে সেটা পরে দেখবে’আপাততো মায়ার সাথে ওর নিজের ফয়সালাটা আগে চুকাতে হবে।
মাথার চুল গুলো দু হাত দিয়ে উল্টাতে থাকে মেহরাব।কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।এই মেয়ে তো ওকে পা’গল করে দিলো।

-তুমি আমাকে না জানিয়ে কেনো চলে এসেছো?

মায়া ওর ধমকের সুরে প্রশ্ন করা শুনে ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছে।তবুও একটু সাহোস নিয়ে বলে

-চলে আসার কাজ করেছেন তাই চলে এসেছি।

-হোয়াট ? আমি কি এমন করেছি যার জন্য আমি ঘুম অবস্থায় কাউকে কিছু না বলেই চলে এসেছো বলো?

মায়া যেটা বলতে চায় সেটা বলতে পারে না।

-তুমি জানো আমি তোমাকে না পেয়ে সারা বাড়ি খুঁজেছি।সব জায়গায় খুঁজেছি।মোবাইল টা পর্যন্ত নিয়ে আসোনি।দারোয়ান কাকার কাছ থেকে যখন শুনেছি তুমি গাড়ি নিয়ে বের হইছো তখন ড্রাইভার কে কল করে জেনেছি তুমি বাড়ি চলে আসছো।তখন একটু চিন্তা মুক্ত হয়েছিলাম।

মেহরাব ওর দুহাত দিয়ে মায়ার দু গালে হাত রাখে।বেশ নরম গলায় বলে

-জানো এর আগ মুহূর্তে আমি কতো কি খারাপ চিন্তা তোমাকে নিয়ে করে ফেলেছি তুমি বুঝবে না।তুমি বুঝবে কি করে তুমি তো আমাকেই এখন অব্দি বোঝার চেষ্টা করোনি।

এ সব কথা শুনে মায়া পরে দোটানায়।কি বলছে মানুষটা আমার সাথে যা করছে আবার আমাকে নিয়েই চিন্তা করছে এ সব কি হচ্ছে ওর মাথায় ডুকছে না।

-বুঝে কি হবে ?সব কিছু তো শেষ করে দিছেন।

ওর এমন কথা শুনে মেহরাব এর মুখে আবার কাঠিন্যভাব দেখা দেয়

-কি বললে আবার বলো মায়া,শেষ করে দিছি মানে কি?

-হা আমাদের মাঝে সবটা শুরুর আগেই শেষ করে দিয়েছেন তাই আমি বাধ্য হয়ে চলে এসেছি তা ছাড়া আজ তো আপনার আনন্দের দিন এখানে কেনো এসেছেন?

এসব আজগুবি কথা শুনে মেহরাবের মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে এই মেয়ে কি ওকে সত্যি সত্যি পাগল করে দিবে?

-হা আনন্দের দিন ছিলো সেটার সবটুকুই তুমি শেষ করে দিছো।

-অমি কেনো করতে যাবো আমি তো আপনাকে মুক্তি দিয়েই এসেছি।

উফ এবার সত্যিই মাথায় কাজ করছে না।কি সব বলছে আমাকে মুক্তি দিয়েছে?নাহ কিছু তো একটা হয়েছে সবটা আগে শুনতে হবে।

-মায়া কি হয়েছে একটু খুলে বলোতো আমি না তোমার এমন ঘুরপ্যাঁচ কথার আগামাথা বুঝতে পারছি না।এমনিতেই সারা দিন ধরে ব্যাস্ততায় ছিলাম তার ওপর তোমার টেনশন।আমি বড্ড ক্লান্ত প্লিজ বলো আমায়।

-খুলে বলার কি আছে যাকে ভালোবাসতেন সে তো আপনার জীবনে চলে এসেছে।তাকে বিয়ে ও করে নিয়েছেন আর কি।

-ওহ এ কথা আরে যাকে পছন্দ করেছিলাম তাকেই তো বিয়ে করেছি এটা নতুন কি।হয়তো তুমি সেটা জানতে না।

-হা জানতাম না এটাই আমার জীবনের বড়ো ভুল ছিলো।

এবার আর মেহরাব সহ্য করতে পারছে না ওর সামনে এসে আবারও দুই বাহু ধরে বলে

-মায়া সত্যি করে বলোতো কেনো চলে এসেছো?তুমি মকবুল চাচা কে বলে এসেছো তোমার বাবা অসুস্থ্য কিন্তু আমি বাড়ি কল দিয়ে জেনেছি সে সুস্থ্য আছে।তারপর ও তারা যাতে কিছু না মনে করে তাই বলেছি তুমি এমনি দেখতে এসেছো তাদের।

মেহরাব মায়ার চোখ মুখের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে।আকুলতা ভরা সেই দৃষ্টিতে।মায়া ঢোক গিলে নিচু স্বরে বলতে লাগে

-আপনি তো টয়া আপু কে পছন্দ করেন।আজ তো আপনাদের দুজনের বিয়ে তাই আমি সেটা সহ্য করতে না পেরে চলে এসেছি।

এমন আহম্মক মার্কা কথা শুনে মেহরাব এর চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।ওকে ছেরে দিয়ে উল্টো ঘুরে রাগে মাথা চুলকাতে থাকে।এই মেয় বলে কি।হৃদয় বলতে কি এই মেয়ের কিছু নেই?একটা বার ও কি ঘুণাক্ষরে টের পায়নি তাকে কতোটা ভালোবাসি।একটা বড়োসরো দম ছেরে বলতে লাগে

-আর ইউ ক্রেজি মায়া?এ সবই বুঝতে পারলে।সত্যিকার অর্থে এই মেহরাব কে তুমি এক বিন্দু বুঝতে পারলে না।এতো দিন হয়ে গেলো তবুও না।আমারই ভুল হইছে তোমাকে সময় না দিয়ে গায়ের জোড় দেখিয়ে নিজের ভালোবাসা আদায় করলে ইঠিক হতো।

-বুঝে কি হবে? আমি আপনার পথ থেকে যাতে দূরে সরে আসি সেই ব্যাবস্থাটাও করে দিয়েছেন।

-ওহ রিয়েলি এটাও করে দিয়েছি তা কিভাবে একটু বলবে?

-বলার কি আছে রাতেই তো কি সব কাগজে সাইন নিলেন।জিজ্ঞেস করছিলাম বলেছিলেন ওটা ডিভোর্স এর কাগজ।

এ সব শুনে মেহরাব সত্যিই বোকা বনে গেলো।এমন একজন সফল বিজনেস ম্যান যে কিনা কোনো দিন কোনো কাজে হারেনি।সবাই তাকে জিনিয়াস ভাবে।আর আজ ওর এই বোকা সোকা বউ সে কিনা নিজেই ওকে বোকা বানিয়ে ঘোল খাওয়াচ্ছে।মেহরাব এটাই কি তোর কপালে ছিলো।

-ওয়েট ওয়েট আমি বলেছি আর তুমি সেটা মেনে নিয়েছো।তা হলে পুরো পেপার গুলো পড়োনি কেনো?

একটু ধমকের সুরে বলাতে মায়া ভয়ে কেপে ওঠে।

-আর কি বললে টয়ার সাথে আমার রিলেশন আবার বিয়ে।আরে আমি বলেছিলাম না আমার বাবার বিজনেস পার্টনার এক চাচা ছিলো।সেই চাচার মেয়েই টয়া।একটা সময় আমরা কাছাকাছি থাকতাম,একসঙ্গে লেখাপড়ার করতাম।কিন্তু পরে ওরা ফ্যামিলি সহ ইউকেতে স্যাটেল হয়।ওর একজনের সাথে রিলেশন আর আগে থেকেই বিয়ে ঠিক।সেও ইউকেতে চলে যাবে।আজই ওদের বিয়ে ছিলো।ওর তেমন আত্নীয় না থাকায় চাচা আমার ওপর বিয়ের সব কিছুর দায়িত্ব দেয়।একদিকে তোমার টেনশন অন্যদিকে বিয়ের আয়োজন।পুষ্প কে কল দিয়ে তোমার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সারাদিন ধরে বিয়ের কার্যক্রম শেষ করেই রওয়ানা হয়েছি।তুমি জানো?টয়া তোমাকে না পেয়ে অনেক মন খারাপ করেছিলো তাই ওকে বুঝ দিয়েছি তোমার মিথ্যে বলা কথা টা দিয়ে।
সারাটা দিন ব্যাস্ততায় থাকলেও মন টা আমার এখানে পরে ছিলো।আর তুমি কিনা উফ কি সব ভেবেছো…!

এ সব শুনে মায়া স্তব্দ কিছু বলার ভাষা নেই।মানুষ টাকে ও এভাবে ভুল বুঝলো।আসলে পুরো কথা না জেনেই কিছু ভাবা ঠিক নয়।

মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে।এটাই সেই কাগজ।কাগজটির ওপর আলো ধরে ওকে পড়তে বলে।মায়া এবার চোখ বুলিয়ে প্রথম পাতাটি দেখেই বুঝতে পারে এটা কোনো ডিভোর্স পেপার নয় বরং এটা একটি দলিল।পরের পাতাটি পড়ার মতো আর ইচ্ছা নেই ওর।চোখ সরিয়ে নেয় বুঝতে পারে কতো বড়ো বুঝার ভুল হয়েছে ওর।কিন্তু কিসের দলিল আর কেনোই বা ওর সই নিলো।

-হয়েছে দেখা?এই টুকু কাজ তো সাইন দেওয়ার সময় পড়লে আজ আর অপরাধীর কাঠগোড়ায় আমাকে দাঁড়ানো লাগতো না।তুমি থাকো তোমার বাড়ি আমি গেলাম।

মেহরাব যেইনা ঘুরে সামনের দিকে পা বাড়াতে যাবে ঠিক সেই সময় মায়া ওর হাত ধরে।কিন্তু মেহরাব ফিরে না।

-হাত ছাড়ো মায়া আমার মাথা ঠিক নেই দেখা যাবে রাগের বশে খারাপ কিছু করে বসবো।

-আপনার যা খুশি তাই করেন তবুও আপনি আমাকে রেখে যাবেন না।

মেহরাব ওর দিকে ঘুরে তাকায়।ওর মায়াবিনীর কান্নারত মুখ খানি দেখছে।প্রিয়তমার কান্না ভেজা মুখখানি দেখতে ও মেহরাবের ভিষণ ভালো লাগছে।ওর জন্য ওর মায়া কাঁদছে ।এখন শান্তি লাগছে।তারমানে এই মেয়েটাও আমাকে ভালোবাসে?মনে মনে আওড়ায় যতো মন চায় কান্না করো আমাকে অনেক পু’ড়িয়েছো।কয়েক মিনিট পরে

-এবার কান্না থামাও

-আগে বলেন আপনি যাবেন না।আর সবকিছুর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আমি আর না জেনে না বুঝে আপনাকে ভুল বুঝবো না।কথা দিলাম

-ঠিক আছে যাবো না কিন্তু থেকেই কি হবে সেই তো একা একাই রাত পার করা লাগে।বউয়ের কাছ থেকে কিছু পাই না।আর কি বললে ক্ষমা,সেটা করতে পারি একটা শর্তে।

-শর্ত?

-হা আমাকে খুশি করাতে হবে।

-কিভাবে বলুন আমি আপনাকে খুশি করতে সব কিছু করবো।

মেহরাব ওর কথা শুনে দুষ্টুমির স্বরে মায়ার কানের কাছে ওর মুখ নিয়ে বলতে থাকে

-আমার সকল পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।আমি সব কিছু সুদে আসলে বুঝে নিতে চাই।তাহলে আমি ভেবে দেখবো তোমাকে ক্ষমা করা যায় কিনা।

মেহরাবের এমন কথায় মায়ার কান গরম হয়ে যায়।ও বেশ বুঝতে পারছে মেহরাব ওকে কিসের ইঙ্গিত দিয়েছে।লজ্জায় লান নীল বেগুনী হওয়ার মতো অবস্থা।মেহরাব ঠোঁট চেপে হাসে।ওর মায়াবিনী লজ্জায় মাথা নত করে আছে।হুট করেই মেহরাব মায়াকে পাঁজাকোলে করে নেয়।হঠাৎ এমন হওয়াতে মায়া চমকে যায়।দু হাত দিয়ে মেহরাবের গলা জড়িয়ে ধরে।বুকের হার্টবিট বেড়ে যায়।দুজনের দৃষ্টি এক হতেই মেহরাব দুষ্টুমির হাসি দিয়ে চোখ টিপ মারে।মায়া ওর কার্যকলাপে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।মেহরাব বলতে লাগে

“অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি আর নয়।এবার মীর মেহরাবের নিকট নিজেকে সোপর্দ করার জন্য প্রস্তুত হন মিসেস মেহরাব”

চলবে……

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৭ (স্পেশাল পর্ব)

টয়ার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই মেহরাব ফুলপুরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।রওয়ানা দেওয়ার আগে পুষ্পকে বলে রাখে কিন্তু মায়াকে বলতে নিষেধ করেছিলো।গ্রামে পৌঁছাতেই সন্ধ্যা লেগে যায়।সাথে করে আনা জিনিসপএ লোক মারফত আগেই মায়াদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে ও কলিমউল্লাহ মামুর সাথে দেখা করতে যায়।সেখানে মামুর সাথে সৌজন্য মূলক সাক্ষাত সেরে শ্বশুর বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।তারপর পথের মাঝে আকস্মিক মায়ার সাথে দেখা।

জামাই আসবে শুনে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ ভালোই আয়োজন করে ফেলেছে কাশেম মিয়া আর আয়মন।এটুকু তো করতেই হবে না হলে যে মান থাকবে না।মেহরাব এর সামনে অনেক ধরনের খাবার।খাবারের এতো পদ দেখে ভাবে কেমনে খাবে এসব?ও তো রাতে খুব অল্প খায়।তা ছাড়া বেশি খেলে তো সমস্যা হবে।ভদ্রতার খাতিরে অল্প অল্প করে খেয়ে ওঠে।যা খেয়েছে ওর জন্য বেশি খাওয়া হয়েছে তাই বাইরে গিয়ে একটু হাঁটা হাঁটি করছে মেহরাব।

এদিকে নতুন জামাইয়ের আজ প্রথম শ্বশুর বাড়িতে রাএিযাপন একটু ভালো বিছানা পাতি তো দিতে হবে।মেয়ের বিয়ের পর কাশেম মিয়ার থাকার ঘরের পাশে ছোটো করে নতুন টিন শেডের ঘর করে।নতুন জামাই জন এসে এখানে থাকবে সেই ভেবে।এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে কয়দিন পর আরেক মেয়ের বিয়ে দিবে এ সব ভেবেই এই ঘরটা করা।আয়মন আর পুষ্প মিলে খাটে নতুন বিছানা বিছিয়ে বেশ পরিপাটি করে দেয়।সেই সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস পাতি দিয়ে যায়।এদিকে মায়ার মনে অন্যকিছু চলছে।লজ্জা ভয় সংশয় জড়তা সব কিছু এসে ভর করছে।
সেই সময় মেহরাব ওকে কোলে করে ঘর পর্যন্ত এনে নামিয়ে দিয়েছিলো।এর পর ও ঘরের মধ্যে ডুকেছে আর মেহরাবের সামনে আসেনি।মনের অস্থিরতায় খাবারটাও ঠিক মতো খেতে পারেনি।

পুষ্প মেহরাবের কাছে এসে বলে

-দুলাভাই আর বাইরে না থেকে ঘরে যান।সব কিছু গুছিয়ে দিয়েছি।কিছুর দরকার হলে ডাক দিয়েন।

-পুষ্প তোমার বোন কোথায়?

-বুবু সে তো ঘরের মধ্যেই আছে,যান গেলেই দেখতে পাবেন।

-আমার আনা প্যাকেট টা দিয়েছিলে?

-দুলাভাই..গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ দিয়েছেন আর সেইটা করতে ভুলে যাবো?আর দাঁড়িয়ে থাকবেন না ভেতরে যান।

মেহরাব ঘরে ডুকে রুমের চারপাশ টা দেখে নেয়।আস্তে করে ঘরের দরজার খিল টা লাগিয়ে দেয়।চোখ দুটো একজনকে খুব করে খুঁজছে।ঘরে বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে,ছোট্ট হলুদ আলোর একটি বাল্ব জ্বলছে।রুমের এক কোনে মেহরাব ওর প্রিয়তমা স্ত্রী কে দেখতে পায়।তার সোনালী চুল গুলো ছেরে দেওয়া।কাছে গিয়ে দু কাঁধে হাত রাখে চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে দেয়,এমন কিছু হতেই মায়া কেপে ওঠে।শিহরণ বয়ে যায় সারা শরির জুড়ে।ভালোবাসার মানুষের পবিএ ছোয়ায় যে এক অন্যরকম শান্তি অনুভূত হয়।মায়া সেটা অনুভব করতে পারছে।মেহরাব ওকে নিজের দিকে ফেরায়।এতো দিন ধরে একসাথে থেকেছে কখনও এমন লাজে রাঙ্গা মুখটি দেখেনি।হয়ত সে সময় গুলো আর আজকের সময়টার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তাই।এখনও মায়া মাথা নিচু করে আছে।

মেহরাবের পছন্দ করে আনা শাড়িটি পরেছে মায়া।টকটকে লাল রংয়ের শাড়ি।ইচ্ছে ছিলো বিয়ের সময়ে এরকম শাড়িরে বউ সাজিয়ে ওর ইচ্ছাটা পূরণ করবে।সেটা হয়নি তো কি হয়েছে আজ সেই ইচ্ছাটা পূর্ণ হলো।লজ্জায় লাল হওয়া লাজুক লতার মুখ খানি কাছ থেকে দেখতে থাকে।

-মা শাহ আল্লাহ কি সুন্দর লাগছে আমার বউ টাকে।আমি এ ভাবেই মন ভরে সারা জীবন তোমায় দেখতে চাই বউ।

মায়া লাজে মেহরাবের বুকে মুখ লুকায়।

-উহুম এভাবে নিজেকে লুকালে চলবে না।অনেক সময় নিয়ে দেখতে চাই।বড্ড দেরি করালে বউ,জানো কতো কষ্টে আমার সময় গুলো পার করেছি শুধু এই দিনটির আশায়।

মায়া এবার সাহোস করে মেহরাবের চোখে চোখ রাখে।ঐ চোখে রয়েছে অজস্র ভালোবাসা আর অনেকদিনের জমানো আকুলতা।বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে ওঠে মায়ার।ও তো এসবের কিছুই ভাবেনি।ভাববে কি করে ওকে তো মেহরাব ঘুণাক্ষরে বুঝতে দেয়নি মেহরাব ওকে কতোটা ভালোবাসে।কয়েক মিনিট ধরে দুজন দুজনের প্রতি নিষ্ফলক দৃষ্টি বিনিময় হয়।এতো শক্ত পোক্ত ব্যাক্তির চোখ লাল দেখে মায়ার মনটা হা হা কার করে ওঠে।পুরুষ মানুষের চোখ থেকে এতো সহজে জল গড়ায় না।কিন্তু হারানোর ভয় তো সবার মনেই থাকে।এই প্রথম মায়াকে হারানোর ভয় মেহরাব পায়নি?আরো আগেই সেটা পেয়েছিলো।হাল ছেরে দিয়েছিলো কিন্তু ভাগ্য ওকে হারতে দেয়নি।সঠিক সময়ে মেহরাব ওর মনের রাণীকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেলেও অপেক্ষায় ছিলো মায়ার সম্মতির জন্য।আজ ওর জন্য খুশির দিন,তাই আনন্দে চোখে জল আসতেই পারে।

“এই পুরুষটিকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।নিজেকে সপে দিবো তার কাছে।ভালো তো আমিও বেসেছি খুব খুব।আর নয় দূরত্ব!উজার করে সবটুকু ভালোবাসা দিতে চাই।”

মায়া একটু উঁচু হয়,মেহরাবের নাগাল পাচ্ছে না।মেহরাব বুঝতে পেরে একটু ঝুকে মায়ার দিকে।মায়া এবার নাগাল পেতেই মেহরাবের দু চোখে পর পর অধর ছুইয়ে দেয়।এই প্রথম প্রিয়তমার ভালেবাসার স্পর্শ পেয়ে মেহরাবের সারা শরিরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়।মায়ার শরির কাঁপছে একটু সরে যেতে চায় মেহরাব ওকে ধরে ফেলে।দুষ্টু হাসি দিয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁটের দিকে ঈশারা করে।
তার মানে হলো এই যে…

“শুধু এ টুকুতেই শেষ?এখানটাই তো আসল জায়গা,দাও না তোমার ঐ গোলাপী ঠোঁটের ছোয়া।না হলে যে কোনো কিছুই পূর্ণতা পাবে না”

মায়া ওর ইশারা বুঝতে পেরে পারেনা মাটির সাথে মিশে যেতে।এই লোকটা এতো নির্লজ্জ ক্যান?

মনে মনে ভাবলেও মেহরাব সেটার প্রতিউওর মুখে দিয়ে দেয়

-শখের নারীর কাছে সব পুরুষই নির্লজ্জ হয়ে থাকে,জানো না তুমি?না জানলেও সমস্যা নেই আজ প্রাকটিক্যালি বুঝিয়ে দিবো।

এমন কথায় মায়া ওকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে পেছনে ঘুরে দাড়ায়। দুজনের মাঝে দূরত্ব ঘুচিয়ে মায়ার ডান কাঁধের এক পাশের চুল গুলো সরিয়ে গলায় নাক ডুবিয়ে দেয় মেহরাব।ওর বাম হাত মায়ার শাড়ি ভেদ করে পেট স্পর্শ করে।মায়া ওর এমন পা’গলাটে ছোঁয়ায় নিজেও পা’গল প্রায়।কয়েক মিনিট এভাবে চলার পর মেহরাব মায়াকে ওর দিকে ঘুরিয়ে অধরে অধর রাখে।এ যেনো এক অন্যরকম সর্গীয় সুখ,দুজনের মাঝে সুখের আদান প্রদানের ক্রিয়া চলছে।মায়ার দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা।মেহরাব ওকে ছেরে দেয়,হাফসাতে থাকে দুজনই কিন্তু এটুকুতে যেনো থেমে থাকতে চায় না দুটি মন।একটা সময় প্রিয়তমার মাঝে পরম সুখ পেতে হারিয়ে যায় দুটি মন।মায়ার মাঝে ডুব দেয় মীর মেহরাব”দুটি হৃদয়ের মিলনের মধ্য দিয়ে এতো দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে।

~~~~~~

মধ্য রাত চারদিকে নিরবতা বিস্তার করছে।আধ খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো হাতছানি দিচ্ছে।মুহূর্ত টা বেশ মনোরম পরিবেশ।এই সময়টা কখনও মেহরাব উপভোগ করেনি।আজ ওর মায়াবিনীকে সাথে করে সময়টা উপভোগ করছে।মেহরাবের খোলা বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে রেখেছে মায়া।চোখ বন্ধ কিন্তু মেহরাব জানে মেয়েটা এখনও লজ্জায় ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে রেখেছে।বাইর থেকে আসা জোস্নার আলোতে মায়ার মুখ খানি দেখছে।ওর তো মাঝে মধ্যে বিশ্বাসই হয় না প্রথম দেখার সেই মেয়েটি আজ ওর ঘরনী?এ সব ভাবতেই জোড়ে ঝাপটে ধরে মায়াকে।মায়া মৃদু স্বরে আহ শব্দ করে ওঠে।

ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বলে

-এই টুকু চাপে ব্যাথা পাও অথচ সওর কেজি ওজন তো ঠিকই সহ্য করতে পেরেছো।

মেহরাবের ঠোঁট কাটা কথা শুনে মায়ার আবার কান গরম হয়ে ওঠে।বুকে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়।

-ছিঃ এতোটা বেশরম আপনি?

-আরে ব্যাথা পাই যে,আর কি বললে বেশরম?সবটা আমার এই বউটার জন্যই হয়েছি বুঝলে।আর বউয়ের জন্য নির্লজ্জ হতে দোষের কিছু নেই।

মায়া একটু আমতা আমতা করে মেহরাব কে বলে

-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

-করো তবে সময় বেশি নিবে না দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যেতে চাই।

-আপনি থামবেন?নাকি আমি উঠে সোজা বড়ো ঘরে গিয়ে পুষ্পের সাথে শুয়ে পরবো।

-তুমি ইচ্ছে করলেও পারবে না এটা আমার বিশ্বাস।এবার বলে ফেলো ফটাফট।

-সই করা কাগজটা কিসের দলিল ছিলো?

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে মেহরাব বলে

-সেটা শুনে এখন কি হবে?যে আশায় ছিলাম সেটাতো তুমি ভেস্তে দিলে।

-তবুও বলেন না,না শুনা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।

-কি বললে এতো কিছু করলাম তাও শান্তি পাচ্ছো না।

-উফ আবার ইয়ার্কি?

-আচ্ছা শুনো তা হলে..আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো শহরের বাইরে মনোরম পরিবেশে একটা বাংলো বাড়ি করার।তবে সেটা আর করা লাগে নি।রেডিমেড পছন্দ মতো বাংলো বাড়ি পেয়েও যাই।আর দেরি না করে কিনে নেই।আর সেটা তোমার নামে।ভেবেছিলাম ঐ খানে ছোটো খাটো হানিমুনে গিয়ে প্রথম বাসর টা সেরে নিবো।কিন্তু দেখো কি ভাগ্য আমার বাংলো বাড়ি রেখে শ্বশুর বাড়িতেই প্রথম বাসরটা হলো।
বলেই মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে ফেলে।

এসব শুনে মায়ার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে যায়।মেহরাব কি করলো আর ও কি বুঝলো।এ জন্যই বলে অতি চালাকে গলায় দ”ড়ি।মেহরাব ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে কথা গুলো শুনে ওর মন খারাপ করেছে।কিন্তু মেহরাব সেটা করার সুযোগ দেয় না।জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে মায়াকে।একটা সময় আবার মায়ার মাঝে ডুব দেয় মেহরাব।অতল সুখে হারিয়ে যায় দুটি মন একসাথে।

চলবে…..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৮

শ্বশুরের দেওয়া লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেন্জি পরে আছে মেহরাব।এক হাত দিয়ে লুঙ্গি ধরে অন্য হাতে নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করছে।এমন লুকে মেহরাবকে দেখতে বেশ লাগছে।পাশেই মায়া তোয়ালে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মেহরাব কে দেখছে আর মিটি মিটি হাসছে।ওর এমন হাসি দেখে মেহরাব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে কেনো হাসছে?মায়া মুখ চেপে হাসছে আর বলে

-আপনাকে লুঙ্গি আর এই গেন্জিতে বেশ সুন্দর লাগছে।

-সুন্দর কে সবসময়ই সুন্দর লাগে।শহরের হোক আর গ্রামীন পোষাকে ই হোক না কেনো।তা ছারা আমি কখনও এ গুলো পরিনি।শ্বশুর আব্বা এতো শখ করে আনছে তার মান তো রাখাই লাগবে নাকি?

-হুম সেটা ঠিক আছে কিন্তু লুঙ্গি টা সাবধানে সামলিয়ে রাখবেন কিন্তু।

-কেনো আগে পরিনি বলে কি সামলাতে পারবো না?শোনো যে ভাবে পরেছি তুমি এটার সাথে ঝুলে থাকলেও খুলে পরবে না বুঝতে পারছো?

-হুম বুঝলাম কিন্তু আপনার জন্য বাড়ির ভেতরেই তো পানির ব্যাবস্থা করা হয়েছে এখানে আসলেন কেনো?আপনি তো এর আগে খালে কখনও গোসল করেননি।

-করিনি আজ করবো।কোনো একদিন বলতে তো পারবো শ্বশুর বাড়ির পাশে খাল আছে।আর মন ভরে সকাল সকাল খাল থেকে গোসল করেছি।এটাও কম কিসে বলো?

কথা বলতে বলতে কাঠের ঘাটলার সিড়ি বেয়ে নেমে শেষ প্রান্তে গিয়ে বসে মেহরাব।মায়া মগ দিয়ে গোসল করার কথা বললে মেহরাব জানায় ও নিচে পানিতে নেমে ডুব দিয়ে গোসল করবে।মায়া আর কিছু বলে না।এই মুহূর্তে মানুষটা ওর নিষেধ মানবে না ওর বুঝা হয়ে গেছে।
ঠিক ঐ সময়ে পুষ্প আসে মায়ার সামনে।মনে হচ্ছে ও এখানে দৌড়ে আসছে,হাফসাতে লাগে।মায়া ওর অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?পুষ্প একটু দম নিয়ে বলতে লাগে

-বুবু একটা সু সংবাদ আছে

-সু সংবাদ..কিসের বল তো?

-শুনলাম ঐ শয়তান রমজান কে রাইতের বেলায় কারা জানি হাত পা বাইন্ধা খুব মারছে।প্রায় আধমরা কইরা ফালায়া রাখছে।এহোন নাকি পঙ্গু হাসপাতাল নিয়া ভর্তি করছে।

এ কথা শুনে মায়া চমকে ওঠে।

-কি বলিস কারা করছে এসব?

-সেইটা আমি কেমনে কমু তয় এক্কেরে ঠিক হইছে।বদের হাড্ডি কোথাকার এবার কর বেশি বেশি বিয়া আর মাইয়্যা গো জ্বা’লাতন।

মায়ার গতোকাল সন্ধ্যার কথা মনে পরে।এদিকে সব কথাই পাশ থেকে মেহরাব শুনছে।ঢোক গিলে মায়া সন্দেহের চোখে মেহরাবের দিকে তাকায় কিন্তু লোকটার মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই।মায়া নজর সরিয়ে নেয়।এ সব ও কি ভাবছে ? সে কেনো এমন করবে?তা ছাড়া ও তো কিছু বলেনি আর মেহরাবের তো জানারই কথা নয়।ওদের কথার মাঝে মেহরাব পানিতে নেমে কয়েকটা ডুব দিয়ে উপরে চলে আসে।পুষ্প চলে যায় মেহরাব মায়ার কাছে এসে দাড়ায়।ওকে অন্যমনস্ক দেখে ডাক দিয়ে বলে

-এ ভাবে দাড়িয়ে অন্য কারোর কথা না ভেবে দয়া করে তোয়ালে টা দাও।না হলে এ অবস্থায় সারাদিন এখানেই দাড়িয়ে থাকতে হবে কিন্তু।শেষে দেখা যাবে ভেজা অবস্থায় থেকে থেকে জ্বর হয়ে গেছে।

মায়া ওর কথা শুনে তারা তারি হাতের তোয়ালে টা এগিয়ে দেয়।মেহরাব ওর কান্ড দেখে একটু ইমোশনাল ফেস করে বলতে লাগে

-রাত ভর আমাকে দিয়ে এতো কষ্ট করালে,নিজেই নিজের গোসলটাও সেরে নিলাম আবার এখন এই কাজ টাও নিজের করতে হবে? হাহ…মেহরাব এই ছিলো তোর কপালে তোর বউ তো স্বামী সেবার কিছুই বুঝে না।

ওর কথা শুনে মায়ার ওপর আবার ও একরাশ লজ্জা ভর করে।না চাইতেও এই খোলা জায়গায় তোয়ালে দিয়ে মেহরাবের মাথা মুছে দেয়।বুকের কাছ টা মুছে দিতে চাইলে মেহরাব ওর হাত ধরে ফেলে।

-উহুম আর লাগবে না বাকিটা আমি নিজেই করতে পারবো।এসব প্রাইভেট পার্ট গুলোর সেবা শুশ্রুষা তোলা থাক।ব্যাক্তিগত রুমের মধ্যে করে দিও।

লজ্জার ওপর লজ্জা দিচ্ছে ওকে মেহরাব।

-হয়েছে এবার চলো আমাদের কিন্তু শহরের দিকে রওয়ানা হতে হবে।

মায়া মাথা নেরে সম্মতি জানায়।সকালের খাবার সেরে নিজের সব কিছু গুছিয়ে নেয় মায়া।ওদের গাড়ি কলিমউল্লাহ মামুর বাড়িতে।মেহরাব ড্রাইভার কে কল করলে মায়াদের বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি আসে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা রওয়ানা হয় শহরের পথে।
আজকের জার্নিটা ওদের কাছে আলাদা স্পেশাল।দুজনের মনেই খুশি খুশি বিরাজমান।মায়া গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুখ বের করে দিয়ে রেখেছে।আজও মেহরাব ওর চুল থেকে ক্লিপটা খুলে দেয়।বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।মেহরাব ওর বউয়ের এমন রূপ দেখে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে।

যাএা পথে কয়েক বার গাড়ি থামিয়ে মায়া নেমেছে।এটা ওটা খেয়েছে,এতে মেহরাব বাধা দেয়নি ওর সাথে নিজেও এ সময়টা উপভোগ করেছে।ওর মতে জীবনের প্রতিটি ভালো সময় গুলো স্মরনীয় রাখতে হলে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে হবে।না হলে জীবনের সুখ বলতে যে জিনিসটা রয়েছে সেটা অজানা অচেনা রয়ে যাবে।

গাড়িতে বসেই মেহরাব নিজের ল্যাপটপ ওপেন করে অফিসিয়াল কাজ করছে।অন্যদিকে মায়া ঘুমিয়ে গেছে মেহরাবের কাঁধে ওর মাথা।মেহরাব মায়াকে সরিয়ে এনে এক সিটে পা দিয়ে ওর মাথা নিজের কোলে দিয়ে শোয়ায়।ঘুমের মধ্যেই মায়া ওর পেট জড়িয়ে ধরে।মেহরাব ওর মায়াবিনীর এমন কাজে মুচকি হাসে।আলতো করে ওর কপালে অধর ছুয়ে দেয়।এই অবস্থায় ওর আর কাজ করতে মন চাচ্ছে না।ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রেখে নিজেও সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

~~~~~~

দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে যায়।মেহরাব ভিষণ ব্যাস্ত ওর বিজনেস নিয়ে।এর মধ্যে মায়ার রেজাল্ট বের হয়েছে।ও যে রকম ভাবছিলো তার চাইতে বেশি ভালো করেছে।মেহরাব ওর এই ফলাফলে সন্তুষ্ট।যদিও মায়া এই বিষয়ে বেশ চিন্তিত ছিলো।যাক সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ভালো একটি ভার্সিটি তে এডমিট হয়।
শহরের নাম করা পাঁচ তারকা হোটেলে আজ সন্ধ্যার পরে মেহরাবের অফিসিয়াল মিটিং এর আয়োজন করা হয়েছে।ভেবে রেখেছে মায়াকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।বিকেলে বাসায় ফিরে মায়াকে বললে ও খুব খুশি হয়।মেহরাব মাঝে মধ্যে মায়ার জন্য গিপ্ট নিয়ে আসে।সে গুলো পেয়ে মায়া অনেক খুশি হয় আর এই খুশিটা দেখার জন্যই মেহরাব এই কাজ টা করে।আজও মেহরাব মায়ার জন্য একটা গিপ্ট আনে।প্যাকেট খুলে দেখে একটা সাদা রংয়ের গাউন।এটা পেয়ে মায়া অনেক খুশি হয়।মেহরাব বলে রেখেছে এটা যেনো আজকে পরে যায়।

সন্ধ্যার পর মেহরাব রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে মায়ার জন্য।কতোক্ষণ ড্রইংরুমে বসে ঘরি দেখে আবার রুমের দিকে পা বাড়ায়।মনে মনে ভাবে সত্যি সব মেয়েরাই একই রকম। কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হতেই সময় লাগায় অনেক।রুমে ডুকেই দেখে মায়া পিঠে হাত দিয়ে কিছু একটা করছে।কাছে গিয়ে দেখে জামার পেছনের চেইন লাগাতে গিয়ে চুলে আটকে গেছে।আর পারছে না চেইন উপরে তুলতে।মেহরাবের এবার রাগ লাগে মায়ার ওপর।

-আমাকে ডাক দিতে পারতে,কি করেছো এ গুলো?দেখেছো কতো গুলো চুল আটকে গেছে?আরেকটু হলে তো সব ছিরে ফেলতে।

এ দিকে মায়া অবাক হচ্ছে ,চুল আটকে গেছে ব্যাথা আমি পাচ্ছি উল্টো সে চুল নিয়ে পরে আছে।আমার চাইতে তার চুলের প্রতি দরদ কতো।
মায়াকে সামনে তাকাতে বলে মেহরাব খুব সাবধানে চেইন থেকে চুল গুলো ছারিয়ে নেয়।একটা চুল ও ছিরতে দেয়না।

-চুল গুলো আগে বাধলে তো এমন টা হতো না।এরপর থেকে আগে চুল বেধে তারপর ড্রেস পরবে।ওকে

-ঠিকআছে

-গেট রেডি নাউ

মায়া সাজগোজ শেষ করে আয়নায় নিজেকে দেখে নেয় সব ঠিক আছে কিনা।তখনই চাখ পরে ওর পেছনে মেহরাব দাঁড়িয়ে।ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে বধূর পানে।মায়া ওর দিকে ঘুরে দাড়ায়।

-চলুন আমি রেডি

মেহরাব ওকে এক মিনিট থামতে বলে,ড্রেসিং টেবিলের ওপর মায়ার সাজের জিনিস পএ ঘেটে একটা কালো টিপ নিয়ে ওর কপালে পরিয়ে দেয়।

-এখন আমার মায়াকে কোনো অপ্সরার চাইতে কম সুন্দর লাগছে না।বরং বেশি সুন্দর লাগছে।

কথাটা শুনে মায়া অনেক লজ্জা পায়।মেহরাব ওর অতি নিকটে আসে।

-মন চাচ্ছে মিটিং ক্যান্সেল করে বউকে ঘন্টার পর ঘন্টা আদর করি।

এ কথা শুনে মায়া ওকে মৃদু ধাক্কা দেয়।কিন্তু মেহরাব সরে না আরো কাছে আসে।গোলাপী রাঙ্গা ঠোঁটে আজ হালকা কৃএিম রংয়ের ছোয়া পেয়েছে।মেহরাব আলতো করে মায়ার অধরে ওর অধর চেপে ধরে কয়েক সেকেন্ডের জন্য।মায়ার শরিরে ভালোলাগার শিহরন বয়ে যায়।স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে ছেরে দিয়ে কপালের কালো টিপ টি নিয়ে নেয়।

-টিপ পরা অবস্থায় শুধুমাত্র মীর মেহরাবই দেখবে আর কেউ নয়।এখন ছেরে দিচ্ছি রাতে কিন্তু নো ছাড়াছাড়ি।

মায়া আর এ সব শুনতে রাজি নয় তারাহুরো করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ঘন্টাখানেক পরে হোটেলের সামনে গাড়ি থামে।দুজনে গাড়ি থেকে নামে।ফিরোজ আসে ওদের নামতে দেখে আর বলতে শুরু করে

-বড়োভাই এতো দেরি করলে হবে?ভাবি তো আর চলে যাচ্ছে না যখন তখন পাচ্ছেন তো।

-কি বলতে চাও ফিরোজ ক্লিয়ার করে বলো।

-না মানে কইতে চাইছিলাম যেটা ভাবছেন ওইটা না।

-আমি বুঝতে পারছি ফিরোজ তোমার মনের কথা।আর শুনো ঘড়ি দেখো আমি ঠিক সময়ে আসছি বরং তুমিই অনেক আগে চলে আসছো।ব্যাপার কি বলো তো?

-নাহ তেমন কিছু না।
ফিরোজ এর মনে তো অনেক কিছুই চলছে বেচারা পারছে না সে গুলো কারো কাছে প্রকাশ করতে।কেমনে কি বলবে ভেবেই মুখটা কালো করে ফেলে।বিরবির করে বলতে থাকে

“আজ সিঙ্গেল বলে মনের কথা কেউ বুঝে না।ফিরোজ তোর ব্যাবস্থা তোকেই নিতে হবে দেখছি”

“ভেতরে ডুকে সবার সাথে সৌজন্য মূলক সাক্ষাত সেরে নেয়।এরপরে মিটিং শুরু হয়ে যায়।মেহরাব মায়াকে কাছেই একটা জায়গায় বসিয়ে দেয়।বেচারি বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে।এই সময়ের মধ্যে কয়েক গ্লাস কোমল পানিয় খেয়ে নেয়।মিটিং শেষ হলে এক সাথে সবাই ডিনার সেরে নিবে তাই ইচ্ছে করলেই এখন খাওয়া যাবে না।মায়া আর বসে থাকতে পারছে না।
আবার মেহরাব ওকে বারবার বলেছে এখান থেকে যেনো না ওঠে।কিন্তু এতো সুন্দর জায়গা একটু ঘুরে তো দেখা দরকার।সেটা ভেবেই উঠে পরে।আশপাশটা একটু ঘুরে দেখে।সেখানে বুফে খাবারের আয়োজন তার একটা পাশে অনেক ধরনের ড্রিংস রাখা।সে গুলো আবার বিভিন্ন রংয়ের।মায়ার খুব ইচ্ছে হয় সে গুলো খেতে।কাছে গিয়ে প্রথমে কমলা রংয়ের পরে কালো রংয়ের ড্রিংস খায়।মূলত ওটা কোক ভেবেই খাওয়া।একটা খেয়ে আরেক টা ধরেছে এভাবে কয়েক গ্লাস খেয়ে নিয়েছে।গ্লাস গুলো আকারে ছোটো তাই বেশি খেতে পেরেছিলো।

এ দিকে ফিরোজ ওর বসার জায়গা ওকে না পেয়ে খুঁজতে থাকে।মেহরাবের এখনও মিটিং শেষ হয়নি।ফিরোজ একটু ঘাবরে যায় মায়া কই গেলো ভেবে।ওকে না পেলে বড়োভাই তো অনেক রেগে যাবে।তাই ফিরোজ দেখতে থাকে।একটু এগিয়ে পেয়ে যায় মায়াকে।কাছে যেতেই মায়া ফিরোজকে দেখে একটা হাসি দেয়।আর ওকেও খেতে বলে।ফিরোজ বুঝে যায় ঘটনা কি হয়েছে।ও মোটেও এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই।ততোক্ষণে মিটিং শেষ করে মেহরাব বাইরে চলে আসে। ফিরোজ ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলে।মেহরাব শুনেই মায়ার নিকট গিয়ে দেখে মায়া কেমন কেমন করছে।কি হয়েছে বুঝতে বাকি নেই।এখানে আর এক মুহূর্ত তাকে নিয়ে থাকা যাবে না।তাই ফিরোজ কে এখানের বাকি কাজের দায়িত্ব দিয়ে মায়াকে নিয়ে মেহরাব বেরিয়ে পরে।

নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে ওকে নিজে সোজা ওর নতুন কেনা বাংলো বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়।আজ ওর প্লান ছিলো এখানে আসার কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।সারাটা পথ মায়া আবোল তাবোল বকেছে।মেহরাব সবটাই বেশ কষ্টের সাথে সহ্য করছে।কি আর করার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী বলে কথা।

চলবে……..

(লেখার ভুল ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-১৪+১৫

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৪

ওয়াশরুমের শাওয়ার ছেরে ঘন্টা খানেক ধরে বসে আছে মায়া।

দু চোখে তার অশ্রুর ধারা বহমান।মনে অজানা এক ভয়ের ছাপ।হৃদয়টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।মনে মনে আওরাচ্ছে সত্যিই কি খুব দেরি করে ফেললাম?হারিয়ে ফেললাম বুঝি আমি আমার একান্ত আপন মানুষটাকে?যার জন্য ওর কোনো অনুভূতি ছিলো না।ধীরে ধীরে সেই মানুষটাকে ও ভালোবাসতে শুরু করেছে।হয়তো সেও ভালোবাসে কিন্তু আজ ওর ধারনা ভুল বলে প্রমাণিতো হলো।মেঝেতে বসে দুই হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে শব্দহীন কান্নার রেশ টা আবার বাড়িয়ে দেয়।
মায়া মেহরাবের নজরে আসার জন্য নিজেকে সাজায়।এতোদিনে ও সব কিছুই শিখে গেছে।গ্রামের সেই মায়া এখন শহরের আধুনিকতার ছোয়ায় নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে ছোটো টুলে বসে আয়নায় নিজেকে দেখে মুগ্ধ।আজ অন্য রকম লাগছে মায়াকে।নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না।এতো পরিবর্তন সব কিছু সম্ভব হয়েছে মেহরাবের জন্য।এতো সুন্দর একটা জীবন ওকে উপহার না দিলে আজ হয়ত কোনো অস্তিত্ব থাকতো না ওর।

সন্ধ্যার আগেই মেহরাব অফিস থেকে চলে আসে।মায়া সেজেগুঁজে আরেক রুমে বসে আছে।মেহরাবের সামনে যেতে ওর লজ্জা লাগছে।তবুও যেতে হবে যে,রুম থেকে বের হয়ে মেহরাবের রুমে এসে দেখে ও নেই।ড্রইং রুম থেকে মেয়েলী কন্ঠ ওর কানে আসে।একটু এগিয়ে ড্রইংরুমের দিকে যায়।থমকে যায় মায়া এটা ও কি দেখছে?একটি মেয়ে যে কিনা মেহরাব কে জড়িয়ে ধরে আছে।দেখে বুঝা যাচ্ছে মেহরাব ও বেশ মজা নিয়ে ধরে আছে মেয়েটিকে।আলিঙ্গন শেষে দুজন সোফায় বসে আয়েশী ভঙ্গিতে গল্প করছে আবার হাসছে।মায়া আর সামনে এগোয় না।

-তারপর.. এ ভাবে না জানিয়ে এসেছো এটা কিন্তু ঠিক করোনি।

-কি করবো মনটা যে দেশে পরে আছে তাই হুট করেই চলে আসলাম।তা শুনলাম আমাদের হিরো মীর মেহরাব নাকি বিয়ে শাদি করে সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে গেছে।

-হুম ঠিক শুনেছো

দুষ্টুমির স্বরে মেয়েটি বললো

-এখন আমার কি হবে?

মেহরাব তাকে বলে

-তোমার ব্যাবস্থা টাও শিগ্রই করে ফেলবো নো টেনশন

মেয়েটি ওর কথা শুনে মুচকি হাসে

-তা মিসেস মেহরাব কোথায় একটু দেখা করিয়ে দাও।

এদিকে মায়ার এমন একটা সিন দেখা লাগবে ও কখনও ভাবেনি।মনে মনে কষ্ট অনুভূত হলেও রাগ হচ্ছে প্রচুর।এই মেয়ের সাথে নির্ঘাত কোনো চক্কর আছে মেহরাবের।না হলে এভাবে জড়িয়ে ধরে?হেসে হেসে কথা বলে ?কই এতো দিন ধরে বিয়ে হইছে একটা দিনও তো ওকে ধরলো না।এতো হেসে হেসে ও তো কথা বললো না।ওহ ধরবে কেনো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে সে আমায়।তাই বলে কি অধিকার দিবে আমায়?সত্যিই আমি কতো বোকা।চোখের বাধ ভাঙ্গা জল আর সামলাতে পারছে না।চোখ মুছে দ্রুত ওয়াশ রুমে ডুকে শাওয়ার ছেরে দেয়।

রুমের দরজায় কড়া নারার শব্দ।কয়েক বার ডাকলেও মায়া সারা দেয় না।এতে মেহরাবের মনে দুঃচিন্তা উদয় হয়।এবার জোড়ে জোড়ে মায়ার নাম ধরে ডাকতে থাকে।মেহরাবের ডাকে মাথা তোলে মায়া মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।অতিরিক্ত ভেজার ফলে গায়ে কাপুনি চলে আসছে।কোনো মতে ভেজা শরির নিয়ে রুমে এসে কাপড় পাল্টে রুমের দরজা খোলে।হন্তদন্ত হয়ে মেহরাব রুমে ডুকে মায়ার সামনে আসে।মাথায় তোয়ালে পেচানো দেখে কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করে

-এই অসময়ে শাওয়ার নিয়েছো কেনো?

নিচের দিকে নত দৃষ্টি রেখে মায়া জবাব দেয়

-এমনি মন চাইলো তাই।

মেহরাব আর কথা বাড়ায় না।

-আমার সাথে আসো

-কোথায়?

-গেলেই দেখতে পাবে

মেহরাব মায়ার হাত ধরে ড্রইং রুমে নিয়ে আসে।

বাড়িতে আসা অতিথির সাথে মেহরাব মায়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

-মায়া এই হলো টয়া।ইউকেতে থাকে তোমাকে একটা সময় আমরা স্কুল আর কলেজ লাইফে এক সাথে পড়ালেখা করেছিলাম।

না চাইতেও মুখে হাসিটা বজায় রেখে মায়া টয়ার সাথে সৌজন্য মূলক কুশল বিনিময় করে।

-মেহরাব তোমার বউ তো দেখছি ভারি মিষ্টি একটা মেয়ে।কিন্তু মেহরাব আমাকে তোমার চোখে পরলো না?শেষমেশ কিনা এতো পিচ্ছি একটা মেয়েকে বিয়ে করলে?

কথাটা শুনে মেহরাব হাসে কিন্তু মায়ার মনে মনে রাগ লাগে।মন চাইছে ওকে কিছু কথা শুনাতে”পিচ্চি বিয়ে করছে তাতে আপনার কি? কিন্তু সেটা মুখে আর বলতে পারে না।

-তা মেহরাব তোমার বউ এই সময়ে শাওয়ার নিলো যে।ব্যাপার কি বলোতো?

-আরে সে রকম কিছু না ওর মন চাইছে তাই।

-ওহ আমি আরো ভাবলাম মেয়েটার ওপর মনে হয় যখন তখন ঝড় বয়ে যায়।
কথাটা বলেই টয়া মুখ চেপে হাসে।মেহরাব একটু কেশে নিয়ে বলে

-এই ছাড়ো এসব ফ্রেশ হয়ে নেও।রাতে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করবো।

মায়ার তো রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।কি সব লজ্জা ছাড়া কথা বার্তা বলছে আর সে গুলো শুনে মেহরাব মজা পাচ্ছে।টয়াকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায় মেহরাব।মায়ার এ সব একদমই সহ্য হচ্ছে না।
রাতের খাবার সেরে মেহরাব টয়ার সাথে গল্পে মেতে উঠেছে।মায়াকে ডাকলে মায়ার শরির ভালো নেই এ কথা বলে মায়া রুমে চলে যায়।মায়া রুমে বসে কান্না করতে থাকে “আমার সুখের ঘরে এ কোন আপদ আসলো।কিছু ভালো লাগছে না।মাথা টা কেমন করেছে আবার শরিরের তপমাএা বেশি মনে হচ্ছে।এরপরে মায়া মাথা ঘুরিয়ে পরে যায় আর কিছু মনে নেই ওর।

কেটে যায় দুদিন টয়া এখনও আছে ও নাকি আরো তিন চার দিন থাকবে।এ কয় দিন মেহরাব মায়ার সাথে তেমন কথা বলেনি।বলতে গেলে বেশি একটা সময় ওকে দেয়নি।যতোটুকু সময় ও ফ্রি থাকে সেটুকু সময় টয়াকে নিয়ে বাইরে সময় কাটায়।
আজ ছুটির দিন মেহরাব ঘুমিয়ে আছে।মায়া আরেক রুমে জানালার পাশে আনমনে বসে আকাশ দেখছে।টয়া ওর রুমে ডুকলে মায়া ফিরে তাকায়।টয়াকে বসতে বলে মায়া কিন্তু টয়া বসে না।মায়ার ছেরে রাখা লম্বা সোনালী চুল গুলো দেখে অবাক হয়ে যায়।

-ওয়াও মায়া তোমার চুল গুলে কতো সুন্দর।আমার তো মনে হয় মেহরাব তোমার চুল গুলো দেখেই পা’গল হয়েছিলো।

-আপনি ভুল বলছেন পা’গল তো দূরের কথা চুল রূপ কিছুই নয় ,সে আমাকে পরিস্থিতির চাপে পরে বিয়েটা করেছে।
কথাটা মায়া মনে মনে আওড়ায়।

-মায়া কি ভাবছো?

-কিছুনা

-আজ কিন্তু তুমি আমার সাথে বাইরে যাবে।

-কেনো?

-সামনে আমার বিয়ে মেহরাব তোমাকে কিছু জানায়নি?

-নাহ তাছাড়া তার এতো সময় কোথায় এ সব আমাকে জানানোর।

-হয়ত ওর মনে নেই আচ্ছা শুনো বিয়ের অনেক কেনাকাটা বাকি প্লিজ তোমাকে যেতেই হবে।

মায়া আর না করে না।বিকেলের দিকে মায়া আর টয়া বের হয়।শপিংমলের সামনে গিয়ে দেখে মেহরাব ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।মায়া ওকে দেখে বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে।
“ওহ সাহেব ও হাজির দেখছি তা হলে আমাকে আনার কি দরকার ছিলো।বিয়ে পর্যন্ত ঠিক ঠাক কেনাকাটা ও চলছে আর আমি কিছুই জানি না।আর জেনে কি হবে এবার তো পথের কাটা দূর করার জন্য কিছু একটা করতে হবে মায়ার।”
মায়াকে অন্যমনস্ক দেখে টয়া ওকে ডাক দেয়।মায়া নিজেকে ঠিক করে ওদের সাথে পা বাড়ায়।যা ঘটে ঘটুক ক্ষত বিক্ষত মন নিয়ে ওকে স্বাভাবিক থাকতে হবে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না।টয়া বেছে বেছে ওর বিয়ের জন্য পোশাক কিনলো।কয়েকটা মায়ার পছন্দের ও।অন্যদিকে মেহরাব কয়েকটা ড্রেস আলাদা ভাবে নিয়ে নিলো।সে সব মায়ার নজর এড়ায়নি।

“বাহ বিয়ের জন্য এতো এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে তার মধ্যে?বউয়ের জন্য বেছে বেছে ড্রেস ও কেনা হচ্ছে।মায়ার আর সহ্য হচ্ছে না।”

কেনাকাটা শেষে বাইর থেকেই ওরা খেয়ে দেয়ে বাসায় ফিরে।মায়া আজ আর ওদের রুমে যায় না।অন্য রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।মন ভালো করার জন্য বাড়িতে কল দিয়ে পুষ্পের সাথে কথা বলে।তবে ওকে ওর মন খারাপের কথা কিছুই জানায় না।কথা শেষ করে মায়া ঘুমিয়ে পরে।মেহরাব ওকে ডাকতে আসে কয়েক বার ডাক দিয়ে সারাশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারে মায়া ঘুম।নিজের রুমে ফিরে যায় মেহরাব।

—-

খুব সকালে মেহরাব আর টয়া বের হয়ে যায় একসাথে।আগামীকাল ওর বিয়ে।বিয়েটা বাইরের কোনো এক কমিউনিটি সেন্টারে হবে।মেহরাব টয়া কে বলেছিলো মীর ম্যানশনে বিয়টা করতে কিন্তু ওর ইচ্ছে ওখানে করার।তাই আর মেহরাব না করে না।

সারাদিন পার হয়ে যায় দুজনের কেউ আসেছে না দেখে মায়ার মন আরো বিষন্নতায় ভরে ওঠে।অবশেষে ওরা দুজনেই একসাথে বাড়িতে ফেরে।ড্রইং রুমে মায়া বসে ছিলো দুজনকে একসাথে হাসিমুখে দেখে মায়ার পিওি জ্ব”লে যাবার মতো অবস্থা।টয়া মায়ার সঙ্গে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়।মেহরাব ও রুমের দিকে পা বাড়ায় তবে মায়াকে ওর রুমে আসতে বলে।মায়া আর না করতে পারে না।মেহরাব ফ্রেশ হয়ে একটা প্যাকেট এনে মায়ার সামনে রাখে।প্যাকেট টি খুলতেই দেখে এটা একটা বিয়ের শেরওয়ানি।খুবই সুন্দর আর দেখেই মনে হচ্ছে অনেক দামি।মেহরাব মায়ারে জিজ্ঞেস করে

-দেখোতো কেমন হয়েছে ?

বেচারি এমনিতেই মেগরাবের শোকে কাতর তার ওপর বিয়ের শেরওয়ানি দেখে দম বন্ধ হবার মতো অবস্থা হয়েছে।কোনো মতে চাপা গলায় বললো

-খুব সুন্দর হয়েছে

-আচ্ছা বলোতো এটা পরলে মানাবে তো?

-হুম খুব মানাবে

বলেই টুপ করে চোখ থেকে এক ফোটা জল গরিয়ে পরে তবে সেটা মেহরাব দেখতে পায় না।মায়া রুম থেকে চলে যেতে লাগলে মেহরাব ওকে বসতে বলে।মায়া বিছানার ওপর বসে পরে।মেহরাব আলমারির ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে আনে।সেখান থেকে একটা কাগজ বের করে।দু তিন পৃষ্ঠার কাগজ হবে।মায়ার হাতে এনে দেয় সে গুলো।মায়া কিছুই বুঝতে পারে না কি করবে এ গুলো দিয়ে।মেহরাব একটা কলম দিয়ে বললো

-এই কাগজ গুলোতে সাইন করে দাও

-কিসের কাগজ এ গুলো?

-এগুলো ডিভোর্স পেপার দাও তো জলদি সাইন করে দাও।

এ কথা শুনে মায়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরে।হা ও যা যা ভেবেছে সবই সত্যি।এটাই তো বাকি ছিলো না হলে বিয়েটা করবে কিভাবে? মন কে বুঝ দিয়ে বহু কষ্টে কাপা হাতে তিনটা পেপারে মেহরাবের নির্দেশ মতো সাইন করে দেয় মায়া।মেহরাব হাসিমুখে পেপারস গুলো নিয়ে নেয়।
মায়া ভাবে “এই পর্যন্তই বুঝি ওর সংসার জিবনের সমাপ্তি ঘটলো।কিন্তু একটা বার পেপারস্ গুলো মায়া পড়ে দেখেনি অবশ্য পড়ার দরকার ও নেই।তা হলে কষ্টটা দ্বিগুন হয়ে ওর মনে আরো পীড়া দিবে।শুধু রাত টা পার হওয়া বাকি এরপরই ওর আসল গন্তব্যে রওয়ানা দিবে।”

চলবে…..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৫

বালিশে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছে মায়া।বুকে অজস্র ব্যাথা যন্ত্রণায় জর্জরিতো।মনে হচ্ছে চিৎকার করে কান্না করতে পারলে বুকের কষ্ট টা একটু হলেও লাগব হতো।এই মুহূর্তে কাউকে বুকে চেপে রাখা কথা গুলো বলতে পারলে শান্তি পেতো।কিন্তু নাহ এ সব কথা কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না।

“সকাল সকাল কাজে যাবার জন্য সবটা গুছিয়ে বের হতে যাচ্ছিলেন কাশেম মিয়া।ঐ সময়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে মায়া।মেয়েকে এ সময়ে আসতে দেখে খানিকটা অবাক হন।হাতের জিনিসপএ রেখে এগিয়ে যান মেয়ের নিকট।হাসিমুখে বাবার সাথে কথা বললো মায়া।ড্রাইভার কে বিদেয় দিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে বাবা মেয়ে।আয়মন কে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলেন কাশেম মিয়া।আয়মন একটু বিরক্ত মুখ নিয়ে সামনে আসতেই মায়াকে দেখে বিরক্ত মুখ খানা মুহূর্তে পরিবর্তন করে ফেলে।হাসি মুখ বজায় রেখে মায়ার সাথে কথা বলে।বাড়ির কুশলাদি জিজ্ঞেস করে।মায়াও ঘুনাক্ষরে টের পেতে দেয় না যে মায়া রাগ করে চলে এসেছে।”

-বুবু তুমি কানতাছো ?

পুষ্পের কথা শুনে চোখ নাক মুখ ওরনার আচঁল দিয়ে মুছে নেয় মায়া।মুখে মিথ্যে হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলে

-কই নাতো কান্না করুম ক্যা?

-কিন্তু বুবু আমি স্পষ্ট দেখতাছি তুমি কানছো আর তোমার চোখ মুখ ফুইলা গেছে।

মায়া ওকে থামতে বলে কেউ শুনে ফেলবে আস্তে বলতে বলে।

-বুবু আমি সেই ছোট্টটি নেই অনেক কিছু বুঝি ।আমি এইটাও বুঝছি তুমি দুলাভাইর লগে মান অভিমান কইরা চইলা আইছো।কিন্তু বুবু আমার ওমন ভালো দুলাভাইর লগে তুমি ঝগড়া করতে পারলা?

পুষ্পের কথা শুনে মায়ার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।ওকে কি ভাবে বলবে ওর দুলাভাই ওকে ঠকাচ্ছে।আরেকজনকে বিয়ে করতাছে।শুধু তাই না মেহরাব ওকে দিয়ে ডিভোর্স এর কাগজে সই ও করিয়ে নিয়েছে।

-বুবু এতো কি ভাবতাছো? আমারে কও কি হইছে আমি কাউরে কিছু কমু না কসম করলাম।

পুষ্পের কথা শুনে মায়া তবুও কিছু বলে না।কিন্তু একটা কিছু বলে তো বুঝ দিতে হবে

-শোন বইন তার সাথে আমার তেমন কিছুই হয় নাই।আর প্রতিটি সংসারে জামাই বৌর মধ্যে একটু একটু ঝগড়া হয়ে থাকে।আর এমনিতেও বাড়ির সবাইর জন্য মন পুড়’তেছিলো তাই চইলা আসলাম আর কিছু না।

পুষ্প এবার একটু চিন্তা মুক্ত হয়।তবুও বুঝতে পারে মায়ার মন খারাপ।হয়তো দুলাভাইর জন্য মন পুড়’তাছে।তাই বোনকে জোড় করে বাইরে নিয়ে যায়।
-বুবু আসো আমরা আজ গাছ থেইক্যা কাঁচা তেতুল চালতা আমড়া এ সব ছিরে মাখা খাবো।মায়ার ও খুব মন চাইছে এসব খেতে।অনেকদিন এসব নিজের হাতে পেরে খাওয়া হয় না তাই দু বোন বাড়ির বাইরে বের হয়ে যায় এ সব খাওয়ার জন্য।

——-

আজ আয়মন মেলা খুশি।বড়ো মেয়ে আসছে শহর থেকে।তাই ভালো মন্দ রান্না করার জন্য রান্না ঘরের কাজে লেগে পরছে।বড়োলোক বাড়ির বৌ এখন তো মেলা খাতির যত্নাদি দরকার।শুধু আজ বলে কথা নয় সবসময়ই আয়মনকে যে এই কাজটা করতে হবে।কারন আয়মন মনে মনে ভেবে রেখেছে যে করেই হোক বড়ো মেয়ের জামাইর মাধ্যমে ছোটো মেয়ের বিয়েটা দিতে পারলে নিশ্চিত এমন একটা বড়োলোক জামাই পাবে।তাই ওর যা যা করার ও করবে।এ সব ভাবতে ভাবতে মায়ার পছন্দের রান্না গুলো আয়মন গুছিয়ে রান্না বসিয়ে দেয়।

আসপাশের পাড়া ঘুরে দুপুরের দিকে মায়া আর পুষ্প বাড়ির পাশের খাল থেকে গোসল সেরে বাড়ি আসে।
সবাই এক সাথে খাবার খেতে বসে।মায়া খেতে বসে,সামনে তাকিয়ে দেখে “ওর পছন্দের খাবার গুলো আয়মন রান্না করছে।মনে মনে খুব খুশি হয়।আয়মন নিজ হাতে মায়ার প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছে।মায়ার আনন্দ হচ্ছে আবার কষ্ট ও হচ্ছে।আগের কথা গুলো মনে পরছে।একটা সময় কতোই না খাবারের কষ্ট পেয়েছে।পছন্দের খাবার খাওয়া তো দূর পেট ভরেই শুধু ভাত ও আয়মন খেতে দিতো না ওকে।আর আজ সেই মানুষটা নিজ হাতে খাবার বেরে দিচ্ছে মায়াকে।
কি অদ্ভুত তাই না?
এর মাঝে আরেক ভয় ওর মনে হানা দেয়।ও তো একেবারে চলে এসেছে।এ সব শুনলে সাবাই কি বলবে? কিভাবে এসব মেনে নিবে?আবার তো ওকে সেই আগের মতো ঘৃণা করবে আয়মন।ওর ভাবনার মাঝে আয়মন বলে ওঠে

-মায়া কি ভাবছিস মা খেয়ে নে।

মায়া আপাততো খেতে চায় এ সব পরে দেখা যাবে।যদি এ বাড়িতে জায়গা না হয় তো অন্য কোথাও চলে যাবে।এখন জীবন মানে ওর কাছে অনেক কিছু।দরকার পরলে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিবে।সেই ভরসা ওর নিজের ওপর আছে।মায়া মনোযোগ সহকারে খেতে থাকে।এর মধ্যে কাশেম মিয়া বলে

-একা আসলি যে মা?জামাইরে নিয়া আসলেই পারতি।

বাবার কথা শুনে মায়ার বিশম লাগে।কাশতে থাকে অনবরত পাশ থেকে আয়মন এর গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় মায়াকে।মায়া হাত বাড়িতে পানি নিয়ে খেতে থাকে।পুষ্প ওর মাথায় ফু দিচ্ছে।আয়মন স্বামীর ওপর রাগ দেখায়

-দেখছেন মাইয়্যাটা খাচ্ছে,খাওনের সময় এতো কথা কইতে হয় না।জামাই ব্যাস্ত মানুষ হেয় কি সব সময় আসবার পারবো?

বউয়ের কথা শুনে কাশেম মিয়া এবার বুঝতে পারে।মায়াকে আরামে ধীরে ধীরে খেতে বলে।বুঝে নেয় আসলেই তো মেহরাব ব্যাস্ত মানুষ চাইলেই সব সময় আসতে পারে না।মেয়েকে আর কিছু জিজ্ঞেস করে না।মায়ার কাশি থেমে যায় বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে রুমে চলে যায়।

~~

বিকেল হতে চললো’এতো সময় পেরিয়ে গেলো কিন্তু মেহরাব একটা বার ওর খোঁজ নিলো না।ভাবতেই আবার বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।আবার নিজেকে নিজে শান্তনা দেয় কেনো মনে করবে সে যেটা চাইছে আমি তো তো সেটা করে তাকে মুক্তি দিয়ে আসছি।এতোক্ষণে নিশ্চই বিয়েটা হয়ে গেছে না হলে হবে।মনে হয় ঐ শেরওয়ানিটা পরছে।কেমন লাগছে তাকে? নিশ্চই অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।লাগার কথা সে তো সবসময়ই সুন্দর।এ সব ভাবতেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।পরক্ষণে নিজেকে ঠিক রাখার বৃথা চেষ্টা করে।যা খুশি তাই করুক আমার কি?যে আমাকে চায় না তাকে নিয়ে এতো ভেবে কি হবে।সুখে থাক তার নতুন বউকে নিয়ে।

সে সময় পুষ্প ওকে ডাকতে ডাকতে রুমে ডুকে।

-বুবু তোমার মোবাইল কই?

পুষ্পের কথায় মায়ার মনে পরে যায় ও তো ফোন আনেনি।ইচ্ছা করেই আনেনি শুধু তাই না মায়া মেহরাবের কোনো জিনিসপএ ই আনেনি তাই ফোনটা আনার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

-ইশ রে ফোনটা ভুলে বাসায় রেখে এসেছি।

-বুবু তোমার ভুলো মন কবে থেকে হইলো?তুমি তো এমনটা ছিলা না।

পুষ্পর কথা শুনে মায়া কি বলবে ভেবে পায় না।বাদ দে তো আগে বল ফোন দিয়ে কি করবি?

মায়ার এমন কথা আর চাওনি তে বুঝতে পারে কিছু একটা ও লুকাচ্ছে।তাই আর পুষ্প বেশি কিছু বলে না।
মায়ার আর ঘরের মধ্যে শুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।একটু বের হতে পারলে ভালো লাগতো।আসার পরে পুষ্পের থেকে শুনেছে ওর বান্ধবী আয়েশার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাই ভাবলো ওর কাছ থেকে একটু ঘুরে আসা যাক।তাহলে মনটাও ভালো লাগবে।
নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে ওরনাটা ভালো ভাবে শরিরে জড়িয়ে মায়া বের হয় আয়েশার বাড়ির দিকে।ওদের বাড়ির দূরত্ব দশ থেকে পনেরো মিনিট এর।অনেক দিন পরে চেনা জানা পথে হাটছে মায়া ভালো লাগছে তবে এর মাঝে একটু ভয় ও করছে।পুরোনো কিছু কথা ওর মনে পরে যায়।তবে ভালো ভাবেই আয়েশার বাড়িতে পৌছে যায় মায়া।মায়াকে দেখে আয়েশা জড়িয়ে ধরে।অনেক খুশি আয়েশা।ও তো ভাবতেই পারছে না মায়া ওর সাথে দেখা করতে এসেছে।আয়েশা জানে মায়া অনেক বড়োলোক বাড়ির বউ।আয়েশা এর আগের বার ওদের বাড়ি গিয়ে দেখা করেছে আর আজ কোনো খবর ছারাই মায়া ওকে দেখতে এসেছে।

দুজনের মধ্যে অনেক দিনের জমানো কথা বলা শুরু হয়ে যায়।আয়েশার হবু বর কে?কোথায় থাকে?কি করে?কোথায় বাড়ি?এ সব নিয়ে নিয়ে দুজনের মধ্যে অনেক কথা বার্তা হয়।
আয়েশা মেহরাব কে নিয়ে কিছু বলতে গেলে মায়ার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।কিছু বলে না ওর এভাবে চুপসে যাওয়া দেখে মায়া কিছু বুঝতে পারে।

-থাক মায়া মন খারাপ করিস না।বুঝতে পারছি ভাইয়া কে রেখে একা এসেছিস তাই মন খারাপ।থাক এ সব আর জিজ্ঞেস করুম না।

মায়া এবার মনে মনে হাফ ছাড়ে যাক ও তা হলে অন্য কিছু ভাবছে।এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো কিন্তু দুজনের মধ্য কার গল্প শেষ হয় না।সূর্য্য ডুবে যায় মাগরিবের আজান পরতেই মায়ার টনক নারে।
-এই রে এখন যেতে হবে অনেক সময় পার হয়ে গেছে।

আয়েশার থেকে বিদেয় নিয়ে মায়া আবার বাড়ির পথে হাঁটা দেয়।আয়েশা কিছু দূর এগিয়ে দিয়ে চলে আসে।মায়া একটু তারাহুরা করে হাটতে লাগে।কিন্তু ও মনে মনে যেইটা ভেবেছিলো সেই বিপদ ওর সামনে খারা।হঠাৎ করে ওর পথ আগলে দাড়ায় কেউ সে আর কেউ না ওকে বিয়ে করতে চাওয়া লু চ্চা রমজান।মায়া ওকে দেখে মনে হচ্ছে মায়ার জানে পানি নেই।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।কি করবে এখন?এই মুহূর্তে কি করার আছে ওর?
এ দিকে রমজান ওর বিশ্রিরি মার্কা হাসি দিয়া বলে-

-অনেকদিন পর সুন্দরী তোমারে হাতের কাছে পাইছি।বিয়া করতে পারি নাই তো কি হইছে আইজ অন্যের বিয়া করা বউরে নিয়া মজা করুম।
বলতেই ওর কাছে এগিয়ে আসতে লাগে।ও কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।মনে মনে উপর ওয়ালাকে ডাকতে লাগে।আর ভিষণ ভাবে মেহরাবের কথা মনে পরে।আজ যদি মেহরাব ওর পাশে থাকতো কোনো অপশক্তি ওর ক্ষতি করতে পারতো না।কিন্তু এখন নিজেকে নিজের বাঁচাতে হবে।কোনে মতে এই শয় তানের হাতে নিজেকে সোপে দেওয়া যাবে না।মায়া পেছনে যাচ্ছে আর রমজান সামনে আগাচ্ছে।মায়া সামনে তো আর যেতে পারবে না তাই উল্টো দিকে না গিয়ে পাশের আরেকটি রাস্তা ধরে দৌড় দেয়।রমজান ও ওর পেছনে দৌড়াতে থাকে।কিন্তু হাতের নাগালে পাচ্ছে না।মায়া প্রাণপনে দৌড়াচ্ছে ওর হুস নেই রমজান ওর কতো নিকটে আছে।কয়েক মিনিট দৌড়ে হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা লাগে মায়ার।
দশ ফুট দূরত্বে রমজান মায়ার কাছে আর আসে না সেখান থেকেই পেছন ঘুরে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে মায়া জোড়ে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে লাগে কিন্তু পরতে পারেনি।শক্ত দু হাতের বন্ধনীতে নিজেকে আবিষ্কার করে।এতোক্ষণ কোনো হুসে ছিলো না মায়া।কিন্তু চেনা জানা একটা সুপরিচিতো ঘ্রাণ নাকে যেতেই ওর মস্তিষ্ক সচল হয়ে যায়।

এটা কি ভাবে সম্ভব?এটা কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব?

চলবে……

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-১১+১২+১৩

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১১

“আম্মিজান”এতোদিনে আপনার এই ছেলেটার কথা একবারও মনে পরে নি? ফিরোজ কে না পাঠালে মনে হয় আজ ও আসতেন না।”

মেহরাবের অভিমান জড়ানো কথা গুলো শুনে মুচকি হাসে সামনে বসা আফিয়া আনজুম।আদরমাখা হাতে মেহরাবের মাথায় পরম যত্নে স্নেহের হাত বুলিয়ে দেয় আফিয়া।আর বলে
“মা সবসময়ই সন্তানের কথা মনে করে।কিন্তু আব্বু আমার তো ছেলে মেয়ে আছে,সংসার আছে।বয়স হয়েছে তাই তারা একদমই ছাড়তে চায় না।
মেহরাব এবার অধিকারের স্বরে বলে
“এবার কিন্তু যেতে দিবো না অনেক দিন থাকতে হবে।”
ওর কথা শুনে আফিয়া আবারও নিশব্দে হেসে ফেলে আর বলে
“পাগল ছেলে একটা।একদমই বদলায়নি সেই ছোটোটি ই রয়ে গেলে আব্বু।
“হুম দেখতে হবে না ছেলেটার কার”

মায়া পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দুজনের আলাপ চারিতা শুনতে থাকে কিন্তু ওর মাথায় কিছুই ডুকছে না।কে এই মহিলা আর মেহরাব তাকে আম্মি সম্মোধন করলো কেনো?ও যতোদূর জানে মেহরাব এর মা বাবা কেউ বেচে নেই।
ওর ভাবনার মাঝে মেহরাব মায়ার হাত ধরে আফিয়ার পাশে বসায়।

“আম্মি এই হলো মীর ম্যানশনের একমাএ পুএবধু আপনার বৌমা।আপনি বলতেন না এই বাড়িটি পরিপূর্ণ করতে হলে একজন কে খুব দরকার এখন বলেন আপনার ছেলের পছন্দ ঠিক আছে কিনা?

মায়া আফিয়া কে সালাম দিলে আফিয়া সালামের জবাব দেয়।মায়ার থুতনি ধরে উঁচু করে ধরে।কয়েক সেকেন্ড নজর বুলিয়ে মা শাহ আল্লাহ বলে।
মেহরাব আফিয়ার কথা শুনে খুশি হয় তারমানে আম্মাজানেরও পছন্দ হয়েছে।আফিয়া খুশি মনে বলে
“যেখানে আমার ছেলের পছন্দ সেখানে খারাব হওয়ার প্রশ্ন ই ওঠে না।আমি মন ভরে দোয়া করে দিলাম মা তোমাকে।

হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে আফিয়া।তার মধ্যে দুটো সোনার চুড়ি।আফিয়া নিজে মায়ার হাতে চুড়ি দুটো পরিয়ে দিয়ে বলে
“অনেক দিন ধরে এ দুটো নিজের কাছে যত্নে রেখেছিলাম।মেহরাবের বৌকে দিবো বলে,আজ তোমার জিনিস তোমাকে দিতে পেরে মনে শান্তি পাচ্ছি মা।
মেহরাব আব্বু দেখো বৌমার হাতে চুড়ি দুটো কি সুন্দর মানিয়েছে।

মায়ার ফর্সা দুটো হাতে চকচকে চুড়ি দুটো সত্যিই মানিয়েছে।মনে মনে ভিষণ খুশি হয় মেহরাব।
অন্যদিকে মায়ার মনে সবকিছু খটকা লাগলেও আপাততো এ সব বিষয় নিয়ে আর ভাবতে পারছে না।এই অল্প সময়ে আফিয়ার আচরনে মায়া মুগ্ধ হয়ে গেছে।আফিয়ার মুখে মা ডাকটা শুনে ওর মনে খুব ইচ্ছা জাগলো আফিয়াকে ও মা ডাকার।দ্বিধা দ্বন্দ ছাড়াই বলে ফেললো

“আমি আপনাকে মা বলে ডাকি?

ওর কথা শুনে আফিয়া ও খুশি হয়।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।মায়া খুশিতে মা বলে আফিয়া কে জড়িয়ে ধরে।একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে ওর মধ্যে।মায়ের আদর বুঝি এমনই হয়?এই প্রথম ওর জীবনে এমন ভালোবাসার পরশ পেলো যেটা ওর খুব দরকার ছিলো।

দুজনের এমন আদরমাখা মুহূর্ত দেখে মেহরাব মাথা চুলকে দুষ্টুমি সুরে বলে
“এই রে আমার আদর বুঝি এবার কমে গেলো।“ওর কথা শুনে আফিয়া ওকে বলে
“অনেক আদর পেয়েছো আব্বু এখন থেকে মায়া মা আমার সব আদর পাবে।

রাতে খাবার পরে আফিয়ার সাথে মায়া অনেক গল্প করে।আফিয়ার কথা গুলে মায়ার বেশ ভালো লাগে।প্রথম দেখাতেই মনে হবে অনেক গম্ভির কথা কম বলে।কিন্তু কথা বলার পর বুঝা যায় ধারনা একদমই ভুল।আর কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে।শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে।কথার এক ফাকে আফিয়া মায়ার উদ্দেশ্যে বলে

“আমি জানি প্রথম দেখাতেই আমাকে নিয়ে তোমার মনে প্রশ্ন জেগেছে আমি কে।মেহরাব কেনো আমাকে আম্মি সম্মোধন করেছে?সবটাই তোমাকে বলবো তবে এখন না আরেকদিন।আছি তো সবটা জানতে পারবে মা।
মায়া মাথা নাড়িয়ে বুঝায় ঠিক আছে।এরপরে অনেক রাত পর্যন্ত দুজনের গল্প চলতে থাকলে একটা সময় আফিয়া নিজ থেকেই মায়াকে বলে “আজ আর না ঘুমিয়ে পরো আবার কাল কথা হবে।যাও মেহরাব মনে হয় তোমার অপেক্ষা করছে।
মায়া আফিয়ার মুখে মেহরাবের কথা শুনে মনে মনে বলে”আপনি তো জানেন না মা সে আমার জন্য ঘোরার ডিমের অপেক্ষা করে।এই কয়দিন তো একা একাই কাটিয়ে দিয়েছি।কথা গুলো মনে হয় আফিয়া কে বলতে পারলে মনে শান্তি পেতো মায়া।কিন্তু না নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

রুমে এসে লাইট অন করতে চক্ষু ছানা বড়া হয়ে গেছে মায়ার।বেডে মেহরাব শুয়ে আছে এটা দেখে ও ভিষণ পরিমানে অবাক।হা করে তাকিয়ে আছে ,মেহরাবের চোখে আলো পরতেই বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে
“ওখানে দাঁড়িয়ে রাত পার করবে নাকি আলো বন্ধ করে শুয়ে পরবে?
ওর কথা শুনে আলো বলে ওঠে

“আমি কোথায় ঘুমাবো?আপনি তো আমার বিছানায় শুয়ে আছেন।
“তো কি হয়েছে পাশে তো জায়গা রয়েছে এসে ঘুমিয়ে পরো।

আলো নিভিয়ে মেহরাবের পাশে দূরত্ব রেখেই ঘুমিয়ে পরে মায়া।এই প্রথম দুজন একসাথে একই বিছানায়।কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে থাকলো পাশ বালিস টা।মায়া ঘুমিয়ে গেলেও মেহরাবের দু চোখে ঘুম নেই।কবে ওর মায়াবিনীর কাছ থেকে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি পাবে।কবে ওর অপেক্ষার অবসান ঘটবে।কবে ওর মায়াকে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুম পরবে।এ সব ভাবনা চিন্তার মধ্যে মগ্ন হয় মেহরাব।অপেক্ষা যে ওকে করতেই হবে।কিন্তু এখন যে ওর মায়াকে বুকের মাঝে নিতে মন চাইছে এ টুকু তো ও করতেই পার।মাঝের বালিস টা সরিয়ে ওকে কাছে টেনে নেয়।কপালে অধর দ্বারা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়ে মায়ার চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়।গভির ঘুমে মগ্ন মায়া ,সকাল হওয়া অব্দি ও বুঝতেই পারলো না সারারাত ও মেহরাবের বুকের মাঝে ওর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ ছিলো।যদি জানতো তা হলে বুঝতো মেহরাব ওকে বুকে নিয়ে সারারাত জেগেই কাটিয়ে দিয়েছে।আবার সকাল হতেই আগেই উঠে মর্নিং ওয়ার্ক এ চলে যায়।

“সকালে শায়লা আর সিতারা এসে আফিয়া কে দেখে অনেক খুশি হয়।আফিয়া ওদের শ্বাশুড়ি বৌকে খুব ভালো জানে।একটা সময় এই বাড়িতে সিতারাকে আফিয়াই কাজের জন্য রেখে দেয়।মকবুল আর সিতারার সততার জন্য আজ পর্যন্ত এখানেই থেকে যায়।এই বাড়ির সবার ভালোবাসা আর মায়ায় পরে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা কখনও ভাবেনি মকবুল আর সিতারা।

~~~~~

অফিসে আয়োজনকৃত অনুষ্ঠান সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হবে।স্টাফ সহ বাইরের অনেককেই মেহরাব ফ্যামিলি সহ ইনভাইট করেছে।তাদের মধ্যে ওর কিছু পুরোনো বন্ধুদের ও আসতে বলেছে।মেহরাবের ইচ্ছা মায়া আজ একটি গর্জিয়াস শাড়ি পরবে আর সেটা ওর পছন্দের ব্লাক কালারের।যেটা মেহরাব ড্রেসের সাথে কিনে দিয়েছিলো।বাসায় পার্লারের দুটো মেয়েকে আনিয়েছে মেহরাব।ও চায় না মায়া বাইরে গিয়ে সাজুক।মেয়ে দুটো মায়াকে শাড়ি পরিয়ে তার সাথে মানান সই সাজে সাজিয়ে দিয়েছে।মেয়ে দুটো চলে যেতেই মেহরাব ওকে নিতে রুমে আসে।এক ঝলক দেখেই বুকের মাঝে হাতুরি পেটা শুরু হয়ে যায়।এই মেয়ে নির্ঘাত ওকে ওর রূপের জাদুতে মে”রে ফেলবে।
ব্লাক কালারের শাড়ি ,ফুল হাতার ব্লাউজ আর ম্যাচিং হিজাবে মায়াকে দেখে চোখ সরানো টা মুশকিল হয়ে পরেছে। মেহরাব যে ভাবে বলেছিলো সে ভাবেই ও সেজেছে।

মায়ার দিকে এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়া মেহরাবকে বলে “চলুন এবার যাওয়া যাক”ওর কথা শুনে মেহরাব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে কিন্তু ও কি স্বাভাবিক হতে পারবে?মায়া আফিয়ার সামলে যায়।আফিয়া মায়ার বেশ প্রশংসা করে।ওরা দু জনেই আফিয়াকে যেতে অনুরোধ করলেও আফিয়া রাজি হয় না।বলে “তোমরাই যাও আর আনন্দ করে আসো।তা ছারা আমার শরির টা বেশি একটা ভালো নেই।”
এরপরে ওরা রওয়ানা হয় গাড়ি নিয়ে।আজ দুজনেই পেছনের সিটে বসেছে।মেহরাবের তো মায়ার ওপর থেকে চোখ সরছেই না।একটু পর পর চোরা নজরে দেখতে থাকে আর এভাবেই পথের সমাপ্তি ঘটিয়ে অফিসের সামনে চলে আসে।

পার্টিতে প্রায় সবাই চলে আসে।ওদের দুজনকে দেখে ফিরোজ সহ আরো কয়েকজন এসে মায়ার হাতে ফুলের তোরা দিয়ে ওদেরকে স্বাগতম জানায়।ওদের দুজনের জন্য বসার আলাদা জায়গা করা হয়।সেখানে মায়াকে নিয়ে মেহরাব গিয়ে মায়াকে বসতে বলে।ফ্যামিলি সহ যারা এসেছে সবাই মায়ার সাথে গিয়ে পরিচিতো হয়ে কথা বলে।মায়ার সবটা দেখে খুব ভালো লাগে।ভেবেছিলো জায়গা টা কেমন কি হবে,সেখানে আসা মানুষগুলো না জানি কেমন হয়।কিন্তু ওর ভুল ভেঙ্গে যায় ।সবাই বেশ আন্তরিকতার সাথে কুশল বিনিময় করছে।
ফিরোজ এর পক্ষ থেকে কেকের আয়োজন করা হয়।মেহরাব নিষেধ করলেও শোনেনি।ওর কথা সবকিছুই তো বড়োভাই আয়োজন করছে । ছোটো ভাই হিসেবে না হয় একটু কেকের আয়োজন করুক।মেহরাব এ কথা শুনে আর না করেনি।

কেক কেটে সবাই মিলে আগে কেক খেয়ে নেয়।মেহরাবের তিনচা বন্ধু চলে আসলে মেহরাব মায়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।তাদের মধ্যে সামিন আর সিয়াম বেশ নম্র আর বিনয়ী ভাবে ওর সাথে কথা বলে।কিন্তু রিমন নামের বন্ধুটি মায়ার সাথে কথার বলার সময় কেমন জানি একটু অন্য রকম নজরে ওর দিকে তাকায়।কথা বলার ধরনও ভালো লাগেনি মায়ার।তবুও সৌজন্য মুলক হাসি দিয়ে কথা বলে মায়া একটু সরে এসে ওর স্থানে বসে পরে।দূর থেকে রিমন ওর দিকে কয়েক বার ভিন্ন নজরে তাকিয়েছে।মায়া সেটা লক্ষ্য করলেও মেহরাবকে কিছু বলে না।
ওর এতোক্ষণ বেশ ভালো লেগেছিলো।কিন্তু এখন কেমন জানি দম বন্ধ হবার মতো লাগছে।মেহরাব গেস্ট দের সাথে কথা বলতে বলতে একটু দূরে সরে যেতেই রিমন মায়ার সামনে হাজির হয়।শয়”তানি হাসি দিয়ে বলে

“ভাবি আপনি কিন্তু অনেক “হট এন্ড ভেরি বিউটিফুল লেডি”আমার বন্ধু দেখছি একদম পার্ফেক্ট জিনিসটাই পছন্দ করে আনছে।গ্রামে এতো সুন্দর পদ্ম ফুল পাওয়া যায় আগে জানলে গ্রামেই আপনার মতো সুন্দরী খুঁজে বিয়ে করে নিতাম।

ওর এমন কথায় মায়ার গা গুলিয়ে আসে।মেহরাবের এ কেমন বন্ধু যার কথা বার্তা শুনে ওর ব”মি পাচ্ছে।
মনে মনে মেহরাব কে খুঁজছে একটু পর মেহরাব আসলে মায়াকে বেশ চিন্তা যুক্ত দেখতে পায়।কি হয়েছে দিজ্ঞেস করলে বলে

“আমার ভালো লাগছে না একটু ওয়াশ রুমে যেতাম।
মেহরাব ওকে ওয়াশ রুম পর্যন্ত নিয়ে যায় ।ও ভেতরে ডুকলে মেহরাব বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।কাজ শেষে মায়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে মেহরাব নেই।এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নেয় কোথাও দেখছে না।এর মধ্যে ও খেয়াল করে ওর কোমরের এক পাশের পেছানো শাড়ি থেকে সেপটিপিন খুলে শাড়ি একটু ঝুলে রয়েছে ।যার ফলে কোমরের এক পাশ দৃশ্যমান হয়ে আছে।ও তখনই সেপটিপিন খুঁজতে লাগে হয়তো এখানেই কোথাও পরেছে।খোঁজার এক ফাকে ওর কোমরে কারোর হাতের স্পর্শ পায়।শুধু তাই না শক্ত হাতের আঙ্গুল দ্বারা নরম জায়গাটা মুঠ করে একটু চেপে ধরে।সাথে সাথে মায়া ঘুরে তাকিয়ে সামনে যাকে দেখে তাতে স্তব্ধ ও বিমূর হয়ে যায়।
এমন কিছুর জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
মনে মনে ঘৃণার স্বরে বলে

“ছিঃ এটা সে কেমনে করতে পারলো?

চলবে……..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১২

“রিমনের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় মায়া।

শরিরের আপওিকর জায়গায় স্পর্শ এটা কোনো মেয়েই সহ্য করতে পারবে না।পুষ্পের বলা কথাটি মায়ার মনে পরে যায়।এ সব মানুষ রুপি পশুদের নিজ হাতে শায়েস্তা করতে হয় না হলে ওরা পিছু ছাড়ে না।আর সে জন্যই মায়া পেরেছে এই অসাধ্য কাজ টা করতে।তবে ঘৃণায় মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না মায়ার।সারা শরির ওর রাগে কাঁপছে।

রিমন গালে হাত দিয়ে রাগে ফুলতেছিলো মন চাচ্ছে এখনই মায়ার খারাপ কিছু একটা করে ফেলতে।কিন্তু এদিকে লোকজন চলে আসতে পারে।তাই ওভাবেই গাল ডলতে ডলতে রাগি দৃষ্টি নিয়ে বের হয়ে যায়।কয়েক সেকেন্ড পরেই মেহরাব মায়ার কাছে আসে।মায়ার চেহারায় কেমন ভয়ের ছাপ।মেহরাব জিজ্ঞেস করলে মায়া কিছু বলতে পারে না।কান্না করে দেয়

“কোথায় ছিলেন আমি তো খুজতেছিলাম।

“আরে কান্নার কি আছে তখন আমার কল আসছিলো আর এখানে ভালো কথা শোনা যায়নি বলে বাইরে গিয়েছিলাম কথা বলতে।আচ্ছা হয়েছি কি বলো আমায়।

মায়া চিন্তা করলো এসব কথা এখন বললে অনুষ্ঠানটাই বরবাদ হয়ে যাবে।মেহরাব এর রাগ সম্পর্কে মায়ার জানা নেই তবে একেবারেই যে দেখেনি তা নয়।তাই এখন না বলে পরে বলবে বলে ঠিক করে।মেহরাব অস্থির হয়ে পরে ওর কান্না দেখে।কিন্তু মায়া ওকে দেখতে না পেয়ে কান্না করে সেটাই বলে দেয়।মেহরাব একটু শান্ত হয় মায়াকে সঙ্গে নিয়ে সবার সামনে যায়।ঘন্টা খানেক সময় কাটিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেহরাব মায়াকে নিয়ে চলে আসে।যতোক্ষণ ছিলো এর মধ্যে আর রিমন কে দেখা যায়নি তাই মায়ার মনে মনে স্বস্থি পায়।মায়াকে বাড়ি পৌছে দিয়ে গরুত্বপূর্ণ কাজ আছে সেটা বলে মেহরাব আবার গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।মায়া কিছু জিজ্ঞেস করে না।

ফ্রেশ হয়ে আফিয়ার রুমে যায়।আফিয়ার মায়াকে দেখে কাছে বসতে বলে।সময়টা কেমন কাটলো জিজ্ঞেস করে আফিয়া।কথাটা শুনে মায়ার সাথে ঘটা সময়টাকে কথা মনে পরে যায়।প্রথমে সময়টা ভালো কাটলেও পরের সময়টা তিক্ততায় কেটেছে।কিন্তু এ সব কথা তো আফিয়াকেও বলা যাবে না।তাই মুখে হাসির রেখা টেনে “ভালো কেটেছে মা” বলে দেয়।আফিয়া কিছু একটা ভেবে বলে “মন খারাপ নাকি মা বলো আমায়।” মায়া এবার আর কিছু বলে না।ওর চুপ থাকা দেখে আফিয়া বলে “বুঝতে পারছি বাড়ির জন্য মন খারাপ তাই না?আমার পাগল ছেলেটা সেই যে তোমাকে নিয়ে আসলো আর তো নিয়ে গেলো না।তুমি মন খারাপ করো না ওকে আমি বলবো তোমাকে নিয়ে যেতে।আসলে ও তো অনেক নিয়ম কানুন জানে না আর দেখোই তো কতো ব্যাস্ত তা ও তো এখন দেখছি সময় মতো বাসায় আসে ।আগে তো বেশির ভাগ সময়ই কাজের জন্য বাইরে থাকতো।
মায়া শুধু আফিয়ার কথা গুলো শুনছে।ওর আজ কথা বলতে ভালো লাগছে না।

“মা আমি একটু আপনার কোলে মাথা রাখি?

মায়ার এমন আবদারে আফিয়া খুশি হয়ে ওকে কাছে টানে।মায়া আফিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।এ এক অন্যরকম অনুভূতি “মনে মনে ভাবছে আয়মনের সাথে ওর সম্পর্ক টা এমন হলে ক্ষতি কি ছিলো।একটা দিনের জন্যও মেয়ে মনে করে আদর ভালোবাসা দেয়নি।দিনের পর দিন কতো চেয়েছে পুষ্পকে দেওয়া আদর ভালোবাসার একটু ওকে দিক।কিন্তু না সবসময়ই ওকে অবহেলা করেছে।আয়মন কখনই বোঝোনি ও যে ভালোবাসার কাঙ্গাল।সে সব দুঃখ কষ্ট ছাপিয়ে উপর ওয়ালা ওকে সুন্দর একটা সংসার দিয়েছে।মেহরাবের আসল মা না হয়েও আফিয়ার মতো এমন একজন কে মা বলে ডাকতে পারছে এটাই ওর কাছে অনেক বড়ো পাওয়া।

আফিয়ার কোলে মাথা রেখেই মায়া ঘুমিয়ে যায়।আফিয়া আর জাগায়নি ওকে এক সাথেই ঘুমিয়ে পরে দুজন।
অনেক রাতে বাসায় ফেরে মেহরাব।রুমে মায়াকে দেখতে না পেয়ে আফিয়ার রুমের সামনে যায়।সাবধানে দরজা ঠেলে রুমে উকি দেয়।বুঝতে পারে আজ মায়া আফিয়ার সাথে ঘুমিয়েছে।আবার দরজা টেনে নিজের রুমে চলে যায়।খুব ক্লান্ত লাগছে একটা ভালো ঘুমের দরকার।রুমে গিয়ে শুয়ে পরে মেহরাব আজ ওর শান্তি মতো ঘুমাতে পারবে।

পরদিন সকালে মায়া রুমে এসে দেখে মেহরাব এখনও ঘুমিয়ে আছে।মায়া মেহরাবের পাশে এসে বসে ওর ঘুমন্ত মুখ খানা দেখতে থাকে।কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে মানুষটাকে দেখতে।কিন্তু সে কি উঠবে না?অফিসে যাবে না?এই ভেবে মেহরাব কে কয়েকবার ডাক দেয়।মেহরাব ঘুমের ঘোরেই সারা দেয় এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে যায়।মায়া ডাকলে এবার একটু বিরক্তি সুরে বলে “যাও তো ঘুমাতে দেও এমনিতেই অনেক রাত করে এসেছি আরো ঘুমাবো আমি।মায়া আর ডাকে না কিন্তু ভাবতে থাকে অনেক রাতে এসেছে মানে?এতো রাত পর্যন্ত কই ছিলো ?

এতো দিন ধরে মায়াকে রান্না বান্নার কাজে হাত লাগাতে দেয়নি সিতারা ,যেহেতু মেহরাবের কড়া নির্দেশ ছিলো।কিন্তু মায়ার আর ভালো লাগে না হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে।ওর মন চায় নিজের হাতে রান্না করবে।সিতারাকে আগেই বলে রেখেছে আজকের রান্নাটা ও নিজের হাতেই করবে।মেহরাব কি কি খেতে পছন্দ করে সেগুলো আফিয়ার থেকে শুনে ও সব রান্না শেষ করেছে।এখন ওর শান্তি লাগছে তবে মেহরাবের পছন্দ হবে কিনা এ জন্য একটু চিন্তায় আছে।দেখা যাক কি হয়।
অনেক বেলা করে মেহরাবের ঘুম ভাঙ্গে।ফ্রেশ হয়ে অফিসের কিছু জমানো কাজ করছিলো।মায়া এসে ওর পাশে দাড়ায় কিছু বলবে কিনা মেহরাব জানতে চায়।
“আপনি খাবেন না ?
“হুম খাবো যাও আসতেছি।
মেহরাবের গম্ভির স্বরে কথা বলাটা মায়ার পছন্দ হলো না।এমনভাবে তো সে কথা বলে না।মনে হচ্ছে তার কিছু একটা হয়েছে,ও জানে জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলবে না তাই আর কিছু না জিজ্ঞেস করে চলে যায়।

টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।মেহরাব খাচ্ছে কিছু বলছে না কিন্তু মায়া অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে কিছু শোনার জন্য।পাশ থেকে আফিয়া মেহরাব কে উদ্দেশ্যে করে বলে “খাবারটা কেমন হয়েছে আব্বু?
মেহরাব তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো “ভালো হয়েছে তবে প্রতিদিনের চেয়ে একটু আলাদা স্বাদ পাচ্ছি।
হুম পাবে ই তো আজকের সব রান্না মায়া করেছে যে।
মেহরাব কথাটা শুনে মনে মনে খুশি হয় ও ভেবেছিলো মায়া রান্না পারলেও হয়ত সেটা মোটামুটি কিন্তু না ওর ভাবনার চাইতে অনেক গুন বেশি ভালো হয়েছে।
মায়ার দিকে চেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।মায়া ওর হাসিটা দেখেই মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।

ঠিক ঐ সময়ে মেহরাবের ফোনে কল আসে।কথা বলে কল কেটে দিয়ে কতোক্ষন চুপ থেকে আবার খেতে শুরু করে।আফিয়া কিছু একটা টের পেয়ে জিজ্ঞেস করলো “কে ফোন করেছিলো?কোনো সমস্যা আব্বু?
“সিয়ামের কল ছিলো রিমন নাকি হসপিটালে ভর্তি।
কথাটা শুনে মায়ার মন আৎকে ওঠে।আফিয়া জিজ্ঞেস করে কিভাবে এ সব হয়েছে।
“রাতে নাকি ওকে কয়েকজন অনেক মেরেছে আর খুব বাজে ভাবে ,অবস্থা নাকি বেশি ভালো না।
এ টুকু শুনে মায়া আরো ভাবনায় পরে যায় কে মারতে পারে?তবে যেই মারুক লোকটা অনেক খারাপ তার শাস্তি পেয়েছে।কিন্তু ওর মাথায় আসছে না কে মারতে পারে?মায়া মেহরাবের দিকে দৃষ্টি দেয় খুব আরাম করে খাচ্ছে।আচ্ছা কোনো ভাবে এর সাথে মেহরাব জড়িত নয় তো আবার?কিন্তু এ সব মায়া কি ভাবছে?মায়া তো মেহরাবকে কিছুই বলেনি আর ও তো এ সবের কিছুই জানো না।মন কে বুঝ দেয় না জেনে বুঝে মেহরাব কে সন্দেহ করা ঠিক হবে না।

খাওয়া শেষ করে মেহরাব বেরিয়ে পরে পসপিটালের উদ্দেশ্যে ।হসপিটাল গিয়ে শুনে রিমন কে ওপারেশন থিয়েটার নেওয়া হয়েছে।ওর বাবা মা মেহরাব কে দেখে এগিয়ে আসে। ভিষণ কান্না কাটি করতে থাকে।তাদের শান্তনা দেয় রিমনের কিছু হবে না বলে।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হয়ে আসলে শুনতে পায় এখন অনেকটা বিপদ মুক্ত কিন্তু এতো বাজে ভাবে হাত আর পা ভাঙ্গছে যে ঠিক হতে বছর খানিক এর ও বেশি সময় লাগবে।ওখানে অনেক ক্ষণ থেকে মেহরাব বাসায় চলে আসে।আজ আর অফিস যায়নি।বাসায় আসতেই আফিয়া মেহরাবের কাছ থেকে রিমনের সম্পর্কে জানতে পারে।মায়ার আর সাহোস হয় না ওকে রিমনের কথা জিজ্ঞেস করার তবে ও পাশ থেকে সবটা শুনেছে।

দুই দিন পরে,
মায়া আজ ওদের গ্রামের বাড়ি যাবে খুব খুশিতে আছে ও।সেই যে হঠাৎ মেহরাবের সাথে বিয়ে আবার গ্রাম থেকে শহরে আসা এর মাঝে আর যাওয়া হয়নি।শুধু সবার সাথে ফোনেই যোগাযোগ হয়েছে ।মাঝে মাঝে মায়ার মন খারাপ দেখে আফিয়া মেহরাব কে বলে গ্রাম থেকে ঘুরে আসতে।মেহরাবের কোনো ইচ্ছে ছিলো না ওকে নিয়ে যাওয়ার।এমনিতেই মায়াকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকে ও।হয়তো সেটা মায়া নিজেও জানে না।
আম্মিজানের কথায় আর না করতে পারে না।কিন্তু ওর একটাই কথা সকালে যাবে বিকেলে আবার চলে আসবে।সেটা শুনে মায়ার প্রথমে মন খারাপ হলেও মেহরাবের কথা মেনে নেয়।বিয়ের পরে এই প্রথম যাচ্ছে তাই আগেই মেহরাব অনেক কেনাকাটা করে রাখে।ওদের সাথে ফিরোজ ও যাবে।মনে হচ্ছে মায়ার চাইতে ফিরোজবেশি খুশি কিন্তু ব্যাপারটা কি হতে পারে?
খুব সকালে বেলা ওরা রওয়ানা হয়।
মায়ার কাছে আজকের এই সময়টা বেশ লাগছে।যেদিন ও প্রথম এসেছিলো ঐ দিনের যাএাটা ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা।রাতের অন্ধকার,বধূবেশে কান্নারত অবস্থা,অচেনা মানুষ টার পাশে বসা ইশ ঐ দিনের কথা মনে পরতেই আপন মনে হেসে ফেলে মায়া।মেহরাব ওর হাসির কারন জানতে চাইলে ও “কিছুনা”বলে মাথা নাড়ায়।
কোনো কথা ছাড়াই মায়ার খোপা করা চুল গুলো খুলে দেয়।মায়া এতে অবাক হয় না এটা মেহরাবের একটা অভ্যাস।মায়াকে বলে হয়েছিলো ওর সামনে চুল খোলা রাখতে কিন্তু মায়া সেটা না করলে মেহরাব নিজেই চুল গুলো খুলে ফেলে।গাড়ির কাঁচ নামানো বিধায় মায়ার খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।একটা সময় মেহরাবের চোখে মুখে ওর অবাধ্য চুল গুলো এলো মেলো ভাবে আছড়ে পরছে।মেহরাব বিরক্ত হয় না।কেনোই বা হবে মায়াবিনীর এই স্বর্ণকেশ গুলো যে ওর বড়ই প্রিয়।

দুপুরের আগেই ওরা গ্রামে পৌছে যায়।ওরা আগে মায়ার বাড়িতে যায়।অনেকদিন পর মেয়েকে পেয়ে কাশেম মিয়া আবেগ আপ্লুত হয়ে পরে।পুষ্প তো সেই খুশি।আয়মন এখন একটু নরম স্বভাবের হয়েছে আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক।মেয়ে এখন বড়োলোক বাড়ির বউ।আগের মতো অবহেলা করলে তো ওরই ক্ষতি।তাই মায়াকে দেখে বেশ হাসি খুশি ভাবে কথা বলেছে।জামাইর তরফ থেকে আনা জিনিস পএ দেখে আয়মনের চোখ বড়োবড়ো হয়ে যায়।এতো সব পাবে এটা ওর কল্পনার বাইরে।
ওরা আসবে জেনে কাশেম মিয়ার বৌকে আজ আর বেশি কিছু বলা লাগেনি।নিজের থেকেই অনেক কিছুর আয়োজন করেছিলো।কাশেম মিয়া বুঝতে পারে আয়মন এ সব কেনো করছে ।সে তো কোনো কিছু স্বার্থ ছাড়া কারো না।তারপরও এটা ভেবে খুশি হয় বউয়ের মনে যাই থাক মেয়ের জামাইকে সময় মতো আদর আপ্যায়ন টা করুক তাতেই সম্মান টা তো বাঁচবে।

এ বাড়ি এসে মেহরাবের চাইতে ফিরোজ কে বেশি খুশি খুশি লাগছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো এ বাড়ির নতুন জামাই মেহরাব নয় ফিরোজ নিজেই।
আজ মায়াকে কোনো কাজে হাত লাগাতে দেয়নি আয়মন।বড়োলোক বাড়ির বউ বলে কথা।পুষ্প কে সাথে নিয়ে আয়মন সবাইকে খাবার দাবার পরিবেশন করে।মোটামুটি অনেক পদের খাবারের আয়োজন করেছে।এ সব দেখে মায়া অনেক খুশি হয়।ও তো ভেবেছিলো আয়মনের আদর যত্ন মেহরাব পাবে না।কিন্তু এসব কেনো করা হয়েছে এটা মায়া বুঝতে না পারলেও মেহরাব ঠিক বুঝতে পারে।

মেহরাব তপ্ত নিশ্বাস ছারে আর ভাবে “প্রতিষ্ঠিত না হলে সত্যি পৃথিবীতে কারোর কোনো মূল্য নেই।একটা সময় যে মা তার সৎ মেয়েকে নে”শা খোরের কাছে টাকার জন্য বিক্রি করতে দ্বিধা বোধ করেনি আজ সেই মা তার সৎ মেয়েকে কেমন আদর যত্নে নিজ হাতে বেড়ে খাওয়াচ্ছে।

এদিকে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ফিরোজের দৃষ্টি একজনের দিকেই আবদ্ধ।কিন্তু যার পানে এই দৃষ্টি সে তো ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারছে না।ইশ শেষমেশ কিনা পিচ্চি মেয়ের প্রেম পরলো ও?এ কথা ও কাকে বলবে কিভাবে বলবে?মেহরাব কে তো নাই শেষে কিনা বড়োভাই ওকে ভুল বুঝবে।তাই এখন চুপ থাকাই ভালো।মনে মনে ভেবে নেয় “কোনো একদিন সুযোগ বুঝেই পছন্দের মানুষটাকে প্রপোজ করে দিবে।”

চলবে…..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৩

“পূর্ণিমা রাত আর তারার মেলা আকাশে…শুধু তুমি নেই এ সময়…আমারই পাশে।”

গুনগুনিয়ে মনের দুঃখে গান গাইছে ফিরোজ।গ্রামে বেশ আনন্দ নিয়ে বেড়াতে গেলেও আসার পর থেকেই মন খারাপ।পুষ্পের সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে মনের কথাটা জানাতে চাইলেও পুষ্প সে গুলোকে পাওা দেয়নি।এমন ভাব যেনো ভালোবাসা মানে কি সেটাই ও বোঝে না।নিজেই নিজেকে বলতে থাকে “আরে আজকাল তো সিক্সে পড়া মেয়েরাও এসব বোঝে আর এই মেয়ে এতো বড়ো হয়েও কিছু বোঝে না? নাকি না বোঝার ভান করে?আসার আগে ওর সাথে করে নিয়ে যাওয়া ছোট্ট একটি গিপ্ট সুযোগ বুঝে পুষ্পকে দিতে চাইলে পুষ্প শর্ত জুড়ে দেয়।গিপ্ট নিবে তবে সেটা ভাই হিসেবে অন্য কিছু নয়।
নিজের কপাল চাপরে বলতে থাকে”আরে কোন জন্মের ভাই লাগি ওর”এই মাইয়্যা কবে বুঝবে?কি আর করার কেউ দেখে ফেলার ভয়ে পুষ্পের কথায় কাজি হয়ে গিপ্ট টা ওর হাতে দেয়।ঐ সময় ফিরোজের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে পুষ্প অনেক হাসে।হয়তো সে হাসিটা ফিরোজের অন্তরালে থাকায় ও কিছুই টের পায় নি।তবে পুষ্পের হাসির পেছনে একটা অন্যরকম অনুভূতির রেশ ছিলো সেটাকে কি বলা যায়..?

“ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা..?

“কয়েকদিন ধরে লেখাপড়ার মন বসছে না মায়ার।মাথায় শুধু অন্য কিছু ঘুরছে।শতো চেষ্টা করেও ঝেরে ফেলতে পারছে না।আবার এ সব নিয়ে বেশি ভাবতেও পারছে না কি করবে এখন ও?
একদিনের জন্য বাড়িতে গিয়ে শহরে ফেরার আগে ওর বেস্টু আয়েশা দেখা করার জন্য ওদের বাড়ি আসে।কিছুক্ষণ একাকি আলাপ করে।তখন আয়েশা ওর কাছ থেকে জানতে পায় মেহরাব আর ওর মাঝে এখনও ঘনিষ্ট কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি।আয়েশার শুনেই তো মাথায় হাত।এ মেয়ে কেমনে পারলো এভাবে থাকতে?তাও এমন একটা হিরোর মতো বর সামনে পেয়ে।

“মায়ারে আমি তো এমন একটা বর পেলে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে বরের বুকের সাথে লেপ্টে থাকতাম।আর তুই কিনা..আচ্ছা তোর কি কোনো সমস্যা আছে মানে শারিরিক?

ওর কথা শুনে মায়া টাস্কি খায় এই মেয়ে কি বলে ..!

“আরে আমার কেনো সমস্যা থাকবে?আর শোন আমি কেনো তার কাছে সেধে সেধে যাবো।সেই তো আমাকে পছন্দ করে না।যদি করতো আমাকে কি দূরে রাখতে পারতো বল সই?

ওর এমন বোকা মার্কা কথা শুনে আয়েশার রাগ হয়।এই মেয়ে এতো আলাভোলা ক্যান।

“আরে গা”ধী ভাইয়া তোকে পছন্দ না করলে বিয়েটা হতো না।আচ্ছা ভেবে দেখ তো..বিয়ের দিন সে যা যা করছে এ সব কি অন্য কেউ হলে করতো?

মায়া ভেবে দেখে হা তাই তো।তার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতো কিছু করতো না।হয়তো বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়ে তার কাজটা শেষ করতো।কিন্তু সে কখনই একটা খারাপ মানুষের কাছ থেকে বাচিয়ে মায়ার দায়িত্ব নেওয়ার মতো সৎ সাহোস দেখাতো না।
গ্রাম বলে কথা…এখানে মেয়েদের বিয়ের দিনে বিয়ে ভাঙ্গলে সেই মেয়ের একটা খারাপ কলঙ্ক রটে যায়।আর এসব মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা সেই পরিবারের বেশ ধকল পোহাতে হয়।কিন্তু ওর বেলায় সেটা হয় না।মেহরাব ওর এক বিন্দু সম্মান হানি হতে দেয় নি।বরং সম্মানের সাথে বিয়ে করে একটা সুখী সুন্দর জীবন দিয়েছে।যেটা ও আজও বুঝতে পারেনি।ওর শুধু মনে হয়েছে মেহরাব যা যা করেছে সবই ওকে করুনা করে।কিন্তু করুনা করে যে বিয়ের মতো এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।যদি এটা করুনা বা সাহায্য হতো তা হলে সেটা বিয়ের মাধ্যমে নয় বরং টাকা দিয়ে সেই অবস্থার ব্যাবস্থা নেওয়া হতো।

আয়েশা আরো বলে

“আমি শতোভাগ শিওর ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।হয়তো সে তোর কাছ থেকে সবটা আশা করছে।তাই স্পেস দিচ্ছে তোকে।তুই নিজে তাকে কাছে টেনে নিবি,ভালোবাসবি,তাকে মনের কথা গুলো বলবি।না হলে কিন্তু পরে পস্তাবে হবে।

মায়া এ সব শুনে চুপ করে থাকে।সত্যিই তো আয়েশার প্রতিটি কথায় যুক্তি আছে।আর এ সব বোঝার মতো গিলু ওর মাথায় নেই।আয়েশা ওকে আরো অনেক কিছু বলেছে বুঝিয়েছে।এখনও সময় আছে আর সময় থাকতেই নিজের কাছের মানুষটাকে আরো কাছে টেনে নেওয়ার জন্য যা যা করার করতে হবে।না হলে পরে ভিষণ ভাবে পাস্তাতে হবে।

হতাশার গ্লানিতে ভুগছে মায়া।এখন আর আফসোস নয় বরং মিশনে নেমে পরতে হবে।এতোদিনে ও পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে মেহরাবের প্রতি ওর যেই অনুভূতি কাজ করে সেটা আর কিছু নয় সেটাই ভালোবাসা….হা

“ভালোবাসা নামক মায়ায় মেহরাব নামক রোগে ওকে ধরেছে।যেটার রোগ প্রতিশোধক এন্টিডোস শুধুমাত্র মেহরাবের নিকটই আছে।”

এ সব ভাবতেই তনু মনে নতুন প্রেমের উওাল ঢেউ খেলে যায় মায়ার মনে।এতো লজ্জা লাগছে কেনো মানুষটার কথা ভাবতে?

“লেখাপড়া বাদ দিয়ে শুধু কলম কাম”ড়ালে হবে?

কথাটা শুনেই পাশ ফিরে চায় মায়া।মিনিট খানেক ধরে মেহরাব ওর পাশে এসে দাঁড়ানো।মায়ার সে দিকে খেয়াল নেই।ভাবনার জগতে প্রবেশ করে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে মুখে কলম পুরে কাম”ড়াচ্ছে।মেহরাবের কথায় মুখ থেকে কলম পরে যায়।ওকে দেখে বেশ লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বই দিয়ে মুখ লুকায় মায়া।এই অবস্থা দেখে মেহরাব এর বুঝে আসে না এর আবার কি হলো?

“সামনে পরিক্ষা তাই আজে বাজে চিন্তা না করে মন দিয়ে লেখাপড়া করো।ভালো রেজাল্ট করতে হবে।

কথাটা বলে মেহরাব রুম থেকে যেতেই মায়া হাফ ছেরে বাচে।ইশ এমন লাগছে কেনো?আগেই তো ভালো ছিলাম আর এখন তো মনে হচ্ছে যখন তখন হার্ট এটাক হয়ে যাবে।
মাথা থেকে আজেবাজে সব চিন্তা ঝেরে ফেলে মায়া ওর পরিক্ষার দিন গুলো ভালোভাবেই শেষ করে।মেহরাব ওকে সবসময় নজরে রেখেছে।একটু হেলাফেলা করতে দেয়নি।এর মধ্যে আফিয়া চলে যেতে চাইলে মায়ার পরিক্ষার জন্য রয়ে গেছে।তা ছাড়া মায়ার সাথে আফিয়ার সম্পর্ক টা বলতে গেলে বন্ধুর মতো হয়ে গেছে।পরিক্ষা শেষ হতেই আফিয়া আর দেরি করতে চায় নি।অনেক দিন হলো এসেছে এবার চলে যেতে চায়।
আফিয়ার সবসময় মেহরাব কে নিয়ে একটা দুঃচিন্তা ছিলো।কিন্তু এখন আর কোনো ধরনের চিন্তা নেই।আফিয়ার বিশ্বাস মায়ার মতো মেয়ে মেহরাব সহ পুরো সংসারটাকে ভালো ভাবেই সামলাতে পারবে।

সকালের নাস্তা সেরে আফিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।আফিয়াকে জড়িয়ে ধরে মায়া কাঁদছে।মায়ের মতো আদর ভালোবাসা পেয়ে মা হারা অনাথ মেয়েটি এতোদিন ভুলেই গিয়েছিলো সব দুঃখ কষ্ট গুলো।আফিয়া শান্তনা দেয় আবার আসবে শুধু তাই না মায়াকে কথা দেওয়া লাগছে শিগ্রই আসতে হবে।আফিয়া ওর মাথায় হাত রেখে মন ভরে দোয়া করে দেয়।আর বলে

“আবার যখন আসবো তখন যেনো একটা সুখবর পাই ।আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো।”
মায়া খুব লজ্জা পায়।পাশ থেকে মেহরাব এ কথা শুনে মনে মনে বলে
“এখন পর্যন্ত বাসর ই সারতে পারলাম না আর দাদী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

“কিছু বললে আব্বু?
“না আম্মিজান কিছু না চলেন এবার যেতে হবে।”
আফিয়াকে নিয়ে মেহরাব বের হয়ে যায়।

—-

মীর ম্যানশন আজ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মায়ার কিছু ভালো লাগছে না।সারাদিন শায়লা আর সিতারার সাথে সময় কাটিয়েছে।কিন্তু এখন তো কেউ নেই।সন্ধ্যার পরে মেহরাব আসে।ফ্রেশ হয়ে ওর কিছু কাজ করছিলো মায়া তখন অন্য রুমে ছিলো।রুমে এসে দেখে মেহরাব নেই।বের হয়ে সবখানে দেখে কোথাও নেই।ভাবছে গেলো কই?কিছু একটা মনে করে ছাদের দিকে যায়।আজকের রাতটা জোস্না রাত।আলো ছাড়াও বাইরের সব কিছু স্পষ্ট দৃশ্যমান।মায়া ছাদে উঠে এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে ছাদের এক কোনায় মেহরাব কে দেখতে পায়।ছাদের রেলিংয়ে দু হাত রেখে দূরে তাকিয়ে আনমনা হয়ে আছে।
মায়া বুঝতে পারে ওর কি হয়েছে।মেহরাবের এক হাতের ওপর মায়ার হাত রাখে।মেহরাব দৃষ্টি ঘুরিয়ে মায়ার দিকে চায়।

“তুমি এখানে কিছু বলবে?
“নাহ
“তা হলে এসেছো কেনো?
“আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলে।
এবার মেহরাব বুকে দু হাত গুঁজে মায়ার উদ্দেশ্য বলে
আমাকে কেনো খুজতেছো কি দরকার বলোতো?
“নাহ এমনি বাদ দেন তো এসব ।আপনার মন খারাপ সেটা আমি বুঝতে পারছি।
“তাই বুঝি ?মনে হচ্ছে আমাকে একটু একটু বুঝতে শিখে গেছো।
“পুরোটা না ঐ একটু আধটু।
“ওটা হলেই চলবে।
..
“মায়া”আজ তোমাকে আমার অজানা কিছু কথা বলতে চাই।

মায়া ওর কথা শুনে নিরব হয়ে আছে।অতি আগ্রহের সাথে মেহরাবকে বলে-
“আপনি বলুন আমি সবটা ধৈয্য নিয়ে শুনবো।

মেহরাব বলতে শুরু করে

“আমার বাবা মীর মোশারফ হুসাইন ছিলেন এই শহরের নাম করা একজন বিজনেস ম্যান।আমার দাদাও ছিলেন ধনী ব্যাক্তিদের একজন।বাবা লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের ব্যাবসা সামলাতো।একটা সময় নিজেই সবটার দায়িত্ব নেয়।পরিপূর্ণ বয়স হওয়ায় দাদাজান তাকে তার পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে।কিন্তু বাবা পছন্দ করতো আরেকজনকে।এদিকে দাদাজানের কথার ওপর কথা বলার সাহোস ছিলো না তার।দাদাজানের পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে হয় আমার বাবার।একটা দিনের জন্য সে তার নতুন বউকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি।পরবর্তীতে সে জানতে পারে আমার বাবার পছন্দের মেয়ের কথা।স্বামীর এমন অবহেলা সহ্য করতে পারে না,যেখানে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক সেখানে এই ভাবে তার সংসারে পরে থাকাটাই অনর্থক।তা ছারা সে ছিলো একজন শিক্ষিতো মেয়ে।সময় থাকতে সেপারেশন করলে দুজনের জন্যই মঙ্গল জনক।তাই বাধ্য হয়ে পারিবারিক ভাবেই ডিভোর্স হয় দুজনের মধ্যে।

বাবা অনেক খুশি অপরদিকে দাদাজান অখুশি থাকলেও পরবর্তীতে মত দেয় ছেলের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করানোর জন্য।বিয়েটাও হয়ে যায়।অন্যদিকে বাবার প্রাক্তন স্ত্রীর ও খুব ভালো জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়।আমার বাবার সংসারটা খুব সুন্দর ভাবে কাটতে থাকে।এর মধ্যে অসুস্থতার জন্য দাদাজান এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান।বাবা একা হয়ে যায়।বছর খানেক বাদে মীর পরিবারের ঘর আলো করে একটি পুএ সন্তানের জন্ম হয় আর সেই সন্তানই আজকের আমি।

কথা গুলো বলে মেহরাব থামে।মায়া আগ্রহ নিয়ে বলে
তারপর..?
মেহরাব আবার বলতে শুরু করে
“আমাদের পরিবার টা বেশ হাসি খুশিতেই দিন কাটতে লাগে।তবে ভালোর মধ্যে খারাপের উপস্থিতি ঘটে।এমন সুখি পরিবারের প্রতি তখন কু’নজর লেগে যায়।
আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন বাবা মা আমি কোনো এক জায়গা বেড়াতে যাই।ঠিক আসার পথে বড়ো ধরনের এক্সিডেন্ট হয়।সেখানেই স্পট ডেট হয় বাবা মার।কিন্তু অলৌকিক ভাবে উপরওয়ালা আমাকে রক্ষা করে।বেচে যাই আমি।আমাদের সবাইকে হসপিটাল নেওয়া হলে সেখানে উপস্থিত হয় বাবার দুঃস্পর্কের চাচা।আমার বাবা একমাএ ছেলে ছিলো।আমার কোনো আপন চাচা ফুপি ছিলো না।এই চাচা আবার বাবার ছোটো অংশের বিজনেস পার্টনার ছিলো। চাচা আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কোনো একজন শুভাকাংক্ষি আমার দায়িত্ব নিয়ে নেয়।শুধু আমার নয় আমাদের বাড়ি বাবার ব্যাবসা এসবের ও দেখাশুনা করতো।সেদিনের পর থেকে তার নিজের সন্তানের জায়গায় আমাকে স্থান দেয়।আর সেই থেকে এই পর্যন্ত আমি তার ছেলে হয়েই আছি।আর সেই হৃদয়বান মহিয়সী নারীই হলো আমার আম্মিজান “আফিয়া আনজুম”

এ পর্যন্ত শুনেই মায়ার স্তব্ধ হয়ে যায়।ওর মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না।

“আমি জানি এসব কথা কেউ শুনলে বিশ্বাস করবে না কিন্তু এটাই চিরন্তন সত্য।বাবার সাথে বিচ্ছেদ হলেও আম্মিজান সবসময় তার খোঁজ খবর নিতেন।এমনকি আমার ও।তাইতো এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন আর যখন শুনেছে আমি বেচে আছি ভালো আছি তখনই তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে হসপিটাল চলে এসেছিলেন।তার স্বামী একজন বড়ো মনের মানুষ ছিলেন।তাইতো আম্মিজানের কোনো ইচ্ছাতে সে অমত করেনি বরং তাকে সবসময় সাপোর্ট করেছিলেন।

আমি জানি আম্মিজান এসব কথা তোমাকে বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু সে কখনই এ সব কথা বলতে পারতো না।তা ছাড়া সে চেয়েছিলো আমি তোমাকে এ সব বলি।

তারপর..?

আস্ত আস্তে বড়ো হতে থাকি।আম্মিজান তার নিজের ছেলে মেয়েদের মতো সমান আদর ভালোবাসা দিতো।মানুষের মতো মানুষ হবার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকতো।বাবা মা হারা এতিম ছেলেটাকে কখনও কোনো কষ্টের আঁচ লাগতে দেয়নি।আমার নিজের মা সে নয় এটা আমি এক সেকেন্ডের জন্যও ভাবতে পারিনি।আসলে ভাবার সেই সুযোগ টা সে আমাকে কখনও দেয়নি।

আম্মিজানের এতো খেয়ালের মাঝেও একটা সময় বিগরে গিয়েছিলাম।খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশতাম আড্ডা দিতাম।বলতে গেলে অন্ধকার জগতে প্রবেশ হয়ে গিয়েছিলো আমার।এ সব জানতে পেরে আম্মিজান অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন।তার ইচ্ছা ছিলো আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিবে ।কিন্তু আমার অনিচ্ছা থাকায় সেটা আর হয় না।আমার খারাপ পথে যাবার কথা শুনে আম্মিজান অসুস্থ হয়ে পরে।ডাক্তার জানায় তার বড়ো ধরনের স্ট্রোক হয়েছে।এর পরে যদি আরো মারাত্মক কোনো আঘাত পায় তা হলে এর চাইতে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।

সত্যিকার অর্থে ঐ দিন মা হারাবার ভয়টা আমারা ভিতর ডুকে পরে।এক মাকে হারিয়েছি এ মাকে আর হারাতে চাই না।সিদ্ধান্ত নেই খারাপ সব কিছু ছেরে সুস্থ্য ভাবে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবো।আর সেটাই করি।আম্মিজান অনেক দিন আমার সাথে কথা বলেনি।আমার প্রতিটা দিন খুব কষ্টে কাটতো।আম্মিজানের উপেক্ষা আমি সহ্য করতে পারতাম না।একটা সময় উপর ওয়ালা সব ঠিক করে দেয়।আবার আমি আমার জীবনে আগের সেই আম্মিজানকে ফিরে পাই।সব কিছু ক্ষমা করে তার আরেক ছেলে মেহরাব কে বুকে টেনে নেয়।

কথা গুলো বলে মেহরাব দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
মায়া ভাবতে থাকে এমন মানুষ ও আছে দুনিয়াতে ? হা আছে আর আছে বলেই দুনিয়াটা আজও সুন্দর রূপে আছে।আজও সে সকল মানুষ আছে বলে তাদের সান্নিধ্যে থেকে দুঃখি মানুষগুলো সুখে আছে।ভালো থাকুক সবসময় ভালো মনের মানুষ গুলো।

চলবে…..

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন )

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-৯+১০

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৯

বৃষ্টির মৌসুম যখন তখন আকাশের বুকে মেঘ জমে।মনে হচ্ছে নিত্য দিনের মতো আজও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।মায়া ওর রুমের বারান্দায় বসে আছে।ভাবছে অনেক দিন বৃষ্টিতে ভিজে না আজ ভিজবে।তাই অপেক্ষা করছে কখন বৃষ্টি হবে।

“দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেছে।মেহরাবের সাথে ওর সম্পর্কটা আগের মতোই আছে।এখন অব্দি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে রূপ নেয় নি দুজনের মাঝে।এ ব্যাপারে না মায়া কিছু ভাবছে না মেহরাব ওকে কিছু বলছে।তবে মায়া যখন মেহরাবের সামনে আসে ওর মনে অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারে না।পারবে কি ভাবে প্রেম ভালোবাসা এ সব সম্পর্কে ও জ্ঞাত নয়।ওর জীবনে যে ভালোবাসার বড্ড অভাব ছিলো হয়ত সে জন্য এটার সম্পর্কে অবগত নয়।”

ভাবনার মাঝেই আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি পরতে শুরু করে।মায়া উৎফুল্ল চিওে বসা থেকে উঠে সোজা সাদের দিকে পা বাড়ায়।শায়লা আর সিতারা তখন রান্নার কাজে ব্যাস্ত।ছাদে যেতেই বৃষ্টির প্রখরতা আরো বৃদ্ধি পায়।মায়া মনের আনন্দে দুহাত ছড়িয়ে ভিজতে থাকে।কয়েক মিনিট পরই মেহরাব গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।গাড়ি থেকে নামতেই ছাদের দিকে নজর যায়।মুহূর্তে চোখ দুটো আটকে যায় বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা ওর একান্ত রমনীর দিকে।যাকে এ অবস্থায় দেখার অধিকার শুধু ওর ই।
“স্যার ভিজে যাচ্ছেন তো বাসার মধ্যে যান”ড্রাইভারের কথা শুনে নজর ফিরিয়ে বাড়ির মধ্যে ডুকে যায় মেহরাব।রুমে না গিয়ে সোজা ছাদের দিকে হাটতে লাগে।ছাদে পৌঁছাতেই আরেক দফায় ঝটকা খায় ও।এক রাশ খুশি আর আনন্দ নিয়ে মায়া বৃষ্টি বিলাস করছে।মায়ার গায়ের পোষাক টা ভিজে শরিরের সর্বাঙ্গের ভাজ দৃশ্যমান হয়ে ওঠেছে।ওর অজান্তে চুল গুলো খোপা থেকে কখন খুলে গেছে একদমই টের পায়নি।লম্বা চুল গুলো ভিজে পিঠের সাথে লেপ্টে আছে।
এই মুহূর্তে মেহরাবের নিজেকে সামলানো টা বড়ো কষ্ট কর হয়ে দাঁড়িয়েছে ।এমন দৃশ্য ও দেখবে এটা ভাবতেই পারেনি।ধীরে ধীরে পা বাড়াচ্ছে সামনের দিকে।একটা সময় মায়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।মেহরাব ও ভিজে একাকার আর পারছে না নিজেকে সামলাতে।মায়ার দু”কাঁধে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফেরায়।মায়া ওর স্পর্শে কেপে ওঠে।মাথা নিচু করে আছে মায়া,মেহরাব বুঝতে পারছে মেয়েটার শরির কাঁপছে।হয়ত প্রিয় মানুষটা ছুয়েছে বলে।থুতনি ধরে উঁচু করে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে দেখে।আবেশে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে আছে মায়া।গোলাপের পাপরির ন্যায় অধর জোড়া ও কাঁপছে।মেহরাবের মনে নিষিদ্ধ চাওয়া গুলো হুট করে জেগে ওঠে।খুব করে চাইছে গোলাপী অধরজোড়ার সুধা পান করতে।ধীরে ধীরে মেহরাব ওর ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নেয় মায়ার পানে ঠিক তখনই এক পশলা বৃষ্টির ঝাপটা ওর দিকে আছরে পরে।
মেহরাব ভিষণ বিরক্ত হয় এতো সুন্দর মুহূর্তে বাধা প্রাপ্ত হওয়াতে।
মায়ার হাসির শব্দে ওর ভাবনার অবসান ঘটে।তারমানে এতোক্ষণ যা ঘটেছে সবটাই ওর কল্পনা?দূর আজও কাজটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।

মায়া বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে একটা সময় পেছন ফিরে মেহরাব কে দেখে চমকে ওঠে।কিন্তু মেহরাব মায়ার দিকে একধ্যানে চেয়ে আছে।এটা দেখে মায়া কয়েক বার ডাকলে ওর কোনো হেলদোল না দেখে ছাদে জমানো পানি দুহাতে ভর্তি করে মেহরাবের দিকে ছুরে মারে।তবে এতেও ওর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে একটু ভরকে যায়।ভেবেছে মেহরাব মনে হয় ওর প্রতি রেগে আছে।নিমিষেই ওর মুখের হাসিটা বিলিন হয়ে যায়।মেহরাব ওর একটু কাছে এসে ডান হাতটি ধরে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়।মায়া ভয় পাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজেছি বলে আবার কিছু না বলে।রুমের মধ্যে এসে মেহরাব ওর হাত ছাড়ে আর এভাবে ভেজার জন্য রাগ করে।ওকে কাপর চেন্জ করতে বলে নিজেও রুম থেকে বের হয়ে যায়।

“বিকেল বেলা মেহরাবের নিকট ফিরোজ আসে।মেহরাব তখন ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কিছু কাজ করতেছিলো।ফিরোজ আসতেই ওকে বসতে বলে।ফিরোজ মেহরাববের উদ্দেশ্য বলে

“বড়ো ভাই কাজটা ঠিক করেননি কিন্তু।

মেহরাব ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?

“কি হয়নি বলেন আপনার যে একটা শ্যালিকা আছে সেটা তো আমাকে বলেননি।

মেহরাব স্বাভাবিক ভাবেই বলতে থাকে
“এটা বলার কি আছে জেনে তো গেছো নাকি?

“হা সেটা ঠিক।
এবার ফিরোজ মাথা চুলকে বলতে লাগে “বড়ো ভাই ভাবি ও যেমন সুন্দর তার বোন ও কিন্তু সেই সুন্দর আছে।শুধু তাই না আমাকে কিন্তু সেই রকমের আদর আপ্যায়ন করছে।তখন নিজেকে কেমন একটা নতুন জামাই জামাই ফিল হইছে।
বলে একটা মুচকি হাসি দেয়।

“এ সব বাদ দাও ফিরোজ যে কাজের জন্য গেছো সেটার কি খবর?

“বড়ো ভাই যেমন বলেছেন তেমনটাই করেছি।

“ঐ দিকের প্রজেক্টের কি খবর কাজ ভালো ভাবে চলছে?

“হা বড়োভাই আর লেবারদের এই সপ্তাহের টাকাটাও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।আর এই নিন ফাইল এখানে আপনার কথা মতো সব কাগজ পএ আনা হয়েছে।আর যা যা বলছেন সে ভাবেই কাজ করেছি।

“ঠিক আছে রাখো

“বড়োভাই এবার আমি উঠি বাসায় যেতে হবে।গতোকাল যাবার পর থেকেই মা অনেক চিন্তা করছে পরে আবার আসবো বলে ফিরোজ চলে যায়।

“মেহরাব ফাইলগুলো হাতে নিয়ে মায়া কে ডাকতে লাগে।
মায়া তখন শায়লার সাথে গল্পে মগ্ন।ডাক শুনতেই শায়লা গল্প থামিয়ে মায়াকে বলে “ভাবি আপনে যান ভাইজান ডাকতাছে।মায়া রুমে আসলে মেহরাব ওকে পাশে বসতে বলে।মায়া ওর পাশে বসলে ফাইলটা ওর হাতে দেয়।এটা কিসের ফাইল জানতে চাইলে মেহরাব বলে “তোমার স্কুল কলেজের আর তোমার যাবতীয় দরকারী কাগজপএ আছে এখানে।মায়া এ সব শুনে তো অবাক এ গুলো এখানে কেমনে?ওর চেহারায় প্রশ্নের ছাপ তাই মেহরাব নিজেই বলে “আমি আনিয়েছি ফিরোজকে দিয়ে ।গতোকাল ওকে পাঠিয়েছিলাম তাছারা কলেজে ভর্তি হতে তো এ সবের প্রয়োজন তাই।কথাটা বলে মেহরাব ওর পাশে রাখা একটা বক্স মায়ার হাতে দেয়।মায়া বুঝতে পারছে না এটা আবার কিসের বক্স।জিজ্ঞাসা করলে মেহরাব বলে

“তোমার জন্য একটা নতুন মোবাইল এনেছি আর হা তোমাদের বাড়িতে একটা পাঠিয়েছি ফিরোজকে দিয়ে।এখন থেকে যখন তখন কথা বলতে পারবে ইচ্ছে করলে দেখতে ও পারবে।আশা করি বাড়ির জন্য আর মন খারাপ হবে না।

মায়া খুব খুশি হয়।মনে মনে ভাবে মেহরাব ওর জন্য এতোটা ভাবে?যাই হোক মানুষ টা ভালো খারাপ না।মেহরাব ওকে মোবাইল এর সব কিছু শিখিয়ে দেয়।মায়া তখন ওদের বাড়ি কল দিতে চাইলে মেহরাব কল দিয়ে দেয়।হাসিমুখে মায়া কথা বলতে থাকে আর এই হাসি মুখটা দেখে মেহরাবের মনটায় তৃপ্তি পায়।এ ভাবেই মায়াকে ও খুশিতে আজীবন ওর কাছে রাখবে কষ্টের আঁচ লাগতে দিবে না।

“পরদিন মেহরাব মায়াকে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়।ভর্তি শেষ করে ক্লাস রুম দেখিয়ে কলেজের ভেতরটাও ঘুরিয়ে আনে মায়াকে।মায়ার বেশ ভালো লাগে কলেজের পরিবেশটা।কিন্তু এতো সুন্দর হলেও ওর গ্রামের কলেজটাই যেনো ওর কাছে বেশি সুন্দর।অনেক বড়ো মাঠ বিশিষ্ট কলেজ।এখানটায় তেমন বড়ো মাঠ নেই তুলনামূলক অনেক ছোটো।ভর্তি শেষ করে ওরা আবার রওয়ানা হয় কিছুদূর আসতেই মায়ার খুব ইচ্ছে করে নেমে একটু ঘুরবে।ভাবনার মাঝেই গাড়ি থামে মেহরাব গাড়ি থেকে বের হয়ে ওর পাশে এসে দরজা খুলে ওকে বের হতে বলে।মায়া উৎফুল্ল মনে বের হয়।এটা পার্কের মতোই অনেক লোকজনের সমাগম।একটু হেটে চারপাশ টা দেখতে লাগলো।মেহরাব গাড়ি লক করে গাড়ির সাথেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়।এক দৃষ্টিতে মায়ার খুশিময় মুখটা দেখতে থাকে।মন কে জিজ্ঞেস করে “সাজবিহীন সাদামাটা ড্রেসে ও একটা মেয়েকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে? মন উওর দেয়

“হা লাগে আর সেটা নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেই।ভালোবাসার রং দিয়ে তাকে রাঙ্গাতে পারলে সে মানুষটা যেভাবেই থাক না কেনো তাকেই পৃথিবীর সব সুন্দরের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ সুন্দর মনে হবে।”

“মেহরাব কখনও প্রেমে পরেনি তবে ইচ্ছা ছিলো বিয়ের পরে বউয়ের সাথে জমিয়ে প্রেম করবে।হায় পিচ্চি একটা কপালে জুটছে ভালোবাসার মানে টানে বোঝে কিনা কে জানে? তবে ও চায় ধীরে ধীরে আবারও নতুন করে মায়ার প্রেমে পরবে।মায়াকে আবার নতুন করে ভালোবাসবে।খুনশুটিময় হবে ওদের প্রেমময় মুহূর্ত গুলো।একটা সময় মায়া ওর মায়ায় পরে মেহরাবের আগে মায়া ই ওকে প্রপোজ করবে।হয়ত সে দিনটাই ওর জীবট টা সার্থক হবে।দেরিতে হলেও এর অপেক্ষা মেহরাব করবে।”

মায়ার এই মুহূর্তে একটা জিনিস খুব খেতে মন চাইছে কিন্তু মেহরাব কে বললে দিবে তো? যদি উল্টো রাগ করে তাই আর বলে না।মেহরাব ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কিছু খাবে কিনা?ওর আবার বাইরের স্ট্রিট ফুড পছন্দ না।আগে যখন খেতো বেশির ভাগ সময়ই পেট খারাপ করতো তাই ছাএ জীবন থেকে এই পর্যন্ত এ সব খাবার ও এড়িয়ে গেছে।মায়া আমতা আমতা করে বলে আমি ঝালমুড়ি খাবো।মেহরাব সামনে এগিয়ে গিয়ে ঝালমুড়ি ওয়ালা মামার কাছে যায়।অল্প ঝাল দিয়ে মাখাতে বলে একটু পাশে গিয়ে দাড়ায়।এই সুযোগে মায়া ঝাল একটু বেশি দিতে বলে।
আর মনে মনে ভাবে “ইশ কতো দিন এই ভাবে খাই না।আগে ওর বান্ধবী আয়েশা কে নিয়ে কড়া ঝাল দিয়ে ঝালমুড়ি খেতো।মামার হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে মায়া খেতে শুরু করে।অনেক মজার কিন্তু এরপরেই টের পায় ঝাল টা একটু বেশি লাগা শুরু করে।মনেহচ্ছে কাচা মরিচ কম এর মধ্যে বোম্বাই মরিচ কুচি দিয়েছে বেশি।অনেক কষ্টে খেয়ে ওর জান শেষ।চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করেছে।মেহরাব এসব দেখে এগিয়ে এসে লোকটাকে বলে ঝাল তো কম দিতে বলেছিলাম কিন্তু যখন শোনে মায়াই দিতে বলছে তখন ওর রাগটা দ্বিগুন হয়ে যায়।

ঠান্ডা পানি কিনে খাওয়ায় কিন্তু তাতেও কাজ হয় না পরে কতো গুলো মিষ্টি চকলেট কিনে দেয়।তাতে একটু কমলে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে।মায়ার ফর্সা চেহারা ঝাঁলের প্রকটে একদম লাল হয়ে গেছে।চোখ দুটো ও তাই বাকি রইলো ঠোঁট সেটার কথা আর কি বলবে।মেহরাবের তো মন চাইছে অন্য কিছু করতে।ওই ঠোঁট জোড়ার দিকে আর নজর দিতে পারছে না রাগ টাকে দমন করে মায়াকে বলে”আর কখনও এমন টা করতে গেলে তোমার ঠোঁটের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো বলে দিলাম।”

বেচারী মায়া মেহরাবের এই হুমকির আসল রহস্য ধরতে পারেনি।ওর ঠোঁটে আবার কি করলো বুঝতে পারে না কিছু বোকা চাওনি দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।

চলবে……..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১০

বিষণ্ণ আর ভারাক্রান্ত মন’সাথে একরাশ অভিমান নিয়ে বসে আছে মায়া।চোখ দুটো ও ছলছল করছে।এই মুহূর্তে কিছুই ভালো লাগছে না ওর।

বাড়ির যে পাশে ফুলের বাগান তার ওপর পাশে ছোটো একটা সুইমিং পুল রয়েছে।এটা মেহরাব শখের বশে করেছিলো কিন্তু সুইমিং করা হয় না।প্রথম দেখাতেই মায়ার এই জিনিস টা বেশ ভালো লাগে।এখানে গোসল করতে না পারলেও মন খারাপ বিধায় এখানে এসে পুলের স্বচ্চ নীল জলে পা দুটো ডুবিয়ে রেখেছে।যেমনটি ও গ্রামে থাকতে করতো।
কলেজ থেকে আসার পর ঘন্টা খানেক ধরে এখানেই বসে আছে।কয়েক বার শায়লা আর সিতারা ডাকলেও ও যায়নি।মন খারাপের কথা গুলো কাউকে বলতে পারছে না।এর কারনটা মেহরাব নিজে।

কলেজে ভর্তির পর ক্লাসের প্রথমদিন মেহরাব নিজে ওকে নিয়ে যায়।ক্লাস পর্যন্ত ওকে পৌছে দিয়ে অফিস চলে যায় ।তবে তার আগে মায়াকে বলেছিলো “তোমার যে বিয়ে হইছে সেটা ভুলে গিয়ে এখন থেকে মন দিয়ে লেখা পড়া করবে।না হলে কিন্তু মন বসবে না লেখাপড়ায়।”
ওর কথা শুনে মায়া শুধু মাথা নাড়িয়েছিলো।
কিন্তু কথাটা শুনে খুশি হয় না মায়া।ও এমনিতেই দ্বিধা দ্বন্ধে ছিলো মেহরাব ওকে বিয়েটা নিজ ইচ্ছায় করেছিলো নাকি পরিস্থিতি ওকে বাধ্য করেছে?তার ওপর দুজনের সম্পর্ক ও স্বামী স্ত্রীর মতো না তাই ও ধরেই নিয়েছে মায়াকে মেহরাব পছন্দ করে না।শুধুমাত্র ওর দায়িত্ব পালন করছে।আর আজ বিয়ে হয়েছে সেটা ভুলে যেতে বলেছে ?তার মানে এই লোক ওকে ভালোবাসে না।ওর প্রতি যা দেখায় সেটা করুনা হা সেটাই হবে।আর আমি তাকে কতো ভালো ভেবেছিলাম এ সব ভেবে মনে মনে ফুসতে থাকে।

ওর সাথে মেহরাব কে দেখে ওর ক্লাসের অনেক মেয়ে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো শুধু তাই না কলেজের অনেক মেয়েরাই একটু ভিন্ন নজরে মেহরাব এর দিকে তাকিয়েছিলো।আর তাকাবে না কেনো এতো সুন্দর স্মার্ট ড্যাসিং লুকে আসলে যে কেউ এক দেখায় প্রেমে পরবে।এ সব কিছুই মায়ার চোখ এড়ায়নি।তখন মায়া ব্যাপারটা স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছিলো কিন্তু আজকের ঘটনার পর ওর মাথা ঠিক নেই।

দ্বিতীয়দিন মেহরাব ওকে সময়মতো কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।ক্লাসে যেতেই কয়েকটা মেয়ে এসে ওর সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে।মায়াও একই ক্লাসের হওয়ায় সহজেই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন করে।দুইদিনেই ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় ওদের মধ্যে।তবে মায়া যে বিবাহিত সেটা মায়া বলে না।কারন মেহরাব ওকে যে কথাটা বলেছিলো সেটা মনে করে চাপা অভিমানে ও নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছিলো।আর আজ ওকে ওর মেয়ে বন্ধুরা মেহরাবের কথা জিজ্ঞেস করে।ওর সাথে কি সম্পর্ক সেটা জিজ্ঞেস করলে ও কিছু বলে না।পাশ থেকে একজন বলে মনে হয় কাজিন হবে তাই না?মায়া তখনও কিছু বলে না তাই ওরা ভেবেই নিয়েছে কাজিন ই হবে।
এদের মধ্যে সবচাইতে স্টাইলিশ মেয়ে জুহি সে ওকে খুব রিকোয়েস্ট করে ওর হয়ে একটা কাজ করে দেওয়ার জন্য।কথাটা কি সেটা আগে জানতে চায় মায়া।

মেয়েটা আমতা আমতা করে ওকে বলে “মায়া তোমার ঐ কাজিনটাকে আমি প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি।প্লিজ ওকে গিয়ে আমার কথা বলবা আর রাজি করাবা প্লিজ প্লিজ পারবে না?
মায়ার এ শুনেই গায়ে আ”গুন ধরে যাবার মতো অবস্থা।এই মেয়ে বলে কি?কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করতে পারছে না।যেনো এ সব কথা শুনে ওর মন চাইছে মেয়েটার চুল গুলো মুট পাকিয়ে ওকে ধরে ঘুরাতে।কতো বড়ো সাহোস আরেক জনের জামাইর দিকে নজর দিছে।কিন্তু মেয়েটা তো আর এ সব জানে না।তাই বোকা হাসি দিয়ে ওদের বুঝায় ঠিক আছে।
তারপরেই বাসায় এসে ওর রাগ আরো বাড়তে থাকে।এ কয়দিনে মায়ার মেহরাবের প্রতি একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে।কিন্তু সেটা কি ও পারবে মেহরাব বলতে?

আজ একটু তারাতারি মেহরাব অফিস থেকে বাসায় আসে।মেইন গেট দিয়ে ডুকতেই সুইমিংপুলের দিক নজর যায়।হালিম কে ডেকে ওর হাতের ব্যাগটা ভেতরে পাঠিয়ে পুলের কাছে এগোয়।মেহরাব ঠিক বুঝতে পেরেছে ওর মায়াবিনীর কোনো একটি কারনে মুড অফ।মায়া ওর উপস্থিতি টের পায় না এক ধ্যানে কিছু একটা ভাবছে।মেহরাব এর প্যান্ট নিচ থেকে ভাজ করে কিছুটা উপরে উঠিয়ে মায়ার পাশে গিয়ে বসে আর ওর মতোই পা দুটো পানিতে ডুবিয়ে দেয়।মায়া পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে তাকায়।মেহরাব কে দেখে কিছুটা ঘাবরে যায় ভাবছে হয়তো এভাবে বসে থাকার জন্য রাগ করবে কিন্তু না দেখে সেও পানিতে পা রেখেছে।মায়া কিছু না বলে আবার সামনের দিকে তাকায়।মেহরাব ওর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে ঝটপট বলে ফেলো।মায়া “কিছুনা”বলে আবার চুপ থাকে।মেহরাব আবার বলে “বলতে বলছি ভালোয় ভালোয় বলো কি হয়েছে?
মায়া এবার বলে “আমার ক্লাসের সবচাইতে সুন্দর মেয়েটা আপনাকে পছন্দ করে,আপনাকে ভালোবাসে আর এটাই ও আপনাকে বলতে বলছে।

মেহরাবের নিকট এবার সবটা ক্লিয়ার যা বুঝার বুঝে গেছে।
“ওহ এই কথা আমি ভাবলাম কি না কি হয়েছে।
মায়ার এবার রাগ লাগে
“তো আপনার কিছু বলার নেই?
“হুম বলার তো আছেই।কাছের মানুষ তো আর আমার ফিলিংস বুঝে না দেখছো অন্যরা কিন্তু ঠিক বুঝে।আর এমনিতেও মীর মেহরাব হুসাইন কে এক দেখায় যে কেউ তার গলায় ঝুলে পরতে প্রস্তুত”শুধু একজন ছাড়া।
মনে মনে ভাবছে হা এই জন্যই বিয়ের কথা বলতে নিষেধ করেছে বুঝি তো প্রচন্ড জেলাসি ফিল হচ্ছে মায়ার।কিছু বলতে পারছে না।অন্যদিকে মেহরাব ও মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে।বৌ টা ওকে একটু একটু ভালোবাসতে শুরু করেছে।ওর জন্য অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু মুখে বলতে পারছে না।তবে যতোদিন মায়া মেহরাব কে নিজথেকে কাছে টেনে না নিবে ততোদিন নিজেকে সংযত রাখবো এটাই মেহরাব ভেবে রাখে।ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে নারাজ ও।

পরদিন মেহরাব ওকে নিয়ে কলেজে পৌছে নিজেও ওর সাথে ভিতরে যায়।ক্লাসে ঢোকার আগেই জুহি সহ অন্য মেয়েদের সাথে বাইরে দেখা হলে জুহি তো সেই রকমের এক্সাইটেড হয়ে যায়।লজ্জায় কেমন মাথা নুইয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে “ইশ মেহরাব কে মনে হয় মায়া রাজি করিয়ে এনেছে।কিন্তু হায় এ সব ভাবনায় এক বালতি জল ডেলে দেয় মেহরাব।চোখে পরিহিতো সানগ্লাসটি খুলে হাতে নিয়ে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বলে “গাইস সি ইজ মাই অন এন্ড অনলি লাভলি ওয়াইফ।সো আশা করি সবটা বুঝতে পারছো?কথাটা বলেই চোখে চশমা এটে মায়ার থেকে বিদায় নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।মায়ার তো কথাটা শুনে বিশ্বাস ই হচ্ছিলো না এমন একটা কথা শুনবে ও।খুশিতে ওর দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা কিন্তু আবার ভাবে এটা মনে হয় শুধুই ওকে বিবাহিতো বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছে।

অন্যদিকে কথা গুলো শুনে জুহি তো হার্ট এটাক করার মতো বাকিরাও তাই।মেহরাব যেতেই জুহি সহ সবাই মায়াকে ধরে কেনো সে আসল কথাটা বলেনি।মায়া এসব নিয়ে আর বেশি কিছু বলে না।জুহির এর পরে কান ধরে ভালো ভাবে কারোর সম্পর্কে না জেনে আর ক্রাশ খাবে না।এরপর ওরা ঠিক করে মায়ার সাথে ভালো বন্ধু হিসেবেই থাকবে কারন মায়া কে ওদের খুব পছন্দ হয়েছে আর মায়ার জুহি সহ সবার সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায়।

“আজকাল অফিসের কাজের চাপে মেহরাব মায়ার তেমন খোঁজ খবর রাখতে পারে না।ওর নিজের বায়িং হাউজ তাই বিদেশী বায়ারদের সাথে প্রতিদিনই মিটিং এ ব্যাস্ত থাকতে হয়।কয়েকটা দিন এমন হওয়ার পর একটু ফ্রি হয়।আর ও অফিসের সবাইকে জানিয়ে দেয় সবার জন্য পার্টির একটা আয়োজন করবে।শুনে সবাই বেশ খুশি হয়।
বাসায় এসে মায়াকে ডাকে কিন্তু মায়া আসে না।নিজের ওর কাছে যায়।বুঝতে পারে মায়া এবারও অভিমান করে আছে।হাত ধরে টেনে এনে খাটে বসায়।
ওর সামনে বসে মেহরাব বলে আগামী পরশু অফিসে একটা পার্টির আয়োজন করেছি।মায়া শুনে ওর মন খারাপ দূর হয়ে যায়।কিন্তু আবার ওর মন খারাপ হয়ে যায়।মেহরাব বুঝতে পারে না হঠাৎ হঠাৎ এই মেয়েটার কি হয় কি জানি।
বেশ আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।মায়া এবার বলে “আসলে শুনেছি এ সব জায়গায় যেতে হলে অনেক ভালো ড্রেস পরে যেতে হয় কিন্তু আমার তো..আর কিছু বলতে দেয় না মেহরাব ওকে।

কাজের চাপে একটা দিনও মায়াকে কোনো কেনাকাটা করে দিতে পারেনি এটা সত্যিই ওর বড়ো ধরনের ভুল হয়েছে।তাই ও খুব লজ্জিত।তাছাড়া বিয়ে উপলক্ষে অল্প সময়ে যা পেরেছে কলিমউল্লাহ মামুর স্ত্রী মায়াকে কিছু জামা কাপড় কিনে দিয়েছিলো।মেহরাব কিনতে চাইলেও ওকে একদমই কিনতে দেয়নি।তবুও ওর তো উচিত ছিলো আর এ কয়েকটা দিন তো আরো কেয়ার নিতে পারেনি তাই আরো অনুতপ্ত।সরি ও বলেছে অনেকবার ।আজ ভেবে রেখেছে মায়াকে নিয়ে কাল শপিংয়ে গিয়ে ওর পছন্দ মতো অনেক অনেক কেনাকাটা করে দিবে।
মায়াও অনেক খুশি হয় নিমিষেই মন খারাপ দূর হয়ে যায়।এই খুশিটাই মেহরাব দেখতে চেয়েছে।এখন ওর খুব শান্তি লাগছে।

পরদিন বিকেলে মায়াকে নিয়ে মেহরাব শপিং করতে যায়।সুপার মলে ডুকে তো মায়া অবাক।এই প্রথম এমন জায়গায় এসেছে আবার এতো লোকের ভীর এতো বড়ো জায়গা যদি ও হারিয়ে যায় তাই মেহরাবের হাত আকরে ধরে।মেহরাব ওকে শান্ত হতে বলে চলন্ত সিঁড়ির কাছে গেলে মায়া ভয়ে পা দিতে পারে না বলে ওরা গ্লাস ক্যাপসুল লিফ্টের সাহায্যে উপরে ওঠে।মায়া তো সেই পরিমানের অবাক যদিও মুখ দিয়ে কোনো টু শব্দ করেনি।অবশেষে ড্রেসের দোকানে গিয়ে মেহরাবের পছন্দ মতো অনেক শাড়ি থ্রিপিচ আরো অন্যান্য জিনিস কিনে দেয়।এ সব দেখে মায়ার চোখে পানি আসে।এতো সুখ এতো কিছু ওর কপালে ছিলো।ইশ এ সব যদি পুষ্প দেখতো অনেক খুশি হতো।আড়ালে ওড়নার আচলে চোখ মুছে নেয়।কেনাকাটা শেষ করে ওরা রেস্টুরেন্ট এ ডুকে।মেনুকার্ড দেখিয়ে মায়ার ইচ্ছে মতে খাবার খায়।আসলেই খাবার গুলো খুব মজার ছিলো তারপরে ওরা বাসার দিকে রওয়ানা হয়।

বাসায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।ভেতরে ডুকতেই ফিরোজের সাথে দেখা।মেহরাব ওকে জিজ্ঞেস করে কখন এসেছে?ফিরোজ “এই তো দশমিনিট আগেই এসেছি বলে।বড়ো ভাই আমি গেলাম আর আপনাদের জন্য খালাম্মা ড্রইং রুমে অপেক্ষা করছে।কথাটা শুনেই মেহরাবের মন খুশিতে ভরে ওঠে মায়াকে সঙ্গে নিয়ে ড্রইং রুমে আসে।সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে একজন ..সে ওর জীবনের অতি আপন একজন।ওদের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে।তার সামনে এসে হাটু ভেঙ্গে বসে পরে মেহরাব।অতি সন্তপর্ণে ডানহাতটি ধরে অধর ছুয়ে দেয় মেহরাব।খুব নমনীয়তার স্বরে বলে

“আম্মিজান” কেমন আছেন?

চলবে…….

(ভুলত্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-৭+৮

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৭

“আপনারা রাজি থাকলে আমি মায়াকে বিয়ে করতে চাই এক্ষুনি এই মুহূর্তে”

মেহরাবের আকস্মিক বিয়ের প্রস্তাবে পিনপতন নিরবতা চলছিলো সকলের মাঝে।বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে একে অপরের দিকে নজর বুলাচ্ছে।এটা কি বললো মেহরাব?
আয়মন ন্যাকা কান্না বন্ধ করে স্থির হয়ে রয়।মায়ার বদনাম হোক সেটাই চেয়েছিলো কিন্তু এই ভাবে মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিবে সেটা তো চায়নি।কাশেম মিয়ার কান শুনতে ভুল করেছে এটা ভেবে মেহরাবের উদ্দেশ্য বললো

“বাবা ঐ শয়”তানটার হাত থেইক্যা মাইডারে বাচাইছো এইডাই অনেক।কিন্তু আমার মতো গরিবের মাইয়া বিয়ে করবা এ সব কইয়া লজ্জা দিও না।

“কিন্তু আমি তো জেনে শুনেই বিয়ে করতে চাইছি।

কাশেম মিয়া কলিমউল্লাহর নিকট থেকে মেহরাবের সম্পর্কে সবটাই শুনে ছিলো।এতো ধনী হওয়া সত্বেও মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তাই এমন প্রস্তাবে সে কিছুটা ঘাবরে যায়।অসহায় চোখে কলিমউল্লাহ কে বলে

“স্যার আপনে তারে বুঝান আমি গরিব মানুষ আমার সাথে আত্নীয়তা করতে চাওয়া টা কি ঠিক?

কলিমউল্লাহ মেহরাব কে কিছু বলার আগেই মেহরাব জবাব দেয়

“আমি জানি মামু আপনি কি বলবেন “এই মেহরাব একবার যেটা বলে সেটাই করে আর যেটা করে ভেবে চিন্তেই করে।

এটুকু বলে মেহরাব মায়ার দিকে তাকায়।চোখে চোখ পরতেই মায়া দৃষ্টি নত করে ফেলে।মেহরাব আবার বলতে লাগে

“আর মায়ার সম্পর্কে যতোটুকু শুনেছি তাতে মীর মেহরাব হুসাইন এর বউ হওয়ার যোগ্যতা সে রাখে।তাই আমি চাই আপনি আমার একান্ত অভিবাবক হিসেবে বিয়ের দায়িত্বটা পালন করুন।

কলিমউল্লাহ এবার বুঝতে পারে মেহরাব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা বুঝেশুনে নিয়েছে।ভেবে দেখলো বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে মায়ার মতো এতো ভালো মেয়ে হয় না।এই মেয়েকে বিয়ে করলে মেহরাব সুখি হবে তাই আর অমত করে না।কাশেম মিয়াকে সে বুঝায় এবার কাশেম মিয়া কলিমউল্লাহর ওপর ভরসা করে বিয়েতে মত দিয়ে দেয়।
শব্দ করে আলহামদুলিল্লাহ বলে সে।এরপর কাশেম মিয়াকে দেরি না করে কাজী ডাকতে বললে তখনই কাজী ডেকে নিয়ে আসা হয়।পুষ্প তো খুশিতে এক লাফ দিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরে।মায়া কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না।সেখানে আর এক মুহূর্ত না থেকে ঘরের মধ্যে চলে যায়।
পুষ্প বোনের পিছু যায় বোনের কাছে গিয়ে বলে

“বুবু আমি কইছি না তোমার জন্য কোনো রাজপুএ আসবো দেখছো বুবু তাই হইছে।বুবু তোমার তো রাজকপাল।আমার যে কি আনন্দ লাগছে বলে বুঝাইতে পারুম না।

মায়া কিছুই বলতে পারছে না।
অন্যদিকে আয়মনের মনে রাগ জমতে থাকে কিছু বলতে যাবে তখনই কাশেম মিয়া বাধা দেয়।সে জানে এমন একটা খুশির দিনে বউ আবার কোনো ঝামেলা করতে পারে।স্বামীর এমন কাজে আয়মন মোটেও খুশি হয় না।একদম চুপ থাকতে বলে।

“অবশেষে কবুল বলে বিয়ে নামক বৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেলো দুটি মানব মানবীর জীবন।”

মায়া যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো?কিছুক্ষণ আগেও জীবনে একটা তিক্ত সময় অতিবাহিতো করছিলো।মুহূর্তেই পাল্টে গেলো সব।কোনো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না মনে হচ্ছে এটা কোনো স্বপ্ন।কিন্তু না আজ থেকে সে মীর মেহরাব হুসাইন এর সহধর্মিনী।তবে ওর মনে প্রশ্ন থেকেই যায়।”এই বিয়েটা করার কি উদ্দেশ্য ছিলো তার?বিয়ে ভাঙ্গার বদনামের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য ?নাকি অন্যকিছুর জন্য?

মেহরাব আর দেরি করতে চায় না ।এমনিতেই যে সব ঘটনা আজ ঘটে গেছে।তাই আজই মায়াকে নিয়ে শহরের বাড়িতে ফিরতে চায় ও।ফিরোজ কে বলে দিয়েছে আর্জেন্ট গাড়ি পাঠাতে।গাড়ি আসতে একটু দেরি হবে তাই মেহরাব বিয়ের কাজ সম্পন্ন হতেই মায়ার বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলিমউল্লাহ মামুর বাড়িতে মায়াকে নিয়ে আসে।ওখানের সবাই বেশ খুশি হয় নতুন বউ পেয়ে।
সন্ধ্যার পর গাড়ি চলে আসে সাথে ফিরোজ।ও ভেবেছিলো এতো তারাহুরো করে গাড়ি পাঠাতে বলেছে মেহরাবের কিছু হলো কিনা।তাই বেশি কিছু না ভেবে নিজেও রওয়ানা হয়।

ফিরোজ কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।এখানে এসে এ সব দেখে বেচারা এক প্রকার অজ্ঞান হয়ে যাবার মতো উপক্রম।অভিমানের সুরে কষ্ট ভরা মন নিয়ে বলতে থাকে।

“বড়ো ভাই এইটা কোনো কথা? কওয়া নাই বলা নাই ডিরেক্ট বিয়ে করে নিলেন?

“ফিরোজ বন্ধ করো ভাই তোমার ড্রামা এবার আমাদের রওয়ানা হতে হবে।বাকি কথা বাসায় গিয়ে শুনবো।

মেহরাব সবাইকে বিদায় জানিয়ে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পরে।বড্ড ক্লান্ত লাগছে ওর শারিরিক ভাবে নয় তবে মানসিক ভাবে।ফিরোজ সামনে বসে আর মায়াকে নিয়ে মেহরাব পিছনে বসে।গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর থেকে মায়া কান্না করেই চলছে।এই প্রথম ওর শহরে যাএা।আপন মানুষ আর চেনা পরিচিতো গ্রাম ছেরে অজানা অচেনা পথে পাড়ি দিচ্ছে।যার সাথে যাচ্ছে তার সম্পর্কে ও অজানা ওর সেটা ভেবে বুকের মধ্যে আবার ও হু হু করে ওঠে।মেহরাব বার কয়েক মায়াকে শান্ত হতে বলে কিন্তু ও থামে না।একটা সময় ওর কান্না করতে করতে হিচকি ওঠে যায়।মেহরাব পানির বোতল বের করে মায়ার হাতে দেয়।মায়া বোতল টি নিয়ে কয়েক ঢোক খেয়ে নেয়।
আজ এতো কিছু ঘটে গেলো এর মাঝে মায়া ঠিক মতো খাবারটা ও খেতে পারেনি।খিদে পেয়েছে খুব কিন্তু এই মুহূর্তে এসব কথা ও মেহরাব কে বলতে পারছে না।কি ভাবে বলবে একে তো নতুন বউ তার ওপর ওর সাথে কথা বলতেও কেমন একটা দ্বিধা বোধ হচ্ছে।মেহরাব ওর সাথে যে কয় বার কথা বলছে ও শুধু হুম বলেই মাথা নাড়িয়েছে।

মেহরাব মাথা পেছনে এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।কিছুক্ষণ পরে চোখ খুলে দেখতে পায় মায়া মাথা নিচু করা অবস্থাতেই পানির বোতলটি ওর সামনে ধরে আছে।নাজানি কতোক্ষণ এভাবে ধরে আছে,কিছুটা বিরক্ত লাগলো ওর কাছে এভাবে ধরে না রেখে মুখে তো বলতে পারতো।মেহরাব বোতলটি নিয়ে আগের জায়গায় রেখে দেয়।মনে মনে ভাবে

“এতো কাঁঠ খর পুরিয়ে বিয়েটা করলাম অথচ নিজ থেকে একটা কথাও বলছে না।”
মায়ার মুখের দিকে চায় ও গাড়ি ভেতরের হালকা আলোতে খেয়াল করে কান্না করতে করতে মেয়েটার মুখটা শুকিয়ে গেছে তবে সেটার আরেকটা কারন ও আছে।কি একটা ভেবে ফিরোজ কে বললো সামনে কোনো ভালো রেস্টুরেন্ট দেখলে যেনো গাড়ি থামায়।মেইন রাস্তার পাশে দূর পাল্লার গাড়ি গুলোর যাএা বিরতির যে সব হোটেল রেস্টুরেন্ট থাকে সে রকম একটা সামনে আসতেই গাড়ি থামাতে বলে।গাড়ি পার্কিং করে ওরা তিনজন রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে যায়।ফাঁকা দেখে একটা টেবিলে বসে পরে।মেহরাব মায়াকে কি খাবে বলে জিজ্ঞেস করলে ভাত খাবে বলে জানায়।ফিরোজ কে পাঠায় ওর জন্য খাবার আনতে সঙ্গে ওদের দু জনের জন্যও।

মায়া ওর শাড়ির আচঁল দিয়ে নিজেকে আরেকটু জড়িয়ে নিচ্ছে।এ সব জায়গাতে ও এই প্রথম এসেছে তাই নিজের কাছে একটু অসস্থি লাগছে।আর আশে পাশেও অনেক লোক জনের আনাগোনা।মেহরাব মুগ্ধ নয়নে মায়াকে দেখছে।

“পরনের শাড়িটি যে নতুন নয় এটা ও বেশ বুঝতে পারে।তারপরও ফর্সা গায়ের রঙ্গের সাথে এই শাড়িটিতে মায়াকে বেশ মানিয়েছে।চেহারায় মেকআপের কোনো আস্তর নেই,নেই অধর জোড়ায় কৃএিম রংয়ের ছাপ তবুও এক ঝলক দৃষ্টিতে যেনো নয়ন ফেরানো যাচ্ছে না।”

মায়া মেহরাবের দিকে তাকালে লক্ষ্য করে মেহরাবের দৃষ্টি ওর দিকেই।খানিক টা লজ্জা পায় ও এতো মানুষ চারপাশে আর সে এ ভাবে এ ধ্যানে চেয়ে আছে।এ সব দেখলে কে কি ভাববে?এ সব ভেবে মাথা নত করে আছে মায়া।

“এই যে বড়ো ভাই খাবারটা আগে খেয়ে নিন তারপর বাসায় গিয়ে যতোখুশি মন ভরে ভাবিকে দেখবেন।

ফিরোজের কথায় মেহরাব চোখ সরিয়ে নেয়।মায়া যেনো আরো লজ্জায় পরে যায়।

“ভাবি আপনার জন্য ডাল আর ভর্তাই পেয়েছি ওদের মাছ মাংস সব শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে।এটা একটু কষ্ট করে খেয়ে নিন।

মায়া মাথা নাড়িয়ে ক্ষীণ স্বরে বলে “সমস্যা নাই ভাইয়া এটাই ঠিক আছে।

মায়ার কথা শুনে ফিরোজ বলে ওঠে

“আল্লাহ আপনি বোবা নন কথা বলতে পারেন?থ্যাং আল্লাহ
ওর কথা শুনে মেহরাব বলে

“বোবা মানে ?

“আরে বড়ো ভাই আমি তো এই পর্যন্ত কথাই শুনিনাই ভাবির তাই ভাবলাম..

“আজকাল একটু বেশি ভাবো তুমি

“আচ্ছা ভাবি আপনারা খান আমি অন্য জায়গায় গিয়ে খাই বলে পাশের টেবিলে গিয়ে বসে ও।

মায়া ভাত খেতে শুরু করে,অনেকটা ক্ষিদে পাওয়াতে বেশ তৃপ্তি করেই খেতে আরম্ভ করে।মেহরাব ওর খাবার টা একটু খেয়ে মায়ার খাবার খাওয়া দেখতে লাগে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা কতো ক্ষুদার্থ ছিলো অথচ মুখে বললো না?

খাওয়া শেষ করে মেহরাব ওয়ান টাইম কাপে করে তিন কাপ কফি নিয়ে আসে।ফিরোজ একটা নিয়ে নেয়।টেবিলে এসে মায়ার দিকে একটা কাপ এগিয়ে দেয়।এক চুমুক খেয়ে আর খাবে না বলে জানায়।মেহরাব ওর নিজের টা খেয়ে মায়ার কফির কাপটা নিয়ে নেয়।
আবার ওরা শহরের পথে যাএা শুরু করে দেয়।রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই ,পৌছাতে আর ঘন্টা দেরেক সময় লাগবে।এর মধ্যে মায়া ঘুমিয়ে গেছে পেছনের দিকে মাথা হেলান দেওয়া ওর।মেহরাব মায়ার মাথা আলতো হাতে ধরে ওর কাঁধের ওপর রাখে।মায়া এবার একটু আরাম পায়।ঘুমের ভেতরই ওর বাহু চেপে ধরে।এমনটা হওয়াতে মেহরাবের একটা অন্যরকম ভালোলাগা ময় সুখানুভূতি হচ্ছে।পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।ও মায়াকে পেয়েছে সত্যি পেয়েছে ?এটা ওর কাছে এখনও অবিশ্বাসের মতো মনে হচ্ছে।ডান হাত বাড়িতে মায়ার গালে ছুয়ে দেয়।নাহ সত্যিই ওর মায়াবিনীকে পেয়েছে।এই তো ওর একান্ত কাছেই আছে এভাবেই ও আগলে রাখবে ওর মায়াকে।

“একটা সময় ওরা ওদের গন্তব্যে চলে আসে।গাড়ির হর্ণ শুনে দুজন লোক চলে আসে তাদের পিছু দুজন মহিলাও আসে।গাড়ি থেকে ফিরোজ আগে বের হয়ে।মেহরাব মায়াকে আস্তে করে ডেকে তুলে।মায়া চোখ খুলে তাকায় ,মেহরাব ওকে বলে চলে এসেছি এবার নামতে হবে।মেহরাব নেমে ওর হাত বাড়িতে দেয় মায়ার দিকে।মায়া প্রথমে হাত দেয় না মেহরাব এবার মুখে বলে হাত ধরার জন্য তখন মায়া ওর হাত ধরে নামে।বাড়ির বড়ো গেটের সামনে নামে ওরা।মায়ার চোখ যায় গেটের পাশে লেখাটা পাশে বড়ো অক্ষরে লেখা রয়েছে “মীর ম্যানশন”তারমানে এটাই মেহরাবের বাড়ি।রাতের বেলা হলেও চারপাশের বৈদ্যুতিক আলোতে বুঝা যাচ্ছে দুইতলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়িটি বেশ বড়ো।এতো বাড়ি ও কখনও দেখেনি।

তখনও মেহরাব ওর হাত ছাড়ে না বাড়ির দরজা পর্যন্ত ওকে সাথে করে নিয়ে আসে।এরপর হাত ছেড়ে দিয়ে ভেতরে চলে যায়।মহিলা দুজন এসে একজন বললো ভাবি আমি শায়লা আরেক জন বলে আম্মা আমি সিতারা খাতুন।ফিরোজ এসে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।এই পুরো বাড়ির দায়িত্বে চারজন আর এরা এক পরিবারের বাবা ছেলে শ্বাশুড়ি আর ছেলের বউ।একজন দারোয়ান আর একজন কেয়ার টেকার।শায়লা আর সিতারা মায়াকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসায়।মায়াতো বাড়ির ভেতরের দৃশ্য দেখে হা হয়ে যায়
“এতো সুন্দর সাজানো গোছানো আরো কতো কি আছে।এ সব দেখে ও স্তব্ধ ।শায়লা বলে ওঠে ভাবি কি সুন্দর গো দেখতে আপনে।আমাগো ভাইয়া কি সুন্দর পরী ধইরা আনছে গো।সিতারা বেগম ও অনেক প্রশংসা করলো।মায়া ওদের সাথে কথা বলে ওর ভালো লাগে।সরল মনে কতো কিছু বললো ওকে।একটু পরে মেহরাব চলে আসে মায়া ওর দিকে চায় বুঝতে পারে লোকটা কাপড় চেন্জ করে চলে আসছে।মায়াকে সঙ্গে নিয়ে মেহরাব ওর রুমে যায়।এখানে এসে তো মায়া আরেক বার টাস্কি খায়।কি সুন্দর রুম এর বর্ণনা ও দিতে পারছে না।মেহরাব ওকে বসিয়ে দেয় আর বলে আজ থেকে এটা তোমার রুম।

রাত অনেক হইছে তুমি ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরো আমি পাশের রুমে যাচ্ছি।মায়া আর কিছু বলে না নিজের ব্যাগ থেকে একটা প্রিন্টের থ্রিপিচ বের করে বসে আছে।দরজায় টোকা দিয়ে শায়লা ডাকতে থাকে মায়া এগিয়ে যায়।“কিছু দরকার হইলে বলবেন কিন্তু ভাবি ।আচ্ছা বলে মাথা নাড়ায়।শায়লা চলে যায় মায়া রুমে ডুকে দেখতে থাকে কোথায় কি আছে।সবদিকে নজর বুলিয়ে দেখে।ওর কাছে এখনও স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।পুষ্প ভুল বলেনি সত্যিই ওর রাজকপাল।পরক্ষণে ওয়াশরুমে ডুকে পরে মায়া।

ফিরোজ মেহরাবকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে যায়।ছাদের এক কোনায় মেহরাব দাঁড়িয়ে আছে।ফিরোজ সামনে গিয়ে বলে “নতুন ভাবি রেখে এতো রাতে এখানে কেনো বড়োভাই?মেহরাবের নিরোওর চাওনি দেখে মনে হচ্ছে ওর মনে অস্থিরতা বিরাজ করছে।জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলে না।ফিরোজ আবার ও জিজ্ঞেস করলে মেহরাবের সাথে যা যা ঘটেছে সব ফিরোজকে জানায়।সবটা শুনে ফিরোজ তো অবাক “এতো কিছু ঘটে গেছে বড়ো ভাই?আর আমাকে জানালেন না।যাই হোক ভাবিকে পেয়েছেন এটাই শুকরিয়া।
মেহরাব ফিরোজ কে বলে

“জানো ফিরোজ যখন শুনেছি মায়ার বিয়ে ঠিক তখন যে আমার মনে ঝড় বয়ে গেছে সেটা আমি এখনও ভাবতে পারছি না।আবার এটাও ভাবতে পারছি না কিভাবে আমি আমার মায়াবিনীকে পেলাম?আমি তো আশা ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে চাইছিলাম কিন্তু উপরওয়ালা সহায় ছিলো,না হলে এমন মিরাকেল আমার সাথে ঘটবে আমি তো ভাবতেই পারছি না।
“ভালো মানুষকে আল্লাহ নিরাশ করে না বড়োভাই।
এখন মন কে শান্ত করে রুমে যান নতুন বউ একা রুমে।

মেহরাব ছাদ থেকে রুমে আসে ততক্ষণে মায়া গভীর ঘুমে নিমগ্ন।মেহরাব কিছুক্ষণ ওর মায়াবিনীকে মন ভরে দেখে।লম্বা চুল গুলো ছেরে দেওয়া এলো মেলো হয়ে আছে সেগুলো।হাত বাড়িয়ে আলতো করে চুলগুলো একপাশে গুঁজে দেয়।
নাহ আর এখানে এক মুহূর্তে ও থাকতে পারবে না।তা হলে নিজেকে নিয়ন্তন করা দায় হয়ে পরবে।ও চায় না এখনই এমন কিছু করতে যেটাতে মায়া অসস্থি বোধ করে।খারাপ ভাবে ওর সম্পর্কে।এক বাড়িতে থেকেই না হয় আলাদা থাকি তাতে দুঃখ নেই।সারাজীবনের জন্য সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি এটাই অনেক।মায়াবিনী যেদিন নিজ থেকে আমাকে কাছে টেনে নিবে ঐ দিন তোমাকে আমার মনের সকল চাওয়া পাওয়াসহিসেব করে মিটিয়ে দিতে হবে।
“বিশ্বাস করো সেদিন থেকে এই মেহরাব তোমায় তার ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে এক বিন্দু কষ্টের আঁচ তোমার জীবন থাকবে না প্রমিজ।”

চলবে….

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৮

নিশির আঁধার ছাপিয়ে আরেকটি মিষ্টি ভোরের শুভ সূচনা হলো।জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রোদেরা উকিঝুকি দিচ্ছে।
চোখে রোদের ঝলকানি পরতেই পিটপিট চাওনিতে চোখ মেলে তাকায় মায়া।নিজের অবস্থান মনে করতে কয়েক সেকেন্ড লেগে যায়।পরক্ষণে মনে পরে যায় ও কোথায় আছে।
সদ্য বিয়ে হয়ে আসা শ্বশুর বাড়িতে আছে।শোয়া থেকে উঠে বসে চারদিকে নজর বুলিয়ে বুঝলো এখানে ও একাই আছে কিন্তু সে কোথায়?আর রাতে কি সে রুমে আসেনি!মায়া মনে মনে ভাবছে এ সব ভেবে কি হবে রাতে তো মেহরাবের জন্য ও অপেক্ষা করেনি আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।ভাবনার মাঝেই শায়লা মায়াকে ডাক দিলে মায়া ওকে ভেতরে আসতে বলে।শায়লা এসে মায়ার কাছে দাঁড়ায়।

“ভাবি আপনের ঘুম ভালো হইছে ?

“হুম হয়েছে

“তাইলে আপনে উঠে ফ্রেশ হোন আমি বিছানা গুছাইয়া রুমটা ঝার দিয়া দেই

“না না আমি পারবো আপনি যান

“কন কি ভাবি আপনে এ সব কাজ করবেন?আপনি জানেন না এ সব কাজ আমরাই সামলাই।তা ছাড়া আপনি এ বাড়ির বউ আর মেহরাব ভাই এ সব জানতে পারলে খবর আছে।

“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি আপনি গুছান।

“ভাবি আপনে তুমি কইরা নাম ধইরা ডাকবেন।আপনে মেহরাব ভাইয়ের বউ বইলা কথা।

মায়া মুচকি হেসে বলে

“আচ্ছা ঠিক আছে
কিছুক্ষণ বাদে মায়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এসে বিছানায় বসে পরে।শায়লা ততক্ষণে রুমটা গুছিয়ে নিয়েছে।

“ভাবি একটা কথা কই?

“বলো

“আপনে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আপনের চুলগুলাও।আমি এমন চুল বাস্তবে দেখি নাই তয় নাটক সিনেমায় দেখছি।আমাগো ভাই আপনেরে বিয়া কইরা জিতছে এইটা আমি জোড় গলায় কইতে পারি।

ওর কথা শুনে মায়া হাসছে।মেয়েটা সত্যি সহজ সরল মুখে যা আসে বলে দিচ্ছে।

“ভাবি চলেন নিচে যাই আপনের বাড়ি আপনের সংসার টা কেমন দেখবেন না?চলেন ঘুরে ঘুরে দেখবেন।

মায়া শায়লার সাথে নিয়ে নিচে চলে যায়।ওকে দেখে সিতারা কাছে আসে।হাসি মুখে বলে “আম্মা আসেন রান্না শেষ সকালের নাস্তাটা খেয়ে নিন।সিতারার কথা শুনে মায়ার ভালো লাগে।কিন্তু ও এখন খাবে না বলে জানায়।পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হয়েছে ওর তাই আর সিতারা জোড় করে না।

“মেহরাবের ছোটো বেলা থেকেই সিতারা আর তার স্বামী মকবুল এ বাড়িতে আছে।এর পর সিতারার ছেলে হালিম ও এ বাড়ির কাজে আছে এখন ওর বউ ও।ওদের নিজস্ব বাড়ি আছে সেটা কাছেই।মকবুল আর হালিম এ বাড়ির কেয়ারটেকার আর গার্ড বলে বেশির ভাগ সময় ওরা এখানেই থাকে।সিতারা আর শায়লা বাসার সব কাজ করে দিন শেষে নিজ বাসায় যায়।মেহরাব ওদের নিজের আপনজনের চাইতেও বেশি ভালো জানে।বাপ মা হারা মেহরাবকে সিতারা ছেলের মতোই জানে।
সিতারা সব সময় উপর ওয়ালার কাছে দোয়া করতো।মেহরাবের জীবনে এমন কেউ আসুক যে কিনা ওর সংসারটাকে আগলে রাখবে।ওর জীবনের না পাওয়া কষ্ট গুলো ঘুচে দিবে।অবশেষে একজন ওর জীবনে এলো।আর মেহরাব ওর জীবন সঙ্গী নিজেই পছন্দ করে এনেছে।সত্যি ওর পছন্দ আছে এক টুকরা চাঁদ কে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।এ সব ভেবে খুশিতে সিতারার চোখে জল চলে আসে।

শায়লাকে সঙ্গে নিয়ে মায়া পুরো বাড়িটি ঘুরে দেখলো এতো সুন্দর বাড়ি আর বাড়ির প্রত্যেকটা রুমে কারুকাজ করা ফার্নিচার দিয়ে সাজানো গোছানো।সবটা দেখে ওর ভিষণ ভালো লাগে।এরপরে শায়লার সাথে ও বাগানে যায়।বাগানের ফুল গাছ গুলোর পরিচর্চা শায়লার স্বামী হালিম করে তবে মাঝে মাঝে শায়লা গাছে পানি দেয়।আজও শায়লা পানি দিয়ে চলে যায়।মায়া গাছ গুলো দেখতে থাকে।

“মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাড়ির ভেতর আসে মেহরাব।মেইন দরজা দিয়ে ডুকতে যাবে ঐ মুহূর্তে বাড়ির বাগানে চোখ যায়।মায়া বাগানের এক পাশে গোলাপ গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নানা রংয়ের ফুটন্ত গোলাপ গুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।ওর ফুল গাছ খুব প্রিয়।মেহরাবের কাছে এই মুহূর্তে মনে হলো ওর সদ্য বিয়ে করে আনা মায়া নামক গোলাপটির কাছে বাগানের ফুটন্ত গোলাপ গুলো তুচ্ছ।সাজগোজ ছারা অতি সাধারন মেয়েটাকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে।পলকহীন চোখে কয়েক মিনিট মায়াকে দেখে নিলো কিন্তু আর পারছে না এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে।বাসার ভেতরে ডুকে যায় মেহরাব।

শায়লা মেহরাব কে দেখতে পেয়ে মায়ার কাছে ছুটে যায় “ভাবি ভাইজান আইছে আপনে রুমে যান।শায়লার কথা শুনে মায়া রুমে চলে আসে।মেহরাব রুমে নেই মায়ার বুকটা দুরুদুরু করছে।মানুষটার সাথে ভালো করে কথাই হলো না আর সেটার সুযোগ হলো কোথায়?সামনে পরলেই কি বলবে সেটা ভাবছে।
ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে মায়া বুঝতে পারে মেহরাব ফ্রেশ হচ্ছে।মায়া বেলকনিতে এসে দাড়ায়।বেশ বড়ো জায়গাটা এখানেও কিছু ফুল গাছের টব রাখা আছে।কিছু গাছে ফুল এসেছে।বেলকনি থেকে বাড়ির বাগানটা পুরোপুরি দেখা যায়।সেখানটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে ওর।
ভাবনার মাঝেই পরক্ষণে মনটা কেমন খারাপ লাগা শুরু করে।গ্রামে যখন তখন খোলা জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছে কিন্তু শহরের বুকে সেটা করা যাবে না।আবার পরিবারের মানুষ গুলোর কথাও মনে পরে যায়।কি করছে ওরা?মায়ার কথা কি কেউ ভাবছে নাকি মেয়েকে বিদেয় দিয়ে সবাই হাফ ছেরে বেঁচেছে?
ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দে মায়া পেছন ঘুরে তাকায়।খালি গায়ে টাওয়াল পরে মেহরাব বের হয়েছে।ওকে ঐ অবস্থায় এক নজর দেখে চোখ বন্ধ করে আবারও ঘুরে দাড়ায়।লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে ইশ কি দেখে ফেললো ও।না জানি এখন কি মনে করে মানুষটা।মায়ার এমন কাজ মেহরাবের চোখ এরায় না মুচকি হেসে চেন্জ করে নেয়।মায়া তখনও নত জানু হয়ে আছে।এতো লজ্জা মেয়েটার?মেহরাব ওর ঠিক পেছনে গিয়ে দাড়ায়।আর বলে

“মাথা উঁচু করো

মায়া ওর কন্ঠ স্বর পেয়ে নাক মুখ আরো খিচে ফেলে।হায় আল্লাহ এ অবস্থায় মানুষটা ওর নিকট এসেছে এখন ও কিভাবে আবার তাকাবে?পেছন না ফিরে মাথা সোজা করে।মোহরাব ওর থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব রেখে মায়ার খোপা করা চুলের ক্লিপটা খুলে ফেলে।সঙ্গে সঙ্গে লম্বা সোনালী চুল গুলো হাটু ছাড়িয়ে পরেছে।আচমকা এমনটি হওয়াতে মায়া হকচকিয়ে যায়।মেহরাব মায়াকে ওর সামনের দিকে ফিরতে বলে।মায়া ধীরে ধীরে পেছন ঘুরে মেহরাবের দিকে চেয়ে হাফ ছাড়ে মনে মনে বলে উফ বাঁচা গেলো কাপড় পরে নিয়েছে।মেহরাব মায়াকে বলে-

“আমার সামনে সব সময় চুল এভাবে খোলা রাখবে আর রুমের বাইরে সব সময় চুল বেধে রাখবে মনে থাকবে?

মায়ার মেহরাবের এমন কথা শুনে আগামাথা কিছুই বুঝে আসে না।শুধু ওর কথায় মাথা উপর নিচ করে সায় দিলো।মেহরাব ওকে আসতে বলে রুমের ভিতর গেলো ।মায়া পিছু পিছু গেলো।মেহরাব ওকে বসতে বলে মাথার চুল গুলো আয়নায় ঠিকঠাক করে বলতে লাগলো

“বাড়ি কেমন লাগলো সবটা ঘুরে দেখেছো?

“হুম দেখছি অনেক সুন্দর।

“শুনেছি তুমি নাকি আগামীবছর এইস এস সি পরিক্ষা দিবে?

“হুম

“লেখা পড়ায় কেমন তুমি?মানে লেখা পড়া কি বাকিটা শেষ করতে চাও?

এ কথা শুনে মায়ার হার্টবিট বেড়ে যায়।ওর তো লেখাপড়া করতে তেমন ভালো লাগে না আর মোটামুটি ছাএি ভালোই।তারপরও লেখাপড়া করতে আগ্রহী না এসব মেহরাব কে মুখে বলতেও পারবে না তাই অনিচ্ছা সত্বেও বলতে হলো

“হুম লেখা পড়া করতে চাই।

ওর মুখ থেকে এ কথাটা শুনে মেহরাব খুশি হয়

“ভেরি গুড আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম আফটার অল মীর মেহরাব এর স্ত্রী বলে কথা।কেউ যেনো না বলতে পারে এসএসসি পাশ মেয়ে বিয়ে করেছি।ভাবছি আমি তোমার সব কাগজপএ আনার ব্যাবস্থা করে এখানেই ভর্তি করিয়ে দিবো।
ওর কথা শুনে মায়ার মুখটা চুপসে যায়।ইশ শান্তিতে একটু সংসার করবে তা না লেখাপড়ার চাপ টা আগেই দিয়ে দিলো।

মেহরাব আজ অফিস যাবে ফিরোজ অনেক বার নিষেধ করে।নতুন বউ রেখে অফিস না আসতে কিন্তু মেহরাব এর এক কথা ও যাবে।মায়ার সামনে ও নিজেকে পরিপাটি করে নেয়।মায়া ওকে কয়েকবার চেয়ে চেয়ে দেখে।কি সুন্দর করে নিজেকে ফিট করে নিলো।দেখতে ও মা শাহ আল্লাহ সুন্দর লাগছে।মেহরাব মায়ার উদ্দেশ্য বললো

“এভাবে চোরা দৃষ্টি না দিয়ে সরাসরি দেখার অভ্যস্ত করো।

মায়া এবারও লজ্জা পায়।মানুষটাকে দেখে ভদ্র মনে হয় কিন্তু এতো দেখছি ঠোঁট কাটা প্রকৃতির কথা বলতেও দ্বিধা বোধ করে না।

মেহরাব মায়াকে নিয়ে নিচে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে।শায়লা আর সিতারা খাবার পরিবেশন করে।অনেক প্রকার নাস্তা দেখে মায়া অবাক এতো কিছু খাবে কি করে?মায়ার পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পরে যায়।সকাল বেলা তেমন ভালো খেতে পারতো না।বেশির ভাগ সময়ই আয়মন ইচ্ছা কৃত পান্তা ভাত না হয় শুকনো রুটি তরকারি দিলেও সে সব খেয়ে ওর পেট ভরতো না।এসব মনে করে বুকের মাঝে হু হু করে ওঠে।মায়াকে অনমনস্ক দেখে মেহরাব ডাক দেয়।মায়া ওর প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখে মেহরাব খাবার উঠিয়ে দিয়েছে।
ইশারা করে খেতে কিন্তু মায়া খাচ্ছে না।সামনে সিতারা আর শায়লা দাড়িয়ে ওদের রেখে খেতে কেমন সংকোচ হচ্ছে ওর।তাই ওদের কে সাথে খেতে বলে মায়া।শায়লা জানায় ওরা খুব সকালে বাসা থেকে খেয়ে এসেছে পরে খাবে।

মায়া খাচ্ছে এর মাঝে মেহরাব বলে

“রান্না করতে পারো?

“পারি একটু একটু

“তাতেই চলবে

মেহরাব খাওয়া শেষ করে উঠে যায়।মায়া উঠতে গেলে ওকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করে না উঠতে।খাওয়া শেষ করে যেনো ওঠে তাই বলে।মায়া খাচ্ছে আর পাশ থেকে শায়লা এইটা সেইটা নিয়ে গল্প শুনাচ্ছে।

“অনেক দিন পর অফিস যায় মেহরাব।ফিরোজের কাছ থেকে বিয়ের খবরটা পায় সবাই তাই ও যেতেই সবাই একসাথে ফুলের বড়ো তোরা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।আর সবাই আবদার করে স্যার কে ট্রিট হিসেবে পার্টি দেওয়ার জন্য।মেহরাব সবাই কে আস্বস্ত করে এই বলে “একটু ফ্রি হয়ে কোনো একদিন অফিসেই পার্টি দিবে।সবাই বেশ খুশি হয়।
মেহরাব অন্যান্য দিনের মতো আজ কাজে মনোনিবেশ করতে পারছে না।কাজের মাঝে ঘুরে ফিরে মায়ার কথা মনে পরছে।
কি করছে ওর মায়াবিনী?ওকে তো একটু সময় দেওয়া দরকার।
ভাবনা চিন্তার মাঝে ফোন আসে ওর।কয়েক মিনিট কথা বলে ফোন রাখে।ফিরোজ কে বলে দুপুরের পরে অফিস থেকে বের হয়ে যায় মেহরাব।বাসায় এসে রুমে মায়াকে দেখতে পায় না।ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে সিতারার কাছে শুনতে পায় মায়া ছাদে গেছে।ও ছাদের দিকে পা বাড়ায় সেখানে গিয়ে দেখতে পায় মায়া ছাদের রেলিং ধরে সামনের দৃশ্য দেখছে।
নিঃশব্দে মেহরাব মায়ার পেছনে গিয়ে দাড়ায়।চুলগুলো খোলা অবস্থায় আছে।মেহরাবের কি জানি কি হলো একটু ঝুকে চুলের ওপর নাক স্পর্শ করে।বার কয়েক নিঃশ্বাস নিয়ে চুলের ঘ্রাণ নেয় মেহরাব,আসলে চুলের আলাদা কোনো ঘ্রাণ হয় না কিন্তু যার যার কাছে তার তার প্রিয় মানুষটার চুলের ঘ্রাণটা নেশালো মাধকতাময় মনে হয়।এ এক অন্যরকম অনুভূতি সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মায়া ঘুরে দাড়ায়।হঠাৎ করে মেহরাব কে দেখে চমকে যায়।লোকটা কখন আসলো তাও এতোটা কাছে একটু ও টের পেলো না যে?

“আপনি কখন আসলেন?

“এই তো এক থেকে দুই মিনিট হবে
মনেমনে মেহরাব একটু বিরক্ত ইশ একটু রোমান্স করতে চাইলাম দিলো না করতে।কবে যে সেই পার্ফেক্ট সময়টা আসবে আল্লাহই জানে।
বলে ট্রাউজারের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একটা নম্বরে কল দেয়,কল রিসিভ হতেই মায়ার হাতে মোবাইল দিয়ে কথা বলতে বলে।মায়া মোবাইল হাতে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা কন্ঠস্বর শুনে মায়ার বিষন্ন মনটা মুহূর্তেই ভালো হয়ে যায়।গতোকাল থেকে পরিবারের লোকজনের কথা খুব করে মনে পরতেছিলো।কিন্তু ও মেহরাব কে কথা টা বলতে পারেনি।
প্রথমে বাবার সাথে পরে বোনের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললো।মায়ার এমন মায়ামাখা খুশিময় মুখ টা দেখে মেহরাব ও খুশি।
কলিমউল্লাহ মামুর বাড়িতে কাশেম মিয়া আর পুষ্পের অবস্থান।নিজের একটা ফোন নেই বলে সেখানে যায় মেয়ের খোঁজ খবর নিবে বলে।মেহরাবকে কল করলে ও তখনই অফিসে থেকে চলে আসে মায়ার সাথে তাদের কথা বলিয়ে দিবে বলে।পুষ্পের সাথে বেশ অনেক সময় ধরে কথা বলে মায়া।দেখেই বুঝা যাচ্ছে মায়া অনেক খুশি।কথা শেষ করে মোবাইলটা মেহরাবের হাতে দেয়।ও একটু দুষ্টুমি স্বরে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে
“আমি তো জানতাম তুমি কম কথা বলো কিন্তু এখন দেখলাম তুমি বেশ অনেক কথাই বলতে পারো।

“আমার জায়গায় আপনি হলে এমনটাই করতেন।
কথাটা খুব ধীর কন্ঠে বললেও মেহরাবের শুনতে কষ্ট হয় না।সত্যিই আপন জনদের ছেরে দূরে থাকাটা অনেক কষ্টের।আর “আপন মানুষ গুলো জীবনে না থাকাটা যে কতো কষ্টের সেটা ওর চাইতে কেউ ভালো জানে না।”

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন )

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-৫+৬

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৫

প্রখর রোদ বিরাজমান তার মাঝে হঠাৎই ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায় নীলাকাশ। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসেছে।নীল গগণ ঢেকে যায় কালো মেঘে। যেনো এই বুঝি এলো অবিরাম বৃষ্টি।

আজ মায়া কলেজ যায়নি মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে।বাড়ির পাশের খালের ঘাটের পাটাতনের ওপর পা পানিতে চুবিয়ে আজও বসে আছে।আবহাওয়া মোটেও ভালো নয় যখন তখন বৃষ্টি নামবে কিন্তু সেদিকে ওর মোটেও খেয়াল নেই।আকাশে মেঘের এমন ঘনঘটায় পাখির উড়াউড়ি দেখে অনুমেয় জনজীবন বিপর্যস্ত করতে নামছে শ্রাবণের বারিধারা।আশেপাশের গাছের উপর ছুঁয়ে যাওয়া মেঘ আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি হয়ে নামতে লাগলো।

বৃষ্টির মোটা জলকণা মায়াকে ছুয়ে দিতেই গা কেপে উঠলো।জায়গা থেকে সরলো না এক চুল পরিমান।মনে হচ্ছে এই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলো ও।বৃষ্টির পানির সাথে মায়ার চোখের নোনা পানি গুলো মিশে যাচ্ছে।প্রকৃতি হয়তো বুঝতে পেরেছে ওর মনের কথা গুলো।তাইতো ওর সমস্ত দুঃখ কষ্ট গুলো ধুয়ে মুছে শেষ করে দিচ্ছে কিন্তু আদৌ সেটা সম্ভব হবে?

বৃষ্টির এ সময়টাতে ঘরের কোথাও বোনকে দেখতে না পেয়ে পুষ্পএকটা বড়ো পলিথিন পেচিয়ে বাইরে বের হয়।কয়েকবার ডাকলেও সাড়া পায়নি বোনের।শেষে সামনে এগিয়ে খালপার গেলে সেখানেই মায়াকে দেখতে পায়।পুষ্প মায়াকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে যায় ও বুঝতে পারে মায়া ইচ্ছে করেই ভিজছে।হাত ধরে টান দিতেই মায়ার ধ্যান ভাঙ্গে।

“বুবু এখানে কি করছো দেখছো মেঘ ডাকছে চলো।

“তুই যা আমি পরে যামুনে।

“না তুমি আমার সাথেই যাবা চলো।

মায়াকে এক প্রকার জোড় করেই পুষ্প দাঁড় করায়।

“বুবু এমন পাগলামি কেনো করছো ?শরির খারাপ হবে না কও?

তাছ্যিল্যের হাসি দিয়ে মায়া মনে মনে বলতে থাকে

“যেখানে মনটাই শতো আঘাতে জর্জরিত সেখানে শরির খারাপের চিন্তা করাটাই বোকামি।

“কি হলো বুবু কিছু কইছো না যে?

মায়া এখনও চুপ কি বলবে ?ওর এখন কিছু বলতে মন চায় না।

“বুবু তুমি কিছু না কইলেও আমি আইজ চুপ থাকুম না।মায়ের লগে আমি কথা কমু।এই বিয়াতে তোমার মত নেই।তার ওপর ঐ বেডা রমজান ওয় তো একটা খারাপ জঘন্য একটা মানুষ।

পুষ্পর কথা শুনে মায়া ওকে থামিয়ে দেয়

“নাহ বইন তুই মায়রে কিছুই কইবি না।আমি রাজি তো এই বিয়াতে।হেয় যেইটা ভালো মনে করছে ওইটাই হইবো।

“কিন্তু বুবু তুমি সবটা জানো তারপর ও রাজি হও কেমনে আমার বুঝে আসে না।

“তোর বুঝতে হইবো না আমি জানি বাজান ও রাজি না তয় তারে ও বুঝানোর দায়িত্ব আমার।

পুষ্প আরো কিছু বলতে গেলে মায়া বলতে নিষেধ করে।বোনের হাত ধরে মায়া ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

———

আগামীকাল মেহরাবের শহরে ফেরার কথা থাকলেও আজ ফিরোজের সাথে কথা বলে জানিয়েছে আরো দুই/তিন দিন পর যাবে।ফিরোজ ওর কথা শুনে টাস্কি খায়।যে মানুষটা একটা দিন ছুটি কাটাতে চায় না সেই মানুষটার কাজ শেষ অথচ সব কিছু ফেলে আরো দু তিন থাকতে চাইছে?ব্যাপারটা সন্দেহ জনক লাগলো।ফিরোজ কিছু একটার আভাস পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো

“ঘটনা কি বড়োভাই যেই কাজের জন্য গিয়েছেন সেই কাজ তো শেষ হলো কিন্তু আসবেন না কেনো?

মেহরাব ওর কথা শুনে সোজা সাপ্টা উওর দেয়

“নানু বাড়ি এসেছি শুধু কি কাজের জন্য ?মন ভরে কি একটু বেড়ানো যাবে না?

“অবশ্যই যাবে ‘ বড়োভাই মন ভরে বেড়ান আমি তো আছি এখানে নো টেনশন।আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বলবেন সোজা চলে আসবো।

“ঠিক আছে এখন রাখছি ।

আজ সকালে জমির ঐ জায়গাতে ঘর উঠানোর জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।মেহরাবের ইচ্ছা ছিলো আরো কয়েকদিন পরে করার কিন্তু মতামত পরিবর্তন করে কলিমউল্লাহ মামু কে বলে নিজে দাড়িয়ে থেকে কাজটা শুরু করিয়েছে।মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনুভূত হচ্ছে আরো কয়দিন থাকবে বলে।এরই মধ্যে ও মায়ার সব ডিটেইলস্ জানতে পারবে এটাই আশা করছে।শুধু তাই না মেহরাব রিতিমতো পাগল প্রায় তার মায়াবিনীকে আরেক নজর দেখার জন্য।

জমির ওখান থেকে বাসায় আসার পথেই বৃষ্টি নামে।মোটামুটি ভিজে বাড়ির ভেতর ডুকে পরে।এই মুহূর্তে রাসেল বাড়িতে নেই ওদের বাড়ি গেছে ।আর বলে গেছে আসার সময় ওর জন্য দুপুরের খাবার নিয়েই ফিরবে।মেহরাব রুমে ডুকে শার্ট খুলে হ্যাঙ্গারে রেখে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে যায়।পরনের প্যান্ট চেন্জ করে ট্রাউজার পরে উদাম গায়ে শরির মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায়।হঠাৎ আয়নায় মনে হলো কিছু একটা দেখেছে।মোছা বাদ দিয়ে সামনে তাকায় কই কিছু না।দৃষ্টি সরিয়ে মুছতে লাগলে আবারও চোখ যায় আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বর জায়গায় এ কাকে দেখছে ও?
আয়নার অতি নিকটে গিয়ে “মায়াবিনী” বলে হাত বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু কই সে? এটা যে নিজেরই প্রতিবিম্ব।নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মে রে হেসে ফেলে।সত্যিই মাথা খারাপ হয়ে গেছে ওর।তাই তো যখন তখন হ্যালুসিনেশন হচ্ছে ওর সাথে।

——-

অন্যদিকে বিয়ের তারিখ পাকা পাকি হওয়াতে বেজায় খুশি রমজান।হওয়ারই কথা ওর মতো মানুষ এই গ্রামের সবচাইতে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে এটাতো ওর সাতজনমের কপাল।কিন্তু মায়া তো ওকে দুচোখের বি”ষ মনে করে।সেটাতে ওর কিছুই যায় আসে না।ও মায়াকে জোর করে হলেও পাবে এটাই অনেক।রমজানের এমন খুশিতে মনে হচ্ছে এই প্রথম বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছে।খুশির জোয়ারে আর একটা দিনও দেরি করতে চায় না কালই বিয়ে করবে বলে মদন মুন্সির কাছে আবদার করে।
কথাটা শুনে মদন মুন্সি ছেলেকে বোঝাতে গেলেও ব্যর্থ হয়।হবে না কেনো এমন রগচটা নে”শা খোর ছেলে তার যা বলবে তাই করিয়ে ছাড়বে।অগত্যা মায়াদের বাড়ি খবর পাঠায় মদন মুন্সি।অবশেষে আয়মন সেটাতেই রাজি হয়।ঠিক করা হলো আগামীকাল বিয়ে করে একবারে সাথে করে নিয়ে যাবে।

আয়মন মদন মুন্সির থেকে বিয়ে বাবদ বাকি টাকাটা আজ পেয়েছে আর তাই ওর মনের আনন্দ দেখে কে।এসব দেখে কাশেম মিয়া বউ কে অনেকক্ষণ যাবত গা”লা গা”লি আর খারাপ কথা শুনায়।সেটাতে আয়মন তেমন রিয়েক্ট করে না।কাশেম মিয়া এক পর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে হাতের কাছে থাকা মোটা লা”ঠি নিয়ে বউকে মা”রতে গেলে মায়া আর পুষ্প তাকে ঠেকায়।
বাবাকে একটু শান্ত করে মায়া বাবাকে বলে

“বাজান তুমি শান্ত হও আমি তো রাজি তাই তুমিও রাজি হইয়া যাও।হয়তো এইটাই আমার নিয়তিতে আছে।তয় তুমি উপর ওয়ালার প্রতি ভরসা রাখো।সে যদি চায় আমার খারাপ কিছু হইবো না।

মেয়ের কথা শুনে কাশেম মিয়া কান্না করে দেয়

“মারে এইটা কেমন নিয়তির খেলা।তোর মায় তোরে ইচ্ছা কইরা আ”গুনে ফেলাইতাছে আর তুই সেইটাই মাইন্যা নিছোস?ওয় তোর মা না সৎ মা

“এমন কথা কইয়ো না তুমি।একটু চুপ থাকো বাজান তোমার এমনিতেই শরির খারাপ।এমন করলে শরির আরো খারাপ হইবো যে।

“শরির দিয়ে কি করবো রে মা?বাইচ্যা থাইক্যা মাইয়্যার এমন সর্বনাশ আমি দেখতে পারুম না আল্লাহ আমারে তুলে নিয়া যাক।

এসব কথা বলে আহাজারি করছে কাশেম মিয়া।মায়া বাবাকে শান্তনা দিয়েই যাচ্ছে।অথচ এ সবে আয়মন কোনো পাওাই দিচ্ছে না।টাকার কাছে যে ওর আত্মসম্মান আর মনুষত্ব্য বিক্রি করে দিয়েছে।

——-

বিকেলে মেহরাব রাসেল কে নিয়ে গ্রামের পাশে বয়ে যাওয়া নদীর পার ঘুরতে আসে।জায়গাটা সত্যিই সুন্দর রাসেল ওকে ঘুরে ঘুরে চারদিকটা দেখাতে লাগলো।নদীর পারে অনেকটা অংশ জুড়ে পার বাঁধানো।এখানে যারা ঘুরতে আসে অনেকেই পারে বসে নদীর দৃশ্য উপভোগ করে আর আড্ডা দিয়ে থাকে।রাসেল আর মেহরাব ও এই জায়গায় বসে কথা বলছে।কথার ফাকে মেহরাব রাসেল কে জিজ্ঞেস করে

“রাসেল এই গ্রামের অনেককেই তো তুমি চিনো তাই না?

মেহরাবের কথা শুনে রাসেল বলে

“হুম অনেকরেই চিনি কিন্তু ক্যান ভাইজান?

“আচ্ছা এই গ্রামের মায়া নামের কাউকে চিনো তুমি?

রাসেল মেহরাবের মুখে এই গ্রামের কোনো মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়।সেটা না হয় ঠিক আছে কিন্তু মেয়ের নামটা পর্যন্ত বলে দিলো এটা কেমনে সম্ভব?

“ভাইজান আপনে কোন মায়ার কথা বলছেন?

“রাসেল তুমি কোন মায়াকে চিনো আর কয়টা মায়া আছে এই গ্রামে বা আশেপাশের কোথাও?

“এই গ্রাম আর আশপাশ মিলায়ে মোট একটাই মায়াই আছে।আর এর মতো ভালো মেয়ে এই একটা গ্রামে খুঁজে পাওয়া যাবে না।কিন্তু..

“কিন্তু কি রাসেল বলো আমায়।

“ওরা খুব গরিব।আচ্ছা ভাইজান এইটা বলেন ওরে চিনলেন কেমনে আর নামই জানলেন কেমনে?

রাসেলের এমন জানার আগ্রহ দেখে মেহরাব মুচকি হাসে।

“শোনো এ সব পরে বলবো আগে একটা কাজ করে দেও আমার।তুমি ওর সম্পর্কে ডিটেইলস্ জেনে আমাকে জানাবে আর সেটা কালকের মধ্যেই ওকে।

“ওকে ভাইজান আপনি একটা মহৎ কাজ দিছেন আর আমি সেইটা করুম না এমনটা হয় বলেন।ধরেন আপনের নব্বই পার্সেন্ট কাজ হয়ে গেছে।

“ঠিক আছে চলো এবার যাই”
তখনকার মতো ওরা বাড়ি ফিরে আসলো।

~~

পরদিন মেহরাব সকাল থেকেই ওর গৃহনির্মাণ প্রকল্পের কাছেই আছে।কয়েক দিন হলো অফিসের কাজ গুলো করতে পারছে না আবার এখনই ফিরে যাবে সেটাও পারছে না।তাই বসে বসে বোর না হওয়ার চাইতে এখানে এসে কাজের খোঁজ খবর নেওটা উওম মনে হয়েছে।তা ছাড়া এটাতো ওর নিজের কাজ।এই অল্প সময়ে এখানের লেবার গুলোর সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে ওর।
শুধু ওর কাজ বলে নয় নানু বাড়ির এলাকার লোকজন হিসেবে ও সবার সাথে বেশ আন্তরিকতার সাথে কথা বলে,সব কিছুর খোঁজ খবর নিচ্ছে।তারাও মেহরাবের ব্যাবহারে খুশি।

মেহরাবের কাছে নিজের বিজনেস এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন মায়ার সম্পর্কে জানাটা।তাই ইচ্ছা থাকলেও এই মুহূর্তে শহরে ফিরতে চাইছে না।
সেই সকাল থেকে মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে কখন রাসেল আসবে সেটা ভেবে।এমনিতেই বেচারা এই দু তিন ঠিক মতো খেতে পারছে না।মাঝে মাঝে নিজের এমন অবস্থা ভেবে হেসে দেয় মেহরাব।টিনএজারদের মতো নতুন নতুন প্রেমে পরলে যা হয় আরকি।কিন্তু ও তো পরিপূর্ণ যুবক তাতে কি হইছে প্রেমে তো নতুন পরেছে তাই অস্থিরতা আর ভাবনা টা ওকে বেশ ঝেকে বসেছে।

অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে দুপুরের আগ মুহূর্তে রাসেল আসে।মেহরাব বেশ উৎসাহ নিয়ে রাসেল এর সামনে যায়।কিন্তু রাসেল ওকে যেটা বলে তাতে মনে হলো ওর মাথায় পুরো আকাশটাই ভেঙ্গে পরছে।কি শুনলো এটা হয়তো ভুল শুনেছে।কিন্তু না পর পর কয়েক বার রাসেল এর মুখ থেকে একই শব্দটা শুনতে পায় ভাইজান “মায়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আজই ওর বিয়ে।”

চলবে……

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৬

বিয়ে বাড়ি অথচ সাজসজ্জার ছিটে ফোটাও নেই।থাকবে কি করে হুট করেই বিয়ের প্রস্তুতি চলছে।বাড়িটিতে শুধুমাত্র আয়মনের বাপের বাড়ির লোকজন আর আশেপাশের কিছু মানুষ জনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আয়মনের দুই ভাইয়ের বউ,পুষ্প আর কয়েকজন মহিলারা মিলে গ্রামের নিয়ম অনুযায়ী মায়াকে গায়ে হলুদ লাগিয়ে গোসল করিয়ে দেয়।গাছ থেকে সদ্য তুলে আনা মেহেদী পাতা পাটায় বেটে এনে রাখা হয়েছে।আয়মনের কথা মতো পুষ্প মায়ার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।
অনিচ্ছা থাকা সত্বেও সেই মেহেদীর রঙে দু হাত রাঙিয়েছে মায়া।নকশাবিহীন মেহেদীতে ফর্সা হাত দুটো দেখতে অপূর্ব লাগছে।মায়া মনে মনে চেয়েছিলো এ হাতের মেহেদীর রঙ যেনো গাড়ো না হয়।ও চাইছে না এ গাড়ো রঙ টা ঐ নিকৃষ্ট মানের লোকটার চোখে পরুক।কিন্তু না মনের উইশ টা পূর্ন হলো না।মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে।

মদন মুন্সি আগেই লোক মারফত বিয়ের জিনিস পএ মায়াদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু মায়া সে সব জিনিস ছুয়ে ও দেখেনি।বিয়ের শাড়ি গয়না পরাতে গেলে ও পরবে না বলে জানিয়ে দেয়।আয়মন এক দফা কটু কথা শুনিয়ে যায় মায়াকে কিন্তু মায়া সেটাতে ভ্রুক্ষেপ করে না।ওর একটাই কথা শাড়ি পরবে কিন্তু ওদের বাড়ির নয়।পরতে হলে ওর মায়ের শাড়ি পরবে।
কাশেম মিয়া তার প্রথম বউয়ের বিয়ের শাড়িটি রেখে দিয়েছিলো।মেয়ে যখন একটু বড়ো হয় তখন মায়ের জিনিস মেয়েকে দেয় কাশেম মিয়া।মায়া সেটা পরম যত্নে আগলে রাখে।মায়ের মুখটা ওর জানা নেই কিন্তু এই শাড়িটি দেখলে মায়ের কথা ভাবতো মাকে অনুভব করতো।আজ ওটা বের করেছে।কমলা রঙের শাড়ি একটা সময় গাড়ো বর্ণের থাকলেও এখন সেটার রং অনেকাংশে হালকা বর্ণের হয়ে গেছে।তবুও মায়া এটাই পরবে।
পুষ্প ওকে শাড়ি পরিয়ে নিজের সাজের প্রসাধনি দিয়েই হালকা সাজগোজ করিয়ে দেয়।আর লম্বা সোনালী চুল গুলো খোপা করে ওর কাছে থাকা সোলার গাজরা ফুল টা খোপায় পরিয়ে দেয়।

মাথায় ঘোমটা দিয়ে বোনকে সামনে বসিয়ে মায়া দেখতে থাকে।

“ইশ বুবু তোমারে দেখতে ঠিক রাণীর মতো লাগছে।এখন শুধু একটা রাজার দরকার।

মায়া কোনো কথা বলছে না চোখ থেকে টপ টপ করে পানি বের হচ্ছে।ও ভাবতেই পারছে না আজকের পর থেকে কোনো এক অমানুষের নিকট তাকে সপে দিতে হবে।চোখ বন্ধ করে উপর ওয়ালার কাছে প্রাথর্না করছে এ বিয়েটার হাত থেকে রক্ষা করো প্রভু।
পুষ্পের মনে পরে রাজা তো নয় এ তো সয়ং শয়”তানের ভাই আসতেছে। মায়ার কান্না ভরা মুখ দেখে বোনকে শান্তনা দিতে লাগে

“বুবু কাইন্দো না আমার মন কইতাছে এ বিয়ে হইবো না।দেখে নিও।

মায়া এ সবে থামে না বোন তাকে মিথ্যে সান্তনা দিচ্ছে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এতে কি কোনো প্রকার মিরাকেল ঘটার সম্ভাবনা আছে?

~~~~

দুপুরের পর থেকেই মেহরাব রুমের খাটের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।চেন্জ তো দূর পায়ের সু টাও খোলেনি।বেচারার মনে প্রেম জাগার আগেই ছ্যা’কা খেয়ে নিলো ভাবতেই পারছে না এমনটা হবে।মনে মনে মায়ার জন্য কতো কিছুর অনুভব সৃষ্টি হয়েছিলো জাস্ট একটা কথা শুনে সবটাই শেষ হয়ে গেছে।কিন্তু শেষ বললেই কি শেষ করে দেওয়া যায়?

তখন রাসেলের মুখে এ সব শুনে ওর মনে হয়েছিলো মায়াদের বাড়ি ছুটে যেতে।জোড় করে হলেও ওকে নিয়ে আসবে কিন্তু যেখানে একবারের দেখায় একতরফা ভালো লাগা ভালোবাসার জন্ম সেখানে না যাওয়াটাই ভালো।যদি গিয়ে উল্টো অপমানিতো হতে হয় তা ছাড়া মেয়েটা তো আর ওকে ভালোবাসেনা।জোড় করে তো আর এ সব করা যায় না।ভাবছে বিকেলেই শহরে চলে যাবে।শোয়া থেকে উঠে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ফিরোজ কে কল দিতে যাবে সেই মুহূর্তে কলিমউল্লাহ মামুর ডাক শুনতে পায়।
ড্রইংরুমে বসে আছে কলিমউল্লাহ ওকে দেখে হাসি মুখে বললো

“আজ বিকেলে আমার সাথে একটা জায়গায় যাবে।

“কোথায় মামু?

“একটা বিয়ে বাড়ি যাবো।তোমাকে তো তেমন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারিনি।আমাকে দাওয়াত দিয়ে গেলো তাই ভাবলাম তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।

মেহরাবের ইচ্ছে হলো না আবার মুখে নাও বলতে পারছে না।মামু আবার কি মনে করে তাই হা বলে দিলো।

“তা হলে তুমি রেডি থেকো আমি নিজে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।

“ঠিক আছে মামু।

কলিমউল্লাহ চলে গেলে মেহরাব ভাবছে আজও থাকা লাগবে কিন্তু এই বিষন্ন ভরা মন নিয়ে এ গ্রামে আর মন টিকছে না।কি আর করার মামুকে কথা দিয়েছে তাই যেতে হবে।আজ থেকে কালই শহরে রওয়ানা হবে সেটাই ভেবে রেখেছে।

“বরপক্ষের লোক চলে আসছে বাড়ির উঠানে সবাইকে বসতে দেওয়া হয়েছে।কাশেম মিয়ার বিয়েতে মত না থাকলেও মেয়ের বাবা হিসেবে যে সব দায়িত্ব পালন করার কথা সে টুকু বাধ্য হয়ে করছে।অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ের আয়োজন হলেও গ্রামের কয়েকজন সম্মানিত ব্যাক্তিকে দাওয়াত দিতে ভোলেনি সে।তার মধ্যে কলিমউল্লাহ একজন।
বর বেশে রমজান এসেছে কিন্তু ওকে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।কেমন ঢুলু ঢুলু অবস্থা ওর সাথে আসা ভাই বোনরা ওকে নিয়ে বসে আছে।সামনেই মদন মুন্সি বসে পান খাচ্ছে আর চিপটি ফেলছে।মনে তার অনেক আনন্দ কাশেম মিয়ার এমন সুন্দর মাইয়্যা তার এমন অকর্মা ছেলের লগে বিয়া দেওনের জন্য।

মেহরাব কে সঙ্গে নিয়ে কলিমউল্লাহ কাশেম মিয়ার বাড়িতে আসে।কাঠের বেড়া বিশিষ্ট টিন সেড ঘর।মেঝে পুরাটাই মাটির।দেখেই বুঝা যায় কাশেম মিয়ার আর্থিক অবস্থাটা কেমন।কলিমউল্লাহ কে দেখে কাশেম মিয়া বেশ খুশি হয়।হাসিমুখ বজায় রেখে দুটো চেয়ার এনে বসতে দেয়।মেহরাব কে বসতে বলে কলিমউল্লাহ নিজেও বসে।

“কাশেম মিয়া তুমি ব্যাস্ত হইয়ো না আমরা বসছি।

কাশেম মিয়া ব্যাস্ত হয়ে ঘরের ভেতরে গেলেন কিছু চা নাস্তার ব্যাবস্থা করতে কেনোনা এখনও বিয়ে বাকি আর খেতে একটু দেরি হবে তাই।

মেহরাবের এখানে এসে মনটা কেমন দুরুদুরু করছে।অজানা এক অস্থিরতা বিরাজ করছে মনে কিন্তু কেনো সেটা ও বুঝতে পারছে না।মনে পরছে আজ তো মায়ার ও বিয়ে।মেয়েটা নিশ্চই এতো ক্ষণে বধু বেশে অপেক্ষায় আছে ওর হবু বরের জন্য।ইশ মেয়েটাকে নিশ্চিত বধু রূপে পরীর মতোই লাগছে।কি সব ভাবছে মেহরাব নাহ
আর বসে থাকতে পারছে না।তাই মামুকে বলে উঠে যায় একটু মুক্ত বাতাসে হাঁটা দরকার।মায়াদের ঘরের সাথে লাগোয়া পথ ধরে হাটতে থাকে মেহরাব।
মায়া ওর রুমের সাথে থাকা জানালা দিয়ে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ মায়ের কথা ভিষণ মনে পরছে।মা বেচে থাকলে জেনে শুনে এমন অনলের বুকে মেয়েকে নিক্ষেপ করতে পারতো না।মায়ার দু চোখ বেয়ে পানি পরছে।

মেহরাব এদিক ওদিক নজর বুলিয়ে চারপাশটা দেখছে হঠাৎ ওর চোখ যায় মায়ার জানালার দিকে।এক নজর দেখে নজর সরিয়ে ভাবলো কি দেখলো ও আবার তাকিয়ে ভাবলো হ্যালুসিনেশন হচ্ছে ওর সাথে।কিন্তু নাহ চোখ মুছে কয়েকবার নজর বুলিয়ে দেখলো এটা কোনো ভ্রম নয় সত্যি।ওর চোখের সামনে মায়া ? হুম মায়াকেই দেখছে বউ সাজে তারমানে ওরা মায়াদের বাড়িতে এসেছে?
কিন্তু ও তো চায়নি মায়ার বাড়ি আসতে।কি করবে তাই ভাবছে এখন চলে যাওয়াটাই ভালো আর কিছুক্ষণ বাদে মায়ার বিয়ে আর সেটা মেহরাব নিজে থেকে এ সব সহ্য করতে পারবে না তাই এখন চলে যাওয়াটাই মঙ্গলজনক।

সেখান থেকে ঘুরে চলে যেতে লাগলে রাস্তার পাশেই বর বেশে রমজানকে দেখতে পায়।মেহরাব ওকে একটু আগে বরের বসার জায়গায় দেখতে পেয়েছিলো তাই চিনতে সমস্যা হয়নি।কিন্তু এখানে কি করছে?সামনে এগিয়ে দেখতে পায় কি একটা খাচ্ছে।কাছে যেতেই পরিষ্কার বুঝতে পারে এই মা”ল টা বাংলা ম”দ খাচ্ছে আর ঢুলছে।মেহরাবের সারা গা রাগে কাঁপতে লাগে এই নে”শা খোঁড় মা”তাল টার সাথে মায়ার বিয়ে ঠিক করেছে এটা ভেবেই।এক সেকেন্ড দেরি না করে ওর সামনে গিয়ে পরনের পান্জাবীর কলার ধরে টানতে টানতে এনে বাড়ির উঠানে ফেলে দেয়।

উঠানে মুরুব্বিরা সবাই কথা বলছিলো হঠাৎ কিছু পরার আওয়াজে সেখানে উপস্থিত মদন মুন্সি সহ সবাই আৎকে ওঠে।কি হলো এটা?মদন মুন্সি কাছে এসে ছেলেকে ধরে আর মেহরাবের দিকে প্রশ্ন ছুরে দেয়

“আমার ছেলেরে এইভাবে ধরে আইন্যা ফেলাইছো ক্যান?

মেহরাব দাঁতে দাঁত পিশে বলতে থাকে

“কেনো করেছি সেটা আবার কোন মুখে জিজ্ঞেস করছেন?
নে”শা খোঁড় ছেলেকে সাথে করে এনেছেন আবার সে লুকিয়ে নে”শা করছে।আপনার লজ্জা করে না এমন একটা ছেলেকে দিয়ে নিষ্পাপ একটা মেয়ের জীবন জেনে শুনে নষ্ট করতে যাচ্ছেন?

কাশেম মিয়া আর কলিমউল্লাহ সহ অনেকেই এতোক্ষণ ধরে এ সব দেখছে প্রথমে তারা কিছু না বুঝলেও মেহরাবের কথায় পরে বুঝতে পারছে।আয়মন এসে মেহরাব কে বলতে লাগে

“দেখেন আপনি স্যারের লগে আইছেন মেহমান হইয়্যা ওই ভাবেই থাকেন।আমাগো এ সবে আপনার কথা কওয়া লাগবো না।মায়ার বাপ আপনে জামাইরে নিয়া বসাইয়া দেন।

কলিমউল্লাহ আর চুপ থাকতে পারলেন না

“ছি ছি কাশেম মিয়া এ তুমি কার সাথে মেয়েটার বিয়া ঠিক করছো?যে কিনা একটা নে”শা খোর?অন্তত জেনে শুনে মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে তোমার বুক কাপলো না কাশেম মিয়া?

কাশেম মিয়া লজ্জায় মাথা নত করে ফেলে।আজ তার বউয়ের লোভের জন্য এসব কথা শোনা লাগছে।সম্মান আর থাকলো না বুঝি।বাইরের এ সব হট্টগোলের আওয়াজে ঘরের ভিতর থাকা সবাই বের হয়ে আসে।মায়া আর পুষ্প ও বের হয়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে যায়।
কাশেম মিয়া আর চুপ থাকতে পারে না।নিজেকে প্রস্তুত করে বলে ফেলে

“ এই রমজানের লগে আমার মাইয়ার বিয়া দিমু না।এইটাই আমার শেষ কথা।

কাশেম মিয়ার কথা শুনে আয়মন তেরে আসে স্বামীর নিকট।

“আপনে পা”গল হইছেন বিয়া দিবেন না কইলেই হইলো

বউয়ের কথা শুনে কাশেম মিয়া ঠাস করে আয়মনের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।

“আর একটা কথাও কইবি না এতোদিন ধরে সহ্য করছি আর না আমার মা মরা মাইয়্যাডারে মেলা কষ্ট দিছোস।শেষে কিনা ওর জিবনডাই নষ্ট করতে তুই একবার ও ভাবোস নাই।

আয়মন সবার সামনে স্বামীর হাতের চড় খেয়ে রাগে গোজরাতে থাকে।পাশ থেকে মদন মুন্সি বলে ওঠে

“বিয়া হইবো না এইডা কইলেই হইলো নাকি মেলা টাকা দিছি কি এমনি এমনি?

মেহরাব এ সব শুনে স্তব্ধ আর বিমূর হয়ে রয়।প্রথমত মায়ার মা নেই দ্বিতীয়ত সৎ মা টাকার বিনিময়ে এমন একটা নে”শা খোরের সাথে ওর বিয়া ঠিক করছে?উফ ইনি কি মা নাকি
ডা”ইনি? মাথায় কিছু ধরছে না নিজেকে এই মুহূর্তে
পা”গল পা”গল লাগছে এ সব কি শুনছে ও।

কাশেম মিয়া বউকে গিয়ে ধরে

“যে টাকা নিছোস সব বাইর কর ফিরায়ে দে সব।

আয়মন আমতা আমতা করে বলে

“সব তো কাছে নাই অর্ধেক টাকা কাছে আছে

বউয়ের এ সব কথা শুনে কাশেম মিয়ার রাগ আরো বাড়তে থাকে

“বাকি টাকা কি করছোস ?

“আমার বাপের বাড়ি পাঠাইছি ভাইয়ের লেইগ্যা।

কাশেম মিয়া কি বলবে ভেবে পায় না বউয়ের থেকে কাছে থাকা টাকা নিয়া মদন মুন্সির মুখে ছুরে মা রে।মদন মুন্সি এই টাকা পেয়ে বলতে থাকে

“আমার সব টাকা একলগে চাই না হলে ছেলের বিয়া দিয়া বউ নিয়া যামু।

মেহরাবের রাগের মাএা বাড়তে থাকে আর সহ্য করতে পারে না।আয়মন কে জিজ্ঞেস করে কতো টাকা নিছে ?আয়মন ছোটো আওয়াজে পুরো টাকার অংকটা বলে।মদন মুন্সির কাছ থেকে টাকার বান্ডিল টা এনে আয়মনের হাতে দেয় আর মেহরাবের ব্যাংকের একটা চেক প্যান্টের পকেটে ছিলো।যেটা ও কার্ডের সাথে সবসময় কাছে রাখে।মদন মুন্সির দেওয়া টাকার দ্বিগুন টাকার অংক চেকে লিখে সাইন করে মদন মুন্সির হাতে ধরিয়ে দেয়।নগদ টাকা কাছে না থাকায় এই মুহূর্তে মেহরাবের নিকট এটা করা ছারা আর উপায় ছিলো না।

“এই নিন আর এক্ষুনি বিদায় হোন।রমজান ও রাগে গজ গজ করতে থাকে কিন্তু কিছু বলে না মাইর খাওয়ার ভয়ে।মদন মুন্সি হুমকি ধামকি দিয়ে কাশেম মিয়ার আর মেহরাবের ওপর রাগ ঝেরে সবাইকে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।

মায়া এতোক্ষণ সবই দেখলো।বিয়েটা হবে না ভেবেই আনন্দে নিরবে কান্না করে।মনে মনে উপরওয়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করে।চোখ মুছে সামনের দিকে নজর দেয়,মেহরাব কে প্রথমে চিনতে পারেনি পরে মনে পরে যায়।সেদিন এই মানুষটার সাথেই তো পথে ধাক্কা লাগে।কিন্তু এই অজানা অচেনা মানুষটা ওর জন্য এতো কিছু করলো কেনো?
বোনের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে ওর

“বুবু দেখছো কি সুন্দর দেখতে মানুষটা এক্কেরে নায়কের মতো।আল্লাহ আমি তো এর আগে এতো সুন্দর পুরুষ দেখি নাই।আমার তো তাকে দেখে কোনো রাজার রাজপুএ বলে মনে হইতেছে।

মায়া পুষ্পের কথা শুনে ভালো করে খেয়াল করে হা পুষ্পের কথাই ঠিক।মানুষটা সত্যিই সুন্দর।নিশ্চই অনেক বড়োলোক ঘরের কেউ হবে।
কলিমউল্লাহ নিরবে বিস্ময়ে সবটা দেখলেন।সে জানে মেহরাব কতো বড়ো মনের মানুষ।তাই বলে চেনা নাই জানা নাই এখানেও এতো টাকা দিতে দ্বিতীয়বার ভাবলো না?
কাশেম মিয়া মেহরাবকে উদ্দেশ্য করে বললো

“বাবা তুমি আমাদের জন্য এতো টাকা ক্যান দিলা।বাকি টাকাটা আনিয়ে পরে দিয়ে দিতাম ।

“হুম সেটা করতে পারতেন কিন্তু এই অমানুষের দল কি আপনাদের সে সুযোগটা দিতো?

কাশেম মিয়া মেহরাবের কথা শুনে ভাবে হা এটা তো সত্যি।
আয়মন এবার সুযোগ বুঝে ম”রা কান্না জুড়ে দেয়

“হায় হায় এহোন কি হইবো মেয়েটার এই ভাবে বিয়াটা ভাইঙ্গা গেলো যে।
এসব শুনে উপস্থিত সবাই আয়মনের দিকে দৃষ্টি দেয়।বাড়িতে আসা আশেপাশের মহিলারা কানা ঘুষা করতে লাগলো।কাশেম মিয়া বউকে ধমক দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়।

আয়মনের স্বামীর প্রতি চাপা রাগ টা বাড়তে থাকে।ও চায় মায়ার বিয়ে ভাঙ্গছে এ নিয়ে বদনাম হোক মানুষের কাছে।তাই আবার ও কান্না করে বিলাপ করতে থাকে।

“হায় হায় এইবার কে আমার মাইডারে বিয়া করবো?সবাই তো ওরে অপয়া কইয়া অপবাদ দিবো আল্লাগো এইডা কি হইয়্যা গেলো?

এবার পুষ্প বিরক্ত বয়ে মায়ের কাছে আসতে লাগলে মায়া ওকে বাধা দেয়।এতোক্ষণ ধরে মেহরাব চুপ ছিলো কিন্তু এখন আর থাকতে পারছে না।এমনিতেই এ সব ঘটনা ঘটাতে ওর মাথা এলো মেলো হলেও সেটা প্রকাশ করার সময়ই বা পেলো কোথায়।এই মুহূর্তে ওর কিছু একটা করা দরকার সামনে তাকাতেই মায়ার দিকে নজর যায়।চোখ আটকে যায় মুহূর্তে কেমন মায়া মায়া মুখটা মলিন বিষন্নতায় ছেয়ে আছে।হয়ত মেয়েটা ও এই বিয়েতে রাজি ছিলো না তাই নিরবে কান্না করেছে।মায়ার দিকে চোখ স্থির করে কোনো প্রকার ভনিতা ছাড়াই বলে ফেলে

“আপনারা রাজি থাকলে আমি মায়াকে বিয়ে করতে চাই এক্ষুনি এই মুহূর্তে”

চলবে……

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-০৪

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৪

“ভাইজান ও ভাইজান ওঠেন সকাল হইয়া গেছে অনেকক্ষণ আগেই।আপনের না জরুরী কাজ আছে ওঠেন।

এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে রাসেল মেহরাব কে ডেকেই যাচ্ছে।কিন্তু মেহরাবের কানে ওর কোনো কথাই যাচ্ছে না।

“যাবে কি করে সে তো রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারেনি।গতোকাল বিকেলের পর থেকেই বাসায় এসে মনে এক অস্থিরতা বিরাজ করতে থাকে মেহরাবের।যেটা সাতাশ বছরের জীবনে এই প্রথম অনুভূত হলো।ও বুঝে যায় এতো বছরে যে প্রেম ভালোবাসা নামক জিনিস টা ওকে ছুতে পারেনি সেটাই ওকে ঘায়েল করেছে।এটার চিকিৎসা একটাই যে জাদুকারিনী তাকে তার মায়ার জালে আটকিয়েছে সেই মায়াবিনীকে যে মেহরাবের প্রয়োজন শুধু তাই না লাগবে তো লাগবেই।
হুম”এটা বলেই মন কে বহু কষ্টে মানিয়েছে।
মায়ার সোনালী চুলের কাঠিটা হাতে নেয় আর ভাবে”এই সেই কাঠি যেটাতে ওর চুলের স্পর্শ,ওর হাতের স্পর্শ লেগে আছে।সেটা অনুভব করে কাঠিটি পরম যত্নে ছুয়ে দেখছে।

ফিরোজের কথাটা ওর মনে পরে যায়।আসার সময় বলেছিলো কিন্তু সেটা ও ইয়ার্কি স্বরুপ নিয়েছিলো।আর গ্রামে সুন্দর মেয়ে থাকতেই পারে তাই বলে এতোটা সুন্দর যেটার বর্ণনা মুখে বললেও কম হবে।কতো সুন্দর মেয়ে ই তো মেহরাব দেখেছে তবে মনে ধরেনি।শেষে কিনা এই অজপাড়া গায়ের একটা মেয়ে এক দেখাতেই ওকে এতোটাই সম্মোহিতো করেছে যে এটা ভেবেই ও অবাক হচ্ছে।অথচ এই মেয়েটা জানে ই না তার জন্য একজনের আরামের ঘুম পর্যন্ত হারাম হচ্ছে।
এভাবে এপাশ ওপাশ করতে করতে ভোররাতের দিকে মেহরাবের চোখে ঘুম আসে।”

মেহরাবের সারাশব্দ না পেয়ে অবশেষে রাসেল দরজায় নক করতে লাগে।দরজার কড়া নাড়ার শব্দে মেহরাবের ঘুম ভাঙ্গে।ঘুম ঘুম চোখে সময় দেখলে বুঝতে পারে অনেক বেলা হয়ে গেছে।রাসেলের আওয়াজ পেয়ে বলে

“উঠেছি তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

মোবাইল চেক করে দেখে অনেক গুলো মিসড্ কল জমা হয়ে আছে।তার মধ্যে ফিরোজের আর বিজনেস ক্লাইন্টদের কল ছিলো।তখন মনে পরে আজ ওর অনলাইনে একটা মিটিং হওয়ার কথা যদিও দেরিতে ঘুম ভেঙেছে তারপরও যথেষ্ট সময় আছে হাতে।এই সময়ের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বসতে হবে।টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।এর মধ্যে রাসেল রুমে এসে রুম টা একটু গুছিয়ে ফেলে।
সকালের নাস্তা কলিমউল্লাহর স্ত্রী নিজ হাতে তৈরি করে রাসেল কে দিয়ে পাঠিয়েছে।টিফিন বক্স থেকে সে গুলো টেবিলে একটা একটা করে বের করে সবটা গুছিয়ে রাখছে।আগের দিন মেহরাব কে জিজ্ঞেস করেছিলো সে কি কি খেতে পছন্দ করে সেই মোতাবেক মামী তার জন্য নাস্তা বানিয়েছে।

ওয়াশ রুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো মেহরাব।টেবিলে কয়েক ধরনের খাবার দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

“এতো খাবার আর এই সকালের জন্য?

“হুম ভাইজান চাচি তার স্পেশাল হাতে বানাইছে।আর দুপুরের টা পরে পাঠাইবো কইছে।

“এতো খাবার তো এখন শেষ করতে পারবো না রাসেল,তারপর আবার পাঠাবে শুধু শুধু খাবার নষ্ট হবে।

“অতো কিছু আমি জানি না চাচার নির্দেশ আছে।

“আচ্ছা তুমি খেয়েছো?

“না পরে খামুনে।

“একটা প্লেট নিয়ে আসো একসাথে খাই।

রাসেল না করলেও মেহরাবের জোড়াজুড়িতে একসাথেই খেয়ে নেয়।নাস্তা খেয়ে মেহরাব অনলাইন মিটিং সেরে নিয়ে ফিরোজ কে কল করে।

“আসসালামু আলাইকুম বড়োভাই

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম কেমন আছো ফিরোজ?

“ভালো বড়োভাই।

“আন্টির শরির এখন কেমন ?

“এখন একটু ভালো তা কেমন লাগছে ওখানে?

“হুম খুব ভালো ।এটা বলে মেহরাব কিছু একটা ফিরোজ কে বলতে গেলে পরক্ষণে আর বলে না।ভেবে নিয়েছে পরে বলবে।

“আর কয়দিন থাকা লাগবে ভাই?

“এই তো তিন চারদিন আর তুমি একটু কষ্ট করে সবটা সামলাও আর একটু আগে বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং টা সেরে নিয়েছি বাকিটা তুমি দেখো।

“আমি থাকতে কোনো চিন্তা নেই বড়োভাই নো চিন্তা ডু ফূর্তি।

ফিরোজের কথা শুনে মেহরাব মুচকি হাসে ও জানে ফিরোজ ওর সবটা দিয়ে সবকিছু দেখে রাখবে।

“বড়োভাই গ্রামের পথে ঘাটে কোনো জ্বী’ন পরীর দেখা পেয়েছেন?

“ফিরোজ তুমি কি এ সবে বিশ্বাস করো?

“অবশ্যই করি আমিও কিন্তু গ্রামের ছেলে আর এ সব তো কতো দেখেছি।

“তুমি সত্যি বলছো ফিরোজ কাল্পনিক জ্বী’ন পরীর দেখা না পেলেও বাস্তবের পরীর দেখা আমি পেয়েছি।

ওর কথা শুনে ফিরোজের কিছু বুঝে আসে না।

“বড়োভাই কি বললেন পরীর দেখা পাইছেন?

কথায় কথায় মেহরাব কি বলে ফেললো তাই ভাবছে তবে ও এখনই কিছু জানাতে চাচ্ছে না তাই বললো

“ফিরোজ তোমার সাথে আমার কথা আছে এখন না পরে সবটা বলবো।
বলে কল কেটে দেয়।মেহরাবের কথার মর্ম ফিরোজ প্রথমে কিছু না বুঝলেও এটা বুঝতে পেরেছে কিছু তো একটা ঘটেছে আর সেটা নিশ্চিত মেয়ে রিলেটেড।যদি তাই হয় তা হলে ফিরোজ তো খুশি হবেই সাথে আরেকজন আছে সে সবচাইতে বেশি খুশি হবে যে কিনা মেহরাবের জীবনের অন্যতম বিশেষ একজন”

——-

এক গাল পান খেয়ে একটু পর পর পানের চিপটি থু দিয়ে ফেলছে মদন মুন্সি।আর হাতে থাকা একটি রুমালের সাহায্যে মুখ মুছে ফেলছে।বর্তমানে সে মায়াদের বাড়ির উঠানে পাতানো একটি চেয়ারে বসে আছে।ঠিক তার সামনে জলচকি পেতে আয়মন বসে আছে।মদন মুন্সি থু ফেলার ফাকে ফাকে মায়ার সৎ মা আয়মনের সাথে কথা বলছে।

“দেখো মায়ার মা তুমি যা চাও দিমু তয় মাইয়াডারে আমার বাড়ির বউ করবার চাই।

আয়মনের মন খুশিতে নেচে ওঠে।এই বিয়ে টা হলে আয়মনের অনেক লাভ হবে।মেয়ে বিয়ে দিতে গেলে কতো খরচ হতো ওর জানা নেই কিন্তু উল্টো খরচ না করে টাকা পাবে।লোভি মনটা আর দেরি করতে চাইছে না।

“আপনে যেমনে চাইবেন তেমনেই হইবো শুধু টাকাটা বিয়ার আগেই দিলেই হইবো।

“হুম খালি টাকা না তোমার এই ঘর ও পাকা কইরা দিমু।তয় কাশেম মিয়া আর তার মাইয়্যা রাজি হইবো তো?

এসব কথা শুনে আয়মনের খুশি আর দেখে কে,খুশিতে বলে দেয়

“এসব সামলানোর জন্য আমি আছি তো।

“হেইডা ঠিক আছে তয় বিয়াডা দু এর দিনের মধ্যেই সারতে হইবো কইলাম।

“আপনে যেমনে কইবেন তেমনেই হইবো।

আয়মনের কথা শুনে মদন মুন্সি বেজায় খুশি হয়।মদন মুন্সি তার সাথে করে আনা ছোটো ব্যাগ থেকে একটা টাকার বান্ডিল বের করে আয়মনের হাতে দেয়।আয়মন তো এতো টাকা একসাথে পেয়ে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেছে।

“হুনো মায়ার মা আইজ এই অর্ধেক টাকাটা রাখো।কাইল বাকিটা পাইয়্যা যাইবা।কোনো চিন্তা কইরো না।এহোন আমি যাই মেলা কাম গুছাইতে হইবো বিয়া বইলা কথা।

বলতে বলতে উঠে পরে,পায়ে সমস্যা থাকায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটে মদন মুন্সি।সেভাবেই হেটে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

ঠিক তখনই জমির কাজ শেষ করে কাশেম মিয়া বাড়ির পথ দিয়ে ডুকতে যাবে ঠিক সে সময় বাড়ি ঢোকার রাস্তায় মদন মুন্সির সাথে তার দেখা হয়।থু দিয়ে পানের চিপটি ফেলে একটা হাসি দিয়ে মদন মুন্সি কাশেম মিয়াকে বলে

“কেমন আছো কাশেম মিয়া শরির ভালা আছে নি?

কাশেম মিয়া মদন মুন্সিকে একদমই পছন্দ করে না।সে হারে হারে চিনে তাকে।কিন্তু আজ মদন মুন্সি তার বাড়ি থেকে বের হইছে এটা দেখে তার কিছু একটা সন্দেহ হয়।কারন ছারা তো মদন মুন্সি কারো বাড়ি যাবার লোক না।
মদন মুন্সির কথার জবাব না দিয়ে পাশ কেটে বাড়ির ভেতর ডুকে যায় কাশেম মিয়া।মদন মুন্সি তার যাওয়ার পানে চেয়ে একটা বিদখুটে হাসি দেয় আর মনে মনে বলে

“যতই অপছন্দ করো আমারে দুদিন পর ঠিক সুর সুর করে আমার পিছেই ঘোরা লাগবে কাশেম মিয়া।এই বলে সে আবার খোড়াতে খোড়াতে হাঁটা দেয়।

কাশেম মিয়া বাড়ির ভেতরে ডুকে সাথে থাকা সরন্জাম ঘরের পাশে রেখে আয়মনের দিকে এগিয়ে যায়।আয়মন খুশি মনে টাকা গুনতেছিলো এ সব দেখে বিস্ময়ে কাশেম মিয়া জিজ্ঞেস করলো

“এতো টাকা কই পাইলা?

আয়মন স্বামীর কথা শুনে থতোমতো খেয়ে বলতে লাগলো

“আরে এসব তো উপহারের টাকা।আমার তো কপাল খুইল্যা গেছে।

কাশেম মিয়ার সন্দেহ ঠিক ছিলো মেজাজ বিগরে যায় তার।বউকে বসা থেকে টান দিয়ে উঠিয়ে বলতে থাকে

“কোন সবর্নাসে পা দিছোস ক দেখি আর মদন মুন্সি আমার বাড়িতে ক্যান আইছিলো?

“আরে মায়ার বাপ রাগ হইয়ো না মাইয়্যা বড়ো হইছে বিয়া দিতে হইবো না হেরলেইগ্যা মদন মুন্সির পোলা রমজানের লগে মায়ার বিয়া ঠিক করছি।আর দেহেন মদন মুন্সি মেলা টাকা দিছে আরো দিবো কইছে।খালি টাকা না ঘর ও নতুন কইরা বানাইয়া দিবো কইছে।

কথাটা শুনে কাশেম মিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরে।বিস্ময়ের স্বরে বলে ওঠে

“কি কইলি আমারে না জিগাইয়া আমার মাইয়ার বিয়া তুই ওই ল”ম্পট রমজানের লগে ঠিক করছোস?

“আরে এমনে কও ক্যা হেয় এহোন আমাগো হবু জামাই।

কথাটা শুনেই কাশেম মিয়ার শরিরে যেনো আ গুন জ্ব”লে উঠে।

“কি সর্বনাশের কথা শুনাইলি আমি বাইচ্যা থাকতে আমার মাইয়ার বিয়া ওর লগে হইতে দিমু না।এই তুই জানিস না এর আগেও ওয় যে দুই তিনটা বিয়া করছে।

স্বামীর কথা শুনে আয়মনের রাগ লাগে কই স্বামী অতো টাকা দেখে খুশি হবে তা না উল্টো রাগ দেখাচ্ছে।এতো বোকা মানুষ কেমনে হয়।

“আরে তাতে কি হইছে বউ তো একটা ও নাই হের লেইগ্যা তো মায়ারে দিতে চাই।আর ওরা তো মায়ারে নেওয়ার জন্য পা’গোল হইয়া গেছে।

কাশেম মিয়া আয়মনের এমন কথায় স্তব্দ হয়ে যায়।এসব কি বলছে তার বউ।আত্মসম্মান বোধ তো নেই টাকার লোভে একেবারে অ’মানুষ হয়ে গেছে।রাগে তেরে আসে বউয়ের কাছে

“তোর এতো বড়ো সাহোস আমার মাইয়ারে বিয়া দেওনের নাম কইরা বেইচ্যা দিতে চাস?

“আরে কি কন ভুল বুঝতেছেন আর শুনেন যদি এই বিয়াতে আপনি বাধা দেন তা হইলে কিন্তু আমি খারাপ কিছু কইরা ছারমু কইয়া দিলাম।

বউয়ের সাথে আর পারবে না ভেবে রাগে সামনে থাকা জলচকিটা লাথি মে’রে ঘরে চলে যায়।আয়মন সে সবে ভ্রুক্ষেপ না করে আবার টাকা গুনতে লাগে।

কাশেম মিয়া আর আয়মনের সব কথা বার্তা আড়াল থেকে পুষ্প শুনে ফেলে।স্কুল থেকে আসছে বাড়ি ডুকতে যাবে তখনই এ সব কথা বার্তা ওর কানে গেলে সামনে আর এগোয় না।সবটা শোনার পর বাড়িতে ডোকে মাকে পাশ কাটিয়ে ঘরের মধ্যে ডুকে যায়।এ সব কি শুনলো ও মাথাটা রাগে দপ করে উঠলো।মনে মনে ভাবতে থাকে এমন মায়ের পেটে জন্মাইছিলাম ছি!বোনের জন্য চিন্তা হচ্ছে ওর এ সব শুনলে বুবু সহ্য করতে পারবে তো?ছোটো থেকে এ পর্যন্ত অনেক অন্যায় অ ত্যাচার সহ্য করে মুখ বুঝে আছে আবার এখন এই খারাপ লোকের সাথে নিজের বোনের বিয়ে ঠিক করেছে এটা পুষ্প কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

মায়া কলেজ থেকে বাড়ি আসার পর থেকে কাশেম মিয়া হাসফাস করছে কেমনে মেয়েকে এ সব কথা বলবে।আবার এ সব কথা শুনলে মেয়ের অনুভূতিটা কেমন হবে সে সব ভাবছে।বাবা হয়ে কিছুই করতে পারছে না বউ তাকে চিপায় ফেলে দিলো হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।তবে কাশেম মিয়ার আর কিছু বলতে হয়নি আয়মন নিজেই রাতের বেলায় মায়াকে সবটা বলে।এসব কথা শুনে মায়া কোনো টু শব্দটি করেনি।পাশ থেকে পুষ্প বোনকে নিয়ে চিন্তায় শেষ ও জানে বোন মুখে কিছু না বললেও তার মনের অবস্থাটা এখন কেমন।
আয়মন চলে যেতেই মায়া যেনো একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়।কি সব শুনলো যেই মানুষ টাকে ও মন থেকে ঘৃণা করে তাকেই বিয়ে করতে হবে?এই জীবন টাকে জলান্জলি দিতে হবে আজীবনের জন্য ঐ খারাপ মানুষটার কাছে?

পুষ্প বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর বলে

“বুবু তুমি এইখান থেইক্যা পালিয়ে যাও না হইলে তোমার জীবন টা শ্যাষ হইয়া যাইবো।

বোনের কথা শুনে মায়া স্বাভাবিক স্বরেই বলে

“না বোন তোদের সবাইরে ছাইরা পালাবো ক্যান?আমার মা সে আমার ভালোর জন্যই এতো কিছু করতাছে।যদি উপর ওয়ালা সহায় হয় কোনো খারাপ কিছু আমার হইবো না”

“মুখে বোনকে এটা বললেও মনে মনে ওর মনটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।গরিব হলেও মনে তো কতো স্বপ্ন ছিলো পুষ্প বলতো ওর জন্য কোনো রাজপুএ আসবে।যে কিনা ওকে ভালোবেসে আপন করে তার রাজ্যে নিয়ে যাবে।ও সব স্বপ্ন বাস্তবে কি এমন কেউ আছে যে কিনা ওকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিতে ?

চলবে…..

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)