Gangstar In Love Part-26+27

0
3444

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 26

🤎🦋
..
..
..
..
..
আব্রাহাম-আইরাত এভাবেই কাটিয়ে দিলো বেশ কিছুদিন। আইরাত ও ইদানীং আব্রাহামের সাথে মিলেমিশে গেছে এখন আর আগের মতো রুড বিহেভ করে না কিন্তু তার মনের কোণে এক আকাশ অভিমান জোড় হয়ে আছে। কেননা আব্রাহাম আইরাতকে তার বাবা-মার সাথে কোন যোগাযোগ করতে দেয় না। পারমিশন ছাড়া বাইরে বের হতে দেয় না। এক প্রকার বন্দী জীবন কিন্তু কেন জানি না আব্রাহামের পাগলামি গুলো আইরাতের বেশ ভালো লাগে। আইরাত নিজেও জানে না যে কেন ভালো লাগে, আব্রাহাম আসেপাশে না থাকলে কেমন ফাকা ফাকা লাগে,, এই অনুভূতি কে ঠিক কি বলে জানা নেই আইরাতের। কিন্তু আব্রাহামের ওপর এখন তার ভালোলাগা, রাগ, অভিমান সবই কাজ করে। আব্রাহাম তার অফিসের কাজে ব্যস্ত। কিন্তু আইরাত কে ২৪ ঘন্টা নজরে রাখে সারাদিন জ্বালায়। আব্রাহামের জন্য আইরাত কিছুটা রান্না করাও শিখে গেছে কিন্তু আব্রাহাম তেড়ামি করলে ইচ্ছে করেই রান্নাতে ঝাল বেশি দিয়ে দেয় বা লবন বেশি দিয়ে দেয়।প্রায় ১ সপ্তাহ পর তারা সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এলো।





In চৌধুরী ভবন“““`

অয়ন; বাপি
আবির আহমেদ;; হুমমম
অয়ন;; বাপি আমরা এভাবে আর কতোদিন বউমনির কাছ থেকে সত্য লুকিয়ে রাখবো
আবির আহমেদ;; আমারও তো সেই একই কথা, কিন্তু আব্রাহাম মানছে না।
অয়ন;; দাভাই কেন মানবে না, after all বউমনির এটা জানার অধিকার রয়েছে।
আবির আহমেদ;; কিন্তু আমি ভাবছি যে আইরাত মামনি সত্য জানার পর কি করবে। সে যদি আমার আব্রাহাম কে রেখে চলে যায় তাহলে আব্রাহাম মরেই যাবে।
অয়ন;; বাপি তুমি বউমনির দিক টা ভাবছো না। ওরা বউমনি বাবা মা হয়। কেউ তাদের বাবা মাকে রেখে এতোটা দিন কি করে আলাদা থাকতে পারে। বাপি, বউমনি অনেক কিছু সহ্য করেছে আর না। আমরা যতদিন এই সত্যটা লুকাবো পরর্বতিতে বউমনির অভিমান আরো বাড়বে।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম না বলা পর্যন্ত আমি কিছুই করতে পারবো না অয়ন।
অয়ন;; একদিন না একদিন সবকিছু বউমনি জেনেই যাবে। তো তুমি কেন বলছ না যে বউমনি আর কেউ না বরং তোমারই আপন ছোট ভাই আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে, সেই আশরাফুল আহমেদ যে কিনা টাকা- সম্পদের এবং পাওয়ারের জন্য নিজেরই আপন ভাই এবং তার স্ত্রী কে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ভাগ্য আমাদের ওপর সহায় ছিলো যার জন্য বাপি তুমি, আমি আর দাভাই বেচে গেছি কিন্তু মা, মা তো পুড়ে ছাই হয়ে গেলো আমাদের সেই বাড়ির সাথেই। তোমার একমাত্র, তোমার সেই একমাত্র ভাইয়ের জন্য আমাদের পুরো পরিবার টা ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে। আর বউমনি অন্য কেউ না আমাদেরই আপন চাচাতো বোন হয়। দাভাই প্রতিশোধের তারণায় ছুটলেও আইরাত বউমনিকে পাওয়ার পর তার ধারণা পুরোপুরি পালটে গেছে। কেন তুমি এই সত্য টা আইরাত বউমনি কে বলছ না, কেন?!

ঠিক সে সময় পিছনের দিক থেকে কিছু পড়ে ভেংে যাওয়ার প্রচন্ড আওয়াজ আসে। আবির আহমেদ এবং অয়ন সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকায়। তাকিয়েই তাদের আত্মা চমকে যায়। ভয়ে ভয়ে অয়নের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে…

অয়ন;; বববউমনি,, তুতুতুমি
আবির আহমেদ;; আআআইরারাত..

আইরাত চা বানিয়ে ট্রে তে করে তার বাপির ঘরের দিকে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ অয়ন এবং আবির আহমেদের কথায় সে থেমে যায়, তারপর যা শুনে এতে আইরাত ভিতরে থেকে পুরো ভেংে পড়ে। তার হাত থেকে চায়ের ট্রে নিচে পড়ে যায়। বিকট শব্দ হয়। তখন আবির আহমেদ, অয়ন তাকিয়ে দেখে আইরাত তাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। আইরাত কিছু বলছে না, যেন তার কান দিয়ে কারো কোন কথা যাচ্ছে না। সে মাত্রই কি শুনলো শুধু তা ভাবছে। আইরাতের চোখ দিতে টুপটুপ পানি পরছে। জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে শুধু।

আবির আহমেদ;; আআআইরাত মামনি তুতুমি যা ভাবছো তা মোটেও না,, ভুভুল শুনেছ তুমি।
অয়ন;; বউমনি প্লিজ তুম..

অয়ন আইরাতের দিকে কথা বলতে বলতে এগুতে নিলে আইরাত সামনে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে পিছাতে লাগে সে। পিছনে কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নিতে আবার উঠে দাঁড়ায়। আবির আহমেদ, অয়ন আইরাতের কাছে যেতে ধরলে আইরাত দৌড়ে তার ঘরে চলে যায় এবং দরজা লাগিয়ে দেয়। আইরাতের পিছু পিছু তারাও যায়।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি দরজা খোল, কোন উলটা পালটা কাজ করিস না দরজা খোল মা
অয়ন;; বউমনি, বউমনি দরজা খোল। (দরজাতে জোড়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে) বউমনি প্লিজ ভুল বুঝ না দরজা খোল।
আবির আহমেদ;; অয়ন কি দরকার ছিলো এভাবে বলার, সময় বুঝে আইরাতকে সবকিছু একদিন বলা যেতো।
অয়ন;; তোমরা যদি আগেই বউমনি কে সব কিছু বলে সব মানিয়ে নিতে তাহলে আজ কখনোই এই দিন দেখতে হতো না বাপি।

এই কথা বলে অয়ন রেগে চলে আসে। আবির আহমেদ ও মন খারাপ করে চলে আসে। কিন্তু দেয়ালের ওপারে আইরাতের মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আইরাত দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিচে বসে পরে। সে কল্পনাতেও কোনদিন ভাবে নি যে তাকে কখনো এমন কিছু একটার সম্মুখীন হতে হবে। আইরাত ঢুকরে কেদে ওঠে। তার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আইরাতের বাবা আশরাফুল আহমেদ আবির আহমেদের ছোট ভাই হয় এবং তার বাবা তারই বড়ো ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। তাহলে কি তার বাবা একজন খুনি। আইরাতের এই কথা ভাবতেই বুক ভেংে কান্না আসে। কান্না করতে করতে নিজের একদম নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে। আবির আহমেদ অয়নও হতাশ হয়ে বসে আছে। আইরাতকে অনেক ডাকা হয়েছে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে ঘরের বাইরে আনার জন্য কিন্তু লাভ নেই সে দরজা খোলতে নারাজ। অবশেষে অনেকক্ষন এভাবে থাকার পর আইরাত উঠে দাঁড়ায়, চোখের পানি মুছে ফেলে। ঘরের দরজা খোলে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আইরাতকে বের হতে দেখে তার বাপি এবং অয়ন ছুটে আসে আইরাত কে আটকানোর জন্য। অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আইরাত কারো কথা কানে না তুলে একদম বাড়ির বাইরে চলে আসে। আইরাত বাড়ির ড্রাইভার কে বলে আব্রাহামের অফিসের উদ্দেশ্যে যেতে । ড্রাইভার ও আইরাতের কথা মতো গাড়িতে উঠে চলে যায়। আইরাতের মনে অনেক ক্ষোভ জমে রয়েছে আব্রাহামের জন্য। কেন সে সবকিছু জানার পরও আইরাতকে কিছুই বলেনি আজ সবকিছুর জবাব চাই আইরাতের।









In Office……..

ল্যাপটপে মুখ গুজে দিয়ে বসে রয়েছে আব্রাহাম। মুখে রয়েছে এক গম্ভীর ভাব। সেই সময় দরজাতে টোকা পড়ল। আব্রাহাম এর নজর তাকিয়ে দেখে আবার কাজে মন দিলো

আব্রাহাম;; Come in
রাশেদ;; স্যার এইযে নতুন আরো একটা ডিলের পেপার (একটা ফাইল আব্রাহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে)। আমি ডিলার কে বলে দিয়েছি আপনার যখন সময় হবে আপনি তখন উনার সাথে কথা বলে নিতে পারেন।
আব্রাহাম;; গুড, আচ্ছা কোন খবর পেলে?
রাশেদ;; জ্বি স্যার,, আপনি এবং ম্যাম দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর আশরাফুল আহমেদ আপনাকে তন্নতন্ন করে খুজেছে সব জায়গায়। কিন্তু পায় নি। উনি যেহেতু আপনাকে দেখেছেন তো আপনাকে মনেও রেখেছেন। তার সব চেলা পেলা দের লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু আপনার কাছে পৌঁছানোর সাধ্য তাদের নেই।
আব্রাহাম;; যে কাজ তিনি এতো দিনে পাননি তা আমি আজ নিজে করে দিবো। আমি আজ নিজে আমার শশুড় আব্বুর বাড়িতে যাবো। যা এতোদিন ভেবে এসেছিলাম তা আজ আমি করে দেখাবো।

এই বলে আব্রাহাম উঠে দাঁড়ালো। এবং অফিস থেকে বেড় হয়ে পড়লো। রাশেদ ও তার পিছু যাচ্ছে। আব্রাহাম রাশেদ গাড়িতে উঠে পড়লো। গন্তব্য নীড়মহল,,।।

অন্যদিকে আইরাতের গাড়ি ও আপন গতিতে যাচ্ছে। আইরাত শুধু কোন মতে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। নয়তো কান্না তার বাধ মানছে না। আব্রাহাম ও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে নীড়মহলের দিকে যাচ্ছে। প্রায় বেশখানিক পর আব্রাহাম নীড়মহলের সামনে এসে পড়ল। কিন্তু বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই আব্রাহাম চরম অবাক হলো। বাড়ির সামনে দাড়োয়ান পরে রয়েছে রক্তাক্ত অবস্থাতে। আব্রাহাম তার হাতে Gun নিতে শক্ত করে চেপে ধরে। তার বেশ ঘোলাটে লাগছে সবকিছু। আব্রাহাম তাড়াতাড়ি করে বাড়ির ভিতরে গেলে আর একদফা চমক খায়। বাড়ির ভিতরে সবকিছুই লন্ডভন্ড হয়ে আছে। জিনিসপত্র সবকিছু ভাংচুর, যাইচ্ছে অবস্থা। কাউকেই কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

রাশেদ;; স্যার এসব কি?
আব্রাহাম;;……………..

আব্রাহাম কিছুই না বলে দৌড়ে ভিতরে চলে যায়। গিয়ে দেখে যে আইরাতের বাবা আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর পেটে ছুরিবিদ্ধ। রক্তে সারা ফ্লোর ভেসে গেছে। আব্রাহামের এসব দেখে মাথায় যেন আকাশ ভেংে পরে। আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে কারো গোঙানোর শব্দে আবারও পিছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে যে আশরাফুল আহমেদের হাত হালকা ভাবে নড়ছে তিনি কিছু বলতে চাইছেন। আব্রাহাম তাড়াহুড়ো করে নিচে আশরাফুল আহমদের পাশে বসে পরে। আশরাফুল আহমেদ কিছু বলতে চাইছেন তাই আব্রাহাম তার কান উনার মুখের কাছে নিয়ে গেলো।

আশরাফুল;; আআআব্রাহাম আহমেমেমদ চৌধুরী
আব্রাহাম;;…………………….
আশরাফুল আহমেদ;; আমারই আপন ভাইয়ের ছেলে।

আব্রাহাম অবাক চোখে আশরাফুল আহমেদের দিকে তাকায়। তিনি জানলেন কি করে যে আব্রাহাম উনার ভাইয়ের ছেলে।
আশরাফুল আহমেদ;; তুমি, তুমি আমার বড়ো ভাইয়ের ছেলে। সেই ভাইয়ের ছেলে যাকে আমি কখনো ভাইয়ের চোখে দেখিই নি, কোনদিন সম্মান করিনি। এমনকি জানে মেরে ফেলতেও দুবার ভাবি নি। আব্রাহাম আমি সপ্নেও ভাবি নি যে আমাকে এমন দিন দেখতে হবে। আমার কর্মের ফল আমাকে এইভাবে ভোগ করতে হবে। আসলে খারাপের সাথে কখনোই ভালো হয় না। তার পরিণাম সবসময় ভয়াবহ। যেমনটা হলো আমার সাথে। আমি সবকিছু জানি বাবা। তুমি, আমার ভাই আবির আহমেদ, অয়ন বেচে আছো। আমি তোমাকে চিনতে পারিনি প্রথমে। বাবা আমাকে তুই, আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস যদিও আমি তোর ক্ষমার যোগ্য নই। তোর মাকে আমি তোর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছি। তোদের পরিবারকে আলাদা করে দিয়েছি। আজ আমার মৃত্যুর জন্য ও আমি এ দায়ী। মানুষ বলে কর্মের ফল মানুষ দুনিয়াতেই ভোগ করে। আজ আমার এই দসা আমার কাজের জন্যই। এই সবকিছু তো আমার সাথে হওয়ার ই ছিলো। সবই আমার ভাগ্যের লিখন। আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দিস। (কেদে কেদে খুব কষ্ট করে কথাগুলো বলল)।

আব্রাহামের অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো। আব্রাহাম তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; তোমাদের এই অবস্থা করলো কে আর কি করেই বা করলো?
আশরাফুল আহমেদ;; আমিও একদিন তোর বাবা আবির আহমেদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলাম ঠিক তেমন, ঠিক তেমন ভাবেই কেউ একজন আমার সাথেও ছলনা করেছে। যাকে আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম সেই, সেই আজ আমাকে ধোকা দেয়।
আব্রাহাম;; কে সে?
আশরাফুল আহমেদ;; দুলাল, দুলাল আমার পক্ষে ষড়যন্ত্র করে। যার ফলে আজ আমার এই পরিনতি।





(কিছুক্ষন আগের ঘটনা)………

আশরাফুল আহমেদ;; দুলাল, তুই ভুলে যাস না তুই কি ছিলি আর আজ কি হয়েছিস। পথের ভিকেরি ছিলি তুই, পথে পথে ভিক্ষে করে বেড়াতি। আর আজ নিজের দিকে চেয়ে দেখ আমার জন্য কি হয়েছিস। আমার এতো দয়া ধর্ম সব ভুলে গেলি (রেগে চিল্লিয়ে)
দুলাল;; আরে আস্তে, গলার জোড় তোমার একার না আমার ও রয়েছে।
আশরাফুল আহমেদ;; কি চাচ্ছিস তুই
দুলাল;; এখানে তোমার সুন্দর একখানা সাইন (একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে)
আশরাফুল আহমেদ;; আমি কখনোই আমার মাদক কারখানার পেপারে সাইন করবো না
দুলাল;; দেখ অযথা না করে লাভ নেই। সারাজীবন তো বেআইনি কাজই করে আসলে এখন একটু অবসর নাও। ভালোভাবে সাইন করে এখানে সেই কারখানা এবং সেখানকার জমি আমার নামে লিখে দাও
আশরাফুল আহমেদ;; কখনোই না
দুলাল;; আচ্ছা যাও না করলে এখন পরে করো কিন্তু তার আগে কিছু কথা তো শুনে যাও। তোমার জীবনের কিছু চরম সত্য।
আশরাফুল আহমেদ;; কি বলতে চাচ্ছিস তুই!
দুলাল;; “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী” এই ব্যক্তিটি ই সেদিন তোমার চোখের সামনে দিয়ে তোমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। সে আসলে কে জানো! আমেরিকান মাফিয়া, দেশে খুব কম সংখ্যক মানুষ ই তা জানে। এবং সাথে সাথে তোমার বড়ো ভাই আবির আহমেদের ছেলে ও বটে মানে তুমি সম্পর্কে আব্রাহামের চাচ্চু লাগো। যে কিনা এতোদিন ভেবে এসেছিলো যে সে আর বেচে নেই। কিন্তু তুমি ভুল সে বেচে আছে। আর শুধু সে না তোমার ভাই আবির আহমেদ, অয়ন ও বেচে আছে।
আশরাফুল আহমেদ;; ককককি বলছিছিছিস তুতুতুই। বেবেবেচে আআছে মামানে।
দুলাল;; আরে আরে ভয় পেয়ে গেলে বুঝি। তারা ভুত না ভুত না মানুষই কিন্তু তুমি মারতে চেয়েছিলে বাট তারা মরেনি।
দুলালের কথা শুনে আশরাফুল আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। তার কানকে সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। তাহলে সে এতোদিন কোন মিথ্যে কথার ওপর ভরসা করে এসেছিলো। আশরাফুল আহমেদের ভাবনাতে ছেদ পরে দুলালের কথায়।

দুলাল;; আর তোমার একমাত্র মেয়েও সেখানেই রয়েছে। এতোকিছু হতো না যদি তোমার মেয়ে এখানে থাকতো। তোমার মেয়ের মতো সুন্দরী মেয়ে থাকলে আর কি লাগে (বিশ্রী হেসে) ওকে নিয়ে চলে গেতাম।
আশরাফুল আহমেদ;; দুলাল (জোড়ে চিল্লিয়ে)
দুলাল;; বেশি চিল্লিয় না। ভুলে যেও না তোমার বউ এবং ছেলে এখনো আমার দখলে।
আশরাফুল আহমেদ;; ছেড়ে দে দুলাল ছেড়ে দে তাদের। তোর শত্রুতা আমার সাথে আমার বউ আর ওইটুকু ছোট বাচ্চা ছেলে তোর কি ক্ষতি করেছে। ছেড়ে দে যেতে দে ওদের।
দুলাল;; এতো কথার মানেই হয় না। শুনো আমি এতোটাও পাশান না। তুমি সুন্দর করে সাইন করে দাও বিনিময়ে নিজের জীবন আর বউ-বাচ্চাকে সহি সালামত ফিরে পাও।
আশরাফুল আহমেদ;; জানোয়ার, বিশ্বাসঘাতক, শুনে রাখ আমি মরে যাবো তবুও এই পেপারে সাইন করবো না কোনদিন ও না।
দুলাল;; আচ্ছা ঠিক আছে মরো তাহলে।

এই কথা বলার সাথে সাথে দুলাল উঠে এসে ছুরি নিয়ে সোজা আশরাফুল আহমেদের পেটে মেরে দেয়। আকশচুম্বী চিৎকার দিতে ওঠেন তিনি। দুলাল সাথে আতিয়া আহমেদ কেও মেরে রেখে যায় কিন্তু আয়ুশকে কোথাও খুজে পাওয়া যায় না।





বর্তমান……

আশরাফুল আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা আমার কেউ রইলো নারে। আমার মেয়েটার ও কেউ থাকলো না। তুই আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস বাবা। দেখে রাখিস
আব্রাহাম;; তোমাদের, তোমাদের কিছুই হবে না। আমি এখনই হস্পিটালে নিবো তোমাদের কে। কিছু হতে দিবো না।

আব্রাহাম পাশে তাকিয়ে দেখলো আতিয়া আহমেদও রক্তাক্ত অবস্থাতে পড়ে আছে। আব্রাহাম আতিয়া আহমেদের কাছে ছুটে গেলো।

আব্রাহাম;; আম্মু, আম্মু প্লিজ চোখ খোলা রাখো। তোমাদের কিছুই হবে না। আমি হতে দিবো না। আমার আইরাত ভেংগে যাবে তোমাদের কিছু হলে। প্লিজ চোখ খোল আম্মু। (গালে হাত দিয়ে)

আশরাফুল আহমেদ;; না বাবা এখন আমাদের কাছে আর বেশি সময় নেয়। আমার পাপের ঘড়া ভরে গেছে। আমায় তুই ক্ষমা করে দিস। (কেদে)







আইরাতের গাড়ি দ্রুত অফিসের সামনে এসে দাড়ালো। গাড়ি দাড়ানোর সাথে সাথে আইরাত এক দৌড়ে অফিসের ভিতরে চলে গেলো। আইরাতকে অফিসে দেখেই অফিসের সব স্টাফরা অবাক। কেননা অফিসের বিগ বসের বউ অফিসে এলে অবশ্যই কোন না কোন বড়সড় ফাংশনের ব্যাবস্থা করা হবে। কিন্তু আইরাত এভাবে হুট করেই চলে এলো। আইরাতকে দেখে রিসিপশনের মেয়েটি দ্রুত এগিয়ে এলো…

মেয়েটি;; ম্যাম আপনি এখানে হঠাৎ কোন কাজ?
আইরাত;; where is your boss?
মেয়েটি;; ম্যাম, আপনি বসুন কি নিবেন বলুন
আইরাত;; Answer me damn it, where is Abraham?
মেয়েটি;; মমম্যাম স্যার তো অফিসে নেই (অনেক ভয় পেয়ে)
আইরাত;; অফিসে নেই মানে কোথায় গিয়েছে?
মেয়েটি;; ম্যাম তা তো স্যারের পিএ প্লাবণই বলতে পারবেন।
আইরাত;; Take me to him
মেয়েটি;; Sure ma’am..

আইরাতকে প্লাবণের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।

মেয়েটি;; ম্যাম ইনি প্লাবণ।
আইরাতকে দেখে প্লাবণ তাড়াতাড়ি তার সামনে এলো।প্লাবণ;; আরে ম্যাম আপনি তাও আবার এই সময়?
আইরাত;; তোমার স্যার আব্রাহাম কোথায় আছে বলতে পারবে?
প্লাবণ;; জ্বি ম্যাম, স্যার তো নীড়মহলে গিয়েছেন

প্লাবণের কথা শুনে আইরাত অবাক। আইরাত তো এটাও জানে না যে আদৌ কি আব্রাহাম ঠিক মতো তার বাপি কে চিনে। আর আব্রাহাম নীড়মহলে এই সময় গিয়ে কি করছে। আইরাত আর কিছু না ভেবে কাউকে কোন কিছু না বলেই আবার দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে পরে এবং গাড়িতে উঠে পরে।

আইরাত;; ড্রাইভার, তাড়াতাড়ি নীড়মহলে চলো।
ড্রাইভার;; জ্বি মেডাম।

গাড়ি অনেক বেশি জোড়ে চলছে। এদিকে আইরাত কান্না করতে করতে চোখ রক্তবর্ণ করে ফেলেছে। বেশখানিক সময় বাদে গাড়ি নিড়মহলের সামনে এসে থামলো। আইরাত যত জোড়ে সম্ভব দৌড়ে ভিতরে গেলো। কিন্তু ভিতরে গিয়ে আইরাতের আত্মা কেপে উঠলো। সারাবাগানে রক্তে মাখামাখি। দোলনা ভেংে নিচে পড়ে আছে। কারো গোঙরানোর শব্দে আইরাত নিচের দিকে তাকালো। তাকিয়ে আইরাত ভয় পেয়ে বেশ পিছিয়ে গেলো এবং মুখে হাত দিয়ে দিলো। আইরাত শব্দ করে কেদে দিয়ে হুমড়ি খেয়ে বাড়ির দারোয়ানের সামনে বসে পরলো।

আইরাত;; দারোয়ান মামা, তোমার এই অঅবস্থা কি ক করে হলো। অনেক রক্ত যাচ্ছে তোমার তুমি তাড়াতাড়ি চলো হস্পিটালে যেতে হবে তোমার (কেদে)
দারোয়ান;; আইরাত মা তুমি এসেছ, মরার আগে তোমাকে এক নজর দেখতে পেয়েছি তাই অনেক রে মা।আমার কাছে বেশি সময় নেই মা। আব..আমিহ আমি…..
আইরাত;; না মামা প্লিজ তুমি এভাবে বলো না,, তোতোমার কিকছুই হবে না মামা দেখো। আমি তোমাকে….
দারোয়ান;; মা, মা তুমি আগে ভিতরে যাও বড়সাহেব বড়মেডাম এর কি জনি অবস্থা জানি না। আয়ুশকে তো পাওয়াই যাচ্ছে না। তুমি আগে ভিতরে যাও মা তাড়াতাড়ি
আইরাত;;; কিহহ, মামা এসব কি বলছ তুমি পাপা আম্মুর কিছুই হবে না। ওওওরা ওরা ঠিক আছে আর আয়ুশ,, আয়ুশশশশশশশ…….. (চিল্লিয়ে)

আইরাত আর কিছু না বলে দৌড়ে বাড়ির দরজা দিয়ে ভিতিরে চলে যায়। আইরাতের হাপাতে হাপাতে – কানতে কানতে খারাপ দশা।



আশরাফুল আহমেদ;; আব্রাহাম, আমার তোমার ওপর বিশ্বাস আছে বাবা,, তুমি আমার মেয়েকে দেখো আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও। (কান্নায় ভেংে পড়ে)
আব্রাহাম;; চাচ্চু তুমি ভয় পেয় না চাচ্চু তোমার কিছুই হবে না। তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে। চাচ্চু চাচ্চু প্লিজ কথা বলো, চাচ্চু।

আশরাফুল আহমেদ আর কোন কথা বলছেন না, চোখ বন্ধ করে ফেলেন তিনি। আব্রাহাম দেখে যে ছুরি টা খুব বাজে ভাবে আশরাফুল আহমেদের পেটে বিধে আছে। তাই আব্রাহাম তার হাত দিয়ে উনার পেটের ছুরিটা এক টানে তুলে ফেলে। এতে আব্রাহামের মুখে, হাতে, শার্টে অনেক রক্ত ছিটে লেগে যায়। এক ভিবৎস অবস্থা।
ঠিক সেইসময় বাড়ির মেইন দরজা খুলে আইরাত ভিতরে এলো। সামনে তাকাতেই যেন আইরাতের মাথায় বাজ পড়লো,, পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় তার। সামনে তার আম্মু এবং পাপার লাশ পরে আছে এবং আব্রাহাম তার পাপার সামনে বসা হাতে তার ছুরি। চোখে-মুখে রক্তের ছড়াছড়ি। আব্রাহাম আইরাতকে দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কি রেখে কি করবে সে, কি ই বা জবাব দিবে আইরাতকে আব্রাহাম তা ভেবে পায় না। আইরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে ফ্যালফ্যাল করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; আআ আই আইরাত
আইরাত;;…………………..
আব্রাহাম;; তুতুমি এখানে কিকিকিকরে
আইরাত কোন কথা না বলে সেখানেই ধপ করে বসে পরে। চিৎকার দিয়ে অঝোরে কান্না করতে থাকে। আব্রাহাম হাতের ছুরি দূরে ফেলে দিয়ে দ্রুত আইরাতের কাছে আসে।

আব্রাহাম;; আইরাত (আইরাতের গালে হাত রেখে)
আইরাত;;………………(কান্না করেই যাচ্ছে)
আব্রাহাম;; আইরা………
আইরাত;; দূরে যান (অনেক জোড়ে চিল্লিয়ে) আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি। ছুবেন না আমায় আপনার ওই নোংরা হাতে। (আব্রাহামকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে)
আপনি আমায় তুলে নিয়ে গেছেন, আমাকে নিজের বাবা মার থেকে দূরে রেখেছেন, জোড় করে বিয়ে করেছেন, জোর করে নিজের অধিকার পর্যন্ত ফেলেছেন আমি নিরুপায় ছিলাম কিছুই বলতে পারিনি, কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমার বাবা মা তার ওপর আপনার চাচা চাচি আপনার এমন কি ক্ষতি করেছিলো যে আপনি ওদের মেরেই ফেললেন।

আব্রাহাম আইরাতের কথা শুনে অবাকের ওপর অবাক। সে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে

আইরাত;; প্রতিশোধ, তাইনা প্রতিশোধের জন্যই তো একমাত্র আমাকে বিয়ে করা আপনার। বিয়ে তো করে ফেলেছেন, নিন এবার আপনার প্রতিশোধ ও নেওয়া হয়ে গেলো। আমার বাবা মা কে খুন করে। পেয়েছেন শান্তি, যে প্রতিশোধের তারণায় এতোদিন জ্বলে-পুড়ে ছাই হচ্ছিলেন মিটেছে সেই প্রতিশোধ।
আব্রাহাম;; আইরাত তুমি ভুল বুঝ….(আইরাতের দিকে এগিয়ে)
আইরাত;; খুনি, আপনি একজন খুনি। আর যাই হোক একজন খুনিকে কখনোই ভালোবাসা যায় না। আপনি আমার বাবা-মার খুনি (আব্রাহামকে থামিয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে যেতে)

আইরাত আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে জলদি সেখান থেকে চল আসে। আব্রাহাম পিছন থেকে হাজার ডাকার পরও আইরাত পিছনে তাকায় না। আব্রাহাম আইরাতের এমন কথায় পাগল প্রায়। আইরাত কি তাহলে তাকে রেখে চলে যাবে।

আব্রাহাম রাশেদ কে লাশ দুটো সেখান থেকে নিয়ে এসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলল। আব্রাহাম সেই অবস্থাতেই দৌড়ে আইরাতের পিছনে ছুটে গেলো।








❣️❣️চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 27

❤️🦋
..
..
..
..
..
আইরাতের জীবনে যে কোনদিন এমন কালো মেঘের ছায়া নেমে পরবে তা সে কখনো ভাবেই নি। হাসিখুশি একটা পরিবারকে মূহুর্তেই ঝড় এসে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিলো। নিজের আপনজন, পরিবার পরিজন সবকিছু হারিয়ে আজ আইরাত দিশেহারা। কান্নার বাধ যেন আজ মানছেই না।

আইরাত তাদের বাড়ি থেকে অঝোর ধারায় কানতে কানতে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। আইরাতকে এভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে গাড়ির ড্রাইভার চিন্তিত হয়ে আইরাতের কাছে যায়। কিন্তু আইরাত কোন কথা না শুনে শুধু এগিয়েই যাচ্ছে।

ড্রাইভার;; ম্যাম, ম্যাম আপনি আপনার এই দশা কেন। কি হয়েছে ম্যাম
আইরাত;;…………………
ড্রাইভার;; ম্যাম আপনি কোথায় যাচ্ছেন, আমাকে বলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি। ম্যাম প্লিজ দাঁড়ান

আইরাত কোন কথা না শুনেই সোজা গাড়ির ভিতরে ওঠে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। বাইরে গাড়ির ড্রাইভার খুব করে চেষ্টা করছে আইরাতকে থামানোর কিন্তু তার সব চেষ্টাই বিফলে যাচ্ছে। আইরাত গাড়ি নিয়ে চলে গেলো,, কান্না করতে করতে গাড়িতে বসে পাগলের মতো করে ড্রাইভ করে যাচ্ছে সে। আইরাত চলে যাওয়ার পর পরই আব্রাহাম ছুটে বাইরে এলো। ড্রাইভার কে বাইরে দেখে আব্রাহাম হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল…

আব্রাহাম;; মানিক, তোমার ম্যাম কোথায়?
মানিক(ড্রাইভার);; স্যার, আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি ম্যাম কে আটকাতে। তিনি গাড়ি নিয়ে চলে গেছেন, কোথায় গেলেন তাও জানি না…
আব্রাহাম;; Ohh shit!!…

আব্রাহামের রাগে দুঃখে মাথা ফেটে যাওয়ার অপক্রম। আব্রাহাম আর দেরি না করে তার গাড়ি নিয়ে আইরাতের গাড়ির পিছনে ছুট লাগালো। আইরাত কোন দিক দেখছে না সে অবাধ্য হয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আইরাত এতোই জোড়ে ড্রাইভ করছে যে সামনে কোথায় কি আছে তাও দেখছে না। আব্রাহাম ও আইরাতের পিছন পিছন পাগলের মতো করে ছুটছে। অনেক চেষ্টা করছে যেন ওভারটেক করে আইরাতের গাড়ির সামনে যাওয়া যায় কিন্তু পেরে উঠছে না। এভাবে অনেকক্ষন ড্রাইভ করার পর আইরাতের গাড়ি এসে থামলো এক হাইওয়ের ওপর। গাড়ি থামিয়েই আইরাত তার মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে কানতে লাগলো। আইরাতের অনেক রাগ হচ্ছে আব্রাহামের ওপর। একরাশ বিরক্তি এবং ঘৃণা কাজ করছে তার মনে। হঠাৎ আইরাত গাড়ির ভিতরের মিনি ড্রয়ার খুললো, দেখলো যে এখানে একটা রিভলবার রাখা। আইরাত সাথে সাথে তা হাতে নিলো। আইরাত তার সাইড ক্যামেরাতে দেখলো আব্রাহাম মাত্রই তার গাড়ি নিয়ে পিছনে থেমেছে। আইরাতের রাগ এখন চরম পর্যায়ে। সে তাড়াতাড়ি করে হাতে রিভলবার টা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। আব্রাহাম ও নামলো। পাগলের মতো করে আব্রাহাম আইরাতের কাছে গেলে আইরাত চট করে রিভলবার টা আব্রাহামের দিকে তাক করে ধরে। আব্রাহাম এক মূহুর্তের জন্য প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। আইরাতের চোখ গেলো আব্রাহামের পরনে থাকা শার্টের ওপর। রক্ত লেগে আছে তাতে।

আইরাত;; রক্ত, আপনার শার্টে রক্ত লেগে আছে যা আমার বাবা-মার। যার সাথে বিয়ে হয়েছে একদিন সে নিজেই আমার বাবা-মার খুনি হয়ে দাঁড়াবে আমি তা কল্পনাতেও ভাবিনি। আর আজ, আজ তা বাস্তবে পরিনত হলো। আপনি না আমায় বলতেন যে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু আজ আমার বাবা মাকে খুন করতে একবার ও কি আপনার হাত কাপলো না। আমি সব জানি। আমার বাবা আর আপনার বাবা আপন ভাই। এমনকি আমার বাবা আপনাদের প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছে কিন্তু আপনারা বেচে আছেন। আচ্ছা সবকিছু ভুলে নতুন করে কি শুরু করা যেত না, আপনার আর আমার জীবন কি নতুন করে একসাথে জড়ো করা যেত না। কিন্তু না আপনি না চান নি। আর চাইবেন ই বা কিভাবে প্রতিশোধ যে নেওয়ার ছিল আপনার আমার বাবা-মা কে হত্যা করে। আর আজ সবকিছু শেষ সব। সবকিছু শেষ করে দিয়েছেন আপনি। (আব্রাহামের দিকে রিভলবার তাক করেই)

আব্রাহাম;; ননা আইরাত, জান প্লিজ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝ না। তারা যেমন তোমার বাবা-মা ছিল আমার ও চাচ্চু চাচিমনি ছিলো। আমার শশুড় আব্বু আম্মু আমি তাদের কি করে, কি করে মারতে পারি। তোমার অনেক বড় Misunderstanding হয়েছে তুতুমি আআমার কথা ট……

আইরাত;; বেস, অনেক হয়েছে নাটক। অনেক শুনেছি আপনার কথা আর না। ভালোবাসা কি, কাকে বলে আমি কখনো জানতামই না। কিন্তু আপনার এইসব পাগলামি, কেয়ারিং সবকিছু কেমন যেন আমার মনে একপ্রকার জায়গা করে নিয়েছিলো। ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম আমি আপনাকে। কিন্তু আজ এক সেকেন্ডে আপনি আমার মনে আপনার জন্য সব অনুভূতিকে গলা চেপে মেরে ফেলেছেন। আপনার জন্য আমার মনে আজ শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা রয়েছে। I just hate you Mr. Abraham Ahmed Chowdhury…

আব্রাহাম;; আইরাত জানপাখি প্লিজ হাত থেকে রিভলবার টা ফেলে দাও প্লিজ,, লেগে যাবে তোমার। কষ্ট হবে তোমার বেবি প্লিজ ফেলে দাও ওটা…

আইরাত;; হাহাহাহা (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে) বাহহ,, বেশ দারুণ বলেন তো আপনি। আপনি আমার হাতে রিভলবার দেখে ভয় পাচ্ছেন কেননা যদি আমার লেগে যায় তো। একে কি বলে যানেন “মেরে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া” আপনি তো আমার বেচে থাকার সব কারণ শেষ করেই দিয়েছেন এখন আবার আমার জন্যই এতো চিন্তা। নাটক ভালো করেন। আজকের পর থেকে আপনি কখনোই আমাকে আর পাবেন না। আমার জন্য আপনি তখনই মরে গেছেন যখন আপনি আমার বাবা-মাকে খুন করেছেন। খুনি আপনি। (পিছনের দিকে পিছাতে পিছাতে)

আব্রাহাম;; না না প্লিজ আইরাত এভাবে বলো না প্লিজ। আমি মরেই যাবো তুমিহীন। তুমি আমাকে একটাবার এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দাও। আমাকে তুমি মারো, কাটো, বকো যা ইচ্ছে করো তাও প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না আইরাত। আমি জেন্ত লাশ হয়ে যাবো, তুমিহীন আমি নিঃস্ব। আমি আমার বেচে থাকার নতুন আলো খুজে পেয়েছি তোমার মাঝে। আইরাত এভাবে আমারে একা ফেলে রেখে যেও না আমি পারবো না বাচতে আইরাত (পাগলের মতো অঝোর ধারায় কান্না করে)

আইরাত;; আমি আপনাকে না মারা পর্যন্ত আমার মনে শান্তি আসবে না। আমি প্রথমে আপনাকে মারবো তারপর নিজে মরবো। I hate you,, i just hate you… You ar the biggest mistake of my life Abraham..

আইরাত এই কথা গুলো বলছে আর আব্রাহামের দিকে গুলি তাক করে পিছিয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম পুরো পাগল হয়ে গেছে। কান্না করতে করতে নাজেহাল অবস্থা। আইরাতের পিছনে যাওয়া দেখে আব্রাহাম ধীরে ধীরে আইরাতের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং বারবার আইরাতকে পিছাতে না বলছে।

আব্রাহাম;; আইরা….
আইরাত;; চুপ করুন। আপনার মুখে আমার নাম ও উচ্চারণ করবেন না। আপনাকে আমি আর আপনার পরিচয়ে চিনি না, আপনি আমার কাছে এখন শুধুই একজন খুনি, আমার বাবা-মার খুনি। আর একজন খুনির বেচে থাকার কোন অধিকার নেই।
আব্রাহাম;; আইরাত… (আইরাতের দিকে এগোতে ধরলে)

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগোতে ধরলে আইরাত চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে আব্রাহামকে Shoot করে দেয়। রিভলবারের মুখ থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। আইরাত চোখ খুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দ্রুতগতিতে গুলি লাগার ফলে আব্রাহাম কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।
আব্রাহাম এক নজর তার বুকের দিকে তাকিয়ে আবার আইরাতের সিকে তাকায়। চোখ দিকে চিকচিক একবিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। আইরাত জোরে জোরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে। তার চোখেও পানি। গুলিটা সোজা গিয়ে আব্রাহামের বুকের বা পাশে লেগেছে। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম আর রাস্তার প্রায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আইরাত হাতে তার রিভলবার। আব্রাহাম এক দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; ভালোবেসে মরতেও রাজি। আর কয়জনের এমন ভাগ্য যে সে তার ভালোবাসার মানুষের হাতে মৃত্যুবরণ করবে। ভালোবাসি আইরা……….

আব্রাহামের পুরো কথা শেষ না হতেই ঝড়ের গতিতে একটা ট্রাক এসে আইরাতকে ছিটকে দূরে নিয়ে যায়।আইরাত পুরো রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আব্রাহামের চোখের সামনেই আইরাতের রক্তাক্ত দেহ পরে থাকে।

আব্রাহাম;; আইরায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াত..

আব্রাহামের মুখ দিয়ে শুধু একটা কথাই বের হলো “আইরাত”। আব্রাহাম ও ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। আইরাতের কাছে হেটে আসার মতো শক্তি তার মধ্যে বাকি নেই। গুলিটা সোজা বুকে এসে লাগার কারণে অনেক রক্তক্ষরণ হয়। আব্রাহাম মাটিতে পরেই কাতরাতে থাকে। মুখ দিয়ে আইরাতকে ডাকার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আইরাত কে চেনার কোন উপায় ই নেই সারা শরীর রক্তে ভেসে গেছে। বুকে হাত দিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখ বন্ধ করে ফেলে আব্রাহাম। এ যেন মৃত্যু যন্ত্রণা কেও হার মানাবে। আব্রাহামের মৃত্যুর থেকে তাকে যেন আইরাতের এই অবস্থা বেশি কষ্ট দিচ্ছে। আব্রাহামের দেহ ও এক সময় চুপ মেরে গেলো। রাস্তার দুপাশে পরে রয়েছে দুই নিথর দেহ। এক দেহে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়,ছেড়ে যাওয়ার ভয় অন্য দেহে শুধু ঘৃণা অার ঘৃণা। এই হাইওয়ে টাই একমাত্র জায়গা ছিলো। যা আব্রাহামের সুখ – দুঃখ সব কিছুর ভাগিদার ছিলো। সবকিছুর সাক্ষি ছিলো এই জায়গা। আজ ও সাক্ষি হলো কিন্তু দুইপ্রাণের আলাদা হওয়ার গল্প নিয়ে। দুইটি ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করার গল্প।









অন্যদিকে রাশেদ আইরাতের বাবা মার লাশ নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসে দারোয়ান কে আনেন কিন্তু তিনি রাস্তাতেই মৃত্যুবরণ করেন। আয়ুশকে সারা বাড়ি তে খুজে না পেয়ে বাড়ির পিছনে খোজার জন্য লোক লাগিয়ে দেয়। সেখানে আয়ুশের লাশ পাওয়া যায় রক্তাক্ত বিচ্ছিরি অবস্থায়। চেনের রাস্তা পর্যন্ত নেই। তারা আয়ুশের লাশ কেও নিয়ে চলে আসে। পুরো পুলিশ ফোর্সকে লাগিয়ে দেয় দুলাল কে খোজার জন্য। দুলাল কে খোজে পেলে সাথে সাথে ইনকাউন্টার করার আদেশ নেয়। সাথে তার চেলা পেলা কেও এরেস্ট করার জন্য বলা হয়।






❤️❤️চলবে~~~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে