Destiny of Love Part-01

0
7723

#Destiny_of_Love
#PART_01
#NIshat_Tasnim_Nishi

১.
সম্পর্কের ছয়মাস পর জানলাম আমার বয়ফ্রেন্ড নিরা ফুপির আপন সন্তান!’তার মানে আমি এতদিন আমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে রিলেশনে ছিলাম?’কথাটা ভাবতেই চমকে গেলাম!আমি জানি, এ সম্পর্ক কখনোই সম্ভব নয়!আমাদের সম্পর্কে এতদিনেও আমি বিষয়টা জানতাম না,আজকেই জেনেছি বিষয়টা তাও কিছুক্ষণ আগে!

ঘন্টাখানেক থেকে কপিশফে বসে ছিলাম আমি!আমার সামনে বসে ছিলো,রিয়া !রিয়া হলো আবরারের ছোট বোন!শপিং আসার পথেই ওকে দেখলাম দোকান থেকে ড্রেস কিনতেছে,ওর সাথে দেখা হতেই আমি জোর করে টেনে নিয়ে আসলাম কপিশপে! কপি খাওয়ার ফাঁকেই ও আমাকে ওদের পুরো ফ্যামিলির ছবি দেখাচ্ছিলো,তখন ই আমার চোখ আটকে যায় একটা ছবিতে!ছবিটি আর কারো নয় আমার মায়ের! ওকে প্রশ্ন করতেই ও বিষয়টা এড়িয়ে গেলো!ওর রিয়েকশন দেখে মনে হলো ও ভুল কিছু দেখিয়ে ফেলেছে আমাকে! আমি জোরাজুরি করতেই ও বললো,–‘ ওমা,শ্রুতি আপু তুমি এটাও জানো না,উনি ভাইয়ার আম্মু!’

ব্যাস রিয়া শুধু এটুকুই বলেছে এরপর অন্য টপিকে চলে গিয়েছে! রিয়া চলে গিয়েছে মিনিট বিশেক আগে! আর আমি এখনো সেখানে বসে ওর বলা কথা ভাবতেছি!

অথচ আবরারকে আমি ওর পরিবারের কথা জিজ্ঞাস করলেই ও এড়িয়ে যেতো!আমি জোরাজুরি করতেই ও রেগে যায়।বলে,আমি যখন তোমার সাথে একটু রোমান্টিক কথা বলতে যাই তখন ই তুমি পুরো রাজ্যের কথা নিয়ে আসো।
আবরার রেগে থাকায় আমি আর প্রশ্ন করি নি, তবে প্রচন্ড কৌতুহল হয়েছিলো আমার মনে! আমি দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করবো তার আগেই ও সটান হয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো!আর আমাকে বললো,’চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে!’ ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়েই বসেছিলাম আমরা! ভ্যাপসা গরমে আধসিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম দুজনেই!সূর্যের আলো সরাসরি আমাদের উপর পড়ছিলো!রৌদ্রের উত্তাপে দুজনে ঘেমে একাকার, তবুও পরম তৃপ্তিতে বসে আমরা সেই সময় কাটিয়েছিলাম!এখনও চোখের সামনে সে দৃশ্য ভেসে উঠছে!কি সুন্দর সুখের অনুভূতি ছিলো আমাদের! কিন্তু,এখন হয়তো সব দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে যাবে! সত্যিই কি সব বদলে যাবে? মুহূর্তেই চোখে ঘন কালো মেঘ জমে গেলো! হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিলাম দুচোখের জমে থাকা অশ্রুকনা!

২.
চারদিকে কনকনে শীত,কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে রয়েছে গাছপালারা! নাম না জানা অচেনা পাখির কিচিরমিচির ভেসে আসছে জানালা দিয়ে! ব্যালকনিতে এক কাপ কফি হাতে দাড়িয়ে আছি আমি,সকালে আযানের সুমধুর সুর শুনে ঘুম টা ভেঙ্গে গিয়েছিলো!নামায আদায়ের পর আর চোখদুটো এক করতে পারি নি,সারা রাতও শান্তিতে একফোঁটা ঘুমাতে পারি নি!রাতের শেষসময় চোখদুটো লেগে এসেছিলো!ঘুম ঠিক মতো না হওয়ায় চোখদুটো ফুলে আছে,মাথাটাও কেমন ঝিম ধরে ছিলো!আমি তেমন একটা কফি খাই না তবে কফিটা নিলাম মাইন্ডের রিফ্রেশমেন্টের জন্য!

‘আমার আগুনের চাই জমে জমে,
কত পাহাড় হয়ে যায়!
আমার ফাগুনেরা দিন গোনে গোনে,
আর উদাও হয়ে যায়!
আমার আগুনের চাই জমে জমে,
কত পাহাড় হয়ে যায়!
যত পথের বাধা সব-ইতো কালো সাদা,
কবে ঠিকানা পেয়ে হবে রঙ্গীন?
চেনা নামের ই ডাকে, আমি কি পাবো তাকে?
কবে রে আসবে সে রোদেলা দিন?’

ব্যস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে গানটি গাইতে গাইতে আনমনে কফি খাচ্ছিলাম,ঠিক তখনই বেখেয়ালি ভাবে নিচের দিকে তাকাতেই আমার চোখ দুটো আটকে যায়! ‘একি? এ তো আবরার!’ পরনে ডার্ক ব্লু ডেনিম প্যান্ট,সাথে হোয়াইট শার্ট!শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা,খাড়া খাড়া চুলগুলো আগোছালো হয়ে আছে! বুকের উপর হাত দুটো ভাজ করে, কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!আবরার এখানে কীভাবে?এ নিশ্চয় আমার চোখের ভুল! হয়তো রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় নি সেজন্য এমন দেখছি!আমি আবার নিজের মতো কফিতে মনোযোগ দিলাম।আমি ভাবনাচিন্তায় এতটা মগ্ন হয়েছিলাম যে কখন যে আবরার আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে টেরই পেলাম না! আচমকা পিছনে ফিরে ওকে দেখে আমি বিষ্মিত হয়ে গেলাম!অবিশ্বাস্য চোখে ওর দিকে তাকালাম,হাত বাড়িয়ে ওকে স্পর্শ করতে নিলাম,তখনই ওর কন্ঠ শুনে হাত গুটিয়ে নিলাম!
আবরার স্বাভাবিকভাবে বললো,
–‘তোর ফোন কই?’
ওর স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে আমি খানিকটা কেঁপে উঠলাম!ও যখন অস্বাভাবিকভাবে রেগে থাকে তখন ও ঠিক এভাবে কথা বলে! আমি চুপ করে রইলাম!ও নিজেই ফোন খুঁজে নিয়ে আসলো,ফোনের স্ক্রিনের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকালো তারপর ঠাস করে ফোন টা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো!কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার দশহাজার টাকার ফোন টুকরো টুকরো হয়ে গেলো! ও প্রচন্ড রেগে চিৎকার করতে লাগলো,–‘তোরে ফোন কেনো ইউস করতে দিছি বল?তোর সাহস এত বড় কেমনে হইছে?আমার নাম্বার ব্লক রাখিস?আমার,এই আবরারের নাম্বার?চারদিন তুই আমার সাথে কথা বলোস নাই?আর না আমার খবর নিয়েছিস?তোর সাহস দেখে আমি হতবাক!ইচ্ছে করতেছে তোরে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়! ‘

কথাগুলো আমার দুইগাল চেপে বলতে লাগলো!ও এত জোরে চেপে ধরেছে যে আমার গাল ব্যাথা করতেছিলো! আমি হাত দিয়ে ওর হাত সরাতে সরাতে বললাম–‘কী করছেন?ছাড়ুন,আমি ব্যাথা পাচ্ছি!’

—‘ও এখন আমার স্পর্শও ভালো লাগে না তাই না? নতুন নাগর পেয়ে গেছিস না? ডাক তোর আশিক কে আমিও দেখবো ওর কত বড় বুকের পাঠা যে ও আবরারের জিনিসের দিকে নজর দেয়!’

আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম,

–‘ছিঃ,আপনি এসব কী বলছেন?’

উনি আমার মুখ টা চেপে উনার মুখের সামনে এনে বললেন,,
—‘কেনো এখন, ছিঃ বলছিস কেনো?বল,বল?’

আমি চোখদুটো বন্ধ করে ফেললাম!উনার সাথে তর্ক করার বিন্দু পরিমান ইচ্ছাও নেই!আমি জানি উনি রেগে গিয়েছেন তাই এসব বলতেছে!সত্যি কথা হলো,আমাকে আমার থেকে ভালো উনি চিনেন,আর উনি খুব ভালো করেই জানেন যে আমি কখনো অন্য ছেলের সাথে কথা পর্যন্ত বলবো না!

–‘কি হলো চোখ বন্ধ করলি কেনো?তাকা আমার দিকে!এখন,আমার দিকে তাকাতেও ভালো লাগে না,তাই না?’

আমি চেঁচিয়ে বললাম,–‘না,লাগে না!আমার আপনাকে ভালো লাগে না।শুনেছেন আপনি?’

উনি এবার আমায় ছেড়ে দিলেন,আমার দিকে শীতল চোখে তাকালেন!

ওকে চুপ করে যেতে দেখে আমি শান্ত গলায় বললাম–‘আই ওয়ান্ট ব্রেকআপ!আপনার সাথে কোনেভাবেই রিলেশন সম্ভব নয়! হাফ-সেন্টিমেন্টাল মানুষের সাথে রিলেশন কোনোভাবেই সম্ভব নয়! এ কেমন সম্পর্ক যেখানে বিশ্বাস ই নেই?একবার ফোন না ধরলেই আমার নামে শতশত বাজে কথা বলতে দুবার ও ভাবেন না!’ ভালোবাসা আর বিশ্বাস ঘুড়ি আর সুতোর মতো! ঘুড়ির সুতো যেমন ছিড়ে গেলে ঘুড়ি আর চলে না,ঠিক তেমন বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে ভালোবাসাও অচল হয়ে যায়!’ আমি অনেক ভেবে দেখেছি,আমি পারবো না আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে!’

বুকে পাথর রেখে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে আমি আবরারের দিকে তাকালাম!ওর চোখে মুখে তখন হাজারে বিষ্ময় আর অসহায়ত্বের ছাপ। ও চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,হয়তো কথাগুলো ওর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে!
৩.

আবরার অসহায়ের মতো আমার চোখের দিকে তাকালো,গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,–‘এই,শ্রুতি এসব কী বলছো তুমি?তুমি জানো না,তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে থাকতে পারি না!তোমাকে একদিন না দেখলে দুচোখের পাতা এক করতে পারি না।আর সেখানে তুমি চারদিন যোগাযোগ করো নি,তাহলে ভাবো আমার অবস্থা কেমন হয়েছে? আচ্ছা,সরি আমি আসলে রেগে গিয়েছিলাম সেজন্যই বকাবকি করেছিলাম!এবার তো ব্রেক আপ করবে না, তাই না?’

–‘হোয়াট দ্যা হেল,আমি কি বাচ্চা নাকি যে সরি বললে সব ঠিক হয়ে যাবে!আমি অনেক ভেবে দেখেছি আপনার সাথে কোনোভাবেই রিলেশন সম্ভব না।’

কথাটা বলে আমি নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখলাম,কিন্তুু্ আবরার মানলো না!ও বারবার বলতে লাগলো ও আর দ্বিতীয়বার এমন করবে না, ও আমাকে এখনই দ্বিগুন দামের ফোন কিনে দিবে।আমি যা বলবো তাই করবে,কিন্তুু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল রইলাম।কারন এটাই সুযোগ আবরারের সাথে রিলেশন শেষ করার। ও হয়তো ভাবছে ওর এসবের জন্য ব্রেকআপ চাইছি,কিন্তুু বিষয়টা মোটেও এমন নয়!ও আমাকে মেরে রক্তাক্ত করলেও ব্রেকআপ চাইতাম না,হয়তো কয়েকদিন কথা বলতাম না কিন্তুু ব্রেকআপ তাও সামান্য কারনে কখনোই না! আসল কথা হলো, আমার পরিবার কখনোই এমন সম্পর্ক মানবেন না!

আচমকা আবরার আমার পায়ের সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়লো,আমার দুই হাটু জড়িয়ে অশ্রুভেজা কন্ঠে বললো,–‘আমি সত্যি বলছি, জীবনেও এমন করবো না। তুমি যা বলবে তাই করবো।তুমি বলো কী করবো?’

আমি সাথে সাথে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম,দুফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো চোখের কোণ দিয়ে।আবরারকে কীভাবে বোঝাবো সমস্যা টা কোথায়?আমরা চাইলেও রিলেশন টা সম্ভব না।কোনোভাবেই না, কারন এতে কয়েকজনের পুরোনো ক্ষত তাজা হয়ে উঠবে,দেখা দিবে দুপরিবারের কিছু মানুষের মধ্যে অশান্তি!আর সেটা আমি একদম ই সহ্য করতে পারবো না,কিছুতেই না!ভালোবাসার সম্পর্কগুলো কেনো এমন হয়?কেনো এত বাঁধা আসে এ সম্পর্কে?কেনো পানির মতো সহজ হয় না?

আমার ভাবনাচিন্তার মাঝেই আবরার হেসে উঠলো,আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম।ওর হাসি অন্যকিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে