#Love_with_vampire [১৪]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
অনুভব পুরো দরজা খুলে ফেললো।খুলতেই সামনে একটা বিশাল আলোকরশ্মি চোখে পড়লো।প্রবল আলো অনুভবের চোখে পড়তেই দুহাত দিয়ে চোখ ডেকে রাখলো।এরপর হাতের ফাঁক দিয়ে সামনে তাকাতেই অনুভবের শরীর অসম্ভব ভাবে পুরে যেতে লাগলো।
ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো অনুভব।আলোর তাপ এখন কিছুটা স্নিগ্ধ হয়েছে। আগের মতো চোখে লাগছে না।অনুভব চোখ মেললো।হাত বাড়ুয়ে নিজের হাত দেখলো।তীব্র আলোয় তার হাত ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।হাতের চামড়া গুলি পুড়ে কালো হয়ে গেছে।অনুভ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। একহাত দিয়ে আরেকহাত চেপে ধরে কিছুটা ব্যাথা নিবারন করার চেষ্টা করলো।কিন্তু লাভ হলো না।হাতের স্পর্শে ব্যাথা আরো যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। অনুভব বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলো।এরপর চোখের দৃষ্টি ফেললো পুড়ে যাওয়া অংশে।সেই দৃষ্টিতে পুরে যাওয়া অংশের জ্বালা পোড়া কমতে লাগলো।এক পর্যায়ে হাত পুড়ে যাওয়ার কোনো চিহ্নই রইলো না হাতে।অনুভবের বিকট একটা হাসিতে পুরো ঘর কেঁপে উঠলো।
ঘরটা বেশ বড়।দেয়াল বেয়ে শ্যাওলা,লতা,পাতা দিয়ে ভরে যাওয়ায় দেয়ালটাই নজরে পড়ছে না।বিশাল বড় বড় মাকড়শার জাল ঝুলছে লতা পাতা,এবং এক দেয়াল থেকে আরেক দেয়াল অব্দি। মেঝেতে বালির আস্তরনে ঢাকা।বালিগুলি কুচকুচে কালো।এতো কালো বালি কখনো জীবন দশায় অনুভবের নজরে পড়েনি।ঘরটদয় একটা ভ্যাপসা আলো।সে আলোয় মিশে আছে জলীয় বাষ্প।দু’দিকে প্রকন্ড দুটি জানালা।জানালা দিয়ে কোনো আলো আসছে না।আশ্চর্য, জানালার ফাঁক দিয়ে আলো আসার কথা।এই ঘরে কি কখনো আলো আসেনি এর আগে?
অনুভব কালো বালির ওপর পা রাখলো।বালিগুলি কিছুটা উত্তপ্ত।অনুভবের মনে হলো সামনের বালিতে কিছু একটা আঁকা।কি আঁকা আছপ সেটা দেখতে কাছে যেতেই একটা কালো ছায়ার আঁচড়ে অনুভব ছিটকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলো।দেয়ালে ধাক্কা লাগার সাথে সাথেই অনুভবের শরীরে কথা বলার মতোও আর শক্তি রইলো না।অনুভব পড়ে রইলো দেয়ালের পাশে। তার হাতের কনুই,মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে।অনুভবের মনে হলো এটা কোনো অশুভ শক্তি। এই ছায়ার শক্তি যে সে শক্তি নয়।কে এই অশরীরী?
অনুভবের চোখ বেয়ে রক্ত টপটপ করে বালিতে পড়তে লাগলো।অনেক কষ্টে অনুভব হাত দিয়ে চোখের কাছের রক্ত মুছে নিলো।মুছে ঘরের ঠিক মাঝখানে তাকালো।যেখানে বালির মাঝে কিছু একটা আঁকা ছিলো।সেখানে তাকাতেই অনুভব লক্ষ্য করলো একটা অশরীরী ছায়া সেখানে হাঁটু মুড়ে বসে আছে।এটা কোনো মেয়ের অশরীরী। ছায়াটা আরো প্রবল হচ্ছে। তার চুল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। শরীর গঠনে অনুভব বুঝতে পারলো এটা কোনো নগ্ন মেয়ের অশরীরী ছায়া।
__________
গুহায় বসে বৃদ্ধ সাধক ব্যাধিতে মন্ত্রসিক্ত ঘি এবং অবিরত মন্ত্র পড়োই যাচ্ছেন।তার সারা শরীর কাঁপছে। বন্ধ চোখ ছোটাছুটি করছে।একসময় সাধনা থেকে উঠে দারিয়ে ভয়ঙ্কর একটা আর্তনাত করে উঠলো।তার চিৎকারে গুহার সামনের পাথর গুলি ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে।কুন্ডলী থেকে জল নিয়ে ব্যাধির আগুন নিভিয়ে ফেললো।বিকট স্বরে নিজে নিজেই বলে উঠলো
” নাহ, এটা কখনোই হতে পারে না।আমার এতোদিনের পরিকল্পনা এভাবে শেষে এসে নষ্ট হতে পারে না।অনুভবের হঠাৎ কি এমন হলো? ওকে আমি নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না কেন? এতো কষ্ট করে নিজের শক্তিকে বিসর্জন দিয়ে ওকে ঘরে নিয়ে গেলাম সেই গ্রন্থটা পাওয়ার জন্য। কিন্যা হঠাৎ কি হলো? কেনো ওর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না? কেনো আমার দৃষ্টি থেকে এভাবে সরে গেলো? কিভাবে?
আর ওই মেয়েটাই বা কোথায়? তখন থেকে ওর ওপরেও কেনো দৃষ্টি ফেলতে পারছি না? ওই আত্মাটাকেও তো কোনো কিছু বলতপ পারছি না।আমি কি করবো এখন? আজ যদি এই কাজ করাতে না পারি তাহলে আর কখনোই সম্ভব হবে না।আমার মুক্তিও হবে না।সারাজীবন এই গুহায় পচতে হবে।নাহ্ আমি এটা কিছুতেই হতে দিবো না,কিছুতেই না। হে শুভ আত্মা, জেগে ওঠ,জেগে ওঠ,তোর সৃষ্টা তোকে আহ্বান করছে,জেগে ওঠ ”
_________
অহনার বন্ধ চোখ হাল্কা নড়ছে।হয়তো তার জ্ঞান ফিরছে।বেশ কিছুক্ষণ পর অহনার পুরোপুরি জ্ঞান ফিরলো। পিটপিট করে চোখ খুললো।চোখ খুলতেই অহনার সারা শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো।বিছানায় হাত রেখে পঠার চেষ্টা করতেই মাথার প্রচন্ড ব্যাথায় ধপ করে আবারো বিছানায় পড়ে গেলো।ব্যাথায় আর্তনাত করার মতো শক্তিও অহনার নেই।তবুও বেশ কিছুক্ষন সময় দিলো নিজেকে সামলে তোলার জন্য। এরপর বিছানায় ভর করে ওঠার চেষ্টা করলো।মাথা ঘুরছে,সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।তখনি একটা আওয়াজ পাওয়া গেলো
” অহনা,অহনা ”
অহনা বুঝতে পারলো এটা তার শরীরে থাকা সেই আত্মার ডাক।অহনা কথা বলতে পারছে না।তবুও কষ্ট করে কাঁপা কাঁপা স্বরে উত্তর দিলো
” হ্যা ”
” তুমি সুস্থ নও এখনো,কিন্তু এখন তোমার প্রয়োজন।সময় হয়ে এসেছে অহনা।যা করার এখন করতে হবে ”
” কি..কি করতে হ..হবে? ”
বলপই অহনা আবারো বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।তার পক্ষে এখন দারিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়।শরীরে রক্তশূন্যতার কারনে দারাতে গেলেই মাথা ঘুরিয়ে উঠছে।শরীর এলোমেলো লাগছে।অহনা বিছানায় বসে এক হাত মাথায় রেখে শক্ত করে চেপে ধরে আবারো বললো
” কি..কি..কি হলো? কি হয়েছে? কিসের স..স..সময়ের কথা বলছো? ”
” অনুভবকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার এটাই সময়।যা করার এখন ই করতে হবে অহনা।সময় খুব কম ”
অহনা মাথা হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ভাবলো কি হয়েছিলো।হ্যা৷ তার মনে পড়ছে। যখন সে দরজা খুলার জন্য কাছে যায় তখন কেউ তাকে হ্যাচকা টান মেরে পেছনে ফেলে দেয়,আর সেখানে থাকা পাথরের কোন লেগে মাথায় আঘাত লাগে,প্রচুর রক্তও বেড় হয়।একটা হিংস্র পশু সেই রক্ত তার কালো জিহ্বা দিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছিলো।সেটা যে অনুভব ছিলো সে বিষয়ে অহনার কোনো সন্দেহ নেই।কারন মানুষের রক্ত দেখে কোনো ভ্যাম্পেয়ার কি ঠিক থাকতে পারে ? পারে না।অনুভবের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টা ঘটেছে।যখন সে দেখলো আমার রক্ত ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ছে তখন সেটা দেখে ওর মধ্যের সেই পিশাচ রুপটা জেগে উঠেছিলো।এরপর কি হয়েছিলো?।এরপর কি হয়েছিলো সে উত্তর অহনা খুজে পেলো না।
এরপর কি হয়েছিলো সেটা মনে করতে চেষ্টা করছে অহনা।কিন্তু পারছে না।এসব ভাবতে ভাবতে মাথার ব্যাথাটা আরো প্রবল হয়ে উঠছে।অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়।মনে হচ্ছে এখনি ঠাস করে মাথা ফেটে যাবে।তখনি আবারো রুপার আওয়াজ শোনা গেলো
” অনুভবের বিপদ ”
অহনা চমকে উঠলো। অনুভবের বিপদ মানে? কি হয়েছে ওর? ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করতে লাগলো
” কি হয়েছে অনুভবের? কি..কিসের বিপদ? কোথায় অনুভব?
” অনুভব সেই ঘরে প্রবেশ করেছে,যেখানে সে কখনোই প্রবেশ করতো না ”
” সেই ঘর মানে,যে ঘরে গ্রন্থটা ছিলো? ”
” হ্যা ”
” অনুভব কি গ্রন্থটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে? ”
” আমার জানা নেই।ঘরে ঢুকেছে সেটা আমি জানি,ভেতরে কি হয়েছে সেটা আমার দৃষ্টিচড়ে আসছে না।তবে আমার মনে হয়…”
” কি মনে হয় তো…তো..তোমার? ”
” আমার মনে হয় অনুভবের খুব বড় বিপদ হয়েছে সেই ঘরে।কেননা সেই ঘরে কখনো তার ঢোকার কথা নয়,সে কেনো সেখানে ঢুকলো সে বিষয়টা আমিও এখনো বুঝতে পারছি না।কেউ জেনে শুনে নিশ্চয়ই নিজের শেষকে আমন্ত্রণ করবে না,তাই না? ”
” তবে কি? আমি যা ভাবছি সেটাই? ”
” হ্যা,এখানে নিশ্চই সেই সাধকের কোনো খেলা আছে।তার ক্ষমতা ছাড়া এটা কখনই হবে না।”
” ওনার জন্য যদি আমার অনুভবের কিছু হয় তাহলে কিন্তু আমি সবকিছু শেষ করে ফেলবো রুপা।সব শেষ করে ফেলবো”
বলেই অহনা বিছানা থেকে উঠে দারালো।তার সারা শরীরে এখন আগুন জ্বলছে।বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই একটা গোঙ্গানির আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।অহনা চমকে উঠলো।এটাতো অনুভবের আওয়াজ,কি হয়েছে ওর?
চলবে?
#Love_with_vampire [১৫]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
অহনা বিছানা থেকে উঠে দারালো।তার সারা শরীরে এখন আগুন জ্বলছে।বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই একটা গোঙ্গানির আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।অহনা চমকে উঠলো।এটাতো অনুভবের আওয়াজ,কি হয়েছে ওর?
ঘর থেকে ছুটে বেড় হয়ে সেই ঘরটার কাছে গেলো অহনা।ঘরের দরজা বন্ধ।তালাটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দরজার নিচেই পড়ে আছে।এতো বড় তালা এভাবে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে পড়ে আছে? কে ভাঙ্গলো এই তালা? ঘরে কি কেউ প্রবেশ করেছে? অনুভব নয় তো?।
অহনার মনে নানা প্রশ্ন সাড়া দিতে লাগলো।ঘরের ভেতরে কেউ থাকলে তো শব্দ হওয়ার কথা।ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাওয়া যায় নি।শব্দ শুনার জন্য অহনা দরজার সাথে একদম কান পেতে ছিলো কিছুক্ষণ। কিন্তু ভেতরে কোনো আওয়াজ পাওয়া যায় নি
।এমনকি গোঙ্গানির আওয়াজ ও পাওয়া যাচ্ছে না।অহনার বুকটা কেমন ছ্যাত করে উঠলো।
ঘরে অনুভব যায়নি তো? অনুভব ছাড়া তো এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই যে ঘরে যেতে পারে।আর আমি অজ্ঞান হওয়ার আগে তো অনুভব এখানে ছিলো।তার মানে কি গোঙ্গানির আওয়াজটা সত্যি সত্যিই অনুভবের? তাহলে কোথায় অনুভব?উনি কি ঘরের ভেতর? আমি কি ঘরে গিয়ে দেখবো?
অহনার ইচ্ছে করছে ঘরের ভেতরের রহস্য জানতে।কিন্তু একটা আতঙ্ক কাজ করছে নিজের মনের মধ্যে। কিছুতেই তার মন সায় দিচ্ছে না এই কাজে।অহনা কাঁপা কাঁপা স্বরে ডাকলো
” অ..অনুভব।অনুভব শুনছেন আমার কথা? আপনি কি ঘরের ভেতর? প্লিজ কিছু বলেন,আমার চিন্তা হচ্ছে,আপনি কি ঘরের ভেতর? ”
ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ এলো না।অহনা এবার ফিসফিস করে বললো
” রুপা, রুপা ”
” হ্যা ”
” কি করবো আমি? ”
” কি করতে চাচ্ছো?”
” সেটা তুমি নিজেও জানো।অযথা কথা বাড়াবে না ”
” আমার বলার মতো কিছু নেই ”
” এটা কেমন কথা।কিছু একটা তো বলো? ”
” আমার মনে হচ্ছে ভেতরে গেলে তোমার বিপদ হবে। মহা বিপদ।”
” আমি সেই বিপদকে ভশ পাই না।তোমার কি মনে হচ্ছে? ভেতরে কি অনুভব আছে? ”
” হ্যা ”
” কিহ্? কিভাবে বললে এটা? ”
” আমি অনুভবের অবস্থান খুঁজে পাচ্ছি না।অতএব ধরা যায় অনুভব এমন এক যায়গায় আছে যেখানে আমার দৃষ্টি পৌছাতে পারছে না।আমার জানা মতে এই সেই ঘর,যেখানে আমার দৃষ্টি পৌছাবে না কখনো ”
” তার মানে অনুভব এই ঘরেই আছে? ”
” আমার তে তাই মনপ হচ্ছে। আবার নাও থাকতে পারে।আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।আমি চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না।আমার শক্তি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে।”
” আমারো মনে হচ্ছে অনুভব এই ঘরের ভেতরেই আছে।কিন্তু ডাকার পরেও কথা বলছে না কেন? ”
” হয়তো সে বিপদে পড়েছে। মহাবিপদ ”
” কি সেই বিপদ? আমি থাকতে আমার অনুভবের কিচ্ছু আমি হতে দিবো না।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ”
” কি সিদ্ধান্ত? ঘরের ভেতর যাওয়ার? সেটা কি ঠিক হবে? ”
” আমি এখন এই ঘরে ঢুকবো মানে ঢুকবো।এতো ভুল,ঠিক দেখদর সময় এটা না।তুমি শুনতে পাও নি অনুভব কেমন গোঙ্গাচ্ছিলো? ”
” কিন্তু একবার….”
” আর কেনো কথা নয়,আমি যাবো।”
রুপার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাজ্য করে অহনা দরজার কাঠে হাত রাখলো।দরজায় হাত রাখতেই সারা শরীরে কেমন যেন একটা গরম বাতাস বয়ে গেলো।বাতাসে অহনার চুলগুলি উড়ছে।চোখে কৌতুহল, বুকে ভয়,আতঙ্ক নিয়ে অহনা দরজা সামান্য খুলতেই আবারো ধপ করে বন্ধ করে দিলো।দরজা থেকে সরে এলো।পাথর গুলির কাছে উবু হয়ে হরহর করে বমি করতে লাগলো।কেননা দরজা খোলার সাথে সাথেই ভোঁটকা পঁচা মাংসের দম আটকে আসার মতো তীব্র ঝাঝালো একটা গন্ধ অহনার নাকে লাগে।এই গন্ধ যেমন তেমন গন্ধ না।এটা সবাই সহ্য করতে পারবে না।
বেশ কিছুক্ষণ বমি করে অহনা ফ্লোরে বসে পড়লো।নিজেকে খুন ক্লান্ত লাগছে।মাথার ব্যাথাও প্রচন্ড বেড়ে গেছে।কেমন যেনো টকটক করছে মাথার ভেতর।মনে হচ্ছে হাজারটা ঘোড়া দৌড়াদৌড়ি করছে। অহনা নিজেকে ভালোমতো সামলে নিলো।ভর করে উঠে দারালো।
এই ঘরে নিশ্চই অদ্ভুত কিছি একটা আছে।এখানে এভাবে ঢোকা সম্ভব হবে না।অন্য কোনো একটা উপায় খুজে বের করতেই হবে,করতেই হবে।
সূর্য এখন পশ্চিম ভাগে।অর্থাৎ সূর্য রশ্মির গতি এখন পূর্ব দিকে।অহনা একটা বুদ্ধি বের করলো।যেহেতু এই ঘর সাধারণ ঘর নয়,সেহেতু সাধারণ মানুষের মতো যদি দরজা দিয়ে ঢোকা যায় তবে নিশ্চই বিপদ হতে পারে।দরজায় আক্রমনের নানাবিদ কর্মকান্ড হয়তো উপস্থিত করা আছে।তাকে অন্য কোনো উপায় অবশ্যই খুজে বেড় করতে হবে।
অনেক ভাবার পর অহনা সিদ্ধান্ত নিলো ভেতরে কি আছে সেটা প্রথমে দেখবে।কিন্তু সেটাই বা দেখবে কিভাবে? সেটা দেখতে হলে তো ঘর দৃষ্টিগচরে পৌছাতে হবে।কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা?
অহনা ঘরের পশ্চিম দিকে গেলো।সেখানে যেতেই চোখে পড়লো ওই খানটার ইট গুলি ভঙ্গুর হয়ে গেছে।হয়তো ইটগুলি সরিয়ে ফেলা যাবে।দু,একটা ইট সরিয়ে ফেলতে পারলেই সেই যায়গাটা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করবে,আর ভেতরে কি আছে সেটাও দেখা যাবে।
যেমন ভাবনা তেমনি কাজ।সেখানকার ইটের দেয়ালের শ্যাওলা গুলি অহনা হাত দিয়ে সরিয়ে ফেললো।ইটে হাত দিয়ে কয়েকবার আঘাত করলো।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।ফলশ্রুতিতে অহনার হাত ব্যাথায় লাল হয়ে উঠলো।কি করা যায় সেটা মনে মনে ভাবতে লাগলো।
কিছুক্ষণ ভাবার পর অহনার মনে পড়লো দরজার বাহিরে তো পাথর গুলি রাখা আছে।সেখান থেকে এলটা পাথর এনে তো ইটের ভঙ্গর দেয়ালটা ভেঙ্গে ফেলাই যায়?। ভবনা মাপিক অহনা দরজার কাছ থেকে একটা পাথর আনলো।পাথর হাতে দারিয়ে আছে দেয়ালের ওপাশে।সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।
________
দুম দুম শব্দে অনুভবের বন্ধ চোখ পিটপিট করে নড়লো।অনুভব ততক্ষণেও অজ্ঞান হয়নি।এতো সহজে তো সে অজ্ঞান হবে না,সে তো আর আট দশজন মানুষের মতো সাধারণ নয়।অনুভব জীর্ণ চোখ মেলতেই শব্দটা আরো স্পষ্ট হতে লাগলো।মনে হচ্ছে সে যে দেয়ালের পাশে পড়ে আছে সেই দেয়ালেই কেউ আঘাত করছে।প্রতিটি আঘাতে দুম দুম করে শব্দ হচ্ছে,সেই শব্দ খেলা করছে সারা ঘর জুড়ে।অনুভব বুঝতে পারছে না কে দেয়ালে আঘাত করছে।অহনা হবে কি? কিন্তু অহনা কিভাবে হবে? অহনা তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।এতো তারাতারি তো ওর জ্ঞান ফিরবে বলে মনে হয় না।তবে যদি সত্যিই এটা অহনা হয় তাহলে কিছুতেই ওকে এই ঘরে আসতে দিলে চলবে না।এই ঘরে প্রবেশ করলে অহনা নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।আমি অহনার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।কিছুতেই না।
কথাগুলো মনে মনে আওড়ানোর পর অনুভব দেয়াল ধরে উঠে দারানোর চেষ্টা করলো।সারাশরীরে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার।বাতাসের বেগে ছিটকে দেয়ালে পড়ায় সারাশরীরে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। কিন্তু যতই যা হয়ে যাক,অহনাকে এই ঘরে আসতে দেওয়া যাবে না।
অনুভব ঘরের ভেতর থেকে চেচিয়ে উঠলো ” অহনা,তুমি ভুলেও এই ঘরে আসবে না।এখানে বিপদ অহনা।আমি যেভাবেই হোক বের হবো,তুমি আসবে না।অহনা আমার কথা শুনতে পাচ্ছো তুমি? ”
বেশ কিছুক্ষন বলার পরেও কোনো লাভ হলো না।অহনা কোনো কথাই শুনতে পায়নি।সে আঘাত করতে করতে এতোক্ষনে দেয়ালের একটা ইট ভেঙে ফেলেছে।অনুভব লক্ষ্য করলো ঘরের ঠিক মাঝখানে হাটু মুড়ে বসে থালা সেই ছায়াটার শরীর আরো স্পষ্টতর হচ্ছে।এর মানে কি? এই অশরীরীর কি শক্তি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে?
ছায়াটা আরো তীব্র হচ্ছে। অনুভবের একটু একটু ভয় হতে লাগলো।সেটা নিজের জন্য না,অহনার জন্য।ছায়াটা উঠে দারালো,সে এখন হেটে চলেছে ভাঙা দেয়ালের ইটটার কাছে।ইটের দেয়ালটার ওপাশেই অহনা পাগলের মতো দেয়ালে আঘাত করেই যাচ্ছে। অনুভব শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ছায়াটা উঠে দারালো।সে এখন হাটছে।হেলেদুলে হাটছে।মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা শিশু প্রথম যখন হাটা শিখে তখন যেমন হেলেদুলে হাটে তেমনি ভাবে ছায়াটা হেলেদুলে হাটছে। একবার এদিকে হালছে,আরেকবার আরেকদিকে দুলছে।স্পষ্ট লক্ষ্য করলো ছায়াটার মুখ দিয়ে অস্বাভাবিক জিহ্বা বেড় হয়ে আসছে।দুইহাত সামনে তুলে দিয়ে হেলেদুলে হাটছে।
অনুভব আর চুপ করে দেখতে পারলো না।তার চোখ গাঢ় হলুদ হতে লাগলো।বিকট এক গর্জন করে উঠলো।সে নিজেও এখন ভ্যাম্পেয়ারের রুপ ধারন করেছে।
চলবে?