#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__14
🍁🍁
.
.
.
.
.
.
.
.
আইরাত কে পেয়ে যেন চৌধুরী বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে গেলো।
আবির আহমেদ; আয় মা আয় ভিতরে আয়। অনেক বছর পর আমার এই শুন্য পরিবার টাকে তুই এবার পূর্ণ করতে এসেছিস।
আইরাত-আব্রাহাম এক সাথে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো। আইরাত সারা বাড়ি চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে লাগলো।
আব্রাহাম; এভাবে দেখার কি আছে। এখন থেকে তো আজীবন এখানেই থাকবে
আব্রাহামের প্রতিটি কথায় আইরাতের রাগ যেন বেড়ে উঠছে বার বার। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য সামলে নিচ্ছে। কেননা আব্রাহামের বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ। এখন যদি আইরাত কিছু বলে তাহলে তিনি কষ্ট পেতে পারেন। এই ভেবে চুপ করে রেয়েছে।
আবির আহমেদ; আব্রাহাম কিরে তুই বউমা কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন,, ওকে নিয়ে উপরে যা,, রুমে নিয়ে যা কিছু টা ফ্রেশ হয়ে পরে খেতে আয়। আমি আজ সব তোদের পছন্দের খাবার বানিয়েছি। নে যা আইরাত মা কে তার রুম দেখিয়ে দে
অয়ন; আরে ওয়েট ওয়েট,, আমার একমাত্র হবু ভাবি কে আমি নিয়ে যাবো। চলো ভাবি
আইরাত মুচকি হেসে অয়নের সাথে চলে গেলো। অয়ন আইরাত কে নিয়ে উপরে যেতে লাগলো। খুশিতে গদগদ হয়ে অয়ন বলল
অয়ন; ভাবি, আমার না কেন যেন মনে হয় তুমি না অনেক ভালো।
আইরাত; আরে ভাই, কিন্তু তোমার ভাই তো আমাকে ভালো থাকতে দেয় না। সবসময় রাগ দেখায়, হাহ
অয়ন; (ফিক করে হেসে দিয়ে) ভাবি আসলে ভাইয়া এমন ই। বলতে পারো ভাইয়া নারকেল এর মতো। বাইরে থেকে শক্ত আর ভিতর থেকে একদম নরম।
আইরাত; হুমম বুঝলাম,, আর তুমি কি ভাবি ভাবি ডাকা শুরু করলে এখনো তো বিয়ে হয় নি।
অয়ন; ওহহ মেরি পেয়ারি ভাবি, বিয়ে হয় নি কিন্তু হতে কতক্ষন। আমি ভাবতেও পারি না যে আমার ভাই মানে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী ও প্রেমে পরেছে।
আইরাত; কেন, উনি কি মানুষ নন নাকি প্রেমে পরবে না কেন?
অয়ন; আরে ভাবি তুমি বুঝ নি,, ভাইয়ার আসলে মেয়ে দের থেকে এলারজি আছে। কিন্তু ইদানীং আমার ধারনা ভুল ছিলো এমনকি বাপির ও।
আইরাত; আচ্ছা অয়ন,, তোমার ভাই কি আগে থেকেই এই রকম নাকি! মানে রাগি, জেদি, একগুয়ে?
অয়ন; (এক লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে) নাহ ভাবি, সবার জীবন ই গোছালো থাকে, হাসি খুশি থাকে কিন্তু ভাগ্য সবসময় সংগ দেয় না। ঠিক তেমন এ আমার ভাই টার সাথেও হয়েছে। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু মাঝ খান থেকে এক ঝড়হাওয়া এসে সব বিখরে দিলো।
আইরাত ভ্রু জোড়া কুচকে অয়নের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অয়ন; যাজ্ঞে ভাবি, তুমি এই প্রথম আমাদের বাসায় এসেছো তো এইসব কথা বাদ দেই আমরা।
কথা বলতে বলতে অয়ন আইরাত একটা সুন্দর রুমের সামনে এসে পড়লো। রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে আইরাত আসবে বলে গোছানো হয়েছে।
অয়ন; ভাবি, এই রুমটা তোমার এই কিছুদিন এর জন্য। তারপর তো ভাইয়া আর তোমার রুম একটাই হবে। নাও এবার তুমি জলদি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে পরো কেমন। আমি যাই
আইরাত; আচ্ছা
অয়ন এসে পড়লো। আইরাত বিছানাতে ধোপ করে বসে পড়লো। কি থেকে কি হচ্ছে। আচ্ছা আব্রাহাম কি আইরাত কে নিয়ে তার বাপির কাছে মিথ্যা কথা বলল। হে বলেছে হয়তো। কারণ আব্রাহামের বাপি যদি জানতো যে আইরাত কে আব্রাহাম তুলে এনেছে তাহলে কখনোই আব্রাহামের বাপি চুপ করে বসে থাকতো না আর না ই এতো খুশি থাকতে পারতো। আইরাত ভাবছে সুযোগ বুঝে আব্রাহামের বাপি কে সবকিছু বলে দিবে। তারপর তো আর আব্রাহাম আইরাতকে আর আটকে রাখতে পারবে না। হ্যাঁ, এইটাই বেস্ট আইডিয়া। আইরাত এতো কিছু ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। প্রায় ১৫-২০ মি. পর আইরাত রুমে এসে পড়লো।
রুমে এসেই আইরাত দেখলো আব্রাহাম বিছানাতে আধা শোয়া হয়ে আছে এবং হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে আছে। আইরাত এভাবে হুট করেই আব্রাহাম কে দেখে চমকে গেলো এবং দিলো এক চিল্লানি।
আব্রাহাম দ্রুত উঠে গিয়ে আইরাতের মুখ চেপে ধরলো।
আব্রাহাম; আরে আস্তে আস্তে,, এভাবে ভুত দেখার মতো চিল্লাচ্ছো কেন!
আইরাত; উম উম্ম উম্মম উম…..
আব্রাহাম; ওহহ সরি সরি (তাড়াতাড়ি করে আইরাতের মুখ থেকে হাত সরিয়ে)।
আইরাত; আহহহ ( জোড়ে জোড়ে দম নিয়ে)। আপনি আসলেই একটা তার ছিড়া পাগল। এভাবে কেও কারো রুমে ঢুকে।
আব্রাহাম; যেখানে মানুষ টা সহ পুরো রুম টাই আমার সেখানে বলে কয়ে কেন আসবো।
আইরাত; ওহ হেলো মিস্টার, কার বউ। আমি বলেছিনা আমি মরে যাবো আপনাকে বিয়ে করবো না।
আব্রাহাম; Baby girl আমাকে বিয়ে না করলে তোমাকে এমনিতেই আমি মেরে ফেলবো। তারপর নিজে মরে যাবো। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে এমন দিন কখনো আসবেই না কেননা বিয়ে তো তুমি আমাকেই করবে তাও দুই দিনের মধ্যেই।
আইরাত; না,, আবব……
আব্রাহাম; আর যদি তুমি ভেবে থাকো যে তুমি আমার বাপি কে বলে দিবে তাহলে পুরোটাই ভুল ভাবছো।
আইরাত; প্লিজ আপনি কেন এভাবে আমার জীবন টাকে নস্ট করে দিচ্ছেন। আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি (কেদে কেদে)
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দিলো। আইরাত টাল সামলাতে না পেরে আব্রাহাম উপর পরে গেলো। আইরাত উঠে আসতে চাইলে আব্রাহাম আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম আইরাতের মাথা তার মাথার সাথে ঠেকিয়ে দিলো। আইরাত চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আব্রাহাম; আমি তোমার জীবন নষ্ট করতে না বরং তোমাকে আমার জীবনে এনে আমার সাদা কালো জীবন টাকে রঙিন করতে চাচ্ছি। তুমিই সেই রঙধনু যে তার রঙ দিয়ে আমার জীবন টাকে রাংিয়ে তুলবে। জানপাখি I need you.. U have to stay in my life…
আইরাত; (নিজেকে আব্রাহামের কাছ থেকে টেনে সরিয়ে) না, সবকিছুই আপনার মতো করে চলবে না। ভালোবাসি না বাসি না আর কতো আর কতো করে বলবো। আপনি আমাকে এক প্রকার আটকিয়ে রেখেছেন জোর করে। আমি চাইলেও যেতে পারছি না। আমি আর থাকতে পারছি না এখানে,, আমার দম বন্দ হয়ে আসছে। ছেড়ে দিন আমায় প্লিজ (কেদে)
আব্রাহাম এবার রেগে গেলো,
আব্রাহাম; অনেক, অনেক বুঝিয়েছি তোমায় কিন্তু তুমি তো ঘাড় তেড়া। বাকা পথেই চলবে। আইরাত নিজের পরিবারের ভালো চাও তো কোন রকম কোন তাল বাহানা না করে আমায় বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও নয়তো তোমার সাথে এবং তোমার পরিবারের সাথে কি হবে তা তোমার কল্পনার বাইরে
আইরাত; ককি বলছেন আপনি। আপনি এখন আমার পরিবারের পিছনে কেন পরলেন।
আব্রাহাম; ঘি যখন সোজা আঙুলে না উঠে তখন আঙুল বাকা করতেই হয় জান তো জানপাখি।
তোমার বাড়ির চারপাশে ২৪ ঘন্টা নজর রাখছে আমার লোকজন। কে কোথায় যাচ্ছে কি করছে। দেখো বেবি এখন যদি তুমি ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে যাও তাহলে তো ভালোই আর যদি রাজি না হও তাহলে তোমার এই ভুলের মাশুল তোমার পরিবার কে ভোগ করতে হবে।
আইরাত কিছু বলছে না। এক দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ গুলো তে অশ্রুবিন্দু টলমল করছে।
আইরাত; মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে তা হয়তো আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না। I hate you i just hate you
আব্রাহাম; তোমার জন্য যতো নিচে নামার আমি নামবো, যা করতে হয় আমি করবো কিন্তু তোমাকে যে কোন মূল্যেই হোক আমার হতে হবে। তোমার পরিবারের কোন ক্ষতি করতে আমি চাই নি সো প্লিজ তুমি আমাকে এমন কিছু একটা করতে বাধ্য করো না। আর রইলো আমার বাপি কে সত্য বলার তাহলে সে খেয়াল তুমি তোমার মাথা থেকে বের করে ফেলো।
আব্রাহাম আইরাত কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে নিচে চলে আসলো। আইরাত রাগে দুঃখে বিছানাতে বসে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না করতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর চোখ মুছে আইরাত নিচে আসলো।
আবির আহমেদ; আরে মা তাড়াতাড়ি আয়। বোস বোস
আইরাত দেখলো ডাইনিং টেবিলে হাজার টা পদের খাবার। আইরায় চোখ বড় বড় করে আবির আহমেদ এর দিকে তাকালো।
আবির আহমেদ; কিরে মা এভাবে কি দেখছিস। তুই আসবি বলেই আমি এতো কিছু রান্না করেছি।
হঠাৎ আব্রাহাম ধপ করে আইরাতের পাশে বসে পড়লো। আইরাত এক রাশ বিরক্তি নিয়ে মুখ ঘুড়িতে নিলো। সবাই খেতে বসলো কিন্তু আবির আহমেদ সেই সময় হঠাৎ বলে উঠলো
আবির আহমেদ; আইরাত মা যদি তুই মনে কিছু না করিস তাহলে একটা কথা বলি
আইরাত; জি আংকেল বলুন
আবির আহমেদ; যদি তুই মনে কিছু না করিস তাহলে আমি তোকে নিজের হাতে তুলে খাইয়ে দিই
সাথে সাথে আইরাতের চোখজোড়া ভিজে উঠলো। তার পাপার কথা মনে হতে লাগলো। আইরাত বাসায় থাকতে কখনোই তার নিজ হাতে খেতো না হয়তো তার আম্মু নইতো তার পাপা তাকে খাইয়ে দিতো। তবে পাপাই বেশি খাইয়ে দিতো। আজ পাপার কথা খুব করে মনে পড়ছে। পাপার সাথে দেখা হয় না কতো দিন তার। আইরাত আর কিছু না বলে মুখে হাসি ফুটিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
আবির আহমেদ পরম আদরে আইরাত কে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো। আইরাত চোখের পানি ফেলতে লাগলো। আবির আহমেদ তা খেয়াল করলেন
আবির আহমেদ; আরে একি মা তুই কান্না করছিস কেন। মা-বাবার কথা মনে পরছে বুঝি।
আইরাত অশ্রুসিক্ত চোখে আবির আহমেদ এর দিকে তাকালো
আবির আহমেদ; আরে পাগলি মা আমার কান্না করে না এভাবে। আজ থেকে আমি ই তোর মা আমি তোর বাবা ঠিক আছে। আর শুন আমাকে কিন্তু ওইসব আংকেল টাংকেল কোন কিছু বলতে পারবি না। আব্রাহাম-অয়নের মতো করে বাপি ডাকতে হবে
আইরাত; আচ্ছা বাপি
আবির আহমেদ; এইতো আমার লক্ষি মেয়ে। নে এবার হা কর দেখি
আব্রাহাম; আমাদের দিকেও তো কেও দেখো। বাপি তো আমাদের ভুলেই গেলো। সব আদর ওকে দিচ্ছে😒
অয়ন; আর বাপি যে আমাকে ঠিক কবে লাস্ট খাইয়ে দিয়েছিলো তাও আমার মনে নেই
আব্রাহাম-অয়নের কথা শুনে আবির আহমেদ এবং আইরাত ফিক করে হেসে উঠলো।
আবির আহমেদ; সর তোরা, আমার মেয়ে এসেছে আমি এখন থেকে আমার মেয়ে কেই আদর করবো। তোরা ভাগ
আব্রাহাম-অয়ন আহত দৃষ্টিতে আইরাত আর আবির আহমেদ এর দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলো।
আইরাতের খাওয়া শেষে আবির আহমেদ আইরাতকে তার রুমে যেতে বলল এবং রেস্ট নিতে বলল। আইরাত ভালো মেয়ে মতো তার রুমে চলে গেলো। এবার আবির আহমেদের উদ্দেশ্যে আব্রাহাম বলে উঠলো
আব্রাহাম; বাপি
আবির আহমেদ; হুমম বল
আব্রাহাম; বাপি আমি চাচ্ছি আইরাত আর আমার বিয়ে আগামি দুইদিনের মধ্যেই সেরে যাক
আবির আহমেদ; আরে তুই তো আমার মনের কথা বলে দিলি। যতো জলদি সম্ভব আইরাত মামনি কে বিয়ে করে ফেল। আমরাও তাই চাই। তাহলে আগামীকাল থেকেই আমি তোদের বিয়ের আয়োজন শুরু করি কি বলিস?!
অয়ন; আরে বাপি বলা বলির কি আছে বিয়ের কাজ শুরু করো। বিয়ে এমন হওয়া উচিত যেন সবাই তাক লেগে যায়।
আব্রাহাম; 😅।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। আব্রাহাম রুমে গিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো
রাশেদ; স্যার, সকল information পেয়ে গেছি
আব্রাহাম; হুমম
রাশেদ; স্যার, কালো টাকার কালো বাজারে সবার আগে নাম উঠে এসেছে আশরাফুল আহমেদ এর। তিনি ই সব কিছুর মূল।
আব্রাহাম; আমি জানতাম এমন কিছু একটাই হবে। রাশেদ Call the media, নিউজ টা যেন পাবলিক হয়ে যায়। প্রতিটি চ্যানেলে যেন হেডলাইন এইটাই হয়। শুশুড়মশাই এর সবকিছু তিলে তিলে শেষ করে দিবো আমি।
রাশেদ; জি স্যার
রাত ঘনিয়ে এলো। সবাই যে যার রুমে। কিন্তু আইরাতের চোখে ঘুম নেই। সারা ঘর পায়চারি করছে সে। চিন্তায় মগ্ন সে।
আইরাত; পালানোর তো কোন পথ এখন আর খোলা নেই। তাহলে কি নিজের সাথে যা হতে যাচ্ছে তা চুপচাপ মেনে নিবো। নিজের জীবন টাকে এভাবে শেষ করে দিবো। আর যদি এখান থেকে পালিয়েও যাই তাহলে নিজের পরিবারের ক্ষতি হবে। নিজের চোখের সামনে তো আর নিজের পরিবারের ক্ষতি দেখতে পারবো না। না না আর কিছুই ভাবেতে পারছি না। মাথা ফেটে যাচ্ছে।।
আইরাত এই সব কিছু ভাবছে। অবশেষে আইরাত কেদে উঠলো। বালিশে মুখ গুজে কাদতে লাগলো।
অন্য দিকে আব্রাহামের ও একই দশা সে আইরাতের কথা ভেবে ঘুমাতে পারছে না। একসময় আব্রাহাম উঠে আইরাতের রুমে যেতে লাগলো। আব্রাহাম নক না করেজ আইরাতের রুমে ঢুকে পোড়ল। আইরাত তো পুরা বাচ্চার মতো করে কানছিলো কিন্তু আব্রাহামের এভাবে রুমে এসে পড়াতে আইরাত মুখ তুলে তাকালো।
আইরাতের চোখমুখ সব ফুলে গেছে কান্না করতে করতে,, আইরাতের কান্নারত মুখ দেখে আব্রাহামের বুকের বা পাশে মোচড় দিতে উঠলো।
আব্রাহাম; আমি তো এমন করতে চাই নি জানপাখি। এভাবে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু কি করবো বলো তোমাকে না পেলে আমি মরেই যাবো। আর আমার চাচাজান কেও তো তার কর্মের ফল ভোগ করতে করতে হবে বল (মনে মনে)
আইরাত; কেন এসেছেন আপনি (চোখ মুছতে মুছতে)
আবার আমাকে কষ্ট দিতে এসেছেন। প্লিজ চলে যান
আব্রাহাম; জানপাখি, আমি তোমাকে কষ্ট দিতে না ভালোবাসতে এসেছি। && Baby girl এভাবে কেন কান্না করছ বলত। আরে এখন ই এভাবে কান্না করলে বিয়ে তে কি করবে। বিয়ের জন্য কিছু তো বাচিয়ে রাখো।
আইরাতের রাগ হতে লাগলো প্রচুর। কিন্তু আব্রাহাম তাকে অবাক করে দিয়ে আইরাতের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
আইরাত সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে গেলো।
আইরাত; আরে আরে একি আপনি এখানে কেন শুয়েছেন?
আব্রাহাম; তো কি করবো। তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসছে না তাই এসে পরলাম। যানো তো তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না
আইরাত; এতো রাতে এটা কি ধরনের পাগলামি। প্লিজ উঠুন আপনি এবং আপনার রুমে যান।
আব্রাহাম; দেখ আমি অনেক জেদি টাইপের মানুষ। আর এতো টাও ভালো না যে তুমি বলবে আর আমি সাথে সাথে চলে যাবো কখনই না। এবার তুমি ভালো মেয়ের মত এদিকে আসো দেখি
আইরাত; না ( এই বলে আইরাত আর কিছুটা দূরে সরে দাড়ালো)
আব্রাহাম এবার আর কিছু না বলে হালকা উঠে আইরাতের কোমড় ধরে দিলো এক টান। আইরাত হুমড়ি খেয়ে আব্রাহামের উপরে পরে গেলো।
আইরাত; আহহহহ, কি করছেন কি আপনি
আব্রাহাম; জানপাখি এখনো কিছুই করিনি। আর আমি এতোটাও খারাপ না যে এখনই সব করে ফেলবো। যা করার বিয়ের পর তখন চাইলেও তুমি আমার থেকে দূরে পালাতে পারবে না।
আইরাত; এবার কিন্তু বেশি বারাবারি হচ্ছে
আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে খপ করে আইরাতের ঠোঁটে কিস করে বসলো। আইরাত অনেক ধাক্কাচ্ছে কিন্তু কিছু লাভ নেই। ৫-১০ মিন পর আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দিলো।
আব্রাহাম; একে বলে বারাবারি। আর তেমন কিছুই করিনি আমি। তুমিই বাড়িয়ে বলছিলে এর জন্য বারাবারি টা দেখিয়ে দিলাম।
আইরাত; কুত্তা,হারামি,গরু,ছাগল,ভেড়ার বাচ্চা, কুমির, হাতি, ধলা বিলাই, পাগলের বাচ্চা সাইকো (মনে মনে)
আব্রাহাম; এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে আমাকে না বকে ঘুমিয়ে পড়ো।
আইরাত;😒😒
আব্রাহাম; ঘুমাও এখানেই
আইরাত আর কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো আব্রাহামের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো।
……….পরেরদিন সকালে🌞🦋““““““““`
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
In নীড় মহল………
ডাইনিং টেবিলে আশরাফুল আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
আতিয়া আহমেদ; কি হলো বসে রয়েছ কেন, কিছু তো খাও
আশরাফুল আহমেদ; কি আর খাই মেয়ে বাসা থেকে নিখোঁজ আজ ৫ দিন কেউ কোন খবর পাচ্ছে না। সকল অফিসার রা হন্ন হয়ে খুজেও পেল না আমার মামনি কে। না জানি কোথায় আছে কেমন আছে কি করছে
আতিয়া আহমেদ; দেখ তুমি দেখ আমাদের আইরু একদিন ফিরে আসবেই শুধু সময়ের অপেক্ষা (কেদে কেদে)
আয়ুশ; আম্মু আম্মু,, আপি কি আবার আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। দূরে চলে গেলো
আতিয়া আহমেদ; না বাবা, তোমার আপি কোথাও যাই নি এখানেই আছে। এবার তুমি খেয়ে নাও
ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে ছিল ঠিক সেই সময় দুলাল(আশরাফুল আহমেদ এর সাথে কাজ করে) দৌড়ে আসলেন এবং অস্থির হয়ে বলতে লাগলেন
দুলাল; স্যার স্যার স্যার
আশরাফুল আহমেদ; আরে দুলাল যে কি হয়েছে এভাবে দৌড়ে আসছ কেন। সব ঠিক আছে তো
দুলাল; না স্যার না কিছুই ঠিক নেই। স্যার রহিম মোহাম্মদ যিনি এতো দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন উনার লাশ পাওয়া গেছে ব্রীজের নিচে। লাশ পচে গেছে চিনার উপায় নেই তার আইডি কার্ড থেকে তার পরিচয় পাওয়া গেছে
আশরাফুল আহমেদ; কিহ, কি যা তা বলছ এইসব
দুলাল; জি স্যার আমি ঠিক ই বলছি। স্যার আপনি টিভি অন করুন সব চ্যানেল দেখুন। আপনার কালো টাকার ব্যবসার খবর সব জায়গা তে লিগ হয়ে গেছে। প্রতিটি টিভি চ্যানেলে তা ব্রেকিং নিউজে দেখানো হচ্ছে। স্যার সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেল প্লিজ আপনি দেখুন।
.
.
.
.
.
.
.
.
আশরাফুল আহমেদ হন্তদন্ত হয়ে টিভি অন করলো এবং দেখলো যে দুলাল যা বলছে তার সবটাই ঠিক।আশরাফুল আহমেদ এর কালো বাজারি সবার সামনে এসে পড়েছে এবং সবার আগে নাম উঠে এসেছে আশরাফুল আহমেদ এরই। এই সব দেখে আশরাফুল আহমেদের মাথা ৪৪০° ঘুরে গেলো। সোফার ওপর ধোপ করে বসে পড়লেন তিনি।
.
.
.
.
.
.
.
🤎চলবে~~~~
#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#writer; Tamanna Islam
#part__15
❣️❣️
..
..
..
..
..
আশরাফুল আহমেদ ধপ করে সোফার ওপর বসে পরলেন। তিনি কিছু ভেবে পাচ্ছেন না। কে তার পিছু লাগলো। তার সবকিছু বরবাদ করে দিতে উঠে পরে লাগলো। টিভি তে বারবার বলছে “আজকের ব্রেকিং নিউজ, কালো টাকার পর্দা ফাস এবং সবার আগে নাম খোলাসা হলো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর” বার বার এই একই খবর বলছে প্রত্যেক চ্যানেলে। আশরাফুল আহমেদ আর সহ্য করতে না পেরে উঠে দাঁড়িয়ে হুক্কার ছেড়ে রিমোট টিভির গ্লাসে জোড়ে এক ঢিল মারলেন। এক বিকট শব্দ হয়ে টিভি অফ হয়ে গেলো। রাগে সাপের মতো ফুসছেন তিনি।
আশরাফুল আহমেদ;; কে কে করছে এসব। আমি গত ২৫ বছর যাবৎ এই রাজনীতি তে রয়েছি কেউ আজ পর্যন্ত চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় নি কিন্তু আজ, আজ আমার সব কালো বাজারি জনগনের সামনে এসে পড়েছে। কোন হারামির বাচ্চা এমন করছে আমি ছাড়বো না ছাড়বো না আমি ওকে। (জোড়ে চিল্লিয়ে)
আশরাফুল আহমেদ রেগে চিল্লিয়ে কথা গুলো বলছিলেন ঠিক সেই সময় তার ফোনে আবার ও আননোন নাম্বার থেকে Call আসে।
আশরাফুল আহমেদ;; হ্যালো
……………. ;; আরে এতো চিল্লাচ্ছো কেন শশুড়মশাই। এই জোড়ে কথা বলার অভ্যাস এখনো গেলো না তোমার তাই না। আস্তে কথা বলতে শিখো কেননা এইটা তো শুধু ট্রেইলার ছিলো এর পরের কাহিনি দেখলে না ই তুমি বড়ো গলা করে কথা বলতে পারবে আর না ই তুমি সেই অবস্থায় থাকবে।
আশরাফুল আহমেদ;; হারামজাদা, কেন আমাদের পিছনে পরেছিস তুই। কি চাস কি তুই? দেখ এর পরিনাম কিন্তু ভালো হবে না। আমার সাথে টক্কর দিতে আসিস না বললাম
……………. ;; দেখো আমি যা চাই তা তো আমি বলে কয়ে নিই না, সোজা কেড়ে নিই। আর আমার যা চাই তা আমি নিয়েই নিয়েছি। আর কথা হলো তোমাকে টক্কর দেয়ার তাহলে না আমি তোমাকে টক্কর দিতে না শুধু তোমার সাথে কিছু পুরনো হিসেব বরাবর করতে এসেছি।
আশরাফুল আহমেদ;; কিসের পুরনো হিসেব কি বলতে চাচ্ছিস?
…………… ;; তোমার কিছু পুরনো অতীত। ইতিহাসের পাতা ঘেটে দেখতে পারো।
আশরাফুল আহমেদ;; দেখ তুই আমার যা করার কর কিন্তু আমার মেয়ে তো তোর কাছে। আমার মেয়ের যেন কিছু না হয়। আমার মেয়ের একটা টোকা লাগলে তোকে জানে খতম করে দিবো।
…………… ;; হাহাহা, পারবি না কখনোই তা তুই পারবি না। আর এইটাও মাথায় রাখ তুই যে তোর মেয়ে এখন আমার কাছে। আমার যখন ইচ্ছা আমি তোর মেয়ের সাথে তাই করতে পারি। আর তোর মেয়ের চিন্তা বাদ দে। আমার জানপাখি আমার কাছে চিন্তা কিসের। তুই এখন শুধু তোর নিজের চিন্তা কর আর ঘড়ির কাটা গুনা শুরু করে দে। কেননা খুব দ্রুতই তুই আরো একটা ধামাকার খবর শুনবি।………………… (রেগে ফোন কেটে দিলো)
আশরাফুল আহমেদ;; আমি তাকে মেরেই ফেলবো। আম……. হ্যালো হ্যালো হ্যা….
আব্রাহাম এতোক্ষন আশরাফুল আহমেদের সাথে কথা বলছিলো। কথা বলছিলো বললে ভুল হবে আব্রাহাম তাকে ধমকি দিচ্ছিলো। হঠাৎ ফোন কেটে দেওয়ায় আশরাফুল আহমেদ চিল্লিয়ে ফোন নিচে আছাড় দিলো। এবং দুলাল কে বলতে লাগলো
আশরাফুল আহমেদ;; দুলাল, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করো। খবর যেন আর বেশি না ছড়াতে পারে এবং সবাই যেন এটা জানতে পারে যে এটা একটা ভুয়া খবর ছিলো। যতো টাকা লাগে নাও। যতো লাগে আমি দিবো কিন্তু তবুও সবার মুখে তালা লাগাও।
দুলাল;; জি জি স্যার।
এই বলে দুলাল তাদের বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আশরাফুল আহমেদ মাথা ধরে বসে পরলেন। তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। এতো বছর পর আবার কে এলো যে তার পরিবারের সুখ শান্তি কেড়ে নেয়ার পিছনে পড়লো। এরই মধ্যে আতিয়া আহমেদ এলো। একটু আগে যা কিছু হয়েছে তিনি সব কিছুই দেখেছেন।
আতিয়া আহমেদ;; একটা কথা জানো তো যে মানুষ যা করে ফল সরুপ তাই পায়। তুমিও তাই পাবে যা তুমি অতীতে করে এসেছো। অতীত মানুষের পিছু ছাড়ে না কখনো কোন না কোন ভাবে তা সামনে আসেই। আমি যদি সেদিন জানতাম যে তুমি তোমার বড় ভাই-ভাবির সাথে এমন কিছু করতে যাচ্ছো তাহলে আমি কোনদিন ও ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতাম না। আমি বুঝি নি যে আমি এক অমানুষের সাথে ঘর করছি, এক অমানুষ কে ভালোবেসেছি। যা করে এসেছো তুমি তার জন্য না ই তোমাকে আল্লাহ ক্ষমা করবে আর না ই কোনদিন তোমার অতীত তোমার পিছু ছাড়বে। কখনো কখনো বাবা-মার কর্মের জন্য তাদের সন্তানদের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। আজ আমার আইরাত আমার কাছ থেকে দূরে আর তা শুধুই তোমার জন্য। মনে রেখো এটা তোমার কর্মের ফল।
এই বলে আতিয়া আহমেদ রেগে চলে গেলেন। আশরাফুল আহমেদ আগের মতোই মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন।
তিনি পুলিশ অফিসারদের এবং এসইপি কে খবর দিলেন। কিছুক্ষন পর তারা নীড় মহলের এসে হাজির হলেন।
অফিসার;; স্যার, ওই লোকটি আপনাকে যে নাম্বার থেকে call করেছিলো আমরা তা ট্রেক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
আশরাফুল আহমেদ; অফিসার আপনি যে করেই হোক ওই কামিনা কে খুজে বের করুন।
অফিসার;; জি স্যার আমরা তাকে যে কোন মূল্যে বের করে আনবো। কিন্তু স্যার পুরো শহর তো আপনার সেই কালো টাকার বাজারের খবর নিয়ে থই থই।
আশরাফুল আহমেদ;; অফিসার আপনার যতো টাকা লাগে আপনি নিন। বেপার টাকে ধামাচাপা দিন as soon as possible…
অফিসার;; জি স্যার,
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চৌধুরী ভবন………….।।।।।।।।।
সূর্যের আলো আইরাতের চোখে পড়লো। এতে আইরাত কিছুটা বিরক্ত হলো। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো, দেখলো যে সকাল হয়ে গেছে। পাশে তাকিয়ে দেখলো আব্রাহাম নেই। আইরাত বিছানাতে উঠে বসলো। আইরাতের তার আম্মুর কথা মনে পড়ে গেলো। বাসায় থাকতে আইরাত কখনোই নিজে একা উঠতে পারতো না। তার মাকে রোজ রোজ একতরফা যুদ্ধ করতে হতো তাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য। আইরাত আনমনেই এইসব ভেবে হেসে উঠলো। কিন্তু আম্মু তো আর ডাকে না এখন একা একাই ঘুম ভেংে যায় আইরাতের। আবার আইরাতের মুখের হাসি খানা উড়ে গেলো। বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নেমে পড়লো আইরাত। সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় আবির আহমেদ আইরাতকে দেখতে পেলেন।
আবির আহমেদ;; কিরে মা উঠে পড়েছিস। ঘুম কেমন হলো তোর?
আইরাত;; হ্যাঁ বাপি ভালো (মুচকি হেসে)
আবির আহমেদ;; নে আয় খেয়ে নে।
আইরাত খাবার টেবিলে বসে পড়লো। অয়ন রুম থেকে বেরিয়ে এলো সেও টেবিলে বসে পড়লো।
অয়ন;; Good morning Cute ভাবি
আইরাত;; হুম morning
আইরাত আশে পাশে তাকাতাকি করতে লাগলো। অয়ন তা খেয়াল করে আইরাত কে বলে উঠলো
অয়ন;; ভাবি কাওকে খুজছো?
আইরাত;; ককই না না তো
অয়ন;; হুমম বুঝেছি বুঝেছি। চিন্তা করো না ভাইয়া একটু বাইরে গেছে রাস্তায় আছে আসছে।
অয়নের কথায় আইরাত একটু লজ্জাই পেলো। আবির আহমেদ অয়নকে ধমক দিয়ে বললেন।
আবির আহমেদ; আহা অয়ন, কেন মেয়েটা কে জালাচ্ছিস। খেতে দে আর তুই ও খা। আইরাত মামনি তুই খাওয়া শুরু কর তো ওর কথায় কান দিস না
আইরাত মলিন হেসে খাওয়া শুরু করলো। কিছুক্ষন পরেই আব্রাহাম বাসায় আসলো।
আব্রাহাম;; Hlw everyone
অয়ন;; ভাই এসে পড়েছিস। বোস বোস
আবির আহমেদ;; তোর জন্য মেয়েটা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে এই তোর আসার সময়। তাড়াতাড়ি খেতে বোস।
আবির আহমেদ এর কথায় আইরাত কিছু টা বোকা বলে গেলো। কেননা আইরাত যাকে দুচোখেও দেখতে পারে না আর সে কিনা অপেক্ষা করছিলো তাও আবার এই খাটাস টার জন্য। আবির আহমেদ এর কথা শুনে আব্রাহাম এক ভ্রু উচিয়ে কিছুটা বাকা হাসলো। আইরাতের পাশে বসে পড়লো।
আব্রাহাম;; Ohh really?! (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)
আইরাত মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। খাওয়ার মাঝ খানে আব্রাহাম বলে উঠলো।
আব্রাহাম;; বাপি, বলছি কি খাওয়া দাওয়া শেষে রেডি হয়ে নাও। আমরা সবাই মিলে শপিং এ যাবো, বিয়ের শপিং।
আব্রাহামের কথা শুনে আইরাতের খাবার গলায় আটকে পড়লো। কাশতে কাশতে শেষ হচ্ছে। সবাই পানি দেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আব্রাহাম আইরাতের মাথায় আস্তে করে বারি দিতে লাগলো।
আবির আহমেদ;; আস্তে মা আস্তে। দেখে শুনে খাবি তো।
অয়ন;; ভাবি ধীরে ধীরে পানি খাও।
আব্রাহাম;; হঠাৎ বিয়ের শপিং এর কথা শুনে কাশি উঠে গেলো কেন তোমার?
আইরাত অসহায় দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে রইলো। আইরাতের কাশি কমে এলো। সবাই আবার বসে খেতে শুরু করলো। আব্রাহাম নিচে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগলো
আব্রাহাম;; শুনো যতো বাহানাই করো না কেন তোমার আর আমার বিয়ে হচ্ছেই আর তোমাকে আমাদের সাথে যেতেও হবে
আইরাত;; যাবো না আমি, আমার শরীর ভালো ঠেকছে না।
আব্রাহাম;; হুমম বুঝেছি একটু আদর লাগবে তোমার খাওয়া শেষ করো তারপরে বুঝাচ্ছি।
আইরাত ফাটা দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকলো
আব্রাহাম;; বেবি প্লিজ এভাবে তাকিয় না নিজেকে কোন্ট্রোল করতে পারি না।
আইরাত সাথে সাথে চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো।
সবাই যার যার খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো। আইরাত রুমে এসে ভাবতে লাগলো যে কি করে আব্রাহাম কে শপিং এ যাওয়া থেকে আটকাতে পারে। ভাবতে ভাবতে রুমে কেউ প্রবেশ করলো। আইরাত পিছনে ঘুরে দেখলো যে আব্রাহাম।
আইরাত;; এই রে মরেছে এই পাগলের বাচ্চা তো এসে পড়লো এখন বলবে শপিং এ যেতে। কিন্তু আমি তো যাবো না এখন একে আটকাই কি করে(মনে মনে)
আব্রাহাম;; এতো ভেবে লাভ নেই আমরা যাচ্ছি,, চলো
আইরাত;; না মানে আমার শরীর টা ভালো না যেতে পারবো না
আব্রাহাম;; তাই না
এই বলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগোতে লাগলো এবং আইরাত পিছাতে লাগলো
আইরাত; কি কি হলো আপনি এভাবে এগোচ্ছেন কেন। প্লিজ থামুন সামনে বাড়বেন না।
কিন্তু আইরাতের কথার পুরো উলটা করে আব্রাহাম একদম আইরাতের সামনে এসে পড়লো এবং আইরাত কে এক হাত দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরলো। আইরাত অন্য দিক দিয়ে যেতে ধরলে আব্রাহাম আবার তার হাত দিয়ে আটকে দিলো। আব্রাহাম ফু দিয়ে আইরাতের চুল গুলো উড়িয়ে দিলো। আইরাত তার চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলল। আইরাতের ঠোঁট জোড়া কাপছে যা আব্রাহামকে চুম্বকের মতো কাছে টানছে। আব্রাহাম ক্রমশ আইরাতের ঠোঁটের দিকে এগুতে লাগলো। আইরাত আব্রাহামের নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে। যার ফলে সে আরো খিচে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আব্রাহাম আইরাতের ভীত চেহারা টা দেখে মুচকি হাসি দিলো। আইরাতের এই মায়াভরা চেহারা টাই আব্রাহাম কে পাগল করে ছেড়েছে। আব্রাহাম আইরাতের কপালে এক দীর্ঘ চুমু দিয়ে দূরে সরে এলো। কিছু করছে না টের পেয়ে আইরাত চোখ মেলে তাকালো। এবং দেখলো আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম;; জানপাখি বাহানা না করে get ready..
আইরাত ভীত চোখে ছোট ছোট করে আব্রাহামের দিকের তাকালো তার এবং মাথা আস্তে করে এপাশ ওপাশ করলো অথ্যাৎ না সূচক। আব্রাহাম আর কিছু না বলে আইরাত থেকে একটু দূরে গিয়ে দুহাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে আইরাত কে উপর থেকে নিচে এক নজর দেখে নিলো।।
আব্রাহাম; যেমন আছো চলবে,, চলো।
এই বলে পরক্ষনেই আব্রাহাম আইরাত কে কোলে তুলে নিলো। আইরাত তো পুরাই অবাক।
আইরাত;; আরে আরেএ কি করছেন টা কি নিচে নামান নিচে নামান বলছি।
আব্রাহাম;;………………….
আইরাত;; নামাতে বলছি না আপনাকে। কি করছেন আপনি আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
আব্রাহাম;; এটা কথা না শুনার ফল এবার ভোগ করো।
আব্রাহাম আইরাত কে কোলে করে নিচে নিয়ে এসে পড়লো।
আব্রাহাম;; করিম চাচা(ড্রাইভার) গাড়ি বের করো Fast
করিম চাচা আর কিছু না বলে দ্রুত গাড়ি বের করে বাড়ির বাগানে নিলো। আব্রাহাম আইরাতকে কোলে করে নিয়েই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো। বের হয়ে দেখলো আবির আহমেদ এবং অয়ন বাইরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। অয়ন আব্রাহাম আর আইরাতকে এভাবে দেখে হেসে দিলো।
আব্রাহাম;; আব্বে ওই আমার বউ আমি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নিবো,, এতে লোকে যা ইচ্ছা বলুক I really Don’t care… জাহান্নামে যাক আর তুই দাত কেলানো বন্ধ কর নইতো তোর দাত আর দাতের জায়গায় থাকবে না বুঝলি।
অয়ন সাথে সাথে মুখ অফ করে ফেললো। আইরাত ইচ্ছে মতো আব্রাহাম কে গালি দিতে লাগলো।
আইরাত;; হনুমান একটা লাজ লজ্জার মাথা খেয়েছে, নিজের বাপি ভাইয়ের সামনে কেউ এভাবে আসে। আমাকে চেঞ্জ পর্যন্ত করতে দেই নি হারামি, কুত্তা।
আইরাত কে লজ্জায় পরতে দেখে আবির আহমেদ বলে উঠলো….
আবির আহমেদ;; আইরাত মা, কি করবি বল আমার ছেলেটা এমন ই। কারো পরয়া করে না। নে নে এবার সবাই উঠে বস।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকালো। আব্রাহাম সাথে সাথে আইরাত কে একটা চোখ মারলো
আইরাত;; অসভ্য কোথাকার (মনে মনে)
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে সামনে বসে পড়লো। আবির আহমেদ এবং অয়ন পিছনের সিটে। আব্রাহাম ড্রাইভ করতে শুরু করলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাত মুখ দুগাল ফুলিয়ে বসে আছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
একসময় তারা শপিংমলে চলে এলো। প্রথমেই তারা চলে গেলো লেহেংার দোকানে। মলের মেনেজার আব্রাহাম এবং তার বাপিকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। এবং দ্রুত তাদের কাছে গেলো
মেনেজার;; আরে এ আমি কাকে দেখছি,, মি. আবির আহমেদ চৌধুরী এবং মি. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। আপনারা আমার মলে এসেছেন। আমি যাস্ট বিলিভ করতে পারছি না। আপনারা কেন কষ্ট করে আসতে গেলেন আপনারা শুধু একটাবার ফোন করতেন। আমরা আমাদের বেস্ট ডিজাইনার দের আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দিতাম।
আব্রাহাম;; আরে না না ঠিক আছে।
মেনেজার;; স্যার প্লিজ আপনারা ভিতরে আসুন।
আব্রাহাম-আইরাত-আবির আহমেদ-অয়ন সবাই ভিতরে গেলো। আবির আহমেদ মেনেজারের উদ্দেশ্যে বললেন
আবির আহমেদ;; মি. রনি(মেনেজার)
মেনেজার;; জি স্যার বলুন
আবির আহমেদ;; আমার ছেলের বিয়ে, বেস্ট কাপড় গুলো দেখান
মেনেজার;; জি স্যার অবশ্যই,, তা আর বলতে
আবির আহমেদ;; হুমমম
মেনেজার;; লিয়া, পুরো মলের বেস্ট এবং ডিজাইং কাপড় গুলো নিয়ে এসো জলদি
দোকানের সবাই লেগে পরলো আব্রাহাম এবং আইরাতের কাপড় সিলেক্ট এর জন্য। মেনেজার বেস্ট থেকে বেস্ট জিনিসগুলো দেখাতে লাগলো কিন্তু আইরাতের ওদিকে কোন খেয়াল ই নেই। সে মন মরা হয়ে বসে রয়েছে। আব্রাহাম নিজের পছন্দেই আইরাতের জন্য বেশ অনেকগুলো কাপড় নিয়ে নিলো। মোট তিনটে লেহেংগা নিলো আব্রাহাম। সবই তার পছন্দের। একটা মেরুন কালার, একটা এস কালার আর সাদা কালারের মিক্স, আর একটা মিস্টি কালারের। আব্রাহাম অয়ন জমিয়ে বিয়ের শপিং করতে লাগলো। কিন্তু আইরাতের এই সবের কিছুই যেন ভালো লাগছে না। আইরাতের বিয়ে নিয়ে কতো কল্পনা-জল্পনা ছিলো যে বাবা-মা-আয়ুশ সবাই থাকবে খুব ধুম ধাম করে বিয়ে করবে। অনেক মজা করবে বান্ধবী দের সাথে। এখনো বিয়ে তো হচ্ছে কিন্তু নিজের ইচ্ছে তে না, নিজের মতে না। বরং এক প্রকার জোর করেই বিয়ে হচ্ছে আইরাতের। যেখানে কেউ নেই না ই বাবা মা আয়ুশ আর না ই কোন বন্ধবী। আর নিজের Life partner এর কথা না হয় না বলাই থাক। আইরাত এই সবকিছুই এখন ভাবছে……..
🥀🥀চলবে~~~~