অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৭
লেখা –সুলতানা ইতি
ভীতু বলছো কেনো নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিজে নিয়ে যাবো তা ও আবার দুজন মুরুব্বীর কাছে একজন হলে ভিন্ন ছিলো
গাইথি- হইছে হইছে আর সাফাই গাইতে হবে না
চুহেস- ঠিক আছে গাইলাম না, চলো,পাড়ে যাই,তুমি মূল ভবন দেখতে ছেয়েছে, সেটা না দেখিয়ে পারি
গাইথি- হুম চলো, দুজনে বাড়ির বিতর টা দেখতে আসে,
গাইথি – ঘরের সব আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে এগুলা সব আগের যুগের রাজাদের, যেমন মিউজিয়াম এ দেখেছিলাম
চুহেস- হুম ঠিক ধরেছো,এই পুরো ঘরে যে সব আসবাবপত্র আছে সব আধুনিক জিনিষের থেকে তিন গুন বেশি দাম দিয়ে কেনা
গাইথি- এতো দাম দিয়ে কেনার কি দরকার ছিলো, এর থেকে লেটেস্ট মডেলের গুলো অনেক ভালো
চুহেস- তোমার পছন্দ হয়নি তাই তো,ঠিক আছে চেঞ্জ করে দিবো
গাইথি- আমি কখন বললাম আমার পছন্দ হয়নি,খুব পছন্দ হয়েছে,
আচ্ছা আপনি যে বললেন এই বাড়ির নামের অর্থ টা করতে সেটা কি?
চুহেস- আমি তোমাকে বলেছি, তুমি বের করো
গাইথি- নাহ আমি পারবো না আপনি বলেন
চুহেস- নেইজিনের নীড়, মানে” আদি নিবাস”
গাইথি- খুব ই সুন্দর একটা অর্থ
গাইথি কে থামিয়ে দিয়ে চুহেস বল্লো – আমি কি ভাবছিলাম বলো তো
গাইথি- আমি তো মাইন্ড রিডিং করতে জানি না,আপনি বলুন আপনি কি ভাবছেন
চুহেস একটা দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে, আমাদের যখন সন্তান হবে তখন একটা ছেলে একটা মেয়ে হবে,আমি ছেলের নাম রাখবো’ আদি’ মেয়ের নাম রাখবো ‘নীড়’
গাইথি তো চুহেসের কথা শুনে লজ্জায় মুখ লাল করে ফেল্লো
চুহেস- লজ্জা ফেয়োনাতো,আমরা আমরাই তো,এখন বলো নাম দুটো কেমন
গাইথি মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে বল্লো – অদ্ভুত শুনতে হলে ও ভালো লাগলো আমার কাছে,কিন্তু যদি আমাদের দুটো ই মেয়ে হয়,কিংবা দুটো ই ছেলে তখন কি হবে
চুহেস- তাই তো,এমন টা তো আমি ভেবে দেখিনি, আচ্ছা পরে ভেবে দেখবো,তুমি ও কিন্তু এই ভাবনার জন্য আমাকে সাহায্য করবে কেমন
গাইথি সে দিকে কান না দিয়ে বল্লো,ঐরুম টা বন্ধ কেনো
চুহেস- ওটা একটা স্পেশাল রুম,শুধু স্পেশাল দিনেই খুলবো বলে বন্ধ করে রেখেছি
গাইথি- আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে
চুহেস- চলো চলো আর দেখতে হবে না
গাইথি- না আমি ঐ রুম টা না দেখে যাবো ই না
চুহেস- যাবে না?
গাইথি- না
চুহেস- ওকে ঠিক আছে শুনো ওটা আমাদের বাসর ঘর, মানে ঐ রুমে আমরা আমাদের স্পেশাল রাত টা কাটাবো,
গাইথি লজ্জা পেয়ে বল্লো
কি যে বলেন আপনার মুখে কিছুই আটকায় না
চুহেস- আমার কি দোষ তুমি তো দেখতে চেয়েছিলে,আমি তো শুনালাম মাত্র,শুনে এই অবস্থা,দেখলে তো উপায় নেই
গাইথি কথা ঘুরানোর জন্য বল্লো
– চলুন ফেরা যাক
গাইথি আর চুহেস মিলে গাড়িতে উঠলো
চুহেস সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বল্লো তুমি কি এমন ই থাকবে
গাইথি- কেমন
চুহেস- এই যে আপনি আপনি ছাড়া কথা ই বলছো না
গাইথি চুহেস কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
আপনি কি বলতে চাইছেন,তুমি করে না বললে বুঝি ভালোবাসা প্রকাশ পায় না,
তবে আমি আপনাকে বলছি ভালোবাসা তুমি আপনিতে নয়,ভালোবাসা সেখান থেকে ই হয় যেখানে সম্মান শ্রদ্ধা থাকে,সম্মান শ্রদ্ধা ছাড়া ছাড়া ভালোবাসা গুলো খুব অল্প সময়ে হারিয়ে যায়
চুহেস মুগ্ধ হয়ে গাইথির কথা গুলো শুনছিলো
তার পর কিছুক্ষন চুপ থেকে বল্লো
– ম্যাডাম আপনি যদি পড়া শুনা করে অধ্যাপক হোন তা হলে খুব ভালো মানাবে
গাইথি- থাক পাম্প দিতে হবে না
#
আয়েশা বেগম বাসায় এসেই সোপায় বসে পড়ে, মুখে তার কোন কথা নেই
জেরীন এসে আয়েশা বেগমের পাশে বসলো, জিজ্ঞাস করলো
– মা তুমি কোথায় গিয়েছিলে আর এমন করে বসে আছো কেনো
আয়েশা বেগম- সামুম কোথায়
জেরীন- রুমেই আছে
আয়েশা বেগম- ডাক ওকে
জেরীন- তোমাকে দেখে মনে হয় কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না, কি হয়েছে মা বলো আমাকে
আয়েশা বেগম- সাইমুম কে ডাক বলছি,
জেরীন উঠে গিয়ে সাইমুম কে ডেকে আনলো
সাইমুম মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে,
সাইমুম- কিছু বলবে আম্মু, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো
আয়েশা বেগম কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো হয়তো সব কথা গুছিয়ে নিচ্ছিলো
তার পর বল্লো
আদনান আমাকে ফোন করে যেতে বলেছে,ওখান থেকে আসলাম
সাইমুম- খুশি হয়ে বলে নিশ্চয়ই বিয়ের ডেইট ফাইনাল করেছো তাই না
আয়েশা বেগম- নাহ
সাইমুম – তা হলে
আয়েশা বেগম- আমি জানি গাইথির উপর তুই দূর্বল হয়ে পড়েছিস, কিন্তু সত্য এটা ই যে হয়তো গাইথি তোর ভাগ্যে নেই
সাইমুম মাকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– নেই মানে কি বলছো মা
আয়েশা বেগম- হুম আদনান আমাকে যেতে বলে, আর তার পর তারা আমাকে বলে মূলত গাইথি এই বিয়েতে রাজি নয়, তারা জানিয়ে দিয়েছে তাদের বোনের অমতে তারা কিছু করতে পারবে না
সাইমুম- মানেহ,বললেই হলো,এই বিয়ে সে মেনে নিতে পারবে না, এক বছর আগে আমাদের এংগেজমেন্ট হয়,তখন কিছু বলেনি,মাঝখানে এতো গুলো দিন গেলো তবু ও বলেনি,এখন হঠ্যাৎ করে বল্লো বিয়ে সে করবে না,তা হলে এতো আয়োজন কেনো ,
ঐ ফ্যামেলী আমাকে এই ভাবে ঠকাতে পারে না, আমি গাইথির সাথে কথা বলবো আমি এখনি ফোন করবো
আয়েশা বেগম- তুই তোর মতো করে চেষ্টা করে দেখতে পারিস কিন্তু আমার মনে হয় এতে কোন লাব হবে না
সাইমুম বিষন্ন মন নিয়ে উঠে যায়
জেরীন নিরব দর্শকের মতো কথা গুলো শুনছিলো সাইমুম চলে যাওয়ার পর এবার সে কথা বল্লো
– আম্মু মেহেরা পরিবার আমাদের সাথে সিটিং করেছে, এতো ধড়িবাজ ঐ ফ্যামেলি,দেখে বুঝা যায় না,ভদ্র মানুষের মুখোশ পরে আছে
আয়েশা বেগম- এমন করে বলছিস কেনো এখানে উনাদের কি দোষ, আজ কালকার মেয়েদের বুঝে উঠাই কষ্টকর
মায়ের কথা শুনে জেরীন চলে যায় সাইমুমের রুমে
*
চুহেস- গাইথি তুমি কি আমাদের বাসায় যাবে নাকি, তোমাদের বাসায় নেমে যাবে
গাইথি- বাসায় যাবো, বাবা ভাইয়া চিন্তা করবে,
গাইথি তাদের বাসার সামনে নেমে যায়
গাইথি- আপনি বিতরে আসুন
চুহেস- না বিতরে যাবো না এখন, তুমি যাও
গাইথি চুহেস কে বাই বলে বাসার বিতরে চলে যায়
কলিংবেল বাজাতেই ঐশী দরজা খুলে দেয়
ঐশী গাইথিকে দেখেই কৌতক করে বলে
– বাহ আজ সারাদিন তো বেশ কেটেছে একেবারে কাক ডাকা ভোরে বের হয়ে রাত আট টায় ফেরা,তা ননদী আজ সারাদিন কি কি কথা হলো উনার সাথে
গাইথি কৃতিম রাগ দেখিয়ে বল্লো
– ভাবি আগে তো বাসার বিতরে ডুকতে দিবে তাই না
ঐশী- ওহ তাই তো, আসুন আসুন মিসেস চুহেস মেহেরা,
গাইথি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়
ঐশী ও পিছন পিছন যায়,
– আরেহ ননদী আসল কথা ই তো বলা হয়নি
গাইথি- না ভাবি তুমি আর একটি কথা ও বলবে না
ঐশী- ঠিক আছে আমি মিসেস চুহেস মেহেরাকে কিছু বলবো না কিন্তু মিশমির ফুফু আম্মা কে একটা সুখবর দিতেই পারি,
এই খবর টা হলো মিশমির ফুফা চেঞ্জ হয়েছে,আগের টা ক্যান্সেল করে, নতুন জন কে স্বাগত জানিয়েছে,মিশমির আব্বু,মিশমির দাদা ভাই
গাইথি অবাক হয়ে বল্লো,
-ভাবি সত্যি বলছো, এই বলে ঐশীকে ঝড়িয়ে ধরলো
ঐশী – আরেহ আরেহ আমাকে কেনো,উনি তো এখানে নেই ডাকবো নাকি তাকে
গাইথি ঐশী কে ছেড়ে দিয়ে বল্লো তোমার মুখে কিছুই আটকায় না ভাবি, যাও তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই
ঐশী হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় গাইথির রুম থেকে
চুহেস বাসায় এসে দেখে নিহার টিভি দেখছে, চুহেস কে দেখে নিহার উঠে যায়
চুহেস- উঠতে হবে না,তুমি দেখো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
চুহেস ফ্রেশ হয়ে এসে নিহারের পাশে বসে
নিহার চুহেসের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– স্যার একটা কথা বলবো
চুহেস- বলো
নিহার- আজ আপনাকে খুব ফ্রেশ দেখাচ্ছে
চুহেস মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, যে কাজ টা দিয়েছি সেটা হয়েছে,
নিহার মুচকি একটা হাসি দিয়ে বল্লো,
– শুধু হয়েছে বললে ভুল হবে, একদম দিন তারিখ সব পাকা করে এলাম
চুহেস- কি বলছো, তুমি তো দেখছি এদিকে দিয়ে একেবারে ফাস্ট
নিহার উচ্চাস ভরা কন্ঠে বল্লো,ফাস্ট হবোনা এই প্রথম আপনার জীবনে আনন্দের একটা মুহুর্ত আসতে চলছে, আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে সে কাজে দেরী করা কি আমার উচিত
চুহেস- তুমি শুধু আমার শুভাকাঙ্ক্ষী নও, আমার ভাই বটে,ব্যাপার টা আমি অনেকক দিন আগে ই ফিল করছি, কিন্তু বলতে দেরী হয়েছে
নিহার- তাতে কি স্যার, আমি অনেক আগেই আপনার স্নেহ মমতা বুঝে নিয়েছি
এখন সব ছেয়ে খুশির খবর টা হলো,আগামি ৭-৪-১৯, আপনার এংগেজমেন্ট,
দিন টা আমি ঠিক করিনি, আদনান ভাই নিজেই ই ঠিক করেছে
চুহেস নিহারকে ঝড়িয়ে ধরে বল্লো,তুমি একদম আমার বড় ভাইয়ের মতো কাজ করেছো নিহার
নিহার ও চুহেস কে ঝড়িয়ে ধরে বলে,
আপনার ছন্নছাড়া জীবন টা আমি দেখতে পারছিলাম না আর,স্যার
চুহেস- আর স্যারর নয় ভাইয়া বলো
নিহার- বলবো একটা শর্ত আমি আপনার ছোট আমাকে তুই করে বলতে হবে,অফিসের ব্যাপার টা ভিন্ন, তার বাইরে ছোট ভাইয়ের চোখে দেখলে আমি খুশি হবো
এমন সময় চুহেসের মোবাইলে কল আসে
নিহার মুচকি হাসি দিয়ে বল্লো,
ভাবি ফোন দিয়েছে হয়তো কথা বলুন, আমি আসছি
চুহেস কল রিসিভ করে
– বাবুই বলো
গাইথি- আপনি ঠিক ভাবে বাসায় উঠেছেন তো
চুহেস- হুম,তুমি নিশ্চয়ই শুধু এই কথা বলতে ফোন করোনি
গাইথি- হুম, ঠিক বলেছেন,সাইমুম ফোন করেছে,সে আমার সাথে দেখা করতে চায়,বলতে বলতে গাইথি কেদে দেয়
চুহেস- সাইমুম দেখা করতেই চাইবে,তাই বলে তুমি কাদছো কেনো
গাইথি কাঁদতে কাঁদত ই বলে
– ও আমার সাথে বাইরে কোথায় ও দেখা করতে চায়,
চুহেস- ঠিক আছেন আমি যাবো কাল তোমার সাথে, তুমি প্লিজ কেদো না
to be continue