#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
{বোনাস পার্ট ❤️}
..
..
..
..
..
দিন যেতে থাকে, সময় পার হতে থাকে৷ বিয়ের দিনও এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। সবাই মিলে জমিয়ে বিয়ের আয়জোন করছে। আইরাত,নিপা,রাত্রি তো পারছে না পুরো শপিংমল বাসায় তুলে নিয়ে আসতে। আর তাদের পিছনে নিরব,অয়ন লাগাতার খেটেই যাচ্ছে। ইভেন রাশেদও। ছেলেদের দশা এক প্রকার নাজেহাল। আব্রাহাম প্রথমে তাদের সাথে যেতে না চাইলেও আইরাতের তার উল্টো পাল্টা কাজে এক সময় বাধ্য করে তাদের সাথে যেতে। আব্রাহাম বলেছিলো যে অযথা এই গরমে বাইরে শপিং এ যাওয়ার চেয়ে বরং সব ডিজাইনার কে বাসাতেই ডাকুক কিন্তু না তা হবে না। আইরাত ভেংচি কেটে বলে যে বিয়ের শপিং বাইরে গিয়ে করাতে যতটা মজা তা বাসায় বসে থেকে নেই। এখন কি আর করার আইরাতের জেদের কাছে তাকে হার মানতেই হলো। এখন তারা সবাই আছে এক বড়সড় শপিংমলে। পিছনে অয়নের কাছে এবং রাশেদের কাছে সবগুলো শপিং ব্যাগ। এতোই ব্যাগ যে তাদের মুখ অব্দি দেখা যাচ্ছে না।তবুও নাকি তাদের কেনাকাটাই এখনো শেষ হয়না।
আইরাত;; তো রাত্রি আর কি কি কেনা বাকি রইলো?
রাত্রি;; আরে মেইন জিনিসই তো কেনা হয়নি।
আইরাত;; লেহেঙ্গা!
নিপা;; অয়ন ভাইয়া গাড়ি বের করো।
অয়ন;; কিহহ আরো।
রাত্রি;; এই কিসের আরো এইটুকুতেই হাপিয়ে গেলে হবে! চলো
নিপা;; নিরব কোথায় ওকে যে দেখছি না।
রাশেদ;; মেডাম নিরব ভাই তো ব্যাগ গুলো রাখতে গিয়ে আর ফিরেই আসেনি।
নিপা;; ও সিওর পালিয়েছে। দেখেছো কান্ড নিজের বিয়ে আর নিজেই এভাবে কাজে ফাকি দিচ্ছি ওকে তো আমি।
আইরাত;; আমার চৌধুরী কোথায় ওকেও তো দেখছি না।
রাত্রি;; আরে না না আব্রাহাম ভাই তোকে ছেড়ে কোথাও যাবে না সামনে তাকিয়ে দেখ ফোনে কথা বলছে।
আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম আসলেই ফোনে কথা বলছে। ফোন কেটে দিয়ে তাদের কাছে আসতে থাকে। কিন্তু আসার সময়ই একটা মেয়ের সাথে আব্রাহামের ধাক্কা লাগে। মেয়েটি যে আব্রাহাম কে ইচ্ছে করেই ধাক্কা দিয়েছে তা যে কেউ বুঝবে। আর এগুলো আইরাতের চোখ এড়লো না। মেয়েটি এখন ঢং করে আব্রাহামকে সরি বলছে। আব্রাহামও তার চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মলিন হেসে It’s ok বলছে। মেয়েটি যে চিপকু আর বেহায়া তা মেয়েকে দেখলেই বুঝা যায়। আইরাত তো রাগে জ্বলে পুড়ে বোম হয়ে যাচ্ছে। নিপা আর রাত্রি শুধু ভয়ে তাকিয়ে আছে। একবার আব্রাহামের দিকে তো আর একবার আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। বিকজ আইরাত সহজে রাগে না আর একবার যদি রেগে যায় তাহলে দুনিয়া উলটে ফেলে। রাশেদ আর অয়নও এতো গুলো ব্যাগ নিয়ে বোকার মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই মেয়েটি এবার অতিরিক্ত করে ফেলেছে। তার পার্স থেকে টিসু বের করে আব্রাহামের কোর্টে পরে থাকা জুস মুছে দিচ্ছে। আব্রাহাম লাগবে না বললেও সেই মেয়ে গায়ে পরে পরে আব্রাহামের কাছে যাচ্ছে। এতে তো আইরাতের মাথা ফেটে গেলো রাগে। আইরাত আর দাঁড়িয়ে না থেকে জোড়ে জোড়ে কদম ফেলে সেদিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে সেই মেয়েটির পিছনে দাঁড়িয়ে গেলো। ওই মেয়েটি আব্রাহামের ওপর এতোই লাট্টু ছিলো যে তার পিছনে যে কেউ আছে তা সে খেয়ালই করেনি।
মেয়েটি;; সরি সরি সত্যি অনেক সরি, আমি বুঝতে পারনি যে এমন কিছু একটা হবে। আপনার কোথাও লাগে নি তো। আপনার কোথাও লাগলে আমি খুব কষ্ট পাবো।
আব্রাহাম;; না ঠিক আছে প্রব্লেম নেই।
মেয়েটি;; না না দাড়ান আমি আর একটু পরিষ্কার করে দিই।
আইরাত;; নাহ থাক, আপনার আর মেহনত করতে হবে না,, উনার কোর্ট পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য উনার বউ আছে।
আইরাতের এমন কথায় মেয়েটি চমকে পিছনের দিকে তাকায়। মেয়েটি একবার আইরাতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নেই।
মেয়েটি;; কে আপনি?
আব্রাহাম;; ও আ…
আইরাত;; আপনি এতোক্ষন যার গায়ে পরে কথা গুলো বলছিলেন, চিপকাচ্ছিলেন আমি তারই একমাত্র বউ হই। আর বউ যেহেতু এসে গেছে তাহলে আর কোন বাইরের মেয়ের দরকার নেই আমি মনে করি,, আপনি আসতে পারেন।
আইরাতের এমন কথায় নিপা রাত্রি অয়ন রাশের সবাই হেসে দেয়। আর আব্রাহাম অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কারণ আইরাত কে সে এভাবে কারো সাথে কথা বলতে এর আগে কখনোই দেখে নি। মেয়েটি এতে বেশ অপমানিত বোধ করলো তারপর পরিবেশ রক্ষার্থে মলিন হেসে যেতে ধরলে আইরাত আবার বলে ওঠে…
আইরাত;; এই যে মিস চিপকু শুনুন
মেয়েটি সাথে সাথে পিছনে ঘুড়ে।
আইরাত;; আল্লাহ দু-দুটো চোখ দিয়েছে। দয়া করে প্লিজ তাদের ব্যবহার করতে শিখুন। আগে থেকে সামনে কে কোথায় আছে কি করছে তা প্লিজ দেখে চলবেন। এবার আপনি যান।
মেয়েটি এতে তেলে বেগুনে জ্বলে গেলো। এক ঝটকানা মেরে চলে গেলো। আবার আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকালো। আইরাত যে রেগে আগ বাবুলা হয়ে আছে তা তার চাহনি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আব্রাহাম আবার চোখে সানগ্লাস পরে চলে আসতে নিলে আইরাত তাকে আটকে দেয়।
আইরাত;; এই দাঁড়ান,,
আব্রাহাম;; ____________
আইরাত;; মেয়েটি কে?
আব্রাহাম;; আমি কি করে জানবো মেয়েটি কে। ওকে আমি চিনি নাকি!
আইরাত;; তাহলে এতো গায়ে পরছিলো কেন?
আব্রাহাম;; আজব, দেখেছে যে একজন সুন্দর ছেলে আসছে তাই গায়ে পরেছে এতে ক্ষতি কি।
আইরাত;; ওহহহ আচ্ছা আচ্ছা ক্ষতি কি তাই না। ক্ষতি হয়েছে কিনা জানি না তবে এখন ক্ষতি আমি করবো।
আব্রাহাম;; কি করবে কি তুমি?
আইরাত;; না এখন তো কিছুই করবো না কিন্তু এর পরেরবার থেকে যদি দেখেছি যে অন্য কোন মেয়ের সাথে মিশতে বা কথা পর্যন্ত বলতে তো একদম জানে মেরে ফেলবো বলে দিচ্ছি (আঙুল তুলে আব্রাহামের কাছে তেড়ে এসে)
আব্রাহাম;; আরে আমার কি দোষ! সরো আমি যাবো।
আব্রাহাম আইরাতকে টপকে সাইড দিয়ে চলে যেতে ধরলেই আইরাত আবার থামিয়ে দেয়।
আইরাত;; এইই দাড়ান।
আব্রাহাম;; আবার কি!
আইরাত;; খুলুন।
আব্রাহাম;; What! খুলবো মানে কি খুলবো?
আইরাত;; ওপরের কোর্ট খুলুন।
আব্রাহাম;; আরে কিন্তু কেন খুলবো?
আইরাত;; বিকজ ওই মেয়েটা এতে জুস ফেলে দিয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে নেকামি করে টিসু দিয়ে এতে মুছার বাহানা দিয়ে আপনার কাছে এসেছে। আর এতো কিছু তোকে কেন বলতে হবে হ্যাঁ তোকে খুলতে বলেছি তুই কোর্ট খুলবি ব্যাস,, ওই মেয়ে তোকে ধরবে কেন?
আইরাত যেন রেগে শেষ, আব্রাহাম ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে। এটা সে আইরাতের কোন রুপ দেখছে।
শুধু আব্রাহাম না এমনকি বাকি সবাই আইরাতের এমন রাগ দেখে ভরকে গেছে। আব্রাহাম বুঝতে পারলো যে এখন যদি সে তার কোর্ট না খুলে তাহলে বিপত্তি হবে কপালে শনি লাগিয়ে দিবে সে। তাই আব্রাহাম আর কোন শব্দ না করে চুপচাপ কোর্ট টা খুলে দিলো। আইরাত টান দিয়ে তা হাতে নিয়ে নিলো। ভ্লু কালার কোর্ট টা খুলে নিলে আইরাত আবার আব্রাহামের দিকে এক নজর তাকালো। নাহ, এখনো আব্রাহামকে সাদা পেন্টে আর Ash কালার শার্টে কম সুন্দর লাগছে না। এখন যেন আরো বেশি সুদর্শন লাগছে, বেশ মানিয়েছে বডিতে। এবার আইরাত পারছে না কেদে দিতে। কাদো কাদো ফেইস নিয়ে আব্রাহামের সামনে গিয়ে বলে ওঠলো….
আইরাত;; এই চৌধুরী কে বলেছে এতো বেশি সুন্দর হতে হুমম সবকিছুতেই এতো বেশি হ্যান্ডসাম কেন লাগে। সবাই কেমন শকুন চোখে তাকিয়ে থাকে।
আব্রাহাম;; তুমি কি পাগল হলে আইরাত।
আইরাত;; না কিছু না।
এই বলে আইরাত আব্রাহামের ভ্লু কালার কোর্ট টা নিয়ে সামনে হাটা ধরলো। আব্রাহাম আর কোন উপায় না পেয়ে আইরাতের পিছন পিছন যেতে লাগে। অয়ন,রাত্রি,নিপা,নিরব,রাশেদ সবাই গাড়িতে ওঠে পরে। আব্রাহাম বসেছে ড্রাইভিং সিটে। আইরাত আব্রাহামের পাশে বসতে গিয়েও আবার বসে না। সে গাড়ি থেকে ওঠে যায়।
নিপা;; আইরু কোথায় যাচ্ছিস?
আইরাত;; আসছি।
সবাই আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর আইরাত গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা আব্রাহামের ভ্লু কালারের কোর্ট টা একটা নর্দমায় ফেলে দেয়। আইরাতের এমন কান্ডে সবাই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
অয়ন;; দাভাই এভাবে তাকিয়ে থাকিস না। তোর বউ তো তোর মতোই হবে তাই না। মিসেস. সাইকো।
আব্রাহাম;; আসলে ঠিক বলেছিস।
আইরাত এবার গিয়ে গাড়িতে বসে পরে আব্রাহামের পাশে। সবাই আইরাতের দিকে এক নয়নে তাকিয়ে আছে তা দেখে আইরাত বলে ওঠে…
আইরাত;; কি এভাবে সবাই তাকিয়ে আছো কেন, আমি কি কোন এলিয়েন নাকি। নিজের জামাইয়ের ওপর অন্য কোন মেয়ের নজর বা স্পর্শ কোনটাই আমি সহ্য করবো না। তাই ওটা ফেলে দিয়ে এসেছি। এতে এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে।
__________________________
আইরাত;; এই চৌধুরী চলো তাড়াতাড়ি লেহেঙ্গা কিনতে হবে তো।
তারপর সবাই চলে গেলো লেহেঙ্গা কিনতে। আইরাত,নিপা,রাত্রি বসে আছে তাদের সামনে হাজারো রকমের লেহেঙ্গার ডিজাইন রয়েছে। কিন্তু কোনটাই যেন তাদের চোখে পরছে না। এদিকে আব্রাহাম, অয়ন, নিরব, রাশেদ সবাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। অবশেষে নিপার জন্য একটা লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা নিলো। হলুদের জন্য একটা অফ হুয়াইট কালারের লেহেঙ্গা,, রাত্রি আর নিপাও সেম লেহেঙ্গা নিলো হলুদের জন্য। আইরাত বিয়ের দিনে পরার জন্য একটা Ash & white কালারের মিক্স লেহেঙ্গা নিলো। তার মধ্যে সালা স্টোনের কাজ করা। রাত্রি সাদা কালারের মাঝে হলুদ কালারের একটা লেহেঙ্গা নিলো। আরো অনেক গুলো লেহেঙ্গা কিনে নিলো। এদের এতো কেনাকাটা দেখে নিরব বলে ওঠে…
নিরব;; আমি বুঝি না মেয়েদের এতো শপিং কেন করতে হয়?
অয়ন;; কারণ মেয়েরা এটা করতেই ভালোবাসে। তুই বউমনি আর রাত্রির অবস্থা দেখেছিস সবাইকে কেমন এক দৌড়ের ওপর রেখেছে।
আব্রাহাম;; আইরাত যেভাবে বিয়ের জন্য এতো কিছু করছে i wish সে নিজের বিয়েতে এমন কিছু করতো।
আব্রাহামের কথা শুনে অয়ন আর নিরব হেসে দেয়।
সারাদিন গড়িয়ে রাতের বেলায় তারা বাড়ি ফিরলো। এখন তারা কম বেশি সবাই অনেক ক্লান্ত। বাসায় এসেই যে যার ঘরে চলে গেলো। আব্রাহাম সোজা তাত ঘরে চলে যায়। গিয়েই দেখে তার আগে আইরাত তার রুমে গিয়ে বসে আছে। আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকায়।
আব্রাহাম;; এখানে কি করছ তুমি?
আইরাত;; আরে যে যার যার ঘরে চলে গিয়েছে তাহলে আমি আমার ঘরে আসবো না।
আব্রাহাম;; এটা তোমার ঘর কবে থেকে হলো?
আইরাত;; যেদিক থেকে আপনি আমায় বিয়ে করেছেন (বসা থেকে উথে আব্রাহামের কাছে এসে তার কাধ জড়িয়ে ধরে)
আব্রাহাম;; ছাড়ো।
আইরাত;; কেন ছাড়বো?
আব্রাহাম;; কারণ আমি তোমাদের চক্করে অওরে অনেক বেশি টায়ার্ড। আমি ফেশ হতে যাবো।
আইরাত;; আমিও যাবো।
আব্রাহাম;; Seriously!! ( এক ভ্রু উচু করে)
আইরাত;; হ্যাঁ
আইরাতের বলতে দেরি কিন্তু আব্রাহামের আইরাতকে টেনে ওয়াসরুমের ভিতরে নিয়ে গেতে দেরি না। আইরাতকে ওয়াসরুমের ভিতরে নিয়ে গেতেই আব্রাহাম একটানে আইরাতের ওরনা খুলে ফেলে দেয়। সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আইরাত অন্য কিছু বলার সময় সুযোগ কিছুই পাচ্ছে না। আব্রাহাম তাকে নিয়ে সাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দেয়। দুজন একসাথে ভিজতে লাগে। আব্রাহাম আইরাতের পাশে দেয়ালে একহাত দিয়ে ভর করে আছে। আর অন্য হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে আছে। আইরাতের মুখ,চোখ, ঠোঁট বেয়ে বেয়ে পানি পরছে। গোলাপী ঠোঁট দুটো যেন পানির শীতল স্পর্শ পেয়ে আরো বেশি গোলাপী হয়ে গেছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে অপলোক চোখে তাকিয়ে আছে। এবার আব্রাহামের চোখ যায় আইরাতের ঠোঁটের ওপর। আইরাতের ঠোঁট গুলো প্রচুর কাপছে। আর তা দেখে আব্রাহাম একদম কন্ট্রোললেস হয়ে গেলো। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না সে। ডুবিয়ে দিলো নিজের ঠোঁট আইরাতের ঠোঁটের মাঝে। আইরাত আব্রাহামের ছোয়া পেয়ে কেপে ওঠলো। আব্রাহামের শার্টের কলার খামছে ধরলো। আব্রাহাম আইরাতের উন্মুক্ত পেট জড়িয়ে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে। প্রায় ১৫ মিনিট পর নিজের থেকে আইরাতকে কে ছেড়ে দিলো আব্রাহাম। তারপর আর কোন কথা না বলে নিজে চলে গেল কাপর চেঞ্জ করতে। আইরাতও ফ্রেশ হয়ে চলে এলো।
।
।
।
অন্যদিকে অয়ন রাত্রিকে ফোনের ওপর ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু রাত্রির ফোন ধরার নাম নেই। রাত্রি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফোন বেজে চলেছে তা দেখে রাত্রি তাড়াতাড়ি করে ফোন তুলে দেখে অয়ন ফোন করেছে। রাত্রি রিসিভ করে।
অয়ন;; এই কোথায় তুমি কতো বার ফোন দিলাম।
রাত্রি;; না আসলে আমি ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম তো তাই।
অয়ন;; আচ্ছা এখন জকদি করে ছাদে চলে এসো।
রাত্রি;; কি এতো রাতে এখন ছাদে যাবো!
অয়ন;; হুমম এখনই আসবে প্লিজ জলদি এসো।
রাত্রি;; আচ্ছা বাবা ঠিকআছে আসছি আমি।
অয়ন এই বলেই ফোন কেটে দেয়। রাত্রি সোজা ছাদে চলে যায়। ছাদের একদম মাঝখানেই আসতেই রাত্রির চোখ ছানাবাড়া হয়ে গেলো। কারণ তার সামনে অনেক গুলো মোমবাতি দিয়ে লাভ সেপ সাজানো। আশে পাশে অনেক গুলো বেলুনও রাখা আছে। রাত্রি এগুলো তার মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো। তখনই অয়ন ধীর পায়ে রাত্রির পিছনে এসে এক হাটু ভাজ করে দাঁড়ায়।
অয়ন;; রাত্রি..
অয়নের ডাকে রাত্রি চমকে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।
তাকিয়ে দেখে অয়ন হাতে অনেক গুলো গোলাপ ফুল আর বেলুন নিয়ে বসে আছে।
অয়ন;; রাত্রি আমি জানি না আমি ঠিক কি বলে শুরু করবো। তবে হ্যাঁ আমি এটা স্বীকার করছি যে আমি অয়ন প্রেমে পরেছি। যখন তোমার সাথে প্রথম দেখে হলো তোমার এই মায়া ভরা মুখে নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম। মানলাম আমাদের ঝগড়া হয়েছিলো কিন্তু বিশ্বাস করো সেদিন রাতে আমি এই দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। তারপর ধীরে ধীরে তোমার সাথে দেখা করা,, তারপর তা বন্ধুত্তে রুপ নেওয়া,, আর তা আমার মনে কখন যে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার জন্ম হলো নিজেও বুঝে উঠতে পারিনি। অবশেষে শুধু এটাই বলবো যে ভালোবাসি রাত্রি,, আমি তোমাকে ভালোবাসি রাত্রি,,অনেক বেশিই ভালোবাসি। I LOVE YOU Ratri❣️,, will you accept me?!
অয়ন যে এই মূহুর্তে এমিন কিছু একটা করে বসবে তা রাত্রির ধারনার অনেক বাইরে ছিলো। সে ভাবতেও পারেনি যে অয়ন তাকে এভাবে প্রোপজ করবে। খুশিতে রাত্রির চোখ দিয়ে পানি পরছে। মুখ দিয়ে কোন কথা পর্যন্ত বের হচ্ছে না। তবুও খুব কষ্টে বলে ওঠলো..
রাত্রি;; YES,, হ্যাঁ অয়ন ভালোবাসি আমিও।
ব্যাস আর কি লাগে অয়ন সে আসমানের চাঁদ পেয়ে গেলো। রাত্রি ফুল আর বেলুন গুলো তার হাতে নিলো।অয়ন এক লাফে দাঁড়িয়ে রাত্রি কে জড়িয়ে ধরলো। দুজনের খুশির যেন কোন সীমা নেই। অয়ন রাত্রিকে রাত্রি অয়নকে জড়িয়ে ধরেই আছে তাদের আশে পাশে যেন কোন খেয়াল নেই। ঠিক তখনই সবাই ছাদে এসে পরলো। মানে আব্রাহাম,আইরাত,নিপা,নিরব সবাই ভেবেছে যে আড্ডা দিতে ছাদে যাওয়া যাক। তারা রাত্রি আর অয়নকে বাসায় অনেক খুজেছে কিন্তু পায়নি। কিন্তু ওপরে ছাদে এসেই দেখে এই কান্ড। রাত্রি আর অয়নকে এই অবস্থায় দেখে সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো। এবার আইরাত তাদের দেখে হাল্কা কেশে উঠলো। কিন্তু তাতেও তাদের কোন ভ্রুক্ষেও নেই। এবার একদিকে আইরাত আর নিপা আর অন্যদিকে আব্রাহাম আর নিরব দাঁড়িয়ে পরে। আইরাত এবার দুহাত ভাজ করে বলে ওঠে..
আইরাত;; বলি যে এতো রাতে এখন রোমান্স করা বাদ দিলে চলে না। নাকি এখনো করতে হবে। অনেক তো হলো এবার তো একে ওপরকে ছেড়ে দাও।
অয়ন;; না অনেকদিন পরে পেয়েছি আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই।
আইরাত;; অয়ন,, ছেড়ে দাও সবাই কিন্তু সবকিছু বিনে পয়সায় দেখছে। যাকে বলে বিনে পয়সায় ফ্রি মুভি। (অয়নের একটু কাছে গিয়ে)
আইরাতের গলা পেয়ে এবার অয়নের হুস ফিরলো। অয়ন আর রাত্রি তড়িঘড়ি করে একে ওপরকে ছেড়ে দিলো। রাত্রি তো পারছে না এখনই লজ্জায় মাটির নিচে লুকিয়ে পরতে। একদম লজ্জায় কুকড়িয়ে গেছে সে। অয়নও বেশ লজ্জা পেয়েছে। তা দেখে আইরাত বলে ওঠে।
আইরাত;; হয়েছে হয়েছে এখন আর লজ্জা পেতে হবে না আমরা যা দেখার দেখে ফেলেছি। এবার তাড়াতাড়ি চল।
নিপা;; আসলে আমি কি ভাবছি জানো নিরব আর আমার বিয়ের আয়োজন ছেড়ে এই দুটোর বিয়ের আয়োজন শুরু কর।
নিরব;; কথা অবশ্য মন্দ বলোনি।
আব্রাহাম;; তো লাভ বার্ডস্ আপনাদের প্রেম ট্রেম শেষ হলে এখন সবার একসাথে বসা যাক কি বলো।
অয়ন;; আহা দাভাই প্লিজ তুই অন্তত আমাকে এভাবে লজ্জাতে ফেলিস না।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তুমি করে বেড়াবে আর আমরা বললেই দোষ।
রাত্রি;; আব্রাহাম ভাই।
আব্রাহাম;; আচ্ছা শালিকা আচ্ছা আর বলবো না।
আইরাত;; নাও এবার সবাই কফি খাও চলো।
সবাই কফি হাতে নিয়ে ছাদে বসে আড্ডা দেওয়া শুরু করলো। আগামীকাল নিপার হলুদ সন্ধ্যা। তাই এখন থেকেই সবাই তার তড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। আজ রাতে তো আর সবার ঘুম নেই। আইরাত ছাদে সবার সাথে কফি খাচ্ছে আর হেসে খেলে কথা বলছে। চাদের আলোতে আইরাতের সৌন্দর্য যেন হাজার গুন বেড়ে গেছে৷ আইরাতের এই হাসি মুখের ওপরই আব্রাহাম তার মন হেরে বসেছে। দমকা হাওয়াতে আইরাতের চুলগুলো লাগামহীন ভাবে উড়ছে। আব্রাহাম যেন চোখে ফেলতেই ভুলে গেছে। সবকিছু ভুলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে মায়াময় চোখে তাকিয়ে আছে। দিলের ধুকপুক তার এখন হাজার গুণ বেড়ে গেছে।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
💙💐চলবে~~~~~
#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__ 49
🍁🍂..
..
..
..
..
..
আজ নিপার মেহেন্দি & হলুদ সন্ধা💞। বাড়ির চারিদিকে অনেক হৈ-হুল্লোড়। নিপার বান্ধবীরা,নিরবের বন্ধু, আব্রাহামের অফিসের কলিগরা আরো অনেকে বিয়েতে এসেছে। চারিদিকে খুশির আমেজ বয়ে বেড়াচ্ছে। আবির আহমেদও সবার কাজ দেখাশুনা করছেন। সারারাত কেউ ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি। সবাই কাজে ব্যাস্ত ছিলো। আজ সকালে আইরাত আর রাত্রি নিপাকে ঘুম থেকে এক প্রকার টেনে তুলেছে। সেই সকাল থেকেই নিপা কে তারা দুজন মিলে সাজাচ্ছে। ওদিকে নিরবের তো হাওয়া টাইড করে রেখেছে অয়ন আর আব্রাহাম। এক সময় পার্লার থেকে মেয়েরা এসে পরে নিপা কে মেহেদী পরানোর জন্য। আইরাত রাত্রিও অনেক সুন্দর করে সেজেছে। তবে মেহেদীর ফাংশনে ছেলেরা Not Allowed। মেহেদী পরানোর পর ছেলে মেয়ের হলুদ একসাথেই করা হবে কারণ উভয়ের বিয়ে তো একই বাসায় হচ্ছে। নিপা কে মেহেদীর জন্য একটা মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে সাথে হালকা কিছু ornaments অনেক কিউট লাগছে ওকে। রাত্রি পরেছে হালকা সবুজ কালারের লেহেঙ্গা,, সাথে হালকা সাজ। রাত্রি কাজ কম টই টই করে বেশি ঘুড়ছে আর আইরাতের বকুনি শুনছে। আর আইরাত,, আইরাত পরেছে মেরুন কালারের লেহেঙ্গা তাতে সাদা স্টোন,, হাতে সাদা পাথরের মোটা চুরি,, হালকা-ফুলকা সাজ ব্যাস আইরাত তৈরি❤️। তাদের সবাইকেই অনেক সুন্দর লাগছে। ছেলেরাও বেশ সুন্দর করে রেডি হয়েছে। নিরব পরেছে কমলা কালারের পাঞ্জাবি, অয়ন গ্রে কালারের পাঞ্জাবি আর আব্রাহাম সাদা ধবধবে পায়জামা আর আইরাতের সাথে মেচ করে মেরুন কালারের পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবির ওপরের বোতাম দুটো খোলা,, হাতে ব্লেক ঘড়ি, মুখে বাকা হাসি, চাপ দাড়ি ❤️ বেশ লাগছে তাদের দেখতে।বাইরে থেকে মেয়েরা নিপা কে মেহেদী লাগানোর জন্য এসে পরলে আইরাত আর রাত্রি দ্রুত নিপা কে নিয়ে হলরুমে বসিয়ে দেয় সবার মাঝে। মেয়েরা মেহেদী পরানো শুরু করে। কিন্তু এখন ঘটলো আরো এক ভেজাল। ছেলেদের মেহেদী ফাংশনে আসতে মানা করলেও তারা তো আসবেই আর এই সকল টাই ছিলো আব্রাহামের প্লেন। আইরাতকে ছাড়া বা ওকে দেখা ছাড়া নাকি তার এক মূহুর্তও চলবে না। তাই ছেলেরা সবাই প্লেন করে যে তারা লুকিয়ে লুকিয়ে মেহেদীর ফাংশনে যাবে। কিন্তু আইরাত যদি তাদের একবার হাতে-নাতে ধরে ফেলে তাহলে কেল্লাফতে। নিপা কে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার দুপাশে আইরাত আর নিপা বসে আছে। তাদের সামনেই তাদের বান্ধবীরা নাচছে।
অয়ন;; দাভাই আমরা কখন যাবো?
আব্রাহাম;; সবুড়ে কিন্তু মেওয়া ফলে।
নিরব;; ইশশ আমিই সেই হতভাগা যে তারই বিয়ে আর সেই কিনা সকাল থেকে তার বউকে দেখতে পারছে না ধুর।
অয়ন;; বউ এখনো হয়নি হবে।
নিরব;; কবে হবে রে ভাই😭
আব্রাহাম;; এই ছাগলের দল চল তাড়াতাড়ি।
নিরব;; কিন্তু কোথায়?
আব্রাহাম;; রাস্তা পেয়ে গেছি চল জলদি।
অয়ন;; ভাই তুই কি পিছনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি বের করেছিস। সেখানেও কিন্তু মেয়েরা আছে ধরা খেয়ে যাবো।
আব্রাহাম;; হাহ্, আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী এতো কাঁচা কাজ করে না বুঝলি। আমরা স্টোর রুমের ওপর দিয়ে যাবো।
নিরব;; মানে?
আব্রাহাম;; আরে গাধা, মানে স্টোর রুমের ওপরে একটা ডিকি রয়েছে সেটা দিয়ে সোজা ছাদে যাওয়া যেত। তো এখন আমরা ছাদে যাবো আর সেই ডিকির ভিতর দিয়ে স্টোর রুমে ঢুকে পরবো। আর স্টোররুম তো বাসাতেই তাই না। তারপর সেখান থেকে যার যার বউকে মনভরে দেখো।
অয়ন;; ওয়াহহহ এই না হলো আমার দাভাই।
আব্রাহাম;; আর তোরা হলি এক একটা গরু চল (অয়নের মাথায় গাট্টা মেরে)
তারা তিনজনেই চলে গেলো ছাদে। ছাদ থেকে স্টোররুমের ভিতর দিয়ে বাসাতে চলে গেলো। চারিদিকে এতো মানুষ, বিশেষ করে এতো মেয়ে যে অয়ন আর নিরব তাদের ধাক্কা খেতেই খেতেই শেষ। কিন্তু আব্রাহাম এই সব তোয়াক্কা না করে সামনে এগিয়ে গেলো। ওপরের তলা থেকে নিচে দেখছে। অয়ন আর নিরবও আব্রাহামের দুপাশে এসে দাড়ালো। অয়ন আর নিরব আসতেই তাদের চোখ যেন জুড়িয়ে গেলো। কারণ নিচে নিপা আর রাত্রি বসে আছে। নিপা দুহাত ভরে মেহেদী দিয়ে বসে আছে আর রাত্রি গানের তালে তালে দুলছে। কিন্তু আব্রাহাম কপাল কুচকে বারবার নিচে সব জায়গাতে তাকাতাকি করছে। কারণ তার প্রাণভোমরা অর্থাৎ আইরাত সেখানে নেই। সবাই সেখানে আছে কিন্তু আইরাত নেই, তার তো এখানেই তাদের সাথে থাকার কথা তাহলে যাবে কোথায়। আব্রাহাম কেমন ছটফট করতে লাগলো।
নিরব;; আহা, ওই যে আমার বউটা সেখানে বসে আছে। ইশশ কি সুন্দর লাগছে দেখতে, আবার প্রেমে পরে গেলাম আমি। মন চাইছে এখনই বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলি। শুভ কাজে দেরি কেন!
অয়ন;; তোর তো তাও বিয়ে হচ্ছে। আমার যে কবে হবে। ওই যে আমার রাত্রি বসে আছে। আচ্ছা ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
একে তো আব্রাহাম আইরাতকে না পেয়ে তার মাথা খারাপ তার ওপর এই দুজনের এমন আজাইরা কথাতে আব্রাহামের মেজাজ যেন ৪৪০° ঘুড়ে গেলো। আব্রাহাম আর না পেরে দুজনের কান জোড়ে টেনে ধরলো। তারা ব্যাথা পেয়ে শব্দ করে দিলো।
নিরব;; উফফ ভাই ছাড়ো প্রচুর লাগছে।
অয়ন;; দাভাই প্লিজ ছাড় না অনেক বেশি লাগছে কিন্তু ছাড়।
আব্রাহাম;; আমি তোদের এখানে নিয়ে এসেছি কি এইসব পেচাল শুনার জন্য। এমনিতেই আইরাত কে কোথাও দেখতে পারছি না তার পরেও তোরা…. আসলে তোদের আনাই আমার ভুল হয়েছে।
অয়ন;; আচ্ছা এবার ছাড় আর বলবো না ছাড়।
ওদের কাকুতিমিনতি তে আব্রাহাম তাদের ছেড়ে দিলো। নিরব আর অয়নও একদম চুপ হয়ে গেলো আর কোন কথা বলছে না। দুজনই দাঁড়িয়ে তাদের কানে হাত দিয়ে ডলতে থাকে। এবার অয়ন আর নিরব চুপচাপ নিপা আর রাত্রি কে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু আব্রাহাম মুখ লটকিয়ে রয়েছে। আইরাত এখনো আসছে না গেলো কোথায়!! এদিকে আইরাত তার হাতে বড় একটা ফুলের ডালা নিয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই তার চোখে পরে আব্রাহাম,অয়ন আর নিরব কে। আইরাত থেমে যায়। পেছন দিকে হেটে এসে আবার ডান দিকে তাকায়। দেখে যে আসলেই তারা তিনজন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত প্রথমে রেগে যায় এই ভেবে যে তাদের এখানে আসতে বারণ করার পরও তারা লুকিয়ে এসেছে। আইরাত তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে ফুলের ডালা টা নিচে রাখে। তারপর দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পরে। অয়ন আর নিরবের কাধে আলতো করে থাপ্পড় দেয়। তারা পিছনে তাকাতেই আতকে ওঠে। কেননা আইরাত দুহাত ভাজ করে তাদের দিকে ভ্রু গুলো উচু করে তাকিয়ে আছে। অয়ন আর নিরব কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত তাদের হাতের ইশারায় চুপ করিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলে। তারা দ্রুত চলে যায়। এবার আইরাত হাত পিছনে নিয়ে ধীর পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। আব্রাহামের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু তা আব্রাহাম টেরও পায় না।
আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না আমার। আইরাত কোথায় আমি তো ওর জন্যই এলাম আর ওই নেই। বাকি সবাই আছে। ধুর ছাই। এই মেয়েটা যে সারাদিন কোথায় ঘুড়ে বেড়ায়। খালি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া কেন একটা জায়গায় কি চুপ করে বসা যায় না। এখানে বসে থাকলে কি হতো না খালি সারা বাড়ি ঘুড়ে বেড়াবে। আমি তো শুধু রাগ করার অভিনয় করছি মাত্র হায় আল্লাহ এই মেয়ে সেই অভিনয়কে সত্যি সত্যি মনে না করে নিলেই হয়।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা অভিনয়!!
আব্রাহাম;; অবশ্যই অভিনয় আমি কি আমার জানপাখির সাথে রাগ করতে পারি নাকি।
কথা টা বলার পরমুহূর্তেই আব্রাহামের হুস ফিরলো যে সে কাকে কি বলছে। পিছে ফিরে দেখে যে আইরাত তার দিকে ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তা দেখে ভরকে যায়। এখন সে ঠিক কি বলবে তাও মাথায় আসছে না। তবুও আমতা আমতা করে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; না আসলে অভিনয় না, মানে না ধুর কি যা তা বলছি আমি। শুনো তুমি যা ভাবছো তা একদমই না
আইরাত;; ওহ তাই নাকি তো কি ভাবছি আমি (আব্রাহামের আরো কাছে এসে)
আব্রাহাম;; তুমি উলটা পাল্টা ভাব……
আব্রাহামের আর কিছু বলার আগেই দুই তিনজন মেয়ে ছুটে এলো। এসেই আইরাতের পাশে দাঁড়িয়ে গেল।
১ম মেয়ে;; আরে আরে আব্রাহাম ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন, আপনি জানেন না যে এখানে ছেলেদের আসা মানা।
২য় মেয়ে;; আরে হয়তো আইরাত আপুর ভালোবাসায় ছুটে এসেছে।
৩য় মেয়ে;; কিন্তু এটা তো ঠিক না এটা চিটিং। আইরাত আপি তুমি কিছু বলছো না, এই নিয়ম তো তুমিই বানিয়েছিলে তাই না।
মেয়েদের কথা শুনে আব্রাহাম একহাত কোমড়ে রেখে আর একহাত দিয়ে কপালে স্লাইভ করতে থাকে।
আইরাত;; আস্তে আস্তে, আমি জানি ছেলেদের আসা মানা। আর আমি তা সামলে নিবো এখন তোরা যা।
আইরাতের কথায় সবাই চলে গেলো এবার আইরাত আব্রাহামের কাছে এসে বলা শুরু করে…
আইরাত;; তো মিস্টার. চৌধুরী এগুলো কি হ্যাঁ, এটা কিন্তু একদমই ঠিক না।
আব্রাহাম;; কোনটা একদম ঠিক না।
আইরাত;; প্রথমত আপনি যে আমার সাথে রেগে থাকতে পারবেন না তা আমি জানি তবুও অযথা রেগে থাকার ভান করা আর দ্বিতীয় এভাবে মেয়েদের ফাংশনে লুকিয়ে আসা।
আব্রাহাম;; Hay, আমার না তোমার কাছ থেকে শুনতে হবে না যে আমি কি করবো আর কি করবো না বুঝলে।
আইরাত;; কিন্তু এখানে আসা চলবে না বুঝলেন। যান এখান থেকে জলদি।
আব্রাহাম;; আমার বয়েই গেছে এখানে থাকার।
আইরাত;; হ্যাঁ তা তো দেখতেই পারছিলাম এতোক্ষন যে আমাকে দেখতে না পেয়ে কি হাল হয়েছিলো আপনার।
আব্রাহাম;; শেষ হয়েছে আমার পিছু লাগা?!
আইরাত;; তা তো সারাজীবনেও হবে না। কিন্তু এবার এখান থেকে যান..
আব্রাহাম;; কিন্তু…
আইরাত;; যান চৌধুরী Rules are rules…
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন, বাট একটা কথা।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; তুমি মেহেদী পরবে না।
আইরাত;; কিহহ কিন্তু কেন?
আব্রাহাম;; আমি পরতে মানা করেছি তাই।
আইরাত;; এইটা কিন্তু একদম ঠিক না, আমার মেহেদী অনেক পছন্দের আর আপনি এইটাই পরতে মানা করছেন। প্লিজ পরতে দিন না প্লিজ।
আব্রাহাম;; না বলেছি। মানে না।
আব্রাহাম মুখে একটা ভাব নিয়ে চলে গেলো। আব্রাহাম চলে গেলে আবার হুট করেই এসে আইরাতের গালে টুক করে একটা কিস দিয়ে যায়। এবার আব্রাহাম সোজা বাইরে চলে যায় পিছনে ফিরেও তাকায় না। কিন্তু আইরাত তার গালে যেখানে চুমু দিয়েছিলো সেখানে হাত দিয়ে আব্রাহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হাসছে। কিছুক্ষন এভাবে থেকে পরে আইরাতও সেখান থেকে চলে এসে নিচে নেমে পরে। নিপার হাতের মাঝে নিরবের নাম লিখে দিয়েছে। রাত্রির ক্ষেত্রেও অয়ন নাম লিখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উল্টো টা হলো আইরাতের বেলায়। আইরাত মেহেদী পরতে চাইছে না।সবাই অনেক জোর করছে পরার জন্য কিন্তু আইরাত পরছে না কারণ একটাই আব্রাহাম বারণ করেছে তাকে মেহেদী পরতে। কিন্তু কেন যে বারণ করলো তাই আইরাতের মাথায় ঢুকছে না।
মেয়ে;; ম্যাম প্লিজ মেহেদী পরে নিন। বিয়ের ফাংশন এটা না পরলে কেমন দেখায় সবাই পরেছে।
আইরাত;; না আমি পরবো না।
মেয়ে;; কিন্তু পরলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে।
নিপা;; আইরু কি করছিস কি বল তো কেন পরবি না মেহেদী আরে পরে ফেল ভালো লাগবে।
রাত্রি;; বেবিজান পরে নে মানাবে তোকে প্লিজ পরে নে।
আইরাত;; না না আমি কোনভাবেই মেহেদী পরবো না।
নিপা;; কিন্তু কেন?
আব্রাহাম;; কারণ আমার বউকে আমি নিজে মেহেদী পরিয়ে দিবো।
সবার পিছন থেকে আব্রাহাম এসে এই কথা বলে ওঠলো। সবাই ডেবডেব করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাত্র;; কিন্তু..
আব্রাহাম;; আমি জানি যে এখানে ছেলদের আসা বারণ কিন্তু এখন আমি আমার বউ এর জন্য এসেছি। আর এবার যদি কেউ কিছু বলেছে তো তার একদিন কি আর আমার যত দিন লাগে।
সবাই আর কিছু বললো না। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে যে “”তাহলে এই ছিলো জনাবের মনে, নিজে তার হাতে আমাকে মেহেদী পরিয়ে দিবে বলে আমাকে ওদের কাছ থেকে মেহেদী পরতে বারণ করেছিলো, আয় হায়ায়ায় আমার জামাই””
আব্রাহাম আইরাতের সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে। পাশে থাকা মেহেদীর ডালা থেকে মেহেদী নিয়ে নেয় তার হাতে। আইরাতের দিকে তাকাতেই আইরাত একগাল হেসে তার ডান হাত সামনে বাড়িয়ে দেয়। আব্রাহাম খুব সুন্দর আর যত্নের সাথে আইরাতকে মেহেদী পরিয়ে দিতে থাকে। আইরাত-আব্রাহামের এমন রোমান্টির সিন দেখে নিপা বলে ওঠে।
নিপা;; কেউ কি দেখে মনে করবে যে এটা আমাদের বিয়ে, সবাই ভাববে এটা তোমাদের বিয়ে আর তোমরা বর-বউ।
নিপার কথা শুনা আব্রাহাম সহ বাকি সবাই হো হো করে হেসে দেয়। আইরাতের দুহাত ভরে মেহেদী দেওয়া শেষ হলে আব্রাহাম আইরাতের বাম হাতের ঠিক মাঝ বরাবর করে “আব্রাহাম” নাম টি লিখে দেয়। আইরাতের সেদিকে নজর পরতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু সবাই আব্রাহামের কান্ড দেখে অবাক বিশেষ করে আইরাত কেননা আব্রাহাম যে এতো সুন্দর করে মেহেদী পরাতে জানে তা আইরাতের একদম জানা ছিলো না। শুধু আইরাত না বাকিরাও অনেক বেশি অবাক। তা দেখে নিরব বলে ওঠে…
নিরব;; আব্রাহাম ভাই তোমার একটু চরণধুলি দাও,, না মানে আর কি কি পারো তুমি,, আর এমন কি টেলেন্ট বাকি আছে তোমার মাঝে বলো না।
আব্রাহাম;; তোদের দ্বারা হবে না ভাই ছেড়ে দে।
নিপা-রাত্রি;;😅😅
।
।
।
এভাবেই খুব মজা করে মেহেদীর ফাংশন শেষ হলো। এখন আর কিছুটা সময় পর হলুদের ফাংশন। এখন ছেলে মেয়েদের আর আলাদা করে দেওয়া হয়নি। নিরব আর নিপার একসাথেই হলুদ শেষ করা হবে। আব্রাহাম অয়ন মিলে নিরবকে রেডি করাচ্ছে। নিরবকে স্কাই ব্লু কালারের শেরওয়ানি পরানো হয়েছে। অয়ন বাদামি কালারের আর আব্রাহাম Ash কালারের শেরওয়ানি পরেছে। অন্যদিকে নিপাকে সাদা হলুদের কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে সাথে ফুলের গহনা। রাত্রি গোলাপি কালারের আর আইরাত নেভি ব্লু কালারের লেহেঙ্গা পরেছে। আজ শুধু বাটি ভরে ভরে হলুদ আনা হচ্ছে। তবে আজ আর ঘরে না বরং বাগানের বাইরে অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে আর এগুলো আইরাত আর রাত্রি নিজে সামলিয়েছে। নিরব আর নিপা কে একটা নিচু টেবিলের ওপরে একসাথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবার প্রথমে বড়রা তাদের হলুদ লাগায়। আবির আহমেদ তাদের দুজনকেই হলুদ লাগিয়ে আর্শিবাদ করে দেয়। নিরব আর নিপার মাথার ওপরে একটা লাল কালারের ওরনা দুদিক থেকে ধরে আছে অয়ন আর রাত্রি। এবার আব্রাহাম এসে নিরব কে হলুদ দিয়ে একদম মাথা চোখ মুখ ডুবিয়ে দিলো। আব্রাহাম নিপার কাছে গিয়ে কপালে আর গালে হলুদ লাগিয়ে দিলো। নিপাও মজা করে আব্রাহাম কে কিছুটা হলুদ লাগিয়ে দিলো। অয়ন এসে হলুদের বাটি পুরো নিরবের মুখে ঠেসে ধরে। শুরু হয় দুজনের মধ্যে হলুদ নিয়ে যুদ্ধ। অয়ন গিয়ে নিপা কেও হলুদ লাগিয়ে দেয়। এবার আইরাত আর রাত্রির পালা। তারাও গিয়ে নিরব কে হলুদ দিয়ে ভরিয়ে দিলো। আর নিপার কথা না হয় বাদই দিলাম রাত্রি আর আইরাত নিপা কে হলুদ দিয়ে গোসল করিয়ে দিয়েছে পুরা। নিপাও কম কিসে সেও হলুদ দিয়ে দেয় তাদের। কিন্তু এবার অয়ন হলুদ নিয়ে রাত্রির পিছনে ছুট লাগায়। রাত্রিও বাচার জন্য এদিক ওদিক ছুটে চলেছে। আর তাদের কান্ড দেখে সবাই হেসেই শেষ। কিন্তু একটা মেয়ে এসে হঠাৎ করেই আইরাতকে ডেকে নেয়। আইরাত তার সাথে চলে যায়। কাজ শেষ করে ফেরার পথে হুট করেই কেউ আইরাতকে টেনে নিয়ে এক ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। আইরাতের মুখ চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দেয়। কিন্তু আইরাত এবার কোন ছটফট করে না কারণ এই ছোয়া তার খুবই চেনা। এটা আব্রাহামের ছোয়া, কারণ আব্রাহাম ছাড়া এমন কাজ কেউ করতেই পারে না। আইরাত চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আব্রাহামই। আব্রাহাম ধীরে ধীরে আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে। আইরাত ভাবে আব্রাহাম তাকে কিস করবে কিন্তু আইরাতের ধারনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আব্রাহাম আইরাতের গালের সাথে তার গাল ঠেকিয়ে দেয়। এতে আব্রাহামের গালে থাকা হলুদ আইরাতের গালে লেগে যায়। এভাবেই আব্রাহাম আইরাতের দুগালেই তার গাল থেকে হলুদ লাগিয়ে দেয়। আইরাত তা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে। আব্রাহাম তার দুহাত দিয়ে আইরাতের দুপাশে ভর করে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। এবার আব্রাহাম নিজের গাল উঠিয়ে আইরাতের একদম কাছে গিয়ে তার চোখে চোখ রাখে। আব্রাহামের হাতে থাকা হলুদ আইরাতের পেটে এবং কোমড়ে লাগিয়ে দেয়। আইরাত কেমন শিউরে ওঠে। দুহাতের হলুদ দিয়ে আইরাতের পেট কোমড় একদম শেষ করে দেয় আব্রাহাম। যাওয়ার আগে আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে চলে যায়। আইরাত লজ্জায় কুকড়ে যায়। পরিশেষে নিজেও আবার নিচে নেমে যায়।
আজ হলুদের কাজ শেষ কাল সকালেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হবে।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
🖤🦋চলবে~~~~~
.