blind love পর্ব ৪

0
2873

#Blind_Love পর্বঃ৪

–পলি….ভালোবাসার জন্য আমি কি করেছি দেখতে চাও?কথাটা বলে পলির সামনে থেকে সরে গেল আইরিন।
পলির মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজাটা কুচি কুচি করে কেটে ফেলছে।যে মেয়ের গায়ে কোনদিন ফুলের টোকা দেয় নি সে আজ তার সামনে আধপোড়া আর রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।
এসব কিছু এই মহিলার জন্য হয়েছে।একে কিছুতেই ছাড়বে না।
পলি তার বাঁধন খুলতে চাইলো। ক্রোধে তার চোখ বের হয়ে আসতে চাইছে।হাত-পা নাড়াচাড়া করছে।
পলি অনুভব করলো তার গায়ে সুচ ফুটেছে।সে হাতে-পায়ে অসাড়তা অনুভব করছে।চাইলেও নড়তে পারছে না।
বেশ আয়েশ করে পলির সামনে বসল আইরিন। তারপর সামনে ঝুঁকে বললো
–সাকসমিথোনিয়াম ক্লোরাইড নামটা আশা করি তোমার মনে আছে?তোমার শরীররে এটা ২.৫মিলিগ্রাম ইঞ্জেক্ট করা হয়েছ।
–ওম…..ওমমম..ম…ম.. (পলি অনেক চেষ্টা করছে একটু নড়াচড়া করার জন্য কিন্তু পারছে না। )
–লাভ নেই। আর কিছুক্ষণের মধ্যে তোমার ঘাড়ের নিচে সব প্যারালাইজড হয়ে যাবে।তোমার সাথে কেন এটা করছি জানো?শুধু তোমার যন্ত্রণা মাখা মুখ দেখবো বলে।কিছু বলতে চাও?
আইরিন পলির মুখের টেপটা খুলে দিলো।
— আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও ওর খুব কষ্ট হচ্ছ। তুমি আমকে মেরে ফেলো।
–ওফ!!তোমার কথা আমার কানে কাঁটার মতো বিঁধছে। (বলেই একটা ছুরি দিয়ে ঘ্যাঁচ করে পলির জিহ্বাটা কেটে ফেললো আইরিন)
কাটা জিহ্বাটা নিচে পড়ে দুবার লাফ দিলো। গলগল করে রক্ত বেরিয়ে এল পলির মুখ থেকে।
–অ্যা… অ্যা…(আর কোন শব্দ রের হচ্ছে মা পলির মুখ থেকে)
–দেখি তোমার কিসে বেশি কষ্ট হয় নিজের ব্যাথাতে না মেয়ের যন্ত্রণায়?
–আপনি একটা মানুষিক রোগী।(ক্ষীণ একটা কণ্ঠ শুনে আইরিন পেছনে তাকিয়ে দেখে তোয়া’র জ্ঞান ফিরে এসেছে)
–তোমার মাও তাই বলতো।অবিকল মায়ের মতো হয়েছো।দেখো দুজনের গায়ে সামান্য গরম পানি ঢেলেছি তাতেই তোমাদের জ্ঞান ফিরে এসেছে।

–মা আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না হলো তোমার?(দরজা খুলে ফারাবি জিজ্ঞেস করলো)
–বাবা চলে এসো।
ফারাবি ভেতর এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।সব দেখলো।কিন্তু কোন প্রশ্ন করলো না। কারণ প্রশ্ন করাটা সে শিখে নি।তাই নিজের কাজে মন দিলো।
আইরিন নিজের আর পলির চেয়ারগুলো এমনভাবে সাজালো যাতে সে পলিকে আর পলি তোয়া’কে দেখতে পায়।
এদিকে যখন লোহার আলপিনগুলো গরম হয়ে লাল হয়ে এলো।তখন ফারাবি তোয়া’কে উপুর করে শুইয়ে ওর পিঠে সেগুলো ঢেলে দিলো।
যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে তোয়া।ও দুর্বল হয়ে পড়েছে।গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।তবুও তার সমস্ত শক্তি সঞ্চার করে বললো
–আ…..আ…..আ…..আমাকে মেরে ফলো। আর পরছি না। আল্লাহর দোহাই লাগে।মেরে ফেলো আমাকে।
দাঁতে দাঁত চেপে ফারাবি বললো,
–এখনো তো তোমার মরার সময় হয় নি।সময় হলে আমি মেরে ফেলবো তোমাকে।
নিজে যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে পলি, মুখ দিয়ে অনর্গল রক্ত পড়ছে।তবুও যেন ওর চোখজোড়া ওই পাষন্ড মা-ছেলের কাছে মিনতি করছে,
–তোমরা আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও। ও বড্ড নিষ্পাপ।তোমরা আমাকে আরো কষ্ট দাও তবুও ওকে যেতে দাও।
ঠিক এই যন্ত্রণাটাই পলির মুখে দেখার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করেছে আইরিন। পলির মুখের দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে সে।আর মাঝে মাঝেই মধ্যে হো হো করে জোর হেসে উঠছে।
একটা হাতুড়ি দিয়ে তোয়া’র পিঠে বাড়ি দিচ্ছে ফারাবি, যাতে আলপিনগুলো ডেবে যায়। মেয়েটা শুধু গোঙাচ্ছে। চোখের পানিও শুকিয়ে গেছ। এরপর একটা চিমটা দিয়ে আলপিনগুলো তুলতে লাগলো সে।লোহাগুলো এতটা গরম ছিলো যে তোয়া’র জামার কাপড় আর চামড়া পুড়ে গিয়েছি। চিমটা দিয়ে টেনে তোলার সময় সব একসাথে মাংসের সাথে আলপিনে লেগে উঠে আসতে থাকে।
তোয়া’র গোঙানিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।তার চোখ ধীরে ধীরে কষ্টে উল্টে যাচ্ছে।
পলির চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে পরছে।সে মনে মনে বার বার শুধু আল্লাহর কাছে নিজের মেয়ের জীবন ভিক্ষা চাইছে।

আর ফারাবি মনে মনে ভাবতে থাকে
–এরপর এই মেয়েটার বাম হাতের আঙুলগুলো থেতলে একটা একটা করে কাটবো।

—।—-।—-।

স্কেচ চলে এসেছে। সিফাত আর তালহা মহিলার ছবি দেখে চমকে যায়।
–আপনার উপর ভরসা করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিলো।আজ যদি আমার মেয়ের কিছু হয় তবে আমি পলি সামনে কি করে দাঁড়াবো ।একটা বাড়ি সার্চ করতে পারেন না।সত্যি করে বলুন তো আপনি পুলিশে চাকরি কি করে পেয়েছেন?(ফোনে রেগে চেঁচিয়ে কথাগুলো সিফাতকে বলছে তালহা)
–স্যার প্লিজ। আমার ভুল হয়ে গেছে। বিশ্বাস করুন আমরা ভালোমতো খুঁজেছি কিন্তু কিছুই পাই নি।আর ওদের এতো ভালমানুষ মনে হয়েছে।
–ওই মহিলা কেমন ভালো সেটা আমি জানি। এবার ঐ বাড়ির প্রত্যেকটা দেয়াল ভেঙে দেখবেন।
–জ্বি স্যার। আমার আর পনের মিনিট লাগবে পৌঁছাতে।আমি এম্বুলেন্সও খবর দিয়েছি।
–ঠিক আছে।আমার ওইখানে যেতে ঘন্টা খানিকের উপর লাগবে।আমি শহরের দিকে যাচ্ছি। আপনি জানাবেন কোথায় যাবো।
–জ্বি স্যার।
–শুনুন পলিকে এখন কিছু জানানোর দরকার নেই।তোয়ামনিকে পেলে আমি নিজে ওকে ফোন করব।
পলি যে ওইদিকে অনেক আগে থেকে ফোন রিসিভ করছে না তা তালহাকে একরকম ঝাড়ি খাওয়ার ভয়েই বললো না সিফাত।
–আচ্ছা স্যার।(বলে ফোন রেখে দিলো)

এদিকে তালহা ভাবতে থাকলো পলি কি করবে যখন জানতে পারবে তোয়াকে ঐ মহিলা কিডন্যাপ করেছে। আইরিন নামের দুঃস্বপ্নটা যে তাদের জীবনে আবার কখনো ফিরে আসবে সেটা তালহার কল্পনারও বাইরে ছিলো।

—চলবে???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে