অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২

0
3070
obelay valobashar
obelay valobasha

অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-২

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

ভোর পাঁচটা বাজার আগেই চুহেসের ঘুম ভেংগে যায় ঘড়িতে তখন চারটা চল্লিশ বাজে, চুহেস নিজেই ভেবে পাচ্ছে না এতো ভোরে তার ঘুম ভাংলো কি করে
কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করে ও লাভ হয়নি ঘুম তার এলো না চারিদিকে ফজরের আজান শুরু হলো
আসতে আসতে হালকা ভোরের আভা দেখা দিলো
চুহেস বিছানা ছেড়ে উঠলো

-যাই হেটে আসি অনেক দিন ভোরের আলো বাতাস স্পর্শ করেনি আমার শরির আজ করবে, আর সেটা যদি গ্রামে স্বচ্ছ আলো বাতাস হয় তা হলে তো আর কথা ই নেই

বেরিয়ে পড়লো চুহেস ভাবনাহীন ভাবে চলতে শুরু করলো অনেক দিন পর এ ভাবে হাটছে ভালো লাগছে এখনো পুরোপুরি অন্ধকার কাটেনি

কিছুক্ষন উদ্দেশ্য হীন ভাবে হেটে থেমে গেলো তার পর ই মনে হলো কদমতলী দিঘীর কথা সাথে সাথে চুহেস ছোট বেলায় হারিয়ে গেলো, কতো যে কেঁদেছে একা একা ঐ দিঘীর পাড়ে বসে
এখন ও মনে পড়ে সব দুঃখের সাথি ঐ দিঘী ভাবনা ছেড়ে বাস্তবে ফিরে এসে হাটা ধরলো পথ ঘাট সব কেমন অপরিচিত হয়ে গেছে

পনেরো বছরে অনেক কিছুই পালটে গেছে এখন গ্রাম গুলো গ্রামের জায়গায় নেই শহরে পরিণত হয়েছে তবু ও ভালো লাগছে হয়তো জন্মভূমি বলেই এতো ভালো লাগা

কিন্তু কিছুতেই কদমতলী দিঘী টা খুজে পাচ্ছে না চুহেস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাস করে নিবে এই ভেবে,
পূর্ব আকাশ লাল হয়ে উঠেছে হয়তো কিছুক্ষন পরেই সূর্য উঠবে কিন্তু মানুষজন মনে হয় এখন ও ঘুম থেকে উঠেনি

ঘড়িতে কাটায় সাতটা বেজে গেলো কিন্তু এখনো কাউকে দেখলাম না

চুহেস- এবার কি সত্যি ফিরে যেতে হবে
না আমার শৈশবের প্রিয়ো জায়গা টা এক নজর না দেখে কিছুতেই যাবো না

এমন সময় কারো হাসিতে চুহেস চমকে উঠলো, দুটো মেয়ে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে

চুহেস মনস্থির করে নিলো এদের কেই জিজ্ঞাস করবে
দিঘী টার কথা
আসতে আসতে মেয়ে দুটো আর ও কাছে চলে এলো

চুহেস- এক্সকিউজমি কদমতলী দিঘী টা কোন দিকে একটু বলবেন

মেয়ে দুটো দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন চুহেসের দিকে তাকিয়ে থেকে বল্লো আপনি কি এই গ্রামে নতুন

চুহেস কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো
– হুম বলতে পারেন নতুন

মেয়ে দুটো বল্লো আসুন আমাদের সাথে

প্রায় আধ ঘন্টা হাটার পর মেয়ে দুটো বল্লো এই জায়গার নাম ই কদমতলী দিঘী

চুহেস- ধন্যবাদ, মনে হয় আর একটু ওদিকে গেলেই দিঘী টা পাবো তাই না

মেয়ে দুটো বিস্ময় চোখে চুহেসের দিকে তাকিয়ে বল্লো আপনি মনে হয় কিছুই জানেন না ঐ দিঘী টা অনেক দিন আগে বালি দিয়ে পুরিয়ে ফেলেছে এখন সেখানে বিরাট এক কন্সটাকশনের কাজ চলছে একটু ওদিকে গেলেও দেখতে পাবেন,

চুহেস- ধন্যবাদ আপনাদের কে
মেয়ে দুটো চলে গেলো

চুহেস মনে খুব আঘাত ফেলো ছোট বেলার স্মৃতি টা এই ভাবে মুছে যাওয়াতে, কিন্তু ঐ দিঘীতে তো আমাদের ৫%অংশ ছিলো তা হলে জেঠু কি আমাদের অংশ বিক্রি করে দিয়েছে

আর ভাবতে পারলো না ফিরে এলো রেস্ট হাউজে, তখন সকাল দশটা বেজে গেছে প্রায়

চুহেস কে দেখে নিহার এসে বল্লো স্যার এতো ভোরে কোথায় গিয়েছিলেন কতো খুঁজেছি চলুন নাস্তা করবেন

চুহেস- হুম তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
চুহেস ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা খেতে বসলো

নিহার-স্যার মিঃ প্লাতিনি ফোন করেছিলো, উনি আমাদের কম্পানির সাথে ডিল টা করতে চায়

চুহেস- কোন টা
নিহার- ঐ যে ডিজাইনের ব্যাপার টা, যেটা আপনি না করে দিয়েছিলেন,এখন তিনি আপনি যেমন টা বলেছিলেন তেমন ডিজাইন দিবে বলেছে

চুহেস- তুমি বলোনি আমি এখন ঢাকার বাইরে

নিহার- বলেছি, মিঃ প্লাতিনি নিজেই আসতে পারবে না উনি চিন গিয়েছে, ডিলটা করতে আসবে উনার ম্যানেজার, লোকেশন বললে ম্যানেজার সরাসরি চলে আসবে

চুহেস- ঠিক আছে আসতে বলো

নিহার- মিটিং টা কি এখানে হবে নাকি বাইরে কোথা ও

চুহেস- বাইরে কোন একটা কফি শপে হলে ভালো হয়,এখনকার সব কিছুর সাথে পরিচিত হওয়া যাবে

নিহার- ওকে স্যার তাই হবে

নাস্তা শেষে চুহেস রুমে ফিরে এলো উদ্দেশ্য একটু ঘুমিয়ে নিবে, শুধু শুধু গেলাম
শৈশব এর প্রিয় জায়গা টা তো ফেলাম ই না উলটো মনের কোনে কষ্টটা বেড়েছে, এই ভেবে যে আমার সব কিছু কেনো এতো তাড়া তাড়ি পরিবর্তন হয়ে যায়,কেনো কোন কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করে না
চুহেসের ভাবনায় ছেদ পড়লো দরজা নক হওয়াতে

চুহেস- এসো, ছোট্ট করে কথা টা বল্লো
নিহার- স্যার কি কিছু ভাবছেন
চুহেস- না, তুমি কিছু বলবে?
নিহার- হুম
চুহেস- বলো
নিহার- মিঃ প্লাতিনির ম্যানেজার আজ সন্ধায় মিটিং টা করতে চায়,, উনারা রওনা হয়েছেন
চুহেস- ঠিক আছে সময় মতো সব রেডী করে নিও,
নিহার- ওকে স্যার

সন্ধ্যা হওয়ার আগেই চুহেস আর নিহার কফিশপে বসে অপেক্ষা করছে, কাজের বেলায় চুহেস কোন গাফিলতি করে না, কোন কাজে দেরী করা,অনিয়ম প্রশ্নেই আসে না, মিঃ প্লাতিনির ম্যানেজার আসার ১৫ মিনিট আগেই চুহেস গিয়ে বসে আছে, ফাইল গুলো নতুন করে দেখে নিচ্ছে

ঘড়ি দেখে চুহেস বল্লো নিহার মিঃ প্লাতিনির ম্যানেজার এর নাম কি
নিহার- আদনান স্যার

চুহেস- মিঃ আদনান এখনো আসছে না কেনো ১০ মিনিট লেইট

নিহার- স্যার মনে হয় জ্যামে পড়েছে,এক্ষুনি এসে পড়বে হয়তো

মিঃ আদনান যখন কফিশপে এসেছে তখন অলরেডি ৩০ মিনিট লেইট
নিহার গেছে আদনান কে নিয়ে আসতে

নিহার- মিঃ আদনান আপনার এতো লেইট হলো কেনো স্যার কিন্তু খুব রেগে আছে,আমাদের চুহেস স্যার টাইমের ব্যাপারে খুব কড়া

আদনান- হুম বুঝতে পারছি বুঝেন ই তো ঢাকা থেকে আসা তো কোন মুখের কথা নয় রাস্তায় অনেক ঝামেলা থাকে

নিহার আদনান কে নিয়ে চুহেসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো

যদি ও চুহেসের রাগে আগুন হয়ে থাকার কথা কিন্তু কেনো জানি রাগ তার আসছে না

এদিকে আদনাম ভাবছে এমা কি বলে আমার বয়সের একটা ছেলে মেহেরা ফ্যাশন শো এর বস এটা ও মানতে হবে কিন্তু এই বস কে কোথায় যেন দেখেছি মনে হচ্ছে

চুহেস- মিঃ আদনান চলুন কাজের কথা বলি
চুহেসের কথায় আদনান বাস্তবে ফিরে এলো জ্বী স্যার বলুন,

চুহেস সব ফর্মালিটি শেষ করে ডিলটা সাইন করলো

সব কাজ চুকাতে রাত ১১ টা বেজে গেছে
চুহেস- মিঃ আদনান এ রাতে তো আপনি ঢাকায় ফিরতে পারবেন না

আদনান- জ্বী স্যার, আমি ঢাকাতে ফিরছি না আজ, এখানে ই আমার গ্রামের বাড়ি আজ রাত টা সবার সাথেই থাকবো ভাবছি আমার বোন তো শুনেই পাগলের মতো ছুটে এসেছে

চুহেস- ওহ আচ্ছা, এই বলে চুহেস কফিশপ থেকে বের হয়ে আসছিলো এমন সময় কারো সাথে যেন ধাক্কা খেলো, ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে

চুহেস খুব অভাক ই হলো এতো রাতে একা একটা মেয়েকে কফিশপে দেখে

মেয়েটি চুহেসের ভাবনা ভেংগে দিয়ে বল্লো আরেহ আপনি ও তো সে যাকে সকালে আমি দিঘীর পাড়ে নিয়ে এসেছিলাম

এতোক্ষনে চুহেস খেয়াল করলো এই মেয়েটি সকালের দুটি মেয়ের মধ্যে একটি

চুহেস- হুম মনে পড়েছে, তা এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন
মেয়েটি আমার ভাইয়া এখানে এসেছে, তার কাছে এসেছি

চুহেস- ও আচ্ছা, এই বলে বেরিয়ে গেলো কফিশপ থেকে

to be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে