EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার পর্ব-১৭

0
2345

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১৭শ

সামিয়ার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কোনো কথা না বলে সজোরে একটা চড় মেরে বললামঃ কি বিশ্বাস করবো তোর কথাগুলো? তাহলে কি এই ফটো আর ভিডিও গুলো মিথ্যা? তোকে আমি আমার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সেটা তোর পছন্দ হলো না। তুই পর পুরুষের সঙ্গে অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হয়েগেলি। এটাই ছিলো তোর সারপ্রাইজ? আসলে একটা কথা জানিস কি “কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।” কুকুরের লেজে যদি তেল,মধু,ঘি মাখিয়ে দিস তবুও সোজা হবে না। সেই রকম তুই। তোর সবকিছু ভুলে যায়ে তোকে আবার এই বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুই আমার ভালোবাসার শেষ এই প্রতিদান কি দিলি। আচ্ছা তুই কি বলতে পারবি আমার ভালোবাসার মধ্যে এমন কি ভুল ছিলো? যার জন্য আজকে আমার বুকে এই দহন জ্বালিয়ে দিলি।এসব বলে আর কোনো লাভ নেই। তুই এখন আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যা। চাইনা তোকে আর আমি। চাইনা তোর মতো পাপীর মুখ দেখতে।

সামিয়া আমার কথা গুলো শুনে আমার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ প্লিজ সাহিদ আমার কথা শুনো। এসব মিথ্যা। আমি এসব কিছুই করিনি।

আমিঃ হা হা হা,,,কি শুনবো? আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। আমি আর চাইনা কোনো পাপীর মুখের দিকে তাকাতে।

তবুও সামিয়া পা ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ সাহিদ তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে আমি কোথায় যাবো বলো? প্লিজ সাহিদ তুমি আমাকে এরকম সাজা দিয়ে না।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না!

আমি সামিয়ার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললামঃ কেন আমি ছাড়া কি তোর আর কেউ নেই? যাদের সাথে বেড শেয়ার করেছিলি তাদের কাছে যাবি।

সামিয়া মাথা হেলে কান্না করেই যাচ্ছে।আমি ধমক দিয়ে বললামঃ কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না? তোকে আর আমার চোখের সামনে দেখতে চাইনা। এই মূহুর্ত চলে গেলে খুশি হবো।

সামিয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের কোণে পানি নিয়ে এসে একটা মুচকি হেসে বললোঃ আমি চলে গেল তো ভালো থাকবে? ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। একটা কথা জেনে রাখো আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসতাম। কিন্তু সেটা তুমি দেখলে না। দেখলে শুধু আমার নামে,,,,, থাক আর বললাম না। সারপ্রাইজ যেটা দিতে চেয়েছিলাম সেটা দেওয়া হলো না। হয়তোবা আর দেওয়াও হবে না। ভালো থেকো শরীরের যত্ন নিয়ো আর আব্বু আম্মুকে দেখে রেখো।আর পারলে একটা ভালো, পবিত্র মেয়ে কে বিয়ে করে নিয়ো। (ভাঙ্গা কন্ঠে)

আমার কাছ থেকে সামিয়া ওর মা বাবার সামনে যায়ে বললোঃ আব্বু আম্মু সরি আমি তো আর আপনাদের মেয়ে না। শুনুন আমার জন্য আপনার মান সম্মান নষ্ট হয়েছে। এই জন্য আমি আপনাদের দুজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)

এরপরে সামিয়া আমার আম্মুর কাছে যাতেই আম্মু বললোঃ মারে তুই এই কাজ কীভাবে করলি? তোকে তো আমি নিজের মেয়ের মতোই ভালো বাসতাম ।

সামিয়া মাটির দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমি জানি আমি খারাপ অপবিত্র। আর আমি আসতেও চাই না আপনাদের কাছে এই পাপী মুখ নিয়ে। কিন্তু আমি আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ করতেছি, প্লিজ আজকের রাতটা আমাকে এখানে থাকতে দিন। কথা দিচ্ছি কালকে সকালে এই পাপী মেয়ের মুখ কাউকে না দেখিয়েই চলে যাবো।(সামিয়া মনে মনে বললো,যার সঙ্গে একবছর থেকে চলাফেরা করা সেই যদি আমাকে চিনতে না পারে তাহলে আপনারা দূরে থেকে আমাকে কি চিনবেন মা? এর থেকে আমিই আপনাদের দূরে থাকি!)

আব্বু আম্মু কে কিছু বলতে না দিয়ে আমি বললামঃ আমি কোনো ছলনাময়ী কে চোখের সামনে দেখতে চাই না।

সামিয়া আর কিছু না বলে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আমি রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলাম। কেন আমার ভাগ্যে এসব হয়? সামিয়া আমিতো সব কিছু ভুলে তোমাকে আপন করে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কেন আবার আমার সাজানো স্বপ্ন গুলো কে ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেলে। সামিয়ার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো মনে হচ্ছে আর বুকের ভিতরে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সকালে বালিশে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। সারারাত একটুও ঘুম হয়নি। রাতে আম্মু খাওয়ার জন্য ডেকেছিল কিন্তু আমার খাওয়ার ইচ্ছাটাই মরে গেছে।

কে যেন দরজায় টোকা দিচ্ছে। উঠে দরজা খুলে দেখি তিশা দাঁড়িয়ে আছে। তিশা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ ভাইয়া প্লীজ আমাকে মাফ করে দে। আমি যদি ফুপি আর আংকেল কে তোদের কথা না বলতাম তাহলে তোদের বিয়েও হতো না আর আজকে তোকে এই কষ্ট সহ্য করতে হতো না।

আমিঃ আরে পাগলি তোকে আগেও বলেছি যা ভাগ্যে আছে সেটাই হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা যে কখনো ছিলো না তাকে বেঁধে রাখা যাবে না। এটা ছিলো তার মোহ। আবার সে যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে আবার আসবে।( খুব কষ্ট করে কথা গুলো বললাম। কথা গুলো বলার সময় চোখ দিয়ে পানি বের হতে লাগলো। তিশার চোখের আড়ালে মুছে ফেললাম।)

তিশাঃ ভাইয়া তুই এতো ফ্রি ভাবে কথা বলেছিস কি করে।তোর কি তার জন্য একটুও কষ্ট হচ্ছে না?( অবাক হয়ে)

আমি তিশার কাছ থেকে সরে ড্রেসিং এর সামনে দাঁড়িয়ে বললামঃ নারে কার জন্য কষ্ট হবে? এসব কষ্ট সহ্য করার অভ্যাস আছে। তবে এখন তাকে ভুলতে কষ্ট হবে! আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

তিশাঃ ভাইয়া আমি বুঝতে পারতেছি তোর মনে অন্য কিছু চলতেছে এমন কিছু করিস না যাতে আবার ফুপি আর আংকেল কষ্ট পায়!

আমি একটা মিথ্যা মুচকি হেসে বললামঃ আরে না। তুই নিচে যা আমার ভালো লাগতেছে না আমি রেস্ট নিবো।

তিশা চলে যাওয়ার পরে আমি আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলাম। একটু পরে আম্মু একটা প্লেটে খাবার নিয়ে আসলো।না খেতে চেয়েও জোর করে খাইয়ে দিলো। খাবার খাওয়ার সময় মনে পড়ে গেল সামিয়ার কথা, প্রতিদিনই আমার হাতে তুলে খেতো। এই তো কয়েক দিন আগে ডিনার করার সময় আমার হাতে তুলে খাবে। আমাকে খাইয়ে দিতেই হবে। কি আর করার খাইয়ে দিচ্ছে আর সে খাচ্ছিল। হঠাৎ করেই প্রশ্ন করলো, সাহিদ তুমি কি আমাকে সারাজীবন এই ভাবে তোমার হাত দিয়ে তুলে খাইয়ে দিবে তো?

আমিঃ দিবো না কেন? আমার পাঁচটা নয় তিন টা নয় আমার একটা মাত্র বউ তাকে যদি খাইয়ে না দেই তাহলে কাকে দিবো?

সামিয়া আমার কথাই মুচকি হেসে বললোঃ হ্যাঁ তোমার হাতে তুলে না খেলে আমার ভালোই লাগে না।

কথা গুলো ভাবতেই চোখের কোণায় পানি এসে গেল। আম্মু তা দেখতে পেয়ে পেয়ে বললোঃ কি হয়েছে বাবা?

আমিঃ কিছু না আম্মু।

আম্মুঃ বাবা যা হওয়ার তা হয়েগেছে। এখন এসব ভেবে নিজেকে কষ্ট কেন দিচ্ছিস ?

আমি নিজেকে না পেরে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্তনা দিতে লাগলো।

অতিবাহিত হয়ে গেল চার দিন। চার দিনে রুম থেকে কোথাও বের হয়নি। কোথাও ভালোলাগে না। বন্ধুদের সাথেও কথা বলিনি। তারা এখন ব্যস্ত হওয়ায় আগের মতো আর আড্ডা দেওয়া হয় না।

রুমে বসে আছি তখন রাফি, সিফাত আর মিমি আসলো। রাফি আমার কাছে এসে বসলো। এরপরে আমাকে বললোঃ দোস্ত তোদের মধ্যে কি হয়েছে বলবি? শুনলাম সামিয়া নাকি সিহাবের সঙ্গে?

আমি রাফি কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বললামঃ হ্যাঁ রে?
এরপরে সব কিছু বলে দিলাম তাদের কে।

আমার কথা শুনে সিফাত বললোঃ তোর কোথাও ভুল হচ্ছে না তো?

আমিঃ নারে দোস্ত। কয়েকদিন আগে আমি সিহাব আর সামিয়া কে একটি পরিত্যক্ত বাসায় যেতে দেখেছিলাম। এছাড়া তারা প্রায়ই বসে থেকে কফি খেতে গল্প করতো। বাট কখনো বুঝতে পারিনি যে, সে আমাকে এতো বড় ধোঁকা দিবে।

রাফিঃ দোস প্লিজ ভেঙে পড়িস না। চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

আমিঃ নারে আমি যাবো না তোরা যা।

সিফাতঃ তা বললে শুনবো না। তুই আমাদের সঙ্গে কিছু সময় আড্ডা দে তাহলে ভালো লাগবে।

ওদের দুজনের জোরাজুরিতে গেলাম। আসলে এদের মতো বন্ধু পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি যাতে ভেঙ্গে না পড়ি সে জন্য তারা
তাদের কর্ম ফেলে রেখে আমাকে সময় দিচ্ছে।

কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম। যেখানেই যাই সেখানেই সামিয়া নামক এক প্রতারকের উপস্থিত টের পাই।কেটে গেল তিনটা বছর। এই তিন টা বছর আমার কাছে মনে হয়েছিলো তিন যুগ। এখনো সামিয়ার কথা মনে হলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। খুবই ভালোবাসতাম। ভুলতে পারবো না তাকে।
বসাতে পারবো না সেই জায়গায় অন্য কাউকে।

আব্বু আম্মু, সাফিয়া আর আমি রাজশাহীতে থাকি। আব্বু তার জব থেকে অবসর গ্রহণ করেছে। সামিয়ার আব্বু আম্মু মাঝে মাঝেই আমাদের বাসায় এসে বেড়ে যায়। তাঁরা আসতে চায় না। আর আসবেই বা কোন মুখ নিয়ে? কিন্তু আমিই তাদেরকে জোর নিয়ে আসি। কেননা,সামিয়া চলে যাওয়ার পর থেকেই সামিয়ার আম্মু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার বলেছিলেন রুগি কে সব সময় হাসি খুশি রাখতে হবে।

এরপর থেকেই সামিয়ার আব্বু সামিয়ার আম্মুকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। একা একা কীভাবে একটা মানুষকে হাসি খুশি রাখবে। হাসি খুশি রাখলেও তো আর একাকিত্ব কাটবে না। এছাড়া একটা রুগির প্রয়োজন যথেষ্ট সেবা । বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমি নিয়ে আসি আমার বাসায়। এখানে কয়েক মাস থাকার পরে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠে। আবার চলে যায় নওগাঁয়। কয়েক দিন পর পর আসে।

আর অবাক করা বিষয় হলো, একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে । আমি কলটা রিসিভ করলেই একটা ছোট্ট মেয়ে বাচ্চা বলবে,বাবাই বাবাই,,,।

বাচ্চাটির মুখে বাবাই বাবাই শুনে চমকে যাই। মনে হয় সে আমার খুবই পরিচিত। আমি দ্বিধায় পড়ে যাই কে এই বাচ্চাটা আর আমাকেই বা বাবাই বাবাই বলে ডাকতেছে? আমি বলি, আম্মু আমি তোমার বাবাই না।

এই কথা শুনাতে সাথে সাথে কল কেটে দেয়। বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে। পরে কল দিলে সেই নাম্বারে আর কল ঢুকে না।

অফিসে বসে থেকে কাজ করতেছি। লাঞ্চ টাইম হয়েছে বাট আর কয়েকটা ফাইল থেকে করে একবারে উঠে নামাজ পড়ে লাঞ্চ করবো। ফাইল চেক করতেছি এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। হাতে দেখি অপরিচিত নাম্বার থেকে এসেছে। রেখে দিলাম। আবার ফোন দিলো। আবার রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার দিলো।এবার রেগে গেলাম। কাজের জন্য তাড়াহুড়া করতেছি বাট বার বার কল দিতেই আছে।

রিসিভ করে যেমনি বলবো, আপনা,,, তখনই ছোট্ট বাচ্চাটি বলতেছেঃ আততালামুআলাইতুম। বাবাই লান্ত (লাঞ্চ) কলেথো।

বাচ্চাটির কথা শুনে আমার মুখ কিছুক্ষণের জন্য হাঁ হয়েই গেলো। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়ে গেল,, না আম্মু করিনি তুমি করেছো?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললোঃ কলেথি। তুমি তালাতালি (তাড়াতাড়ি) লান্ত কলো নাহলে আমাল মামনি লাগ কলবে।

কথাটি শুনে বুকের বাঁ পাশ টা ধড়ফড় করতে লাগলো আর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। মনে হচ্ছে বাচ্চাটা আমার কোনো আপনজন। কিন্তু কে হবে? আমি তো আর সামিয়া ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করিনি।আর বাচ্চাটাকি সামিয়ার? সামিয়ার হলে তো,,,,,,না আর ভাবতে পারতেছি না।

অফিস শেষ করে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে দেখি সামিয়ার আব্বু আম্মু এসেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে রুমে এসে ফ্রেশ হতে লাগলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম। আর হ্যাঁ সামিয়ার আব্বু আম্মু আমাদের বাসায় দুই দিন থাকবে। প্রতিবারই দুই তিন দিন থেকে যায়। (EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার, লেখকঃ সাহিদ হাসান সাহি।)

রাতে ডিনার করে সকলে বসে থেকে আড্ডা দিচ্ছ এমন সময় সামিয়ার আব্বু বললোঃ বাবা আর কত দিন একা একা থাকবে? ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নেও।

আব্বুঃ হ্যাঁ সাহিদ বেয়াই কিন্তু ঠিক বলেছেন। তুমি আর কত দিন অপেক্ষা করবে? যা হওয়ার তা হয়ে গেছে এখন নতুন করে শুরু করো। তাছাড়া আমাদেরও তো নাতি নাতনির সাথে খেলাধুলা করার ইচ্ছা আছে।

আমিঃ দেখো আমি তোমাদের অনেক আগে থেকেই বলে আসতেছি আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়।আমি সামিয়ার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবোনা। তবুও কেন তোমরা বারবার একই কথা বলো।(কিছুটা রেগে)

আর আর কারো কথা না শুনে রুমে এসে সামিয়ার ছবি বুকে নিয়ে কান্না করতে লাগলাম। কেন সামিয়া তুমি আমাকে ঠকিয়ে ছেড়ে চলে গেলে। আমি তো তোমাকে ভালোবেসে গিয়েছিলাম। তার বিনিময় তুমি আমাকে এটাই প্রতিদান দিলে। দেখো আজকে তোমার বাবা মাও আমাকে বিয়ে করতে বলতেছে। কিন্তু আমি কি করে তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাবো বলো। তুমি নাহয় আমায় ধোঁকা দিয়েছিলে। তোমার মনে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে স্থান দিয়েছিলে। আমি তো আর পারবো না এই মনটা অন্য কাউকে দিতে।

পরের দিন অফিসে বসে কাজ করতেছি পিয়ন এসে বললো কে যেন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। আমি তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দিলাম। একটু পরে লোকটি ভেতরে আসলো।আর আমি মাথা নিচু করে কাজ করতেছি। মাথা তুলে লোকটা কে দেখেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম।লোকটি হলো সিহাব। যে আমার থেকে আমার সামিয়া কে কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে আমার জীবন থেকে সুখ নামক বস্তুটাকে । চেয়ার থেকে উঠে তার সামনে যায়ে শার্টের কলার চেপে ধরে বললামঃ আবার কেনো এসেছিস আমার সামনে? আমার থেকে আমার সামিয়া কে কেড়ে নিয়েছিস তবুও তোর মন ভরে নি। আবার কেন এসেছিস?( চিৎকার করে)

সিহাব আমার হাত করে কান্না করতে করতে বললোঃ প্লিজ সাহিদ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।আমি তোমাদের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে দিয়েছি।যার ফল এখন আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে।

আমি আবাক হয়ে বললামঃ মানে?

সিহাব কান্না করেই যাচ্ছে। আমি কিছু বুঝতে পারতেছি না। কি হয়েছে তার? সে এমন করতেছে কেন?আমি আবার বললামঃ কি বুঝাতে চাচ্ছিস তুই?

সিহাব কান্না থামিয়ে পিছন দিকে ঘুরে বলতে লাগলোঃ আসলে তোমার স্ত্রী সামিয়ার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

আমিঃ কি বলতে চাচ্ছিস তুই?

সিহাবঃ হ্যাঁ আমাদের মাঝে সম্পর্ক নেই। সামিয়াকে প্রথম দেখাতেই আমার মনের মধ্যে অন্যরকম ধারণা কাজ করে। এককথায় তার শরীরের উপর আমার লোভ হয়। কয়েক দিন পর সে আমার নামে রেপ কেস লিখে। নিষেধ করলেও শুনেনি। এটার রাগ এবং তার শরীরের উপর লোভ আমাকে তার প্রতি হিংস্র করে তোলে।

এরপরে সামিয়াকে রেপ করার চেষ্টা করি কিন্তু সেদিন তোমার জন্য ব্যর্থ হই। কয়েক দিন পর শুনলাম তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে। সেদিন কলেজে তাকে ঐ কথাগুলো বলেছিলাম কিন্তু কথা গুলো শুনে সে আমাকে নানা ভাবে অপমান করে। তারপরে তুমি আমাকে মেরেছিলে। সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমাদের সুখের সংসারে আমি অশান্তি সৃষ্টি করবো। দুজনকে আমি আলাদা করবো। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত টাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।

সিহাব কথা গুলো বলেই কান্না করতে লাগলো। সিহাবের উপর আমার খুব রাগ উঠলো। আমি যেই তাকে মারতে যাবো তখন সে আমার হাত ধরে বললোঃ প্লিজ তুমি আমার কথা গুলো আগে শুনো। এরপরে তুমি আমাকে যা শাস্তি দিবে তা মেনে নিবো। তোমাকে এই কথা গুলো বলার জন্য তোমাকে দুই বছর ধরে হন্ন হন্ন করে খুঁজতেছি । কারণ, তোমাকে সত্যটা না জানালে আমি পৃথিবীর বুকে খুব বড় পাপি হয়ে বেচে থাকবো।

আমিঃ হুম বল।

সিহাবঃ সেদিন আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমার নামে জরিমানা করা হয়েছিলো। সেগুলো পরিশোধ করে থানা থেকে বের হয়ে আসি আর ভাবতে থাকি কিভাবে আমি আমার প্রতিশোধ নিবো। এর ঠিক একবছর পর থানায় যায়ে তোমার স্ত্রী সামিয়ার সাথে দেখা করে মাফ চাই।সে মাফ করেও দেয়।

এরপরে তাকে বন্ধু হওয়ার অফার দেই। সে রাজি হতে না চাইলে তাকে ব্ল্যাকমেইল আর মিথ্যা কথা বলে করে রাজি করাই। আমার উদ্দেশ্য ছিলো তোমার থেকে তোমার স্ত্রীকে আলাদা করা। কিন্তু তোমার স্ত্রী আমার চক্রান্ত টা ধরতে পারে নি। তার সাথে গল্প করা কফি খাওয়া প্রায় প্রতিদিনই হতো।আর এগুলো ফটো তুলে আমার লোক তোমার ই-মেইলে পাঠিয়ে দিতো। কিন্তু বিশ্বাস করো তার সাথে আমার কোনো শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে নি।

আমিঃ তাহলে তোরা দুজনে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা বাসায় গিয়েছিলিস কেন?

সিহাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললোঃ তোমার স্ত্রী তোমাকে খুব ভালোবাসতো আর সে তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ঐ বাসাটা কিনে তোমার নামে একটা হাসপাতাল করতে চেয়েছিলো। যেখানে সে গরিবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করবে। আর বাসাটা দেখার জন্য সে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। তোমাকে নিয়ে যায়নি কারণ সে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।

সিহাবের কথা শুনে আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। সামিয়া আমাকে এতো ভালোবাসতো আর আমিই তাকে সন্দেহ করলাম ছিঃ। পরোক্ষণেই মনে পড়লো ভিডিও আর ফটো গুলোর কথা যেগুলো ছিল সিহাব আর সামিয়ার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের।

সিহাব কে বললামঃ তাহলে ভিডিও আর ফটো গুলো?

সিহাবঃ সেগুলো ছিলো এডিট করা। আমি চেয়েছিলাম ভিডিও আর ফটো গুলো তোমাকে দেখালে তুমি তাকে ভুল বুঝে বাসা থেকে বের করে দিবে আর সে আমার কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য আসবে। কারণ এখানে আমিই তার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েছিলাম।

আর আমার কাছে আসলেই আমি তাকে বিয়ে করে নিবো। এতে আমার প্রতিশোধ নেওয়াও হবে আবার তাকে দ্বারা আয় হবে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে তাকে আর দেখতে পাইনি। তাকে বিয়ে করার কথা আব্বুকে বললে আব্বু আমার কাছে সামিয়ার সম্পর্কে সব বলে দেই।আমি কি করেছিলাম তাও বলে দেই।

কারণ আমার বিশ্বাস ছিল আব্বু আমাকে কিছুই বলবে না। কিন্তু না আব্বু সেদিন এসব শোনার পরে আমাকে একটা চড় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে আর আমাকে কুলাঙ্গার সন্তান, পাপী আরো অনেক ভাষায় গালিগালাজ করে। সেখানে আমার সাথে আমার বন্ধু অর্ক আর মেহেদী ছিলো ।আমি তাদেরকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসি।

আর তাদের সাথে আলোচনা করি কিভাবে আব্বুকে মেরে ফেলতে পারবো। কারণ তাকে মেরে না ফেললে আমি সামিয়া কে বিয়ে করতে পারবো না। বন্ধুরা নিষেধ করা সত্ত্বেও আমি শুনিনি। সেদিন রাতে আম্মু নানুর বাসায় যায়। সেদিন রাতেই আব্বুর খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেই এবং রাতে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করি।

কথা গুলো বলেই সিহাব পাশে থাকা চেয়ারে বসে পড়ে।আর সিহাবের প্রতি আমার যা রাগ হচ্ছে তা বলে বুঝাতে পারবো না।

সিহাব আবার বলতে শুরু করলোঃ আব্বু মারা ফলে আম্মু খুবই ভেঙে পড়ে। তবে আম্মু জানতো না যে আমি আব্বুকে হত্যা করি। আমার দুইজন বন্ধু ছাড়া এই বিষয়ে আর কেউ জানতো না।আর এই দুই বন্ধু ছিলো আমার শেয়ার পার্টনার। আমরা তিনজন মিলে ড্রাগসের ব্যবসা করতাম। যেটা কেউ জানতো না। এমনকি আমাদের মা বাবাও না।

দিন যায় আর আম্মু আমার আব্বুর মৃত্যুর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এইভাবে কেটে যায় একবছর। আম্মু বিছানায় শুয়ে থাকতে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে যায়। তার কিছুদিন পরই আম্মুর একবার হার্ট অ্যাটাক হয়। ডাক্তার বলেছেন এই অবস্থায় যদি রুগি আর একবার হার্ট অ্যাটাক করে তাহলে তাকে বাঁচানো যাবে না। আম্মু কথা শুনতে পারতো, বুঝতে পারতো কিন্তু বলতে পারতো না। আম্মু অসুস্থ থাকায় সব সময় আম্মুর পাশে থাকতাম।

যার ফলে বন্ধুদের সাথে ব্যবসায় বেশি সময় দিতে পারতাম না। লাভের টাকা তিনভাগের একভাগ চাইলে তারা দুজন আমাকে দিতে অসম্মতি জানায়। আমি রেগে গিয়ে অর্ককে কয়েক টা চড় মারি। অর্কও রেগে আমাকে মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।আর সে আমার আম্মুকে আমার আব্বুর হত্যার কথা জানিয়ে দেই। আম্মু কথাটা শুনতে পারার সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়।( ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে)

কিছুক্ষণ থেমে আবার বলতে লাগলোঃ আমি আমার কর্মের ফল পেয়েছি। যদি তোমাদেরকে আলাদা না করতাম, তোমাদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি না করতাম তাহলে আজকে আমি আমার পিতা মাতাকে হারিয়ে ফেলতাম না। আজ আমি অনাথ হতাম না। সাহিদ তুমি আমাকে যা শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে নিবো। তবুও আমাকে মন থেকে মাফ করে দাও।

একথা বলেই সিহাব আমার পা জড়িয়ে ধরলো। আমি সিহাবকে পা থেকে তুলে দুই টা চড় মেরে কলার ধরে বললামঃ কেন করেছিস তুই এসব? দেখ আজকে আল্লাহ তোর শাস্তি নিজ হাতে দিয়েছেন।
আর কোনো দিন যেন তোকে আমার সামনে না দেখি।

আমি অফিস থেকে কোনো মতো বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম। আম্মু কিছুটা অবাক হয়ে গেল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ কি হয়ে বাবা? কি হয়েছে তোর?

আম্মুর পাশে সামিয়ার আম্মু ও বসে ছিলো।সামিয়া আম্মু আমাকে বললোঃ সাহিদ তোমার কি হয়েছে?

আমি কান্না করতে করতে বললামঃ আম্মু সামিয়া সামিয়া,,,,

আম্মুঃ কি হয়েছে?(উত্তেজিত হয়ে)

আমিঃ সামিয়া নির্দোষ। সামিয়ার কোনো দোষ ছিলো না।

সামিয়ার আম্মু আর আমার আম্মুঃ মানে?(আবাক হয়ে)

এরপরে সিহাব আমাকে যা কিছু বলেছিলো সবকিছু বললাম তাদেরকে। আমার কথা শুনে সামিয়ার আম্মু সেন্সলেস হয়ে পড়লো।
ডাক্তার আংকেল কে ফোন দিলাম। একটু ডাক্তার আংকেল চলে আসলো। চেকআপ করে বললো,, হার্ট অ্যাটাক করেছেন।

( চলবে)

? কেমন হচ্ছে জানাবেন। ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে