Angry_Husband
Season_2_Part_24
Written by Avantika Anha
আমি বাড়িতে আনভীরের সাথে সময় কাটাচ্ছিলাম। এমন সময় ঘরে প্রেয়সি আসলো।
প্রেয়সি- আপু চল তো একটু বাইরে যাই।
আমি- তুই যা। বড় হইছিস তো। প্রবলেম হলে রায়ানকে(ওর হবু বর) বল আসতে।
প্রেয়সি- আরে ওর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি। তুইও চল আমার ভয় করছে।
আমি- দূরর কিসের ভয়?
প্রেয়সি- তোর সময় যে আমি গেছিলাম, (কথাটা বলেই ও জিহ্বায় কামড় দিলো। কারণ ও বুঝেছে যে, কথাটা ভুলে হলেও আমাকে আঘাত করেছে)
আমি- তুই যাবি এখান থেকে? (কিছুটা চিৎকার দিয়ে কারণ কথাটা আমাকে আরাভের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে)
.
প্রেয়সি আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেলো। আমি আনভীরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আনভীরই আমার সব। আরাভের দেওয়া ধোঁকার পর আমার বাঁচার সম্বলই সে। তাই কষ্ট হলে তাকেই আকড়ে ধরি।
.
আরাভ এখনো জানে না ওর সন্তান আছে।
..
..
প্রেয়সির বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো শুরু হয়ে গেলো। সব ভালো ভাবেই হচ্ছিলো। কিন্তু আমি তবুও লুকিয়ে চলছিলাম। কারণ চারপাশের মানুষের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছিলো আমার। বিয়ের দিন। পারিবারিক ভাবে ছোট করে অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। কারণ পরে বড় করে হবে। প্রতিটা অনুষ্ঠান আমাকে আরাভের কথা মনে করিয়ে কাঁদাচ্ছিলো।
.
এক কোণায় দাড়িয়ে ছিলাম।
রাহাত- চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন যে?
আমি- না এমনিই আমি কি করবো? বিয়ে তো ওদের।
রাহাত- আপনি নাকি খুব চঞ্চল?
আমি- জ্বী সন্দেহ?
রাহাত- না তা তো দেখছিই। তা আপনি পরে আর বিয়ে করছেন না কেনো?
আমি- আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সুখেই আছি। লাগবে না আমার পরিবারে অন্য কাউকে।
রাহাত- তবুও সমস্যা কই?
আমি- আপনি করেন নি কেনো?
রাহাত- একজনকে ভালোবাসতাম সে ধোঁকা দিয়েছে তাই আরকি। তারপর আর ইচ্ছেই হয় নি কাউকে আপন করার। কিছুটা আপনার মতোই।
আমি- হাহা হয়তোবা।
.
.
তারপর দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। আমার খুব বিরক্তি লাগছিলো। তাই ব্যাগ থেকে কিটক্যাট বের করে খেতে লাগলাম।
আমি- খাবেন ? (আরেকটা কিটক্যাট এগিয়ে)
রাহাত- কিটক্যাট?
আমি- না বিষ। দেখছেনই তো নাম লিখা। তাইলে কি আমি পঁচা ডিমের ভর্তা খাওয়াবো?
রাহাত- না মানে?
আমি- হায় রে। থাক ভাইয়া আপনার খাওয়া লাগবে না।
.
এই বলে আমি খেতে লাগলাম। আনভীর ঘুমিয়েছিলো তাই ওকে পাশের ঘরে শুইয়ে রেখেছিলাম।
রাহাত- আপনি বাচ্চার মতো।
আমি- হতে পারে।
রাহাত- আসলেই।
আমি- হুমম। (একটা ফেক হাসি দিয়ে অন্য দিকে সরে গেলাম। কারণ এই পোলাটা বড়ই কেমন কেমন লাগছে আমার। লাইক একটু বেশিই নরম।)
.
বিয়ে হয়ে গেলো। আমি ঘরে গেলাম একটু আনভীরকে দেখতে গেলাম। কিন্তু ঘরে গিয়ে দেখি আনভীর নাই। অনেক খুঁজে দেখলাম আনভীর মি. রাহাতের কোলে।
আমি- আপনার কাছে আনভীর কেমনে?
রাহাত- না মানে উঠে কাঁদছিলো আর কি? আপনার বাবুটা অনেক কিউট। একদম আপনার মতো।
আমি- হাহা না। ও একদম ওর বা. (বলে থেমে গেলাম)
রাহাত- ওর একটা ছবি তুলি?
আমি- জ্বী। (বুঝলাম উনি বিষয়টা বুঝেছে)
.
তারপর বিয়ে হয়ে গেলো। প্রায়ই সময় কাটলো একটু করে সবার সাথে। ধীরে ধীরে আমার ফিরে যাওয়ার দিনও কাছে আসতে লাগলো। আমি খুশি কারণ আরাভের স্মৃতি থেকে আবার দূরে যাওয়া যাবে। কষ্ট হচ্ছে বাকীদের জন্য যদিও।
.
একদিন… মেইন অফিসে এক কাজে গেছিলাম। কাজ শেষ হয়ে বাইরে যেতে যাবো অমন সময় আরাভের সাথে ঢাক্কা খেলাম। আরাভকে দেখে আমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম। আরাভও কিছুটা চমকালো।
রাজ- শুন আনহা। এটা আরেক কোম্পানির মালিক। আমরা একসাথে একটা প্রজেক্ট করবো। তুইও শুন হেল্প হবে। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। রাজ আরাভকে চিনে না। ও আমার বিয়ের টাইমে আসে নি। যদিও ও পিকও দেখে নি। কারণ মাঝে ঝগড়া হয়েছিলো এক কারণে।
আরাভ- কেমন আছো? (আস্তে)
আমি- জানা লাগবে না আপনার। (আস্তে)
.
রাজ- ভেতরে আসুন।
আরাভ- হুমমম।
.
মিটিং টাইপই কথা হলো। যদিও পুরো সময়ই আমি আর আরাভ বারবার একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম। সেই সাথে আমরা কেউই কথা বললাম না বেশি। যদিও শেষে কিছু আইডিয়া দেওয়ায় আমার দায়িত্বেই পড়ে গেলো প্রজেক্ট টা। রাজকে মানাও করতে পারলাম না। কারণ ও এমনিই আমাকে অনেক বেশিই হেল্প করেছে।
.
যাওয়ার সময়…
আরাভ ডাক দিলো, “আনহা”
.
আমি ওর দিকে গেলাম।
আমি- জ্বী বলুন।
আরাভ- সুখে আছো তুমি?
আমি- জ্বী অনেক।
আরাভ- তা তোমার স্বামী কি করে?
আমি- (আশ্চর্য হলাম কারণ আমার তো বিয়েই হয় নি ও স্বামীর কথা আস্ক করে কেনো? তাই জবাবও দিলাম না)
আরাভ- কি হলো বলো? কেমন তোমার নতুন সংসার?
আমি- আমি আনভীরকে নিয়ে অনেক সুখী। (ইনডিরেক্ট উত্তরটা দিলাম)
আরাভ- আচ্ছা। আসি তাহলে। (আরাভ ভাবলো আনভীর হয়তো আনহার নতুন বরের নাম)
.
আমি গাড়িতে উঠলাম। আরাভ ওদিকে নিজের গাড়িতে। আমার কান্না পাচ্ছে তাই কাঁদতে লাগলাম। ওদিকে আরাভের কষ্ট হচ্ছে তাই ও চুপচাপ আছে। সেদিন রাতে একটা মুহূর্তে অনেক কষ্ট হতে লাগলো দুজনেরই। আমার কষ্টের পরিমাণ বেড়ে গেলো তাই আমি নিজেকে আঘাত করতে লাগলাম। চাকু দিয়ে হাতে কয়েকটা দাগ কাটলাম।
.
ওদিকে আরাভ দেয়ালে বাড়ি মারতে লাগলো। একটা সময় আমার মা ঘরে এসে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে আটকালো। আমি অনেক সময় পর শান্ত হলাম। সেদিন পুরো রাত জেগে থাকলাম। ওদিকে আরাভও জেগে ছিলো।
বারবার মনে একটাই প্রশ্ন, “কি কমতি ছিলো আমার ভালোবাসার?” কিন্তু আমি জানিও না প্রকৃত দোষী কে?
পরেরদিন অফিসে যেতে হলো। আমাকে একটা কেবিন দেওয়া হলো। হঠাৎ কল আসলো, টেলিফোন রিসিভ করতেই, “হ্যালো”
আরাভ- আনহা? (কন্ঠ শুনেই বুঝলাম এটা আরাভ)
আমি- বলুন।
আরাভ- ডিলটা আমি অন্য কাউকে দিচ্ছি তোমার আর সমস্যা হবে না।
আমি- জ্বী না। ডিল আপনাকেই শেষ করতে হবে মি. রাহিদ আহমেদ আরাভ।
আরাভ- তোমার প্রবলেম?
আমি- আমি কি আপনাকে বলেছি আমার সমস্যা ? হাহা না বলতেই এতো কিছু ভাবতে নেই মি.
আরাভ- ওকে সরি।
আমি- দরকার নেই। ইটস ওকে।
আরাভ- ডিনার হোক অথবা কফিতে একটু দেখা করি প্রজেক্ট নিয়েই কথা আছে। (যদিও মূল বিষয় আনহাকে একটু দেখা)
আমি- আচ্ছা আজ দুপুরে লাঞ্চ হোক। (আমিও না করতে পারলাম না। কারণ আমারও খুব ইচ্ছে করছিলো আরাভকে দেখার।)
.
.
সেদিন রেস্টুরেন্টে,,,,,
দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। আমিই কথা শুরু করলাম।
আমি- ডিল নিয়ে কথা শুরু করা যাক?
আরাভ- অনেক বদলে গেছো।
আমি- পরিস্থিতি বদলায় মানুষকে। আর এখানে আমরা পার্সনাল বিষয়ে কথা বলতে আসি নি। তাই ডিল নিয়ে কথা হোক।
.
…..ডিল নিয়ে কিছু কথা বলার পর……
আরাভ- কি খাবে?
আমি- আপনার যা ইচ্ছা অর্ডার করেন। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আপনার পছন্দের কিছু অর্ডার করুন।
আরাভ- আইসক্রিম খাবা শেষে? ওটা তো তোমার প্রিয়।
আমি- এখন খাই না।
আরাভ- কেনো?
আমি- মাঝে মাঝে কিছু প্রিয় জিনিস ছাড়তে হয়। এটা তো শুধুই আইসক্রিম।
.
সেদিন বেশি কথা বললাম না।
..
হঠাৎ ফোনে কল আসলো,
আমি- হ্যা আসসালামুয়ালাইকুম।
অপর পাশে আম্মু- আনহা আনভীর পড়ে গেছে বিছানা থেকে।
আমি- কিইইই? ওকে দেখো নি কেনো? কেমন আছে ও কই ও?
আম্মু- মাথায় একটু লেগেছে। ফুলে আছে। কাঁদছে। জ্বলদি আয় তুই।
আমি- আমি এখনি আসছি।
.
কলটা কেটেই,,
আমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে আসলাম। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে সেদিন ব্যাগটা ওখানেই রেখে আসলাম।
.
তাড়াতাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে বাড়ি গেলাম। গিয়ে আনভীরকে থামালাম। ওর কিছু হলে মনে হয় জীবন বের হয়ে গেলো। তাই নিজেই অনেকটা সময় কাঁদলাম। ব্যাগের কথা ভুলেই গেলাম সেদিন। আরাভ ব্যাগটা তার সাথে নিয়ে যায়।
.
.
চলবে……