#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৭ ||
____________________________________________
–‘রিমি! কোথাও তুমি?’
রোমানের গলা শুনে রিমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রোমান রুমে প্রবেশ করছে। রোমানকে দেখে রিমি বলল,
–‘আরে আপনি এখানে!’
–‘হ্যাঁ, নিচে অনেকক্ষন ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি। কিন্তু তোমার আসার তো নাম-গন্ধ কিছুই নেই। লাগেজ নিয়ে আসতে বুঝি এত টাইম লাগে?’
–‘আমি তো কথা বলছিলাম। তাই নিচে যেতে দেরি হচ্ছিল।’
রোমান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
–‘কার সাথে কথা বলছিলে?’
–‘এইতো….!’ রিমি বাকিটুকু বলার আগেই পিছন ফিরে তিথীকে কোথাও দেখতে পেল না। এমনটা যে হওয়ার কথা, রিমি ভালোই জানত। কিন্তু ওর ভাবছে অন্য কথা! রোমান আসার কিছুক্ষন আগেও তো তিথী ছিল। তাহলে এত তাড়াতাড়ি ও কোথায় গেল?
–‘ওহ, ম্যাডাম! বাকিটুকু না বলে কোন ভাবনার সাগরে ডুব দিলেন আপনি?’
রোমানের কথায় রিমির হুঁশ ফিরে।
–‘কই? কিছু ভাবছিলাম না তো। আমি আসলে ফোনে কথা বলছিলাম।’
–‘আচ্ছা, তো চলো এখন বাসায় যাওয়া যাক। লাগেজটা কই তোমার?’
রিমি হাত দিয়ে ইশারা করতেই রোমান লাগেজ বের করে নিয়ে আসল। তারপর দু’জনে নিচে নেমে আসল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে দু’জনে গাড়িতে গিয়ে বসলে রোমান গাড়ি স্টার্ট দিল। আপন গতিতে গাড়ি চলা শুরু করল।
আর এদিকে, উপরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একজন রোমান আর রিমিদের গাড়ি যাওয়ার অপেক্ষা করল। তারপর ডেভিল হাসি হাসতে হাসতে বলল,
–‘কি ভেবেছিলি রিমি? এত তাড়াতাড়ি তো আমি রোমানের সামনে যাব না। গেলে আমার বানানো সব প্ল্যান যে ভেস্তে যাবে! তখন কি হবে? আমার খেলা যে শুরু হতে না হতেই সব শেষ হয়ে যাবে। না, এটা কখনোই হতে দিব না আমি।’ বলে তিথী আবার হাসিতে মেতে উঠল।
____________________🍁🍁
পরদিন সকালে রিমি আর রোমান উদ্যত হলো কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য।
রোমান ড্রাইভিং সিটে আর রিমি তার পাশের সিটে। গাড়ির কাঁচ খুলে রাখার ফলে বাতাসে রিমির চুলগুলো বারবার ওর মুখে আঁচড়ে-মুচড়ে পড়ছে। রিমি বিরক্ত হয়ে লাগাতে নিলে রোমান লাগাতে দিল না। রিমিও আর লাগাতে চাইলো না। পুরো ১০টা ঘন্টা দু’জন ওভাবেই ছিল। রিমি চিন্তায় বিভোর আর রোমান ড্রাইভে! বেশি যে কথা বলা, সে-টা তাদের মাঝে ছিল না। খালি মধ্যে রোমান স্বেচ্ছায় রিমিকে খাবার এনে খাওয়ার জন্য দিয়েছিল। সে সময় একটু কথা হয়েছিল। ব্যাস, এটুকুই!
–‘আচ্ছা, আর কতক্ষন টাইম লাগবে পৌঁছাতে?’
–‘এইতো, আর বেশি না। প্রায় এসেই পড়েছি।’
–‘ওহ আচ্ছা।’ বলেই রিমি আর নীরবতার চাদরে আবৃত হয়ে গেল।
গাড়ি ড্রাইভ করার এক পর্যায়ে রোমান খুব জোরে ব্রেক কষে! ব্রেক না করলে আজ তারা হয়ত চলেই যেত ওই আকাশে। অল্পের জন্য এক্সিডেন্ট হয়নি সামনের গাড়িটার সাথে তাদের।
–‘তুমি ঠিক আছো রিমি?’
–‘হ্যাঁ!’
–‘তুমি গাড়িতে বসো। আমি একটু বাহির থেকে দেখে আসি সামনের গাড়িটার কি অবস্থা!’
–‘আচ্ছা, যান!’
রোমান বেরিয়ে সামনের গাড়িটার কাছে গেল। কাঁচের সামনে ঠকঠক করতেই কাঁচ খুলে গেল। ভিতরে থাকা মানুষটাকে দেখে রোমান অবাক, সাথে খুশিও।
–‘হেই! হোয়াট’স আপ?’
–‘এইতো। তোমার কি খবর? আর রূপা (রূপাকে ইশারা করে) তোমার?’
রূপা বসা থেকেই উত্তর দিল,
–‘ভালো। তো জিজু আপনি এখানে? রিমি কই?’
–‘আমি আর রিমি একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। তোমরাও নিশ্চয় তাই এসেছ?’
রূপা হেসে বলল, ‘হ্যাঁ!’
–‘ওহ, দেট’স গ্রেট। তো কোন রিসোর্টে উঠছো হৃদয় (রূপার হাসবেন্ড)?’
–‘রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টে! ওটা সমুদ্র সৈকতের কাছে আছে। সুযোগ-সুবিধাও অনেক ভালো। তাই ওটাতেই ওটা।’
–‘আমরাও। তো রিসোর্টে গিয়ে দেখা হচ্ছে না-কি?’
–‘নিশ্চয়!’
রোমান ওদের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে এসে বসতেই রিমি উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করল,
–‘এত লেট কেন হলো? গাড়ির লোকজন ঠিক আছে তো?’
–‘হ্যাঁ, সবাই ঠিক আছে। আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা, হৃদয়রা ছিল ওই গাড়িতে।’
–‘কিহ? রূপা আর হৃদয় ভাইয়া আসছে? তাহলে তো এখন অনেক মজা হবে। উয়াহু!’
রিমির মুখে এত হাসি দেখে রোমানের মুখের কোণেও হাসি ফুটে উঠে। এই হাসিটাই তো রোমান সারাজীবন দেখতে চায়। কিন্তু এটা দেখার সৌভাগ্য কি তার দীর্ঘস্থায়ী হবে?
.
.
.
প্রায় আধঘন্টা পর তারা রিসোর্টে গিয়ে উঠল। রিসেপশন থেকে তাদের বুক করা রুমের চাবি নিয়ে গেল। মূলত তাদের রুমটা ৫ম ফ্লোরে পড়েছে। ৫ম ফ্লোরে উঠ তারা সবার শেষ রুমটার দরজা খুলে ভিতরে গেল। লাগেজ ঠিক করে রেখে রোমান টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। রোমান আসতেই রিমি ঢুকল।
মাথা মুছতে মুছতে ব্ল্যাক কালারের লং ড্রেস পড়ে বের হলো রিমি। রোমান ল্যাপটপে তখন কিসের জানি কাজ করছিল। রিমিকে দেখে কাজ বাদ দিয়ে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। রোমানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিমি লজ্জা পেয়ে যায়। তবুও অনেক কষ্টে বলে,
–‘ওভাবে কেন তাকিয়ে আছেন?’
রোমান বসা ছেড়ে উঠে রিমির দিকে এগোতে লাগল। আর রিমি পিছন দিকে পিছাতে লাগল। এক সময় আর পিছানোর জায়গা নেই। তখন রিমির পিঠ দেওয়ালের সাথে একেবারে লেগে যায়। রোমান ওর মুখ রিমির কানের কাছে নিয়ে বলে,
–‘ভালোবাসি! অনেক ভালোবাসি তোমায় প্রেয়সী।
প্লিজ কখনো আমায় ছেড়ে যেও না। আমায় যদি তুমি ছেড়ে যাও, তাহলে আমি মরে….!’ আর বলতে পারল না রোমান। তার আগে রিমি ওর হাতের আঙুল রোমানের ঠোঁটের উপর রাখে। আর বলে,
–‘কখনো যাব না। এই প্রাণ থাকতে আপনায় রেখে আমি কখনো যাব না। সবসময় আপনার পাশে থাকব।’
–‘সত্যি তো! আমি কিন্তু আজ অব্দি আমার মনের কথা বলিনি। কেন জানি আজ না বলে থাকতে পারলাম না! বলেই দিলাম।’
–‘আপনি কি জানেন? এই কথাটা শোনার জন্য যে আমি অনেক অপেক্ষা করে ছিলাম।’
–‘সর্যি, এত অপেক্ষা করানোর জন্য।’
–‘ইট’স ওকে!’
____________________🍁🍁
রাতে ঘুমিয়ে আছে দু’জন। হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে রিমির ঘুমটা আলগা হয়ে যায়। চোখ মেলে তাকাতে শব্দটা আবারো পেতে থাকে। পাশে তাকিয়ে দেখে রোমান বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। তাই আর রোমানকে ডাক দিল না রিমি। আস্তে ধীরে রোমানের পাশ কাটিয়ে উঠে এল। রুমের দরজা খুলে বাহিরে এদিক-ওদিক উঁকি-ঝুঁকি দিতেই কোনো কিছু একটা ছায়া দেখতে পেল সে। রিমি সে-ই ছায়া অনুসরণ করতে থাকল। আস্তে আস্তে সে-ই ছায়াটা ছাদের দিকে যেতে থাকে। রিমিও পিছু নিতেই থাকে। ছাদে গিয়ে রিমি দেখে কেও একজন কালো কাপড় পরিহিতা ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি একপা-দু’পা করে সেই মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায়। রিমি মেয়েটার কাঁধে হাত রাখতেই মেয়েটা রিমির দিকে ঘুরে দাঁড়াল। কিন্তু রিমি মেয়েটার চেহারা দেখতে পেল না। কাপড় দিয়ে তার পুরো মুখ পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে। মেয়েটা রিমিকে টান দিয়ে তার স্থানে এনে সে রিমির স্থানে চলে গেল। রিমির ভয়ে বুক ধকধক করছে। নিচে তাকিয়ে দেখে অনেক গভীর! এখন যদি মেয়েটা তার হাত ছেড়ে দেয়, সে একেবারে নিচে পড়ে যাবে।
–‘কে তুমি? কেন আমার সাথে এমন করছো? আমাকে ছেড়ে দেও।’
রিমির কোনো কথাই যেন মেয়েটার কান অব্দি পৌঁছালো না। সে আস্তে আস্তে করে এক টাইম রিমির হাতটা পুরোপুরি ছেড়ে দেয়। রিমি তো চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
চলবে…..☘️☘️
~বি.দ্র: রিচেক করা হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং~