হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 18

0
3917
হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 19

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 18

লেখা –সুলতানা ইতি

 

বিকেল এর দিকে অন্নি আর আনুশা রওনা হলো গ্রামের উদ্দেশ্য

আনুশা: ভাবছি কি করবো সেখানে গিয়ে ঐ লোকটাকে তো আমার দুলা ভাই বলতে ও ঘেন্না লাগে,সারা দিন জুয়া খেলে টাকা নষ্ট করবে,,তার যে ৩ টা বাচ্ছা আছে তাদের ভবিষ্যৎ আছে সে দিকে তার কোন খেয়াল নেই,,,পারে শুধু ক্বাপুরুষ এর মতো বউ এর গায়ে হাত তুলতে,

কি করবো আমি এখন আপুকে নিয়ে আসলে বাচ্ছারা মা হারা হয়ে যাবে আমি চাইনা তারা কস্টে থাকুক,আবার যদি বাচ্ছাদের সহ নিয়ে আসি,,সেটা ও ভালো দেখাবে না,কারন লোকে তাদের পিতার পরিচয় চাইবে,তোখন কি বলবে ওরা ওহ ভাবতে পারছি না কিছু,কে জানে হয় তো এখন ও জুয়ার আসরে বসে আছে

অন্নি: আনুশা কি এতো ভাবছিস বলতো, আরে ওখানে যাবি দুলা ভাইকে টাকাটা দিয়ে চলে আসবি,এতে এতো গভীর ভাবনার কি আছে

আনুশা: নারে অন্নি চুপ চাপ টাকা দিয়ে আসলে হবে না,এবার এর একটা বিহিত করতে হবে, চুপ থেকে থেকে টাকা দিয়ে আসতে আসতে লোকটার লোভ বেড়ে গেছে,,হ্যা আমাদের সমাজে যৌতুক প্রথা আইনত অপরাধ,,কিন্তু আমি ওর নামে থানা পুলিশ করতে চাইছি না,, এতে বাচ্ছাদের তার প্রতি একটা খারাপ ধারণা জন্ম নিবে,, আমি চাইনা আমার মতো করে সব সন্তান তার বাবাকে ঘৃনা করুক

অন্নি: তুই তা হলে কি করবি ভাবছিস

আনুশা: দেখি কি করতে পারি,এই বার ধমকি দিবো,যদি তাতে কাজ না হয় তা হলে পরে ভেবে দেখবো

অন্নি: আচ্ছা গ্রামে তো যাচ্ছিস তোর মামার সাথে দেখা করবি

আনুশা: ওদের কথা মনে ও রাখতে চাইনা

অন্নি: দেখ আনু আমি তোর কষ্ট টা বুঝতে পারছি, সেই সাথে তুই কিন্তু এইটা ভুলে যাচ্ছিস, তোদের যখন কোন আশ্রয় ছিলো না তখন তোর মামা তোদেত আশ্রয় দিয়েছে, শুধু তাই নয় উনি যদি তোকে প্রথম থেকে লিখা পড়া না করাতো, তা হলে আজ যেই জায়গাতে আছিস,এখানে কিছুতেই আসতে পারতিস না,,হ্যা তোর মামি তোদের প্রতি একটু অন্যায় করেছে, তবুও তোর মামার দিক দিয়ে চিন্তা করলে উনাদের সাথে তোর দেখা করা উচিত,

আনুশা: হুম অন্নি তুই ঠিক বলেছিস,আসলে আমি রাগের মাথায় এতো কিছু ভেবে দেখিনি, ঠিক আছে মামার সাথে দেখা করবো

প্রায় রাত ৮ বেজে গেছে
ড্রাইভার: ম্যাম আমরা আমরা এসে পড়েছি

আনুশা: বাইরে তাকিয়ে দেখলো আপুদের বাড়ির সামনে দোকান,এর সামনে গাড়ি দাড় করিয়েছে ড্রাইভার,, কিন্তু আর ও ভিতরের দিকে যেতে হবে তো

ড্রাইভার : ম্যাম রাস্তা ভালো না গাড়ি বিতরে যাবে না, এখানে ই নামতে হবে আপনাদের

অন্নি: আনুশা নেমে পড় আমরা এখান থেকে হেটেই যাবো

আনুশার গায়ে টিশার্ট আর গলায় স্কার্ফ, তাই আনুশা দোকানের সামনে নামতে চাইছিলো না,কিন্তু না নেমে ও কোন উপায় নেই তাই নামতে হলো,শহরের মর্ডান ড্রেস গ্রামের মানুষ আড় চোখে চাইবে, তাতে ও কিছু করার নেই

অন্নি গাড়ি থেকে নেমেই হাটতে শুরু করলো, আনুশা অন্নিকে থামিয়ে দিলো
অন্নি: কি হলো চল

আনুশা: দোকানের ভিতরে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস

অন্নি: কার আবার হবে দোকানে কতো লোক থাকে তাদের হবে হয় তো

আনুশা: না তুই আমার সাথে আয় তো

অন্নি:<মনে মনে)এতক্ষন নামতে চায়নি আর এখন দোকানে ডুকছে,ওকে নিয়ে আমি আর পারি না)ঠিক আছে চল

আনুশা দোকানে গিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞাস করলো এখানে কি শফিক ভাই আছে,আনুশার দুলাভাইয়ের নাম শফিক

দোকানি: কেনো বলুন তো আর আপনারা কে

অন্নি: আমরা যে হই না কেনো সেটা পরে জানবেন, আপনি শফিক ভাইকে ডেকে দেন,দোকানের পিছনে বসে উনি কি করছে
দোকানদার শফিককে ডেকে দিলো

আনুশার আর বুঝতে বাকি রইলো না দোকানের পিছনে বসে ওরা কি করছিলো

শফিক: আরে আনুশা তুই কোন খবর দেয়া ছাড়াই এসে পড়লি

আনুশা: হুম খবর দিয়ে আসলে তো আপনার এই উন্নতি নিজের চোখে দেখতে পারতাম না, এতো দিন শুনেছি আজ দেখলাম

শফিক: রেগে গিয়ে তুই কি দেখেছিস বল

আনুশা: একদম চোখ রাঙিয়ে কথা বলবেন্না,এই টা আমার আপু নয় যে আপনার চোখ লাল দেখে ভয় পেয়ে চুপ করে যাবে, আর নয় অনেক হয়েছে,এই বার আমি এর একটা শেষ দেখতে চাই

শফিক: এই মেয়ে এই, বিদেশ থেকে কয় টাকার মালিক হয়েছ যে আমার এলাকায় এসে আমাকেই গরম দেখাচ্ছো

আনুশা: টাকা আপনার মতো লোকেরা তো টাকার ভাষাই বুঝে, অর্থলোভী একটা আপনি,

অন্নি: এই আনুশা কি করছিস এই টা পাব্লিক প্লেস, এখানে এতো বাড়াস না বাসায় চল, দুলা ভাই আপনি ও আসুন আপনার সাথে কথা আছে আমাদের

শফিক: এই দুই আঙুল এর মেয়ের সাথে আমি কি কথা বলবো

আনুশার তো শফিক এর কথা শুনে রাগে আগুন জ্বলছে মাথায়,

আনুশা: আপনি বড় বোনের জামাই তাই এখন ও আপনাকে সম্মান দেখিয়ে কিছু বলিনি নইলে এতক্ষনে অনেক কিছু ঘটে যেতো এখানে

দোকানে এতোক্ষনে অনেক লোকের ভীড় জমেছে তাদের মাঝখান থেকে একজন বলে উঠলো শফিক যা ওদের সাথে, ওরা তো তোর মেহমান, ওদের সাথে এই ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি তোর। আর আনুশা তোর ছোট বোনের মতো,
সবার কথাতে শফিক বাড়িতে আসলো ওদেরকে নিয়ে
শিলা তো বোনকে দেখেই কান্না শুরু করে দিলো

আনুশা: আপু কাঁদিস না,, আমাদের দুঃখের দিন আল্লাহ শেষ করে দিয়েছে,আর কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে,
শিলা : কেদেই চলছে

আনুশা: আপু আমার দিকে তাকা আমি এসে গেছিতো কোন ভয় নেই আর

শফিক: বিদ্রূপ করে বল্লো এমন ভাবে কাদছে যেন উনি অনেক কস্টে ছিলো আমার কাছে,আরে তুই যত সুখে ছিলি তত সুখে তোর বাপ ও তোর মাকে রাখেনি,এই জন্য ই তোর বাপ তোর মাকে ছেড়ে চলে গেছে
আনুশা তো এই কথা শুনে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি,

আনুশা: আপুকে ছেড়ে দিলাম ঠাস করে গালের মধ্যে পাঁচটা আঙুল বসিয়ে দিলাম,

আনুশার এই কান্ডে শফিক তো অভাকই উপস্থিত আশে পাশের সবাই কানা কানি শুরু করছে,, গ্রামে তো আবার পাশা পাশি ঘর তাই এক ঘরে কি হয় অন্য। ঘরের লোকেরা জানার জন্য ছুটে চলে আসে,প্রতিবেশী একজন তো বলেই দিলো বড় বোনের জামাই হচ্ছে বড় ভাইয়ের সমান, তার গায়ে হাত তুলেছে কি বেয়াদপ মেয়েরে বাবা শিক্ষা দিক্ষা কি কিছু নেই নাকি

অন্নি: সবার কথা শুনে আনুশাকে ফিস ফিস করে বল্লো কি করছিস কি তুই আনু, সবাই কি ভাবছে বল তো।

আনুশা: সবার উদ্দেশ্য বলল,বাহ এখন আপনারা আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বলছেন,কিন্তু আপনাদের ছেলে কতো শিক্ষিত তা তো আমার বুঝার বাকি নেই,
যে ছেলে জুয়া খেলতে পারে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে পারে,আবার বার বার বউকে মার ধর করে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য, তখন আপনারা তাকে সঠিক শিক্ষাটা দিতে পারেননি, দিনের পর দিন আমার বোনকে যে টর্চার করেছে,তখন তো কেউ এসে বাধা দেননি,উলটো মজা নিয়েছেন সবাই,
মা বাবা মেয়ে বিয়ে দেয় মেয়েকে সুখে দেখার জন্য,আর যেখানে সুখের পরিবর্তে মেয়েকে লাঞ্ছিত হতে দেখে তখন, মায়েদের মনের অবস্থা কেমন হয় জানেন আপনারা,,
জানবেন কি করে আপনারা তো চোখ বন্ধ করে রাখেন তাই না এই যে কাকিমা আপনি যে বললেন আমাকে আমার মা শিক্ষা দেয়নি,

আজ আপনার মেয়ের সামনে আপনার আরেক মেয়ের জামাই যদি আপনাকে কথা শুনায় তা হলে আপনি চুপ করে থাকতে পারবেন কিন্তু, আপনার মেয়ে চুপ করে থাকতে পারবে না,,,

আনুশার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো কারো মুখে কোন কথা নেই

আনুশা: যাই হোক অনেক বলে ফেলেছি, এই বার আসল কথা বলি আমি আমার বোনকে নিয়ে যেতে এসেছি, এখন বোনকে নিয়ে যাবো, আপনাদের ছেলের কাছে থেকে কোন টাকা পয়সা লাগবে না,
আমি আমার বোনকে নিয়ে যেতে চাই এই টুকুই,,আর হা শফিক ভাইয়ের তিন বাচ্ছার দায়িত্ব আমার বোন নিতে পারবে না,, কারন বাবা যেমন সন্তান তার মতোই হবে, আর আমার বোনের ও ভবিষ্যৎ আছে

এতোক্ষন শিলা কিছু বলেনি কিন্তুন আর চুপ করে থাকতে পারলো না

শিলা: তুই কি বলছিস আনু আমি আমার সন্তানদের রেখে এক মুহুর্ত থাকতে পারবো না

আনুশা: বোনের কথার কোন উত্তর না দিয়ে, একজন কে বল্লো মুরুব্বি আপনি এখানে সবার মুরুব্বী আপনি বলুন এতো যন্ত্রনার মাঝে একটা মেয়ে কি করে থাকবে

মুরুব্বী : দেখো মা আমরা সব জানি শফিক ভালো ছেলে নয়,কিন্তু আমাদেরই তো ছেলে আমরা চাইবো না তার সংসার টা ভেঙে যাক, তাই বলছি কাল সকালে আমরা গন্য মান্য কয়েকজন কে নিয়ে বসি দেখি সবাই কি বলে, তার পর না হয় তোমার বোনকে তুমি নিয়ে যেও,
আনুশা উনার কথা মেনে নিলো,

আনুশা: আপু আমি কিন্তু এখন এখানে থাকবো না

শিলা: থাকবি না মানে, এতো রাতে কই থাকবি

আনুশা: মামা তোকে বিয়ে দিয়েছে,সো কালকে মামাকে ও উপস্থিত থাকতে হবে,আর মামাদের সাথে তো এতো বছর যোগা যোগ ছিলো না দেখে আসি মামা কেমন আছে

শিলা: ঠিক আছে যা তা হলে

আনুশা অন্নি,মামার বাড়ির পথে রওনা হলো

to be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে