Monday, August 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 101



ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০৯

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৯

বিয়ের কয়েকদিনেই তুলতুল বুঝতে পেরেছে, শ্বশুর বাড়িতে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ শাশুড়িকে জয় করা নয়। ননাসের সাথে মানিয়ে চলাও নয়। শ্বশুরের আদর অর্জনও নয়। তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, স্বয়ং স্বামী। সায়েম খুবই আহ্লাদে বড়ো হওয়া ছেলে। এতটা মা ঘেঁষা হওয়ার কারণ হলো, সায়েম প্রতিটি কাজে মায়ের উপর নির্ভরশীল। নিজের জামা, জুতো পর্যন্ত নিজে গুছিয়ে রাখা জানে না। যেহেতু তুলতুল নতুন, তাই সায়েমের কখন কী প্রয়োজন তা বুঝতেও পারে না। সায়েমের আব্দার হোক বা প্রয়োজন তা মায়ের কাছেই এখনো সীমাবদ্ধ।

তুলতুল ফিরানিতে গিয়ে মাত্র একদিন ছিল। বাবার বাড়িতে পৌঁছায় সন্ধ্যা সাতটায়। জান্নাত আরা তখনই বলেছিলেন সায়েমের রাতে থাকার প্রয়োজন কী। সায়েম নিজের বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারে না। কষ্ট হবে। তুলতুল বুদ্ধিমতী মেয়ে। ঠান্ডা স্বভাবের বলে কখনোই হইহই করার অভ্যাস তার নেই। সে ঠিক করেছিল সায়েম কী করবে তা সায়েমের হাতেই ছেড়ে দিবে। তাই জান্নাত আরার কথায় বিন্দুমাত্র আপত্তি জানিয়ে প্রতিবাদ করে না। জান্নাত আরা ধারণা করেছিলেন একটু হলেও তুলতুল প্রতিক্রিয়া দেখাবে। শেলী নিজেই সায়েমের সামনে তুলতুলকে প্রশ্ন করে,

“তুলতুল, তোমরা রাতে থাকবে?”

“আমি তো আসলে জানি না আপু। নিয়ম কী? রাতে থাকতে হয় না খেয়ে চলে আসতে হয়?”

“নিয়মের কিছু নাই। বৌভাতের পর নতুন বৌ বাবার বাড়িতে ফিরানিতে যায়। বাবা মা নতুন শাড়ি কাপড় দেয়।”

“রাতে থাকে না।”

“সেটা তোমাদের ইচ্ছে।”

“আপনি আর ভাইয়া কি ছিলেন?”

শেলী উওর দেওয়ার আগেই তুলতুলের দাদী শাশুড়ি বলেন, “হুম ছিল না আবার। জামাই লইয়া তিনদিন আছিল। নয়া নয়া শ্বশুর বাড়িত কম, শেলী তো বাপের বাড়িতই বেশি পইড়া থাকতো।”

“ভাইয়াও থাকতো?”

“তুলতুল এসব কেন জিজ্ঞেস করছ? তুমি আমার সাথে তুলনা করছ? আমার আব্বু আম্মু আমাকে আদর করে রেখেছেন। তোমার আব্বা আম্মা বলেন নাই কিছু?”

“না আপু। কী বলেন। তুলনা কী? আমি আসলেই জানি না কিছু। আম্মা তো এগুলো কিছু বলেন নাই। মিতুল, রাতুল সবাই অপেক্ষায় আছেন বললেন। আদর তো সায়েমকেও দিবে অবশ্যই।”

সায়েম বিরক্ত হয়ে বলে, “কী শুরু করলা তোমরা। আমি কী করব বলো তো?”

শেলী মানাও করতে পারে না। বেলুন চুপসে গিয়েছে একটু আগে দাদীর কথায়। আর এখানে তুলতুলকেও ধরতে পারবে না। কারণ তুলতুল তো কিছু বলেইনি। তুলতুলদের বাসায় এসে সায়েমের ভালোই লাগে। সবাই বেশ খাতির করছে। জামাই আদরের চূড়ান্ত বলা যায়। জান্নাত আরা জানিয়েছিল কোন কোন খাবার সায়েমের বেশি পছন্দ। তাই রান্না করা হয়েছে। রাত বাড়তে থাকে। জান্নাত আরা আর ফোন দেননি, বলা ভালো সায়েমের বাবাই দিতে দেননি। মিতুল, তুলতুলের রুমটাই সায়েম আর তুলতুলের জন্য গুছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“তুলতুল আমি যাই তাহলে। তুমি থাকো আজ। সবাই তো তুমি থাকবে আশা করে আছেন। কাল এসে নিয়ে যাব।”

“আচ্ছা।”

“আমি চলে গেলে কেউ কিছু মনে করবে?”

“করতেও পারে। সবাই তো আপনি সহ থাকবেন জানে।”

“তাহলে যাব না?”

“তা তো আপনার ইচ্ছে। আমি বলে দেব আপনি নিজের বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারেন না।”

সায়েম ছটফট করে। কেউ একজন তার হয়ে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে দিলে ভালো হতো মনে হয়। শেষ পর্যন্ত নতুন বৌয়ের মায়া, বিছানার মায়ায় চেয়ে বেশি হয়ে যায়। যদিও বাড়ি ফিরে এসে মায়ের থমথমে মুখ দেখে সায়েম বুঝে মা চেয়েছিল সায়েম চলে আসবে। এবার সায়েম সেই অস্বস্তিটাকে বিরক্তি বানিয়ে তুলতুলকে ফেরত দিচ্ছে। বসার ঘরে বসে বসে সায়েম যখন অযথাই বদনাম করছিল, সৌভাগ্য হোক বা দুর্ভাগ্য তুলতুল তা শুনে ফেলে। স্বামীর দ্বিচারিতা তুলতুলের একদম ভালো লাগে না। ঐ বাসায় একবারও মনে হয়নি কিছু সায়েমের খারাপ লাগছে, অপছন্দ হচ্ছে। অথচ সায়েম এখন অবলীলায় বলে যাচ্ছে, রুম ছোটো ছিল, গরম লাগছিল, মুরুব্বিরা বলায় থাকলো।

“বুঝলি আপা, চিংড়ির মালাইকারী তোমার মতো কেউ বানায় না। মুখে দিয়ে মনে হলো বলি যে একদিন আমার আপুর কাছ থেকে রেসিপি… ”

তুলতুল আর দাঁড়িয়ে না থেকে চা নাস্তার ট্রে নিয়ে ভেতরে আসে। সায়েম বিব্রত হয়ে কথা গিলে নেয়। শেলীর মুখটা চকচক করছিল।

“থামলি কেন? ও বৌ মাইন্ড করবে?”

“না আপু। মাইন্ড কেন করব? ও তো গলদা চিংড়ি তিন পিস নিয়েছিল। তারপরও বলেছিল আপুর রান্না চিংড়ি হলে কমপক্ষে ছয় সাত পিস খায়।”

সায়েম বিষম খায়। মিতুলের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সহজ কথা বলছে। শেলীও রাগ করবে নাকি বলবে এক মুহুর্তে বুঝে না।

“তুলতুল, তুমি আমার ছেলের খাওয়ায় নজর দাও কেন? তিনপিস নিয়েছে তুমি গুনেছ?”

“না না মা ছিঃ। আমিই তো পাশে দাঁড়িয়ে দিলাম। আমি আরও দিতে চেয়েছিলাম। তখন বললেন যে আপুর রান্না চিংড়ি হলে আরও নিতো।”

জান্নাত আরা দ্বিধায় পড়ে যান। তুলতুল আসলে সহজ সরল, না বেশি বুদ্ধিমান!

***

“তুলতুল, তুমি আমাকে টিটকারি করে মজা পেয়েছ?”

“আমি কী করলাম?”

“আমি বুঝি নাই ভেব না।”

“না আমিই আসলে বুঝিনি। আমার মনে হয়েছিল আপনার সব ভালো লেগেছে। কিন্তু বুঝলাম আমি যা বুঝেছি, তা ঠিক বুঝিনি।”

“আমি কি তোমাদের বাসায় কোনো সিনক্রিয়েট করেছি? এখনাে আম্মু আর আপুকে মিস করেছি বুঝাতে এমন টুকটাক কথা বলেছি। ওনারা খুশি হলে কোনো সমস্যা আছে?”

“আমাদের বাসা, রান্না এসব নিয়ে নেগেটিভ বললে ওনারা খুশি হবেন?”

“আমি তেমন বলেছি?”

“তো কী বললেন?”

সায়েমের মেজাজ খারাপ হয়। প্রথম দিন তুলতুলকে যতটা নরম সরম ভেবেছে। আসলে তা নয়। তুলতুলও মনে মনে ঠিক করেছে যুদ্ধ না করলেও সংসার সমরাঙ্গনে সে লড়াই না করে একপেশে হার হারবে না। শুধু ভয় এতে সংসারটাই না যুদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে যায়। এখানে যে শাশুড়ি বনাম বৌ না। এখানে যে স্নায়ুযুদ্ধটা স্বামী বনাম স্ত্রীর

(চলবে)

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০৮

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৮

মিতুল মুগ্ধ হয়ে ছবিগুলো দেখছে। কী চমৎকার এসেছে ছবিগুলো। আচ্ছা লোকটা নাকি কিছু করে না। শেলী আপার ভাষায় ‘হেঁটেহুঁটে খায়’।
তা ওয়েডিং ফটোগ্রাফির কাজ করলেও তো পারে। আজকাল কত আনাড়ি ছেলেপেলেরাও ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে পেজ খুলে ফটোগ্রাফার বনে গিয়েছে। আর এই লোকটার হাত এতো ভালো, চাইলে ফটোগ্রাফার হয়েও তো ইনকাম করতে পারে। মিতুলের ক্লাসমেট সুমনার বয়ফ্রেন্ড ফটোগ্রাফার। সারাদিন ক্যামেরা নিয়ে ঘোরে। এমন ভাব নিয়ে চলে যেন ফটোগ্রাফার না, সিনেমার পরিচালক। হ্যাংলা মেয়েগুলো সেই ছেলের ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য মুখিয়ে থাকে। সুমনাও বয়ফ্রেন্ডের হাতে নিজের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে পোস্ট করে। এমন একজন পার্সোনাল ফটোগ্রাফার থাকায়, সবাই সুমনাকে একটু হিংসাই করে। ম্যাসেজ টাইপ করে,

“থ্যাংক ইউ সো মাচ। ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে।”

“ইউ আর ওয়েলকাম।”

***

ফারহান ল্যাপটপ খুলে বসেছে। অফিসের কাজ আছে। ফারহার ম্যাসেজ দেখে ফেসবুক খুলে বসে। ফারহা বেশ স্মার্ট মেয়ে। ফারহান কন্টাক্টের জন্য নাম্বার চাইলে সহজেই নাম্বার অদলবদল করেছে, ফেসবুকে এড হয়েছে। ফারহান বুঝতে পেরেছে ফারহা ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড। কিন্তু এই এটেনশন ফারহানের জন্য নতুন কিছু না। ফারহানের মতে তারমতো হ্যান্ডসাম ছেলে, যার ভালো জব, ভালো ফ্যামিলি আছে, তারজন্য বিয়ের পাত্রী পাওয়া কোনো বিষয় না। বরং ডেটিং অ্যাপসের মতো যেকোনো মেয়েকে রাইট লেফট সোয়াপ (swap) করা যায়। আপাততঃ ফারহাকে রাইটেই রেখেছে। তাই ইগনোর করছে না। তবে মিতুলের বিষয়টাও মাথা থেকে বের করেনি। আরও একটু দু’জনকেই যাচাই বাছাই করতে হবে।

ফারহা বিয়ের ছবি আপলোড করেছে। বেশিরভাগই নানা ঢং এ তোলা নিজের ছবি। কিছু গ্রুপ ছবি আছে। ফারহার ফেসবুক আইডির লিংক ধরে মিতুলের আইডি ওপেন করে ফারহান।প্রোফাইলের ছবিটাতেই নজর আটকে যায়। ছবিটা সাধাসিধা। কিন্তু ভীষণ আকর্ষণীয়। ফারহা সুন্দর নিঃসন্দেহে। ফারহানের মায়েরও ইচ্ছে ফারহাকেই বৌ করা। বাবার একমাত্র মেয়ে, আর্থিক অবস্থা ভালো, মেয়ের জামাইকে মাথায় করে রাখবে। মিতুলের খোঁজও নিয়েছেন। দেখতে শুনতে ভালোই। কিন্তু আর কিছুই আহামরি বলার মতো না। ফারহানকে তাই আরেকটু ভাবতে বলেছেন তিনি।

***

মিতুলের ছবিগুলো আত্মীয় আর বন্ধুমহলেও সাড়া ফেলেছে। ফারহার এত বিরক্ত লাগছে। এত চমৎকার সাজ, পোশাক পরলো সে, আর সবাই কিনা ঘুরেফিরে শুধু মিতুলের কথা বলে। কী সুন্দর লাগছে? ঘোড়ার ডিম। আসলে মিতুল ভালো জামাকাপড় কম পরে, তাই একটু ভালো শাড়ি পরে সাজতেই সবার চোখে লেগেছে আর কিছু না। মিতুলকে বকা খাওয়ানোর কাজেও ফারহা সফল হয়নি। ড্রাই ওয়াশের পরও শাড়িতে দাগ হালকা আছে এখনো। তবে এ নিয়ে ফারহার আম্মু কোনো রাগ দেখাননি। শাড়িটা মিতুলের কাছ থেকে নেয়ওনি। ওকেই রেখে দিতে বললেন। বললেন মিতুলকে মানিয়েছে খুব। ও গিফট হিসেবে রাখুক। মিতুলের খুশি দেখে কে। যত্তসব।

***

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা মাথায় দেওয়ার মতো পানি না, আবার না দিলেও চুল মুখে অস্বস্তি। মিতুল ছাতা নিয়ে বের হয়নি। বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে বের হয়েছে। কিছু ছবি প্রিন্ট করতে দিবে। বান্ধবীকে সাথে নিয়েই যাবে ভেবেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বের না হলেই ভালো হতো। মা মানাও করছিল, কিন্তু মিতুলের অস্থিরতা বাঁধ মানলে তো। ছাতাটাও নিয়ে বের হয়নি। ঠিক ঠিক ঠান্ডা লাগবে। তুলতুল আজ বিকেলে সায়েমকে নিয়ে বাড়িতে আসবে। কত পরিকল্পনা ছিল, ঠান্ডা লাগলে কিছু করা হবে না। ইতোমধ্যে হাঁচ্চি শুরু।

“ঠান্ডা সহ্য না হলে বৃষ্টি বিলাস কেন?”

“আপনি এখানে কিভাবে?”

“কেন এই রাস্তায় থাকা দোষ নাকি?”

“না মানে তা বুঝাইনি। ভালো আছেন?”

“জি। কই যাচ্ছেন?”

“বান্ধবীর বাসায়।”

“কতদূরে?”

“এই তো দশ মিনিটের রাস্তা।”

“রিকশা ডেকে দেব?”

“না থাক। বাসায় চলে যাই। আবহাওয়া খারাপ। আজ আপু আসবে ভাইয়াকে নিয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর আসলে সব মজা পন্ড হবে।”

“বাসা কত দূর?”

“তাও দশ পনেরো মিনিটের রাস্তা।”

“হেঁটেই এলেন?”

“হুম।”

মিতুলের অস্বস্তি লাগে। লোকটা কি তাকে ফকির ভাবছে? বৃষ্টির ভেতর টাকা নেই বলে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে।

“রিকশা পাওয়া মুশকিল এই আবহাওয়ায়। পেলেও দেখবেন না করে দিবে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সুন্দরী মেয়েদের না করার ক্ষমতা একমাত্র রিকশাওয়ালা ভাইদের আছে।”

আরমানের হাসিটা ভালো লাগে মিতুলের। আসলেই রাস্তায় রিকশা কম। মিতুল ভেবেছিল হেঁটেই চলে যাবে, বিশ মিনিটের হাঁটা পথ। টাকাটাও বেঁচে গেল। সেই টাকা জমিয়ে মিতুল বড়োলোক হবে না। তবে এক প্লেট ফুচকার টাকা হয়ে যাবে। ফুচকা, চটপটি দেখলে মিতুলের মাথা ঠিক থাকে না।

“আমি নামিয়ে দেই?”

“না লাগবে না। আমি রিকশা নিয়ে নেব।”

” অস্বস্তি বোধ করলে মাঝখানে আমার ল্যাপটপ ব্যাগটা রেখে দিলেন। তাহলে গায়ে স্পর্শ লাগবে না।”

“আমি কী এটা বলেছি?”

“তাহলে আসেন নামিয়ে দেই।”

মিতুল ইতস্তত করে উঠে বসে। তার পরিবার সহজ পরিবার না। বেশ কনজার্ভেটিভ। অথচ মিতুল এই লোকটার সাথে এত সহজ ভাবে মিশছে কেন! বাবা দেখে ফেললে নিশ্চয়ই ভালো ভাবে নিবেন না। মিতুল, তুলতুলের কোনো ছেলেবন্ধুই নেই এই পর্যন্ত। অবশ্য লোকটা সায়েম ভাইয়ার কাজিন। বাবা জানলেও নিশ্চয়ই খুব একটা রাগ করবে না।

“বাইকে বসার একটা নিয়ম আছে। তা ফলো না করলে পড়ে যেতে পারেন। এত জড়োসড়ো হয়ে বসার কিছু নাই। আমি ছেলে ভালো।”

মিতুলের মাথায় ছোটো সাইজের একটা হেলমেট পরিয়ে দেয় আরমান। মিতুল মনে মনে ভাবে আরমান নিশ্চয়ই হাত খরচের জন্য পাঠাও বাইকের মতো বাইক রাইড দেয়। না হলে এক্সট্রা হেলমেট কেন রাখবে! হতেই পারে, হেঁটে তো মানুষের হাত খরচ আসে না। ইসস এর চেয়ে ফটোগ্রাফার হওয়াই তো ভালো ছিল। কষ্ট কম, ভাববেশি।

বাইক চলতে শুরু করলে ভীষণ ভালো লাগতে থাকে মিতুলের। মনে হচ্ছে অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছে। বাতাস তো বটেই, বৃষ্টির ছাটটাও ভালো লাগছে।

(চলবে)

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০৭

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৭

মিতুল নতুন সালোয়ার কামিজটা পরে খুশি হতে পারছে না। কেমন সাদামাটা লাগছে। চাচীর কাছে আরেকটা শাড়ি চাইতে যাওয়ার সাহসও নেই। বিয়ের দিন দুটো ঘটনা ঘটেছে। ফারহার জুতো তো ভেঙেছেই, চাচীর শাড়িতেও বেমক্কা দাগ লেগেছে। রফিক সাহেব শাড়ি ড্রাই ওয়াশে দিয়েছেন। দাগ যেন উঠে যায় সেই দোয়া করছে মিতুল। চাচীকে দাগ লাগার কথা বলেনি। এমনি আয়রন করতে দিয়েছে বলেছে। বাবা কিছু না বললেও, মা আচ্ছা মতো শাসিয়েছেন।

ফারহা জুতো নিয়ে ভালো মতো দেখেছে। না হিল ভাঙেনি। মিতুলের ভাগ্য নিয়ে হিংসাই হয় ফারহার। ইসস ভেঙে গেলে মিতুলকে দুটো কথা শোনানো যেত। তা হলো না। সমস্যা নেই, শাড়ি আসলে ঠিকই সুযোগ হবে। মিতুল যখন অতিথিদের টেবিলে ব্যস্ত ছিল। সুযোগ পেয়ে একফাঁকে একটু ঝোলের দাগ শাড়ির আঁচলে লাগিয়ে দিয়েছে ফারহা। নেটের শাড়ি থেকে এই দাগ সহজে উঠবে না। দেখা যাক এবার কিভাবে বাঁচে মিতুল।

মিতুল লম্বা চুলগুলো আঁচড়ে ছেড়ে দিবে না বেনী করবে ভাবছে। স্বাভাবিক ঢেউ খেলানো চুল মিতুলের। ফারহার চুলের মতো চকচকে নিখুঁত স্ট্রেইট করা না। ফারহার চুল লম্বা না। কাঁধ পর্যন্ত চুলকে ভলিউম স্ট্রেট করে ঝরঝরে করে রাখে ফারহা। চুল সবসময় বাধ্য ছাত্রের মতো সটান থাকে। মিতুলের চুল অবাধ্য। অগত্যা বেনী করবে ঠিক করে। বিয়ের দিন তো বোনের ব্রাইডাল মেকআপের সাথে নিজের সাজ ফ্রি পেয়েছে। আজ আর পার্লারে যাওয়া যাবে না। ফারহা অবশ্য সাজতে চলে গিয়েছে। চাচী বলেছিল মিতুলকেও নিয়ে যেতে, হালকা সাজিয়ে দিলেই হবে। কিন্তু ফারহা বললো কোনো মেকআপ আর্টিস্ট হালকা কমদামের সাজ সাজায় না। সব প্রি বুকিং এর ক্লায়েন্ট, তাও ফুল পেমেন্ট করতে হবে। পাঁচ দশ হাজার দিয়ে একদিনের পার্টি সাজ মিতুলের সাধ্য কী স্বপ্নেরও বাইরে। বাবা শুনলে মিতুলকে পাগল ঠাওরাবেন। মা তো কিছু বলারই অবকাশ রাখবেন না।

“নে এটা পর। মুখ এত ভোঁতা করে রাখতে হবে না।”

“কী আম্মু?”

“শাড়ি। কমদামের জামদানি হলে কী হইছে। সুন্দর আছে। তোর খালার সাথে কত দোকান ঘুরে কিনলাম। তোর খালা বলছে একই শাড়ি অন্যরা আট দশ হাজারেও কিনে। আমরা অনেক দামাদামি করে কিনছি।”

মিতুল প্যাকেটটা বের করে অবাক হয়। এটা তো সেই জামদানিটা যা মা বিয়ে উপলক্ষে কিনেছে।

“তুমি বিয়ের দিন কাতান পরলা। বললা এটা বৌভাতে পরবা। এখন আমাকে দিচ্ছ কেন?”

“তুই পর। তোদেরই তো বয়স এখন। আমি বেনারসি পরব। তোর মামা দিলো না।”

“ঐটা তো আগেও পরেছ।”

“তো কী হইছে? তোদের কথা শুনলে মনে হয় এক শাড়ি একবার পরলে, ছবি তুললে শেষ? আমরা যখন ছোটো ছিলাম, আম্মাকে সারাজীবন দুইটাই তোলা ভালো শাড়ি পরতে দেখছি। কী যত্নে রাখতেন। ভাঁজে ভাঁজে নেপথেলিন দিতেন। রোদে দিতেন। আমার তো কত শাড়ি। আর একবার পরলেই শাড়ি পুরান হয় না।”

শেষ মুহূর্তে মিতুল ব্লাউজ নিয়ে বসে। মায়ের মাপে বানানো ব্লাউজ তার গায়ে হবে না। টাক দিয়ে সেলাই করে কোনোমতে মাপ মতো আনে। মাই শাড়ি পরিয়ে দেন। সাহায্য করেন কুঁচি ধরতে। মিতুল অবাক হয়। বিয়ের দিন পার্লারে শাড়ি পরানোর সময় মনে হয়েছিল, কত ঝামেলা। এখন মা চট করে কোনো পিনআপ ছাড়া আটপৌরে ধরনের শাড়ি পরালেন। অথচ খুলে যাচ্ছে, পড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে না। লম্বা চুলে বেনী করে কানের পাশে ফুল গুঁজে দিয়েছে মিতুল। চোখে কাজল দেয় গাঢ় করে। ঠোঁটে লিপস্টিক। সাজের বাকি অনুষঙ্গ খুব একটা নেই। যা আছে তাই দিয়ে সাজে।

***

আরমানের আজ বৌভাতে আসার কথা ছিল না। কিন্তু কী এক অমোঘ টানে মায়ের সঙ্গী হয়ে বৌভাতেও চলে আসে। আজও ক্যামেরাটা সাথে নিয়ে এসেছে। আজ অবশ্য সায়েম অনুরোধ করেনি। নিজেই আগ্রহ নিয়ে ছবি তুলছে। আজ আর তুলতুল মানা করে না। সায়েমের সাথে কাপল ছবি তোলে। শেলী আর জুবায়েরেরও কাপল ছবি তোলা হয়। কিন্তু জুবায়ের আগ্রহী কম থাকায় শেলী আরমানকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারে না।

মিতুলদের বাড়ির সবাই এসে পৌঁছালে আরমান সবাইকে স্টেজে ডেকে ফ্যামিলি ছবি তুলে দেয়। আজ জান্নাত আরাও কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন।

“আপনাকে সিঙ্গেল কয়টা ছবি তুলে দেই?”

“আমাকে? পাব কিভাবে?”

“ভাবির কাছ থেকেই তো নিতে পারবেন। বা হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থাকলে দিন। ছবি পাঠিয়ে দেব।”

ফারহা আর বাকিদের ছবিও তুলে দেয় আরমান। ক্যামেরায় ছবিগুলো দেখতে গিয়ে আরমানের চোখ আটকে যায় জাম রঙের জামদানি পরিহিতা রমনী মিতুলের দিকেই। সিধে সাধা সাজে কী মিষ্টি লাগছে। যদিও বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন মিতুলের গায়ের রঙ আরও উজ্জ্বল লেগেছিল। হয়তো সাজের জন্য। আজ ঘরোয়া সাজে শ্যাম বর্ণের লাগছে। আর সত্যি বলতে এই শ্যাম বর্ণে মেয়েটাকে আরও বেশি মায়াবী লাগছে। বয়সটার পার্থক্য একটু কম হলে মাকে মিতুলের কথা বলতে পারতো। প্রায় দশ বছরের পার্থক্য হবে বয়সের। বলতে গেলে বাচ্চা মেয়ে। আগ বাড়িয়ে বেশি কথা বলতে গেলে হয়তো ছ্যাচড়া হাবড়া ভাববে। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটাও দেয়নি এখনো।

***

“আম্মু আজকের অনুষ্ঠানে ওনারা আসবে না?”

“কে?”

“ঐ যে ফারহান না কী যেন নাম।”

মেয়ের কথায় মুচকি হাসেন মা,

“হুম, এই জন্য এত আগ্রহ নিয়ে সেজেছ তুমি? আরে ওনারা এখানে কেন আসবেন। ওনারা তো সায়েমদের আত্মীয় না। আমাদের কমন আত্মীয়।”

“আমাদের আত্মীয় হলে চাচার দাওয়াত দেওয়ার কথা না?”

“মনে হয় না। দূরের আত্মীয় তো।”

ফারহার বিরক্ত লাগে। শুধু শুধু এত কষ্ট করলো। আগেই জিজ্ঞেস করা দরকার ছিল। অবশ্য আসা লসও হয়নি। এই যেমন একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার খেয়াল করেছে। দাঁড়িওয়ালা ফটোগ্রাফার মোটামুটি নিষ্ঠার সাথে মিতুলকে ফলো করে যাচ্ছে। পাভার্ড কিনা কে জানে। ঠিকই আছে। মিতুলের প্রেমিক হওয়ার যোগ্য। কিন্তু লোকটা কে জানা দরকার। ফটোগ্রাফার না বাড়ির কেউ? বাঁধা দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ফারহার নেই। তামাশা দেখতেই বরং মজা।

***

“মিতুল, তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। ঐদিন তো রঙ ফর্সা লাগছিল।”

শেলীর কথা বিব্রত হয় মিতুল। কিন্তু আপুর ননাস ঝামেলা করার মানুষ জানে। তাই বিরক্ত বা রাগ দেখানো যাবে না। মিতুল হাসিমুখেই উত্তর দেয়।

“জি আপু। ঐদিন পার্লারে সেজেছিলাম তো। ওরা না চাইলেও ফর্সা বানিয়ে দেয়।”

“ইসস, না চাইলে বানায় নাকি। আজও সাজতা। ঐদিন যারা দেখেছে, তারা তো আজ কনফিউশানে পড়ে যাবে। ঐদিন দেখলো সাদা, আজ কালো। এ তো লোক ঠকানো।”

মিতুল অবাক হয়। সে কাকে ঠকালো! মিতুলের অবাক মুখ দেখে শেলী বলে,

“আর দুষ্টুমি করলাম। মানে আমার মতো অন্য কেউ তো অবাক হতে পারে। যাক আমার ভাইয়ের বৌ ঠিক আছে। আমরা না হয় ছাড়তাম না। একরঙ দেখিয়ে, আরেক রঙের মেয়ে গছিয়ে দেওয়া তো ঠকানোই তাই না।”

“আপু অনেক ফর্সা। আম্মুর রঙ পেয়েছে।”

“হুম, তুমি আঙ্কেলের মতো কালো হয়েছ।”

ফারহা এগিয়ে আসতে শেলী ফারহার গাল ধরে আদর করে দেয়।

“এই মেয়েটা অনেক কিউট। পুতুল পুতুল। আমার এমন সুন্দর একটা সাদা জাপানি পুতুল ছিল। আরেকটা ভাই থাকলে একে বৌ করতাম।”

ফারহা খুশি হয়ে যায়। নাহ শেলীকে যত খারাপ ভেবেছে, ততটাও না। রূপ গুণের কদর করে।

“আপু আপনাদের ফটোগ্রাফারকে বলে আমাদের সিঙ্গেল ছবিগুলো দিয়েন প্লিজ।”

“আমাদের ফটোগ্রাফার? ওহ আচ্ছা আরমান? ও আমাদের কাজিন হয়। শখ করে ছবি তোলে তো। তাই সায়েমের বিয়ের ছবি তুলে দিচ্ছে।”

ফারহা কিছু বলার আগেই মিতুল বলে,

“ঐ ভাইয়া আপনাদের আত্মীয়?”

“হ্যাঁ।”

“আপু, ভাইয়া কি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার?”

ফারহার প্রশ্নে হেসে দেয় শেলী।

“আরে নাহ। ভবঘুরে। কিছু করে না। হেঁটে হুটে খায়।”

শেলীর শ্বশুর বাড়ির অনেক আত্মীয় স্বজনেরা এসেছে। শেলী আজ তাই নিয়ে ব্যস্ত। বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না।

***

বিকেল ঘনিয়ে এসেছে। মিতুল কমিউনিটি সেন্টারের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে একটু মন কষাকষি চলছে। সায়েমের পরিবার আজ তুলতুল আর সায়েমকে দিতে চাইছে না। ওনারা বলছেন দু’দিন পর দিবেন। মিতুল আর রাতুলের এত মন খারাপ হয়। যদিও দু’দিন এমন কোনো সময় না। তাও মিতুলের মনে হচ্ছে কতদিন বোনের সাথে দেখা নাই কথা নাই।

“আপুর জন্য মন খারাপ?”

আরমানকে দেখে মিতুলের রাগ হয়। লোকটা শুধু শুধু ফটোগ্রাফার হওয়ার নাটক কেন করলো? মিতুলের উত্তর না পেয়ে আরমান নিজ থেকেই বলে।

“দুটো দিন। দেখতে দেখতে চলে যাবে। ভাবিকে ছবিগুলো দিয়ে দেব। সুন্দর এসেছে।”

“কালো এসেছে জানি। দিতে হবে না থাক। বিয়ের দিনেরগুলো আপুর কাছ থেকে নিয়ে নেব।”

“বিয়ের দিন তো সিঙ্গেল ছবি তোলাই হয়নি। আর সেদিনের চেয়ে আজ অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে। সুন্দর কিন্তু কালো ফর্সার উপর নির্ভরশীল না।”

মিতুল ভরাট চোখে তাকিয়ে থাকে।

“সত্যি সুন্দর এসেছে?”

“হ্যাঁ। খুব বেশি সুন্দর।”

“কই দেখি।”

ছবিগুলো ক্যামেরার স্ক্রিনে দেখে মিতুলের মনটা ভালো হয়ে যায়। এই মায়া মায়া মেয়েটা মিতুল?

“আমাকেই দিন। আপনার ছবি তোলার হাত কিন্তু খুব সুন্দর।”

“কিভাবে দেব?”

নাম্বার বলে মিতুল।

“আজ রাতেই পাঠাব।”

মিতুলের একটু রাগ ছিল। কালো বলায় মনে কষ্ট ছিল। এখন সব জল হয়ে গেল।

(চলবে)

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০৬

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৬

তুলতুলের ঘুম ভেঙেছে খুব ভোরে। আসলে ঘুম আসেনি বলতে গেলে, ভাঙবে কী। সময় নিয়ে গোসল করে। যতটা নিঃশব্দে সম্ভব শাড়ি পরে। ভেজা চুল মুছে আঁচড়ে নেয়। সোনার গয়নাগুলো জুয়েলারি বক্সে গুছিয়ে নেয়। মা বলেছিল শাশুড়ির কাছে গয়না দিতে। নতুন বৌ শাশুড়িকে নিজ থেকে সেধে গয়না দিতে চাওয়া ভালো। না হলে শাশুড়ি ভাববে বৌ টাকা পয়সা চিনে বেশি। গিফটের আঙটি, চেইন, টাকাও গুণে গুছিয়ে নেয়। গিফট থেকে বেছে কানে এক জোড়া ছোটো ঝুমকা, আর চেইন পরেছে। মাথায় ঘোমটা দিয়ে আস্তে দরজা খুলে বের হয়। সায়েমের ঘুম ভাঙুক চায় না। বাড়িতে এখন ঘরের লোকজন ছাড়া বাইরের কেউ নেই। সবাই বৌ ভাতের জন্য একবারে কমিউনিটি সেন্টারে যাবে। তুলতুল শাশুড়ি মায়ের দরজার কাছে এসে থমকে দাঁড়ায়। দরজা খোলাই আছে।

“আসব মা?”

“আসো। উঠেছ এত সকালে।”

তুলতুল এগিয়ে গিয়ে গিয়ে বক্সগুলো বিছানায় রাখে।

“এগুলো?”

“আম্মু বলেছিলেন সব আপনার কাছে জমা রাখতে। আমি হারিয়ে ফেলব। রাতে আপনার শরীর খারাপ ছিল তাই দিতে পারিনি।”

জান্নাত আরা অবাকও হোন, মনে মনে খুশিও হোন। নাহ্ মনটা ভালোই মনে হচ্ছে তুলতুলের।

“বিয়ের গয়না তোমার আলমারিতে রাখ। এসব আমাকে দিতে হবে না। তোমার জিনিস তোমার কাছে রাখ। গিফটেরগুলো দেখি। কে কী দিলো। তাদের কারও বিয়েতে আবার তেমন কিছু দিতে হবে।”

“এই চেইন আর কানের দুলগুলো গিফটের। আমি পরেছি। বালা সেটের।”

“ঠিক আছে। নতুন বৌ খালি কানে, খালি গলায় থাকা ভালো না।”

জান্নাত আরা বেছে ভালো একজোড়া কানের দুল শেলীর জন্য রাখলেন।

“এগুলো শেলীকে দেব। তুমি গিয়ে সায়েমকে উঠে রেডি হতে বলো।”

তুলতুল মাথা নেড়ে সায় দেয়। তুলতুল সব গুছিয়ে আলমারিতে রাখতে বের হয়ে গেলে জলিল সাহেব বলেন,

“মেয়েটা লক্ষী আছে। নম্র ভদ্র। গড়ে পিঠে নিলে ভালোই হবে। অযথা রাতে যা ভয় দেখালে।”

“গড়েপিঠে নিতেই একটু ভয়, একটু চাপ দিতে হয়। প্রথম রাতে বিড়াল মারার কথা এমনি এমনি আসেনি। ভয় পেয়েছে বলে একরাতেই লাইনে এসেছে। বুঝেছে যে সায়েমের জীবনে মায়ের অবস্থান কী। মা, বাবা, বোন এদের আগে স্ত্রী না। এই ডায়লগ বহু বছর আগে তুমিই আমাকে দিয়েছিলে। এখন বয়সের সাথে সব ভুলতে বসেছ তাহলে?”

জলিল সাহেব চুপ করে থাকেন। জান্নাত আরা ওঠেন। রান্নাঘরে যেতে হবে।

***
ঘুমন্ত সায়েমের মুখটা দেখতে ভালো লাগে তুলতুলের। সায়েম সুপুরুষ একজন। ফর্সা ছেলে তুলতুলের ভালো লাগে না। সায়েমের তামাটে বর্ণের মাঝে একটা আকর্ষণ আছে। যথেষ্ট লম্বা, মেদহীন শরীর। বিয়ের প্রথম রাতে শারীরিক বিষয়টা যেমন হওয়ার কথা তেমনই হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সুন্দর একটা দিন শুরু হওয়ার কথা ছিল। অথচ তুলতুলের মনে একটা বিষকাঁটা খচখচ করে খোঁচাচ্ছে। তা হলো সায়েমের কথা। রাতে স্বাভাবিক কাছে আসার পর তুলতুলকে সায়েম বলেছিল, সকালে উঠে মা আর বোনের সাথে যেন একদম মন থেকো আন্তরিকতা দিয়ে মিশে যায়। রাতের কোনো মান অভিমান সকাল পর্যন্ত টেনে নিতে না।

“শোনো, আম্মু, আপু আমার তোমার দু’জনেরই বড়ো। তাদের কথা শোনার চেষ্টা করবা। ভালোই বলবেন। খারাপ না।”

“জি চলব। তবে একটা কথা বলি। আপু হয়তো দুষ্টুমি করেই বলছেন। কিন্তু সত্যি আমাকে বলছেন যে মায়ের শরীরটা ভালো না, তাই আপনি ভাইয়ার সাথে ঘুমাবেন। ফুল ঝেড়ে তাই বিছানা পরিষ্কার করে ফেলতে।”

“বললে বলছে। আমি খেয়াল করছি সেই কখন থেকে তুমি আপুর দোষ খোঁজা শুরু করেছ তুলতুল। এই জন্য টেনশনে আম্মুর শরীর খারাপ হয়েছে। আপু যে বলতো ভাইয়ের বৌ আসলে ঘরে বোনের জায়গা শেষ হয়ে যায়। কথাটা তো মিথ্যা না দেখি। নতুন বৌ কেমন হবে, কতটা ছেলের সাথে মানিয়ে সংসার করবে সে চিন্তায় তোমার সামনে আম্মুর অসুস্থতা দেখলে। তাও তুমি একই ত্যানা পেচাচ্ছ।”

তুলতুলকে বাহুডোর থেকে মুক্ত করে পাশ ফেরে সায়েম। তুলতুল সত্যি বলছে না মিথ্যা, তা সায়েমের ভাবার বিষয় না। এসব ফ্যামিলি ক্যাচাল বিয়ের প্রথম রাতেই তার বিরক্ত লাগছে। বন্ধুরা যে বলে বিয়ের শুরু থেকেই বৌকে টাইট দিতে হয়। কথাটা ভুল না। একটু নরম হতেই তুলতুলের অভিযোগ, নালিশ শুরু।

***

“পছন্দ হয়েছে?”

“না হলেই বা কী আম্মু। তুমি তোমার ছেলের বৌকে দিয়ে আমার জন্য যা রাখলে, তাতেই আমি খুশি। ছোটো হোক যা হোক, আমি কোনোদিন কিছু বলছি? আমার শাশুড়ি কিছু বললেও তো তোমাদের শুনাই না।”

“গিফটের জিনিস সব ছোটো ছোটো। এটাই ভালো ছিল।”

“তুলতুলের কানের গুলো কে দিলো?”

“ওর খালা।”

“ওটার ডিজাইন ভালো। এটা একটু আদিকালের। থাক সমস্যা নাই। শায়ানের দাদি কী বলবে জানো। বলবে একমাত্র মামার বিয়েতে ভাগ্নেকে কী দিয়েছে?”

জান্নাত আরা চুপচাপ ভাবেন কিছুক্ষণ।

“দে এগুলো। পাল্টে দেই।”

“না থাক। আমার এগুলো পছন্দ না জানো তো। আমি তো অন্য ননদ ননাসের মতো না। যেই শাড়িটা বৌ ভাতের জন্য উপহার দিলাম, সেটার দাম দিয়ে এমন দুই জোড়া কানের দুল কেনা যাবে। জুবায়ের তো তাও শুনবে না। আঙটি কিনবেই।”

“জুবায়েরের কথা তো আমরা জানি। মন কত ভালো। তুই দে তো। দে এদিকে।”

***

শেলী কানে ঝুমকা জোড়া পরে ফেলে। মা এনে দেওয়ার পর খুশি মনে নিলেও এখন মন খচখচ করছে। এখন তুলতুলের কানের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে আগের কানের দুলটাই ভালো ছিল। তুলতুলকে কত মানিয়েছে। ধ্যুত, এখন আবার পাল্টাতে বলা যাবে না। খেতে বসে কিছুই ভালো লাগে না শেলীর। বারবার মনে মনে দুই জোড়া দুলের তুলনা করে চলে।

“কী নাত বৌ, দুল জোড়া ননাসের কানে চইলা গেল? ভালোই হইছে। এইটা আরও সুন্দর লাগতিছে তোরে। এই হয়, মাইনষে বোঝে না। হিংসায় চক্ষে অন্যের বাড়ির ঘাস বেশি সবুজ লাগে। সেই দিকে তাকায়া থাকতি থাকতি নিজের গোলা লুট যায়। একসময় তোর শাউড়িও এই আছিল। খালি ভাবতো আমার মাইয়গো সব দিয়া দিতাছি। অন্তর কালা কইরা সুখের দেখা না জেয়ানকালে পাইছে, না এখন বয়স কালে পাইব। নাত বৌ কঠিন পরীক্ষা তোর সামনে। আমগো সায়েম হইলো মায়ের পোলা। নিজের স্বামী কইরা পাওন সহজ হইব না। শক্ত থাকতি হইব।”

(চলবে)

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০৫

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৫

তুলতুল বিছানা ঝেড়ে ফুল গুলো কুড়িয়ে এক করে দরজার বাইরে নিয়ে রাখতে গিয়ে দেখে সায়েম এগিয়ে আসছে।

“এগুলো কই নাও?”

“দরজার বাইরে রাখব।”

“ডেকোরেশন সব খুলে ফেললে? পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সাজিয়াছিলাম। খোলার এত কী তাড়া ছিল?”

শেলী বের হয়ে আসে।

“হুম। আমিও তো তাই বললাম। একটাদিন অন্তত ঝালরগুলো থাকতে পারতো। খোলা পাপড়িগুলো সরিয়ে ফেললেও। কী জানি, তুলতুল মনে হয় পোকার ভয় পায়। আম্মু ঘুমিয়েছে?

” হ্যাঁ আপু।”

শেলী তুলতুলের দিকে ফিরে বলে, “দেখলে সায়েম তো চলেই এলো। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই পারতে। বিয়ের রাত কত স্পেশাল হয়। তুমি সমস্ত সাজগোজ তুলে ফেললে। আমার ভাইটা চোখ ভরে বৌকে দেখতেও পারলো না।”

জুবায়েরের গলার আওয়াজ ভেসে আসে। শেলীকে ডাকছে।

“আপু শায়ানের ঘুম ভেঙে গিয়েছে মনে হয়। কাঁদছে তোমার জন্য।”

শেলী হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যায়। শায়ানের কাঁচা ঘুম ভাঙলে সহজে ঘুমায় না। জুবায়ের এমনি ভালো, শেলীকে শাসন করে না। কিন্তু ঘুম কাতুরে। রাতে ঘুমের সমস্যা হলে মুখ কালো করে রাখবে। শেলী চলে গেলে সায়েম দরজা লাগিয়ে দেয়। তুলতুল অবাক হয়েছে ভাইবোনের কথোপকথনে।

“আপা বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে আসবে না আবার?”

“কেন আসবে? তুমি কি বিয়ের রাতটা আপার সাথে কাটাতে চাও নাকি? চাইলে বলো। ডেকে আনি।”

তুলতুল কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে,

“আন্টি, মানে আম্মুর শরীর কেমন এখন?”

“ভালো। ঘুমের ঔষধ দিয়েছি। ঘুমাচ্ছে।”

সায়েম তুলতুলের হাতটা ধরে খাটে নিয়ে বসায়।পকেট থেকে একটা বক্স বের করে।

“হাতটা দাও।”

তুলতুল হাত বাড়িয়ে দিলে ব্রেসলেট পরিয়ে দেয়।

“পছন্দ হয়েছে?”

তুলতুল মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।

“তুলতুল, আমার জীবনে আজ তোমার প্রথম দিন। আজই তোমাকে কিছু কথা বলে রাখি। আমার আব্বুকে তো দেখেছ। নরম সরম মানুষ। কিন্তু আব্বুর এই নরম সরম হওয়ার ধকল আম্মুর উপর দিয়ে গিয়েছে। আমার দাদী বাড়িতে অনেক কষ্ট করেছেন। আব্বুর আয় রোজগারও বেশি ছিল না।সংসারে দিয়ে হাতে তেমন কিছুই থাকতো না। তাই সে সময় দাদীর ইচ্ছে ছিল আম্মু সন্তান কিছুদিন পর যেন নেন। কেননা ফুপুদের বিয়ে বাকি ছিল। কিন্তু এর ভেতর আপুর জন্ম হয়। দাদী খুবই বিরক্ত হোন। আপুর সাথেও যে খুব ভালো আচরণ হয়েছে তা নয়। আস্তে আস্তে ফুপুদের বিয়ে হয়। দাদার মৃত্যুর পর দাদী এমনিতেই একটু নরম হয়ে গিয়েছিলেন। আমার ছোটো ফুপুর অকাল মৃত্যুর শোক আর বয়সের কারণে ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেন। কিন্তু আম্মুকে কখনোই ভালোবাসেননি। আমার বিয়েতেও কমিউনিটি সেন্টারে যাননি। দেখলে না বাড়িতে একপলক সামনে এসে শুধু আমাদের দোয়া করে দিয়ে রুমে চলে গেলেন। এই যে আম্মু এত অসুস্থ। দাদী একবারও দেখতে গেলেন না। যাই হোক সংসার আম্মুর হাতে চলে আসে একসময়। আপু আমার চেয়ে সাত বছরের বড়ো। আমার জন্মের পর তাই আম্মু আমাকে আপুর মতো কষ্ট পেতে দেননি। বিয়ের অনেক বছর পর জন্ম বলেই হোক, বা ছোটো সন্তান বলেই হোক। আম্মু আমাকে কোল ছাড়া করতে চাইতেন না। হয়তো যে আদরটা আপুকে ছোটোবেলায় সামর্থ্য আর কাজের চাপে দিতে পারেননি। সেটাই আমাকে অনেকবেশি করে দিয়েছেন। আপুর কাছেও আমি ছোটো ভাই কম, আর প্রথম সন্তান বেশি। তাই আমি ওনাদের কথার উপর গিয়ে তোমার সাইড কখনও নিতে পারব না। আর তোমার কারণে যেন ওনারাও কষ্ট না পান। তুমি আজ প্রথম দিনই যে জেদ দেখালে তা আমার ভালো লাগেনি।”

“আমি কী করেছি?”

“ছবি তুললে না। তোমার পায়ে এমন কী ব্যথা ছিল?”

তুলতুল মুখ নামিয়ে রাখে। কী উত্তর দিবে। সায়েম যে শুধু মা, বোন ভক্ত তা নয়। খুব আত্মকেন্দ্রিক মানুষও। এইটুকু বুঝতে তুলতুলের ভুল হয় না। সায়েম নিজের দিকটা ছাড়িয়ে তুলতুলের কোনো বিষয়ই হয়তো খেয়াল করেনি। এখন তুলতুল যদি বলে আপার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে সে ছাদে যায়নি। সায়েম কি সেটার অর্থ বুঝবে?

“তুমি তখন আম্মু আর আপুর উপর জেদ করে যাওনি তাই না? অথচ বিয়েতে এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। তুমি তোমার বাবার মন জুগিয়ে চলো নাই? আমি যতটুকু জানি তোমাদের পরিবার রক্ষণশীল মনোভাবের। তুমি যেমন আমাকে বিয়ের আগে দেখনি। বাবা চাচার পছন্দে বিয়ে করেছ। আমিও তাই। তুমি ভালো মেয়ে হলে, আমিও ভালো ছেলে। তোমাকে দেখে নম্র ভদ্র বাধ্যগত মনে হয়েছে, সেজন্য আম্মু তোমাকে বৌ হিসেবে পছন্দ করেছেন। যেন আমাদের সাথে মিলেমিশে থাকো।
অঘচ তিনি তো জানলেন না জেদ কতটা আছে তোমার। তোমাকে আম্মু বা আপু খারাপ কিছু বলেছে? মুরুব্বিরা একটু পুরানো ধ্যানধারণার হয়। আগের আমলে সব আরও জটিল ছিল। মহিলারা মানিয়ে চলে নাই? আমার আব্বু কোনোদিন আম্মুর পক্ষ নিয়ে দাদা দাদীকে কিছু বলেন নাই। তাই বলে ওনাদের সংসার হয় নাই? মুরুব্বিদের না রাগিয়ে, জেদ না করে, অনুগত আর নমনীয় থাকলে নিজেরটা ঠিকই বুঝে পাবা। ঠিকই তো কাপল ছবি তোলার অনুমতি দিলো। তোমার জন্যই তোলা হলো না। এই যে তুমি একা ভয় পাবা, তাই আপা বাচ্চা রেখে তোমার পাশে এসে থাকলেন। এই আদরটা দেখবা না? শাসনটাই দেখলে? আম্মুর শরীর খারাপ। একটু সুস্থির হতেই বললেন ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাবেন। আমার বাসর রাতের কথা এত অসুস্থতার মাঝেও মাথায় ছিল। অথচ তুমি মুখটা এমন করে রেখেছ। আপু বলার পরও আমার জন্য অপেক্ষা করলে না। সাজগোজ সব তুলে ফেলে, পুরো বিছানা ক্লিন করে ফেললে। আমার ইচ্ছে ছিল নতুন বৌয়ের মুখ দেখে উপহারটা পরিয়ে দিব।”

তুলতুল পুরোই ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। বলে কী সায়েম!

“আমি ভাবলাম আপা আমার সাথে ঘুমাবে। আপনি দুলাভাইয়ের সাথে বা…”

“বা কী? আম্মুর সাথে ঘুমাব? এত বড়ো ছেলে আমি বিয়ের রাতে আম্মুর সাথে কেন ঘুমাব? আর আপুও বা তোমার সাথে ঘুমাবে কোন দুঃখে? আপু নিজের ঘুম নষ্ট করে আসলেন তুমি যেন ভয় না পাও। আম্মুর ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে। বাবা বলছিল নতুন বাড়িতে ভয় পাচ্ছ। তাই আপু আসলেন। আপু তো বলেছে তোমাকে।”

তুলতুল কী বলবে? বলেনি বলবে? বলবে যে শেলী আপা বলেছে তিনি তুলতুলের সাথে ঘুমাবেন আর সায়েম দুলাভাইয়ের সাথে! বিশ্বাস করবে সায়েম? উল্টো এটাই ভাববে না যে তুলতুল মিথ্যা বলছে। এদিকে তুলতুলের চুপ থাকা সায়েম তুলতুলের ভুল স্বীকার করাই বুঝে নেয়।

“শোনো তুলতুল। আপু আর আম্মুকে তোমার প্রতিপক্ষ ভেব না প্লিজ। আমি আমার দাদা বাড়ির মতো অবস্থা চাই না। আমার আম্মু একটু সেকেলে মানুষ। তুমি ম্যানেজ করে চলবা। দেখবা সব পাবা। তুমি তার একমাত্র ছেলের বৌ। ওকে?”

তুলতুল মাথা নেড়ে সায় দিলে সায়েমের মুখে হাসি ফোটে। তুলতুলের হাতটায় একটা চুমু খায়। যদিও
তুলতুল কিছুই বুঝতেই পারছে না । রোমান্টিক তার নিজের বাবাও নন। দাদীও কোনো রসোগোল্লা শাশুড়ি না। তবু মায়ের সাংসারিক জীবনও কি এমন জটিল ধাঁধা কিনা তুলতুলের জানা নেই। বিয়ের প্রথমদিনই সাংসারিক এসব মারপ্যাঁচ তুলতুলের মাথার উপর দিয়ে যায়। সায়েমকে আজ রাতে নিজের করে পেয়ে সুখী হবে না নিজের করে পেতে হলে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে বলে ভীত হবে। কিছুই বুঝতে পারছে না।

চলবে।

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০৪

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৪

বরপক্ষকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে মিতুলের চাচা। বাবা পাশেই আছেন। বর সায়েমের একপাশে বোন আর মা বসেছেন, অন্য পাশে তুলতুল। মিতুল, ফারহাসহ অনান্য শ্যালকশ্যালিকা তুলতুলের মুখে খাবার তুলে দিতে বলছে। তারাও অপেক্ষায় আছে দুলাভাইয়ের সাথে সাগরানার প্লেট থেকে খাবার খাওয়ার। মিতুলের হাতে হাত ধোয়ানোর জন্য বাটি আর সাবান, ফারহার হাতে জগ। দুলাভাই গেটে টাকা নামমাত্র দিয়েছেন। মাত্র তিন হাজার। অবশ্য দুলাভাই না, টাকা দিয়েছেন তার বড়ো বোন শেলী আপা। আপার জাদরেল কণ্ঠের কাছে এই বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা কিছু বলতেই পারেনি। চুপচাপ টাকা নিয়ে গেট ছেড়ে দিয়েছে। এখন এই হাত ধোয়ানো, জুতা চুরির মাধ্যমে তা শোধ করতে হবে।

“এই তোমার নাম কী যেন?”

সায়েমের মা জান্নাত আরা প্রশ্ন করেন।

“মিতুল খালাম্মা।”

“খালাম্মা কী। আন্টি বল। তা তোমার বোন নিজ হাতে খেতে পারে না?”

মিতুলের গলা ভয়ে শুকিয়ে যায়। জান্নাত আরা এমন ধমকে কথা বলছেন কেন?

“জি পারে।”

“তাহলে সায়েমকে খাইয়ে দিতে বলছ কেন? ভাই সাহেব এসব কী আদিখ্যেতা? সমাজ নাই? মুরুব্বিদের সামনে এসব ঢং করবে? আপনি না বলেছেন আপনার মেয়েরা খুবই লক্ষী, ভদ্র?”

মিতুলের বাবা রফিক সাহেব মিতুলকে এখনি সবার সামনে একটা রামধমক দিবে মিতুল জানে। ইতোমধ্যে ফারহা জগ নিয়ে গায়েব। সায়েমের বাবা জলিল সাহেব স্ত্রীকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করেন।

“আরে থাক না জান্নাত। ছোটোমানুষেরা শখ করছে।”

“রাখ শখ। আবার সাবান, জগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পদ পদে দুলাভাইয়ের কাছ থেকে টাকা বের করার ধান্দা। পেটে পেটে এত বুদ্ধি। এই শোনো জুতা টুতা চুরি করার কোনো নাটক ফাটক করবানা বলে দিলাম।”

“আন্টি আমিই বলেছি। ছবি তুলছি তো।”

আরমান খাবার টেবিলের কাছে চলে এসেছে ক্যামেরা হাতে। মায়ের মেজাজ খারাপ হচ্ছে দেখে সায়েম ইশারায় আরমানকে ডেকে নিয়েছিল।

“তুমি না খেতে বসলা?”

“হ্যাঁ, কিন্তু আপনাদের সার্ভ করে ঐ টেবিলে খাবার দিবে। আমি ভাবলাম সাগরানার ছবি তুলে ফেলি। ওনাদের বললাম আপনারা হাত ধোয়ান। আমি ছবি তুলব। জামাই, বৌকে খাওয়াচ্ছে, আপনি ছেলে বৌমাকে খাওয়াচ্ছেন এমন ছবিও তুলবো। বিয়ের স্মৃতি থাক।”

জান্নাত আরার মুখের রেখা স্বাভাবিক হয়। শেলী অবশ্য বলে,

“যেই না সাগরানা, তার আবার ছবি। মানুষ এখন সাগরানায় গোটা ছাগল বসিয়ে দেয়। এখানে কয়টা মুরগী দিয়ে কাজ সেরেছে। দায়সারা বিয়েতে আরও ভালো আয়োজন থাকে। আমার একটা মাত্র ভাই। এখনই এই অবস্থা, জামাই আদর কপালে কতটুকু আছে বোঝা হয়ে গিয়েছে।”

তুলতুল আর মিতুলের মনটা খারাপ হয়ে যায়। তাদের বাবা একটু কৃপণ মানুষ ঠিক। কিন্তু বিয়ের আয়োজন একদম যা-তাও করেননি। সাগরানার প্লেটে আটটি গোটা মুরগী আছে, মাছ, ডিম আছে। আর কী থাকবে! মিতুলের চাচা বলেন,

“আমরা মা ছাগল রাখতে চেয়েছি। আপা মানা করলেন। বললেন জামাই বাবা ছাগলের গন্ধ সহ্য করতে পারে না।”

শেলী মায়ের দিকে তাকায়। জান্নাত আরা মাথা নাড়েন। শেলী তাও দমে না।

“হ্যাঁ সায়েম খায় না। আমার জামাই তো খায়। ও এখনো নতুন জামাইয়ের মতো মূল্যায়ন পায়। তার একমাত্র শ্যালকের বিয়ে।”

শেলীর স্বামী জুবায়েরের বিরস চেহারা দেখে অবশ্য ঘটনা সত্য কিনা বোঝা গেল না।

“ভুল হয়ে গিয়েছে মা। অযথা আর রাগ রেখ না।।খাওয়া শুরু কর। আমি এখানে ডাবল খাসির রেজালার ব্যবস্থা করছি।”

রফিক সাহেবকে এত কোমল কণ্ঠে কথা বলতে খুব কমই শুনেছে তুলতুল। বাবার প্রতি সমস্ত অভিমান পানি হয়ে যায়। বিয়ে পড়ানো হয়ে গিয়েছে। সদ্য বিবাহিত মেয়ের নতুন জীবনের শুরুটা কোনোরকম কটুকথা দিয়ে না হোক, তাই চান। নিজের মেয়ে হলে এতক্ষণে ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দিতেন। এর চেয়ে কত তুচ্ছ কারণে তুলতুল, মিতুলকে শাসন করেছেন। কোনোদিন চোখ তুলে তাকায়নি। অথচ আজ বাবা মা সবার সামনে এই মেয়েটা কেমন বেয়াদবি করে চলছে। তারা কেউ মেয়েকে আটকাচ্ছে না শুধু বরপক্ষের দাম বজায় রাখতে। অনেক খবর দেখেন, যেখানে খাওয়ার জন্য বিয়ে বাড়ি কুরুক্ষেত্র হয়ে যায়। রফিক সাহেব সম্মানি মানুষ। এমন কোনো ঘটনা ঘটুক তা চান না।

আরমান ছবি তুলতে থাকে। মিতুল একাই দুলাভাই এর হাত ধোয়ায়। ফারহা তো কখনই সরে গিয়েছে। সায়েম পকেটে হাত দিতে গেলে তুলতুলের না করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু টাকা দেওয়ার আগেই মিতুল দ্রুত সরে যায়। সায়েমের ইচ্ছে থাকলেও ডাক দেয় না। বোনের আচরণে এমনিতেই বিব্রত সে। জান্নাত আরা ছেলেকে খাইয়ে দিয়েছেন। শেলী ভাইকে খাইয়ে দিলো। সায়েম হাতে লোকমা তুললেও তুলতুলের খেতে ইচ্ছে করে না। মুখটা তেতো হয়ে গিয়েছে। ভেবেছিল বাবার বাড়ির শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বামীর বাড়ির ফড়িং হবে। কিন্তু এখন দেখছে স্বামী নিজেই মা বোনের আঁচলে বন্দী। তাদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সামান্য রা করার সাহসও নেই।

আরমান কাপল ছবি তোলার জন্য চেষ্টা করেছিল।।কিন্তু তুলতুলকে ওঠানোই গেল না। কত কষ্ট করে জান্নাত আরাকে রাজি করিয়েছে ছাদের ফটোশুটের জন্য। অবশ্য তারা একা যাবে না। শেলী আর জুবায়েরও ছবি তুলবে৷ শেলীর ইচ্ছে। অথচ এখন তুলতুল যাবে না।

“আমি হিল পরে হাঁটতে পারছি না। পায়ে ব্যথা। আপনি আপা দুলাভাইকে তুলে দেন।”

খুব নিচু স্বরে জবাব দেয় তুলতুল।

“হিল খুলে চলেন ভাবি। ছবি তোলার সময় পরবেন।”

তুলতুল চোখ তুলে আরমানের দিকে তাকায়। তুলতুলের চোখে জিদ ছিল না, ছিল একরাশ অভিমান আর কষ্ট। আরমান বুঝতে পেরে আর কথা বাড়ায় না। সায়েম অবশ্য খুব বিরক্ত হয়। কত শখ ছিল তার ছবি তোলার। এমন কী পায়ে ব্যথা!

***

বিদায় বেলায় দুই বোনের চোখ যেন বাঁধ মানছিল না। বোনের বিয়ের আনন্দের সাথে রুমও মিতুলের একার হয়ে যাবে, সেই খুশিতে বিভোর ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই সব আনন্দ বৃথা। মিতুলের দাদী বলতেন, গাঙে গাঙেও দেখা হয়, বিয়ের পর বোনে বোনে আর হয় না।
সত্যিই কি বোনকে আর আগের মতো কাছে পাবে না মিতুল? যদি আপুর শ্বশুর বাড়িটা ভালো হতো, মিতুল এই কষ্ট মনেই চেপে রেখে দিতো। কিন্তু এখন তো ভয় ভয় লাগছে। সায়েম ভাইয়ার মা বোনকে সুবিধার লাগছে না। তারচেয়েও খারাপ লাগছে সায়েমের চুপ থাকা। মিতুলের চোখ অজান্তেই চলে যায় আরমানের দিকে। এমন একজন লোক কেন হলো না আপুর স্বামী। এই লোকটা কী চমৎকার করে পরিস্থিতি সামলে নেন। তখনও হাত ধোয়ার ঘটনা সামলে নিলেন। চাইলে সায়েম ভাইয়াও কি পারতেন না?

ভরাট চোখে এদিকে চেয়ে আছে আরেকজনও। ফারহান। ছেলের চোখ কোন মেয়ের দিকে গিয়েছে তা সরাসরি দেখতে চেয়েছেন ফারহানের মা। মাকে নিয়ে তাই এখানে হাজির ফারহান। ফারহানের মা শর্মিলা আহমেদ ভেবেছিলেন মেয়ে বোধহয় আধুনিক চলাফেরার কেউ হবে। ফারহাকে সেজন্যই পছন্দ করেছিলেন। ছেলের পছন্দ সম্পর্কে ধারণা আছে । ফারহানের বন্ধুমহলের মেয়েরাও সব অতি আধুনিক চলাফেরা করা। সেখানে মিতুলের মতো একটা সহজ সাধারণ মেয়ে দেখে অবাকই হোন।

এদিকে ভীড়ের ভেতর শর্মিলা আহমেদ আর ফারহানকে দেখে মিতুলের চাচী খুশি হয়ে যান। ধরেই নিয়েছেন ফারহাকে আরেকবার দেখতে এতক্ষণ অপেক্ষা করেছেন।

***

রাত প্রায় একটা বাজে। তুলতুল বুঝতে পেরেছে আজ রাতে সায়েম রুমে আসতে পারবে না। জান্নাত আরার প্রেশার উঠেছে। মাথা তুলতে পারছে না। শেলী রাত জাগতে পারে না। বাচ্চা ডিস্টার্ব করে। মাথা ব্যথা করে। এই বাহানায় শুয়ে পড়েছে। জলিল সাহেব বলার চেষ্টা করেছিলেন, সায়েম রুমে যেতে নববিবাহিতা স্ত্রী ঘরে একা। জান্নাত আরা কেঁদেকেটে এক করেছেন। তিনি নাকি মারা যাবেন এমন মনে হচ্ছে। মারা গেলে আদরের ছেলের হাতের উপরই মরতে চান। এরপর আর কথা থাকে না। তুলতুল একবার গিয়ে দেখতে চেয়েছিল। দরজা পর্যন্ত গিয়ে জিজ্ঞেসও করেছে কিছু করতে হবে কিনা। সায়েম কিছু বলার আগেই জান্নাত আরা বলেছেন,

“এখন থেকে সারাজীবন তো একই ঘরে থাকবা। একটা রাত আজ একা থাকতে পারবা না? নির্লজ্জের মতো চলে এলে?”

জলিল সাহেব তাড়াতাড়ি বলেন, “যাও মা তুমি কাপড় পাল্টে শুয়ে পড়। আমিও ঘুমাব। জান্নাত ঘুমালে সায়েম চলে আসবে। ভয় পেও না। ঘরে কত মানুষ।”

জান্নাত আরার বিরক্ত লাগে স্বামীর কথায়। বাসাবাড়িতে কিসের ভয়? বাঘ খাবে না ভূত?

তুলতুল কাপড় পাল্টে এসে দেখে শেলী খাটে শুয়ে আছে।

“তুমি নাকি ভয় পাচ্ছ। তাই চলে আসলাম। ইসস ফুল দিয়ে বিছানার কী অবস্থা করছে। শলার ঝাড়ু আছে দরজার পিছে। ভালো করে ঝাট দিয়ে ফুল ফেলে দাও তো। দরজার বাইরে রেখে এসে লাইট বন্ধ করে দিও। ফুল থেকে পোকা না বের হয়।”

“আপা আপনার কষ্ট করা লাগবে না। আমি একাই ঘুমাতে পারবো। আপনি বাবু আর ভাইয়ার কাছে যান।”

“শোনো তুলতুল আমি কী করব সেটা আমাকে ভাবতে দাও। আমি তোমার জামাইয়েরও বড়ো। আম্মু ঘুমালে সায়েম আজ জুবায়েরের সাথেই শুয়ে নিবে। রাতে দরকার হলে আব্বু ডেকে নিবে। আসো আমরা শুয়ে পড়ি।”

তুলতুল বোকা নয়। বুঝতেই পারছে নতুন জীবনটা সহজ হবে না।

(চলবে)

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যা পর্ব-০৩

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যা
পর্ব ৩

আরমান খামখেয়ালি মেজাজের ছেলে। নিজেকে নিয়ে অনেকটাই উদাসীন। এই যে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান, যেখানে মোটামুটি সচেতন ভাবেই সবাই টিপটপ রেডি হয়ে এসেছে। সেখানেও আরমান নিতান্তই সাধারণ পান্জাবি পায়জামা পরে চলে এসেছে। খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি অবশ্য অনেকদিনের সঙ্গী। এখন এতেই ওকে ভালো মানায়। এলোমেলো চুলে ব্রাশ চালালেও হেয়ার স্প্রে বা জেল দিয়ে বাধ্য করার চেষ্টা করে না। কেমন একটা ভবঘুরে ভাব আছে চেহারায়। সম্ভাব্য আকাঙ্খিত পাত্রের চাহিদায় তাই হুট করে আরমান কোনো পিতার নজরে আসবে না। কেতাদুরস্ত পাত্রীর চোখেও পড়বে না। অবশ্য আরমান এতেই স্বস্তি অনুভব করে। সবার নজরে আসা, আসরের মধ্যমণি হয়ে থাকার ইচ্ছা, আরমানের কখনোই ছিল না। এই বিয়েতে সে এসেছে মায়ের জোরাজোরিতে। সাধারণত এসব ফ্যামেলি ফাংশনে মা আনোয়ারা পারভীনই অংশ নেন। বাবা নেই আরমানের। আরমানের বাবা বেঁচে থাকতে সরকারি চাকরি করতেন। আরমান পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। সবাই ভেবেছিল আরমান বাবার মতোই বড়ো কোনো চাকুরি করবে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর আরমান ঘোষণা দিয়েছে সে তথাকথিত চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না। এসব ইঁদুর দৌড় তার পছন্দ না। আনোয়ারা পারভীন শুরুতে নানা ভাবে ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তারপর একসময় ক্ষান্ত দিয়েছেন। এখন আরমান কী করে তা আত্মীয় মহলের অনেকেরই ধারণা নেই। আরমানের কাজ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে আনোয়ারা পারভীন প্রথমে একরাশ বিরক্তি ঝাড়বেন। তারপর হতাশ ভঙ্গিতে বলবেন তিনি নিজেও নিশ্চিত না ছেলে কী করার চেষ্টা করছে। সারাদিন খটাস খটাস ছবি তোলে। কম্পিউটারে কী কী করে, তিনি বোঝেন না। অনেকে ভেবেছিল আরমান তবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের হয়ে ছবি তোলে বোধহয়। দেখা গেল তাও না। আরমান তোলে পশুপাখি আর প্রকৃতির ছবি! এত লেখাপড়া করে একটা ছেলে এসব কেন করবে! কারও মাথায় ঢোকে না। ফলাফল পরিচিত মন্ডল আড়ালে আরমানকে অকর্মণ্য আখ্যা দিয়েছে। এজন্য অবশ্য আরমানকে দোষ দেয় না। বাবার মৃত্যুর পর আরমানের মাথায় কিছুটা গন্ডগোল দেখা দিয়েছে বলেই তাদের ধারণা। আরমানেরও এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। নিজের জগতেই সে মগ্ন।

***

মিতুল স্টেজে আরমানকে দেখে অবাক হয়। আরমান কায়দা করে ছবি তুলছে। তবে কী দুলাভাই এর ঠিক করা ফটোগ্রাফার? তাই হবে হয়তো। এই জন্য এমন সিধেসাধা ভাবে এসেছেন। কিন্তু তারপরও লোকটাকে ভালো লাগছে। কী আশ্চর্য, লোকটার মাঝে ভালো লাগার কিছু নেই, বয়সেও মিতুলের চেয়ে বেশ বড়ো। তবু ভালো লাগার কী হলো? মিতুল নিজেকে শাসন করে স্বাভাবিক মুখে স্টেজে উঠে। আরমান পায়ের দিকে খেয়াল করতে বুঝতে পারে মিতুলের কষ্ট হচ্ছে। হাঁটছে খুঁড়িয়ে। মেয়েটার মাঝে ভীষণ রকম সারল্য আছে। এখনকার মেয়েদের ভেতর দুটো জিনিসের খুব অভাব লাগে আরমানের। প্রথমত সারল্য, দ্বিতীয়ত মায়া। এই মেয়ের মাঝে দুটোই আছে। আরমানের মনে পড়ে বিয়ের জন্য মা গত দুই বছর ধরে পেছনে পড়ে আছেন। কিন্তু মায়ের যেমন পাত্রী পছন্দ, তাদের বাবা মায়ের আবার আরমনকে পাত্র হিসেবে কাঙ্ক্ষিত মনে হয় না। আরমনাকে দেখলে তারা ভরসা পান না যে এই ছেলেটা কতটা সংসারের প্রতি দায়িত্বশীল হবে। মৃত বাবার পেনশন বন্ধ হলে চলার মতো কী করবে তা নিয়েও সন্দিহান থাকেন। যদিও আরমানের পৈত্রিক দোতলা বাড়ি আছে। তবুও পাত্রী পাত্রস্থ করার জন্য ছেলে কী করে সেটা একটা বড়ো প্রশ্ন হয়েই সামনে আসে। আনোয়ারা পারভীনের চেষ্টা তাই এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

সহসা আরমানের মনে হয়, এমন একটা মায়া মায়া মেয়ে মা দেখালে জীবনসঙ্গী বানানোর কথা ভেবে দেখতো। মনে হতেই হাসি খেলে ঠোঁটের কোণে। এই মেয়েটা যে একটা বাচ্চা মেয়ে বোঝাই যাচ্ছে। আরমান হাসিটা মিতুলের দিকে তাকিয়ে দিলেও, মন ছিল সম্পূর্ণ অন্য দিকে। কিন্তু মিতুল ভাবলো আরমান তাকে দেখেই হাসছে। মিতুলের মনে হচ্ছে সে একটু আগে পড়ে গিয়েছিল, সেটা ভেবেই লোকটা হাসছে। আশ্চর্য, এত হাসার কী হলো? অথচ একটু আগেও মিতুল লোকটাকে কত ভালো ভাবছিল। লোকটা নিশ্চয়ই মিতুলের ভাঙা হিল আর পড়ে যাওয়ার কথা তার সহকারীদের সাথেও বলেছে। তারাও মিতুলকে দেখিয়ে নিশ্চয়ই মজা করছে। মিতুলের চোখে অভিমানে পানি চলে আসে। এ কী জ্বালা, মিতুল ফারহার মতো কোনো আহ্লাদী কন্যা নয়। তারপরও আজ তার কথায় কথায় কান্না কেন পাচ্ছে?

মিতুল ঠোঁট চেপে কান্না আটকায়। বোনের পাশে বসে হাসিহাসি মুখে পোজ দেয়। আরমান কিছু ছবি তুলে নেয় ক্যামেরায়।

****

সম্পর্কে আরমান বরের দূরসম্পর্কের ফুফাতো ভাই। তুলতুলের বর সায়েম আর আরমান ছোটোবেলায় একই স্কুলে পড়েছে। তারপর কলেজ আলাদা হয়ে গিয়েছে। একসময় সায়েম ভিন্ন বিষয়ে পড়ায় আরমানের সাথে দূরত্ব আরও বাড়ে। তবুও বিয়ের দাওয়াতের সাথে সায়েম বিয়ের ছবি তুলে দেওয়ার অনুরোধ করতে ভুলে না। আসলে সায়েমও এখন আরমানের প্রকৃত কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। যেহেতু আরমান প্রফেশনাল ক্যামেরায় ছবি তোলেই, সেহেতু বিয়ের ছবিও আরমান তুলে দিলেই হয় ভেবেছে। সায়েমের মা বাবা এসব আধুনিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের খরচ অযথা অপচয় ভাবেন। বিয়েতে ভিডিও করার জন্য লোকাল একজনকে তুলতুলদের বাড়ি থেকে ঠিক করা হলেও প্রফেশনাল ক্যামেরা ম্যান কেউই ভাড়া করেননি। তাই আরমানকেই অনুরোধ করেছে সায়েম। নিজের মা বাবা বা বড়োবোনকে এ নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলে মা কষ্ট পেতে পারেন মনে হয়েছে। ইতোমধ্যে মা তিন-চার বার “ছেলে আমার রইলো না ” বলে ফিট খেয়েছেন। বিয়ের গাড়িতে ওঠার আগে মায়ের হাতে শরবত খেয়ে সালাম করতে গেলে মা এত কেঁদেছেন যে সায়েমের মনে হচ্ছিল সে বৌ আনতে যাচ্ছে না, বরং নিজেই বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু মায়ের ব্যাপারে ভীষণ ইমোশনালও সায়েম। মা কষ্ট পাবে এমন কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব না। তাই তো তুলতুলকে দেখার এত ইচ্ছে থাকলেও বিয়ের আগে একবারও সেই আর্জি পেশ করা হয়নি। ফোনে কথা বলা তো দূর। আজ স্টেজে সরাসরি দেখা। এবং দেখার পর আরেকবার মায়ের জন্য মন আদ্র হয়ে গিয়েছে। এত চমৎকার মায়াবী একটা মেয়ে সে নিজে খুঁজলে কোনোদিন পেত না। মায়ের নজর আছে বলতে হবে। হবু বৌয়ের সাথে শখ করে নানা পোজে ছবি তোলার অনেক ইচ্ছে সায়েমের কিন্তু মায়ের আর বোনের সামনে হচ্ছে না। আরমানকে আড়ালে বলেছে। আরমান বলেছে খাওয়ার পর সবাই যখন একটু রিলাক্স হয়ে বসবে, তখন ওদের একবাহানায় ছাদে নিয়ে যাবে।

খাওয়াদাওয়া নিয়ে আরমানের এত বাছবিচার নেই। যত্ন করে কেউ খাওয়ালে হোটেল সালাদিয়ায়ও সে তৃপ্তি করে খেতে পারবে। সালাদিয়া নামটা অবশ্য আরমান আর বন্ধুদের দেওয়া। ছালা বা বস্তা কেটে পর্দা দিয়ে রাস্তার পাশে যে ভাতের হোটেলগুলো বানানো হয়, তার নামই সালাদিয় বা ছালাদিয়া হোটেল। কিন্তু সমস্যায় পড়ে যায় এমন দাওয়াতে আসলে। যেখানে সবাই নিজের গ্রুপ নিয়ে চেয়ার দখল করে। সেখানে একা একজন নিভৃতে বসে শান্তি নিয়ে খাওয়া মুশকিল। আরমান ঠিক করে সায়েমের টেবিলেই বসবে। সায়েম আর তার মা বাবা ভাই বোন টেবিলের একমাথায় বসেছে। মেয়ে পক্ষের সবাই তাদের ঘিরে আছে। ইতোমধ্যে তারা বুঝতে পেরেছে সায়েমের বোনের ঘনঘন রাগ করার বাতিক আছে।তাই বোন যেন কিছুতেই না রাগ করে সে ব্যাপারে সবাই সচেষ্ট। বোনও খুব ভাবে আছেন।

আরমান চেয়ার টেনে বসতেই যাবে এমন সময় একজন চেয়ার ধরে ফেলে।

“আপনি এখানে কেন বসছেন? আক্কেল নেই নাকি?”

“আমাকে বলছেন?”

মিতুল ফিসফিস করে বলে,

“তো কাকে?”

“কোথায় বসব?”

“আপনাদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা আছেন। আপনার সহকারী কয়জন?”

আরমান বুঝতে পারে না।

“সহকারী?”

“হ্যাঁ। ভিডিও ম্যান বা লাইট ধরে এমন কেউ নেই?”

আরমান বুঝতে পারে মিতুল তাকে বিয়ে কাভার করতে আসা ফটোগ্রাফার ভাবছে।

“আমি একা। বরের বাজেট কম তো।”

“আসেন আমার সাথে।”

মিতুল আরমানকে নিয়ে একপাশের টেবিলে চলে আসে। সেখানে ভিডিও ম্যান আর চার সহকর্মী নিয়ে বসেছেন।

“ভালোই তো, আপনার সব কাজ একা করছেন। আমাদের ভিডিও ম্যান চারজন নিয়ে এসেছে সাথে। আব্বু তো সেই রাগ। উটকো লোকে খাওয়ায় টান পড়ে যদি।”

আরমান মজা পাচ্ছে। পুঁচকে ছিঁচকাদুনে মেয়েটা কেমন বড়োদের মতো পাকা পাকা কথা বলছে।মুখে অবশ্য তা প্রকাশ করে না।

“আমার সাথে আরেকজন আসার কথা ছিল। বয়স্ক মানুষ তো। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাই একাই আসলাম।”

মা আনোয়ারা পারভীনকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলে আরমান। মিতুল অবশ্য বোঝে না। বোঝার কথাও না।

“কমবয়সী সহকারী রাখেন। বয়স্ক লোক এত দৌড় ঝাপ করতে পারে না। শুনেন একা তুলছেন বলে ছবি আবার খারাপ তুলবেন না কেমন।”

“না নিশ্চিন্ত থাকেন।”

মিতুল চলে যেতে গিয়েও আবার ফিরে আসে,

“আপনাকে ধন্যবাদ।”

“আপনি পায়ে ব্যথা পাচ্ছেন। হাঁটবেন না। ফুলে যেতে পারে। ব্যথার ঔষধ এনে দেব?”

মিতুল মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। অবাক হয়, লোকটা তার খুঁড়িয়ে চলা খেয়ালও করেছে। তাহলে হাসছিল কেন? থাক অতটাও খারাপ না মনে হয়। সহকারী কেউ নেই মানে আর কাউকে মিতুলের পড়ে যাওয়ার কথা বলেনি। মনটা ভালো হয়ে যায় মিতুলের।

(চলবে)

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০২

0

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ২

ফারহান বিরক্ত মুখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। নিচে এত শোরগোলের ভেতর বিরক্ত লাগছিল। এসব প্রোগ্রামে এলে মেয়ে মহলের অতিরিক্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে ফারহান। ফারহানের তো তাই মনে হয়। সবাই গায়ে ঢলে পড়তে রেডি। সামনে দিয়ে বারবার হেঁটে যাবে। হি হি হা হা করবে। রঙচঙ মেখে সবাই নিজেকে সুন্দরী দেখাতে অতি সচেষ্ট। ফারহান তাই মাকে বলেছে, যাদের দেখানোর, তাদের ছাদে পাঠাতে। হ্যাঁ একজন নয়, ফারহানের মা যে পরিবারে কথা বলেছেন, সেখানে বিবাহযোগ্যা কুমারীর সংখ্যা একাধিক। তার মাঝে এগিয়ে আছে ফারহা নামক এক তরুণী। এই সেন্টারে দুটো বিয়ে হচ্ছে। ফারহানের আম্মু, দুপক্ষেরই আত্মীয়। তবে মূলত অপরপক্ষের কাছের। তাই সেই বিয়েতেই আসা। ছেলের জন্য উপযুক্ত কন্যা সন্ধান করছেন, এই কথা আত্মীয় মহলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আগ্রহী বিবাহযোগ্য দুই কন্যা এই আসরেই ছেলেকে দেখানোর পরিকল্পনা করায় আজ ফারহানকে সাথে নিয়ে এসেছেন। প্রথমজনকে খুব একটা মনে ধরেনি ফারহানের। গতানুগতিক মধ্যবিত্ত তরুণী। সাজ পোশাকে স্মার্ট নয়। ফারহাকে ভালোই লেগেছে। তবে ফারহা আবার ওভারস্মার্ট। যে পরিমাণ সাজগোজ করেছে, যেন নিজেই কনে। তার মাঝে কথাবার্তাও আহ্লাদী। ফারহান আহ্লাদ পেয়ে অভ্যস্ত, দিয়ে না।

ফারহান ছাদের এককোনায় এসে সিগারেট ধরায়। এসময় বিয়ের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে কেউ ছাদে আসবে না জানে। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন খাবারের টেবিলকে ঘিরে। প্রথম ব্যাচ দখল করার লড়াইয়ে এমন ভাবে নামবে মনে হয় যেন জীবনে ভালোমন্দ খায়নি। খাওয়ার জন্যই বিয়েতে আসা। ফারহান সব জায়গায় লাঞ্চ, ডিনার করে না। হাইজেন মানে কিনা কে জানে। মাকে আগেই বলে রেখেছিল তাকে খাবার জন্য জোর করতে না। আসার পথে স্যান্ডুইচ খেয়ে এসেছে। মা বাবাকে নিয়ে বাসায় ফিরে লাঞ্চ করবে। ছাইপাঁশ ওয়েলি খাবার খাওয়ার কোনো ইচ্ছেই তার নেই। খাবারের ব্যাপারেও সতর্ক ফারহান। জিম ট্রেইনারের ঠিক করে দেওয়া মেনু আর ক্যালোরি চার্টের বাইরে সাধারণত কিছু খায় না সে। সিগারেটটা ছাড়া প্রয়োজন, কিন্তু পারছে না। তবে সবার সামনে সিগারেট ধরায় না। নিজের গুডবয় ইমেজ নিয়ে ভীষণ সতর্ক ফারহান। এই যে সবজায়গা খায় না, সেটাও সে হজমে সমস্যা হচ্ছে, এসডিটি হচ্ছে এই বাহানায় এড়িয়ে যায়। তাকে কেউ রুড বলুক, তা তার পছন্দ নয়।

সিগারেট নিয়ে একটু আড়ালে চলে যায় ফারহান। চট করে কেউ উপরে আসলে ওকে দেখতে পাবে না। কিন্তু সে ঠিকই দেখতে পাবে। প্রয়োজন মনে করলে সিগারেট ফেলে দিবে। একমনে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে থাকে ফারহান। রুনুঝুনু শব্দ হচ্ছে। কেউ আসছে। ফারহান সিগারেট ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলে। একটা মেয়ে একটা ছেলেকে নিয়ে উঠে এসেছে। কান্না করছে। চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গিয়েছে। এক হাতে একটা সাদা জুতো। বোধহয় জুতার হিল ভেঙে গিয়েছে।

“ছোটো আপা কান্না কইরো না তো। সুপার গ্লু আনছি। জোড়া লাগবে দেইখো।”

“রাতুল, ভাই আমার প্লিজ হিলটা ঠিক করে দে। হিল ভাঙলো কিভাবে বুঝতেছিনা। চাচী কী ভাববে। ফারহা আপুও রাগ করবে তাই না?”

“ভাঙা জুতাই ছিল বোধহয়।”

“আম্মা কি এটা শুনবে? বলবে আমি ভাঙছি। কেন নিলাম ফারহা আপুর জুতা।”

রাতুল দ্রুত হাতে হিল ঠিক করে। ছোটো আপার ভয় যৌক্তিক। চাচীর শাড়ি নেওয়াই মায়ের পছন্দ ছিল না। এখন ফারহা আপুর জুতা ভাঙলো। গ্লু দিয়ে ঠিক হলেই হলো। ফারহান সামনে আসে না। মেয়েটা মনে হচ্ছে ফারহা মেয়েটার আত্মীয়। এই মেয়েটাকে তো দেখানো হয়নি। বিয়ের বয়স তো এরও হয়েছে। ফারহান ফোন বের করে একটা ছবি তুলে নেয়।

****

হিল আপাততঃ জোড়া লেগেছে। মিতুল সাবধানে হাঁটছে। ফারহা মিতুলকে চোখে চোখেই রাখছিল। মাঝে কিছুক্ষণের জন্য মা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। মিতুলের হিল ভেঙে সবার সামনে পড়ার দৃশ্যটা ফারিহা নিজের চোখে দেখতে চাইছিল। এর আগেও আকার ইঙ্গিতে বলেছে তার জিনিস ধরতে না। তুলতুল, ফারহার কিছুতে হাত না দিলেও মিতুলটা ইচ্ছে করে বোকা সাজে। যেন ইঙ্গিত বোঝে না। ঠিকই মায়ের সামনে এসে সহজ সরল ভাব নিবে। আর মা দয়ায় শরীর সব পারলে হাতে তুলে দিবে। হিলটা পা হড়কে টান লেগে আগে থেকেই নড়বড়ে হয়ে ছিল। ফারহা সাধারণ গাম দিয়ে কোনোরকমে আটকে রেখেছিল। ভেবেছিল পরে সময় করে ঠিক করবে। কিন্তু এত জুতো আছে, এটা আর ঠিক করা হয়নি। মিতুলের জন্য ইচ্ছে করে এই জুতো দিয়েছে। আশা ছিল বিয়ের দৌড়ঝাঁপে হিলটা ভাঙবে। মিতুলকে আচ্ছা মতো বকাও খাওয়ানো যাবে, একটা শিক্ষাও দিতে পারবে। কিন্তু এখনও তেমন কিছু দেখলো না বলে হতাশ। সে যখন ছিল না তখন কিছু হয়েছে? কিন্তু হলে মিতুল হিল ঠিক করলো কী করে? ধ্যাত, ফারহার বিরক্ত লাগছে। যদিও তার মন ভালো। ফারহানকে তার পছন্দ হয়েছে। ফারহানেরও তাকে অপছন্দ হওয়ার কারণ নেই। তবে ফারহার মা বলেছেন ফারহান সম্ভবত অন্য আরেকটি মেয়েও দেখেছে। এখানে বিয়ের উপযুক্ত কয়েকটি মেয়ে আছে। আর কোন মেয়েকে দেখতে পারে ফারহা মনে মনে মিলিয়ে নিচ্ছে। তাই নিচের বিয়েতে গিয়েও ঘুরে এসেছে। তবে সে নিশ্চিত হয়েছে এখানে তার মতো স্মার্ট আর কাওকে লাগছে না। ফারহানকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল তার সাথে ফারিহার মতো কাউকেই চাইবে। বেশ সপ্রতিভ ফারহান। লম্বা, শরীর সচেতন বলে শারীরিক গঠনও ভালো, স্মার্ট। যেমনটা ফারহার পছন্দ। তাদের দু’জনের নামও কত মিল। মনে করে হাসি খেলে যায় ফারহার মুখে।

***

মিতুলের নজর খুঁজছে অন্য আরেকজনকে। নাম না জানা লোকটাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি। তবে তিনি এই বিয়েতে আগত অতিথিদের কেউই হবেন। নায়কোচিত কেউ নন। গড় উচ্চতার, ছিপছিপে শরীরের একজন। সাধারণ একটা পাঞ্জাবি পায়জামা পরেছেন। ক্লিন সেভ নয়, মুখে হালকা দাঁড়িও আছে। চুল খুব যত্নে আঁচড়ানো না। হালকা করে ব্রাশ চালানো। একেবারেই কেতাদুরস্ত কেউ নন। বয়সেও বেশ ম্যাচুয়র মনে হলো মিতুলের। কিন্তু তারপরও একটা আকর্ষণ আছে। চোখজোড়া ভীষণ সুন্দর। সুন্দর চোখের মেয়েদের মতো, সুন্দর চোখের ছেলেরাও খুব আকর্ষণীয় হয়। ধুপধাপ করে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হিল ভেঙে আরেকটু হলে পড়ে পা ভাঙতো মিতুল। কোথা থেকে জানি লোকটা সামনে চলে এলো। একদম সিনেমার ঘটনা যেন বাস্তবে ঘটে গেল। মিতুল পা মচকে একটু ব্যথাও পেয়েছিল। কিন্তু ব্যথায় নয় হিল ভাঙার ভয়েই তার কান্না চলে আসলো। ভাগ্য ভালো রাতুল সাথেই ছিল। লোকটা রাতুলকে সাথে করে নিয়ে কোথা থেকে সুপার গ্লু জোগাড় করে দিলেন। ভাগ্যিস, না হলে আজ মিতুলের খবরই ছিল।

এতক্ষণ উত্তেজনায় পায়ের ব্যথা টের মা পেলেও এখন ভালোই ব্যথা হচ্ছে মিতুলের। পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। স্টেজে গিয়ে তুলতুলের পাশে বসে থাকবে ঠিক করে। স্টেজের কাছে গিয়েই চমকে উঠে। ঐ লোকটা সেখানেই আছে।

(চলবে)

ধর যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০১

0

#ধর_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে

শাড়িতে অভ্যস্ত নয় বলে বারবার শাড়ির পাড় পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। মিতুলের বিরক্ত লাগছে। বোনের বিয়েতে এমনি কত ছোটাছুটি। তার মাঝে সামলে হাঁটতে হচ্ছে যেন শাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়। শাড়ি পরে খুবই বিরক্ত লাগছে এখন। মিতুল জানতো শাড়ি সামলাতে পারবে না। কিন্তু সুন্দর দেখানোর লোভে শাড়িই পরেছে। তাছাড়া নিজের বোনের বিয়েতে পরার মতো ভারী কোনো পোশাক মিতুলের নেই। কাতান কাপড়ের সালোয়ার কামিজ ছিল, কিন্তু বোনের বিয়েতে পরার মতো মনে হয়নি। এই শাড়িটা মিতুলের চাচীর। দুবাই নেটের শাড়িতে মিরর ওয়ার্ক করা। এত চমৎকার শাড়ি বা পোশাক মিতুল এর আগে কখনো পরেনি। চাচী এত ভালো। মিতুল কোন পোশাক পরবে এই নিয়ে যখন মায়ের সাথে ঘ্যানঘ্যান করছিল, তখন চাচীই বললেন ওনার কাছ থেকে শাড়ি নিতে। চাচীর সালোয়ার কামিজ মিতুলের গায়ে হবে না। বেশ ভারী শরীর চাচীর।

মিতুল খুশি হয়ে যায়। মায়ের কাছেও সব সাধারণ শাড়ি। কাতানই বেশি। এমন শাড়ি মায়ের নেই। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে এবার একটা জামদানি কিনেছেন, সেটাও চার হাজার দিয়ে। চার হাজারের জামদানির বুনন ভালো নয়। কিন্তু এই চার হাজারও মিতুলের বাবা রফিক সাহেব দিতে খুব গড়িমসি করেছেন, বিরক্ত হয়েছেন। মিতুলও চার হাজার পেয়েছে কেনাকাটা করতে। কিন্তু বিয়েতে টুকিটাকি কত কিছু লাগে। একজোড়া জুতো, ভালো একটা ব্যাগ, হালকা গয়না। এতসব কিনতে পারা দূর, পোশাক আর ব্যাগেই বাজেট শেষ। জামাটা বৌভাতে পরবে। বাবার কাছে আর চাওয়ার সাহস মিতুলের হয়নি। এমন না যে রফিক সাহেব দরিদ্র মানুষ। আসলে রফিক সাহেবের স্বভাবই এমন। হিসেব করে চলাটা অনেকটা কিপ্টেমির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। মিতুলের মা ফরিদা বিয়ের পর স্বামীর এমন আচরণে কষ্ট পেতেন। কিন্তু সময়ের সাথে স্বাভাবিক হিসেবেই মেনে নিয়েছেন। বরং মেয়েরা কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ করলে স্বামীর হয়েই কথা বলে মেয়েদের শান্ত করেন।

রফিক সাহেবের সব হিসেব নিকেশ অবশ্য একজনের সাথে খাটে না। আর সে হলো মিতুল আর তুলতুলের ছোটো ভাই রাতুল। তুলতুল রফিক সাহেবের বড়ো মেয়ে, মিতুল মেজো। আর রাতুল সবার ছোটো। রাতুল সবে ক্লাস এইটে পড়ে। ফরিদা আর রফিকের আদরের সন্তান। ছেলে সন্তানের জন্য মনে একটা চাপা কষ্ট ছিল রফিক সাহেবের। স্বামীর মনোঃকষ্ট দেখে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া মান্নত করে রাতুলকে পেয়েছেন। তুলতুল আর মিতুল ভালোই বুঝে তারা দুইবোন একদিকে, আর ভাইয়ের আদর আরেকদিকে। অবশ্য এ নিয়ে বোনদের মনে দুঃখ নেই। ভাইকে তারা নিজেরাও খুব ভালোবাসে। বলতে গেলে রাতুলের তিন মা। মা তো মাই, বোনেরাও তাকে আদর করে মাথায় তুলে রাখে।

যাই হোক, বড়োবোন তুলতুলের বিয়েতে ভালো কেনাকাটা রাতুলের কপালেই জুটেছে। নাগরাই জুতো, কেডস, নতুন পাঞ্জাবি, জিন্সের প্যান্ট টিশার্ট সবই পেয়েছে রাতুল। এরপরও বোনদের সাথে ঘ্যানঘ্যান করেছে একটা ঘড়ির জন্য। নিজের বাজেট থেকে ভাইকে একটা ঘড়ি কিনেও দিয়েছে মিতুল।

“মিতুল, শাড়ি তো পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। হিল জুতা পর।”

“সমস্যা নেই চাচী। শাড়ি বেশি নিচু হয়েছে। আমি আরেকটু খুঁচে নিচ্ছি।”

মিতুলের ইতস্তত ভাব দেখে জেসমিন বুঝতে পারেন। নিজের মেয়ে ফারহাকে ডেকে বলেন,

“ফারহা, তোমার একজোড়া হিল বাড়তি আছে না? মিতুলকে দাও তো আম্মু।”

ফারহা মায়ের উপর বিরক্ত হয়। মায়ের অতি ভালো সাজার স্বভাব ফারিহার পছন্দ না। ফারহা আর মিতুল প্রায় সমবয়সী। ফারহা অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। আর মিতুল এবার এইচএসসি দিয়েছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় ফারহা একটু বেশিই আদরের। তাই শেয়ারিং বিষয়টা তার মাঝে নেই। তাছাড়া বাবার অবস্থা ভালো হওয়ায় যেখানেই যাক আত্মীয় স্বজনের আহ্লাদটা একটু বেশিই পায়। ফারহার ইচ্ছে করে না করে দিতে। কিন্তু ঘরভর্তি মানুষ। ফারিহা না করলে সবাই ফারহাকে ছোটো মনের ভাববে। মিতুল তো এত আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে যে ফারহার না করার উপায় থাকে না।

“আনছি আম্মু।”

ফারহা রুম থেকে জুতো জোড়া এনে দেয়। মিতুল না না করে না। খুশি মনে পরে ফেলে। মিতুলের এত ছুঁতমার্গ নেই। তুলতুলের সবকিছু মিতুল শেয়ার করে। ফারহার জিনিস ব্যবহারে তাই তার কোনো লজ্জা নেই। ফারহা একটু বিরক্ত হয়েছে তাও বুঝতে পারছে না। বরং খুশিই হয়। তার হিল জুতো পুরানো হয়ে গিয়েছে। এত সুন্দর শাড়ির সাথে মানাতো না। নতুন ফ্ল্যাট জুতোই তাই পরেছিল।।কিন্তু এখন সাদা পেন্সিল হিলের সাথে পিচ কালারের নেটের শাড়িটা কেমন ফুটেছে। বোনের সাথে পার্লার থেকে সেজে এসেছে। বৌয়ের সাথে বোনের সাজ ফ্রি ছিল। এই প্রথম পার্লারে সেজেছে। আয়নায় ঘুরেফিরে শুধু নিজেকে দেখতে মন চাইছে মিতুলের। বেশকিছু ছবিও তুলেছে ফারহার ফোনে। ফেসবুকে আপলোড করবে।

***

পার্টি হাউজ কনভেনশন হলের তিনতলায় তিনটি আলাদা ফ্লোরে বিয়ে, বৌভাতসহ নানা অনুষ্ঠান হয়। অনেকসময় দেখা যায় একই দিনে দুই তিন পক্ষের অনুষ্ঠান থাকে। কারও গেস্ট বেশি থাকলে একাধিক ফ্লোর ভাড়া নেয়। না হলে আলাদা ফ্লোরে আলাদা গ্রুপের অনুষ্ঠান হয়। আজ পার্টি হাউজে দুটো বিয়ের প্রোগ্রাম হচ্ছে। কাকতালীয় ভাবে অপরপক্ষও মিতুলদের আত্মীয় হয়। মিতুলের বাবার দূরসম্পর্কের বোনের মেয়ের বিয়ে আর তুলতুলের বিয়ে একই দিনে ঠিক হয়েছে। দূরের আত্মীয় বলে জানতে পেরেছে একদম শেষ সময়ে। কোনো পক্ষ আর বিয়ের তারিখ পাল্টায়নি। বরং দুপক্ষের কমন আত্মীয়রা খুশিই হয়েছিলেন। একই সাথে দুই পরিবারের বিয়ের আয়োজন দেখা হয়ে যাবে। তুলতুলের স্টেজ সাজানো হয়েছে তিনতলায়। নিচতলা আর দোতলা অপরপক্ষ ভাড়া নিয়েছেন। তুলতুলের খুব শখ ছিল লেহেঙ্গা পরার। এখনকার ট্রেন্ড অনুযায়ী হালকা রঙের লেহেঙ্গা আর ডায়মন্ড কাট গয়না। কিন্তু তুলতুলের শাশুড়ির এসব পোশাক পছন্দ না। তিনি বেগুনি রঙের বেনারসি পাঠিয়েছেন, তাতে সিলভার কালার নকশা। সাথে গোল্ডপ্লেটের গয়না। সোনার গয়না বরপক্ষ সাথে করে নিয়ে আসবেন। গোল্ডপ্লেটও ভালো মানের মনে হচ্ছে না। কেমন ক্যাটকাটে হলদে রঙের। সাথে মেয়েপক্ষের তরফ থেকে দেওয়া সোনার চোকার আর বালা পরেছে তুলতুল। রফিক সাহেব তিনভরির ভেতর কাজ সেরেছেন। চোকারে সোনার বদলে তাই পুঁতির পরিমাণ বেশি। তুলতুল বিরস মুখে বসে আছে। বেনারসিই যখন কিনবে, লাল কিনলো না কেন বোঝে না তুলতুল। কিন্তু এসব নিয়ে অভিযোগ জানালেও কার কাছে জানাবে? হবু বরের সাথে কথা বলারই সুযোগ হয়নি। দুই পরিবারের মুরুব্বিরা বরকনে পছন্দ করেছেন। হবু শ্বশুর শাশুড়ি এসে হাতে আঙটি পরিয়ে গিয়েছেন। বরের ছুটি নেই বলে সরাসরি কনে দেখতেও আসতে পারেনি। মায়ের পছন্দই তার পছন্দ মত দিয়ে বিয়ের জন্য হ্যাঁ করেছেন। একবারে বিয়ের দিন সরাসরি বৌ দেখবে। যদিও শাড়ি গয়নার কোনো মিল নেই। তবুও তুলতুলকে দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে। মিতুল মুগ্ধ হয়ে বোনকে দেখে। মনে মনে দোয়া করে, “হে আল্লাহ, আমার বোনটা ভীষণ লক্ষী। তুমি তার বিয়ের পরবর্তী জীবনটা খুব সুখের করে দিও। যেন বিয়ের আগের জীবনের কোনো হতাশা, না পাওয়া আমার বোনটার আর মনে না থাকে। আমিন।”

***
ফারহা খুব সুন্দর একটা লেহেঙ্গা পরেছে। মাথায় একটা ঘোমটা দিলে ফারিহাকেই বৌ বলে চালিয়ে দেওয়া যেত। ফারহা লোকাল পার্লারে সাজেনি। প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্টের কাছে ব্রাইডাল মেকআপ নিয়েছে। পরিবারের প্রথম বিয়ে। ফারিহা চায় তাকে এমন লাগুক, যেন বিয়েতে আগত সবার নজর তারদিকেই থাকে। লেহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে ডায়মন্ড কাটের চমৎকার গয়না পরেছে। ফারহা লম্বা, ফর্সা, সুন্দর। তারপরও চেহারায় কী যেন একটা নেই নেই। মিতুল দেখে আর ভাবে। হঠাৎ বুঝতে পারে ফারিহার চেহেরায় মায়া নেই। কী আশ্চর্য এই মায়ার জন্য মিস ম্যাচ পেশাক আর সাজেও তুলতুলকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। অথচ পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব ম্যাচ করে পরেও ফারহার মাঝে কী যেন নেই লাগছে।

তবে মিতুল ঠিক করে ফেলে বিয়ে ঠিক হলে তার প্রথম কাজ হবে বরের সাথে শপিং করা। বাজেটের দিকে না তাকিয়ে মনের মতো করে শপিং করবে। বাবার ভয়ে তখন ভীত থাকবে না। শাশুড়িরও না। একটাই তো জীবন, একবারই হবে বিয়ে। শখ অপূর্ণ থাকলে চলে?

(চলবে)

স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-৩৩ এবং শেষ পর্ব

0

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#অন্তিম_পর্ব

বছরের শেষ প্রায়,চারদিকে শীতের প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে।জনজীবনের মধ্যে শীত তার উষ্ণ শীতলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।সময়টা বেশ উপভোগ্য বলা চলে।

মাস খানেক পরেই মায়ার ডেলিভারির ডেট।শেষ সময় চলছে আর কয়েকদিন ধরেই মায়ার শরির ও ভালো যাচ্ছে না।সকালে ফিরোজ পুষ্প কে মায়ার কাছে দিয়ে গেছে।মূলত বোনের যত্ন নেওয়া আর বেবি হওয়া পর্যন্ত ও থাকবে সে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।তার ওপর এই সময়টা অফিসের অনেক চাপ তাই মেহরাব চাইলেও বাসায় সবসময় থাকতে পারছে না।পুষ্প আসাতে মেহরাবের অনেকটা স্বস্থি মেলে।তবুও ঘন্টায় ঘন্টায় কল করে ওর খবর নিয়ে থাকে।মায়ার শরির অনেক ভারি হয়ে গেছে।পায়ে পানি এসে ফুলে গেছে।মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে পেটে ব্যাথা হয়।সবমিলিয়ে সাহসি মায়া এখন কেমন ভীতু হয়ে গেছে।সারাক্ষণ দুঃচিন্তায় মগ্ন থাকে।যদিও মেহরাবের সামনে এসবের প্রকাশ করে না।কিন্তু মেহরাবের অনুপস্থিতিতে ও সারাক্ষণ এইটা সেইটা চিন্তা করে।

পরন্ত শেষ বিকেল..পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে বারান্দার চেয়ারে বসে আছে মায়া।মেহরাবের আসার অপেক্ষা করছে।এই মানুষটা সামনে থাকলে যেনো পৃথিবীর হাজারো চিন্তা ওর মাথা থেকে গায়েব হয়ে যায়।পেছনের কয়েক মাস মেহরাব শুধু ওর জন্য পাগলামী করে গেছে।নিজের হাতে ওর সবটা করেছে।বলতে গেলে বেশির ভাগ সময় খাবারটাও মেহরাব ওকে খাইয়ে দিছে।বাগানে নানা ধরনের ফুল ফুটে আছে মায়ার মন চাচ্ছে একটু নিচে গিয়ে গাছের ফুল গুলোকে ছুয়ে দিতে।কিন্তু সেটা সম্ভব নয় ওর এখন একদমই সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করা নিষেধ।কিছুক্ষণপরই মেহরাব কে গেট দিয়ে ডুকতে দেখে মায়ার অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে যায়।মনে অন্যরকম উৎফুল্ল বিরাজ করছে।ধীরে ধীরে চেয়ার ছেরে উঠে দাড়ায়।আস্তে ধীরে পা বাড়িয়ে রুমের মধ্যে আসে।মেহরাব রুমে ডুকেই কাঁধের ব্যাগ টি রেখে গলার টাই খুলতে লাগে।মায়া এসে ওকে ছুতে চাইলে মায়াকে থামতে বলে।কিন্তু মায়া ওর কথা শুনতে নারাজ।জড়িয়ে ধরে সোজা মেহরাবের বক্ষ মাঝে মায়ার মাথা রাখে।কি আর করার প্রিয়তমা স্ত্রী যে ওর কথা শুনবে না সেটা জানা সত্বেও বারন করে।

-আচ্ছা এ সব পাগলামী না করলে হয় না।বাইর থেকে আসছি শরিরে ঘাম জড়ানো গন্ধ লাগে না।ফ্রেশ হলে পরে না হয় কাছে আসতে।

-আপনাকে রোজ রোজ এই একটা কথা বলতে আমার বোর লাগে।
“আপনি তো জানেন এই ঘাম জড়ানো শার্টের গন্ধটা আমার কতোটা প্রিয়।আপনি দিনের যতোটুকু সময় আমার থেকে দূরে থাকেন সেই সময়টা আমি যতোটুকু একাকিত্ব বোধ করি দিন শেষে এই ঘামে ভেজা বুকে নিজের মাথা রাখলে সব দূরত্ব মন খারাব নিমিষেই ঘুচে যায় যে।”

মেহরাব ওর কথা গুলো শুনে বুক ভরা আনন্দের নিঃশ্বাস ছারে।দু হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখে মায়াকে।কাজের ব্যাস্ততায় বাইরে থাকলেও মনটা ওর মায়ার কাছেই পরে থাকে।এখন বউকে বুকের মাঝে পেয়ে শান্তি লাগছে।মায়াকে ছেরে দিয়ে ওকে খাটে বসায়।ও হাটু গেড়ে মায়ার সামনে বসে পরে।মায়া ওর একটা হাত নিয়ে পেটের ওপর রাখে

-দেখেন না কতো দুষ্ট বাবুরা ,আজ বেশি বেশি কিক মা’রছে।

মেহরাব সত্যি সত্যি সেটা টের পেয়েছে।অদ্ভুত এক অনুভুতি হচ্ছে ওর মধ্যে।মায়া এবার ওর পা দুটো দেখতে বলে

-দেখেন না কতো মোটা হয়ে গেছি পা দুটো ফুলে কেমন পাইপের মতো হয়ে গেছে।

মেহরাব ওর এমন কথা শুনে হেসে ফেলে।

-আরে শেষ সময় এমনটা হয় চিন্তার কিছু নেই ডাক্তার তো বলে দিলো।আর তোমায় কিন্তু এই ফোলা শরিরে বেশ গুলুমুলু লাগছে।
বলেই গাল দুটো টেনে দেয়।এরপরে মেহরাব মায়া কে ছেরে ও ফ্রেশ হতে যায়।আর মায়া কেমন হতাশ মনে বসে থাকে।

~~~~~

রাতের ডিনার শেষে মায়া রুমের মধ্যে একটু হাটাহাটি করে নেয়।ঘুমের সময় মেহরাব পুষ্প কে ডাকলে ও রুমে আসে।

-জ্বী ভাইয়া বলেন।

-পুষ্প তুমি তোমার বুবুর সাথে ঘুমাও।আমি আর ফিরোজ একসাথে ঘুমাবো।
বলে ও বের হয়ে যায়।পুষ্প আর কিছু বলে না।ও এসে মায়ার পাশে শুয়ে পরে।

আসলে মেহরাব মায়াকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না।তাই ঘুমের মধ্যে যদি জোরে ধরে বা এপাশ ওপাশ করার জন্য যদি মায়ার পেটে কোনো আঘাত লাগে?মূলত ঐ জন্যই মেহরাব পুষ্প কে এখানে ঘুমাতে বলে।মায়া নিষেধ করলেও মেহরাব শুনেনি।দু বোন আলাদা পাতলা কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরে।এদিকে কয়েক দিন ধরে ফিরোজ পুষ্প কে মিস করছে বলে আজ অফিস থেকেই সোজা এখানে চলে আসে।কই ভেবেছে বউকে কাছে পেয়েছে একটু আদর করবে।কিন্তু না কি হলো এটা।দুজন দু রুমে।
মেহরাব ঘুমিয়ে গেলেও ফিরোজের চোখে ঘুম নেই।বউয়ের একটু ভালোবাসার পরশ যে খুব করে ওর দরকার না হলে যে এই চোখে আজ আর ঘুম হবে না।খাট থেকে উঠে আস্তে করে নেমে নিঃশব্দে পা বাড়িয়ে মায়াদের রুমের সামনে আসে।বুকে ফু দিয়ে চাপানো দরজা ধীরে ধীরে খুলে রুমের ভিতর যায়।ড্রিম লাইটের আলোতে বেশ ভালোই সব কিছু বোঝা যাচ্ছে।কিন্তু কম্বল মুড়ো দেওয়াতে বুঝতে পারছে না কে কোনটা।ভালো করে দেখে অনুমান করে সামনে জনই পুষ্প।ফিস ফিস করে নাম ধরে ডাকতে থাকে।ওর ডাক শুনে মায়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আসলে ফিরোজের অনুমান ভুল ওটা মায়া ছিলো তাই মায়া ওকে বুঝানোর জন্য কেশে ওঠে।ফিরোজ বুঝতে পেরে দরজার বাইরে চলে আসে।মায়া বুঝতে পারে ফিরোজ আবার আসতে পারে তাই পুষ্প কে ডেকে ওর জায়গায় শুইয়ে দিয়ে ওপর পাশে মায়া শুয়ে পরে।কিছুক্ষণ পরে ফিরোজ আবার আসে।এবার ওপর পাশে গিয়ে পুষ্প কে ডাকতে থাকে।

আহারে বেচারা জানেই না ওরা জায়গা বদল করেছে।এবার মায়া পরছে একটা বিপদে।কথা বললেও ফিরোজ লজ্জায় পরবে তাই আবার ওকে বুঝানোর জন্য কেশে ওঠে।ফিরোজ এবার ও লজ্জায় বাইরে চলে আসে।ও চলে যেতেই মায়া উঠে বসে।মনে মনে ভাবে নাহ এদের দুজন কে আলাদা রাখা যাবে না।তাহলে আজ আর ঘুম হবে না।পুষ্প কে ডেকে তোলে মায়া,পুষ্প উঠে লাইট জ্বালায়।কেনো ডাকছে জানতে চাইলে মায়া বলে

-বোন তোর আর এখানে ঘুমানো লাগবে না।এক কাজ কর তোর ভাইয়া কে এখানে পাঠিয়ে দে ফিরোজ কে নিয়ে শুয়ে পর।ও বেচারা কয়দিন ধরে বউকে কাছে পাচ্ছে না।পুষ্প তো ঘুম ঘুম চোখে কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।বেশি কথা বাড়ায় না।”কি আর করার উঠে রুমে গিয়ে দেখে দুজনে ঘুম।মেহরাব কে ডেকে তুললে ও প্রথমে একটু ঘাবরে যায়।যখন শুনছে মায়া ওকে রুমে যেতে বলছে ও আর দেরি করে না।দ্রুত রুমে চলে যায়।
পুষ্প লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরতেই পেছন থেকে ফিরোজ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় ঘারে নাক ডুবিয়ে দেয়।

-আরেহ আপনি সজাগ?

-হুম তোমাকে ছাড়া একদমই ঘুম আসছিলো না।খুব মিস করছি এই কয়দিন।

-তাই বুঝি?

-হুম খুব খুব

এদিকে মেহরাব রুমে গিয়ে দেখে মায়া বসে আছে।

-কি ব্যাপার এতো রাতে ডেকে পাঠালে যে? কোনো সমস্যা?

-না আপনি শুয়ে পরুন আর আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমান কিছু হবে না আমার।
যদিও মেহরাব চেয়েছিলো মাঝখানে পাশ বালিস রাখতে কিন্তু মায়া দিতে দেয়নি।

~~~~

আজকাল মায়ার প্রেশার টা একটু বেশি হয়ে গেছে।এদিকে এক সপ্তাহ বাকি নেই ডেলিভারীর।ডাক্তার ওকে একদমই চিন্তা করতে বারন করে দিয়েছে।আর এমনটা হলে মা আর অনাগত বাচ্চাদের জীবনের ঝুঁকি আছে।বিশেষ করে নরমালে না হলেও সিজার করতে গেলে প্রেসার হাই থাকলে কোনো মতেই ডেলিভারী সম্ভব নয়।ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলে সে মেহরাব কে জানায় মায়া ওর টুইন বেবি নিয়ে বেশি চিন্তা করে।এটা সবার ক্ষেএে হয় না।দূর্বল মনের মানুষরা এ সময়ে একটু বেবি হওয়া নিয়ে বেশি হাইপার হয়ে যায়।যার ফলে প্রেশার হাই থাকে।
মায়ার শরিরের যে কন্ডিশন তাতে শীগ্রই সিজার করতে হবে।তাই ডাক্তার বলে দিয়েছে মেহরাব যেনো মায়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মন কে শান্ত করে।না হলে হিতে বিপরীত কিছু ঘটে যেতে পারে।
এসব কথা শুনে মেহরাব ই এখন চিন্তিত হয়ে পরে।নানান ধরনের খারাপ চিন্তা মনের মাঝে উকি দিচ্ছে।মেহরাব ডাক্তারের কথা মতো মায়াকে সব সময় বুঝাতে থাকে।কিন্তু ও যেনো কিছুই বুঝতে চায় না।এ সময় মেয়ের পাশে থাকার জন্য কাশেম মিয়া আয়মন ওরাও আসে।বাবা মাকে দেখে ওর মন একটু শান্ত হয়।

অনেক চেষ্টার পর মায়া একটু স্বাভাবিক হয়।তবে মায়া একটা সেকেন্ডের জন্যও মেহরাব কে ছাড়তে চায় না।যেনো এই মানুষটা চোখের আড়াল হলেই ওর শরির মন দুটোই দূর্বল হয়ে যায়।
পরেরদিন সকালে ওকে ক্লিনিকে নেওয়া হয়।ওটিতে নেওয়া হলে সাথে মেহরাব ও যায়।সিজারের পুরোটা সময় ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো মেহরাব।মায়া ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।কি হচ্ছে ওর সাথে সেটাই ও টের পায়নি।মেহরাবের চোখে মুখে ছিলো ভয়ের ছাপ।বউ আর বাচ্চাদের জন্য সারাক্ষণ মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করে গেছে।জীবনের প্রতিটি প্রিয় মানুষদের হারিয়ে ও নিঃস্ব প্রায়।এক মাএ মায়া কে নিয়েই ওর সবকিছু।আর এখন তো বাচ্চাদের নিয়ে।কারোর খারাপ কিছু না হোক তা না হলে ওর আর বাঁচার পথ থাকবে না।

অবশেষে এক ছেলে আর এক মেয়ের বাবা মা হয়েছে ওরা দুজন।মা আর বাচ্চারা সুস্থ্য আছে।ওটি থেকে কেবিনে শিফট করলে সর্বপ্রথম মেহরাবের কোলে দেওয়া হয় বাচ্চাদের।কাপা কাপা হাতে বেবিদের কোলে নেয়।ছোটো ছোটো চাওনিতে ওরা দুজন বাবাকে দেখতে থাকে।এমন মায়াবী ছোটো ছোটো মুখ দেখে মেহরাব শব্দ করে খুশিতে কান্না করে দেয়।একটা সময় আলতো করে দুজনের গোলাপী গালে চুমু খায়।এ জেনো অন্য রকম পরম শান্তি অনুভূত হলো মনের মাঝে।সবটা কেমন স্বপ্নের মতো।ও বাবা হয়েছে একটা সময় বাবা মা কে এক সাথে হারিয়েছিলো।উপর ওয়ালা ওকে দুটি সন্তান দিয়ে সেই বাবা মা ডাক দেওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে।

কয়েক দিন পরে…মীর ম্যানশন আজ হাসি খুশি শান্তিতে পরিপূর্ণ।মায়াকে বাসায় আনা হয়েছে।দুজন কে সামলাতে ও পারছে না।কেউ না কেউ ওর কাছে থাকছে।মেহরাব তো বাসা থেকেই বের হতে চায় না।মন চায় সারাক্ষণ ওদের পাশে বসে থাকতে।মায়া ওর পাগল বরটা পাগলামী গুলো দেখে আর মনে মনে হাসে।আসলেই অতিরিক্ত খুশিতেও মানুষ পাগলামী করে।
এভাবে কেটে যায় কয়েকটা মাস।বেবিরা একটু বড়ো হয়েছে।এখন মায়া দুজনকে সামলাতে শিখে গেছে।যদিও মেহরাব ওকে অনেক সাহায্য করে।বেচারা মেহরাব বউকে ঠিক ঠাক আদর ও করতে পারছে না।রাতে একান্ত সময় গুলো কাটাতে পারে না।যখনই বউকে নিয়ে একটু রোমান্স করতে যায় তখনই এক জন না একজন ঘুম থেকে উঠে কান্না জুড়ে দেয়।এদিকে একজনের কান্না শুনলে আরেক জন ওঠে পরে।কি আর করার অসহায় ফেস করে দুজনেই বাচ্চা সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে যায়।

~~~~

শীতের রাত তারওপর ভরা জোস্না।সবমিলিয়ে আজকের রাতটা অন্যরকম সুন্দর।
বাচ্চাদের ঘুম পারাতে অনেকটা সময় লেগে গেছে মায়ার।আজ মেহরাব মায়ার জন্য একটা কালো জর্জেট শাড়ি এনেছে।অনেকদিন শাড়ি পরা হয় না,আজ ও মেহরাবের আনা শাড়ি পরে অনেক সাজুগুজু করে।অনেকদিন বরটাকে সেজে গুজে দেখানো হয় না।জর্জেট শাড়িতে মোটা বেশি বুঝা যাচ্ছে।মায়া আফসোস করে আগেই কতো স্লিম ছিলো আর এখন টমেটো হয়ে গেছে।কি আর করার বরের নাকি এখনই বেশি ভালো লাগে।সাজ শেষ হতেই মেহরাব রুমে আসে।মায়াকে একনজর দেখেই হা করে তাকিয়ে থাকে।আজ তো মায়ার এই হট লুকে ওর প্রাণ যায় যায়।
মায়াকে নিয়ে রুমের বাইরে এসে দরজা চাপিয়ে দিয়ে মায়াকে কোলে তুলে নেয়।সবসময়ের ন্যায় মায়া ওর গলা জড়িয়ে ধরে।ধীরে ধীরে ছাদের দিকে পা বাড়ায় মেহরাব।

ছাদে গিয়ে মায়াকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।মায়া ছাদের রেলিংয়ের পাশে যায়।চারপাশ টা দেখতে লাগে।সত্যি কি অসাধারন এই জোস্না রাতের রূপ।মেহরাব এগিয়ে গিয়ে মায়ার খোপাটা খুলে ফেলে।লম্বা স্বর্ণকেশ গুলোতে নাক ডুবিয়ে দেয়।নেশালো কন্ঠে বলতে থাকে

-জানো মায়া প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন প্রথমে তোমার মুখ পরে তোমার এই দীঘল সোনালী কেশ গুলোর প্রেমে পরেছিলাম।সেদিনের পর থেকে আমার প্রতিটি সেকেন্ড তোমাকে ভেবে কেটেছে।এই আমি কতো সুন্দরী মেয়েদের প্রপোজ পেয়েছিলাম কিন্তু কোনো দিন কারোর মোহে নিজেকে জড়াতে পারিনি।কিন্তু তুমি সেটা পেরেছো।যখন তোমার বিয়ের কথা শুনি আমি পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলাম ।তোমার বাবার মান সম্মান এর কথা ভেবে আমি কিছু করিনি না হলে চিন্তা করেছিলাম তুলে নিয়ে আসবো।কিন্তু দেখো ভাগ্যের কি খেলা সেই তোমার বিয়ের অতিথি হয়েই আমি গিয়েছিলাম।আর অতিথি হয়ে যেয়ে বিয়ে টা আমাকেই করতে হয়েছে।এ টুকু বলেই মেহরাব থামে।

এ সব শুনে মায়া তো থ হয়ে যায়।মেহরাব আবার বলতে থাকে”যদি আমি তোমাকে আমার জীবনে না পেতাম তা হলে মনে হয় পাগলই হয়ে যেতাম।কথাটা বলেই ওর গলা ধরে আসে।মায়া এবার ওর দিকে তাকায় মেহরাবের দিকে চেয়ে বরাবরের মতো উঁচু হয়ে ওর কপালে অধর ছোয়ায় আর বলে

“আমি তো আপনারই তাই তো বিধাতা আপনার সাথে আমাকে মিলিয়ে দিয়েছে।আমি আপনাকে পেয়ে সার্থক।”

এই আলোতেও দুজন দুজনের চোখের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে।একটা সময় মেহরাব ওর অধরে অধর ছোয়ায়।পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় মায়া।অধর ছেড়ে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।যেনো ছেরে দিলেই মায়া হারিয়ে যাবে।
এবার মায়া বলে

“আপনি জানেন?এই বুকটা হলো আমার জন্য সবচাইতে নিরাপদ জায়গা।আমার মনে যতো চিন্তা আর শরিরের যতো ক্লান্তি থাকুক না কেনো এই প্রশস্থ বুকে নিজেকে রাখতে পারলেই পরম শান্তি অনুভূত হয়।”

মেহরাবের গালে হাত বুলাতে থাকে মায়া।

“আপনি জানেন এই যে খোঁচা খোঁচা চাপ দাড়িতে আপনাকে অনেক কিউট লাগে।এক দম খেয়ে ফেলতে মন চায়”

মুচকি হেসে মেহরাব উওর দেয়

-তাই বুঝি?

-হুম”

-তা হলে চলো।

-কোথায়?

-বারে আমাকে খাওয়ার জন্য তোমাকে সুযোগ করে দিতে হবে না?

ওর কথা শুনে মায়া ওর বুকে আলতো করে কিল দেয়।

-আচ্ছা আজ একটা সত্যি কথার উওর দিবেন?

-কি বলো দেওয়ার মতো হলে দিবো

-রিমন ভাই আর রমজানের খারাপ অবস্থার জন্য কি আপনার কোনো প্রকার হাত আছে?

এতোদিন বাদে এ সব কথা শুনে মেহরাব চমকে ওঠে।মনে মনে একটু ঘাবরে গেলেও বাইরে প্রকাশ করে না।

-আরেহ কি সব বলছো।এতো সুন্দর মোমেন্টে কি সব বলছো।

-উওর পাইনি কিন্তু

-মায়া আমি এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।তবে শুনে রাখো আমার কলিজার যে হাত দেওয়ার চেষ্টা করবে তার হাত নয় তার জানটা কেরে নিতে আমি দ্বিধা বোধ করবো না।

ওর কথা শুনে মায়া যা বুঝার বুঝে গেছে।আর কথা বাড়ায় না।মেহরাবের মাইন্ড স্বাভাবিক করার জন্য আবার ওকে জড়িয়ে ধরে।মেহরাব ওর মাথা বুকের ওপর শক্ত করে চেপে ধরে।এক হাত মায়ার কোমরের ফাকে স্পর্শ করে।মায়া কেপে ওঠে।ফর্সা কোমরের খালি অংশ দৃশ্যমান।মেহরাবের মাথা নষ্ট হবার উপক্রম।
মেহরাব বলে ওঠে

-চলো রুমে যাই

-থাকি না আরো কিছুক্ষণ অনেকদিন হলো এমন জোস্নাবিলাস করি না।

কি আর করার মহারাণীর হুকুম তো পালন করতে হবে।
মেহরাব ওকে নিয়ে ছাদের একটি বসার জায়গায় বসে।ওর কোলের ওপর মায়াকে বসিয়ে দেয়।পেছন থেকে ওর বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।মায়া ওর হাতের পিঠে চুমু খায়।মেহরাব একটু নিচু হয়ে ওর গালের সাথে গাল ঘসে আর বলে

“আমি ধন্য এই ছোট্ট জীবনে আমার মায়াবিনীকে পেয়ে।সারাজীবন আমি আমার স্বর্ণকেশী মায়াবিনীকে এভাবেই বুকের মাঝে আকড়ে ধরে রাখবো।কখনও কোনো প্রকার কষ্ট পেতে দিবো না জান প্রমিজ করছি।তুমি আমার অপূর্ণ জীবনটাকে সবকিছু দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিয়েছো।“

(সমাপ্ত)

(লেখার ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)