Love warning part-10

0
1763

#Love_warning❤️
#your_love_is_my_drug_addiction?
#Part_10
#ফারজানা

“দোস্ত আই অ্যাম ফিনিস”

প্রবণ অর্ণবের কথা শুনে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে…..

“কেনো কি হয়েছে আবার এখন?”

“সামি সামিয়া আসছে”

“হোয়াট সামু আসছে এইটা তো আনন্দের কথা এইভাবে চুপ হয়ে আছিস কেন?”

“ভয় পাচ্ছি কি আর সাঁধে সামু কে না জানিয়ে প্রেম করেছি এখন আবার বিয়েও করে ফেলেছি এই খবর ও জানলে আমাদের দুইজন কে কি আর আস্ত রাখবে মেরে একেবারে কুচি কুচি করে ফেলবে”

“তাও ঠিক বলেছিস যে ডেঞ্জারাস মেয়ে যা মন চায় তাই করতে পারে। বাই দা ওয়ে ও কখন আসবে?”

“দুইদিন পর আসছে কানাডা থেকে তার থেকেও বড় কথা ও নাকি আমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ রেখেছে।”

“কিন্তু ওনি তো জানে না আমরাও ওর জন্য বড় বড় দুইটা সারপ্রাইজ রেখে দিয়েছি ”

“শুন সামু কে আগে কিছু বলবি না প্ল্যান করে শিশির আর তিতিরের সাথে দেখা করাবো”

“ওকে ব্রো। আগামীকাল তো নতুন বউ শশুর বাড়িতে রেখে আসতে হবে”

“হুম। এখন ওদের জানতে দেওয়া যাবে না যে ওদের বিয়ে করে ফেলেছি। সব সময় হলে বলবো”

“ওকে”

অন্যদিকে……

“আমার ছোট কালের ভালোবাসা। শৈশব প্রেম আমার প্রথম ভালোবাসা তুই ছিলি অর্ণব। কিন্তু কোনোদিন বলা হয়নি তোকে , তোকে আমি ভালোবাসি। তাই এইবার বাংলাদেশ গিয়ে তোকে বলবো সাথে আরেকটা সারপ্রাইজ দিবো।তোকে অবাক করে দিবো আমি হিহিহিহি জাস্ট আমার আসার পালা”

সামিয়া অর্ণবের ছবি দেখছে আর বলছে। তার চোখে মুখে হাসির রেখা।

???

“হুম জান খেয়েছি তুমি খেয়েছো?”

শিশির ফোনে তনয়ের সাথে কথা বলছে…..

“সরি বাবু, কিছুদিনের মধ্যে দেখা করতে পারবো না আমি অনেক বড় সমস্যায় আছি সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে তোমার সাথে দেখা করবো প্রমিজ বাবু রাগ করো না প্লিজ”

তিতি শিশিরের কথার জন্য ঘুমাতে পারছে না । তিতি লাইট জ্বালিয়ে শিশিরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো…..

শিশির লাইট জ্বালানো দেখে তাকিয়ে দেখে তিতি রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন কিউট হাসি দিয়ে বললো…..

“জান আমার খুব ঘুম পাচ্ছে পরে কথা বলবো টাটা উম্মাহ”

“নাহ আরেকটু বল কম হয়ে গেছে”

“নাহ থাক আজ বলবো না অন্যদিন বলবো।”

তিতি শিশিরের কথা শুনে যেই শুতে যাবে ঠিক তখনি শিশির চেঁচিয়ে বলল…..

“জানিস তিতি এই বাড়িয়ে ওয়েফাই আছে দেখ মনে হয় ফ্রী ওয়েফাই ”

তিতি এইবার দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো…..

“শালী এইটার জন্য এইভাবে চেঁচিয়ে উঠা লাগে একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করি নাই”

“ভীতু এইটুকু তেই ভয় পেয়ে যাস তাহলে অর্ণব ভাইয়ার মতো সাইকো কে কিভাবে সামলাবি?”

“অর্ণব সাইকো হলেও ওর মন খুব ভালো। প্রথমে ওর চেহারা লুক এইসব দেখে ভালোবেসেছিলাম সেইটা হয়তো ছিলো ভালোলাগা আর এতদিন ঘৃনা করেছিলাম সাইকো বলে কিন্তু ওর মন অনেক ভালো”

তিতির কথা শুনে শিশির ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো…..

“তুই কি এখন মাইর খেয়ে মেরে পরে গেলি?”

“হুম। সবাই আদর ভালোবাসা পেয়ে ভালোবাসে আর আমি মাইর খেয়ে ভালোবেসে ফেলেছি হিহিহিহি”

“ইতিহাসের পাতায় নতুন যোগ হলো মাইর খেয়ে প্রেমে পড়েছে দুই হাজার বিশ সালের একটি মেয়ে”

“শুধু মার না রে মারের সাথে আছে কেয়ার আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমার দাদুর জন্য ও যা করেছে তার জন্য ওর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ ”

“অর্ণব ভাইয়া আবার কি করলো…..?

“কিছুদিন ধরে আব্বুর ব্যাবসা অনেক ক্ষতি হচ্ছিলো। ক্ষতি হতে হতে প্রায় অনেক দেনা হয়ে যায়। ঠিক তখন দাদুর অনেক বড় একটা অসুখ হয়। আর তুই তো জানিস আমার দাদু আমাদের সবার প্রাণ। তখন আব্বু কে কেউ টাকা পয়সা দিয়ে হেল্প করে নাই পরে অর্ণব অচেনা মানুষ হয়ে আব্বু কে সাহায্য করে। আর অর্ণবেই নাকি আব্বুর আগের ব্যাবসা ফিরিয়ে আনে”

“ওহ মাই গড, এত কিছু তুই জানলি কিভাবে?”

“আম্মু কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়ে সব বলেছে । আর আমি অর্ণবের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি এখন যদি বলিস আমাকে মারার কথা তাহলে বলবো দোষ কিন্তু আমারই ।আমার মুখে যা আসে তাই বলি এই জন্যই তো অর্ণবের রাগ উঠে তাই প্রমিজ করেছি আর অর্ণবকে রাগাবো না”

“হুম গুড। চালিয়ে যা বাই দা ওয়ে বাসর রাতের প্ল্যান কি বলে ফেল। এখনতো মিয়া বিবি দুজনেই রাজী”

“কি আর প্ল্যান সারারাত গল্প বলবো আর জোসনা বিলাস করবো এক মগ কফি সাথে নিয়ে”

“যাহ পুরাই বোরিং(নাক কুঁচকে) আমার প্ল্যান শুন?”

“হুম”

“ওইদিন আমি আর আমার জামাই বাগান ওয়ালা ছাদে খাট সাজাবো। চারপাশে থাকবে হাজার হাজার ফুল। মোমবাতি দিয়ে পুরো ছাদ আলোই আলোকিত হবে। বিভিন্ন রঙের লাইটিং জ্বলবে। আর আমি আর আমার বর সারারাত টিকটিক আর লাইভ করবো আমাদের সাথে থাকবে ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুরা বলতো কিরকম ইন্টারেস্ট বিষয় তাই না”

“আমার মনে হয় আপনি মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ভাইরাল নাটক দেখেছেন তাই আর কি এইসব ভুল চিন্তা ভাবনা ”

“হুম। ফ্রী ওয়েফাই পাইছি তাই সুযোগের সৎ ব্যাবহার করে ফেলেছি হাহাহা”

“হুম বুঝছি এখন ঘুমা আর আমি ও ঘুমাই”

“ওকে ওকে মুরগি”

শিশির মুরগি বলাতে তিতি চোখ রাঙিয়ে মুখ বাঁকা করে বললো…..

” ভাঙ্গা বাঁশি কোথাকার”

পরেরদিন সকাল বেলা ?……

তিতি ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব ওর দিকে কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। এতে তিতি কিছুটা অসস্তি বোধ করে। অর্ণব তা বুঝতে পেরে মাথা ঝুঁকে তিতি কে কোলে তুলে রুমের সাথে থাকা বারান্দায় নিয়ে যায়……

“কি হয়েছে আজ মহারাজের এত সকাল সকাল এত আদর কোনো কি মতলব আছে নাকি হুম?”

“আমার আবার কিসের মতলব তিতির পাখি?”

“তাহলে এত সকালে কোলে নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”

“তোমাকে একটা জিনিষ দেখাবো চোখ বন্ধ করো”

“কেনো চোখ বন্ধ করবো কেনো?”

“জিনিসটা দেখার জন্য প্লিজ চোখ বন্ধ করো?”

“আচ্ছা ঠিক আছে”

অর্ণব তিতি কে বারান্দায় নিয়ে যায়। তিতির কানে কিচিরমিচির শব্দ আসে তিতি শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখে ওর তুতুলি আর তিতলি খাঁচায় বসে বসে খাচ্ছে আর শিস বাজাচ্ছে। ও অবাক হয়ে তুতুলি আর তিতলি কে দেখতে লাগলো আর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো……

“তুমি না ওদের মেরে ফেলেছিলে?”

“উহু তুমি ভাবলে কিভাবে ওদের আমি মেরে ফেলবো। তুমি যাদের খুব বেশি ভালোবাসো তাদের কি আমি মারতে পারি। হয়তো রাগের মাথায় বাজে কথা বলি এই বলে যে সত্যি সত্যিই মারবো তা কিন্তু নয়”

“তাহলে বাসায় যে ওই পাখি গুলো ছিলো?”

“ওইগুলো খেলনা পাখি ছিলো। তুমি মনে হয় ধরে দেখ নাই তাই ভেবেছিলে আমি মেরে ফেলেছি।”

“হুম। তাহলে তুমি ওদের এইখানে আনলে কেনো?”

“আমি জানি এরা তোমার হৃদয়ের কিছু ভাগ নিয়ে বসে আছে তাই ওদের নিয়ে এসেছি যেনো ওদের দেখে ওদের দেখাশোনা করে তোমাকে সব সময় অনুভব করতে পারি আর যেনো মনে হয় তুমি সব সময় আমার পাশে আছো”

“সরি অর্ণব আমি না বুঝে তোমার সাথে কত অন্যায় করেছি কত কিছু বলেছি আর থাপ্পড় মেরেছি ক্ষমা করে দাও”

“একটি শর্তে ক্ষমা করতে পারি”

“কি”

“একটা মিষ্টি দেও তাহলে”

“যাহ পারবো না”

“যে গালে এত থাপ্পড় মারতে পারলে সেই গালে একটু আদর করতে পারবে না?”

অভিমানী সুরে বলল অর্ণব…..

“ওলেলে বাচ্চা ছেলেটা রাগ করেছে আদর খাবার জন্য”

অর্ণবের গাল টেনে…..

“তুমি মজা নিচ্ছো এখন”

“মজা কই নিলাম?”

“দিবে না আদর?”

“হুম দিচ্ছি তো আগে চোখ বন্ধ করো”

“কেনো?”

“আমার বুঝি লজ্জা করে না”

“ওরে আমার লজ্জাবতীরে করছি চোখ বন্ধ”

অর্ণব চোখ বন্ধ করলো। তিতি মাথা উপরে ঝুঁকে অর্ণবের গালে ঠোঁট ছোঁয়াতে চেয়েও পারলো না। কজ অর্ণব ওর থেকে অনেক লম্বা তাই ও আশে পাশে তাকিয়ে দেখে একটি কাঠের মুড়া খুব সুন্দর নকশা করা ও ওইটাই দাড়িয়ে অর্ণবের গালে কিস করলো। অর্ণব সাথে সাথে চোখ খুলে তিতির কোমর জড়িয়ে ধরে বলে……

“ছোট বেলায় কমপ্লেন খাওয়ার দরকার ছিলো তোমার তাহলে আরেকটু লম্বা হতে পারতে পিচ্ছি তিতির পাখি”

তিতি মুখ আঁধার করে তাকিয়ে বললো…..

“আমাকে কি তোমার ছোট মনে হয় জানো আমার হাইট পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি আর তুমি তো খাম্বা ছয়ের উপরে তাই তো ধরতে পারি না”

“অর্ধেক পা কেটে ফেলতে হবে মনে হচ্ছে”

“হুম কেটে পেলো”

“তিতির পাখি একটা কথা বলি?”

“হুম বলো”

“আমরা তো স্বাধীন ভাবে চলতে পছন্দ করি নিজের মতো থাকতে পছন্দ করি তাই না?”

“হুম”

“তাহলে তো তুতুলি আর তিতলির ও ইচ্ছা হয় ওদের মত খুলা আকাশে ডানা মেলে উড়তে। নিজেদের মতো করে পুরো আকাশ ঘুরতে তাই না”

“হুম”

“তাহলে চলো ওদের মুক্ত করে দেই। ওরা ওদের মতো চলুক”

“ওকে”

অর্ণব তিতলি কে হাতে নিলো তিতি তুতুলি কে পরে দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি নিয়ে বললো…..

“আজ থেকে তোরা মুক্ত। যখন মন চাইবে চলে আসবি আমাদের কাছে আজ থেকে নিজের মনের মতো চলতে থাক কেউ বাঁধা দিবে না তোদের”

অর্ণব আর তিতি তুতুলি ও তিতলি কে আকাশে উরিয়ে দিলো……

???

শিশির ঘুমের ঘোরে হাত দিয়ে তিতি কে খুঁজতে লাগলো। তিতি কে না পেয়ে চোখ খুলে দেখে ওর সামনে প্রবণ। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে ও অন্য রুমে শুয়ে আছে……

“আচ্ছা আমার কি এখন ঘুমের ঘোরে হাঁটা চলা করার অভ্যাস হলো নাকি?”

“কেনো?”

“এই যে দেখেন না ঘুমিয়েছি অন্যরুমে আর জেগে দেখি এই রুমে। আমি তো জানতাম ঘুমের ঘোরে আমি ক্রিকেট ফুটবল খেলি আবার নাগর দোলা উঠে সারা বিছানা ঘুরি বাট এই প্রথম দেখলাম এক রুম থেকে অন্য রুমে চলে এসেছি”

প্রবণ শিশিরের কথা শুনে নিজের কপালে কিছুক্ষন চাপড় মারলো আর বললো…..

“এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়ছি। মাথায় একটু ঘিলু বলে কিছু নেই”

“ওই মিয়া স্যার বলে ভাববেন না যে আমি আপনাকে ছেড়ে দিবো। আমি কিন্তু মোহরের মতো প্রতিবাদ করতে পারি”

” ওহ আগে তো জানতাম না।বাই দা ওয়ে মোহর কে?”

“আরেহ মোহর কে চিনেন না ও তো হলো স্টার জলসার সিরিয়ালের এমন একজন ছাত্রী যে কিনা স্যারের সাথে চ্যালেঞ্জ করতে ও পিছ পা হয় না আবার ঝগড়া ও করে। এখন তো আবার স্যারের সাথেও প্রেম করছে ”

“তারমানে তুমি ফাস্ট ঝগড়া করবে চ্যালেঞ্জ করবে পরে প্রেম করবে?”

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো প্রবণ….

“আরেহ না ওইটা তো নাটক বাস্তব না”

প্রণব খুব ধর্য্য নিয়ে শিশিরের বকবক গুলো শুনতে লাগলো। হটাৎ করেই শিশিরের ফোনে ঠং করে বেজে উঠলো।

শিশির সামনে প্রবণ কে দেখতে পেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে লিখাটা পড়লো আর ও কিছু একটা লিখে দিলো। কিন্তু বেচারি শিশির তো জানে না ওর পিছনে খাটের মাথায় ইয়া বড় আয়না লাগানো। প্রবণ আয়না শিশিরের ফোনে আসা ম্যাসেজ আর শিশিরের দেওয়া ম্যাসেজ দেখতে পেয়ে নিজের হাত শক্ত করে মুষ্টি করে রাখলো……

“আমার আপু ম্যাসেজ দিয়েছে”

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে