# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১১শ
আব্বুঃ আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।
আব্বুর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। আব্বু বলে কী আমার নাকি বিয়ে ঠিক করেছে। তাও আবার আমার অজান্তে। আমি করুন সুরে আব্বুকে বললামঃ আব্বু আমার তো এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।
আব্বুঃ বয়স হয়েছে কিনা তা আমি আর তোমার মা জানি। তোমাকে এসব ভাবতে হবে না।
আমিঃ কিন্তু আব্বু আমি তো মেয়ে টাকে দেখলাম না।
আম্মুঃ মেয়েকে তোর দেখতে হবে না। মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।আর আমরা জানি তুইও পছন্দ করবি।
আমি নরম সুরে আম্মুকে বললামঃ তবুও তো।
আব্বু একটু কড়া গলায় বললোঃ আমাদের উপর কি তোমার বিশ্বাস,ভরসা কিছুই নেই?
আমিঃ ঠিক আছে আব্বু তোমরা যা করবে তাই হবে। ( মাথা নিচু করে)
আম্মু আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ বাবা আমাদের উপর রাগ করিস না। আমরা তোর জন্য সেরাটাই বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। মেয়েটার সঙ্গে তোকে আমরা দেখা করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েটা তোর সাথে দেখা করতে চায় নি। সে নাকি একবারে বাসর রাতেই তোর সঙ্গে দেখা করবে।
আম্মুর কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম। মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলাম, কে হতে পারে এই মেয়ে? যে আমাকে না দেখেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেল। আমার সঙ্গে একবার দেখা করার প্রয়োজন মনে করলো না। সে আগে থেকেই আমাকে চিনতো কি?
আম্মু আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে শান্ত গলায় বললোঃ কি হলো সাহিদ তুই কি আমাদের উপর করেছিস?
আমি মাথা উপরের দিকে তুলে একটা মুচকি হেসে বললামঃ না না আম্মু রাগ করবো কেন? আর আমার বিশ্বাস তোমরা আমার জন্য বেস্ট টাই বেছে নিবে। বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে কি ?
আব্বুঃ হ্যাঁ হয়েছে। এই মাসের পঁচিশ তারিখে।
আমি একটু অবাক হয়ে বললামঃ কিহহহ এতো তাড়াতাড়ি?
আব্বুঃ এখানে তাড়াতাড়ির কি আছে? সবে আজকে সতেরো তারিখ। এখনো সাতদিন সময় আছে।আর শোন তুমি তোমার সকল ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করবে।
আমিঃ ঠিক আছে আব্বু।
আব্বুঃ তিশা আর সাফিয়া তোমরা দুজন আগামীকাল থেকে বিয়ের শপিং করা শুরু করে দিবে।
তিশাঃ ঠিক আছে আংকেল।
আমিঃ আব্বু আর কিছু বলবে কি? রুমে যাবো।
আব্বুঃ ঠিক আছে যাও।
আমি আর কোনো কথা না বলে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। বালিশে মাথা দিতেই ভাবনার জগতে ডুবে গেলাম, আমি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেই তাহলে সামিয়ার কি হবে। সে তো আমাকে খুব ভালো বাসে। কী করবো আমি? আব্বু আম্মুর কথাকে ফেলে দিতে পারতেছি না। কারণ, তাঁরা আমার জন্মদাতা-জন্মদাত্রী। তাদের মনে কষ্ট দিয়ে সুখে থাকতে পারবো না।
পাগলি টার কথা আজ খুব মনে পড়তেছে। সেদিন যদি সে ভুলটা না করতো তাহলে হয়তোবা আজকে আমাদেরকে দূরে থাকতে
হতো না। হ্যাঁ সে আমার কাছে অনেক বার তার ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করতে পারিনি। তার প্রতি আমার অভিমানটা এখনো রয়েছে। তবে তাকে ভালোবাসি না এটা বললে ভুল হবে। তাকে এখনো ভালোবাসি।
যাইহোক,এসব ভেবে আর লাভ নেই। ভাগ্যে যা আছে তা হবে। এসব ভাবতেছি এমন সময় আমার রুমে রিয়াদ, ইকবাল আর শাকিব আসলো। ইকবাল আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললোঃ দোস্ত কেমন আছিস? কতদিন পরে তোর সাথে দেখা।
আমিও ইকবাল কে জড়িয়ে ধরে বললামঃ আলহামদুলিল্লাহ তোরা কেমন আছিস?
ইকবালঃ আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি।
ইকবালকে ছেড়ে দিয়ে আমি রিয়াদ আর শাকিব কে জড়িয়ে ধরলাম। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছে।
রিয়াদ আমাকে বললোঃ দোস্ত তোর সাথে কতদিন হলো আড্ডা দেওয়া হয়নি।
আমিঃ হুমম রে। ইকবাল তোর আর মিতুর কি খবর?
রিয়াদঃ আর বলিস না ইকবালের আর মিতুর একটা ছেলে হয়েছে।
আমিঃ কিহহ কবে হলো রে।
শাকিবঃ তুই এখান থেকে যাওয়ার পরে মানে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ক্লাস শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরেই ইকবাল আর মিতুর বাবা ইকবাল আর মিতুর বিয়ের অনুষ্ঠান করে। আর তারপর থেকেই ওরা দুজন একত্রে।
আমিঃ বলিস কি মামা ? আর তোদের কি অবস্থা?
রিয়াদঃ এইতো চলতেছে।
গল্প করতে করতেই সাফিয়া এসে ওদেরকে নাস্তা করার জন্য ডেকে গেলো। আমি ওদেরকে নিয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম। ওদের জোরাজুরিতে হালকা কিছু মুখে দিলাম। নাস্তা শেষ করে ড্রয়িং রুমের সোফায় এসে সবাই বসলাম। সোফায় আব্বুও বসে ছিলো। বন্ধুরা আব্বুর সাথে গল্প করতে লাগলো।
ইকবাল আমাকে বললোঃ সাহিদ চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
আমিঃ ঠিক আছে চল।
বলে পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফোন পকেটে নেই। আমি ইকবালকে বললামঃ তোরা একটু বস আমি আমার রুম থেকে ফোনটা নিয়ে আসি।
ইকবালঃ ঠিক আছে যা।
আমি বললাম আমার রুমে এসে ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বের হতেই তিশা বললোঃ ভাইয়া কোথায় যাচ্ছিস?
আমিঃ একটু বাইরে যাবো। কেন?
তিশাঃ আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে। একটু রিচার্জ করা লাগতো।
আমিঃ ঠিক আছে কত টাকা রিচার্জ করে দিবো?
তিশাঃ বেশি নয় পাঁচশ টাকা দিয়ে দিস।
আমিঃ কিহহ পাঁচশ টাকা। এতো টাকা কি করবি?
তিশা মুচকি হেসে বললোঃ ভাবির সাথে কথা বলবো।
আমিঃ ভাবি মানে?
তিশাঃ ভাবি মানে বোঝো না যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে।
আমিঃ কার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে আমি চিনি না। প্লিজ বলনা মেয়েটা কে?
তিশাঃ সেটা তো বলা যাবে না ভাইয়া। বলা আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ।
আমিঃ ঠিক আছে বলতে হবে আমারও একদিন আসবে দেখে নিস হুঁ,,।
বলেই আমি নিচে চলে আসলাম। নিচে এসে দেখি ইকবাল, রিয়াদ আর শাকিব আব্বুর সাথে কথা বলতেছে আর হাসাহাসি করতেছে।
আমি যাতেই আব্বু ওদেরকে বললোঃ তাহলে বাবা তোমরা বিয়ের শপিং করা থেকে শুরু করে বিয়ে শেষ অবধি সাহিদের সঙ্গে থাকবে।
বন্ধুরাঃ ঠিক আছে আংকেল।
আব্বুঃ আর শোন কালকে সকালে তোমরা আমার বাসায় চলে আসবে কালকে থেকেই শপিং শুরু করে দিবো।
বন্ধুরাঃ আচ্ছা আংকেল।
এরপরে আম্মুকে বলে বন্ধুদের সাথে বাসা থেকে বের হলাম । বাইরে এসে দেখি তিনটা বাইক দাড় করানো। বুঝতে আর বাকি রইলো না এগুলো ওদের তিনজনের। এরপরে আমি ইকবালের বাইকের পিছনে বসলাম।
চার বন্ধু মিলে আমার সেই চিরচেনা শহরটা ভালো ভাবে ঘুরলাম। এরপরে চলে আসলাম সেই পার্কে যেখানে থেকেই শুরু হয়েছিলো সামিয়া আর আমার ভালোবাসার সূচনা আবার যেখানেই শেষ হয়েছিলো আমাদের ভালোবাসা। আমি একটা গাছের নিচে বসে মন খারাপ করে বসে আছি। অতীত টা আবার এসে কাড়া নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
রিয়াদ আর শাকিব আমার পাশে এসে বললোঃ দোস্ত মন খারাপ করিস না। অতীত কে ভেবে কি লাভ বল। যে চলে গেছে তার চিন্তা করে কি লাভ। ভাগ্যে থাকলে সে আবার আসবে। আর সবচেয়ে বড় কথা কয়েকদিন বাদে তোর বিয়ে এখন যদি তুই এসব ভেবে নিজেকে কষ্ট দিস তাহলে কি ভাবে হবে।
আমি কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
সিফাত আমার কাঁধে হাত রেখে বললোঃ সাহিদ তুই কি এখনো সামিয়া কে ভালোবাসিস?আর ভালোই যদি বাসিস তাহলে সামিয়া কে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে নিয়ে আবার নতুন করে শুরু কর।
আমিঃ না রে আর সেটা সম্ভব নয়।
সিফাতঃ কেন?
আমিঃ কয়েকদিন বাদে আমার বিয়ে। এখন যদি আমি সামিয়া কে আমার জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসি বা বিয়ে করি তাহলে আমি আমার মা বাবার কাছে পাপী হয়ে থাকবো। কারণ, তাঁরা আমার অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
আমার কথা শুনে শাকিব আর রিয়াদ মুচকি মুচকি হাসতেছে। রিয়াদ বললোঃ আরে দোস্ত সামিয়ার,,,
রিয়াদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইকবাল এসে রিয়াদের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললোঃ কি শুরু করেছিস তোরা? সাহিদ চল আমার বাসায় যাবি মিতু তোকে যেতে বলেছে।
আমিও আর রিয়াদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ইকবালের বাসার দিকে রওনা দিলাম। ইকবাল, রিয়াদ আর শাকিব ওদের বাইক গুলো পার্ক করতে গেলো। আমি ইকবালের বাসার দরজায় কলিং বেল বাজাতেই একটা ছোট্ট বাচ্চা এসে দরজা খুলে দিলো। আমাকে দেখে বললোঃ তাতে তায়? (কাকে চায়?) [খুবই ছোট বাচ্চা ছেলে। ঠিক মতো কথাই বলতে পারতেছে না]
আমি বাচ্চা টাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ তুমি কে বাবু আর তোমার বাবার নাম কি?
বাচ্চাটিঃ আমাল নাম লাফি ( রাফি)। আমাল বাবায়েল নাম ইতবাল।
ওও এইবার বুঝলাম এটা আমার ফ্রেন্ডের ছেলে। আমি রাফি কে কোলে তুলে নিতেই একটা মেয়েলি কন্ঠে কে যেন বললোঃ কে এসেছে রাফি।
কথা টা শুনে আমি সামনে তাকিয়ে দেখি মিতু দাঁড়িয়ে আছে। মিতু আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললোঃ আরে সাহিদ কেমন আছিস?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
মিতুঃ আমিও ভালো আছি।
আমিঃ এটাই কি তোর আর ইকবালের ছেলে।
মিতুঃ না এটা আমার ছেলে।
পিছন থেকে কে যেন বললোঃ না এটা আমার ছেলে।
পিছনে ঘুরে দেখি ইকবাল দাঁড়িয়ে আছে। মিতু বললোঃ না এটা আমার ছেলে।
ইকবালঃ না এটা আমার ছেলে।
এইতো শুরু হয়ে গেল তাদের তর্ক বিতর্ক অনুষ্ঠান। আমি ওদেরকে ঝাড়ি দিয়ে বললামঃ এই তোরা থামবি? তোদের এই অভ্যাস টা এখনো গেল না।
আমার ঝাড়ি খেয়ে মিতু বললোঃ সরিরে দোস্ত। আচ্ছা ভিতরে চল।
এরপরে আমরা যায়ে সোফায় বসলাম। আমি ইকবালকে বললামঃ কিরে আংকেল আন্টিদেরকে ( জয়েন্ট ফ্যামিলি) যে দেখতেছি না।
ইকবালঃ ওহহ তারা বেড়াতে গেছে।
আমিঃ ওও।
এরপরে মিতুর সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। আসলে সববন্ধুরা এক জায়গায় হয়েছি তো তাই একটু আড্ডা দিতে বেশি সময় লাগলো। আমি মিতুকে বললামঃ মিতু নিলার কি অবস্থা?
মিতুঃ নিলার বিয়ে হয়েছে।
আমিঃ তাই। এখন কোথায় থাকে?
মিতুঃ সিলেটে। মান নিলার মামাতো ভাইয়ের সাথেই ওর বিয়ে হয়েছে।
আমিঃ বাহহ খুব ভালো তো।
শাকিবঃ হুমমম রে ভাই,, কিন্তু আমাদের চাচাতো বোন,মামাতো বোন,ফুফাতো বোন গুলো যে কোথায় উধাও হয়ে গেছে। আমরা এতদিন ধরে ফ্রি আছে কেউ আমাদেরকে দেখতেই পায় না।
শাকিবের কথা শুনে সবাই একটু হাসলাম। আমি মিতুকে বললামঃ দোস্ত আগামী পঁচিশ তারিখে আমার বিয়ে তুই আর ইকবাল আগেই চলে আসিস।
মিতুঃ কস কি মামা? তোর বিয়ে কার সাথে মেয়েটা কে?
আমিঃ মেয়েকে আমি নিজেই জানি না। মেয়েটা নাকি একে বারে বাসর রাতে আমার সঙ্গে দেখা করবে।
ইকবালঃ তুই শেষ মামা,,, জন্মের পর থেকেই দেখা হওয়ার মানে পরিচয় হওয়ার পরেও বাসর রাতে আমাকে যে পেইন দিয়েছিলো। সেই হিসেবে বাসর রাতের পরিচয়ে তো তোর জীবন শেষ করে দিবে।
মিতু রেগে যায়ে বললোঃ এই ফাজিল এসব কথা এদের কে বলতে হবে?
ইকবালঃ আরে এতে রাগার কি আছে। আমাদের বন্ধুকে তো এসব জানাতে হবে নইলে পরে আবার,,,
ইকবালকে আর বলতে না দিয়ে মিতু বললঃ হয়েছে হয়েছে চুপ করো।
ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে সাফিয়ার রুমে গেলাম। সেখানে যায়ে দেখি তিশা ফোনে কারো সাথে কথা বলতেছে। আমাকে দেখে ফোনটা রেখে দিল। আমি সেদিকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ওদের দুজনের জন্য ফুচকা নিয়ে এসেছিলাম তা দিলাম।
রাতে ডিনার করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে তিশা আর সাফিয়া কে নিয়ে শপিং করতে গেলাম। আমার বন্ধুরা আজকে আসবে না। শপিং শেষ করে বাসায় চলে আসলাম।
দুপুরে লাঞ্চ করে রওনা দিলাম রাজশাহীতে। রাজধানীতে পৌঁছার পরে মামার বাসায় গেলাম। মামার বাসায় যায়ে রেস্ট নিয়ে বিকেলে রাফি,সিফাত, মিমি আর নীলিমাকে আমার বিয়ের দাওয়াত দিয়ে আসলাম। মামা মামির থেকে বিদায় নিয়ে আবার রওনা দিলাম নওগাঁর উদ্দেশ্যে।
বাসায় আসতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। আব্বুর গাড়ি নিয়ে যাওয়ায় আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি। যাইহোক, রাতে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে আবার বের হলাম শপিং করার উদ্দেশ্যে। তবে এখন সঙ্গে এসেছে তিশা, সাফিয়া, ইকবাল,মিতু, রিয়াদ আর শাকিব। দীর্ঘক্ষণ যাবৎ শপিং করে বাসায় চলে আসলাম।
শপিং করা, দাওয়াত দেওয়া আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার মাধ্যমে কেটে গেল পাঁচ দিন। আজকে আমার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে সিফাত,রাফি, নীলিমা,মিমি,নিলা,মিতু, ইকবাল, রিয়াদ আর শাকিব এক কথায় আমার বন্ধু মহলের সবাই।
আমি হলুদ অনুষ্ঠানের স্টেজে বসে আছি। একে একে সবাই আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। তবে আমি বেশ অবাক হলাম একটা বিষয় দেখে যে, এখানে সামিয়ার কয়েক টা কাজিন এসেছে আমাকে হলুদ লাগিয়ে দেওয়ার জন্য।
অনেক আনন্দের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো আমার হলুদ সন্ধ্যা। অনুষ্ঠান শেষ হতে অনেক রাত হয়ে গেল। ইকবাল আর মিতু তাদের বাসায় চলে গেছে। এছাড়া সব বন্ধুরাই আমার বাসায় আছে।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। সামিয়ার কথা মনে হলো, পাগলি টা আমার বিয়ের কথা শুনে ঠিক থাকতে পারবে তো? কিন্তু সামিয়ার কাজিন আমার হলুদ অনুষ্ঠানে আসলো কেন?
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে একটু হাঁটতে বের হলাম। হাঁটা হাটি করে বাসায় আসলাম। আজকে আমার বিয়ে ভাবতেই কেমন যানি লাগতেছে। আগামী কাল থেকে আমি আর নিজের ইচ্ছেমত বা স্বাধীন ভাবে চলার ফেরা করতে পারবো না। আগামী কাল থেকে বেশি রাত করে বাইরে থাকতে পারবো না। আহহ সিঙ্গেল লাইফা টাকে খুবই মিস করবো। কতই না সুন্দর ছিল আমার লাইফ টা।
আমি তিশা, সাফিয়া, সিফাত আর রিয়াদ এক গাড়িতে উঠলাম। আর অন্যরা অন্য গাড়িতে উঠেছে। যাইহোক প্রায় আধঘন্টা গাড়ি চলার পর একটা লাইটিং করা যায় বাসার সামনে এসে গাড়ি দাঁড়ালো। মনে হচ্ছে এটাই আমার হবু শ্বশুর মশাইয়ের বাসা। গাড়ি থেকে নেমে বাসার গেটের কাছে আসলাম। বাসাটা দেখে আমার পরিচিত মনে হলো। মনে হচ্ছে কয়েক বার এসেছি। কিন্তু রাত হওয়ায় বিষয়টা ক্লিয়ার হলাম না।
গেটের কাছে যাওয়ার পরে কাঁচি দিয়ে ফিতা কাটলাম। ফিতা কাঁটার সাথে সাথে ছাদে থেকে ফুল পড়তে লাগলো আর বিভিন্ন আতশবাজি ফুটতে লাগলো।
একটা মহিলা এসে আমাকে মিষ্টি আর কিছু শরবত খাইয়ে দিয়ে চলে গেলেন। মহিলা টি হিজাব পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।
বিয়ের সব ঝামেলা মিটিয়ে আমার বউকে নিয়ে আমার শ্বশুর মশাইয়ের বাসা থেকে বের হলাম। গাড়িতে উঠার পরেও আমার গিন্নী মাথা নিচু করে বসে ছিলো। তার ছোঁয়া টা আমার কাছে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে। বাসায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢুকতেই আম্মু তার বউমাকে বরণ করে নিলেন।
এরপরে তিশা আর সাফিয়া আমার গিন্নী কে আমার রুমে নিয়ে গেল। আর আমি বন্ধুদের সাথে ছাদে আসলাম। তবে অবাক করার বিষয় হলো আমি আমার গিন্নীর মুখটা এখনো পর্যন্ত দেখতে পেলাম।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই তিশা আর সাফিয়া দুজনে একসাথে এসে আমাকে রুমে যাওয়ার জন্য ডেকে গেলো। বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে আসার সময় ইকবাল বললোঃ দোস্ত তোর জন্য তোর বাসর রুমে এমন কিছু অপেক্ষা করতেছে তুই তা কল্পনাও করতে পারবি না।
আমি আর কিছু না বলে মুচকি হাঁসি দিয়ে ছাদ থেকে আমার রুমের দরজার সামনে চলে আসলো। দরজার সামনে এসে দেখি দুই সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললামঃ কি চায় তোদের?
তিশাঃ দুইজনে পাঁচ হাজার টাকা।
আমিঃ কিহহ পাঁচ হাজার টাকা। আমার কাছে নেই।
সাফিয়াঃ দিবে কিনা বলো নইলে,,,,,( মাজাতে দুই দিয়ে রাগি মুডে)
আমিঃ নইলে কি?
সাফিয়াঃ হেডকোয়ার্টারে শুট করার অর্ডার দিয়ে দিবো।
আমি ভয়ে ভয়ে বললামঃ ম মানে।
তিশা মুচকি হেসে বললঃ মানে টা নাহয় ভিতরে ঢুকলেই বুঝতে পারবে আমার। এখন টাকা দেও।
কি আর করবো ওদেরকে না দিলে কাকে দিবো ? পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ড টা বের করে দিলাম।
ক্রেডিট কার্ড দেখে তিশা বললোঃ আমরা এটা নিয়ে কি করবো? আমাদের শুধু মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দেও।
আমিঃ আমার কাছে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া কিছু নেই তোরা এটাই নিয়ে যা।
তিশা আর সাফিয়া আমার ক্রেডিট কার্ড নিয়ে চলে গেল। আমি দরজা খুলে রুমের ভিতরে ঢুকতেই আমার গিন্নী খাট থেকে নেমে এসে আমার পায়ে সালাম দিতে লাগলো। তবে এখানো ঘোমটা দিয়ে আছে যার ফলে তাকে স্পষ্ট চিনা যাচ্ছে না।আমি ওর কাঁধ ধরে আমার পা থেকে উপরে উঠাতেই আমি ওর মুখ দেখতে পেলাম। তার মুখটা দেখার সাথে সাথে আমি দুই কদম পিছনে হেঁটে গেলাম। কারণ, আমার গিন্নী আর কেউ নয় আমার গিন্নী হলো আমার এক্স সামিয়া।
সামিয়া আমার সামনে মাথা নিচু করে বলতে লাগলোঃ আমি জানি সাহিদ তুমি আমাকে মেনে নিবে না। আমাকে স্বামীর অধিকার দিবে না। তোমার মনে আমার জন্য রয়েছে শুধু ঘৃণা। হয়তোবা তুমি এখন এগুলোই বলতে। প্রত্যেক টা মেয়ে এই রাত নিয়ে কিছু স্বপ্ন জমিয়ে রাখে। তেমন আমিও রেখেছিলাম। কিন্তু আমি জানি আমার সেই স্বপ্ন গুলো আমার পূর্ণ হবে না। আর না হওয়ারই কথা । যেই ছেলেটার মনে শুধু রয়েছে মেয়েটার প্রতি ঘৃণা রাগ অভিমান সেই ছেলে মেয়েটাকে কি করে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করবে। কিভাবে সেই মেয়েটার জীবনের অপেক্ষাকৃত সেই স্বপ্নের রাতে গল্প শোনার সাথি হবে। কখনোই হবে না। আমি তোমাকে এই
ভাবে বিয়ে করতে চাইনি। আমি আগে তোমার মনটাকে জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার পরিবার আমার আর তোমার সম্পর্কে সব কিছু জানতে পারে। তার পরে তোমার বাবা আমার বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমার বাবাও রাজি হয়ে যায়। ফলে আজকে আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছিলাম। সেটার জন্য তোমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি কিন্তু তুমি প্রতি বারই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো। তোমার কথা ভেবে প্রতি টা রাত কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি। তোমার দেওয়া প্রতিটা অপমান সহ্য করে তারপরেও তোমাকে ভালোবেসেছি। আর আজকে, আজকে তুমি আমার স্বামী। স্বামীর অধিকার টা হয়তো পাবো না। স্বামীর ভালোবাসাটা হয়তোবা পাবো না। কিন্তু ঠিকই আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো যেমনটা আগে বেসেছিলাম। হয়তোবা কোনো একদিন তুমি আমাকে তোমার বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে ” পাগলি তোকে আর ছেড়ে যাবো না। তোকে সব সময় ভালোবেসে যাবো।” সেই দিনের আশায় আমি বসে থাকবো।
সামিয়ার কথা গুলো শুনে আমার চোখের কোনায় পানি চলে আসলো।
কথা গুলো বলেই সামিয়া বালিশ আর কম্বল মেঝেতে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে জুয়েলারি গুলো খুলতেছে আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে।।
আমি ড্রেসিং টেবিলের কাছে যায়ে পিছন থেকে সামিয়ার কাঁধে হাত রেখে সামিয়া কে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ওর চোখের পানি আমার দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলাম। এরপরে আমার হাত থেকে একটা রিং খুলে ওর একটা আঙ্গুলে পড়িয়ে দিয়ে বললামঃ পাগলি ছেড়ে যাবো নারে তোকে আর। তোকে সব সময় ভালোবেসেই যাবো। রেখে দিবো মনের গহিনে স্বযত্নে তোকে।
সামিয়া আমার কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমিও ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে একটু স্বাভাবিক হলো।আমি বললামঃ পাগলি।
সামিয়াঃ হুঁ,,
আমিঃ তোমার স্বপ্ন পূরণের দ্বায়িত্ব আমাকে দিবা না।
(চলবে)
?? কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন ??