Angry_Husband
Season_2_Part_15
Written by Avantika Anha
মাঝরাতে মাথায় একটা জিনিস আসলো। সাথে সাথে উঠে বসলাম। আরাভের এক হাত আমার হাতের উপর ছিলো। আমি উঠে বসায় ও নিজেও টের পেয়ে গেলো।
আরাভ- কি হলো?
আমি- বান্দর পোলা, শয়তান, কুকুর, রাস্তার ছেলে, কুমির, পেঙ্গুইন, আলু, পটল, লাউ, কদু কোনেকার।
আরাভ- হোয়াট? কি বলছো এসব?
আমি- চুপ কথা বলবি না একদব তুই।
আরাভ- তুমি আমাকে তুই বলছো?
আমি- একশোবার বলবো। তোর জন্য আমার সব প্লান মাটি।
আরাভ- কি বলছো এসব? (তাকিয়ে দেখি ওর রাগ হচ্ছে। তাতে আমার কি ওই শয়তানের জন্য আমার প্লান মাটি)
আমি- চুউউউউউউপ।
আরাভ- হোয়াট?
আমি- এ্যা এ্যা এ্যা আমার প্লান নষ্ট। (কাঁদতে লাগলাম)
আরাভ- কি হলো? কাঁদছো কেনো? মাথায় প্রেসার দিও না।
আমি- ওই হালা একটজ মাথা ফাটছে। অনেক বড় কিছু হয় নি আর তুই কথা বলবি না।
আরাভ- চুপ কি শুরু করছো রাতের বেলা? (ধমক দিয়ে)
আমি- এ্যা এ্যা এ্যা (ধমক খেয়ে কান্নার সাউন্ড বেড়ে গেছে)
আরাভ- এই কাঁদছো কেনো?
আমি- কিছু না এ্যা এ্যা এ্যা। (কেঁদেই যাচ্ছি)
.
আরাভ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আর জিজ্ঞেস করতে লাগলো “কি হয়েছে আসলে?” কিন্তু আমি কোনো জবাব দিচ্ছিলাম না। কারণ আমার কান্না পাচ্ছিলো খুব। কারণ আমি যা করতে চাচ্ছিলাম তা আর হবে না। আমি এবার ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আরাভ কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেলো। কারণ এমন করে হঠাৎ কেনো কাঁদছি আমি এটা সে জানে না। কিন্তু ওর একটু রাগ উঠছিলো আমার উপর। কিন্তু এভাবে ওকে জড়িয়ে ধরায় ওর রাগ কমে গেলো।
আরাভ- ওই পাগলি কি হয়েছে?
আমি- আপনি ভালো না।
আরাভ- হুমমম ভালো না এবার বলো।
আমি- না কেনো হবে না? উহু। আমি আর পারবো না।
আরাভ- কি হলো?
আমি- সব দোষ আপনার। আমার মাথা ফাটাইছেন তাই আমার মাথা গেছে গা এ্যা এ্যা এ্যা।
আরাভ- হইছে টা কি?
আমি- কাল রাতে…
আরাভ- রাতে কি?
আমি- আপনাকে লাভ ইউ টু বলে ফেলছি আমি আবেগে।
আরাভ- (ভ্রূ কুচকে) তো কি হইছে? অন্য কাউকে বলবা নাকি?
আমি- না কিন্তু…
আরাভ- তো কি তোমার স্বামীকেই তো বলছো। এমনি সময় তো আমাকে বলো আমার স্বামী আমার স্বামী।
আমি- কিন্তু আপনাকে আলাদা ভাবে বলার ইচ্ছা ছিলো। কিছুটা স্পেশাল ভাবে।
আরাভ- হায়রে এই জন্য এতো কান্না?
আমি- তা কি?
আরাভ- হাহাহা।
আমি- ওই ভিলেন তোর দাত ভাঙ্গে দিবো।
আরাভ- কি বললা? (কিছুটা গম্ভীর লুকে)
আমি- আমার সব ইচ্ছা শেষ। দূরররর ঘুমাবো আমি। গুড নাইট।
আরাভ- হুম যাও যাও।
আমি- হুহ।
.
এই বলে আমি শুয়ে পড়লাম। আরাভ কিছুসময় ওভাবেই বসে ছিলো। ভালো করেই বুঝছি আমি হেতে লাগ কলছে সরি রাগ করছে। আজকাল মাথা ফাটার কারণে এতো ভুল বকি কে জানে? কিছুসময় পর আরাভও শুয়ে পড়লো। কিন্তু আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি অবাক ও রাগ কিভাবে কন্ট্রোল করে নিলো। আমি এবার ভাব নিতে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। আরাভ আবার জড়িয়ে ধরলো। আমি আবার ছাড়িয়ে নিলাম কারণ ওর জন্য আমার প্লান নষ্ট।
আরাভ এবার আমাকে টান দিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
আমি- কি প্রবলেম আপনার?
আরাভ- কি প্রবলেম মানে। আমার বউকে আমি জড়িয়ে ধরবো।
আমি- না ধরবেন না। আপনার জন্য আমার প্লান নষ্ট।
আরাভ- আরে ইয়ার প্রপোজ তো আমাকেই করতা তাই না? তো আমাকেই তো বলছো।
আমি- আমি স্পেশাল ভাবে করতাম।
আরাভ- ওই তুমি যেভাবেই বলবা সেটাই আমার কাছে স্পেশাল।
আমি- না আমি স্পেশাল ভাবে করবো।
আরাভ- তা আমি এখন কি করবো?
আমি- রুম থেকে বের হন।
আরাভ- মানে?
আমি- ওকে। কাল স্পেশাল সারপ্রাইজ আছে আপনার জন্য। টাকা দেন তো।
আরাভ- এতো রাতে?
আমি- হুমমম হুমমম দেন।
আরাভ- আমার টাকায় আমাকেই প্রপোজ?
আমি- দিবি কি না বল?
আরাভ- আবার তুই?
আমি- দে বলছি।
আরাভ- ওই মাথা ফাটার পর কি তোমার মাথা গেছে নাকি?
আমি- হুমম দে।
.
অগত্যা মাঝরাতে আমি আরাভের কাছ থেকে টাকা নিলাম মাঝরাতে। টাকা পাওয়ার পর সেই হাসি মুখে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু আরাভ ঠিকই বলতেছে। মাথা ফাটার পর আমার মাথা গেছে। যাই হোক কালকে মেলা কাম। ঘুমায় নেই।
সকালে….
মাথা ফাটার কারণে সবাই খালি কেয়ার নিচ্ছে আমার। মিমি সহ সব ফ্রেন্ডরা কল দিচ্ছে। আহা অন্য সময় খোঁজ নাই এসব পেত্নীগুলোর। কয়েকটা বড় আপু ভাইয়ারাও খোঁজ নিলো। কিন্তু আমার তো প্লান অন্য। কি করবো না করবো সব আভাকে বললাম। আভা শুনে তো সেই ইম্পরেস হলো। ও নাকি আমার সাহায্য করবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। কারণ মিমি আজ একটু ব্যস্ত আর আমার সাহায্য লাগবেই। মানুষ যে স্বার্থপর তা আমি ভালোই বুঝি। আভা সাহায্য করছে কারণ ফিউচারে কখনো তার সাহায্য লাগলে করতে হবে।
.
আরাভকে আজ রাতের আগে বাড়ি ঢুকতে মানা করছি। কিন্তু ও আসতে ধরছিলো একবার। দরজা থেকেই ফিরিয়ে দিছি। আমাদের টিমে মা আছে। তাই মা খাবারের দায়িত্ব নিয়েছে। আমি আর আভা ছাদের ঘরটা সাজাচ্ছি। সেটাকে ঘর বললে ভুল হবে টেবিল আছে, চেয়ারও আছে সব সিমেন্টের। উপর দিয়ে গোলাকার ছাউনি। কালার ল্যাম্প আনে লাগালাম। টেবিলের উপর ফুলও রাখলাম। নেটও লাগালাম। অনেকগুলো মোমবাতি আনলাম। সব রেডি করলাম ওর জন্য। মাথায় ব্যান্ডেজটা ছোট করে নিলাম আর চুল দিয়ে ঢেকে নিলাম। আমি মিষ্টি কালারের একটা শাড়ি পড়লাম। সেই সাথে ম্যাচড জুয়েলারি। আভা আমাকে পুরো সাহায্য করলো। কাজল পড়ে নিলাম।
.
রাতে আরাভ এলো। সেই আশা নিয়ে ঘরে গেলো। দেখে ঘর অন্ধকার। আমি কোথাও নাই। আরাভকে দেখে আভা মুচকি হাসতে লাগলো।
আরাভ- তোর ভাবি কই?
আভা- বলবো কিন্তু কি দিবি বললে?
আরাভ- বিয়ে দিবো তোর।
আভা- ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
আরাভ- বল তো।
আভা- ৫০০ টাকা দে।
আরাভ- নাহ।
আভা- ওকে খুঁজতে থাক।
আরাভ- এই নে।
আভা- ছাদে যা।
আরাভ তাড়াতাড়ি ছাদে চলে গেলো। ছাদে গিয়ে দেখে শুধুই চাঁদের আলো পড়ছে। আর সামনে একজন দাড়িয়ে আছে। চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। আরাভ দেখার অপেক্ষা করছে। আরাভ আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি পিছনে ঘুরলাম আমার হাতে মোমবাতি ছিলো। আমাকে দেখে আরাভ চমকে উঠলো। কারণ আমার মুখে মাস্ক ছিলো ভুতের মাস্ক। যা পড়ার পর নিজেকে দেখামাত্র আমি নিজেই ভয় পাইছি। ছাদেও ভয় লাগছিলো। কিন্তু শান্ত ছিলাম। কারণ কোনো ভুত যদি আমাকে দেখে ভাববে আমিও তারই মতো হিহিহি। আমি একটা কালো চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখছিলাম। আরাভ কিছুটা চমকে পিছনে গিয়ে দাড়ায়।
আরাভ- কে?
আমি- হিহিহি।
আরাভ- আনহা তুমি? হায় রে এভাবে কেউ বরকে ভয় দেখায়?
আমি- আপনি নাকি সাহসী?
আরাভ- এভাবে হঠাৎ যে কেউ ভয় পাবে তুমি কি জানো?
আমি- হিহিহি। কেমন স্টাইল এর প্রপোজ মি.। আই লাভ ইউ।
আরাভ- আজব প্রপোজ। নট এক্সেপ্টেড।
আমি- ওহ। আমি গেলাম।
আরাভ- আরে কই যাও? মাস্ক খুলো তারপর।
.
আমি তাড়াতাড়ি মাস্ক আর চাদরটা খুলে ফেললাম। আরাভ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চুল বাতাসে কিছুটা এলোমেলো হয়ে আসছে। মোমের আলো আর চাদের আলোয় এক নতুন আমিকে দেখছে আরাভ। নিজের অজান্তেই আরাভ আমার দিকে এগিয়ে এসে চুলগুলো ঠিক করে দিলো।
.
চলবে……