#coffee & vanilla
#part_10
#Arohi_Ayat
”
– রাইসা! রাইসা! উঠ কলেজ যাবি না!! ওই উঠ!
আমি এক লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম লাইসার ডাকে! লাইসা বলল
– তুই এখনো এইভাবে ঘুমাচ্ছিস? কলেজে কে যাবে??
আমি উঠে কিছু না বলে ওয়াশ্রুমে চলে গেলাম৷ লাইসা বসে বসে বাহির থেকেই চিল্লিয়ে বলছে
– মানে কি আমি বুঝলাম না! তুই এমন কেন? এখনিই আলসেমি করিস! আর কয়েকদিন পরে না তোর বিয়ে পরে কি শশুর বাড়ি গিয়েও এমন করবি? হুহ! তোকে একদিনেই বাড়ি থেকে বের করে দিবে!!
আমি ব্রাশ করতে করতে ওয়াশ্রুম থেকে বের হয়ে বললাম
– লাইক সিরিয়াসলি লাইসা!! তুই বিয়ে হওয়ার আগেই এইভাবে বলছিস? তাছাড়া আমি জানি আমার শশুর বাড়ির সবাই অনেক ভালো সবাই আমাকে ভালবাসে!
– আচ্ছা,, আগে কলেজে চল তোর জন্য আমারও লেট হয়ে যাচ্ছে!
আমরা দুইজন কলেজের জন্য বের হলাম৷ একটা রিকশা নিয়ে দুইজন কলেজ যাচ্ছিলাম৷ সামনে রাস্তা ভাঙা তাই রিকশা থেকে নেমে হেটে যেতে হলো৷ হঠাৎ দেখলাম আমার পাশ দিয়ে একটা ছেলে গেলো আর ছেলেটার পিছনে পিছনে একটা মেয়ে ছেলেটাকে বলছে
– আচ্ছা,, সরি! আর হবে না! দাড়াও!
লাইসা মাথা ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি সামনের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসতে হাসতে যাচ্ছিলাম৷ লাইসা ভ্রু কুচকে বলল
– কিরে বাবা? আজব! আর তুই হাসছিস কেন?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– না এমনেই!
আমরা দুইজন কলেজের গেটের সামনে যেতে দেখলাম আরহান ভাইয়া আর রিতু দাঁড়িয়ে আছে৷ রিতু হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে আর আরহান ভাইয়াও ওর পাশে দাড়িয়ে একটু মুচকি হাসছে আবার দুইজনে ফুসুরফুসুর করছে৷ আমি এইবারো একটু হেসে কলেজের ভিতরে চলে গেলাম৷ আর লাইসা আবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আরহান ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলল
– আমি আসলে বুঝলাম না! রাইসা কেমন জানি ওকে আমি কখনোই বুঝবো না! একসময় রেগে থাকে একসময় রুড থাকে আর এখন আবার যাই দেখে খালি হাসে আজব!
রিতু বলল
– তোর বুঝতে হবে না! আগে তোর লাইফে কেউ আসুক তারপর এমনেই বুঝে যাবি!
লাইসা আর কিছু না বলে কলেজের ভিতরে গেলো৷ আমি কলেজের মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলাম,, লাইসা আমার সামনে এসে বলল
– তুই আবার এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
– দেখ আজকে কেন যেন সারা কলেজে মেলা মেলা মনে হচ্ছে!
লাইসা ভ্রু কুচকে বলল
– এইরকম ত সবসময়ই মনে হয়!
– হ্যা কিন্তু আজকে কেন যেন ভিন্ন ভিন্ন লাগছে,,ওই দেখ লিজা আপু এত দিন আবির ভাইয়াকে ছাড়া বেচারি কত দুঃখী ছিল সারা দিন শুধু চুপচাপ বসে থাকতো,,আবার দেখ আরহান ভাইয়াও যখন রিতুর সাথে ব্রেকাপ হয়েছিল তখন কত কষ্টে ছিল!
– হ্যা তো? তুই এইসব কথা বাদ দিয়ে কি ক্লাসে যাবি? লেট হয়ে যাচ্ছে! আর তুই এইসব কথা কেন বলছিস? তুই ত এখন আর অসম্পূর্ণ না!!
আমি লাইসার দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় চাপর মেরে বললাম
– ধুর!
তারপর আমরা ক্লাসে গেলাম৷ ক্লাস শেষে,,, লাইসা আর আমি ক্লাস থেকে বের হতে লাইসার কল এলো৷ লাইসা কল রিসিভ করে কথা বলে আমার দিকে তাকালো৷ আমি বললাম
– কি হয়েছে?
– ধুর আমার ভাল লাগে না! বাবা বাসায় যেতে বলেছে!
– কেন?
– আমি তোকে বললাম না আজকে আমাকে দেখতে আসবে!
আমি হেসে বললাম
– ভালো ত তো যা! আমার বিয়ে হয়ে গেলে ত তুই একা থেকে যাবি এর থেকে তুইও বিয়ে করে ফেল!
– ধুর! আচ্ছা আমি বাসায় যাই একটু দেরি হলেই আমার বড় বোন আর বাবা মিলে আমাকে ধরবে!!
এটা বলে লাইসা চলে গেলো৷ আমি কলেজের গেট থেকে বের হতে একটা মুচকি হাসি দিলাম৷ আমার সামনে দাড়ানো ব্যক্তিটা আমার কাছে এসে বলল
– চল!
আমি মুচকি হেসে ওর সাথে গেলাম৷ আমরা দুইজন গিয়ে একটা ক্যাফেতে বসলাম৷ উনি আমার পাশে বসে বলল
– তো বিয়েতে খুশি ত?
আমি কিছু বললাম না৷ উনি আবার বলল
– ভালবাসার মানুষকেই ত পেয়েছিস বিয়েতে ত খুশি হওয়ারই কথা!
– এটার থেকে আমার কাছে বড় হলো আমার বাবা আমাকে বলেছে এই জন্য আমি বেশি খুশি!
– আচ্ছা বল কি খাবি?
– কফি উইথ ভ্যানিলা!!
উনি মুচকি হেসে অর্ডার দিল৷ উনি আবার বলল
– আগে ত কফি পছন্দ করতি না আর এখন?!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– এখন ত কফির সাথে ভ্যানিলাও আছে তাই খাই স্বাদটা অনেক ভালো লাগে!
উনি হেসে বলল
– লে তোর কফি এসে পরেছে!
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি উনি বলল
– আরে এই কফি না ওইযে,,!
আমি ক্যাফের দরজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম৷ হাসিব ভাইয়া বলল
– তাহলে কি এখন আমি যাবো?
ফারহান এসে আমাদের সাথে বসে বলল
– তোমার ইচ্ছে হলে থাকতে পারো আমাদের কোন সমস্যা নেই!
– আরে না নিলা হয়ত আমার জন্য অপেক্ষা করছে! সো আমি যাই!
আমি বললাম
– ঠিক আছে পরে দেখা হবে!
ভাইয়া চলে গেলো৷ এটা হলো আমার খালাতো ভাই হাসিব! হাসিব ভাইয়া চলে যেতে ফারহানের দিকে তাকালাম৷ ফারহান আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি একটু রেগে বললাম
– তো আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছেন?
– কবে?
– যে আপনি এখানকার কিছু চিনেন না তাই না? আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনি কিছু চিনেন না আর ওইদিন যে আমি আপনাকে ঘুরিয়ে ছিলাম ওইসময় ও আপনি সব চিনতেন!
– তোমাকে কে বলল?
– কালকে রাতে রুমাইশা বলেছে!
– ওহ্ ত এই রুমাইশা কালকেও তোমাদের বাসায় গিয়ে আমার নামে বলে এসেছে!
– জিনা,, রুমাইশা আমার ফ্রেন্ড আমাদের বাসায় ত যাবে আর আমাকে বলবে না যে আপনি কেমন! আচ্ছা আগে বলেন আপনি মিথ্যা কথা কেন বলেছেন?
– হুহ! মিথ্যা কথা না বললে তোমার সাথে ঘুরতাম কিভাবে টাইম স্পেন করতাম কিভাবে!?
– ওওও ত এই জন্য?! আপনি আসলেও পাগলই!
ওয়েটার আমার অর্ডার নিয়ে এলো কফি এন্ড ভ্যানিলা৷ আমি এক চুমুক দিয়ে তারপর ফারহানকে বললাম
– আপনি এই কফির মত তেতো একেবারে!
ফারহান বলল
– আর তুমি এই ভ্যানিলা তাই না?! যার জন্য এখন আমি মিস্টি হয়েছি!?
– হুহ! আমাদের লাইফটাই কফি এন্ড ভ্যানিলার মত! আজগুবি!
– কেন আমাকে তোমার আজগুবি মনে হয়? আর এখন তোমার নিজের লাইফকেও আজগুবি মনে হয়?
– হ্যা,,সেই প্রথম থেকে শুরু হয়েছিলো আমাদের কাহিনী! সেই ৫দিন থেকে এর পরে কত কিছুই না হয়েছে! আর আজকে দেখেন আমরা দুইজন এখানে বসে আছি! মাঝে দিয়ে আমাকে কত মানুষই না বলেছে যে আমি বেহাইয়া ছেছড়া আর অনেক কিছু আসলে ওরা খারাপ কিছু বলে নি! আমি বেহাইয়া হয়ে ছিলাম মাঝখান দিয়ে আপনার জন্য,, সবাই জানে আমি কেমন কিন্তু মাঝখান দিয়ে আমাকে এমন দেখে সবাই বলেছে আমি ছেছড়া এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি আপনার পিছনে এই জন্যই ঘুরেছিলাম কারণ আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম নাহলে এত সোজা না আমাকে কারো পিছনে ঘুরানো! আর হ্যা আমি যাকে ভালো বাসি তার জন্য আমার যতই বেহাইয়া হওয়া লাগুক যতই ছেছড়া হওয়া লাগুক মানুষ আমাকে যাই বলুক কিন্তু আমি তাকে পাওয়ার চেষ্টা ত করবো! আর তখন আপনিও আমাকে ভুল বুঝেছিলেন আর আমিও আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম এই ভুল বুঝা বুঝিই ত বড় সমস্যা!! আর ওইদিন যদি আপনি আমাকে এয়ারপোর্টে না আটকাতেন তাহলে হয়তো আমাকে আর দেখতে পারতেন না আর না আমি আপনাকে!!
– ওইদিন ত আমি আটকানোর পরেও তুমি চলে এসেছিলে! আমি কখনো এইভাবে কাউকে আটকাই নি ওইদিন অনেক সাহস করে তোমাকে বলেছিলাম কিন্তু এরপরেও যখন তুমি চলে গেলে এরপর রুমাইশাই সেই ব্যাক্তি যার জন্য আজকে আমারা এইখানে আর কয়েকদিন পর আমদের বিয়ে! রুমাইশা তোমার বাবার সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ে ঠিক করে দেয় আর আমরা ত কিছু জানতামই না! রাইসা!!
– হুম!
ফারহান দাঁড়িয়ে গেলো৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ ফারহান হঠাৎ চিল্লিয়ে সারা ক্যাফেতে বলল
– রাইসা!!! এইবার ৫দিন না ৭জন্মের জন্য আমার বউ হবে???
আমি এখনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ তারপর আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম আমি বললাম
– কি করছেন?
– তুমি শুধু এন্সার দাও!?
– না! এইবার আমি আপনার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে পারবো না!?
– কেন?
সারা ক্যাফের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি বললাম
– ওইবার ৫দিন পরে ত আমাকে ছেরে চলেই গিয়েছিলেন এইবারও যদি চলে যান?!
– এইবার কোথাও যাবো না! আর গেলেও তোমাকে নিয়েই যাব নিজের সাথে!
আমি ভাবার ভান করে
– হু,,,,,,,,
ফারহান আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে বলল
– আসো তুমি আমার সাথে!
এটা বলে আমাকে ক্যাফের থেকে নিয়ে গিয়ে ওর সাথে গাড়িতে বসিয়ে দিল৷ আমি বললাম
– কি?
ফারহান আমার সামনে এসে আমার ঘারে জোরে কামর দিয়ে দিল৷ আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে বললাম
– আজব!
– দেখো লাল দাগ হয়ে গেছে এটা হলো চিহ্ন যে তুমি এখন থেকে আমার!!
সমাপ্ত,,,,,,,,,,
Eitai ki last part