হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২১

0
2221

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২১
#আরিশা অনু
-অজানা এক ভয় যেন বুকের ভেতরটা খামচি দিয়ে ধরে রেখেছে। যতই মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি অনন্যা ঠিক আছে ততই মনটা উতলা হয়ে উঠছে আমার।যত এগিয়ে চলেছি অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে আমার।অবশেষে জ্যাম ঠেলে দীর্ঘ একঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম হাসপাতালে এসে।

-গাড়িটা পার্কিং এ রেখে এগিয়ে চললাম হাসপাতালের ভেতরে।মাথা গরম হচ্ছে এখন আমার যত সামনে যাচ্ছি তত। ওরা আমার অনুকে একটা সরকারী হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়েছে।চারপাশে নোংরা অবস্থা দেখে মাথা আগুন হচ্ছে তাও চুপচাপ সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।

-এক পা এক পা করে যতই এগোচ্ছি ততই বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যাথাটা যেন বেড়েই চলেছে।অনুভূতি গুলো যেন বার বার আজ বলতে চাইছে হারিয়ে যায়নি আমরা তোমাদের অভিমানের ধুলোয় ঢাকা পড়ে ছিলাম এতদিন।অভিমানের ধুলা আজ সরে গেছে তাই আমরা ও সাড়া দিতে শুরু করেছি…..!!!

-একটা বড় রুমের ভেতরে অনেক গুলো বেড রাখা সারি সারি।আর বেড গুলোতে অনেক অসহায় মানুষ এসে বাঁচার জন্য আশা গুনছে হয়তো।কেউ কেউ মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে তো কেউ প্রিয় মানুষটার পাশে বসে তার সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠেছে। অদ্ভুত এক পরিবেশ। অনেকে বাঁচার আশা নিয়ে আসলে ও শেষমেশ মৃত্যু নামক অমোঘ সত্যের কাছে হার মেনে পাড়ি জমাচ্ছে ওপারে তো কেউ মৃত্যু সজ্জায় থেকেও উপরওলার অশেষ রহমতে হাসি মুখে বাসায় ফিরছে স্বজনদের সাথে।আল্লাহ চাইলে কি না করতে পারে।

-এতক্ষণ অনন্যা কে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল রোহান এ রুম থেকে ও রুম আর আশেপাশের ঘটনাগুলো খেয়াল করছিল।একটু পর একটা রুমে যেয়ে সারি সারি বেড গুলোর দিকে খেয়াল করতেই দ্বিতীয় সারির কর্নারের বেডটাই অনন্যাকে দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো রোহানের।

-দৌঁড়ে অনন্যার কাছে চলে গেলাম।গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে আমার অনন্যা মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা হাতে ও ব্যান্ডেজ করা।বাম হাতে স্যালাইন চলছে মুখে অক্সিজেন দেয়া শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার জানটার।ওকে এই অবস্থায় দেখে চোখের জল আর আটকে রাখতে পারলাম না।দুচোখ দিয়ে ঝরঝর করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।ওর যে অবস্থা তাতে করে ওকে কেবিনে রাখা উচিৎ এখন বাট তা না রেখে এরা আমার অনন্যাকে পাবলিক প্লেসে রেখে ট্রিটমেন্ট করাচ্ছে।রাগে ইচ্ছা করছে এখন সব কটাকে খুন করে ফেলাই…

-নিজেকে ঠান্ডা করে অনন্যাকে যারা এখানে এনেছিল তাদের সাহায্যে হাসপাতালের সব ফর্মালিটিস মেনে রিলিস করিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম অনন্যাকে নিয়ে।ওরা ছাড়তে চাইছিলনা এই অবস্থায় অনন্যাকে তারপর ও জোর করে বের করে আনলাম। ডক্টর আঙ্কেলকে ফোন দিলাম আসার সময়।অনন্যার সেফটির কথা মাথায় রেখে একজন নার্সকে সাথে এনেছি যদি রাস্তায় আবার কিছু হয়।এখনো অজ্ঞান অনন্যা মুখটার দিকে তাকালে আমার চোখটা ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে বার বার।কত কষ্ট দিয়েছি মেয়েটাকে আমি এতদিন।

-অবশেষে প্রায় এক ঘন্টা পর বাসায় এসে পৌঁছালাম। গাড়ি সাইডে রেখে গাড়ি থেকে নেমে এসে অনন্যাকে কোলে তুলে নিলাম আর নার্সকে বললাম আমার সাথে আসতে…..

-মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে কত কষ্ট ই না পেয়েছে আমার জানটা আজ।মায়াবি মুখটার দিকে আজ তাকানো যাচ্ছেনা খুব কষ্টে চোখের জল আটকে ভেতরে গেলাম….

-মামা,মামী,তৃধা, ডক্তার আঙ্কেল ও এসে বসে আছে দেখছি ড্রয়িংরুমে। সেদিকে খেয়াল না করে অনন্যা কে নিয়ে সোজা আমার রুমে চলে আসলাম।ওকে বেডে শুইয়ে দিলাম। সকাল থেকে আমার জানটাকে আজ কত কাজ ই না করিয়েছি আমি ভাবতেই আবার রাগ উঠল নিজের উপর। একটু পর ডক্তর আঙ্কেল আসলো রুমে….!!!

-রোহান এসব কি করে হল বউমার।(ডক্তর আঙ্কেল রোহান অনন্যার সম্পর্কে সব কিছু জানে।উনি রোহানের বাবার ফ্রেন্ড তাই অনন্যাকে বউমা বললেন)

-আঙ্কেল এসব কথা পরে হবে আগে অনুকে দেখো প্লিজ অস্থির হয়ে কথাটা বললো রোহান….

-সবকিছু চেক করে বললাম দেখ রোহান মাথা থেকে ব্লিডিং হয়েছে আর অনন্যা আগে থেকেই অনেকটা উয়িক তার উপর এক্সিডেন্ট বুঝতেই পারছো কোন অবস্থায় আছে এখন ও কথাগুলো বলে থামলেন আঙ্কেল ….!!

-হ্যাঁ আঙ্কেল আমি সব বুঝতে পারছি বাট এখন কি করবো বেশি প্রবলেম হলে ওকে আজ রাতেই হসপিটালে এডমিট করাবো আঙ্কেল তারপর ও যেন অনন্যা ঠিক হয়ে যায় একরাস ভয় নিয়ে কথাগুলো বলল রোহান…..!!

-শান্ত হও রোহান ভয়ের কোনো কারন নেই শুধু এখন অনন্যার ঠিকমত খাওয়াদাওয়া,মেডিসিন, বিশ্রাম এগুলোর প্রয়োজন। আর হ্যাঁ মানুষিক চাপ যেন একদম না দেওয়া হয় অনন্যাকে তাহলে হিতে বিপরীত কিছু হতে পারে কারন আঘাত টা কিন্তু মাথায়। তাই এই বিষয়ে একটু খেয়াল রাখবা।আর আমি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাব বউমাকে কেমন টেনশন করোনা একদম…..!!!

-তারপর ডক্তর আঙ্কেল চলে গেলেন আর আমি এগিয়ে যেয়ে বেডের একপাশে বসে অনন্যার একহাত আমার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আমার মুখটা এগিয়ে নিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।তারপর আগের মত বসে রইলাম…..!!!

-কিছুক্ষণ ওভাবে তাকিয়ে থাকার পর আবিষ্কার করলাম অনন্যা আমার দেয়া শাড়ি আর গয়নাগুলো পরে আছে।কোনো সাজ নেই তারপর ও শুধু শাড়ি গহনাই অপরূপ লাগছে আমার জানটাকে আজ।হঠাৎ করে ওর হাত টার দিকে চোখ যেতেই তখনকার রক্ত মাখা হাতটার কথা মনে পড়তে আবার বুকটা কেঁপে উঠলো।ব্যান্ডেজ করা হাতটাই আলতো করে একটা চুমু দিলাম। কত কষ্ট ই না পেয়েছে আজ আমার জানটা তারপর আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম…..!!!
.
.
.
-মম আজ এই সব কিছুর জন্য তুমি দায়ি।কত কষ্ট করে রোহান কে আমার করে নেওয়ার সব প্লান করে ফেলেছিলাম। তুমি আমার সব প্লানে পানি ঢেলে দিলে তুমি আদেও আমার মম কিনা সত্যিই ডাউট হচ্ছে এখন আমার একরাশ ক্ষোব নিয়ে কথাগুলো তৃধা ওর মাকে বলল….!!!

-ন্যাকা কান্না কেঁদে মিসেস তমসা রহমান (তৃধার মা) বললেন তৃধা তুই তোর মমকে ডাউট করছিস।রোহান ছেলেটা যে কি তুকতাক করেছে তোকে আল্লাহ ই ভালো যানে। যখন থেকে বড় হয়েছিস এই রোহান রোহান করে মাথা খারাপ করেছিস কিন্তু রোহানের তাতে কিছু যায় আসেনা…..!!!

-মম তুমি আর একটা বাজে কথা বললে আমি সত্যিই ভুলে যাব যে তুমি আমার মম….

-তুই এটা বলতে পারলি একবারো কথাটা বলতে তোর মুখে বাধলোনা ন্যাকা কান্না করতে করতে তমসা রহমান কথাটা বললেন……

-মা-মেয়ের ন্যাকামি আর দেখতে না পেয়ে মিস্টার তুষার রহমান এবার রেগে উঠে বললেন আহ্ থামবে তোমরা।রোহান যে বাসায় আছে সেটা কি ভুলে গেছো।দিন দিন হুসবুদ্ধি কি সব লোপ পাচ্ছে তোমাদের….

-বাবার কথায় হুস ফিরলো তৃধার আর একটু হলে বড় সড় ভুল করতে যাচ্ছিল ও। এতক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসে তিনজন মিলে এসব কথা বলছিল….

-একটু পর রোহান অনন্যার ফোনটা নিয়ে তৃধাকে ওর রুমে ডাকলো…..
.
.
.
.
.
Continue…
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে