#coffee & vanilla
#part_8
#Arohi_Ayat
”
ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান৷ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মুখে কোন এক্সপ্রেশন নেই৷ এখন সন্ধ্যা বেলা আকাশটা আরেকটু পরে কালো হয়ে যাবে৷ একটু পর ফাহানের একটা কল এলো৷ রুমাইশা কল করেছে,, ফারহান কল রিসিভ করে কথা বলে ফোন রেখে চোখে সান গ্লাস লাগিয়ে দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে তারপর গাড়ির সামনে গেলো৷
বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিল রুমাইশা৷ ফারহান ভিতরে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো৷ দেখলো রাইসা আর আরহান বসে আছে সাথে আরেকটা মেয়ে আছে৷
আমরা সবাই কলেজ থেকেই এখানে একটা ক্যাম্পে এসেছিলাম৷ কালকেই এসেছি সবাই৷ যখন শুনেছি আমরা লন্ডন যাচ্ছি তখন আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না,,, লন্ডন যাচ্ছি এই জন্য না আমি সেখানে গিয়ে ফারহানকে দেখতে পারবো এটার জন্য! ১মাস ২২দিন হয়ে গেছে আজকে রুমাইশার বিয়ের৷ এত দূর লন্ডন যখন আসছি বেস্ট ফ্রেন্ড রুমাইসার সাথে দেখা করবো না এমন হয় নাকি? কালকে এসেছি আর আজকেই রুমাইশার বাসায় চলে এসেছি ওর সাথে দেখা করতে৷ আমি আমার সাথে আরহান ভাইয়াকে নিয়ে এসেছি আর সাথে আরেকটা মেয়ে হলো ওইযে আরহান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড রিতু মানে এক্স গার্লফ্রেন্ড যার সাথে রুমাইশার বিয়ের সময় ব্রেকাপ হয়েছিল৷ আজেক সকালে আরহান ভাইয়ার সাথে আমি ঘুরতে বেরিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের সাথে এই রিতুও বেরিয়ে গেছে৷ আমি এইভাবেই এই রিতুকে আগের থেকে দেখতে পারি না তাই আরহান ভাইয়ার হাত ধরে আরহান ভাইয়ার সাথে মজা করে ওকে জালানোর জন্য এমন করছিলাম ওর এই জলে পুরে যাওয়া ফেসটা দেখতে ভালোই লাগছিলো৷ আর এখন রুমাইশার বাসায় আসার সময় জানি না কেন হার্ট বিট অনেক বেরে গেছিলো এটা ভেবে যে আজকে আমি আবার ফারহানকে দেখতে পারবো৷ কিন্তু বাসায় এসে দেখলাম ফারহান নেই! আমি আরহান ভাইয়া আর রিতু সোফায় বসেছিলাম রুমাইশার সাথে কথা বলছিলাম তখন হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠতে রুমাইশা গিয়ে দরজা খুলে দিতে দেখলাম ফারহান এসেছে আমার হার্ট বিট আবার দ্রুত চলছে মনে হচ্ছে এখনি কেদে দিব৷ আমি ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছি দেখলাম ফারহান আমার দিকে একপলক তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷
আমরা এখানে রাতে ডিনার করে তারপর আবার চলে যাবো৷ আমাদের সাথে লাইসাও এসেছে কিন্তু ওর নাকি একটু খারাপ লাগছে তাই লাইসা আমাদের সাথে এখানে আসে নি৷ আরহান ভাইয়া আর রিতু সোফায় বসে আছে আর রুমাইশা খাবার রেডি করছে৷ আমি সারা ঘর ঘুরে দেখার পর রুমাইশাকে বললাম
– বাবাহ! এভাবেই ত তোদের নিজেরি বাংলাদেশে এত বড় ভিলা আবার এখানে এসেও এই তাজমহল এ বসবাস করছিস ভালোই মাজেমে হ্যা!!
রুমাইশা আস্তে করে আমাকে বলল
– দেখ তুইও আবার আমার সাথে এখানেই থেকে যাস কি না!
আমি রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বললাম
– যাহ! রুমাইশা প্লিজ এইসব কথা বলিস না!!
রুমাইশা বলল
– কেন তুই চাস না? আচ্ছা ইদানিং দেখছি তুই আরহান ভাইয়ার সাথেই সারা দিন ঘুরছিস! যে কোনো সময় তোকে কল দিলেই তুই বলিস আরহান ভাইয়ার সাথে আছিস! মানে কারণটা কি?
আমি আরহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
– দেখ তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না,, তুই আমি অনেক আগে থেকেই ভাইয়াকে ভাইয়াই মানি! কিন্তু একটা কথা বলবো ভাইয়া অনেক বেশি ভালো যে মেয়ে তাকে পাবে সেই মেয়ে অনেক লাকি হবে অনেক লাকি!!
এটা বলে আমি রুমাইশার দিকে তাকালাম দেখলাম রুমাইশা চুপ করে তাকিয়ে আছে৷ আমি ভ্রু কুচকে পিছনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম৷ দেখলাম ফারহান দাঁড়িয়ে আছে৷ ফারহান কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আমার দিকে হাত বারিয়ে বলল
– হ্যালো! আমাকে মনে আছে ত আমি ফারহান! তোমার নাম যেন কি ওহ্ রাই,,রাইসা রাইট?!
আমি অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আস্তে করে আমার হাত বারালাম৷ ফারহান আবার বলল
– ওহ তো হঠাৎ এইভাবে লন্ডন আসা হলো কি করে তোমার?
ফারহানের কথা গুলো শুনে অবাক হচ্ছি এমন ভাবে কথা বলছে যেন সে আমাকে চিনে আগে থেকে কিন্তু আমাদের মাঝে তেমন কিছু হয় নি! আর আজকে সে আমাকে আবার দেখেছে তাই ভদ্রতার খাতিরে কথা বলছে! আমি সেই অবাক চেহারা নিয়েই শান্ত ভাবে বললাম
– ক,,,কলেজের ক্যাম্পের জন্য এসেছি এখানে!!
– ওহ! ভালো!
এটা বলে চলে গেলো৷ আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর রুমাইশার দিকে তাকালাম৷ রুমাইশা কি বলবে সে জানে না তাই আমাকে বলল
– যা তুই গিয়ে বস!
আরহান ভাইয়া হয়তো দেখেছে তাই আমার হাত ধরে আমাকে তার সাথে বসিয়ে দিল৷ আমি চুপচাপ বসে আছি এইবার৷ আরহান ভাইয়া আমাকে বলল
– চুপ করে এখানে বসে থাক! আর এই ফারহানের সামনে যেতে হবে না!
আমি একবার মনে মনে ভাবছি ফারহান এমন করলো কেন আবার ভাবছি হয়তো ও সবার সামনে আমার সাথে কথা বলতে চায় না তাই হয়তো পরে কথা বলবে আমার সাথে৷ ডিনার করার সময় আমারা সবাই একসাথে টেবিলে বসলাম কিন্তু ফারহান বসলো না বলল পরে খাবে! যাই হোক আমরা খেতে বসলাম আর ফারহান সোফায় বসে আছে৷ আমি একটু পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি আচ্ছা ওর মাথায় কি চলছে? ও কি আমাকে দেখে খুশি হয় নি? ওর সাথে কথা বলতে হবে!খাওয়া শেষে আরহান ভাইয়ার কল এলো৷ আরহান ভাইয়া কল রিসিভ করে এসে বলল
– রাইসা চল! অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে!
রুমাইশা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– রাইসা! যত দিন এখানে আছিস তুই আমার সাথে এইখানে থাক!
আমি কিছু বলবো তার আগেই আরহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল
– না,,না আমরা ক্যাম্পের জন্য এসেছি ও এখানে থাকলে হবে না! রাইসা আমার সাথেই যাবে! আর আমরা যত দিন আছি আমাদের ত দেখা হবেই! চল রাইসা!
পিছনে ফারহান ফোনের মধ্যে ঢুকে ছিল আমি পিছনে তাকাতে দেখলাম ফোন হাতে নিয়েই আরহান ভাইয়ার কথা শুনে ফারহান কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে রুড চেহারা নিয়ে! আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমি রুমাইশাকে বায় বলে আরহান ভাইয়ার সাথে চলে গেলাম৷ দরজার সামনে এসে রুমাইশার সাথে একটু কথা বলছিলাম তখন ফারহানের দিকে তাকালাম কিন্তু এইদিকে একবারও তাকাচ্ছে না দেখলাম কার সাথে ফোনে কথা বলছে! আমি এইবার আর ওর দিকে তাকালাম না এইবার মনে হচ্ছে ওর যদি সত্তিই আমার উপর মনযোগ না থাকে তাহলে ভালো কথা আমিও যাই এখান থেকে আমি কেন বার বার ওর দিকে তাকাবো! আরহান ভাইয়া বলল
– রাইসা চল!!
আমি খেয়াল করলাম রিতু আরহান ভাইয়ার হাত ধরতে যাবে তার আগেই আমি গিয়ে আরহান ভাইয়ার হাত ধরে রিতুর দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলাম হুহ!! তারপর আমরা সাখান থেকে চলে গেলাম৷ রুমাইশা দরজা বন্ধ করে দেখলো ফারহান ফোন কানে নিয়েই দারিয়ে তাকিয়ে আছে দাত কটমট করে৷ দরজা বন্ধ করতে ফারহান চলে গেলো সেখান থেকে রুমাইশা বলল
– ফারহান!!!
”
পরের দিন,,,,,
সকাল সকাল রুমাইশার ফোন এসেছে আরহান ভাইয়ার কাছে৷ ভাইয়া এসে আমাকে বলল
– রাইসা! রুমাইশা কল করেছিল বলেছে আজকে নাকি ওর হাসবেন্ড এর বার্থডে! তাই আজকে রাতে নাকি ওদের বাসায় পার্টি আছে!
আমি অবাক হয়ে বললাম
– ফয়সাল ভাইয়ার বার্থডে!
তারপর আমি একটু ভেবে সাথে সাথে বললাম
– আচ্ছা ভাইয়া তুমি কি আমাকে একটা হেল্প করবে! আজকে রাতে পার্টিতে গেলে একটু আমার সাথে couple হওয়ার এক্টিং করতে পারবে!
আরহান ভাইয়া কোমরে দুই হাত গুজে বলল
– কেন? ফারহানকে দেখানোর জন্য? তুই কি দেখিস নি আজকে ফারহান কেমন বিহেভ করেছে যেন তোকে চিনেই না! তুই এমন বার বার ওর পিছনে কেন লাগছিস যখন ও তোকে কোন দামই দিচ্ছে না!
– না ভাইয়া এমন কিছু না,,, হয়তো ফারহান সবার সামনে আমার সাথে কথা বলতে চায় নি সবাইকে এটা দেখাতে চেয়েছে যে ও আমাকে চিনে না!
– রাইসা তুই পাগল হয়ে গেছিস!! দেখ এমন বেয়াইয়া দের মত ওর পিছনে ঘুরে ওকে এইভাবে দেখিয়ে তুই কি করবি? অকে jealous করে তুই কি করবি?
আমি কিছু বলবো কোথা থেকে যেন এই রিতু এসে বলল
– লিসেন! আরহান আর আমার আবার মিল হয়ে গেছে! সো প্লিজ এখন আমার বয়ফ্রেন্ড থেকে দূরে থাকবে!
আমি রেগে রিতুকে কিছু বলবো তার আগে লাইসা এসে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে গেলো৷ লাইসা আমাকে বলল
– প্লিজ রাগ করিস না! রিতু ত আরহান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ও ত বলবেই! আচ্ছা তুই বল কালকে কি হয়েছে? ফারহান তোকে চিনে নাই মানে?
– আর কি বলতাম! আমার এখন ফারহানের উপরই জিদ লাগছে! কালকে এসে আমাকে কি বলে “হ্যালো,, আমাকে মনে আছে ত আমি ফারহান” মানে এমন ভাব করলো যেন ও আমাকে ভুলে গেছে! আর আমিও ওকে ভুলে গেছি! আবার ওমন ভাব ভিতরে যেটা আমি বাংলাদেশে দেখি নি ওইখানে আমার সামনে যেমন ভাবে ছিল আর এইখানে এমন ভাব! আমি জানিস কি ভেবেছিলাম এত দিন পর আমাকে দেখে হঠাৎ চমকে যাবে তারপর দৌড়ে এসে আমাকে জোরিয়ে ধরে বলবে আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি!!!
লাইসা আমার মুখের সামনে এসে বলল
– ও হ্যালো! এইসব শুধু মুভিতে আর নাটকে হয়! স্বপ্ন থেকে বের হয়ে রিয়েল লাইফে ব্যাক কর!!
”
রাতে,,,,,
লাইসা আমি আরহান ভাইয়া আর রিতু পার্টিতে এসেছি৷ এই রিতু আজকে যে আরহান ভাইয়ার হাত ধরেছে এমন ভাবে যেন কোন বীরশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাও এসে ছারাতে পারবে না! এই রিতুর চেহারা দেখেই রাগ লাগছে! আর লাইসা বারবার আমাকে বলছে চিল ইয়ার!! ঠান্ডা হ! পার্টিতে এসেই দেখলাম রুমাইশা,, ওর সাথে কুশল বিনিময় করে পরে ফয়সাল ভাইয়াকে যেয়ে বার্থডে উইশ করলাম৷
– হ্যাপি বার্থডে জিজু!!
– থ্যাংক্স!
এটা বলে পকেট থেকে ফোন বের করে কল রিসিভ করে ওইদিকে চলল! আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ তারপর রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বললাম
– মানে কি? এটাই তোর হাসবেন্ড!
– ও এমনিই! প্লিজ মাইন্ড করিস না!
আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম আর আমি ফারহানকে বারবার এইদিক ওইদিক খুজছিলাম৷ হঠাৎ পাশে তাকাতে দেখলাম ফারহান! দেখে আমি নিজেই ক্রাশ খেয়েছি৷ আমি ফারহানের দিকে তাকিয়ে ভাবছি ও আল্লাহ আমি কত লাকি এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড! শুধু আমি না সবার চোখই ফারহানের দিকে পার্টির সব মানুষ! কিন্তু হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে কোন একটা অসভ্য মেয়ে যেন এসে ফারহানে হাত জোরিয়ে ধরে ফারহানের পাশে দাড়ালো! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি৷ আমি তারাতাড়ি রুমাইশাকে জিজ্ঞেস করলাম
– এই মেয়ে কে?
– এটাই ত মিতিকা!!!
– মানে কিিিি? এই মেয়ে তাহলে এখানে কি করছে তাও আবার ফারহানের সাথে?
রুমাইশা আমতা আমতা করে বলল
– আব,,,আমার মনে হয় ওরা আবার রিলেশনে গেছে!!!
এটা শুনে আমি এখন কি বলবো বুঝতে পারছি না৷ আমি রুমাইশাকে বললাম
– কিন্তু তুই ত বলেছিলি এই মেয়ে ভালো না! তাহলে ফারহান আবার ওর সাথে রিলেশন এ গেছে কেন??
– দেখ রাইসা! সরি কিন্তু এতে আমি কি করতে পারি ফারহানের নিজের ইচ্ছা ও যার সাথে ইচ্ছা রিলেশনে যাবে এতে নিশ্চয়ই আমার কিছু করার নেই!!
চলবে,,,,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💜✨)