Love At 1st Sight Season 3 Part – 63

0
6459

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 63

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : [ রাহুলকে সরিয়ে দিয়ে ] প..প্রমিস?

রাহুল : [ হেসে স্নেহার গালে একটি চুমু খেয়ে ] ইউর প্রমিস! [ স্নেহা মুচকি হেসে খাবার ঠিক করে প্লেট এগিয়ে নিলো, আর রাহুল সেই মুগ্ধকর দৃষ্টিতে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে তার স্নেহাকে, স্নেহা হাত এগিয়ে খাবার মুখে তুলে দিলো রাহুলের, রাহুল হেসে হেসে স্নেহার দিক তাকিয়েই চিবাচ্ছে ]

রাহুল : ঐ!

স্নেহা : হু!

রাহুল : তুমি খাচ্ছো না যে?

স্নেহা : আপনি খেলেই আমার পেট ভরে যাবে!

রাহুল : ও রিয়েলিই!

স্নেহা : হুমম! কিছুটা এমনই, দুটো হার্টের একই স্পন্দন! [ তেডি স্মাইল দিলো রাহুল,স্নেহা তার ডায়লগ তাকেই ইউজ করছে, ঐদিনের সেই মুহুর্তটির কথাও মনে পড়ে গেছে রাহুলের ]

স্নেহা : [ খাবার এগিয়ে দিয়ে ] কি হলো? নিন!

রাহুল : এসব ডায়লগ দিয়ে আমার কাছ থেকে, রেহাই পাবা না স্নেহা! বুঝেছো! চুপচাপ খাবার মুখে তুলো!

স্নেহা : আচ্ছা আপনি এমন কেনো বলেন তো?

রাহুল : কেমন?

স্নেহা : আপনি আমাকে খাওয়ানোর সময় যখন এসব রোমান্টিক ডায়লগ ইউজ করেন,তখন কি আমি রিপিট অ্যান্সার করি? [ রাহুল মুচকি হেসে স্নেহার মুখের কাছে মুখ এনে তাকালো ]

স্নেহা : কিক..কি হলো?

রাহুল : তুমি! আমাকে রিপিট অ্যান্সার এই কারণে দাওনা, কারণ যখনি আমি তোমার চোখের দিক তাকিয়ে কথা বলি,তখনি তুমি তোমার সেন্স হারিয়ে ফেলো স্নেহা! [ হার্টবিট বাড়ছে স্নেহার রাহুলের এতোটা কাছাকাছির চাহনিতে,চোখ সরিয়ে নিয়ে নিচের দিক ঝুকে খাবার ঠিক করতে লাগলো তাড়াতাড়ি ]

রাহুল : [ হেসে ] তখন তুমি আমাকে কিনা ভয় পেতা স্নেহা!

স্নেহা : আর আপনি কি কান্ডগুলোই না করতেন মিষ্টার, ছিলেনই এমন ভয়ানক! তাই ভয় পেতাম!

রাহুল : [ স্নেহার মুখ ধরে তার দিক ফিরিয়ে ] আর এখন? [ তাকিয়ে রইলো স্নেহা ভীতু হয়ে রাহুলের দিক, তেডি স্মাইল দিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় ভ্রু নাচাতে লাগলো রাহুল ও ]

স্নেহা : পাইনা এখন ভয়! [ বলেই মুচকি হেসে খাবারের হাতে রাহুলের গালটা টেনে দিলো ]

রাহুল : হোয়াট আর ইউ ডুয়িং স্নেহা! আম নট অ্যা লিটল বেবী!

স্নেহা : হোহ! তাই? [ বলেই রাহুলের অন্যপাশের গালটাও টেনে দিয়ে কিটকিটিয়ে হাসতে লাগলো, বললো না রাহুল ও আর কিছু, তাকিয়ে রইলো সেও মুচকি হেসে স্নেহার দিক, এই দামী হাসির কারণটুকুই তো সে হতে চেয়েছিলো ]

স্নেহা : [ হাসি চেপে ] সরি রাহুল! সরিই!

রাহুল : নোহ! নো নিড সরি! [ স্নেহা অবাক হয়ে তাকাতেই হঠাৎ রাহুল স্নেহার হাত ধরে টেনে নিয়ে গালের সাথে গাল ঘষে দিতে লাগলো ]

স্নেহা : আহহ! রাহুললল!

রাহুল : কেমন লাগছে এখন?

স্নেহা : আ..আপনার দা..দাড়ি!

রাহুল : [ স্নেহার কানে ফিসফিসিয়ে ] সো্!

স্নেহা : আ..আই ফিল শি..শিভার! [ মুচকি হাসলো রাহুল স্নেহার কথা শুনে, নাক দিয়ে মুখ ছুয়ে গলার দিক আলতো একটি ফু দিলো, সাথেসাথেই স্নেহা শিহরিত হয়ে চোখ কুচকে বটে ফেললো ]

রাহুল : স্নেহা!

স্নেহা : হু!

রাহুল : ডিনার ফিনিশ করো!

স্নেহা : বাট! আ..আপনি..

রাহুল : আগে তুমি মুখে দাও! [ স্নেহা মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে ]

রাহুল : কি হলো? খাওও! [ স্নেহা মুখ ভেংগিয়ে সোজা ফিরে, মুখে তুলে নিলো খাবার ]

রাহুল : এখন আমায় খাওয়াও! [ তাকানো দূরের কথা, স্নেহা তো শুনে ও শুনলো না, রাহুল ও বুঝতে পেরে হাসলো, জোড় করেই স্নেহার হাতটা টেনে এগিয়ে নিয়ে আঙুলে একটা কামড় বসালো ]

স্নেহা : আরেহহ!

রাহুল : মুহূর্তেই এতো অভিমান করো কেনো বলো তো? [ স্নেহা রাহুলের মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিয়ে চুপ করে থাকে, রাহুল ও তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিক, ইচ্ছে তো করছিলো যেনো খাবারের বদলে স্নেহাকেই কামড়াবে, বাট কি করার স্নেহা এতোটাই সফট যে আলতো কামড়েই ব্যথা পেয়ে যায়, অলরেডি ঠোটের ব্যথায় ভুগছে বেচারি, ধীরেধীরে আড়চোখে তাকালো স্নেহাও রাহুলের দিক ]

রাহুল : উফফফ! স্নেহা! এই লুকটা যখন তুমি দাও না! [ বলেই চোখ বন্ধ করে সোফায় মাথা হেলিয়ে দেই ]

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] কি হলো?

রাহুল : কিছুই তো করিনি স্নেহা কেমনি হবে? [ স্নেহার মুখের কাছে মুখ এনে ]

– তবে তুমি চাইলে, শীঘ্রই হয়ে যাবে স্নেহা, ব্যাস একবার তোমার এই মুখে বলো, আমি মা হতে চাই রাহুললল!

স্নেহা : হোয়াটট! ক..কথা কোথায় ছিলো, আর আপনি কোথায় নিয়ে এলেন বলেন তো?

রাহুল : উমমম! এটাও ঠিক!

স্নেহা : পাগল একটা!

রাহুল : হুমম! এটাও ক্যারেক্ট!

স্নেহা : আজিব?

রাহুল : সবই ঠিক বলছো স্নেহা তুমি! আমার সাথে সব আজিবই হচ্ছে!

স্নেহা : রাহুললল!

রাহুল : আচ্ছা আচ্ছা! খাওয়াও না বসে আছো কেনো? খিধে লাগছে দেখছো না? [ পারলো না আর স্নেহা রাহুলের সাথে অভিমান করে থাকতে হেসেই দিলো, দুজন মিলে ডিনার শেষ করলো, স্নেহা রাহুলের গাল টেনে দেওয়ার সময় হাত থেকে লেগে যাওয়া খাবারের দাগ গুলো ও টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো, অগোছালো রুমটাকে দুজন মিলেই গোছালো,বাট এরমধ্যে ও রাহুল তো আছেই স্নেহাকে ডিস্টার্ব করার জন্য, কখনো স্নেহার চুল ধরে খুশবো নিচ্ছে,কখনো স্নেহাকে কোমোড়ে হাত বুলিয়ে শিহরিত করছে, কখনো স্নেহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে আটকে রাখছে এমনই!

তবে এসবে স্নেহা বিরক্তিবোধ দেখালেও,মনেমনে রাহুলের এসব কান্ডগুলো তার ভীষণ ভালোই লাগছিলো ]

রাহুল : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জ্যাকেটটা খুলে রেখে সোফায় বসে ] বাহহ! কতোগুলো কাজই না করলাম আজ!

– এক্সুলি তুমি আরকি স্নেহা! এতো রাতে আবার রুম ক্লিন করার কি দরকার ছিলো বলো তো? সারভেন্টরা মর্নিং এ ক্লিন করতে আসতোই তো তাই না?

স্নেহা : অগোছালো রুম আমার পছন্দ না তাই! [ কোমোড়ে হাত দিয়ে ] আর আপনার ও বা পুরো রুমটা অগোছালো করার কি দরকার ছিলো বলেন তো?

রাহুল : নাইস্! [ With tedi smile ]

স্নেহা : হোয়াট? [ বলতেই হঠাৎ খেয়াল করলো রাহুলের নজরটা তার পেটের দিকেই চুপকে আছে, কুচকে বটে রাখা শাড়ীর আচলটা কোমোড় থেকে খুলে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে দিলো স্নেহা, সাথেসাথেই রাহুল বিরক্তিবোধ একটা লুক দিয়ে তাকালো স্নেহার দিক ]

স্নেহা : গুড নাইট! [ বলেই তেডি স্মাইল দিয়ে আংগুল দিয়ে ইশারা করে মুখের হাসিটি দেখিয়ে ] হ্যাপি তেডি স্মাইল! মিষ্টার রাহুল! [ রাহুল ও হেসে উঠলো স্নেহার কান্ড দেখে, পাশফিরে আর যেতে দিলো না স্নেহাকে, সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে স্নেহার হাত ধরে কাছে টেনে হুট করেই কোলে তুলে নিলো ]

স্নেহা : এখনিই তো ফুফিয়ে উঠলেন রুম গুছিয়ে, এখন আবার এনার্জি চলে এলো?

রাহুল : এনার্জি না স্নেহা! তোমাকে দেখলেই তো মনের মধ্যে রোমান্টিক একটা জোশ কাজ করে!

– [ চোখ টিপ মেরে ] বুঝলে?

স্নেহা : হহ..হে! [ বলেই হাত দিয়ে কপাল টিপে টিপে ] আ..আমিও তো রুম গুছিয়ে টায়ার্ড হয়ে গেছি হা..হাত পা..সবই ব্যথা করছে এখন!

রাহুল : [ স্নেহাকে খাটের মাঝে বসিয়ে দিয়ে ] ওহহ তাইই? এইদিকে দাও আমি ম্যাসেজ করে দিচ্ছি সব!

স্নেহা : না..নাহ! আ..আমি..আমিতো..

রাহুল : তুমিতো বাহানা বানাচ্ছিলে! তাই না? [ স্নেহা লজ্জা পেয়ে এদিকওদিক চোখকে মিটমিট করতে লাগলো ]

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] শুয়ে পড়ো!

[ স্নেহা অবাক হয়ে তাকালো রাহুলের দিক, রাহুলকি সত্যিই শুয়ে পড়তে বলছে ]

রাহুল : কি হলো?

স্নেহা : নাহ! কিক..কিছুনা! [ বলেই আস্তে করে শুয়ে পড়লো, রাহুল ও টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে দিয়ে, কম্বল টেনে একই বালিশে স্নেহার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে শুয়ে পড়লো, দুজনেরই তীব্র নিশ্বাসগুলো দুজনের মুখে এসে পড়ছে ]

রাহুল : স্নেহা! তুমি এতো কিউট কেনো বলো তো?

স্নেহা : [ রাহুলের গাল টেনে ] আপনি এতো হ্যান্ডসাম কেনো বলেন তো?

রাহুল : [ হেসে ] ইডিয়ট! তুমি আজ শুধু আমার কথায় আমাকে বেক করছো, মাথায় কি ঢুকেছে কে জানে!

স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] আপনি!

রাহুল : তাই? [ মাথা নাড়ালো স্নেহা,রাহুল মৃদু হেসে স্নেহার নাকের উপর একটি চুমু খেয়ে, মাথার চুলে আংগুল দিয়ে বিলি কাটতে লাগলো, স্নেহার ও ভালোই লাগছিলো রাহুলের হাতের আলতো আলতো স্পর্শে, জাদু আছে মানতে হবে রাহুলের হাতের ছোয়াই! এতো শীঘ্রই স্নেহার চোখ বটে আসছিলো, এরই মধ্যে কবে যে স্নেহা ঘুমের জগতে পারি দিয়ে দিলো সে নিজেই ঠের পেলো না ]

রাত ২ টা বেজে ১০ মিনিট, ঘুম নেই রাহুলের চোখে, স্পোর্ট লাইটের হলদে আলোটুকুতে, মিটমিট করে স্নেহার চেহেরার দিক তাকিয়ে রয়েছে রাহুল! ভ্রু কুচকে রেখে ঘুমুচ্ছে স্নেহা! তারমানে স্নেহার মনের মধ্যে টেনশন জমে আছে এখনো! কিসের টেনশন করছে স্নেহা এই বিষয়টিও রাহুলের অজানা নয়!

টেনশন কেনো স্নেহার মনের মধ্যে, কোনো আতংকেরই বসবাস হতে দেবে না সে!এখন শুধু এই ইন্টেশনটাই মাথায় ঘুরঘুর করছে রাহুলের!

রাহুল : [ স্নেহার কপালের চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে ] তোমাকে এতোটা ভালোবাসি যে, স্নেহা! তুমি চাইলে হয়তো পৃথিবীটাকে এনে দিতে পারবো না,তবে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীটাকে ভুলিয়ে দিতে পারবো,

– তোমার দুঃখ গুলোকে হয়তো মুছে দিতে পারবো না,তবে দুঃখ্যের কারণ গুলোকে ভুলিয়ে দিতে পারবো,

– পৃথিবীর সব সুখ হয়তো এনে দিতে পারবো না,কিন্তু তোমায় সুখী রাখতে পারবো, তোমার চোখের অশ্রুকে হয়তো আটকে রাখতে পারবো না,তবে আদর করে সেই অশ্রু মুছে দিতে পারবো!

– তোমার ভালোবাসা আজ আমার কাছে এমন এক জিনিষ হয়ে গেছে, সেটা থেকেই আমি ভয় পাই, এই ভয় শুধু তোমাকেই ঘিরে স্নেহা!

[ ঘুমিয়েই আছে স্নেহা নিষ্পাপ হয়ে, আলতো করে ঠোটেও একটি চুমু খেলো রাহুল, কম্বলটা স্নেহার গায়ে ভালো করে টেনে দিয়ে ধীরেধীরে খাট থেকে উঠে দাড়ালো! রুমের এদিক-ওদিক হাটাহাটি করলো কিছুক্ষণ! দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্নেহার দিক একপলক তাকিয়ে, সোফার উপর থেকে জ্যাকেটটা হাতে নিয়ে পায়ে কের্চ লাগিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে!

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই! সবাই এতোক্ষণে ঘুমিয়েই পড়েছে নিশ্চয়ই! বেলকনির দিক তাকাতেই দেখে নেহাল রেষ্টিং চেয়ারে বসে আছে একা! এগিয়ে গেলো রাহুল ও! টেবিলের উপর দু-তিনটে বেয়ারের বোতোল সাথে কয়েকটা সিগারেটের প্যাকেট ও ছিটিয়ে রেখেছে, বুঝতে পারলো রাহুল নেহাল ও টেনশন করছে,

রাহুল : [ নেহালের পাশে বসে ] একা একা বসে আছিস যে?

– আরে বেয়ার? আমি তো ভেবেছিলাম ডিরেক্ট এলকোহল খাবি! অওও সাথে স্মোকিং ও চলছে, বাহহহ! তোদের সময় এখন, খেয়ে যা খেয়ে যা!

নেহাল : ফূর্তিতে খাচ্ছি আমি! তাই না?

রাহুল : আরে তাহলে তোর টেনশন কিসের বলতো?

নেহাল : তুই জিজ্ঞেস করছিস?

রাহুল : [ হেসে ] এতো তাড়াতাড়ি দূর্বল হয়ে গেছিস?

নেহাল : মানুষ তখনই দূর্বল হয়,যখন সে নিজের কাছেই হেরে যায় রাহুল!

রাহুল : ভালো!

– ভদ্র!

– চাইল্ডিস!

– মেচর ও আছে!

নেহাল : কে?

রাহুল : কে আবার? শায়লা! [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবারো স্মোক করতে লাগলো নেহাল ]

রাহুল : এখন বলিস না যে তুই ওকে নিয়ে কিছু ভাবছিস না!

নেহাল : হুমম! ভাবছিলাম, ওকে নিয়েই ভাবছিলাম! কিন্তু কি হবে ভেবে বল?

রাহুল : জানিস, পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ হলো কাউকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়া,আর পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো কাউকে লাভ এট ফার্ষ্ট সাইটে বিশ্বাস করা!

– সো্ টাইম তো লাগবেই?

নেহাল : আচ্ছা! রাহুল তো..তোর কি বিশ্বাস আছে লাভ এট ফাষ্ট সাইডে?

রাহুল : হেইইইই! মাই লাভ ইজ অলরেডি সাক্সেস মেন!

নেহাল : মা..মানে তোর লাভ এট ফার্ষ্ট সাইড ছিলো!

রাহুল : ইয়েস্!

নেহাল : ওয়াও মেন! ইউ আর সো্ লাকি!

রাহুল : ডোন্ট ওয়ারি ইডিয়ট! তোরটাও ঠিক হয়ে যাবে,

নেহাল : হাও মেন! কেমনি হবে, একে তো মমের রোং বিহেইভিয়ার! তারমাঝে ঐও আমায় ভুল বুঝতে লাগলো! কাল ইভিনিং এ ফ্লাইট! তারপর আমাদের মাঝে আর কিছুই থাকবে না, ভেবেছিলাম ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা না পেলেও অন্তত ওর হাসিমাখা মুখের মেমোরিটা সাথে করে নিয়ে যাবো!

– এক্সুলি এভ্রিথিং ওয়াজ ফেট! আমার ভাগ্যে নেই এসব! [ বলেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে দাড়ালো ]

রাহুল : রিয়েলি! আর ইউ গোয়িং টু অষ্ট্রেলিয়া টুমরো?

নেহাল : ইয়েস্ আই উইল লিভ! নয়তো আর কিসের আশায় থাকবো বল? [ হাসি দিলো রাহুল নেহালের কথা শুনে ]

নেহাল : তুই হাসতে থাক! তোরই হাসার সময় এখন! গুড নাইটটট! [ বলেই বেয়ারের একটি বোতোল হাতে নিয়ে চলে গেলো ]

রাহুল পা ছড়িয়ে বসে আছে ঐ দিকটাই, ঠান্ডা শীতল বাতাস আসছে বাহির থেকে, জ্যাকেটটাও গায়ে দেওয়া হলো না আর! আকাশের দিক তাকিয়ে দেখলো, চারদিক কুয়াশায় ঢেকে রেখেছে আকাশকে,
মনে মনে ভাবছে স্নেহাকেও আকাশের মতো কষ্ট থেকে এইভাবে ঢেকে রাখবে সে কুয়াশা হয়ে, মধুর সপ্ন মেখে ঘুমুতে দিবে, একবুক কষ্ট নিয়ে নয়,তখন আর স্নেহার ভোর কুচকে রবে না, ঘুমের মাঝে একটু একটু মিষ্টি হাসি ফুটবে,

হঠাৎ কাধে কেউ হাত রাখলো,পাশফিরে তাকাতেই,

বাবা : হোয়াট হ্যাপেন? এইখানে একা বসে আছিস যে? স্নেহা কোথায়?

রাহুল : রুমে আছে! ঘুমুচ্ছে!

বাবা : [ রাহুলের পাশে বসে ] তুই ঘুমাচ্ছিস না যে?

রাহুল : আসছে না ঘুম!

বাবা : হুমম! বুঝেছি কেনো আসছে না ঘুম! [ রাহুল অবাক হয়ে তাকালো তার বাবার দিক ]

বাবা : তোর দাদী সব বলেছে আমায়!

রাহুল : সো্ এখন কি তোমার সিস্টারকে সরি বলতে বলার জন্য এসেছো?

বাবা : নেভার! তুই কেনো সরি বলবি? সরি তো ও বলবে স্নেহাকে!

রাহুল : বাবা তোমার এই পজিটিভ থিংকিং গুলো মায়ের সময় ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে রেখেছিলে বুঝি?

– তখন ও না, এই ভালোবাসা গুলো দেখালে হয়তো আজ এতোকিছুই হতো না!

বাবা : [ হেসে ] ভুল! ছিলো আমার! আর ভুল কিন্তু মানুষকে হারায় না রাহুল! ভুল মানুষকে শুধরাতে শেখায়!

– তুই এইভাবেই থাকিস সবসময় স্নেহার পাশে,খুব মিষ্টি একটা মেয়ে,একদম ভোলি! ও শুধু তোর জীবন না আমার জীবনটাও বদলে দিয়েছে! নিজের খুশির আগে মানুষের খুশির চিন্তাটাই আগে করে মেয়েটা!

– তোদের দুজনকেও দারুণ মানিয়েছে একে অপরের সাথে,

রাহুল : হুমম! বাবা, আল্লাহ গিফটেড মি!

– শি ইজ ভেরী ইন্নোসেন্ট গার্ল, এক্সুলি হার আইস্ আর ভেরী ইন্নোসেন্ট!

– হেয়ার! একদম সিল্কি সিল্কি, হাসিটা তো হুশ উড়িয়ে দেওয়ার মতো, আর শাড়ীতে কি না লাগে পুরোই… [ বলেই হঠাৎ থেমে গেলো, আড়চোখে বাবার দিক তাকালে দেখে, হাসছে তার বাবা,লজ্জা পেয়ে গেলো রাহুল ও, কিসব বলে ফেলছিলো এতোক্ষণ বাবাকে ]

বাবা : [ হেসে ] ইন ওয়ান ওয়ার্ড, শি লুক লাইক অ্যা ফেরী! রাইট?

রাহুল : নো বাবা! ওর সৌন্দর্যের সাথে কিছুর কমপেয়ার হবে না! ও তো আনোখি!

বাবা : অনেক ভালোবাসিস তাই না?

রাহুল : ডোন্ট নোও!

– অনেক বললেও লাগছে সীমানা থেকে যাবে, আমি তো ভালোবাসি সীমানা ছাড়া, ইউ নোও বাবা!

– আমার চেয়ে না ওই আমাকে আরো বেশি ভালোবাসে! একদিন কি বলেছিলো জানো?

– শি কেন লিভ এ ফিউ মোমেন্ট উইদাউট ব্রেথিং,বাট নট উইদাউট মি!

– অদ্ভুত এক ভালোবাসা জানো? আমরা দূরে থাকলেও একে অপরকে ফিল করতে পারি! কাছে থাকলে বিনা কথায় মনের শব্দ শুনতে পারি, চোখ দেখে সুখের, কষ্টের সবকিছু পড়ে নিতে পারি!

[ বাবা চুপ করে শুনে আছে রাহুলের কথা সব, ভাবছে মনে মনে এমনই তো চেয়েছিলেন তিনি,যেনো কেউ একজন এসে রাহুলের লাইফটা এইভাবে মধুময় করে সাজিয়ে দিক, যে ভালোবাসা গুলো থেকে সে বঞ্চিত হয়ে ছিলো তার চেয়ে শতগুণ ভালো যেনো তার জীবনে ফিরে আসুক ]

রাহুল : হোয়াট বাবা! কোথায় হারিয়ে গেছো বলো তো? উমমম! মা কে ভাবছিলে নাকি কোনো!

– বাই দ্যা ওয়ে! এই দু-দিন ধরে আমি তোমায় দেখেছি কিন্তু, মায়ের সাথে চান্স নিতে একটা মুহুর্ত ও মিস্ করোনি! [ হাসছে রাহুলের বাবা রাহুলের কথা শুনে ]

রাহুল : বাবা!

বাবা : হ্যা! বল,

রাহুল : এখনো ভালোবাসো মা কে?

বাবা : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] বাসি বলেই তো এইভাবে রয়েগেছি এখনো! তার জায়গা অন্যকাউকে দিতে পারিনি!

রাহুল : তা..তাহলে! ফিরিয়ে আনছো না যে,

বাবা : ভাবছি ও যেভাবে আছে ঐভাবেই খুশি থাকুক! ফিরিয়ে আনতে ভয় হয়! যদি আবারো কষ্ট দিই!

– [ টেবিলের দিক তাকিয়ে ] অওও! বেয়ার! এতোক্ষণ বললি না যে, [ বলেই দুটো হাতে নিয়ে একটা রাহুলের দিক এগিয়ে দিলো ]

রাহুল : খাবো না!

বাবা : আরে নে! চিয়ার্স কর!

রাহুল : আম নট অ্যা সিংগেল লাইক ইউ! মাই ডিয়ার ফাদার!

বাবা : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] ও আচ্ছা! বারণ আছে বউ এর? তাই তো বলছি এতোক্ষণ ধরে এগুলো সামনে থাকা শর্তে ও তুই কিভাবে ফেলে রাখলি!

– এমনিতে আজ দেখেছি তোকে তোর এটিটিউডের কাছে ও কিভাবে হারিয়েছে,

রাহুল : হেইইই মিষ্টার হার্শ! এটিটিউড কেনো আমার বউ এর জন্যে জানটা হারাতেও রাজি আমি!

– বাট অনলি ফর মাই ওয়াইফ! গেট ইট?

বাবা : ইয়েস্ স্যার! [ বলেই এক চুমক বেয়ার খেলো, সাথেসাথেই রাহুলের দিক তাকিয়ে আবারো কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো ]

রাহুল : আচ্ছা বাবা! এতে এভাবে হাসার কি আছে! বলো তো?

বাবা : সরিই আম নট লাফিং রিয়েলি!

রাহুল : আজিব! হেসে হেসে আবার বলছো আম নট লাফিং!

বাবা : চিয়ার্স! মাই চাইল্ড চিয়ার্স!

রাহুল : দুশমনি করো না বাবা! ভুলে যাচ্ছো কাল রিসিপশানে কিন্তু মা ও আসছে, আমায় হাতে রাখলে স্পেশাল চান্সের অফার আছে!

বাবা : [ বেয়ারের বোতোলটা টেবিলে রেখে দিয়ে ] আরে আই জাস্ট কিডিং! এসব বেয়ার টেয়ার ও এক্সুলি আমি খায় না! তোর খাওয়া যেহেতু বারণ আছে তাহলে তো তোর সামনে মোটেও খাবো না!

রাহুল : [ হেসে ] তাই?

বাবা : দেখ! স্পেশাল চান্সের অফার আছে বলেছিস, মনে রাখবি কিন্তু!

রাহুল : [ হেসে দাঁড়িয়ে গিয়ে, জ্যাকেটটা গায়ে পড়তে পড়তে ] বাবা! ভালোবাসাটা একদম প্রজাপতির মতোই, বুঝেছো?

– শক্ত করে ধরলে মরে যাবে আর হালকা করে ধরলে উড়ে যাবে!

– তাই সেটাকে ধীরেধীরে যত্ন করে ধরো, চিরজীবনের জন্যই থেকে যাবে,

– [ চোখ টিপ মেরে ] গুড নাইট! এন্ড চিয়ার্স [ বলেই বেয়ারের একটা বোতোল হাতে ধরিয়ে দিয়ে, হাটা ধরলো রাহুল, রুম ক্রস করতেই হঠাৎ ভাবলো, বেরুনোর আগে স্নেহাকে আরেবার আদর করে দিয়ে যায়, দরজাটা ধীরেধীরে খুলে রুমে ঢুকে খাটের দিক এগিয়ে গেলো, ঘুমিয়ে আছে স্নেহা, মৃদু হেসে রাহুল হাত দিয়ে স্নেহার গালে স্লাইড করলো, নড়ে উঠলো স্নেহা! রাহুলের হাতটা টেনে নিজের কাছে আগলে রাখলো ]

রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] কামঅন স্নেহা! এসময় এভাবে মায়া বাড়িও না! এমনিতে তোমায় এভাবে একা রেখে যেতে মন মানছে না! [ বলেই কপালে আলতো একটি চুমু খেয়ে, ধীরেধীরে স্নেহার কাছ থেকে হাতটা ছুটিয়ে নিলো, কম্বলটা স্নেহার গায়ে ভালো করে টেনে মাথায় আরেকবার হাত বুলিয়ে দিয়ে,আস্তে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে ]

নড়ে উঠলো স্নেহা, কম্বলের ভেতর পা টা কুড়িয়ে নিলো, আবছা আবছা চোখটা খুলে যাচ্ছে,পাশে রাহুল নেই এমনটাই অনুভব হচ্ছিলো, হঠাৎ মিটমিটিয়েই চোখটা একদম খুলে ফেললো স্নেহা, রাহুল তো সত্যিই নেই পাশে,

ওয়াসরুমে গিয়েছে হয়তো এইভেবে ওয়াসরুমের দরজার দিক তাকালো, দরজা বাহির থেকে লক করা, তা দেখেই স্নেহা উঠে বসলো, রুমের চারদিক তাকাতেই সোফার দিক নজর পড়লো, রাহুল তার জ্যাকেটটা তো সোফায় খুলে রেখেছিলো, জ্যাকেটটা সোফার উপর নেই! কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো সোফার দিক, সোফার পাশে খুলে রাখা রাহুলের কের্চ গুলো ও নেই! তারমানে রাহুল কি বেড়িয়েছে?

এই ভেবে রুমের দরজাটা খুলতে যাবে তখনি হঠাৎ বুকটা ধরে উঠলো, তাড়াতাড়ি দৌড়ে বারান্দায় এগিয়ে গেলে দেখে গেইট দিয়ে রাহুলের গাড়ী বেড়িয়ে যাচ্ছে, অবাক হলো স্নেহা! এতোরাতে রাহুল কোথায় যাচ্ছে? তাকে ও তো কিছু বললো না, ভেতরে ঢুকে তাড়াতাড়ি খাটের পাশের ল্যাম্প টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা এগিয়ে নিলো, কল দিলো রাহুলকে, রাহুলের ফোনটা বালিশের পাশ থেকেই বেজে উঠলো, এগিয়ে নিলো স্নেহা রাহুলের মোবাইলটা, মনে মনে ভাবতে লাগলো

– কি অদ্ভুত ব্যাপার রাহুল মোবাইলটা ও ফেলে গিয়েছে! কিন্তু গেলো কোথায়?

রুমের এদিক-ওদিক হাটাহাটি করলো কিছুক্ষণ অস্থিরতা কাজ করছে স্নেহার, আর না পেরে খাটের এক কোণে বসে রইলো, রাহুল তাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছে? তাও বা এতোরাতে কোথায় যাওয়া এতো জরুরী ছিলো! একবার তো অন্তত তাকে বলে যেতে পারতো,

অনেক্ষণ ঘনিয়ে গেলো,

স্নেহা ওভাবেই বসে আছে, ঘুম ও আর আসছে না তার চোখ জুড়ে, হঠাৎ চোখ পড়লো রাহুলের মোবাইলটার উপর, এগিয়ে নিয়ে মোবাইলের গ্যালারিতে ঢুকে ফটো দেখতে লাগলো রাহুলের!

এতোক্ষণেই রাহুলের ছবি দেখে দেখে মিটিমিটি হাসছে স্নেহা! রাহুল কতোটা নটি পোজে পিকচার তুলতে পারে আজই দেখলো স্নেহা! একে একে সব ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ নেহার সাথে ও রাহুলের কয়েকটা ফটো সামনে এসে পড়লো, মুহুর্তেই হাসিটা উদাও হয়ে গেছে স্নেহার মুখ থেকে, আর দেখলো না কোনো ছবিই, অতোটুকুতেই বন্ধ করে রেখে দিলো মোবাইলটা!

মনে মনে রাহুলকেও এতোগুলো গালি দিতে মন চাইছিলো স্নেহার!

– কি দরকার এখনো নেহার সাথে লাগিয়ে তোলা ফটো গুলো গ্যালারীতে সাজিয়ে রেখে দেওয়ার!

– ওর সাথেই চুপিচুপি দেখা করতে গিয়েছে নিশ্চয়! আমার সামনে একরুপ, আর চুপিচুপি আরেকরুপ! মার্জান ঠিকই বলে সব ছেলেরাই মুখোশধারী হয়!

– ছি! স্নেহা কিসব ভাবছিস! রাহুল এমন করবে নাকি কখনো! ধ্যাত!

– কি..কিন্তু যদিও বা এ..এমন হয়ে থাকে?

– উফফফফ! স্নেহা! তুই রাহুলকে সন্দেহ করছিস! স্টুপিড! [ বলেই খাট থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো, টাইম দেখলো ঘড়িতে ৩টা বেজে ২৫ মিনিট, ধীরেধীরে হেটে জানালার দিক এগিয়ে গেলো,নিস্তব্ধ চারদিক কুয়াশায় ভরা, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জানালার চৌকাটে হেলান দিয়ে বসলো ]

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে