Ex গার্লফ্রেন্ড যখন অফিসের বস পর্ব-০৫

0
4040

Ex গার্লফ্রেন্ড যখন অফিসের বস ❤
লেখকঃ শ্রাবন
পর্বঃ ০৫

এরপর কিছু সময় পরে ডাক্তার বেরিয়ে এল। আর আমায় যা বলল আমি তা
শুনে খুবই অবাক।
ডাক্তার বলল আন্টির অবস্থা খুব বেশী
ভালো। যেকোনো সময়ে মারা যেতে পারে।
এবং আন্টি নাকি আমাকে কিছু বলতে চায়। তাই আমকে ভিতরে যেতে বলছে।
আর বাচ্চাটি ভালো আছে। তাই আমি
কোন কথা না বলে ভিতরে চলে গেলাম।
আমাকে দেখেই আন্টি বলল—
আন্টি- বাবা আমার মেয়ে কেমন আছে?
আমি- আন্টি আপনারা মেয়ে ভালো আছে।
আন্টি- বাবা আমি মনে হয় বেশী সময়
আর বাঁচব না।
আমি- আন্টি আপনার কিছু হবে না।(মিথ্যা আস্সাস দিলাম)
আন্টি- বাবা আমাকে ডাক্তার সব বলছে।
আমি-……
আন্টি- বাবা তুমি আমার একটা শেষ ইচ্ছা পূরন করবে????
আমি- জ্বী আন্টি বলেন, আমি কথা দিচ্ছি
আমি রাখব আপনারা কথা।
আন্টি- বাবা আমার কিছু হলে তুমি আমার মেয়েকে দেখে রেখ। নিজের বোন হিসেবে দেখে রেখ। (কেদে)
আমি- আন্টি আপনি না বললেও আমি ওকে আগলে রাখতাম। কারন আমার কেউ নেই এই দুনিয়ায়।
আন্টি……..
আন্টি আর কিছু বলছে না। তাই আমি ডাক্তারকে ডাক দিলাম।
ডাক্তার এসে যা বলল আমি তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আন্টি আর বেচে নেই। কেন জানি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
এরপর আমি বাচ্চাটির রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি ও ঘুমাচ্ছে। আমি ভাবতে লাগলাম কি নিষ্পাপ ভাবে ঘুমাচ্ছে। কন্তু এই দুনিয়া থেকে ওর সবচেয়ে দামী জিনিস হারিয়ে ফেলছে তা ও নিজেও জানে না।
এরপর কিছু সময় পর ও ঘুম থেকে উঠল।
(আমি বাচ্চাটির নাম জানি না)
আমাকে দেখেই ও ভয় পেতে লাগল।
আমি ওর কাছে গিয়ে
ভয় পেও না। আমি তোমাদের বাচিঁয়েছি
রোড এক্সিডেন্টে থেকে।
এরপর কিছুটা শান্ত হল।
আমি বললাম—-
আমি- আপু তোমার নাম কি??
আপু- কিছু সময় পরে….জান্নাত।
আমি- বাহ তোমার মতো সুইট নেম।
জন্নাত- ভাইয়া আমার আম্মু কোথায়??
আমি-……
জান্নাত-ভাইয়া(ধাক্কা দিয়ে)
আমি- আপু আগে বল তুমি কান্না করবে না??
জান্নাত- কেন??
আমি- কারন তোমার আম্মু আমায় বলেছে যে তুমি নাকি খুবই ভালো মেয়ে?
জান্নাত- হুম
আমি- তাহলে ভালো মেয়েরা তো কান্না করে না।
জান্নাত- তাই,?? তাহলে আমিও কাদব না..।
আমি- এইত গুড গার্ল।
জান্নাত- তাহলে আমার আম্মু কই?
আমি- আপু তোমার আম্মু তোমায় রেখে ওই উপরের তারা হয়ে গেছে।?
জান্নাত- (কেদেই যাচ্ছে)
আমি- তুমিতো পচা মেয়ে।
জান্নাত- না(কেদে কেদে)
আমি- তাহলে তুমি কাদ কেন??
জান্নাত- ভাইয়া বলে আমায় জরিয়ে ধরল।
কিছু সময় পরে—
জান্নাত- ভাইয়া আমি থাকব কার কাছে??
আমি- কেন??
জান্নাত- ভাইয়া এই পৃথিবীতে আমার আম্মু ছারা আর কেউ নেই(কেদে)
আমি- তাহলে আমি কে?
জান্নাত- ভাইয়া..
আমি- তাহলে কোন ভাই কি তার বোনকে একা রেখে চলে যায়।
জান্নাত- তুমি সত্যি বলছ??
আমি- হ্যা।
আর কিছু বলার আগেই বেড থেকে উঠে এসেই আমায় জরিয়ে ধরল। আমিও ওকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়িয়ে দিলাম। এরপর বললাম আপু তুমি শুয়ে থাক, আমি ডাক্তার আংকেলের সাথে কথা বলে আসি। তোমায় বাসায় নিয়ে যেতে হবে তো।
এরপর হাটতে হাটতে ভাবতে লাগলাম মেয়েটি কত কিউট। আমার স্বপ্ন ছিল আমারো এমন একটা কিউট বোন থাকবে। আমার স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।
আর ভাবলাম আমার এই দুনিয়ায় তো কেউ থেকেও নেই। তাই জান্নাতকে আকরে ধরেই বেচে থাকব। এরপর ডাক্তারকে বলে ওকে নিয়ে ওর মায়ের কাছে নিয়ে গেলাম। জান্নাত ওর আম্মুকে দেখেই কেদে দিল। এরপর অনেক সময় পরে ওকে ছারিয়ে আন্টিকে নিয়ে হাসপাতালের লোক নিয়ে আন্টির জানাজা করে জান্নাত কে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। রাত ১ টার বেশি বাজে। জান্নাত আমার কোলে ঘুমিয়ে গেছে। তাই ওকে নিয়ে ওর বেডে শুয়িয়ে দিয়ে আমি ওর পাশে বসে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জান্নাতকে রিলিজ করলাম।( অল্প টাকা খরচ হয়েছে। কাছে যে টাকা ছিল তাতেই হয়ে গেছে।) এরপর জান্নাত এর কাছে গিয়ে দেখি ও বসে আছে তাই আমি ওকে সব কিছু বলে বাসার দিকে রওনা দিলাম।
যাবার পথে ভাবলাম জান্নাত মনে অনেক
কষ্ট পেয়েছে। তাই ওকে নিয়ে কাছের একটা পার্কে গেলে ভালো হয়। যেই ভাব সেই কাজ। জান্নাতকে নিয়ে শিশু পার্কে গেলাম। ওখানে গিয়ে ওর মন ভালো হয়ে গেল।(বাচ্চা মানুষ তো, অল্পতেই খুশী)
এরপর ওকে কিছু আইসক্রিম কিনে দিলাম। আর কিছু চকলেট নিয়ে বাসায় এলাম।
বাসায় এসে——
আমি- আপু এইটা তোমার বাসা.।
জান্নাত- হুম। তুমি একা থাক??
আমি- হুম।
জান্নাত- তোমার কেউ নেই??
আমি- আছে তো।
জান্নাত- কই? কোথায় সে?
আমি- জান্নাত কে কোলে নিয়ে..এইতো আছে আমার একমাত্র আপু।
জান্নাত- আমায় জরিয়ে ধরে পাপ্পি দিল।
যেহেতু আমার কলেজ নেই তাই সারাদিন বাসায় থাকব। (মানে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত)
তাই আমি আর জান্নাত মিলে দুজনে রান্না করলাম।
খাবার খেতে বসে—-
আমি খাচ্ছিলাম। তখন দেখি জান্নাত খাচ্ছে না।
আমি- আপু খাবার ভালো হই নাই?
জান্নাত- হুম ভালো হয়েছে।
আমি- তাহলে খাচ্ছ না কেন??
জান্নাত-….
আমি- আমি আর কিছু না বলে ওকে খায়িয়ে দিলাম। জান্নাত কিছু না বলে খেয়ে উঠেই আমায় জরিয়ে ধরে কেদে দিল।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। তাই আমি ওকে শান্তনা দিয়ে টিভি দেখতে বসলাম।
এখন সকাল ১১ টা বেজে গেছে, তাই আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম—
আমি- আপু তোমাদের বাসাটা কোথায়???
জান্নাত- ****** ওখানে। (ভাড়ায় থাকত)
আমি- তাহলে তো আমাদের আজ বিকেলে গিয়েই তোমার সব জিনিস পত্র নিয়ে আসতে হবে।
জান্নাত- হুম ভাইয়া।
আমি- আচ্ছা আপু তোমার কোন রিলেটিভ নেই??
জান্নাত- নাহ ভাইয়া।
আমি- ওহ কোন ব্যাপার না।
এরপর আরো কিছু সময় টিভি দেখে জান্নাতকে ঘুম পারিয়ে দিলাম।
বিকালে জান্নাতকে ঘুম থেকে তুলে
ফ্রেশ করে………
বিকালে জান্নাতকে ঘুম থেকে তুলে
ফ্রেশ করে বের হলাম বাইরে।
প্রথমে বিকাশ থেকে কিছু টাকা উঠালাম।
এরপর জান্নাত কে নিয়ে ওর পছন্দ মতো
কিছু জামা কাপর কিনলাম।
এরপর আমি আর আমার কিউট আপু
দুজনে মিলে কিছু খেয়ে নিলাম।
এরপর জান্নাত এর বাসায় গেলাম। সেখান থেকে বাসার মালিককে বলে
জান্নাত এর সব কিছু নিয়ে একটা গাড়ি করে বাসায় ফিরে এলাম। বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে।
গাড়ি থেকে সব কিছু নামিয়ে আমরা
বাসায় ঢুকলাম।
আমি- আপু আমরা আগে তোমার জিনিস
গুলো গুছিয়ে নি??
জান্নাত- হুম ভাইয়া।
আমি আর জান্নাত মিলে সব কিছু
গুছিয়ে নিলাম।
এরপর রাতে ঘুমানোর সময়।
আমি- আপু?
জান্নাত- হুম বলো
আমি- তুমি কোন ক্লাসে পড়??
জান্নাত- চতুর্থ শ্রেণিতে।
আমি- ওরে বাবাহ আমার আপু তো দেখি
অনেক বড়।
জান্নাত- ???
আমি- আপু তোমায় আমি কালকে একটা
স্কুলে ভর্তি করে দিব ওকে।
জান্নাত- হুম ভাইয়া।
আমি- আমি জান্নাত এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম । কিছু সময় পরে জান্নাত ঘুমিয়ে গেল। তারপর আমি বাপ্পিকে ফোন দিলাম।
আমি- হ্যালো বন্ধু কেমন আছিস??
বাপ্পি- হুম ভালো। তুই??
আমি- হুম ভালো। কি করিস??
বাপ্পি- বসে আছি। তুই??
আমি- আমিও। আন্টি কেমন আছে??
বাপ্পি- মোটামুটি ভালো।
আমি- দোস্ত এদিকে একটা বিশাল ঘটনা ঘটে গেছে।
বাপ্পি- কি হয়েছে বল??
আমি- সব খুলে বললাম।
বাপ্পি- দোস্ত তুই তো একা ঢাকা শহরে মোটামুটি ভাবে চলিস। কিন্তু এখন যদি এই মেয়েকে রাখিস তাহলে ভেবে দেখেছিস কি হবে??
আমি- দোস্ত আমি কিছু জানি না। আমি ওকে আমার কাছেই রাখব। তুই ভেবে দেখ মেয়েটির কেউ নেই। আর যদি এটা তোর বোন হতো তাহলে তুই কি করতি??
বাপ্পি- সরিরে দোস্ত। আসলে তুই অনেক বদলে গেছিস। দোস্ত আই প্রাউড অফ ইউ।
আমি- হুম দোস্ত। ভালো থাকিস।
বাপ্পি- ওকে। আর জান্নাত এর খেয়াল রাখিস।
আমি- ওকে। এই বলে ফোন কেটে দিলাম। আমি আর কিছু কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জান্নাত আমায় জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় আমার আপুটাকে একদম বাচ্চা পরির মতো লাগতেছে। আমি ওকে না ডেকে আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশ হয়ে, সকালের খাবার বানাতে গেলাম।(সব কিছু অভ্যাস হয়ে গেছে এই এক বছরে)
এরপর জান্নাতকে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ করে খেতে বসালাম। মহারানি আবার আমার হাত ছারা খাবেন না। তাই কি আর করার খায়িয়ে দিলাম মহারানিকে।
জান্নতকে নিয়ে রেডি হয়ে রওনা দিলাম
গার্লস স্কুলের দিকে।
সেখানে সব ফরমালিটি পূরন করে ভর্তি করিয়ে দিয়ে
আসলাম। আজ থেকেই নাকি ক্লাস করবে মহারানি। তাই ওকে রেখে বাসায় চলে এলাম। স্কুল ছুটি হবে ২ টার সময়।
আমি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে। একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ১.২৩ বাজে। আমি তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে, বেড়িয়ে পরলাম জান্নাত এর স্কুলের দিকে। ১০ মিনিট এর ভিতরে পৌঁছে গেলাম (বাসার কাছেই স্কুল)
আমি কিছু সময় বসে থাকার পরে হটাৎ
কে যেন আমার চোখ বন্ধ করে ধরল।
আমার আর বুঝতে বাকি নেই এটা জান্নাত। আমি বললাম—-+
আমি- আপু ক্লাস শেষ??
জান্নাত- চোখ ছেরে দিয়ে,,,, ভাইয়া তুমি কিভাবে টের পেলে??
আমি- আমার একমাত্র কিউট আপুকে আমি চিনব না তো কে চিনবে???
জান্নাত- হুম সেটাও তো। আমায় এখন কোলে নাও।
আমি- এখন??
জান্নাত- হুম
কি আর করার মহা রানিকে কোলে নিয়ে
হাটতে লাগলাম। রাস্তায় আইসক্রিম দেখে কিনে দাও। আমি কি আর পারি এই মহারানিকে না বলতে। তাই বাধ্য ছেলের মতো কিনে দিতে হল।
বাসায় আসতে ২.৩০ বেজে গেল। জন্নাতকে ফ্রেশ করে নিজের হাতে খায়িয়ে দিলাম।
বিকালে আপুকে নিয়ে আমি যেখানে কাজ করি সেখানে নিয়ে গেলাম।
আসলে এখানে এক বছর কাজ করি। তাই সবাই আমাকএ ভালোভাবে চিনে।
জিয়া(আমার সাথে কাজ করে)- ভাই এইটা কে???
আমি- ও হ…..আর কিছু বলার আগে
জান্নাত- ও আমার ভাইয়া
জিয়া- অহ,,(কেউ আমার পরিবার সম্পর্কে জানে না।)
এখানে জান্নাতকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম। এর পর ওকে বাসায় রেখে এলাম। আসার সময়—
আমি- আমার কিউট আপু রাগ করে না??
জান্নাত-…..
আমি- আপু আমি যাব আর আসব।
আপু-…….
আমি- আপু তুমি বই পড়তে থাক। আর আমি আসার সময় তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসব।
জান্নাত- ওকে। আর চকলেট না আনলে বাসায় ঢুকতে দিব না কিন্তু??
আমি- ওকে মহারানি। বলেই বাসার দরজা বাইরে থেকে আটকে চলে এলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আসলে জান্নাত কে এই অল্প সময়েই খুব ভালোবাসে ফেলেছি। আমি কাজে এসে কাজ করতে লাগলাম। এইভাবে রাত ৮ টা বেজে গেল। মানে টাইম শেষ। (কিছু দিন আগে থেকে কাজ ৮ পর্যন্ত করা হয়েছে)
আমি আর কিছু না ভেবে বেরিয়ে টিউশন করতে গেলাম। দুটো টিউশন করে বাসায় আসতে রাত ১০.৩০ বেজে গেল। আসার সময় চকলেট নিয়ে এসেছি।
দরজা খুলে রুমে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি মহারানি টিভি দেখে। আমায় দেখেই জরিয়ে ধরল। আর আমি খুশী হয়ে চকলেট গুলো দিয়ে দিলাম। (দেখে মনে হয় হাজার বছরের সম্পর্ক।)
আমি- আমার আপু খুশী তো??
জান্নাত- হুম। খুব খুশী।
আমি- ভাত খেয়েছে আপু??
জান্নাত- নাহ
আমি- কেন??
জান্নাত- আমি আমার ভাইয়ার হাতে ছারা খাই না।
আমি- ওহ এই ব্যাপার।
এরপর আর কিছু না বলে আমার দুজনে খেয়ে নিলাম। রাতে আবার আগের দিনের মতো ঘুমিয়ে গেলাম।
এইভাবে চলছিল আমাদের দিন কাল।
হটাৎ একদিন বাপ্পি কল করে যা বলল আমি তা শুনে তো ১০০ বোল্টের শক খেলাম……..

চলবে…????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে