নষ্ট গলি পর্ব-১২
লেখা-মিম
-” অাপনি কি সত্যিই পুরুষ মানুষ? ”
-” কেনো? কোনো সন্দেহ অাছে?”
-” পুরুষ মানুষ এত ভালো হয় জানতাম না।”
-” তোমার কি ধারনা এসব অামি তোমার জন্য করছি?”
-” তাহলে?”
-” যা করছি নিজের জন্য করছি। নিজের মানসিক শান্তির জন্য করছি। এখানে তোমার যতটুকু না স্বার্থ অাছে তার চেয়ে বেশি অামার স্বার্থ অাছে। মনের শান্তি খুব বড় জিনিস মায়া। অামার সব থেকেও কিছুই ছিলো না। কেনো ছিলো না জানো? মনের শান্তি ছিলো না। এখন অামি শান্তি পাই। প্রচন্ড রকমের শান্তি। ”
-” শুধুমাত্র শান্তির অাশায় অামার জন্য এতকিছু করছেন”
-” মনের খোড়াকের যে কত মূল্য তা হয়তো তোমার জানা নেই মায়া।”
সোহানের ফোন বাজছে। স্ক্রিনে অালিশার নাম ভেসে উঠছে। আলিশা হচ্ছে সোহানের প্রথম প্রেমিকা। ফোনটা রিসিভ করছেনা সোহান। অালিশার নামটা দেখেই ফোনটা সাইলেন্ট করে ফেলে রেখেছে সোহান। প্রথমবার কেটে যাওয়ার পর অাবার ফোন করছে অালিশা।
-” ফোনটা রিসিভ করছেন না যে?”
-” ওর সাথে কথা বলার মুডে অামি একদমই নেই।”
-” কে উনি?”
-” অালিশা। অামার প্রথম গার্লফ্রেন্ড। ঐ যে বিষ খেয়েছিলো না? ঐ মেয়েটা।”
-” তো রিসিভ করেন।”
-” ধুর। এসব প্যারাদায়ক মানুষ অামার পছন্দ না।”
-” অারে বারবার ফোন করছে। রিসিভ করেন।”
ফোনটা রিসিভ করে মায়ার কানে দিয়ে সোহান বললো
-” তুমিই কথা বলো।”
চোখ বন্ধ করে উল্টাদিকে ফিরে শুয়ে অাছে সোহান। মায়া কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। ওপাশ থেকে অালিশা হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পর মুখ খুললো মায়া।
-” জ্বি, হ্যালো?”
-” সোহান কোথায়?”
-” জ্বি…. উনি…. উনি ওয়াশরুমে।”
-” তুমিই ওর ওয়াইফ তাই না?”
-” জ্বি?”
-” কি অাশ্চর্য? এমন অাতেলের মতো জ্বি জ্বি করছো কেনো?”
-” না মানে, হ্যা অামি উনার ওয়াইফ।”
-” বিয়েটা কি লাভ নাকি এ্যারেন্জড?”
-” উনি অামাকে দেখেছে এর কিছুক্ষন পরই বউ বানিয়ে ফেলেছে। এখন অামি জানি না এটা লাভ না এ্যারেন্জড।”
-” কিহ্? এটা কেমন উত্তর? হোয়াটএভার……. তুমি কি জানো অামি কে?”
– ” জ্বি। অাপনি অালিশা। উনার প্রথম প্রেমিকা।”
-” ওহ অামার গল্প করেছে তাহলে। বিয়ের কতদিন হলো?”
-” তিনমাস।”
-” এতদিনে নিশ্চয়ই টের পেয়ে গেছো সোহান একটা পাগল।”
-” কই না তো। উনি তো দিব্যি সুস্থ অাছেন।”
-” যেই ছেলে প্রতিদিন গালি দেয় তাকে কি করে তুমি সুস্থ বলো? কোনো সুস্থ মানুষের ভাষা এত জঘন্য হতে পারে না।”
-” অামাকে তো কখনো গালি দেয়নি।”
-” অার ইউ সিরিয়াস? গালি দেয়নি?”
-” না তো।”
-” ওহ্ ঠিকই তো গালি দিবে কেনো? তুমি তার ওয়াইফ। পরম প্রিয় মানুষ। অামি তো প্রেমিকা ছিলাম। প্রেমিকারা শত কিছু হলেও ছেড়ে যায় না। কিন্তু বউরা এত কথা শুনে সংসার করবে না। বউ কখনো প্রেমিকা হতে পারেনা। প্রেমিকার জায়গা নিতে পারে না। এজন্যই তোমার হাজবেন্ড তোমাকে গালি দেয় না। এখন সে নিশ্চয়ই হারে হারে টের পায় অালিশাকে ছেড়ে কতবড় ভুল করেছে। তোমার হাজবেন্ডকে জিজ্ঞেস করে দেখো অালিশা কি ছিলো?”
-” জ্বি।”
-” সবে তো তিনমাস গেলো অারো কতদিন যাক। এরপর সে বুঝবে অামি ওর কি ছিলাম।”
-” জ্বি।”
-” কত গালি সহ্য করেছি ওর। কখনো পাল্টা গালি দেইনি। রাত বিরাতে ফোন করে করে অামাকে গালি দিতো। অামি চুপচাপ সব সহ্য করেছি।”
-” জ্বি।”
-” এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি ? অাতেলের মতো জ্বি জ্বি করছো কেনো?”
-” একটা কথা বলি। মনে কিছু নিবেন না প্লিজ। অাসলে অামার হাজবেন্ড পাগল না, পাগল হচ্ছেন অাপনি। অাপনার কথায় তাই মনে হচ্ছে”
-” স্টুপিড মেয়ে তুমি….”
-” অামাকে অাগে শেষ করতে দিন প্লিজ। একটা সময় ভালোবাসা ছিলো ভালো কথা। এখন তো অাপনার বিয়ে হয়েছে সোহানেরও হয়েছে। অহেতুক কেনো নিজের সংসার ফেলে অামার হাজবেন্ডের পিছনে লেগেছেন। এতই যেহেতু ভালোবাসেন তাহলে অন্য লোককে বিয়ে করলেন কেনো? সোহানের রাগ ভাঙানো পর্যন্ত ওয়েট করতেন। শুনেছি একটা বাচ্চাও নাকি অাছে। বাচ্চা তো অাকাশ ভেঙে পড়েনি। অাপনার অার অাপনার হাজবেন্ডের মধ্যে কিছু হয়েছে বিধায় বাচ্চাটা জন্ম হয়েছে। যাকে ভালোবাসেন তাকে ফেলে অন্য কাউকে বিয়ে করলেন, অাবার বাচ্চাও হলো তখন সোহানকে মনে পড়েনি?”
-” স্টুপিড, তোমার হাজবেন্ড অামাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। অামি ছাড়িনি।”
-” ঠিকাছে ছেড়ে গিয়েছে। অাপনিও তো নিজের রাস্তা সুন্দর গুছিয়ে নিয়েছেন। বিয়ে করেছেন, বাচ্চা হয়েছে, সংসার করছেন। অাপনি করছেন তাতে দোষ নেই, অার সোহান বিয়ে করেছে বলে এতো জ্বলছে কেনো অাপনার?”
-” এই স্টুপিড……”
-” ওয়েট অাপু, অামার নাম স্টুপিড না। অামার নাম মায়া।”
-” গালি, চড় থাপ্পর এসব তো খাওনি। খেলে বুঝবা সোহান কি জিনিস। অামি যাস্ট তোমাকে এলার্ট করার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। ”
-” এলার্ট করতে চাইলে অামার নাম্বারে কল করতেন। অামার হাজবেন্ডের ফোনে কেনো? তাও এতো রাতে? অার অামাকে নিয়ে এত না ভাবলেও চলবে। সোহান অামাকে গালি দিলেও সে অামার হাজবেন্ড, মাথায় তুলে নাচলেও অামার হাজবেন্ড। ”
-” কতদিন যে এই ভালোবাসা থাকে অামি দেখবো।”
-” সারাদিন হাজবেন্ডকে কাছে পাইনা। রাতের বেলা যাই একটু াছে অাসার সুযোগ পাই। সে মূহূর্তে অাপনি বিরক্ত করছেন। তাহলে ভালোবাসাটা থাকবে কিভাবে?”
আলিশা কথায় পেরে উঠতে পারছে না। চেয়েছিলো ফোনে সোহানকে কতক্ষন ঝাড়বে। সে সুযোগ তো পেলোই না, উল্টো শুদ্ধ ভাষায় কতখানি অপমান হতে হলো । ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানার উপর অাছাড় দিলো অালিশা। মায়ের মেজাজ দেখে ভয়ে দৌড়ে পালালো অালিশার ছেলে অাফিফ। একেবারে বাবার কোলে ঘাপটি মেরে বসে গিয়েছে সে।
” বাবা কাজ করছি। এখন অাম্মুর কাছে যাও।”
-” অাম্মু ফোন অাছাড় দিয়েছে। কাছে গেলে অামাকেও আছাড় দিবে।”
আলিশার হাজবেন্ড রুপমের বুঝতে বাকি রইলো না তার বউ কারো সাথে ঝগড়া লেগেছে। ছেলেকে কোলে নিয়ে আালিশার মুখোমুখি দাঁড়ালো সে।
-” তোমাকে কতদিন না করেছি ছেলের সামনে উল্টাপাল্টা মেজাজ দেখাবে না? বাচ্চাটা ভয় পায় দেখো না?”
-” তো মেজাজ খারাপ হলে কি করবো?”
– তুমি তোমার রাগ কিভাবে হ্যান্ডেল করবে সেটা তোমার ব্যাপার। অামি চাইনা তোমার কারনে অামার ছেলের উপর কোনো ব্যাড এ্যাফেক্ট পড়ুক। ”
-” তুমি কি মিন করতে চাচ্ছো? আফিফকে ভয় দেখিয়ে টর্চার করি?”
-” অবশ্যই করো।”
তুফান এবং অাগুন দুটো একসাথে লেগেছে অালিশার সংসারে। তুমুল তর্ক হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে। অন্যদিকে মায়ার উত্তর শুনে উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসছিলো সোহান। সে খুব ভালোই জানে মায়াকে আলিশা কি কি বলেছে। সোহানের সাথে কোনো মেয়ে দেখলে সহ্য হয় না আলিশার। এর অাগের দুজনকেও ফোনে যাচ্ছে তাই বলেছিলো অালিশা। সেই দুজন আলিশাকে কিছু না বলে পুরো বিষ ঝেড়েছিলো সোহানের উপর। এজন্যই মায়াকে তার পছন্দ। অন্য সবার মতো সোহানকে কোনো ধরনের প্রেশার দেয় না সে। মায়াকে তার কাছে অনেকটা নদীর পাড়ের বাতাসের মতো মনে হয়। মায়া এবং নদীর বাতাস এ দুটোর মধ্যেই একধরনের শীতলতা আছে। প্রান জুড়ানো শীতলতা। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে সোহানের বুকে হাতাচ্ছে মায়া। নাক মুখ সোহানের পিঠে সেটিয়ে রেখেছে।
– ” তুমি তো দেখি বেশ ভালোই উত্তর দিতে জানো”
-” মেয়েটা অাপনাকে ভালোবাসে না।”
-” কিভাবে বুঝলে?”
-” ভালোবাসলে অাপনার বদনাম করতে পারতো না। অাপনার ভালো দিকগুলো মাথায় রেখে খারাপটা ঝেড়ে ফেলতো। অামার একদম সহ্য হচ্ছিলো না অাপনার বদনামগুলো শুনতে তাই উত্তর দিয়েছি। অার নয়তো কিছু বলতাম না।”
-” কেনো সহ্য হচ্ছিলো না? ভালোবাসো অামাকে?”
সোহানের প্রশ্নে কলিজায় ধুক করে উঠলো মায়ার। কি উত্তর দিবে? সত্যটা বলার অধিকার আদৌ অাছে কি? চুপ করে রইলো মায়া।
-” থাক উত্তরটা দিতে হবে না। চল ঘুরে অাসি।”
-” এত রাতে?”
-” হুম। তাতে কি হয়েছে?”
-” কোথায় যাবো?”
-” মেঘনা ব্রিজ।”
-” ওখানে যেয়ে কি করবো?”
-” ব্রিজের রেলিংয়ের উপর থেকে তোমাকে নিয়ে নদীতে ঝাপ দিবো। এরপর দুজন মিলে সাঁতরাবো।”
-” কি বলেন এগুলো?”
-” অারে মেয়ে, ওখানে যাবো। কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করবো, বাতাস খাবো। এরপর অাবার চলে অাসবো। মোটকথা গাড়ি নিয়ে ঘুরবো। অনেকদিন হয় দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। বোর হচ্ছি খুব। ”
-” অাচ্ছা অামি কাপড়টা পাল্টে অাসি।”
-” পাল্টাতে হবে না। যেভাবে অাছো সেভাবেই চলো।”
মধ্যরাত। গোল চাঁদটা ক্ষনে ক্ষনে সাদা মেঘের অাড়াল ঢাকা পড়ছে। বলা যায় মেঘ জোছনার লুকোচুরি। ফাঁকা রাস্তায় গাড়িটা ছুটে চলছে। রাস্তার দুধারের হলুদ ল্যাম্পপোস্টগুলো মৃদু অালো ছড়াচ্ছে। গাড়ির সবকয়টা জানালা খুলে রেখেছে সোহান। জানালায় দু হাতের উপর থুতনি ভর দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে অাছে মায়া। প্রচন্ড বাতাসে খোপা করা চুল থেকে ধীরে ধীরে কিছু চুল বেরিয়ে অাসছে। বারবার চুলগুলোকে খোপার ভাছে গুজে দেয়ার চেষ্টা করছে মায়া।
-” খোপাটা খুলে ফেলো। চুলগুলো উড়ুক।”
-” আপনি খুলে দিন।”
কাছে এগিয়ে এলো মায়া। এক হাত বাড়িয়ে খোপাটা খুলে দিলো সোহান। ফের জানালার উপর মুখ রেখে বাহিরে তাকিয়ে অাছে মায়া। চুলগুলো উড়ছে তার। সোহান কিছুক্ষন পরপরই মায়ার দিকে তাকাচ্ছে। মায়াকে হ্যাচকা টানে কাছে অানলো সোহান। মায়ার ঠোঁটে অালতো করে চুমু খেলো সে।
(চলবে)