#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৩ ||
_________________________________________
–‘রোমান আমি আপনার থেকে কিছু জানতে চাই!’
–‘বলে ফেলো।’
–‘তিথী কে? আর কি এমন ঘটনা যার জন্য আপনি পাল্টে গেছেন?’
রোমান খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–‘তুমি তিথীর কথা কি করে জানলে? ওয়েট, তিথীর কথা তো শুধুমাত্র আম্মু জানে। আর কেও না। তার মানে আম্মু তোমাকে বলেছে। এম আই রাইট?’
–‘আম্মু আমাকে তিথীর ব্যাপারে তেমন কিছুই বলে নি। জাস্ট এটুকু বলেছে তিথীর জন্য তোমার পাল্টে যাওয়া।’
–‘ওহ, ভালোই। আম্মুকে বারবার নিষেধ করার পরেও এতদিন পর তিথীর ব্যাপারটা তুলল তাইলে!’
–‘প্লিজ আম্মুকে ভুল বুঝবেন না। তিনি এটুকুই বলেছেন, এর বাহিরে আর কিছু বলেন নি। আমি অনেক জোরাজোরির পর এটাই উত্তর দিছে, যদি আমি জানতে বেশি ইচ্ছুক তাহলে যেন আপনার থেকে জেনে নেই। সে আর কিছু বলতে পারবে না। আম্মু আর কিছু বলতে না চাওয়ায় আমি আপনার থেকে শুনতে এসেছি বাকিটা। দয়া করে আমাকে সবকিছু খুলে বলুন।’
–‘রিমি, প্লিজ! এখন আমাকে এইসব ফালতু বিষয় নিয়ে ডিস্টার্ব করো না তো। এমনি অফিসে কাজের অনেক চাপ। তার উপর ফাইল বাসায় ভুলে ফেলে গেছি। যদি পারো তাইলে ফালতু কথাগুলো স্কিপ করে আমার ফাইলটা খুঁজতে হেল্প করো আমায়। আর না পারলে চুপচাপ বসে থাকো।’
–‘আচ্ছা আমি ফাইলটা খুঁজে দিচ্ছি। কিন্তু তার মানে এটা নয়, আমি তিথীর ব্যাপারে জানার জন্য তোমাকে আর ফোর্স করব না। রাতে বাসায় আসো, তখন না হয় তোমাকে আবার আস্ক করব।’ বলে রিমি ফাইল খুঁজতে লাগল। ওদিকে রোমানও আলমারিতে খুঁজতে শুরু করল।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর দু’জনের কেও ফাইলটা পেল না। রোমান হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পরলো। রিমি রোমানকে কিছু বলতে যাবে তার আগে টেবিলের দিকে চোখ পরতেই সে সেখানে একটা ফাইল দেখতে পেল। মুখে হাসি বিরাজ করে টেবিল থেকে ফাইলটা নিয়ে যে-ই রোমানকে দিতে আসবে, ঠিক সে সময় রিমির শাড়ির আঁচলের সাথে বেঁধে কিছু একটা নিচে পড়ে যায়! রিমি তুলতে নিলে রোমান বসা ছেড়ে দ্রুত এসে নিচে পড়ে যাওয়া ডায়েরিটা তুলে নেয়।
রিমি ভ্রু কুঁচকে কতক্ষণ রোমানের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর জিজ্ঞেস করল,
–‘ডায়েরিটা তো আমি তুলছিলাম। তাহলে এভাবে তুলে নেওয়ার মানে কি?’
–‘আমার ডায়েরি! আমি কি করব না করব? কাকে ধরতে দিব আর না দিব? ইট’স টোটালি মায় উইস।’
–‘ঠিক আছে। বাট আমি তো জাস্ট তুলতেছিলাম, আর কিছু তো নয়।’
–‘আর যাই করো, তাই করো। বাট এই ডায়েরিটা কখনো তুমি ধরবে না। এটা আমার পারসোনাল ডায়েরি। আজ অব্দি কেও এটা ধরার সাহস পায় নি। আশা করি, তুমিও ধরবে না।’
–‘বাহ রে! কেও ধরার সাহস না পেলেও আমি ধরার রাইট রাখি। আমি আপনার বউ হিসেবে অবশ্যই আপনার পারসোনাল জিনিস সম্পর্কে জানতেই পারি।’
–‘না! সব রাইট থাকলেও, এই রাইট-টা নেই তোমার। মাথায় থাকে জানি কথাটা।’
রিমি কিছু বলতে যাবে তার আগে রোমান হাত উঁচু করে রিমিকে থামিয়ে দিয়ে নিজে আবার বলল,
–‘আমি আর এইটা নিয়ে কোনো প্রকার কথা শুনতে চাচ্ছি না।’ বলে ডায়েরিটা আলমারিতে গিয়ে রেখে দিল।
–‘আমার ফাইলটা!’
–‘হুম….!’
–‘আমার ফাইলটা কি দিবে না? অফিসে যেতে লেট হয়ে যাবে তো।’
–‘ওহ, সর্যি! এই নিন আপনার ফাইল।’ (ফাইলটা রোমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
রোমান ফাইল হাতে নিয়ে গড়গড় করে বেরিয়ে গেল। আর রিমি ওর যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। তারপর ধপ করে বিছানায় বসে ভাবতে লাগল,
–’আম্মু বললেন তিথীর জন্য রোমানের বদলে যাওয়া! তিথীর কথা শুধুমাত্র আম্মু-ই জানে। আর সে-টা কাওকে বলতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? কি এমন ঘটেছে রোমানের সাথে? কি এমন করলো তিথী? সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। ওয়েট, রোমানের পারসোনাল ডায়েরি! হ্যাঁ, রোমান তো বললো এই ডায়েরি ধরার সাহস আজ অব্দি কেও পায় নি। আবার আমাকেও বারবার মানা করা হচ্ছিল ধরার জন্য। তার মানে আমার সব প্রশ্নের উত্তর ওই ডায়েরিতে পাব আমি? পেতেও পারি।’
রিমি দ্রুত উঠে আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে ডায়েরিটা খুঁজতে লাগল। সব জামা-কাপড় সরিয়েও পেল না। কিন্তু ওর যথেষ্ট খেয়াল আছে রোমান আলমারিতেই ডায়েরিটা রেখেছে। তাহলে ডায়েরিটা কই গেল? আলমারি বন্ধ করতে যাবে, তখন চোখ আলমারির এক কোণায় যায় তার। সেখানকার কাপড় সব সরিয়ে দেখতে পেল একটা ছোট লকার। এই লকারের কথা রিমি জানে না!
–‘লকার তো পেলাম, মনে হচ্ছে এটাতেই ডায়েরিটা রাখা। বাট লক তো আমি জানি না। এখন কি হবে? এক মিনিট, একদিন রোমানের ফাইগুলোর ভিতর ছোট্ট কাগজে কিছু সংখ্যা লিখা ছিল। আমি দেখামাত্র রোমান হাত থেকে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছিল। সে-টা ট্রাই করে দেখব? একবার করেই দেখি।’
লকারটার কাছে গিয়ে রিমি মনে করতে থাকল৷ কি লিখা ছিল।
–‘হ্যাঁ,মনে পড়েছে।’
রিমি ট্রাই করতেই লকারটা খুলে গেল। রিমি তো সেই খুশি। ভিতরে সেই ডায়েরিটাও পেয়ে গেল। ডায়েরি হাতে নিয়ে আলমারি লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। আবার সে পড়ল আরেক বিপদে! ডায়েরিটাতেও লক। এবার?’
বলে ভাবনার মাঝে ডুব দিল। কি হতে পারে লক?
–‘নাহ, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না। আম্মুকে একবার আস্ক করব? হ্যাঁ, তাই করি। বাট ডাইরেক্ট না করে ইন- ডাইরেক্টলি করতে হবে।’
সায়রার রুমের কাছে এসে দরজায় নক করল রিমি।
–‘আম্মু আসতে পারি?’
সায়রা তখন রুম গুছাচ্ছিল। রিমিকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
–‘নক করার কি আছে? ভিতরে চলে আসো। রোমান কি চলে গেছে?’
রিমি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
–‘হ্যাঁ,আম্মু! উনি চলে গেছেন। আম্মু আমার একটা প্রশ্ন ছিল!’
–‘বলো।’
–‘আচ্ছা, রোমান তার পাসওয়ার্ড কি দিতে পারে? মানে তার ভালো লাগার কোনো কিছু না-কি খারাপ? কোনটা আম্মু?’
–‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন যে!’
–‘না, মানে আম্মু এমনিই। জানার খুব ইচ্ছে হলো।’
–‘খারাপ লাগার জিনিস বলতে তো ওর বেশি কিছু নেই। বাট ও যখন আমার সাথে গল্প করতে আসত, তখন বলত আম্মু আজ এই জিনিসটা আমার খারাপ লেগেছে। এটা আমি সবসময় মনে রাখব, কোনো না কোনো কিছু ভাবেই। তো সেই ক্ষেত্রে সেই খারাপ লাগাটাকে মনে রাখার জন্য হয়ত পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আমি সিউর নই।’
–‘এটুকুই যথেষ্ট আমার জন্য। ধন্যবাদ!’
রিমি চলে যেতেই সায়রা বিরবির করে বলল,
–‘আমি বুঝতে পারতেছি রোমান তোমাকে কিছু বলেনি। আর বলবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু তুমি রোমানের ব্যাপারে জানতে চাও। তাই আমাকে এত কিছু আস্ক করছো। ভালো, খুব ভালো।’
রিমি ডায়েরি নিয়ে ফাস্টে তিথীর নামে লিখে দিল। কিন্তু খুলল না। পরে মনে করতে থাকল সায়রার বলা কথাগুলো ভালো করে। তারপর অনেক ভেবে সে “Tithi, I hate you” দিল। সাথে সাথে খুলে গেল। রিমি যেন হাতে গুপ্তধন পেল। এতটা খুশি সে! ডায়েরি খুলে ফাস্টে বড় বড় করে লিখা তিথী। কয়েক পেজ যেতেই একটা মেয়ের ছবি দেখতে পেল রিমি। ছবিটা দেখে রিমির চোখ ছানাবড়া!
চলবে…..☘️☘️