Angry_Husband
Season_2_Part_23
Written by Avantika Anha
রাত….
আরাভ আনহাকে অনেক মিস করছে। ওর সব জায়গায়ই আনহার স্মৃতি। ওর চোখের সামনে স্মৃতিগুলো ভাসছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। ওর মাথায় চিন্তা আনহা কই? আর ও কি সব ঠিক করেছে?
.
অপরদিকে,,, আমি ক্লোজ কারো সাথে যোগাযোগ করলাম না। হাতের কিছু টাকা নিয়ে এক বাড়িতে উঠলাম। আমি এক ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ করলাম। যে বর্তমানে বিদেশে ছিলো। ওকে সব বলার পরই ও আমাকে ওদের অফিস জয়েন করতে বললো। তার সাহায্যর জন্য ওকে থেংকু বললাম। কিন্তু একদিন আরাভের সাথে দেখা হয়ে গেলো। যদিও ও আমাকে দেখে নি। কেনো যেন ওর চাহনিতে ক্লান্তি দেখতে পেলাম। ওকে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। আমার সাথে আমার ফ্রেন্ডটা ছিলো। ও বুঝলো সব। সবশেষে ও আমাকে ওর কোম্পানির বিদেশের শাখায় যেতে সাজেশন দিলো।
আমি- দোস্ত আমার জন্য এতো কিছু কেনো করছিস?
রাহাত- আরে ব্যাপার না। আমি তো আছি তাই নয় কি? আমি এমনিও প্রায়ই ওই দেশে যাই। কারণ ওখানে আমার কাজ বেশি থাকে। তুই থাকলে আমার বেশি যেতে হবে না।
আমি- আচ্ছা।
.
রাজি হয়ে গেলাম। কারণ এখানে আমার নতুন যাত্রা। আজকাল প্রায় রাতে আরাভের কথা ভেবে কাঁদি। আর পেটে হাত রেখে, বাবুর সাথে কথা বলি।
.
USA চলে গেলাম। ওখানে সব কাজ করতাম সারাদিন আর রাতে একাই সময় কাটাতাম। হঠাৎ মনে হলো আম্মুর সাথে যোগাযোগ করি। আম্মুর সাথে যোগাযোগ করে বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করলো। সবাইকে বুঝালাম। সবাই বিষয়টা বুঝলো। এদিকে আরাভকে আমার পরিবারের কেউই আর দেখতে পারতো না। কেউ আর ওর খোঁজও নিতো না।
.
আরাভের রাগের পরিমাণ দিন দিন বাড়তে লাগলো। ওর পরিবারের মানুষেরা আমাকেই দোষী ভাবতে লাগলো। আরাভও কিছু বললো না। কারণ ও জানে যদি এদের কিছু বলা যায় তাহলে সবাই আবার আমাকে আরাভের জীবনে আনার চেষ্টা করবে।
কিন্তু আরাভ এখনো জানে না আনহা কই? প্রতিনিয়ত খোঁজ নেওয়ার চেষ্টায় সে,,,
একদিন আরাভের সামনে আনহার মা পড়লো,
আরাভ- আসসালামুয়ালাইকুম মা।
মা- মা বলার অধিকার তোমার নাই।
আরাভ- আচ্ছা। আনহা কেমন আছে?
মা- খুব সুখেই আছে তোমাকে ছাড়া। ওর নতুন দুনিয়ায়। (যদিও এটা বলে ওর কষ্টকে বুঝিয়েছে। কিন্তু আরাভ তা বুঝলো না)
আরাভ- আচ্ছা।
.
.
বাড়ি ফিরে আরাভ চুপচাপ ঘরের দেয়ালে ঘুসি মারতে লাগলো। আজকাল এটা নতুন না,
আরাভের মা- কেন ওই মেয়ের জন্য এমন করিস? যে একদম ভালোনা।
আরাভ- মা না জেনে কাউকে খারাপ বলবা না। যাও তো এখান থেকে।
মা- যাচ্ছি বাপু যাচ্ছি। অন্য মেয়ের জন্য আমার ছেলে কষ্ট পাচ্ছে। ওই মেয়ে কখনো সুখী হবে না।
.
.
আরাভের মা এটা বলতে বলতে চলে গেলো। আরাভের প্রচুর খারাপ লাগছিলো কথাটা। যেখানে আনহার কোনো দোষই নাই। ওপরদিকে এসবে সবচেয়ে বেশি খুশি জান্নাত। ও জানে এখনো ও আরাভকে পাবে না। কিন্তু ও খুশি যে আনহাও আরাভকে পাবে না।
.
এদিকে আনহা একাকিত্বে সাথী বানিয়ে নিয়েছে ওর মাঝে অবস্থানরত আরাভ আর ওর সন্তান কে। সময় যেতে থাকে আরো দুজনে দু প্রান্তে কষ্টে।
.
.
প্রায় ১ বছর পর,,,
আনহার ছেলে হয়েছে। ও নাম রেখেছে আনভীর। শখ করে নাকি ভালোবেসে। ব্যস্ততার ভিড়ে।
.
দেশে এসেছে,,, আজ প্রথম ওর ছেলেকে নিয়ে। সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে। এক মাসের জন্য।
ওকে নিতে এসেছে ওর বেস্টু আর তার ছোট বোন। মূলত ওর বোনের বিয়েতে ওর আসা। আজকাল কষ্টকে সে ইগনোর করে।
প্রেয়সি- আপুউউউউউউউ।
.
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রেয়সি।
আমি- তুই আসছিস আনতে? আহা বেবি তুমিও।
মিমি- তুমি আসবা আর আমি না এসে কিভাবে পারি গো?
আমি- তাই নাকি। জিজু আসসালামুয়ালাইকুম।
ইমরান- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আমি- আপনিও এসেছেন যে?
ইমরান- তুমি তো আমার বোনই তাই না?
আমি- হুম ভাইয়া হুম।
মিমি- বাহ আনভির দেখি অনেক কিউট হইছে।
আমি- হবেই তো ছেলেটা কার দেখতে হবে তো?
মিমি- আমার বাবুটাও এতো বড় হতো তাই না রে? (মিমির বাবুটা নষ্ট হয়ে যায় এক্সিডেন্টে)
আমি- এটা তো তোরও বাচ্চা রে। তোর আর আমার বাচ্চা কি আলাদা নাকি?
মিমি- কোলে নেই দে।
আমি- এই নে।
মিমি আনভীরকে কোলে নিলো। এগিয়ে গেলাম আমরা। রাস্তায় একটা গাড়ি আমাদের গাড়িতে ঢাক্কা দিলো। রাগ উঠে গেলো। আজকাল আমারো রাগ বেড়ে গেছে।
আমি- ওই আফ্রিকান হাতির দল সাবধানে গাড়ি চালাতে পারেন না? হা কি লাগাইছেন এখানে?
মিমি- বাদ দে।
আমি- বাদ দিবো মানে? এই একেকটা নাইজেরিয়ান বিড়াল।
.
পিছন থেকে বেশি কিছু বললো না। একটা ছেলে সরি বললো যাস্ট। আমিও আর কথা বাড়ালাম না। বাড়িতে সবাই খুশি। মেয়ে বাড়ি ফিরেছে। সবাই সবার মাঝে খুশি। পরেরদিন রাতে,,,
মা- আনহা মা।
আমি- হুমম বলো। (আমি আনভীরের সাথে খেলছিলাম)
মা- তুই আরেকটা বিয়ে করলেই পারিস।
আমি- মা আমি ঠিক চলতে পারছি। আর তোমাদের সমস্যা হলে বলো। আমি জ্বলদি রিটার্ন করবো।
মা- না থাক ব্যাপার না।
আমি- ওকে আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি ঘরে গেলাম।
.
আমি আনভীরকে নিয়ে ঘরে গেলাম। আমার জীবন এখন ওকে ঘিরেই।দেশে ফিরে কেনো যেনো আরাভের কথা খুব মনে পড়ছে। বুকের ভিতরের চিনচিন ব্যাথাটা ওর প্রতি আরো বেড়ে গেছে। অপরদিকে আরাভেরও বুকের ঢুকবুকানি বেড়ে গেছে। আজ কেনো যেনো আরাভের ঘুম আসছে না।
.
এদিক ওদিক হাটাহাটি করছে। বেলকনিতে দাড়িয়ে আনহার কথা ভাবছে। ভাবছে ও হয়তো নতুন সংসারে অনেক সুখী। আরাভ ইচ্ছে করেই আনহার খোঁজ নেয় না। নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলো। স্বপ্নে,,,
আরাভ আনহার হাত ধরে হাটছে। আনহা বলছে, ” তোমার জন্য একটা গিফ্ট এই বলে আরাভের হাতটা এগিয়ে ওর দিকে আনছিলো” হঠাৎ ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ওর কপালে ভাজে ভাজে ঘাম। বিরহের কষ্ট ওর মাঝেও স্পষ্ট।
.
২ দিন পরে,,
আভা- ভাইয়া।
আরাভ- বল।
আভা- আমার একটা জিনিস লাগবে মল থেকে নিয়ে যাবি?
আরাভ- আমি ব্যস্ত।
আভা- তুই কি সবসময় ব্যস্ত?
আরাভ- তোর বরকে বল।
আভা- ও নাই দেশে ভুলে গেছিস? তাই তো আমি বাড়িতে।
আরাভ- ওহ হুমমম।
আভা- আজকাল বড্ড ভুলে যাস তুই সব।
আরাভ- চুপ করবি? চল নিয়ে যাচ্ছি।
আভা- হুমমম চল।
.
.
মলের ভিতরে আরাভ মিমির দেখা পেলো। সেই সাথে মিমির কোলে একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা আনভীর ছিলো। কিন্তু আরাভ ভাবলো, এটাই হয়তো মিমির বাচ্চা। হঠাৎ ওর আনহার কথা মনে পড়লো। আনহার বাচ্চার প্লান। ওর মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো। ও অস্ফূট ভাবে বললো, পাগলি।
.
আরাভ- কেমন আছেন মিমি?
মিমি- আপনি? (রেগে। কারণ ও জানে আরাভ খারাপ)
আরাভ- হুমমম মলে আসছিলাম। তোমাকে দেখলাম তাই।
মিমি- ও নতুন বউ এর সাথে বুঝি?
আরাভ- হুমমম। (মিথ্যে)
মিমি- ভালো।
আরাভ- তোমার ছেলেটা অনেক কিউট।
মিমি- জানি।
আরাভ- একটু কোলে নেই। (আরাভের খুব কোলে নিতে ইচ্ছে করছিলো আনভীরকে)
মিমি- আচ্ছা। (মিমি বাঁধা দিলো না। কারণ যাই হোক বাচ্চাটা তো তারও)
.
আরাভ কোলে নিলো। আমি একটা দোকান থেকে একটু বের হতেই আরাভের কোলে আনভীরকে দেখি। আমি লুকিয়ে যাই। মিমিকে কল দেই।
মিমি- হুমমম।
আমি- ওর কোলে কেনো? ও যেনো না বুঝে আমার সাথে কথা বলছিস।
মিমি- এই তো এমনিই ঘুরছিলাম আরকি।
আমি- জ্বলদি আয়।
মিমি- ওকে আসছি।
.
.
মিমি- দেন আনভীরকে।
আরাভ- কি নাম বললে?
মিমি- আনভীর। আনহা রেখেছে এই নাম। (ইচ্ছা করেই বললো)
আরাভ- ও কেমন আছে?
মিমি- জানা লাগবে না আপনার। দেন বাবুকে।
.
আনভীরকে মিমি ওর কোলে নিতেই কেঁদে উঠলো। হয়তো বাবার স্পর্শ বুঝেছে। এটা দেখে আমার চোখে পানি এলো। নাহ আরাভ জানলে যদি আনভীরকে নিয়ে নেয়। এই জন্য চোখের পানি মুছে ফেললাম। আরাভের মনে হচ্ছিলো ওর অনেক কাছের কিছু নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি বুঝছিলো না। মিমি আনভীরকে আনতেই আমি ওকে তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। মনে মনে বলছিলাম, “না আমার ছেলেকে আমি কাউকে দিবো না।”
.
প্রেয়সির বিয়ের আগে দুই পরিবারের সদস্যদের খাওয়ার একটা আয়োজন করা হলো। যেখানে আমি গেলাম যদিও একটু লেটে। আনভীর প্রেয়সির কাছেই ছিলো। আমি অফিসের একটা কাজে মেইন অফিস গেছিলাম তাই যদিও একটু লেট হলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই একজনের সাথে ঢাক্কা খেলাম,,,,
আমি- সরি সরি দেখি নি।
লোকটি- ইটস ওকে আমারো ভুল।
আমি- জ্বী।
লোকটি- আপনাকে মনে হয় কোথাও দেখেছি।
আমি- আমারো মনে হচ্ছে।
লোকটি- উপপপপসসস আপনি সে না যে আফ্রিকান নাইজেরিয়ান বলে আমাকে একদিন গালি দিয়েছিলেন। কারণ ভুলে গাড়ি ঢাক্কা লাগছিলো।
আমি- ইয়ে মানে। ভাইয়া ওইটা আপনার না?
.
লোকটি ওইদিকে তাকাতেই আমি পালালাম। নইলে বকাও দিতেও পারে। ওখানে খাওয়ার টেবিলে কিছু সময় পর ওই লোকটাও এলো।
আমি তাকে দেখে থ। যদিও সে-ও কিছুটা আশ্চর্য। তার নাম রাহাত। ছেলের চাচাতো ভাই। যদিও সে নাকি কোনো এক কারণে বিয়ে করে নি। যদিও বা আমার কিছুই যায় আসে না। তাই আমি ওখানে বেশি কথা বললাম না। প্রেয়সির হবু শশুড় পরিবারের সবাই জানে আমি ডিভোর্সি। যদিও ডিভোর্স হয় নি। কিন্তু কথা বাড়ালাম না।
.
.
চলবে……..