Love At 1st Sight Season 3 Part – 69

13
9437

Love At 1st Sight
~~~ Season 3~~~

Part – 69

writer-Jubaida Sobti

মৃদু হেসে ধীরধীরে চোখটাও স্থীর করে বন্ধ করে নিলো,শান্তি লাগছে হঠাৎ রাহুলের এই ভেবেই যে স্নেহাকে আর কখনোই কষ্ট দিবে না সে,শান্তি লাগছে এটাও ভাবতেই যে স্নেহার সাথে করা এই অভিমানই তার জীবনের শেষ অভিমান,

____ এইদিকে, খাবার সামনে থেকে সরিয়ে রেখে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে আছে দাদী,

গীতালি : পুরা দিনটাই তো বিশ্রাম করেননাই দাদী, তাই মনে অয় খারাপ লাগতাছে,ঔষধ খাইয়া শুইয়া পড়েন ভালাই লাগবো!

দাদী : তাই তো বলছি, ঔষধ গুলো দে,খেয়েনি!

গীতালি : নট পাসি্বল দাদী! ঔষধ এর আগে কিছু খাবার তো খাওন লাগবোই, তারপরই ঔষধ পাইবেন!

দাদী : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] আচ্ছা যা ঠিকাছে, দে খাবার!

গীতালি : ফাইন! ভেড়ী ভাড়ী ফাইন! [ বলেই মুচকি হেসে দাদীকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলো গীতালি,হঠাৎ ঐসময়ই খেয়াল করলো স্নেহা তাড়াহুড়ো করে শিরি দিয়ে নেমে মেইন ডোরের দিক চলে যাচ্ছে ]

দাদী : আরে স্নেহা! কোথায় যাচ্ছো? [ স্নেহা চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালো দাদীর দিক, দাদী আর গীতালি যেনো আকাশ থেকে পড়লো স্নেহার চেহেরা দেখে, লাল টকটকে হয়ে আছে স্নেহার চোখ দুটো, অশ্রুর জলে পুরো মুখটা ভাসিয়ে রেখেছে ]

গীতালি : আরে ভাবী কি হইলো? কানতাছেন কেন?

স্নেহা : [ আংগুল দিয়ে মেইন ডোরের দিক ইশারা করে ] রা..রাহুল আস..

গীতালি : ভাইয়া তো আসে নাই এহোনো!

স্নেহা : [ ঢোগ গিলে ] মে..মেইন ডোর অন আছে?

গীতালি : না ভাবী বন্ধ রাখছি!

স্নেহা : কিন্তু রাহুল…

গীতালি : ভাইয়া আসলে বেল দিবো ভাবী! চিন্তা কইরেন না! [ বলেই স্নেহার কাছে গিয়ে ]

– কিন্তু ভাবী আফনে কানতাছেন কেন? কি অইছে! [ চোখ দিয়ে স্নেহার আবারো গড়িয়ে পানি পড়ছে, দাদী চিন্তিত চেহেরায় গীতালির দিক তাকিয়ে স্নেহাকে কাছে এনে বসাতে ইশারা করলো ]

গীতালি : [ মাথা নাড়িয়ে ] আসেন ভাবী এইদিকে বসেন! [ বলেই স্নেহাকে টেনে এনে দাদীর পাশের চেয়ারে বসতে দিলো ]

দাদী : কি হয়েছে স্নেহা বলো আমায়?

গীতালি : কোওননা ভাবী! আমার তো মনডা কেমন কেমন জানি লাগতাছে! [ মুখ দিয়ে কিছু আসছিলো না স্নেহার, ফুফিয়ে ফুফিয়েই কেদে উঠছে ]

দাদী : ঝগড়া হয়েছে রাহুলের সাথে?

স্নেহা : [ কেদে কেদে ] দা..দাদী! আ..আসলে আমারই দোষ ছিলো ওর কোনো দোষ নেই! আমি শুধুশুধু না বুঝে ওকে উল্টোপালটা বলে ফেলেছিলাম!

– আর ও রাগ করে বেড়িয়ে গেছে,

দাদী : আরেহ! এতে এতো চিন্তার কি আছে, বিয়ের পর এসব ছোট-খাটো ঝগড়া হয়েই থাকে! সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি কান্না করো না,

স্নেহা : দাদী! ও..আমার সাথে দু-সেকেন্ডের বেশিও রাগ করে থাকতে পারেনা, যা রাগ দেখানোর দেখিয়ে, দোষ ওর থাকুক আর আমার,

– ও এসেই আমাকে সরি বলে দেই, আ..আমি যদি আপনাকে মোমেন্ট গুলো এনে দেখাতে পারতাম,

– কিক..কিন্তু আজ ও রাগ দেখিয়ে চলেই গেছে, আর এখন তো ১০টা বেজে চলছে কতোক্ষণ হয়ে গেছে এখনো আসেনি!

গীতালি : আরে চিন্তার কুনো বিষয় নাই ভাবী, রাহুল ভাইয়ার রাগ উঠলে তো দুই-তিন দিন এমনই বাইরে বাইরে থাহে! [ দাদী চোখ রাংগিয়ে তাকালো গীতালির দিক ]

গীতালি : না! মাম..মানে এহন তো বিয়া হইয়া গেছে তাই না? চইলাই আসবো! নু টেনশান ভাবী!

স্নেহা : দু-তিন দিন?

দাদী : আরে স্নেহা ওসব ওর রাগ উঠলে তখন করতো আরকি, মানে ঐযে আসিফ আর রিদোয়ান, ওদের কারো বাসায়ই থেকে যেতো,

– তবে এখন আর করবে না আমার বিশ্বাস ও চলেই আসবে!

স্নেহা : দাদী! ও আমাকে কল করেছিলো, আমাকে সরি আর আই লাভ..

গীতালি : হুম, কোওননা ভাবী, ভাইয়া আই লাভ ইউ কইছে তাই না? হিহি!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ও আমাকে বাই না বলে ফোন কখনোই কাটে না দাদী!

– কিক..কিন্তু আজ কথার মাঝেই হুট করে ফোন কেটে দিলো,

দাদী : হতে পারে মোবাইলের চার্জ চলে গিয়েছিলো স্নেহা!

স্নেহা : নাহ! দাদী! ও..ওর মোবাইল যখন আমি দেখছিলাম তখনও অনেক চার্জ ছিলো!

গীতালি : এইডাও হইতে পারে মোবাইল হঠাৎ নষ্ট হইয়া গেছে!

স্নেহা : তা কিভাবে হবে গীতালি, এমনটা হয় নাকি? আ..আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে রাহুলের সাথে,

– দাদী ট্রাষ্ট মি! আমার মন বলছে রাহুল হয়তো কোনো কষ্টে আছে!

দাদী : আচ্ছা আচ্ছা শান্ত হোও স্নেহা! আমি বুঝছি সব!

– এভাবে টেনশন করলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে!

স্নেহা : দাদী! আমি ফোন বেক করছিলাম, কিন্তু ও..ওর ফোন হঠাৎ করেই সুইচড অফ আসছে,

দাদী টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে স্নেহার দিক এগিয়ে দিয়ে,পানি পান করতে বললো স্নেহাকে, গলা দিয়ে তো পানি গুলোও নামবে না স্নেহার, তাই খাবেনা বলেই মাথা নাড়ালো স্নেহা,

দাদী : এভাবে ভেংগে পড়লে কি চলবে? তুমি তো জানোই ওর কান্ড গুলো বাচ্চাদের মতোই,

– হয়তো কোনো ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডায় পড়ে গেছে,

স্নেহা : দাদী! ও আমায় বাই না বলে কখনোই..

দাদী : হ্যাঁ! তা করেছে কেনো আজ? বাই না বলে ফোনো কেনো কাটলো ও? এটার জন্য আজ বিচার হবে ওর!

– আসুক শয়তানটা!

– বিয়ের তিনটা দিন যাচ্ছে মাত্র এরই মধ্যে মেয়েটাকে কাদিয়ে ছাড়ছে,কতো বড় সাহস!

গীতালি : ভাবী আপনি টেনশান কইরেন না, ভাইয়া চইলাই আসবো, আপনি পানি খান আর মাথা ঠান্ডা রাখেন,

দাদী : নাও স্নেহা! চিন্তা করোনা ও চলে আসবে, [ কি আর করার স্নেহার ও দাদীর কথায় মনকে বুঝ রেখে গ্লাসটি এগিয়ে নিয়ে কিছু পানি খেয়ে নিলো ]

দাদী : ও তোমায় অনেক চাই স্নেহা! নিজের চেয়ে ও বেশি চাই!

– জীবনটাকে কষ্টের চাপা থেকে সরিয়ে এনেছে শুধুমাত্র তোমার ভালোবাসা পেয়ে! নিজেকে বদলে নিয়েছে তোমার কারণে,

– শুধু রাগটা উঠলে একটু সামলে থাকতে পারেনা আরকি, এতে মন খারাপ করার কিছু নেই, মাথা ঠান্ডা হলে ঠিকই চলে আসবে,

– চিন্তা করোনা ঠিকাছে? [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]

দাদী : মুখটা শুকিয়ে আছে, চলো ডিনার করে নাও!

গীতালি : হো ভাবী! ডিনার কইরা নেন, গীতালির হাতের রান্না খাইয়া তো আপনি সব কষ্টই ভুইলা যাইবেন [ বলেই প্লেট এগিয়ে দিলো ]

স্নেহা : না নাহ! আ..আমি ও আসলে ওর সাথেই খাবো!

গীতালি : কিন্তু ভাবী..

স্নেহা : সত্যিই! আ..আমার এখন ক্ষিধে নেই!

গীতালি : হো ভাইয়া নাই তাই ক্ষিধাও নাই! ভাইয়া আইলে ক্ষিধাও চইলা আসবো তাই না?

দাদী : আচ্ছা ঠিকাছে তুমি রাহুল আসলে ওর সাথেই খেয়ে নিও!

– আর গীতালি শোন! হার্শকে বলেছিস ডিনারের কথা?

গীতালি : স্যার তো দুনিয়ার সব কাগজপত্র নিয়াই বইছে কাজ করতো, তাই ডিনার রুমেই পাঠাইয়া দিতে কইছে,

দাদী : এই তিনদিনের জমানো কাজ সব আজই নিয়ে বসে গেছে হয়তো, আচ্ছা ঠিকাছে তুই গিয়ে ডিনার পৌছে দিয়ে আয়!

[ বলেই আবার স্নেহার দিক তাকাতে দেখে চেহেরাটা এখনো কাদো কাদো করে রেখেছে স্নেহা, দাদীর ও টেনশন হচ্ছে রাহুলের জন্য, কিন্তু তাও কি করার সাহস তো দিতেই হবে স্নেহাকে ]

দাদী : স্নেহা! তুমি যাও রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো, ভালো লাগবে, আর হ্যাঁ ওকে নিয়ে চিন্তা করোনা ও চলেই আসবে,

[ কিন্তু রাহুলের চিন্তার ধ্যান তো ছুটছিলোই না স্নেহার মাথা থেকে, তাও দাদীর কথার সম্মতি দিয়ে উঠে চলে এলো রুমে, বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে ]

____ এইদিকে গাড়ীতে বসে স্টেয়ারিং এর উপর এখনো মাথা রেখে ভেবে যাচ্ছে রাহুল,

স্নেহা তো তার ভালোবাসা,বেচে থাকার আস্থা, এই স্নেহাই তো সেইসব ভালোবাসা এনে দিয়েছে তার জীবনে, যেইসব ভালোবাসার বঞ্চিত হকদার ছিলো রাহুল, জীবনটা পেড়িয়ে যাচ্ছিলো ঠিকই, কিন্তু এই জীবন উপভোগ করতে শিখিয়েছেই তো তার স্নেহা,

এতোদিন স্নেহাকেই প্রমিস করেছিলো সে, কিন্তু আজ নিজের কাছেই প্রমিস করছে রাহুল, দূঃখ্যকে কাছে ঘেষতে দিবে না আর তার স্নেহার, লড়াই করে যাবে সে সবকিছুর সাথেই,

স্নেহা যদি তবুও ভুল বুঝে, বলবে ভালোবাসি,
স্নেহা যদি অভিমান করে, তাও বলবে ভালোবাসি,
স্নেহা যদি দূরেও ঠেলে দেই তখন ও বলে যাবে ভালোবাসি, ভালোবাসবো, ভালোবেসেই যাবো!

সস্থির একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথাটা গাড়ীর স্টেয়ারিং থেকে তুলে জানালার গ্লাসের দিক তাকালো, গ্লাসটি সম্পূর্ণ ধূসর হয়ে গেছে, এতো তাড়াতাড়ি কুয়াশা জমে যাওয়ার ওতো কথা না, গাড়ী এখনো স্টার্টে রয়ে গেছে, তা খেয়াল করে গিয়ারটা টেনে পেছনে বেক দিতে চাইলো, কিন্তু গাড়ী পেছনে বেক যাচ্ছিলো না, ক্লান্ত অনুভব করে সিটে হেলান দিয়ে বসে পড়লো আবারো, মনের মধ্যে করে ফেলা ভুলটিই বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছে, স্নেহার সাথে যা রাগ দেখানোর দেখিয়েছে তবে প্রমিস ভংগ করে ড্রিংক্সটা না করলে হয়তো গাড়ীটাও আজ সেইফলি চালানো যেতো, ঘাড় থেকে কিছু রক্ত হাতে নিয়ে তাকাতেই কষ্টটা যেনো আরো বেড়ে উঠলো রাহুলের, ভাবছে স্নেহার সাথে রাগ দেখিয়ে চলে আসাতে স্নেহা যতোটুকুইনা যন্ত্রণা ভোগ করছে তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা তো তখনি পাবে মেয়েটা, যখন সে রাহুলকে এই রক্ত মাখানো অবস্থায় দেখবে,

মাথায়ও কিছু আসছিলো না কি করবে এই মুহূর্তে,

গাড়ীর দরজার লক খুলে পা দিয়ে ধাক্ষে মেলে নিলো, বাহিরের চারদিক চোখ বুলাতেই নজর পড়লো ট্রাকের সামনে দাড়িয়ে থাকা ড্রাইভার আর হেল্পারটিক দিকে,

রাহুলকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে এলো তারা দুজন ও, রাহুল ও আবছা আবছা চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, গাড়ীর ধোয়াই যেনো দমটা যায় যায় অবস্থা, কাশতে লাগলো রাহুল!

ড্রাইভার : রহমত করছে আল্লাহ! আপনি ঠিগাছেন, তাড়াতাড়ি বেড়িয়া ঐদিকটা আইয়েন, গাড়ীটা ফুডতে পারে যে কোনো সময়, [ ড্রাইভারের কথা শুনে,রাহুল মৃদু হেসে গাড়ী থেকে বেড়িয়ে দাঁড়ায় ]

হেল্পার : স্যার! না হাইসা, জলদি আইয়েন, আমার তো ভয়ে কইলজা কাপে,

রাহুল : ডোন্ট ওয়ারি ব্লাষ্ট হবে না, [ বলেই রাহুল এগিয়ে গিয়ে, গাড়ীর সামনের আলগে যাওয়া বনাটের পার্টটা ধাম করে হাত দিয়ে বারি মেরে লাগিয়ে দেই, সাথেসাথে গাড়ীর ধোয়া বেরুনোও বন্ধ হয়ে যায় ]

ড্রাইভার : মাফ করবেন সাহেব, আমি আপনারে অনেকবার সিগন্যাল লাইট মারছিলাম, কিন্তু আপনার গাড়ীর স্পিড লিমিট করতাছিলেন না,আবার ট্রান সিগন্যালও মারছি কিন্ত তাও,

রাহল : দ্যাটস ওকে! ডোন্ট সে্ সরি, এক্সুলি ইট ওয়াজ মাই মিস্টেক, আই নোও!

হেল্পার : স্যার আপনার, মাথা থেইকা তো রক্ত ঝড়তাছে,

ড্রাইভার : আইয়েন আপনারে হস্পিটাল পৌছায়া দেই!

রাহুল : আম ফাইন! থেংক ইউ! [ বলেই গাড়ীর ভেতর ঢুকে বসলো আবার ]

হেল্পার : স্যার আপনে এই অবস্থায় গাড়ী কিভাবে চালাইবেন? আইয়েন আমরা পৌছায়া দেই, আর গাড়ীর অবস্থাডাও ভালো মনে হইতেছে না,

রাহুল : মরতে মরতে বেচে গেলাম, দ্যাট মিনস্ ও নিজের জানের বদলে আমার জান ভিক্ষার প্রে করছে,

– কতটা চাই আমাকে, আর আমি স্টিল ইডিয়ট একটা, ওকে হার্ট করেছি, কাদিয়েছি, [ ড্রাইভার আর হেল্পার দুজনেই হতভম্বের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিক, চোখে পানি এসে জমে গেছে রাহুলের ]

রাহুল : হস্পিটাল যেতে হবে না, আ..আমার হস্পিটাল তো ওই, ওর চেহেরার দিক তাকাতেই শান্তির আহবান চলে আসবে, ওর হাতের স্পর্শে সব ক্ষতই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, ইউ নোও দ্যাট? শি ইজ অ্যা ম্যাজিক্যাল লাভ!

[ বলেই পাশ মুরে তাকালো ড্রাইভার আর হেল্পারটির দিক, তাদের চেহেরার অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো রাহুল,এরা তার কথায় কিছুই বুঝে উঠেনি, তাই মৃদু হেসেই রাহুল তাদের জিজ্ঞাসা করলো ]

রাহুল : বাসায় বউ আছে?

হেল্পার : [ একটু লজ্জা পেয়ে ] আমার তো বিয়াই হইলো না স্যার বউ কেমনি থাকবো? কিন্তু উ..উনার আছে, [ বলেই আংগুল দিয়ে ড্রাইভার এর দিক ইশারা করে দেখিয়ে দিলো ]

ড্রাইভার : জ্বি সাহেব! আ..আছে!

রাহুল : ঝগড়া করে?

ড্রাইভার : হো সাহেব! মাঝে মাঝে মাল দিয়া বাসায় যাইতে দেরী অয়, তহন অনেক ঝগড়া করে,

রাহুল : তুমিও করো?

ড্রাইভার : করমু না? আমারে কয় এতো দেরী অয় কেন? বিয়া আরেকটা করছোনি যে ঐ ঘরের বউরে ও টাইম দিয়া আইতে অয়! আরো কতো কি সাহেব প্যানপ্যান করতে তাহে খালি, তাই আমিও কয়ডা হুনায়া দেই!

রাহুল : নো স্টুপিড! ও সারাদিন একা থাকে, তোমায় মিস করে বলেই এমন কথাটা বলে, আর এমন কথাগুলো বলার মানে এই না যে তোমার উপর ওর বিশ্বাস নেই,

– এ..এমন ওতো হতে পারে যে ও চাইনা ওর ভালোবাসার অন্য কেউ ও ভাগ নিক!

– সো্! কখনো হার্ট করে আ..আই মিন কষ্ট দিয়ে কথা বলবা না, ওরা তো ওদের সবকিছু ছেড়ে, আমাদের ভালোবাসার ভরসায় হাত রেখে জীবনসংগী হয়ে আসে,

– [ মুচকি হেসে ] সকালে রিদকে এসবই বুঝাচ্ছিলাম জানো? আর এখন আমি নিজেই একই ভুল করে বসে আছি,

– এক্সুলি আমি না একটা বিগেষ্ট স্টুপিড!

– [ কিছুক্ষণ পর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] ওকে গাইস্ নাও আই হেভ টু গো! কপালে যদি থাকে, তাহলে নেক্সট টাইম আবারও দেখা হবে!

ড্রাইভার : কিন্তু সাহেব আপনি যাইতে পারবেন এই অবস্থায়?

রাহুল : [ হেসে ] ইয়াহ! এক্সুলি আমার গাড়ী আমার মতোই স্ট্রং! সো্ ডোন্ট ওয়ারি! [ ড্রাইভার আর হেল্পার দুজনই মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো ]

রাহুল : বাই দ্যা ওয়ে! কষ্ট করে আমাকে একটা হেল্প করো!

– আসলে! গাড়ীর ফ্রন্ট টায়ারটা গাছের শেকড়ের সাথে আটকে গেছে, তাই একটু সামনে থেকে যদি ধাক্ষা দাও, আ..আমি পেছনে বেক দিচ্ছি অতোটাও বেশী শক্তি ব্যয় হবে না!

হেল্পার : আরে স্যার! কি কইতাছেন এসব? কিসের কষ্ট, দাড়ান এহনি দিতাছি, [ বলেই ড্রাইভার আর হেল্পার দুজন মিলেই রাহুলের গাড়ীটা সামনে থেকে ধাক্ষা দিলো, এতে রাহুল তার গাড়ী সহজেই পেছনে নিয়ে আসে, দুজনকে,ধন্যবাদ জানিয়ে, বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো রাহুল ]

___ এইদিকে, রাহুলের রুমের দরজায় কড়া নেড়ে ভেতরে ঢুকলো দাদী, স্নেহাও শব্দ পেয়ে চোখ মুছে বারান্দা থেকে রুমে এগিয়ে এলো,

দাদী : স্নেহা! আমি আমার রুমে যাচ্ছি, তোমাদের দুজনের ডিনার টেবিলে রাখা আছে, রাহুল আসলে একত্রে খেয়ে নিও, আর হ্যাঁ তোমার যদি কিছু লাগে তাহলে গীতালি থেকে চেয়ে নিও!

স্নেহা : জ্বি! দাদী!

দাদী : টেনশন করোনা কিন্তু! এইভাবে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে তাই না? [ মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো স্নেহা, দাদী ও স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তিনিও চিন্তিত চেহেরায় নিজের রুমে চলে গেলো ]

অসস্তিবোধ অবস্থায়, রুমের এদিকওদিক হাটাহাটি করছে, স্নেহা! ঘড়িতে সময় দেখছে বারবার, ১১টা বেজে ২৫ মিনিট, চিন্তা যেনো এইবার স্নেহার রক্তে মিশে যাচ্ছে, মোবাইলটা এগিয়ে নিয়ে আরো কয়েকবার ট্রাই করলো রাহুলের মোবাইলে, সুইচড অফ আসছে রাহুলের ফোন,

কান্না ভেংগে আসছে স্নেহার, নিজেকেই শেষ করে দিতে মন চাইছে, এতোটাও কষ্ট না দিলে পারতো রাহুলকে, গিটারটির দিক চোখ যেতেই আটকে রাখতে পারলো না আর চোখের জল গুলো, ফুফিয়েই কেদে উঠলো, রাহুলকে ছাড়া যে বড্ড একা একা লাগছে নিজেকে, খুব কাছে পেতে মন চাইছে রাহুলকে,

তবে রাহুলের ও কি মন চাইছে না? তার স্নেহাই তো, আর কখনোই করবে না এমন প্রমিস ওতো করেছে, তাও কেনো রাহুল ফিরে আসছে না? ও কি জানেনা ওকে ছাড়া স্নেহার কষ্ট হয়?

চোখ মুছে শালটা গায়ে দিয়ে,ধীরেধীরে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এসে পড়লো স্নেহা, মনটাও ছটফট করছে, এই ভেবে যে এখন তো অন্তত চলে আসার কথা রাহুলের,কিন্তু তাও কেনো আসছে না?
মনকে আর মানিয়ে রাখতে পারলো না স্নেহা, তাই এদিকওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে, মেইন ডোর খুলেই বেড়িয়ে গেলো, ধীরো পায়ে গার্ডেনের দিক এগিয়ে এলো, রাহুলের গাড়ীটি নেই দেখে চোখটা ভিজে আসলো আবারো, আশেপাশে চোখ বুলাতেই যেনো হাজারো ভালোবাসার সৃতি উকি দিচ্ছিলো তাদের,

একই ভুল সেইদিনও বুঝে ছিলো স্নেহা, সব বাধা পেড়িয়ে এই গার্ডেনের দিকই রাহুলের বুকে ঝাপটে পড়েছিলো সে, গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে দিতেই মনে পড়ছে এইদিকটা দাড়িয়েই সবার সামনে প্রপোজ করেছিলো রাহুল,

গেষ্ট হাউজের পথটা চোখে পড়তেই রাহুলের কোলে চড়ে গাড়ীতে উঠার বায়না গুলোও মনে পড়ছে স্নেহার,

কেদে মরছে স্নেহা, ঝড়ে পড়ছে বেদনার অশ্রু,

হঠাৎ গাড়ীর হর্ণের শব্দ ভেসে আসলো কানে, তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে দারোয়ান গেইট খুলে দিয়েছে, সাথেসাথেই হাই স্পিডে, ঝঞ্জার হয়ে যাওয়া সাদা রঙের একটি গাড়ী প্রবেশ করলো গেইট দিয়ে, গাড়ীটি গভীর চেনাই মনে হচ্ছিলো স্নেহার, তবে গাড়ীর অবস্থা দেখে হৃদস্পন্দনগুলো যেনো অতি দ্রুতই কাপতে শুরু করে দিলো তার,

স্নেহার সামনে বরাবর কিছুটা দূরত্ব রেখেই গাড়ীটি এসে থামলো, গাড়ীর দরজা খুলেই বেড়িয়ে দাড়ালো রাহুল, স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে চোখের জলে ভিজিয়ে চুপসে রেখেছে মুখটা,

মূর্তি হয়েগেছে স্নেহাও, রাহুলের হাল দেখে, হাত-পা সবই কেপে চলছে তার, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধীটাই মনে হচ্ছে আজ,

দাঁড়িয়ে থাকার সব শক্তি হারিয়ে হঠাৎ মাটিতেই লুটিয়ে বসে পড়লো স্নেহা,

গাড়ীর দরজা লাগিয়ে ধীরো পায়ে এগিয়ে এসে, হাটু গেড়ে স্নেহার বরাবরই বসে পড়লো রাহুল ও, নিস্তব্ধ হয়ে আছে দুজনই, দুজনের চোখে দুজনই অপরাধী আজ! কান্না ভেঙে আসছে রাহুলের ও হঠাৎ, স্নেহা অনেক কষ্ট পেয়েছে আজ, তা স্নেহার চোখের দিক তাকিয়েই বুঝতে পারছে রাহুল, পলক ঝুকিয়ে স্নেহার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কাদো কন্ঠে বলে উঠলো,

রাহুল : এভাবে চুপ করে থেকোনা স্নেহা! তোমার নিরবতা আমার বুকে আরো ক্ষত করে চলছে, [ চোখ বুজে জল চেপে ফেললো স্নেহা, রক্ত মাখানো রাহুলের চেহেরাটি দেখার সাহস হচ্ছিলো না তার ]

রাহুল : তোমার থেকে দূরে গিয়ে বু..বুঝেছি আজ স্নেহা! তোমাকে কষ্ট দিয়ে বুঝেছি, আ..আমি কতটা খারাপ আসলে, আমি মোটেও ভালো হাজবেন্ড না, বিয়ের দিন তোমায় প্রটেক্ট করতে পারিনি, হাতের যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছিলে তুমি, গতকাল রাত তোমায় না বলে চলে গিয়েছিলাম,আর সারারাত কেদেছো তুমি, আর আজ আবারো তোমার উপর রাগ দেখিয়ে চলে গিয়েছি, তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো, কেদেছো, এখনো সেই কষ্টেই কেদে চলছো আমি জানি!

– কিক..কিন্তু স্নেহা! ট্রাষ্ট মি, আমার তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইন্টেনশন থাকেনা, আ..আমি তো তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটা হিসেবেই দেখতে চেয়েছিলাম, আমি তোমাকে শুধু ভালোবাসতে চেয়েছি! কষ্ট গুলো তোমার আড়ালে সরিয়ে নিতে চেয়েছি,

– কিন্তু সবকিছুতেই আমি ব্যর্থ স্নেহা! তো..তোমার এতোটা ভালোবাসা আমি ডিজার্ব করিনা! শাস্তি দাও তুমি আমায় স্নেহা! নাহলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না, সত্যি কখনোই পারবো না, [ বলেই কান্নায় ভেংগে পড়লো রাহুল, দু’হাত দিয়ে রাহুলের মুখ তুলে ধরে চোখের জল গুলো মুছে দিলো স্নেহা, চুল সরিয়ে কপালের রক্ত গুলো হাতে ছুতেই, রাহুল খুব কষ্ট পাচ্ছে ভেবেই বুকটা কেপে উঠলো স্নেহার ]

রাহুল : স্নেহা! আ..আমি তোমাকে দেওয়া প্রমিস ভেংগেছি, ড্রিংক্স করে ড্রাইভ করেছি আমি, [ কপাল থেকে কিছু রক্ত হাতে নিয়ে ] এগুলো দেখে মোটেও কেদো না, এসব তো তারই শাস্তি!

স্নেহা : শাট-আপ রাহুল! আপনি সবকিছুর দোষ নিজের উপরই কেনো দিচ্ছেন?

রাহুল : কাক..কারণ আমি দোষ করেছি স্নেহা! আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি,

স্নেহা : আ..আমার মন বলছিলো রাহুল,কিছু একটা হয়েছে আপনার সাথে, আপনি কষ্টে আছেন এমনই বলছিলো আমার মন,

রাহুল : হুহ! জানি!

– কারণ তোমার মনটা তো আমার কাছে সপে রেখেছো, তাই তোমার সবকিছু জানা হয়ে যায়,

– স্নেহা!

স্নেহা : হু!

রাহুল : তুমি আমার জন্য প্রে করছিলে?

স্নেহা : হু! [ বলেই মাথা নাড়ালো ]

রাহুল : জানতাম! আমার মন ও তাই বলছিলো!

স্নেহা : [ ফুফিয়ে কেদে ] রাহুল! আমায় ছুয়ে বলুন, আর কখনোই আমার থেকে দূরে গিয়ে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবেন না,

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] কখনো না!

স্নেহা : আ..আমিও প্রমিস করছি রাহুল! আর কখনোই ভুল বুঝবো না আপনাকে!

রাহুল : আম সরি স্নেহা! আ..আই হার্ট ইউ!
[ স্নেহা তার শাড়ীর আচল টেনে রাহুলের কপাল থেকে বেয়ে পড়া রক্তের উপর চেপে ধরে কাদতে লাগলো, রাহুল ও মৃদু হেসে আংগুল দিয়ে স্নেহার চোখের জল মুছে দিতে লাগলো ]

স্নেহা : এসব কিছুই হতো না, যদি আমি তখন আপনাকে ভুল না বুঝতাম!

– অ..অনেক কষ্ট হচ্ছে আপনার তাই না?

রাহুল : মোটেও না, বরং শান্তি লাগছে এখন তোমায় দেখে,

স্নেহা : এসব রোমান্টিক ডায়লগ বলা বন্ধ করুন, আমি জানি আপনার কষ্ট হচ্ছে,

রাহুল : স্নেহা!

স্নেহা : হু!

রাহুল : আমি তোমায় কষ্ট দিবো না আর কখনো, আ..আর কখনোই রাগ দেখাবো না তোমার সাথে, আ..আমি বেষ্ট হাজবেন্ড হবো তোমার স্নেহা! বাবার বিজনেসে জয়েন করবো বেষ্ট বিজনেসম্যান হবো, বাবা-মা কে এক করবো, বেষ্ট সো্ন হবো!

– ব্যাস! তু..তুমি আমার সাথে এভাবেই থাকবা অলোয়েজ!

– বলো? থাকবা তো? [ স্নেহা কেদে মাথা নাড়িয়ে রাহুলের চোখের জল মুছে কপালে একটি চুমু খেলো ]

রাহুল : এন্ড স্নেহা! তুমি চিন্তা করোনা, নেহাকে আমদের মাঝে আর কখনোই আসতে দেবো না, আ..আমি এক্ষুণিই নেহার নাম্বারটা ব্লক করছি তোমার সামনেই! [ বলেই রাহুল তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ীর দিক এগিয়ে গিয়ে মোবাইল খুজতে লাগলো, স্নেহা ঐদিকটা বসেই রাহুলের কান্ড দেখছে, কিছু সময় পরই রাহুল গাড়ীর দরজা বেধে কাতর দৃষ্টিতে তাকালো স্নেহার দিক ]

রাহুল : এ..এক্সুলি গাড়ী যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তখন নিশ্চয়ই মোবাইলটা কো..কোথাও পড়ে গিয়েছে, [ কোনো জবাব দিলো না স্নেহা, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফুফিয়ে কেদে দৌড়ে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো রাহুলকে, রাহুল ও মৃদু হেসে আগলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলো স্নেহাকে ]

স্নেহা : আই লাভ ইউ রাহুল!

রাহুল : আ..আই লাভ ইউ স্নেহা!

শীতল বাতাসে কুড়িয়ে মুড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই আছে স্নেহা, সাথে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেদে ও চলছে, সবই ফিরিয়ে পাওয়া সুখের কান্না স্নেহার, সৃতি ভেসে উঠলো রাহুলের চোখেও, ঐদিনও ঠিক স্নেহা এই জায়গাতেই এভাবে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিলো তাকে, মনে পড়তেই মুচকি হাসলো রাহুল, সাথে চোখটাও ভিজে গেছে, তবে তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে দু-হাত দিয়ে স্নেহার চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে মুখ-খানি তুলে ধরলো, লালচে স্নেহার চেহারাটা রাহুলের মনটাকে যেনো মাতালই করে দিচ্ছে, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্নেহার কপালে একটু চুমু দিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া স্নেহার শালটা কুড়িয়ে নিলো,

আবেগময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্নেহা, রাহুল স্নেহার গায়ে পেছিয়ে দিলো শালটা,
স্নেহার চোখের অশ্রুর বাধাহীন অবস্থা দেখে মৃদু হেসে রাহুল আবারো স্নেহার চোখের নিচটা দু-হাতে মুছে দিলো,স্নেহাও তার ঝাপসানো চোখ দুটো দিয়ে মিটমিট করে চেয়ে যাচ্ছে রাহুলের দিক,

আর না ভেবে রাহুল স্নেহার হাত ধরে পাশমুড়িয়ে দিয়ে হুট করেই কোলে তুলে নিলো,

স্নেহা : রাহুল! আপনি এই অবস্থায়..

রাহুল : শিসসস! স্নেহা! আম ওকে! [ বলেই হাটা ধরলো রাহুল, বাড়ীর ভেতর ঢুকে মেইন ডোর পেরুতেই হঠাৎ গীতালিকে দেখে থেমে গেলো ]

স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] নামান রাহুল! গী..গীতালি,

রাহুল : সো্ হোয়াট?

গীতালি : আল্লাহর লাখ লাখ শুকোর ভাইয়া! আপনি আইয়া পড়ছেন, ভাবী তো টেনশনে পুরা..

– [ চেচিয়ে ] আরেহ! রক্ত কেন ভাইয়া? কি অইছে?

রাহুল : [ মৃদু হেসে ] তেমন কিছুনা ব্যাস একটু ছোট-খাটো এক্সিডেন্ট হয়েছি,

স্নেহা : [ বিরবির করে ] গাড়ীর অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতো ছোট-খাটো এক্সিডেন্ট হয়েছেন, [ হাসলো রাহুল স্নেহার কথা শুনে ]

রাহুল : আচ্ছা গীতালি দাদী কোথায়?

গীতালি : রু..রুমেই আছে, আর আপনি আইয়েননা দেইখায় টেনশন করতাছে, আ..আমি ইনফাম কইরা আসি,

রাহুল : শুনো!

গীতালি : হুম?

রাহুল : এক্সিডেন্ট এর কথাটা বলতে হবে না, [ গীতালি ঠিকাছে বলে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো ]

রাহুল ও স্নেহাকে নিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে শিরি দিয়ে উঠে গেলো, শিরির ফাষ্ট স্টেপ পেড়ুতেই হঠাৎ স্নেহা নেমে যাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে লাগলো,

রাহুল : হোয়াট?

স্নেহা : রাহুল! আপনার বাবা আসছে, দোহাই লাগে প্লিজ নামান!

রাহুল : তো কি হয়েছে? আমার বাবাই তো!

স্নেহা : বা..বাবাই তো মানে? প্লিইজ রাহুল..

বাবা : আরে রাহুল? কি হয়েছে তোর?

রাহুল : নাথিং বাবা! জাষ্ট অ্যা লিটল-মিষ্টেক!

বাবা : লিটল মিষ্টেক হোয়াট ডু ইউ মিন? রাহুল, ব্লিডিং হচ্ছে তোর হেড থেকে,

রাহুল : এক্সুলি গা..গাড়ী কনফ্রন্ট হয়েছিলো, তাই হেড এ হিট বেশি লেগেছে,

বাবা : কেয়ারফুল থাকবি না?

রাহুল : আই ওয়াজ ড্রাংক বাবা! [ বলতেই রাহুলের বাবা আড়চোখে স্নেহার দিক তাকালো, রাহুল ও তার বাবার চাহনি বুঝে মৃদু হাসলো ]

স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] লাজলজ্জা কিছু নেই আপনার, একটু আগে তো অনেক ভদ্র সাজছিলেন!

– প্লিজ নামিয়ে দিন,

রাহুল : আরে স্নেহা! বাবার সময় বাবাও এমন অনেক করেছে মা কে নিয়ে [ স্নেহা তাড়াতাড়ি রাহুলের মুখ চেপে ধরে মাথা নুয়ে গুটিয়ে যায় রাহুলের বুকে, রাহুল স্নেহার হাতে কামড় দিতেই স্নেহা হাত সরিয়ে নেই তাড়াতাড়ি ]

রাহুল : বাবা! স্নেহা তোমায় লজ্জা পাচ্ছে, সে্ সা্মথিং?

বাবা : [ মুচকি হেসে ] দ্যাটস্ ওকে ডিয়ার, উই আর ডোন্ট মাইন্ড গাই! [ লজ্জা পেয়ে স্নেহা রাহুলের কাধের দিক মুখ লুকিয়ে নিলো, রাহুল আর রাহুলের বাবা ও হেসে দিলো স্নেহার কান্ডে ]

বাবা : বাই দ্যা ওয়ে রাহুল! আমি ডক্টরকে ফোন দিচ্ছি ব্যান্ডেজ করিয়ে নে!

রাহুল : নো নো বাবা! আম ওকে! এন্ড নাও মাচ মোর ওকে,

স্নেহা : ঠিকই তো বলছে! আপনার ব্লিডিং হচ্ছে, ডক্টর লাগবে না এটা কেমন কথা?

– বাবা আ..আপনি ফোন দেন ডক্টরকে! [ রাহুলের বাবা স্নেহার কথায় মাথা নাড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করতেই বলে উঠলো ]

রাহুল : ব্যান্ডেজ স্নেহা করে দিবে বাবা! প্লিজ! নো নিড ডক্টর!

বাবা : [ মৃদু হেসে ] ওকে! টেক কেয়ার ইয়রসেল্ফ! এন্ড গুড নাইট!

– ওহ ইয়াহ, স্নেহা! ইয় অলসো ডিয়ার!

রাহুল : গুড নাইট বাবা! [ চলে গেলো রাহুলের বাবা, রাহুল ও স্নেহার বকবক শুনতে শুনতে রুমে এসে পৌছালো ]

স্নেহা : ব্লিডিং হচ্ছে, কোথায় ডক্টর ডেকে ব্যান্ডেজ করাবে তা না, স্নেহা করে দিবে বাবা!

– আচ্ছা! আপনি আমায় কেয়ারলেস্ বলেন মিষ্টার রাহুল! একবার নিজের দিকও তাকিয়ে দেখেছেন কখনো?

রাহুল : তোমাকে দেখার পর থেকে নিজের দিক ভালো করে কবে দেখেছি, সেটাও মনে নেই!

স্নেহা : [ বিরবির করে ] হুহ! মুহুর্তেই ডায়লগ রেডি!

রাহুল : মিসেস! রাহুল! দরজাটা বন্ধ করতে যদি একটু সাহায্য করতেন!

স্নেহা : খোলাই থাক প্রবলেম কি? লজ্জা তো আপনার শিরা থেকেও হেটে গেছে!

রাহুল : ওওকে এক্সুলি, আই হেভ নো প্রবলেম! [ বলেই দরজার পাশ থেকে সরে যাচ্ছিলো তখনিই ]

স্নেহা : আরে আরেহ! এতো সিরিয়াস কেনো আপনি! ঠি..ঠিকাছে বন্ধ করছি, [ রাহুল মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করিয়ে নিলো, স্নেহা আড়চোখে তাকিয়ে আছে রাহুলের মুখের ফুটন্ত হাসিটির দিক, রাহুল হেটে গিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিলো স্নেহাকে ]

স্নেহা : আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর! [ রাহুল মৃদু হেসে ভোর কুচকে তাকালো স্নেহার দিক ]

স্নেহা : স..সত্যি! [ বলেই রাহুলের চাহনীর লজ্জা পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি, কিছু বললো না রাহুল ও, ব্লাশিং হয়ে, নিজের ঠোটটি নিজেই দাত দিয়ে কামড়ে ধরে ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে হেসে ড্রেসিং এর দিক চলে গেলো, ডেক্স খুলে কি কি যেনো খুজছিলো, স্নেহাও কনফিউজড হয়ে দূর থেকে তাকিয়ে বলে উঠলো ]

– কি খুজছেন আপনি? এইদিকে বসেন আ..আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি,

রাহুল : চুপ করে বসে থাকো, আমি আসছি,

বলেই কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা নিয়ে বিছানার দিক এগিয়ে এসে স্নেহার সামনে রাখলো বক্সটা, জ্যাকেটটাও খুলে বিছানায় ছিটকে ফেলে স্নেহার বরাবর বসে পড়লো, কিছু বললো না স্নেহা, গায়ের শালটা খুলে একপাশ রেখে দিলো সেও, তাকিয়ে আছে রাহুল তা দেখে স্নেহাও মৃদু হেসে বক্স থেকে কটন নিয়ে রাহুলের কপালের ব্লাড মুছে মেডিসিন লাগাতে শুরু করলো, আর রাহুল স্নেহার সামনে বারবার চলে আসা চুল গুলো কানে গুজে দিতে ব্যস্ত!

মাথার ব্যান্ডেজ শেষ করে স্নেহা, রাহুলের ঘাড় বেয়ে পড়া রক্ত গুলোও মুছে দিতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলো রাহুল তার চোখ দুটো কুচকে বটে নিলো,

স্নেহা : আপনার ঘাড়ে ও হিট লেগেছে তাই না?

রাহুল : অ..অল্প একটু!

স্নেহা : ব্যথা করছে আপনার?

রাহুল : তোমার ছোয়াকে ব্যথাও ভয় পাই স্নেহা!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ঢং কম করেন, আমি জানি আপনি ব্যথা পাচ্ছেনকি পাচ্ছেন না,

রাহুল : [ স্নেহার চোখের পানি মুছে দিয়ে ] এই পাগলী কাদছো কেনো? বললাম তো আম ফাইন!

স্নেহা : সব আমার কারণেই হয়েছে, তখন যদি আমি..

রাহুল : শিসসস! স্নেহা ডোন্ট ক্রাই!

চুপ করে গেলো স্নেহা, রাহুল স্নেহার কপালে একটি চুমু দিয়েই, শার্টের বাটন গুলো ছুটিয়ে দিলো স্নেহাকে, স্নেহা ও চোখ মুছে কাদো কাদো চেহেরা নিয়ে রাহুলের বুকের ধারে বেয়ে পড়া ব্লাড গুলো মুছে দিলো, হঠাৎ রাহুল স্নেহার হাত থেকে কটোনটা ছুটিয়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো, অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা!

রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] আজকের রাতটা আমাদের জীবনের সৃতিময় রাত করতে চাই স্নেহা!

স্নেহা কিছু বললো না আহ্লাদিত চোখে তাকিয়ে আছে রাহুলের চোখের দিক, পলক ঝুকিয়ে স্নেহার ঠোটে আলতো একটি চুমু খেয়ে বলে উঠলো,

রাহুল : বলো? দিবা তো?

কোনো জবাব না দিয়ে, স্নেহা ও ধীরেধীরে রাহুলের গলার ধারে মুখ এগিয়ে নিয়ে গভীর একটি চুমু বর্ষণ করলো, চোখ বন্ধ করে মৃদু হাসলো রাহুল! স্নেহার আদর গুলো ও যে এতো মধুময় হয়,তখন নিজেকে নিজের কাছ থেকেই হারিয়ে ফেলতে মন চাই রাহুলের!

স্নেহা সরে আসতেই, রাহুল তার শার্টটা এক্কেবারে খুলে ছুড়ে রাখলো বিছানায়, দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে স্নেহা, রাহুল ও মুখ এগিয়ে তার নাকের সাথে স্নেহার নাকটা চেপে রাখলো,

শিউরে উঠলো স্নেহা,পেটে রাহুলের হাতের আলতো স্পর্শ পেয়ে, কপালে কপাল লাগিয়ে পেছনে ঠেলে স্নেহাকে শুয়ে নিলো রাহুল, স্নেহা তার দু-হাতে রাহুলের দাড়ির উপর আলতো ছুয়ে দিলো,

চোখ বন্ধ করে রাহুল স্নেহার ঠোট জোড়া নিজের ঠোটের দখলে নিয়ে নিলো, কিছু মুহুর্ত পরেই রাহুল তার হাত দিয়ে স্নেহার কাধ থেকে শাড়ীর আঁচলটাও সরিয়ে নিলো,

লজ্জায় স্নেহা রাহুলের ঘাড়ে হাত দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, স্নেহার কান্ড দেখে রাহুল ও মুচকি হেসে, নিজের ঘাড় থেকে স্নেহার দু-হাত দু-দিক থেকে টেনে নিয়ে বিছানায় চেপে ধরে বলে উঠলো,

রাহুল : জানো স্নেহা!

– নেপুলিয়ান বলেছে, তোমরা আমায় একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো,

– আর আজ রাহুল কি বলছে জানো?

– স্নেহা! তোমার আজকের রাতটা আমার নামে করে দাও, আমি তোমায় একটা কিউট বেবী উপহার দিবো,

চোখ মেলাচ্ছিলো না স্নেহা, হাসতে লাগলো, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে লজ্জায় মাথাটা পাশ ফিরিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি, রাহুল ও মুচকি হেসে ধীরেধীরে স্নেহার খালি গলাটি তার ঠোটের গভীর চুমুর স্পর্শে ছুয়ে দিতে লাগলো,

সময় ঘনাতে লাগলো, মান-অভিমান সব ভুলে এই রাতটিতেই রাহুল তার স্নেহাকে নিজের করে নিচ্ছিলো,

চলবে…

13 মন্তব্য

    • apu next part kobe post korbo ta ekhon bolthe parchi na thik kore ,,,,, karon lekhika ei golpo ta lekh off rakhche.. hoyto va oi apor kono plm hoyeche se jonno amora o dithe parchi na .. lekhika jokhoni likhbe amora o sathe sathe golper part golo post kore debo ,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে